বিয়ের পর অ্যডজাস্টমেন্ট

বিয়ের পর জীবনের একটা সম্পূর্ণ নতুন পর্ব শুরু হয়। জীবনে নতুন মানুষটি ও তার পরিবারের সঙ্গে মানিয়ে থাকার সূত্রপাতও এখন থেকেই। নতুন কিছুর সঙ্গে মানিয়ে নিতে সময় লাগে বই কী! অনেকে হিমশিম খেয়ে দিশেহারাও হয়ে পড়েন। তাঁদের জন্য রইল অ্যাডজাস্টমেন্ট সম্পর্কে কয়েকটি জরুরি টিপস।

অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ হোক বা লাভ ম্যারেজ বিয়ের পর সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগে বই কী! নতুন শ্বশুরবাড়ি আর নিজের ছোটছোট অভ্যাস, ইচ্ছে, পছন্দ, এই দুয়ের মধ্যে সেতু তৈরি করতে গিয়ে অনেকেই একটু সমস্যায় পড়ে যান। তবে একটু অ্যাডজাস্টমেন্ট আর বুদ্ধি করে চললে দেখবেন সহজেই অ্যাডপ্ট করে নিতে পারছেন।

বিয়ের পর টাইম ম্যানেজমেন্ট একটা বড় চ্যালেঞ্জ। শ্বশুরবাড়ি এবং বাপের বাড়ির মধ্যে ব্যালেন্স করে চলুন। বিয়ের পরপর কিছুদিন একে ওপরকে সময় দেওয়া খুব জরুরি। তা লাভ ম্যারেজ বা অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ যাই হোক না কেন। নতুন সম্পর্কের ভিত দৃঢ় করতে  এবং এতে ওপরকে আরও ভাল ভাবে চিনে নেওয়ার জন্য এই সময়টা খুব জরুরি। তাই বলে বিয়ের পর হ্যজব্যান্ড যদি কোনও একটা উইকঅনেড ওঁর বন্ধুদের সঙ্গে কাটাতে চায় তাতে বাধা দেবেন না। দেখুন, সোশাল লাইফ তো আপনাদের দু’জনেরই আছে। বিয়ে হয়ে গিয়েছে মানেই সব কিছু বদলে গেল এমন তো নয়। কখনও কখনও টাইম বের করে আপনিও আপনার বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে ঘুরে আসুন।

একসঙ্গে থাকতে গেলে দাম্পত্যে নানারকম সমস্যা আসতে পারে। মনে রাখবেন, আপনার স্বামী বা স্ত্রী আপনার থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন একজন মানুষ। তাই তাঁর বেড়ে ওঠা, পরিবার, রুচিবোধ, ধ্যানধারণা, অভ্যাসগুলো আপনার থেকে আলাদা হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাই তাঁকে তাঁর মতো করেই গ্রহণ করুন। নিজেদের মধ্যে সমস্যা হলে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে আসুন। নিজের মত চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। সঙ্গীর দিকটাও বোঝার চেষ্টা করুন।

বিয়ের পর নতুন সংসারে কিছু দায়িত্ব নিন। সংসারের কাজে সবাই হাত লাগলে, ফ্যামিলি বন্ডিংও  দৃঢ় হয়। যদি আপনি স্বামীর সঙ্গে একা থাকেন তাহলে কে কী কাজ করবেন নিজেদের মধ্যে ঠিক করে নিন। দু’জনের সংসারে দায়িত্ব তো দু’জনের উপরই বর্তায়। যেমন ধরুন, উইকএন্ডে ঘর সাফ করার প্ল্যান হলে ঠিক করে নিন কে কোনটা করবেন। কিংবা একসঙ্গেও কোনও একটা কাজ করতে পারেন। একে অপরকে সাহায্য করুন। হালকা মিউজ়িক চালিয়ে গল্প করতে করতে কাজ করে করুন। দেখবেন এতে আপনারা কাজটাকে এনজয় করবেন।

নিজেরদের মধ্যে রোম্যান্স বজায় রাখুন। রোজ দেখা হওয়ায় কাছের মানুষ অনেকটা চেনা হয়ে যায়। এটাকে বোরডম ভাববে না। বরং দেখুন প্রতিদিনই একটু একটু করে আপনারা একে অপরের সঙ্গে আরও বেশি কমফর্টেবল হয়ে উঠবেন।  মাঝে মধ্যে ডেটে যান। একে অপরকে সারপ্রাইজ় করুন। অফিস ফেরত ছোট কোনও উপহার নিয়ে যান। একসঙ্গে কোয়ালিটি টাইম কাটান। অফিসের কাজ বাড়িতে নিয়ে যাবেন না। ওই সময়টুকু একে অপরেকে দিন। ফোন বা সোশাল সাইটে সময় না কাটিয়ে নিজেরা গল্প করুন।

শ্বশুরবাড়িতে চেষ্টা করুন স্বাভাবিক থাকতে। আপনি তো এখন এই পরিবারেরই একজন, তাই আপনি যেরকম সেরকম ভাবেই থাকুন। শাশুড়িকে সব কাজে সাধ্যমত সাহায্য করুন। শাশুড়ির কাছ থেকে জেনে নিন স্বামী এবং পরিবারের সবাই কী কী খেতে ভালবাসেন। সেই ডিশগুলো হঠাৎ একদিন রান্না করে খাইয়ে সবাইকে সারপ্রাইজ় দিতে পারেন। অফিস থেকে ফিরে কিংবা ডিনার টেবলে সবাই একসঙ্গে কিছুক্ষণ সময় কাটান। সারাদিন কী হল গল্প করুন। আপনারা যদি আলাদা থাকেন তাহলে চেষ্ট করুন দিনে একবার ফোন করে খোঁজ নিতে। কখনও কখনও উইকএন্ডে একসঙ্গে বেড়াতে যান কিংবা লাঞ্চ বা ডিনার করুন। এতেই সুন্দর সম্পর্ক বজায় থাকবে।

যৌনতা, বিয়ে ও সামাজিকতা

যৌনতা মানব জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। স্বীকার করুন অথবা নাই করুন জীবনে যৌনতার রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এটি মানুষসহ সকল জীবের অন্যতম চাহিদাগুলোরও একটি। একজন নারী ও পুরুষ বারো থেকে চৌদ্দ বছর বয়সপ্রাপ্ত হলেই তার যৌন চাহিদা দেখা দিতে থাকে। ফলে সে মনে মনে এই চাহিদা মেটানোর উপায় নিয়ে ভাবতে থাকে। এই চাহিদা কোন প্রক্রিয়ায় মেটানো সম্ভব? সকল সমাজ, সকল ধর্ম একটিই বৈধ ও প্রচলিত পন্থা এ ক্ষেত্রে আবিষ্কার করেছে। সেটি হচ্ছে ‘বিয়ে’। বিয়ের মাধ্যমে মানুষ তার যৌন চাহিদা পূরণ করে। সঠিক সময়ে বিয়ে করা যৌন সংক্রান্ত  কেলেঙ্কারী কিংবা দুর্ঘটনাসমূহ রোধের একটি অন্যতম উপায়। কাজেই আমাদের সমাজে বিয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বিভিন্ন দিক দিয়ে।

সভ্যতার আদি থেকেই যৌন চাহিদা মেটানোর জন্য সমাজ পতিতালয় তৈরি করেছে। সেখানে নিয়মিত যাতায়াত করেন কিছু কুরুচিপূর্ণ মানুষ। তারা  সেভাবেই শারীরিক চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু যৌনতা কি শুধু শারীরিক বিষয়? যৌনতা কি শুধু যে কোন নারী বা পুরুষের সাথে একটি নির্দিষ্ট সময় কাটিয়ে শরীর হাল্কা করা? সেটি পশুত্বের সামিল। যৌনতা মানব সৃষ্টির জন্য একটি বিশেষ কর্ম। এখানে শরীর, মন, আন্তরিকতা, পরস্পরের চাহিদা এবং এক ধরনের আত্মিক বিষয় জড়িত। এজন্যই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে গড়ে ওঠে এক গভীরতম সম্পর্ক। অথচ বিয়ের পূর্বে তাদের সাথে কোনো ধরনের পরিচয়ই হয়তো ছিল না।

যুগ ও অর্থনীতির চাহিদার কারণে আমাদের দেশ থেকে প্রচুর মানুষ বিদেশ যায়। কেউ যাচ্ছেন অর্থ উপার্জন করতে, কেউ উচ্চতর শিক্ষার জন্য। যে কারণেই  যাওয়া হোক না কেন এখানে যৌন বিষয়ে কি কোন সমাধানের কথা বলা আছে? নেই। এক বছর দুই বছর কিংবা তারচেয়েও বেশি সময় একজন পুরুষ বা একজন স্ত্রী কীভাবে নিজেদের যৌন চাহিদা মেটাবে একে অপরের অনুপস্থিতিতে? বিষয়টি বেমালুম সবাই ভুলে যান। ফলে নেমে আসে এক অশান্তি ও অবিশ্বাস। আমরা এমন ভান করি এসব ক্ষেত্রে যেন সব কিছু ঠিকঠাক আছে, স্বামী-স্ত্রী একে অপরের কাছ থেকে দূরে থাকা কোনো বিষয় নয়। বিশেষ করে যারা বিবাহিত। আর যারা বিয়ে করেনি আমরা ধরেই নিয়েছি যে, তারা একটু উল্টা-পাল্টা করবেই। এই উল্টাপাল্টা মানে এক ধরনের বিশৃংখলা। কিন্তু সবাই কেন জানি এ বিষয়টিও মেনে নিচ্ছি।

যৌনতা যাতে পশুত্বে পরিণত না হয় সেদিকে আমাদের বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে। কোনো পশু একমাত্র কুকুর ছাড়া যৌনক্রিয়া করার সময় একটু আড়াল খোঁজে, আড়ালে কাজটি সম্পাদন করে। অথচ পশ্চিমা দেশগুলোতে এবং পশ্চিমা দেশগুলোর আদলে প্রাচ্যের যেসব দেশ এগিয়ে যাচ্ছে সেসব দেশেও যৌনতা খোলামেলাভাবে প্রদর্শিত হচ্ছে, এটি কি খুব আনন্দের বিষয়? চীনেও দেখা যায় হাজার হজার লোকভর্তি ট্রেনে প্রেমিক-প্রেমিকা সবার সামনে দিবালোকে গভীর চুম্বনরত। পার্কে একটি মেয়েকে সবার সামনে কোলের ওপর বসিয়ে রেখেছে। আমি বেইজিংয়ের হোটেল রুমে বসে বসে দেখলাম রাস্তার পাশে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে ঘন্টাখানেকের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন ধরনের যৌনকাজ সম্পন্ন করল। তারপর সন্ধ্যা হয়ে এলো, পরে আর স্পস্ট দেখা গেল না। চীন এশিয়ার একটি দেশ। এটি পশ্চিমা কোনো ধনী দেশ নয়, সেখানেই এই অবস্থা আধুনিকতার নামে!  প্রকাশ্য দিবালোকে এবং সূর্য ডোবার আগে এগুলো কী হচ্ছে? আমাদের দেশের বিভিন্ন পার্কে যাবেন কম-বেশি অশ্লীল দৃশ্য চোখে পড়ে। পশ্চিমা দেশ থেকে আগত এসব কালচার কতটা আমাদের সাথে মানানসই? আমেরিকার বিভিন্ন সিটিতে ছেলেমেয়ে চলতে দেখা যায়, হাতে হাত ধরে কিংবা আরও কাছাকাছি কিন্তু সরাসরি প্রকাশ্যে যৌনতা প্রদর্শন খুব একটা চোখে পড়েনি। তবে বিষয়টি তারা সঠিক পথে পরিচালিত করছে না। আর তাই সেখানে পারিবারিক বন্ধন সাময়িক ব্যাপার, অত্যন্ত ঠুনকো। সেখানে লিভ টুগেদার প্রচলিত আর লিভ টুগেদার মানেই তো এক ধরনের বিকৃত অভ্যাস। কিছু কিছু স্টেটে প্রকাশ্যেই দেখা যায়, কোথাও হয়ত একটু রিজার্ভ। তবে কানাডাতে শপিং মলগুলোতে কিংবা রোস্তোরাঁয় প্রকাশ্যে চুম্বনের বিষয়টি প্রত্যক্ষ করেছি। কিন্তু তাদের অনুসারী দেশগুলো যেন দুই ধাপ এগিয়ে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের আগে হিলারী বলেছিলেন, তিনি নারীদের ‘গর্ভপাত’ করার আইন বহাল রাখবেন। এখানে যৌনতা ব্যাপারটি এত অবাধে চলে যে, যে কোনো সময় যে কোনো নারী গর্ভবতী হতে পারে। যেহেতু বাবার কোনো ঠিক থাকবে না কিংবা ফ্রি থাকার জন্য অসংখ্য নারী এখানে গর্ভপাত করেন। আমি দেখেছি কিছু ধর্মীয় সংগঠন এই গর্ভপাতের বিরুদ্ধে ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে  কিংবা ব্যানার টানিয়ে রেখেছে। এদের যৌন আচরণ পুরোপুরি আলাদা।

বিবাহ বিডি কল
বিবাহ বিডি কল সেন্টারঃ +৮৮ ০১৯২২১১৫৫৫৫

একটি সুখের সংসারে অবহেলিত যৌনতা মারাত্মক করুণ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। এর মূল কারণ হচ্ছে যৌনতা সম্পর্কে স্বামী কিংবা স্ত্রীর উদাসীনতা। যে সংসারে স্ত্রী তার স্বামীকে কিংবা স্বামী তার স্ত্রীর যৌনসুখ মূল্যায়ন করে না, উদাসীন থাকে সেখানেই দেখা দেয় সমস্যা। স্ত্রী সুযোগ পেলে অন্য পুরুষের এবং স্বামী সুযোগ পেলে অন্য মেয়ের সান্নিধ্য পেতে চাইবে, এটাই স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়ায় তখন। প্রথম দিকে চুপি চুপি কিছু করা হলেও পরে তা বিদ্রোহী রূপ নেয় এবং এক সময় সংসারভাঙ্গা, হত্যা ইত্যাদি পর্যন্ত গড়ায় আর সংসার যদি টিকিয়ে রাখার চেষ্টাও করা হয় তাহলে সেটি  চলে অবিশ্বাসের মধ্যে, এক ধরনের ধোঁয়াশার মধ্যে । কাজেই স্বামী স্ত্রী উভয়কেই এই বিষয়ে সজাগ ও সচেষ্ট থাকা দরকার।

যৌনতা প্রাকৃতিক বিষয়, মানুষের অত্যাবশ্যকীয় চাহিদা। এখানে শরীর ও মনের সাথে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। একটি ছাড়া অপরটি প্রকৃত সুখকর, উপভোগ্য এবং সার্থক হয় না। তাই প্রাকৃতিক নিয়মেই এটি সম্পন্ন করতে হয়। মানুষ যখন এটি অবাধে, স্বেচ্ছারিতার মনোভাব নিয়ে ভোগ করার চেষ্টা করে, বিকৃত যৌনাচারে লিপ্তা হয় প্রকৃতি তখন বিরূপ হয়। যেমন অবাধ যৌনাচার ও বহুগামিতা মানুষের জন্য মরণব্যাধি ‘এইডস’ নিয়ে এসেছে। বিশ্বের মানুষকে এক ভীতিকর অবস্থায় নিক্ষিপ্ত করেছে। এ থেকে উত্তরণের জন্য সঠিক পারিবারিক এবং বৈধ যৌনচার করার জন্য পশ্চিমা চিকিৎসকগণ তাদের দেশের মানুষদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। সুস্থ যৌনতাই এর একমাত্র সমাধান। পশ্চিমা গবেষকরা  আবিষ্কার করেছেন যে, সুস্থ যৌনচারই এইডস-এর মতো মরণব্যাধি এড়ানোর সঠিক পথ যা আমাদের সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ইদানিং সমকামিতা নামে আর এক যথেচ্ছারিতা, অবাধ ও বিকৃত যৌনাচার শুরু হয়েছে। এর ব্যাপ্তি গোটা বিশ্বে। এটি প্রকৃতিবিরোধী কাজ। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ, বিপরীত লিঙ্গের সাথে মিলন তো প্রকৃতির অবদান, প্রাকৃতিক সুখ ও তৃপ্তি সেখানে নিজেদের তৈরি নিয়ম পুরুষে-পুরুষে, নারীতে-নারীতে যৌনক্রিয়া সেটি কতবড় কুরুচির পরিচয় তা মানুষ হিসেবে আমাদের ভেবে দেখা উচিত!

যৌনতা এক তরফা বিষয় নয়। এখানে উভয়ের মতামত, ইচ্ছে, আগ্রহ এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন। একজনের ইচ্ছে, আগ্রহ বা অংশগ্রহণ এই ক্রিয়াকে সাফল্যমণ্ডিত করতে পারে না। বিষয়টি উপভোগ্যও হয় না। সঠিক যৌন তৃপ্তি ও প্রাকৃতিক চাহিদা মেটানোর জন্য দুজনকেই পালন করতে হয় সক্রিয় এবং আগ্রহী ভূমিকা। যে সংসারে  স্বামী-স্ত্রী দুজনই ব্যাপারটিতে সমভাবে আগ্রহী, সেখানে অবিশ্বাস ও হতাশা জন্ম নেওয়ার স্থান নেই। জীবন হয়ে ওঠে উপভোগ্য, আনন্দের ও সার্থক। তারা পারিবারিক, সামাজিক, ধর্মীয় যে কাজই করুক না কেন অত্যন্ত আনন্দের সাথে, তৃপ্তির সাথে এবং সার্থকভাবে তা করতে পারে। ফলে ধীরে ধীরে সাফল্যের শীর্ষে যেতে পারে। আর যে সংসারে একজন এ বিষয়ে অনাগ্রহী থাকে, উদাসীন থাকে তারা জীবন উপভোগ করতে পারে না সঠিকভাবে। মনোযোগ সহকারে কোনো কাজ করতে পারে না। জীবনকে সাফল্যের দিকে নিতে হলে স্বামী-স্ত্রীকে যৌনতা বিষয়ে সমভাবে আগ্রহী এবং সক্রিয় হতে হবে।  সুত্র ।| লেখকঃ মাছুম বিল্লাহ

সম্পর্কের সুখ দুখ

জানালার শিক ধরে আকাশ পানে চেয়ে আছে তামান্না। পড়ন্ত বিকেলে মেঘেরা বাহারী রঙ গায়ে মাখিয়ে ছোটাছুটি করছে। অপরূপ সে দৃশ্য। কিন্তু সেদিকে তাকিয়ে থেকেও তা দেখছে না তামান্না। কিংবা বলা চলে দেখতে পারছে না। পারবে কিভাবে, তার মন তো তার নিজের মাঝে নেই। উদাস মন মহাশূন্য ভেদ করে ছুটে যাচ্ছে, খুঁজে বেড়াচ্ছে তার হারানো ঠিকানা। কিন্তু পাচ্ছে না। এ জন্য তামান্নার কষ্ট হচ্ছে। ভীষণ কষ্ট। বুকের মাঝে কষ্ট যেন কামড়ে ধরছে। বার বার ঘুরে ফিরে একটি মুখ ভেসে আসছে হৃদয়পটে। আর সঙ্গে সঙ্গে ফাকা হয়ে যাচ্ছে বুক, ফিরে আসছে কষ্টগুলো। দীর্ঘ পাঁচ বছরের ভালবাসার মানুষের সঙ্গে ব্রেকআপ হয়ে গেছে। কিন্তু বার বার ফিরে আসছে কাটানো মধুময় সে সময়গুলো আর সেই সঙ্গে ভালবাসা হারানোর কষ্ট। কোন কিছুতেই মন দিতে পারছে না সে। অথচ আর কিছুদিন পরেই তার পরীক্ষা। এখন কি করবে তামান্না? এরকম পরিস্থিতি তামান্নার মতো হাজারো তরুণ-তরুণীর। হৃদয় ভাঙ্গা কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বিশ্বখ্যাত সংবেশনবিদ (হিপনটিসট) পল ম্যাককেনা এবং মনোচিকিৎসক ড. হগ উইলবর্ন কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। সেই আলোকেই কিভাবে ভগ্ন হৃদয়ের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় তা তুলে ধরা হলো।

কষ্টকে মেনে নিন

যাকে নিয়ে স্বপ্ন বুনেছেন, তার সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙ্গে গেলে কষ্ট লাগাই স্বাভাবিক। কষ্ট না লাগলে বরং বলতে হবে আপনার ভালবাসায় খাদ আছে। তাই কষ্ট লাগবেই, এমনটা ভাবা শুরু করুন, দেখবেন কষ্ট অনেকটাই কমে গেছে। মনে রাখবেন মানুষের জীবন সুখ-দুঃখ মিলেই। ভালবাসার রঙিন সময়টাতে সুখের ভেলায় চড়ে কল্পজগতে পাড়ি দিয়েছেন মহাসমুদ্র, বুনেছেন কতসহস্র স্বপ্ন তার ইয়ত্তা নেই। তাই বলে যে জীবন সবসময় একরকমভাবেই যাবে, তা তো নয়। এটা জীবনের ধর্মও নয়। রাতের অন্ধকার ঘরে প্রবেশ করে কোন কিছু চিন্তা না করেই আপনি লাইটের সুইচ দেন, ঠিক তেমনি ভালবাসার সম্পর্ক ভেঙ্গে গেলে অচেতনভাবেই আপনার মনে অতীতের স্মৃতি চলে আসবে আর তা আপনাকে পোড়াবে, ভেঙ্গেচুড়ে দিতে চেষ্টা করবে, এটাকে স্বাভাবিক ধরে নিন। দেখবেন ধীরে ধীরে কষ্ট কমে যাবে।

পুরনো অভ্যাসগুলোকে পাত্তা দেবেন না

ভালবাসার সময়টাতে আপনাদের জানতে কিংবা অজানন্তে অনেক অভ্যাসই তৈরি হয়ে গেছে। এই অভ্যাসগুলোই এখন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে, তাই না? এক কথায় বলব, ঝেড়ে ফেলুন। যে অভ্যাসগুলো আপনি সে সময়ে করেছেন, সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার চেষ্টা করুন। জানি কষ্ট হবে, কিন্তু কী আর করা। মাথায় কেউ আর আঙুল চালিয়ে চুলগুলো এলোমেলো করে দিচ্ছে না, আঙুলে আঙুলে কাটাকাটি খেলা আর হচ্ছে না। এরকম হাজারো রোমান্টিক কাজ, কত খুনসুটিতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলেন। এখন তা পোড়াচ্ছে। মনে করার চেষ্টা করুন, এগুলো নিতান্তই সে সময়কার অভ্যাস, এগুলো চিরন্তন নয়। সে সময় এগুলোতে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন বলে এখনও যে তা করতে হবে এমনটা তো নয়, এভাবেই ভাবা শুরু করুন। দেখবেন অভ্যাসগুলোর শূন্যতা আপনাকে আর পীড়া দিচ্ছে না। ও, আর হ্যাঁ, আপনি অবশ্যই দুঃখবাদী রোমান্টিক গান শুনবেন না। এটা আপনার পোড়ামনের জ্বালা না কমিয়ে শতগুণ বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, সম্পর্ক ভাঙ্গার পর বেশিরভাগ মানুষই দুঃখের গান শোনে। না, একদমই না। আপনি মোটেও এ ধরনের গান শুনবেন না।

পরিবর্তন আনুন ভাবনায়

প্রেমময় সময়ে কত কিছুই না চিন্তা করেছেন ভাললাগার মানুষটিকে নিয়ে। কত স্বপ্নই না বুনেছেন। এখন ছাড়ুন তো এসব। অনেক হয়েছে, এবার ভাবনা থামান। ভাবনায় ভাললাগার মানুষটি বার বার চলে আসলেও মাথা ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে ফেলুন। দেখুন তো অন্য কোন কিছু ভাবা যায় কিনা। যেমন ধরুন, আপনি আপনার চারপাশের পরিবেশ, মানুষ, সমাজ ইত্যাদি নিয়ে ভাবা শুরু করতে পারেন। মনে রাখবেন, ভাবনার আগের ফ্রেম থেকে নিজেকে সরিয়ে এনে নতুন ফ্রেম বসাতে হবে, নাহলে আপনার মুক্তি নেই। কী বুঝলেন তো? আরে ভাই, পুরনোকে আঁকড়ে ধরে পড়ে থাকলে তো হবে না, পৃথিবীতে কত কিছুই তো হচ্ছে, এগুলো নিয়ে ভাবা শুরু করুন, নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবা শুরু করুন। দেখবেন, একটা সময় কষ্ট ফিঁকে হয়ে আসবে।


অতীতকে যেভাবে দেখছেন তা পাল্টে দিন

সম্পর্ক ভেঙ্গে গেছে, তাই বলে কী স্মৃতিরা চলে গেছে? মোটেই না। অতীত সম্পর্ক নিয়ে ভাবা, কষ্ট কষ্ট খেলা এক ধরনের বদঅভ্যাস। কী, এই কথা শুনে মেজাজ বিগড়ে গেল? ভাবছেন, আপনাকে নিয়ে ইয়ার্কি করা হচ্ছে। তা নয়। অনেক নিরাশাবাদী মানুষ আছেন যারা অতীতের দুঃখ নিয়ে পড়ে থাকতেই বেশি ভালবাসেন। এটা তাদের বদঅভ্যাস। এই বদঅভ্যাসের জন্য তাদের দীর্ঘ সাধনা দরকার। সেটার অন্য সমাধান আছে। আর আপনি যদি নিরাশাবাদী না হন, তাহলে অতীতের স্মৃতি মনে চলে আসলে ভাবুন ঐটা আপনার কল্পনা ছিল। আপনি ওগুলো সিনেমায় দেখেছেন, বাস্তবে নয়। হোক না মিথ্যা, সমস্যা থেকে যদি ভাল থাকা যায়। মনকে যা বোঝাবেন তাই বুঝবে। মন বড় বোকা, হে।

বিবাহবিডি কল সেন্টারঃ +৮৮ ০১৯২২১১৫৫৫৫

মনে মনে প্রিয়ার ছবি আঁকুন

কী পাগল ভাবছেন। এতক্ষণ স্মৃতি ভুলে থাকতে বলে, এখন আবার বলছি প্রিয়ার ছবি আঁকতে, পাগল ছাড়া আর কী। কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার বিষয়টা তো জানেন। এ পদ্ধতিটি আসলে সেরকমই। প্রথমে আপনি একটা দৃশ্যকল্প নিজের মনের মধ্য সেট করুন। চোখ বন্ধ করে দেখতে থাকুন আপনার ভালবাসার মানুষটি হাসছে, গাইছে, নাচছে, আপনার সঙ্গে খুনসুটি করছে। দেখতে বেশ ভালই লাগছে, তাই না। কিন্তু এ ভাললাগা তো বেশিক্ষণের নয়। একটু পরেই আসবে যন্ত্রণা। চিন্তা করবেন না। এবার দেখতে থাকুন আপনার ভাললাগার মানুষটি আপনার ওপর অযৌক্তিকভাবে রেগে যাচ্ছে, আপনি মান ভাঙ্গানোর চেষ্টা করছেন তবু কমছে না। দেখতে থাকুন তার বদ অভ্যাসগুলো আর সেই সঙ্গে আপনার খাপ খাওয়ানোর প্রাণান্তকর চেষ্টা। ভাবুন আপনি একজন সিনেমার পরিচালক ও অভিনেতা। আপনি আর আপনার ভাললাগার মানুষটি তাতে অভিনয় করছেন এবং দেখা দৃশ্যকল্পগুলো আপনার অভিনয় ও পরিচালনার মধ্য দিয়েই হচ্ছে। দেখুন তো আপনার অনুভূতিতে কোন পরিবর্তন আসছে কিনা। পরের দৃশ্যগুলোর কারণে আগের দৃশ্যকল্পের রঙিন ছবিগুলো সাদা কালো হয়ে যাচ্ছে, তাই তো। হ্যাঁ, এটাই আপনার বাস্তব জীবনে হতো যদি আপনার সম্পর্ক ছেদ না হতো। রঙিন জীবন সাদা কালো হয়ে যেত। এভাবে দৃশ্যকল্প আঁকলে দেখবেন ভালবাসার বেগ কমে গেছে।

সম্পর্কের উল্টো দিকটা তলিয়ে দেখুন

একটা কথা সবসময়ই সত্য, এক হাতে তালি বাজে না। এটা মাথায় আপনাকে রাখতেই হবে। যে সমস্যাগুলোর জন্য আপনার সম্পর্ক ভেঙ্গে গেছে, সেগুলো নিয়ে ভাবুন। সমস্যাগুলো তো নিশ্চয় ছোট ছিল না, তাই না? সম্পর্ক টিকে থাকলে সে সমস্যাগুলো আরও সৃষ্টি হতে পারত। তাই যা হয়েছে, ভাল হয়েছে, এমনটাই ভাবুন। মনে রাখবেন, দুষ্টু গরুর চেয়ে যেমন শূন্য গোয়াল ভাল, তেমনি সমস্যা তথা জটিলতাপূর্ণ সম্পর্কের চেয়ে না থাকাই ভাল। তাহলে আর সারা জীবন পস্তাতে হবে না। সম্পর্কের এই উল্টোদিকটি ভেবে দেখুন। দেখবেন, পুরনো সম্পর্কটি নিয়ে আপনার মধ্যে আর আপসোস জাগবে না। বরং মনে হবে, বেঁচে গেছি। আর যদি পারিবারিক কারণে আপনি নিজেই সম্পর্ক ছেদ করে থাকেন, তাহলেও সেটাকে আত্মত্যাগ হিসেবেই নিন। জীবনের প্রয়োজনে মানুষকে অনেক আত্মত্যাগ করতে হয়, অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তাই একে স্বাভাবিক ধরে নিন। নিজের পক্ষে যুক্তি দাঁড় করান। পরিবারের মানুষদের হাসিভরা মুখগুলোর কথা মনে করুন, দেখবেন আপনার কষ্ট অনেকটাই মনে যাচ্ছে।

নিজের দিকে তাকান

অনেক তো হলো, এবার নিজের দিকে তাকান। কান্নাকাটি অনেক করেছেন। আয়নায় নিজের চেহারাটি দেখুন। কী বিমর্ষ। চাঁদবদনের কী হাল করেছেন, দেখেছেন? এ কী সহ্য করা যায়! একটা কথা অপ্রিয় শোনায়, তবু চিরন্তন। আপনি বাঁচলে বাপের নাম। আর কিছু বলতে হবে? অনেক স্মৃতি স্মৃতি খেলা খেলেছেন, এবার নিজের দিকে একটু নজর দিন। এই দেশ সমাজ, আপনার পরিবারের প্রতি আপনার অনেক দায়িত্ব, এভাবে ভাবুন না একবার। নিজের জন্য এবং অন্যদের জন্য আপনাকে ঘুরে দাঁড়াতেই হবে, ভুলে যেতে হবে পুরনো স্মৃতি, এমন কথামালা আওড়াতে থাকেন। দেখবেন, আপনার ভেতর থেকে পুরনো স্মৃতি ভুলে নতুন করে বাঁচার তাগিদ সৃষ্টি হবে।

বিশ্বাস করুন আপনি আবারও প্রেমে পড়বেন

সময় বহমান, তাই তো? জীবনও বহমান। কারও জন্যই জীবন থেমে থাকে না। সম্পর্ক ভেঙ্গে গেছে বলে যে আবার কোন সম্পর্ক হবে না, তা তো না। এমন কোন নিয়ম তো কোথাও নেই যে, জীবনে আপনাকে একবারেই ভালবাসতে হবে। আর এমনটাও নয় যে, আপনি অতীতের ভালবাসা ছাড়া আর কাউকে ভালবাসতে পারবেন না। কেউ যদি বলে থাকে, তবে হয় আবেগের বশে বলে নয় ডাহা মিথ্যা কথা বলে। নতুন কারও সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার চিন্তা করুন। বন্ধু খুঁজুন। পারলে বিপরীত লিঙ্গের কারও সঙ্গেই বন্ধুত্ব করুন। বিপরীত লিঙ্গের মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব আপনার পুরনো স্মৃতিকে ভুলে যেতে সাহায্য করবে। আর প্রেম করতে পারলে তো সোনায় সোহাগা।

হল্লার মাঝে ডুবে যান

দুঃখের সময় মানুষ যদি নিঃসঙ্গ থাকে, তখনই মানুষ বেশি কষ্ট পায়। স্মৃতিরা তাড়া করে ফেরে। এজন্য একাকী না থেকে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে হৈহল্লায় মেতে উঠুন। জানি, মন সায় দেবে না। তবু বলছি, একটু মনে জোর এনেই আড্ডা দিতে যান। প্রয়োজনে বেশি সময় আড্ডা দিন। দেখবেন নির্মল আড্ডার মধ্যে দিয়েই আপনি ভুলে যেতে থাকবেন, পুরনো স্মৃতি। বন্ধুদের নিয়ে দূরে ঘুরে আসতে পারেন, পিকনিক করতে পারেন। কিংবা জড়িয়ে পড়তে পারেন সমাজসেবামূলক কাজে। আর ঘর থেকে বের হওয়ার অসুবিধা থাকলে বই পড়া শুরু করেন কিংবা লেখালেখি। যেভাবেই হোক নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। দেখবেন ধীরে ধীরে আপনার কষ্ট কমে যাচ্ছে। আপনি আবার ফিরে যাচ্ছেন স্বাভাবিক জীবনে।

বিয়েতে ভয়, আপনার গ্যামোফোবিয়া তো নয়!

কৈশোরে কিংবা তারুণ্যে বন্ধুদের সাথে আড্ডায় হয়তো অনেকেই বিয়ের ইচ্ছা পোষণ করে থাকেন। আবার অনেকে আক্ষেপ করেও বলেন যে, ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বাবা মা বিয়ে দিচ্ছে না কিংবা তার মনের ইচ্ছা বুঝতে চাইছে না।  কিন্তু যখন সত্যিকার জীবনে বিয়ের বয়স হয়, তখন অনেক ক্ষেত্রেই বিয়ের প্রতি দেখা দেয় অনীহা। শুধু তাই নয়, দেখা যায় যে অনেক দিনের প্রেম থাকা সত্ত্বেও সম্পর্ককে বিয়ের নাম দিতে ভয় পাচ্ছেন তারা। বিয়ের জন্য যেন নিজেকে কোনো ভাবেই মানসিক ভাবে প্রস্তুত করে উঠতে পারেন না তারা।

বিয়ে করতে ভয় পাওয়ার বিষয়টিকে ‘গ্যামোফোবিয়া’ বলে।  বিয়ের কথা শুনে কিছুটা আতঙ্কিত বোধ করাটাও স্বাভাবিক।  তবে বিয়ের নাম শুনলেই যারা দৌড়ের ওপর থাকেন, তারা গ্যামোফোবিয়ায় ভুগতে পারেন।  যাদের মনে বিয়ের ভয় জেঁকে বসে এবং নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, অবশ্যই তাদেরকে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। তবে যারা বিয়ের কথা শুনে কেবল আতঙ্ক বোধ করছেন, তারা কিছুটা মানসিক জোর পেলেই বিয়েতে রাজি হবেন।

গ্যামোফোবিয়া কী? : বিয়ের বন্ধন ও স্থায়ী সম্পর্কে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার ভয়ই মূলত গ্যামোফোবিয়া।  গ্রিক শব্দ গ্যামো অর্থ বিয়ে ও ফোবিয়া মানে ভয়।   গ্যামোফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের কাছে বৈবাহিক সম্পর্ককে কখনো সরল জীবনযাপনের হুমকিস্বরূপ মনে হয়।  এছাড়াও সম্পূর্ণ নতুন একটি মানুষের সঙ্গে বসবাস ও তার পরিবার মানিয়ে চলাকেও তারা সহজভাবে নিতে পারেন না।

কারণ:  সাধারণত যেকোন ফোবিয়ার কারণ হচ্ছে বাইরের উদ্দীপক ও তার মানসিক প্রভাব।  যেমন, অতীতের আঘাতমূলক ঘটনা। আবার এ ভয় জেনেটিক কারণেও হতে পারে। অল্প বয়সে বিভিন্ন সম্পর্কজনিত জটিলতাও এই ফোবিয়ার কারণ হতে পারে।   ধারণা করা হয় বংশগতি, জিন ও মস্তিষ্কের রসায়ন এবং বাস্তব অভিজ্ঞতার সম্মিলনে ফোবিয়া তৈরি হয়।

লক্ষণ:  ভয়ের মাত্রা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়। তাই গ্যামোফোবিয়ার লক্ষণগুলোও আলাদা। যেমন—প্রচণ্ড দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ, ভয় ও আতঙ্কগ্রস্ত থাকা। অস্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস, ঘেমে যাওয়া, হৃদপিণ্ডের উর্ধ্বগতি, গলা শুকিয়ে আসা, কাঁপুনি ইত্যাদি।

প্রতিকার : বিশেষজ্ঞদের মতে, ফোবিয়ার সবচেয়ে উপযোগী চিকিৎসা হচ্ছে সম্মোহন বা হাইপোথেরাপি, মনোবিজ্ঞানির সাথে পরামর্শ (সাইকোথেরাপি) ও নিউরো-লিঙ্গুইস্টিক প্রোগ্রামিং (অবচেতন মন যদি নেতিবাচক হয়ে থাকে তবে তাকে রিপ্রোগ্রাম করবার জন্য দরকার সচেতনতার সাথে নিজস্ব উপলব্ধি, দৃষ্টিভংগী এবং আবেগ সম্পর্কে সচেতন হওয়া)।   সাইকোলজির কিছু বিশেষ টেকনিক ব্যবহার করে নিজের মনের অবচেতন প্রক্রিয়াকে গাইড করা সম্ভব।

বিয়ের ভয় কাটানোর কয়েকটি পরামর্শ জেনে নিন:

বিয়ে ফিল্ম নয়: অনেকে হলিউড বা বলিউডের চলচ্চিত্রে বড় বড় বিয়ের আয়োজন দেখে আতঙ্কিত থাকেন। মনে রাখতে হবে, বিয়ে মানে চলচ্চিত্রের দৃশ্য নয়। বাস্তব দৃষ্টিকোণ থেকে বিয়েকে দেখুন। এটি জীবনের স্বাভাবিক অংশ। অতি কাল্পনিক বা অতি জাঁকজমকের কিছু নয়। বাস্তবতা মেনে যাঁরা বিয়ের কথা ভেবেছেন, তাঁদের ভয় কেটে গেছে।

অযৌক্তিক ভীতি নয়: বিয়ে নিয়ে অনেকেই অতিরিক্ত ভয়ে থাকেন। মনে সন্দেহ তৈরি হয়। আস্থাহীনতায় ভুগতে থাকেন। বিয়ের বিরুদ্ধে যত পয়েন্ট আছে, সব এক জায়গায় করুন। এরপর সেগুলো বিশ্লেষণ করে দেখুন। একসময় মনে হবে, বিয়ের বিরুদ্ধে কারণগুলোর কোনো অর্থই নেই।

নিজের পছন্দকে গুরুত্ব দিন: অনেক সময় দেখা যায়, যার বিয়ে তাঁর খবর নেই, পাড়া–পড়শির ঘুম নেই। অনবরত বিয়ের কথা বলে মনে আতঙ্ক তৈরি করে। আপনার একাকী জীবন নিয়ে যারা বেশি উদ্বেগ দেখায়, তাদের এড়িয়ে যান। বিয়ে নিয়ে ইতিবাচক চিন্তা করুন।  মনে রাখুন, বিয়ে সম্পূর্ণ নিজের পছন্দ অনুযায়ী করা ভালো।

সঙ্গীর ওপর আস্থা রাখুন: আপনার যদি পছন্দের কেউ থাকে, তবে বিয়ে নিয়ে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন। বিয়ে সম্পর্কে কোনো ভয় থাকলে আলোচনা করে দেখতে পারেন। সহানুভূতিশীল সঙ্গী আপনার পাশে দাঁড়াবে এবং বিয়ের ভয় কাটাতে সাহায্য করবে।

নিজেকে গুছিয়ে নিন: যাঁরা বিয়ে করতে ভয় পান, তাঁরা নিজেকে আগে গোছগাছ করে বিয়ের জন্য প্রস্তুত করতে পারেন। একা কোথাও ছুটি কাটাতে যেতে পারেন। একা অনেকটা সময় কাটিয়ে সঙ্গীর অনুভব করেন কি না, বুঝতে চেষ্টা করুন। যদি একা সময় কাটানো কষ্টকর বোধ হতে থাকে, তবে বিয়ে করে ফেলুন।

স্বাভাবিক হোন: অতীতে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার বেদনা থাকতে পারে। অনেকে প্রতারণার ঘটনায় বিয়েতে বিতৃষ্ণায় ভুগতে পারেন। যদি এ ধরনের ঘটনা জীবনে থাকে, তবে বাস্তববাদী ও স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করুন। সম্পর্কসহ জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আঘাত আসতে পারে। অতীতের কষ্ট ভুলে যান, নতুন সম্ভাবনাকে ইতিবাচকভাবে মেনে নিন।

বাস্তবতা মানুন: অনেকে ভুল মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক হবে ভেবে বিয়ের দিকে যেতে ভয় পান। অপেক্ষায় সময় কাটান। অনেকে অপেক্ষা করেন বিশেষ কারও জন্য। কিন্তু মনে রাখতে হবে, কোনো মানুষ সম্পূর্ণ নিখুঁত নয়। কল্পনার ‘হিরো’ বাস্তবের সঙ্গে নাও মিলতে পারে।

উন্মুক্ত মন: যারা ইতিবাচক কথা বলে এবং যারা সংসারজীবনে সফল, তাদের কাছে কথা শুনুন। নেতিবাচক ও বাজে কথায় কান দেবেন না। নিজে ইতিবাচক থাকুন ও মন উন্মুক্ত রাখুন। আপনার মনের খোলা জানালায় শান্তির সুবাতাস বয়ে যাবে।

সূত্র : সংগৃহিত

বিয়ের প্রস্তুতিঃ বর-কনের আচরণ ও কিছু সতর্কতা

বিয়ের আগের ও পরের আচরণ বর-কনের পরবর্তী জীবনে প্রভাব বিস্তার করে। তাই দুজনই সতর্ক থাকুন।  ভেবেচিন্তে একে অপরের সঙ্গে আচরণ করুন।  কী করবেন আর করবেন না, জানাচ্ছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ও ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট তানজির আহমেদ তুষার –

বিয়ের পর প্রায়ই স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে নানা রকম কষ্ট, যন্ত্রণা কিংবা অসন্তুষ্টি দেখা যায়।  অথচ একটু সচেতন হলেই অশান্তি দূর করে সাংসারিক জীবনে বসন্তের রং ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব।   বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে খুব সাধারণ কিন্তু অতি প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো একটু জেনে নেওয়া যাক।

বিয়ের আগে: বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রীরা ছোটবেলা থেকে মনের মাধুরী মিশিয়ে তৈরি করে রাখা আদর্শ বা পারফেক্ট পাত্র বা পাত্রী খুঁজতে থাকে। জেনে রাখা দরকার যে পৃথিবীর কেউই পারফেক্ট নয়। এ ক্ষেত্রে নিজেদের অবস্থানের কথা মাথায় রেখে প্রত্যাশার একটা ন্যূনতম মান নির্ধারণ করে পাত্র-পাত্রী খোঁজা ভালো। পাত্র-পাত্রী খোঁজার সময় তাদের ব্যক্তিত্ব, পেশাগত কাজের ধরন, পারিবারিক সংস্কৃতি ও রীতিনীতি জানা প্রয়োজন।

দেখতে যাওয়া: বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রীকে দেখাটা গুরুত্বপূর্ণ। পাত্র-পাত্রীর নিজেদেরও পরিচিত হয়ে নেওয়াটা দরকার। কিন্তু বারবার দেখতে এলে তার মধ্যে হতাশা তৈরি হয়। বিয়ের পরও এর নেতিবাচক প্রভাব দেখা যেতে পারে। ছবি দেখে ও খোঁজখবর নিয়ে পছন্দ হলে কোনো রেস্টুরেন্ট বা মার্কেটে পাত্রীর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে দেখা করুন এবং স্বাভাবিক সামাজিক কথাবার্তা বলে একে অপরকে বোঝার চেষ্টা করুন। সব দিক থেকে পছন্দ হলেই শুধু আনুষ্ঠানিকভাবে পাত্র-পাত্রীর বাসায় যাওয়া উচিত। পাত্র বা পাত্রীকে দেখতে গিয়ে এমন কোনো প্রশ্ন বা মন্তব্য করবেন না, যা তার জন্য অপমানজনক।  কোনো তথ্য জানতে হলে কৌশলী হোন।

বিয়ে ঠিক হলে: বিয়ে ঠিক হলে পাত্র-পাত্রী নিজেদের একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করে নিতে পারলে ভালো। একই সঙ্গে উভয় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অন্তত ফোনে হলেও কথা বলে সম্পর্কগুলো সহজ করে নেওয়া যেতে পারে। এ সময় সততার সঙ্গে তথ্যর আদান-প্রদান করা উচিত। বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রী তার ভাবী স্ত্রী বা স্বামীকে একজন আদর্শ স্ত্রী বা স্বামী হিসেবে কল্পনা করতে পছন্দ করে। শ্বশুর-শাশুড়িসহ সবাই তাকে আদর করবে, সবার সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক থাকবে। মনে রাখতে হবে, আদর্শ ও বাস্তবতার মধ্যে অবশ্যই পার্থক্য থাকবে। কারণ কেউই সব দিক থেকে আদর্শ নয়। অন্যদিকে তাদের মধ্যে কিছু আশঙ্কাও কাজ করতে থাকে। মেয়েদের মধ্যে শ্বশুরবাড়ির লোকজন কেমন হবে, তাদের সঙ্গে মানাতে পারবে কি না, স্বামী তাকে বুঝবে কি না, এ ছাড়া তার প্রিয় পরিবেশ ছেড়ে যেতে হবে—এটার একটা কষ্ট তার মধ্যে দানা বাঁধতে থাকে। বিয়ের আগে ও পরে পাত্র-পাত্রীর একে অপরের আশঙ্কাগুলো বুঝে তাকে আশ্বস্ত ও সহায়তা করা উচিত।

বিয়ের দিন কনেকে ঠাট্টা নয়: বিয়ের দিন ঠাট্টা বা ঠকানোর বিষয়টি পুরনো প্রচলন। ঠকানোর বিষয়টি অন্যদের ওপর তেমন প্রভাব বিস্তার না করলেও কনের ওপর অনেক প্রভাব ফেলে। কনে অনেক মানসিক চাপ, আশঙ্কার মধ্যে থাকে এবং তাকেই নতুন পরিবেশে যেতে হয়। এ কারণে তার মনের অবস্থা নাজুক থাকে। তাই সামান্য পিনের খোঁচা বুলেটের চেয়েও বেশি ব্যথিত করে। এটার প্রভাব মেয়েটির মনের অজান্তেই দীর্ঘদিন থেকে যায়। এ জন্য বিয়ের দিন প্রথম দেখাটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। নতুন বউয়ের সঙ্গে ঠাট্টা না করে সহমর্মিতার সঙ্গে কথা বললে তার সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

বিয়ের পর:  বিয়ের পর স্ত্রী স্বামীকে আরো বেশি করে অনুভব করে এবং স্বামীও তার মতো করে প্রচণ্ড আবেগ দিয়ে তার সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করুক—এটা প্রত্যাশা করে। অনেকে এই আবেগকে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মনে করে বিরক্ত হয়। অন্যদিকে সামাজিক কারণেই স্বামীকে অনেক দায়িত্ব নিতে হয়—স্ত্রীকে সম্মানজনক অবস্থায় রাখতে হবে, সন্তানদের ভবিষ্যৎ তৈরি করতে হবে ইত্যাদি। ফলে স্ত্রী মনে করে, স্বামী তাকে আর আগের মতো ভালোবাসে না। এ সময় সন্দেহের সুপ্ত বীজ উপ্ত হয়ে যেতে পারে। কিন্তু ছেলেটি যে মেয়েটিকে ভালোবাসে না তা নয়, কিন্তু তা প্রকাশ করতে পারে না অথবা প্রকাশ করার প্রয়োজন অনুভব করে না। হয়তো স্ত্রী-সন্তানদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করার জন্যই সে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। এ সময় স্বামীর উচিত স্ত্রীর আবেগকে বোঝার চেষ্টা করা এবং স্ত্রীকে যথাসম্ভব সময় দেওয়া। একই সঙ্গে স্ত্রীরও বোঝা উচিত স্বামীর ব্যস্ততার অর্থ ভালোবাসা কমে যাওয়া নয়, এই পরিশ্রমের উদ্দেশ্য তাদের ভালো রাখার প্রচেষ্টা।

নবদম্পতি ও যৌথ পরিবার: যৌথ পরিবারে অনেক সময় দম্পতিরা একান্তে সময় কাটানো বা একটু কাছাকাছি আসতে কুণ্ঠা বোধ করে। ফলে তাদের মানসিক চাহিদা পূর্ণ হয় না। বরং এক ধরনের অস্বস্তি তৈরি হয়। স্বামী হয়তো বাইরে গিয়ে অস্বস্তি কিছুটা কমিয়ে ফেলতে পারে, কিন্তু স্ত্রীর মধ্যে দিনে দিনে অস্বস্তিটা জমাট বাঁধতে থাকে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে এই অস্বস্তি সংযুক্ত হয়ে যায়। ফলে মেয়েটির মনের অজান্তেই পরিবারের সদস্যদের প্রতি বিরক্তিবোধ তৈরি হতে থাকে। একান্ত সময়গুলোতে যাতে সে অবাধে সারা দিনের আবেগ প্রকাশ করতে পারে, সেই সুযোগ দিতে হবে। তার আবেগের প্রতি অতিপ্রতিক্রিয়াশীলতা দেখানোর প্রয়োজন নেই, বরং তার আবেগকে স্বীকৃতি দিতে হবে। যৌথ পরিবারের অন্য সদস্যদের উচিত নবদম্পতিকে কিছুটা সময় একান্তে কাটানোর সুযোগ দেওয়া। মেয়েটি যাতে এই পরিবারের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে উঠতে পারে, এ বিষয়ে তাকে সহায়তা করা।

স্ত্রী ও পরিবারের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা: বিয়ের পর ছেলেটিকে যে শক্ত কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হয় তা হচ্ছে স্ত্রী ও পরিবারের অন্য সদস্য, বিশেষত মায়ের মধ্যে ব্যালান্স করা। ছেলেটির জন্য মা ও স্ত্রী তার দুই হাতের মতো; কোনোটিই তার বেশি আপন বা পর নয়। একইভাবে সে মা ও স্ত্রী উভয়েরই ভালোবাসার পাত্র, দুজনই তার কাছ থেকে যথেষ্ট মনোযোগ প্রত্যাশা করে, যা খুবই স্বাভাবিক। তাই ছেলেটিকে এ ক্ষেত্রে বিচক্ষণতার সঙ্গে অ্যাডজাস্ট করতে হবে। মনোযোগ দিয়ে তাদের কথা শুনতে হবে এবং কাউকে কষ্ট না দিয়ে বিষয়টি মোকাবিলা করতে হবে।

জীবনধারার পরিবর্তন: বিয়ের পর ছেলে ও মেয়ে উভয়কেই তার লাইফস্টাইল পরিবর্তন করতে হয়। বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সময় দেওয়া কমে যায় এবং খাওয়া, ঘুমসহ জীবনের নানা উপাদান নতুন মানুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে করতে হয়। এ ক্ষেত্রে উভয়কেই কিছুটা ছাড় দিতে হবে। খরচের হাত কিছুটা সীমিত করতে হয়। তবে মনে রাখা দরকার, হঠাৎ করে লাইফস্টাইল পরিবর্তন করা কঠিন। এ জন্য তাকে কিছুটা সময় দেওয়া উচিত এবং উন্নতি হলে উৎসাহিত করা উচিত।

বিয়ের পর ভালো সম্পর্ক রাখতে করণীয়:
♦ মনে রাখুন, বিয়ে হলেই অবধারিতভাবে ভালোবাসা থাকবে তা নয়। ভালোবাসা তৈরি ও রক্ষার জন্য সব সময় স্বামী ও স্ত্রী দুজনকেই ভূমিকা রাখতে হয়।
♦ নতুন জীবনের সঙ্গে আপনার লাইফস্টাইলটা অ্যাডজাস্ট করে নিন।  যেকোনো সম্পর্কই ছাড় প্রত্যাশা করে।
♦ স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে আনন্দদায়ক কিছু করুন; যেমন—দূরে বেড়াতে যাওয়া, একসঙ্গে হাঁটা, মার্কেটে যাওয়া। আপনার কোনটাতে ভালো লাগবে তা আপনার সঙ্গীকে বলুন এবং তারটিকেও গুরুত্ব দিন।
♦ সঙ্গীর ভালো কাজের সত্যিকারের প্রশংসা করুন।
♦ মাঝে মাঝে উপহার দিন, সারপ্রাইজ দিন এবং সৃজনশীল কিছু করুন, যাতে আপনার স্বামী বা স্ত্রীর প্রতি যত্ন ও ভালোবাসা প্রকাশিত হয়।
♦ মনের মধ্যে কষ্ট বা ভালো লাগা তৈরি হলে তা ইতিবাচকভাবে প্রকাশ করুন এবং সঙ্গী প্রকাশ করলে তার স্বীকৃতি দিন। রাগ সঠিকভাবে প্রকাশ করুন। স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে পছন্দনীয় কোনো নামে ডাকুন।
♦ পরিবারে কোনো সমস্যা তৈরি হলে খোলামেলা আলোচনা করে সমাধান করুন। পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো দুজনে মিলে আলোচনা করে নিন।
♦ উভয় পরিবারকে শ্রদ্ধা করুন এবং পরস্পরকে খোঁচা মেরে কথা বলা এড়িয়ে চলুন।
♦ নিশ্চিত প্রমাণ ছাড়া একে অপরকে সন্দেহ করা এড়িয়ে চলুন। অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতাগুলো বারবার মনে করিয়ে দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। পরস্পরের সঙ্গে অঙ্গীকারগুলো রক্ষা করুন এবং তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করুন।  সুত্রঃ কুমিল্লার কাগজ

সময় দিন সঙ্গীকে

নাগরিক জীবন।  নাভিশ্বাস দৌড়।  কর্মক্ষেত্র-পরিবার।  ব্যস্ততা।  একফুটো অবকাশের দেখা মেলা ভার।  নিত্য ব্যস্ততার এই সময়ে আলাদা করে সময় মেলে কী দুজনকে দেয়ার। আর এরই ফাকফোঁকরে দূরত্ব নামক শব্দটি জায়গা করে নেয় স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মাঝে।  অনেকে হয়তো টেরই পান না দূরত্বের এই উপস্থিতি। তাই ঘোচাতে হবে এই দূরত্বটাকে।  সময় দিতে হবে দুজন দুজনকে।

নতুন মানুষ, নতুন পরিবেশ, নতুন অভ্যাস।  হাজার আলোর সম্ভাবনা আর আশা নিয়ে সুখ সাগরে ভাসতে ভাসতে মনটাকে মাঝেমধ্যেই হোঁচট খেতে হচ্ছে।  বিয়ের পরে প্রত্যেকটা মানুষের জীবনেই কিছুটা পরিবর্তন অবশ্যই আসে।  আগের সেই অদম্য উচ্ছল জীবনে কোথাও যেন একটু ইতস্তত ভাব ক্ষণিকের জন্য হলেও জেগে ওঠে।  সত্যি কথা হলো, বিয়ের আগে যেভাবে চলা যেত বিয়ের পর কী সেই একই গতিতে চলা সম্ভব? এখানে নতুন দায়িত্ববোধের একটা ব্যাপার আপনাআপনিই এসে জড়িয়ে যায়।  অনেকের মনেই ভাবনা থাকে—বিয়ের পরে মানিয়ে নিতে পারব তো? আমাকে মানিয়ে নিতে পারবে তো সে? কেমন হবে তার চালচলন? বিয়ের পরে আমার উপরে আমার কর্তৃত্ব ফলাবে না তো? এমন নানা ধরনের আশঙ্কাই মনের কোণে উঁকিঝুঁকি দেয় তখন। এসব সমস্যার একমাত্র সমাধান সঙ্গীকে সময় দেওয়া। সুখী দাম্পত্যজীবন চাইলে বিয়ের পরে সংসারজীবনে স্বামী-স্ত্রীর একে অপরকে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া উচিত।

একটা ঘটনা বলা যাক।  মিতু আর নিলয়ের নতুন বিয়ে হয়েছে।  ভীষণ ব্যস্ত দম্পতি ওরা।  একজন কর্পোরেট অফিসের উচ্চ পদস্থ অফিসার।  আরেকজন ব্যবসা চালায়।  একজনের যখন কাজের অবসর মেলে আরেকজন তখন অফিসের কাজে বিদেশ সফরে ব্যস্ত থাকে।  মাঝে মাঝে সহকর্মীদেরই স্বামী বা স্ত্রীর থেকে বেশি আপন মনে হয় ওদের। ধীরে ধীরে দু’জনের মধ্যকার দূরত্বটা যেন বেড়েই চলেছে।

যেখানে মিতু-নিলয় দম্পতিদের মতো স্বামী বা স্ত্রীর একজন বা দু’জনই চাকরি করেন সেখানে দু’জনার ব্যস্ততা থাকবে, ব্যস্ততার মধ্যে একটা ফারাকও থাকবে।  ব্যস্ততাকে দাম্পত্যের নিত্যসঙ্গী ধরে নিয়েই নিজেদের জন্য সময় বের করার প্ল্যানিং করুন।  দাম্পত্য যদি আপনার প্রায়োরিটি হয় তাহলে আপনি সফল হবেনই।  মনে করে দেখুন তো বিয়ের আগের দিনগুলো কেন একে অপরকে ভালো লেগেছিল।  হয়তো তার উদার মন, খোলা হাসি ভালো লাগত।  সেই পুরোনো ভালোলাগাগুলোই ধরে রাখার চেষ্টা করুন কিংবা রিক্রিয়েট করুন। সপ্তাহান্তে দু’জনে চলে যান ভালোলাগে এমন কোনো জায়গায়। সঙ্গে বন্ধুবান্ধব কাউকে নেবেন না।  সংসারী আলাপ বাদ দিয়ে এদিন হবে শুধুই আড্ডা। স্বাভাবিকভাবেই পুরোনো কথা ঘুরেফিরে আসবে।  তখন ভালোলাগা মুহূর্তগুলো শেয়ার করতে ভুলবেন না।  স্বামী যখন ট্রাভেল করছেন তখন মাঝে মাঝে তার সঙ্গী হতে পারেন। পুরোটা না হোক কিছুটা সময় তো একসাথে কাটবে।  নিজের লম্বা ট্যুর থাকলে স্বামীকেও সাথে নিন।  সন্ধ্যেটা একটু স্পেশাল করে প্ল্যান করুন।  সুস্বাদু ডিনার, সুন্দর কোনো গিফট আর লং ড্রাইভ—সম্পর্কের সুতোটাকে আরও মজবুত করে তুলবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দাম্পত্য জীবনে কোয়ালিটি টাইম বা গুণগত সময়ের খুব প্রয়োজন।  তাহলে অনেক ব্যস্ততার মধ্যে পুরনো সেই দিনের মতো এখনও ভালোবাসার রেশ থাকে সম্পর্কে।  সম্পর্কে ভালোবাসা রাখতে দুজন দুজনকে দিতে হবে সময়।  করতে হবে শ্রদ্ধা।

একটুকু সময় নিজেদের

সারা সপ্তাহেই ব্যস্ততা। এর মধ্যেও দুজন দুজনের জন্য খানিকটা সময় রাখতেই পারেন।  অফিস থেকে ফেরার পথে স্বামী-স্ত্রী কোনো কফি শপে গিয়ে কফিতে চুমুক দিতে দিতে কিছু মুহূর্ত কাটাতে পারেন। তখন সংসারের হালচাল, সন্তানের ভবিষ্যৎ কিংবা অফিসের সমস্যাগুলো ছাপিয়ে নিজেদের জন্য একটু সময় দিন। গুণগত সময় মানেই পরিবারের জন্য একান্ত কিছু সময়, যে সময়টুকুতে সব ধরনের সমস্যা দূরে সরিয়ে শুধু ভালোবাসার আবেশে থাকবেন দুজন।

দূরত্ব বুঝতে হবে

অনেকে তো বুঝতেই পারেন না, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। ফলাফলে কারো কারো ক্ষেত্রে দেখা যায় দাম্পত্যে তৃতীয় ব্যক্তির প্রবেশ কিংবা ভার্চুয়াল জগতের হাতছানি। এটি যেন না হয়। হাজারো কাজের মধ্যে একটি দিন বেছে নিন। সেই দিনে স্বামী-স্ত্রী বাইরে ঘুরতে যেতে পারেন। রাতে ক্যান্ডেল লাইট ডিনার করতে পারেন। অল্প আয়োজনে রিকশায়ও আইসক্রিম খেতে খেতে গল্প করতে পারেন।  ছুটির দিনে কোথাও বেড়াতে না গেলেও সঙ্গীর সঙ্গে বাড়িতে বসে সিনেমা দেখতে পারেন। বন্ধুদের বাড়িতে নিমন্ত্রণ করতে পারেন।

কোয়ালিটি টাইম কথা

শুধু স্ত্রী একাই কোয়ালিটি টাইম নিয়ে ভাববেন, তা নয়। পারস্পরিক সম্পর্কের জন্য দুজনেরই সমানভাবে এগিয়ে আসতে হবে, বিশেষ করে স্বামীদের। তারা অনেক সময় মনে করেন, সব দায়িত্ব শুধু স্ত্রীদেরই। বিষয়টি তেমন হওয়া উচিত নয়। কেউ কেউ ভাবেন, দামি উপহার কিংবা কেনাকাটার টাকা দিয়ে দিলেই দায়িত্ব শেষ। বরং স্ত্রীকে হঠাৎ তার প্রিয় কোনো ফুল, বই বা ছোট্ট কিছু দিয়ে অবাক করে দিতে পারেন। ব্যস্ততার মধ্যেও যে তাকে মনে রেখেছেন, এতেই স্ত্রী খুশি হবেন। কাজ তো থাকবেই, তবুও অফিস থেকে ফিরে একসঙ্গে এক কাপ চা তো খাওয়াই যায়।

শ্রদ্ধা থাকুক পারস্পরিক

স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কে শ্রদ্ধা! অবাক হতে পারেন। এটা তো শিক্ষক-ছাত্রের সম্পর্ক নয় রে বাবা।  কিন্তু মনে রাখতে হবে শ্রদ্ধাতে-ই শ্রাদ্ধ হয় না সম্পর্কের।  সঙ্গীকে সময় দিচ্ছেন, তার মনের চাওয়া-পাওয়াকে শ্রদ্ধা করেই তো ঘড়ির কাঁটার কাছ থেকে আপনার এই সময় ছিনিয়ে নেয়া।  তাই সবসময় শ্রদ্ধা থাকুক পারস্পরিক।

সম্পর্কটা থাক সতেজ
দম্পতি; হোক সে নতুন বা পুরোনো, সম্পর্ক হতে হবে সব সময়ই সতেজ।  স্নিগ্ধতায় ভরা।  মধুময়।  স্বামী কাজে ব্যস্ত।  দৈনিক আট ঘণ্টা অফিস শেষে বাসায় পৌঁছাতে আরও দেরি।  স্ত্রী সারা দিন বাসায় একা। টিভি দেখা, ম্যাগাজিন পড়া, ফোনে কিছুটা সময় কাটানো। তার পরও কিছু করার নেই।  সবাই ব্যস্ত।  এত ব্যস্ততার মধ্যে একাকিত্ব কাটানোর জন্য আপনি ফেসবুককে সঙ্গী করে নিলেন। ক্রমেই আপনার একাকিত্ব কেটে যেতে থাকল। স্ট্যাটাস দিচ্ছেন, চ্যাটিং করছেন, অন্যের স্ট্যাটাস ও ছবিতে লাইক করছেন, কমেন্টস করছেন—মনের ভাব বিনিময় হচ্ছে। বন্ধুত্ব গাঢ় হতে থাকল। এরপর সম্পর্ক শুধু ফেসবুকেই সীমাবদ্ধ থাকল না। ক্যাফে, শপিং মলে আড্ডাও চলে।  এখন স্বামীর অনুপস্থিতি নিয়ে অভিযোগ করেন না, কিন্তু একটা সময় যদি স্বামীর মনে খটকা লাগে বা নিজেই যদি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে জিজ্ঞাসা করেন, তবে এই নতুন সম্পর্কের কী নাম দেবেন?
এ ধরনের সমস্যায় কি বৈবাহিক সম্পর্কে চিড় ধরবে আর নতুন সম্পর্ক অটল হয়ে থাকবে? অযথা সন্দেহের আবর্তে স্বামী-স্ত্রীর দূরত্ব কি বাড়তেই থাকবে?

দুজনে মিলে যা করতে পারেন
স্ত্রী যখন তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যেতে চান, তখন তাঁকে বাধা দেওয়ার কিছু নেই। এই স্বাধীনতা তাঁকে দিতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় স্বামী যদি একটু সময় বের করে স্ত্রীকে দেন। সময় অল্প হলেও আন্তরিকতা থাকলে বা কোয়ালিটি সময় দিলে স্ত্রীর মনে স্বামীকে নিয়ে আর খারাপ লাগা থাকবে না। কাজের ফাঁকে ছুটি নিয়ে কোথাও একবেলার জন্য ঘুরে আসতে পারেন। সব সময় যে কারণ ধরেই যেতে হবে এমন নয়, অকারণ পাগলামিতে অভিমানের বরফ গলে যায়।  আর ব্যস্ততার মাঝেও ফেসবুকে নিজেরা চ্যাটিং করতে পারেন।  নিজেদেরও সময় দিন। ঘরের মধ্যে নিত্যদিনের সংসারসঙ্গীর সঙ্গে সামাজিক মাধ্যমের খানিক সময়ের ভাববিনিময় আরও প্রাণময় করবে দুজনকে।

সচেতন থাকুন
নিজের মনের অগোচরে যদি কোনো নতুন ‘বিশেষ’ সম্পর্ক উঁকি দেয় বা দেওয়ার চেষ্টা করে, তাহলে প্রথমেই তা সামলে নিন। ফেসবুকসহ অন্য সব যোগাযোগমাধ্যমে নানা রকম প্রতারণা বাড়ছেই।   ফেসবুকে অনৈতিক নানা প্রস্তাবও পেতে পারেন বন্ধুদের কাছ থেকে। ইদানীং দেশেও এ চক্র সক্রিয়। মানবমনের আকাঙ্ক্ষা বড় বিচিত্র। মনে রাখতে হবে, এই চক্রগুলো সক্রিয় আমাদের নানা গোপন আকাঙ্ক্ষাকে ঘিরেই। এসব বিষয় সব সময় মাথায় রাখতে হবে।  স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের প্রতি সহনশীল ও আন্তরিক হতে হবে। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে । ক্ষণিকের ভুলে যেন সারা জীবন কষ্ট পোহাতে না হয়।  স্বামী-স্ত্রী পরস্পর খোলাখুলি আলাপ করতে পারেন।

যা কখনোই করবেন না
সংসার মধুময় বন্ধন। এ ধরনের ফেসবুক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নির্মল বন্ধুত্বের সীমা কখনোই যেন অতিক্রম না করে।   জীবন চলার পথে পুরোনো কোনো ঘনিষ্ঠতম বন্ধুর সঙ্গে আবার আলাপ-পরিচয় হতেই পারে। এ নিয়ে আবেগের বাড়াবাড়িকে প্রশ্রয় দেবেন না। সহজভাবে নিন। ওই বন্ধুর কথা আপনার জীবনসঙ্গীকেও জানান। আড়াল করার দরকার নেই। বন্ধুকে বন্ধু হিসেবেই রাখুন।   ফেসবুক হোক আর ই-মেইলেই হোক, কোনো ধরনের বিব্রতকর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলে দ্রুত সঙ্গীকে জানান। দুজনে মিলে সিদ্ধান্ত নিন কী করবেন।
আপত্তিকর ছবিসংবলিত কোনো ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এলে সেটা এড়িয়ে যান। এটাই সর্বোত্তম পথ।   যেসব একাউন্ট থেকে আপত্তিকর ছবি, বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য, সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়ানো হয়, সেগুলো পরিহার করুন।