কেন বিবাহবিডিতে জীবনসঙ্গী খুঁজবেন!

বিয়ে একটি অত্যন্ত পবিত্র বন্ধন। মনে করা হয় দুটি মানুষের এই বন্ধন জন্ম জন্মান্তরের। সামাজিক নিয়মে এ বন্ধনে আবদ্ধ হয় দুজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী ও পুরুষ। বিয়ে শুধু দুজন ব্যক্তির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তৈরী করে দুটি পরিবারের মধ্যে সামাজিক বন্ধন।

বিয়ে নিয়ে মানুষের মনে স্বাভাবিক ভাবেই থাকে নানান আশা ও স্বপ্ন, থাকে উত্তেজনা, চিন্তা দুশ্চিন্তা ও ভাবনা। আবার বিয়ের ব্যাপারে অনেকেই মানুষিক ভাবে নিজেকে প্রস্তুত করতে পারে না। এর প্রধান ও অন্যতম কারন হলো পছন্দ মত যোগ্য জীবনসঙ্গী খুঁজে না পাওয়া।

দীর্ঘ ১ যুগের বেশী সময় ধরে আমরা এই সমস্যাটির সহজ ও দ্রুত সমাধান দিচ্ছি – বাংলাদেশী ও প্রবাসী পাত্রপাত্রী সন্ধানের জন্য সম্পূর্ন অনলাইন ভিত্তিক ২৪ ঘন্টা কল সেন্টার সার্ভিস নিয়ে সর্বোক্ষনিক সেবা নিশ্চিত করছে বিবাহবিডি ডট কম সার্ভিস টিম।

বিবাহবিডি ডট কম একটি অনলাইন বেইজড সার্ভিস ওয়েব পোর্টাল। এ পোর্টালের সদস্য হয়ে আপনি নিশ্চিত খুঁজে পেতে পারেন আপনার পছন্দমত যোগ্য জীবনসঙ্গী।

আসুন জানি কেন বিবাহবিডিতে পাত্রপাত্রী খুঁজবেন
বিবাহবিডি সম্পূর্ন অনলাইন ভিত্তিক সেবা নিশ্চিত করে। অনলাইনের মাধ্যমে ঘরে বসেই বিবাহবিডি ডট কম আপনার পছন্দমত পাত্রপাত্রী খুঁজে দিতে সহায়তা করবে।

বিবাহবিডি পোর্টালে লগ ইন করে পছন্দের প্রফেশন, পাত্র-পাত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, জেলা / এলাকা ভিত্তিক, প্রবাসী, বৈবাহিক অবস্থা (যেমন – অবিবাহিত, ডিভোর্স, বিধবা অথবা বিপত্নীক), ধর্ম, গোত্র, বর্ণ সহ ১৮ টি সার্চ ক্যাটাগরীর মাধ্যমে চাহিদা অনুযায়ী আপনার কাংখিত সংঙ্গীকে সহজেই খুঁজে সরাসরি নিজেরাই যোগাযোগ করতে সক্ষম হবেন।

বিবাহ বিডি প্রোফাইল এক্টিভেট/সক্রিয় করার পূর্বে নিজস্ব কাষ্টমার সাপোর্ট টিম তা তিন স্থরের ভেরিফাই করে ।

পাত্র-পাত্রীর প্রোফাইল ভেরিফিকেশনের জন্য জাতীয় পরিচয় পত্র / জন্ম নিবন্ধন / একাডেমিক সার্টিফিকেট/ প্রবাসীদের জন্য ভিসা, পাসপোর্ট / ডিভোর্সদের জন্য ডিভোর্স সার্টিফিকেট যাচাই করে বিবাহবিডিতে একটি প্রোফাইল একটিভ করা হয় যার ফলে আপনি একজন পাত্র/পাত্রী পরিচয় বিষয়ক সঠিক তথ্য পাবেন।

বিবাহ বিডি ডট কম এর ব্যাপ্তি বিশ্বব্যপী এবং এটি সমকালীন একটি আধুনিক সেবা। তাই বিশ্বের যেকোন দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাত্র-পাত্রী বা অভিভাবকগন প্রোফাইল দেখে নিজেরাই সরাসরি পাত্র/পাত্রী বা কাংখিত প্রোফাইলের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

বিবাহবিডি থেকে আপনি জীবনসঙ্গীর খোঁজ পাবার পর বিবাহবিডি আপনার কাছে কখনোই কোন সার্ভিস চার্জ দাবি করবেনা। বরংচ বিবাহবিডিতে আপনার সাক্সেস ষ্টোরী শেয়ার করলে বিবাহবিডিই আপনাকে অভিনন্দন জানিয়ে আপনার ঠিকানায় গিফট পাঠাবে।

সার্ভিস সংক্রান্ত যেকোন তথ্য ও সাপোর্টের জন্য ২৪ ঘন্টা ৭ দিনই হট লাইন ইউজার সাপোর্ট প্রস্তুত থাকে ।

আপনি বিবাহবিডিতে প্রোফাইল রেজিষ্ট্রেশন করার আগেই জানতে পারবেন আপনার চাহিদা অনুযায়ী কতজন সম্ভাব্য পাত্র পাত্রী বিবাহবিডিতে রয়েছে।তাই আপনার অথবা আপনার পরিবারের কোন সদস্যের জন্য যদি পাত্র/পাত্রী খুঁজে থাকেন তাহলে নিশ্চিন্তে বিবাহবিডি ডট কম ওয়েব পোর্টালে রেজিষ্ট্রেশন করুন। বিবাহবিডি ডট কম একটি নিরাপদ ও বিশ্বাসযোগ্য ওয়েব পোর্টাল ২৪ ঘন্টা / ৭ দিনই হট লাইন ইউজার সাপোর্ট প্রস্তুত থাকে।

লাভ বম্বিং

সঙ্গীর কাছ থেকে মনোযোগ পেতে কে না ভালবাসেন! ভাবুন তো, প্রেমের শুরুর দিকেই যদি কেউ রোজ আপনাকে দামি দামি উপহার দিয়ে মন ভোলান তাহলে আপনার কাছেও সম্পর্কটা বড্ড রঙিন ঠেকবে এটাই স্বাভাবিক। হিরের নেকলেস, দামি রেস্তরাঁয় খাওয়ানো, লং ড্রাইভে নিয়ে যাওয়া ইত্যাদি যতরকমের উপায় আছে আপনাকে ইমপ্রেস করার তার মোটামুটি সবক’টাই করে ফেলেছেন আপনার সঙ্গী। আপনিও প্রথম দিন থেকেই তাঁর ব্যবহারে মুগ্ধ। তবে ধীরে ধীরে সম্পর্কের আসল খোলসটা উপলব্ধি করতে শুরু করেন আপনি। প্রাথমিক বিমুগ্ধতা কাটিয়ে তখন উন্মোচিত হয় সম্পর্কের তিক্ত রূপ। ডেটিংয়ের দুনিয়ায় এই নতুন ট্রেন্ডের নাম হল লাভ বম্বিং!

প্রথমদিকে আপনার মন জুগিয়ে চলে আপনার বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করাই হয়তো আপনার সঙ্গীর উদ্দেশ্য। একেবারে আপনার মনের মতো হয়ে উঠতে ঠিক যেমন যেমন আচরণ করা দরকার, তিনি সেগুলোই করছেন। সবসময়ই আপনার কাছাকাছি, পাশাপাশি থাকছেন। আপনার ছোটবড় সব বিষয়ে বড্ড বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন। আবার খরচ করে দামি উপহার দিতেও দ্বিধা করছেন না। আর সবকিছুই এত দ্রুত ঘটছে যে আপনি উলটোদিকের মানুষটাকে পরখ করে দেখার অবকাশটুকুও পাচ্ছেন না। আর ক্রমেই তাঁর উপর বাড়ছে আপনার নির্ভরশীলতা।

‘পারফেক্ট পার্টনার’ পেয়ে গেছেন ভেবে আপনিও নিজের শরীর-মন উজাড় করে দিচ্ছেন। এই পর্যন্ত ঠিকঠাক চললেও, কিছুদিনের মধ্যেই হয়তো আপনার সঙ্গী আপনার এই অত্যধিক নির্ভরশীলতা ও আবেগের সুযোগ নেবেন। অনেকক্ষেত্রেই অনেকে উলটোদিকের মানুষটিকে সচেতনভাবেই ‘লাভ বম্বড’ করেন।

প্রাথমিক ভালবাসার পর্ব পেরিয়ে গেলে তখন তাঁরা আর আগের সঙ্গীর প্রতি অনুরক্ত থাকেন না। অনেকে তো আবার সম্পর্কের কোনও অস্তিত্বই স্বীকার করেন না! আগে থেকে তা বোঝা খুবই মুশকিল। কিন্তু যখন বুঝতে পারলেন তখন হয়তো আপনি এতটাই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন যে তখন আপনার জায়গা কোনও মনোবিদের চেম্বারে! ডেটিংয়ের মূল উদ্দেশ্য একে অপরকে আরও ভালভাবে চেনা। কিন্তু সেই ডেটিং পিরিয়ডেই যদি পার্টনারের কিছু কিছু আচরণে সন্দেহ হয়, তাহলে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।

