সম্পর্ক যখন অসমবয়সি

দু’জনেই প্রেমে মশগুল হয়ে রয়েছেন। একে অপরকে চোখে হারান। কিন্তু একজন যৌবন উত্তীর্ণ এবং আর একজন সদ্যযুবক বা যুবতী। এই ধরনের ‘মে-ডিসেম্বর’ প্রেম দেখলে অনেকেরই হয়তো ভ্রুযুগল ঈষৎ বাঁকতে পারে। কিন্তু তাতে কী যায় আসে! প্রকৃত প্রেম বলতে কি স্রেফ সমবয়সি যুগলকেই বোঝায়? হলই না হয় প্রেমে ‘এজ গ্যাপ’!

যে কোনও সম্পর্ক ধরে রাখার মূলমন্ত্রই দু’জনের মধ্যে বোঝাপড়া। তাই নিজেদের সম্পর্ক নিয়ে নিজেরা যদি যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী হন তাহলে এগিয়ে যেতে বাধা কোথায়? তবে বয়সের অনেকটা ফারাক থাকলে পরবর্তীকেলে কিছু সমস্যা আসতে পারে। তাই যে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভাল করে ভেবে নিন।

দুটো মানুষের একে অপরকে ভাল লাগা, কাছে আসা, একে অপরের সঙ্গ উপভোগ করা— এর সঙ্গে বয়সের খুব একটা সম্পর্ক নেই। তবুও প্রেমের সম্পর্কে দু’জনের মধ্যে যদি বয়সের অনেকটা ফারাক থাকে তাহলে সেই সম্পর্ক নিয়ে দোটানায় থাকেন অনেকেই। কিন্তু দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক যদি যথেষ্ট মজবুত হয় তাহলে বয়সের পার্থক্য থাকলেও খুব একটা সমস্যা হয় না। বলিউড থেকে শুরু করে খেলার জগতে এরকম উদাহরণ কিন্তু নেহাত কম নয়। তবুও অসমবয়সি সম্পর্কের ক্ষেত্রে অনেকসময়ই কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। পরিবারের দিক থেকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া আসতে পারে। সম্পর্কের পরিণতি নিয়ে নিজের মনের মধ্যেও প্রশ্ন জাগা অস্বাভাবিক নয়। তাই অসমবয়সি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার আগে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখুন।

  • অসমবয়েসি প্রেমের ক্ষেত্রে নিজেদের মনে কোনও দ্বিধা থাকলে ভবিষ্যতের দাম্পত্যে তার প্রভাব পড়তে পারে। তাই সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার আগে নিজেকে একটু সময় দিন। ভাল করে ভেবে দেখুন আপনি যা করতে যাচ্ছেন, তা আপনার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। পরিবার বা কাছের মানুষজনের কাছে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি সঠিকভাবে মেলে ধরতে পারবেন তো?
     
  • নিজেদের সম্পর্ক নিয়ে যদি যথেষ্ট কনফিডেন্ট থাকেন তাহলে পরিবার বা বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে তা লুকিয়ে রাখবেন না। ভবিষ্যতে একসঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নিলে তা পরিবারের কাছে খুলে বলুন। নিজেরা বলতে না পারলে কোনও পারিবারিক বন্ধু আত্মীয়র সাহায্য নিতে পারেন বাড়ির বড়দের বোঝানোর জন্যে। একে অপরের পরিবারের সঙ্গে মেলামেশা বাড়ান। একসঙ্গে ঘুরতে যাওয়া, কেনাকাটা, খাওয়াদাওয়ার মাধ্যমে সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তুলুন। এতে দুই পরিবারের মধ্যেই আপনাদের সম্পর্কটা মেনে নেওয়া অনেক সহজ হবে। পারিবারিক সম্মতি সবসময়ই একটা ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে।
     
  • অসমবয়সি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার আগে সন্তান চাওয়া নিয়ে একে অপরের সঙ্গে পরিষ্কার ভাবে আলোচনা করে নিন। আপনার সঙ্গী যদি বয়সে আপনার চেয়ে অনেকটা বড় হন হতে পারে তাঁর আগের সম্পর্কে সন্তান আছে। তিনি নতুন সম্পর্কে হয়তো সন্তান নাও চাইতে পারেন। আবার সঙ্গী বয়সে অনেকটা ছোট হলে দেরিতে সন্তান চাইতে পারেন। তাই সম্পর্কের শুরুতেই এই ধরনের বিষয়গুলি নিয়ে পরিষ্কার করে আলোচনা করে নিন। একে অপরের মানসিকতা এবং কম্প্যাটিবিলিটি ভাল করে বুঝে নিন। এতে সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় থাকে। 
     
  • বয়সের ফারাক বেশি হলে তাই নিয়ে বন্ধুবান্ধবরা ঠাট্টাতামাশা করতে পারেন, আত্মীয়স্বজন বা প্রতিবেশীরা বিভিন্নরকম মন্তব্য করতে পারেন। এই ধরনের পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকুন। নিজেদের মধ্যে কথাবার্তার সময় বয়েসের পার্থক্যের ব্যাপারটা সবসময় এড়িয়ে যাবেন না। বরং দুজনে মিলেই ঠিক করুন যে চারপাশের প্রতিবন্ধকতা কীভাবে জয় করতে পারেন।

Relationship ও কিছু জরুরী পরামর্শ!

কম-বেশি সবাই বলে থাকে, ‘সম্পর্কগুলো আগলে রাখা খুব কঠিন!’ তবে প্রকৃতপক্ষে এ কথাটি সত্য নয়। এটি কখনোই জটিল বা বেদনাদায়ক নয়। বরং একটি সুন্দর ও সাবলিল সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য আপনার ভালোবাসার প্রতি একটু সচেতনতা ও পজিটিভ মানসিকতাই যথেষ্ট। সাধারণত আমরা সবাই অলস প্রকৃতির। আমরা মনে করি, আমাদের সম্পর্কগুলো জাদুকরী তৈলাক্ত মেশিনের মতো করে আপনাআপনি ভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে। আসলেই কি তাই? না, যেকোনো সম্পর্কই সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে হলে আপনার সম্পর্কের প্রতি ভালোবাসা ও যথেষ্ট দায়িত্বশীল হতে হবে। নিচে নারীদের জন্য ‘রিলেশনশীপ’ সম্পর্কিত কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যা আপনার সম্পর্ককে করবে সুখময়।

নিজেকে ভালোবাসুনঃ নিজেকে ভালো রাখতে হলে সবচেয়ে বেশি যেটা জরুরি সেটা হলো, ‘নিজেকে ভালোবাসা’। আপনি নিজেকে যদি ভালো না বাসেন তাহলে নিজেতো ভালো থাকতে পারবেন‘ই না! এমনকি অন্য কাউকেও ভালো রাখতে পারবেন না। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন,

“ভালো থাকার জন্য নিজের প্রতি করুণা ও মায়া দেখানোটা খুব বেশি জরুরি। এই জন্য অপরকে ভালোবাসার আগে নিজেকে নিয়ে ভাবুন। নিজেকে অপরের মতো ভালোবাসতে শিখুন। তবেই আপনি ভালো থাকবেন।”

আর যখন আপনি নিজেকে ভালোবাসতে ও ভালো রাখতে চাইবেন তখন স্বাভাবিকভাবেই আপনি নিজের প্রতি অনেক যত্নবান হবেন। এমনকি নিজের সম্পর্কের প্রতিও। যা আপনার ভালোবাসার মানুষটিকে আরও ভালোবাসতে সহায়তা করবে, গড়ে উঠবে একটি সুন্দর সম্পর্ক।

আবেগ, মানসিকতা ও শারীরিক সম্পর্কের সমন্বয় নিশ্চিত করুনঃ ‘আবেগ, মানসিকতা ও শারীরিক সম্পর্ক’ একটি সম্পর্কের মাঝে এ তিনটি জিনিস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ তিনটি জিনিসের সমন্বয়েই আপনি আপনার সম্পর্কটিকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারবেন। আপনি যদি কেবল শারীরিকভাবে আপনার সঙ্গীর সাথে সংযুক্ত থাকেন, কিন্তু মানসিকভাবে দূরত্ব বজায় রাখেন এবং সম্পর্কের প্রতি কোনো আবেগ বা মোহ না থাকে তাহলে সে সম্পর্কটি দীর্ঘস্থায়ী হয় না। অথবা আপনি যদি শুধু মানসিকভাবে তার সাথে সংযুক্ত হতে পারেন কিন্তু সম্পর্কের প্রতি কোনো আবেগ বা শারীরিকভাবে কোনো চাহিদা না থাকে তাহলে সে সম্পর্কটিও ধীরে ধীরে ধ্বংসের পথে ধাবিত হবে। তাই সম্পর্কটির সমস্তক্ষেত্রে আপনাদের মাঝে দৃঢ় বন্ধন থাকতে হবে।


আপনার সঙ্গীকে যথেষ্ট সময় দিনঃ আমরা সবাই জানি, আমাদের প্রত্যেকেরই একটি নিজস্ব জীবনধারা রয়েছে, ব্যক্তি স্বাধীনতা রয়েছে। এমনকি এটাও জানি যে, আমরা কখনো একা একা খুব বেশি সময় কাটাতে পারবো না। তাই বিভিন্ন প্রয়োজনে বিভিন্ন সময়ে আমাদের বিভিন্ন ব্যক্তিদের সাথে সময় ব্যয় করতে হয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে, আপনি আপনার সঙ্গীকে যথেষ্ট সময় দিচ্ছেন তো? কারণ, শত ব্যস্ততার মাঝেও দিন শেষে প্রিয় মানুষটির সান্নিধ্য না পেলে নিজেকে বড্ড বেশি নিঃসঙ্গ মনে হয়।

তাই সম্পর্কের গভীরতা প্রকাশে প্রিয় মানুষটির প্রতি মনোযোগ রাখাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার প্রতি মনোযোগ হারালে ধীরে ধীরে একটা সময় হয়তো আপনার সম্পর্কটিই হারিয়ে যাবে। তাই সবকিছুর মাঝেও আপনি আপনার জীবনসঙ্গীকে প্রতিনিয়ত সময় দিন। তাকে কখনো সঙ্গীহীনতা অনুভব করতে দিবেন না। বাসার বাহিরে থাকাকালীন ফোন কল অথবা টেক্স ম্যাসেজের মাধ্যমে কন্টাক্ট রাখুন। বাসায় এলে বিভিন্ন গল্প-গুজব, খুনশুটিতে মাতিয়ে রাখুন। এতে করে আপনাদের সম্পর্কটিও থাকতে সজিব ও প্রাণবন্ত।

পছন্দের প্রফেশনের যোগ্য জীবনসঙ্গী খুঁজতে

ভিজিট করুন বিবাহবিডি ডট কম আমাদের সার্ভিস সম্পর্কে জানতে ও ফ্রী রেজিষ্ট্রেশন করতে এই লিংকে আসুন

বিস্তারিত জানতেঃ ০১৯২২ ১১ ৫৫৫৫  এ কল করুন

তার কথাগুলো মন দিয়ে শুনুনঃ সাধারণত আমরা সবাই মনে করি যে, পুরুষদের তুলনায় নারীরা শ্রোতা হিসেবে অনেক এগিয়ে। প্রকৃতপক্ষে এটি সত্য নয়। যেকোনো সমস্যা সমাধানে নারীদের তুলনায় পুরুষরা বেশি ধৈর্যশীল শ্রোতা হয়ে থাকে। একটু ভেবে দেখুন, আপনি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কারো সাথে কথা বলছেন কিন্তু আপনি যার উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলছেন সে আপনার কথাগুলো মনোযোগ সহকারে শুনছে না বা সেরকম গুরুত্ব দিচ্ছে না। তখন আপনি নিশ্চয়ই খুব বিরক্তিবোধ করবেন? এটাই স্বাভাবিক। ঠিক একইভাবে অন্যের ক্ষেত্রেও তাই ঘটে থাকে।

আর পুরুষেরা যেমন ভালো শ্রোতা ঠিক তেমনি তাদের সমস্যাগুলোও নিজ নিজ সঙ্গীদের সাথে গুরুত্ব সহকারে শেয়ার করে থাকে। তারাও চায় তাদের কথাগুলো কেউ একজন গুরুত্ব সহকারে শুনুক, উপলব্ধি করুক। শুধু যে সমস্যা সমূহই তা নয়, হতে পারে ভালোবাসা, ভালো লাগা সম্পর্কিত বিষয়াবলীও আপনার সাথে শেয়ার করতে চাইবে। এক্ষেত্রে আপনার উচিত তার কথাগুলো ধৈর্যশীল শ্রোতা হয়ে শোনা এবং নিজের মতামত প্রকাশ করা।

তাকে বদলানোর চেষ্টা করবেন নাঃ চোখের জল দিয়েই হোক বা জোড় করেই হোক! নারীরা তাদের জীবন সঙ্গীদের নিজের মতো করে নিতে চায়। তারা মনে করে, ‘আমি যদি তাকে কোনোভাবে বিয়ে করে ফেলতে পারি, তাহলে পরে সব ঠিক করে ফেলবো।’ অথবা, ‘আমি যদি তাকে মোবাইল ব্যবহার করা থেকে বিরত রাখতে পারি, তাহলে সে আমাকে যথেষ্ট সময় দিবে।’ নারীদের এ ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। মূলত একজন নারী যত সহজে নিজেকে পরিবর্তন করতে পারে, পুরুষরা তত সহজে নিজেদেরকে পরিবর্তন করতে পারে না। অথবা নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে অন্য কারো চাপে নিজের মাঝে পরিবর্তন আনতেও পছন্দ করে না।

আপনার জীবন সঙ্গীর প্রতিটা জিনিস আপনার পছন্দ নাও হতে পারে। এটাই স্বাভাবিক। তাই বলে আপনি যদি আপনার পছন্দগুলো তার উপর চাপিয়ে দিতে চান বা তার মাঝে থাকা আপনার অপছন্দগুলো বদলে দিতে চান তাহলে হিতে বিপরীতও হতে পারে। তাই তাকে সরাসরি বদলে ফেলার চেষ্টা না করে তাকে ভালোবাসুন। ভালোবাসা দিয়ে তার মন জয় করে নিন। দেখবেন, আপনার ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়ে সে নিজেই বদলাতে শুরু করবে।

সমস্যা সমূহকে কখনো অবহেলা করবেন না : অতএব, এ জগতে কোনো মানুষই সবদিক থেকে পরিপূর্ণ নয়। প্রত্যেকটি মানুষই কোনো না কোনো সমস্যায় ভুগে থাকে। ঠিক তেমনি প্রত্যেকটি সম্পর্কের মাঝেই ছোটখাটো সমস্যা দেখা দেয়। আর হ্যাঁ, সমস্যা সমূহ ছোট অথবা বড় সব সমস্যারই তাৎক্ষণিক সমাধানের চেষ্টা করা উচিত।

আপনাদের সম্পর্কের মাঝেও হয়তো কোনো না কোনো সমস্যা থাকতে পারে। তা যত বড় বা ছোট সমস্যাই হোক না কেন! কখনো অবহেলা করবেন না। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সমস্যা হলেও আপনার সঙ্গীর সাথে শেয়ার করুন এবং দুজনে পরামর্শ করেই সমাধান করার চেষ্টা করুন। নতুন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সমস্যাগুলোই একটা সময় সম্পর্কের মাঝে বিশাল বাধা সৃষ্টি করবে।

তার সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন: সম্পর্ক এমন হওয়া উচিত নয় যেটা- ‘আমি বনাম তুমি’ বরং এমন হওয়া উচিত- ‘তুমি আর আমি মিলে আমরা’। মানে একটি সংবদ্ধ দল। যেখানে নিজেদের মধ্যে থাকবে না কোনো প্রতিযোগিতা, থাকবে না কোনো রেষারেষি। যা থাকবে, শুধুই সম্পর্কের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোলাগা, ভালোবাসা ও একত্রে সারাটা জীবন কাটিয়ে দেবার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা।

সম্পর্কের মাঝে ঘটে যাওয়া প্রতিটি ঘটনা হয়তো আপনার মনের মতো নাও হতে পারে। আপনার চিন্তা-চেতনা সঠিক নাও হতে পারে। তাই সবকিছুই আপনার নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা না করে আপনার সঙ্গীর অবস্থানে নিজেকে বসিয়ে বিবেচনা করুন এবং তার সিদ্ধান্তকে মেনে নিন পাশাপাশি তার সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহানুভূতি দেখান। দেখবেন, সে নিজেও আপনার সিদ্ধান্ত ও পরামর্শের প্রতি যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করবে। আর হ্যাঁ, নিজের মধ্যে শ্রদ্ধাবোধ না থাকলে সম্পর্কের বোঝাপড়াটাও বেশ অসহনীয় হয়ে পড়ে।

ভিন্নতা সমূহকে গ্রহণ করুন : এ জগতে প্রত্যেকটি মানুষই ভিন্ন, প্রত্যেকটি মানুষেরই নিজস্ব কিছু সত্ত্বা আছে। প্রত্যেকটি মানুষের চিন্তাধারা, চাওয়া-পাওয়া ভিন্ন। কিছু কিছু বিষয়ে আচরণগত সাদৃশ্যতা থাকলেও দুটি মানুষের মধ্যে শতভাগ সাদৃশ্যতা কখনোই থাকবে না। ঠিক তেমনি, আপনার সঙ্গীর চিন্তাচেতনার সাথে আপনার চিন্তাচেতনার মিল নাও থাকতে পারে। এটা খুব সাধারণ একটি বিষয়।

তার অনেক আচরণই হয়তো আপনার ভালো লাগে না। হয়তোবা আপনার কোনো আচরণ তারও ভালো নাও লাগতে পারে। তাই বলে সাধারণ বিভিন্নতা নিয়ে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করবেন না। দুজনার মধ্যবর্তী বৈসাদৃশ্যগুলো সহজেই গ্রহণ করে নেবার চেষ্টা করুন। তবে তার সাথে আপনার বৈসাদৃশ্যগুলো যদি খুব বেশি গুরুতর হয়, আপনার সহ্য-সীমা অতিক্রম করে ফেলে; তাহলে ভেবে নিবেন সে আপনার সমপোযোগী নয়।

কথায় আছে, “সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে।” ঠিক তাই, একটি সম্পর্কের মূল চাবিকাঠি থাকে নারীদের হাতেই। আবারো বলছি, নারীরা চাইলে তাদের ভালোবাসা দিয়ে পৃথিবীটাও জয় করে নিতে পারবে। সবশেষে, একটি সম্পর্ক সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতে আপনার ভালোবাসা ও সম্পর্কের প্রতি শ্রদ্ধাবোধই যথেষ্ট।

সম্পর্ক নিয়ে কেন অসুখী হই আমরা!

সাধারনত প্রতিটি মানুষের মাঝেই হতাশা, রাগ, অভিমান, বিষণ্ণতা মোটকথা কোনো না কোনো মানসিক সমস্যা একটু-আধটু থাকেই। যাকে উদ্বেগ বা প্যাথলজিক্যাল অ্যাংজাইটি বলা হয়ে থাকে। কিন্তু যখন তা আমাদের নিয়ন্ত্রনের বাহিরে চলে যায় তখন সেটি আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটাতে শুরু করে। বিশেষত Relationship anxiety বা সম্পর্কের উদ্বেগ আমাদের জীবনে এতোটাই বাজেভাবে প্রভাব ফেলে যা আমাদের আশে-পাশে থাকা আপন মানুষগুলোর সাথে সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব বাড়িয়ে দেয়।

‘সম্পর্কের উদ্বেগ’ যার সাথে কম-বেশি প্রত্যেকটি মানুষ সংগ্রাম করে বেঁচে থাকে। এটি আপনার সম্পর্কের মাঝে ভালোবাসা বৃদ্ধির করার পরিবর্তে ভয়, সন্দেহ, ঈর্ষা, একঘেয়েমি ও নিরাপত্তাহীনতা বাড়িয়ে তোলে যা আপনার সুন্দর সম্পর্কটিকে দীর্ঘস্থায়ী হতে বাঁধা প্রদান করে।

আসুন দেখে নেয়া যাক যেসব কারণে আমরা অসুখী সম্পর্কের সম্মুখীন হই

অতিরিক্ত রাগ রাগ সাধারনত আবেগের একটি অংশ। যা প্রতিটি মানুষের মধ্যেই কম-বেশি বিদ্যমান। তবে এটি মানবজীবনে ইতিবাচক প্রভাবের চেয়ে নেতিবাচক প্রভাবই বেশি বিস্তার করে। কারণ, যখন একজন ব্যক্তি রেগে যায় তখন তার আপাদ-মস্তকে তাপের সৃষ্টি হয়। ফলে তার হিতাহিত জ্ঞান বলতে কিছু থাকে না। তখন সে নিজের প্রতি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে।

‘অতিরিক্ত রাগ’ যা আমাদের আপনজনদের সাথে সুন্দর সম্পর্কগুলোর মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করে। অল্পতেই রেগে যাওয়া এবং সেই রাগগুলোর দীর্ঘ স্থায়ীত্বকাল সম্পর্কগুলোর মধ্যে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। রেগে গিয়ে অনেকেই অনেক অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলে যার ফল তাকে সারাটা জীবন ভোগ করতে হয়। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো না। কারণ এই অতিরিক্ত রাগই আমাদের মধুর সম্পর্কগুলোতে অসুখী হবার অন্যতম কারণ।

বিশ্বাসের ঘাটতি: একটি সম্পর্কের মূল স্তম্ভই হলো বিশ্বাস। একটি সম্পর্কের মাঝে বিশ্বাস যত দৃঢ়তর সে সম্পর্কটি তত শক্তিশালী হয়ে থাকে। ঠিক তেমনি বিশ্বাস বিহীন একটি সম্পর্ক বড্ড নড়বড়ে যা সম্পর্কগুলোর মাঝে বিশাল দূরত্বের সৃষ্টি করে। বিশ্বাস হচ্ছে সম্পর্কের খুঁটি। যার উপর ভর করে সম্পর্কগুলো চলতে থাকে বছরের পর বছর।

সাধারনত কারো সম্পর্কে অবিশ্বাসের বীজ বপন হয় তৃতীয় পক্ষের কোনো ব্যক্তি দ্বারা অথবা নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির কারণে। অবিশ্বাসের বীজ বপন হওয়া সম্পর্কগুলোর মাঝে সবসময় একধরনের দ্বন্দ্ব লেগেই থাকে যা ধীরে ধীরে সেই সম্পর্কের মাঝে ফাটল ধরিয়ে দেয়। এভাবে চলতে চলতে একটা সময় সম্পর্কগুলোর মধ্যে পুরোপুরি বিচ্ছেদ হয়ে যায়। আর এভাবেই সুন্দর সুন্দর সম্পর্কগুলো বিচ্ছেদের মাধ্যমে আমরা আমাদের জীবনকে অসুখী করে তুলি।

আর্থিকভাবে অসচ্ছলতা: আমরা যতই বলে থাকিনা কেন; ‘ভা্লোবাসার কাছে অর্থ মূল্যহীন’ কিন্তু বাস্তবতা ঠিক সেরকম নয়। ক্ষেত্র বিশেষ ভালোবাসা, অর্থ এবং ভালোবাসা ও অর্থ উভয়ই সম্পর্কগুলোর মাঝে পার্থক্য গড়ে তুলতে পারে। মানবজীবনে ভালোবাসা যেমন অপরিহার্য একটি জিনিস ঠিক তেমনি বেঁচে থাকতে হলে অর্থের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

বর্তমান সময়ে অর্থ ব্যতীত যেখানে এক কদম আগানো প্রায় অসম্ভব সেখানে অর্থ ব্যতীত ভালোবাসার মানুষগুলোর সাথে জীবন পাড়ি দেওয়া শুধুই স্বপ্ন। এই অর্থ যেমন প্রায় সকল সমস্যার সমাধান দিতে পারে ঠিক তার বিপরীত এই অর্থের অসচ্ছলতা একটি সম্পর্কের মাঝে শত সমস্যার সৃষ্টি করে। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে সৃষ্ট বিভিন্ন সমস্যাগুলো ধীরে ধীরে সম্পর্কের মধ্যে ফাটল ধরিয়ে দেয়। বর্তমান সময়টা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে অর্থ না থাকলে খুব আপন মানুষগুলোও দূরে সরে যায়। এতে সম্পর্কগুলোর মাঝে সুখ নামক জিনিসটা উধাও হয়ে যায়।

সম্পর্কের প্রতি অযত্নবান: যে সম্পর্ক যতবেশি যত্নবান সে সম্পর্ক ততবেশি দৃঢ়। একটি ভালো সম্পর্ক কখনোই একদিনে গড়ে উঠে না। তিলে তিলে যত্নসহকারে সম্পর্কগুলোকে ভালোবাসায় পরিণত করতে হয়। প্রতিটিক্ষেত্রে এই সম্পর্কগুলোকে যথাযথ যত্ন ও ভালোবাসার সহিত আগলে না রাখলে একদিন সে সম্পর্কগুলোর মাঝেও মরিচা ধরা শুরু করে।

প্রিয় মানুষগুলো আপনার কাছ হতে অনেক কিছুই আশা করে। তারা চায় আপনি তাদের প্রতি একটু যত্নবান হোন, তাদের চাওয়া-পাওয়াগুলোকে গুরুত্ব দিন। মোটকথা, যেকোনো জিনিসের যত্ন না নিলে যেমন তা অকেজো হয়ে যায় ঠিক তেমনই কোনো সম্পর্কের যদি যত্ন না নেওয়া হলে সেই সম্পর্কটিও আস্থাহীন হয়ে পড়ে। জীবন থেকে হারিয়ে যায় সুখ নামক জিনিসটি।

সম্পর্কের প্রতি শ্রদ্ধাহীন : প্রতিটি সম্পর্কই অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও সম্মানের। শ্রদ্ধা ও সম্মানে পরিপূর্ণ সম্পর্কগুলো অত্যন্ত সুন্দর ও সুখময় হয়ে উঠে। এবং সময়ের সাথে সাথে সম্পর্কগুলো আরও পরিপক্বতা লাভ করে। এমনকি সম্পর্কগুলো অটুট থাকে জীবনাবসান অবধি।

কিন্তু কিছু মানুষ তাদের সম্পর্কগুলোকে সম্মান করে না বা করতে জানে না। অহমিকা, অবিশ্বাস ও শ্রদ্ধাহীনতায় সম্পর্কগুলো বরং অশান্তির খোরাকে পরিণত হয়। একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাহীন সম্পর্কগুলোও খুব বেশি স্থায়ী হয় না। জীবনযুদ্ধের মাঝপথে এসে থমকে দাঁড়ায়। যেখান থেকে নতুন করে সুখ খুঁজে নেবার আর কোনো পথ থাকে না।

সম্পর্কের প্রতি অবহেলা: অবহেলা অত্যন্ত নিগৃহীত একটি জিনিস। কোনো ব্যক্তিই কারো অবহেলার পাত্র হতে চায় না। যে অবহেলিত হয় সে নিজেও হাজারো চেষ্টা চালিয়ে যায় তার ভালোবাসার মানুষটির কাছ থেকে অবহেলার পরিবর্তে একটু ভালোবাসা পেতে। অথচ অধিকাংশক্ষেত্রেই সময়ের সাথে সাথে ভালোবাসা পাবার চেয়ে অবহেলিত হবার পরিমাণটা আরো বেড়ে যায়।

সবকিছু সহ্য করা যায় কিন্তু ভালোবাসার মানুষগুলোর কাছ থেকে অবহেলা জিনিসটা সহ্য করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। অবহেলিত হতে হতে তা যখন মানুষটির ধৈর্যের সীমা অতিক্রম করে ফেলে তখন সে শত কষ্ট হলেও সে পথ হতে মুক্তি পেতে চায়। কিন্তু তারপরও একটু ভালোবাসা পাবার জন্য প্রিয় মানুষটির শত অবহেলা উপেক্ষা করেও পথ চেয়ে থাকে। দিনশেষে একরাশ অবহেলা, হতাশা ও ব্যর্থতা নিয়েই বেঁচে থাকতে হয় মানুষটিকে।

অহংকার: অহংকার বা অহমিকা মানুষের অস্বাভাবিক, বিকৃত ও জঘন্যতম একটি স্বভাব। অহংকার শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের পতনের মূল কারণই নয়, এই অহংকার একটি সুন্দর সম্পর্ক পতনেরও অন্যতম কারণ।

একজন অহংকারী ব্যক্তি নিজেকে সবসময়ই বড় মনে করে থাকে। এবং তার পাশে থাকা মানুষটিকে সবসময় তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে থাকে। এতে করে একটি সম্পর্কের সাথে সম্পৃক্ত মানুষগুলোর মনে ঐ অহংকারী ব্যক্তির প্রতি একপ্রকার ঘৃনার জন্ম নেয়। যা তাদের মধ্যে বেশ দূরত্ব সৃষ্টি করে দেয়। বয়ে আনে অশান্তি। পতন হয় হাজারো যত্নে গড়ে তোলা একটি সুখী সম্পর্কের।

আপনজনদের সময় না দেওয়া: ব্যস্ততম জীবনের মাঝেও প্রতিটি মানুষ চায় তার প্রিয়জনদের সাথে কিছুটা সময় কাটাতে। আপনজনদের সাথে কাটানো সময়গুলো সবসময়ই মধুর হয়ে থাকে। তাদের সাথে কাটানো স্মৃতিগুলো সম্পর্কের গভীরতা আরো বাড়িয়ে দেয়। নিজেদের মধ্যে অপ্রকাশিত ভালোবাসাগুলো ফুটে উঠে খুব সহজেই।

কিন্তু বাস্তবতা কিছু মানুষকে সবসময়ই তার ভালোবাসার মানুষগুলো থেকে অনেকটা দূরে সরিয়ে রাখে। বাস্তবতার সাথে হেরে যাওয়া মানুষগুলো সবসময় এক ধরনের অপূর্ণতায় ভুগে। যদিও অনেকেই ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখে। তবে যাই হোকনা কেন; ভালোবাসায় আপন মানুষগুলো যখন তাদের প্রিয় মানুষটির কাছ হতে প্রাপ্য সময় না পায় তখন তাদের মাঝেও সবসময় একধরনের বিষণ্ণতা বিরাজ করে।

সকলের মতামতকে প্রাধান্য না দেওয়া : যখন আপনি কারো সাথে একটি সম্পর্ক গড়ে তুলবেন তখন আপনাকে তার মতামতকে অবশ্যই প্রাধান্য দিতে হবে। একতরফাভাবে যেরকম একটি সম্পর্ক গড়ে উঠে না ঠিক তেমনই একতরফাভাবে কখনোই কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহন করা ঠিক না। সেক্ষেত্রে সম্পর্কগুলোর সাথে যুক্ত প্রতিটি ব্যক্তির মতামত মন দিয়ে শোনা এবং তাদের মতামতকে যথাসাধ্য প্রাধান্য দেওয়া অপরিহার্য।

কিন্তু যখন আপনি সেই সম্পর্কের সাথে সম্পৃক্ত কোনো কাজে তার মতামতকে প্রাধান্য না দিয়ে নিজের ইচ্ছে মতো সম্পন্ন করার চেষ্টা করবেন তখন সে নিজেকে মূল্যহীন মনে করবে। এমনকি এভাবে চলতে চলতে একটা সময় তা সম্পর্কের মাঝে মারাত্মকভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

দিন শেষে জীবনযুদ্ধে তারাই বিজয়ী যারা শত ব্যস্ততা, ব্যর্থতা, ও অপূর্ণতা দূরে সরিয়ে রেখে আপনজনদের নিয়ে সুখে জীবনযাপন করছে। সুখ-দুঃখ মিলিয়েই জীবন। সকল বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে আপন মানুষগুলোকে ভালোবেসে ভালো রাখাটাই সবচেয়ে বড় সার্থকতা। সবশেষে, ভালো থাকুন এবং ভালো রাখুন আপনার আপনজনদের।

যৌনতা, বিয়ে ও সামাজিকতা

যৌনতা মানব জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। স্বীকার করুন অথবা নাই করুন জীবনে যৌনতার রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এটি মানুষসহ সকল জীবের অন্যতম চাহিদাগুলোরও একটি। একজন নারী ও পুরুষ বারো থেকে চৌদ্দ বছর বয়সপ্রাপ্ত হলেই তার যৌন চাহিদা দেখা দিতে থাকে। ফলে সে মনে মনে এই চাহিদা মেটানোর উপায় নিয়ে ভাবতে থাকে। এই চাহিদা কোন প্রক্রিয়ায় মেটানো সম্ভব? সকল সমাজ, সকল ধর্ম একটিই বৈধ ও প্রচলিত পন্থা এ ক্ষেত্রে আবিষ্কার করেছে। সেটি হচ্ছে ‘বিয়ে’। বিয়ের মাধ্যমে মানুষ তার যৌন চাহিদা পূরণ করে। সঠিক সময়ে বিয়ে করা যৌন সংক্রান্ত  কেলেঙ্কারী কিংবা দুর্ঘটনাসমূহ রোধের একটি অন্যতম উপায়। কাজেই আমাদের সমাজে বিয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বিভিন্ন দিক দিয়ে।

সভ্যতার আদি থেকেই যৌন চাহিদা মেটানোর জন্য সমাজ পতিতালয় তৈরি করেছে। সেখানে নিয়মিত যাতায়াত করেন কিছু কুরুচিপূর্ণ মানুষ। তারা  সেভাবেই শারীরিক চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু যৌনতা কি শুধু শারীরিক বিষয়? যৌনতা কি শুধু যে কোন নারী বা পুরুষের সাথে একটি নির্দিষ্ট সময় কাটিয়ে শরীর হাল্কা করা? সেটি পশুত্বের সামিল। যৌনতা মানব সৃষ্টির জন্য একটি বিশেষ কর্ম। এখানে শরীর, মন, আন্তরিকতা, পরস্পরের চাহিদা এবং এক ধরনের আত্মিক বিষয় জড়িত। এজন্যই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে গড়ে ওঠে এক গভীরতম সম্পর্ক। অথচ বিয়ের পূর্বে তাদের সাথে কোনো ধরনের পরিচয়ই হয়তো ছিল না।

যুগ ও অর্থনীতির চাহিদার কারণে আমাদের দেশ থেকে প্রচুর মানুষ বিদেশ যায়। কেউ যাচ্ছেন অর্থ উপার্জন করতে, কেউ উচ্চতর শিক্ষার জন্য। যে কারণেই  যাওয়া হোক না কেন এখানে যৌন বিষয়ে কি কোন সমাধানের কথা বলা আছে? নেই। এক বছর দুই বছর কিংবা তারচেয়েও বেশি সময় একজন পুরুষ বা একজন স্ত্রী কীভাবে নিজেদের যৌন চাহিদা মেটাবে একে অপরের অনুপস্থিতিতে? বিষয়টি বেমালুম সবাই ভুলে যান। ফলে নেমে আসে এক অশান্তি ও অবিশ্বাস। আমরা এমন ভান করি এসব ক্ষেত্রে যেন সব কিছু ঠিকঠাক আছে, স্বামী-স্ত্রী একে অপরের কাছ থেকে দূরে থাকা কোনো বিষয় নয়। বিশেষ করে যারা বিবাহিত। আর যারা বিয়ে করেনি আমরা ধরেই নিয়েছি যে, তারা একটু উল্টা-পাল্টা করবেই। এই উল্টাপাল্টা মানে এক ধরনের বিশৃংখলা। কিন্তু সবাই কেন জানি এ বিষয়টিও মেনে নিচ্ছি।

যৌনতা যাতে পশুত্বে পরিণত না হয় সেদিকে আমাদের বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে। কোনো পশু একমাত্র কুকুর ছাড়া যৌনক্রিয়া করার সময় একটু আড়াল খোঁজে, আড়ালে কাজটি সম্পাদন করে। অথচ পশ্চিমা দেশগুলোতে এবং পশ্চিমা দেশগুলোর আদলে প্রাচ্যের যেসব দেশ এগিয়ে যাচ্ছে সেসব দেশেও যৌনতা খোলামেলাভাবে প্রদর্শিত হচ্ছে, এটি কি খুব আনন্দের বিষয়? চীনেও দেখা যায় হাজার হজার লোকভর্তি ট্রেনে প্রেমিক-প্রেমিকা সবার সামনে দিবালোকে গভীর চুম্বনরত। পার্কে একটি মেয়েকে সবার সামনে কোলের ওপর বসিয়ে রেখেছে। আমি বেইজিংয়ের হোটেল রুমে বসে বসে দেখলাম রাস্তার পাশে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে ঘন্টাখানেকের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন ধরনের যৌনকাজ সম্পন্ন করল। তারপর সন্ধ্যা হয়ে এলো, পরে আর স্পস্ট দেখা গেল না। চীন এশিয়ার একটি দেশ। এটি পশ্চিমা কোনো ধনী দেশ নয়, সেখানেই এই অবস্থা আধুনিকতার নামে!  প্রকাশ্য দিবালোকে এবং সূর্য ডোবার আগে এগুলো কী হচ্ছে? আমাদের দেশের বিভিন্ন পার্কে যাবেন কম-বেশি অশ্লীল দৃশ্য চোখে পড়ে। পশ্চিমা দেশ থেকে আগত এসব কালচার কতটা আমাদের সাথে মানানসই? আমেরিকার বিভিন্ন সিটিতে ছেলেমেয়ে চলতে দেখা যায়, হাতে হাত ধরে কিংবা আরও কাছাকাছি কিন্তু সরাসরি প্রকাশ্যে যৌনতা প্রদর্শন খুব একটা চোখে পড়েনি। তবে বিষয়টি তারা সঠিক পথে পরিচালিত করছে না। আর তাই সেখানে পারিবারিক বন্ধন সাময়িক ব্যাপার, অত্যন্ত ঠুনকো। সেখানে লিভ টুগেদার প্রচলিত আর লিভ টুগেদার মানেই তো এক ধরনের বিকৃত অভ্যাস। কিছু কিছু স্টেটে প্রকাশ্যেই দেখা যায়, কোথাও হয়ত একটু রিজার্ভ। তবে কানাডাতে শপিং মলগুলোতে কিংবা রোস্তোরাঁয় প্রকাশ্যে চুম্বনের বিষয়টি প্রত্যক্ষ করেছি। কিন্তু তাদের অনুসারী দেশগুলো যেন দুই ধাপ এগিয়ে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের আগে হিলারী বলেছিলেন, তিনি নারীদের ‘গর্ভপাত’ করার আইন বহাল রাখবেন। এখানে যৌনতা ব্যাপারটি এত অবাধে চলে যে, যে কোনো সময় যে কোনো নারী গর্ভবতী হতে পারে। যেহেতু বাবার কোনো ঠিক থাকবে না কিংবা ফ্রি থাকার জন্য অসংখ্য নারী এখানে গর্ভপাত করেন। আমি দেখেছি কিছু ধর্মীয় সংগঠন এই গর্ভপাতের বিরুদ্ধে ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে  কিংবা ব্যানার টানিয়ে রেখেছে। এদের যৌন আচরণ পুরোপুরি আলাদা।

বিবাহ বিডি কল
বিবাহ বিডি কল সেন্টারঃ +৮৮ ০১৯২২১১৫৫৫৫

একটি সুখের সংসারে অবহেলিত যৌনতা মারাত্মক করুণ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। এর মূল কারণ হচ্ছে যৌনতা সম্পর্কে স্বামী কিংবা স্ত্রীর উদাসীনতা। যে সংসারে স্ত্রী তার স্বামীকে কিংবা স্বামী তার স্ত্রীর যৌনসুখ মূল্যায়ন করে না, উদাসীন থাকে সেখানেই দেখা দেয় সমস্যা। স্ত্রী সুযোগ পেলে অন্য পুরুষের এবং স্বামী সুযোগ পেলে অন্য মেয়ের সান্নিধ্য পেতে চাইবে, এটাই স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়ায় তখন। প্রথম দিকে চুপি চুপি কিছু করা হলেও পরে তা বিদ্রোহী রূপ নেয় এবং এক সময় সংসারভাঙ্গা, হত্যা ইত্যাদি পর্যন্ত গড়ায় আর সংসার যদি টিকিয়ে রাখার চেষ্টাও করা হয় তাহলে সেটি  চলে অবিশ্বাসের মধ্যে, এক ধরনের ধোঁয়াশার মধ্যে । কাজেই স্বামী স্ত্রী উভয়কেই এই বিষয়ে সজাগ ও সচেষ্ট থাকা দরকার।

যৌনতা প্রাকৃতিক বিষয়, মানুষের অত্যাবশ্যকীয় চাহিদা। এখানে শরীর ও মনের সাথে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। একটি ছাড়া অপরটি প্রকৃত সুখকর, উপভোগ্য এবং সার্থক হয় না। তাই প্রাকৃতিক নিয়মেই এটি সম্পন্ন করতে হয়। মানুষ যখন এটি অবাধে, স্বেচ্ছারিতার মনোভাব নিয়ে ভোগ করার চেষ্টা করে, বিকৃত যৌনাচারে লিপ্তা হয় প্রকৃতি তখন বিরূপ হয়। যেমন অবাধ যৌনাচার ও বহুগামিতা মানুষের জন্য মরণব্যাধি ‘এইডস’ নিয়ে এসেছে। বিশ্বের মানুষকে এক ভীতিকর অবস্থায় নিক্ষিপ্ত করেছে। এ থেকে উত্তরণের জন্য সঠিক পারিবারিক এবং বৈধ যৌনচার করার জন্য পশ্চিমা চিকিৎসকগণ তাদের দেশের মানুষদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। সুস্থ যৌনতাই এর একমাত্র সমাধান। পশ্চিমা গবেষকরা  আবিষ্কার করেছেন যে, সুস্থ যৌনচারই এইডস-এর মতো মরণব্যাধি এড়ানোর সঠিক পথ যা আমাদের সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ইদানিং সমকামিতা নামে আর এক যথেচ্ছারিতা, অবাধ ও বিকৃত যৌনাচার শুরু হয়েছে। এর ব্যাপ্তি গোটা বিশ্বে। এটি প্রকৃতিবিরোধী কাজ। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ, বিপরীত লিঙ্গের সাথে মিলন তো প্রকৃতির অবদান, প্রাকৃতিক সুখ ও তৃপ্তি সেখানে নিজেদের তৈরি নিয়ম পুরুষে-পুরুষে, নারীতে-নারীতে যৌনক্রিয়া সেটি কতবড় কুরুচির পরিচয় তা মানুষ হিসেবে আমাদের ভেবে দেখা উচিত!

যৌনতা এক তরফা বিষয় নয়। এখানে উভয়ের মতামত, ইচ্ছে, আগ্রহ এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন। একজনের ইচ্ছে, আগ্রহ বা অংশগ্রহণ এই ক্রিয়াকে সাফল্যমণ্ডিত করতে পারে না। বিষয়টি উপভোগ্যও হয় না। সঠিক যৌন তৃপ্তি ও প্রাকৃতিক চাহিদা মেটানোর জন্য দুজনকেই পালন করতে হয় সক্রিয় এবং আগ্রহী ভূমিকা। যে সংসারে  স্বামী-স্ত্রী দুজনই ব্যাপারটিতে সমভাবে আগ্রহী, সেখানে অবিশ্বাস ও হতাশা জন্ম নেওয়ার স্থান নেই। জীবন হয়ে ওঠে উপভোগ্য, আনন্দের ও সার্থক। তারা পারিবারিক, সামাজিক, ধর্মীয় যে কাজই করুক না কেন অত্যন্ত আনন্দের সাথে, তৃপ্তির সাথে এবং সার্থকভাবে তা করতে পারে। ফলে ধীরে ধীরে সাফল্যের শীর্ষে যেতে পারে। আর যে সংসারে একজন এ বিষয়ে অনাগ্রহী থাকে, উদাসীন থাকে তারা জীবন উপভোগ করতে পারে না সঠিকভাবে। মনোযোগ সহকারে কোনো কাজ করতে পারে না। জীবনকে সাফল্যের দিকে নিতে হলে স্বামী-স্ত্রীকে যৌনতা বিষয়ে সমভাবে আগ্রহী এবং সক্রিয় হতে হবে।  সুত্র ।| লেখকঃ মাছুম বিল্লাহ

শর্ত : বিয়ের পর বউ চাকরি করতে পারবে না

বিয়ের জন্য পাত্রী খোঁজা হচ্ছে। আধুনিক প্রতিষ্ঠিত ছেলেটি চান ভালো মেয়ে, সুন্দর, বনেদি পরিবার ও শিক্ষিত। আর মেয়েটি যদি মেধাবী হন, তা হলে তো ষোলোকলা পূর্ণ। তবে শর্ত একটি, বিয়ের পর বাড়ির বউ চাকরি করতে পারবে না। আধুনিকতার মুখোশের আড়ালে এমন সংকীর্ণতা অনেক পাত্র ও তাঁর পরিবারের মধ্যে দেখা যায়। কর্মক্ষেত্রে নিজের যোগ্যতায় সফল মেয়েটি অনেক সময় চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন। পরিবারের কথা ভেবে অনাকাঙ্ক্ষিত অশান্তি এড়াতে এমন সিদ্ধান্ত মেয়েরা নেন। বিয়ের পর স্বামী চান না বলে চাকরি ছেড়ে দিয়ে ঘরে বসে থাকেন অনেকেই। স্বামী বা শ্বশুরবাড়িকে খুশি করলেও নিজের ভেতরে গুমরে কেঁদে মরেন তাঁরা। নারীর ক্ষমতায়ন, আধুনিকতা ও ব্যক্তিস্বাধীনতার কথা কপচানো অনেক পুরুষই বাস্তবে কর্মজীবী স্ত্রী পছন্দ করেন না।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অরিনের বিয়ের কথা চলছে। একজনের সঙ্গে বিয়ের পাকা কথা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিয়েটা হয়নি। রুচিশীল শিক্ষিত ছেলেটিকে অরিনের ভালো লেগেছিল। কিন্তু বিয়ের তারিখ চূড়ান্ত করার আগে ছেলেটি শর্ত দিয়ে বসলেন—বিয়ের আগেই অরিনকে চাকরি ছেড়ে দিতে হবে। কেননা, তাঁর বউ চাকরি করলে লোকে নাকি ভাববে, ভরণ-পোষণ দিতে পারছেন না। এমন হাস্যকর যুক্তি মেনে না নিতে পারায় বিয়েটা শেষ পর্যন্ত ভেঙে গেল। এ বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় নাকি এখন অনেক বিয়ের কথাই বেশি দূর এগোচ্ছে না। হতাশ হয়ে অরিনের মা-বাবা মনে করেন, এই সামান্য শর্ত মানলে কী এমন ক্ষতি হতো!বিয়ের পর চাকরি ও সংসার কি একসঙ্গে সামলাতে পারবে? সন্তান হলে তাকে কাজের লোকের কাছে বড় হতে হবে। সারা দিন কাজ শেষে বউ বাড়ি ফিরবে। তখন পরিবারকে সময় দিতে চাইবে না। আর চাকরি করলে বউ বশে থাকে না। নিজের স্ত্রী চাকরি করার বিপক্ষে এসব যুক্তি দিয়েছেন বেশ কয়েকজন ছেলে। তাঁদের কেউ কেউ মনে করেন, ভালো মেয়েরা চাকরি করেন না।

ছেলেদের এসব যুক্তির সঙ্গে মেয়েরা কি একমত? ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন হুমায়রা (ছদ্মনাম)। তিনি বলেন, ‘বিয়ের পর আমি চাকরি ছেড়ে দেব। আমার সন্তান একা বড় হবে, এটি চাই না। এতে আমার ব্যক্তিস্বাধীনতা থাকবে না কিংবা ব্যক্তিত্বে প্রভাব পড়বে, এমনটি মনে করি না। সুন্দরভাবে সংসার করাও একটি শিল্প।’

তা হলে এত দূর পড়াশোনা করার কোনো মূল্যই থাকবে না! বিয়ে নামের সামাজিক বন্ধন স্বপ্ন পূরণে বাধা দেবে, এটি মানতে পারেন না নৌশিন। তিনি মনে করেন, ভালো বোঝাপড়া থাকলে সংসার ও চাকরি—দুটোই সামলানো সম্ভব। এখানে স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই ছাড় দিতে হবে। পরস্পরকে সহনশীল হলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আর যে ছেলে কোনো মেয়ের স্বপ্ন ও কাজকে শ্রদ্ধা না করবে, তিনি স্বামী হিসেবে কতটা ভালো হবেন, এ নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। হুমায়রা আর নৌশিনের বাইরেও আছেন অনেকে। তাঁদের মতে, পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর সেটা নিতে হবে মেয়েটিকেই। মেয়েটি যদি সবকিছু ঠিকঠাক সামলাতে পারে তা হলে সমস্যা কিসের!

অনেক সময় মেয়ের অভিভাবকেরাও চান, এই সামান্য ছাড় দিলে কী হয়? চাকরির জন্য সংসার টিকবে না, এটি তাঁরা মেনে নিতে পারেন না। ফলে মেয়ের মতামত গুরুত্ব পায় না তাঁদের কাছে। ব্যতিক্রমও আছেন কেউ কেউ। সরকারি কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের তিন মেয়েই কর্মজীবী। বড় দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। ছোট মেয়ের বিয়ের কথা চলছে। তিনি ভাবতেও পারেন না, তাঁর মেয়েরা কখনো চাকরি ছেড়ে দেবেন। নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মা-বাবা পাশে থাকলে মেয়েরা সব পারে। আমার তিন মেয়ে চাকরি করে। এটি কত বড় গর্বের, তা বোঝানো যাবে না। পাত্রপক্ষ কিছু বলার আগেই বড় দুই মেয়ের বিয়ের সময় আমি উল্টো শর্ত দিয়েছিলাম, বিয়ের পর মেয়েকে চাকরি করতে দিতে হবে।’

অভিভাবকদের বুঝতে হবে, মেয়ে স্বাবলম্বী হলে ভবিষ্যতে যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সামলাতে পারবেন। হতেই পারে বিয়ের পর স্বামীকে কোনো কারণে সাহায্য করতে হলো। তার চেয়ে বড় কথা, দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী ঘরে বসে না থেকে কাজ করলে পরিবার থেকে দেশ—সবার জন্যই ভালো। এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে ছেলেদেরই। চাকরিজীবী স্ত্রীকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে হবে। শুধু মুখে মুখে আধুনিক না হয়ে কাজেও দেখাতে হবে।

রাতারাতি সবার মানসিকতার পরিবর্তন হবে, এমনটা আশা করা ঠিক নয়। সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের পাশাপাশি সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তনও জরুরি। নারীর ক্ষমতায়ন জোরদার করতে হলে রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে। মনে করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। তাঁর সঙ্গে একমত বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। তিনি জানান, ছেলেদের এই মনোভাব নারীর জন্য ইতিবাচক নয়; বরং বিবাহিত জীবনেও অনেকখানি ঝুঁকি রয়ে যায়।বন্ধুত্ব থেকে বিয়ে হলেও অনেক সময় মেয়েদের এসব সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতাবোধ অন্যতম একটি কারণ। বিয়ের পর সন্তানের মা হওয়ার পর বাড়িতে কোনো লোক না থাকলে, অফিসে শিশু দিবাযত্নকেন্দ্র না থাকলে তখন সাধারণভাবে মাকেই চাকরি ছাড়ার কথা বলে সবাই।ফলে এ ধরনের পরিস্থিতি যেন তৈরি না হয়, সেই পরিবেশ বাড়ির সদস্যদের বা প্রতিষ্ঠানকে দিতে হবে।

-তৌহিদা শিরোপা

ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা বেশি নিঃসঙ্গতায় ভোগেন

চার দেয়ালের মধ্যে কেউ একা আবার কেউ চারিদিকে শত কোলাহলের মধ্যেও একা। কেউ সবার থেকে দূরে থেকে একা আবার কেউ হাজার পাওয়ার ভিড়েও একা। মানুষের এই একাকীত্ব বা নিঃসঙ্গতা একটি জটিল প্রক্রিয়া। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, নিঃসঙ্গতা মানেই একা সম্পর্ক বা একা একা হয়ে যাওয়া নয়, বরং এটি মনের এমন একটি একা উপলদ্বি যা আমাদের মনকে বাইরের সব কিছু থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এই একাকীত্ব বা নিঃসঙ্গতা যে কোন বয়সের মানুষকে গ্রাস করতে পারে। তবে সম্প্রতি এক গবেষণায় বলা হয়েছে, কিশোর বা তরুণদের চেয়ে কিশোরী বা তরুণীদের মধ্যে একাকীত্বে ভোগার আশঙ্কা বেশি থাকে।

যুক্তরাজ্যের জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা ‘অফিস অব ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকস’ এর জরিপে উঠে এসেছে, ব্রিটেনের প্রতি দশজন তরুণ বয়সীর একজন একাকীত্বে ভোগেন। গবেষণা অনুযায়ী, একাকীত্বকে ‘ব্যর্থতা’ হিসেবে ধরে নেয়া হয় বলে তরুণ বয়সীরা এটিকে ‘লজ্জাজনক’ বলে মনে করে। অনেক তরুণই নিজের একাকীত্বকে লুকানোর জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে বেছে নেয় এবং ভালো থাকার অভিনয় করে।

পরিসংখ্যান সংস্থাটির মতে, ১০ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের শতকরা ১১ ভাগ প্রায়শ:ই নিঃসঙ্গ বোধ করে এবং শতকরা ৩৪ ভাগ মাঝেমধ্যে নিঃসঙ্গ বোধ করে। আর একাকীত্বে ভুগতে থাকা এই তরুণ বয়সীদের মধ্যে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের সংখ্যাই বেশি। কী কারণে মানুষের মধ্যে একাকীত্ব বোধ তৈরি হয় – সেটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হয়েছে এই গবেষণায়।

গবেষণা অনুযায়ী, একাকীত্বে ভোগার অন্যতম প্রধান কারণ কিশোর ও তরুণ বয়সের বয়:সন্ধির সময়কালীন বিভিন্ন পরিবর্তন। প্রাথমিক স্কুল থেকে মাধ্যমিক স্কুলে ওঠার সময়, মাধ্যমিক স্তর থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ওঠার সময় এবং পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের সময় নিঃসঙ্গতা বোধ করার আশঙ্কা বাড়তে থাকে।

গবেষণায় দেখা গেছে, ছোট শহর বা গ্রামে বাস করা তরুণদের চেয়ে শহরে বেড়ে ওঠা তরুণদের নিঃসঙ্গতায় ভোগার প্রবণতা বেশি। এছাড়া আর্থিকভাবে অপেক্ষাকৃত অসচ্ছল পরিবারের তরুণদের একাকী বোধ করার আশঙ্কা বেশি থাকে। অসুস্থতা, পারিবারিক সমস্যা, প্রিয়জনের মৃত্যু বা অপমানের শিকার হলেও একাকীত্ব বোধ তৈরি হয়। আর সমাজের মানুষের কাছে একাকী হিসেবে পরিচিত হতে চাওয়ার ভয়ও মানুষকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার জালে আটকে ফেলে।

সমাজের মানুষের কাছ নিঃসঙ্গ হিসেবে পরিচিত হওয়া বিব্রতকর একটি বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়, কারণ এর ফলে মানুষ ঐ ব্যক্তিকে সামাজিকভাবে অনাকর্ষণীয় বা মানুষের অপছন্দের চরিত্র হিসেবে মনে করতে পারে। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনের সাথে যোগাযোগের অন্যতম একটি উপায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। কিন্তু অনেকেই এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে বেছে নেয় নিজের একাকীত্ব লুকানোর মাধ্যম হিসেবে। গবেষণার অংশ নেয়া অনেকের মতে, সামাজিক মাধ্যমে প্রকৃত বন্ধুত্ব নয় বরং সৌজন্যমূলক বাক্যালাপ হয়ে থাকে।

যার ফলে নিজেদের অন্যদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন মনে করে তরুণ বয়সীরা। এবছরে একাকীত্ব নিয়ে বিবিসি বিবিসি পরিচালিত এক জরিপে সারা পৃথিবী থেকে ৫৫ হাজারের বেশি মানুষ অংশ নেয় এবং জরিপে অংশ নেয়া ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের শতকরা ৪০ ভাগ প্রায়:শ বা প্রতিনিয়তই নিঃসঙ্গ বোধ করে। সুত্রঃ বিবিসি, ইত্তেফাক

বরকে পর করে দিচ্ছেন নাতো?

বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনটির মূল ভিত্তি হল স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা, সম্মান, মনোযোগ, একে অন্যের প্রতি যত্নশীলটা, সামাজিক ও পারিবারিক সম্পর্কগুলোকে মানিয়ে চলা, দায়িত্বশীলতা এবং আর্থিক, মানসিক ও জৈবিক চাহিদা পূরণ।

বিয়ের কিছুদিন স্বভাবতই অনেক আবেগ, মুগ্ধতা ও রোমান্স বিরাজ করে। সবকিছুতেই এক রকমের অদ্ভুত ভালোলাগার অনুভূতির ছোঁয়া পাওয়া যায়। কিন্তু এই মোহটা কিছুদিন পর থেকেই বিলুপ্ত হওয়া শুরু হয় যদি সম্পর্কে কোন নতুনত্ব না থাকে। তাই সম্পর্ক ভালো ও সুস্থ রাখতে সর্বদা সচেতন থাকা অতি আবশ্যক।

বর্তমান আধুনিক সময়ে অনেক স্ত্রী চাকুরি করেন। আমাদের সমাজ এখনো পুরুপুরি আধুনিক হতে পারেনি, এখনো কিছু কিছু ব্যাপারে অনেক রক্ষনশীল মানসিকতা বহন করছে। যেমন- মেয়েরা যত বড় চাকুরিই করুক না কেন রান্না-বান্না ও সংসার সামলানো মেয়েকেই করতে হবে, ছেলেরা করলে যেন তা অনেক বড় পাপ কাজ বলে গণ্য হবে।  তাই চাকুরিজীবি মেয়েদের উপর থাকে চাকুরি ছাড়াও রান্না-বান্না ও সংসার সামলানোর সকল দায়িত্ব ও কর্তব্য।  সবকিছু সামলিয়েও মেয়েদের আরেকটা বড় দায়িত্ব হল স্বামীকে সন্তুষ্ট রাখা। তার ছোট ছোট ব্যাপারে যত্নশীল থাকা, সকল চাওয়া পূরণ করা যাতে তার জীবনে কোন অপ্রাপ্তি বা অপূর্ণতা না থাকে। কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে ভালোবাসা, আদর, মনোযোগ না পেলেই স্বামীর ভালোবাসা, ভালোলাগা, আকর্ষণ সব ধীরে ধীরে কমতে থাকে যা ভবিষ্যতে সংসারে অশান্তি বা পরকীয়ার মত ঘটনার সূত্রপাত হয়। তাই বরের প্রতি সবসময় যত্নশীল থাকা অতি জরুরি।

আবার, বর্তমান সময়ে মানুষ তার সন্তানের প্রতি আগের থেকে অনেক বেশি উদ্বেগী ও যত্নশীল হয়ে গেছে। সন্তানের ছোট ছোট চাহিদা পূরণের জন্য বিশেষ করে মায়েরা অনেক বেশি সচেষ্ট। এর মাঝে অনেকেই ভুলে যায় তার আরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে। সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হল তার বরের প্রতি। বর যখন এত সময় ধরে তার বউ এর কাছ থেকে সবটা মনোযোগ ও যত্ন পেয়ে অভ্যস্ত হয়ে যায় তখন হুট করে না পাওয়াটা অনেক বেশি অপ্রত্যাশিত হয়ে যায় যা তার অনুভূতিতে অন্যরকম খারাপ একটা প্রভাব ফেলার একটা সম্ভাবনা থাকে। যেমন- সন্তানের কারণে তার আর আগের মত মনে বাসনা হলেই স্ত্রীর কাছে যাওয়ার সুযোগ না পাওয়া, আগের মত রোমান্স না করতে পারা ধীরে ধীরে শারীরিক দুরত্বের তৈরি করে।

বর বাসায় ফেরার পরে আগের মত বরের দিকে খেয়াল না রাখা, তার দৈনন্দিন বাইরের নানাবিধ কার্যকলাপ নিয়ে আলোচনা না করা, কোন দুশ্চিন্তা থাকলে তা ভাগ না করা, তাদের গল্পের বিষয় শুধু বাচ্চাটির দুধ, ডায়াপার, বাচ্চাটি নতুন কি কাজ করেছে, বাচ্চাটির আর কি কি লাগবে এইসব বিষয়েই সীমাবদ্ধ থাকলে মোট কথা বাচ্চার ব্যাপারে ওভার পসেসিভ থেকে বরকে গুরুত্ব না দিলে মানসিকভাবেও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দুরত্ব তৈরি হয়।

যতকিছু হোক না কেন সর্বদা স্বামীর প্রতি এক প্রকার নজরদারি বহাল রাখতেই হয়। বাচ্চা হলেই সাধারণত মেয়েরা একটু মোটা হয়ে যায় বা চেহারার যত্ন নেয়ার সময় না পাওয়ায় চেহারাও নষ্ট হয়ে যায় এইসবের প্রতি যত্নশীল থাকতে হবে। কারণ সৌন্দর্যটাও স্বামীর মন যোগাতে অনেকাংশে প্রভাব ফেলে। সবকিছুর পরেও বরকে তার মত করে সময় দিতে হবে, তার কাজের প্রশংসা করতে হবে, তাকে মুগ্ধ করে এমন কিছু করা, তার সাথে টিভি দেখা, ঘুরতে যাওয়া, বিশেষ দিনগুলো তার সাথে উদযাপন করার মাধ্যমে তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে স্বস্তি দিতে হবে। অন্যথায়, বর একাকীবোধ করা থেকে অনেক খারাপ কিছুতে নিজেকে জড়িয়ে ফেলতে পারে। আর একবার শারীরিক ও মানসিকভাবে দুরত্ব তৈরি হয়ে গেলে তা দূর করতে অনেক সময় ও শ্রম লেগে যায় তাই শুরু থেকেই সচেতন থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ।

সঙ্গীকে একটু ছাড় দিন এতে বাড়বে ভালোবাসা

স্বামী ও স্ত্রী অথবা প্রেমিক ও প্রেমিকা ভিন্ন দুইজন মানুষ, ভিন্ন পরিবার ও পরিবেশে তাদের বেড়ে ওঠা তাই দুইজন একে অন্যের থেকে ভিন্ন হবে এটাই খুব স্বাভাবিক। সুতরাং দুইজনের সব পছন্দ অপছন্দ মিলানো টা নেহায়েত বোকামি ছাড়া আর কিছু না। সহনশীলতার সাথে নিজের অবস্থান থেকে একে অন্যকে বোঝার চেষ্টা করাটাই শ্রেয়।

একটা মানুষ যখন জীবনের অনেকগুলো বছর তার মত করে অতিবাহিত করে একটা সময় পর প্রেম বা বিয়ে নামক একটা বন্ধনে আবদ্ধ হয়, তখন সম্পর্ক বা বিয়ের অন্তরালে অনেক সময়ই তার সঙ্গীটি তার প্রতি অতি আবেগে বা অধিকারবোধ ফলাতে গিয়ে সঙ্গীটির পরিবার ও বন্ধু-বান্ধব থেকে তাকে দূরে সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করে। কিছু ক্ষেত্রে তা সফল হয় কিছু ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয় সমস্যার। অতিরিক্ত সবকিছুই খারাপ বলে একটা প্রবাদ খুবই প্রচলিত। কথাটির সত্যতা যাচাই করার কোন অবকাশ নেই। ভালোবাসার মানুষটাকে যত্ম করা বা হারানোর একটা ভয় মানুষের মধ্যে কাজ করাটাও অস্বাভাবিক কিছু নয় তাই সঙ্গীটি কোন কোন বন্ধুর সাথে মিশছে, কোথায় কোথায় যাচ্ছে, কি কি করছে খোঁজ রাখাটা অপর সঙ্গীর কাজ হলেও তা করতে হবে অতি সুক্ষভাবে যাতে সঙ্গী কিছুতেই বুঝতে না পারে। সম্পর্ক  অনেক আবেগময় আর কিছুটা বাস্তবিক এটা মনে রাখা অত্যন্ত জরুরি।

কোন মানুষই নিখুঁত হয় না তাই সঙ্গীর দোষগুলোকে নেতিবাচকভাবে না নিয়ে ইতিবাচকভাবে নিয়ে সেগুলোর প্রশংসা করলে সঙ্গী্র ভালোলাগা থেকে সম্পর্কটাও আরো জোরালো হয়। কোন কিছুতে মতের অমিল হলে ঝগড়া না করে তার সাথে কথা বলা উচিৎ। সমাধান না হলে তার চিন্তানুযায়ী ভেবে সমাধান খুজে বের করা অথবা নিজেকে তার মত করে কিছুটা মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলে অনেক ক্ষেত্রেই সেটার ফলাফল ভালো হয়।

সঙ্গীদের পরস্পরকে এবং পরস্পরের পরিবারকে জানার ও বোঝার চেষ্টা করতে হবে। সঙ্গীকে নিজের কাছে আগলে না রেখে তার পরিবারের সাথে সময় কাটানোর মত সুযোগ দিতে হবে। এতে পরস্পরের প্রতি পরস্পরের শ্রদ্ধার সাথে সাথে বাড়বে ভালোবাসাটাও। বর্তমান প্রতিযোগিতার সময়ে মানুষ তার ক্যারিয়ার নিয়ে অনেক বেশি সচেতন। সুন্দর একটা ভবিষ্যত স্বপ্নকে ঘিরে অনেকেই অতি ব্যস্ততায় দিন যাপন করছে। তাই সঙ্গীকে কাঙ্খিত পর্যাপ্ত সময় দিতে ব্যর্থ হওয়ায় সঙ্গীর অনেক অভিমান ও অভিযোগের জন্ম নেয়। এমতাবস্থায় একটু বোঝা উচিৎ যে সঙ্গী যা করছে তা তাদের ভালোর জন্যই করছে। অভিযোগের পরিবর্তে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে ব্যাপারটা হয় আরও সুখময়। অপরদিকে সঙ্গীরও উচিৎ তার ব্যস্ততার মাঝে একটু সময় বের করে তার সঙ্গীটিকে সময় দেয়া।

ছোটখাট এইসব ছাড়ের মাধ্যমেই ভালোবাসার গভীরতা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। ভালোবাসার মানুষটার প্রতি অতি আবেগ ও যত্ম থেকে তৈরি হয় এক প্রকারের দ্বায়বদ্ধতা যা অনেক সময় ধংসাত্মকও হতে পারে। সব মানুষের নিজেস্ব যে একটা পরিসর থাকে তাতে তাকে একটু ছেড়ে দিলে স্বস্তির সাথে সাথে বাড়বে আপনার প্রতি তার মুল্যবোধও। যেমন সঙ্গীর কোন সময় ইচ্ছে হতেই পারে কিছুটা সময় একা থাকার। ফোন বা যোগাযোগ মাধ্যম থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখার। এতে রাগ না করে জোরপূর্বক আদায় না করে তাকে একটু সময় দিন। দেখবেন সম্পর্কের দ্বায়বদ্ধতা মধুরতায় পরিণত হবে। আবার কোন কারণে আপনার সঙ্গীর মেজাজ খারাপ থাকলে সেক্ষেত্রে তাকে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করুন নয়তো চুপ থেকে তাকে নিজেকে সামলানোর সময় দিন। মেজাজ ঠান্ডা হলে সে নিজেই আপনার সাথে স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

মানুষ মাত্রই ভুল করবে আর সেটা শোধরানোর দায়িত্বও সঙ্গীর কিন্তু সেটা কখনোই কারো সামনে করে তাকে অপমান করা যাবে না। এতে নিজেদের বোঝাপড়ায় ফাটল তৈরি হবে। আরও কিছু ব্যাপার যেমন মাঝে মাঝে সঙ্গীকে খুশি করার জন্য তাকে দেখতে ভালো না লাগলেও সেটা প্রকাশ না করে প্রয়োজনে তাকে সুন্দর লাগার মিথ্যা প্রশংসা করে তাকে ভালো অনুভূতি দিতে পারেন। কোন বিশেষ দিন ভুলে যাওয়া কখনোই কারো ভালবাসার মাপকাঠি হতে পারে না তাই সেগুলো ধরে না রেখে তাকে সেটা মনে করে দিয়ে নিজেই সেটা উদযাপন করা শুরু করুন দেখবেন সঙ্গীটিরও ধীরে ধীরে তা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে।

সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া মানে জীবন শেষ নয়

ভালোবাসায় ভরা ছোট্ট একটা ঘরের স্বপ্ন কে না দেখে। কেউ হয়তো তার সঙ্গীর হাতে হাত রেখে সারা জীবন একসাথে চলার স্বপ্ন দেখে।কিন্তু সেই ভালোবাসার মানুষটি কিছুক্ষণের জন্য দূরে গেলে আমাদের পৃথিবীতে নেমে আসে অন্ধকার, সেখানে যদি ভালোবাসার মানুষটি সম্পর্কচ্ছেদ করে চলে যান তাহলে মানসিকভাবে ভেঙে পরাটা খুব স্বাভাবিক।ভালোবাসার মানুষটির সাথে বিচ্ছেদ যেনো জীবনটাকে থমকে দেয়।

কিন্তু ভেঙে পড়ে সারাজীবন তো আর থাকা যায় না।তাই আমাদের নিজেদেরকেই সামলে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে সামনে। নতুন ভাবে উঠে দাঁড়াতে হবে, ভুলে যেতে হবে পুরোনো ফেলে আসা স্মৃতি।এক্ষেত্রে প্রেম ও দাম্পত্য সম্পর্কে ভেঙে গেলে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে যা করবেন-

নিজেকে দোষারোপ করবেন না: একটা সম্পর্ক অনেকগুলো কারণেই ভেঙে যেতে পারে। অনেকদিনের সম্পর্ক অনেক গুরুতর কারণে অথবা অনেক ছোট কারণেও ভেঙে যেতে পারে। হতে পারে সেক্ষেত্রে দুই পক্ষের বোঝাপড়ার সমস্যা ছিল, অথবা যোগাযোগের ঘাটতি ছিল। কিন্তু কখনো ভুলেও নিজেকে সম্পর্ক ভাঙার জন্যে মনে মনে দোষারোপ করবেন না।

নিজেকে সময় দিন: সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর সাধারণত আমরা যে জিনিসটি করি, তা হলো খুব বেশি অস্থির হয়ে পড়ি, একটি সম্পর্ক ভাঙার হতাশা থেকে বের হতে না হতেই আরেকটা সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি। একটি ভাঙা সম্পর্ক থেকে কিন্তু আমরা শিখতে পারি পরবর্তীতে আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কী করণীয় বা কী বর্জনীয় হবে। তাই বিচ্ছেদের পর নিজেকে সময় দিন, নিজেকে আরও একটু ভালোবাসতে চেষ্টা করুন।  হুটহাট করে নতুন আরেকটি সম্পর্কে নিজেকে জড়িয়ে অবস্থা আরও জটিল করে তুলবেন না।

নিজের যত্ন নিন:  খেতে ইচ্ছে করবে না, ঘুম হবে না- এগুলো এ সময় খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু এই হতাশা থেকে বের হয়ে আসতে গেলে আপনাকে নিজের প্রতি আরও বেশি যত্নবান হয়ে উঠতে হবে। পরিমিত পুষ্টিকর খাবার খান, তাজা ফলমূল খান। ঘুমাতে চেষ্টা করুন আর অবশ্যই ব্যায়াম করুন। শরীর চনমনে থাকলে মন ভালো হতে সময় লাগবে না।

একা থাকবেন না: এই সময়টাতে আপনি যত বেশি একা থাকবেন, আপনার জন্যে সময়গুলো ততবেশি কষ্টদায়ক হয়ে উঠবে। তাই এই সময়গুলোতে একা না থেকে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে বের হোন। বন্ধুদেরকে না পেলে পরিবারের মানুষদের সঙ্গে সময় বের করে বেরিয়ে পড়ুন।

ভ্রমণ করুন, নতুন বন্ধু তৈরি করুন:  মনের ভার কমাতে এবং মাথা একদম পরিষ্কার করে ফেলতে ভ্রমণ সবসময়ই অনেক বেশি উপকারী। বন্ধুদের সঙ্গে শুধু কাছে-কূলে নয়, প্ল্যানিং করে নতুন কোনো জায়গায় ভ্রমণ করতে বেড়িয়ে পড়ুন। নতুন পরিবেশ, নতুন স্থান, নতুন মানুষ- আপনার মনের পুরাতন স্মৃতিগুলোকে হালকা করে দিতে সাহায্য করবে অনেকটাই।

নেতিবাচক চিন্তা বাদ দিন: সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর অনেক সময় বেঁচে থাকাও অর্থহীন মনে হতে থাকে। অনেকে আত্মহত্যার মতো আত্মবিধ্বংসী চিন্তা পর্যন্ত করতে শুরু করি। আপনাকে এই নেতিবাচক চিন্তার পুরোপুরি বিপরীতে যেতে হবে, প্রমাণ করতে হবে আপনি এতোটা দুর্বল, এতোটা ঠুনকো নন।

ইতিবাচক মনোভাব সম্পন্ন মানুষদের সাথে সময় কাটান: একটা সম্পর্ক ভেঙে গেলে একজন মানুষ মানসিকভাবে নিতান্তই ভেঙে পড়েন, এখন এই অবস্থার মধ্যে যদি আশেপাশের মানুষগুলো প্রতিনিয়ত চোখে আঙুল দিয়ে সবটা বার বার সামনে নিয়ে আসে অথবা কটু কথা বলতে থাকে, তাহলে ভাঙা মন আবার জোড়া লাগা সত্যিই অসম্ভব। চারপাশে ইতিবাচক ও সহায়ক মানসিকতা সম্পন্ন মানুষ থাকলে আপনি খুব দ্রুতই আবার নিজের উপর আস্থা ফিরে পাবেন।

অতীত কে অতীতেই থাকতে দিন:  যদি সত্যিই চেয়ে থাকেন অতীতের গ্লানি থেকে বের হয়ে আসবেন, তাহলে বারবার সেই অতীতেই ফিরে যাবেন না। শুধু চেষ্টা করুন অতীতের ভাঙা সম্পর্কটিকে একটি শিক্ষা হিসেবে নিতে, পাথেয় হিসেবে নয়।

দায়িত্ব নিতে শিখুন: যা হওয়ার তা তো হয়েই গিয়েছে, এবার নিজেকে বা ভালোবাসার মানুষটিকে দোষারোপ করে হা-হুতাশে জীবন অতিবাহিত না করে পরিবার, বন্ধু বা কাছের মানুষগুলোর ভালো থাকার জন্য ছোটখাটো দায়িত্ব নিন। যখন দেখবেন সামান্য কিছুতেই আপনি কারো মুখে হাসি ফোটাতে পারছেন তখন আর সব অপ্রাপ্তি এবং কষ্টগুলো ম্লান হতে থাকবে।

যা করতে ভালো লাগে তা-ই করুন: ভাঙা মন নিয়ে কোনো কিছুতে মনোনিবেশ করা অনেক কঠিন। কিন্তু সম্পর্ক ভাঙার হতাশা থেকে বের হয়ে এসে জীবনকে নতুনভাবে উপভোগ করতে চাইলে আপনাকে এসব কিছুর উপর আগ্রহ ফিরিয়ে আনতে হবে। আপনার যা মন চায়, যেভাবে আপনি নিজেকে আবার প্রাণোচ্ছল করে তুলতে সক্ষম বলে মনে হয়; সেটাই করুন। সহজ কথায়, নিজেকে ব্যস্ত রাখুন, দেখবেন হতাশা কাটতে শুরু করছে।

একটি সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া মানে জীবনের শেষ নয়, বরং নতুন করে আবার সবকিছু শুরু হওয়া। কিছুটা সময় নিয়ে নিজেকে আবার প্রস্তুত করুন, সমস্ত খারাপ চিন্তা-ভাবনার বিপরীতে গিয়ে নিজেকে প্রমাণ করুন। আপনার মধ্যে কী কী গুণ রয়েছে সেগুলোকে কাজে লাগান। কমপক্ষে এই সময় নিজের মনের কথাগুলো শুনুন, যদি মনে হয় ভেঙে যাওয়া সম্পর্কে আপনারও কিছু ভুল ছিল, তাহলে সেটা শুধরে নিতে চেষ্টা করুন। তবে ভুলেও সারাজীবনের জন্য নিজেকে অপরাধী করে রাখবেন না নিজের কাছে। এই মানুষই ভুল করে, আবার মানুষই নিজেকে শুধরে নেয়।  সংকলিত,সূত্র :নতুন সময়, রোয়ার মিডিয়া, দৈনিক আমাদের সময়

এক তরফা প্রেম নেশার মত, বিচ্ছেদের থেকেও যন্ত্রণাদায়ক!

আপনাকে ভালোবাসে না, অথচ আপনি তাকে মন-প্রাণ উজার করে ভালোবাসেন। হ্যা, এটা কে একতরফা ভালোবাসা বলে। কিন্তু তার ভালোবাসা পাবেন এই আশায় কতদিন আপনি একা একা অপেক্ষা করবেন?

বুকের সীমাহীন ভালোবাসার মূল্যায়ন না পেয়ে হাজারো প্রকৃত প্রেমিক প্রেমিকার হৃদয় ভাঙার গল্প রয়েছে। কিন্তু সেই কাঙ্খিত মানুষটি যদি একটু গুরুত্ব দিত তা হলে কত জীবনই না বদলে যেত। এ অভাবেই থেকে যায় একটি হৃদয়ের প্রতি অপর একটি হৃদয়ের একতরফা ভালোবাসা।  চাইলেও কাঙ্খিত ব্যক্তিকে ভুলে যাওয়া যায় না। সত্যি বলতে সম্ভব হয় না। কী করেই বা সম্ভব, মনের মন্দির তো তার ফিরে আশার প্রদীপ জ্বেলে অপেক্ষায় থাকে।  আর সেজন্যই একটি মানুষের হাজারো অবহেলা সয়েও তবুও তার জন্য অপেক্ষা করা।  কিন্তু এভাবে কতদিন অপেক্ষা করা যায়?

প্রথমেই বলা হয়েছে একতরফা প্রেম/ভালোবাসা কাকে বলে। তবে এধরণের প্রেমে পড়া কী উচিত বা এমনটা হলে কীভাবে নিজেকে নিজের জায়গায় ফিরিয়ে আনা যায়? এপ্রশ্ন অগুণিত মানুষের।

একতরফা প্রেমে কী কখনো হৃদয় ভাঙে?
এমন প্রশ্ন প্রসঙ্গে ভারতের মনোবিজ্ঞানী ও সম্পর্ক-বিশেষজ্ঞ প্রিতি সাইনি জানিয়েছেন, মূলত হৃদয় ভাঙা বলতে সেটাই বুঝায় যেখানে দু পক্ষের স্বীকৃতিতে প্রেম হয়েছিল। কিন্তু কোনো কারণে তা চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছায় না। আবার একতরফা ভালোবাসাতেও এটা সত্য। এখানে তো একজনের ক্ষেত্রে অবশ্যই। যেখানে আপনার অনুভূতি ছিল কিন্তু তা প্রকাশ পায়নি বা প্রকাশ পেলেও স্বীকৃতি পায়নি। কখনো কখনো এই একতরফা ভালোবাসার অনিশ্চয়তার জন্যই কষ্টের কারণ বেড়ে যায়।  হয়তো কাঙ্খিত ব্যক্তি এক সময়ে ভালোবাসা বুঝতে পারবে, স্বীকৃতি দিবে- এ আশা মন থেকে দূর করা উচিত।  যে কারণে হৃদয় ভাঙার কারণ প্রত্যাখান নয়।  আর স্বীকৃতি না পাওয়াটা হতাশায় থেকে যায়।

সময় প্রয়োজন:
যে আপনাকে ভালোবাসে না তাকে ভালোবাসা এক প্রকার আসক্তি বা নেশার মত। যেখানে আপনার ভালোবাসার কোনো স্বীকৃতি নেই সেখানে প্রত্যাখান হওয়ারও সম্ভাবনা নেই। অযথাই কল্পনা করে তাকে নিয়ে স্বপ্ন না দেখা উত্তম। এতে করে কষ্টের কারণ বেড়ে যায়। ভুল মানুষকে নিয়ে স্বপ্ন দেখার অ্যভাস পরিহার করার জন্য এখনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন, যদি আপনিও একতরফা ভালোবাসায় আসক্ত হয়ে থাকেন। কিছুটা সময় প্রয়োজন হবে, হোক। তবুও ভালো।

যেভাবে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে:
মনোবিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন পরিস্থিতিতে বাস্তবতাকে মেনে নিতে হবে।  তাও সম্ভব না হলে সব সময় নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে। ফলে ভুল করেও সেই মানুষটির কথা আর মনে পড়বে না।  কষ্টের কারণও বাড়বে না। আর যদি বাস্তবতা মেনে নিতে পারেন তাহলে উত্তম হয়। বাস্তবতায় কখনো কোনো আবেগ পৌঁছাতে পারে না। এখানে শুধুই বিবেকবোধ কাজ করে। খুব সহজেই নিজেকে মুক্ত করে সফলতার নতুন পথে পরিচালিত করা যায়।