দ্বিতীয় বিয়ে ও সুখী হওয়ার সম্ভাবনা!

বিয়ের পর সুখী সংসার জীবন গড়তে কে না চায়! তবে যে কোন কারনেই হোক প্রথম সংসারের ইতি ঘটে অনেকের জীবনে। সময় ও জীবন থেমে থাকেনা তবে খারাপ সময় অব্যাহত থাকে অনেকদিন, এর মধ্যে দিয়েই মানুষকে আবার বাঁচতে হয় নতুন করে। কেউ হয়তো নতুন ভাবনায় সঙ্গীহীন জীবনযাপন করেন আবার কেউ কেউ নতুন জীবনসঙ্গীর নিয়ে দাম্পত্যে জীবন শুরু করেন।

সম্প্রতি ‘হাফিংটন পোস্টে’র এক প্রতিবেদনে জানানো হয় –

দ্বিতীয় বিয়েতে নাকি সুখী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

যে সকল কারনে দ্বিতীয় বিয়েতে সুখী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছেঃ

স্বাভাবিকভাবে মানুষ পুরনো ভুল পুনরায় করেনা। তাই দ্বিতীয় বিয়েতে ব্যক্তিদের মধ্যে সংশোধন বিষয়টি তৈরি থাকে। যার ফলে দাম্পত্যে সম্পর্ক ভালো থাকে।

মানুষ সঙ্গ প্রিয় তবুও একই ছাদের নিচে নিত্য কলহ দাম্পত্যে সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটায়। দীর্ঘ সময় মানুষ যখন নিঃসঙ্গ জীবন কাটায় তখন দ্বিতীয় সম্পর্কে কলহ বিষয়টি আসলেও তারা এড়িয়ে চলেন ফলে দাম্পত্যে সম্পর্কে শান্তি বিরাজ করে।

দীর্ঘকালীন সময়ের পুরনো অভিজ্ঞতার ফলে দ্বিতীয় বিয়েতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সমঝোতার বিষয়টি বেশ স্পষ্ট থাকে যার ফলে দ্বিতীয় দাম্পত্য জীবন সুখী হয়।

প্রথম দুর্ঘটনার স্বীকার হওয়ার পর দ্বিতীয় বার জীবনসঙ্গী বাছাইয়ে ব্যক্তিদের মধ্যে আবেগ বিষয়টি নিয়ন্ত্রনে থাকে। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগণ যথেষ্ট সচেতন ও যাচাই করে জীবনসঙ্গী বেঁছে নেন। আর তাই তাদের মধ্যে আত্মীক সম্পর্ক শুরু থেকেই লক্ষ্য করা যায়।

অতীতে আস্থাহীনতায় সম্পর্ক কাটানো অভিজ্ঞতার ফলে দ্বিতীয় সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের প্রতি আনুগত্য থাকে তাই দাম্পত্য সম্পর্ক স্বাস্থ্যকর হয়।

বিয়ে প্রত্যেকটি মানুষের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় যা কেউ অস্বীকার করতে পারবেনা। সমাজ, বিয়ে ও সংসার এ সকল বিষয় নিয়েই সভ্যতা টিকে আছে। বিয়ের পর অনেকের জীবনে ঝড়ঝাপটা আসে অতঃপর ডিভোর্স হয়। তাই বলে ব্যক্তির উচিত নিজের জীবনকে অবহেলা না করে সময় নিয়ে যাচাই করে জীবনসঙ্গী খুঁজে নতুন করে বেঁচে থাকা।

প্রবাদে আছে –

বিয়ে হচ্ছে বুদ্ধিমত্তার বিরুদ্ধে কল্পনার জয়। আর দ্বিতীয় বিয়ে হচ্ছে অভিজ্ঞতার বিপক্ষে আশাবাদের জয়।

কিছু পরামর্শ নিতে নেই এতে সম্পর্ক নাজুক হয়

দাম্পত্য সম্পর্ক সুখের হোক বা না হোক – সেই সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কেমন হবে তা ঠিক করার দায়িত্ব একমাত্র আপনার। অনেক সময়ই সম্পর্কের নানা সমস্যায় আমরা পরামর্শ চাই কাছের বন্ধু বা আত্মীয়দের কাছে। কখনও কখনও সে সব পরামর্শে কাজ হয়, কখনও আবার হয় না।

তবে কাজ হোক বা না হোক, পরিস্থিতির দায়িত্ব আপনাকেই নিতে হবে এবং নিজেই পথটা খুঁজে বের করতে হবে। এ সব ক্ষেত্রে বন্ধু বা আত্মীয়দের পরামর্শগুলোর ব্যাপারেও সাবধান থাকা দরকার।

স্বামীর সঙ্গে তর্ক কোরো নাঃ

কোনও মতেই এই পরামর্শে কান দেবেন না! তর্ক করলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হতে পারে ঠিকই, কিন্তু সেই ভয়ে চুপ করে থাকাটা কোনও কাজের কথা নয়। নৈর্ব্যক্তিক হয়ে বিষয়টা পর্যালোচনা করা এবং কোথায় আপনাদের দু’জনেরই ভুল হচ্ছে, সেটা খতিয়ে দেখা দরকার। যদি মনে হয় আপনাকে বিনা কারণে দোষী করা হচ্ছে, তা হলে চুপ করে না থেকে মুখ খুলুন। সম্পর্ক সফল করতে দু’জনেরই সক্রিয় ভূমিকা থাকা দরকার।

স্বামীকে পালটানোর চেষ্টা করোঃ

এটা আর একটা ভুল পরামর্শ। কোনও দুটো আঙুল যেমন একরকম হয় না, তেমনি দু’জন মানুষও একরকম হতে পারেন না। সেই পার্থক্যটা মেনে নিতে হবে। স্বামী বা পার্টনারকে যদি পালটাতে চেষ্টা করেন, সেটা হবে আপনার সবচেয়ে বড়ো ভুল। পরস্পরের ব্যক্তিস্বাতন্ত্রকে মেনে নিয়ে জীবনটা গড়ে তোলার চেষ্টা করুন।

সংসারের রাশ নিজের হাতে রাখোঃ

সম্পর্কের মূল কথা হল দু’জনের মধ্যে একটা ভারসাম্য বজায় রাখা। সব কিছুর রাশ নিজের হাতে রাখলে মাথায় অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়ে ফেলবেন, এবং তা থেকে এক সময় হতাশা আর ভুলবোঝাবুঝি তৈরি হবে যা যথেষ্টই এড়ানো সম্ভব। তাই সব দায়িত্ব নিজের উপর রাখবেন না, স্বামীর সঙ্গে ভাগ করে নিন।

স্বামীর ফোনের উপর নজর রাখোঃ

এরকম পরামর্শ শুনলে সেই পরামর্শদাতা ব্যক্তিকে এড়িয়ে চলাই ভালো। অপরের ফোন ঘাঁটা একইসঙ্গে অনৈতিক এবং অভদ্রতার চূড়ান্ত উদাহরণ। স্বামীর ব্যাপারে কোনও কারণে আপনার সন্দেহ তৈরি হতেই পারে, কিন্তু তার জন্য স্বামীর ফোন লুকিয়ে দেখতে যাবেন না। বরং সরাসরি স্বামীর সঙ্গে কথা বলুন।

দাম্পত্য সম্পর্কে দুজনের মনের যোগাযোগের পথটা হওয়া চাই মসৃণ। হঠাৎ করেই সঙ্গীর চেনা আচরণে অচেনা সুর, ছোটখাটো ভুলত্রুটিতে বড় চেহারা দাম্পত্যে অস্থিরতা বাড়িয়ে তুলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষের উপস্থিতিতে সম্পর্কে এমন সমস্যা সৃষ্টি হয়। দুজনের মনের যোগাযোগের পথ হতে হবে দূর্দান্ত;

পারস্পারিক বুঝাপড়া সমান্তরাল। তাই নিজেদের অকৃত্রিম সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখতে দুজনেই যথেষ্ঠ সচেতন হোন।

ভালো সঙ্গী হতে হলে

‘অমরসঙ্গী’ হওয়ার তাগিদ দিলে হয়তো রোমান্টিকতার বাড়াবাড়িই হবে। তবে আরও একটু বেশি হলে ক্ষতি কী?… সফল ও ভালো জীবনসঙ্গী সবারই চাওয়া থাকে। ‘সঙ্গী রোমান্টিক হবে। আমার সব কথা বুঝবে। দারুণ সুন্দর সময় কাটাব।’ প্রত্যেকেই ভাবেন, তাঁর সঙ্গী তাঁকে ঘিরেই নতুন জীবন রচনা করবেন—জীবন কাটাবেন। তাঁর রাজ্যে তিনি একাই রাজত্ব করবেন। এখানে অন্য কেউ অপরের ভাবনায়, প্রকাশ্যে, ফেসবুক অথবা মোবাইলে কাজে-অকাজে ভাগ বসাবে না। দুজনের পারস্পরিক মুগ্ধতা যেন সারা জীবন থাকে।

আবার পারিবারিক সম্বন্ধ করে হওয়া বিয়ের ক্ষেত্রে বিয়ের পর এই ভালোবাসাবাসীর পর্বটা শুরু হয়। বিয়ের মূল লক্ষ্য যেটা থাকে সেটা হলো, মনের মধ্যে যে মিলনের আকাঙ্ক্ষা তার নান্দনিক বাস্তবায়নে নিজেকে প্রকাশ করা, রোমান্টিকতা। আর এসব ঘিরে রয়েছে সামাজিকতা। এসব নিয়েই তো বিয়ে।

মার্কিন লেখক মিগনন-ম্যাকফলিন যেমনটা বলেছেন, দায়িত্ব দু-তরফেরই। সম্পর্ক হবে এ রকম; একজীবনেই বারবার প্রেমে পড়া চাই একে অপরের। শুধু তো দায়িত্ববোধ না, পরস্পরের প্রতি মুগ্ধতা না থাকলে ভালো সঙ্গী হয়ে ওঠা দুষ্কর। আগে থেকে পরিচয় না থাকলে পারিবারিক সম্বন্ধ করা বিয়েতে আরেকটু কাঠখড় তো পোড়াতেই হয়। মার্কিন দুঁদে মঞ্চকর্মী রবার্ট ব্রল্টের কথাটাই বা বলি না কেন! সংসার রঙ্গমঞ্চে দুজনকে হতে হবে দুজনার। আর ভালোবাসার প্রশ্নে সারা পৃথিবীর বিরুদ্ধে দরকারে এককাট্টা হয়ে লড়াই।

রম্যলেখক রবার্ট কুইলেন বলেছেন, সুখী ও ভালো সম্পর্ক হলো—যুগলের দুজনই একে অপরের প্রতিÿআস্থাশীল, সহৃদয়, সদয় এবং সংবেদনশীল।

তাহলে কী করতে হবে?

বিয়েটা যদি হয় সম্বন্ধ করে:

দুজনের পছন্দ-অপছন্দ বিয়ের আগে আলোচনা করে নিলেই ভালো হয়।

কারও বিয়ের আগে প্রেম থাকতেই পারে। সে ব্যাপারটা দুজনেই দুজনের স্মৃতি থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারবেন কি না, নিজেকে জিজ্ঞেস করুন। এই বোঝাপড়া যত আগে হবে ততই ভালো।

নিজের মতের বিরুদ্ধে বিয়ে করা উচিত নয়। এতে উভয়ের পরিবার ও নিজেদের মধ্যে ঝামেলা বাড়বে।

নারীদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ যদি না থাকে; তা শোধরানোর মানসিকতা থাকতে হবে।

পারস্পরিক দুর্বলতাগুলো জানতে ও জানাতে পারলে ভালো। এ কারণে, যাতে সে ব্যাপারে আপনি ‘কেয়ারিং’ হতে পারেন। আপনার ওপর আপনার সঙ্গীর আস্থা যেন বাড়ে। অযথা সেসব বিষয় নিয়ে জীবনকে তিতকুটে বানানোর কোনো মানে নেই।

বিবাহিত জীবন টিভির সিরিয়াল— ডেইলি সোপ বা অপেরা নয়। গোপন গল্পগুলো জীবননাট্যের ক্লাইমেক্স বা জটিলতা বাড়ানোর জন্য মজুত রাখবেন না।

আপনার সঙ্গীর আগ্রহের দিকটায় নজর দিন। তাকে উৎসাহ দিন। দেখবেন সেও আপনার প্রতি তার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।

যেমন: পড়াশোনা করা, বছরে অন্তত একবার বেড়িয়ে আসা, কোনো সামাজিক সচেতনতামূলক কাজ করা, সিনেমা দেখা ইত্যাদি। আবার কেনাকাটাও হতে পারে। একদিন না হয় গেলেনই সঙ্গীর সঙ্গে।

শারীরিক ব্যাপারটি উপভোগ্য করে তুলুন। ব্যাপারটি নিয়ে লজ্জা না করে নিজেদের মধ্যে খোলাখুলি আলোচনা করা ভালো। প্রয়োজন হলে নিজেদের পরিতৃপ্তির জন্য চিকিৎসক-পরামর্শ, ইন্টারনেটের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।

অন্যের দোষ-খুঁতগুলো হিসাব না করে সঙ্গীর ইতিবাচক দিক বের করুন। আর সেগুলোর প্রশংসা অব্যাহত রাখতে হবে।

ঝগড়া নয়, আলোচনায় যেকোনো সমস্যার সমাধান করতে হবে।

প্রেমের বিয়েতে:

প্রেমের সময় অনেক ক্ষেত্রে দুজনের পারিবারিক স্ট্যাটাস, পারিবারিক আবহ, তাদের নিজেদের মতামতের মূল্য কতখানি সেসব দিক অনেকটা অজানাই থেকে যায়, ভাবেন যে পরে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। আসলে বাস্তবতা ভিন্ন। বিয়ে মানেই হচ্ছে সামাজিকতা। সংসার মানেই একটি সামাজিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা। যে যার মাতব্বরি ফলানোর একটা জম্পেশ জায়গা ভেবে নড়েচড়ে বসেন। সংসার রাজনীতির ভালোমন্দ দেখভাল এড়িয়ে গেলে কেমন করে চলবে!

তাহলে উপায়—যখনই ভাবলেন বিয়ে করবেন! একটু ভেবে নিন।

দুজনই দুজনের পরিবারকে ভালোভাবে জানার চেষ্টা করুন।

দুজনই তাঁদের নিজেদের পরিবারে কতখানি প্রভাব রাখতে পারবেন তা পর্যালোচনা করুন।

পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ অবশ্যই থাকতে হবে। বিয়ের পর ‘পারবো না, পারলাম না’ বলতে যাতে না হয় সে রকম মানসিক প্রস্তুতি আগেই নেওয়া প্রয়োজন।

ভুল-বোঝাবুঝির শুরুতেই তা নিরসন করা উচিত ।

নিজেদের দোষত্রুটিগুলো ডায়েরিতে লিখে রাখতে পারেন। পরে ডায়েরি দেখে সেসব শোধরাতে হবে।

লেখেছেন: সুলতানা আলগিন, সহযোগী অধ্যাপক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ।

সুত্রঃ প্রথম আলো

সম্পর্কে প্রনয় আছে কিন্তু বন্ধুত্ব নেই; কি করবেন?

প্রণয় ও বন্ধুত্ব আলাদা দুটি শব্দ হলেও একটি সম্পর্কে এর দুটির উপস্থিতি এক সাথে থাকা খুব জরুরী। আপনার সঙ্গীকে আপনি ভালোবাসেন, তার সব দিক খেয়াল রাখছেন, একই ছাদের নিচে দুজন বাস করছেন, কিন্তু একে অপরের কাছে মন খুলে সব কথা বলছেন না বা বলতে পারেন না। এটি আপনাদের সম্পর্কের মাঝে জটিলতা আনতে পারে। স্বামী-স্ত্রী বন্ধুত্বের রূপ হয় অন্য রকম। তাই আপনাকে আগে বুঝতে হবে বন্ধুত্ব কার সাথে কি রকম হবে। পরিবারের সাথে বন্ধুত্ব, বন্ধুর সাথে বন্ধুত্ব আর স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের সাথে বন্ধুত্ব এক নয় কেননা সম্পর্ক গুলো আলাদা।

সম্পর্কে প্রনয় ও বন্ধুত্ব বজায় রাখতে যা করা উচিৎঃ

একে অপরের পছন্দ সম্পর্কে জানুন, অনেকটা আইস ব্রেকিং গেম এর মত একে অপরকে ব্যাক্তিগত ভালো লাগা খারাপ লাগা নিয়ে প্রশ্ন করুন।

দুজন ব্যাক্তির ভিন্ন ভিন্ন পছন্দ থাকতেই পারে এটাই স্বাভাবিক; এতে হতাশ হবার কিছু নেই। একে অন্যের পছন্দকে শ্রদ্ধা করুন, নিজের পছন্দকে অন্যের উপর চাপিয়ে দিবেন না।

স্বামী স্ত্রী’র নিজেদের ব্যাক্তিগত বিষয় গুলো অন্য কারও সাথে শেয়ার করবেন না।

নিজেদের ভালো মুহূর্ত গুলোর গল্প আপনার সঙ্গীকে মনে করিয়ে দিন।

আপনার অনেক স্মৃতি হয়ত আপনার সঙ্গী ভুলে যেতে পারেন তাই মনে করিয়ে দিতে আপনি ডায়েরি লিখতে পারেন, হতে পারে সেটি কবিতা কিংবা ছোট গল্প চাইলে আদি নিয়মের মত চিঠি লিখে বা চিরকুট লিখে তাকে উপহার দিতে পারেন।

ভালোমন্দ বোঝাপড়া নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে নিবেন পরিবারকে বা বন্ধুবান্ধব দিয়ে নিজের স্ত্রী বা স্বামী কে বোঝাতে যাবেন না।

দুজন ব্যাক্তির উচিৎ একে অপরকে জানা এবং প্রতিদিন জানতে চাওয়া। নিজেদের বারংবার জানতে চাওয়ার মাঝে গড়ে উঠবে বন্ধুত্ব আর যেটা থাকা চাই সেটা হল – বন্ধুত্বের শ্রদ্ধাবোধ।

দাম্পত্ব্য সম্পর্কে ক্ষমতার ভারসাম্য

সম্পর্কের গুরুত্ব যার কাছে কম তার হাতেই বেশি ক্ষমতা চলে আসে। এই সমস্যার সমাধান লুকিয়ে আছে একে অপরের প্রতি বিশ্বাসেই।

সম্পর্কের মধ্যে ‘ক্ষমতা’ শব্দটাকে টেনে আনতে আমরা কেউই পছন্দ করি না। একটা সুস্থ সম্পর্কে থাকবে একে অপরের সঙ্গে সহযোগিতা এবং সব কিছু ভাগ করে নেওয়ার আশ্বাস। কিন্তু সহযোগিতা এবং শেয়ার, এই দুটো করতেই তো দু’জন মানুষকে লাগে। দু’জনের মধ্যে একজন যদি সেটা না করতে চায়?

আসলে সম্পর্কের গুরুত্ব যার কাছে কম তার হাতেই বেশি ক্ষমতা চলে আসে। অন্যজন যতই ভালবাসাকে বেশি প্রাধান্য দিক। ডিনারের প্ল্যান থেকে আরও গুরুত্বপূর্ণ কোনও বিষয়, সবই যদি একজনের সিদ্ধান্ত মতো চলে তাহলে মুশকিল! অন্যজনের অসম্মতির যেন কোনও অর্থই নেই! এর ফল?

সিদ্ধান্ত নেওয়ার জায়গাটা শুধুমাত্র একজনের দখলে থেকে যায়। হয়তো না চাইতেই সে অন্য জনের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে, যে তার মতামতের কোনও গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা নেই।

সম্পর্ককে ধরে রাখতে এই সমস্যার সমাধান কিন্তু করতে হবে ধৈর্য্য ধরে। কীভাবে?

  • প্রথমত যেটা করতে পারেন তা হল পার্টনারের এই স্বভাব মেনে নেওয়া। তার সিদ্ধান্তগুলোই মেনে চলা। এতে সাময়িকভাবে সমস্যার সমাধান হয়তো হবে, পাওয়া যাবে কিছুটা সহযোগিতার আশ্বাস। তবে দীর্ঘদিন এইভাবে চলা নিশ্চয়ই সম্ভব নয়। ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙবেই। নিজেকে গুরুত্বহীন করে রাখতে কেউ কত দিন পারে?
  • দ্বিতীয়, সহযোগিতা পাওয়ার জন্য লড়াই করা। এতে কিন্তু দুটো ফল হতে পারে। আপনার পার্টনার যদি নিজের ভুল বুঝতে পারেন, তাহলে তো সমাধানও আপনারা পেয়ে গেলেন। কিন্তু তিনি যদি ভাবেন যে আপনি অকারণে ঝগড়া করছেন? তাহলেও কিন্তু বেশি আঘাত পাবেন আপনিই।
  • এতেও সমাধান না হলে স্পষ্ট করে অন্যজনকে বলে দিন যে তিনি আপনার পাশে না থাকলেও আপনি নিজের কাজ নিজে করতে সক্ষম। আসা করা যায় এতে আপনার পার্টনার নিজের ভুল বুঝবেন। তবে আপনি নিজে যদি এই সম্পর্কের উপর খুব বেশি মানসিকভাবে নির্ভরশীল হয়ে থাকেন তাহলে হয়তো এই কাজটা আপনি নিজেই করে উঠতে পারবেন না।

তবে কি কোনও সমাধান সত্যিই নেই এই সমস্যার? আছে। আর সেটা লুকিয়ে আছে আপনাদের দু’জনের ভিতরেই। একে অপরের প্রতি বিশ্বাসে।

একটি সম্পর্কে যখন দু’জন দু’জনকে বিশ্বাস করেন তখন কোথাও না কোথাও এই বিশ্বাসটাও থাকে যে তাঁরা একে অপরকে ছেড়ে যাবেন না। দু’জনের উপরেই প্রভাব ফেলবে এমন কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে একজন অন্যজনের ছোট-ছোট প্রয়োজন এবং ইচ্ছেগুলোকেও গুরুত্ব দেবে, থাকে এই বিশ্বাসও।

মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক তো শুধু ‘ক্ষমতা’য় সীমাবদ্ধ নয়। বন্ধুত্ব, ভালবাসা, সম্মান এই সবের কাছেই হেরে যাবে ক্ষমতার লড়াই।


সম্পর্কে দূরত্ব …

ভালোবাসার কোনো সম্পর্ক যদি স্বাচ্ছন্দে চলতে থাকে, সেটা যথেষ্ট শান্তির। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সম্পর্কে শুরু হতে পারে টানাপোড়েন। সেটা সম্পর্কের ক্ষেত্রে যথেষ্ট খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। আপনার নিজের ইচ্ছা বা অনিচ্ছা যেকোনোভাবেই সম্পর্কে দুরত্ব চলে আসতে পারে। এই অবস্থাকে বাড়তে দিলে হয়তো ভুল বোঝাবুঝি হবে, বিচ্ছেদও হতে পারে। তবে মনে রাখবেন, আপনার হাতেই আছে এই সমস্যার সমাধান। সেটা কীভাবে তা জেনে নিন:

নিজের ভুল স্বীকার করা

ভুল যে কারোই হতে পারে। আর আপনার ভুলেই যদি সমস্যা তৈরি হয়, তাহলে সেটা স্বীকার করে নিন। ভুল চেপে রেখে বসে থাকবেন না। তাতে সমস্যা সমাধান হবে না। আর নিজের ভুল চেপে অযাচিত ঝগড়া করাটাও মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আর ঝগড়া করলে আশেপাশের লোকজন আপনাকে ইন্ধনও দিতে পারে, তাতে সমস্যা আরও ডালপালা মেলবে। তাই ভালোবাসার সম্পর্ককে বাঁচিয়ে রাখতে = নিজেকে একদম নির্দোষ না ভেবে ভুল স্বীকার করে মিটমাট করে ফেলুন।

সরি বলতে শিখুন

ভালোবাসার সম্পর্কে সবচেয়ে বড় সমস্যাটি হলো ইগো। এই ইগোর জন্য কত সম্পর্কই যে নষ্ট হয়ে গেছে, তার হিসাব নেই। কোনো একটা সমস্যা হলে আপনি ভাবেন যে আমি আগে থেকে কেন সরি বলবো। প্রত্যাশা করতে থাকেন যে সঙ্গী কখন সরি বলবে। এইরকম ইগো ধরে বসে থাকবেন না। সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে চাইলে ইগো ঝেড়ে ফেলে সরি বলতে শিখুন। এতে করে দেখবেন সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে।

সময় দিন

অনেক সময়ে সম্পর্কের দুরত্ব বাড়তে বাড়তে সমস্যার তৈরি হয়। এই দূরে থেকে যখন আর সমস্যার সমাধান করা কোনোভাবেই সম্ভব হয়না তখন কাছাকাছি হওয়ার চেষ্টা করুন। একটি দিন বা অন্তত একটি বিকেল পরস্পরকে সময় দিন। সম্ভব হলে কিছু ভালোলাগার কথা বলুন তাকে। চেষ্টা করুন তার মনকে বুঝতে। এতে করে দেখবেন ভুল বোঝাবুঝি দূর হয়ে ভালোবাসা ফিরে আসবেই।

উপহার দিন প্রিয় কিছু

যেকোনো মানুষই ছোটখাট কোনো উপহার পেলে আনন্দ পেয়ে যায়। আর সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব কমাতে হলে বিশেষ কোনো উপহার হতে পারে দারুণ কোনো উপায়। সেইসঙ্গে এর ফলে ভুল বোঝাবুঝিও চলে যাবে। তাই ভুল বোঝাবুঝিকে দূরে রাখতে প্রিয় মানুষটিকে প্রিয় কোনো উপহার কিনে দিতে পারেন।

অন্য কারো সঙ্গে আলোচনা

আপনার সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। নিজে থেকে হয়তো ঠিক করতে পারছেন না, খারাপ বোধ হচ্ছে। আপনার কথার হয়ত প্রাধান্য থাকছে না। এক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষের সাহায্য নিতে পারেন। যার সঙ্গে আপনাদের উভয়েরই ভালো বোঝাপড়া আছে তাঁকে সমস্যার কথা খুলে বলতে পারে। সে হয়তো কোনো সমাধান দিতে পারে। আপনার না বলতে পাড়া কথাগুলো সঙ্গীকে বলতে পারে। এতে রাগ অভিমাব কমবে, দুরত্ব কমবে।

বরকে পর করে দিচ্ছেন নাতো?

বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনটির মূল ভিত্তি হল স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা, সম্মান, মনোযোগ, একে অন্যের প্রতি যত্নশীলটা, সামাজিক ও পারিবারিক সম্পর্কগুলোকে মানিয়ে চলা, দায়িত্বশীলতা এবং আর্থিক, মানসিক ও জৈবিক চাহিদা পূরণ।

বিয়ের কিছুদিন স্বভাবতই অনেক আবেগ, মুগ্ধতা ও রোমান্স বিরাজ করে। সবকিছুতেই এক রকমের অদ্ভুত ভালোলাগার অনুভূতির ছোঁয়া পাওয়া যায়। কিন্তু এই মোহটা কিছুদিন পর থেকেই বিলুপ্ত হওয়া শুরু হয় যদি সম্পর্কে কোন নতুনত্ব না থাকে। তাই সম্পর্ক ভালো ও সুস্থ রাখতে সর্বদা সচেতন থাকা অতি আবশ্যক।

বর্তমান আধুনিক সময়ে অনেক স্ত্রী চাকুরি করেন। আমাদের সমাজ এখনো পুরুপুরি আধুনিক হতে পারেনি, এখনো কিছু কিছু ব্যাপারে অনেক রক্ষনশীল মানসিকতা বহন করছে। যেমন- মেয়েরা যত বড় চাকুরিই করুক না কেন রান্না-বান্না ও সংসার সামলানো মেয়েকেই করতে হবে, ছেলেরা করলে যেন তা অনেক বড় পাপ কাজ বলে গণ্য হবে।  তাই চাকুরিজীবি মেয়েদের উপর থাকে চাকুরি ছাড়াও রান্না-বান্না ও সংসার সামলানোর সকল দায়িত্ব ও কর্তব্য।  সবকিছু সামলিয়েও মেয়েদের আরেকটা বড় দায়িত্ব হল স্বামীকে সন্তুষ্ট রাখা। তার ছোট ছোট ব্যাপারে যত্নশীল থাকা, সকল চাওয়া পূরণ করা যাতে তার জীবনে কোন অপ্রাপ্তি বা অপূর্ণতা না থাকে। কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে ভালোবাসা, আদর, মনোযোগ না পেলেই স্বামীর ভালোবাসা, ভালোলাগা, আকর্ষণ সব ধীরে ধীরে কমতে থাকে যা ভবিষ্যতে সংসারে অশান্তি বা পরকীয়ার মত ঘটনার সূত্রপাত হয়। তাই বরের প্রতি সবসময় যত্নশীল থাকা অতি জরুরি।

আবার, বর্তমান সময়ে মানুষ তার সন্তানের প্রতি আগের থেকে অনেক বেশি উদ্বেগী ও যত্নশীল হয়ে গেছে। সন্তানের ছোট ছোট চাহিদা পূরণের জন্য বিশেষ করে মায়েরা অনেক বেশি সচেষ্ট। এর মাঝে অনেকেই ভুলে যায় তার আরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে। সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হল তার বরের প্রতি। বর যখন এত সময় ধরে তার বউ এর কাছ থেকে সবটা মনোযোগ ও যত্ন পেয়ে অভ্যস্ত হয়ে যায় তখন হুট করে না পাওয়াটা অনেক বেশি অপ্রত্যাশিত হয়ে যায় যা তার অনুভূতিতে অন্যরকম খারাপ একটা প্রভাব ফেলার একটা সম্ভাবনা থাকে। যেমন- সন্তানের কারণে তার আর আগের মত মনে বাসনা হলেই স্ত্রীর কাছে যাওয়ার সুযোগ না পাওয়া, আগের মত রোমান্স না করতে পারা ধীরে ধীরে শারীরিক দুরত্বের তৈরি করে।

বর বাসায় ফেরার পরে আগের মত বরের দিকে খেয়াল না রাখা, তার দৈনন্দিন বাইরের নানাবিধ কার্যকলাপ নিয়ে আলোচনা না করা, কোন দুশ্চিন্তা থাকলে তা ভাগ না করা, তাদের গল্পের বিষয় শুধু বাচ্চাটির দুধ, ডায়াপার, বাচ্চাটি নতুন কি কাজ করেছে, বাচ্চাটির আর কি কি লাগবে এইসব বিষয়েই সীমাবদ্ধ থাকলে মোট কথা বাচ্চার ব্যাপারে ওভার পসেসিভ থেকে বরকে গুরুত্ব না দিলে মানসিকভাবেও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দুরত্ব তৈরি হয়।

যতকিছু হোক না কেন সর্বদা স্বামীর প্রতি এক প্রকার নজরদারি বহাল রাখতেই হয়। বাচ্চা হলেই সাধারণত মেয়েরা একটু মোটা হয়ে যায় বা চেহারার যত্ন নেয়ার সময় না পাওয়ায় চেহারাও নষ্ট হয়ে যায় এইসবের প্রতি যত্নশীল থাকতে হবে। কারণ সৌন্দর্যটাও স্বামীর মন যোগাতে অনেকাংশে প্রভাব ফেলে। সবকিছুর পরেও বরকে তার মত করে সময় দিতে হবে, তার কাজের প্রশংসা করতে হবে, তাকে মুগ্ধ করে এমন কিছু করা, তার সাথে টিভি দেখা, ঘুরতে যাওয়া, বিশেষ দিনগুলো তার সাথে উদযাপন করার মাধ্যমে তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে স্বস্তি দিতে হবে। অন্যথায়, বর একাকীবোধ করা থেকে অনেক খারাপ কিছুতে নিজেকে জড়িয়ে ফেলতে পারে। আর একবার শারীরিক ও মানসিকভাবে দুরত্ব তৈরি হয়ে গেলে তা দূর করতে অনেক সময় ও শ্রম লেগে যায় তাই শুরু থেকেই সচেতন থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ।