যৌনতা, বিয়ে ও সামাজিকতা

যৌনতা মানব জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। স্বীকার করুন অথবা নাই করুন জীবনে যৌনতার রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এটি মানুষসহ সকল জীবের অন্যতম চাহিদাগুলোরও একটি। একজন নারী ও পুরুষ বারো থেকে চৌদ্দ বছর বয়সপ্রাপ্ত হলেই তার যৌন চাহিদা দেখা দিতে থাকে। ফলে সে মনে মনে এই চাহিদা মেটানোর উপায় নিয়ে ভাবতে থাকে। এই চাহিদা কোন প্রক্রিয়ায় মেটানো সম্ভব? সকল সমাজ, সকল ধর্ম একটিই বৈধ ও প্রচলিত পন্থা এ ক্ষেত্রে আবিষ্কার করেছে। সেটি হচ্ছে ‘বিয়ে’। বিয়ের মাধ্যমে মানুষ তার যৌন চাহিদা পূরণ করে। সঠিক সময়ে বিয়ে করা যৌন সংক্রান্ত  কেলেঙ্কারী কিংবা দুর্ঘটনাসমূহ রোধের একটি অন্যতম উপায়। কাজেই আমাদের সমাজে বিয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বিভিন্ন দিক দিয়ে।

সভ্যতার আদি থেকেই যৌন চাহিদা মেটানোর জন্য সমাজ পতিতালয় তৈরি করেছে। সেখানে নিয়মিত যাতায়াত করেন কিছু কুরুচিপূর্ণ মানুষ। তারা  সেভাবেই শারীরিক চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু যৌনতা কি শুধু শারীরিক বিষয়? যৌনতা কি শুধু যে কোন নারী বা পুরুষের সাথে একটি নির্দিষ্ট সময় কাটিয়ে শরীর হাল্কা করা? সেটি পশুত্বের সামিল। যৌনতা মানব সৃষ্টির জন্য একটি বিশেষ কর্ম। এখানে শরীর, মন, আন্তরিকতা, পরস্পরের চাহিদা এবং এক ধরনের আত্মিক বিষয় জড়িত। এজন্যই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে গড়ে ওঠে এক গভীরতম সম্পর্ক। অথচ বিয়ের পূর্বে তাদের সাথে কোনো ধরনের পরিচয়ই হয়তো ছিল না।

যুগ ও অর্থনীতির চাহিদার কারণে আমাদের দেশ থেকে প্রচুর মানুষ বিদেশ যায়। কেউ যাচ্ছেন অর্থ উপার্জন করতে, কেউ উচ্চতর শিক্ষার জন্য। যে কারণেই  যাওয়া হোক না কেন এখানে যৌন বিষয়ে কি কোন সমাধানের কথা বলা আছে? নেই। এক বছর দুই বছর কিংবা তারচেয়েও বেশি সময় একজন পুরুষ বা একজন স্ত্রী কীভাবে নিজেদের যৌন চাহিদা মেটাবে একে অপরের অনুপস্থিতিতে? বিষয়টি বেমালুম সবাই ভুলে যান। ফলে নেমে আসে এক অশান্তি ও অবিশ্বাস। আমরা এমন ভান করি এসব ক্ষেত্রে যেন সব কিছু ঠিকঠাক আছে, স্বামী-স্ত্রী একে অপরের কাছ থেকে দূরে থাকা কোনো বিষয় নয়। বিশেষ করে যারা বিবাহিত। আর যারা বিয়ে করেনি আমরা ধরেই নিয়েছি যে, তারা একটু উল্টা-পাল্টা করবেই। এই উল্টাপাল্টা মানে এক ধরনের বিশৃংখলা। কিন্তু সবাই কেন জানি এ বিষয়টিও মেনে নিচ্ছি।

যৌনতা যাতে পশুত্বে পরিণত না হয় সেদিকে আমাদের বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে। কোনো পশু একমাত্র কুকুর ছাড়া যৌনক্রিয়া করার সময় একটু আড়াল খোঁজে, আড়ালে কাজটি সম্পাদন করে। অথচ পশ্চিমা দেশগুলোতে এবং পশ্চিমা দেশগুলোর আদলে প্রাচ্যের যেসব দেশ এগিয়ে যাচ্ছে সেসব দেশেও যৌনতা খোলামেলাভাবে প্রদর্শিত হচ্ছে, এটি কি খুব আনন্দের বিষয়? চীনেও দেখা যায় হাজার হজার লোকভর্তি ট্রেনে প্রেমিক-প্রেমিকা সবার সামনে দিবালোকে গভীর চুম্বনরত। পার্কে একটি মেয়েকে সবার সামনে কোলের ওপর বসিয়ে রেখেছে। আমি বেইজিংয়ের হোটেল রুমে বসে বসে দেখলাম রাস্তার পাশে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে ঘন্টাখানেকের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন ধরনের যৌনকাজ সম্পন্ন করল। তারপর সন্ধ্যা হয়ে এলো, পরে আর স্পস্ট দেখা গেল না। চীন এশিয়ার একটি দেশ। এটি পশ্চিমা কোনো ধনী দেশ নয়, সেখানেই এই অবস্থা আধুনিকতার নামে!  প্রকাশ্য দিবালোকে এবং সূর্য ডোবার আগে এগুলো কী হচ্ছে? আমাদের দেশের বিভিন্ন পার্কে যাবেন কম-বেশি অশ্লীল দৃশ্য চোখে পড়ে। পশ্চিমা দেশ থেকে আগত এসব কালচার কতটা আমাদের সাথে মানানসই? আমেরিকার বিভিন্ন সিটিতে ছেলেমেয়ে চলতে দেখা যায়, হাতে হাত ধরে কিংবা আরও কাছাকাছি কিন্তু সরাসরি প্রকাশ্যে যৌনতা প্রদর্শন খুব একটা চোখে পড়েনি। তবে বিষয়টি তারা সঠিক পথে পরিচালিত করছে না। আর তাই সেখানে পারিবারিক বন্ধন সাময়িক ব্যাপার, অত্যন্ত ঠুনকো। সেখানে লিভ টুগেদার প্রচলিত আর লিভ টুগেদার মানেই তো এক ধরনের বিকৃত অভ্যাস। কিছু কিছু স্টেটে প্রকাশ্যেই দেখা যায়, কোথাও হয়ত একটু রিজার্ভ। তবে কানাডাতে শপিং মলগুলোতে কিংবা রোস্তোরাঁয় প্রকাশ্যে চুম্বনের বিষয়টি প্রত্যক্ষ করেছি। কিন্তু তাদের অনুসারী দেশগুলো যেন দুই ধাপ এগিয়ে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের আগে হিলারী বলেছিলেন, তিনি নারীদের ‘গর্ভপাত’ করার আইন বহাল রাখবেন। এখানে যৌনতা ব্যাপারটি এত অবাধে চলে যে, যে কোনো সময় যে কোনো নারী গর্ভবতী হতে পারে। যেহেতু বাবার কোনো ঠিক থাকবে না কিংবা ফ্রি থাকার জন্য অসংখ্য নারী এখানে গর্ভপাত করেন। আমি দেখেছি কিছু ধর্মীয় সংগঠন এই গর্ভপাতের বিরুদ্ধে ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে  কিংবা ব্যানার টানিয়ে রেখেছে। এদের যৌন আচরণ পুরোপুরি আলাদা।

বিবাহ বিডি কল
বিবাহ বিডি কল সেন্টারঃ +৮৮ ০১৯২২১১৫৫৫৫

একটি সুখের সংসারে অবহেলিত যৌনতা মারাত্মক করুণ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। এর মূল কারণ হচ্ছে যৌনতা সম্পর্কে স্বামী কিংবা স্ত্রীর উদাসীনতা। যে সংসারে স্ত্রী তার স্বামীকে কিংবা স্বামী তার স্ত্রীর যৌনসুখ মূল্যায়ন করে না, উদাসীন থাকে সেখানেই দেখা দেয় সমস্যা। স্ত্রী সুযোগ পেলে অন্য পুরুষের এবং স্বামী সুযোগ পেলে অন্য মেয়ের সান্নিধ্য পেতে চাইবে, এটাই স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়ায় তখন। প্রথম দিকে চুপি চুপি কিছু করা হলেও পরে তা বিদ্রোহী রূপ নেয় এবং এক সময় সংসারভাঙ্গা, হত্যা ইত্যাদি পর্যন্ত গড়ায় আর সংসার যদি টিকিয়ে রাখার চেষ্টাও করা হয় তাহলে সেটি  চলে অবিশ্বাসের মধ্যে, এক ধরনের ধোঁয়াশার মধ্যে । কাজেই স্বামী স্ত্রী উভয়কেই এই বিষয়ে সজাগ ও সচেষ্ট থাকা দরকার।

যৌনতা প্রাকৃতিক বিষয়, মানুষের অত্যাবশ্যকীয় চাহিদা। এখানে শরীর ও মনের সাথে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। একটি ছাড়া অপরটি প্রকৃত সুখকর, উপভোগ্য এবং সার্থক হয় না। তাই প্রাকৃতিক নিয়মেই এটি সম্পন্ন করতে হয়। মানুষ যখন এটি অবাধে, স্বেচ্ছারিতার মনোভাব নিয়ে ভোগ করার চেষ্টা করে, বিকৃত যৌনাচারে লিপ্তা হয় প্রকৃতি তখন বিরূপ হয়। যেমন অবাধ যৌনাচার ও বহুগামিতা মানুষের জন্য মরণব্যাধি ‘এইডস’ নিয়ে এসেছে। বিশ্বের মানুষকে এক ভীতিকর অবস্থায় নিক্ষিপ্ত করেছে। এ থেকে উত্তরণের জন্য সঠিক পারিবারিক এবং বৈধ যৌনচার করার জন্য পশ্চিমা চিকিৎসকগণ তাদের দেশের মানুষদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। সুস্থ যৌনতাই এর একমাত্র সমাধান। পশ্চিমা গবেষকরা  আবিষ্কার করেছেন যে, সুস্থ যৌনচারই এইডস-এর মতো মরণব্যাধি এড়ানোর সঠিক পথ যা আমাদের সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ইদানিং সমকামিতা নামে আর এক যথেচ্ছারিতা, অবাধ ও বিকৃত যৌনাচার শুরু হয়েছে। এর ব্যাপ্তি গোটা বিশ্বে। এটি প্রকৃতিবিরোধী কাজ। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ, বিপরীত লিঙ্গের সাথে মিলন তো প্রকৃতির অবদান, প্রাকৃতিক সুখ ও তৃপ্তি সেখানে নিজেদের তৈরি নিয়ম পুরুষে-পুরুষে, নারীতে-নারীতে যৌনক্রিয়া সেটি কতবড় কুরুচির পরিচয় তা মানুষ হিসেবে আমাদের ভেবে দেখা উচিত!

যৌনতা এক তরফা বিষয় নয়। এখানে উভয়ের মতামত, ইচ্ছে, আগ্রহ এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন। একজনের ইচ্ছে, আগ্রহ বা অংশগ্রহণ এই ক্রিয়াকে সাফল্যমণ্ডিত করতে পারে না। বিষয়টি উপভোগ্যও হয় না। সঠিক যৌন তৃপ্তি ও প্রাকৃতিক চাহিদা মেটানোর জন্য দুজনকেই পালন করতে হয় সক্রিয় এবং আগ্রহী ভূমিকা। যে সংসারে  স্বামী-স্ত্রী দুজনই ব্যাপারটিতে সমভাবে আগ্রহী, সেখানে অবিশ্বাস ও হতাশা জন্ম নেওয়ার স্থান নেই। জীবন হয়ে ওঠে উপভোগ্য, আনন্দের ও সার্থক। তারা পারিবারিক, সামাজিক, ধর্মীয় যে কাজই করুক না কেন অত্যন্ত আনন্দের সাথে, তৃপ্তির সাথে এবং সার্থকভাবে তা করতে পারে। ফলে ধীরে ধীরে সাফল্যের শীর্ষে যেতে পারে। আর যে সংসারে একজন এ বিষয়ে অনাগ্রহী থাকে, উদাসীন থাকে তারা জীবন উপভোগ করতে পারে না সঠিকভাবে। মনোযোগ সহকারে কোনো কাজ করতে পারে না। জীবনকে সাফল্যের দিকে নিতে হলে স্বামী-স্ত্রীকে যৌনতা বিষয়ে সমভাবে আগ্রহী এবং সক্রিয় হতে হবে।  সুত্র ।| লেখকঃ মাছুম বিল্লাহ

প্রকাশ করেছেন

Best Marriage Media Bangladesh

Best Marriage Media in Bangladesh | Bibahabd is the Leading Bangladeshi Matrimony website, Provides online and offline matchmaking service for marital relationship.