প্রত্যাশার উর্দ্ধে সম্পর্ক

বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে তারা নিজেদের জীবনে সম্পর্কগুলিকে যেভাবে বজায় রাখেন, সেটিই মূলত তারা যেভাবে বেঁচে থাকেন তার মান নির্ধারণ করে। এটি যখন আপনার জীবনে এতখানি গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা পালন করছে, তখন এটির দিকে নজর দেওয়ার প্রয়োজন আছে। কোন একটি সম্পর্কের ভিত্তি কী? মানুষের সম্পর্কের প্রয়োজন কেন পড়ে? বিভিন্ন স্তরে সম্পর্ক তৈরি হয়; বিভিন্ন ধরণের চাহিদা পূরণের জন্য বিভিন্ন ধরণের সম্পর্ক রয়েছে। চাহিদাগুলি শারীরিক, মানসিক, আবেগ সংক্রান্ত, সামাজিক, অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক হতে পারে – এগুলি যে কোনও ধরণের হতে পারে। 

জীবনের এই অংশটি নিজেই একটি সম্পূর্ণ সত্তা – কেন এটি অসম্পূর্ণ বোধ করছে? কেন এটি অন্য একটি জীবনের সাথে অংশীদারি করে নিজেকে পরিপূর্ণ করার চেষ্টা করছে?

সম্পর্কের প্রকৃতি যাই হোক না কেন, সম্পর্কের ধরণ যাই হোক না কেন, তবুও আসল ব্যাপারটি হলো আপনার একটি চাহিদা আছে যেটা পূরণ করা প্রয়োজন। “না, আমার কিছু পাওয়ার নেই, আমি দিতে চাই।” দেওয়াও গ্রহণ করার মতই একটি প্রয়োজন। “আমাকে কাউকে কিছু দিতে হবে” – এটি “আমাকে কিছু পেতে হবে” এর মতোই একটি চাহিদা। এখানেও একটা চাহিদা আছে। চাহিদাগুলি ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে, সেই অনুযায়ী সম্পর্কগুলিও বৈচিত্র্যময় হতে পারে।  

মানুষের ভেতর চাহিদা বেড়ে গেছে কারণ তাদের মধ্যে অসম্পূর্ণতার একটি বিশেষ অনুভূতি আছে এবং লোকেরা নিজের ভিতরে একটি বিশেষ পরিপূর্ণতা অনুভব করার তাগিদে সম্পর্ক তৈরি করছে। আপনি যখন আপনার কোন প্রিয়জনের সাথে ভাল সম্পর্ক রাখেন তখন আপনি নিজেকে সম্পূর্ণ অনুভব করেন। আপনার যখন সেটা থাকে না, আপনি অসম্পূর্ণ বোধ করেন। কেন এমনটা হয়? জীবনের এই অংশটি নিজেই একটি পরিপূর্ণ সত্তা – কেন এটি অসম্পূর্ণ বোধ করছে? কেন এটি অন্য একটি জীবনের সাথে অংশীদারি করে নিজেকে পরিপূর্ণ করার চেষ্টা করছে? মূল কারণটি হ’ল আমরা এই জীবনটিকে তার পূর্ন গভীরতা এবং মাত্রায় অনুসন্ধান করিনি। যদিও এটিই হলো ভিত্তি, সম্পর্কের একটি জটিল প্রক্রিয়া রয়েছে। 

প্রত্যাশার উৎস

যেখানে সম্পর্ক আছে সেখানে প্রত্যাশাও রয়েছে। বেশিরভাগ লোকেরা এমন সব প্রত্যাশা করে চলেছে, যা এই গ্রহের কোনও মানুষই কখনও পূরণ করতে পারে না । বিশেষত একটি পুরুষ-নারী সম্পর্কের ক্ষেত্রে, প্রত্যাশাগুলি এতটাই বেশি যে আপনি কোনও দেব-দেবীকে বিয়ে করলেও তারা আপনাকে ব্যর্থই করবে। আপনি যখন প্রত্যাশা বা প্রত্যাশার উৎস বুঝতে অক্ষম, তখন আপনি প্রত্যাশা পূরণ করতেও পারবেন না। তবে আপনি যদি এইসব প্রত্যাশাগুলির উৎস বুঝতে পারেন, তাহলে আপনি একটি খুব সুন্দর সম্পর্ক তৈরি করতে পারেন। 

যদি আপনি নিজের স্বাভাবিক প্রকৃতিতেই খুশি থাকেন, সম্পর্কগুলি আপনার কাছে সুখ খোঁজার উপায় না হয়ে নিজের আনন্দ প্রকাশ করার একটি মাধ্যম হয়ে উঠবে।

মূলত, আপনি সম্পর্ক খুঁজতে যান কেন ? কারণ আপনি দেখবেন যে আপনার জীবনে কোনও ধরণের সম্পর্ক ছাড়া আপনি হতাশ হয়ে পড়বেন। আপনি একটি সম্পর্ক চাইছেন কারণ আপনি সুখী হতে চান, আপনি আনন্দে থাকতে চান। বা অন্য কথায় আপনি অপর এক ব্যক্তিকে আপনার সুখের উৎস হিসাবে ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন। আপনি যদি নিজের প্রকৃতিতেই খুশি থাকেন, তবে সম্পর্কগুলি আপনার জন্য সুখ খোঁজার প্রচেষ্টা না হয়ে আপনার আনন্দ প্রকাশ করার একটি মাধ্যম হয়ে উঠবে। আপনি যদি কারও কাছ থেকে সুখ নিঙড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন এবং সেই ব্যক্তি যদি আপনার কাছ থেকে‌ আনন্দ বার করে নেওয়ার চেষ্টা করে- তবে কিছু সময় পর এটি একটি যন্ত্রনাদায়ক সম্পর্কে পরিণত হবে। শুরুর দিকে এটি ঠিক মনে হতে পারে কারণ কিছু একটা পূর্ণ হচ্ছে। কিন্তু আপনি যদি নিজের আনন্দ প্রকাশ করার জন্য সম্পর্ক তৈরি করেন তবে কেউ আপনার সম্পর্কে অভিযোগ করবে না- কারণ আপনি অন্য ব্যক্তির কাছ থেকে আনন্দ চাইছেন না বরং নিজের আনন্দ প্রকাশ করার প্রক্রিয়াতে আছেন।  

আপনার জীবন যদি সুখের অন্বেষণ না হয়ে, আপনার আনন্দের অভিব্যক্তি হয়ে ওঠে তবে সম্পর্কগুলি স্বাভাবিকভাবেই সুন্দর হয়ে উঠবে । আপনার লক্ষাধিক সম্পর্ক থাকলেও সেগুলিকে ভালভাবে ধরে রাখতে পারেন। অন্য কারোর প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টার এই পুরো সার্কাসটাই হয় না; কারণ আপনি নিজেই যদি আনন্দের বহিঃপ্রকাশ হয়ে ওঠেন, তবে যেভাবেই হোক তারা আপনার সাথেই থাকতে চায়। আপনার জীবনকে সুখের পশ্চাদ্ধাবন থেকে আনন্দের বহিঃপ্রকাশের দিকে নিয়ে যাওয়া -, সম্পর্কগুলিকে যদি সত্যিই সমস্ত স্তরে কাজ করতে হয়, এটাই হওয়া প্রয়োজন; কারণ তারা বিভিন্ন ধরণের।  

বিভিন্ন ধরনের সম্পর্ক

আপনার শরীর এই মুহূর্তে এমনভাবে তৈরি যে এটি এখনও এমন অবস্থায় রয়েছে যেখানে এটির একটি সম্পর্কের প্রয়োজন। আপনার মন এমনভাবেই তৈরি করা হয়েছে যে এটির এখনও একটি সম্পর্কের প্রয়োজন পড়ে। আপনার আবেগগুলি এমনভাবে রয়েছে যে এটির এখনও একটি সম্পর্কের প্রয়োজন আছে। এবং আরো গভীরভাবে তলিয়ে দেখলে- আপনার শক্তিগুলি এমনভাবেই তৈরি যে আপনার এখনও সেই স্তরে একটি সম্পর্কের প্রয়োজন। যদি আপনার শরীর কোনও সম্পর্কের সন্ধানে যায় তবে আমরা একে যৌনতা বলি। আপনার মন যদি সম্পর্কের সন্ধানে যায় তবে আমরা একে সাহচর্য বলি । যদি আপনার আবেগ সম্পর্কের সন্ধানে যায় তবে আমরা তাকে ভালবাসা বলে থাকি । যদি আপনার শক্তিগুলি কোনও সম্পর্কের সন্ধানে যায় তবে আমরা একে বলি যোগ।.  

আপনার মধ্যে যখন কোনও বাধ্যবাধকতা থাকেনা এবং আপনি যা কিছু করেন তা যদি সচেতন হয়ে ওঠে, সম্পর্ক সত্যিকারের আশীর্বাদে পরিণত হয়, কোনও আকাঙ্ক্ষা বা দ্বন্দ্ব নয়।

আপনি দেখবেন যে এই সকল প্রচেষ্টা- সেটি যৌনতা, সাহচর্য, প্রেম বা যোগ, যাই হোক না কেন, আপনি অন্য কোনও একটা কিছুর সাথে একাত্ম হওয়ার চেষ্টা করছেন; কারণ কোনও একটি কারণে এই মুহুর্তে আপনি যা, তা যথেষ্ট নয়। আপনি অন্য একজনের সাথে এক হতে পারেন কি করে ? শারীরিকভাবে আপনি চেষ্টা করেছেন। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় আপনি এটা করে ফেলবেন কিন্তু আপনি জানেন যে আপনি আলাদা হয়ে যান। মানসিকভাবেও আপনি চেষ্টা করেছেন, অনেক সময়ই আপনার মনে হয়েছে যে ওখানে সত্যিই পৌঁছে গেছেন; তবে আপনি জানেন দুটি মন কখনও এক হয় না। আবেগ বশত আপনার মনে হয়েছে আপনি এটি সত্যিই করে ফেলেছেন, কিন্তু বিভাজন খুব সহজেই চলে আসে। 

কোনো একটা কিছুর সাথে এক হয়ে যাওয়ার এই আকাঙ্ক্ষাটি পূরণ করার উপায় কী? অনেক ভাবে এটিকে দেখা যায়। আপনি হয়ত আপনার জীবনের কোনও একটা সময় এটি লক্ষ্য করেছেন- ধরুন আপনি খুবই আনন্দিত বা প্রেমময় বা পরমানন্দময় এবং আপনার জীবনীশক্তি খুবই উচ্ছ্বসিত বোধ করছে, আপনি একটি বিশেষ প্রসার অনুভব করছেন। এই যে বিস্তার, এর অর্থ কী? প্রথমত, ঠিক কাকে আপনি ‘আমি’’ বলে সম্বোধন করেন ? “এটি আমি এবং এটি আমি নই” – আপনার জানার ভিত্তিটা ঠিক কী? অনুভূতি, তাই না? আপনার অনুভূতির পরিসীমার মধ্যে যা কিছু আছে, তাই আপনি। এই অনুভূতির সীমানার বাইরে যা কিছু তাই “অন্য” এবং অন্যটি সর্বদাই খারাপ। আপনি এই খারাপের অভিজ্ঞতা নিতে চান না, তাই আপনি নিজের অংশ হিসাবে মানবতার অন্তত একটি ছোট্ট অংশ অনুভব করতে চান। আপনার জীবনের অংশ হিসাবে কাউকে বা অপরকে অন্তর্ভুক্ত করার এই ব্যাকুলতাকেই সম্পর্ক বলে। আপনি যদি অপরকে অন্তর্ভুক্ত করেন তবে সেই ‘খারাপ’ আপনার কাছে ‘স্বর্গের মতো সুন্দর’ হয়ে উঠতে পারে। সেই স্বর্গের অভিজ্ঞতা লাভ করতে, আপনার জীবনে স্বর্গের সেই টুকরোটিকে পেতেই সম্পর্ক স্থাপনের জন্য এত ব্যাকুলতা। 

কোনও সম্পর্কের পেছনে যে আকাঙ্ক্ষাই থাকুক না কেন, তা যদি আপনি দেহ বা মনের মাধ্যমে বা আবেগের মধ্য দিয়ে চেষ্টা করেন, আপনার আকাঙ্ক্ষা থেকেই যাবে; কখনই সেই একাত্মতা জানতে পারবেন না। আপনি একাত্মতার কোন মুহুর্ত হয়তো অনুভব করবেন, তবে এটি কখনই বাস্তবায়িত হবে না। আপনার চারপাশের সমস্ত জীবনকে যদি আপনি নিজের অংশ হিসেবে অনুভব করেন – যোগ হ’ল এই একাত্মতা অনুভব করার মাধ্যম ; এখানে আপনার অস্তিত্বের অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ অন্যরকম হবে। যখন এটা ঘটবে, তখন সম্পর্ক কেবল অন্যের প্রয়োজনের দিকে খেয়াল রাখার একটি উপায় হয়ে উঠবে, নিজের নয়; কারণ আপনার নিজের আর কিছুই প্রয়োজন নেই। আপনার মধ্যে যখন কোনও বাধ্যবাধকতা থাকে না এবং আপনি যা কিছু করেন তা যদি সচেতন হয়ে ওঠে, সম্পর্ক সত্যিকারের আশীর্বাদে পরিণত হয়, কোনও আকাঙ্ক্ষা বা দ্বন্দ্ব নয়। 

ফিচার টি সদগুরুর সম্পর্ক ও প্রত্যাশা বিষয়ক বক্তিতা থেকে সংকলিত

প্রকৃতপক্ষে ভালোবাসা কি ও কত প্রকার

আপনি একজন কে ভালোবাসেন কিন্তু প্রকৃত ভালোবাসা কি তা আপনি নিজেই জানেন না। অথচ সে মানুষটি হতে পারে আপনার বান্ধবী, সহকর্মী, দুরের কেউ অথবা আপনার স্বামী বা স্ত্রী।  আপনি এই ফিচারটি পড়ে  আপনি আপনাদের মধ্যে সম্পর্কটির কোন পর্যায়ে রয়েছে সেটা খুব সহজেই বুঝতে সক্ষম হবেন এবং সম্পর্কটির মাঝে কিসের খাটতি রয়েছে তাও নিরুপম করতে পারবেন খুব সহজেই।   একটি সুস্থ সম্পর্কের জন্য প্রয়োজন প্রকৃত ভালোবাসা ও পরিপূর্ণ প্রেম আসুন সেটাই একটু আলোচনা করি যা আমাদের সারাজীবন কাজে লাগবে –

সাইকোলোজিষ্ট ষ্টার্নবার্গ  এর “ট্রায়াংগুলার থিওরী অফ লাভ”  এর মতে –

মানুষের ভালোবাসাকে একটি ট্রায়াংগেল বা  ত্রিভুজ আকারে ভাগ করেছেন যেখানে ৩ টি উপাদান থাকে যা হলো –

১) আবেগ আসক্তি বা আকর্ষন Passion
২) অন্তরঙ্গতা Intimacy
৩) প্রতিশ্রুতি Commitment

আর “ট্রায়াংগুলার থিওরী অফ লাভ”  অনুযায়ী ভালোবাসা ৮ প্রকারের হয়ে থাকে আসুন দেখি সেগুলো কি কি –

১) None Love – ভুমিকাহীন ভালোবাসা
– যে সম্পর্কে কোন আবেগ নেই, অন্তরঙ্গতা ও প্রতিশ্রুতি নেই সেই সম্পর্কে ভালোবাসার কোন ভূমিকাই নেই তাই হলো Non Love । যেমন – একজন অপর জনকে দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকে ভালবাসার প্রস্তাব দিলো অপরজন তা প্রত্যাখান করে ফিরিয়ে দিলো । যার ফলশ্রুতিতে যে যার মত নিজেদের গন্তব্যে ফিরে গেলো এটাই হলো ভুমিকাহীন ভালোবাসা বা None Love

২) Liking Love –  পছন্দের ভালবাসাঃ

এ ধরনের ভালোবাসার সম্পর্কে মধ্যে অন্তরঙ্গতা বা Intimacy আছে। এখানে অন্তরঙ্গতা বা Intimacy বলতে বুঝানো হচ্ছে দুজনেই পাশাপাশি সহবস্থান করে কিন্তু আবেগ বা কোন প্রতিশ্রুতি নেই এমন সম্পর্ক গুলো Liking Love হিসাবে বিবেচনা করা হয়। যেমন – সহপাঠি বা সহকর্মীদের মাঝে অনেক সময় একে অন্যকে পছন্দ করে এক সাথে পড়ছে বা কাজ করছে প্রায়সই ভালো মন্দ অনেক কিছুই শেয়ার করছে কিন্তু তাদের মাঝে কোন প্রকার প্রতিশ্রুতি নেই।  আবার একটি সম্পর্ক গঠনের জন্য যে আবেগটুকু দরকার তাও নেই। শুধু অন্তরঙ্গতা Intimacy টুকুই রয়েছে এটাই Liking Love ।

৩) Infatuated love প্রফুল্লতম ভালোবাসা :
এই ধরনের ভালোবাসায় প্রচন্ড আবেগ Passion আসক্তি বা আকর্ষন কাজ করে অথচ অন্তরঙ্গতা এবং কোন প্রতিশ্রুতি নেই। এই ভালোবাসার ধরনটিকে বুঝাতে একটি কেইস ষ্টাডি উল্লেখ করা যাক –

একজন বিবাহিত নারী যার কিনা ৩ বছরের একটি সন্তান আছে, স্বামী চাকুরীতে ব্যস্ত থাকায় যথাযথ ভাবে স্ত্রীকে সময় দিতে পারেন না, হঠাৎ করেই ঐ মহিলার সাথে একজন ভদ্রলোকের ফোনে পরিচয় ঘটে। পুরুষটি অন্য শহরে থাকায় ফোনেই প্রতিদিন কথাবার্তা হয়। এভাবে কথা বলতে বলতে ব্যাপারটা এমন পর্যায়ে পৌছে গেলো এখন প্রতিদিন ঐ পুরুষটির সাথে ফোনে কথা না বললে তার ভালো লাগে না বরং অস্থিরতা কাজ করে। একসময় বাড়ির সবাই তা জেনে গেলে তার মোবাইলটি নিয়ে নেয়া হয়। তারপরও সে লুকিয়ে আরেকটি ফোন কিনে তার সাথে কথা চালিয়ে যেতে থাকে। এমন সম্পর্ক গুলোকেই বলা হয় Infatuated love বা প্রফুল্ল প্রেম যেখানে অন্তরঙ্গতা ও প্রতিশ্রুতি কোনটায় নেই অথচ আবেগ, আসক্তি বা আকর্ষণের পরিমানটা অনেক তীব্র।

৪) Empty Love শূন্য ভালোবাসাঃ
এই ভালোবাসার ধরনটি Infatuated love বা প্রফুল্ল ভালোবাসার ঠিক উল্টো এখানে অন্তরঙ্গতা আছে, প্রতিশ্রুতিও আছে কিন্তু একে অন্যের প্রতি ভালোবাসা নেই, আসক্তি বা আকর্ষন নেই।। শূন্য ভালোবাসার একটা উদাহারন দেয়া যাক –

আগেকার দিনের মত এযুগেও এখনো কিছু বিয়ে হয় যারা আগে থেকে কেউ কাউকে চিনতো না, জানতো না – কিন্তু বিয়ে হয়েছে। তারমানে একসঙ্গে থাকতে হবে আমৃত্যু পর্যন্ত। এখানে একজন আরেকজন কে ভালো লাগছেনা, বনিবনা হচ্ছে না, মানসিক ও শারিরিক সম্পর্কেও কেউ কারো উপযুক্ত না অথচ এসম্পর্কে এসব ভাবারও কোন সুযোগ নেই। ব্যাপারটা এমন যে, বিয়ে হয়েছে মানেই সঙ্গী যেমনই হোক তার সাথেই বাকী জীবন কাটাতে হবে। এধরনের সম্পর্ক গুলো Empty Love শূন্য ভালোবাসার আওতাধীন।

৫) Romantic love রোমাঞ্চকর (ভাব বিলাসী) ভালোবাসাঃ   

রোমান্টিক ভালোবাসায় দুজনের মাঝে প্রবল আবেগ আসক্তি বা আকর্ষন থাকে আবার অন্তরঙ্গতা বা Intimacy ও থাকে । একে অন্যের সাথে অনেক কিছুই শেয়ার করে । দুজনের মধ্যে একে অপরের প্রতি যৌন আকর্ষণ ও উদ্দীপনাও থাকে কিন্তু যা থাকেনা যেটা হলো প্রতিশ্রুতি বা Commitment । যেহেতু এধরনের সম্পর্ক কিংবা ভালোবাসায় কেউ কারো সাথে প্রতিশ্রুতিবন্ধ নয় তাই এমন সম্পর্কে নতুন করে কারোজীবনে কেউ এলে – যদি তাকে ভীষন ভালোলাগে, তাহলে তারা যে যার মত সিদ্ধান্ত নিয়ে চলে যায় কেননা এই ধরনের সম্পর্কে কোন প্রতিশ্রুতি বা Commitment একেবারেই থাকেনা।

৬) Companionate love সহচর ভালোবাসাঃ

এ ধরনের ভালোবাসা হলো অনেকটা বন্ধুর মত এখানে একে অন্যের সাথে সবকিছুই শেয়ার করে, একজনের প্রয়োজনে আরেকজনকে সবসময় পাশে পায়। যে কথাটাগুলো স্বামী বা স্ত্রীকে বলা যায়না সেটাও তার সাথেও শেয়ার করে। এ ধরনের সম্পর্কে একেবারেই আবেগ বা আকর্ষন থাকে না আবার অন্তরঙ্গতা বা Sexual Intimacy ও থাকে না । এইধরনের সম্পর্কগুলোই সহচর ভালোবাসা বা Companionate love ।

৭) Fatuous Love নিষ্ঠুর প্রেমঃ
এই ধরনের ভালোবাসায় একজন আরেকজনের সাথে কোন কিছুই শেয়ার করে না, এমন কি কথাও হয় না কিন্তু বড্ড আবেগ ও আকর্ষন বা আসক্তি কাজ করে।  আসক্তির পরিমান এতই বেশী থাকে যা থেকে মনে হতে পারে সারাজীবনের জন্য কেউ একজন বড্ড প্রতিশ্রুতিবন্ধ। প্রচলিত ভাষায় একতরফা ভালোবাসার মত একটা ব্যাপার। এখানে কোনধরনের অন্তরঙ্গতা Intimacy একেবারেই নেই। তাই প্রতিশ্রুতি Commitment এর তো কোন উদাহারনই আসেনা ।

৮) Consummate Love ভালোবাসা বা পরিপূর্ন প্রেমঃ

আমরা সবাই সাধারনত সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভালোবাসা বা পরিপূর্ন প্রেমটাই চাই।  বিশ্বখ্যাত সাইকোলোজিষ্ট ষ্টার্নবার্গ এর  ট্রায়াংগুলার থিওরী অফ লাভ এর মতে -একটি পরিপূর্ণ প্রেম ও ভালোবাসায় –

১) আবেগ ও আকর্ষন  ২) অন্তরঙ্গতা  ৩) প্রতিশ্রুতি  এই তিনটি উপাদানই সমান ভাবে থাকবে। এবং একজন আরেকজনের সুখে দুখে, সময়ে অসময়ে, সারা জীবন একে অন্যের পাশে থাকার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকে এবং দুজনের মধ্যে বুঝাপড়ার ব্যাপারটাও চমৎকার ভাবে সন্নিবেশিত থাকবে।

সম্মানিত পাঠক আপনি এখন উপরে ৮ প্রকার ভালোবাসা ও সম্পর্কের বিভাজন থেকে আপনার সম্পর্কটি কোন ধাপে আছে সেটা সহজেই নিরুপম করতে পারবেন এবং সম্পর্কটির ভবিষ্যত নিয়ে নিজেই নিজের সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবে।  লেখাটি ভালো লাগলে অন্যকে জানাতে শেয়ার করুন ।  বিবাহবিডি ডট কম।

সম্পর্ক যখন অসমবয়সি

দু’জনেই প্রেমে মশগুল হয়ে রয়েছেন। একে অপরকে চোখে হারান। কিন্তু একজন যৌবন উত্তীর্ণ এবং আর একজন সদ্যযুবক বা যুবতী। এই ধরনের ‘মে-ডিসেম্বর’ প্রেম দেখলে অনেকেরই হয়তো ভ্রুযুগল ঈষৎ বাঁকতে পারে। কিন্তু তাতে কী যায় আসে! প্রকৃত প্রেম বলতে কি স্রেফ সমবয়সি যুগলকেই বোঝায়? হলই না হয় প্রেমে ‘এজ গ্যাপ’!

যে কোনও সম্পর্ক ধরে রাখার মূলমন্ত্রই দু’জনের মধ্যে বোঝাপড়া। তাই নিজেদের সম্পর্ক নিয়ে নিজেরা যদি যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী হন তাহলে এগিয়ে যেতে বাধা কোথায়? তবে বয়সের অনেকটা ফারাক থাকলে পরবর্তীকেলে কিছু সমস্যা আসতে পারে। তাই যে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভাল করে ভেবে নিন।

দুটো মানুষের একে অপরকে ভাল লাগা, কাছে আসা, একে অপরের সঙ্গ উপভোগ করা— এর সঙ্গে বয়সের খুব একটা সম্পর্ক নেই। তবুও প্রেমের সম্পর্কে দু’জনের মধ্যে যদি বয়সের অনেকটা ফারাক থাকে তাহলে সেই সম্পর্ক নিয়ে দোটানায় থাকেন অনেকেই। কিন্তু দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক যদি যথেষ্ট মজবুত হয় তাহলে বয়সের পার্থক্য থাকলেও খুব একটা সমস্যা হয় না। বলিউড থেকে শুরু করে খেলার জগতে এরকম উদাহরণ কিন্তু নেহাত কম নয়। তবুও অসমবয়সি সম্পর্কের ক্ষেত্রে অনেকসময়ই কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। পরিবারের দিক থেকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া আসতে পারে। সম্পর্কের পরিণতি নিয়ে নিজের মনের মধ্যেও প্রশ্ন জাগা অস্বাভাবিক নয়। তাই অসমবয়সি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার আগে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখুন।

  • অসমবয়েসি প্রেমের ক্ষেত্রে নিজেদের মনে কোনও দ্বিধা থাকলে ভবিষ্যতের দাম্পত্যে তার প্রভাব পড়তে পারে। তাই সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার আগে নিজেকে একটু সময় দিন। ভাল করে ভেবে দেখুন আপনি যা করতে যাচ্ছেন, তা আপনার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। পরিবার বা কাছের মানুষজনের কাছে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি সঠিকভাবে মেলে ধরতে পারবেন তো?
     
  • নিজেদের সম্পর্ক নিয়ে যদি যথেষ্ট কনফিডেন্ট থাকেন তাহলে পরিবার বা বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে তা লুকিয়ে রাখবেন না। ভবিষ্যতে একসঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নিলে তা পরিবারের কাছে খুলে বলুন। নিজেরা বলতে না পারলে কোনও পারিবারিক বন্ধু আত্মীয়র সাহায্য নিতে পারেন বাড়ির বড়দের বোঝানোর জন্যে। একে অপরের পরিবারের সঙ্গে মেলামেশা বাড়ান। একসঙ্গে ঘুরতে যাওয়া, কেনাকাটা, খাওয়াদাওয়ার মাধ্যমে সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তুলুন। এতে দুই পরিবারের মধ্যেই আপনাদের সম্পর্কটা মেনে নেওয়া অনেক সহজ হবে। পারিবারিক সম্মতি সবসময়ই একটা ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে।
     
  • অসমবয়সি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার আগে সন্তান চাওয়া নিয়ে একে অপরের সঙ্গে পরিষ্কার ভাবে আলোচনা করে নিন। আপনার সঙ্গী যদি বয়সে আপনার চেয়ে অনেকটা বড় হন হতে পারে তাঁর আগের সম্পর্কে সন্তান আছে। তিনি নতুন সম্পর্কে হয়তো সন্তান নাও চাইতে পারেন। আবার সঙ্গী বয়সে অনেকটা ছোট হলে দেরিতে সন্তান চাইতে পারেন। তাই সম্পর্কের শুরুতেই এই ধরনের বিষয়গুলি নিয়ে পরিষ্কার করে আলোচনা করে নিন। একে অপরের মানসিকতা এবং কম্প্যাটিবিলিটি ভাল করে বুঝে নিন। এতে সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় থাকে। 
     
  • বয়সের ফারাক বেশি হলে তাই নিয়ে বন্ধুবান্ধবরা ঠাট্টাতামাশা করতে পারেন, আত্মীয়স্বজন বা প্রতিবেশীরা বিভিন্নরকম মন্তব্য করতে পারেন। এই ধরনের পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকুন। নিজেদের মধ্যে কথাবার্তার সময় বয়েসের পার্থক্যের ব্যাপারটা সবসময় এড়িয়ে যাবেন না। বরং দুজনে মিলেই ঠিক করুন যে চারপাশের প্রতিবন্ধকতা কীভাবে জয় করতে পারেন।