দ্বিতীয় বিয়ে: স্বামী বা স্ত্রী থাকা অবস্থায় আবার বিয়ে – আইন কী বলে?

বিয়ে সংক্রান্ত প্রতারণার ঘটনা বর্তমানে আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। এর মধ্যে স্বামী কিংবা স্ত্রী বর্তমান থাকা অবস্থায় পরবর্তী বিয়ের অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে। এসব প্রতারণামূলক ঘটনা থেকে বিভিন্ন সামাজিক অস্থিরতা, পারিবারিক জটিলতা ও সহিংসতা্র সৃষ্টি হয় যা বেশিরভাগ সময় আদালতে মোকদ্দমায় গড়ায়। বাংলাদেশে বিয়ে ও বিয়ে-বিচ্ছেদ পারিবারিক ধর্মীয় আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু বিয়ে সংক্রান্ত ফৌজদারি অপরাধ সংঘটনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় দণ্ডবিধি প্রযোজ্য হয়।

দ্বিতীয় বিয়ে করা স্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রথম স্বামীর আইনি প্রতিকার:

মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী, প্রথম স্বামীর সঙ্গে দাম্পত্য সম্পর্ক বিদ্যমান থাকাবস্থায় স্ত্রী যদি পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, তাহলে সেই দ্বিতীয় বিয়ে অবৈধ, অকার্যকর ও বাতিল বলে গণ্য হবে। স্ত্রী দ্বিতীয় বিয়ে করতে ইচ্ছুক হলে তাঁকে আবশ্যিকভাবে আগে প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধন ছিন্ন করতে হবে। ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ অনুসারে প্রথম স্বামীকে তালাকের নোটিশ প্রদানপূর্বক ৯০ দিন পর তালাক কার্যকর হওয়া সাপেক্ষে নির্দিষ্ট ইদ্দতপালন শেষে দ্বিতীয় স্বামী গ্রহণ করা যেতে পারে। এই বিধান লঙ্ঘন করে প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিয়ে বলবৎ থাকাবস্থায় স্ত্রী যদি স্বামীর জিম্মা থেকে পালিয়ে গিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করেন  সেক্ষেত্রে প্রথম স্বামী সেই স্ত্রীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে পারেন। সেক্ষেত্রে অভিযুক্ত স্ত্রী বাংলাদেশের ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৪৯৪ ধারা অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড পেতে পারেন। সঙ্গে অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন।

তবে দণ্ডবিধির ৪৯৪ ধারার এই বিধানের ব্যতিক্রম হতে পারে যদি সেই স্ত্রী তার পূর্বের স্বামীর সাত বছর যাবত কোনো খোঁজ-খবর না পান, অথবা তিনি জীবিত থাকতে পারেন এমন কোনো তথ্য যদি জানা না যায়, তাহলে পরবর্তী স্বামীকে আসল ঘটনা জানিয়ে তাঁর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারেন। অর্থাৎ এই ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে স্ত্রীর দ্বিতীয় বিয়ে শাস্তিযোগ্য হবে না।

প্রথম বিয়ের কথা গোপন রেখে স্ত্রীর পুনরায় বিয়ে: দ্বিতীয় স্বামীর আইনি প্রতিকার কী?

স্ত্রী যদি দ্বিতীয় বা পরবর্তী বিয়ে করার সময় যাকে বিয়ে করছেন তাঁর কাছে পূর্বের বিয়ের কথা গোপন করেন এবং দ্বিতীয় বা পরবর্তী স্বামী তা জানতে পারেন তাহলে সেটি দণ্ডবিধির ৪৯৫ ধারা অনুসারে একটি অপরাধ। যার ভিত্তিতে অপরাধীকে সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড প্রদান করা হবে, সাথে অর্থদণ্ডও প্রযোজ্য হবে।

কারো বিবাহিত স্ত্রীকে ভাগিয়ে নিয়ে গেলে আইনি প্রতিকার কী?

অন্যের স্ত্রী জানা সত্ত্বেও কোনো বিবাহিত নারীকে কোনো পুরুষ যদি ফুসলিয়ে বা প্ররোচনার মাধ্যমে যৌনসঙ্গম করার উদ্দেশে কোথাও নিয়ে যায় বা একই উদ্দেশে কোথাও আটকে রাখে তাহলে সেটি একটি অপরাধ যা দণ্ডবিধির ৪৯৮ ধারা অনুযায়ী সর্বোচ্চ ২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডনীয়, অথবা অর্থদণ্ড কিংবা উভয়দণ্ডে দণ্ডনীয় হবে। 

স্বামীর অজ্ঞাতে স্ত্রীর সঙ্গে ব্যভিচার: আইনি প্রতিকার কী?

দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারায় ব্যভিচারের শাস্তির উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি এমন কোনো বিবাহিত নারীর সঙ্গে তার স্বামীর সম্মতি ছাড়া যৌনসঙ্গম করে এবং অনুরূপ যৌনসঙ্গম যদি ধর্ষণের অপরাধ না হয়, তাহলে সে ব্যক্তি ব্যভিচারের দায়ে দায়ী হবে। যার শাস্তি ৭ বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডসহ উভয় দণ্ড। তবে ব্যভিচারের ক্ষেত্রে স্ত্রীলোকটির কোনো শাস্তির বিধান আইনে নেই।

আইনি প্রতিকার কোথায়, কীভাবে পাওয়া যাবে? 

উপরোক্ত অপরাধের ক্ষেত্রে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি নিকটস্থ থানা বা আদালতে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর এজাহার দাখিল করা যায়, থানায় অভিযোগ গ্রহণ না করলে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগ করা যাবে। পরিশেষে বলা যায়, বাংলাদেশে বিবাহ নিবন্ধনের আইনি বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও অনলাইন বা ডিজিটাল বিবাহ নিবন্ধন ব্যবস্থা না থাকায় অনেকে এই সুযোগে বিয়ে সংক্রান্ত প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে থাকেন যা বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যেকোনো বিয়ের ক্ষেত্রে বিয়ের সংশ্লিষ্ট পক্ষকে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে, বিয়ের নিবন্ধন নিশ্চিত করতে হবে, বিয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি-বিধান সম্বন্ধে সজাগ থাকতে হবে। ধর্মীয়, সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধ ধারণ করতে হবে এবং বিয়ে সংক্রান্ত প্রতারণার শিকার হলে আইনের আশ্রয় নিতে হবে। তাহলেই এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে আশা করা যায়।

দ্বিতীয় বিয়ে ও সুখী হওয়ার সম্ভাবনা!

বিয়ের পর সুখী সংসার জীবন গড়তে কে না চায়! তবে যে কোন কারনেই হোক প্রথম সংসারের ইতি ঘটে অনেকের জীবনে। সময় ও জীবন থেমে থাকেনা তবে খারাপ সময় অব্যাহত থাকে অনেকদিন, এর মধ্যে দিয়েই মানুষকে আবার বাঁচতে হয় নতুন করে। কেউ হয়তো নতুন ভাবনায় সঙ্গীহীন জীবনযাপন করেন আবার কেউ কেউ নতুন জীবনসঙ্গীর নিয়ে দাম্পত্যে জীবন শুরু করেন।

সম্প্রতি ‘হাফিংটন পোস্টে’র এক প্রতিবেদনে জানানো হয় –

দ্বিতীয় বিয়েতে নাকি সুখী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

যে সকল কারনে দ্বিতীয় বিয়েতে সুখী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছেঃ

স্বাভাবিকভাবে মানুষ পুরনো ভুল পুনরায় করেনা। তাই দ্বিতীয় বিয়েতে ব্যক্তিদের মধ্যে সংশোধন বিষয়টি তৈরি থাকে। যার ফলে দাম্পত্যে সম্পর্ক ভালো থাকে।

মানুষ সঙ্গ প্রিয় তবুও একই ছাদের নিচে নিত্য কলহ দাম্পত্যে সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটায়। দীর্ঘ সময় মানুষ যখন নিঃসঙ্গ জীবন কাটায় তখন দ্বিতীয় সম্পর্কে কলহ বিষয়টি আসলেও তারা এড়িয়ে চলেন ফলে দাম্পত্যে সম্পর্কে শান্তি বিরাজ করে।

দীর্ঘকালীন সময়ের পুরনো অভিজ্ঞতার ফলে দ্বিতীয় বিয়েতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সমঝোতার বিষয়টি বেশ স্পষ্ট থাকে যার ফলে দ্বিতীয় দাম্পত্য জীবন সুখী হয়।

প্রথম দুর্ঘটনার স্বীকার হওয়ার পর দ্বিতীয় বার জীবনসঙ্গী বাছাইয়ে ব্যক্তিদের মধ্যে আবেগ বিষয়টি নিয়ন্ত্রনে থাকে। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগণ যথেষ্ট সচেতন ও যাচাই করে জীবনসঙ্গী বেঁছে নেন। আর তাই তাদের মধ্যে আত্মীক সম্পর্ক শুরু থেকেই লক্ষ্য করা যায়।

অতীতে আস্থাহীনতায় সম্পর্ক কাটানো অভিজ্ঞতার ফলে দ্বিতীয় সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের প্রতি আনুগত্য থাকে তাই দাম্পত্য সম্পর্ক স্বাস্থ্যকর হয়।

বিয়ে প্রত্যেকটি মানুষের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় যা কেউ অস্বীকার করতে পারবেনা। সমাজ, বিয়ে ও সংসার এ সকল বিষয় নিয়েই সভ্যতা টিকে আছে। বিয়ের পর অনেকের জীবনে ঝড়ঝাপটা আসে অতঃপর ডিভোর্স হয়। তাই বলে ব্যক্তির উচিত নিজের জীবনকে অবহেলা না করে সময় নিয়ে যাচাই করে জীবনসঙ্গী খুঁজে নতুন করে বেঁচে থাকা।

প্রবাদে আছে –

বিয়ে হচ্ছে বুদ্ধিমত্তার বিরুদ্ধে কল্পনার জয়। আর দ্বিতীয় বিয়ে হচ্ছে অভিজ্ঞতার বিপক্ষে আশাবাদের জয়।

সম্পর্কের সুখ দুখ

জানালার শিক ধরে আকাশ পানে চেয়ে আছে তামান্না। পড়ন্ত বিকেলে মেঘেরা বাহারী রঙ গায়ে মাখিয়ে ছোটাছুটি করছে। অপরূপ সে দৃশ্য। কিন্তু সেদিকে তাকিয়ে থেকেও তা দেখছে না তামান্না। কিংবা বলা চলে দেখতে পারছে না। পারবে কিভাবে, তার মন তো তার নিজের মাঝে নেই। উদাস মন মহাশূন্য ভেদ করে ছুটে যাচ্ছে, খুঁজে বেড়াচ্ছে তার হারানো ঠিকানা। কিন্তু পাচ্ছে না। এ জন্য তামান্নার কষ্ট হচ্ছে। ভীষণ কষ্ট। বুকের মাঝে কষ্ট যেন কামড়ে ধরছে। বার বার ঘুরে ফিরে একটি মুখ ভেসে আসছে হৃদয়পটে। আর সঙ্গে সঙ্গে ফাকা হয়ে যাচ্ছে বুক, ফিরে আসছে কষ্টগুলো। দীর্ঘ পাঁচ বছরের ভালবাসার মানুষের সঙ্গে ব্রেকআপ হয়ে গেছে। কিন্তু বার বার ফিরে আসছে কাটানো মধুময় সে সময়গুলো আর সেই সঙ্গে ভালবাসা হারানোর কষ্ট। কোন কিছুতেই মন দিতে পারছে না সে। অথচ আর কিছুদিন পরেই তার পরীক্ষা। এখন কি করবে তামান্না? এরকম পরিস্থিতি তামান্নার মতো হাজারো তরুণ-তরুণীর। হৃদয় ভাঙ্গা কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বিশ্বখ্যাত সংবেশনবিদ (হিপনটিসট) পল ম্যাককেনা এবং মনোচিকিৎসক ড. হগ উইলবর্ন কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। সেই আলোকেই কিভাবে ভগ্ন হৃদয়ের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় তা তুলে ধরা হলো।

কষ্টকে মেনে নিন

যাকে নিয়ে স্বপ্ন বুনেছেন, তার সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙ্গে গেলে কষ্ট লাগাই স্বাভাবিক। কষ্ট না লাগলে বরং বলতে হবে আপনার ভালবাসায় খাদ আছে। তাই কষ্ট লাগবেই, এমনটা ভাবা শুরু করুন, দেখবেন কষ্ট অনেকটাই কমে গেছে। মনে রাখবেন মানুষের জীবন সুখ-দুঃখ মিলেই। ভালবাসার রঙিন সময়টাতে সুখের ভেলায় চড়ে কল্পজগতে পাড়ি দিয়েছেন মহাসমুদ্র, বুনেছেন কতসহস্র স্বপ্ন তার ইয়ত্তা নেই। তাই বলে যে জীবন সবসময় একরকমভাবেই যাবে, তা তো নয়। এটা জীবনের ধর্মও নয়। রাতের অন্ধকার ঘরে প্রবেশ করে কোন কিছু চিন্তা না করেই আপনি লাইটের সুইচ দেন, ঠিক তেমনি ভালবাসার সম্পর্ক ভেঙ্গে গেলে অচেতনভাবেই আপনার মনে অতীতের স্মৃতি চলে আসবে আর তা আপনাকে পোড়াবে, ভেঙ্গেচুড়ে দিতে চেষ্টা করবে, এটাকে স্বাভাবিক ধরে নিন। দেখবেন ধীরে ধীরে কষ্ট কমে যাবে।

পুরনো অভ্যাসগুলোকে পাত্তা দেবেন না

ভালবাসার সময়টাতে আপনাদের জানতে কিংবা অজানন্তে অনেক অভ্যাসই তৈরি হয়ে গেছে। এই অভ্যাসগুলোই এখন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে, তাই না? এক কথায় বলব, ঝেড়ে ফেলুন। যে অভ্যাসগুলো আপনি সে সময়ে করেছেন, সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার চেষ্টা করুন। জানি কষ্ট হবে, কিন্তু কী আর করা। মাথায় কেউ আর আঙুল চালিয়ে চুলগুলো এলোমেলো করে দিচ্ছে না, আঙুলে আঙুলে কাটাকাটি খেলা আর হচ্ছে না। এরকম হাজারো রোমান্টিক কাজ, কত খুনসুটিতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলেন। এখন তা পোড়াচ্ছে। মনে করার চেষ্টা করুন, এগুলো নিতান্তই সে সময়কার অভ্যাস, এগুলো চিরন্তন নয়। সে সময় এগুলোতে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন বলে এখনও যে তা করতে হবে এমনটা তো নয়, এভাবেই ভাবা শুরু করুন। দেখবেন অভ্যাসগুলোর শূন্যতা আপনাকে আর পীড়া দিচ্ছে না। ও, আর হ্যাঁ, আপনি অবশ্যই দুঃখবাদী রোমান্টিক গান শুনবেন না। এটা আপনার পোড়ামনের জ্বালা না কমিয়ে শতগুণ বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, সম্পর্ক ভাঙ্গার পর বেশিরভাগ মানুষই দুঃখের গান শোনে। না, একদমই না। আপনি মোটেও এ ধরনের গান শুনবেন না।

পরিবর্তন আনুন ভাবনায়

প্রেমময় সময়ে কত কিছুই না চিন্তা করেছেন ভাললাগার মানুষটিকে নিয়ে। কত স্বপ্নই না বুনেছেন। এখন ছাড়ুন তো এসব। অনেক হয়েছে, এবার ভাবনা থামান। ভাবনায় ভাললাগার মানুষটি বার বার চলে আসলেও মাথা ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে ফেলুন। দেখুন তো অন্য কোন কিছু ভাবা যায় কিনা। যেমন ধরুন, আপনি আপনার চারপাশের পরিবেশ, মানুষ, সমাজ ইত্যাদি নিয়ে ভাবা শুরু করতে পারেন। মনে রাখবেন, ভাবনার আগের ফ্রেম থেকে নিজেকে সরিয়ে এনে নতুন ফ্রেম বসাতে হবে, নাহলে আপনার মুক্তি নেই। কী বুঝলেন তো? আরে ভাই, পুরনোকে আঁকড়ে ধরে পড়ে থাকলে তো হবে না, পৃথিবীতে কত কিছুই তো হচ্ছে, এগুলো নিয়ে ভাবা শুরু করুন, নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবা শুরু করুন। দেখবেন, একটা সময় কষ্ট ফিঁকে হয়ে আসবে।


অতীতকে যেভাবে দেখছেন তা পাল্টে দিন

সম্পর্ক ভেঙ্গে গেছে, তাই বলে কী স্মৃতিরা চলে গেছে? মোটেই না। অতীত সম্পর্ক নিয়ে ভাবা, কষ্ট কষ্ট খেলা এক ধরনের বদঅভ্যাস। কী, এই কথা শুনে মেজাজ বিগড়ে গেল? ভাবছেন, আপনাকে নিয়ে ইয়ার্কি করা হচ্ছে। তা নয়। অনেক নিরাশাবাদী মানুষ আছেন যারা অতীতের দুঃখ নিয়ে পড়ে থাকতেই বেশি ভালবাসেন। এটা তাদের বদঅভ্যাস। এই বদঅভ্যাসের জন্য তাদের দীর্ঘ সাধনা দরকার। সেটার অন্য সমাধান আছে। আর আপনি যদি নিরাশাবাদী না হন, তাহলে অতীতের স্মৃতি মনে চলে আসলে ভাবুন ঐটা আপনার কল্পনা ছিল। আপনি ওগুলো সিনেমায় দেখেছেন, বাস্তবে নয়। হোক না মিথ্যা, সমস্যা থেকে যদি ভাল থাকা যায়। মনকে যা বোঝাবেন তাই বুঝবে। মন বড় বোকা, হে।

বিবাহবিডি কল সেন্টারঃ +৮৮ ০১৯২২১১৫৫৫৫

মনে মনে প্রিয়ার ছবি আঁকুন

কী পাগল ভাবছেন। এতক্ষণ স্মৃতি ভুলে থাকতে বলে, এখন আবার বলছি প্রিয়ার ছবি আঁকতে, পাগল ছাড়া আর কী। কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার বিষয়টা তো জানেন। এ পদ্ধতিটি আসলে সেরকমই। প্রথমে আপনি একটা দৃশ্যকল্প নিজের মনের মধ্য সেট করুন। চোখ বন্ধ করে দেখতে থাকুন আপনার ভালবাসার মানুষটি হাসছে, গাইছে, নাচছে, আপনার সঙ্গে খুনসুটি করছে। দেখতে বেশ ভালই লাগছে, তাই না। কিন্তু এ ভাললাগা তো বেশিক্ষণের নয়। একটু পরেই আসবে যন্ত্রণা। চিন্তা করবেন না। এবার দেখতে থাকুন আপনার ভাললাগার মানুষটি আপনার ওপর অযৌক্তিকভাবে রেগে যাচ্ছে, আপনি মান ভাঙ্গানোর চেষ্টা করছেন তবু কমছে না। দেখতে থাকুন তার বদ অভ্যাসগুলো আর সেই সঙ্গে আপনার খাপ খাওয়ানোর প্রাণান্তকর চেষ্টা। ভাবুন আপনি একজন সিনেমার পরিচালক ও অভিনেতা। আপনি আর আপনার ভাললাগার মানুষটি তাতে অভিনয় করছেন এবং দেখা দৃশ্যকল্পগুলো আপনার অভিনয় ও পরিচালনার মধ্য দিয়েই হচ্ছে। দেখুন তো আপনার অনুভূতিতে কোন পরিবর্তন আসছে কিনা। পরের দৃশ্যগুলোর কারণে আগের দৃশ্যকল্পের রঙিন ছবিগুলো সাদা কালো হয়ে যাচ্ছে, তাই তো। হ্যাঁ, এটাই আপনার বাস্তব জীবনে হতো যদি আপনার সম্পর্ক ছেদ না হতো। রঙিন জীবন সাদা কালো হয়ে যেত। এভাবে দৃশ্যকল্প আঁকলে দেখবেন ভালবাসার বেগ কমে গেছে।

সম্পর্কের উল্টো দিকটা তলিয়ে দেখুন

একটা কথা সবসময়ই সত্য, এক হাতে তালি বাজে না। এটা মাথায় আপনাকে রাখতেই হবে। যে সমস্যাগুলোর জন্য আপনার সম্পর্ক ভেঙ্গে গেছে, সেগুলো নিয়ে ভাবুন। সমস্যাগুলো তো নিশ্চয় ছোট ছিল না, তাই না? সম্পর্ক টিকে থাকলে সে সমস্যাগুলো আরও সৃষ্টি হতে পারত। তাই যা হয়েছে, ভাল হয়েছে, এমনটাই ভাবুন। মনে রাখবেন, দুষ্টু গরুর চেয়ে যেমন শূন্য গোয়াল ভাল, তেমনি সমস্যা তথা জটিলতাপূর্ণ সম্পর্কের চেয়ে না থাকাই ভাল। তাহলে আর সারা জীবন পস্তাতে হবে না। সম্পর্কের এই উল্টোদিকটি ভেবে দেখুন। দেখবেন, পুরনো সম্পর্কটি নিয়ে আপনার মধ্যে আর আপসোস জাগবে না। বরং মনে হবে, বেঁচে গেছি। আর যদি পারিবারিক কারণে আপনি নিজেই সম্পর্ক ছেদ করে থাকেন, তাহলেও সেটাকে আত্মত্যাগ হিসেবেই নিন। জীবনের প্রয়োজনে মানুষকে অনেক আত্মত্যাগ করতে হয়, অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তাই একে স্বাভাবিক ধরে নিন। নিজের পক্ষে যুক্তি দাঁড় করান। পরিবারের মানুষদের হাসিভরা মুখগুলোর কথা মনে করুন, দেখবেন আপনার কষ্ট অনেকটাই মনে যাচ্ছে।

নিজের দিকে তাকান

অনেক তো হলো, এবার নিজের দিকে তাকান। কান্নাকাটি অনেক করেছেন। আয়নায় নিজের চেহারাটি দেখুন। কী বিমর্ষ। চাঁদবদনের কী হাল করেছেন, দেখেছেন? এ কী সহ্য করা যায়! একটা কথা অপ্রিয় শোনায়, তবু চিরন্তন। আপনি বাঁচলে বাপের নাম। আর কিছু বলতে হবে? অনেক স্মৃতি স্মৃতি খেলা খেলেছেন, এবার নিজের দিকে একটু নজর দিন। এই দেশ সমাজ, আপনার পরিবারের প্রতি আপনার অনেক দায়িত্ব, এভাবে ভাবুন না একবার। নিজের জন্য এবং অন্যদের জন্য আপনাকে ঘুরে দাঁড়াতেই হবে, ভুলে যেতে হবে পুরনো স্মৃতি, এমন কথামালা আওড়াতে থাকেন। দেখবেন, আপনার ভেতর থেকে পুরনো স্মৃতি ভুলে নতুন করে বাঁচার তাগিদ সৃষ্টি হবে।

বিশ্বাস করুন আপনি আবারও প্রেমে পড়বেন

সময় বহমান, তাই তো? জীবনও বহমান। কারও জন্যই জীবন থেমে থাকে না। সম্পর্ক ভেঙ্গে গেছে বলে যে আবার কোন সম্পর্ক হবে না, তা তো না। এমন কোন নিয়ম তো কোথাও নেই যে, জীবনে আপনাকে একবারেই ভালবাসতে হবে। আর এমনটাও নয় যে, আপনি অতীতের ভালবাসা ছাড়া আর কাউকে ভালবাসতে পারবেন না। কেউ যদি বলে থাকে, তবে হয় আবেগের বশে বলে নয় ডাহা মিথ্যা কথা বলে। নতুন কারও সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার চিন্তা করুন। বন্ধু খুঁজুন। পারলে বিপরীত লিঙ্গের কারও সঙ্গেই বন্ধুত্ব করুন। বিপরীত লিঙ্গের মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব আপনার পুরনো স্মৃতিকে ভুলে যেতে সাহায্য করবে। আর প্রেম করতে পারলে তো সোনায় সোহাগা।

হল্লার মাঝে ডুবে যান

দুঃখের সময় মানুষ যদি নিঃসঙ্গ থাকে, তখনই মানুষ বেশি কষ্ট পায়। স্মৃতিরা তাড়া করে ফেরে। এজন্য একাকী না থেকে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে হৈহল্লায় মেতে উঠুন। জানি, মন সায় দেবে না। তবু বলছি, একটু মনে জোর এনেই আড্ডা দিতে যান। প্রয়োজনে বেশি সময় আড্ডা দিন। দেখবেন নির্মল আড্ডার মধ্যে দিয়েই আপনি ভুলে যেতে থাকবেন, পুরনো স্মৃতি। বন্ধুদের নিয়ে দূরে ঘুরে আসতে পারেন, পিকনিক করতে পারেন। কিংবা জড়িয়ে পড়তে পারেন সমাজসেবামূলক কাজে। আর ঘর থেকে বের হওয়ার অসুবিধা থাকলে বই পড়া শুরু করেন কিংবা লেখালেখি। যেভাবেই হোক নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। দেখবেন ধীরে ধীরে আপনার কষ্ট কমে যাচ্ছে। আপনি আবার ফিরে যাচ্ছেন স্বাভাবিক জীবনে।

কোনো ভুল ছিল কি! এমন প্রশ্ন মনে উঁকি দিচ্ছে?

দ্বিধান্বিত মনের কারণে পড়াশোনা ও নিজের জীবনে যেন সময় দিতে পারছেন না দুজনে। হতাশা ভর করে সময় গুনে যাচ্ছেন ।  যেকোনো সম্পর্কের শেষের সময়টুকুতে আমরা ভেঙে পড়ি। দোষ-ত্রুটি আর ব্যর্থতাকে ধারণ করে জীবনকে অবসাদময় করে তুলি, যা আসলে ঠিক নয়। সম্পর্কচ্ছেদে মন খারাপ হতেই পারে, কিন্তু সেই মন খারাপ কখনোই দীর্ঘ সময় ধরে রাখা যাবে না। নিজের  জীবন বিকাশের জন্য সামনে পা বাড়াতে হবে। আপনি যদি নিজের মনকে বুঝতে পারেন, তাহলে যেকোনো দ্বিধা কাটিয়ে সামনে যেতে পারবেন। সম্পর্কচ্ছেদ নিয়ে বেশ কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখা উচিৎ।

দোষ-ত্রুটি নিয়ে ভাববেন নাঃ

সম্পর্কচ্ছেদের পরে আমরা সবচেয়ে বেশি ভাবি কার দোষ কিংবা কে দায়ী। মনের সঙ্গে লড়াই করে আমরা ব্যর্থতার জন্য কারণ খুঁজে বের করি। নানা কারণেই সম্পর্ক ভেঙে যেতে পারে, কিন্তু তাই বলে দোষ-ত্রুটি খুঁজে নেতিবাচক আচরণ করবেন না। দোষ-ত্রুটি মনে আসতে পারে, তা কাটিয়ে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই কিন্তু জীবন।

এগিয়ে যেতে হবেঃ

যত দিনের সম্পর্ক থাকুক না কেন, কিংবা যত গভীর সম্পর্ক থাকুক না কেন, আপনাকে এগোতেই হবে। আপনি যদি অতীতের কথা ভাবতে থাকেন, তাহলে আরও বেশি হতাশাগ্রস্ত হবেন, কষ্ট পাবেন। রাতের পর রাত জেগে অতীতের সুন্দর সময়ের কথা ভাবলে আপনি আপনার বর্তমানকে নষ্ট করবেন। বর্তমান নষ্ট হলে কি আর দারুণ ভবিষ্য তৈরির সুযোগ থাকে, বলুন।

নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া থাকতে হয়ঃ

সম্পর্কচ্ছেদ মানেই কিন্তু ব্যর্থতা নয়। নিজের মনের সঙ্গে কথা বলুন। নিজেকে বোঝার চেষ্টা করুন। এমন অবস্থায় আপনিই কিন্তু আপনার সবচেয়ে বড় সহায়। সম্পর্ক ভেঙে নিজেকে অপরাধী কিংবা দোষী ভেবে নিজেকে ছোট ভাবা ঠিক নয়। জীবনে অন্য সব সাফল্য-ব্যর্থতার মতোই সম্পর্কচ্ছেদকে ভাবুন।

ক্ষমা করতে শিখুনঃ

বিচ্ছেদের পর আমরা নিজেকে ক্ষমা করি না, নিজেই যেন নিজের শত্রু হয়ে যাই। আবার যে মানুষটিকে ভালোবাসতাম, তাকেও অপরাধী হিসেবে কল্পনা করতে থাকি, যা মোটেও ঠিক নয়। ওপাশের মানুষটিকে ক্ষমা করে, নিজের দুর্বলতা কাটিয়ে নতুন করে সামনে পা বাড়াতে শিখুন।

নিজের পায়ের ওপর দাঁড়াতে শিখুনঃ

বিচ্ছেদের পরে নিজেকে একাকী ভাবা শুরু করি আমরা। বন্ধুবান্ধব ও পরিবার থেকেও বেশ দূরে সরে যাই। এ সময়টায় নিজেকে নতুন করে চেনার চেষ্টা করুন। অতীতের গোলকধাঁধায় নিজেকে আটকে রাখবেন না। নিজের পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করুন।

নিজেকে শ্রদ্ধা করুনঃ

সম্পর্ক বিচ্ছেদের পরে নিজেকে ছোট আর দুর্বল মনে হয়। এটা কখনো ভাববেন না। জীবনে ব্যর্থতা আসবেই, নিজেকে কখনো অসম্মান করবেন না।

দৃঢ় চিন্তা করতে শিখুনঃ

সম্পর্ক থাকাকালীন ভবিষ্যৎ নিয়ে ইতিবাচক ভাবনা ভাবি আমরা, আর বিচ্ছেদ হলেই বিরহ। সম্পর্কের সমীকরণ ভেঙে গেলেও চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন আনবেন না। সব সময় ইতিবাচক ও সৃজনশীল ভাবনায় মনকে ব্যস্ত রাখুন।

সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া মানে জীবন শেষ নয়

ভালোবাসায় ভরা ছোট্ট একটা ঘরের স্বপ্ন কে না দেখে। কেউ হয়তো তার সঙ্গীর হাতে হাত রেখে সারা জীবন একসাথে চলার স্বপ্ন দেখে।কিন্তু সেই ভালোবাসার মানুষটি কিছুক্ষণের জন্য দূরে গেলে আমাদের পৃথিবীতে নেমে আসে অন্ধকার, সেখানে যদি ভালোবাসার মানুষটি সম্পর্কচ্ছেদ করে চলে যান তাহলে মানসিকভাবে ভেঙে পরাটা খুব স্বাভাবিক।ভালোবাসার মানুষটির সাথে বিচ্ছেদ যেনো জীবনটাকে থমকে দেয়।

কিন্তু ভেঙে পড়ে সারাজীবন তো আর থাকা যায় না।তাই আমাদের নিজেদেরকেই সামলে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে সামনে। নতুন ভাবে উঠে দাঁড়াতে হবে, ভুলে যেতে হবে পুরোনো ফেলে আসা স্মৃতি।এক্ষেত্রে প্রেম ও দাম্পত্য সম্পর্কে ভেঙে গেলে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে যা করবেন-

নিজেকে দোষারোপ করবেন না: একটা সম্পর্ক অনেকগুলো কারণেই ভেঙে যেতে পারে। অনেকদিনের সম্পর্ক অনেক গুরুতর কারণে অথবা অনেক ছোট কারণেও ভেঙে যেতে পারে। হতে পারে সেক্ষেত্রে দুই পক্ষের বোঝাপড়ার সমস্যা ছিল, অথবা যোগাযোগের ঘাটতি ছিল। কিন্তু কখনো ভুলেও নিজেকে সম্পর্ক ভাঙার জন্যে মনে মনে দোষারোপ করবেন না।

নিজেকে সময় দিন: সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর সাধারণত আমরা যে জিনিসটি করি, তা হলো খুব বেশি অস্থির হয়ে পড়ি, একটি সম্পর্ক ভাঙার হতাশা থেকে বের হতে না হতেই আরেকটা সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি। একটি ভাঙা সম্পর্ক থেকে কিন্তু আমরা শিখতে পারি পরবর্তীতে আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কী করণীয় বা কী বর্জনীয় হবে। তাই বিচ্ছেদের পর নিজেকে সময় দিন, নিজেকে আরও একটু ভালোবাসতে চেষ্টা করুন।  হুটহাট করে নতুন আরেকটি সম্পর্কে নিজেকে জড়িয়ে অবস্থা আরও জটিল করে তুলবেন না।

নিজের যত্ন নিন:  খেতে ইচ্ছে করবে না, ঘুম হবে না- এগুলো এ সময় খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু এই হতাশা থেকে বের হয়ে আসতে গেলে আপনাকে নিজের প্রতি আরও বেশি যত্নবান হয়ে উঠতে হবে। পরিমিত পুষ্টিকর খাবার খান, তাজা ফলমূল খান। ঘুমাতে চেষ্টা করুন আর অবশ্যই ব্যায়াম করুন। শরীর চনমনে থাকলে মন ভালো হতে সময় লাগবে না।

একা থাকবেন না: এই সময়টাতে আপনি যত বেশি একা থাকবেন, আপনার জন্যে সময়গুলো ততবেশি কষ্টদায়ক হয়ে উঠবে। তাই এই সময়গুলোতে একা না থেকে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে বের হোন। বন্ধুদেরকে না পেলে পরিবারের মানুষদের সঙ্গে সময় বের করে বেরিয়ে পড়ুন।

ভ্রমণ করুন, নতুন বন্ধু তৈরি করুন:  মনের ভার কমাতে এবং মাথা একদম পরিষ্কার করে ফেলতে ভ্রমণ সবসময়ই অনেক বেশি উপকারী। বন্ধুদের সঙ্গে শুধু কাছে-কূলে নয়, প্ল্যানিং করে নতুন কোনো জায়গায় ভ্রমণ করতে বেড়িয়ে পড়ুন। নতুন পরিবেশ, নতুন স্থান, নতুন মানুষ- আপনার মনের পুরাতন স্মৃতিগুলোকে হালকা করে দিতে সাহায্য করবে অনেকটাই।

নেতিবাচক চিন্তা বাদ দিন: সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর অনেক সময় বেঁচে থাকাও অর্থহীন মনে হতে থাকে। অনেকে আত্মহত্যার মতো আত্মবিধ্বংসী চিন্তা পর্যন্ত করতে শুরু করি। আপনাকে এই নেতিবাচক চিন্তার পুরোপুরি বিপরীতে যেতে হবে, প্রমাণ করতে হবে আপনি এতোটা দুর্বল, এতোটা ঠুনকো নন।

ইতিবাচক মনোভাব সম্পন্ন মানুষদের সাথে সময় কাটান: একটা সম্পর্ক ভেঙে গেলে একজন মানুষ মানসিকভাবে নিতান্তই ভেঙে পড়েন, এখন এই অবস্থার মধ্যে যদি আশেপাশের মানুষগুলো প্রতিনিয়ত চোখে আঙুল দিয়ে সবটা বার বার সামনে নিয়ে আসে অথবা কটু কথা বলতে থাকে, তাহলে ভাঙা মন আবার জোড়া লাগা সত্যিই অসম্ভব। চারপাশে ইতিবাচক ও সহায়ক মানসিকতা সম্পন্ন মানুষ থাকলে আপনি খুব দ্রুতই আবার নিজের উপর আস্থা ফিরে পাবেন।

অতীত কে অতীতেই থাকতে দিন:  যদি সত্যিই চেয়ে থাকেন অতীতের গ্লানি থেকে বের হয়ে আসবেন, তাহলে বারবার সেই অতীতেই ফিরে যাবেন না। শুধু চেষ্টা করুন অতীতের ভাঙা সম্পর্কটিকে একটি শিক্ষা হিসেবে নিতে, পাথেয় হিসেবে নয়।

দায়িত্ব নিতে শিখুন: যা হওয়ার তা তো হয়েই গিয়েছে, এবার নিজেকে বা ভালোবাসার মানুষটিকে দোষারোপ করে হা-হুতাশে জীবন অতিবাহিত না করে পরিবার, বন্ধু বা কাছের মানুষগুলোর ভালো থাকার জন্য ছোটখাটো দায়িত্ব নিন। যখন দেখবেন সামান্য কিছুতেই আপনি কারো মুখে হাসি ফোটাতে পারছেন তখন আর সব অপ্রাপ্তি এবং কষ্টগুলো ম্লান হতে থাকবে।

যা করতে ভালো লাগে তা-ই করুন: ভাঙা মন নিয়ে কোনো কিছুতে মনোনিবেশ করা অনেক কঠিন। কিন্তু সম্পর্ক ভাঙার হতাশা থেকে বের হয়ে এসে জীবনকে নতুনভাবে উপভোগ করতে চাইলে আপনাকে এসব কিছুর উপর আগ্রহ ফিরিয়ে আনতে হবে। আপনার যা মন চায়, যেভাবে আপনি নিজেকে আবার প্রাণোচ্ছল করে তুলতে সক্ষম বলে মনে হয়; সেটাই করুন। সহজ কথায়, নিজেকে ব্যস্ত রাখুন, দেখবেন হতাশা কাটতে শুরু করছে।

একটি সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া মানে জীবনের শেষ নয়, বরং নতুন করে আবার সবকিছু শুরু হওয়া। কিছুটা সময় নিয়ে নিজেকে আবার প্রস্তুত করুন, সমস্ত খারাপ চিন্তা-ভাবনার বিপরীতে গিয়ে নিজেকে প্রমাণ করুন। আপনার মধ্যে কী কী গুণ রয়েছে সেগুলোকে কাজে লাগান। কমপক্ষে এই সময় নিজের মনের কথাগুলো শুনুন, যদি মনে হয় ভেঙে যাওয়া সম্পর্কে আপনারও কিছু ভুল ছিল, তাহলে সেটা শুধরে নিতে চেষ্টা করুন। তবে ভুলেও সারাজীবনের জন্য নিজেকে অপরাধী করে রাখবেন না নিজের কাছে। এই মানুষই ভুল করে, আবার মানুষই নিজেকে শুধরে নেয়।  সংকলিত,সূত্র :নতুন সময়, রোয়ার মিডিয়া, দৈনিক আমাদের সময়