খ্রিস্টান ম্যারেজ অ্যাক্ট – খ্রিস্টান বিবাহ আইন

মুসলিম প্রাপ্ত বয়স্ত নর-নারীর লিখিত চুক্তির মাধ্যমে বিয়ে সম্পাদিত হয়। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের কাছে বিয়ে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও পবিত্র চুক্তি। তাদের বিয়ে লিখিত মাধ্যমে সম্পাদিত হয়। বাধ্যতামূলকভাবে করতে হয় রেজিস্ট্রি। খ্রিস্টান  বিয়েতে রেজিস্ট্রেশন ও আইনগত যে বিধান রয়েছে তাতে স্বামী -স্ত্রী উভয়েরই স্বার্থ রক্ষার কথা বলা হয়েছে। 

বাংলাদেশে ১৮৭২ সালের খ্রিস্টান ম্যারেজ অ্যাক্ট (খ্রিস্টান বিবাহ আইন) অনুযায়ী, খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের বিয়ে সম্পাদিত হয়। তাদের বিয়ে রেজিস্ট্রি করার আগে কিছু নিয়ম পালন করতে হয়, যা অন্যান্য ধর্মের চেয়ে কিছুটা আলাদা।

আসুন জেনে নেই খ্রিস্টান বিয়েতে রেজিস্ট্রেশন করার আগে বাধ্যতামূলক বিষয়গুলো। 

গির্জার  কাছে নোটিশ

বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের আগে পাত্রপাত্রীর পুরো নাম, ডাক নাম, পেশা বা অবস্থা ও বাসস্থানের ঠিকানা গির্জার কাছে নোটিশ আকারে দিতে পাঠাতে হবে। নোটিশ প্রাপ্তির পর গির্জার যাজক নোটিশটি খোলা জায়গায় টানিয়ে দেবেন যাতে বিষয়টি সবার নজরে আসে।

আপত্তি বিবেচ্য

পাত্র ও পাত্রী পক্ষের পাঠানো নোটিশ কয়েক সপ্তাহ ঝোলানো থাকবে। নোটিশের কোনো বিষয়ে আপত্তি থাকলে তা গির্জায় জানাতে হবে। আর আপত্তি না পেলে গির্জার প্রধান বিয়ের দুটি পক্ষের কাছ থেকে একটি ঘোষণা গ্রহণ করবেন। এছাড়া এই ঘোষণাটি বিয়ের পক্ষগুলো ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির হয়ে দেবেন। সেই ঘোষণায় কিছু বিধিনিষেধ আছে যা দুই পক্ষকে পূরণ করতে হবে।


আত্মীয়তা বা রক্তের সম্পর্ক

পাত্র-পাত্রীর মধ্যে বিবাহ বা আত্নীয় সম্পর্কের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। পাত্রপাত্রীর মধ্যে জানা মতে এমন কোনো ঘনিষ্ঠ আত্মীয়তা বা রক্তের সম্পর্ক নেই যাতে তাদের বিয়েতে আইনসম্মত বাধা আছে।

পাত্র-পাত্রী সাবালক

বিয়ের জন্য পাত্র-পাত্রীকে অবশ্যই সাবালক হতে হবে। পাত্র-পাত্রী যদি সাবালক না হয় তবে বিবাহ আইননত বৈধ হবে না। 

এই ঘোষণা সম্পন্ন হওয়ার কমপক্ষে চারদিন পর গির্জার যাজক বিয়ের আবেদনকারীকে একটি সার্টিফিকেট দেবেন। সেই সার্টিফিকেট জারির দুই মাসের মধ্যে বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।

খ্রিস্টীয় বিয়ের রীতিনীতি

বিয়ে একটি পারিবারিক বন্ধন। বিয়ের মাধ্যমে দুই হাত এক করে নেয়া হয় সারাজীবন একসঙ্গে চলার শপথ।

এছাড়া বিয়ে রেজিস্ট্রেশন ও আইনগত যে বিধান রয়েছে তাতে স্বামী -স্ত্রী উভয়েরই স্বার্থ রক্ষার কথা বলা হয়েছে। ধর্মগত কারণে মুসলমান, হিন্দু ও খ্রিস্টান ধর্মের বিয়েতে রীতিনীতি আলাদা।

তবে আমাদের দেশে খ্রিস্টীয় বিয়েতে দেশীয় রীতি, কৃষ্টি ও সামাজিক মূল্যবোধ উপলব্ধি করে লোকাচার ও স্ত্রী আচার মিলে একটি নান্দনিক, আনন্দময় ও সুন্দর রূপ দেয়া হয়েছে। আসুন জেনে নিই খ্রিস্টীয় বিয়ের রীতিনীতি।

কনে নির্বাচন: খ্রিস্টান বিয়েতে সবার প্রথমে যে কাজটি করা হয় সেটি হলো কনে নির্বাচন। বরপক্ষ সাধারণত কনের চরিত্র, দোষ-গুণ, বংশ পরিচয় জেনে কনে নির্বাচন করে থাকেন।

প্রস্তাব : কনে পছন্দ হওয়ার পর শুভদিন দেখে বরপক্ষ কনের বাড়ি যায়। তাদের উদ্দেশ্যের কথা জানায় ও বিয়ের প্রস্তাব দেয়।

বাগদান: বর ও কনেপক্ষ রাজি থাকলে বাগদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বাগদান উপলক্ষে পান, সুপারি, বিজোড়সংখ্যক মাছ আয়োজন থাকে।

আশীর্বাদ গ্রহণ: এই অনুষ্ঠানে বরপক্ষের লোকজন কনের বাড়িতে যায়, যা আগেই কথা বলে ঠিক করে রাখা হয়। এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত বর-কনে সবার আশীর্বাদ গ্রহণ করে।

নাম লেখা: বিয়ের ৩ সপ্তাহ আগে কনের বাড়িতে পুরোহিতের কাছে বর-কনে নাম লেখান। অনেকে এ অনুষ্ঠানে আতশবাজি ও বাজনার আয়োজন করে।

বান প্রকাশ: এই অনুষ্ঠানে বর-কনে বিয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়। মণ্ডলীর বিধি অনুযায়ী এ সময় বিয়ের ক্লাস করতে হয়। এটি বিয়ে-পূর্ব ব্যাধতামূলক ক্লাস ব্যবস্থা।

অপদেবতার নজর: নাম লেখা থেকে শুরু করে বিয়ের আগ পর্যন্ত বর-কনেকে অতি সংযমী জীবন করতে হয়।

অনেকে এ সময় ভূত-প্রেত ও অপশক্তির নজর থেকে রক্ষার জন্য ‘রোজারি মালা’ বা ‘জপমালা’ গলায় পরেন।

খ্রীষ্টান ধর্মাবলম্বী বিয়ে
খ্রীষ্টান ধর্মাবলম্বী বিয়ে

কামানি বা গা-ধোয়ানি:

বিয়ের আগের রাতের অনুষ্ঠানকে গা-ধোয়ানি বলে। অনেক খ্রিস্টান সমাজে এই দিন গায়েহলুদ মাখিয়ে জাঁকজমকের সঙ্গে অনুষ্ঠান করা হয়।

কনে তোলা:

বিয়ের দিন ভোরে বাদকদলসহ বরের আত্মীয়স্বজন কনের বাড়ি গিয়ে কনেকে নিয়ে আসে। কনেকে ঘর থেকে আনার সময় তার হাতে পয়সা দেয়া হয়।

কনে বাড়ি থেকে আসার সময় সেই পয়সা ঘরের মধ্যে ছুড়ে ফেলে। এর অর্থ হলো যদিও সে বাড়ি থেকে চলে যাচ্ছে, তারপরও বাড়ির লক্ষ্মী ঘর থেকে চলে যাচ্ছে না।

গির্জার অনুষ্ঠান:

শুরুতে গির্জার প্রবেশপথে যাজক বর-কনেকে বরণ করে নেয়। তারপর বর-কনে দুজনের মধ্যে মালাবদল করা হয়। এরপর কনের সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দেয়া হয়।

ঘরে তোলা:

এই অনুষ্ঠানে উঠানের দিকে মুখ করে বড় পিঁড়ির উপরে বর-কনেকে দাঁড় করানো হয়। এরপর বর-কনে সাদা-লাল পেড়ে শাড়ির উপর দিয়ে হেঁটে ঘরে ওঠে। এ সময় বর ও কনে একে অপরের কনিষ্ঠ আঙুল ধরে থাকে।

ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বিয়ের ক্ষেত্রে ১৮৭২ সালের বিশেষ বিয়ে আইন রয়েছে। এই আইন অনুযায়ী বিশেষ বিয়ের জন্য একজন রেজিস্টার থাকে।

প্রথমত বৈধ বিয়ে করা হচ্ছে এই হিসেবে এফিডেভিট করতে হয়, পরে রেজিস্টারের কাছে হলফনামা জমা দেয়।

এর ১৪ দিন পর একটি নোটিশ দেয়া হয়। পরে নোটিশ নিয়ে রেজিস্টারের কাছে গেলে বিয়ে নিবন্ধিত করা হয়

কেন বিবাহবিডিতে জীবনসঙ্গী খুঁজবেন!

বিয়ে একটি অত্যন্ত পবিত্র বন্ধন। মনে করা হয় দুটি মানুষের এই বন্ধন জন্ম জন্মান্তরের। সামাজিক নিয়মে এ বন্ধনে আবদ্ধ হয় দুজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী ও পুরুষ। বিয়ে শুধু দুজন ব্যক্তির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তৈরী করে দুটি পরিবারের মধ্যে সামাজিক বন্ধন।

বিয়ে নিয়ে মানুষের মনে স্বাভাবিক ভাবেই থাকে নানান আশা ও স্বপ্ন, থাকে উত্তেজনা, চিন্তা দুশ্চিন্তা ও ভাবনা। আবার বিয়ের ব্যাপারে অনেকেই মানুষিক ভাবে নিজেকে প্রস্তুত করতে পারে না। এর প্রধান ও অন্যতম কারন হলো পছন্দ মত যোগ্য জীবনসঙ্গী খুঁজে না পাওয়া।

দীর্ঘ ১ যুগের বেশী সময় ধরে আমরা এই সমস্যাটির সহজ ও দ্রুত সমাধান দিচ্ছি – বাংলাদেশী ও প্রবাসী পাত্রপাত্রী সন্ধানের জন্য সম্পূর্ন অনলাইন ভিত্তিক ২৪ ঘন্টা কল সেন্টার সার্ভিস নিয়ে সর্বোক্ষনিক সেবা নিশ্চিত করছে বিবাহবিডি ডট কম সার্ভিস টিম।

বিবাহবিডি ডট কম একটি অনলাইন বেইজড সার্ভিস ওয়েব পোর্টাল। এ পোর্টালের সদস্য হয়ে আপনি নিশ্চিত খুঁজে পেতে পারেন আপনার পছন্দমত যোগ্য জীবনসঙ্গী।

আসুন জানি কেন বিবাহবিডিতে পাত্রপাত্রী খুঁজবেন
বিবাহবিডি সম্পূর্ন অনলাইন ভিত্তিক সেবা নিশ্চিত করে। অনলাইনের মাধ্যমে ঘরে বসেই বিবাহবিডি ডট কম আপনার পছন্দমত পাত্রপাত্রী খুঁজে দিতে সহায়তা করবে।

বিবাহবিডি পোর্টালে লগ ইন করে পছন্দের প্রফেশন, পাত্র-পাত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, জেলা / এলাকা ভিত্তিক, প্রবাসী, বৈবাহিক অবস্থা (যেমন – অবিবাহিত, ডিভোর্স, বিধবা অথবা বিপত্নীক), ধর্ম, গোত্র, বর্ণ সহ ১৮ টি সার্চ ক্যাটাগরীর মাধ্যমে চাহিদা অনুযায়ী আপনার কাংখিত সংঙ্গীকে সহজেই খুঁজে সরাসরি নিজেরাই যোগাযোগ করতে সক্ষম হবেন।

বিবাহ বিডি প্রোফাইল এক্টিভেট/সক্রিয় করার পূর্বে নিজস্ব কাষ্টমার সাপোর্ট টিম তা তিন স্থরের ভেরিফাই করে ।

পাত্র-পাত্রীর প্রোফাইল ভেরিফিকেশনের জন্য জাতীয় পরিচয় পত্র / জন্ম নিবন্ধন / একাডেমিক সার্টিফিকেট/ প্রবাসীদের জন্য ভিসা, পাসপোর্ট / ডিভোর্সদের জন্য ডিভোর্স সার্টিফিকেট যাচাই করে বিবাহবিডিতে একটি প্রোফাইল একটিভ করা হয় যার ফলে আপনি একজন পাত্র/পাত্রী পরিচয় বিষয়ক সঠিক তথ্য পাবেন।

বিবাহ বিডি ডট কম এর ব্যাপ্তি বিশ্বব্যপী এবং এটি সমকালীন একটি আধুনিক সেবা। তাই বিশ্বের যেকোন দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাত্র-পাত্রী বা অভিভাবকগন প্রোফাইল দেখে নিজেরাই সরাসরি পাত্র/পাত্রী বা কাংখিত প্রোফাইলের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

বিবাহবিডি থেকে আপনি জীবনসঙ্গীর খোঁজ পাবার পর বিবাহবিডি আপনার কাছে কখনোই কোন সার্ভিস চার্জ দাবি করবেনা। বরংচ বিবাহবিডিতে আপনার সাক্সেস ষ্টোরী শেয়ার করলে বিবাহবিডিই আপনাকে অভিনন্দন জানিয়ে আপনার ঠিকানায় গিফট পাঠাবে।

সার্ভিস সংক্রান্ত যেকোন তথ্য ও সাপোর্টের জন্য ২৪ ঘন্টা ৭ দিনই হট লাইন ইউজার সাপোর্ট প্রস্তুত থাকে ।

আপনি বিবাহবিডিতে প্রোফাইল রেজিষ্ট্রেশন করার আগেই জানতে পারবেন আপনার চাহিদা অনুযায়ী কতজন সম্ভাব্য পাত্র পাত্রী বিবাহবিডিতে রয়েছে।তাই আপনার অথবা আপনার পরিবারের কোন সদস্যের জন্য যদি পাত্র/পাত্রী খুঁজে থাকেন তাহলে নিশ্চিন্তে বিবাহবিডি ডট কম ওয়েব পোর্টালে রেজিষ্ট্রেশন করুন। বিবাহবিডি ডট কম একটি নিরাপদ ও বিশ্বাসযোগ্য ওয়েব পোর্টাল ২৪ ঘন্টা / ৭ দিনই হট লাইন ইউজার সাপোর্ট প্রস্তুত থাকে।

পাত্র বাছাইয়ে নারীদের যেমন পুরুষ পছন্দ

একজন মানুষের গুণাগুণ মাপার শর্টকাট কোন যন্ত্র নেই । সৎ ও আদর্শবান মানুষ হতে হলে কী কী গুণাবলী থাকা দরকার এ বিষয়ে হাজারো মন্তব্য পাওয়া যাবে। তারপর যখন আরো একটু বিস্তারিত ভাবে জানতে চাইবেন যে, একজন পুরুষের মধ্যে কী কী গুণাবলী থাকা উচিৎ; সেখানেও নানান মন্তব্য পাওয়া যাবে। একজন পুরুষ যেমন একজন সুন্দরী, শিক্ষিত ও ব্যক্তিত্ববান নারী পছন্দ করেন।  তেমনি একজন নারীও চান তার সঙ্গীটি সৎ, ব্যক্তিত্ববান এবং বিশ্বস্ত হবেন।

পৃথিবীতে সমস্ত গুণাবলীর ভাণ্ডার নিয়ে কোনো পুরুষই জন্মায়নি।  সবদিক থেকে গুণাবলীসম্পন্ন পুরুষ সঙ্গী মেলা ভার। কিছু মৌলিক জিনিস আছে যেগুলো নারী-পুরুষের চাওয়ার মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। তবে পাওয়ার মধ্যে অনেক অনেক পার্থক্য আছে।  সবার দৃষ্টিভঙ্গি কিন্তু এক নয়। আপনার চোখে যা সুন্দর অন্যের চোখে তা তেমন সুন্দর নাও হতে পারে।  নারীর পছন্দ, অপছন্দ চাওয়া-পাওয়া ইত্যাদির বিস্তর সন্ধান করেছেন গবেষকরা।  অনাবৃত রয়েছে অনেক রহস্য।

অস্ট্রেলিয়ান মনোবিজ্ঞানী সিগমন্ড ফ্রয়েড মনে করেন, মেয়েদের মন পুরুষদের চেয়ে অনেক পরিষ্কার থাকে। আর সে কারণে মেয়েরা তাদের মনটাকে ঘন ঘন বদলান। আবার তাদের অনেক প্রিয় বিষয় আছে যা তারা একেবারেই বদলান না।

একজন নারী সঙ্গী বা পাত্র বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোন কোন গুণাগুণ যাচাই করেন তারই কিছুটা –

শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ পাত্র নির্বাচনের জন্য অনেক তোড়জোড় দিয়েই শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখা হয়। কারণ শিক্ষাগত যোগ্যতার সাথে ক্যারিয়ার জড়িত থাকে। সামাজিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত পাত্র না হলে এবং ভালো ক্যারিয়ার না থাকলে পাত্রীর বাবা মা বিয়ে দিতে চান না। কিন্তু বর্তমান ক্যারিয়ারের পাশাপাশি ক্যারিয়ার ভিত্তিক চিন্তা ভাবনা, যোগ্যতা এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যতটাও দেখা উচিত।

সঠিক বয়সের পার্থক্য: আজকাল অনেকে এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেন না। সমবয়েসি কিংবা পাত্রী বড়ও বিয়ে করে থাকেন। কিন্তু স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী পাত্রের পাত্রীর চাইতে ৩-৫ বছরের বয়সের পার্থক্য থাকা উচিত। কারণ সাইকোলজিস্টদের মতে মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের ম্যচিউরিটি একটু দেরিতে আসে।

শারীরিক সুস্থতা: অনেকেই শুধুমাত্র বাহ্যিক সৌন্দর্য, বয়স, ক্যারিয়ারের কারণে পাত্র পছন্দ করে ফেলেন। কিন্তু বয়সের আগে শারীরিক সুস্থতা নিয়ে সচেতন হওয়া উচিত। এর মানে এই নয় যে সাধারণ বিষয় ধরে বসে থাকা উচিত। ভবিষ্যৎ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভেবে পাত্র/পাত্রীর সুস্থতার পরীক্ষা গুরুত্বপূর্ন।

মানবিক গুণাবলী: মানুষটির মানবিক মূল্যবোধ কতোটা ভালো তা পরীক্ষা করে দেখা দরকার। কারণ নিজের চাইতে ছোটো এবং পজিশনের ছোটো মানুষের প্রতি তার আচরণ খারাপ হলে তার মানসিক এবং মানবিক মূল্যবোধ না থাকারই কথা। এবং এই ধরণের মানুষের সাথে সংসার পাতা যায় না।

ব্যক্তিত্ববান : আপনি দেখতে আকর্ষণীয় নাও হতে পারেন, কিন্তু ব্যক্তিত্ববান তো হতে পারেন। ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন পুরুষদের নারীরা বেশি পছন্দ করে থাকেন। কারণ ব্যক্তিত্ববান পুরুষ সঙ্গীর পাশাপাশি অন্যের দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম।

সৎ এবং বিশ্বস্ত : সঙ্গী সৎ এবং বিশ্বস্ত হবে এমনটা প্রতিটি নারী আশা করেন। তারা চান সঙ্গী যেন অবশ্যই সৎ ও স্মার্ট হয়।  নারীরা সততার মাপকাঠিতে পুরুষকে সবার আগে যাচাই করেন তার বিশ্বস্ততা। এ ক্ষেত্রে সবসময় আপনার সঠিক অবস্থানটাই জানান। এতে তার মধ্যে বিশ্বস্ততা তৈরি হবে।

পরিপক্ষ ও শান্ত স্বভাবের : লক্ষ্য করে দেখুন তিনি কতোটা খোলা মানসিকতার মানুষ। কারণ মানসিকতা যদি ছোটো হয় তাহলে আপনার ব্যক্তিস্বাধীনতায় তিনি হস্তক্ষেপ করবেন এবং আপনার ওপর কারণে অকারনে সন্দেহের দৃষ্টি দেবেন। তাই এই ধরণের মানুষ নির্বাচন করে বসবেন না। সাধারণত নারীদের মানসিক পরিপূর্ণতা পুরুষের আগে আসে। নারীরা চান তার পুরুষ সঙ্গীটি যেন মানসিকভাবে পরিপক্ক এবং শান্ত স্বভাবের হন। ভালোবাসার ক্ষেত্রে আবেগ প্রকাশ করেন এবং একইসঙ্গে সাহস করে সিদ্ধান্ত নেয়ার যোগ্যতা থাকে। এক কথায় নারীরা তার সঙ্গীর ওপর নির্ভর করতে পছন্দ করেন। তাই মুহূর্তে মুহূর্তে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা পুরুষের সঙ্গ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখুন।

কিছুটা হলেও হাসিখুশি মেজাজের: অনেকেই আছেন অনেক গম্ভীর মেজাজের হয়ে থাকেন কিন্তু তার মধ্যে কিছুটা হলেও রসবোধ থাকে। কিন্তু যারা সত্যিকার অর্থেই একেবারে গম্ভীর তাদের সাথে সংসার করা এবং সময় কাটানো বেশ কঠিন।

আপনার সাথে মনের মিল: বিয়ের আগেই দেখে নিন আপনাদের মধ্যে মিলটা কতোখানি। আপনারা কি একই ধরণের চিন্তা করেন কিনা বা একই আদর্শে বিশ্বাসী কিনা। কারণ একজন অনেক খোলামেলা মনের অধিকারী হয়ে নিচু মনমানসিকতার মানুষের সাথে সংসার টিকিয়ে রাখতে পারবেন না।

সত্যবাদী : নারীরা সত্যবাদী পুরুষদের বেশি পছন্দ করেন। যদি দীর্ঘ সম্পর্কে জড়াতে চান সঙ্গিনীর সঙ্গে কখনো সত্য গোপন করবেন না। অথবা কোনো কিছু মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে সঙ্গিনীকে বিব্রত করবেন না। আপনি অপছন্দনীয় কিছু একটা করে ফেললেও তা লুকোনো হবে আপনার জন্যে আরো বড় ভুল। কারণ আপনার দোষের যদি কোনো কিছু থাকে তা সত্যি করে বলাটাকে মেয়েরা আরো বেশি পছন্দ করেন। তাই নারীদের সঙ্গী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে পাত্র কতটুকু সত্যবাদী তা পরখ করে নেয়াই শ্রেয়।

আর্থিক নিরাপত্তা: প্রতিটি নারীই কর্মঠ সঙ্গী পছন্দ করেন, এযুগে উচ্চ শিক্ষিত অনেক নারীই কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছেন,  তারপর ও বেশীর ভাগ নারীই চান নিজের জীবন সঙ্গী অবশ্যই কর্মঠ হবেন।  তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অনেক নারীই সঙ্গী বাছাইয়ে সরকারী চাকুরীজীবীদের বেশী প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।  আবার শহরের বেড়ে উঠা সচ্ছল ও উচ্চ শিক্ষিত নারীদের মাঝে উন্নত দেশে প্রতিষ্ঠিত অথবা প্রতিষ্ঠিত ব্যাবসায়ী, বহুজাতিক কোম্পানীর চাকুরীজীবীদের পছন্দের প্রধান্য লক্ষ্য করা যায়।  আবার মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েদের ক্ষেত্রে খুব বেশী চাহিদা না থাকলেও শিক্ষিত ও কর্মক্ষম পুরুষ তাদের প্রথম পছন্দ হয়, হোক সে সরকারী, বেসরকারী চাকুরে কিংবা প্রবাসী; সেখানে আর্থিক নিরাপত্তার বিয়য়টি ব্যাপক প্রাধান্য পায়। এজন্য কর্মক্ষম, স্বাবলম্বী ও ব্যাক্তিত্ববান একজন পুরুষই প্রাধান্য পেয়ে থাকে।

পোশাকে রুচিশীল : বিশেষজ্ঞদের মতে, রুচিহীন পোশাকের পুরুষদের কোনো কিছুই মেয়েদের আকর্ষণ করে না। সাধারণত চলতি ফ্যাশন নারীদের কাছে প্রিয়। তাই একটু ফ্যাশনেবল থাকতে হবে। ভালো পোশাকই আপনার রুচির পরিচায়ক।

চুলে স্টাইলিশ : চুলের ভালো একটা কাটিং আপনার চেহারা বদলে দেবে অনেকখানি। চেহারার আদলের সঙ্গে মানানসই চুলের ছাঁট নারীদের কাছে আপনাকে আকর্ষণীয় করে তুলবে। তাদের সামনে আপনার উপস্থিতির ওপর চুলের ছাঁট অনেক গুরুত্ব রাখে।

কথা বলার স্টাইল : আপনার স্টাইলেই কথা বলুন। অন্যকে একদম নকল করবেন না। কথা বলার সময় অপ্রয়োজনীয় কিছু কথা একদম বলবেন না। বারবার যেন আঞ্চলিকতার টান কথার মাঝে চলে না আসে। শুদ্ধ সহজ ও সাবলীল ভাষায় কথা বলার চেষ্টা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, ভালোভাবে কথা বলতে জানলে আপনার সঙ্গিনী শুধু আপনার কথা শোনার প্রতীক্ষায় থাকবেন।

উপহার দেয়া : মেয়েরা হঠাৎ করে পছন্দনীয় গিফট পেয়ে চমকে যেতে মারাত্মক ভালোবাসেন। চকোলেট, সুন্দর কথা লেখা গিফট কার্ড বা ফুল এগুলোর কথা নিশ্চয় সবাই জানেন। আরো কি কি জিনিস রয়েছে তাদের পছন্দের তালিকায় সেগুলো কৌশলী হয়ে জেনে নিতে হবে। তাকে হঠাৎ করে সুসজ্জিত কিছু একটা উপহার দিয়ে চমকে দেয়া খুব পছন্দ করেন। দেখবেন, আপনার কাছ থেকে এমনই একটা গিফট আশা করেছিলেন আপনার সঙ্গিনী।

কেউই চান না তার বিবাহবিচ্ছেদ হোক। মানুষ যখন বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তখন সারাজীবন একসাথে একই ছাদের নিচে বসবাসের স্বপ্ন নিয়ে বিয়ে করেন। কিন্তু একে অপরকে বুঝতে না পারা এবং ভুল বোঝাবুঝি বা সন্দেহের কারণে হয়তো বিবাহের সম্পর্কে টানাপোড়নের সৃষ্টি হয়। এবং বেশি টানাপোড়নের কারণে অনেক সময় না চাইতেও বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। তাই বিয়ের আগেই ভাবুন। পাত্র  পছন্দের সময় মাথায় রাখুন ভবিষ্যতের ব্যাপারগুলো। পাত্র পছন্দ হলেও মিলিয়ে দেখুন তার কিছু গুণ রয়েছে কিনা যা ভবিষ্যতে আপনাদের দাম্পত্যজীবন সুখী করে তুলবে।

সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া মানে জীবন শেষ নয়

ভালোবাসায় ভরা ছোট্ট একটা ঘরের স্বপ্ন কে না দেখে। কেউ হয়তো তার সঙ্গীর হাতে হাত রেখে সারা জীবন একসাথে চলার স্বপ্ন দেখে।কিন্তু সেই ভালোবাসার মানুষটি কিছুক্ষণের জন্য দূরে গেলে আমাদের পৃথিবীতে নেমে আসে অন্ধকার, সেখানে যদি ভালোবাসার মানুষটি সম্পর্কচ্ছেদ করে চলে যান তাহলে মানসিকভাবে ভেঙে পরাটা খুব স্বাভাবিক।ভালোবাসার মানুষটির সাথে বিচ্ছেদ যেনো জীবনটাকে থমকে দেয়।

কিন্তু ভেঙে পড়ে সারাজীবন তো আর থাকা যায় না।তাই আমাদের নিজেদেরকেই সামলে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে সামনে। নতুন ভাবে উঠে দাঁড়াতে হবে, ভুলে যেতে হবে পুরোনো ফেলে আসা স্মৃতি।এক্ষেত্রে প্রেম ও দাম্পত্য সম্পর্কে ভেঙে গেলে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে যা করবেন-

নিজেকে দোষারোপ করবেন না: একটা সম্পর্ক অনেকগুলো কারণেই ভেঙে যেতে পারে। অনেকদিনের সম্পর্ক অনেক গুরুতর কারণে অথবা অনেক ছোট কারণেও ভেঙে যেতে পারে। হতে পারে সেক্ষেত্রে দুই পক্ষের বোঝাপড়ার সমস্যা ছিল, অথবা যোগাযোগের ঘাটতি ছিল। কিন্তু কখনো ভুলেও নিজেকে সম্পর্ক ভাঙার জন্যে মনে মনে দোষারোপ করবেন না।

নিজেকে সময় দিন: সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর সাধারণত আমরা যে জিনিসটি করি, তা হলো খুব বেশি অস্থির হয়ে পড়ি, একটি সম্পর্ক ভাঙার হতাশা থেকে বের হতে না হতেই আরেকটা সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি। একটি ভাঙা সম্পর্ক থেকে কিন্তু আমরা শিখতে পারি পরবর্তীতে আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কী করণীয় বা কী বর্জনীয় হবে। তাই বিচ্ছেদের পর নিজেকে সময় দিন, নিজেকে আরও একটু ভালোবাসতে চেষ্টা করুন।  হুটহাট করে নতুন আরেকটি সম্পর্কে নিজেকে জড়িয়ে অবস্থা আরও জটিল করে তুলবেন না।

নিজের যত্ন নিন:  খেতে ইচ্ছে করবে না, ঘুম হবে না- এগুলো এ সময় খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু এই হতাশা থেকে বের হয়ে আসতে গেলে আপনাকে নিজের প্রতি আরও বেশি যত্নবান হয়ে উঠতে হবে। পরিমিত পুষ্টিকর খাবার খান, তাজা ফলমূল খান। ঘুমাতে চেষ্টা করুন আর অবশ্যই ব্যায়াম করুন। শরীর চনমনে থাকলে মন ভালো হতে সময় লাগবে না।

একা থাকবেন না: এই সময়টাতে আপনি যত বেশি একা থাকবেন, আপনার জন্যে সময়গুলো ততবেশি কষ্টদায়ক হয়ে উঠবে। তাই এই সময়গুলোতে একা না থেকে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে বের হোন। বন্ধুদেরকে না পেলে পরিবারের মানুষদের সঙ্গে সময় বের করে বেরিয়ে পড়ুন।

ভ্রমণ করুন, নতুন বন্ধু তৈরি করুন:  মনের ভার কমাতে এবং মাথা একদম পরিষ্কার করে ফেলতে ভ্রমণ সবসময়ই অনেক বেশি উপকারী। বন্ধুদের সঙ্গে শুধু কাছে-কূলে নয়, প্ল্যানিং করে নতুন কোনো জায়গায় ভ্রমণ করতে বেড়িয়ে পড়ুন। নতুন পরিবেশ, নতুন স্থান, নতুন মানুষ- আপনার মনের পুরাতন স্মৃতিগুলোকে হালকা করে দিতে সাহায্য করবে অনেকটাই।

নেতিবাচক চিন্তা বাদ দিন: সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর অনেক সময় বেঁচে থাকাও অর্থহীন মনে হতে থাকে। অনেকে আত্মহত্যার মতো আত্মবিধ্বংসী চিন্তা পর্যন্ত করতে শুরু করি। আপনাকে এই নেতিবাচক চিন্তার পুরোপুরি বিপরীতে যেতে হবে, প্রমাণ করতে হবে আপনি এতোটা দুর্বল, এতোটা ঠুনকো নন।

ইতিবাচক মনোভাব সম্পন্ন মানুষদের সাথে সময় কাটান: একটা সম্পর্ক ভেঙে গেলে একজন মানুষ মানসিকভাবে নিতান্তই ভেঙে পড়েন, এখন এই অবস্থার মধ্যে যদি আশেপাশের মানুষগুলো প্রতিনিয়ত চোখে আঙুল দিয়ে সবটা বার বার সামনে নিয়ে আসে অথবা কটু কথা বলতে থাকে, তাহলে ভাঙা মন আবার জোড়া লাগা সত্যিই অসম্ভব। চারপাশে ইতিবাচক ও সহায়ক মানসিকতা সম্পন্ন মানুষ থাকলে আপনি খুব দ্রুতই আবার নিজের উপর আস্থা ফিরে পাবেন।

অতীত কে অতীতেই থাকতে দিন:  যদি সত্যিই চেয়ে থাকেন অতীতের গ্লানি থেকে বের হয়ে আসবেন, তাহলে বারবার সেই অতীতেই ফিরে যাবেন না। শুধু চেষ্টা করুন অতীতের ভাঙা সম্পর্কটিকে একটি শিক্ষা হিসেবে নিতে, পাথেয় হিসেবে নয়।

দায়িত্ব নিতে শিখুন: যা হওয়ার তা তো হয়েই গিয়েছে, এবার নিজেকে বা ভালোবাসার মানুষটিকে দোষারোপ করে হা-হুতাশে জীবন অতিবাহিত না করে পরিবার, বন্ধু বা কাছের মানুষগুলোর ভালো থাকার জন্য ছোটখাটো দায়িত্ব নিন। যখন দেখবেন সামান্য কিছুতেই আপনি কারো মুখে হাসি ফোটাতে পারছেন তখন আর সব অপ্রাপ্তি এবং কষ্টগুলো ম্লান হতে থাকবে।

যা করতে ভালো লাগে তা-ই করুন: ভাঙা মন নিয়ে কোনো কিছুতে মনোনিবেশ করা অনেক কঠিন। কিন্তু সম্পর্ক ভাঙার হতাশা থেকে বের হয়ে এসে জীবনকে নতুনভাবে উপভোগ করতে চাইলে আপনাকে এসব কিছুর উপর আগ্রহ ফিরিয়ে আনতে হবে। আপনার যা মন চায়, যেভাবে আপনি নিজেকে আবার প্রাণোচ্ছল করে তুলতে সক্ষম বলে মনে হয়; সেটাই করুন। সহজ কথায়, নিজেকে ব্যস্ত রাখুন, দেখবেন হতাশা কাটতে শুরু করছে।

একটি সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া মানে জীবনের শেষ নয়, বরং নতুন করে আবার সবকিছু শুরু হওয়া। কিছুটা সময় নিয়ে নিজেকে আবার প্রস্তুত করুন, সমস্ত খারাপ চিন্তা-ভাবনার বিপরীতে গিয়ে নিজেকে প্রমাণ করুন। আপনার মধ্যে কী কী গুণ রয়েছে সেগুলোকে কাজে লাগান। কমপক্ষে এই সময় নিজের মনের কথাগুলো শুনুন, যদি মনে হয় ভেঙে যাওয়া সম্পর্কে আপনারও কিছু ভুল ছিল, তাহলে সেটা শুধরে নিতে চেষ্টা করুন। তবে ভুলেও সারাজীবনের জন্য নিজেকে অপরাধী করে রাখবেন না নিজের কাছে। এই মানুষই ভুল করে, আবার মানুষই নিজেকে শুধরে নেয়।  সংকলিত,সূত্র :নতুন সময়, রোয়ার মিডিয়া, দৈনিক আমাদের সময়

চার্চ

১৮৭২ সালের খ্রিস্টান ম্যারেজ এ্যাক্ট অনুযায়ী খ্রিস্টানদের বিয়ে সম্পাদিত হয়। খ্রিস্টান বিয়ে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং একটি পবিত্র চুক্তি।
খ্রিস্টান বিয়ে লিখিত মাধ্যমে সম্পাদিত হয় এবং রেজিষ্ট্রি বাধ্যতামূলকভাবে করতে হয়।খ্রিস্টান বিয়ের ক্ষেত্রে যিনি বিয়ে সম্পাদন করবেন তিনিই বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করবেন। খ্রিস্টান বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের প্রয়োজনীয় ধাপগুলো হলো:

১)  বিয়ের পাত্র-পাত্রীর পুরো নাম ও ডাক নাম এবং পেশা বা অবস্থা
২)  পাত্র-পাত্রীর আবাসস্থল ও বাসস্থানের ঠিকানা
৩)  পাত্র-পাত্রী কতদিন ধরে ঐ এলাকায় বসবাস করছে তার প্রমাণ পত্র
৪) বিয়ে সম্পাদনের চার্চ বা অন্যকোন স্থান
নোটিশ প্রাপ্তির পর চার্চের ধর্মযাজক নোটিশটি খোলা জায়গায় লাগিয়ে দেবেন। যাতে নোটিশটি সকলের নজরে আসে। এভাবে নোটিশ কয়েক সপ্তাহ ঝোলানো থাকবে যাতে কারো কোনো আপত্তি থাকলে তিনি যেন আপত্তি করতে পারেন। যদি কোন আপত্তি না পান তাহলে চার্চ প্রধান বিয়ের পক্ষগণের নিকট থেকে একটি ঘোষণা গ্রহণ করবেন।
এই ঘোষণাটি বিয়ের পক্ষগণ ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির হয়ে দিবেন যাতে থাকবে-

১) বিয়ের পাত্র-পাত্রীর মধ্যে জানামতে এমন কোন ঘনিষ্ট আত্মীয়তা বা রক্তের সম্পর্ক নেই যাতে তাদের বিয়েতে আইনসম্মত বাধা আছে।
২)বিবাহের পাত্র-পাত্রী দুজনেই আইন অনুযায়ী সাবালক।

এই ঘোষণা সম্পন্ন হওয়ার কমপক্ষে ৪ দিন পর চার্চের ধর্মযাজক বিয়ের আবেদনকারীকে একটি সার্টিফিকেট প্রদান করবেন।সার্টিফিকেট জারির ২ মাসের মধ্যে বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
ঢাকার কিছু চার্চ এ্রর  তথ্য নিচে তুলে ধরা হলঃ

১) ঢাকা  ইন্টারন্যশনল  খ্রিস্টান চার্চ ( গুলশান-২)
২) মিরপুর ব্যপ্তিস্ট চার্চ। (সেনপারা, ঢাকা-১২১৬)
৩) ঢাকা চার্চ অব খ্রীস্ট সোসাইটি (ইন্দিরা রোড,ফার্ম গেট,তেজগাঁও ঢাকা।)

বিশেষ বিবাহ আইনের অধীন বিয়ে

বিশেষ বিবাহ আইনের অধীন বিয়ে করতে চাইলে পাত্র ও পাত্রীকে একজন আইনজীবীর শরণাপন্ন হতে হবে৷ আইনজীবীর তত্ত্বাবধানে প্রস্তুতকৃত হলফনামায় পাত্র-পাত্রী স্বাক্ষর দানের পর ওই হলফনামা নোটারি পাবলিক কর্তৃক নোটরাইজড করতে হবে ৷ হলফনামায় অবশ্যই ‘বিশেষ বিবাহ আইনের অধীন বিয়ে’ শব্দগুচ্ছ লিখতে হবে ৷ অতঃপর সরকার অনুমোদিত বিশেষ বিবাহ রেজিস্ট্রারের কাছে নির্ধারিত ফরম পূরণপূর্বক ৩ জন সাক্ষীর উপস্থিতিতে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হয় ৷ উল্লেখ্য, বিশেষ বিবাহ আইনে বিয়ের ক্ষেত্রে যৌতুক প্রথা এবং আমন্ত্রিত অতিথিদের খাওয়া-দাওয়ার বাহুল্যতা নেই ৷

বিশেষ বিবাহ আইন : ১৮৭২ সালের বিশেষ বিবাহ আইনানুসারে যেসব ব্যক্তি খ্রিস্টান, ইহুদি, হিন্দু, মুসলিম, পার্সি, বৌদ্ধ, শিখ বা জৈন ধর্ম গ্রহণ করেননি, তাদের জন্য বিয়ের একটি ধরন নির্ধারণ করা এবং যেসব বিয়ের বৈধতা সম্পর্কে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে, সেসব সুনির্দিষ্ট বিয়ের বৈধতা প্রদান করা সমীচীন ৷ বিশেষ বিবাহ আইনে বিয়ে অনুষ্ঠানের শর্তাবলী বিশেষ বিবাহ আইনের ২ ধারা মোতাবেক বিয়ে অনুষ্ঠানের শর্তাবলী নিম্নরূপ-

(ক) বিয়ের সময় বিয়ের পক্ষগণের মধ্যে কারোই কোনও জীবিত স্বামী বা স্ত্রী থাকতে পারবে না
(খ) গ্রেগরিয়ান পঞ্জিকা অনুসারে পুরুষ ব্যক্তির বয়স ১৮ বছর এবং মহিলার বয়স ১৪ বছর পূর্ণ হতে হবে,
(গ) পক্ষগণ রক্ত সম্পর্কে বা বৈবাহিক সম্পর্কে সম্পর্কযুক্ত হতে পারবেন না, যাতে তাদের একজনের ওপর প্রযোজ্য আইন দ্বারা ওই বিবাহ অবৈধ হতে পারে৷

বিয়ে যেভাবে সম্পন্ন করতে হবে বিশেষ বিবাহ আইনের ১১ ধারা মোতাবেক বিয়ে সম্পন্ন করতে হবে রেজিস্ট্রার এবং ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষরদানকারী তিনজন সাক্ষীর সম্মুখে৷ উল্লেখ্য, পক্ষগণকে রেজিস্ট্রার ও সাক্ষীগণের উপস্থিতিততে বলতে হবে ‘আমরা পরস্পর পরস্পরকে আইনসঙ্গত স্ত্রী অথবা স্বামী হিসেবে গ্রহণ করলাম ৷’   ১১ ধারার বিধানাবলী বাধ্যতামূলক করা হয়েছে [১৮ ডিএলআর (১৯৬৬) পাতা ৫০৯] ৷সহ-উত্তরাধিকারিত্বের ওপর কতিপয় বিয়ের ফলাফল হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ বা জৈন ধর্মাবলম্বী কোনও যৌথ পরিবারের কোনও সদস্যের এ আইন মোতাবেক বিয়ে হলে অনুরূপ পরিবার থেকে তার বন্ধন ছিন্ন হয়েছে বলে গণ্য হবে (২২ ধারানুসারে) ৷ বাংলাদেশে বিশেষ বিবাহ আইন বাংলাদেশের কোনও মুসলিম, খ্রিস্টান, ইহুদি, পার্সি, বৌদ্ধ, শিখ বা জৈন নন বা তাদের একজন যে কোনও এটি বা অন্য ধর্মে বিশ্বাসী তাদের মধ্যে বিয়ের ব্যবস্থা করতে হলে বিশেষ বিবাহ আইনের অধীন উপযুক্ত নিয়মাবলী অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক ৷

এক্ষেত্রে একজন আইনজীবী কর্তৃক হলফনামা সম্পাদনের পর ওই হলফনামা নোটারাইজড করে বিশেষ বিবাহ রেজিস্ট্রারের উপস্থিতিতে সমুদয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হবে৷

ব্রাহ্ম সমাজের সিদ্ধান্ত : ব্রাহ্ম সমাজভুক্ত ব্যক্তিরা হিন্দু কিনা, তারা হিন্দু না হলে তাদের বিবাহরীতি পদ্ধতি কিভাবে হিন্দুমতে সম্পন্ন হবে ৷ যদি তাই হয় তাহলে ব্রাহ্ম সন্তানরা কোন আইনে উত্তরাধিকারের অধিকার পাবেন? এসব প্রশ্নের সমাধানকল্পে এগিয়ে আসেন ব্রাহ্ম সমাজের প্রতিষ্ঠাতা কেশবচন্দ্র সেন ৷ তিনি ঘোষণা দেন, সর্বধর্ম সমন্বয়ক হিসেবে যে কোনও ধর্মের লোক ব্রাহ্ম সমাজের সদস্য হতে পারেন ৷ সেক্ষেত্রে কোনও মুসলিম কিংবা খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী যদি ব্রাহ্মের দীক্ষা নেন, তাহলে কোন বিধিতে তাদের বিবাহকার্য সম্পন্ন হবে ৷ এসব সমস্যার আইনগত সমাধানের জন্য কেশবচন্দ্র সেন উদ্যোগী হন ৷ ১৮৬৭ সালের ২০ অক্টোবর ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্ম সমাজের এক অধিবেশনে তিনি ব্রাহ্ম বিবাহ বিধিবদ্ধ করার উত্কৃষ্ট উপায় নির্ধারণের জন্য ব্রাহ্মদের কাছে আবেদন জানান, ১৯৬৮ সালে সিভিল ম্যারেজ বিল উত্থাপন করলে সরকার সমর্থিত এ বিলে বলা হয়, ‘যদি কোনো ব্যক্তি হিন্দু অথবা মুসলমান অথবা ভারতবর্ষে প্রচলিত অন্য কোনও ধর্মাশ্রিত হয়ে সেই ধর্ম অবিশ্বাস করেন এবং সেই ব্যক্তি ওই ধর্ম প্রকাশ্যরূপে পরিত্যাগ না করে ওই ধর্মের বিবাহ পদ্ধতি অনুসারে বিবাহ করেন, তাহলে সেই বিবাহ আদালতে বৈধ বলে গণ্য হবে ৷’ কিন্তু এ ব্যাপা তত্কালীন সমাজে প্রবল মতবিরোধ দেখা দেয় ৷ ফলে এ আইন বিধিবদ্ধ না হয়ে পুনর্বিবেচনার জন্য পর্যালোচনা কমিটিতে পাঠানো হয় ৷

পর্যালোচনা কমিটি দীর্ঘ ২ বছর নানা দিক বিবেচনা করে ‘ব্রাহ্ম ম্যারেজ অ্যাক্ট’ প্রণয়রে সুপারিশ করে৷ অবশেষে নানা যুক্তিতর্ক, বাদানুবাদ ও শঙ্কা আশঙ্কার পর ১৮৭২ সালে ব্রাহ্ম বিবাহ বিধি সিভিল ম্যারেজ অ্যাক্ট নামে পাস হয় ৷ ব্রাহ্ম সমাজের বৈশিষ্ট্য হল- সাবালক পাত্র-পাত্রীরা ব্রাহ্ম সমাজ মন্দিরে উপস্থিত হয়ে স্ব স্ব ধর্মে বহাল থেকে ব্রাহ্ম রীতিতে সিভিল ম্যারেজ অ্যাক্টে বিবাহ করতে পারেন ৷ মন্দিরের আচার্য বিবাহে পৌরহিত্য করলেও তা রেজিিস্ট্র করে থাকেন সিভিল ম্যারেজ রেজিস্ট্রার ৷ ওই রেজিস্ট্রার বাংলাদেশ ব্রাহ্ম সমাজ ও আইনগতভাবে নিয়োগকৃত হতে হবে ৷ ব্রাহ্ম বিবাহে সংস্কৃতের পরিবর্তে বাংলায় মন্ত্রোচ্চারণ করতে হয় ৷ বিবাহ শেষে উপস্থিত অতিথিরা প্রার্থনা সভায় অংশ নেন এবং ব্রাহ্ম সংগীত গেয়ে বর-কনের মঙ্গল কামনা করেন ৷ এই প্রকার বিয়েতে যৌতুক প্রথা ও অতিথি আপ্যায়নের বাহুল্য নেই ৷

জানা যায়, ১২৮১ বঙ্গাব্দের বৈশাখে ব্রাহ্ম সমাজভুক্ত মুসলিম যুবক জালালউদ্দিন মিয়া ব্রাহ্ম বিবাহরীতিতে প্যারী বিবিকে বিয়ে করে সর্বত্র হৈচৈ ফেলে দেন ৷ ঢাকার ঐতিহাসিক সদরঘাট ও কোতোয়ালি থানার উত্তরে এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা কলেজিয়েট হাইস্কুল সংলগ্ন পাটুয়াটুলী রোডের ২-৪ লয়াল স্ট্রিটে বালাদেশ ব্রাহ্ম সমাজ কার্যালয়ে দেশের একমাত্র সিভিল ম্যারেজ রেজিস্ট্রার রেভারেন্ড প্রাণেশ সমাদ্দার বিশেষ বিবাহ আইনের অধীন বিয়ের কার্যক্রম সম্পন্ন করেন৷

সিভিল ম্যারেজ রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালনকারী প্রায় ৮৪ বছর বয়সী প্রাণেশ সমাদ্দার জানান, পাত্র-পাত্রীর পরস্পরের ধর্মীয় বিশ্বাস পৃথক হলে তারা যদি স্ব স্ব ধর্ম পালন করে বিয়ে করতে চায় তবে বিশেষ বিবাহ আইনের অধীন বিয়ে কার্য সম্পন্ন করতে হবে ৷ এ জন্য ৫০০০ টাকা এবং ৩ জন সাক্ষীর প্রয়োজন৷ বিশেষ বিবাহ রেজিস্ট্রার প্রাণেশ সমাদ্দারের চেম্বার সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের মেয়ে ফাল্গুনী বড়ুয়া এবং যাত্রাবাড়ীর শহীদ হোসেন রোডের (হালে কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি) মোস্তফা ভূইয়ার ছেলে মঞ্জুরুল প্রায় দুই মাস আগে বিশেষ বিবাহ আইনের অধীন বিয়ের সিঁড়িতে বসে ৷ ফাল্গুনী আর মঞ্জুরুলের মতো অনেকেই এভাবে যে যার ধর্ম বিশ্বাস ও ধর্মীয় মূল্যবোধ ঠিক রেখে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছে ৷

প্রাণেশ সমাদ্দার জানান, প্রতিবছর ৮/১০টি বিয়ে পড়ান তিনি ৷ দু’জনার ধর্ম দুটি হলেও সারাজীবন একত্রে জীবনসঙ্গী হিসেবে বসবাস করার জন্য বিশেষ বিবাহ আইনের অধীন বিয়ে করার বিকল্প নেই৷

বিশেষ বিবাহ আইনের অধীন বিয়ে করার সুযোগ আছে বলে স্বধর্মের উপযুক্ত পাত্র-পাত্রীকে বিয়ে না করে ভিন্ন ধর্মে বিশ্বাসীদের বিয়ে করার মানসিকতাকে এড়িয়ে চলার উদাত্ত আহ্বান জানাই ৷ বিশেষ বিবাহ আইনটি যুগোপযোগী করে সংশোধন করা দরকার ৷ তাছাড়া ম্যারেজ রেজিস্ট্রার নিয়োগ এবং কার্যকর পদ্ধতিতে বিয়ে সম্পন্ন করার বিষয়গুলো আরও সহজ ও স্বচ্ছ হওয়া দরকার ৷ আমাদের বিশ্বাস সরকার বিষয়গুলো নিয়ে ভাববে৷


বিশেষ বিবাহ আইন
খন্দকার মুজাহিদুল হক | তারিখ: ৩১-০১-২০১০ | প্রথম আলো 


বাংলাদেশে বিশেষ বিবাহ অনুষ্ঠিত হয় ‘বিশেষ বিবাহ আইন, ১৮৭২’ অনুযায়ী। কিন্তু এ বিয়ে কাদের জন্য প্রযোজ্য, বিয়ে অনুষ্ঠানের শর্তাবলি কী, সম্পাদনের পদ্ধতি কী, কার দ্বারা এ বিয়ে সম্পাদন হবে, এ বিয়ের ফলে জন্ম নেওয়া সন্তান কোন ধর্মের পরিচয়ে বড় হবে, এ বিয়ের স্বামী বা স্ত্রী কোন ধর্ম অনুসরণ করবেন, এ বিয়ের ফলে উত্তরাধিকার কে কতটুকু ভোগ করতে পারবেন প্রভৃতি বিষয় অনেকের কাছেই অস্পষ্ট।

যেসব ব্যক্তি মুসলিম, হিন্দু, খ্রিষ্টান, ইহুদি, পার্সি, বৌদ্ধ, শিখ বা জৈন ধর্ম গ্রহণ করেননি, তাঁদের মধ্যে এ বিয়ে হতে পারে। এ ছাড়া যেসব ব্যক্তি হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ বা জৈন ধর্ম গ্রহণ করেছেন, এ আইন দ্বারা তাঁদের জন্য বিয়ের বিকল্প একটি ধরন নির্ধারণ করা হয়েছে। আরও উল্লেখ করা প্রয়োজন, যেসব বিয়ের বৈধতা সম্পর্কে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে, সেসব সুনির্দিষ্ট বিয়ের বৈধতা দেওয়া হয়েছে এ আইন দ্বারা।

‘বিশেষ বিবাহের ক্ষেত্রে ধর্ম ত্যাগ করা অত্যাবশ্যক। দুই পক্ষই ধর্ম ত্যাগ না করলে বিয়েটি বাতিল বলে গণ্য হবে। এ আইনের বিধানে যেকোনো ধরনের মিথ্যা বর্ণনা দেওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ।  আবেদনকারী যদি বাস্তবে ধর্ম ত্যাগ না করে থাকেন, সে ক্ষেত্রে ধার্য হয়েছে—তিনি মিথ্যা বর্ণনা দিয়েছেন।’ [(১৯৬৬) ১৮ ডিএলআর ৫০৯]

বাংলাদেশে মুসলিম কোনো ব্যক্তি ইচ্ছা করলে অন্য ধর্মের কোনো ব্যক্তিকে মুসলিম আইন অনুযায়ীই বিয়ে করতে পারেন।  যদি অন্য পক্ষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন তবে কোনো সমস্যাই নেই, অর্থাত্ বিয়েটি ‘বৈধ বিয়ে’। আর যদি অন্য পক্ষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ নাও করেন, তবু মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী বিয়ে করা যাবে। তবে এ ক্ষেত্রে বিয়েটি ‘অনিয়মিত’ হবে।  খ্রিষ্ট ধর্মের ক্ষেত্রেও কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।  অন্য পক্ষ খ্রিষ্ট ধর্ম গ্রহণ করলে কোনো সমস্যাই নেই। তবে অন্য পক্ষ খ্রিষ্ট ধর্ম গ্রহণ না করলে খ্রিষ্টান পারিবারিক আইন অনুযায়ী বিয়েটি ‘অনিয়মিত’ বিয়ে হবে।

বিয়ে সম্পাদনের ইচ্ছা পোষণ করলে দুই পক্ষের কোনো একজনকে অবশ্যই নিবন্ধক বরাবর লিখিত নোটিশ দিতে হবে। যে জেলার নিবন্ধক বরাবর নোটিশ প্রদান করবেন, নোটিশ প্রদানকারীকে অবশ্যই নোটিশ দেওয়ার কমপক্ষে ১৪ দিন আগে থেকে সেখানে বসবাস করতে হবে। নিবন্ধককে অবশ্যই ওই জেলার হতে হবে, যে জেলায় দুই পক্ষের অন্তত কোনো একজন নোটিশ দেওয়ার কমপক্ষে ১৪ আগে থেকে বসবাস করছেন।

বিয়ের প্রত্যয়নপত্র: বিয়ে সম্পাদনের পর নিবন্ধক ‘বিবাহ প্রত্যয়ন বই’য়ে প্রত্যয়নপত্র অন্তর্ভুক্ত করবেন, যা নির্ধারিত একটি ফরম। এবং এটি উভয় পক্ষ ও তিনজন সাক্ষী কর্তৃক স্বাক্ষরিত হবে।

নিবন্ধক সরকার-নির্ধারিত ফরমে ‘বিবাহ প্রত্যয়ন বই’য়ে লিপিবদ্ধ সব অন্তর্ভুক্তির অনুলিপি তাঁর জেলার ‘জন্ম, মৃত্যু ও বিয়ের রেজিস্ট্রার জেনারেল’-এর কাছে পাঠাবেন।

জন্মগ্রহণকারী সন্তানের বিবাহ: এ আইনের অধীনে বিয়ের ফলে জন্মগ্রহণকারী সন্তান যদি এ আইনের অধীনেই বিয়ের ইচ্ছা পোষণ করেন, তবে তাঁর পিতা বিয়ের ক্ষেত্রে যে আইনে রক্ত-সম্পর্কীয় ও বৈবাহিক সম্পর্কীয় বাধার সম্মুখীন ছিলেন, সে আইন এবং এ আইনের ২ ধারা তাঁর ওপর প্রযোজ্য হবে। এ আইনের কোনো কিছুই এ আইনের অধীনে বিয়ের ফলে জন্মগ্রহণকারী সন্তানের অন্য কোনো আইনে সম্পাদিত বিয়ের বৈধতা ক্ষুণ্ন করবে না।

মিথ্যা বর্ণনা-সংবলিত ঘোষণার প্রত্যয়নপত্র স্বাক্ষরের শাস্তি: এ আইন দ্বারা নির্দেশিত কোনো ঘোষণা বা প্রত্যয়নপত্র তৈরি করেন, স্বাক্ষর করেন বা সত্যায়ন করেন, যা মিথ্যা বর্ণনা, এবং তিনি জানেন ও বিশ্বাস করেন মিথ্যা বলে, বা সত্য বলে বিশ্বাস করেন না, এমন কোনো ব্যক্তি দণ্ডবিধির ১৯৯ ধারায় অপরাধী বলে বিবেচিত হবেন। সহ-উত্তরাধিকারিত্বের ওপর ফলাফল: হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ ও জৈন ধর্মে বিশ্বাসী কোনো পরিবারের কোনো সদস্যের এ আইনে বিয়ে হলে তিনি ওই পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন বলে গণ্য হবেন।

উত্তরাধিকারের অধিকার: হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ ও জৈন ধর্মে বিশ্বাসী কোনো ব্যক্তি এ আইনে বিয়ে করলে, ‘জাতিগত অসামর্থ্যতা দূরীকরণ আইন, ১৮৫০’ প্রযোজ্য হয় এমন ব্যক্তির মতো তাঁরও সম্পত্তির উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে একই অধিকার থাকবে এবং তিনি একই রকম অসামর্থ্যতার অধীন হবেন। তবে শর্ত হচ্ছে, এ ধারার কোনো কিছুই ওই ব্যক্তিকে ধর্মীয় পদ বা চাকরির, বা কোনো ধর্মীয় বা দাতব্য ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনার কোনো অধিকার প্রদান করবে না।

সম্পত্তির উত্তরাধিকার: হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ ও জৈন ধর্মে বিশ্বাসী কোনো ব্যক্তি, যিনি এ আইনের অধীন বিয়ে করেছেন, তাঁর সম্পত্তির, এবং এ বিয়ের ফলে জাত সন্তানের সম্পত্তির উত্তরাধিকার ‘উত্তরাধিকার আইন, ১৯২৫’  অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিত হবে। ওই দুই ব্যক্তির মধ্যে এ বিয়ে হতে পারে, যাঁদের কেউই মুসলিম, হিন্দু, খ্রিষ্টান, ইহুদি, পার্সি, বৌদ্ধ, শিখ বা জৈন ধর্মে বিশ্বাস করেন না। কিংবা ওই দুই ব্যক্তির মধ্যে এ বিয়ে হতে পারে, যাঁদের প্রত্যেকেই এর একটি বা অন্য ধর্মে বিশ্বাস করেন— হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ বা জৈন। এ ছাড়া যেসব ব্যক্তি হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ বা জৈন ধর্মে বিশ্বাসী, এ আইন দ্বারা তাঁদের জন্য বিয়ের বিকল্প একটি ধরন নির্ধারণ করা হয়েছে। আরও উল্লেখ করা প্রয়োজন, যেসব বিয়ের বৈধতা সম্পর্কে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে, সেসব সুনির্দিষ্ট বিয়ের বৈধতা দেওয়া হয়েছে এ আইন দ্বারা।