সম্পর্ক যখন অসমবয়সি

দু’জনেই প্রেমে মশগুল হয়ে রয়েছেন। একে অপরকে চোখে হারান। কিন্তু একজন যৌবন উত্তীর্ণ এবং আর একজন সদ্যযুবক বা যুবতী। এই ধরনের ‘মে-ডিসেম্বর’ প্রেম দেখলে অনেকেরই হয়তো ভ্রুযুগল ঈষৎ বাঁকতে পারে। কিন্তু তাতে কী যায় আসে! প্রকৃত প্রেম বলতে কি স্রেফ সমবয়সি যুগলকেই বোঝায়? হলই না হয় প্রেমে ‘এজ গ্যাপ’!

যে কোনও সম্পর্ক ধরে রাখার মূলমন্ত্রই দু’জনের মধ্যে বোঝাপড়া। তাই নিজেদের সম্পর্ক নিয়ে নিজেরা যদি যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী হন তাহলে এগিয়ে যেতে বাধা কোথায়? তবে বয়সের অনেকটা ফারাক থাকলে পরবর্তীকেলে কিছু সমস্যা আসতে পারে। তাই যে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভাল করে ভেবে নিন।

দুটো মানুষের একে অপরকে ভাল লাগা, কাছে আসা, একে অপরের সঙ্গ উপভোগ করা— এর সঙ্গে বয়সের খুব একটা সম্পর্ক নেই। তবুও প্রেমের সম্পর্কে দু’জনের মধ্যে যদি বয়সের অনেকটা ফারাক থাকে তাহলে সেই সম্পর্ক নিয়ে দোটানায় থাকেন অনেকেই। কিন্তু দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক যদি যথেষ্ট মজবুত হয় তাহলে বয়সের পার্থক্য থাকলেও খুব একটা সমস্যা হয় না। বলিউড থেকে শুরু করে খেলার জগতে এরকম উদাহরণ কিন্তু নেহাত কম নয়। তবুও অসমবয়সি সম্পর্কের ক্ষেত্রে অনেকসময়ই কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। পরিবারের দিক থেকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া আসতে পারে। সম্পর্কের পরিণতি নিয়ে নিজের মনের মধ্যেও প্রশ্ন জাগা অস্বাভাবিক নয়। তাই অসমবয়সি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার আগে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখুন।

  • অসমবয়েসি প্রেমের ক্ষেত্রে নিজেদের মনে কোনও দ্বিধা থাকলে ভবিষ্যতের দাম্পত্যে তার প্রভাব পড়তে পারে। তাই সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার আগে নিজেকে একটু সময় দিন। ভাল করে ভেবে দেখুন আপনি যা করতে যাচ্ছেন, তা আপনার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। পরিবার বা কাছের মানুষজনের কাছে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি সঠিকভাবে মেলে ধরতে পারবেন তো?
     
  • নিজেদের সম্পর্ক নিয়ে যদি যথেষ্ট কনফিডেন্ট থাকেন তাহলে পরিবার বা বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে তা লুকিয়ে রাখবেন না। ভবিষ্যতে একসঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নিলে তা পরিবারের কাছে খুলে বলুন। নিজেরা বলতে না পারলে কোনও পারিবারিক বন্ধু আত্মীয়র সাহায্য নিতে পারেন বাড়ির বড়দের বোঝানোর জন্যে। একে অপরের পরিবারের সঙ্গে মেলামেশা বাড়ান। একসঙ্গে ঘুরতে যাওয়া, কেনাকাটা, খাওয়াদাওয়ার মাধ্যমে সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তুলুন। এতে দুই পরিবারের মধ্যেই আপনাদের সম্পর্কটা মেনে নেওয়া অনেক সহজ হবে। পারিবারিক সম্মতি সবসময়ই একটা ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে।
     
  • অসমবয়সি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার আগে সন্তান চাওয়া নিয়ে একে অপরের সঙ্গে পরিষ্কার ভাবে আলোচনা করে নিন। আপনার সঙ্গী যদি বয়সে আপনার চেয়ে অনেকটা বড় হন হতে পারে তাঁর আগের সম্পর্কে সন্তান আছে। তিনি নতুন সম্পর্কে হয়তো সন্তান নাও চাইতে পারেন। আবার সঙ্গী বয়সে অনেকটা ছোট হলে দেরিতে সন্তান চাইতে পারেন। তাই সম্পর্কের শুরুতেই এই ধরনের বিষয়গুলি নিয়ে পরিষ্কার করে আলোচনা করে নিন। একে অপরের মানসিকতা এবং কম্প্যাটিবিলিটি ভাল করে বুঝে নিন। এতে সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় থাকে। 
     
  • বয়সের ফারাক বেশি হলে তাই নিয়ে বন্ধুবান্ধবরা ঠাট্টাতামাশা করতে পারেন, আত্মীয়স্বজন বা প্রতিবেশীরা বিভিন্নরকম মন্তব্য করতে পারেন। এই ধরনের পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকুন। নিজেদের মধ্যে কথাবার্তার সময় বয়েসের পার্থক্যের ব্যাপারটা সবসময় এড়িয়ে যাবেন না। বরং দুজনে মিলেই ঠিক করুন যে চারপাশের প্রতিবন্ধকতা কীভাবে জয় করতে পারেন।

কোনো ভুল ছিল কি! এমন প্রশ্ন মনে উঁকি দিচ্ছে?

