সঙ্গীর মন খারাপ

মনখারাপের কথা মুখ ফুটে বলে উঠতে পারেন না অনেকেই। ঠিক কী কারণে কেউ মানসিক চাপে ভুগঠেন, তা সবসময় বাইরে থেকে দেখেও বোঝা যায় না! যে মানুষটাকে সবসময় হাসিখুশি দেখেন, তিনিই হয়তো ভিতরে ভিতরে খুব ‘ডিস্টার্বড’, মনোকষ্টে ভুগছেন।

#ডিপ্রেশন’ বা #মেন্টাল_হেলথ নিয়ে এত কথার মাঝে আমরা সকলেই বলছি মনখুলে কথা বলার জন্য। কিন্তু সবার কাছে কি আর সব কথা বলা যায়! না সবাই সবকিছু বুঝে সমাধানের রাস্তা দেখাতে পারেন! তবে প্রফেশনাল হেল্প নেওয়ার আগে একবার যদি নিজের কাছের মানুষের কাছে মনের জানলা খুলে দেওয়া যায়, নিজেকে উজাড় করে দেওয়া যায়, তাহলে হয়তো অনেকটা কষ্টই লাঘব হবে।

অনেকে স্বভাবগতভাবেই নিজেকে খানিকটা গুটিয়ে রাখেন, ইন্ট্রোভার্ট থাকতে পছন্দ করেন। কেউ কেউ আবার বাইরের মানুষের সঙ্গে হাসিঠাট্টা করলেও মনের ভিতরের অনুভূতি-আবেগগুলোকে নিজের কাছেই রেখে দেন। আপনার স্বামী-স্ত্রী বা পার্টনারকে যেহেতু আপনি খুব কাছ থেকে দেখছেন, তাই তাঁর মনোজগতের হদিশ পাওয়ার চেষ্টা করুন। মনখারাপ চেপে রাখতে রাখতে তা একটা সময়ে ক্রনিক ডিপ্রেশনে পৌঁছে যায়। তখন সাইকলজিক্যাল সাহায্য নেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। ডিপ্রেশন হঠাৎ করে একদিনে তৈরি হয় না।

কিন্তু জমতে থাকা স্ট্রেস, অ্যাংজ়াইটি মনের মধ্যে পুষে রাখলে তা পরবর্তীকালে গুরুতর রূপ নিতে পারে। আর এব্যাপারে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন কাছের মানুষের সাহচর্য। লকডাউনে অনেকটা সময় একসঙ্গে কাটানোর সুযোগ পাচ্ছেন। এই সময়টুকু নিজেদের মধ্যে ঝগড়া না করে বরং একে অপরের পরিপূরক হয়ে উঠুন। একে অপরকে ভাঙার বদলে গড়ে তুলুন। জবস্ট্রেস থেকে ব্যক্তিগত সম্পর্ক, কোনও হঠাৎ আঘাত থেকে পুরনো ট্রমা…যে কোনও কিছুই তিনি যেন আপনার কাছে খোলাখুলি বলতে পারেন। তাঁর বন্ধু হয়ে ওঠা জরুরি। যাতে তিনি কোনওকিছু আপনার থেকে না লুকোন।

মনে রাখবেন, সঙ্গীর মন ভাল রাখতে তাঁর সঙ্গে আপনার কমফর্ট লেভেলটা ভাল হওয়া জরুরি। কমিউনিকেট করুন। অনেক কাপলই সারাদিন একসঙ্গে থাকলেও নিজের নিজের জগতে ব্যস্ত থাকেন! পাশে বসে থাকলেও মোবাইল-ল্যাপটপে ডুবে থাকেন। কথোপকথনের বড্ড অভাব। এমনটা মোটেও কাম্য নয়। তা সে সুস্থ সম্পর্কের জন্যই হোক বা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যই হোক! বিভিন্ন ছোটখাটো বিষয় নিয়েও আলোচনা করুন। তাঁর পছন্দমতো করে খানিকটা সময় কাটান।অনেকসময় কোনও ব্যক্তির ভাললাগার বিষয়গুলোর মধ্যেও তাঁর ব্যক্তিত্বের নানা দিক ফুটে ওঠে। যেমন কেউ হয়তো লেখালেখি করতে ভালবাসেন। তাঁর লেখার মধ্যে দিয়েও তাঁর মনের হদিশ পেতে পারেন। সবমিলিয়ে এত নেগেটিভিটির মধ্যেও পজ়িটিভ এনার্জি ধরে রাখার চেষ্টা করতে হবে আমাদেরই! #বিবাহবিডি #Bangladeshi Bride Groom #Bangladeshi Matrimonial Site #Matrimony Bangladesh.

অমিল গুলো মেনে নিন – সুখে থাকুন

তাকে বোঝার চেষ্টা না করাটাই হল প্রধান বাধা। ভালবাসা চান কিন্তু তার মন, মেজাজ, রুচি কেমন সেদিকে খেয়াল রাখছেন না, এমন হলে মিল হবে না। মিলন ত দূরে! খেয়াল রাখার কাজটা মানুষ সাধারণত অভ্যাসবশে করে। অভ্যাসবশে সবটা খেয়াল করতে পারলে সেটা খুব চমৎকার, কিন্তু অভ্যাসবশে সবটা খেয়াল করা নতুন নতুন মোটেও সম্ভব না।

বিশেষ মনোযোগ আবশ্যক। কারণ নতুন নতুন সে তার মনের কথা, সব কথা গড়গড় করে আপনাকে বলে দেবে না। হয়ত একটা শব্দ বলল, তাও এমনভাবে বলল যে তা আপনার মনে কোনো দাগ কাটল না। একটু পরেই ভুলে গেলেন। এমন হলে বিপদ আছে।

যা বলছে তা গভীরভাবে মন দিয়ে উপলব্ধি করুন। সমস্যা বোঝার চেষ্টা ও ভাল লাগার বিষয়-আশয় জানার চেষ্টা থাকবে। তারপর সমস্যা সমাধানের পদক্ষেপ ও ভাল লাগায় পানি ঢালা, সার দেওয়া, ভালবাসার চারা লাগানোর কাজটা! প্রক্রিয়া লম্বাই বটে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সবাই লম্বা সময় দেয়ও বটে, কিন্তু প্রায়ই একপক্ষ মোটেও ধৈর্য ধরতে চায় না! এখানে যথেষ্ট গোল বাধে।

তার মনের কথা, সমস্যার কথা বোঝার উপায় কী?

প্রয়োজনে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বের করতে হবে! নয়ত বলবে কেন? আপনি তার কে যে আপনাকে গড়গড় করে সব বলে দেবে?

বোঝার জন্য যথেষ্ট সময় দরকার। আগ্রহ থাকবে পুরোপুরি। তবে এগোতে হবে একটু করে। তাড়াহুড়ো করলে ফল ধরার সম্ভাবনা কম।

জানতে হবে বোঝাপড়ার সীমানা।

সে যতটুকু চায় ততটুকু বোঝার চেষ্টা করা ভাল। এমনকি সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়ে গেলেও মনে রাখা ভাল সে কতটুকু আপনাকে বলতে চায়। যা বলতে চায় না তার জন্য চাপাচাপি ভাল না।

ভালবাসা মানে সবকিছু শেয়ার করা?

এ ব্যাপারে সবাই এক মত না। সুতরাং তার একান্ত কিছু বিষয় তার মধ্যেই থাকতে দেওয়া ভাল। আপনি বরং আরো ঘনিষ্ঠ, আরো বিশ্বস্ত হওয়ার চেষ্টা করুন। তাহলে একদিন হয়ত সব বলে দেবে। প্রতিটা মানুষই দেহে ও মনে আলাদা। তাহলে আপনি তার সঙ্গে শতভাগ মিল চান কোন আক্কেলে? সে আমাকে এটা বলল না, সে কেন এটা করল—এসব নিয়ে দুঃখ-মনস্তাপ না করাই ভাল। বরং কিছু অমিল মেনে নিতে পারলেই সুখের সম্ভাবনা বেশি।

শর্ত : বিয়ের পর বউ চাকরি করতে পারবে না

বিয়ের জন্য পাত্রী খোঁজা হচ্ছে। আধুনিক প্রতিষ্ঠিত ছেলেটি চান ভালো মেয়ে, সুন্দর, বনেদি পরিবার ও শিক্ষিত। আর মেয়েটি যদি মেধাবী হন, তা হলে তো ষোলোকলা পূর্ণ। তবে শর্ত একটি, বিয়ের পর বাড়ির বউ চাকরি করতে পারবে না। আধুনিকতার মুখোশের আড়ালে এমন সংকীর্ণতা অনেক পাত্র ও তাঁর পরিবারের মধ্যে দেখা যায়। কর্মক্ষেত্রে নিজের যোগ্যতায় সফল মেয়েটি অনেক সময় চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন। পরিবারের কথা ভেবে অনাকাঙ্ক্ষিত অশান্তি এড়াতে এমন সিদ্ধান্ত মেয়েরা নেন। বিয়ের পর স্বামী চান না বলে চাকরি ছেড়ে দিয়ে ঘরে বসে থাকেন অনেকেই। স্বামী বা শ্বশুরবাড়িকে খুশি করলেও নিজের ভেতরে গুমরে কেঁদে মরেন তাঁরা। নারীর ক্ষমতায়ন, আধুনিকতা ও ব্যক্তিস্বাধীনতার কথা কপচানো অনেক পুরুষই বাস্তবে কর্মজীবী স্ত্রী পছন্দ করেন না।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অরিনের বিয়ের কথা চলছে। একজনের সঙ্গে বিয়ের পাকা কথা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিয়েটা হয়নি। রুচিশীল শিক্ষিত ছেলেটিকে অরিনের ভালো লেগেছিল। কিন্তু বিয়ের তারিখ চূড়ান্ত করার আগে ছেলেটি শর্ত দিয়ে বসলেন—বিয়ের আগেই অরিনকে চাকরি ছেড়ে দিতে হবে। কেননা, তাঁর বউ চাকরি করলে লোকে নাকি ভাববে, ভরণ-পোষণ দিতে পারছেন না। এমন হাস্যকর যুক্তি মেনে না নিতে পারায় বিয়েটা শেষ পর্যন্ত ভেঙে গেল। এ বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় নাকি এখন অনেক বিয়ের কথাই বেশি দূর এগোচ্ছে না। হতাশ হয়ে অরিনের মা-বাবা মনে করেন, এই সামান্য শর্ত মানলে কী এমন ক্ষতি হতো!বিয়ের পর চাকরি ও সংসার কি একসঙ্গে সামলাতে পারবে? সন্তান হলে তাকে কাজের লোকের কাছে বড় হতে হবে। সারা দিন কাজ শেষে বউ বাড়ি ফিরবে। তখন পরিবারকে সময় দিতে চাইবে না। আর চাকরি করলে বউ বশে থাকে না। নিজের স্ত্রী চাকরি করার বিপক্ষে এসব যুক্তি দিয়েছেন বেশ কয়েকজন ছেলে। তাঁদের কেউ কেউ মনে করেন, ভালো মেয়েরা চাকরি করেন না।

ছেলেদের এসব যুক্তির সঙ্গে মেয়েরা কি একমত? ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন হুমায়রা (ছদ্মনাম)। তিনি বলেন, ‘বিয়ের পর আমি চাকরি ছেড়ে দেব। আমার সন্তান একা বড় হবে, এটি চাই না। এতে আমার ব্যক্তিস্বাধীনতা থাকবে না কিংবা ব্যক্তিত্বে প্রভাব পড়বে, এমনটি মনে করি না। সুন্দরভাবে সংসার করাও একটি শিল্প।’

তা হলে এত দূর পড়াশোনা করার কোনো মূল্যই থাকবে না! বিয়ে নামের সামাজিক বন্ধন স্বপ্ন পূরণে বাধা দেবে, এটি মানতে পারেন না নৌশিন। তিনি মনে করেন, ভালো বোঝাপড়া থাকলে সংসার ও চাকরি—দুটোই সামলানো সম্ভব। এখানে স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই ছাড় দিতে হবে। পরস্পরকে সহনশীল হলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আর যে ছেলে কোনো মেয়ের স্বপ্ন ও কাজকে শ্রদ্ধা না করবে, তিনি স্বামী হিসেবে কতটা ভালো হবেন, এ নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। হুমায়রা আর নৌশিনের বাইরেও আছেন অনেকে। তাঁদের মতে, পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর সেটা নিতে হবে মেয়েটিকেই। মেয়েটি যদি সবকিছু ঠিকঠাক সামলাতে পারে তা হলে সমস্যা কিসের!

