সঙ্গীকে একটু ছাড় দিন এতে বাড়বে ভালোবাসা

স্বামী ও স্ত্রী অথবা প্রেমিক ও প্রেমিকা ভিন্ন দুইজন মানুষ, ভিন্ন পরিবার ও পরিবেশে তাদের বেড়ে ওঠা তাই দুইজন একে অন্যের থেকে ভিন্ন হবে এটাই খুব স্বাভাবিক। সুতরাং দুইজনের সব পছন্দ অপছন্দ মিলানো টা নেহায়েত বোকামি ছাড়া আর কিছু না। সহনশীলতার সাথে নিজের অবস্থান থেকে একে অন্যকে বোঝার চেষ্টা করাটাই শ্রেয়।

একটা মানুষ যখন জীবনের অনেকগুলো বছর তার মত করে অতিবাহিত করে একটা সময় পর প্রেম বা বিয়ে নামক একটা বন্ধনে আবদ্ধ হয়, তখন সম্পর্ক বা বিয়ের অন্তরালে অনেক সময়ই তার সঙ্গীটি তার প্রতি অতি আবেগে বা অধিকারবোধ ফলাতে গিয়ে সঙ্গীটির পরিবার ও বন্ধু-বান্ধব থেকে তাকে দূরে সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করে। কিছু ক্ষেত্রে তা সফল হয় কিছু ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয় সমস্যার। অতিরিক্ত সবকিছুই খারাপ বলে একটা প্রবাদ খুবই প্রচলিত। কথাটির সত্যতা যাচাই করার কোন অবকাশ নেই। ভালোবাসার মানুষটাকে যত্ম করা বা হারানোর একটা ভয় মানুষের মধ্যে কাজ করাটাও অস্বাভাবিক কিছু নয় তাই সঙ্গীটি কোন কোন বন্ধুর সাথে মিশছে, কোথায় কোথায় যাচ্ছে, কি কি করছে খোঁজ রাখাটা অপর সঙ্গীর কাজ হলেও তা করতে হবে অতি সুক্ষভাবে যাতে সঙ্গী কিছুতেই বুঝতে না পারে। সম্পর্ক  অনেক আবেগময় আর কিছুটা বাস্তবিক এটা মনে রাখা অত্যন্ত জরুরি।

কোন মানুষই নিখুঁত হয় না তাই সঙ্গীর দোষগুলোকে নেতিবাচকভাবে না নিয়ে ইতিবাচকভাবে নিয়ে সেগুলোর প্রশংসা করলে সঙ্গী্র ভালোলাগা থেকে সম্পর্কটাও আরো জোরালো হয়। কোন কিছুতে মতের অমিল হলে ঝগড়া না করে তার সাথে কথা বলা উচিৎ। সমাধান না হলে তার চিন্তানুযায়ী ভেবে সমাধান খুজে বের করা অথবা নিজেকে তার মত করে কিছুটা মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলে অনেক ক্ষেত্রেই সেটার ফলাফল ভালো হয়।

সঙ্গীদের পরস্পরকে এবং পরস্পরের পরিবারকে জানার ও বোঝার চেষ্টা করতে হবে। সঙ্গীকে নিজের কাছে আগলে না রেখে তার পরিবারের সাথে সময় কাটানোর মত সুযোগ দিতে হবে। এতে পরস্পরের প্রতি পরস্পরের শ্রদ্ধার সাথে সাথে বাড়বে ভালোবাসাটাও। বর্তমান প্রতিযোগিতার সময়ে মানুষ তার ক্যারিয়ার নিয়ে অনেক বেশি সচেতন। সুন্দর একটা ভবিষ্যত স্বপ্নকে ঘিরে অনেকেই অতি ব্যস্ততায় দিন যাপন করছে। তাই সঙ্গীকে কাঙ্খিত পর্যাপ্ত সময় দিতে ব্যর্থ হওয়ায় সঙ্গীর অনেক অভিমান ও অভিযোগের জন্ম নেয়। এমতাবস্থায় একটু বোঝা উচিৎ যে সঙ্গী যা করছে তা তাদের ভালোর জন্যই করছে। অভিযোগের পরিবর্তে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে ব্যাপারটা হয় আরও সুখময়। অপরদিকে সঙ্গীরও উচিৎ তার ব্যস্ততার মাঝে একটু সময় বের করে তার সঙ্গীটিকে সময় দেয়া।

ছোটখাট এইসব ছাড়ের মাধ্যমেই ভালোবাসার গভীরতা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। ভালোবাসার মানুষটার প্রতি অতি আবেগ ও যত্ম থেকে তৈরি হয় এক প্রকারের দ্বায়বদ্ধতা যা অনেক সময় ধংসাত্মকও হতে পারে। সব মানুষের নিজেস্ব যে একটা পরিসর থাকে তাতে তাকে একটু ছেড়ে দিলে স্বস্তির সাথে সাথে বাড়বে আপনার প্রতি তার মুল্যবোধও। যেমন সঙ্গীর কোন সময় ইচ্ছে হতেই পারে কিছুটা সময় একা থাকার। ফোন বা যোগাযোগ মাধ্যম থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখার। এতে রাগ না করে জোরপূর্বক আদায় না করে তাকে একটু সময় দিন। দেখবেন সম্পর্কের দ্বায়বদ্ধতা মধুরতায় পরিণত হবে। আবার কোন কারণে আপনার সঙ্গীর মেজাজ খারাপ থাকলে সেক্ষেত্রে তাকে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করুন নয়তো চুপ থেকে তাকে নিজেকে সামলানোর সময় দিন। মেজাজ ঠান্ডা হলে সে নিজেই আপনার সাথে স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

মানুষ মাত্রই ভুল করবে আর সেটা শোধরানোর দায়িত্বও সঙ্গীর কিন্তু সেটা কখনোই কারো সামনে করে তাকে অপমান করা যাবে না। এতে নিজেদের বোঝাপড়ায় ফাটল তৈরি হবে। আরও কিছু ব্যাপার যেমন মাঝে মাঝে সঙ্গীকে খুশি করার জন্য তাকে দেখতে ভালো না লাগলেও সেটা প্রকাশ না করে প্রয়োজনে তাকে সুন্দর লাগার মিথ্যা প্রশংসা করে তাকে ভালো অনুভূতি দিতে পারেন। কোন বিশেষ দিন ভুলে যাওয়া কখনোই কারো ভালবাসার মাপকাঠি হতে পারে না তাই সেগুলো ধরে না রেখে তাকে সেটা মনে করে দিয়ে নিজেই সেটা উদযাপন করা শুরু করুন দেখবেন সঙ্গীটিরও ধীরে ধীরে তা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে।