পবিত্র বন্ধনটির মূল ভিত্তি হল স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা

বরকে পর করে দিচ্ছেন নাতো?

বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনটির মূল ভিত্তি হল স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা, সম্মান, মনোযোগ, একে অন্যের প্রতি যত্নশীলটা, সামাজিক ও পারিবারিক সম্পর্কগুলোকে মানিয়ে চলা, দায়িত্বশীলতা এবং আর্থিক, মানসিক ও জৈবিক চাহিদা পূরণ।

বিয়ের কিছুদিন স্বভাবতই অনেক আবেগ, মুগ্ধতা ও রোমান্স বিরাজ করে। সবকিছুতেই এক রকমের অদ্ভুত ভালোলাগার অনুভূতির ছোঁয়া পাওয়া যায়। কিন্তু এই মোহটা কিছুদিন পর থেকেই বিলুপ্ত হওয়া শুরু হয় যদি সম্পর্কে কোন নতুনত্ব না থাকে। তাই সম্পর্ক ভালো ও সুস্থ রাখতে সর্বদা সচেতন থাকা অতি আবশ্যক।

বর্তমান আধুনিক সময়ে অনেক স্ত্রী চাকুরি করেন। আমাদের সমাজ এখনো পুরুপুরি আধুনিক হতে পারেনি, এখনো কিছু কিছু ব্যাপারে অনেক রক্ষনশীল মানসিকতা বহন করছে। যেমন- মেয়েরা যত বড় চাকুরিই করুক না কেন রান্না-বান্না ও সংসার সামলানো মেয়েকেই করতে হবে, ছেলেরা করলে যেন তা অনেক বড় পাপ কাজ বলে গণ্য হবে।  তাই চাকুরিজীবি মেয়েদের উপর থাকে চাকুরি ছাড়াও রান্না-বান্না ও সংসার সামলানোর সকল দায়িত্ব ও কর্তব্য।  সবকিছু সামলিয়েও মেয়েদের আরেকটা বড় দায়িত্ব হল স্বামীকে সন্তুষ্ট রাখা। তার ছোট ছোট ব্যাপারে যত্নশীল থাকা, সকল চাওয়া পূরণ করা যাতে তার জীবনে কোন অপ্রাপ্তি বা অপূর্ণতা না থাকে। কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে ভালোবাসা, আদর, মনোযোগ না পেলেই স্বামীর ভালোবাসা, ভালোলাগা, আকর্ষণ সব ধীরে ধীরে কমতে থাকে যা ভবিষ্যতে সংসারে অশান্তি বা পরকীয়ার মত ঘটনার সূত্রপাত হয়। তাই বরের প্রতি সবসময় যত্নশীল থাকা অতি জরুরি।

আবার, বর্তমান সময়ে মানুষ তার সন্তানের প্রতি আগের থেকে অনেক বেশি উদ্বেগী ও যত্নশীল হয়ে গেছে। সন্তানের ছোট ছোট চাহিদা পূরণের জন্য বিশেষ করে মায়েরা অনেক বেশি সচেষ্ট। এর মাঝে অনেকেই ভুলে যায় তার আরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে। সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হল তার বরের প্রতি। বর যখন এত সময় ধরে তার বউ এর কাছ থেকে সবটা মনোযোগ ও যত্ন পেয়ে অভ্যস্ত হয়ে যায় তখন হুট করে না পাওয়াটা অনেক বেশি অপ্রত্যাশিত হয়ে যায় যা তার অনুভূতিতে অন্যরকম খারাপ একটা প্রভাব ফেলার একটা সম্ভাবনা থাকে। যেমন- সন্তানের কারণে তার আর আগের মত মনে বাসনা হলেই স্ত্রীর কাছে যাওয়ার সুযোগ না পাওয়া, আগের মত রোমান্স না করতে পারা ধীরে ধীরে শারীরিক দুরত্বের তৈরি করে।

বর বাসায় ফেরার পরে আগের মত বরের দিকে খেয়াল না রাখা, তার দৈনন্দিন বাইরের নানাবিধ কার্যকলাপ নিয়ে আলোচনা না করা, কোন দুশ্চিন্তা থাকলে তা ভাগ না করা, তাদের গল্পের বিষয় শুধু বাচ্চাটির দুধ, ডায়াপার, বাচ্চাটি নতুন কি কাজ করেছে, বাচ্চাটির আর কি কি লাগবে এইসব বিষয়েই সীমাবদ্ধ থাকলে মোট কথা বাচ্চার ব্যাপারে ওভার পসেসিভ থেকে বরকে গুরুত্ব না দিলে মানসিকভাবেও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দুরত্ব তৈরি হয়।

যতকিছু হোক না কেন সর্বদা স্বামীর প্রতি এক প্রকার নজরদারি বহাল রাখতেই হয়। বাচ্চা হলেই সাধারণত মেয়েরা একটু মোটা হয়ে যায় বা চেহারার যত্ন নেয়ার সময় না পাওয়ায় চেহারাও নষ্ট হয়ে যায় এইসবের প্রতি যত্নশীল থাকতে হবে। কারণ সৌন্দর্যটাও স্বামীর মন যোগাতে অনেকাংশে প্রভাব ফেলে। সবকিছুর পরেও বরকে তার মত করে সময় দিতে হবে, তার কাজের প্রশংসা করতে হবে, তাকে মুগ্ধ করে এমন কিছু করা, তার সাথে টিভি দেখা, ঘুরতে যাওয়া, বিশেষ দিনগুলো তার সাথে উদযাপন করার মাধ্যমে তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে স্বস্তি দিতে হবে। অন্যথায়, বর একাকীবোধ করা থেকে অনেক খারাপ কিছুতে নিজেকে জড়িয়ে ফেলতে পারে। আর একবার শারীরিক ও মানসিকভাবে দুরত্ব তৈরি হয়ে গেলে তা দূর করতে অনেক সময় ও শ্রম লেগে যায় তাই শুরু থেকেই সচেতন থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ।