Relationship ও কিছু জরুরী পরামর্শ!

কম-বেশি সবাই বলে থাকে, ‘সম্পর্কগুলো আগলে রাখা খুব কঠিন!’ তবে প্রকৃতপক্ষে এ কথাটি সত্য নয়। এটি কখনোই জটিল বা বেদনাদায়ক নয়। বরং একটি সুন্দর ও সাবলিল সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য আপনার ভালোবাসার প্রতি একটু সচেতনতা ও পজিটিভ মানসিকতাই যথেষ্ট। সাধারণত আমরা সবাই অলস প্রকৃতির। আমরা মনে করি, আমাদের সম্পর্কগুলো জাদুকরী তৈলাক্ত মেশিনের মতো করে আপনাআপনি ভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে। আসলেই কি তাই? না, যেকোনো সম্পর্কই সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে হলে আপনার সম্পর্কের প্রতি ভালোবাসা ও যথেষ্ট দায়িত্বশীল হতে হবে। নিচে নারীদের জন্য ‘রিলেশনশীপ’ সম্পর্কিত কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যা আপনার সম্পর্ককে করবে সুখময়।

নিজেকে ভালোবাসুনঃ নিজেকে ভালো রাখতে হলে সবচেয়ে বেশি যেটা জরুরি সেটা হলো, ‘নিজেকে ভালোবাসা’। আপনি নিজেকে যদি ভালো না বাসেন তাহলে নিজেতো ভালো থাকতে পারবেন‘ই না! এমনকি অন্য কাউকেও ভালো রাখতে পারবেন না। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন,

“ভালো থাকার জন্য নিজের প্রতি করুণা ও মায়া দেখানোটা খুব বেশি জরুরি। এই জন্য অপরকে ভালোবাসার আগে নিজেকে নিয়ে ভাবুন। নিজেকে অপরের মতো ভালোবাসতে শিখুন। তবেই আপনি ভালো থাকবেন।”

আর যখন আপনি নিজেকে ভালোবাসতে ও ভালো রাখতে চাইবেন তখন স্বাভাবিকভাবেই আপনি নিজের প্রতি অনেক যত্নবান হবেন। এমনকি নিজের সম্পর্কের প্রতিও। যা আপনার ভালোবাসার মানুষটিকে আরও ভালোবাসতে সহায়তা করবে, গড়ে উঠবে একটি সুন্দর সম্পর্ক।

আবেগ, মানসিকতা ও শারীরিক সম্পর্কের সমন্বয় নিশ্চিত করুনঃ ‘আবেগ, মানসিকতা ও শারীরিক সম্পর্ক’ একটি সম্পর্কের মাঝে এ তিনটি জিনিস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ তিনটি জিনিসের সমন্বয়েই আপনি আপনার সম্পর্কটিকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারবেন। আপনি যদি কেবল শারীরিকভাবে আপনার সঙ্গীর সাথে সংযুক্ত থাকেন, কিন্তু মানসিকভাবে দূরত্ব বজায় রাখেন এবং সম্পর্কের প্রতি কোনো আবেগ বা মোহ না থাকে তাহলে সে সম্পর্কটি দীর্ঘস্থায়ী হয় না। অথবা আপনি যদি শুধু মানসিকভাবে তার সাথে সংযুক্ত হতে পারেন কিন্তু সম্পর্কের প্রতি কোনো আবেগ বা শারীরিকভাবে কোনো চাহিদা না থাকে তাহলে সে সম্পর্কটিও ধীরে ধীরে ধ্বংসের পথে ধাবিত হবে। তাই সম্পর্কটির সমস্তক্ষেত্রে আপনাদের মাঝে দৃঢ় বন্ধন থাকতে হবে।


আপনার সঙ্গীকে যথেষ্ট সময় দিনঃ আমরা সবাই জানি, আমাদের প্রত্যেকেরই একটি নিজস্ব জীবনধারা রয়েছে, ব্যক্তি স্বাধীনতা রয়েছে। এমনকি এটাও জানি যে, আমরা কখনো একা একা খুব বেশি সময় কাটাতে পারবো না। তাই বিভিন্ন প্রয়োজনে বিভিন্ন সময়ে আমাদের বিভিন্ন ব্যক্তিদের সাথে সময় ব্যয় করতে হয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে, আপনি আপনার সঙ্গীকে যথেষ্ট সময় দিচ্ছেন তো? কারণ, শত ব্যস্ততার মাঝেও দিন শেষে প্রিয় মানুষটির সান্নিধ্য না পেলে নিজেকে বড্ড বেশি নিঃসঙ্গ মনে হয়।

তাই সম্পর্কের গভীরতা প্রকাশে প্রিয় মানুষটির প্রতি মনোযোগ রাখাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার প্রতি মনোযোগ হারালে ধীরে ধীরে একটা সময় হয়তো আপনার সম্পর্কটিই হারিয়ে যাবে। তাই সবকিছুর মাঝেও আপনি আপনার জীবনসঙ্গীকে প্রতিনিয়ত সময় দিন। তাকে কখনো সঙ্গীহীনতা অনুভব করতে দিবেন না। বাসার বাহিরে থাকাকালীন ফোন কল অথবা টেক্স ম্যাসেজের মাধ্যমে কন্টাক্ট রাখুন। বাসায় এলে বিভিন্ন গল্প-গুজব, খুনশুটিতে মাতিয়ে রাখুন। এতে করে আপনাদের সম্পর্কটিও থাকতে সজিব ও প্রাণবন্ত।

পছন্দের প্রফেশনের যোগ্য জীবনসঙ্গী খুঁজতে

ভিজিট করুন বিবাহবিডি ডট কম আমাদের সার্ভিস সম্পর্কে জানতে ও ফ্রী রেজিষ্ট্রেশন করতে এই লিংকে আসুন

বিস্তারিত জানতেঃ ০১৯২২ ১১ ৫৫৫৫  এ কল করুন

তার কথাগুলো মন দিয়ে শুনুনঃ সাধারণত আমরা সবাই মনে করি যে, পুরুষদের তুলনায় নারীরা শ্রোতা হিসেবে অনেক এগিয়ে। প্রকৃতপক্ষে এটি সত্য নয়। যেকোনো সমস্যা সমাধানে নারীদের তুলনায় পুরুষরা বেশি ধৈর্যশীল শ্রোতা হয়ে থাকে। একটু ভেবে দেখুন, আপনি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কারো সাথে কথা বলছেন কিন্তু আপনি যার উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলছেন সে আপনার কথাগুলো মনোযোগ সহকারে শুনছে না বা সেরকম গুরুত্ব দিচ্ছে না। তখন আপনি নিশ্চয়ই খুব বিরক্তিবোধ করবেন? এটাই স্বাভাবিক। ঠিক একইভাবে অন্যের ক্ষেত্রেও তাই ঘটে থাকে।

আর পুরুষেরা যেমন ভালো শ্রোতা ঠিক তেমনি তাদের সমস্যাগুলোও নিজ নিজ সঙ্গীদের সাথে গুরুত্ব সহকারে শেয়ার করে থাকে। তারাও চায় তাদের কথাগুলো কেউ একজন গুরুত্ব সহকারে শুনুক, উপলব্ধি করুক। শুধু যে সমস্যা সমূহই তা নয়, হতে পারে ভালোবাসা, ভালো লাগা সম্পর্কিত বিষয়াবলীও আপনার সাথে শেয়ার করতে চাইবে। এক্ষেত্রে আপনার উচিত তার কথাগুলো ধৈর্যশীল শ্রোতা হয়ে শোনা এবং নিজের মতামত প্রকাশ করা।

তাকে বদলানোর চেষ্টা করবেন নাঃ চোখের জল দিয়েই হোক বা জোড় করেই হোক! নারীরা তাদের জীবন সঙ্গীদের নিজের মতো করে নিতে চায়। তারা মনে করে, ‘আমি যদি তাকে কোনোভাবে বিয়ে করে ফেলতে পারি, তাহলে পরে সব ঠিক করে ফেলবো।’ অথবা, ‘আমি যদি তাকে মোবাইল ব্যবহার করা থেকে বিরত রাখতে পারি, তাহলে সে আমাকে যথেষ্ট সময় দিবে।’ নারীদের এ ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। মূলত একজন নারী যত সহজে নিজেকে পরিবর্তন করতে পারে, পুরুষরা তত সহজে নিজেদেরকে পরিবর্তন করতে পারে না। অথবা নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে অন্য কারো চাপে নিজের মাঝে পরিবর্তন আনতেও পছন্দ করে না।

আপনার জীবন সঙ্গীর প্রতিটা জিনিস আপনার পছন্দ নাও হতে পারে। এটাই স্বাভাবিক। তাই বলে আপনি যদি আপনার পছন্দগুলো তার উপর চাপিয়ে দিতে চান বা তার মাঝে থাকা আপনার অপছন্দগুলো বদলে দিতে চান তাহলে হিতে বিপরীতও হতে পারে। তাই তাকে সরাসরি বদলে ফেলার চেষ্টা না করে তাকে ভালোবাসুন। ভালোবাসা দিয়ে তার মন জয় করে নিন। দেখবেন, আপনার ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়ে সে নিজেই বদলাতে শুরু করবে।

সমস্যা সমূহকে কখনো অবহেলা করবেন না : অতএব, এ জগতে কোনো মানুষই সবদিক থেকে পরিপূর্ণ নয়। প্রত্যেকটি মানুষই কোনো না কোনো সমস্যায় ভুগে থাকে। ঠিক তেমনি প্রত্যেকটি সম্পর্কের মাঝেই ছোটখাটো সমস্যা দেখা দেয়। আর হ্যাঁ, সমস্যা সমূহ ছোট অথবা বড় সব সমস্যারই তাৎক্ষণিক সমাধানের চেষ্টা করা উচিত।

আপনাদের সম্পর্কের মাঝেও হয়তো কোনো না কোনো সমস্যা থাকতে পারে। তা যত বড় বা ছোট সমস্যাই হোক না কেন! কখনো অবহেলা করবেন না। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সমস্যা হলেও আপনার সঙ্গীর সাথে শেয়ার করুন এবং দুজনে পরামর্শ করেই সমাধান করার চেষ্টা করুন। নতুন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সমস্যাগুলোই একটা সময় সম্পর্কের মাঝে বিশাল বাধা সৃষ্টি করবে।

তার সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন: সম্পর্ক এমন হওয়া উচিত নয় যেটা- ‘আমি বনাম তুমি’ বরং এমন হওয়া উচিত- ‘তুমি আর আমি মিলে আমরা’। মানে একটি সংবদ্ধ দল। যেখানে নিজেদের মধ্যে থাকবে না কোনো প্রতিযোগিতা, থাকবে না কোনো রেষারেষি। যা থাকবে, শুধুই সম্পর্কের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোলাগা, ভালোবাসা ও একত্রে সারাটা জীবন কাটিয়ে দেবার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা।

সম্পর্কের মাঝে ঘটে যাওয়া প্রতিটি ঘটনা হয়তো আপনার মনের মতো নাও হতে পারে। আপনার চিন্তা-চেতনা সঠিক নাও হতে পারে। তাই সবকিছুই আপনার নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা না করে আপনার সঙ্গীর অবস্থানে নিজেকে বসিয়ে বিবেচনা করুন এবং তার সিদ্ধান্তকে মেনে নিন পাশাপাশি তার সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহানুভূতি দেখান। দেখবেন, সে নিজেও আপনার সিদ্ধান্ত ও পরামর্শের প্রতি যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করবে। আর হ্যাঁ, নিজের মধ্যে শ্রদ্ধাবোধ না থাকলে সম্পর্কের বোঝাপড়াটাও বেশ অসহনীয় হয়ে পড়ে।

ভিন্নতা সমূহকে গ্রহণ করুন : এ জগতে প্রত্যেকটি মানুষই ভিন্ন, প্রত্যেকটি মানুষেরই নিজস্ব কিছু সত্ত্বা আছে। প্রত্যেকটি মানুষের চিন্তাধারা, চাওয়া-পাওয়া ভিন্ন। কিছু কিছু বিষয়ে আচরণগত সাদৃশ্যতা থাকলেও দুটি মানুষের মধ্যে শতভাগ সাদৃশ্যতা কখনোই থাকবে না। ঠিক তেমনি, আপনার সঙ্গীর চিন্তাচেতনার সাথে আপনার চিন্তাচেতনার মিল নাও থাকতে পারে। এটা খুব সাধারণ একটি বিষয়।

তার অনেক আচরণই হয়তো আপনার ভালো লাগে না। হয়তোবা আপনার কোনো আচরণ তারও ভালো নাও লাগতে পারে। তাই বলে সাধারণ বিভিন্নতা নিয়ে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করবেন না। দুজনার মধ্যবর্তী বৈসাদৃশ্যগুলো সহজেই গ্রহণ করে নেবার চেষ্টা করুন। তবে তার সাথে আপনার বৈসাদৃশ্যগুলো যদি খুব বেশি গুরুতর হয়, আপনার সহ্য-সীমা অতিক্রম করে ফেলে; তাহলে ভেবে নিবেন সে আপনার সমপোযোগী নয়।

কথায় আছে, “সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে।” ঠিক তাই, একটি সম্পর্কের মূল চাবিকাঠি থাকে নারীদের হাতেই। আবারো বলছি, নারীরা চাইলে তাদের ভালোবাসা দিয়ে পৃথিবীটাও জয় করে নিতে পারবে। সবশেষে, একটি সম্পর্ক সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতে আপনার ভালোবাসা ও সম্পর্কের প্রতি শ্রদ্ধাবোধই যথেষ্ট।