প্রথমদিকে ভালবাসার ভান করলেও যদি দেখেন দিনে দিনে তিনি আপনার জীবনের উপর নিয়ন্ত্রণ আনতে চাইছেন, তাঁর ইচ্ছেটাকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন বেশি তাহলে সতর্ক হোন।যদি আপনার পার্টনার সারাদিনই আপনাকে প্রেম নিবেদন করতে থাকেন, আপনার সম্পর্কে সবসময়ই খুব ভাল ভাল কথা বলেন বা দামি উপহার দেন, তাহলেও একটু ভেবে দেখুন।প্রথম প্রথম আপনার মন জুগিয়ে চললেও কিছুদিন পরেই আপনার কাছ থেকে নানারকম সাহায্য বা অনুরূপ ব্যবহার তিনি প্রত্যাশা করতে পারেন। না দিলে অনেকসময় অশান্তিও হয়। লাভ বম্বাররা আপনাকে আর্থিকভাবে ক্ষতিও করতে পারে।

আবার একইসঙ্গে সায়কলজিকাল অ্যবিউজ়ও এর একটা বড় দিক। আপনি পরিবারের লোক বা বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটালে তা অনেক লাভ বম্বারেরই পছন্দ হয় না। এই পজ়েসিভনেস যদিও প্রায়শই নকল হয়!আজকের যুগে অনেকেই ডেটিংয়ের নামে নিছকই টাইমপাস করতে চায়। দীর্ঘকালীনসম্পর্ক বা বিয়ের কথা ভাবেই না। তাই, প্রথম থেকেই পার্টনারকে চেনার চেষ্টা করুন। তাঁর আবেগ, তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা ইত্যাদি সময় নিয়ে যাচাই করুন।

প্রত্যাশার উর্দ্ধে সম্পর্ক

বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে তারা নিজেদের জীবনে সম্পর্কগুলিকে যেভাবে বজায় রাখেন, সেটিই মূলত তারা যেভাবে বেঁচে থাকেন তার মান নির্ধারণ করে। এটি যখন আপনার জীবনে এতখানি গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা পালন করছে, তখন এটির দিকে নজর দেওয়ার প্রয়োজন আছে। কোন একটি সম্পর্কের ভিত্তি কী? মানুষের সম্পর্কের প্রয়োজন কেন পড়ে? বিভিন্ন স্তরে সম্পর্ক তৈরি হয়; বিভিন্ন ধরণের চাহিদা পূরণের জন্য বিভিন্ন ধরণের সম্পর্ক রয়েছে। চাহিদাগুলি শারীরিক, মানসিক, আবেগ সংক্রান্ত, সামাজিক, অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক হতে পারে – এগুলি যে কোনও ধরণের হতে পারে। 

জীবনের এই অংশটি নিজেই একটি সম্পূর্ণ সত্তা – কেন এটি অসম্পূর্ণ বোধ করছে? কেন এটি অন্য একটি জীবনের সাথে অংশীদারি করে নিজেকে পরিপূর্ণ করার চেষ্টা করছে?

সম্পর্কের প্রকৃতি যাই হোক না কেন, সম্পর্কের ধরণ যাই হোক না কেন, তবুও আসল ব্যাপারটি হলো আপনার একটি চাহিদা আছে যেটা পূরণ করা প্রয়োজন। “না, আমার কিছু পাওয়ার নেই, আমি দিতে চাই।” দেওয়াও গ্রহণ করার মতই একটি প্রয়োজন। “আমাকে কাউকে কিছু দিতে হবে” – এটি “আমাকে কিছু পেতে হবে” এর মতোই একটি চাহিদা। এখানেও একটা চাহিদা আছে। চাহিদাগুলি ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে, সেই অনুযায়ী সম্পর্কগুলিও বৈচিত্র্যময় হতে পারে।  

মানুষের ভেতর চাহিদা বেড়ে গেছে কারণ তাদের মধ্যে অসম্পূর্ণতার একটি বিশেষ অনুভূতি আছে এবং লোকেরা নিজের ভিতরে একটি বিশেষ পরিপূর্ণতা অনুভব করার তাগিদে সম্পর্ক তৈরি করছে। আপনি যখন আপনার কোন প্রিয়জনের সাথে ভাল সম্পর্ক রাখেন তখন আপনি নিজেকে সম্পূর্ণ অনুভব করেন। আপনার যখন সেটা থাকে না, আপনি অসম্পূর্ণ বোধ করেন। কেন এমনটা হয়? জীবনের এই অংশটি নিজেই একটি পরিপূর্ণ সত্তা – কেন এটি অসম্পূর্ণ বোধ করছে? কেন এটি অন্য একটি জীবনের সাথে অংশীদারি করে নিজেকে পরিপূর্ণ করার চেষ্টা করছে? মূল কারণটি হ’ল আমরা এই জীবনটিকে তার পূর্ন গভীরতা এবং মাত্রায় অনুসন্ধান করিনি। যদিও এটিই হলো ভিত্তি, সম্পর্কের একটি জটিল প্রক্রিয়া রয়েছে। 

প্রত্যাশার উৎস

যেখানে সম্পর্ক আছে সেখানে প্রত্যাশাও রয়েছে। বেশিরভাগ লোকেরা এমন সব প্রত্যাশা করে চলেছে, যা এই গ্রহের কোনও মানুষই কখনও পূরণ করতে পারে না । বিশেষত একটি পুরুষ-নারী সম্পর্কের ক্ষেত্রে, প্রত্যাশাগুলি এতটাই বেশি যে আপনি কোনও দেব-দেবীকে বিয়ে করলেও তারা আপনাকে ব্যর্থই করবে। আপনি যখন প্রত্যাশা বা প্রত্যাশার উৎস বুঝতে অক্ষম, তখন আপনি প্রত্যাশা পূরণ করতেও পারবেন না। তবে আপনি যদি এইসব প্রত্যাশাগুলির উৎস বুঝতে পারেন, তাহলে আপনি একটি খুব সুন্দর সম্পর্ক তৈরি করতে পারেন। 

যদি আপনি নিজের স্বাভাবিক প্রকৃতিতেই খুশি থাকেন, সম্পর্কগুলি আপনার কাছে সুখ খোঁজার উপায় না হয়ে নিজের আনন্দ প্রকাশ করার একটি মাধ্যম হয়ে উঠবে।

মূলত, আপনি সম্পর্ক খুঁজতে যান কেন ? কারণ আপনি দেখবেন যে আপনার জীবনে কোনও ধরণের সম্পর্ক ছাড়া আপনি হতাশ হয়ে পড়বেন। আপনি একটি সম্পর্ক চাইছেন কারণ আপনি সুখী হতে চান, আপনি আনন্দে থাকতে চান। বা অন্য কথায় আপনি অপর এক ব্যক্তিকে আপনার সুখের উৎস হিসাবে ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন। আপনি যদি নিজের প্রকৃতিতেই খুশি থাকেন, তবে সম্পর্কগুলি আপনার জন্য সুখ খোঁজার প্রচেষ্টা না হয়ে আপনার আনন্দ প্রকাশ করার একটি মাধ্যম হয়ে উঠবে। আপনি যদি কারও কাছ থেকে সুখ নিঙড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন এবং সেই ব্যক্তি যদি আপনার কাছ থেকে‌ আনন্দ বার করে নেওয়ার চেষ্টা করে- তবে কিছু সময় পর এটি একটি যন্ত্রনাদায়ক সম্পর্কে পরিণত হবে। শুরুর দিকে এটি ঠিক মনে হতে পারে কারণ কিছু একটা পূর্ণ হচ্ছে। কিন্তু আপনি যদি নিজের আনন্দ প্রকাশ করার জন্য সম্পর্ক তৈরি করেন তবে কেউ আপনার সম্পর্কে অভিযোগ করবে না- কারণ আপনি অন্য ব্যক্তির কাছ থেকে আনন্দ চাইছেন না বরং নিজের আনন্দ প্রকাশ করার প্রক্রিয়াতে আছেন।  

আপনার জীবন যদি সুখের অন্বেষণ না হয়ে, আপনার আনন্দের অভিব্যক্তি হয়ে ওঠে তবে সম্পর্কগুলি স্বাভাবিকভাবেই সুন্দর হয়ে উঠবে । আপনার লক্ষাধিক সম্পর্ক থাকলেও সেগুলিকে ভালভাবে ধরে রাখতে পারেন। অন্য কারোর প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টার এই পুরো সার্কাসটাই হয় না; কারণ আপনি নিজেই যদি আনন্দের বহিঃপ্রকাশ হয়ে ওঠেন, তবে যেভাবেই হোক তারা আপনার সাথেই থাকতে চায়। আপনার জীবনকে সুখের পশ্চাদ্ধাবন থেকে আনন্দের বহিঃপ্রকাশের দিকে নিয়ে যাওয়া -, সম্পর্কগুলিকে যদি সত্যিই সমস্ত স্তরে কাজ করতে হয়, এটাই হওয়া প্রয়োজন; কারণ তারা বিভিন্ন ধরণের।  

