আবেগপ্রবণ পুরুষ

পুরুষ আর আবেগ! বিষয়দু’টোকে অনেকেই ঠিক মেলাতে পারেন না। বেশিরভাগ পুরুষই আবেগের বহিঃপ্রকাশে অস্বস্তিবোধ করেন। সিনেমার পরদায় অবশ্য নায়কদের আমরা মেলোড্রামাটিক দৃশ্যে দেখে থাকি। তবে বাস্তবে সেই দৃশ্য অনেক পুরুষই পছন্দ করেন না। আর তাঁদের স্ত্রীদেরও এ ব্যাপারে অনুযোগ রয়েছে।

শুধু যে পুরুষদের মধ্যে আবেগের অভাবই তাঁদের অনুযোগের বিষয়, তা নয়! পুরুষরা যৌনমিলনের সময়ে আবেগতাড়িত হন না—এটাও অনেক স্ত্রীরাই অভিযোগ করে থাকেন। তবে পুরুষরা আবার পালটা প্রশ্ন করেন এই বলে যে সঙ্গীর সঙ্গে মিলিত হওয়াটাই এক ধরনের আবেগ। এটাই কি যথেষ্ট নয়! সকলের আগে ভেবে দেখা প্রয়োজন যে আবেগপ্রবণতা আসলে কী। মোটের উপর যে কোনও কাজে প্যাশনের অভাব, উৎসাহ না দেখানোকেই আবেগের অনুপস্থিতি বলে ধরি আমরা। মিলনের সময় শীতল প্রতিক্রিয়াও ঠিক তাই।

তবে পুরুষ ও মহিলা উভয় পক্ষেরই কয়েকটি জিনিস মাথায় রাখা প্রয়োজন। অনেক পুরুষই আছেন যাঁরা মিলনের সময়ে নিজের দুর্বলতা ঢাকার উপায় হিসেবে শীতল ব্যবহার করেন। আবার অনেক পুরুষ ভাবেন আবেগপ্রবণ হওয়াটা আদৌ পুরুষালি গুণ নয়। তাই মিলনের সময়ে বেশি আবেগে ভেসে যাওয়ার পক্ষপাতি নন তাঁরা।


আমাদের সমাজে ছোটবেলা থেকেই ছেলেদের সেখানো হয় চোখের জল না ফেলতে। কোনও পুরুষ কান্নাকাটি করলে তা অনেকসময় হাসির খোরাক হয়ে দাঁড়ায়। তাই, অনেক পুরুষই তাঁদের অনুভূতি, মুড, সেন্টিমেন্ট ইত্যাদিকে চেপে রাখেন। ধীরে ধীরে এটাই তাঁদের অভ্যেসে দাঁড়িয়ে যায়।

মিলনের সময়েও মহিলাদের মতো নিজেকে অতটা মেলে ধরতে পারেন না অনেক পুরুষই। পুরুষদের দোষ দেওয়ার আগে মহিলাদের এই বিষয়টি ভেবে দেখা প্রয়োজন। সাধারণত, অনেক পুরুষই সেক্সুয়াল কমিটমেন্ট চট করে করতে চান না। অর্থাৎ, একটি কমিটেড সম্পর্কে না থাকলে নিজেকে উজাড় করে দিয়ে মিলিত হতে চান না। পেড সেক্স অবশ্যই এর ব্যতিক্রম। কিন্তু অনেকের কাছেই যৌনমিলন হল আবেগের চরম বহিঃপ্রকাশ। অনেক মহিলাই এটা বুঝতে পারেন না।


স্ত্রীরা চাইতেই পারেন যে তাঁদের স্বামীরা আবেগপ্রবণ হবেন—এতে দোষের কিছু নেই। তবে সকলেই যে একরকম হবেন তা তো নয়। ধৈর্য ধরুন। স্বামীর সঙ্গে কথা বলুন। ধীর ধীরে তিনিও আপনার প্রতি ইমোশনাল হবেন।


আপনার স্ত্রী যদি আপনার থেকে আরও বেশি আবেগ প্রত্যাশা করেন, তাহলে নিজেকে একটু বদলানোর চেষ্টা করে দেখুন না। এতে কিন্তু আপনার পৌরুষ চলে যাবে না! আবার স্ত্রীরাও একটু চেষ্টা করে দেখুন না, স্বামীরা যদি নিজের মতো থাকেন, তাহলে সম্পর্কে খুব একটা সমস্যা হবে না।

যে যেমন তাঁকে সেরকম থাকতে দিলেই সবচেয়ে ভাল। দু’জনেই একটু মানিয়ে নিতে পারলে সুস্থ সম্পর্কে আর কীই বা চাই!

দাম্পত্য কলহ সামলাবেন কিভাবে?

দাম্পত্য কলহে যদি স্বামী-স্ত্রী নিজেরে মধ্যে বনিমনা না হয় তবে পারিবারিকভাবে খোলামেলা আলোচনা করতে হবে। আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ বের করতে হবে। এছাড়া ঘনিষ্ঠ বন্ধু-বা কাছের মানুষের সহযোগিতা নিতে হবে।কারণ দাম্পত্য কলহ থেকে হতে পারে মানসিক রোগ। 

বিয়ে হচ্ছে একজন নর ও নারীর মধ্যে স্বর্গের সম্পর্কের বন্ধন। তবে এখানে যখন বিষাদের ছাড়া নেমে আসে তখন আসে দাম্পত্য কলহ। 

দাম্পত্য কলহের কারণ

১. দু’জন মানুষের মধ্যে মতপার্থক্য থাকবে কিন্তু একসঙ্গে থাকতে হলে, মতপার্থক্য দূর করে আনতে হবে। এতে দু’জনকেই ছাড় দিতে হবে। 

২. স্বামী  অনেক সময় দেখা যায় স্ত্রীকে ডমিনেট করে। উচ্চশিক্ষিত স্বাবলম্বী অনেক মেয়ে তা মেনে নিতে পারছে না। এতে দ্বন্দ্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে।

৩. বিয়ের আগে অতিরিক্ত আবেগ কাজ করে। অনেকেই ভেবে চিন্তে জীবনসঙ্গী বাছাই করতে পারে না। পরবর্তীতে আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং বাস্তবতার বিশাল পার্থক্য, মানসিক চাপে, দ্বন্দ্বের কারণ হয়।

৪. দীর্ঘদিন ধরে যৌন জীবনে অতৃপ্ত থাকলে, সম্পর্কের ভয়াবহ অবনতি ঘটে। বিশেষ করে স্ত্রীরা তা প্রকাশ করতে পারে না।

৫. অনেক স্বামী-স্ত্রী তাদের মনের সুখ দুঃখগুলো নিজেদের মধ্যে শেয়ার করতে পারে না। শেয়ারিং না থাকলে সম্পর্কের অবনতি ঘটবে, সমাধান বের হবে না।

৬. বর্তমানে অনেকেই দাম্পত্য বা বিবাহবহির্ভূত অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে যাচ্ছে। যা ভয়াবহতম দাম্পত্য দহনের কারণ। 

৭. দাম্পত্য দহনে লিপ্ত দায়ী স্বামী বা স্ত্রী যে কোনো একজন বা দু’জনই মানসিক রোগে আক্রান্ত থাকতে পারে। আপনার জীবনসঙ্গীর অস্বাভাবিক আচরণের কারণ হতে পারে মানসিক রোগ।

৮. যারা নেশা করে, তারা তাদের পার্টনারকে অমূলক সন্দেহ করে, শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করে। শুরুতে বন্ধু পরে পরিণত হয় অবৈধ প্রেমে।

কীভাবে দাম্পত্য কলহ দূর করবেন

মতামতের পার্থক্য কমিয়ে আনা, দায়িত্ব পালন, পরনারী বা পরপুরুষে সম্পর্কে না জড়ানো, শারীরিক মানসিক নির্যাতন না করা, পার্টনারকে পর্যাপ্ত সময় দেয়া। প্রয়োজনে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে Couple Therapy নিতে হবে। দু’জনকেই Co-Operative হতে হবে। 

ভালোবাসাহীন দাম্পত্য জীবনের চেয়ে একা থাকা ভালো। সম্পর্ককে বাগানের মতো পরিচর্চা করতে হবে। যেসব মানসিক রোগ হতে পারে- বিষণ্ণতা, অতিরিক্ত উৎকণ্ঠা, ফোবিয়া, হিস্টিরিয়া, আত্মহত্যার প্রবণতা ইত্যাদি।

ডা. মো. হারুনুর রশীদ 
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, ডেল্টা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল

বিয়ে করুন যথা সময়ে, এর স্বাস্থ্যগত সুফল অনেক!

বিয়ের কথাটা শুনলেই কেমন যেন লাগে। চিন্তার বিষয়, বয়স হয়েছে তো! সে যাই হোক। বিয়ে করুন উপযুক্ত সময়ে। কারণ বিয়ে করার স্বাস্থ্যগত সুফল অনেক! কি ধরণের সুফল থাকতে পারে বিয়ে করার পর?

কেউ যদি মনে করে থাকেন বিয়ে করার কারণে আপনার মৃত্যুর দিন তাড়াতাড়ি ঘনিয়ে আসবে তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন। কারণ ২০১৩ এর এক রিসার্চে দেখা গেছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জন্ম গ্রহণকারীদের মধ্যে যারা অবিবাহিত তারা বিবাহিত অথবা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের মধ্যে যারা আছে তাদের তুলনায় তাড়াতাড়ি মারা যায়। এর কারণ হিসেবে দেখা গেছে জীবনসঙ্গী মানুষকে আবেগ অনুভূতি বাড়িয়ে দেয়, সামাজিকভাবে একত্রে রাখে, মানসিকভাবে সমর্থন দেয়, যার সব কিছুই সুস্থ স্বাভাবিক স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন।

মানসিক চাপ কম থাকে :

যদিও মাঝে মাঝে ঝগড়া লাগে তারপরও তার উপস্থিতি আপনার মনে এক ভালো লাগার অনুভূতি ছড়িয়ে দিবে। মানুষ যখন কোন মানসিক চাপের মধ্যে থাকে তখন শরীরে স্ট্রেস হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়। এই স্ট্রেস হরমোন বিবাহিতের চেয়ে অবিবাহিতদের শরীরে দ্রুত বৃদ্ধি পায়। অতিরিক্ত পরিমাণে মানসিক চাপ শরীরে সমস্যার জন্ম দেয়, বিশেষ করে হজমের সমস্যার সৃষ্টি করে। রিসার্চে জানা গেছে স্ট্রেস হরমোন বিবাহিতদের শরীরে সেরকম ভাবে ক্ষতি করতে পারে না কিন্তু অবিবাহিতদের শরীরে নানা সমস্যার বাসা তৈরি করে।

হার্ট এ্যাটাকের সম্ভাবনা হ্রাস পায়:

ভালোবাসা হৃদযন্ত্রকে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে যারা বিবাহিত অথবা কোন সম্পর্কের মাঝে আছে তাদের হার্ট-অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা নিঃসঙ্গ মানুষের চেয়ে কম। গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে যে সঙ্গীর নিবিড় সঙ্গ এবং নতুন পরিবারের নতুন সব আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু- বান্ধবের সাথে ভালো বন্ধনের কারণে হার্ট-অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস পায়। কারণ পরিবারের সাথে থাকলে মানুষ উৎফুল্ল থাকে। মনে কোন মানসিক চাপ থাকলে তা শেয়ার করতে পারে। এতে মনের উপর চাপ কম পড়ে।

বিয়ে শরীরের হাড় মজবুত করে। অবাক হচ্ছেন? আসলেও তাই। বিয়ে শরীরের হাড় শক্ত করে এবং বিভিন্ন হাড়ের রোগের ঝুঁকি কমায়। বিয়ে হাড়ের খনিজ ঘনত্ব ঠিক রেখে হাড়ের এক ধরণের রোগ “অস্টিওপরোসিস” হওয়ার ঝুঁকি কমায়। একজন ভালো জীবনসঙ্গী পত্নীর মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে হাড়কে ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে। তাই সুখী দাম্পত্য জীবন মহিলাদের হাড়ের খনিজ ঘনত্ব ঠিক রাখার জন্য জরুরী।

অস্ত্রোপচারের পর দ্রুত সুস্থ হওয়া:

কেউ যখন আপনার পাশে সারাক্ষণ থেকে আপনার পরিচর্যা করবে তখন আপনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন। কিন্তু আপনি যখন একা থাকবেন সে ক্ষেত্রে আপনার সুস্থ হতে অনেক সময় লেগে যাবে। কারণ তখন আপনার সব কাজগুলো আপনার নিজেরই করতে হবে। এছাড়াও আপনি যখন কার সান্নিধ্যে থাকবেন তখন বেঁচে থাকার একটা কারণ খুঁজে পাবেন। এক্ষেত্রে জীবন সঙ্গী আপনার বেঁচে থাকার অবলম্বন হয়ে দাঁড়ায়।

অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঝুঁকি কমে:

জীবনে কতবার আপনি আপনার জীবনসঙ্গীকে আকস্মিক দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করেছে? গবেষণায় দেখা গেছে তালাক প্রাপ্ত মহিলা এবং পুরুষেরা বিবাহিতদের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ বেশি অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়। গবেষকদের মতে বিয়ে দুটি মানুষকে পাশাপাশি রাখে এবং এসব অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণামের হাত থেকে রক্ষা করে।

বিষণ্ণতা কমায়:

একাকীত্বের কারণে অথবা অন্য সমস্যার কারণেও মানুষ বিষণ্ণতায় ভুগতে পারে। আর মানুষ যখন হতাশায় ভুগে তখন কি পরিমাণ মানসিক বিপর্যয় ঘটছে তার নিজের, তা সে বুঝতে পারে না। কারণ বিষণ্ণতার প্রথম উপসর্গ হচ্ছে আত্ম-উপলব্ধির হ্রাস পাওয়া। তাই বিষণ্ণতাকে সনাক্ত করতে এবং দূর করতে প্রয়োজন একজন সঙ্গীর। যে সব সময় আপনার সাথে থাকবে, যার সাথে আপনি সবকিছু শেয়ার করতে পারবেন।

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়:

২০১৩ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যে সকল মানুষ মরণ ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিল তাদের মধ্যে শতকরা ২০ ভাগ এর বেশি মানুষ আরোগ্য লাভ করতে সক্ষম হত যদি তারা বিবাহিত হত। এই সাফল্যের হার কেমোথেরাপির থেকেও বেশি। একটি স্বাভাবিক স্থিতিশীল সম্পর্কই প্রথম ধাপের ক্যান্সার সনাক্ত করতে পারে। আর এই বন্ধনই ক্যান্সারের সাথে লড়ে সুস্থ হওয়ার অনুপ্রেরণা যোগায়। একজন উপর্যুক্ত সঙ্গিনী তার সঙ্গীকে খারাপ এবং জীবনের জন্য ঝুঁকিকর কাজ করা থেকে বিরত রাখতে পারে। যেমনঃ মদ্যপান, মাদক সেবন ইত্যাদি।

স্মৃতিভ্রংশ প্রবণতা কমায়:

যদি জীবনে এমন সঙ্গী থাকে যার কাছে গেলে মনে শান্তি আসে তাহলে বার্ধক্য কখনো তাকে স্পর্শ করতে পারে না। গবেষণায় দেখা গেছে যারা তালাকপ্রাপ্ত হয়ে পুনরায় বিয়ে করে নি তাদের স্মৃতি শক্তি নষ্ট হওয়ার প্রবণতা প্রায় তিন গুন বেশি হয় এবং যারা মাঝ বয়সে বিধবা হওয়ার পর আর বিয়ে করেনি তাদের স্মৃতিভ্রংশ প্রবণতা ছয়গুণ বেড়ে যায়। গবেষকরা বলেন বিবাহিত এবং সারাজীবন মানসিকভাবে এবং সামাজিকভাবে পাশাপাশি থাকলে মন প্রফুল্ল থাকে এবং স্মৃতি শক্তি কম হ্রাস পায়।

বিভিন্ন অসুখ থেকে মুক্তি:

সুখী দম্পতিদের কখনো টাইপ -২ ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা, ফাইব্রোমাইলজিয়া মত অসুখ হতে দেখা যায় না। যেকোনো জিনিস নিয়ে অতিরিক্ত মানসিক চাপ শরীরে উপর খারাপ ভাবে প্রভাব ফেলে। তাই সুস্থ থাকতে হলে সুখী দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করা অতীব জরুরী।

জীবনসঙ্গী খুঁজতে বিবাহবিডি

উচ্চ শিক্ষা শেষে প্রতিষ্ঠিত হবার পরেও যদি আপনার  অথবা  পরিবারের প্রিয় সদস্যটির জন্য উপযুক্ত সঙ্গীর সন্ধান না পাওয়ায় কারনে বিয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে থাকেন তবে আপনার জন্যই অনলাইন বেইজ ম্যাট্রিমনিয়াল সার্ভিস বিবাহ বিডি ডট কম। ঘরে বসেই ফ্রী রেজিষ্ট্রেশন করে  চাহিদা অনুযায়ী পাত্র/পাত্রীদের প্রোফাইল (ছবি সহ বায়োডাটা) দেখে পাত্র/পাত্রী কিংবা অভিভাবকের সাথে সরাসরি নিজেরাই যোগাযোগ করতে সক্ষম হবেন এবং তা অতি দ্রুততম সময়ের মধ্যে ।

সম্পর্কে যত্নশীল আচরণ

জীবনসঙ্গীকে কেবল ভালবাসলেই হয়না ভালো রাখতেও জানতে হয়। আপনি হয়তো আপনার জীবনসঙ্গীকে ভালবাসছেন ঠিকই কিন্তু আপনি তার প্রতি যত্নশীল নন। এতে করে কিন্তু আপনাদের সম্পর্ক হঠাৎ বিরুপ হয়ে যেতে পারে।

সম্পর্কের যত্নশীল আচরণ গুলো কি?

যোগাযোগঃ

আপনি হয়তো খুব ব্যস্ত অথবা সময় করে জেনে নিচ্ছেন আপনার সঙ্গী কি করছে, কেমন আছে, ঠিকঠাক ভাবে আছে কিনা এ বিষয়গুলো হল সঙ্গীর প্রতি যত্নশীল আচরণ। আর আপনি যখন এ বিষয়গুলোর খোঁজ রাখছেন না ব্যস্ততার জন্য বা মনের ভুলে তখন বিষয়টি দাঁড়ায় সম্পর্কের প্রতি অযত্নশীল আচরণ যা আপনার সম্পর্কের মাঝে একসময় দূরত্ব তৈরি করবে।

একান্ত সময় কাটানঃ

দাম্পত্য সম্পর্কে যে বিষয়টি প্রতিদিন করা উচিত তা হল দুজন একান্ত কিছু সময় কাটানো। আপনাদের একান্ত সময়ে আপনারা পরস্পরের ভালো লাগা, অভিমান, অভিযোগ, চাওয়া-পাওয়া বিষয়গুলো বুজতে পারবেন তাই কিছু সময়ের জন্য হলেও একান্ত সময় কাটান।

কাজে সহযোগিতা করাঃ

সাংসারিক বা ব্যক্তিগত যেকোনো ধরনের ছোট-বড় কাজে আপনার সঙ্গীকে সহযোগিতা করুন এতে করে আপনার সঙ্গী আপনার প্রতি ভরসা পাবে। দাম্পত্যে সম্পর্কে কাজে সহযোগিতা বিষয়টি নিয়ে স্বামী-স্ত্রী মধ্যে বেশ হিসাবনিকাশ হয় যার ফলে ঝগড়া হতে থাকে।

মানসিক অবস্থার খোঁজ নিনঃ

মানসিক অবস্থা ব্যক্তির আচরণের উপর প্রভাব ফেলে। যেমন- আপনার সঙ্গী অকারনে রেগে যাচ্ছে, বিষণ্ণ থাকছে, কথা কম বলছে, উদাসীন হয়ে যাচ্ছে এসব আচরণ যদি দেখতে পান তাহলে তার থেকে জেনে নিন কেন সে ভালো নেই। যখন আপনার সঙ্গী তার মনের অবস্থা আপনার কাছে জানাবে হতে পারে কিছু বিষয় আপনার তাকে সঠিক মনে হচ্ছে না তাই বলে ঐ অবস্থায় তাকে এমন কিছু বলবেন না যাতে তার কষ্ট আরও বেড়ে যায়। ঠিক এরকম সময়ে তার কথাগুলো জানুন ও তাকে হালকা হতে দিন। এছাড়া আপনারা দুজনই আপনাদের ব্যাপারে পরস্পরের কাছে সচ্ছ থাকুন।

শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানুনঃ

আপনার সঙ্গীর শারীরিক সকল অবস্থা ভালো আছে কিনা সে বিষয় খোঁজ নিন। এ খোঁজ নেয়াটা যেন শুধু জৈবিক চাহিদার জন্য না হয়ে থাকে। শারীরিক সুস্থতা মানুষের মানসিক অবস্থার উপরও প্রভাব ফেল। যদি আপনার সঙ্গী অসুস্থ থাকে তাহলে তার সেবা করুন। মনে রাখবেন ডাক্তার দেখানো আর ওষুধ কেনা কারো প্রতি যত্নশীল আচরণ হতে পারেনা।

সম্মান করুনঃ

সম্পর্কে সম্মান প্রদর্শন বিষয়টি থাকা অতি জরুরী। আপনাদের মাঝে হয়তো পর্যাপ্ত প্রেম-ভালোবাসা রয়েছে আবার আপনি যখন তখন হয়তো যা তা আচরণ পরিবার, বন্ধুবান্ধব বা বাহিরের কারো সামনে সঙ্গীর সাথে করে ফেলছেন এতে করে কিন্তু আপনার প্রতি তার মনোভাব ও সম্মান নষ্ট হতে থাকবে যা আপনাদের সম্পর্কে ধীরে ধীরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

সঙ্গীর ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিনঃ

আপনার সঙ্গীর ছোট-বড় চাওয়া বা আবদারগুলো পূরণ করার চেষ্টা করুন। হতে পারে আপনার সঙ্গী অসময়ে ঘুরতে যেতে চাচ্ছে অথবা কিছু কিনতে চাইছে তার চাওয়া পাওয়া গুলো পূরণ করুন এতে করে আপনার সঙ্গী একসময় আপনার ইচ্ছেগুলোকে তার ইচ্ছের চেয়ে বড় করে দেখবে।

মাঝে মধ্যে সঙ্গীকে চমকে দিনঃ

আপনার সঙ্গীর ভালো লাগা কিছু উপহার দিয়ে মাঝে মধ্যে তাকে চমকে দিন। কখনও কখনও আপনার বা তার ব্যস্ততার মাঝে ফোন করে বলুন ঘুরতে যাবেন এভাবে চমকে দিন। ব্যস্ততা কে ছুটি দিয়ে দুজন ভালো সময় কাটান এতে দুজনার মানসিক অবস্থা সম্পর্কে ভালো থাকবে।

সঙ্গীর পরিবারের প্রতি আন্তরিকতা প্রকাশ করুনঃ

আপনি সঙ্গীকে ভালবাসছেন, ভালো রাখছেন কিন্ত তার পরিবারের সাথে আপনার সম্পর্ক তেমন ভালো নয় বা আপনি ভালো ব্যবহার করছেন না এতে করে আপনার সঙ্গী পরিবারের কাছে ছোট হচ্ছে। সঙ্গীর পরিবারের প্রতি আন্তরিক হন এতে আপনার সঙ্গীর প্রতি অনেকটা যত্নশীল আচরণের বহিঃপ্রকাশ পায়।

কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুনঃ

আপনার সঙ্গী আপনার খুশির জন্য কিছু করলে তাতে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। যেমন- আপনার জন্য রান্না করা, উপহার দেয়া, আপনার পছন্দমত ঘর সাজানো ইত্যাদি বিষয়ে তার করনীয় কাজে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন।

দাম্পত্য সম্পর্ক মানে কেবল প্রেম-ভালবাসা, জৈবিক চাহিদা বা অর্থ-সম্পদ নয়। একটি সম্পর্কে যত্নশীল আচরণ থাকা প্রয়োজন।

কিছু পরামর্শ নিতে নেই এতে সম্পর্ক নাজুক হয়

দাম্পত্য সম্পর্ক সুখের হোক বা না হোক – সেই সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কেমন হবে তা ঠিক করার দায়িত্ব একমাত্র আপনার। অনেক সময়ই সম্পর্কের নানা সমস্যায় আমরা পরামর্শ চাই কাছের বন্ধু বা আত্মীয়দের কাছে। কখনও কখনও সে সব পরামর্শে কাজ হয়, কখনও আবার হয় না।

তবে কাজ হোক বা না হোক, পরিস্থিতির দায়িত্ব আপনাকেই নিতে হবে এবং নিজেই পথটা খুঁজে বের করতে হবে। এ সব ক্ষেত্রে বন্ধু বা আত্মীয়দের পরামর্শগুলোর ব্যাপারেও সাবধান থাকা দরকার।

স্বামীর সঙ্গে তর্ক কোরো নাঃ

কোনও মতেই এই পরামর্শে কান দেবেন না! তর্ক করলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হতে পারে ঠিকই, কিন্তু সেই ভয়ে চুপ করে থাকাটা কোনও কাজের কথা নয়। নৈর্ব্যক্তিক হয়ে বিষয়টা পর্যালোচনা করা এবং কোথায় আপনাদের দু’জনেরই ভুল হচ্ছে, সেটা খতিয়ে দেখা দরকার। যদি মনে হয় আপনাকে বিনা কারণে দোষী করা হচ্ছে, তা হলে চুপ করে না থেকে মুখ খুলুন। সম্পর্ক সফল করতে দু’জনেরই সক্রিয় ভূমিকা থাকা দরকার।

স্বামীকে পালটানোর চেষ্টা করোঃ

এটা আর একটা ভুল পরামর্শ। কোনও দুটো আঙুল যেমন একরকম হয় না, তেমনি দু’জন মানুষও একরকম হতে পারেন না। সেই পার্থক্যটা মেনে নিতে হবে। স্বামী বা পার্টনারকে যদি পালটাতে চেষ্টা করেন, সেটা হবে আপনার সবচেয়ে বড়ো ভুল। পরস্পরের ব্যক্তিস্বাতন্ত্রকে মেনে নিয়ে জীবনটা গড়ে তোলার চেষ্টা করুন।

সংসারের রাশ নিজের হাতে রাখোঃ

সম্পর্কের মূল কথা হল দু’জনের মধ্যে একটা ভারসাম্য বজায় রাখা। সব কিছুর রাশ নিজের হাতে রাখলে মাথায় অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়ে ফেলবেন, এবং তা থেকে এক সময় হতাশা আর ভুলবোঝাবুঝি তৈরি হবে যা যথেষ্টই এড়ানো সম্ভব। তাই সব দায়িত্ব নিজের উপর রাখবেন না, স্বামীর সঙ্গে ভাগ করে নিন।

স্বামীর ফোনের উপর নজর রাখোঃ

এরকম পরামর্শ শুনলে সেই পরামর্শদাতা ব্যক্তিকে এড়িয়ে চলাই ভালো। অপরের ফোন ঘাঁটা একইসঙ্গে অনৈতিক এবং অভদ্রতার চূড়ান্ত উদাহরণ। স্বামীর ব্যাপারে কোনও কারণে আপনার সন্দেহ তৈরি হতেই পারে, কিন্তু তার জন্য স্বামীর ফোন লুকিয়ে দেখতে যাবেন না। বরং সরাসরি স্বামীর সঙ্গে কথা বলুন।

দাম্পত্য সম্পর্কে দুজনের মনের যোগাযোগের পথটা হওয়া চাই মসৃণ। হঠাৎ করেই সঙ্গীর চেনা আচরণে অচেনা সুর, ছোটখাটো ভুলত্রুটিতে বড় চেহারা দাম্পত্যে অস্থিরতা বাড়িয়ে তুলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষের উপস্থিতিতে সম্পর্কে এমন সমস্যা সৃষ্টি হয়। দুজনের মনের যোগাযোগের পথ হতে হবে দূর্দান্ত;

পারস্পারিক বুঝাপড়া সমান্তরাল। তাই নিজেদের অকৃত্রিম সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখতে দুজনেই যথেষ্ঠ সচেতন হোন।

ভালো সঙ্গী হতে হলে

‘অমরসঙ্গী’ হওয়ার তাগিদ দিলে হয়তো রোমান্টিকতার বাড়াবাড়িই হবে। তবে আরও একটু বেশি হলে ক্ষতি কী?… সফল ও ভালো জীবনসঙ্গী সবারই চাওয়া থাকে। ‘সঙ্গী রোমান্টিক হবে। আমার সব কথা বুঝবে। দারুণ সুন্দর সময় কাটাব।’ প্রত্যেকেই ভাবেন, তাঁর সঙ্গী তাঁকে ঘিরেই নতুন জীবন রচনা করবেন—জীবন কাটাবেন। তাঁর রাজ্যে তিনি একাই রাজত্ব করবেন। এখানে অন্য কেউ অপরের ভাবনায়, প্রকাশ্যে, ফেসবুক অথবা মোবাইলে কাজে-অকাজে ভাগ বসাবে না। দুজনের পারস্পরিক মুগ্ধতা যেন সারা জীবন থাকে।

আবার পারিবারিক সম্বন্ধ করে হওয়া বিয়ের ক্ষেত্রে বিয়ের পর এই ভালোবাসাবাসীর পর্বটা শুরু হয়। বিয়ের মূল লক্ষ্য যেটা থাকে সেটা হলো, মনের মধ্যে যে মিলনের আকাঙ্ক্ষা তার নান্দনিক বাস্তবায়নে নিজেকে প্রকাশ করা, রোমান্টিকতা। আর এসব ঘিরে রয়েছে সামাজিকতা। এসব নিয়েই তো বিয়ে।

মার্কিন লেখক মিগনন-ম্যাকফলিন যেমনটা বলেছেন, দায়িত্ব দু-তরফেরই। সম্পর্ক হবে এ রকম; একজীবনেই বারবার প্রেমে পড়া চাই একে অপরের। শুধু তো দায়িত্ববোধ না, পরস্পরের প্রতি মুগ্ধতা না থাকলে ভালো সঙ্গী হয়ে ওঠা দুষ্কর। আগে থেকে পরিচয় না থাকলে পারিবারিক সম্বন্ধ করা বিয়েতে আরেকটু কাঠখড় তো পোড়াতেই হয়। মার্কিন দুঁদে মঞ্চকর্মী রবার্ট ব্রল্টের কথাটাই বা বলি না কেন! সংসার রঙ্গমঞ্চে দুজনকে হতে হবে দুজনার। আর ভালোবাসার প্রশ্নে সারা পৃথিবীর বিরুদ্ধে দরকারে এককাট্টা হয়ে লড়াই।

রম্যলেখক রবার্ট কুইলেন বলেছেন, সুখী ও ভালো সম্পর্ক হলো—যুগলের দুজনই একে অপরের প্রতিÿআস্থাশীল, সহৃদয়, সদয় এবং সংবেদনশীল।

তাহলে কী করতে হবে?

বিয়েটা যদি হয় সম্বন্ধ করে:

দুজনের পছন্দ-অপছন্দ বিয়ের আগে আলোচনা করে নিলেই ভালো হয়।

কারও বিয়ের আগে প্রেম থাকতেই পারে। সে ব্যাপারটা দুজনেই দুজনের স্মৃতি থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারবেন কি না, নিজেকে জিজ্ঞেস করুন। এই বোঝাপড়া যত আগে হবে ততই ভালো।

নিজের মতের বিরুদ্ধে বিয়ে করা উচিত নয়। এতে উভয়ের পরিবার ও নিজেদের মধ্যে ঝামেলা বাড়বে।

নারীদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ যদি না থাকে; তা শোধরানোর মানসিকতা থাকতে হবে।

পারস্পরিক দুর্বলতাগুলো জানতে ও জানাতে পারলে ভালো। এ কারণে, যাতে সে ব্যাপারে আপনি ‘কেয়ারিং’ হতে পারেন। আপনার ওপর আপনার সঙ্গীর আস্থা যেন বাড়ে। অযথা সেসব বিষয় নিয়ে জীবনকে তিতকুটে বানানোর কোনো মানে নেই।

বিবাহিত জীবন টিভির সিরিয়াল— ডেইলি সোপ বা অপেরা নয়। গোপন গল্পগুলো জীবননাট্যের ক্লাইমেক্স বা জটিলতা বাড়ানোর জন্য মজুত রাখবেন না।

আপনার সঙ্গীর আগ্রহের দিকটায় নজর দিন। তাকে উৎসাহ দিন। দেখবেন সেও আপনার প্রতি তার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।

যেমন: পড়াশোনা করা, বছরে অন্তত একবার বেড়িয়ে আসা, কোনো সামাজিক সচেতনতামূলক কাজ করা, সিনেমা দেখা ইত্যাদি। আবার কেনাকাটাও হতে পারে। একদিন না হয় গেলেনই সঙ্গীর সঙ্গে।

শারীরিক ব্যাপারটি উপভোগ্য করে তুলুন। ব্যাপারটি নিয়ে লজ্জা না করে নিজেদের মধ্যে খোলাখুলি আলোচনা করা ভালো। প্রয়োজন হলে নিজেদের পরিতৃপ্তির জন্য চিকিৎসক-পরামর্শ, ইন্টারনেটের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।

অন্যের দোষ-খুঁতগুলো হিসাব না করে সঙ্গীর ইতিবাচক দিক বের করুন। আর সেগুলোর প্রশংসা অব্যাহত রাখতে হবে।

ঝগড়া নয়, আলোচনায় যেকোনো সমস্যার সমাধান করতে হবে।

প্রেমের বিয়েতে:

প্রেমের সময় অনেক ক্ষেত্রে দুজনের পারিবারিক স্ট্যাটাস, পারিবারিক আবহ, তাদের নিজেদের মতামতের মূল্য কতখানি সেসব দিক অনেকটা অজানাই থেকে যায়, ভাবেন যে পরে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। আসলে বাস্তবতা ভিন্ন। বিয়ে মানেই হচ্ছে সামাজিকতা। সংসার মানেই একটি সামাজিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা। যে যার মাতব্বরি ফলানোর একটা জম্পেশ জায়গা ভেবে নড়েচড়ে বসেন। সংসার রাজনীতির ভালোমন্দ দেখভাল এড়িয়ে গেলে কেমন করে চলবে!

তাহলে উপায়—যখনই ভাবলেন বিয়ে করবেন! একটু ভেবে নিন।

দুজনই দুজনের পরিবারকে ভালোভাবে জানার চেষ্টা করুন।

দুজনই তাঁদের নিজেদের পরিবারে কতখানি প্রভাব রাখতে পারবেন তা পর্যালোচনা করুন।

পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ অবশ্যই থাকতে হবে। বিয়ের পর ‘পারবো না, পারলাম না’ বলতে যাতে না হয় সে রকম মানসিক প্রস্তুতি আগেই নেওয়া প্রয়োজন।

ভুল-বোঝাবুঝির শুরুতেই তা নিরসন করা উচিত ।

নিজেদের দোষত্রুটিগুলো ডায়েরিতে লিখে রাখতে পারেন। পরে ডায়েরি দেখে সেসব শোধরাতে হবে।

লেখেছেন: সুলতানা আলগিন, সহযোগী অধ্যাপক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ।

সুত্রঃ প্রথম আলো

সম্পর্কে প্রনয় আছে কিন্তু বন্ধুত্ব নেই; কি করবেন?

প্রণয় ও বন্ধুত্ব আলাদা দুটি শব্দ হলেও একটি সম্পর্কে এর দুটির উপস্থিতি এক সাথে থাকা খুব জরুরী। আপনার সঙ্গীকে আপনি ভালোবাসেন, তার সব দিক খেয়াল রাখছেন, একই ছাদের নিচে দুজন বাস করছেন, কিন্তু একে অপরের কাছে মন খুলে সব কথা বলছেন না বা বলতে পারেন না। এটি আপনাদের সম্পর্কের মাঝে জটিলতা আনতে পারে। স্বামী-স্ত্রী বন্ধুত্বের রূপ হয় অন্য রকম। তাই আপনাকে আগে বুঝতে হবে বন্ধুত্ব কার সাথে কি রকম হবে। পরিবারের সাথে বন্ধুত্ব, বন্ধুর সাথে বন্ধুত্ব আর স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের সাথে বন্ধুত্ব এক নয় কেননা সম্পর্ক গুলো আলাদা।

সম্পর্কে প্রনয় ও বন্ধুত্ব বজায় রাখতে যা করা উচিৎঃ

একে অপরের পছন্দ সম্পর্কে জানুন, অনেকটা আইস ব্রেকিং গেম এর মত একে অপরকে ব্যাক্তিগত ভালো লাগা খারাপ লাগা নিয়ে প্রশ্ন করুন।

দুজন ব্যাক্তির ভিন্ন ভিন্ন পছন্দ থাকতেই পারে এটাই স্বাভাবিক; এতে হতাশ হবার কিছু নেই। একে অন্যের পছন্দকে শ্রদ্ধা করুন, নিজের পছন্দকে অন্যের উপর চাপিয়ে দিবেন না।

স্বামী স্ত্রী’র নিজেদের ব্যাক্তিগত বিষয় গুলো অন্য কারও সাথে শেয়ার করবেন না।

নিজেদের ভালো মুহূর্ত গুলোর গল্প আপনার সঙ্গীকে মনে করিয়ে দিন।

আপনার অনেক স্মৃতি হয়ত আপনার সঙ্গী ভুলে যেতে পারেন তাই মনে করিয়ে দিতে আপনি ডায়েরি লিখতে পারেন, হতে পারে সেটি কবিতা কিংবা ছোট গল্প চাইলে আদি নিয়মের মত চিঠি লিখে বা চিরকুট লিখে তাকে উপহার দিতে পারেন।

ভালোমন্দ বোঝাপড়া নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে নিবেন পরিবারকে বা বন্ধুবান্ধব দিয়ে নিজের স্ত্রী বা স্বামী কে বোঝাতে যাবেন না।

দুজন ব্যাক্তির উচিৎ একে অপরকে জানা এবং প্রতিদিন জানতে চাওয়া। নিজেদের বারংবার জানতে চাওয়ার মাঝে গড়ে উঠবে বন্ধুত্ব আর যেটা থাকা চাই সেটা হল – বন্ধুত্বের শ্রদ্ধাবোধ।

প্রত্যাশার উর্দ্ধে সম্পর্ক

বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে তারা নিজেদের জীবনে সম্পর্কগুলিকে যেভাবে বজায় রাখেন, সেটিই মূলত তারা যেভাবে বেঁচে থাকেন তার মান নির্ধারণ করে। এটি যখন আপনার জীবনে এতখানি গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা পালন করছে, তখন এটির দিকে নজর দেওয়ার প্রয়োজন আছে। কোন একটি সম্পর্কের ভিত্তি কী? মানুষের সম্পর্কের প্রয়োজন কেন পড়ে? বিভিন্ন স্তরে সম্পর্ক তৈরি হয়; বিভিন্ন ধরণের চাহিদা পূরণের জন্য বিভিন্ন ধরণের সম্পর্ক রয়েছে। চাহিদাগুলি শারীরিক, মানসিক, আবেগ সংক্রান্ত, সামাজিক, অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক হতে পারে – এগুলি যে কোনও ধরণের হতে পারে। 

জীবনের এই অংশটি নিজেই একটি সম্পূর্ণ সত্তা – কেন এটি অসম্পূর্ণ বোধ করছে? কেন এটি অন্য একটি জীবনের সাথে অংশীদারি করে নিজেকে পরিপূর্ণ করার চেষ্টা করছে?

সম্পর্কের প্রকৃতি যাই হোক না কেন, সম্পর্কের ধরণ যাই হোক না কেন, তবুও আসল ব্যাপারটি হলো আপনার একটি চাহিদা আছে যেটা পূরণ করা প্রয়োজন। “না, আমার কিছু পাওয়ার নেই, আমি দিতে চাই।” দেওয়াও গ্রহণ করার মতই একটি প্রয়োজন। “আমাকে কাউকে কিছু দিতে হবে” – এটি “আমাকে কিছু পেতে হবে” এর মতোই একটি চাহিদা। এখানেও একটা চাহিদা আছে। চাহিদাগুলি ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে, সেই অনুযায়ী সম্পর্কগুলিও বৈচিত্র্যময় হতে পারে।  

মানুষের ভেতর চাহিদা বেড়ে গেছে কারণ তাদের মধ্যে অসম্পূর্ণতার একটি বিশেষ অনুভূতি আছে এবং লোকেরা নিজের ভিতরে একটি বিশেষ পরিপূর্ণতা অনুভব করার তাগিদে সম্পর্ক তৈরি করছে। আপনি যখন আপনার কোন প্রিয়জনের সাথে ভাল সম্পর্ক রাখেন তখন আপনি নিজেকে সম্পূর্ণ অনুভব করেন। আপনার যখন সেটা থাকে না, আপনি অসম্পূর্ণ বোধ করেন। কেন এমনটা হয়? জীবনের এই অংশটি নিজেই একটি পরিপূর্ণ সত্তা – কেন এটি অসম্পূর্ণ বোধ করছে? কেন এটি অন্য একটি জীবনের সাথে অংশীদারি করে নিজেকে পরিপূর্ণ করার চেষ্টা করছে? মূল কারণটি হ’ল আমরা এই জীবনটিকে তার পূর্ন গভীরতা এবং মাত্রায় অনুসন্ধান করিনি। যদিও এটিই হলো ভিত্তি, সম্পর্কের একটি জটিল প্রক্রিয়া রয়েছে। 

প্রত্যাশার উৎস

যেখানে সম্পর্ক আছে সেখানে প্রত্যাশাও রয়েছে। বেশিরভাগ লোকেরা এমন সব প্রত্যাশা করে চলেছে, যা এই গ্রহের কোনও মানুষই কখনও পূরণ করতে পারে না । বিশেষত একটি পুরুষ-নারী সম্পর্কের ক্ষেত্রে, প্রত্যাশাগুলি এতটাই বেশি যে আপনি কোনও দেব-দেবীকে বিয়ে করলেও তারা আপনাকে ব্যর্থই করবে। আপনি যখন প্রত্যাশা বা প্রত্যাশার উৎস বুঝতে অক্ষম, তখন আপনি প্রত্যাশা পূরণ করতেও পারবেন না। তবে আপনি যদি এইসব প্রত্যাশাগুলির উৎস বুঝতে পারেন, তাহলে আপনি একটি খুব সুন্দর সম্পর্ক তৈরি করতে পারেন। 

যদি আপনি নিজের স্বাভাবিক প্রকৃতিতেই খুশি থাকেন, সম্পর্কগুলি আপনার কাছে সুখ খোঁজার উপায় না হয়ে নিজের আনন্দ প্রকাশ করার একটি মাধ্যম হয়ে উঠবে।

মূলত, আপনি সম্পর্ক খুঁজতে যান কেন ? কারণ আপনি দেখবেন যে আপনার জীবনে কোনও ধরণের সম্পর্ক ছাড়া আপনি হতাশ হয়ে পড়বেন। আপনি একটি সম্পর্ক চাইছেন কারণ আপনি সুখী হতে চান, আপনি আনন্দে থাকতে চান। বা অন্য কথায় আপনি অপর এক ব্যক্তিকে আপনার সুখের উৎস হিসাবে ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন। আপনি যদি নিজের প্রকৃতিতেই খুশি থাকেন, তবে সম্পর্কগুলি আপনার জন্য সুখ খোঁজার প্রচেষ্টা না হয়ে আপনার আনন্দ প্রকাশ করার একটি মাধ্যম হয়ে উঠবে। আপনি যদি কারও কাছ থেকে সুখ নিঙড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন এবং সেই ব্যক্তি যদি আপনার কাছ থেকে‌ আনন্দ বার করে নেওয়ার চেষ্টা করে- তবে কিছু সময় পর এটি একটি যন্ত্রনাদায়ক সম্পর্কে পরিণত হবে। শুরুর দিকে এটি ঠিক মনে হতে পারে কারণ কিছু একটা পূর্ণ হচ্ছে। কিন্তু আপনি যদি নিজের আনন্দ প্রকাশ করার জন্য সম্পর্ক তৈরি করেন তবে কেউ আপনার সম্পর্কে অভিযোগ করবে না- কারণ আপনি অন্য ব্যক্তির কাছ থেকে আনন্দ চাইছেন না বরং নিজের আনন্দ প্রকাশ করার প্রক্রিয়াতে আছেন।  

আপনার জীবন যদি সুখের অন্বেষণ না হয়ে, আপনার আনন্দের অভিব্যক্তি হয়ে ওঠে তবে সম্পর্কগুলি স্বাভাবিকভাবেই সুন্দর হয়ে উঠবে । আপনার লক্ষাধিক সম্পর্ক থাকলেও সেগুলিকে ভালভাবে ধরে রাখতে পারেন। অন্য কারোর প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টার এই পুরো সার্কাসটাই হয় না; কারণ আপনি নিজেই যদি আনন্দের বহিঃপ্রকাশ হয়ে ওঠেন, তবে যেভাবেই হোক তারা আপনার সাথেই থাকতে চায়। আপনার জীবনকে সুখের পশ্চাদ্ধাবন থেকে আনন্দের বহিঃপ্রকাশের দিকে নিয়ে যাওয়া -, সম্পর্কগুলিকে যদি সত্যিই সমস্ত স্তরে কাজ করতে হয়, এটাই হওয়া প্রয়োজন; কারণ তারা বিভিন্ন ধরণের।  

বিভিন্ন ধরনের সম্পর্ক

আপনার শরীর এই মুহূর্তে এমনভাবে তৈরি যে এটি এখনও এমন অবস্থায় রয়েছে যেখানে এটির একটি সম্পর্কের প্রয়োজন। আপনার মন এমনভাবেই তৈরি করা হয়েছে যে এটির এখনও একটি সম্পর্কের প্রয়োজন পড়ে। আপনার আবেগগুলি এমনভাবে রয়েছে যে এটির এখনও একটি সম্পর্কের প্রয়োজন আছে। এবং আরো গভীরভাবে তলিয়ে দেখলে- আপনার শক্তিগুলি এমনভাবেই তৈরি যে আপনার এখনও সেই স্তরে একটি সম্পর্কের প্রয়োজন। যদি আপনার শরীর কোনও সম্পর্কের সন্ধানে যায় তবে আমরা একে যৌনতা বলি। আপনার মন যদি সম্পর্কের সন্ধানে যায় তবে আমরা একে সাহচর্য বলি । যদি আপনার আবেগ সম্পর্কের সন্ধানে যায় তবে আমরা তাকে ভালবাসা বলে থাকি । যদি আপনার শক্তিগুলি কোনও সম্পর্কের সন্ধানে যায় তবে আমরা একে বলি যোগ।.  

আপনার মধ্যে যখন কোনও বাধ্যবাধকতা থাকেনা এবং আপনি যা কিছু করেন তা যদি সচেতন হয়ে ওঠে, সম্পর্ক সত্যিকারের আশীর্বাদে পরিণত হয়, কোনও আকাঙ্ক্ষা বা দ্বন্দ্ব নয়।

আপনি দেখবেন যে এই সকল প্রচেষ্টা- সেটি যৌনতা, সাহচর্য, প্রেম বা যোগ, যাই হোক না কেন, আপনি অন্য কোনও একটা কিছুর সাথে একাত্ম হওয়ার চেষ্টা করছেন; কারণ কোনও একটি কারণে এই মুহুর্তে আপনি যা, তা যথেষ্ট নয়। আপনি অন্য একজনের সাথে এক হতে পারেন কি করে ? শারীরিকভাবে আপনি চেষ্টা করেছেন। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় আপনি এটা করে ফেলবেন কিন্তু আপনি জানেন যে আপনি আলাদা হয়ে যান। মানসিকভাবেও আপনি চেষ্টা করেছেন, অনেক সময়ই আপনার মনে হয়েছে যে ওখানে সত্যিই পৌঁছে গেছেন; তবে আপনি জানেন দুটি মন কখনও এক হয় না। আবেগ বশত আপনার মনে হয়েছে আপনি এটি সত্যিই করে ফেলেছেন, কিন্তু বিভাজন খুব সহজেই চলে আসে। 

কোনো একটা কিছুর সাথে এক হয়ে যাওয়ার এই আকাঙ্ক্ষাটি পূরণ করার উপায় কী? অনেক ভাবে এটিকে দেখা যায়। আপনি হয়ত আপনার জীবনের কোনও একটা সময় এটি লক্ষ্য করেছেন- ধরুন আপনি খুবই আনন্দিত বা প্রেমময় বা পরমানন্দময় এবং আপনার জীবনীশক্তি খুবই উচ্ছ্বসিত বোধ করছে, আপনি একটি বিশেষ প্রসার অনুভব করছেন। এই যে বিস্তার, এর অর্থ কী? প্রথমত, ঠিক কাকে আপনি ‘আমি’’ বলে সম্বোধন করেন ? “এটি আমি এবং এটি আমি নই” – আপনার জানার ভিত্তিটা ঠিক কী? অনুভূতি, তাই না? আপনার অনুভূতির পরিসীমার মধ্যে যা কিছু আছে, তাই আপনি। এই অনুভূতির সীমানার বাইরে যা কিছু তাই “অন্য” এবং অন্যটি সর্বদাই খারাপ। আপনি এই খারাপের অভিজ্ঞতা নিতে চান না, তাই আপনি নিজের অংশ হিসাবে মানবতার অন্তত একটি ছোট্ট অংশ অনুভব করতে চান। আপনার জীবনের অংশ হিসাবে কাউকে বা অপরকে অন্তর্ভুক্ত করার এই ব্যাকুলতাকেই সম্পর্ক বলে। আপনি যদি অপরকে অন্তর্ভুক্ত করেন তবে সেই ‘খারাপ’ আপনার কাছে ‘স্বর্গের মতো সুন্দর’ হয়ে উঠতে পারে। সেই স্বর্গের অভিজ্ঞতা লাভ করতে, আপনার জীবনে স্বর্গের সেই টুকরোটিকে পেতেই সম্পর্ক স্থাপনের জন্য এত ব্যাকুলতা। 

কোনও সম্পর্কের পেছনে যে আকাঙ্ক্ষাই থাকুক না কেন, তা যদি আপনি দেহ বা মনের মাধ্যমে বা আবেগের মধ্য দিয়ে চেষ্টা করেন, আপনার আকাঙ্ক্ষা থেকেই যাবে; কখনই সেই একাত্মতা জানতে পারবেন না। আপনি একাত্মতার কোন মুহুর্ত হয়তো অনুভব করবেন, তবে এটি কখনই বাস্তবায়িত হবে না। আপনার চারপাশের সমস্ত জীবনকে যদি আপনি নিজের অংশ হিসেবে অনুভব করেন – যোগ হ’ল এই একাত্মতা অনুভব করার মাধ্যম ; এখানে আপনার অস্তিত্বের অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ অন্যরকম হবে। যখন এটা ঘটবে, তখন সম্পর্ক কেবল অন্যের প্রয়োজনের দিকে খেয়াল রাখার একটি উপায় হয়ে উঠবে, নিজের নয়; কারণ আপনার নিজের আর কিছুই প্রয়োজন নেই। আপনার মধ্যে যখন কোনও বাধ্যবাধকতা থাকে না এবং আপনি যা কিছু করেন তা যদি সচেতন হয়ে ওঠে, সম্পর্ক সত্যিকারের আশীর্বাদে পরিণত হয়, কোনও আকাঙ্ক্ষা বা দ্বন্দ্ব নয়। 

ফিচার টি সদগুরুর সম্পর্ক ও প্রত্যাশা বিষয়ক বক্তিতা থেকে সংকলিত

দাম্পত্ব্য সম্পর্কে ক্ষমতার ভারসাম্য

সম্পর্কের গুরুত্ব যার কাছে কম তার হাতেই বেশি ক্ষমতা চলে আসে। এই সমস্যার সমাধান লুকিয়ে আছে একে অপরের প্রতি বিশ্বাসেই।

সম্পর্কের মধ্যে ‘ক্ষমতা’ শব্দটাকে টেনে আনতে আমরা কেউই পছন্দ করি না। একটা সুস্থ সম্পর্কে থাকবে একে অপরের সঙ্গে সহযোগিতা এবং সব কিছু ভাগ করে নেওয়ার আশ্বাস। কিন্তু সহযোগিতা এবং শেয়ার, এই দুটো করতেই তো দু’জন মানুষকে লাগে। দু’জনের মধ্যে একজন যদি সেটা না করতে চায়?

আসলে সম্পর্কের গুরুত্ব যার কাছে কম তার হাতেই বেশি ক্ষমতা চলে আসে। অন্যজন যতই ভালবাসাকে বেশি প্রাধান্য দিক। ডিনারের প্ল্যান থেকে আরও গুরুত্বপূর্ণ কোনও বিষয়, সবই যদি একজনের সিদ্ধান্ত মতো চলে তাহলে মুশকিল! অন্যজনের অসম্মতির যেন কোনও অর্থই নেই! এর ফল?

সিদ্ধান্ত নেওয়ার জায়গাটা শুধুমাত্র একজনের দখলে থেকে যায়। হয়তো না চাইতেই সে অন্য জনের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে, যে তার মতামতের কোনও গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা নেই।

সম্পর্ককে ধরে রাখতে এই সমস্যার সমাধান কিন্তু করতে হবে ধৈর্য্য ধরে। কীভাবে?

