মানুষের একাকীত্ব ও নিঃসঙ্গতা

আমরা মানুষরা কি একা থাকতে পারি? উত্তর আসবে- পারি না। কারণ, স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে পৃথিবীতে একা রাখেননি। পৃথিবীর প্রথম মানবের জন্য তিনি সঙ্গী সৃষ্টি করে পাঠিয়েছেন একাকীত্ব বা নিঃসঙ্গতা ঘোচানোর জন্য। শুধু মানুষ নয়; সৃষ্টি জগতের কোনো সৃষ্টিই একা নয়।

আমরা মানুষেরা একা থাকতে চাই না। খুব কম মানুষই চায় একাকী থেকে জীবন কাটাতে। কেউ পরিস্থিতির কারণে বাধ্য হয়ে একা থাকে, কেউ কেউ আবার স্বেচ্ছায়। যারা একাকী জীবন বা একাকীত্বকে উপভোগ করতে চায় বা পারে বা কিভাবে করতে হয় জানে তারাই একাকী পাড়ি দেয় জীবন নামক অজানা ও রহস্যময় সমুদ্র।

একাকীত্ব কখন আসে? আমরা সাধারণত বুঝতে পারি না। যখন বুঝি তখন অনেকটা দেরি হয়ে যায়। জীবনে কখনও কখনও এমন সময় আসে যখন না চাইলেও একা থাকতে হয়। হয়ত সারা জীবনের জন্য নয় তবুও যতটুকু সময়ই একা থাকতে হয়, হয়ত মাস বা বছর বা দীর্ঘসময় ধরে। আবার কখনও কখনও আজীবনই একাকী।

একা থাকাকে যখন আমরা নেতিবাচকভাবে গ্রহণ করি তখনই একাকীত্ব বোধ আসে। এই বোধ তখন আমাদেরকে ভেতর থেকে ভেঙ্গেচুরে দেয়। কুড়ে কুড়ে খায়। এর যন্ত্রণা কতটা ভয়ংকর সেটা ভুক্তভোগী ছাড়া আর কেউ সুন্দরভাবে বর্ণনা দিতে পারবে না।

মানসিকভাবে কেউ যখন কোনো একজনকে যার সাথে তার সামাজিক সম্পর্ক বা বন্ধন আছে, যাকে সে আশা করছে, যোগাযোগ করতে চাচ্ছে ও মিশতে চাচ্ছে কিন্তু তার চাওয়ার গভীরতা অনুযায়ী সে তাকে পাচ্ছে না, তখন তার মনে যে কষ্টকর অনুভূতি হচ্ছে সেটিই একাকীত্ব।

আমাদের জীবনে চলার পথে আমরা নানা সমস্যার সম্মুখীন হই। সমস্যার সমাধান যখন করতে পারি না, তখন নিজেকে একা মনে হয়, তুচ্ছ মনে হয় নিজের কাছে নিজেকে। বাঁচার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
 
আর এভাবেই জমতে জমতে গড়ে ওঠে মনের মধ্যে একাকীত্বের পাহাড়। একাকীত্ব যখন গ্রাস করে তখন আমাদের কর্মক্ষমতা কমে যায়। মনোযোগ কমে যায়। কোনো কাজ সুন্দর করে করা হয় না। আত্মবিশ্বাস কমতে কমতে আমাদের জীবনের আনন্দগুলোও ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকে। এরপর একসময় এটি মানসিক সমস্যায় পরিণত হয়। ধীরে ধীরে সমস্যাটি অনেক বড় রূপ ধারণ করে। এটি তখনই আশংকার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।

তাই আমাদের  মনে রাখতে হবে- একাকীত্বকে আমরা যত প্রশ্রয় দেবো, এটি তত বেশি গ্রাস করতে থাকবে আমাদেরকে অর্থাৎ ভুক্তভোগীকে। একাকীত্ব জীবনকে ঝামেলা না ভেবে মানসিকভাবে শক্তিশালী হওয়া এবং এটিকে উপভোগ করা প্রয়োজন অনেক বেশি। আমরা কখনই বুঝে উঠতে পারি না, একা থাকার মুহূর্তগুলোতে আমরা কী করবো বা কী করবো না।

কেউই বলতে পারবে না যে, তার কখনও একা লাগেনি। কোনো না কোনো সময় একা লাগেই মানুষের। যাদেরকে আমরা জনপ্রিয় বলে মনে করি, তারাও এর অন্তর্ভুক্ত। কারণ একজন ব্যক্তির অনেকজন বন্ধুবান্ধব থাকা মানেই সে একাকী বোধ করে না, এমন নয় ব্যাপারটি। তাদের সাথে তার ঘনিষ্ঠতা না থাকলে সে একা বোধ করতে পারে এবং অনেকজন লোক থাকা সত্ত্বেও প্রকৃত বন্ধু না থাকায় সে একাকী বোধ করতে পারে।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, যখন আমি বা আপনি একা থাকি তখন নিজেকে নতুন করে জানতে পারা যায়। একা থাকলে নিজের প্রতি খেয়াল রাখার সময় বেশি পাওয়া যায়। তখন আমাদের নিজেদের কাজ নিজেকেই করতে হয় বিধায় আমরা আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠতে পারি। জগতে সম্পর্ক ভাঙ্গার কষ্ট সবচেয়ে বেশি যন্ত্রণাদায়ক। যখন একটা ভালোবাসার সম্পর্ক ভাঙ্গে তখন সেটা আমাদের মানসিক শক্তি এবং শান্তি দুটোই নষ্ট করে দেয়। 

একা থাকার ক্ষেত্রে নিজের জন্য সময় পাওয়ার ব্যাপারটা খুব কাজে দেয়। নিজের জন্য নিজের কিছু একা সময় পাওয়া যায়। নিজের অতীতের কষ্ট, অতীতের ভুলগুলো নিয়ে নিজের সাথে নিজে বোঝাপড়া করা ও নিজেকে শুধরাতে পারা যায়। প্রথমে কিছুটা কষ্ট হলেও পরে একসময় একাকীত্ব ও নির্জনতার সাথে যুদ্ধ করে করে শিখে ফেলি কিভাবে নিজের সাথে নিজে চমৎকার সময় কাটানো যায়।

সবচেয়ে সুন্দর দিকটি হচ্ছে, পরবর্তী সম্পর্কে জড়ানোর ক্ষেত্রে আর ভুল হয় না। আমরা একদমই ভুলে যাই যেটি, একা থাকা মানেই কিন্তু জীবন প্রেমবিহীন নয়। সেই সময়টা জীবনকে সমৃদ্ধ করতে ভালভাবে ভালো কাজে লাগানো যায়। একাকীত্বের সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে, এটি আমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে না, কখনই না।

যদি দেখা যায় কেউ কারো সাথে ব্যস্ততার অজুহাতে অবহেলা করছে, বিশ্বাসের সাথে প্রতারণা করছে কিংবা ভালোবাসার ছলনা করছে সেক্ষেত্রে তাকে এড়িয়ে চলতে পারাটাই উত্তম। কারণ তার মিথ্যে ভালোবাসা সুন্দর জীবনটা আস্তে আস্তে শেষ করে দিতে পারে। তার চেয়ে একা থাকা অনেক ভালো। তবে এক্ষেত্রে প্রয়োজন ব্যক্তির শক্তিশালী ও দৃঢ় মনোবল। তবে অনেকেরই এই রকম মনোবল থাকে না বিধায় একাকীত্ব তাকে শেষ করতে থাকে ধীরে ধীরে।

আমরা আমাদের একাকীত্ব দূর করতে পারি যদি স্বদিচ্ছা থাকে এবং নিজের জীবনটাকে খানিকটা হলেও ভালোবেসে থাকি। যখন আমরা ভালোকাজে নিজেদেরকে ব্যস্ত রাখতে সক্ষম হবো, একাকীত্ব বোধ তখন আমাদের মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারবে না। এজন্য আমরা নিজের কিছু কিছু শখ পূরণ করার চেষ্টা করতে পারি। প্রকৃতির সাথে সময় কাটাতে পারি বাগান করার মাধ্যমে।

এছাড়া সেলাই করতে পারি, ঘর গোছাতে পারি, ছবি আঁকার চেষ্টা করতে পারি, মিউজিক শুনতে পারি ইত্যাদি আরও অনেক কাজ। নিজের শরীরের যত্ন নিতে পারি। ব্যায়াম হিসেবে হাঁটতে পারি। হাঁটতে হাঁটতে অনেক সৃষ্টিশীল ভাবনা আসে মাথায়। চাইলে লিখতে শুরু করা যায়। ভাবুন আর লিখুন। কাগজ কলম তো হাতের কাছেই! নিজের অর্জিত অভিজ্ঞতা থেকে ছোট গল্প বা বড় গল্প লেখা যায়, আর্টিকেল লেখা যায়, কিছু সুন্দর মুহূর্ত নিজের সঙ্গেই কাটানো যায় এভাবেই। 

একঘেয়েমি কাটানোর জন্য আমরা ভ্রমণ করতে পারি নতুন নতুন জায়গায়। ভ্রমণ করার ফলে আমাদের মানসিক প্রশান্তি মেলে এবং আমাদের জ্ঞানের ভাণ্ডার প্রশস্ত হয়। নিজেকে চেনা যায়। এ জন্যই হয়ত ডাক্তার রোগীকে ঘুরে আসতে বলে। ভ্রমণ তাই একাকীত্ব দূর করার উপায়গুলোর মধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় আমার কাছে এবং আমার নিজের পছন্দের শীর্ষে। 

আরেকটি ব্যাপার যেটা সবাই ধরতে পারে না, সেটি হচ্ছে- আমাদের চেয়ে বয়সে বড় এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা। আমার চেয়ে বয়সে অনেক বড় যারা তাদের বিচারবুদ্ধি অনেক পরিপক্ব আর তারা হলেন নির্ভরযোগ্য। নতুন মানুষের সাথে মিশে বন্ধুত্ব তৈরি করতে পারলে একা বোধ হয় না। আসলে একাকীত্বকে দুঃখ হিসেবে না দেখে বরং এটাকে উপলব্ধি করা উচিত। একা থাকা মানেই একাকিনী নয়।

একা থাকলে ক্ষমা করতে পারার মতো মহৎ গুনটি চলে আসে। যখন একাকী নিজের ভুল-ত্রুটি নিয়ে ভাবা হয়, দেখা যায় তখন অন্যের জন্য আমাদের মনে একটা সফট কর্নার তৈরি হয়। ক্ষমা করে দিতে পারি আমরা তখন। আমাদের কষ্টগুলো সহজ হয়ে যায় তখন। একা থাকার সবচেয়ে বড় অর্জন এটিই মনে করি আমি। 

এর সাথে সাথে আর একটা বড় ব্যাপার  হয় যে, আমরা সৃষ্টিকর্তাকে ফিল করতে পারি খানিকটা হলেও নিজেদের শুদ্ধ চিন্তা-ভাবনার মাধ্যমে। নিজেদেরকে মেলে ধরতে পারি সৃষ্টিকর্তার কাছে। একটা ঐশ্বরিক সম্পর্ক তৈরি হয়। ফলে আমরা যে বিশেষ জ্ঞানটি অর্জন করতে পারি তা হচ্ছে, আমরা সৃষ্টিকর্তাকে চিনতে পারি। পুরোপুরি হয়ত নয়; হোক সামান্য তবুও তা একজন মানুষের জন্য বিশাল যা একাকীত্বই দিতে পারে। আর সৃষ্টিকর্তাকে অনুভব করতে পারা যায় বলেই অন্তরে মানুষের জন্য ক্ষমা অটোমেটিক চলে আসে।

একাকী হয়ে যাবার ভালো দিকের আরও একটি ভালো দিক- আমরা প্রকৃত বন্ধু চিনে নিতে পারি। একা হয়ে গেলে আমরা যেটা করি- নিজেকে একদম আলাদা করে ফেলি। কোনো সমস্যা হলে আমরা নিজেকে টেনে তুলতে একা একা অনবরত চেষ্টা করে যাই যা একদমই ভুল। এটি না করে সমস্যা কেন সৃষ্টি হয়েছে তা বের করার চেষ্টা করা আর সমাধানের জন্য সাহায্য চাওয়া। এই অন্যের কাছ থেকে পাওয়া সহযোগিতায় নিজেদেরকে আর একা মনে হয় না। 

আমাদের আশেপাশে আমাদেরকে পছন্দ করে এমন মানুষ আছে। অন্যের কাছ থেকে পাওয়া সহযোগিতা আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সুন্দর কাজ করে। আর একাকীত্বের এই দুঃসময়ে যে ব্যক্তি বা বন্ধুটি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে, বুঝতে হবে সেই প্রকৃত বন্ধু। যখন কেউ পাশে থাকে না, তখন কে আমাদের বন্ধু বা শত্রু তা চিনে নিতে ভুল করা উচিত নয় একদমই।

একাকীত্ব বোধ করার খারাপ দিকও আছে যা জানা আমাদের জরুরি। একাকীত্বের প্রথম সমস্যা হচ্ছে, শারীরিক ক্ষতি। গবেষণায় দেখা গেছে, দিনে ১৫টি সিগারেট খেলে যে ক্ষতি হয় শরীরের, একাকীত্ব ঠিক ততটাই ক্ষতি করে। দীর্ঘদিন ধরে এই একাকীত্বে ভুগতে থাকলে সেটা মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকারক। 

এরপর যেটা হয়, আমাদের কায়িক পরিশ্রম বেড়ে যায়। সব কাজ নিজেকেই করতে হয়। রান্না করা, বাজার করা, কাপর কাচা থেকে শুরু করে থালা বাসন ধোয়া, নিজের রুম সবকিছু নিজেকেই পরিষ্কার করা ইত্যাদি আরও অনেক কাজ একাই করতে হয়। এরমধ্যে ভালো দিকটি আমি আগেই বলেছি। শারীরিক খাটুনি বেশি হয় এই যা।

বাংলায় একটা কথা আছে, “চিন্তার চেয়ে চিতার আগুন ভালো”। আমরা যখন একা হয়ে যাই, সাধারণত তখন আমাদের মনে নানা রকম নেতিবাচক চিন্তা এসে ভিড় করে। আর এই নেতিবাচক চিন্তা যেমনি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, তেমনি শরীরের জন্যও। অনবরত নেতিবাচক চিন্তা করার ফলে শরীরে নানা অসুখ বাসা বাঁধে। তাই ইতিবাচক চিন্তা করা প্রয়োজন সব সময়।

আমরা যে ভুলটা করি একা হয়ে গেলে সেটি হচ্ছে নিজেকে ভুল সম্পর্কে জড়িয়ে ফেলি। একাকীত্ব আমাদেরকে ভুল পথে নিয়ে যায় অনেক সময়ই। একাকীত্ব কাটিয়ে ওঠার কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে আমরা হয়তো বাছবিচারহীনভাবে যে কারো সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলি। যে কারো সঙ্গে বন্ধুত্ব করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠি। হয়তো অনেকেই এইরকম মনে করি যে, কোনো ভালো বন্ধু না থাকার চেয়ে যে কোনো বন্ধু থাকা ভালো। আর এটাই বিপদ ডেকে আনতে পারে জীবনে।

আর যেটা করি, আমরা ডিভাইস আসক্ত হয়ে পড়ি। আমাদের মনে রাখা দরকার যে, ইলেকট্রনিক গ্যাজেট সবসময় একাকীত্ব দূর করতে পারে না। একা থাকলে আর যেটি হয়, আমরা কথা বলা কমিয়ে দেই মানে কথা বলার সুযোগ থাকে না, ফলে আমরা কিছুটা দূরে ছিটকে পড়ি। আমরা নীরব প্রকৃতির মানুষ হয়ে যাই।

যতদিন এই পৃথিবী থাকবে, সৃষ্টিসমূহ থাকবে, মনুষ্য সমাজ থাকবে, ততদিনই এই একাকীত্ব বোধও থাকবে। মানুষ একা বাস করতে পারে না বলেই সমাজের সৃষ্টি। ক্ষুধা লাগলে খাবার খাই, তৃষ্ণা পেলে পানি পান করি তেমনি একাকীত্ব বোধ হলেও তা মেটানোর প্রতি মনোযোগী হওয়া বিশেষ প্রয়োজন। একা না হলে নিজেকে আবিষ্কার করা যায় না, এটি জীবনের উন্নতির জন্যও অন্তরায় নয়, বরং সহায়ক। তবে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, যেদিন একা থাকার মুহূর্তগুলোকে ভালোবাসতে পারা যাবে, সেদিন আর একাকীত্ব আমাদেরকে স্পর্শ করতে পারবে না।

লেখক: রেহানা রহমান রেনু, শিক্ষক ও কলামিস্ট

বিয়ে করুন যথা সময়ে, এর স্বাস্থ্যগত সুফল অনেক!

বিয়ের কথাটা শুনলেই কেমন যেন লাগে। চিন্তার বিষয়, বয়স হয়েছে তো! সে যাই হোক। বিয়ে করুন উপযুক্ত সময়ে। কারণ বিয়ে করার স্বাস্থ্যগত সুফল অনেক! কি ধরণের সুফল থাকতে পারে বিয়ে করার পর?

কেউ যদি মনে করে থাকেন বিয়ে করার কারণে আপনার মৃত্যুর দিন তাড়াতাড়ি ঘনিয়ে আসবে তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন। কারণ ২০১৩ এর এক রিসার্চে দেখা গেছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জন্ম গ্রহণকারীদের মধ্যে যারা অবিবাহিত তারা বিবাহিত অথবা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের মধ্যে যারা আছে তাদের তুলনায় তাড়াতাড়ি মারা যায়। এর কারণ হিসেবে দেখা গেছে জীবনসঙ্গী মানুষকে আবেগ অনুভূতি বাড়িয়ে দেয়, সামাজিকভাবে একত্রে রাখে, মানসিকভাবে সমর্থন দেয়, যার সব কিছুই সুস্থ স্বাভাবিক স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন।

মানসিক চাপ কম থাকে :

যদিও মাঝে মাঝে ঝগড়া লাগে তারপরও তার উপস্থিতি আপনার মনে এক ভালো লাগার অনুভূতি ছড়িয়ে দিবে। মানুষ যখন কোন মানসিক চাপের মধ্যে থাকে তখন শরীরে স্ট্রেস হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়। এই স্ট্রেস হরমোন বিবাহিতের চেয়ে অবিবাহিতদের শরীরে দ্রুত বৃদ্ধি পায়। অতিরিক্ত পরিমাণে মানসিক চাপ শরীরে সমস্যার জন্ম দেয়, বিশেষ করে হজমের সমস্যার সৃষ্টি করে। রিসার্চে জানা গেছে স্ট্রেস হরমোন বিবাহিতদের শরীরে সেরকম ভাবে ক্ষতি করতে পারে না কিন্তু অবিবাহিতদের শরীরে নানা সমস্যার বাসা তৈরি করে।

হার্ট এ্যাটাকের সম্ভাবনা হ্রাস পায়:

ভালোবাসা হৃদযন্ত্রকে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে যারা বিবাহিত অথবা কোন সম্পর্কের মাঝে আছে তাদের হার্ট-অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা নিঃসঙ্গ মানুষের চেয়ে কম। গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে যে সঙ্গীর নিবিড় সঙ্গ এবং নতুন পরিবারের নতুন সব আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু- বান্ধবের সাথে ভালো বন্ধনের কারণে হার্ট-অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস পায়। কারণ পরিবারের সাথে থাকলে মানুষ উৎফুল্ল থাকে। মনে কোন মানসিক চাপ থাকলে তা শেয়ার করতে পারে। এতে মনের উপর চাপ কম পড়ে।

বিয়ে শরীরের হাড় মজবুত করে। অবাক হচ্ছেন? আসলেও তাই। বিয়ে শরীরের হাড় শক্ত করে এবং বিভিন্ন হাড়ের রোগের ঝুঁকি কমায়। বিয়ে হাড়ের খনিজ ঘনত্ব ঠিক রেখে হাড়ের এক ধরণের রোগ “অস্টিওপরোসিস” হওয়ার ঝুঁকি কমায়। একজন ভালো জীবনসঙ্গী পত্নীর মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে হাড়কে ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে। তাই সুখী দাম্পত্য জীবন মহিলাদের হাড়ের খনিজ ঘনত্ব ঠিক রাখার জন্য জরুরী।

অস্ত্রোপচারের পর দ্রুত সুস্থ হওয়া:

কেউ যখন আপনার পাশে সারাক্ষণ থেকে আপনার পরিচর্যা করবে তখন আপনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন। কিন্তু আপনি যখন একা থাকবেন সে ক্ষেত্রে আপনার সুস্থ হতে অনেক সময় লেগে যাবে। কারণ তখন আপনার সব কাজগুলো আপনার নিজেরই করতে হবে। এছাড়াও আপনি যখন কার সান্নিধ্যে থাকবেন তখন বেঁচে থাকার একটা কারণ খুঁজে পাবেন। এক্ষেত্রে জীবন সঙ্গী আপনার বেঁচে থাকার অবলম্বন হয়ে দাঁড়ায়।

অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঝুঁকি কমে:

জীবনে কতবার আপনি আপনার জীবনসঙ্গীকে আকস্মিক দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করেছে? গবেষণায় দেখা গেছে তালাক প্রাপ্ত মহিলা এবং পুরুষেরা বিবাহিতদের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ বেশি অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়। গবেষকদের মতে বিয়ে দুটি মানুষকে পাশাপাশি রাখে এবং এসব অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণামের হাত থেকে রক্ষা করে।

বিষণ্ণতা কমায়:

একাকীত্বের কারণে অথবা অন্য সমস্যার কারণেও মানুষ বিষণ্ণতায় ভুগতে পারে। আর মানুষ যখন হতাশায় ভুগে তখন কি পরিমাণ মানসিক বিপর্যয় ঘটছে তার নিজের, তা সে বুঝতে পারে না। কারণ বিষণ্ণতার প্রথম উপসর্গ হচ্ছে আত্ম-উপলব্ধির হ্রাস পাওয়া। তাই বিষণ্ণতাকে সনাক্ত করতে এবং দূর করতে প্রয়োজন একজন সঙ্গীর। যে সব সময় আপনার সাথে থাকবে, যার সাথে আপনি সবকিছু শেয়ার করতে পারবেন।

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়:

২০১৩ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যে সকল মানুষ মরণ ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিল তাদের মধ্যে শতকরা ২০ ভাগ এর বেশি মানুষ আরোগ্য লাভ করতে সক্ষম হত যদি তারা বিবাহিত হত। এই সাফল্যের হার কেমোথেরাপির থেকেও বেশি। একটি স্বাভাবিক স্থিতিশীল সম্পর্কই প্রথম ধাপের ক্যান্সার সনাক্ত করতে পারে। আর এই বন্ধনই ক্যান্সারের সাথে লড়ে সুস্থ হওয়ার অনুপ্রেরণা যোগায়। একজন উপর্যুক্ত সঙ্গিনী তার সঙ্গীকে খারাপ এবং জীবনের জন্য ঝুঁকিকর কাজ করা থেকে বিরত রাখতে পারে। যেমনঃ মদ্যপান, মাদক সেবন ইত্যাদি।

স্মৃতিভ্রংশ প্রবণতা কমায়:

যদি জীবনে এমন সঙ্গী থাকে যার কাছে গেলে মনে শান্তি আসে তাহলে বার্ধক্য কখনো তাকে স্পর্শ করতে পারে না। গবেষণায় দেখা গেছে যারা তালাকপ্রাপ্ত হয়ে পুনরায় বিয়ে করে নি তাদের স্মৃতি শক্তি নষ্ট হওয়ার প্রবণতা প্রায় তিন গুন বেশি হয় এবং যারা মাঝ বয়সে বিধবা হওয়ার পর আর বিয়ে করেনি তাদের স্মৃতিভ্রংশ প্রবণতা ছয়গুণ বেড়ে যায়। গবেষকরা বলেন বিবাহিত এবং সারাজীবন মানসিকভাবে এবং সামাজিকভাবে পাশাপাশি থাকলে মন প্রফুল্ল থাকে এবং স্মৃতি শক্তি কম হ্রাস পায়।

বিভিন্ন অসুখ থেকে মুক্তি:

সুখী দম্পতিদের কখনো টাইপ -২ ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা, ফাইব্রোমাইলজিয়া মত অসুখ হতে দেখা যায় না। যেকোনো জিনিস নিয়ে অতিরিক্ত মানসিক চাপ শরীরে উপর খারাপ ভাবে প্রভাব ফেলে। তাই সুস্থ থাকতে হলে সুখী দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করা অতীব জরুরী।

জীবনসঙ্গী খুঁজতে বিবাহবিডি

উচ্চ শিক্ষা শেষে প্রতিষ্ঠিত হবার পরেও যদি আপনার  অথবা  পরিবারের প্রিয় সদস্যটির জন্য উপযুক্ত সঙ্গীর সন্ধান না পাওয়ায় কারনে বিয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে থাকেন তবে আপনার জন্যই অনলাইন বেইজ ম্যাট্রিমনিয়াল সার্ভিস বিবাহ বিডি ডট কম। ঘরে বসেই ফ্রী রেজিষ্ট্রেশন করে  চাহিদা অনুযায়ী পাত্র/পাত্রীদের প্রোফাইল (ছবি সহ বায়োডাটা) দেখে পাত্র/পাত্রী কিংবা অভিভাবকের সাথে সরাসরি নিজেরাই যোগাযোগ করতে সক্ষম হবেন এবং তা অতি দ্রুততম সময়ের মধ্যে ।

পরিস্থিতি বুঝে সম্পর্ক

ভালোবাসা বা প্রেমের সম্পর্ক চাই খুব গোছালো আর মানুষটা তো হবে একদম নিখুঁত। একটি সম্পর্কে যাওয়ার সময় সবারই মনে থাকে রঙিন প্রত্যাশা। সাধারণত ভঙ্গুর বা এলোমেলো কারো সাথে সঙ্গী হতে চায় না কেউ। অথচ ভালোবাসার মূল্য কিন্তু এ মানুষগুলোই দিতে পারে।

যে কারনে কারো খারাপ সময়ের সঙ্গী হবেনঃ

আপনি যখন দুঃসময়ে কারো সাথে সম্পর্কে জড়াবেন তখন সে আপনাকে মিথ্যা স্বপ্ন দেখাবে না এতে করে আপনি প্রত্যাশার জালে ডুবে থাকবেন না বিধায় কষ্টও পাবেন না।

আবেগের চেয়ে বাস্তবতার উপলব্ধি উভয়ের মাঝে বিরাজ করবে যা আপনাদের সম্পর্কে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

কাউকে গড়ে নেয়ার মাঝে আলাদা একটা সুখ আছে। নিজে কিছু তৈরি করলে যেমন মনে এক ধরনের আনন্দ পাওয়া যায়।

কারো খারাপ সময়ে যদি তার সঙ্গী হতে পারেন তাহলে বন্ধুত্বের জায়গাটা সহজেই তৈরি হয়ে যায়। সম্পর্কে বন্ধুত্ব সম্পর্ক খুব জরুরী।

আপনি যখন তার দুঃসময়ে পাশে থাকবেন পরবর্তীতে আপনাকে নিয়েই তার ভালো সময় কাটাবে তাই চলার পথে হতাশ হবেন না।

স্বাভাবিক ভাবে সে আপনাকে অবিশ্বাস করতে পারে যে আপনিও হয়তো তার জীবন থেকে চলে যাবেন এমন অবস্থায় তাকে মানসিক শক্তির যোগান দিন। তাকে বলুন আপনি তার পাশে আছেন ও সারাজীবন থাকবেন।

আপনার প্রতি সঙ্গীর আস্থা বাড়াতে তাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে পারেন বা তার সাথে বেশী সময় কাটান। এতে করে ব্যাক্তি যে খারাপ সময় কাটাচ্ছে সে বিষয় থেকে তার মনোযোগের পরিবর্তন ঘটবে।

সম্পর্কে শ্রদ্ধাবোধ রাখুন। তার ভালো লাগা আর আপনার ভালো লাগার মধ্যে অমিল হতে পারে তাই ধৈর্য্য রাখুন।

কারো খারাপ সময়ে পাশে থাকার ফলে সম্পর্কের ভালো সময়গুলো আসতে সময় লাগে, ধীরে ধীরে সম্পর্কের গুরুত্ব বাড়ে। আর এ সম্পর্ক গুলো সহজে ভাঙ্গে না বরং সুখী হয়।

কারো ভালো সময়ে তার সাথে সম্পর্কে জড়ানোর চেয়ে তার খারাপ সময়ে তাকে ভালোবাসুন এতে আপনি যেমন কাউকে নতুন জীবন গড়ার সুযোগ দিচ্ছেন তেমনি এর থেকে ভালো প্রতিদান সে আপনাকে দিবে।

জর্জ চ্যাপম্যানের মতে-

‘ভালোবাসা পাওয়ার চাইতে ভালোবাসা দেওয়াতেই বেশি আনন্দ।’

সম্পর্কে যত্নশীল আচরণ

জীবনসঙ্গীকে কেবল ভালবাসলেই হয়না ভালো রাখতেও জানতে হয়। আপনি হয়তো আপনার জীবনসঙ্গীকে ভালবাসছেন ঠিকই কিন্তু আপনি তার প্রতি যত্নশীল নন। এতে করে কিন্তু আপনাদের সম্পর্ক হঠাৎ বিরুপ হয়ে যেতে পারে।

সম্পর্কের যত্নশীল আচরণ গুলো কি?

যোগাযোগঃ

আপনি হয়তো খুব ব্যস্ত অথবা সময় করে জেনে নিচ্ছেন আপনার সঙ্গী কি করছে, কেমন আছে, ঠিকঠাক ভাবে আছে কিনা এ বিষয়গুলো হল সঙ্গীর প্রতি যত্নশীল আচরণ। আর আপনি যখন এ বিষয়গুলোর খোঁজ রাখছেন না ব্যস্ততার জন্য বা মনের ভুলে তখন বিষয়টি দাঁড়ায় সম্পর্কের প্রতি অযত্নশীল আচরণ যা আপনার সম্পর্কের মাঝে একসময় দূরত্ব তৈরি করবে।

একান্ত সময় কাটানঃ

দাম্পত্য সম্পর্কে যে বিষয়টি প্রতিদিন করা উচিত তা হল দুজন একান্ত কিছু সময় কাটানো। আপনাদের একান্ত সময়ে আপনারা পরস্পরের ভালো লাগা, অভিমান, অভিযোগ, চাওয়া-পাওয়া বিষয়গুলো বুজতে পারবেন তাই কিছু সময়ের জন্য হলেও একান্ত সময় কাটান।

কাজে সহযোগিতা করাঃ

সাংসারিক বা ব্যক্তিগত যেকোনো ধরনের ছোট-বড় কাজে আপনার সঙ্গীকে সহযোগিতা করুন এতে করে আপনার সঙ্গী আপনার প্রতি ভরসা পাবে। দাম্পত্যে সম্পর্কে কাজে সহযোগিতা বিষয়টি নিয়ে স্বামী-স্ত্রী মধ্যে বেশ হিসাবনিকাশ হয় যার ফলে ঝগড়া হতে থাকে।

মানসিক অবস্থার খোঁজ নিনঃ

মানসিক অবস্থা ব্যক্তির আচরণের উপর প্রভাব ফেলে। যেমন- আপনার সঙ্গী অকারনে রেগে যাচ্ছে, বিষণ্ণ থাকছে, কথা কম বলছে, উদাসীন হয়ে যাচ্ছে এসব আচরণ যদি দেখতে পান তাহলে তার থেকে জেনে নিন কেন সে ভালো নেই। যখন আপনার সঙ্গী তার মনের অবস্থা আপনার কাছে জানাবে হতে পারে কিছু বিষয় আপনার তাকে সঠিক মনে হচ্ছে না তাই বলে ঐ অবস্থায় তাকে এমন কিছু বলবেন না যাতে তার কষ্ট আরও বেড়ে যায়। ঠিক এরকম সময়ে তার কথাগুলো জানুন ও তাকে হালকা হতে দিন। এছাড়া আপনারা দুজনই আপনাদের ব্যাপারে পরস্পরের কাছে সচ্ছ থাকুন।

শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানুনঃ

আপনার সঙ্গীর শারীরিক সকল অবস্থা ভালো আছে কিনা সে বিষয় খোঁজ নিন। এ খোঁজ নেয়াটা যেন শুধু জৈবিক চাহিদার জন্য না হয়ে থাকে। শারীরিক সুস্থতা মানুষের মানসিক অবস্থার উপরও প্রভাব ফেল। যদি আপনার সঙ্গী অসুস্থ থাকে তাহলে তার সেবা করুন। মনে রাখবেন ডাক্তার দেখানো আর ওষুধ কেনা কারো প্রতি যত্নশীল আচরণ হতে পারেনা।

সম্মান করুনঃ

সম্পর্কে সম্মান প্রদর্শন বিষয়টি থাকা অতি জরুরী। আপনাদের মাঝে হয়তো পর্যাপ্ত প্রেম-ভালোবাসা রয়েছে আবার আপনি যখন তখন হয়তো যা তা আচরণ পরিবার, বন্ধুবান্ধব বা বাহিরের কারো সামনে সঙ্গীর সাথে করে ফেলছেন এতে করে কিন্তু আপনার প্রতি তার মনোভাব ও সম্মান নষ্ট হতে থাকবে যা আপনাদের সম্পর্কে ধীরে ধীরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

সঙ্গীর ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিনঃ

আপনার সঙ্গীর ছোট-বড় চাওয়া বা আবদারগুলো পূরণ করার চেষ্টা করুন। হতে পারে আপনার সঙ্গী অসময়ে ঘুরতে যেতে চাচ্ছে অথবা কিছু কিনতে চাইছে তার চাওয়া পাওয়া গুলো পূরণ করুন এতে করে আপনার সঙ্গী একসময় আপনার ইচ্ছেগুলোকে তার ইচ্ছের চেয়ে বড় করে দেখবে।

মাঝে মধ্যে সঙ্গীকে চমকে দিনঃ

আপনার সঙ্গীর ভালো লাগা কিছু উপহার দিয়ে মাঝে মধ্যে তাকে চমকে দিন। কখনও কখনও আপনার বা তার ব্যস্ততার মাঝে ফোন করে বলুন ঘুরতে যাবেন এভাবে চমকে দিন। ব্যস্ততা কে ছুটি দিয়ে দুজন ভালো সময় কাটান এতে দুজনার মানসিক অবস্থা সম্পর্কে ভালো থাকবে।

সঙ্গীর পরিবারের প্রতি আন্তরিকতা প্রকাশ করুনঃ

আপনি সঙ্গীকে ভালবাসছেন, ভালো রাখছেন কিন্ত তার পরিবারের সাথে আপনার সম্পর্ক তেমন ভালো নয় বা আপনি ভালো ব্যবহার করছেন না এতে করে আপনার সঙ্গী পরিবারের কাছে ছোট হচ্ছে। সঙ্গীর পরিবারের প্রতি আন্তরিক হন এতে আপনার সঙ্গীর প্রতি অনেকটা যত্নশীল আচরণের বহিঃপ্রকাশ পায়।

কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুনঃ

আপনার সঙ্গী আপনার খুশির জন্য কিছু করলে তাতে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। যেমন- আপনার জন্য রান্না করা, উপহার দেয়া, আপনার পছন্দমত ঘর সাজানো ইত্যাদি বিষয়ে তার করনীয় কাজে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন।

দাম্পত্য সম্পর্ক মানে কেবল প্রেম-ভালবাসা, জৈবিক চাহিদা বা অর্থ-সম্পদ নয়। একটি সম্পর্কে যত্নশীল আচরণ থাকা প্রয়োজন।

কিছু পরামর্শ নিতে নেই এতে সম্পর্ক নাজুক হয়

দাম্পত্য সম্পর্ক সুখের হোক বা না হোক – সেই সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কেমন হবে তা ঠিক করার দায়িত্ব একমাত্র আপনার। অনেক সময়ই সম্পর্কের নানা সমস্যায় আমরা পরামর্শ চাই কাছের বন্ধু বা আত্মীয়দের কাছে। কখনও কখনও সে সব পরামর্শে কাজ হয়, কখনও আবার হয় না।

তবে কাজ হোক বা না হোক, পরিস্থিতির দায়িত্ব আপনাকেই নিতে হবে এবং নিজেই পথটা খুঁজে বের করতে হবে। এ সব ক্ষেত্রে বন্ধু বা আত্মীয়দের পরামর্শগুলোর ব্যাপারেও সাবধান থাকা দরকার।

স্বামীর সঙ্গে তর্ক কোরো নাঃ

কোনও মতেই এই পরামর্শে কান দেবেন না! তর্ক করলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হতে পারে ঠিকই, কিন্তু সেই ভয়ে চুপ করে থাকাটা কোনও কাজের কথা নয়। নৈর্ব্যক্তিক হয়ে বিষয়টা পর্যালোচনা করা এবং কোথায় আপনাদের দু’জনেরই ভুল হচ্ছে, সেটা খতিয়ে দেখা দরকার। যদি মনে হয় আপনাকে বিনা কারণে দোষী করা হচ্ছে, তা হলে চুপ করে না থেকে মুখ খুলুন। সম্পর্ক সফল করতে দু’জনেরই সক্রিয় ভূমিকা থাকা দরকার।

স্বামীকে পালটানোর চেষ্টা করোঃ

এটা আর একটা ভুল পরামর্শ। কোনও দুটো আঙুল যেমন একরকম হয় না, তেমনি দু’জন মানুষও একরকম হতে পারেন না। সেই পার্থক্যটা মেনে নিতে হবে। স্বামী বা পার্টনারকে যদি পালটাতে চেষ্টা করেন, সেটা হবে আপনার সবচেয়ে বড়ো ভুল। পরস্পরের ব্যক্তিস্বাতন্ত্রকে মেনে নিয়ে জীবনটা গড়ে তোলার চেষ্টা করুন।

সংসারের রাশ নিজের হাতে রাখোঃ

সম্পর্কের মূল কথা হল দু’জনের মধ্যে একটা ভারসাম্য বজায় রাখা। সব কিছুর রাশ নিজের হাতে রাখলে মাথায় অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়ে ফেলবেন, এবং তা থেকে এক সময় হতাশা আর ভুলবোঝাবুঝি তৈরি হবে যা যথেষ্টই এড়ানো সম্ভব। তাই সব দায়িত্ব নিজের উপর রাখবেন না, স্বামীর সঙ্গে ভাগ করে নিন।

স্বামীর ফোনের উপর নজর রাখোঃ

এরকম পরামর্শ শুনলে সেই পরামর্শদাতা ব্যক্তিকে এড়িয়ে চলাই ভালো। অপরের ফোন ঘাঁটা একইসঙ্গে অনৈতিক এবং অভদ্রতার চূড়ান্ত উদাহরণ। স্বামীর ব্যাপারে কোনও কারণে আপনার সন্দেহ তৈরি হতেই পারে, কিন্তু তার জন্য স্বামীর ফোন লুকিয়ে দেখতে যাবেন না। বরং সরাসরি স্বামীর সঙ্গে কথা বলুন।

দাম্পত্য সম্পর্কে দুজনের মনের যোগাযোগের পথটা হওয়া চাই মসৃণ। হঠাৎ করেই সঙ্গীর চেনা আচরণে অচেনা সুর, ছোটখাটো ভুলত্রুটিতে বড় চেহারা দাম্পত্যে অস্থিরতা বাড়িয়ে তুলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষের উপস্থিতিতে সম্পর্কে এমন সমস্যা সৃষ্টি হয়। দুজনের মনের যোগাযোগের পথ হতে হবে দূর্দান্ত;

পারস্পারিক বুঝাপড়া সমান্তরাল। তাই নিজেদের অকৃত্রিম সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখতে দুজনেই যথেষ্ঠ সচেতন হোন।

মানবিক সম্পর্ক

মানুষ সর্বদা দলবদ্ধ ও সামাজিক জীব। তাই আসঙ্গ লিপ্সা মানুষের আজন্মের অভিলাষ। একাকিত্বে মানুষের যন্ত্রনা অনেকগুণ বেড়ে যায় এবং মানুষ ক্রমাগত অসুস্থ হয়ে পড়ে। এজন্য মানুষ একের পর এক সম্পর্ক গড়তে থাকে। তবে সম্পর্কগুলি মানুষের মধ্যে চিরস্থায়ী নয়, মানুষ সম্পর্ক ভাঙ্গে আবার নতুন করে গড়ে তোলে। এভাবে ভাঙ্গা গড়ার স্রোতধারাই জীবনের বহমানতা এবং চির সত্য।

আসলে সম্পর্কগুলি বহতা নদীর মত, সে কখনও সুমধুর তালে বয়ে যেতে থাকে আবার মাঝে মাঝে বাঁক নেয়। তাই জীবনের ঘাঁটে ঘাঁটে এর পরিবর্তন সাধিত হয়। আবার কখনও নতুনত্বের বিচিত্র রূপ নিয়ে সে আপন গতিতে বয়ে চলে। এই বয়ে চলার মধ্যে কোন কোন ঘাঁটে থাকে সংস্কারের জোয়ার আবার কোন কোন ক্ষেত্রে জীবনের জোয়ার। আবার সম্পর্ক প্রবাহের বুকে কখনও সোনার তরী ভেসে বেড়ায় যেখানে তরিখানা অসংখ্য ধনে ভরে থাকে আবার কখনও সেখানে হতাশার ছবিচিত্র জেগে থাকে। এটা মানুষে মানুষে সম্পর্কের স্বাভাবিক রূপ। জন্ম থেকেই মানুষের জীবনের আকাশে সম্পর্কগুলি মেঘের মত এসে এসে জমা হতে থাকে, তার মধ্যে কোন সম্পর্কে কার আগ্রহ বেশি তা দিয়ে তৈরি হয় তাঁর জীবনের গল্প।

প্রথমে ঘর থেকেই সম্পর্কগুলির পরিবর্তনের ধারা সূচিত হয়। তারপর বিশাল পৃথিবী জুড়ে মানুষের সম্পর্ক কখনও ভেঙ্গে যায় আবার কখনও জেগে থাকে। কারণ মানুষ সবার আগে পারিবারিক তারপর সামাজিক । তবে যে সম্পর্ক জেগে থাকে নতুন করে তার পরিবর্তন সাধিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। যদি তার পরিবর্তন না ঘটে তাহলে সে মৃত হয়ে যায়, যে মৃত সম্পর্ক নিয়ে মানুষ চিরদিন ধরে বেঁচে থাকতে পারেনা। কারণ ক্রমাগত বদলের মধ্য দিয়ে মানুষ বর্তমান থেকে ভবিষ্যতে যায়। এই বদলের মধ্যেই থাকে সম্পর্ক ভাঙ্গা গড়ার মন্ত্র, আবার কখনও কখনও প্রয়োজন। জীবনের একটা সময় প্রায় সকল মানুষই পার করে যখন সম্পর্ককে সে স্বার্থের কারনে টিকিয়ে রাখে, আবার কখনও অভ্যাসের কারনে, কখনও কখনও মনুষ্যত্বের কাঁধে ভর করে রক্তের বন্ধনে সম্পর্ক টিকে থাকে।

কখনও কখনও মানব চরিত্রে মনুষ্যত্ব ও ভালবাসা দ্বৈত রূপে প্রকাশিত হয়। দেখা যায় মানুষের ভালোবাসার আকুতি দু-একটা সম্পর্কে থাকলেও অধিকাংশ সম্পর্কেই ভালোবাসা ক্ষণিকের জন্য জন্মে আবার তা আকস্মিক ভাবেই শেষ হয়েও যায়। তাই ভালবাসাহীন সম্পর্কের মাঝে থাকে লেফট রাইট করার প্রবণতা যা মানুষকে অনেকটা একঘেয়ে করে রাখে এবং সুযোগ পেলেই যে সম্পর্ক ভেঙ্গে যায়। আবার কখনও তা জেগে থাকে  শুধুমাত্র মনুষ্যত্বের কারণে এই টিকে থাকা সম্পর্কের কোন কোন ক্ষেত্রে দায় থাকে কিন্তু দায়িত্ববোধ সেখানে অনুপস্থিত। এ থেকে প্রমাণিত হয় মানুষের ভালবাসার সম্পর্কটি গড়ে ওঠে ক্ষণিকের জন্য। যখন কোন কোন ক্ষেত্রে মানুষকে দীর্ঘ মেয়াদী ভালোবাসায় আপ্লূত করে রাখে তখনই মানুষ হয়ে ওঠে অতিমানব।

মানুষের প্রতি ভালোবাসা অনুভব করাই মানবিকতার লক্ষণ। তাই সম্পর্ক সবসময়ই মানবিক হওয়া বাঞ্ছনীয় বলে আমরা মনে করি। পিতা-মাতা, স্বামী-স্ত্রী, পুত্র-কন্যা, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সবই ভিন্ন ভিন্ন সম্পর্কের সোপান, সব সম্পর্কই ভাঙতে পারে আবার সব সম্পর্কই নতুন করে মানুষ গড়তে পারে। তবে সম্পর্কের একটি মেয়াদ থাকে। এই মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নতুন ও পরিবর্তিত রূপে মানুষ মানুষের কাছে আসতে সক্ষম, নাহলে মানবিক সম্পর্ক মরে যায়। মরে যাওয়া সম্পর্ককে কেউ নতুন করে বাঁচিয়ে তুলতে পারে না, কেবল পরিবর্তনের ভেতর দিয়েই আবার মরে যাওয়া সম্পর্কটি নতুন প্রভাতের মত এসে মানুষের চোখে আলো দেয়, আশা দেয়। আসলে আমরা পরিবর্তনশীলতায় বিশ্বাসী। জীবন ও আশা পরিবর্তনের উপর নির্ভরশীল, যেখানে পরিবর্তন নেই সে জায়গাটি মানুষ বাদ দিয়ে সামনে চলে যায় অন্যকোনদিকে, যেখানে মানুষ পরিবর্তনের জোয়ার অনুভব করে। অপরিবর্তনীয় জায়গাটি অচলায়তনের মত একা পড়ে থাকে যাকে মানুষ কখনই কামনা করে না।

মানুষ আশা নিয়ে বেঁচে থাকে। আশা সমাজ জীবনকে পূর্ণ করে তুলতে পারে। বেঁচে থাকার আশা জীবনকে করে গতিশীল, মোহময়। পৃথিবীতে মানুষের বেঁচে থাকার আকুতিই মানুষে মানুষে সম্পর্ক সৃষ্টির মহান উদ্দেশ্য। সম্পর্কগুলো আবর্তিত ও পরিবর্তিত হতে থাকে মানব সমাজের সাংস্কৃতিক নিয়মে। সম্পর্ক নানা কারণে পরিবর্তিত হতে পারে । যেমন বাংলাদেশে যে মেয়ের বিয়ে হয়না সে বাবার বাড়ির মমত্ব হারিয়ে ফেলে, কারণ বিয়ে হওয়া মানে তার প্রতিষ্ঠা পাওয়া। আর মেয়েটি প্রতিষ্ঠা পায়নি বলেই এই কঠিন সত্য তার সম্মুখে এসে হাজির হয়। যদিও ধীর গতিতে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার নিয়মের পরিবর্তন ঘটছে কিন্তু সব সমাজে সব দেশে এখনও এই নিয়ম বলবত আছে, মানে পরিবর্তন ঘটেনি। যে পরিবারটিতে তার জন্ম হয়েছিল সময়ের স্রোতে তার চরিত্রের পরিবর্তন ঘটেছে। সময় এবং সম্পর্ক একই সুত্রে ঘূর্ণয়মান, একে অতিক্রম করা যায়না। আর সম্পর্কের বাঁক এভাবেই ঘুরে মরে।

সম্পর্ক কখনও মধুর হয়, কখনও দ্বন্দ্বময় হয়, কখনও আধিপত্যময়, কখনও শত্রুতা মূলক হয়, আবার কখনও বন্ধুত্বের হাতছানিতে অসম্ভব সুন্দর হয়ে যায়। আধিপত্য মানব জীবনের এবং সম্পর্কের আর একটি বিষয়। মানুষ বেঁচে থাকার মধ্যে চায় একটি সুন্দর সম্পর্কের ভীত। পরিবার যদি আধিপত্য প্রধান হয় তবে বেঁচে থাকার মধ্যে সুখের বদলে তিক্ততা দর্শনীয় হয়ে ওঠে বেশি। আধিপত্যের রূপ বিভিন্ন ধারায় মানুষের মধ্যে বাসা বাঁধে। যেমন স্বামী আধিপত্য বিস্তার করে স্ত্রীর উপর। পিতা মাতা উভয়ের আধিপত্য সন্তানের উপর। সন্তানের আধিপত্য অপেক্ষাকৃত দুর্বল লোকটির উপর। অর্থাৎ সবল মানুষটি অপেক্ষাকৃত দুর্বল লোকটির উপর আধিপত্য বিস্তার করে থাকে। তবে এই আধিপত্য বিস্তারের মধ্যেও কখনও ভালবাসা থাকে যেমন সন্তানের প্রতি মানুষের ভালবাসা অমোঘ।

এভাবে যতদিন মানুষ একের উপর অন্যে আধিপত্য বিস্তার করতে পারে ততদিনই সম্পর্ক একটি করে নাম নিয়ে টিকে থাকে। যখন সময়ের পরিবর্তনে একের প্রতি অন্যের আধিপত্য ম্লান হয়ে আসে তখন সম্পর্কটাও ফিকে হয়ে আসতে থাকে। আধিপত্যও ফিকে হয় সময় ও জীবনের পরিবর্তনের সাথে, তারপর মানুষ দূরে সরে যেতে  থাকে। একে বলা যেতে পারে আধিপত্যময় সম্পর্ক।

গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় এই আধিপত্যময় সম্পর্কের মধ্যে একটি স্বার্থের স্পষ্ট রেখা ফুটে থাকে। যে মানুষ কাউকে সম্পর্কের দ্বারা নির্ভরশীল করে রাখে সে আধিপত্যের মালিক, আর যে মানুষ বেঁচে থাকার জন্য, সমাজের জন্য কারো উপর নির্ভর করে থাকে, তখনকার সময়ের জন্য সে অপেক্ষাকৃত দুর্বল। দুজনেরই সম্পর্কটা সেই সময়ের জন্য মূলত স্বার্থের কারনে টিকে থাকে।

স্বার্থ ছাড়া সম্পর্ক হয়না। যেমন মা বাবার সাথে মানুষের সম্পর্ক থাকে উভয়ের স্বার্থের সম্পর্ক। কথাটা শুনে অনেকেই চমকে যাবে। বলবে মা বাবার চেয়ে নিঃস্বার্থ সম্পর্ক হয়না, এর মধ্যে কোন স্বার্থের ব্যাপার নেই, কিন্তু আসলে তা নয়। আমরা দেখেছি বাবা মায়ের সন্তানদের মধ্যে যে বেশি প্রতিভাবান তাঁর প্রতি তাদের আকর্ষণ বেশি। এটা স্বার্থের বহিঃপ্রকাশ, কারণ ঐ সন্তানটি তাঁদেরকে সমাজের প্রশংসা ও প্রতিষ্ঠা এনে দেয়। এক কথায় মা বাবা সন্তানকে লালান পালন করার কারণ হল নিজের ছায়া তারা সন্তানের মধ্যে দেখতে পায় এবং একটি শিশুকে মানুষ করে তোলার মধ্যে একটি নির্মল আনন্দ অনুভুব করে। এটা মানব সত্তার একটি বৈশিষ্ট্য এবং এক ধরণের স্বার্থ। আর সন্তান অসহায় অবস্থায় মা বাবার কাছে যে আশ্রয় পায় তেমন নির্ভরশীলতার আশ্রয় পৃথিবীর কোথাও নেই। কিন্তু সন্তান বড় হয়ে একসময় নিজের জীবনের চাপে মা বাবা থেকে ক্রমাগত দূরে সরে যেতে থাকে। তারপর এক সময় বাবা মার আবেদন ফুরিয়ে যেতে থাকে তখন কেবল ভালবাসা দিয়ে আর মানবতা দিয়ে অনেকেই সেই সম্পর্ককে সৌন্দর্য মণ্ডিত করে রাখতে পারেনা। এটা একধরনের স্বার্থপরতা।

সময় অনুসারে সম্পর্কের রূপের ভিন্নতা প্রকাশ পায়। এমনতর ভিন্নতাই বলে দেয় কোনটি মানুষের স্বার্থ আর কোনটি নিঃস্বার্থ সম্পর্ক। নিঃস্বার্থ সম্পর্ককে খুঁজে মরা যায় কিন্তু কোথাও পাওয়া যায় না। হয়তো যেখানে পূর্ণ মানুষের বাস সেখানে পাওয়া যেতে পারে। যেমন মানুষ জানে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক শ্রেষ্ঠ, একে অন্যকে ছাড়া জীবনের পথে চলতে পারে না। এ সম্পর্কটি মূলত ভালবাসার সম্পর্ক। অথচ স্বার্থান্ধ মানুষেরা এটাকে প্রথার মধ্যে বেঁধে ফেলেছে। তাই স্বামীর আধিপত্য স্ত্রীর উপর এমন ভাবে বর্তে থাকে যা অনেক সময় স্ত্রী গ্রহণ করতে পারে না। স্ত্রীর বেঁচে থাকার স্বার্থ সেই সম্পর্কের মধ্যে নিহিত থাকে বলে স্ত্রী পায় স্বামীর কাছে সংসারে ভালভাবে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা। এই নিশ্চয়তা যদি রাষ্ট্র নিশ্চিত করতে পারে তাহলে বিয়ের ক্ষেত্রে অনেক সময় মানুষের সংস্কারগুলি পাল্টে যেতে থাকে আর ঘন ঘন বিবাহ বিচ্ছেদ দেখা দিতে থাকে। কারন তখন স্ত্রীকে আর স্বামী নামক প্রভুর দায় মেনে নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। যা মানুষের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়, যেখানে স্বামীস্ত্রীর মধ্যে সুসম্পর্কের কোন দায় থাকেনা, আর সেখানেই পাওয়া যায় প্রকৃত সম্পর্কের বিষয়টি। আবার যে সম্পর্কগুলো নির্দ্বিধায় মৃত্যু পর্যন্ত টিকে থাকে সেখানে ভালবাসাও থাকে এবং স্বার্থও থাকে। ভালবাসা মানে একের প্রতি অন্যের প্রকৃত প্রেম ও নির্ভরতা বেশি থাকে, আর স্বার্থ মানে দুজন দুজনার কাছে এত অভ্যস্ত হয়ে যায় তখন তারা মনে করতে থাকে এত সহমর্মিতা হয়ত পৃথিবীর আর কোথাও নেই। যখন মানুষ একের প্রতি অপরে গভীর মমতা ও স্বচ্ছন্দ নির্ভরতার আবেদন অনুভব করে এবং একে অন্যের উপস্থিতি জীবনের জন্য অনিবার্য বলে মনে করতে থাকে তখন সম্পর্কটি হয়ে যায় সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকার অভিপ্রায়। তবে বিয়ের ভুমিবিস্তারে স্বামীস্ত্রীর সম্পর্কের সাথে পরবর্তী প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষাই মূলত মানুষের কাছে বড় হয়ে দেখা দেয়, তাই ভালোবাসার সম্পর্কের চেয়ে দৈহিক সম্পর্কটাই হয়ে যায় মুখ্য। দেহকে ঘিরেই তখন ভালবাসা জন্ম নেয়। আসলে দৈহিক সম্পর্কই হল মানব সমাজ টিকিয়ে রাখার একটি ব্যবস্থা। মানব ধারা টিকে থাকার জন্যই মানুষের জৈবিক সম্পর্ক যা সকল যুক্তির চেয়ে অনেক বেশি শক্তিতে পৃথিবীতে টিকে থাকে এবং সমাজকে টিকিয়ে রাখে। তাই সম্পর্কটি জটিল হলেও এই সম্পর্কটি মানব সমাজের কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও আকাঙ্ক্ষিত।  বন্ধুত্ব একটা মধুর সম্পর্কের দিক নির্দেশক। যে সম্পর্কটি শুরু হয় সমমনা দুটি মানুষের একই রকম ভাবনার মধ্য দিয়ে। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের ধারায় দুটি মানুষ আর সমমনা থাকেনা, বিভিন্ন কারণে বন্ধু দুজন এক সময় দুরকম ভাবতে শুরু করে। তখন বন্ধুত্বের সম্পর্কটি পানসে হয়ে যায় এবং তা ভেঙ্গে যেতে বাধ্য হয়। কারণ বন্ধুত্বের কংকাল বহন করা মানুষের কাছে ভীষণ ভাবে ওজন দায়ক ও অসহনীয় মনে হতে থাকে। মানুষ বিশ্বাস করে বন্ধুত্বের সম্পর্ক স্বার্থহীন সম্পর্ক। কখনও কখনও তা হলেও  সকল ক্ষেত্রে তা নয়। কোন কোন ক্ষেত্রে স্বার্থই হয়ে ওঠে বন্ধুত্বের মুখ্য বিষয়। সে ক্ষেত্রে যতক্ষণ স্বার্থ থাকে ততক্ষণই সম্পর্ক থাকে তারপর অন্য কোথাও মানুষ বন্ধুত্বের হাতটি বাড়ায়। যার কারণে বন্ধুত্বের সম্পর্ক একসময় ভেঙ্গে যায় আবার নতুন বন্ধুত্ব তৈরি হয়। এভাবে সম্পর্ক গুলি আপন গতিতে ও অস্তিত্বে একজন থেকে আর একজনে ক্রমাগত ভাবে প্রবাহিত হয়। এই সম্পর্ক প্রবাহকে মানব প্রবাহের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। সম্পর্ক প্রবাহিত হয় বলেই পৃথিবীতে মানব ধারা টিকে আছে। পৃথিবীর মানব ধারার মধ্যে সম্পর্ক যেমনি গুরুত্বপূর্ণ তেমনি স্বার্থও গুরুত্বপূর্ণ। তবে স্বার্থান্ধতা কোনক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটা দুর্বল মানুষের প্রতি সবল মানুষের অন্যায় করার অভিসন্ধি। যদি এক শ্রেণী ক্রমাগত লাঞ্ছিত হতে থাকে তাহলে সেখানে ধীরে ধীরে শত্রুতার সম্পর্ক গড়ে ওঠে । মানুষে মানুষে শত্রুতার সম্পর্ক কখনও কাম্য নয়।

পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থেকেই মানবিক সম্পর্ক রক্ষা করতে হয়।  আর সম্পর্কের জন্যই মানুষের চরিত্রে মানবিকতা বেশি বেশি প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে দুইপক্ষকেই মানবিক হতে হয় এবং সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে সচেষ্ট হতে হয়। একপক্ষ সম্পর্কের ব্যাপারে নির্বিকার থাকলে আর একপক্ষ সেই সম্পর্ককে ধরে রাখে না । মানুষের মধ্যে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থেকে সম্পর্কটি নতুনত্ব পায়, কিন্তু যদি পরস্পরের প্রতি কোন শ্রদ্ধাবোধ না থাকে তখন মানবিক সম্পর্কটিও ধীরে ধীরে নিঃশেষ হতে থাকে। সম্পর্কগুলির সর্বদাই পরিচর্যা প্রয়োজন। পরিচর্যা ছাড়া কোন সম্পর্কই টিকে থাকতে পারেনা। পরিচর্যার মাধ্যমেই মানবিক সম্পর্ক টিকে থাকে। মানবিক সম্পর্কই  মানুষের একমাত্র সাধনা। নির্লিপ্ততা কোন সম্পর্কের ধারক নয়। সভ্যতার অগ্রগতির সাথে মানুষের জীবন ধারার পরিবর্তন হয় এবং তার সাথে সাথে মানুষের সম্পর্কগুলোরও পরিবর্তন ঘটিয়ে সে বেঁচে থাকে। পরিবর্তন মানুষকে নেশার মত আকৃষ্ট করে। তাইতো আধুনিক জীবনের সম্পর্কগুলো পরিবর্তিত হয়ে সুন্দর ও মানবিক রূপ গ্রহণ করুক এটাই মানুষের কাম্য।

লিখেছেনঃ রোজানা নাসরীন, টরন্টো

সম্পর্কে জেলাসি

কোথা থেকে যেন উড়ে এসে জুড়ে বসেছে ঈর্ষা আপনাদের সম্পর্কের মাঝে। অনেক সময় অতি মাখোমাখো দাম্পত্যের মধ্যেও প্রায় ঘুণপোকার মতো হানা দেয় ঈর্ষাভাব। যা ক্রমশই সম্পর্কে তিক্ততা আনে। দু’জনের সম্পর্কে ঈর্ষার সমস্যা হলে কী করবেন? 

নতুন সম্পর্ক শুরু করার সময় দু’জনকেই কিছুটা ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। দুটো মানুষ তো দু’রকম হবেনই। এক ছাদেক নীচে মানিয়ে থাকার প্রথম ধাপ অ্যাডজাস্টমেন্ট। কাউকে হয়তো একটু বেশি করতে হয়, কাউকে কম। কিন্তু সবচেয়ে কাছের মানুষটির কাছ থেকে সেই ত্যাগস্বীকারে মূল্য পাওয়া যায় না, উলটে সকলেই তাঁর সাফল্য, তাঁর কেরিয়ার নিয়েই প্রশংসায় মেতে ওঠেন তখন নিজের অজান্তেই সেই মানুষটার প্রতি বিদ্বেষ জন্মাতে পারে। আর থেকই আসে জেলাসি। আসলে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের নানা জটিলতার মধ্যে একটি অবশ্যই একে অপরকে হিংসা।

সঙ্গীর সাফল্য বা চরিত্রের কোনও একটি দিক সম্বন্ধে নেতিবাচক চিন্তা জমে জমেই এই হিংসার জন্ম। এতে মিশে থাকে কিছুটা বঞ্চনার দুঃখ এবং হয়ত কিছুটা অভিমানও। এই নেগেটিভ ইমোশন খুব দ্রুত তার কুপ্রভাব ছড়িয়ে দেয় শরীর-মনে এবং দাম্পত্য পরিণত হয় শুধুমাত্র এক মামুলি নিয়মরক্ষার খেলায়।

‘মানছি আমার স্বামী আমার থেকে অনেক বেশি কেরিয়ারিস্টিক, অনেক বেশি সফল। কিন্তু আমিও তো ফ্যামিলির জন্যে, বাচ্চার জন্যে অনেক ত্যাগস্বীকার করেছি। পড়াশোনায় ভাল হওয়া সত্ত্বেও কেরিয়ারে মন দিতে পারিনি। সত্যি কথা বলতে গেলে, আমার এফর্টের জন্যে আজ ও এত সফল, আমাদের মেয়ে পড়াশোনায় এত ভাল আর সংসার এত সহজে চলে। কিন্তু সবাই কেন ওর প্রোমোশন, ওর কেনা নতুন গাড়ি, ওর লাইফস্টাইল নিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে ওঠে। মেয়েও তো বাবা বলতে অজ্ঞান। আমার পরিশ্রম, আমার খাটনি নিয়ে তো কেউ ভুলেও কোনও মন্তব্য করে না। মাঝে মাঝে মন হয়, সব ছেড়েছুড়ে চলে যাই, তাহলেই সব বুঝবে মজা!’ আচ্ছা আপনার কী মাঝে মাঝেই এরকম মনে হয়? আপনার সবচেয়ে কাছের প্রিয় মানুষটিকে অজান্তে হিংসা করেন না তো? আপনার মনের কোণে স্বামীর সাফল্য, জনপ্রিয়তা বা অন্য কোনও কারণবশত  বিদ্বেষ জমা হচ্ছে না তো?

• নিজের মনের মধ্যে একবার উঁকি দিয়ে দেখুন তো, সমস্যাটা সত্যি কোথায়। আপনার স্বামীর কি সত্যিই দোষ আছে না আপনার মনের কোনও জমে থাকা ক্ষোভ সম্পর্কটা জটিল করে তুলছে। অনেকসময় হেরে যাওয়া বা জনপ্রিয়তা হারাবার ভয় থেকেও জেলাসি জন্ম নেয়। নিজের কাছে সত্‌ থেকে  ভাবনাচিন্তা কাটাছেঁড়া করলেই কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল সহজেই বুঝতে পারবেন।

• স্বামীর সাফল্য ভাগ করে নিন। ওঁর সাফল্যে যে আপনিও অংশীদার সেটা ভুলে যাবেন না। দুজনে মিলে একসঙ্গে এনজয় করুন।

• সিন ক্রিয়েট করবেন না। ছেলেমেয়ের সামনে তো নয়ই। স্বামী-স্ত্রী মধ্যে মতানৈক্য হওয়া স্বাভাবিক কিন্তু তাই নিয়ে কটূক্তি বা কাদা ছোড়াছুড়ি কুরুচির পরিচয়। এর আশ্রয় নিলে আপনি স্বামী এবং সন্তানের চোখে অনেকটাই ছোট হয়ে যাবেন।

• আপনার স্বামীর সঙ্গে একটা আউটিং অ্যারেঞ্জ করুন। বাচ্চাদের সঙ্গে না নেওয়াই ভাল। যেখানে আপনাদের প্রথম দেখা হয়েছিল, যেতে পারেন সেই জায়গায়। সাংসারিক চিন্তাভাবনা ভুলে গিয়ে আগের মতো দুজনে আড্ডা দিন। কথায় কথায় গল্পচ্ছলে নিজের মধ্যে চেপে রাখা কষ্টগুলো ওঁকে জানান। বুঝিয়ে বলুন আপনি ঠিক কীভাবে ওঁকে পেতে চান। ধীরে ধীরে আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে দূরত্বটা কমিয়ে আনার চেষ্টা করুন।

• নিজেকে আর একটু ব্যস্ত করে তুলুন। বাড়ির কাজকর্ম, ছেলেমেয়েদের তদারকি করা ছাড়াও যে বাইরে একটা বিশাল জগৎ আপনার জন্যে অপেক্ষা করে আছে, তার দিকে একটু চোখ ফেরান। পছন্দের কোনও হবি আবার নতুন করে শুরু করতে পারেন বা পার্ট টাইম চাকরিও নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করতে সাহায্য করবে। বাড়িতে বসে ছোটখাট হোম বেসড বিজ়নেস শুরু করতে পারেন। তাহলে মনের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে আত্মবিশ্বাসও বাড়বে।

যৌনতা, বিয়ে ও সামাজিকতা

যৌনতা মানব জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। স্বীকার করুন অথবা নাই করুন জীবনে যৌনতার রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এটি মানুষসহ সকল জীবের অন্যতম চাহিদাগুলোরও একটি। একজন নারী ও পুরুষ বারো থেকে চৌদ্দ বছর বয়সপ্রাপ্ত হলেই তার যৌন চাহিদা দেখা দিতে থাকে। ফলে সে মনে মনে এই চাহিদা মেটানোর উপায় নিয়ে ভাবতে থাকে। এই চাহিদা কোন প্রক্রিয়ায় মেটানো সম্ভব? সকল সমাজ, সকল ধর্ম একটিই বৈধ ও প্রচলিত পন্থা এ ক্ষেত্রে আবিষ্কার করেছে। সেটি হচ্ছে ‘বিয়ে’। বিয়ের মাধ্যমে মানুষ তার যৌন চাহিদা পূরণ করে। সঠিক সময়ে বিয়ে করা যৌন সংক্রান্ত  কেলেঙ্কারী কিংবা দুর্ঘটনাসমূহ রোধের একটি অন্যতম উপায়। কাজেই আমাদের সমাজে বিয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বিভিন্ন দিক দিয়ে।

সভ্যতার আদি থেকেই যৌন চাহিদা মেটানোর জন্য সমাজ পতিতালয় তৈরি করেছে। সেখানে নিয়মিত যাতায়াত করেন কিছু কুরুচিপূর্ণ মানুষ। তারা  সেভাবেই শারীরিক চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু যৌনতা কি শুধু শারীরিক বিষয়? যৌনতা কি শুধু যে কোন নারী বা পুরুষের সাথে একটি নির্দিষ্ট সময় কাটিয়ে শরীর হাল্কা করা? সেটি পশুত্বের সামিল। যৌনতা মানব সৃষ্টির জন্য একটি বিশেষ কর্ম। এখানে শরীর, মন, আন্তরিকতা, পরস্পরের চাহিদা এবং এক ধরনের আত্মিক বিষয় জড়িত। এজন্যই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে গড়ে ওঠে এক গভীরতম সম্পর্ক। অথচ বিয়ের পূর্বে তাদের সাথে কোনো ধরনের পরিচয়ই হয়তো ছিল না।

যুগ ও অর্থনীতির চাহিদার কারণে আমাদের দেশ থেকে প্রচুর মানুষ বিদেশ যায়। কেউ যাচ্ছেন অর্থ উপার্জন করতে, কেউ উচ্চতর শিক্ষার জন্য। যে কারণেই  যাওয়া হোক না কেন এখানে যৌন বিষয়ে কি কোন সমাধানের কথা বলা আছে? নেই। এক বছর দুই বছর কিংবা তারচেয়েও বেশি সময় একজন পুরুষ বা একজন স্ত্রী কীভাবে নিজেদের যৌন চাহিদা মেটাবে একে অপরের অনুপস্থিতিতে? বিষয়টি বেমালুম সবাই ভুলে যান। ফলে নেমে আসে এক অশান্তি ও অবিশ্বাস। আমরা এমন ভান করি এসব ক্ষেত্রে যেন সব কিছু ঠিকঠাক আছে, স্বামী-স্ত্রী একে অপরের কাছ থেকে দূরে থাকা কোনো বিষয় নয়। বিশেষ করে যারা বিবাহিত। আর যারা বিয়ে করেনি আমরা ধরেই নিয়েছি যে, তারা একটু উল্টা-পাল্টা করবেই। এই উল্টাপাল্টা মানে এক ধরনের বিশৃংখলা। কিন্তু সবাই কেন জানি এ বিষয়টিও মেনে নিচ্ছি।

যৌনতা যাতে পশুত্বে পরিণত না হয় সেদিকে আমাদের বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে। কোনো পশু একমাত্র কুকুর ছাড়া যৌনক্রিয়া করার সময় একটু আড়াল খোঁজে, আড়ালে কাজটি সম্পাদন করে। অথচ পশ্চিমা দেশগুলোতে এবং পশ্চিমা দেশগুলোর আদলে প্রাচ্যের যেসব দেশ এগিয়ে যাচ্ছে সেসব দেশেও যৌনতা খোলামেলাভাবে প্রদর্শিত হচ্ছে, এটি কি খুব আনন্দের বিষয়? চীনেও দেখা যায় হাজার হজার লোকভর্তি ট্রেনে প্রেমিক-প্রেমিকা সবার সামনে দিবালোকে গভীর চুম্বনরত। পার্কে একটি মেয়েকে সবার সামনে কোলের ওপর বসিয়ে রেখেছে। আমি বেইজিংয়ের হোটেল রুমে বসে বসে দেখলাম রাস্তার পাশে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে ঘন্টাখানেকের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন ধরনের যৌনকাজ সম্পন্ন করল। তারপর সন্ধ্যা হয়ে এলো, পরে আর স্পস্ট দেখা গেল না। চীন এশিয়ার একটি দেশ। এটি পশ্চিমা কোনো ধনী দেশ নয়, সেখানেই এই অবস্থা আধুনিকতার নামে!  প্রকাশ্য দিবালোকে এবং সূর্য ডোবার আগে এগুলো কী হচ্ছে? আমাদের দেশের বিভিন্ন পার্কে যাবেন কম-বেশি অশ্লীল দৃশ্য চোখে পড়ে। পশ্চিমা দেশ থেকে আগত এসব কালচার কতটা আমাদের সাথে মানানসই? আমেরিকার বিভিন্ন সিটিতে ছেলেমেয়ে চলতে দেখা যায়, হাতে হাত ধরে কিংবা আরও কাছাকাছি কিন্তু সরাসরি প্রকাশ্যে যৌনতা প্রদর্শন খুব একটা চোখে পড়েনি। তবে বিষয়টি তারা সঠিক পথে পরিচালিত করছে না। আর তাই সেখানে পারিবারিক বন্ধন সাময়িক ব্যাপার, অত্যন্ত ঠুনকো। সেখানে লিভ টুগেদার প্রচলিত আর লিভ টুগেদার মানেই তো এক ধরনের বিকৃত অভ্যাস। কিছু কিছু স্টেটে প্রকাশ্যেই দেখা যায়, কোথাও হয়ত একটু রিজার্ভ। তবে কানাডাতে শপিং মলগুলোতে কিংবা রোস্তোরাঁয় প্রকাশ্যে চুম্বনের বিষয়টি প্রত্যক্ষ করেছি। কিন্তু তাদের অনুসারী দেশগুলো যেন দুই ধাপ এগিয়ে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের আগে হিলারী বলেছিলেন, তিনি নারীদের ‘গর্ভপাত’ করার আইন বহাল রাখবেন। এখানে যৌনতা ব্যাপারটি এত অবাধে চলে যে, যে কোনো সময় যে কোনো নারী গর্ভবতী হতে পারে। যেহেতু বাবার কোনো ঠিক থাকবে না কিংবা ফ্রি থাকার জন্য অসংখ্য নারী এখানে গর্ভপাত করেন। আমি দেখেছি কিছু ধর্মীয় সংগঠন এই গর্ভপাতের বিরুদ্ধে ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে  কিংবা ব্যানার টানিয়ে রেখেছে। এদের যৌন আচরণ পুরোপুরি আলাদা।

বিবাহ বিডি কল
বিবাহ বিডি কল সেন্টারঃ +৮৮ ০১৯২২১১৫৫৫৫

একটি সুখের সংসারে অবহেলিত যৌনতা মারাত্মক করুণ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। এর মূল কারণ হচ্ছে যৌনতা সম্পর্কে স্বামী কিংবা স্ত্রীর উদাসীনতা। যে সংসারে স্ত্রী তার স্বামীকে কিংবা স্বামী তার স্ত্রীর যৌনসুখ মূল্যায়ন করে না, উদাসীন থাকে সেখানেই দেখা দেয় সমস্যা। স্ত্রী সুযোগ পেলে অন্য পুরুষের এবং স্বামী সুযোগ পেলে অন্য মেয়ের সান্নিধ্য পেতে চাইবে, এটাই স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়ায় তখন। প্রথম দিকে চুপি চুপি কিছু করা হলেও পরে তা বিদ্রোহী রূপ নেয় এবং এক সময় সংসারভাঙ্গা, হত্যা ইত্যাদি পর্যন্ত গড়ায় আর সংসার যদি টিকিয়ে রাখার চেষ্টাও করা হয় তাহলে সেটি  চলে অবিশ্বাসের মধ্যে, এক ধরনের ধোঁয়াশার মধ্যে । কাজেই স্বামী স্ত্রী উভয়কেই এই বিষয়ে সজাগ ও সচেষ্ট থাকা দরকার।

যৌনতা প্রাকৃতিক বিষয়, মানুষের অত্যাবশ্যকীয় চাহিদা। এখানে শরীর ও মনের সাথে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। একটি ছাড়া অপরটি প্রকৃত সুখকর, উপভোগ্য এবং সার্থক হয় না। তাই প্রাকৃতিক নিয়মেই এটি সম্পন্ন করতে হয়। মানুষ যখন এটি অবাধে, স্বেচ্ছারিতার মনোভাব নিয়ে ভোগ করার চেষ্টা করে, বিকৃত যৌনাচারে লিপ্তা হয় প্রকৃতি তখন বিরূপ হয়। যেমন অবাধ যৌনাচার ও বহুগামিতা মানুষের জন্য মরণব্যাধি ‘এইডস’ নিয়ে এসেছে। বিশ্বের মানুষকে এক ভীতিকর অবস্থায় নিক্ষিপ্ত করেছে। এ থেকে উত্তরণের জন্য সঠিক পারিবারিক এবং বৈধ যৌনচার করার জন্য পশ্চিমা চিকিৎসকগণ তাদের দেশের মানুষদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। সুস্থ যৌনতাই এর একমাত্র সমাধান। পশ্চিমা গবেষকরা  আবিষ্কার করেছেন যে, সুস্থ যৌনচারই এইডস-এর মতো মরণব্যাধি এড়ানোর সঠিক পথ যা আমাদের সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ইদানিং সমকামিতা নামে আর এক যথেচ্ছারিতা, অবাধ ও বিকৃত যৌনাচার শুরু হয়েছে। এর ব্যাপ্তি গোটা বিশ্বে। এটি প্রকৃতিবিরোধী কাজ। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ, বিপরীত লিঙ্গের সাথে মিলন তো প্রকৃতির অবদান, প্রাকৃতিক সুখ ও তৃপ্তি সেখানে নিজেদের তৈরি নিয়ম পুরুষে-পুরুষে, নারীতে-নারীতে যৌনক্রিয়া সেটি কতবড় কুরুচির পরিচয় তা মানুষ হিসেবে আমাদের ভেবে দেখা উচিত!

যৌনতা এক তরফা বিষয় নয়। এখানে উভয়ের মতামত, ইচ্ছে, আগ্রহ এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন। একজনের ইচ্ছে, আগ্রহ বা অংশগ্রহণ এই ক্রিয়াকে সাফল্যমণ্ডিত করতে পারে না। বিষয়টি উপভোগ্যও হয় না। সঠিক যৌন তৃপ্তি ও প্রাকৃতিক চাহিদা মেটানোর জন্য দুজনকেই পালন করতে হয় সক্রিয় এবং আগ্রহী ভূমিকা। যে সংসারে  স্বামী-স্ত্রী দুজনই ব্যাপারটিতে সমভাবে আগ্রহী, সেখানে অবিশ্বাস ও হতাশা জন্ম নেওয়ার স্থান নেই। জীবন হয়ে ওঠে উপভোগ্য, আনন্দের ও সার্থক। তারা পারিবারিক, সামাজিক, ধর্মীয় যে কাজই করুক না কেন অত্যন্ত আনন্দের সাথে, তৃপ্তির সাথে এবং সার্থকভাবে তা করতে পারে। ফলে ধীরে ধীরে সাফল্যের শীর্ষে যেতে পারে। আর যে সংসারে একজন এ বিষয়ে অনাগ্রহী থাকে, উদাসীন থাকে তারা জীবন উপভোগ করতে পারে না সঠিকভাবে। মনোযোগ সহকারে কোনো কাজ করতে পারে না। জীবনকে সাফল্যের দিকে নিতে হলে স্বামী-স্ত্রীকে যৌনতা বিষয়ে সমভাবে আগ্রহী এবং সক্রিয় হতে হবে।  সুত্র ।| লেখকঃ মাছুম বিল্লাহ

সম্পর্কের সুখ দুখ

জানালার শিক ধরে আকাশ পানে চেয়ে আছে তামান্না। পড়ন্ত বিকেলে মেঘেরা বাহারী রঙ গায়ে মাখিয়ে ছোটাছুটি করছে। অপরূপ সে দৃশ্য। কিন্তু সেদিকে তাকিয়ে থেকেও তা দেখছে না তামান্না। কিংবা বলা চলে দেখতে পারছে না। পারবে কিভাবে, তার মন তো তার নিজের মাঝে নেই। উদাস মন মহাশূন্য ভেদ করে ছুটে যাচ্ছে, খুঁজে বেড়াচ্ছে তার হারানো ঠিকানা। কিন্তু পাচ্ছে না। এ জন্য তামান্নার কষ্ট হচ্ছে। ভীষণ কষ্ট। বুকের মাঝে কষ্ট যেন কামড়ে ধরছে। বার বার ঘুরে ফিরে একটি মুখ ভেসে আসছে হৃদয়পটে। আর সঙ্গে সঙ্গে ফাকা হয়ে যাচ্ছে বুক, ফিরে আসছে কষ্টগুলো। দীর্ঘ পাঁচ বছরের ভালবাসার মানুষের সঙ্গে ব্রেকআপ হয়ে গেছে। কিন্তু বার বার ফিরে আসছে কাটানো মধুময় সে সময়গুলো আর সেই সঙ্গে ভালবাসা হারানোর কষ্ট। কোন কিছুতেই মন দিতে পারছে না সে। অথচ আর কিছুদিন পরেই তার পরীক্ষা। এখন কি করবে তামান্না? এরকম পরিস্থিতি তামান্নার মতো হাজারো তরুণ-তরুণীর। হৃদয় ভাঙ্গা কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বিশ্বখ্যাত সংবেশনবিদ (হিপনটিসট) পল ম্যাককেনা এবং মনোচিকিৎসক ড. হগ উইলবর্ন কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। সেই আলোকেই কিভাবে ভগ্ন হৃদয়ের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় তা তুলে ধরা হলো।

কষ্টকে মেনে নিন

যাকে নিয়ে স্বপ্ন বুনেছেন, তার সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙ্গে গেলে কষ্ট লাগাই স্বাভাবিক। কষ্ট না লাগলে বরং বলতে হবে আপনার ভালবাসায় খাদ আছে। তাই কষ্ট লাগবেই, এমনটা ভাবা শুরু করুন, দেখবেন কষ্ট অনেকটাই কমে গেছে। মনে রাখবেন মানুষের জীবন সুখ-দুঃখ মিলেই। ভালবাসার রঙিন সময়টাতে সুখের ভেলায় চড়ে কল্পজগতে পাড়ি দিয়েছেন মহাসমুদ্র, বুনেছেন কতসহস্র স্বপ্ন তার ইয়ত্তা নেই। তাই বলে যে জীবন সবসময় একরকমভাবেই যাবে, তা তো নয়। এটা জীবনের ধর্মও নয়। রাতের অন্ধকার ঘরে প্রবেশ করে কোন কিছু চিন্তা না করেই আপনি লাইটের সুইচ দেন, ঠিক তেমনি ভালবাসার সম্পর্ক ভেঙ্গে গেলে অচেতনভাবেই আপনার মনে অতীতের স্মৃতি চলে আসবে আর তা আপনাকে পোড়াবে, ভেঙ্গেচুড়ে দিতে চেষ্টা করবে, এটাকে স্বাভাবিক ধরে নিন। দেখবেন ধীরে ধীরে কষ্ট কমে যাবে।

পুরনো অভ্যাসগুলোকে পাত্তা দেবেন না

ভালবাসার সময়টাতে আপনাদের জানতে কিংবা অজানন্তে অনেক অভ্যাসই তৈরি হয়ে গেছে। এই অভ্যাসগুলোই এখন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে, তাই না? এক কথায় বলব, ঝেড়ে ফেলুন। যে অভ্যাসগুলো আপনি সে সময়ে করেছেন, সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার চেষ্টা করুন। জানি কষ্ট হবে, কিন্তু কী আর করা। মাথায় কেউ আর আঙুল চালিয়ে চুলগুলো এলোমেলো করে দিচ্ছে না, আঙুলে আঙুলে কাটাকাটি খেলা আর হচ্ছে না। এরকম হাজারো রোমান্টিক কাজ, কত খুনসুটিতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলেন। এখন তা পোড়াচ্ছে। মনে করার চেষ্টা করুন, এগুলো নিতান্তই সে সময়কার অভ্যাস, এগুলো চিরন্তন নয়। সে সময় এগুলোতে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন বলে এখনও যে তা করতে হবে এমনটা তো নয়, এভাবেই ভাবা শুরু করুন। দেখবেন অভ্যাসগুলোর শূন্যতা আপনাকে আর পীড়া দিচ্ছে না। ও, আর হ্যাঁ, আপনি অবশ্যই দুঃখবাদী রোমান্টিক গান শুনবেন না। এটা আপনার পোড়ামনের জ্বালা না কমিয়ে শতগুণ বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, সম্পর্ক ভাঙ্গার পর বেশিরভাগ মানুষই দুঃখের গান শোনে। না, একদমই না। আপনি মোটেও এ ধরনের গান শুনবেন না।

পরিবর্তন আনুন ভাবনায়

প্রেমময় সময়ে কত কিছুই না চিন্তা করেছেন ভাললাগার মানুষটিকে নিয়ে। কত স্বপ্নই না বুনেছেন। এখন ছাড়ুন তো এসব। অনেক হয়েছে, এবার ভাবনা থামান। ভাবনায় ভাললাগার মানুষটি বার বার চলে আসলেও মাথা ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে ফেলুন। দেখুন তো অন্য কোন কিছু ভাবা যায় কিনা। যেমন ধরুন, আপনি আপনার চারপাশের পরিবেশ, মানুষ, সমাজ ইত্যাদি নিয়ে ভাবা শুরু করতে পারেন। মনে রাখবেন, ভাবনার আগের ফ্রেম থেকে নিজেকে সরিয়ে এনে নতুন ফ্রেম বসাতে হবে, নাহলে আপনার মুক্তি নেই। কী বুঝলেন তো? আরে ভাই, পুরনোকে আঁকড়ে ধরে পড়ে থাকলে তো হবে না, পৃথিবীতে কত কিছুই তো হচ্ছে, এগুলো নিয়ে ভাবা শুরু করুন, নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবা শুরু করুন। দেখবেন, একটা সময় কষ্ট ফিঁকে হয়ে আসবে।


অতীতকে যেভাবে দেখছেন তা পাল্টে দিন

সম্পর্ক ভেঙ্গে গেছে, তাই বলে কী স্মৃতিরা চলে গেছে? মোটেই না। অতীত সম্পর্ক নিয়ে ভাবা, কষ্ট কষ্ট খেলা এক ধরনের বদঅভ্যাস। কী, এই কথা শুনে মেজাজ বিগড়ে গেল? ভাবছেন, আপনাকে নিয়ে ইয়ার্কি করা হচ্ছে। তা নয়। অনেক নিরাশাবাদী মানুষ আছেন যারা অতীতের দুঃখ নিয়ে পড়ে থাকতেই বেশি ভালবাসেন। এটা তাদের বদঅভ্যাস। এই বদঅভ্যাসের জন্য তাদের দীর্ঘ সাধনা দরকার। সেটার অন্য সমাধান আছে। আর আপনি যদি নিরাশাবাদী না হন, তাহলে অতীতের স্মৃতি মনে চলে আসলে ভাবুন ঐটা আপনার কল্পনা ছিল। আপনি ওগুলো সিনেমায় দেখেছেন, বাস্তবে নয়। হোক না মিথ্যা, সমস্যা থেকে যদি ভাল থাকা যায়। মনকে যা বোঝাবেন তাই বুঝবে। মন বড় বোকা, হে।

বিবাহবিডি কল সেন্টারঃ +৮৮ ০১৯২২১১৫৫৫৫

মনে মনে প্রিয়ার ছবি আঁকুন

কী পাগল ভাবছেন। এতক্ষণ স্মৃতি ভুলে থাকতে বলে, এখন আবার বলছি প্রিয়ার ছবি আঁকতে, পাগল ছাড়া আর কী। কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার বিষয়টা তো জানেন। এ পদ্ধতিটি আসলে সেরকমই। প্রথমে আপনি একটা দৃশ্যকল্প নিজের মনের মধ্য সেট করুন। চোখ বন্ধ করে দেখতে থাকুন আপনার ভালবাসার মানুষটি হাসছে, গাইছে, নাচছে, আপনার সঙ্গে খুনসুটি করছে। দেখতে বেশ ভালই লাগছে, তাই না। কিন্তু এ ভাললাগা তো বেশিক্ষণের নয়। একটু পরেই আসবে যন্ত্রণা। চিন্তা করবেন না। এবার দেখতে থাকুন আপনার ভাললাগার মানুষটি আপনার ওপর অযৌক্তিকভাবে রেগে যাচ্ছে, আপনি মান ভাঙ্গানোর চেষ্টা করছেন তবু কমছে না। দেখতে থাকুন তার বদ অভ্যাসগুলো আর সেই সঙ্গে আপনার খাপ খাওয়ানোর প্রাণান্তকর চেষ্টা। ভাবুন আপনি একজন সিনেমার পরিচালক ও অভিনেতা। আপনি আর আপনার ভাললাগার মানুষটি তাতে অভিনয় করছেন এবং দেখা দৃশ্যকল্পগুলো আপনার অভিনয় ও পরিচালনার মধ্য দিয়েই হচ্ছে। দেখুন তো আপনার অনুভূতিতে কোন পরিবর্তন আসছে কিনা। পরের দৃশ্যগুলোর কারণে আগের দৃশ্যকল্পের রঙিন ছবিগুলো সাদা কালো হয়ে যাচ্ছে, তাই তো। হ্যাঁ, এটাই আপনার বাস্তব জীবনে হতো যদি আপনার সম্পর্ক ছেদ না হতো। রঙিন জীবন সাদা কালো হয়ে যেত। এভাবে দৃশ্যকল্প আঁকলে দেখবেন ভালবাসার বেগ কমে গেছে।

সম্পর্কের উল্টো দিকটা তলিয়ে দেখুন

একটা কথা সবসময়ই সত্য, এক হাতে তালি বাজে না। এটা মাথায় আপনাকে রাখতেই হবে। যে সমস্যাগুলোর জন্য আপনার সম্পর্ক ভেঙ্গে গেছে, সেগুলো নিয়ে ভাবুন। সমস্যাগুলো তো নিশ্চয় ছোট ছিল না, তাই না? সম্পর্ক টিকে থাকলে সে সমস্যাগুলো আরও সৃষ্টি হতে পারত। তাই যা হয়েছে, ভাল হয়েছে, এমনটাই ভাবুন। মনে রাখবেন, দুষ্টু গরুর চেয়ে যেমন শূন্য গোয়াল ভাল, তেমনি সমস্যা তথা জটিলতাপূর্ণ সম্পর্কের চেয়ে না থাকাই ভাল। তাহলে আর সারা জীবন পস্তাতে হবে না। সম্পর্কের এই উল্টোদিকটি ভেবে দেখুন। দেখবেন, পুরনো সম্পর্কটি নিয়ে আপনার মধ্যে আর আপসোস জাগবে না। বরং মনে হবে, বেঁচে গেছি। আর যদি পারিবারিক কারণে আপনি নিজেই সম্পর্ক ছেদ করে থাকেন, তাহলেও সেটাকে আত্মত্যাগ হিসেবেই নিন। জীবনের প্রয়োজনে মানুষকে অনেক আত্মত্যাগ করতে হয়, অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তাই একে স্বাভাবিক ধরে নিন। নিজের পক্ষে যুক্তি দাঁড় করান। পরিবারের মানুষদের হাসিভরা মুখগুলোর কথা মনে করুন, দেখবেন আপনার কষ্ট অনেকটাই মনে যাচ্ছে।

নিজের দিকে তাকান

অনেক তো হলো, এবার নিজের দিকে তাকান। কান্নাকাটি অনেক করেছেন। আয়নায় নিজের চেহারাটি দেখুন। কী বিমর্ষ। চাঁদবদনের কী হাল করেছেন, দেখেছেন? এ কী সহ্য করা যায়! একটা কথা অপ্রিয় শোনায়, তবু চিরন্তন। আপনি বাঁচলে বাপের নাম। আর কিছু বলতে হবে? অনেক স্মৃতি স্মৃতি খেলা খেলেছেন, এবার নিজের দিকে একটু নজর দিন। এই দেশ সমাজ, আপনার পরিবারের প্রতি আপনার অনেক দায়িত্ব, এভাবে ভাবুন না একবার। নিজের জন্য এবং অন্যদের জন্য আপনাকে ঘুরে দাঁড়াতেই হবে, ভুলে যেতে হবে পুরনো স্মৃতি, এমন কথামালা আওড়াতে থাকেন। দেখবেন, আপনার ভেতর থেকে পুরনো স্মৃতি ভুলে নতুন করে বাঁচার তাগিদ সৃষ্টি হবে।

বিশ্বাস করুন আপনি আবারও প্রেমে পড়বেন

সময় বহমান, তাই তো? জীবনও বহমান। কারও জন্যই জীবন থেমে থাকে না। সম্পর্ক ভেঙ্গে গেছে বলে যে আবার কোন সম্পর্ক হবে না, তা তো না। এমন কোন নিয়ম তো কোথাও নেই যে, জীবনে আপনাকে একবারেই ভালবাসতে হবে। আর এমনটাও নয় যে, আপনি অতীতের ভালবাসা ছাড়া আর কাউকে ভালবাসতে পারবেন না। কেউ যদি বলে থাকে, তবে হয় আবেগের বশে বলে নয় ডাহা মিথ্যা কথা বলে। নতুন কারও সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার চিন্তা করুন। বন্ধু খুঁজুন। পারলে বিপরীত লিঙ্গের কারও সঙ্গেই বন্ধুত্ব করুন। বিপরীত লিঙ্গের মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব আপনার পুরনো স্মৃতিকে ভুলে যেতে সাহায্য করবে। আর প্রেম করতে পারলে তো সোনায় সোহাগা।

হল্লার মাঝে ডুবে যান

দুঃখের সময় মানুষ যদি নিঃসঙ্গ থাকে, তখনই মানুষ বেশি কষ্ট পায়। স্মৃতিরা তাড়া করে ফেরে। এজন্য একাকী না থেকে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে হৈহল্লায় মেতে উঠুন। জানি, মন সায় দেবে না। তবু বলছি, একটু মনে জোর এনেই আড্ডা দিতে যান। প্রয়োজনে বেশি সময় আড্ডা দিন। দেখবেন নির্মল আড্ডার মধ্যে দিয়েই আপনি ভুলে যেতে থাকবেন, পুরনো স্মৃতি। বন্ধুদের নিয়ে দূরে ঘুরে আসতে পারেন, পিকনিক করতে পারেন। কিংবা জড়িয়ে পড়তে পারেন সমাজসেবামূলক কাজে। আর ঘর থেকে বের হওয়ার অসুবিধা থাকলে বই পড়া শুরু করেন কিংবা লেখালেখি। যেভাবেই হোক নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। দেখবেন ধীরে ধীরে আপনার কষ্ট কমে যাচ্ছে। আপনি আবার ফিরে যাচ্ছেন স্বাভাবিক জীবনে।

শর্ত : বিয়ের পর বউ চাকরি করতে পারবে না

বিয়ের জন্য পাত্রী খোঁজা হচ্ছে। আধুনিক প্রতিষ্ঠিত ছেলেটি চান ভালো মেয়ে, সুন্দর, বনেদি পরিবার ও শিক্ষিত। আর মেয়েটি যদি মেধাবী হন, তা হলে তো ষোলোকলা পূর্ণ। তবে শর্ত একটি, বিয়ের পর বাড়ির বউ চাকরি করতে পারবে না। আধুনিকতার মুখোশের আড়ালে এমন সংকীর্ণতা অনেক পাত্র ও তাঁর পরিবারের মধ্যে দেখা যায়। কর্মক্ষেত্রে নিজের যোগ্যতায় সফল মেয়েটি অনেক সময় চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন। পরিবারের কথা ভেবে অনাকাঙ্ক্ষিত অশান্তি এড়াতে এমন সিদ্ধান্ত মেয়েরা নেন। বিয়ের পর স্বামী চান না বলে চাকরি ছেড়ে দিয়ে ঘরে বসে থাকেন অনেকেই। স্বামী বা শ্বশুরবাড়িকে খুশি করলেও নিজের ভেতরে গুমরে কেঁদে মরেন তাঁরা। নারীর ক্ষমতায়ন, আধুনিকতা ও ব্যক্তিস্বাধীনতার কথা কপচানো অনেক পুরুষই বাস্তবে কর্মজীবী স্ত্রী পছন্দ করেন না।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অরিনের বিয়ের কথা চলছে। একজনের সঙ্গে বিয়ের পাকা কথা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিয়েটা হয়নি। রুচিশীল শিক্ষিত ছেলেটিকে অরিনের ভালো লেগেছিল। কিন্তু বিয়ের তারিখ চূড়ান্ত করার আগে ছেলেটি শর্ত দিয়ে বসলেন—বিয়ের আগেই অরিনকে চাকরি ছেড়ে দিতে হবে। কেননা, তাঁর বউ চাকরি করলে লোকে নাকি ভাববে, ভরণ-পোষণ দিতে পারছেন না। এমন হাস্যকর যুক্তি মেনে না নিতে পারায় বিয়েটা শেষ পর্যন্ত ভেঙে গেল। এ বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় নাকি এখন অনেক বিয়ের কথাই বেশি দূর এগোচ্ছে না। হতাশ হয়ে অরিনের মা-বাবা মনে করেন, এই সামান্য শর্ত মানলে কী এমন ক্ষতি হতো!বিয়ের পর চাকরি ও সংসার কি একসঙ্গে সামলাতে পারবে? সন্তান হলে তাকে কাজের লোকের কাছে বড় হতে হবে। সারা দিন কাজ শেষে বউ বাড়ি ফিরবে। তখন পরিবারকে সময় দিতে চাইবে না। আর চাকরি করলে বউ বশে থাকে না। নিজের স্ত্রী চাকরি করার বিপক্ষে এসব যুক্তি দিয়েছেন বেশ কয়েকজন ছেলে। তাঁদের কেউ কেউ মনে করেন, ভালো মেয়েরা চাকরি করেন না।

ছেলেদের এসব যুক্তির সঙ্গে মেয়েরা কি একমত? ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন হুমায়রা (ছদ্মনাম)। তিনি বলেন, ‘বিয়ের পর আমি চাকরি ছেড়ে দেব। আমার সন্তান একা বড় হবে, এটি চাই না। এতে আমার ব্যক্তিস্বাধীনতা থাকবে না কিংবা ব্যক্তিত্বে প্রভাব পড়বে, এমনটি মনে করি না। সুন্দরভাবে সংসার করাও একটি শিল্প।’

তা হলে এত দূর পড়াশোনা করার কোনো মূল্যই থাকবে না! বিয়ে নামের সামাজিক বন্ধন স্বপ্ন পূরণে বাধা দেবে, এটি মানতে পারেন না নৌশিন। তিনি মনে করেন, ভালো বোঝাপড়া থাকলে সংসার ও চাকরি—দুটোই সামলানো সম্ভব। এখানে স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই ছাড় দিতে হবে। পরস্পরকে সহনশীল হলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আর যে ছেলে কোনো মেয়ের স্বপ্ন ও কাজকে শ্রদ্ধা না করবে, তিনি স্বামী হিসেবে কতটা ভালো হবেন, এ নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। হুমায়রা আর নৌশিনের বাইরেও আছেন অনেকে। তাঁদের মতে, পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর সেটা নিতে হবে মেয়েটিকেই। মেয়েটি যদি সবকিছু ঠিকঠাক সামলাতে পারে তা হলে সমস্যা কিসের!

অনেক সময় মেয়ের অভিভাবকেরাও চান, এই সামান্য ছাড় দিলে কী হয়? চাকরির জন্য সংসার টিকবে না, এটি তাঁরা মেনে নিতে পারেন না। ফলে মেয়ের মতামত গুরুত্ব পায় না তাঁদের কাছে। ব্যতিক্রমও আছেন কেউ কেউ। সরকারি কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের তিন মেয়েই কর্মজীবী। বড় দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। ছোট মেয়ের বিয়ের কথা চলছে। তিনি ভাবতেও পারেন না, তাঁর মেয়েরা কখনো চাকরি ছেড়ে দেবেন। নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মা-বাবা পাশে থাকলে মেয়েরা সব পারে। আমার তিন মেয়ে চাকরি করে। এটি কত বড় গর্বের, তা বোঝানো যাবে না। পাত্রপক্ষ কিছু বলার আগেই বড় দুই মেয়ের বিয়ের সময় আমি উল্টো শর্ত দিয়েছিলাম, বিয়ের পর মেয়েকে চাকরি করতে দিতে হবে।’

অভিভাবকদের বুঝতে হবে, মেয়ে স্বাবলম্বী হলে ভবিষ্যতে যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সামলাতে পারবেন। হতেই পারে বিয়ের পর স্বামীকে কোনো কারণে সাহায্য করতে হলো। তার চেয়ে বড় কথা, দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী ঘরে বসে না থেকে কাজ করলে পরিবার থেকে দেশ—সবার জন্যই ভালো। এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে ছেলেদেরই। চাকরিজীবী স্ত্রীকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে হবে। শুধু মুখে মুখে আধুনিক না হয়ে কাজেও দেখাতে হবে।

রাতারাতি সবার মানসিকতার পরিবর্তন হবে, এমনটা আশা করা ঠিক নয়। সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের পাশাপাশি সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তনও জরুরি। নারীর ক্ষমতায়ন জোরদার করতে হলে রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে। মনে করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। তাঁর সঙ্গে একমত বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। তিনি জানান, ছেলেদের এই মনোভাব নারীর জন্য ইতিবাচক নয়; বরং বিবাহিত জীবনেও অনেকখানি ঝুঁকি রয়ে যায়।বন্ধুত্ব থেকে বিয়ে হলেও অনেক সময় মেয়েদের এসব সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতাবোধ অন্যতম একটি কারণ। বিয়ের পর সন্তানের মা হওয়ার পর বাড়িতে কোনো লোক না থাকলে, অফিসে শিশু দিবাযত্নকেন্দ্র না থাকলে তখন সাধারণভাবে মাকেই চাকরি ছাড়ার কথা বলে সবাই।ফলে এ ধরনের পরিস্থিতি যেন তৈরি না হয়, সেই পরিবেশ বাড়ির সদস্যদের বা প্রতিষ্ঠানকে দিতে হবে।

-তৌহিদা শিরোপা