বিভিন্ন ধরনের সম্পর্ক

আপনার শরীর এই মুহূর্তে এমনভাবে তৈরি যে এটি এখনও এমন অবস্থায় রয়েছে যেখানে এটির একটি সম্পর্কের প্রয়োজন। আপনার মন এমনভাবেই তৈরি করা হয়েছে যে এটির এখনও একটি সম্পর্কের প্রয়োজন পড়ে। আপনার আবেগগুলি এমনভাবে রয়েছে যে এটির এখনও একটি সম্পর্কের প্রয়োজন আছে। এবং আরো গভীরভাবে তলিয়ে দেখলে- আপনার শক্তিগুলি এমনভাবেই তৈরি যে আপনার এখনও সেই স্তরে একটি সম্পর্কের প্রয়োজন। যদি আপনার শরীর কোনও সম্পর্কের সন্ধানে যায় তবে আমরা একে যৌনতা বলি। আপনার মন যদি সম্পর্কের সন্ধানে যায় তবে আমরা একে সাহচর্য বলি । যদি আপনার আবেগ সম্পর্কের সন্ধানে যায় তবে আমরা তাকে ভালবাসা বলে থাকি । যদি আপনার শক্তিগুলি কোনও সম্পর্কের সন্ধানে যায় তবে আমরা একে বলি যোগ।.  

আপনার মধ্যে যখন কোনও বাধ্যবাধকতা থাকেনা এবং আপনি যা কিছু করেন তা যদি সচেতন হয়ে ওঠে, সম্পর্ক সত্যিকারের আশীর্বাদে পরিণত হয়, কোনও আকাঙ্ক্ষা বা দ্বন্দ্ব নয়।

আপনি দেখবেন যে এই সকল প্রচেষ্টা- সেটি যৌনতা, সাহচর্য, প্রেম বা যোগ, যাই হোক না কেন, আপনি অন্য কোনও একটা কিছুর সাথে একাত্ম হওয়ার চেষ্টা করছেন; কারণ কোনও একটি কারণে এই মুহুর্তে আপনি যা, তা যথেষ্ট নয়। আপনি অন্য একজনের সাথে এক হতে পারেন কি করে ? শারীরিকভাবে আপনি চেষ্টা করেছেন। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় আপনি এটা করে ফেলবেন কিন্তু আপনি জানেন যে আপনি আলাদা হয়ে যান। মানসিকভাবেও আপনি চেষ্টা করেছেন, অনেক সময়ই আপনার মনে হয়েছে যে ওখানে সত্যিই পৌঁছে গেছেন; তবে আপনি জানেন দুটি মন কখনও এক হয় না। আবেগ বশত আপনার মনে হয়েছে আপনি এটি সত্যিই করে ফেলেছেন, কিন্তু বিভাজন খুব সহজেই চলে আসে। 

কোনো একটা কিছুর সাথে এক হয়ে যাওয়ার এই আকাঙ্ক্ষাটি পূরণ করার উপায় কী? অনেক ভাবে এটিকে দেখা যায়। আপনি হয়ত আপনার জীবনের কোনও একটা সময় এটি লক্ষ্য করেছেন- ধরুন আপনি খুবই আনন্দিত বা প্রেমময় বা পরমানন্দময় এবং আপনার জীবনীশক্তি খুবই উচ্ছ্বসিত বোধ করছে, আপনি একটি বিশেষ প্রসার অনুভব করছেন। এই যে বিস্তার, এর অর্থ কী? প্রথমত, ঠিক কাকে আপনি ‘আমি’’ বলে সম্বোধন করেন ? “এটি আমি এবং এটি আমি নই” – আপনার জানার ভিত্তিটা ঠিক কী? অনুভূতি, তাই না? আপনার অনুভূতির পরিসীমার মধ্যে যা কিছু আছে, তাই আপনি। এই অনুভূতির সীমানার বাইরে যা কিছু তাই “অন্য” এবং অন্যটি সর্বদাই খারাপ। আপনি এই খারাপের অভিজ্ঞতা নিতে চান না, তাই আপনি নিজের অংশ হিসাবে মানবতার অন্তত একটি ছোট্ট অংশ অনুভব করতে চান। আপনার জীবনের অংশ হিসাবে কাউকে বা অপরকে অন্তর্ভুক্ত করার এই ব্যাকুলতাকেই সম্পর্ক বলে। আপনি যদি অপরকে অন্তর্ভুক্ত করেন তবে সেই ‘খারাপ’ আপনার কাছে ‘স্বর্গের মতো সুন্দর’ হয়ে উঠতে পারে। সেই স্বর্গের অভিজ্ঞতা লাভ করতে, আপনার জীবনে স্বর্গের সেই টুকরোটিকে পেতেই সম্পর্ক স্থাপনের জন্য এত ব্যাকুলতা। 

কোনও সম্পর্কের পেছনে যে আকাঙ্ক্ষাই থাকুক না কেন, তা যদি আপনি দেহ বা মনের মাধ্যমে বা আবেগের মধ্য দিয়ে চেষ্টা করেন, আপনার আকাঙ্ক্ষা থেকেই যাবে; কখনই সেই একাত্মতা জানতে পারবেন না। আপনি একাত্মতার কোন মুহুর্ত হয়তো অনুভব করবেন, তবে এটি কখনই বাস্তবায়িত হবে না। আপনার চারপাশের সমস্ত জীবনকে যদি আপনি নিজের অংশ হিসেবে অনুভব করেন – যোগ হ’ল এই একাত্মতা অনুভব করার মাধ্যম ; এখানে আপনার অস্তিত্বের অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ অন্যরকম হবে। যখন এটা ঘটবে, তখন সম্পর্ক কেবল অন্যের প্রয়োজনের দিকে খেয়াল রাখার একটি উপায় হয়ে উঠবে, নিজের নয়; কারণ আপনার নিজের আর কিছুই প্রয়োজন নেই। আপনার মধ্যে যখন কোনও বাধ্যবাধকতা থাকে না এবং আপনি যা কিছু করেন তা যদি সচেতন হয়ে ওঠে, সম্পর্ক সত্যিকারের আশীর্বাদে পরিণত হয়, কোনও আকাঙ্ক্ষা বা দ্বন্দ্ব নয়। 

ফিচার টি সদগুরুর সম্পর্ক ও প্রত্যাশা বিষয়ক বক্তিতা থেকে সংকলিত

মানবিক সম্পর্ক

মানুষ সর্বদা দলবদ্ধ ও সামাজিক জীব। তাই আসঙ্গ লিপ্সা মানুষের আজন্মের অভিলাষ। একাকিত্বে মানুষের যন্ত্রনা অনেকগুণ বেড়ে যায় এবং মানুষ ক্রমাগত অসুস্থ হয়ে পড়ে। এজন্য মানুষ একের পর এক সম্পর্ক গড়তে থাকে। তবে সম্পর্কগুলি মানুষের মধ্যে চিরস্থায়ী নয়, মানুষ সম্পর্ক ভাঙ্গে আবার নতুন করে গড়ে তোলে। এভাবে ভাঙ্গা গড়ার স্রোতধারাই জীবনের বহমানতা এবং চির সত্য।

আসলে সম্পর্কগুলি বহতা নদীর মত, সে কখনও সুমধুর তালে বয়ে যেতে থাকে আবার মাঝে মাঝে বাঁক নেয়। তাই জীবনের ঘাঁটে ঘাঁটে এর পরিবর্তন সাধিত হয়। আবার কখনও নতুনত্বের বিচিত্র রূপ নিয়ে সে আপন গতিতে বয়ে চলে। এই বয়ে চলার মধ্যে কোন কোন ঘাঁটে থাকে সংস্কারের জোয়ার আবার কোন কোন ক্ষেত্রে জীবনের জোয়ার। আবার সম্পর্ক প্রবাহের বুকে কখনও সোনার তরী ভেসে বেড়ায় যেখানে তরিখানা অসংখ্য ধনে ভরে থাকে আবার কখনও সেখানে হতাশার ছবিচিত্র জেগে থাকে। এটা মানুষে মানুষে সম্পর্কের স্বাভাবিক রূপ। জন্ম থেকেই মানুষের জীবনের আকাশে সম্পর্কগুলি মেঘের মত এসে এসে জমা হতে থাকে, তার মধ্যে কোন সম্পর্কে কার আগ্রহ বেশি তা দিয়ে তৈরি হয় তাঁর জীবনের গল্প।

প্রথমে ঘর থেকেই সম্পর্কগুলির পরিবর্তনের ধারা সূচিত হয়। তারপর বিশাল পৃথিবী জুড়ে মানুষের সম্পর্ক কখনও ভেঙ্গে যায় আবার কখনও জেগে থাকে। কারণ মানুষ সবার আগে পারিবারিক তারপর সামাজিক । তবে যে সম্পর্ক জেগে থাকে নতুন করে তার পরিবর্তন সাধিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। যদি তার পরিবর্তন না ঘটে তাহলে সে মৃত হয়ে যায়, যে মৃত সম্পর্ক নিয়ে মানুষ চিরদিন ধরে বেঁচে থাকতে পারেনা। কারণ ক্রমাগত বদলের মধ্য দিয়ে মানুষ বর্তমান থেকে ভবিষ্যতে যায়। এই বদলের মধ্যেই থাকে সম্পর্ক ভাঙ্গা গড়ার মন্ত্র, আবার কখনও কখনও প্রয়োজন। জীবনের একটা সময় প্রায় সকল মানুষই পার করে যখন সম্পর্ককে সে স্বার্থের কারনে টিকিয়ে রাখে, আবার কখনও অভ্যাসের কারনে, কখনও কখনও মনুষ্যত্বের কাঁধে ভর করে রক্তের বন্ধনে সম্পর্ক টিকে থাকে।

কখনও কখনও মানব চরিত্রে মনুষ্যত্ব ও ভালবাসা দ্বৈত রূপে প্রকাশিত হয়। দেখা যায় মানুষের ভালোবাসার আকুতি দু-একটা সম্পর্কে থাকলেও অধিকাংশ সম্পর্কেই ভালোবাসা ক্ষণিকের জন্য জন্মে আবার তা আকস্মিক ভাবেই শেষ হয়েও যায়। তাই ভালবাসাহীন সম্পর্কের মাঝে থাকে লেফট রাইট করার প্রবণতা যা মানুষকে অনেকটা একঘেয়ে করে রাখে এবং সুযোগ পেলেই যে সম্পর্ক ভেঙ্গে যায়। আবার কখনও তা জেগে থাকে  শুধুমাত্র মনুষ্যত্বের কারণে এই টিকে থাকা সম্পর্কের কোন কোন ক্ষেত্রে দায় থাকে কিন্তু দায়িত্ববোধ সেখানে অনুপস্থিত। এ থেকে প্রমাণিত হয় মানুষের ভালবাসার সম্পর্কটি গড়ে ওঠে ক্ষণিকের জন্য। যখন কোন কোন ক্ষেত্রে মানুষকে দীর্ঘ মেয়াদী ভালোবাসায় আপ্লূত করে রাখে তখনই মানুষ হয়ে ওঠে অতিমানব।

মানুষের প্রতি ভালোবাসা অনুভব করাই মানবিকতার লক্ষণ। তাই সম্পর্ক সবসময়ই মানবিক হওয়া বাঞ্ছনীয় বলে আমরা মনে করি। পিতা-মাতা, স্বামী-স্ত্রী, পুত্র-কন্যা, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সবই ভিন্ন ভিন্ন সম্পর্কের সোপান, সব সম্পর্কই ভাঙতে পারে আবার সব সম্পর্কই নতুন করে মানুষ গড়তে পারে। তবে সম্পর্কের একটি মেয়াদ থাকে। এই মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নতুন ও পরিবর্তিত রূপে মানুষ মানুষের কাছে আসতে সক্ষম, নাহলে মানবিক সম্পর্ক মরে যায়। মরে যাওয়া সম্পর্ককে কেউ নতুন করে বাঁচিয়ে তুলতে পারে না, কেবল পরিবর্তনের ভেতর দিয়েই আবার মরে যাওয়া সম্পর্কটি নতুন প্রভাতের মত এসে মানুষের চোখে আলো দেয়, আশা দেয়। আসলে আমরা পরিবর্তনশীলতায় বিশ্বাসী। জীবন ও আশা পরিবর্তনের উপর নির্ভরশীল, যেখানে পরিবর্তন নেই সে জায়গাটি মানুষ বাদ দিয়ে সামনে চলে যায় অন্যকোনদিকে, যেখানে মানুষ পরিবর্তনের জোয়ার অনুভব করে। অপরিবর্তনীয় জায়গাটি অচলায়তনের মত একা পড়ে থাকে যাকে মানুষ কখনই কামনা করে না।

মানুষ আশা নিয়ে বেঁচে থাকে। আশা সমাজ জীবনকে পূর্ণ করে তুলতে পারে। বেঁচে থাকার আশা জীবনকে করে গতিশীল, মোহময়। পৃথিবীতে মানুষের বেঁচে থাকার আকুতিই মানুষে মানুষে সম্পর্ক সৃষ্টির মহান উদ্দেশ্য। সম্পর্কগুলো আবর্তিত ও পরিবর্তিত হতে থাকে মানব সমাজের সাংস্কৃতিক নিয়মে। সম্পর্ক নানা কারণে পরিবর্তিত হতে পারে । যেমন বাংলাদেশে যে মেয়ের বিয়ে হয়না সে বাবার বাড়ির মমত্ব হারিয়ে ফেলে, কারণ বিয়ে হওয়া মানে তার প্রতিষ্ঠা পাওয়া। আর মেয়েটি প্রতিষ্ঠা পায়নি বলেই এই কঠিন সত্য তার সম্মুখে এসে হাজির হয়। যদিও ধীর গতিতে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার নিয়মের পরিবর্তন ঘটছে কিন্তু সব সমাজে সব দেশে এখনও এই নিয়ম বলবত আছে, মানে পরিবর্তন ঘটেনি। যে পরিবারটিতে তার জন্ম হয়েছিল সময়ের স্রোতে তার চরিত্রের পরিবর্তন ঘটেছে। সময় এবং সম্পর্ক একই সুত্রে ঘূর্ণয়মান, একে অতিক্রম করা যায়না। আর সম্পর্কের বাঁক এভাবেই ঘুরে মরে।

সম্পর্ক কখনও মধুর হয়, কখনও দ্বন্দ্বময় হয়, কখনও আধিপত্যময়, কখনও শত্রুতা মূলক হয়, আবার কখনও বন্ধুত্বের হাতছানিতে অসম্ভব সুন্দর হয়ে যায়। আধিপত্য মানব জীবনের এবং সম্পর্কের আর একটি বিষয়। মানুষ বেঁচে থাকার মধ্যে চায় একটি সুন্দর সম্পর্কের ভীত। পরিবার যদি আধিপত্য প্রধান হয় তবে বেঁচে থাকার মধ্যে সুখের বদলে তিক্ততা দর্শনীয় হয়ে ওঠে বেশি। আধিপত্যের রূপ বিভিন্ন ধারায় মানুষের মধ্যে বাসা বাঁধে। যেমন স্বামী আধিপত্য বিস্তার করে স্ত্রীর উপর। পিতা মাতা উভয়ের আধিপত্য সন্তানের উপর। সন্তানের আধিপত্য অপেক্ষাকৃত দুর্বল লোকটির উপর। অর্থাৎ সবল মানুষটি অপেক্ষাকৃত দুর্বল লোকটির উপর আধিপত্য বিস্তার করে থাকে। তবে এই আধিপত্য বিস্তারের মধ্যেও কখনও ভালবাসা থাকে যেমন সন্তানের প্রতি মানুষের ভালবাসা অমোঘ।

এভাবে যতদিন মানুষ একের উপর অন্যে আধিপত্য বিস্তার করতে পারে ততদিনই সম্পর্ক একটি করে নাম নিয়ে টিকে থাকে। যখন সময়ের পরিবর্তনে একের প্রতি অন্যের আধিপত্য ম্লান হয়ে আসে তখন সম্পর্কটাও ফিকে হয়ে আসতে থাকে। আধিপত্যও ফিকে হয় সময় ও জীবনের পরিবর্তনের সাথে, তারপর মানুষ দূরে সরে যেতে  থাকে। একে বলা যেতে পারে আধিপত্যময় সম্পর্ক।

গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় এই আধিপত্যময় সম্পর্কের মধ্যে একটি স্বার্থের স্পষ্ট রেখা ফুটে থাকে। যে মানুষ কাউকে সম্পর্কের দ্বারা নির্ভরশীল করে রাখে সে আধিপত্যের মালিক, আর যে মানুষ বেঁচে থাকার জন্য, সমাজের জন্য কারো উপর নির্ভর করে থাকে, তখনকার সময়ের জন্য সে অপেক্ষাকৃত দুর্বল। দুজনেরই সম্পর্কটা সেই সময়ের জন্য মূলত স্বার্থের কারনে টিকে থাকে।

স্বার্থ ছাড়া সম্পর্ক হয়না। যেমন মা বাবার সাথে মানুষের সম্পর্ক থাকে উভয়ের স্বার্থের সম্পর্ক। কথাটা শুনে অনেকেই চমকে যাবে। বলবে মা বাবার চেয়ে নিঃস্বার্থ সম্পর্ক হয়না, এর মধ্যে কোন স্বার্থের ব্যাপার নেই, কিন্তু আসলে তা নয়। আমরা দেখেছি বাবা মায়ের সন্তানদের মধ্যে যে বেশি প্রতিভাবান তাঁর প্রতি তাদের আকর্ষণ বেশি। এটা স্বার্থের বহিঃপ্রকাশ, কারণ ঐ সন্তানটি তাঁদেরকে সমাজের প্রশংসা ও প্রতিষ্ঠা এনে দেয়। এক কথায় মা বাবা সন্তানকে লালান পালন করার কারণ হল নিজের ছায়া তারা সন্তানের মধ্যে দেখতে পায় এবং একটি শিশুকে মানুষ করে তোলার মধ্যে একটি নির্মল আনন্দ অনুভুব করে। এটা মানব সত্তার একটি বৈশিষ্ট্য এবং এক ধরণের স্বার্থ। আর সন্তান অসহায় অবস্থায় মা বাবার কাছে যে আশ্রয় পায় তেমন নির্ভরশীলতার আশ্রয় পৃথিবীর কোথাও নেই। কিন্তু সন্তান বড় হয়ে একসময় নিজের জীবনের চাপে মা বাবা থেকে ক্রমাগত দূরে সরে যেতে থাকে। তারপর এক সময় বাবা মার আবেদন ফুরিয়ে যেতে থাকে তখন কেবল ভালবাসা দিয়ে আর মানবতা দিয়ে অনেকেই সেই সম্পর্ককে সৌন্দর্য মণ্ডিত করে রাখতে পারেনা। এটা একধরনের স্বার্থপরতা।

সময় অনুসারে সম্পর্কের রূপের ভিন্নতা প্রকাশ পায়। এমনতর ভিন্নতাই বলে দেয় কোনটি মানুষের স্বার্থ আর কোনটি নিঃস্বার্থ সম্পর্ক। নিঃস্বার্থ সম্পর্ককে খুঁজে মরা যায় কিন্তু কোথাও পাওয়া যায় না। হয়তো যেখানে পূর্ণ মানুষের বাস সেখানে পাওয়া যেতে পারে। যেমন মানুষ জানে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক শ্রেষ্ঠ, একে অন্যকে ছাড়া জীবনের পথে চলতে পারে না। এ সম্পর্কটি মূলত ভালবাসার সম্পর্ক। অথচ স্বার্থান্ধ মানুষেরা এটাকে প্রথার মধ্যে বেঁধে ফেলেছে। তাই স্বামীর আধিপত্য স্ত্রীর উপর এমন ভাবে বর্তে থাকে যা অনেক সময় স্ত্রী গ্রহণ করতে পারে না। স্ত্রীর বেঁচে থাকার স্বার্থ সেই সম্পর্কের মধ্যে নিহিত থাকে বলে স্ত্রী পায় স্বামীর কাছে সংসারে ভালভাবে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা। এই নিশ্চয়তা যদি রাষ্ট্র নিশ্চিত করতে পারে তাহলে বিয়ের ক্ষেত্রে অনেক সময় মানুষের সংস্কারগুলি পাল্টে যেতে থাকে আর ঘন ঘন বিবাহ বিচ্ছেদ দেখা দিতে থাকে। কারন তখন স্ত্রীকে আর স্বামী নামক প্রভুর দায় মেনে নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। যা মানুষের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়, যেখানে স্বামীস্ত্রীর মধ্যে সুসম্পর্কের কোন দায় থাকেনা, আর সেখানেই পাওয়া যায় প্রকৃত সম্পর্কের বিষয়টি। আবার যে সম্পর্কগুলো নির্দ্বিধায় মৃত্যু পর্যন্ত টিকে থাকে সেখানে ভালবাসাও থাকে এবং স্বার্থও থাকে। ভালবাসা মানে একের প্রতি অন্যের প্রকৃত প্রেম ও নির্ভরতা বেশি থাকে, আর স্বার্থ মানে দুজন দুজনার কাছে এত অভ্যস্ত হয়ে যায় তখন তারা মনে করতে থাকে এত সহমর্মিতা হয়ত পৃথিবীর আর কোথাও নেই। যখন মানুষ একের প্রতি অপরে গভীর মমতা ও স্বচ্ছন্দ নির্ভরতার আবেদন অনুভব করে এবং একে অন্যের উপস্থিতি জীবনের জন্য অনিবার্য বলে মনে করতে থাকে তখন সম্পর্কটি হয়ে যায় সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকার অভিপ্রায়। তবে বিয়ের ভুমিবিস্তারে স্বামীস্ত্রীর সম্পর্কের সাথে পরবর্তী প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষাই মূলত মানুষের কাছে বড় হয়ে দেখা দেয়, তাই ভালোবাসার সম্পর্কের চেয়ে দৈহিক সম্পর্কটাই হয়ে যায় মুখ্য। দেহকে ঘিরেই তখন ভালবাসা জন্ম নেয়। আসলে দৈহিক সম্পর্কই হল মানব সমাজ টিকিয়ে রাখার একটি ব্যবস্থা। মানব ধারা টিকে থাকার জন্যই মানুষের জৈবিক সম্পর্ক যা সকল যুক্তির চেয়ে অনেক বেশি শক্তিতে পৃথিবীতে টিকে থাকে এবং সমাজকে টিকিয়ে রাখে। তাই সম্পর্কটি জটিল হলেও এই সম্পর্কটি মানব সমাজের কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও আকাঙ্ক্ষিত।  বন্ধুত্ব একটা মধুর সম্পর্কের দিক নির্দেশক। যে সম্পর্কটি শুরু হয় সমমনা দুটি মানুষের একই রকম ভাবনার মধ্য দিয়ে। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের ধারায় দুটি মানুষ আর সমমনা থাকেনা, বিভিন্ন কারণে বন্ধু দুজন এক সময় দুরকম ভাবতে শুরু করে। তখন বন্ধুত্বের সম্পর্কটি পানসে হয়ে যায় এবং তা ভেঙ্গে যেতে বাধ্য হয়। কারণ বন্ধুত্বের কংকাল বহন করা মানুষের কাছে ভীষণ ভাবে ওজন দায়ক ও অসহনীয় মনে হতে থাকে। মানুষ বিশ্বাস করে বন্ধুত্বের সম্পর্ক স্বার্থহীন সম্পর্ক। কখনও কখনও তা হলেও  সকল ক্ষেত্রে তা নয়। কোন কোন ক্ষেত্রে স্বার্থই হয়ে ওঠে বন্ধুত্বের মুখ্য বিষয়। সে ক্ষেত্রে যতক্ষণ স্বার্থ থাকে ততক্ষণই সম্পর্ক থাকে তারপর অন্য কোথাও মানুষ বন্ধুত্বের হাতটি বাড়ায়। যার কারণে বন্ধুত্বের সম্পর্ক একসময় ভেঙ্গে যায় আবার নতুন বন্ধুত্ব তৈরি হয়। এভাবে সম্পর্ক গুলি আপন গতিতে ও অস্তিত্বে একজন থেকে আর একজনে ক্রমাগত ভাবে প্রবাহিত হয়। এই সম্পর্ক প্রবাহকে মানব প্রবাহের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। সম্পর্ক প্রবাহিত হয় বলেই পৃথিবীতে মানব ধারা টিকে আছে। পৃথিবীর মানব ধারার মধ্যে সম্পর্ক যেমনি গুরুত্বপূর্ণ তেমনি স্বার্থও গুরুত্বপূর্ণ। তবে স্বার্থান্ধতা কোনক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটা দুর্বল মানুষের প্রতি সবল মানুষের অন্যায় করার অভিসন্ধি। যদি এক শ্রেণী ক্রমাগত লাঞ্ছিত হতে থাকে তাহলে সেখানে ধীরে ধীরে শত্রুতার সম্পর্ক গড়ে ওঠে । মানুষে মানুষে শত্রুতার সম্পর্ক কখনও কাম্য নয়।

পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থেকেই মানবিক সম্পর্ক রক্ষা করতে হয়।  আর সম্পর্কের জন্যই মানুষের চরিত্রে মানবিকতা বেশি বেশি প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে দুইপক্ষকেই মানবিক হতে হয় এবং সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে সচেষ্ট হতে হয়। একপক্ষ সম্পর্কের ব্যাপারে নির্বিকার থাকলে আর একপক্ষ সেই সম্পর্ককে ধরে রাখে না । মানুষের মধ্যে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থেকে সম্পর্কটি নতুনত্ব পায়, কিন্তু যদি পরস্পরের প্রতি কোন শ্রদ্ধাবোধ না থাকে তখন মানবিক সম্পর্কটিও ধীরে ধীরে নিঃশেষ হতে থাকে। সম্পর্কগুলির সর্বদাই পরিচর্যা প্রয়োজন। পরিচর্যা ছাড়া কোন সম্পর্কই টিকে থাকতে পারেনা। পরিচর্যার মাধ্যমেই মানবিক সম্পর্ক টিকে থাকে। মানবিক সম্পর্কই  মানুষের একমাত্র সাধনা। নির্লিপ্ততা কোন সম্পর্কের ধারক নয়। সভ্যতার অগ্রগতির সাথে মানুষের জীবন ধারার পরিবর্তন হয় এবং তার সাথে সাথে মানুষের সম্পর্কগুলোরও পরিবর্তন ঘটিয়ে সে বেঁচে থাকে। পরিবর্তন মানুষকে নেশার মত আকৃষ্ট করে। তাইতো আধুনিক জীবনের সম্পর্কগুলো পরিবর্তিত হয়ে সুন্দর ও মানবিক রূপ গ্রহণ করুক এটাই মানুষের কাম্য।

লিখেছেনঃ রোজানা নাসরীন, টরন্টো

দাম্পত্ব্য সম্পর্কে ক্ষমতার ভারসাম্য

সম্পর্কের গুরুত্ব যার কাছে কম তার হাতেই বেশি ক্ষমতা চলে আসে। এই সমস্যার সমাধান লুকিয়ে আছে একে অপরের প্রতি বিশ্বাসেই।

সম্পর্কের মধ্যে ‘ক্ষমতা’ শব্দটাকে টেনে আনতে আমরা কেউই পছন্দ করি না। একটা সুস্থ সম্পর্কে থাকবে একে অপরের সঙ্গে সহযোগিতা এবং সব কিছু ভাগ করে নেওয়ার আশ্বাস। কিন্তু সহযোগিতা এবং শেয়ার, এই দুটো করতেই তো দু’জন মানুষকে লাগে। দু’জনের মধ্যে একজন যদি সেটা না করতে চায়?

আসলে সম্পর্কের গুরুত্ব যার কাছে কম তার হাতেই বেশি ক্ষমতা চলে আসে। অন্যজন যতই ভালবাসাকে বেশি প্রাধান্য দিক। ডিনারের প্ল্যান থেকে আরও গুরুত্বপূর্ণ কোনও বিষয়, সবই যদি একজনের সিদ্ধান্ত মতো চলে তাহলে মুশকিল! অন্যজনের অসম্মতির যেন কোনও অর্থই নেই! এর ফল?

সিদ্ধান্ত নেওয়ার জায়গাটা শুধুমাত্র একজনের দখলে থেকে যায়। হয়তো না চাইতেই সে অন্য জনের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে, যে তার মতামতের কোনও গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা নেই।

সম্পর্ককে ধরে রাখতে এই সমস্যার সমাধান কিন্তু করতে হবে ধৈর্য্য ধরে। কীভাবে?

  • প্রথমত যেটা করতে পারেন তা হল পার্টনারের এই স্বভাব মেনে নেওয়া। তার সিদ্ধান্তগুলোই মেনে চলা। এতে সাময়িকভাবে সমস্যার সমাধান হয়তো হবে, পাওয়া যাবে কিছুটা সহযোগিতার আশ্বাস। তবে দীর্ঘদিন এইভাবে চলা নিশ্চয়ই সম্ভব নয়। ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙবেই। নিজেকে গুরুত্বহীন করে রাখতে কেউ কত দিন পারে?
  • দ্বিতীয়, সহযোগিতা পাওয়ার জন্য লড়াই করা। এতে কিন্তু দুটো ফল হতে পারে। আপনার পার্টনার যদি নিজের ভুল বুঝতে পারেন, তাহলে তো সমাধানও আপনারা পেয়ে গেলেন। কিন্তু তিনি যদি ভাবেন যে আপনি অকারণে ঝগড়া করছেন? তাহলেও কিন্তু বেশি আঘাত পাবেন আপনিই।
  • এতেও সমাধান না হলে স্পষ্ট করে অন্যজনকে বলে দিন যে তিনি আপনার পাশে না থাকলেও আপনি নিজের কাজ নিজে করতে সক্ষম। আসা করা যায় এতে আপনার পার্টনার নিজের ভুল বুঝবেন। তবে আপনি নিজে যদি এই সম্পর্কের উপর খুব বেশি মানসিকভাবে নির্ভরশীল হয়ে থাকেন তাহলে হয়তো এই কাজটা আপনি নিজেই করে উঠতে পারবেন না।

তবে কি কোনও সমাধান সত্যিই নেই এই সমস্যার? আছে। আর সেটা লুকিয়ে আছে আপনাদের দু’জনের ভিতরেই। একে অপরের প্রতি বিশ্বাসে।

একটি সম্পর্কে যখন দু’জন দু’জনকে বিশ্বাস করেন তখন কোথাও না কোথাও এই বিশ্বাসটাও থাকে যে তাঁরা একে অপরকে ছেড়ে যাবেন না। দু’জনের উপরেই প্রভাব ফেলবে এমন কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে একজন অন্যজনের ছোট-ছোট প্রয়োজন এবং ইচ্ছেগুলোকেও গুরুত্ব দেবে, থাকে এই বিশ্বাসও।

মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক তো শুধু ‘ক্ষমতা’য় সীমাবদ্ধ নয়। বন্ধুত্ব, ভালবাসা, সম্মান এই সবের কাছেই হেরে যাবে ক্ষমতার লড়াই।


আলিঙ্গনের মানে

প্রেমের উষ্ণতা বোঝাতেই হোক বা বন্ধুত্বের গভীরতা…আলিঙ্গন বরাবরই বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। তাই, শুধুমাত্র দু’টি মানুষের শারীরিক ঘনিষ্ঠতার মধ্যেই এর গুরুত্বকে সীমিত রাখলে চলবে না! সম্পর্ক যাই হোক না কেন, পারস্পরিক বিশ্বাস, ভরসা, আত্মীয়তা—সবই ফুটে ওঠে এই বিশেষ কাজটির মাধ্যমে!

বিয়ার হাগ: একে অপরের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠতার পরিচায়ক এই আলিঙ্গনটি ‘ডেডলক হাগ’ বলেও পরিচিত। সাধারণত কাছের কোনও মানুষকে দূরে সরে না যাওয়ার আকুতি ফুটে ওঠে এর মধ্যে দিয়ে। সঙ্গীকে হারানোর ভয় বা এক ধরনের ইনসিকিউরিটিও থাকে কিছু ক্ষেত্রে। তবে সম্পর্ক মজবুত হলেও যে এরকম ঘনিষ্ঠ আলিঙ্গন করতে পারবেন না, এমনটা নয়!

পোলাইট হাগ: সাধারণত ঝগড়ার পরে বা কোনও কারণে সঙ্গী যদি আপনার সঙ্গে কমফর্টেবল বোধ না করেন, তাহলে এরকম আলিঙ্গন হতে পারে। এতে দু’জনের শরীরের মধ্যে কিছুটা জায়গা ফাঁকা থাকে, অর্থাৎ দু’জনে শারীরিকভাবে অতটাও ঘনিষ্ঠ হন না। আলিঙ্গনের সময় সঙ্গী যদি এরকম দায়সারা আচরণ করেন, তাহলে বুঝতে হবে তিনি খুব একটা আগ্রহী নন।

স্ট্যান্ড-স্টিল হাগ: সাধারণত এক্ষেত্রে, একজন সঙ্গী যতটা প্যাশনের সঙ্গে আলিঙ্গন করেন, উলটোদিকের মানুষটি ততটাই শীতল, শান্ত। তিনি আলিঙ্গনের জন্য হাতটুকুও তোলেন না! অর্থাৎ, পারস্পরিক আদানপ্রদানের বড্ড অভাব। এর কারণ অবশ্য বাইরে থেকে বোঝা দুর্বোধ্য। তবে আপনার সঙ্গী হয়তো এখনও বুঝে উঠতে পারছেন না যে পুরোপুরি সম্পর্কের মধ্যে থাকা উচিত কি না!

ইন্টিমেট হাগ: এর আক্ষরিক অর্থ নিশ্চয়ই আর আলাদা করে বলে দিতে হবে না! দু’জনেরই গভীর আবেগ আর আই কনট্যাক্ট এর প্রধান বৈশিষ্ট্য। শারীরিক ঘনিষ্ঠতার থেকেও এক্ষেত্রে চোখে চোখ রেখে ভালবাসা ব্যক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ।

বাডি হাগ: সঙ্গীকে একপাশ থেকে আলিঙ্গন করলে বা কাঁধের এক দিক থেকে হাত রাখলে বোঝা যায় যে শুধুমাত্র রোম্যান্স নয়, বরং পারস্পরিক বিশ্বাস ও ভরসার জায়াগা আপনাদের মধ্যে রয়েছে। আর আপনারা একে অপরের ‘বেস্ট ফ্রেন্ড’ও বটে!

প্যাম্পারড হাগ: সঙ্গীর কপালে আলতো চুমু বা পিঠে হাত রাখা! মূলত আপনার কেয়ারিং স্বভাবেরই প্রতিফলন বলা চলে একে। সাধারণত বয়স্ক মানুষেরাও কম বয়সিদের স্নেহের বশে এরকমটা করে থাকেন।

ব্যাক হাগ: সঙ্গীকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরাই এরকম আলিঙ্গনের বৈশিষ্ট্য। এর মাধ্যমেও কিন্তু নিরাপত্তার আশ্বাস ব্যক্ত করা সম্ভব। দু’পক্ষের মধ্যে বোঝাপড়াও যে মজবুত, তাও বোঝা যায়।    

সম্পর্কে দূরত্ব …

ভালোবাসার কোনো সম্পর্ক যদি স্বাচ্ছন্দে চলতে থাকে, সেটা যথেষ্ট শান্তির। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সম্পর্কে শুরু হতে পারে টানাপোড়েন। সেটা সম্পর্কের ক্ষেত্রে যথেষ্ট খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। আপনার নিজের ইচ্ছা বা অনিচ্ছা যেকোনোভাবেই সম্পর্কে দুরত্ব চলে আসতে পারে। এই অবস্থাকে বাড়তে দিলে হয়তো ভুল বোঝাবুঝি হবে, বিচ্ছেদও হতে পারে। তবে মনে রাখবেন, আপনার হাতেই আছে এই সমস্যার সমাধান। সেটা কীভাবে তা জেনে নিন:

নিজের ভুল স্বীকার করা

ভুল যে কারোই হতে পারে। আর আপনার ভুলেই যদি সমস্যা তৈরি হয়, তাহলে সেটা স্বীকার করে নিন। ভুল চেপে রেখে বসে থাকবেন না। তাতে সমস্যা সমাধান হবে না। আর নিজের ভুল চেপে অযাচিত ঝগড়া করাটাও মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আর ঝগড়া করলে আশেপাশের লোকজন আপনাকে ইন্ধনও দিতে পারে, তাতে সমস্যা আরও ডালপালা মেলবে। তাই ভালোবাসার সম্পর্ককে বাঁচিয়ে রাখতে = নিজেকে একদম নির্দোষ না ভেবে ভুল স্বীকার করে মিটমাট করে ফেলুন।

সরি বলতে শিখুন

ভালোবাসার সম্পর্কে সবচেয়ে বড় সমস্যাটি হলো ইগো। এই ইগোর জন্য কত সম্পর্কই যে নষ্ট হয়ে গেছে, তার হিসাব নেই। কোনো একটা সমস্যা হলে আপনি ভাবেন যে আমি আগে থেকে কেন সরি বলবো। প্রত্যাশা করতে থাকেন যে সঙ্গী কখন সরি বলবে। এইরকম ইগো ধরে বসে থাকবেন না। সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে চাইলে ইগো ঝেড়ে ফেলে সরি বলতে শিখুন। এতে করে দেখবেন সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে।

সময় দিন

অনেক সময়ে সম্পর্কের দুরত্ব বাড়তে বাড়তে সমস্যার তৈরি হয়। এই দূরে থেকে যখন আর সমস্যার সমাধান করা কোনোভাবেই সম্ভব হয়না তখন কাছাকাছি হওয়ার চেষ্টা করুন। একটি দিন বা অন্তত একটি বিকেল পরস্পরকে সময় দিন। সম্ভব হলে কিছু ভালোলাগার কথা বলুন তাকে। চেষ্টা করুন তার মনকে বুঝতে। এতে করে দেখবেন ভুল বোঝাবুঝি দূর হয়ে ভালোবাসা ফিরে আসবেই।

উপহার দিন প্রিয় কিছু

যেকোনো মানুষই ছোটখাট কোনো উপহার পেলে আনন্দ পেয়ে যায়। আর সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব কমাতে হলে বিশেষ কোনো উপহার হতে পারে দারুণ কোনো উপায়। সেইসঙ্গে এর ফলে ভুল বোঝাবুঝিও চলে যাবে। তাই ভুল বোঝাবুঝিকে দূরে রাখতে প্রিয় মানুষটিকে প্রিয় কোনো উপহার কিনে দিতে পারেন।

অন্য কারো সঙ্গে আলোচনা

আপনার সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। নিজে থেকে হয়তো ঠিক করতে পারছেন না, খারাপ বোধ হচ্ছে। আপনার কথার হয়ত প্রাধান্য থাকছে না। এক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষের সাহায্য নিতে পারেন। যার সঙ্গে আপনাদের উভয়েরই ভালো বোঝাপড়া আছে তাঁকে সমস্যার কথা খুলে বলতে পারে। সে হয়তো কোনো সমাধান দিতে পারে। আপনার না বলতে পাড়া কথাগুলো সঙ্গীকে বলতে পারে। এতে রাগ অভিমাব কমবে, দুরত্ব কমবে।

কোর্টশিপে যা করবেন না

দীর্ঘদিনের প্রেমপর্বই হোক বা দেখেশুনে অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ – চার হাত এক হওয়ার আগে কোর্টশিপের এই সময়টা সকলের জন্যই বিশেষ গুরুত্বের। যে মানুষটার সঙ্গে সারাজীবন থাকবেন বলে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে চলেছেন তাঁকে একবার পরখ করে নেবেন না!

অবশ্য লাভ ম্যারেজের ক্ষেত্রে সঙ্গীকে চেনার প্রক্রিয়াটা অনেকদিনের। রোজই তাঁকে একটু একটু করে নতুন করে আবিষ্কার করার সময়-সুযোগও বেশি। দেখেশুনে বিয়ের ক্ষেত্রে কিন্তু এতটাও বিলাসিতার জায়গা থাকে না। বরং, সম্পূর্ণ অচেনা-অজানা একজনের সঙ্গে একছাদের তলায় দীর্ঘজীবন কাটানোর আগে কম্প্যাটিবিলিটি মিলিয়ে দেখে নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে বই কী! তবে কোর্টশিপে দু’টো মানুষ কীভাবে নিজেদের মতো করে সময় কাটাবেন, সেটা একান্তই তাঁদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে কোর্টশিপের সময়টায় কী কী করবেন না, সেদিকেও একটু খেয়াল রাখা জরুরি।

  • যদিও আপনি আপনার বাগদত্তার সঙ্গে নিরিবিলিতে যতটা সম্ভব বেশি সময় কাটাতে চাইবেন, কিন্তু কখনওই যেন তিনি হাঁফিয়ে না ওঠেন। সম্পর্কের প্রাথমিক শর্তই হল একে অপরকে স্পেস দেওয়া। আপনার নানা প্রশ্নের উত্তর তিনি দেবেন অবশ্যই, কিন্তু প্রথমেই নানা অবাঞ্ছিত প্রশ্ন করে ফেললে দমবন্ধকর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। ফলে, উলটোদিকের মানুষটি নিজের ভবিষ্যত সম্পর্কে আন্দাজ করে ফেলতে পারবেন! আর সেই ভবিষ্যত মোটেও সুখকর হবে না!
     
  • সঙ্গীর ব্যাপারে পাহাড়প্রমাণ প্রত্যাশা রাখবেন না। আবার আপনিও নিজে থেকে এমন কোনও কথা দিয়ে বসবেন না যা পরে পূরণ করতে না পারেন। শুধু সাময়িকভাবে ভাল থাকার জন্য এমন কোনও কমিটমেন্ট করবেন না যা মিথ্যে। সত্যি কথা বলুন। এর মাধ্যমেই পারস্পরিক বিশ্বাস অর্জন করতে পারবেন।
     
  • কোর্টশিপের সময়ে অযথা নিজের অতীত নিয়ে ঘাঁটবেন না। সঙ্গীর অতীত সম্পর্ক নিয়েও বেশি জলঘোলা করার প্রয়োজন নেই। তার মানে এই নয় যে একে অপরের কাছে অতীত সম্পর্ক লুকোবেন। এতে পরে আরও জটিলতা হতে পারে। কিন্তু একে অপরের প্রতি এই বিশ্বাসটা থাকা প্রয়োজন যে অতীতের কোনও রেশ আপনাদের বর্তমান সম্পর্কে পড়বে না। সংবেদনশীল মানসিকতা নিয়ে এগোন। উলটোদিকের মানুষটার কথাও শুনুন। শুধু নিজেই একতরফা বলে যাবেন না।
     
  • শর্তসাপেক্ষে সম্পর্কে রাজি হবেন না। বিয়ের পর চাকরি ছাড়তে হবে বা সঙ্গীর পছন্দসই জীবনযাপন করতে হবে—এরকম শর্ত মেনে নিলে বিয়ের পর সমস্যা হতে পারে। এগুলো সঙ্গীর ডমিনেন্ট মানসিকতার পরিচায়ক। আজ কেরিয়ার নিয়ে কোনও শর্ত চাপিয়ে দিলে আগামী দিনে উনি আপনার ব্যক্তিগত জীবন, পছন্দ-অপছন্দও নিয়ন্ত্রণ করতে চাইবেন।
     
  • ভান করবেন না। ধরুন, আপনার স্কাইডাইভিং পছন্দ নয়। আপনি তা খোলাখুলি জানিয়ে দিন। আপনি রান্না করতে না জানলেও লুকোনোর কিছু নেই। নিজের স্বকীয়তাকে লুকিয়ে রাখবেন না। সুত্রঃ সানন্দা

স্বামী এবং বন্ধুত্ব

পাঁচবছর প্রেম করার পর দিয়া বিয়ে করে সৌরভকে। এমবিএ-র টিউশন ক্লাসে প্রথম আলাপ। তারপর দু’জনে চাকরি পেয়ে যাওয়ার পর, বিয়ে। কিন্তু সম্পর্কটা বড্ড তাড়াতাড়ি বদলে গেল। সৌরভ কর্পোরেট জগতের সিঁড়ি বেয়ে তরতর করে অনেক উঁচুতে পৌঁছে গেল। কিন্তু দিয়ার এই ইঁদুর দৌড়ের জীবন বেশিদিন ভাল লাগল না। চাকরি ছেড়ে নিজের বুটিক খুলল দিয়া। এই ব্যবসার সূত্রেই আলাপ নির্মাল্যর সঙ্গে। ও পেশায় ফোটোগ্রাফার।  কাজের সূত্রেই বন্ধুত্ব গাঢ় হয়েছে। কিন্তু কখনও কখনও দিয়ার খুব অনুশোচনা হয়। দিয়া ভাবে ও কি ঠিক করছে? স্বামীকে কি ও ঠকাচ্ছে? এই বন্ধুত্বের পরিণতিই বা কী?

জীবনের অনেক ক্ষেত্রে আমরা এই ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হই। কমিটেড রিলেশনে থেকে বিপরীত লিঙ্গের মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব নিয়ে আমাদের মধ্যে নানা টানাপড়েন কাজ করে। অনেক সময় এই বন্ধুত্বই কোনও রিলেশনে ঝগড়া, মনোমালিন্য, সন্দেহের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এইসব ক্ষেত্রে মাথা গরম না করে ঠান্ডা মাথায় ডিশিসন নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

আসলে সংসারের বাইরে ফ্রেন্ড সার্কল থাকা খুব প্রয়োজন। স্কুল কলেজের পুরনো বন্ধু, প্রতিবেশি, অফিস কোলিগ বা অন্য কেউযাঁর সঙ্গে সময় কাটাতে আপনার ভাললাগে তিনিই আপনার বন্ধু। বন্ধুত্ব সাংসারিক একঘেয়েমি থেকেও মুক্তি দেয়। বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ ঘটায়। হতেই পারে আপনার বন্ধুদের মধ্যে কেউ কেউ পুরুষ। হয়তো অন্যদের থেকে আপনারা একে অপরকে বেশি বোঝেন। একে অন্যের সমস্যাগুলো গভীরভাবে অনুভব করেন। এই সম্পর্কে অপরাধবোধের কোনও জায়গা নেই। কিন্তু এই সম্পর্ককে বন্ধুত্বের পর্যায়েই রাখুন। এমন কিছু করবেন না যা নিয়ে পরে অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়তে হয়। আপনার দাম্পত্যের প্রাইভেসির মধ্যে বন্ধুকে না ঢোকানোই ভাল। ভবিষ্যতে অশান্তি হতে পারে। বন্ধুর ব্যাপারে স্বামীকে কখনও অন্ধকারে রাখবেন না। সম্পর্কের খঁুটিনাটিতে না গিয়ে বন্ধুর ব্যাপারে ওঁকে জানিয়ে রাখুন।

• আপনার স্বামী এবং বন্ধু দুজন সম্পূর্ণ আলাদা মানুষ। দুজনেরই নির্দিষ্ট কিছু দোষগুণ রয়েছে। হয়তো আপনার স্বামীর কোনও ঘাটতি রয়েছে যা বন্ধুর মধ্যে নেই। এই গুণের জন্যে তাঁকে অ্যাডমায়ার অবশ্যই করবেন কিন্তু সেই সঙ্গে এটাও মনে রাখুন যে এর জন্যে কোনও মানুষ পুরোপুরি খারাপ হয়ে যান না। তাছাড়া স্বামীর সঙ্গে জড়িয়ে আছেন পরিবারের অন্যান্য সদস্য এবং সন্তান। নতুন বন্ধুত্বে এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারগুলো মনে রাখবেন।

• স্বামীর সঙ্গে আপনার বন্ধুর আলাপ করিয়ে দিন। হয়ত ওরাও একে অপরের বন্ধু হয়ে উঠবেন। বন্ধুর পরিবারের সঙ্গেও ভাল সম্পর্ক গড়ে তুলুন। ছুটির দিনে নিমন্ত্রণ, একসঙ্গে বেড়াতে যাওয়ার মতো অ্যাক্টিভিটি দুই পরিবারকে কাছাকাছি আনবে।

সঙ্গীর সন্তানই প্রায়োরিটি

যাঁকে মনে ধরেছে, তিনি হয়তো কারওর মা কিংবা বাবা। তা বলে প্রেমে বাধা কোথায়! প্রেমিক বা প্রেমিকার সন্তান থাকলেও দিব্যি সম্পর্ক তৈরি করতে পারেন। শুধু সন্তানকে প্রায়োরিটি দেওয়া জরুরি।

কে ভবিষ্যতের সঙ্গী হিসেবে ভেবে নিয়েছেন, হতেই পারে তিনি একটা সময়ে বিবাহিত ছিলেন! আর তিনি হয়তো এক বা দুই সন্তানের মা কিংবা বাবা।কিন্তু এসবে কি আর প্রেম আটকায়! যাঁকে মনে ধরেছে, তাঁর সঙ্গে দেখা করতে ইচ্ছে করবে, সেটা স্বাভাবিক। আর সেই ইচ্ছের সৌজন্যেই নিয়মিত ডেটিং। কফিশপে, রেস্তরাঁয়, লং ড্রাইভে…সঙ্গী সেই বিশেষ বন্ধুটি। কিন্তুটি তাঁর সন্তানকে তো অগ্রাহ্য করলে চলবে না! তিনিও তা চাইবেন না। হ্যাঁ, নিজেরা কিছুটা সময়ে একান্তে কাটাতেই পারেন। 

কিন্তু একই সঙ্গে জরুরি হল হবু সঙ্গীর সন্তানকে আপন করে নেওয়া। সন্তান-সহ কাউকে ডেট করার আগে কয়েকটা বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন। আপনি হয়তো আগ্রহী তাঁর ছেলে বা মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে! তবে উত্তেজনায় খুব তাড়াহুড়ো করে ফেলবেন না। আগে নিজেকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত করুন। সাধারণত, এই পর্যায়ে এসে ক্যাজ়ুয়াল ডেটিংয়ের ইচ্ছে আপনার সঙ্গী প্রকাশ করবেন না।তিনি যদি আপনাকে জীবনসঙ্গী নির্বাচন করবেন বলে ভাবেন, তা হলে আপনারও প্রয়োজন নিজেকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত করে তোলা। শুধুমাত্র প্রেমিক বা স্বামী নয়, সম্পর্কের অব্যবহিত পর থেকেই আপনাকে বাবা-মা বা কেয়ারগিভারের দায়িত্ব সামলাতে হবে। 

আগে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, সেই দায়িত্ব নিতে আপনি তৈরি তো! বাচ্চাটির সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলা জরুরি। একজন নতুন মানুষকে সে তার জীবনে জায়গা করে দিতে চলেছে—এর প্রতিক্রিয়া এক একটি বাচ্চার এক একরকম। তাই, ওর মনোজগৎটা বোঝা একান্ত দরকার। ডেটিংয়ের জায়গা নির্বাচনের ক্ষেত্রেও সন্তানকে প্রায়োরিটি দিতে হবে। কোনও কিড-ফ্রেন্ডলি কাফে বা পার্কে যেতে পারেন। ডেটিংয়ের যাবতীয় পরিকল্পনা শেষ মুহূর্তে বাতিলও হতে পারে! সৌজন্যে সন্তানের শরীর খারাপ বা পরীক্ষার চাপ। সেরকম পরিস্থিতির জন্যও তৈরি থাকতে হবে। সঙ্গীকে ভালবাসার অর্থ এখানে তাঁর ছেলেমেয়েকেও সমান ভাবে ভালবাসা। আর এটি সচেতন সিদ্ধান্তের মাধ্যমেই সম্ভব। উনি যদি তাঁর প্রাক্তন স্বামী বা স্ত্রীর সঙ্গে সন্তানের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কারণে যোগাযোগ রাখেন, তা হলে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবেন না। 

যদি কোনও কারণে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়, সেক্ষেত্রে সঙ্গীর সঙ্গে আলাদা করে কথা বলুন, সন্তানের সামনে নয়।সন্তানের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো আপনার সঙ্গী ও তাঁর প্রাক্তন নিতেই পারেন। কিন্তু প্রাক্তনের সঙ্গে তিনি ঠিক কতটা সম্পর্ক রাখবেন, সে ব্যাপারে পারস্পরিক সিদ্ধান্তে আসা চাই। সুত্রঃ সানন্দা