  • প্রথমত যেটা করতে পারেন তা হল পার্টনারের এই স্বভাব মেনে নেওয়া। তার সিদ্ধান্তগুলোই মেনে চলা। এতে সাময়িকভাবে সমস্যার সমাধান হয়তো হবে, পাওয়া যাবে কিছুটা সহযোগিতার আশ্বাস। তবে দীর্ঘদিন এইভাবে চলা নিশ্চয়ই সম্ভব নয়। ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙবেই। নিজেকে গুরুত্বহীন করে রাখতে কেউ কত দিন পারে?
  • দ্বিতীয়, সহযোগিতা পাওয়ার জন্য লড়াই করা। এতে কিন্তু দুটো ফল হতে পারে। আপনার পার্টনার যদি নিজের ভুল বুঝতে পারেন, তাহলে তো সমাধানও আপনারা পেয়ে গেলেন। কিন্তু তিনি যদি ভাবেন যে আপনি অকারণে ঝগড়া করছেন? তাহলেও কিন্তু বেশি আঘাত পাবেন আপনিই।
  • এতেও সমাধান না হলে স্পষ্ট করে অন্যজনকে বলে দিন যে তিনি আপনার পাশে না থাকলেও আপনি নিজের কাজ নিজে করতে সক্ষম। আসা করা যায় এতে আপনার পার্টনার নিজের ভুল বুঝবেন। তবে আপনি নিজে যদি এই সম্পর্কের উপর খুব বেশি মানসিকভাবে নির্ভরশীল হয়ে থাকেন তাহলে হয়তো এই কাজটা আপনি নিজেই করে উঠতে পারবেন না।

তবে কি কোনও সমাধান সত্যিই নেই এই সমস্যার? আছে। আর সেটা লুকিয়ে আছে আপনাদের দু’জনের ভিতরেই। একে অপরের প্রতি বিশ্বাসে।

একটি সম্পর্কে যখন দু’জন দু’জনকে বিশ্বাস করেন তখন কোথাও না কোথাও এই বিশ্বাসটাও থাকে যে তাঁরা একে অপরকে ছেড়ে যাবেন না। দু’জনের উপরেই প্রভাব ফেলবে এমন কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে একজন অন্যজনের ছোট-ছোট প্রয়োজন এবং ইচ্ছেগুলোকেও গুরুত্ব দেবে, থাকে এই বিশ্বাসও।

মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক তো শুধু ‘ক্ষমতা’য় সীমাবদ্ধ নয়। বন্ধুত্ব, ভালবাসা, সম্মান এই সবের কাছেই হেরে যাবে ক্ষমতার লড়াই।


পছন্দের পার্থক্য

দু’জন আলাদা মানুষের মধ্যে যে পছন্দের পার্থক্য থাকবে এ তো স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু অনেক সময় এর থেকেই আসে মতবিরোধ। কিন্তু খেয়াল মতবিরোধ যেন ঝগড়ার আকার না নেয়।

সম্বন্ধ হোক বা অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ, নিজের সঙ্গী এবং নতুন জীবন নিয়ে সকলের মনেই একটা স্বপ্ন থাকে। তবে অনেকসয়মই মনের মিল হলেও দেখা য়ায় সঙ্গীর সঙ্গে নানা বিষয়ে পছন্দের পার্থক্য রয়েছে। বিয়ের দিন যত এগিয়ে আসে, নতুন জীবন শুরু করার আগে সঙ্গীকে নিয়ে কনফিউশন হওয়া অস্বাভাবিক নয়। বিশেষ করে দু’জনের মধ্যে যদি পছন্দ অপছন্দের পার্থক্যটা বেশি হয় তাহলে তা আরও বড় হয়ে দেখা দেয়।

সাব্বির আর ফারজানার গল্পটাই ধরুন না। বিয়েটা ঠিক হয়েছিল সম্বন্ধ করেই। তারপর দু’জনেই একবছর সময় চেয়ে নেয় মেলামেশা করার জন্য। দু’জনের পরিবারেরও সকলেই এই সম্পর্কে খুশি। কিন্তু একটা সমস্যা ফারজানাকে প্রায়ই ভাবিয়ে তোলে। সাব্বিরকে তাঁর এমনিতে খুবই পছন্দ। হ্যান্ডসাম চেহারা, ভাল চাকরি, সুন্দর পার্সোনলিটি। কিন্তু ফারজানার সঙ্গে তাঁর পছন্দের আকাশপাতাল তফাৎ। ফারজানার পছন্দ লেটেস্ট বলিউড মুভি। আবার সাব্বির ভালবাসে থিয়েটার, নাটক। ফারজানা কন্টিনেন্টাল ডিশ প্রেফার করে। সাব্বির আবার বাঙালি কিংবা মোগলাই খানা ছাড়া মুখেই তুলবে না। বিয়ের পর ফ্ল্যাট উত্তরা হবে নাকি বসুন্ধরা, সেখানেও মতবিরোধ। ফলে টুকটাক ঝামেলা লেগেই থাকে। যদিও ঝগড়া মিটেও যায়। কিন্তু রিয়ার প্রশ্ন, ছোটখাট সব বেশিরভাগ বিষয়ে যদি মতের অমিল হয়, তাহলে সারা জীবন একসঙ্গে কাটানো যে মুশকিল! এদিকে বিয়ের দিন ক্রমশ এগিয়ে আসছে।

•  আমাদের নিজস্ব চিন্তাভাবনা, মতামত নিয়েই গড়ে ওঠে আমাদের স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব। এই ব্যক্তিত্বই আকর্ষণ করে অন্য ব্যক্তিত্বকে। আপনার প্রিয় মানুষটির স্বাতন্ত্রর জন্যেই তো তাকে ভালবাসেন। সেই নিজস্বতাকে বাদ দিয়ে মানুষটিকে তো কল্পনাই করা যায় না। সেইজন্যে যাঁকে ভালবাসেন তাঁর ভালমন্দ সব মিলিয়েই বাসুন। তবে তার মানে কিন্তু আপনার পছন্দ অপছন্দ বিসর্জন দেওয়া নয়। নিজেদের ব্যক্তিগত পছন্দের সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রাখা সম্পর্ক বজায় রাখার একটা প্রধান শর্ত। আপনার সঙ্গী যদি সেটা না বোঝেন, তা হলে একটু কৌশলী হওয়ার দায়িত্ব আপনার উপরেই বর্তাবে। তবে একটা মানুষকে বদলে ফেলার চেষ্টা করলে ভুল করবেন।

• যখনই কোনও পারিবারিক বা ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ভাববেন, তখন একবার সঙ্গীর মতামত নিন। ওঁর মতামতকে গুরুত্ব দিন। এভাবে যদি আপনি ওঁর পছন্দ-অপছন্দকে মেনে চলেন। তা হলে উনিও আপনার মতামতকে গুরুত্ব দেবেন। ফলে নিজেদের মধ্যে অশান্তিও কমে যাবে।

•  নিজেকে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল ও আপডেটেড রাখার চেষ্টা করুন। তা হলে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় তার সপক্ষে যুক্তিটা ভাল করে সাজাতে পারবেন। প্রয়োজনীয় তথ্য থাকলে অন্যকে কনভিন্স করতে সুবিধে হবে।            

•  নিজের পছন্দ-অপছন্দ কখনও জোর করে আপনার সঙ্গীর উপর চাপাবেন না। ওঁকে নিজের বক্তব্য প্রকাশ করার স্বাধীনতা দিন। এরপর যদি উনি আপনার উপর কিছু চাপিয়ে দিতে যান, তা হলে নিজের উদারতার কথা মনে করিয়ে দিন।

•  খাওয়াদাওয়া, জামাকাপড়, বেড়াতে যাওয়া, এইসব সিদ্ধান্ত ,সবসময় নিন সঙ্গীর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে। তাহলে দুজনে মতামতই গুরুত্ব পাবে। একজন হুকুম করছেন, অন্যজন সেই হুকুম মেনে চলছেন, সিচুয়েশনটা যেন কখনই এরকম না হয়।

•  আপনার সঙ্গী যদি আপনাকে ডমিনেট করতে চেষ্টা করেন, তাহলে তাঁর সঙ্গে তর্কাতর্কিতে না গিয়ে একটা ছোটখাট চুক্তি করে নিন। একে অন্যের কথা মেনে চলা এবং নিজের স্বাধীন মতামতের মিশেল দিয়ে তৈরি করুন আপনাদের চুক্তির শর্ত। পুরো ব্যাপারটা সিরিয়াস পর্যায়ে টেনে না গিয়ে, একটা মজার আবহে রাখুন। এতে কাজ বেশি হবে।