অনেক সময় মেয়ের অভিভাবকেরাও চান, এই সামান্য ছাড় দিলে কী হয়? চাকরির জন্য সংসার টিকবে না, এটি তাঁরা মেনে নিতে পারেন না। ফলে মেয়ের মতামত গুরুত্ব পায় না তাঁদের কাছে। ব্যতিক্রমও আছেন কেউ কেউ। সরকারি কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের তিন মেয়েই কর্মজীবী। বড় দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। ছোট মেয়ের বিয়ের কথা চলছে। তিনি ভাবতেও পারেন না, তাঁর মেয়েরা কখনো চাকরি ছেড়ে দেবেন। নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মা-বাবা পাশে থাকলে মেয়েরা সব পারে। আমার তিন মেয়ে চাকরি করে। এটি কত বড় গর্বের, তা বোঝানো যাবে না। পাত্রপক্ষ কিছু বলার আগেই বড় দুই মেয়ের বিয়ের সময় আমি উল্টো শর্ত দিয়েছিলাম, বিয়ের পর মেয়েকে চাকরি করতে দিতে হবে।’

অভিভাবকদের বুঝতে হবে, মেয়ে স্বাবলম্বী হলে ভবিষ্যতে যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সামলাতে পারবেন। হতেই পারে বিয়ের পর স্বামীকে কোনো কারণে সাহায্য করতে হলো। তার চেয়ে বড় কথা, দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী ঘরে বসে না থেকে কাজ করলে পরিবার থেকে দেশ—সবার জন্যই ভালো। এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে ছেলেদেরই। চাকরিজীবী স্ত্রীকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে হবে। শুধু মুখে মুখে আধুনিক না হয়ে কাজেও দেখাতে হবে।

রাতারাতি সবার মানসিকতার পরিবর্তন হবে, এমনটা আশা করা ঠিক নয়। সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের পাশাপাশি সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তনও জরুরি। নারীর ক্ষমতায়ন জোরদার করতে হলে রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে। মনে করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। তাঁর সঙ্গে একমত বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। তিনি জানান, ছেলেদের এই মনোভাব নারীর জন্য ইতিবাচক নয়; বরং বিবাহিত জীবনেও অনেকখানি ঝুঁকি রয়ে যায়।বন্ধুত্ব থেকে বিয়ে হলেও অনেক সময় মেয়েদের এসব সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতাবোধ অন্যতম একটি কারণ। বিয়ের পর সন্তানের মা হওয়ার পর বাড়িতে কোনো লোক না থাকলে, অফিসে শিশু দিবাযত্নকেন্দ্র না থাকলে তখন সাধারণভাবে মাকেই চাকরি ছাড়ার কথা বলে সবাই।ফলে এ ধরনের পরিস্থিতি যেন তৈরি না হয়, সেই পরিবেশ বাড়ির সদস্যদের বা প্রতিষ্ঠানকে দিতে হবে।

-তৌহিদা শিরোপা

আদর্শ জীবনসঙ্গী বিষয়টি আসলে কি?

বিভিন্ন বই পুস্তকে, সিনেমার গল্পে  একটা বিষয় ঘুরে ঘুরে আসে, সেইটা হচ্ছে একজন  আদর্শ জীবন সঙ্গী বা সোলমেটের বিষয়টি। বেশীর ভাগ গল্পের কেন্দ্রে থাকে এই সোলমেট বা আদর্শ জীবন সঙ্গী, বাকী গল্পটা প্রবর্তিত হয় তাকে ঘিরে ,এই ধরনের কাহিনী বা গল্প দ্বারা আমরা বাস্তব জীবনে অনুপ্রাণিত হয়। আমাদের মধ্যে একটা ধারনার সৃষ্টি হয় যে, একদিন এক রাজকুমার আমাদের জীবনে আসবে,এসে পুরা জীবনটায় বদলে দেবে, জীবনটাকে পরিপূর্ণ করে তুলবে।

কিন্তু বাস্তবে কি এইটা সম্ভব?আসলেই কি একজন মানুষের পক্ষে সম্ভব অন্য আরেক জনের জীবনকে পরিপূর্ণ করে তোলা? এই ধারনাটি সম্পূর্ণ ঠিক না, কারন এতো বড় পৃথিবীতে বিশেষ একজন মানুষকে খুঁজে বের করা আসলেই অনেক কঠিন একটা কাজ।

তাহলে মনে প্রশ্ন আসতে পারে, আমরা কি ভালোবাসার মানুষের সন্ধান করা বন্ধ করে দিবো?

বিষয়টা আসলে এমন দাড়ায়, আমাদের যদি ধারনা থাকে যে আমাদের একজন সুনির্ধারিত জীবন সঙ্গী আছে তবে তাকে খুঁজে বের করার আগ্রহ বেড়ে যাবে। যদি বিশেষ কেউ না থাকে তবে ভালোবাসার অনুভূতি আর সাধারণ ভালো লাগার মধ্যে কোন তফাৎ থাকবে না। তখন মনে হবে যদি বিশেষ কেউ না থেকে থাকে তবে খুঁজে লাভটা কি?

আদর্শ জীবন সঙ্গী বা সোলমেট ছাড়া ভালোবাসা শব্দটি একে বারে অর্থহীন, যদিও বাস্তবের ভালোবাসা, কল্পনার জগৎ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা কারন, বাস্তবে আমরা যাকে ভালোবেসে সম্পূর্ণ জীবনটা তার সাথে কাটাতে চায়, সেই সম্পর্কটা গড়ে তুলতে আমাদেরকে অনেক ভালো-খারাপ অবস্থার ভেতর দিয়ে যেতে হয়, করতে হয় অনেক সমঝোতা, দিতে হয় অনেক ত্যাগ। শুধু ব্যাক্তিটা কে খুঁজে পেলে হয় না।

বাস্তবমুখী ভালোবাসাঃ বয়স যখন কম থাকে তখন চোখে থাকে রঙ্গিন স্বপ্ন, তখন কাউকে ভালো লাগলে মনে হয় এই বুঝি আমার স্বপ্নের মানুষ, কিন্তু বাস্তবে সেটা না ও হতে পারে। সত্যিকারের ভালোবাসা ক্ষণস্থায়ী হয় না কিংবা কাউকে সাময়িক ভালোলাগা নয়। বাস্তবে সত্যিকারের ভালোবাসা হচ্ছে একে অন্যকে খেয়াল করা, বাহ্যিক সৌন্দর্য দ্বারা প্রভাবিত হয় না, সম্পর্ক যতোয় পুরানো হোক না কেন ভালোবাসার পরিমাণ একই রকম থেকে যায়, এরকমটা কেবল সত্যিকারের ভালোবাসায় হয়। দুই জন মানুষের একে অন্যের প্রতি প্রবল টান, এক সাথে থাকার ইচ্ছা ও প্রতিশ্রুতি, এগুলো সত্যিকারের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।

আদর্শ জীবন সঙ্গী বা সোলমেট আমাদের প্রত্যেকের জীবনের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সত্যিকারের ভালোবাসার সার্থকতা যার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

মানুষটাকে কি ভবিষ্যৎ জীবনসঙ্গী হবার যোগ্য !

যখন কারো প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তখন কিছু আচার আচারন, ভাব বহিঃপ্রকাশের মাধ্যমে বোঝা যায় –  আপনি আপনার সঙ্গীকে কি পরিমাণ ভালোবাসেন এবং তার বিপরীতে কি পরিমাণ সাড়া তার কাছ থেকে পাচ্ছেন এবং তা বিয়ের বন্ধনের জন্য যথেষ্ট কিনা । একই ভাবে কিছু বিষয় লক্ষ্য করলে সহজেই বোঝা যায় যে,  আপনার সম্পর্কটি বিয়ের মত একটি সিরিয়াস সিদ্ধান্তে যাওয়ার মত পরিপক্ষতা পেয়েছে  কি না।  যাকে নিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়ার কথা ভাবছেন সে আপনার জন্য সঠিক মানুষ কি না।  এবং  মানুষটাকে ভবিষ্যৎ জীবন সঙ্গী হিসাবে গ্রহণ করবেন কি না –

ভবিষ্যৎ কল্পনাঃ আপনি যখন কারো প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েন তখন তাকে নিয়ে ভবিষ্যৎ জীবন কল্পনা করতে শুরু করেন, ঠিক রূপকথার গল্পের মতো। এরকম ভাবনা গুলোর সৃষ্টি হয় মানুষের হরমোনের ক্রিয়ার ফলে এবং প্রতিটা মানুষের মনে এরকম কল্পনা আসে।  যদিও সব ভালোবাসার সম্পর্ক বিয়ের পিঁড়ি পর্যন্ত যায় না।  আপনি যখন আপনার ভালোবাসার মানুষটাকে সারা জীবনের সঙ্গী হিসাবে পেতে চাইবেন তখন অবশ্যই বাস্তবতাকে বিবেচনা করবেন শুধু কল্পানায় ভেসে যাবেন না।

সঙ্গীর মতামতঃ যখন দুজন মানুষ একে অন্যকে পাগলের মত ভালোবেসে এক হয়ে যায় এর অর্থ এই নয় যে তারা আদর্শ জীবন সঙ্গী হবে।  বিয়ে বিষয়টা খুব পরিষ্কার মাথায় বিবেচনা করা উচিৎ। একটা স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক তখন তৈরি হবে তখনই, যখন আপনার সঙ্গীকে আপনি সমর্থন করবেন।  যদিও অনেক ক্ষেত্রে আপনাদের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।

ক্ষমা করাঃ যে কোন সম্পর্কের শুরুতে সঙ্গীর কোন দোষ বা ত্রুটি আমাদের চোখে পড়ে না কিন্তু সময়ের সাথে সাথে হয়তো আমাদের সঙ্গী আমাদের মনে কষ্ট দিতে পারে, এমন কোন ঘটনা ঘটাতে পারে যেটা আমরা ভাবতেও পারি না।  যখন সঙ্গীর এই দোষ গুলো ক্ষমা করতে প্রস্তুত থাকবো, তখনই ভালোবাসার মানুষকে জীবন সঙ্গী করবো।  অবশ্য এই ক্ষেত্রে বড় কোন অপরাধ কে বিশেষ ভাবে বিবেচনা করবো, ক্ষমার অযোগ্য দোষকে ক্ষমা করার ক্ষেত্রে অবশ্যই সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো।

ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য কে স্থান দিনঃ সকল মানুষ তাদের চিন্তা চেতনায় আলাদা হয়, দুজন মানুষ একে অন্যকে ভালোবাসলেও তাদের ভাবনা, স্বপ্ন অথবা ইচ্ছা গুলো আলাদা হতে পারে।  যদি ভালোবাসার মানুষকে জীবন সঙ্গী হিসাবে গ্রহণ করতে প্রস্তুত থাকেন তবে এই ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য কে সম্মান দিতে হবে।

প্রতিক্রিয়া আপনার পরিমাপকঃ জীবন সঙ্গী নির্বাচনে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আপনি কিভাবে প্রতিক্রিয়া করচ্ছেন।  ভালোবাসার সম্পর্কের ক্ষেত্রে আপনার আচরণকে লক্ষ্য করলে আপনি নিজেই বুঝবেন সম্পর্কটা বিয়ে পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া ঠিক হবে কিনা।  যদি সম্পর্কটা নিয়ে বেশী খুঁতখুঁত করেন তবে সম্পর্কটাকে বিয়ে পর্যন্ত না নেওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

ভালোবাসলে মন থেকে ভালোবাসতে হবে, তা না হলে পরিণতিটা বিয়ে পর্যন্ত গড়াবে না। ভালোবাসা ছাড়া যেমন কোন বিয়ে অপূর্ণ থাকে, ঠিক তেমনি সঠিক মানুষ ছাড়া ভালোবাসাও অপূর্ণ থেকে যায়।