আবেগপ্রবণ পুরুষ

পুরুষ আর আবেগ! বিষয়দু’টোকে অনেকেই ঠিক মেলাতে পারেন না। বেশিরভাগ পুরুষই আবেগের বহিঃপ্রকাশে অস্বস্তিবোধ করেন। সিনেমার পরদায় অবশ্য নায়কদের আমরা মেলোড্রামাটিক দৃশ্যে দেখে থাকি। তবে বাস্তবে সেই দৃশ্য অনেক পুরুষই পছন্দ করেন না। আর তাঁদের স্ত্রীদেরও এ ব্যাপারে অনুযোগ রয়েছে।

শুধু যে পুরুষদের মধ্যে আবেগের অভাবই তাঁদের অনুযোগের বিষয়, তা নয়! পুরুষরা যৌনমিলনের সময়ে আবেগতাড়িত হন না—এটাও অনেক স্ত্রীরাই অভিযোগ করে থাকেন। তবে পুরুষরা আবার পালটা প্রশ্ন করেন এই বলে যে সঙ্গীর সঙ্গে মিলিত হওয়াটাই এক ধরনের আবেগ। এটাই কি যথেষ্ট নয়! সকলের আগে ভেবে দেখা প্রয়োজন যে আবেগপ্রবণতা আসলে কী। মোটের উপর যে কোনও কাজে প্যাশনের অভাব, উৎসাহ না দেখানোকেই আবেগের অনুপস্থিতি বলে ধরি আমরা। মিলনের সময় শীতল প্রতিক্রিয়াও ঠিক তাই।

তবে পুরুষ ও মহিলা উভয় পক্ষেরই কয়েকটি জিনিস মাথায় রাখা প্রয়োজন। অনেক পুরুষই আছেন যাঁরা মিলনের সময়ে নিজের দুর্বলতা ঢাকার উপায় হিসেবে শীতল ব্যবহার করেন। আবার অনেক পুরুষ ভাবেন আবেগপ্রবণ হওয়াটা আদৌ পুরুষালি গুণ নয়। তাই মিলনের সময়ে বেশি আবেগে ভেসে যাওয়ার পক্ষপাতি নন তাঁরা।


আমাদের সমাজে ছোটবেলা থেকেই ছেলেদের সেখানো হয় চোখের জল না ফেলতে। কোনও পুরুষ কান্নাকাটি করলে তা অনেকসময় হাসির খোরাক হয়ে দাঁড়ায়। তাই, অনেক পুরুষই তাঁদের অনুভূতি, মুড, সেন্টিমেন্ট ইত্যাদিকে চেপে রাখেন। ধীরে ধীরে এটাই তাঁদের অভ্যেসে দাঁড়িয়ে যায়।

মিলনের সময়েও মহিলাদের মতো নিজেকে অতটা মেলে ধরতে পারেন না অনেক পুরুষই। পুরুষদের দোষ দেওয়ার আগে মহিলাদের এই বিষয়টি ভেবে দেখা প্রয়োজন। সাধারণত, অনেক পুরুষই সেক্সুয়াল কমিটমেন্ট চট করে করতে চান না। অর্থাৎ, একটি কমিটেড সম্পর্কে না থাকলে নিজেকে উজাড় করে দিয়ে মিলিত হতে চান না। পেড সেক্স অবশ্যই এর ব্যতিক্রম। কিন্তু অনেকের কাছেই যৌনমিলন হল আবেগের চরম বহিঃপ্রকাশ। অনেক মহিলাই এটা বুঝতে পারেন না।


স্ত্রীরা চাইতেই পারেন যে তাঁদের স্বামীরা আবেগপ্রবণ হবেন—এতে দোষের কিছু নেই। তবে সকলেই যে একরকম হবেন তা তো নয়। ধৈর্য ধরুন। স্বামীর সঙ্গে কথা বলুন। ধীর ধীরে তিনিও আপনার প্রতি ইমোশনাল হবেন।


আপনার স্ত্রী যদি আপনার থেকে আরও বেশি আবেগ প্রত্যাশা করেন, তাহলে নিজেকে একটু বদলানোর চেষ্টা করে দেখুন না। এতে কিন্তু আপনার পৌরুষ চলে যাবে না! আবার স্ত্রীরাও একটু চেষ্টা করে দেখুন না, স্বামীরা যদি নিজের মতো থাকেন, তাহলে সম্পর্কে খুব একটা সমস্যা হবে না।

যে যেমন তাঁকে সেরকম থাকতে দিলেই সবচেয়ে ভাল। দু’জনেই একটু মানিয়ে নিতে পারলে সুস্থ সম্পর্কে আর কীই বা চাই!

দাম্পত্য কলহ সামলাবেন কিভাবে?

দাম্পত্য কলহে যদি স্বামী-স্ত্রী নিজেরে মধ্যে বনিমনা না হয় তবে পারিবারিকভাবে খোলামেলা আলোচনা করতে হবে। আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ বের করতে হবে। এছাড়া ঘনিষ্ঠ বন্ধু-বা কাছের মানুষের সহযোগিতা নিতে হবে।কারণ দাম্পত্য কলহ থেকে হতে পারে মানসিক রোগ। 

বিয়ে হচ্ছে একজন নর ও নারীর মধ্যে স্বর্গের সম্পর্কের বন্ধন। তবে এখানে যখন বিষাদের ছাড়া নেমে আসে তখন আসে দাম্পত্য কলহ। 

দাম্পত্য কলহের কারণ

১. দু’জন মানুষের মধ্যে মতপার্থক্য থাকবে কিন্তু একসঙ্গে থাকতে হলে, মতপার্থক্য দূর করে আনতে হবে। এতে দু’জনকেই ছাড় দিতে হবে। 

২. স্বামী  অনেক সময় দেখা যায় স্ত্রীকে ডমিনেট করে। উচ্চশিক্ষিত স্বাবলম্বী অনেক মেয়ে তা মেনে নিতে পারছে না। এতে দ্বন্দ্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে।

৩. বিয়ের আগে অতিরিক্ত আবেগ কাজ করে। অনেকেই ভেবে চিন্তে জীবনসঙ্গী বাছাই করতে পারে না। পরবর্তীতে আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং বাস্তবতার বিশাল পার্থক্য, মানসিক চাপে, দ্বন্দ্বের কারণ হয়।

৪. দীর্ঘদিন ধরে যৌন জীবনে অতৃপ্ত থাকলে, সম্পর্কের ভয়াবহ অবনতি ঘটে। বিশেষ করে স্ত্রীরা তা প্রকাশ করতে পারে না।

৫. অনেক স্বামী-স্ত্রী তাদের মনের সুখ দুঃখগুলো নিজেদের মধ্যে শেয়ার করতে পারে না। শেয়ারিং না থাকলে সম্পর্কের অবনতি ঘটবে, সমাধান বের হবে না।

৬. বর্তমানে অনেকেই দাম্পত্য বা বিবাহবহির্ভূত অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে যাচ্ছে। যা ভয়াবহতম দাম্পত্য দহনের কারণ। 

৭. দাম্পত্য দহনে লিপ্ত দায়ী স্বামী বা স্ত্রী যে কোনো একজন বা দু’জনই মানসিক রোগে আক্রান্ত থাকতে পারে। আপনার জীবনসঙ্গীর অস্বাভাবিক আচরণের কারণ হতে পারে মানসিক রোগ।

৮. যারা নেশা করে, তারা তাদের পার্টনারকে অমূলক সন্দেহ করে, শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করে। শুরুতে বন্ধু পরে পরিণত হয় অবৈধ প্রেমে।

কীভাবে দাম্পত্য কলহ দূর করবেন

মতামতের পার্থক্য কমিয়ে আনা, দায়িত্ব পালন, পরনারী বা পরপুরুষে সম্পর্কে না জড়ানো, শারীরিক মানসিক নির্যাতন না করা, পার্টনারকে পর্যাপ্ত সময় দেয়া। প্রয়োজনে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে Couple Therapy নিতে হবে। দু’জনকেই Co-Operative হতে হবে। 

ভালোবাসাহীন দাম্পত্য জীবনের চেয়ে একা থাকা ভালো। সম্পর্ককে বাগানের মতো পরিচর্চা করতে হবে। যেসব মানসিক রোগ হতে পারে- বিষণ্ণতা, অতিরিক্ত উৎকণ্ঠা, ফোবিয়া, হিস্টিরিয়া, আত্মহত্যার প্রবণতা ইত্যাদি।

ডা. মো. হারুনুর রশীদ 
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, ডেল্টা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল

দ্বিতীয় বিয়ে: স্বামী বা স্ত্রী থাকা অবস্থায় আবার বিয়ে – আইন কী বলে?

বিয়ে সংক্রান্ত প্রতারণার ঘটনা বর্তমানে আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। এর মধ্যে স্বামী কিংবা স্ত্রী বর্তমান থাকা অবস্থায় পরবর্তী বিয়ের অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে। এসব প্রতারণামূলক ঘটনা থেকে বিভিন্ন সামাজিক অস্থিরতা, পারিবারিক জটিলতা ও সহিংসতা্র সৃষ্টি হয় যা বেশিরভাগ সময় আদালতে মোকদ্দমায় গড়ায়। বাংলাদেশে বিয়ে ও বিয়ে-বিচ্ছেদ পারিবারিক ধর্মীয় আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু বিয়ে সংক্রান্ত ফৌজদারি অপরাধ সংঘটনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় দণ্ডবিধি প্রযোজ্য হয়।

দ্বিতীয় বিয়ে করা স্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রথম স্বামীর আইনি প্রতিকার:

মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী, প্রথম স্বামীর সঙ্গে দাম্পত্য সম্পর্ক বিদ্যমান থাকাবস্থায় স্ত্রী যদি পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, তাহলে সেই দ্বিতীয় বিয়ে অবৈধ, অকার্যকর ও বাতিল বলে গণ্য হবে। স্ত্রী দ্বিতীয় বিয়ে করতে ইচ্ছুক হলে তাঁকে আবশ্যিকভাবে আগে প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধন ছিন্ন করতে হবে। ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ অনুসারে প্রথম স্বামীকে তালাকের নোটিশ প্রদানপূর্বক ৯০ দিন পর তালাক কার্যকর হওয়া সাপেক্ষে নির্দিষ্ট ইদ্দতপালন শেষে দ্বিতীয় স্বামী গ্রহণ করা যেতে পারে। এই বিধান লঙ্ঘন করে প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিয়ে বলবৎ থাকাবস্থায় স্ত্রী যদি স্বামীর জিম্মা থেকে পালিয়ে গিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করেন  সেক্ষেত্রে প্রথম স্বামী সেই স্ত্রীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে পারেন। সেক্ষেত্রে অভিযুক্ত স্ত্রী বাংলাদেশের ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৪৯৪ ধারা অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড পেতে পারেন। সঙ্গে অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন।

তবে দণ্ডবিধির ৪৯৪ ধারার এই বিধানের ব্যতিক্রম হতে পারে যদি সেই স্ত্রী তার পূর্বের স্বামীর সাত বছর যাবত কোনো খোঁজ-খবর না পান, অথবা তিনি জীবিত থাকতে পারেন এমন কোনো তথ্য যদি জানা না যায়, তাহলে পরবর্তী স্বামীকে আসল ঘটনা জানিয়ে তাঁর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারেন। অর্থাৎ এই ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে স্ত্রীর দ্বিতীয় বিয়ে শাস্তিযোগ্য হবে না।

প্রথম বিয়ের কথা গোপন রেখে স্ত্রীর পুনরায় বিয়ে: দ্বিতীয় স্বামীর আইনি প্রতিকার কী?

স্ত্রী যদি দ্বিতীয় বা পরবর্তী বিয়ে করার সময় যাকে বিয়ে করছেন তাঁর কাছে পূর্বের বিয়ের কথা গোপন করেন এবং দ্বিতীয় বা পরবর্তী স্বামী তা জানতে পারেন তাহলে সেটি দণ্ডবিধির ৪৯৫ ধারা অনুসারে একটি অপরাধ। যার ভিত্তিতে অপরাধীকে সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড প্রদান করা হবে, সাথে অর্থদণ্ডও প্রযোজ্য হবে।

কারো বিবাহিত স্ত্রীকে ভাগিয়ে নিয়ে গেলে আইনি প্রতিকার কী?

অন্যের স্ত্রী জানা সত্ত্বেও কোনো বিবাহিত নারীকে কোনো পুরুষ যদি ফুসলিয়ে বা প্ররোচনার মাধ্যমে যৌনসঙ্গম করার উদ্দেশে কোথাও নিয়ে যায় বা একই উদ্দেশে কোথাও আটকে রাখে তাহলে সেটি একটি অপরাধ যা দণ্ডবিধির ৪৯৮ ধারা অনুযায়ী সর্বোচ্চ ২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডনীয়, অথবা অর্থদণ্ড কিংবা উভয়দণ্ডে দণ্ডনীয় হবে। 

স্বামীর অজ্ঞাতে স্ত্রীর সঙ্গে ব্যভিচার: আইনি প্রতিকার কী?

দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারায় ব্যভিচারের শাস্তির উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি এমন কোনো বিবাহিত নারীর সঙ্গে তার স্বামীর সম্মতি ছাড়া যৌনসঙ্গম করে এবং অনুরূপ যৌনসঙ্গম যদি ধর্ষণের অপরাধ না হয়, তাহলে সে ব্যক্তি ব্যভিচারের দায়ে দায়ী হবে। যার শাস্তি ৭ বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডসহ উভয় দণ্ড। তবে ব্যভিচারের ক্ষেত্রে স্ত্রীলোকটির কোনো শাস্তির বিধান আইনে নেই।

আইনি প্রতিকার কোথায়, কীভাবে পাওয়া যাবে? 

উপরোক্ত অপরাধের ক্ষেত্রে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি নিকটস্থ থানা বা আদালতে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর এজাহার দাখিল করা যায়, থানায় অভিযোগ গ্রহণ না করলে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগ করা যাবে। পরিশেষে বলা যায়, বাংলাদেশে বিবাহ নিবন্ধনের আইনি বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও অনলাইন বা ডিজিটাল বিবাহ নিবন্ধন ব্যবস্থা না থাকায় অনেকে এই সুযোগে বিয়ে সংক্রান্ত প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে থাকেন যা বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যেকোনো বিয়ের ক্ষেত্রে বিয়ের সংশ্লিষ্ট পক্ষকে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে, বিয়ের নিবন্ধন নিশ্চিত করতে হবে, বিয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি-বিধান সম্বন্ধে সজাগ থাকতে হবে। ধর্মীয়, সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধ ধারণ করতে হবে এবং বিয়ে সংক্রান্ত প্রতারণার শিকার হলে আইনের আশ্রয় নিতে হবে। তাহলেই এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে আশা করা যায়।

লাভ ম্যারেজ নাকি অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ

অজানা-অচেনা মানুষকে হুট করে বিয়ে করতে নারাজ থাকেন অনেকেই। আবার দীর্ঘদিনের চেনা মানুষটির সঙ্গেও বিয়ের পর বিবাহবিচ্ছেদ হতে পারে। এমনও জুটি আছেন, যাদের রীতিমতো সম্বন্ধ করে বিয়ে হয়েছে কিন্তু তারা আগে হয়তো একে অন্যকে চিনতেন না। তবে বিয়ের পর সম্পর্কে কোনোদিন ভাঙন ধরেনি!

আসলে দাম্পত্য জীবন নিয়ে আগে থেকেই কোনো ধারণা করা উচিত নয়। সবাই সুখী হতে চায়, কেউ সুখী হয়; কেউ হয় না। তবে লাভ ম্যারেজ হওয়ার পর দাম্পত্য কলহ বা বিচ্ছেদের বিষয়টি সবারই নজর কাড়ে।

এজন্য গুরুজনেরা বলে থাকেন, প্রেমের বিয়ে টিকবে না! কেউ কিন্তু বলে না অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ টিকবে না! বরং গুরুজনেরাই উপদেশ দিয়ে থাকেন, সম্বন্ধের বিয়ে স্থায়ী হয়। অনেকেই ভেবে থাকেন, তাহলে কোন বিয়েতে সুখী হওয়া যায় লাভ না-কি অ্যারেঞ্জ?

যেভাবেই বিয়ে হোক, সুখী দাম্পত্য জীবন উপভোগ করতে হবে 

সম্বন্ধ করে বিয়ে ঠিক হলেও আগে কয়েক বছর চুটিয়ে প্রেম করুন। এতেই বুঝতে ও চিনতে পারবেন পরস্পরকে। এর ধারণা পাবেন, বিয়ের পরে আপনাদের সম্পর্কটা কেমন হবে।

দু’জন আলাদা মানুষ যখন একসঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন; তখন পরস্পরের পছন্দ-অপছন্দ মেনে নিয়ে চলতে হবে। একে অন্যের সঙ্গে ভালোভাবে মিশে বিয়ে করলেও মনে রাখা জরুরি, আপনি যেমন আপনার সঙ্গী তেমন নাও হতে পারেন!

লাভ ম্যারেজের ক্ষেত্রে একটি বিষয় মাথায় রাখুন, বিয়ের আগে ও পরে কিন্তু পরিস্থিতি বদলায়। বিয়ের আগে যদি প্রেমিক আপনাকে সারাদিন ফোন করত কিন্তু বিয়ের পর যখন সে দিনে ২ বার ফোন করবে; তখন বিষয়গুলো মানিয়ে না নিলেই কলহ হবে।

প্রেমের সময় অনেকেই সঙ্গীকে নানাভাবে সুখী করার স্বপ্ন দেখায়। লাভ ম্যারেজের পর দেখা যায় সেসব আর ঘটে না; তখন সঙ্গী সেগুলো মনে করিয়ে দিয়ে কলহ সৃষ্টি হতে পারে। তাই লাভ ম্যারেজ করার আগে বিষয়গুলো নিয়ে একবার ভেবে দেখবেন।

বিয়ে করুন যথা সময়ে, এর স্বাস্থ্যগত সুফল অনেক!

বিয়ের কথাটা শুনলেই কেমন যেন লাগে। চিন্তার বিষয়, বয়স হয়েছে তো! সে যাই হোক। বিয়ে করুন উপযুক্ত সময়ে। কারণ বিয়ে করার স্বাস্থ্যগত সুফল অনেক! কি ধরণের সুফল থাকতে পারে বিয়ে করার পর?

কেউ যদি মনে করে থাকেন বিয়ে করার কারণে আপনার মৃত্যুর দিন তাড়াতাড়ি ঘনিয়ে আসবে তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন। কারণ ২০১৩ এর এক রিসার্চে দেখা গেছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জন্ম গ্রহণকারীদের মধ্যে যারা অবিবাহিত তারা বিবাহিত অথবা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের মধ্যে যারা আছে তাদের তুলনায় তাড়াতাড়ি মারা যায়। এর কারণ হিসেবে দেখা গেছে জীবনসঙ্গী মানুষকে আবেগ অনুভূতি বাড়িয়ে দেয়, সামাজিকভাবে একত্রে রাখে, মানসিকভাবে সমর্থন দেয়, যার সব কিছুই সুস্থ স্বাভাবিক স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন।

মানসিক চাপ কম থাকে :

যদিও মাঝে মাঝে ঝগড়া লাগে তারপরও তার উপস্থিতি আপনার মনে এক ভালো লাগার অনুভূতি ছড়িয়ে দিবে। মানুষ যখন কোন মানসিক চাপের মধ্যে থাকে তখন শরীরে স্ট্রেস হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়। এই স্ট্রেস হরমোন বিবাহিতের চেয়ে অবিবাহিতদের শরীরে দ্রুত বৃদ্ধি পায়। অতিরিক্ত পরিমাণে মানসিক চাপ শরীরে সমস্যার জন্ম দেয়, বিশেষ করে হজমের সমস্যার সৃষ্টি করে। রিসার্চে জানা গেছে স্ট্রেস হরমোন বিবাহিতদের শরীরে সেরকম ভাবে ক্ষতি করতে পারে না কিন্তু অবিবাহিতদের শরীরে নানা সমস্যার বাসা তৈরি করে।

হার্ট এ্যাটাকের সম্ভাবনা হ্রাস পায়:

ভালোবাসা হৃদযন্ত্রকে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে যারা বিবাহিত অথবা কোন সম্পর্কের মাঝে আছে তাদের হার্ট-অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা নিঃসঙ্গ মানুষের চেয়ে কম। গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে যে সঙ্গীর নিবিড় সঙ্গ এবং নতুন পরিবারের নতুন সব আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু- বান্ধবের সাথে ভালো বন্ধনের কারণে হার্ট-অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস পায়। কারণ পরিবারের সাথে থাকলে মানুষ উৎফুল্ল থাকে। মনে কোন মানসিক চাপ থাকলে তা শেয়ার করতে পারে। এতে মনের উপর চাপ কম পড়ে।

বিয়ে শরীরের হাড় মজবুত করে। অবাক হচ্ছেন? আসলেও তাই। বিয়ে শরীরের হাড় শক্ত করে এবং বিভিন্ন হাড়ের রোগের ঝুঁকি কমায়। বিয়ে হাড়ের খনিজ ঘনত্ব ঠিক রেখে হাড়ের এক ধরণের রোগ “অস্টিওপরোসিস” হওয়ার ঝুঁকি কমায়। একজন ভালো জীবনসঙ্গী পত্নীর মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে হাড়কে ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে। তাই সুখী দাম্পত্য জীবন মহিলাদের হাড়ের খনিজ ঘনত্ব ঠিক রাখার জন্য জরুরী।

অস্ত্রোপচারের পর দ্রুত সুস্থ হওয়া:

কেউ যখন আপনার পাশে সারাক্ষণ থেকে আপনার পরিচর্যা করবে তখন আপনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন। কিন্তু আপনি যখন একা থাকবেন সে ক্ষেত্রে আপনার সুস্থ হতে অনেক সময় লেগে যাবে। কারণ তখন আপনার সব কাজগুলো আপনার নিজেরই করতে হবে। এছাড়াও আপনি যখন কার সান্নিধ্যে থাকবেন তখন বেঁচে থাকার একটা কারণ খুঁজে পাবেন। এক্ষেত্রে জীবন সঙ্গী আপনার বেঁচে থাকার অবলম্বন হয়ে দাঁড়ায়।

অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঝুঁকি কমে:

জীবনে কতবার আপনি আপনার জীবনসঙ্গীকে আকস্মিক দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করেছে? গবেষণায় দেখা গেছে তালাক প্রাপ্ত মহিলা এবং পুরুষেরা বিবাহিতদের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ বেশি অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়। গবেষকদের মতে বিয়ে দুটি মানুষকে পাশাপাশি রাখে এবং এসব অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণামের হাত থেকে রক্ষা করে।

বিষণ্ণতা কমায়:

একাকীত্বের কারণে অথবা অন্য সমস্যার কারণেও মানুষ বিষণ্ণতায় ভুগতে পারে। আর মানুষ যখন হতাশায় ভুগে তখন কি পরিমাণ মানসিক বিপর্যয় ঘটছে তার নিজের, তা সে বুঝতে পারে না। কারণ বিষণ্ণতার প্রথম উপসর্গ হচ্ছে আত্ম-উপলব্ধির হ্রাস পাওয়া। তাই বিষণ্ণতাকে সনাক্ত করতে এবং দূর করতে প্রয়োজন একজন সঙ্গীর। যে সব সময় আপনার সাথে থাকবে, যার সাথে আপনি সবকিছু শেয়ার করতে পারবেন।

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়:

২০১৩ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যে সকল মানুষ মরণ ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিল তাদের মধ্যে শতকরা ২০ ভাগ এর বেশি মানুষ আরোগ্য লাভ করতে সক্ষম হত যদি তারা বিবাহিত হত। এই সাফল্যের হার কেমোথেরাপির থেকেও বেশি। একটি স্বাভাবিক স্থিতিশীল সম্পর্কই প্রথম ধাপের ক্যান্সার সনাক্ত করতে পারে। আর এই বন্ধনই ক্যান্সারের সাথে লড়ে সুস্থ হওয়ার অনুপ্রেরণা যোগায়। একজন উপর্যুক্ত সঙ্গিনী তার সঙ্গীকে খারাপ এবং জীবনের জন্য ঝুঁকিকর কাজ করা থেকে বিরত রাখতে পারে। যেমনঃ মদ্যপান, মাদক সেবন ইত্যাদি।

স্মৃতিভ্রংশ প্রবণতা কমায়:

যদি জীবনে এমন সঙ্গী থাকে যার কাছে গেলে মনে শান্তি আসে তাহলে বার্ধক্য কখনো তাকে স্পর্শ করতে পারে না। গবেষণায় দেখা গেছে যারা তালাকপ্রাপ্ত হয়ে পুনরায় বিয়ে করে নি তাদের স্মৃতি শক্তি নষ্ট হওয়ার প্রবণতা প্রায় তিন গুন বেশি হয় এবং যারা মাঝ বয়সে বিধবা হওয়ার পর আর বিয়ে করেনি তাদের স্মৃতিভ্রংশ প্রবণতা ছয়গুণ বেড়ে যায়। গবেষকরা বলেন বিবাহিত এবং সারাজীবন মানসিকভাবে এবং সামাজিকভাবে পাশাপাশি থাকলে মন প্রফুল্ল থাকে এবং স্মৃতি শক্তি কম হ্রাস পায়।

বিভিন্ন অসুখ থেকে মুক্তি:

সুখী দম্পতিদের কখনো টাইপ -২ ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা, ফাইব্রোমাইলজিয়া মত অসুখ হতে দেখা যায় না। যেকোনো জিনিস নিয়ে অতিরিক্ত মানসিক চাপ শরীরে উপর খারাপ ভাবে প্রভাব ফেলে। তাই সুস্থ থাকতে হলে সুখী দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করা অতীব জরুরী।

জীবনসঙ্গী খুঁজতে বিবাহবিডি

উচ্চ শিক্ষা শেষে প্রতিষ্ঠিত হবার পরেও যদি আপনার  অথবা  পরিবারের প্রিয় সদস্যটির জন্য উপযুক্ত সঙ্গীর সন্ধান না পাওয়ায় কারনে বিয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে থাকেন তবে আপনার জন্যই অনলাইন বেইজ ম্যাট্রিমনিয়াল সার্ভিস বিবাহ বিডি ডট কম। ঘরে বসেই ফ্রী রেজিষ্ট্রেশন করে  চাহিদা অনুযায়ী পাত্র/পাত্রীদের প্রোফাইল (ছবি সহ বায়োডাটা) দেখে পাত্র/পাত্রী কিংবা অভিভাবকের সাথে সরাসরি নিজেরাই যোগাযোগ করতে সক্ষম হবেন এবং তা অতি দ্রুততম সময়ের মধ্যে ।

পরিস্থিতি বুঝে সম্পর্ক

ভালোবাসা বা প্রেমের সম্পর্ক চাই খুব গোছালো আর মানুষটা তো হবে একদম নিখুঁত। একটি সম্পর্কে যাওয়ার সময় সবারই মনে থাকে রঙিন প্রত্যাশা। সাধারণত ভঙ্গুর বা এলোমেলো কারো সাথে সঙ্গী হতে চায় না কেউ। অথচ ভালোবাসার মূল্য কিন্তু এ মানুষগুলোই দিতে পারে।

যে কারনে কারো খারাপ সময়ের সঙ্গী হবেনঃ

আপনি যখন দুঃসময়ে কারো সাথে সম্পর্কে জড়াবেন তখন সে আপনাকে মিথ্যা স্বপ্ন দেখাবে না এতে করে আপনি প্রত্যাশার জালে ডুবে থাকবেন না বিধায় কষ্টও পাবেন না।

আবেগের চেয়ে বাস্তবতার উপলব্ধি উভয়ের মাঝে বিরাজ করবে যা আপনাদের সম্পর্কে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

কাউকে গড়ে নেয়ার মাঝে আলাদা একটা সুখ আছে। নিজে কিছু তৈরি করলে যেমন মনে এক ধরনের আনন্দ পাওয়া যায়।

কারো খারাপ সময়ে যদি তার সঙ্গী হতে পারেন তাহলে বন্ধুত্বের জায়গাটা সহজেই তৈরি হয়ে যায়। সম্পর্কে বন্ধুত্ব সম্পর্ক খুব জরুরী।

আপনি যখন তার দুঃসময়ে পাশে থাকবেন পরবর্তীতে আপনাকে নিয়েই তার ভালো সময় কাটাবে তাই চলার পথে হতাশ হবেন না।

স্বাভাবিক ভাবে সে আপনাকে অবিশ্বাস করতে পারে যে আপনিও হয়তো তার জীবন থেকে চলে যাবেন এমন অবস্থায় তাকে মানসিক শক্তির যোগান দিন। তাকে বলুন আপনি তার পাশে আছেন ও সারাজীবন থাকবেন।

আপনার প্রতি সঙ্গীর আস্থা বাড়াতে তাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে পারেন বা তার সাথে বেশী সময় কাটান। এতে করে ব্যাক্তি যে খারাপ সময় কাটাচ্ছে সে বিষয় থেকে তার মনোযোগের পরিবর্তন ঘটবে।

সম্পর্কে শ্রদ্ধাবোধ রাখুন। তার ভালো লাগা আর আপনার ভালো লাগার মধ্যে অমিল হতে পারে তাই ধৈর্য্য রাখুন।

কারো খারাপ সময়ে পাশে থাকার ফলে সম্পর্কের ভালো সময়গুলো আসতে সময় লাগে, ধীরে ধীরে সম্পর্কের গুরুত্ব বাড়ে। আর এ সম্পর্ক গুলো সহজে ভাঙ্গে না বরং সুখী হয়।

কারো ভালো সময়ে তার সাথে সম্পর্কে জড়ানোর চেয়ে তার খারাপ সময়ে তাকে ভালোবাসুন এতে আপনি যেমন কাউকে নতুন জীবন গড়ার সুযোগ দিচ্ছেন তেমনি এর থেকে ভালো প্রতিদান সে আপনাকে দিবে।

জর্জ চ্যাপম্যানের মতে-

‘ভালোবাসা পাওয়ার চাইতে ভালোবাসা দেওয়াতেই বেশি আনন্দ।’

জীবনসঙ্গী খুঁজছেন? জেনে নিন কিছু তথ্য

নিজের পছন্দ হোক কিংবা পরিবারের পছন্দ –

বিয়ের ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া করবেন না মোটেই। বিয়ে কোনো ছেলে খেলা নয়, আজীবনের বন্ধন। তাই জীবনসঙ্গী এমন একজন মানুষ হতে হবে, যার সাথে আপনার ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়া গুলো মেলে।

সকলেই তো আর প্রেম করে বিয়ে করেন না। অনেকেরই বিয়ে হয় পারিবারিকভাবে, যাকে আমরা “অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ” বলি। শুনতে খুব সহজ মনে হলেও বিষয়টা আসলে খুব একটা সহজ নয়। অনেকেই হয়তো বিয়ে করার কথা ভাবছেন, কিন্তু পছন্দের সঙ্গী কিভাবে খুঁজবেন বুঝতে পারেন না। আবার খুঁজে পেলেও আপনার সাথে মনের মিল হবে কিনা তা নিয়েও আছে দ্বিধা-দ্বন্দ।

জীবনসঙ্গী খোঁজাটা যেন এক বিশাল পরীক্ষা। “অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ” এর জন্য সঠিক জীবন সঙ্গী খুঁজে পেতে কিছু বিশেষ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে চেষ্টা করাই ভালো। পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে গেলে খুব বেশি কাঠ-খড় পোড়ানো ছাড়াই মিলবে মনের মানুষের দেখা। আসুন তাহলে জেনে নেয়া যাক জীবনসঙ্গী খোঁজার ধাপ গুলো।

নিজের পছন্দ চুড়ান্ত করুনঃ

আপনি কেমন সঙ্গী চাইছেন কেমন হবে সঙ্গীর পারিবারিক অবস্থা, দেশের বাড়ি, শিক্ষাগত যোগ্যতা, চাকরী সব মিলিয়ে যেমন সঙ্গী আপনার পছন্দ সেটা মনে মনে ঠিক করে ফেলুন। নিজের পছন্দের সাথে সবসময়েই পরিবারের পছন্দের সামঞ্জস্য রাখুন। তাহলে বিয়ের পরে মানিয়ে নিতে সুবিধা হবে।

বয়সের পার্থক্য ও পেশাঃ

যাকে জীবনসঙ্গী বানাবেন ভাবছেন তার সাথে বয়সের পার্থক্য যেন খুব বেশী না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। সেই সাথে সঙ্গীর আয় বা পেশার দিকটি অবশ্যই মূল্যায়ন করতে হবে কেননা জীবন চালাতে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা জরুরী।

পারিবারিক ও আঞ্চলিক সংস্কৃতিঃ

পারিবারিক ও আঞ্চলিক সংস্কৃতির বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা বিয়ে মানে দুজন ব্যাক্তি নয় বরং দুটি পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক। যদি দুটি পারিবারের মধ্যে কালচারগত বিষয়ে সামঞ্জস্যতা থাকে তবে নতুন পরিবারে গিয়ে সহজেই মানিয়ে নেয়া যায়।

ব্যক্তির আচরণঃ

যাকে জীবনসঙ্গী বানাবেন ভাবছেন শুধু তার গুনের প্রশংসা বা সৌন্দর্য না দেখে তার আচরনের প্রতিও খেয়াল রাখুন। আপনি একজন ব্যক্তির সাথে কিছুক্ষণ কথা বললেই বুজতে পারবেন তার আচরণগত কোন সমস্যা আছে কিনা বা তার কোন অভ্যাস যা আপনার পছন্দ নাও হতে পারে।

দায়িত্ববান ও কর্মক্ষমঃ

একটি নতুন সংসার শুরু করতে নারী-পুরুষ দুজনের ভূমিকা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে একজন দায়িত্ববান ও কর্মঠ হবেন আরেকজন উদাসীন তা হলে সংসার শুরু হবে অশান্তি দিয়ে। তাই জীবনসঙ্গী বাছাইয়ে এ গুনাবলি গুলো আছে কিনা যাচাই করে নিন।

শারীরিক বিষয়ঃ

যাকে বিয়ে করবেন তার শারীরিক গঠন আপনার সাথে মানায় কি না খেয়াল রাখুন। ব্যক্তি স্বাস্থ্যগত দিক থেকে ঠিক আছে কিনা যাচাই করে নিন।

মানসিক প্রস্তুতিঃ

যাকে বিয়ে করতে চাচ্ছেন সে কি বিয়ের জন্য মানসিকভাবে তৈরি কিনা তা বোঝার চেষ্টা করুন। যদি সে বিয়ের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকে তাহলে ভাবতে পারেন।

জীবনসঙ্গী খুঁজার ক্ষেত্রে গুণবতী, সুন্দরী বা ছেলের অবস্থান যাচাই করা ছাড়াও অনেক বিষয় রয়েছে যা আমরা দেখা প্রয়োজন মনে করি না। ফলে বিয়ের পর সংসারের অধ্যায় শুরু হয় ঝামেলা দিয়ে। তাই জীবনসঙ্গী খোঁজার ক্ষেত্রে অবশ্যই এ বিষয়গুলো প্রত্যেকের খেয়াল রাখা উচিত।

কিছু পরামর্শ নিতে নেই এতে সম্পর্ক নাজুক হয়

দাম্পত্য সম্পর্ক সুখের হোক বা না হোক – সেই সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কেমন হবে তা ঠিক করার দায়িত্ব একমাত্র আপনার। অনেক সময়ই সম্পর্কের নানা সমস্যায় আমরা পরামর্শ চাই কাছের বন্ধু বা আত্মীয়দের কাছে। কখনও কখনও সে সব পরামর্শে কাজ হয়, কখনও আবার হয় না।

তবে কাজ হোক বা না হোক, পরিস্থিতির দায়িত্ব আপনাকেই নিতে হবে এবং নিজেই পথটা খুঁজে বের করতে হবে। এ সব ক্ষেত্রে বন্ধু বা আত্মীয়দের পরামর্শগুলোর ব্যাপারেও সাবধান থাকা দরকার।

স্বামীর সঙ্গে তর্ক কোরো নাঃ

কোনও মতেই এই পরামর্শে কান দেবেন না! তর্ক করলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হতে পারে ঠিকই, কিন্তু সেই ভয়ে চুপ করে থাকাটা কোনও কাজের কথা নয়। নৈর্ব্যক্তিক হয়ে বিষয়টা পর্যালোচনা করা এবং কোথায় আপনাদের দু’জনেরই ভুল হচ্ছে, সেটা খতিয়ে দেখা দরকার। যদি মনে হয় আপনাকে বিনা কারণে দোষী করা হচ্ছে, তা হলে চুপ করে না থেকে মুখ খুলুন। সম্পর্ক সফল করতে দু’জনেরই সক্রিয় ভূমিকা থাকা দরকার।

স্বামীকে পালটানোর চেষ্টা করোঃ

এটা আর একটা ভুল পরামর্শ। কোনও দুটো আঙুল যেমন একরকম হয় না, তেমনি দু’জন মানুষও একরকম হতে পারেন না। সেই পার্থক্যটা মেনে নিতে হবে। স্বামী বা পার্টনারকে যদি পালটাতে চেষ্টা করেন, সেটা হবে আপনার সবচেয়ে বড়ো ভুল। পরস্পরের ব্যক্তিস্বাতন্ত্রকে মেনে নিয়ে জীবনটা গড়ে তোলার চেষ্টা করুন।

সংসারের রাশ নিজের হাতে রাখোঃ

সম্পর্কের মূল কথা হল দু’জনের মধ্যে একটা ভারসাম্য বজায় রাখা। সব কিছুর রাশ নিজের হাতে রাখলে মাথায় অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়ে ফেলবেন, এবং তা থেকে এক সময় হতাশা আর ভুলবোঝাবুঝি তৈরি হবে যা যথেষ্টই এড়ানো সম্ভব। তাই সব দায়িত্ব নিজের উপর রাখবেন না, স্বামীর সঙ্গে ভাগ করে নিন।

স্বামীর ফোনের উপর নজর রাখোঃ

এরকম পরামর্শ শুনলে সেই পরামর্শদাতা ব্যক্তিকে এড়িয়ে চলাই ভালো। অপরের ফোন ঘাঁটা একইসঙ্গে অনৈতিক এবং অভদ্রতার চূড়ান্ত উদাহরণ। স্বামীর ব্যাপারে কোনও কারণে আপনার সন্দেহ তৈরি হতেই পারে, কিন্তু তার জন্য স্বামীর ফোন লুকিয়ে দেখতে যাবেন না। বরং সরাসরি স্বামীর সঙ্গে কথা বলুন।

দাম্পত্য সম্পর্কে দুজনের মনের যোগাযোগের পথটা হওয়া চাই মসৃণ। হঠাৎ করেই সঙ্গীর চেনা আচরণে অচেনা সুর, ছোটখাটো ভুলত্রুটিতে বড় চেহারা দাম্পত্যে অস্থিরতা বাড়িয়ে তুলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষের উপস্থিতিতে সম্পর্কে এমন সমস্যা সৃষ্টি হয়। দুজনের মনের যোগাযোগের পথ হতে হবে দূর্দান্ত;

পারস্পারিক বুঝাপড়া সমান্তরাল। তাই নিজেদের অকৃত্রিম সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখতে দুজনেই যথেষ্ঠ সচেতন হোন।

ভালো সঙ্গী হতে হলে

‘অমরসঙ্গী’ হওয়ার তাগিদ দিলে হয়তো রোমান্টিকতার বাড়াবাড়িই হবে। তবে আরও একটু বেশি হলে ক্ষতি কী?… সফল ও ভালো জীবনসঙ্গী সবারই চাওয়া থাকে। ‘সঙ্গী রোমান্টিক হবে। আমার সব কথা বুঝবে। দারুণ সুন্দর সময় কাটাব।’ প্রত্যেকেই ভাবেন, তাঁর সঙ্গী তাঁকে ঘিরেই নতুন জীবন রচনা করবেন—জীবন কাটাবেন। তাঁর রাজ্যে তিনি একাই রাজত্ব করবেন। এখানে অন্য কেউ অপরের ভাবনায়, প্রকাশ্যে, ফেসবুক অথবা মোবাইলে কাজে-অকাজে ভাগ বসাবে না। দুজনের পারস্পরিক মুগ্ধতা যেন সারা জীবন থাকে।

আবার পারিবারিক সম্বন্ধ করে হওয়া বিয়ের ক্ষেত্রে বিয়ের পর এই ভালোবাসাবাসীর পর্বটা শুরু হয়। বিয়ের মূল লক্ষ্য যেটা থাকে সেটা হলো, মনের মধ্যে যে মিলনের আকাঙ্ক্ষা তার নান্দনিক বাস্তবায়নে নিজেকে প্রকাশ করা, রোমান্টিকতা। আর এসব ঘিরে রয়েছে সামাজিকতা। এসব নিয়েই তো বিয়ে।

মার্কিন লেখক মিগনন-ম্যাকফলিন যেমনটা বলেছেন, দায়িত্ব দু-তরফেরই। সম্পর্ক হবে এ রকম; একজীবনেই বারবার প্রেমে পড়া চাই একে অপরের। শুধু তো দায়িত্ববোধ না, পরস্পরের প্রতি মুগ্ধতা না থাকলে ভালো সঙ্গী হয়ে ওঠা দুষ্কর। আগে থেকে পরিচয় না থাকলে পারিবারিক সম্বন্ধ করা বিয়েতে আরেকটু কাঠখড় তো পোড়াতেই হয়। মার্কিন দুঁদে মঞ্চকর্মী রবার্ট ব্রল্টের কথাটাই বা বলি না কেন! সংসার রঙ্গমঞ্চে দুজনকে হতে হবে দুজনার। আর ভালোবাসার প্রশ্নে সারা পৃথিবীর বিরুদ্ধে দরকারে এককাট্টা হয়ে লড়াই।

রম্যলেখক রবার্ট কুইলেন বলেছেন, সুখী ও ভালো সম্পর্ক হলো—যুগলের দুজনই একে অপরের প্রতিÿআস্থাশীল, সহৃদয়, সদয় এবং সংবেদনশীল।

তাহলে কী করতে হবে?

বিয়েটা যদি হয় সম্বন্ধ করে:

দুজনের পছন্দ-অপছন্দ বিয়ের আগে আলোচনা করে নিলেই ভালো হয়।

কারও বিয়ের আগে প্রেম থাকতেই পারে। সে ব্যাপারটা দুজনেই দুজনের স্মৃতি থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারবেন কি না, নিজেকে জিজ্ঞেস করুন। এই বোঝাপড়া যত আগে হবে ততই ভালো।

নিজের মতের বিরুদ্ধে বিয়ে করা উচিত নয়। এতে উভয়ের পরিবার ও নিজেদের মধ্যে ঝামেলা বাড়বে।

নারীদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ যদি না থাকে; তা শোধরানোর মানসিকতা থাকতে হবে।

পারস্পরিক দুর্বলতাগুলো জানতে ও জানাতে পারলে ভালো। এ কারণে, যাতে সে ব্যাপারে আপনি ‘কেয়ারিং’ হতে পারেন। আপনার ওপর আপনার সঙ্গীর আস্থা যেন বাড়ে। অযথা সেসব বিষয় নিয়ে জীবনকে তিতকুটে বানানোর কোনো মানে নেই।

বিবাহিত জীবন টিভির সিরিয়াল— ডেইলি সোপ বা অপেরা নয়। গোপন গল্পগুলো জীবননাট্যের ক্লাইমেক্স বা জটিলতা বাড়ানোর জন্য মজুত রাখবেন না।

আপনার সঙ্গীর আগ্রহের দিকটায় নজর দিন। তাকে উৎসাহ দিন। দেখবেন সেও আপনার প্রতি তার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।

যেমন: পড়াশোনা করা, বছরে অন্তত একবার বেড়িয়ে আসা, কোনো সামাজিক সচেতনতামূলক কাজ করা, সিনেমা দেখা ইত্যাদি। আবার কেনাকাটাও হতে পারে। একদিন না হয় গেলেনই সঙ্গীর সঙ্গে।

শারীরিক ব্যাপারটি উপভোগ্য করে তুলুন। ব্যাপারটি নিয়ে লজ্জা না করে নিজেদের মধ্যে খোলাখুলি আলোচনা করা ভালো। প্রয়োজন হলে নিজেদের পরিতৃপ্তির জন্য চিকিৎসক-পরামর্শ, ইন্টারনেটের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।

অন্যের দোষ-খুঁতগুলো হিসাব না করে সঙ্গীর ইতিবাচক দিক বের করুন। আর সেগুলোর প্রশংসা অব্যাহত রাখতে হবে।

ঝগড়া নয়, আলোচনায় যেকোনো সমস্যার সমাধান করতে হবে।

প্রেমের বিয়েতে:

প্রেমের সময় অনেক ক্ষেত্রে দুজনের পারিবারিক স্ট্যাটাস, পারিবারিক আবহ, তাদের নিজেদের মতামতের মূল্য কতখানি সেসব দিক অনেকটা অজানাই থেকে যায়, ভাবেন যে পরে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। আসলে বাস্তবতা ভিন্ন। বিয়ে মানেই হচ্ছে সামাজিকতা। সংসার মানেই একটি সামাজিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা। যে যার মাতব্বরি ফলানোর একটা জম্পেশ জায়গা ভেবে নড়েচড়ে বসেন। সংসার রাজনীতির ভালোমন্দ দেখভাল এড়িয়ে গেলে কেমন করে চলবে!

তাহলে উপায়—যখনই ভাবলেন বিয়ে করবেন! একটু ভেবে নিন।

দুজনই দুজনের পরিবারকে ভালোভাবে জানার চেষ্টা করুন।

দুজনই তাঁদের নিজেদের পরিবারে কতখানি প্রভাব রাখতে পারবেন তা পর্যালোচনা করুন।

পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ অবশ্যই থাকতে হবে। বিয়ের পর ‘পারবো না, পারলাম না’ বলতে যাতে না হয় সে রকম মানসিক প্রস্তুতি আগেই নেওয়া প্রয়োজন।

ভুল-বোঝাবুঝির শুরুতেই তা নিরসন করা উচিত ।

নিজেদের দোষত্রুটিগুলো ডায়েরিতে লিখে রাখতে পারেন। পরে ডায়েরি দেখে সেসব শোধরাতে হবে।

লেখেছেন: সুলতানা আলগিন, সহযোগী অধ্যাপক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ।

সুত্রঃ প্রথম আলো

সম্পর্কে প্রনয় আছে কিন্তু বন্ধুত্ব নেই; কি করবেন?

প্রণয় ও বন্ধুত্ব আলাদা দুটি শব্দ হলেও একটি সম্পর্কে এর দুটির উপস্থিতি এক সাথে থাকা খুব জরুরী। আপনার সঙ্গীকে আপনি ভালোবাসেন, তার সব দিক খেয়াল রাখছেন, একই ছাদের নিচে দুজন বাস করছেন, কিন্তু একে অপরের কাছে মন খুলে সব কথা বলছেন না বা বলতে পারেন না। এটি আপনাদের সম্পর্কের মাঝে জটিলতা আনতে পারে। স্বামী-স্ত্রী বন্ধুত্বের রূপ হয় অন্য রকম। তাই আপনাকে আগে বুঝতে হবে বন্ধুত্ব কার সাথে কি রকম হবে। পরিবারের সাথে বন্ধুত্ব, বন্ধুর সাথে বন্ধুত্ব আর স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের সাথে বন্ধুত্ব এক নয় কেননা সম্পর্ক গুলো আলাদা।

সম্পর্কে প্রনয় ও বন্ধুত্ব বজায় রাখতে যা করা উচিৎঃ

একে অপরের পছন্দ সম্পর্কে জানুন, অনেকটা আইস ব্রেকিং গেম এর মত একে অপরকে ব্যাক্তিগত ভালো লাগা খারাপ লাগা নিয়ে প্রশ্ন করুন।

দুজন ব্যাক্তির ভিন্ন ভিন্ন পছন্দ থাকতেই পারে এটাই স্বাভাবিক; এতে হতাশ হবার কিছু নেই। একে অন্যের পছন্দকে শ্রদ্ধা করুন, নিজের পছন্দকে অন্যের উপর চাপিয়ে দিবেন না।

স্বামী স্ত্রী’র নিজেদের ব্যাক্তিগত বিষয় গুলো অন্য কারও সাথে শেয়ার করবেন না।

নিজেদের ভালো মুহূর্ত গুলোর গল্প আপনার সঙ্গীকে মনে করিয়ে দিন।

আপনার অনেক স্মৃতি হয়ত আপনার সঙ্গী ভুলে যেতে পারেন তাই মনে করিয়ে দিতে আপনি ডায়েরি লিখতে পারেন, হতে পারে সেটি কবিতা কিংবা ছোট গল্প চাইলে আদি নিয়মের মত চিঠি লিখে বা চিরকুট লিখে তাকে উপহার দিতে পারেন।

ভালোমন্দ বোঝাপড়া নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে নিবেন পরিবারকে বা বন্ধুবান্ধব দিয়ে নিজের স্ত্রী বা স্বামী কে বোঝাতে যাবেন না।

দুজন ব্যাক্তির উচিৎ একে অপরকে জানা এবং প্রতিদিন জানতে চাওয়া। নিজেদের বারংবার জানতে চাওয়ার মাঝে গড়ে উঠবে বন্ধুত্ব আর যেটা থাকা চাই সেটা হল – বন্ধুত্বের শ্রদ্ধাবোধ।