দ্বিধান্বিত মনের কারণে পড়াশোনা ও নিজের জীবনে যেন সময় দিতে পারছেন না দুজনে। হতাশা ভর করে সময় গুনে যাচ্ছেন ।  যেকোনো সম্পর্কের শেষের সময়টুকুতে আমরা ভেঙে পড়ি। দোষ-ত্রুটি আর ব্যর্থতাকে ধারণ করে জীবনকে অবসাদময় করে তুলি, যা আসলে ঠিক নয়। সম্পর্কচ্ছেদে মন খারাপ হতেই পারে, কিন্তু সেই মন খারাপ কখনোই দীর্ঘ সময় ধরে রাখা যাবে না। নিজের  জীবন বিকাশের জন্য সামনে পা বাড়াতে হবে। আপনি যদি নিজের মনকে বুঝতে পারেন, তাহলে যেকোনো দ্বিধা কাটিয়ে সামনে যেতে পারবেন। সম্পর্কচ্ছেদ নিয়ে বেশ কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখা উচিৎ।

দোষ-ত্রুটি নিয়ে ভাববেন নাঃ

সম্পর্কচ্ছেদের পরে আমরা সবচেয়ে বেশি ভাবি কার দোষ কিংবা কে দায়ী। মনের সঙ্গে লড়াই করে আমরা ব্যর্থতার জন্য কারণ খুঁজে বের করি। নানা কারণেই সম্পর্ক ভেঙে যেতে পারে, কিন্তু তাই বলে দোষ-ত্রুটি খুঁজে নেতিবাচক আচরণ করবেন না। দোষ-ত্রুটি মনে আসতে পারে, তা কাটিয়ে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই কিন্তু জীবন।

এগিয়ে যেতে হবেঃ

যত দিনের সম্পর্ক থাকুক না কেন, কিংবা যত গভীর সম্পর্ক থাকুক না কেন, আপনাকে এগোতেই হবে। আপনি যদি অতীতের কথা ভাবতে থাকেন, তাহলে আরও বেশি হতাশাগ্রস্ত হবেন, কষ্ট পাবেন। রাতের পর রাত জেগে অতীতের সুন্দর সময়ের কথা ভাবলে আপনি আপনার বর্তমানকে নষ্ট করবেন। বর্তমান নষ্ট হলে কি আর দারুণ ভবিষ্য তৈরির সুযোগ থাকে, বলুন।

নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া থাকতে হয়ঃ

সম্পর্কচ্ছেদ মানেই কিন্তু ব্যর্থতা নয়। নিজের মনের সঙ্গে কথা বলুন। নিজেকে বোঝার চেষ্টা করুন। এমন অবস্থায় আপনিই কিন্তু আপনার সবচেয়ে বড় সহায়। সম্পর্ক ভেঙে নিজেকে অপরাধী কিংবা দোষী ভেবে নিজেকে ছোট ভাবা ঠিক নয়। জীবনে অন্য সব সাফল্য-ব্যর্থতার মতোই সম্পর্কচ্ছেদকে ভাবুন।

ক্ষমা করতে শিখুনঃ

বিচ্ছেদের পর আমরা নিজেকে ক্ষমা করি না, নিজেই যেন নিজের শত্রু হয়ে যাই। আবার যে মানুষটিকে ভালোবাসতাম, তাকেও অপরাধী হিসেবে কল্পনা করতে থাকি, যা মোটেও ঠিক নয়। ওপাশের মানুষটিকে ক্ষমা করে, নিজের দুর্বলতা কাটিয়ে নতুন করে সামনে পা বাড়াতে শিখুন।

নিজের পায়ের ওপর দাঁড়াতে শিখুনঃ

বিচ্ছেদের পরে নিজেকে একাকী ভাবা শুরু করি আমরা। বন্ধুবান্ধব ও পরিবার থেকেও বেশ দূরে সরে যাই। এ সময়টায় নিজেকে নতুন করে চেনার চেষ্টা করুন। অতীতের গোলকধাঁধায় নিজেকে আটকে রাখবেন না। নিজের পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করুন।

নিজেকে শ্রদ্ধা করুনঃ

সম্পর্ক বিচ্ছেদের পরে নিজেকে ছোট আর দুর্বল মনে হয়। এটা কখনো ভাববেন না। জীবনে ব্যর্থতা আসবেই, নিজেকে কখনো অসম্মান করবেন না।

দৃঢ় চিন্তা করতে শিখুনঃ

সম্পর্ক থাকাকালীন ভবিষ্যৎ নিয়ে ইতিবাচক ভাবনা ভাবি আমরা, আর বিচ্ছেদ হলেই বিরহ। সম্পর্কের সমীকরণ ভেঙে গেলেও চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন আনবেন না। সব সময় ইতিবাচক ও সৃজনশীল ভাবনায় মনকে ব্যস্ত রাখুন।