মানুষ কেন পরকীয়ায় জড়ায়

ইউকিপিডিয়ার মতে পরকীয়া (ইংরেজি: Adultery বা Extramarital affair বা Extramarital sex) হল বিবাহিত কোন ব্যক্তির (নারী বা পুরুষ) স্বামী বা স্ত্রী ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তির সাথে বিবাহোত্তর বা বিবাহবহির্ভূত প্রেম, যৌন সম্পর্ক ও যৌন কর্মকান্ড। মানবসমাজে এটি লঘু বা গুরুভাবে নেতিবাচক হিসেবে গণ্য পাশ্চাত্য আধুনিক সমাজে এর প্রতি নেতিবাচক মনোভাব বজায় থাকলেও এটি আইনত অপরাধ বলে বিবেচিত হয় না, তবে অভিযোগ প্রমাণিত হলে পরকীয়াকারী ব্যক্তির বিবাহিত সঙ্গী তার সাথে বিবাহবিচ্ছেদের জন্য কোর্টে আবেদন করতে পারেন।

তবে কিছু ইসলামি রাষ্ট্রসমূহে এর জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে, যা হল পাথর নিক্ষেপ করে মৃত্যুদন্ড প্রদান। মনোচিকিৎসায় একথা স্বীকৃত যে, পিতামাতার পরকীয়া সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর এবং সামাজিক সম্পর্ক ও যোগাযোগে বিরূপ প্রভাব ফেলে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা সন্তানের মানসিক বিষন্নতার ও আগ্রাসী মনোভাবের জন্ম দেয়। এছাড়া পারিবারিক ও দাম্পত্য সম্পর্কের অবনতিতে পরকীয়া প্রভাব রাখে ।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের চাইল্ড অ্যাডোলসেন্ট ও ফ্যামিলি সাইকিয়াট্রি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন –

“মনোদৈহিক ও সামাজিক কারণে মানুষ পরকীয়ায় জড়ায়। প্রথমে আসে দৈহিক বিষয়। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যৌন সম্পর্কে অতৃপ্তি থেকে অনেকে এ সম্পর্কে জড়ায়। সেক্স মানুষের একটি শরীরবৃত্তীয় চাহিদা। যদি স্বামী-স্ত্রীর যৌনজীবন দুর্বল হয়, তাহলে অপর ব্যক্তির প্রতি আসক্তি তৈরি হতে পারে। কারো মধ্যে যদি DRD4 জিনের উপস্থিতি বেশি হয়, তাঁদেরও পরকীয়া বা বাড়তি সম্পর্কে জড়ানোর প্রবণতা থাকতে পারে।

অনেক সময় মানসিক সমস্যার কারণেও মানুষ পরকীয়ায় জড়াতে পারে। যাঁদের মধ্যে বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডার আছে, তাঁদের পরকীয়ার সম্পর্কে জড়ানোর প্রবণতা দেখা যায়। তাঁরা কোনো কিছুর মধ্যে স্থিরতা খুঁজে পায় না।

সঙ্গীর উদাসীনতা ও দূরত্বের কারণেও অনেক সময় মানুষ পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে জানিয়ে তিনি বলেন, অনেক সময় স্বামী-স্ত্রী বাস্তবতার কারণে, কাজের কারণে হয়তো দূরে চলে যায়। তখন তাঁদের মধ্যে পরকীয়ার আগ্রহ বাড়ে। অনেক সময় পশ্চিমা সংস্কৃতির ধাঁচ নিজেদের মধ্যে আনতে চায়, তখন পরকীয়া বাড়ে। এ ছাড়া স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্ব, দূরত্ব ইত্যাদির জন্যও অন্যের প্রতি আগ্রহ, আসক্তির ঘটনা ঘটে”

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তানজির আহম্মদ তুষার বলেন –

“প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে পরকীয়ার বিষয়টি চলে আসছে। উন্নয়ন ও মঙ্গলের কথা চিন্তা করে মানুষ একগামী। তবে মানুষ মূলত বহুগামী। পরকীয়াতে যেকোনো একজনকে বিবাহিত হতে হবে অথবা দুজনই বিবাহিত থাকতে পারেন”।

মানুষ কেন পরকীয়ায় জড়ায় –

এ বিষয়ে তানজির আহম্মদ বলেন – “এক ধরনের প্রয়োজন বা চাহিদার কারণে মানুষ পরকীয়ায় জড়ায়। অনেক সময় শারীরিক প্রয়োজন থাকে। আর্থিক প্রয়োজন থাকে। স্ট্যাটাস বাড়ানোর জন্যও কেউ কেউ পরকীয়ায় জড়ায়। অনেক সময় মানসিক প্রয়োজন থাকে। আবার কিছু বিষয় শেয়ার করতে করতে অনেকে একসময় পরকীয়ায় জড়িয়ে যায়।

অতিরিক্ত নির্ভরতা থেকেও পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়তে পারে, আবার অনেক সময় অবস্থার কারণেও হয়তো পরকীয়ায় জড়ায়। হতে পারে একসঙ্গে কোথাও বেড়াতে গেল। একপর্যায়ে হয়তো ভালো লেগে গেল। তখনও পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। আবার দীর্ঘসময় একসঙ্গে কাটাতে কাটাতে, বন্ধুত্ব থেকেও অনেক সময় পরকীয়া হয়ে যায়। অনেকে শখ থেকেও পরকীয়ায় জড়ায়।

অন্য আরেকটি শরীর কেমন, একে জানার একটি আগ্রহ থাকে। অনেকে আবার ভাবে, ‘ওরা কি সুখী! এই মানুষটির সঙ্গে থাকতে পারলে হয়তো আমার অনেক সুখ লাগত।’ এ থেকেও অনেকে ওই ব্যক্তির প্রতি আগ্রহ অনুভব করে। অনেক সময় মিডিয়াও পরকীয়ার প্রবণতা তৈরি করে। বিভিন্ন ধরনের পর্নোসাইট দেখে পরকীয়ার প্রতি আগ্রহ তৈরি হতে পারে। আসলে অধিকাংশ মানুষেরই একটি বাড়তি চাহিদা থাকে। তবে সামাজিক ও ধর্মীয় নিয়মনীতির কারণে এ সম্পর্কে জড়ায় না। অনেকে কিছু সুবিধা আদায়ের জন্য পরকীয়া করে জানিয়ে তিনি বলেন, হয়তো আর্থিক সাহায্য পাবে এ সম্পর্কে জড়ালে, এমন ভাবনা থেকেও কেউ কেউ পরকীয়ায় জড়ায়”।

সাইকোলজিস্ট ইশরাত জাহান বীথি বলেন –

পরকীয়ার পেছনে জড়ানোর একটি বড় কারণ হলো শূন্যতা। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যখন শূন্যতা তৈরি হয়, তখন আরেকজন সেখানে প্রবেশ করে। হয়তো স্বামী বা স্ত্রীর আর আগের মতো করে কথা বলে না বা আদর করে না। যত্ন কম নেয়। এই বিষয়গুলোর কারণে অন্যের প্রতি আসক্তি তৈরি হয়। স্বামী-স্ত্রী দূরে থাকলেও এ সমস্যা হতে পারে। মেয়েদের বিয়ের আগে হয়তো যৌন চাহিদা তেমন থাকে না। বিয়ের পর তাঁরা বুঝতে পারে বিষয়টি। শুধু যৌনতায় অংশগ্রহণ নয়, কথাবার্তায়ও বিষয়টি থাকতে হয়। তখন যদি অন্য কেউ সেই কথাগুলো শোনায়, তাহলে তাঁর প্রতি আগ্রহ কাজ করে।

শারীরিক গঠন এ ব্যাপারে কাজ করতে পারে। কিছু কিছু ছেলে চিকন স্বাস্থ্যের মেয়ে পছন্দ করে। আবার কিছু কিছু ছেলে হয়তো একটু স্থুল স্বাস্থ্যের মেয়ে পছন্দ করে। সন্তান হওয়ার পর অনেক মেয়ে স্থুল হয়ে যায়। এতে স্ত্রীর প্রতি আগ্রহ কমে যেতে পারে। আবার নারীর বেলায়ও অনেকে হয়তো খুব হ্যান্ডসাম ছেলে পছন্দ করে, যা হয়তো তাঁর স্বামীর সঙ্গে মেলে না।

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ছোট ছোট চাওয়াগুলো হয়তো পূরণ হচ্ছে না। হয়তো স্ত্রী চাঁদ দেখতে পছন্দ করে, স্বামী সেটিকে বিলাসিতা মনে করে। এ রকম সময় অন্য কেউ যখন সেই জায়গায় আসে, তখন নির্ভরতা বেড়ে যায়। আবার অনেকে ভাবে, আমি তো একসঙ্গে দুটোকেই ব্যালেন্স করছি। তাই আমি এমন একটি সম্পর্ক করতেই পারি।

আবার অনেকে মনে করেন, স্বামী বা স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও খুব ভালো একজন বন্ধু অথবা বান্ধবী থাকতে পারে। যার সঙ্গে মানসিক শেয়ারিং ও শারীরিক সম্পর্ক—দুটো বিষয়ই থাকতে পারে। এটা দোষের কিছু নয়। কারণ, বন্ধুত্বের সম্পর্কে কোনো প্রতিজ্ঞা নেই। যে কেউ যেকোনো সময় হয়তো এখান থেকে সরে আসতে পারে। একে অনেকে পরকীয়া বলে মনে করে না।

আবার অনেকে বিবাহবিচ্ছেদের পর বৈবাহিক সম্পর্কে জড়াতে চায় না। বিবাহিত কারো সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে নিজের চাওয়াগুলো পূর্ণ করতে চায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানসিক ও শারীরিক প্রয়োজন মেটানোর বিষয়টিই এখানে মুখ্য হয়। এসব ভাবনা ব্যক্তিকে পরকীয়ার প্রতি আকৃষ্ট করে তোলে বলেই মনে করেন ইশরাত শারমীন রহমান।”

আলিঙ্গনের মানে

প্রেমের উষ্ণতা বোঝাতেই হোক বা বন্ধুত্বের গভীরতা…আলিঙ্গন বরাবরই বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। তাই, শুধুমাত্র দু’টি মানুষের শারীরিক ঘনিষ্ঠতার মধ্যেই এর গুরুত্বকে সীমিত রাখলে চলবে না! সম্পর্ক যাই হোক না কেন, পারস্পরিক বিশ্বাস, ভরসা, আত্মীয়তা—সবই ফুটে ওঠে এই বিশেষ কাজটির মাধ্যমে!

বিয়ার হাগ: একে অপরের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠতার পরিচায়ক এই আলিঙ্গনটি ‘ডেডলক হাগ’ বলেও পরিচিত। সাধারণত কাছের কোনও মানুষকে দূরে সরে না যাওয়ার আকুতি ফুটে ওঠে এর মধ্যে দিয়ে। সঙ্গীকে হারানোর ভয় বা এক ধরনের ইনসিকিউরিটিও থাকে কিছু ক্ষেত্রে। তবে সম্পর্ক মজবুত হলেও যে এরকম ঘনিষ্ঠ আলিঙ্গন করতে পারবেন না, এমনটা নয়!

পোলাইট হাগ: সাধারণত ঝগড়ার পরে বা কোনও কারণে সঙ্গী যদি আপনার সঙ্গে কমফর্টেবল বোধ না করেন, তাহলে এরকম আলিঙ্গন হতে পারে। এতে দু’জনের শরীরের মধ্যে কিছুটা জায়গা ফাঁকা থাকে, অর্থাৎ দু’জনে শারীরিকভাবে অতটাও ঘনিষ্ঠ হন না। আলিঙ্গনের সময় সঙ্গী যদি এরকম দায়সারা আচরণ করেন, তাহলে বুঝতে হবে তিনি খুব একটা আগ্রহী নন।

স্ট্যান্ড-স্টিল হাগ: সাধারণত এক্ষেত্রে, একজন সঙ্গী যতটা প্যাশনের সঙ্গে আলিঙ্গন করেন, উলটোদিকের মানুষটি ততটাই শীতল, শান্ত। তিনি আলিঙ্গনের জন্য হাতটুকুও তোলেন না! অর্থাৎ, পারস্পরিক আদানপ্রদানের বড্ড অভাব। এর কারণ অবশ্য বাইরে থেকে বোঝা দুর্বোধ্য। তবে আপনার সঙ্গী হয়তো এখনও বুঝে উঠতে পারছেন না যে পুরোপুরি সম্পর্কের মধ্যে থাকা উচিত কি না!

ইন্টিমেট হাগ: এর আক্ষরিক অর্থ নিশ্চয়ই আর আলাদা করে বলে দিতে হবে না! দু’জনেরই গভীর আবেগ আর আই কনট্যাক্ট এর প্রধান বৈশিষ্ট্য। শারীরিক ঘনিষ্ঠতার থেকেও এক্ষেত্রে চোখে চোখ রেখে ভালবাসা ব্যক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ।

বাডি হাগ: সঙ্গীকে একপাশ থেকে আলিঙ্গন করলে বা কাঁধের এক দিক থেকে হাত রাখলে বোঝা যায় যে শুধুমাত্র রোম্যান্স নয়, বরং পারস্পরিক বিশ্বাস ও ভরসার জায়াগা আপনাদের মধ্যে রয়েছে। আর আপনারা একে অপরের ‘বেস্ট ফ্রেন্ড’ও বটে!

প্যাম্পারড হাগ: সঙ্গীর কপালে আলতো চুমু বা পিঠে হাত রাখা! মূলত আপনার কেয়ারিং স্বভাবেরই প্রতিফলন বলা চলে একে। সাধারণত বয়স্ক মানুষেরাও কম বয়সিদের স্নেহের বশে এরকমটা করে থাকেন।

ব্যাক হাগ: সঙ্গীকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরাই এরকম আলিঙ্গনের বৈশিষ্ট্য। এর মাধ্যমেও কিন্তু নিরাপত্তার আশ্বাস ব্যক্ত করা সম্ভব। দু’পক্ষের মধ্যে বোঝাপড়াও যে মজবুত, তাও বোঝা যায়।    

অতীত সম্পর্ক এবং …

পুরনো প্রেমিকা বা স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কে ইতি টেনেছেন। অথচ মাঝেমধ্যেই আপনার জীবনে ঘুরে ফিরে আসছে সেই অনুষঙ্গ। হঠাত্‌ আপনার সঙ্গে যদি তাঁর দেখা হয়ে যায় আবার? তাও আবার বর্তমান সঙ্গীর উপস্থিতিতে! রইল পরিস্থিতি সামলানোর কিছু টিপস।

আমাদের অনেকের জীবনেই ‘এক্স’ সত্যিই একটা বড় ফ্যাক্টর! প্রেমের বা দাম্পত্য সম্পর্ক ভেঙে গেলে এতদিনের খুব কাছের মানুষটা যখন প্রাক্তন বা ‘এক্স’ হয়ে যায়, তখন সম্পর্কের সমীকরণগুলোও খুব দ্রুত বদলাতে থাকে। নতুন সম্পর্ক তৈরি হলেও কোথাও একটা ফাঁকা জায়গা বোধহয় থেকেই যায়। সময়ের নিয়মে আপনি ও আপনার পুরনো সঙ্গী দু’জনেই যদি অন্য কাউকে বিয়ে করে নেন, তাহলেও একে অপরকে পুরোপুরি ভুলে যাওয়া অনেক সময় সম্ভব হয় না। আসলে, সম্পর্কে ইতি টানলেই যে মাথা থেকে পুরনো সঙ্গীকে ঝেড়ে ফেলতে পারেন না অনেকেই। আর পুরনো কারওর জায়গায় যদি নতুন কেউ আসে, তখন নতুন সেই সম্পর্কের উষ্ণতায় পুরনো দিনগুলো ধীরে ধীরে ফিকে হতে শুরু করে। 

কিন্তু হঠাত্‌ করে যদি কোনওদিন দেখা হয়ে যায় পুরনো প্রেমিকা বা স্ত্রীর সঙ্গে? অনেকেই এধরনের সিচুয়েশনের জন্য তৈরি থাকেন না বলে রীতিমতো এমব্যারাসড হয়ে পড়েন। অনেক সম্পর্ক শেষ হয় তিক্তভাবে। প্রেমে প্রতারিত হয়ে বা তৃতীয় ব্যক্তির উপস্থিতির কারণে যদি আপনার ব্রেক আপ হয়ে থাকে, তখন পুরনো সঙ্গীটির প্রতি চাপা রাগ থেকেই যায়। হয়তো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সে রাগের বহিঃপ্রকাশ আপনি আর নাও করতে পারেন। তবে পুরনো প্রেমিকের সঙ্গে দেখা হলে মাথা ঠান্ডা রাখাই শ্রেয়। আপনার বর্তমান সঙ্গীকে পুরনো সম্পর্কের ব্যাপারে খোলাখুলি জানাবেন। উনি যদি সত্যিই আপনাকে বিশ্বাস করেন তবে এ ব্যাপারে জানলেও তিনি আপনাকে ভুল বুঝবেন না। প্রাক্তন স্বামী বা স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্স বা সেপারেশনের কারণটাও তাঁকে খোলাখুলি জানান। 

এমনটাও তো হতে পারে, আপনার অনুপস্থিতিতে আপনার বর্তমান স্ত্রীর সঙ্গে আপনার পুরনো প্রেমিকা বা স্ত্রীর দেখা হয়ে গেল! ‘প্রাক্তন’ সিনেমার সেই দৃশ্যটার মতো! যেখানে ট্রেনের কামরায় উজানের বর্তমান স্ত্রীর সঙ্গে হঠাত্‌ই দেখা হয়ে যায় তাঁর প্রাক্তনের। বাস্তবে, এরকম অবস্থায় পুরনো সম্পর্কের কথা লুকোলে বর্তমান সম্পর্কের উপর তার অনর্থক প্রভাব পড়তে বাধ্য। কোনওদিন রাস্তায় বা শপিং মলে দেখা হলে হাসিমুখে তাঁর সঙ্গে বর্তমান সঙ্গীর আলাপ করিয়ে দিন।

সম্পর্ক নিয়ে কেন অসুখী হই আমরা!

সাধারনত প্রতিটি মানুষের মাঝেই হতাশা, রাগ, অভিমান, বিষণ্ণতা মোটকথা কোনো না কোনো মানসিক সমস্যা একটু-আধটু থাকেই। যাকে উদ্বেগ বা প্যাথলজিক্যাল অ্যাংজাইটি বলা হয়ে থাকে। কিন্তু যখন তা আমাদের নিয়ন্ত্রনের বাহিরে চলে যায় তখন সেটি আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটাতে শুরু করে। বিশেষত Relationship anxiety বা সম্পর্কের উদ্বেগ আমাদের জীবনে এতোটাই বাজেভাবে প্রভাব ফেলে যা আমাদের আশে-পাশে থাকা আপন মানুষগুলোর সাথে সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব বাড়িয়ে দেয়।

‘সম্পর্কের উদ্বেগ’ যার সাথে কম-বেশি প্রত্যেকটি মানুষ সংগ্রাম করে বেঁচে থাকে। এটি আপনার সম্পর্কের মাঝে ভালোবাসা বৃদ্ধির করার পরিবর্তে ভয়, সন্দেহ, ঈর্ষা, একঘেয়েমি ও নিরাপত্তাহীনতা বাড়িয়ে তোলে যা আপনার সুন্দর সম্পর্কটিকে দীর্ঘস্থায়ী হতে বাঁধা প্রদান করে।

আসুন দেখে নেয়া যাক যেসব কারণে আমরা অসুখী সম্পর্কের সম্মুখীন হই

অতিরিক্ত রাগ রাগ সাধারনত আবেগের একটি অংশ। যা প্রতিটি মানুষের মধ্যেই কম-বেশি বিদ্যমান। তবে এটি মানবজীবনে ইতিবাচক প্রভাবের চেয়ে নেতিবাচক প্রভাবই বেশি বিস্তার করে। কারণ, যখন একজন ব্যক্তি রেগে যায় তখন তার আপাদ-মস্তকে তাপের সৃষ্টি হয়। ফলে তার হিতাহিত জ্ঞান বলতে কিছু থাকে না। তখন সে নিজের প্রতি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে।

‘অতিরিক্ত রাগ’ যা আমাদের আপনজনদের সাথে সুন্দর সম্পর্কগুলোর মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করে। অল্পতেই রেগে যাওয়া এবং সেই রাগগুলোর দীর্ঘ স্থায়ীত্বকাল সম্পর্কগুলোর মধ্যে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। রেগে গিয়ে অনেকেই অনেক অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলে যার ফল তাকে সারাটা জীবন ভোগ করতে হয়। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো না। কারণ এই অতিরিক্ত রাগই আমাদের মধুর সম্পর্কগুলোতে অসুখী হবার অন্যতম কারণ।

বিশ্বাসের ঘাটতি: একটি সম্পর্কের মূল স্তম্ভই হলো বিশ্বাস। একটি সম্পর্কের মাঝে বিশ্বাস যত দৃঢ়তর সে সম্পর্কটি তত শক্তিশালী হয়ে থাকে। ঠিক তেমনি বিশ্বাস বিহীন একটি সম্পর্ক বড্ড নড়বড়ে যা সম্পর্কগুলোর মাঝে বিশাল দূরত্বের সৃষ্টি করে। বিশ্বাস হচ্ছে সম্পর্কের খুঁটি। যার উপর ভর করে সম্পর্কগুলো চলতে থাকে বছরের পর বছর।

সাধারনত কারো সম্পর্কে অবিশ্বাসের বীজ বপন হয় তৃতীয় পক্ষের কোনো ব্যক্তি দ্বারা অথবা নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির কারণে। অবিশ্বাসের বীজ বপন হওয়া সম্পর্কগুলোর মাঝে সবসময় একধরনের দ্বন্দ্ব লেগেই থাকে যা ধীরে ধীরে সেই সম্পর্কের মাঝে ফাটল ধরিয়ে দেয়। এভাবে চলতে চলতে একটা সময় সম্পর্কগুলোর মধ্যে পুরোপুরি বিচ্ছেদ হয়ে যায়। আর এভাবেই সুন্দর সুন্দর সম্পর্কগুলো বিচ্ছেদের মাধ্যমে আমরা আমাদের জীবনকে অসুখী করে তুলি।

আর্থিকভাবে অসচ্ছলতা: আমরা যতই বলে থাকিনা কেন; ‘ভা্লোবাসার কাছে অর্থ মূল্যহীন’ কিন্তু বাস্তবতা ঠিক সেরকম নয়। ক্ষেত্র বিশেষ ভালোবাসা, অর্থ এবং ভালোবাসা ও অর্থ উভয়ই সম্পর্কগুলোর মাঝে পার্থক্য গড়ে তুলতে পারে। মানবজীবনে ভালোবাসা যেমন অপরিহার্য একটি জিনিস ঠিক তেমনি বেঁচে থাকতে হলে অর্থের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

বর্তমান সময়ে অর্থ ব্যতীত যেখানে এক কদম আগানো প্রায় অসম্ভব সেখানে অর্থ ব্যতীত ভালোবাসার মানুষগুলোর সাথে জীবন পাড়ি দেওয়া শুধুই স্বপ্ন। এই অর্থ যেমন প্রায় সকল সমস্যার সমাধান দিতে পারে ঠিক তার বিপরীত এই অর্থের অসচ্ছলতা একটি সম্পর্কের মাঝে শত সমস্যার সৃষ্টি করে। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে সৃষ্ট বিভিন্ন সমস্যাগুলো ধীরে ধীরে সম্পর্কের মধ্যে ফাটল ধরিয়ে দেয়। বর্তমান সময়টা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে অর্থ না থাকলে খুব আপন মানুষগুলোও দূরে সরে যায়। এতে সম্পর্কগুলোর মাঝে সুখ নামক জিনিসটা উধাও হয়ে যায়।

সম্পর্কের প্রতি অযত্নবান: যে সম্পর্ক যতবেশি যত্নবান সে সম্পর্ক ততবেশি দৃঢ়। একটি ভালো সম্পর্ক কখনোই একদিনে গড়ে উঠে না। তিলে তিলে যত্নসহকারে সম্পর্কগুলোকে ভালোবাসায় পরিণত করতে হয়। প্রতিটিক্ষেত্রে এই সম্পর্কগুলোকে যথাযথ যত্ন ও ভালোবাসার সহিত আগলে না রাখলে একদিন সে সম্পর্কগুলোর মাঝেও মরিচা ধরা শুরু করে।

প্রিয় মানুষগুলো আপনার কাছ হতে অনেক কিছুই আশা করে। তারা চায় আপনি তাদের প্রতি একটু যত্নবান হোন, তাদের চাওয়া-পাওয়াগুলোকে গুরুত্ব দিন। মোটকথা, যেকোনো জিনিসের যত্ন না নিলে যেমন তা অকেজো হয়ে যায় ঠিক তেমনই কোনো সম্পর্কের যদি যত্ন না নেওয়া হলে সেই সম্পর্কটিও আস্থাহীন হয়ে পড়ে। জীবন থেকে হারিয়ে যায় সুখ নামক জিনিসটি।

সম্পর্কের প্রতি শ্রদ্ধাহীন : প্রতিটি সম্পর্কই অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও সম্মানের। শ্রদ্ধা ও সম্মানে পরিপূর্ণ সম্পর্কগুলো অত্যন্ত সুন্দর ও সুখময় হয়ে উঠে। এবং সময়ের সাথে সাথে সম্পর্কগুলো আরও পরিপক্বতা লাভ করে। এমনকি সম্পর্কগুলো অটুট থাকে জীবনাবসান অবধি।

কিন্তু কিছু মানুষ তাদের সম্পর্কগুলোকে সম্মান করে না বা করতে জানে না। অহমিকা, অবিশ্বাস ও শ্রদ্ধাহীনতায় সম্পর্কগুলো বরং অশান্তির খোরাকে পরিণত হয়। একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাহীন সম্পর্কগুলোও খুব বেশি স্থায়ী হয় না। জীবনযুদ্ধের মাঝপথে এসে থমকে দাঁড়ায়। যেখান থেকে নতুন করে সুখ খুঁজে নেবার আর কোনো পথ থাকে না।

সম্পর্কের প্রতি অবহেলা: অবহেলা অত্যন্ত নিগৃহীত একটি জিনিস। কোনো ব্যক্তিই কারো অবহেলার পাত্র হতে চায় না। যে অবহেলিত হয় সে নিজেও হাজারো চেষ্টা চালিয়ে যায় তার ভালোবাসার মানুষটির কাছ থেকে অবহেলার পরিবর্তে একটু ভালোবাসা পেতে। অথচ অধিকাংশক্ষেত্রেই সময়ের সাথে সাথে ভালোবাসা পাবার চেয়ে অবহেলিত হবার পরিমাণটা আরো বেড়ে যায়।

সবকিছু সহ্য করা যায় কিন্তু ভালোবাসার মানুষগুলোর কাছ থেকে অবহেলা জিনিসটা সহ্য করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। অবহেলিত হতে হতে তা যখন মানুষটির ধৈর্যের সীমা অতিক্রম করে ফেলে তখন সে শত কষ্ট হলেও সে পথ হতে মুক্তি পেতে চায়। কিন্তু তারপরও একটু ভালোবাসা পাবার জন্য প্রিয় মানুষটির শত অবহেলা উপেক্ষা করেও পথ চেয়ে থাকে। দিনশেষে একরাশ অবহেলা, হতাশা ও ব্যর্থতা নিয়েই বেঁচে থাকতে হয় মানুষটিকে।

অহংকার: অহংকার বা অহমিকা মানুষের অস্বাভাবিক, বিকৃত ও জঘন্যতম একটি স্বভাব। অহংকার শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের পতনের মূল কারণই নয়, এই অহংকার একটি সুন্দর সম্পর্ক পতনেরও অন্যতম কারণ।

একজন অহংকারী ব্যক্তি নিজেকে সবসময়ই বড় মনে করে থাকে। এবং তার পাশে থাকা মানুষটিকে সবসময় তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে থাকে। এতে করে একটি সম্পর্কের সাথে সম্পৃক্ত মানুষগুলোর মনে ঐ অহংকারী ব্যক্তির প্রতি একপ্রকার ঘৃনার জন্ম নেয়। যা তাদের মধ্যে বেশ দূরত্ব সৃষ্টি করে দেয়। বয়ে আনে অশান্তি। পতন হয় হাজারো যত্নে গড়ে তোলা একটি সুখী সম্পর্কের।

আপনজনদের সময় না দেওয়া: ব্যস্ততম জীবনের মাঝেও প্রতিটি মানুষ চায় তার প্রিয়জনদের সাথে কিছুটা সময় কাটাতে। আপনজনদের সাথে কাটানো সময়গুলো সবসময়ই মধুর হয়ে থাকে। তাদের সাথে কাটানো স্মৃতিগুলো সম্পর্কের গভীরতা আরো বাড়িয়ে দেয়। নিজেদের মধ্যে অপ্রকাশিত ভালোবাসাগুলো ফুটে উঠে খুব সহজেই।

কিন্তু বাস্তবতা কিছু মানুষকে সবসময়ই তার ভালোবাসার মানুষগুলো থেকে অনেকটা দূরে সরিয়ে রাখে। বাস্তবতার সাথে হেরে যাওয়া মানুষগুলো সবসময় এক ধরনের অপূর্ণতায় ভুগে। যদিও অনেকেই ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখে। তবে যাই হোকনা কেন; ভালোবাসায় আপন মানুষগুলো যখন তাদের প্রিয় মানুষটির কাছ হতে প্রাপ্য সময় না পায় তখন তাদের মাঝেও সবসময় একধরনের বিষণ্ণতা বিরাজ করে।

সকলের মতামতকে প্রাধান্য না দেওয়া : যখন আপনি কারো সাথে একটি সম্পর্ক গড়ে তুলবেন তখন আপনাকে তার মতামতকে অবশ্যই প্রাধান্য দিতে হবে। একতরফাভাবে যেরকম একটি সম্পর্ক গড়ে উঠে না ঠিক তেমনই একতরফাভাবে কখনোই কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহন করা ঠিক না। সেক্ষেত্রে সম্পর্কগুলোর সাথে যুক্ত প্রতিটি ব্যক্তির মতামত মন দিয়ে শোনা এবং তাদের মতামতকে যথাসাধ্য প্রাধান্য দেওয়া অপরিহার্য।

কিন্তু যখন আপনি সেই সম্পর্কের সাথে সম্পৃক্ত কোনো কাজে তার মতামতকে প্রাধান্য না দিয়ে নিজের ইচ্ছে মতো সম্পন্ন করার চেষ্টা করবেন তখন সে নিজেকে মূল্যহীন মনে করবে। এমনকি এভাবে চলতে চলতে একটা সময় তা সম্পর্কের মাঝে মারাত্মকভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

দিন শেষে জীবনযুদ্ধে তারাই বিজয়ী যারা শত ব্যস্ততা, ব্যর্থতা, ও অপূর্ণতা দূরে সরিয়ে রেখে আপনজনদের নিয়ে সুখে জীবনযাপন করছে। সুখ-দুঃখ মিলিয়েই জীবন। সকল বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে আপন মানুষগুলোকে ভালোবেসে ভালো রাখাটাই সবচেয়ে বড় সার্থকতা। সবশেষে, ভালো থাকুন এবং ভালো রাখুন আপনার আপনজনদের।

সম্পর্কের সুখ দুখ

জানালার শিক ধরে আকাশ পানে চেয়ে আছে তামান্না। পড়ন্ত বিকেলে মেঘেরা বাহারী রঙ গায়ে মাখিয়ে ছোটাছুটি করছে। অপরূপ সে দৃশ্য। কিন্তু সেদিকে তাকিয়ে থেকেও তা দেখছে না তামান্না। কিংবা বলা চলে দেখতে পারছে না। পারবে কিভাবে, তার মন তো তার নিজের মাঝে নেই। উদাস মন মহাশূন্য ভেদ করে ছুটে যাচ্ছে, খুঁজে বেড়াচ্ছে তার হারানো ঠিকানা। কিন্তু পাচ্ছে না। এ জন্য তামান্নার কষ্ট হচ্ছে। ভীষণ কষ্ট। বুকের মাঝে কষ্ট যেন কামড়ে ধরছে। বার বার ঘুরে ফিরে একটি মুখ ভেসে আসছে হৃদয়পটে। আর সঙ্গে সঙ্গে ফাকা হয়ে যাচ্ছে বুক, ফিরে আসছে কষ্টগুলো। দীর্ঘ পাঁচ বছরের ভালবাসার মানুষের সঙ্গে ব্রেকআপ হয়ে গেছে। কিন্তু বার বার ফিরে আসছে কাটানো মধুময় সে সময়গুলো আর সেই সঙ্গে ভালবাসা হারানোর কষ্ট। কোন কিছুতেই মন দিতে পারছে না সে। অথচ আর কিছুদিন পরেই তার পরীক্ষা। এখন কি করবে তামান্না? এরকম পরিস্থিতি তামান্নার মতো হাজারো তরুণ-তরুণীর। হৃদয় ভাঙ্গা কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বিশ্বখ্যাত সংবেশনবিদ (হিপনটিসট) পল ম্যাককেনা এবং মনোচিকিৎসক ড. হগ উইলবর্ন কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। সেই আলোকেই কিভাবে ভগ্ন হৃদয়ের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় তা তুলে ধরা হলো।

কষ্টকে মেনে নিন

যাকে নিয়ে স্বপ্ন বুনেছেন, তার সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙ্গে গেলে কষ্ট লাগাই স্বাভাবিক। কষ্ট না লাগলে বরং বলতে হবে আপনার ভালবাসায় খাদ আছে। তাই কষ্ট লাগবেই, এমনটা ভাবা শুরু করুন, দেখবেন কষ্ট অনেকটাই কমে গেছে। মনে রাখবেন মানুষের জীবন সুখ-দুঃখ মিলেই। ভালবাসার রঙিন সময়টাতে সুখের ভেলায় চড়ে কল্পজগতে পাড়ি দিয়েছেন মহাসমুদ্র, বুনেছেন কতসহস্র স্বপ্ন তার ইয়ত্তা নেই। তাই বলে যে জীবন সবসময় একরকমভাবেই যাবে, তা তো নয়। এটা জীবনের ধর্মও নয়। রাতের অন্ধকার ঘরে প্রবেশ করে কোন কিছু চিন্তা না করেই আপনি লাইটের সুইচ দেন, ঠিক তেমনি ভালবাসার সম্পর্ক ভেঙ্গে গেলে অচেতনভাবেই আপনার মনে অতীতের স্মৃতি চলে আসবে আর তা আপনাকে পোড়াবে, ভেঙ্গেচুড়ে দিতে চেষ্টা করবে, এটাকে স্বাভাবিক ধরে নিন। দেখবেন ধীরে ধীরে কষ্ট কমে যাবে।

পুরনো অভ্যাসগুলোকে পাত্তা দেবেন না

ভালবাসার সময়টাতে আপনাদের জানতে কিংবা অজানন্তে অনেক অভ্যাসই তৈরি হয়ে গেছে। এই অভ্যাসগুলোই এখন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে, তাই না? এক কথায় বলব, ঝেড়ে ফেলুন। যে অভ্যাসগুলো আপনি সে সময়ে করেছেন, সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার চেষ্টা করুন। জানি কষ্ট হবে, কিন্তু কী আর করা। মাথায় কেউ আর আঙুল চালিয়ে চুলগুলো এলোমেলো করে দিচ্ছে না, আঙুলে আঙুলে কাটাকাটি খেলা আর হচ্ছে না। এরকম হাজারো রোমান্টিক কাজ, কত খুনসুটিতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলেন। এখন তা পোড়াচ্ছে। মনে করার চেষ্টা করুন, এগুলো নিতান্তই সে সময়কার অভ্যাস, এগুলো চিরন্তন নয়। সে সময় এগুলোতে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন বলে এখনও যে তা করতে হবে এমনটা তো নয়, এভাবেই ভাবা শুরু করুন। দেখবেন অভ্যাসগুলোর শূন্যতা আপনাকে আর পীড়া দিচ্ছে না। ও, আর হ্যাঁ, আপনি অবশ্যই দুঃখবাদী রোমান্টিক গান শুনবেন না। এটা আপনার পোড়ামনের জ্বালা না কমিয়ে শতগুণ বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, সম্পর্ক ভাঙ্গার পর বেশিরভাগ মানুষই দুঃখের গান শোনে। না, একদমই না। আপনি মোটেও এ ধরনের গান শুনবেন না।

পরিবর্তন আনুন ভাবনায়

প্রেমময় সময়ে কত কিছুই না চিন্তা করেছেন ভাললাগার মানুষটিকে নিয়ে। কত স্বপ্নই না বুনেছেন। এখন ছাড়ুন তো এসব। অনেক হয়েছে, এবার ভাবনা থামান। ভাবনায় ভাললাগার মানুষটি বার বার চলে আসলেও মাথা ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে ফেলুন। দেখুন তো অন্য কোন কিছু ভাবা যায় কিনা। যেমন ধরুন, আপনি আপনার চারপাশের পরিবেশ, মানুষ, সমাজ ইত্যাদি নিয়ে ভাবা শুরু করতে পারেন। মনে রাখবেন, ভাবনার আগের ফ্রেম থেকে নিজেকে সরিয়ে এনে নতুন ফ্রেম বসাতে হবে, নাহলে আপনার মুক্তি নেই। কী বুঝলেন তো? আরে ভাই, পুরনোকে আঁকড়ে ধরে পড়ে থাকলে তো হবে না, পৃথিবীতে কত কিছুই তো হচ্ছে, এগুলো নিয়ে ভাবা শুরু করুন, নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবা শুরু করুন। দেখবেন, একটা সময় কষ্ট ফিঁকে হয়ে আসবে।


অতীতকে যেভাবে দেখছেন তা পাল্টে দিন

সম্পর্ক ভেঙ্গে গেছে, তাই বলে কী স্মৃতিরা চলে গেছে? মোটেই না। অতীত সম্পর্ক নিয়ে ভাবা, কষ্ট কষ্ট খেলা এক ধরনের বদঅভ্যাস। কী, এই কথা শুনে মেজাজ বিগড়ে গেল? ভাবছেন, আপনাকে নিয়ে ইয়ার্কি করা হচ্ছে। তা নয়। অনেক নিরাশাবাদী মানুষ আছেন যারা অতীতের দুঃখ নিয়ে পড়ে থাকতেই বেশি ভালবাসেন। এটা তাদের বদঅভ্যাস। এই বদঅভ্যাসের জন্য তাদের দীর্ঘ সাধনা দরকার। সেটার অন্য সমাধান আছে। আর আপনি যদি নিরাশাবাদী না হন, তাহলে অতীতের স্মৃতি মনে চলে আসলে ভাবুন ঐটা আপনার কল্পনা ছিল। আপনি ওগুলো সিনেমায় দেখেছেন, বাস্তবে নয়। হোক না মিথ্যা, সমস্যা থেকে যদি ভাল থাকা যায়। মনকে যা বোঝাবেন তাই বুঝবে। মন বড় বোকা, হে।

বিবাহবিডি কল সেন্টারঃ +৮৮ ০১৯২২১১৫৫৫৫

মনে মনে প্রিয়ার ছবি আঁকুন

কী পাগল ভাবছেন। এতক্ষণ স্মৃতি ভুলে থাকতে বলে, এখন আবার বলছি প্রিয়ার ছবি আঁকতে, পাগল ছাড়া আর কী। কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার বিষয়টা তো জানেন। এ পদ্ধতিটি আসলে সেরকমই। প্রথমে আপনি একটা দৃশ্যকল্প নিজের মনের মধ্য সেট করুন। চোখ বন্ধ করে দেখতে থাকুন আপনার ভালবাসার মানুষটি হাসছে, গাইছে, নাচছে, আপনার সঙ্গে খুনসুটি করছে। দেখতে বেশ ভালই লাগছে, তাই না। কিন্তু এ ভাললাগা তো বেশিক্ষণের নয়। একটু পরেই আসবে যন্ত্রণা। চিন্তা করবেন না। এবার দেখতে থাকুন আপনার ভাললাগার মানুষটি আপনার ওপর অযৌক্তিকভাবে রেগে যাচ্ছে, আপনি মান ভাঙ্গানোর চেষ্টা করছেন তবু কমছে না। দেখতে থাকুন তার বদ অভ্যাসগুলো আর সেই সঙ্গে আপনার খাপ খাওয়ানোর প্রাণান্তকর চেষ্টা। ভাবুন আপনি একজন সিনেমার পরিচালক ও অভিনেতা। আপনি আর আপনার ভাললাগার মানুষটি তাতে অভিনয় করছেন এবং দেখা দৃশ্যকল্পগুলো আপনার অভিনয় ও পরিচালনার মধ্য দিয়েই হচ্ছে। দেখুন তো আপনার অনুভূতিতে কোন পরিবর্তন আসছে কিনা। পরের দৃশ্যগুলোর কারণে আগের দৃশ্যকল্পের রঙিন ছবিগুলো সাদা কালো হয়ে যাচ্ছে, তাই তো। হ্যাঁ, এটাই আপনার বাস্তব জীবনে হতো যদি আপনার সম্পর্ক ছেদ না হতো। রঙিন জীবন সাদা কালো হয়ে যেত। এভাবে দৃশ্যকল্প আঁকলে দেখবেন ভালবাসার বেগ কমে গেছে।

সম্পর্কের উল্টো দিকটা তলিয়ে দেখুন

একটা কথা সবসময়ই সত্য, এক হাতে তালি বাজে না। এটা মাথায় আপনাকে রাখতেই হবে। যে সমস্যাগুলোর জন্য আপনার সম্পর্ক ভেঙ্গে গেছে, সেগুলো নিয়ে ভাবুন। সমস্যাগুলো তো নিশ্চয় ছোট ছিল না, তাই না? সম্পর্ক টিকে থাকলে সে সমস্যাগুলো আরও সৃষ্টি হতে পারত। তাই যা হয়েছে, ভাল হয়েছে, এমনটাই ভাবুন। মনে রাখবেন, দুষ্টু গরুর চেয়ে যেমন শূন্য গোয়াল ভাল, তেমনি সমস্যা তথা জটিলতাপূর্ণ সম্পর্কের চেয়ে না থাকাই ভাল। তাহলে আর সারা জীবন পস্তাতে হবে না। সম্পর্কের এই উল্টোদিকটি ভেবে দেখুন। দেখবেন, পুরনো সম্পর্কটি নিয়ে আপনার মধ্যে আর আপসোস জাগবে না। বরং মনে হবে, বেঁচে গেছি। আর যদি পারিবারিক কারণে আপনি নিজেই সম্পর্ক ছেদ করে থাকেন, তাহলেও সেটাকে আত্মত্যাগ হিসেবেই নিন। জীবনের প্রয়োজনে মানুষকে অনেক আত্মত্যাগ করতে হয়, অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তাই একে স্বাভাবিক ধরে নিন। নিজের পক্ষে যুক্তি দাঁড় করান। পরিবারের মানুষদের হাসিভরা মুখগুলোর কথা মনে করুন, দেখবেন আপনার কষ্ট অনেকটাই মনে যাচ্ছে।

নিজের দিকে তাকান

অনেক তো হলো, এবার নিজের দিকে তাকান। কান্নাকাটি অনেক করেছেন। আয়নায় নিজের চেহারাটি দেখুন। কী বিমর্ষ। চাঁদবদনের কী হাল করেছেন, দেখেছেন? এ কী সহ্য করা যায়! একটা কথা অপ্রিয় শোনায়, তবু চিরন্তন। আপনি বাঁচলে বাপের নাম। আর কিছু বলতে হবে? অনেক স্মৃতি স্মৃতি খেলা খেলেছেন, এবার নিজের দিকে একটু নজর দিন। এই দেশ সমাজ, আপনার পরিবারের প্রতি আপনার অনেক দায়িত্ব, এভাবে ভাবুন না একবার। নিজের জন্য এবং অন্যদের জন্য আপনাকে ঘুরে দাঁড়াতেই হবে, ভুলে যেতে হবে পুরনো স্মৃতি, এমন কথামালা আওড়াতে থাকেন। দেখবেন, আপনার ভেতর থেকে পুরনো স্মৃতি ভুলে নতুন করে বাঁচার তাগিদ সৃষ্টি হবে।

বিশ্বাস করুন আপনি আবারও প্রেমে পড়বেন

সময় বহমান, তাই তো? জীবনও বহমান। কারও জন্যই জীবন থেমে থাকে না। সম্পর্ক ভেঙ্গে গেছে বলে যে আবার কোন সম্পর্ক হবে না, তা তো না। এমন কোন নিয়ম তো কোথাও নেই যে, জীবনে আপনাকে একবারেই ভালবাসতে হবে। আর এমনটাও নয় যে, আপনি অতীতের ভালবাসা ছাড়া আর কাউকে ভালবাসতে পারবেন না। কেউ যদি বলে থাকে, তবে হয় আবেগের বশে বলে নয় ডাহা মিথ্যা কথা বলে। নতুন কারও সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার চিন্তা করুন। বন্ধু খুঁজুন। পারলে বিপরীত লিঙ্গের কারও সঙ্গেই বন্ধুত্ব করুন। বিপরীত লিঙ্গের মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব আপনার পুরনো স্মৃতিকে ভুলে যেতে সাহায্য করবে। আর প্রেম করতে পারলে তো সোনায় সোহাগা।

হল্লার মাঝে ডুবে যান

দুঃখের সময় মানুষ যদি নিঃসঙ্গ থাকে, তখনই মানুষ বেশি কষ্ট পায়। স্মৃতিরা তাড়া করে ফেরে। এজন্য একাকী না থেকে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে হৈহল্লায় মেতে উঠুন। জানি, মন সায় দেবে না। তবু বলছি, একটু মনে জোর এনেই আড্ডা দিতে যান। প্রয়োজনে বেশি সময় আড্ডা দিন। দেখবেন নির্মল আড্ডার মধ্যে দিয়েই আপনি ভুলে যেতে থাকবেন, পুরনো স্মৃতি। বন্ধুদের নিয়ে দূরে ঘুরে আসতে পারেন, পিকনিক করতে পারেন। কিংবা জড়িয়ে পড়তে পারেন সমাজসেবামূলক কাজে। আর ঘর থেকে বের হওয়ার অসুবিধা থাকলে বই পড়া শুরু করেন কিংবা লেখালেখি। যেভাবেই হোক নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। দেখবেন ধীরে ধীরে আপনার কষ্ট কমে যাচ্ছে। আপনি আবার ফিরে যাচ্ছেন স্বাভাবিক জীবনে।