প্রথম প্রেম কি সত্যি ভোলা যায় না!

প্রেম একটি মনস্তাত্ত্বিক চাহিদা ও আকর্ষণ। মানুষের মনে যে কোন বয়সে বিভিন্ন চাহিদা ও আকর্ষন জাগ্রত হয় যেমন- রুপ, গুণ, ব্যক্তিত্ব, কারও সঙ্গ ভালো লাগা ইত্যাদি।

প্রেম জীবনে একবার নয় বার বার আসতে পারে। আবার এ কথাও বহুল প্রচলিত যে প্রথম প্রেম কখনও ভোলা যায় না। প্রথম প্রেম কি সত্যি ভোলা যায় এ নিয়ে রয়েছে অসংখ্য বানী, বিতর্ক ও গবেষণা।

যুক্তরাষ্ট্রের মনোবিজ্ঞানী জেফারসন সিঙ্গার বলেন-

অধিকাংশ মানুষের ১৫-২৬ বছর বয়সের মধ্যে মস্তিষ্কে মেমোরি বাম্প বা আকস্মিক স্মৃতির একটি বিষয় থাকে। আকস্মিক স্মৃতির বিষয়টি যাদের থাকে তারা বেশি স্মৃতিকাতর বা স্মৃতি রোমন্থন করেন। এই স্মৃতি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ইতিবাচক স্মৃতি হয়। এ কারণেই ১৫-২৬ বছর বয়সের সময় প্রথমবারের মতো অভিজ্ঞতা নেওয়া জিনিস স্মৃতিতে ফিরে আসে। আর তা মনের পর্দায় ভেসে ওঠে বারবার।

কারও কারও ক্ষেত্রে প্রথম প্রেম ভোলা যায় না আবার কারও কারও ক্ষেত্রে প্রথম প্রেম ভোলা সম্ভব। যারা বলেন ভোলা যায় না তাদের মতে, অধিকাংশ মানুষই আবেগ কন্ট্রোলে রেখে ভুলে থাকার অভিনয় করে। প্রথম প্রেম বিষয়ে লেখক সাহিত্যিক দেরও রয়েছে অসংখ্য বানী।

তোমারে যে চাহিয়াছে ভুলে একদিন, সে জানে তোমারে ভোলা কি কঠিন

– কাজী নজরুল ইসলাম।

হুমায়ূন আজাদের মতে,

দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম প্রেম বলে কিছু নেই। মানুষ যখন প্রেমে পরে তখন প্রতিটি প্রেমই প্রথম প্রেম।

মানুষের জীবনে প্রেম কখন, কিভাবে, কার সাথে ঘটবে কেউ তা জানে না। তেমনি কারও জীবনে প্রথম প্রেম টিকতে পারে আবার নাও পারে। অবশ্যই মানুষের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ভিন্ন তাই কারও প্রথম প্রেম মধুর হতে পারে আবার কারও ক্ষেত্রে পরবর্তী কোন প্রেম।

তবে প্রথম প্রেম ভুলে থাকা সম্ভব কেননা মানুষ প্রেমে পরে মানসিক আকর্ষণ বা চাহিদা থেকে আর তা যে কোন সময় বা বয়সে হতে পারে।

প্রথম প্রেম সম্পর্কে ধারনাঃ

কিছু মানুষ মনে গেঁথেই রেখেছে প্রথম প্রেম ভোলা যায় না অথচ মানুষ যুক্তি দিয়ে চিন্তা করেনা এ কথা সবার জন্য প্রযোজ্য কিনা।

মানুষের বয়সের সাথে চাহিদার পরিবর্তন ঘটে তাই মানুষ কয়েকবার প্রেমে পরে। মানুষ মূলত মনে রাখে প্রেমের মধুর বা তিক্ত মুহূর্তগুলো আর ভুলে যায় ব্যাক্তি কে। যেমন আপনি নিজেই ভেবে দেখুন, আপনার প্রাক্তন দেখেতে কেমন ছিল তা স্পষ্ট আপনার চোখে যতটুকু ধরা পরে এর চেয়ে স্পষ্ট আপনি দেখতে পাবেন তার সাথে কাটানো আনন্দ মুহূর্ত গুলো। কারন সময়টা ছিল আপনার বয়সের চাহিদা।

আবার দেখুন, যে এখন আপনার জীবনসঙ্গী সে যখন আপনার প্রেমিকা ছিল সে প্রেমের সময় তার সাথে কাটানো মুহূর্ত, তার ছোঁয়া আপনার কাছে যেমনটা ভালো লাগতো এখন তার অনুভূতি গুলো কিন্ত ভিন্ন শুধু ব্যক্তি এক। কারন আপনাদের বয়সের সাথে চাহিদা এখন ভিন্ন।

মানুষ স্মৃতিচারন করতে ভালোবাসে আর তাই আনন্দের স্মৃতি মনে করে আনন্দিত হয় আর কষ্টের স্মৃতি মনে করে হতাশা হয়। আর তাই অনেকেই এ বিষয়কে প্রথম প্রেম মানেই ভোলা যায় না তে আটকে আছে।

প্রেমে পড়ার বিষয়ে পশ্চিম বাংলার সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহ লিখেছেন- “ভালবাসা হচ্ছে তীরের মত। তীর থেকে বেরিয়ে গেলে সে বেরিয়েই যায়। তীর তার লক্ষ্য বস্তকে বিঁধতে পারবে কি পারবে না – সেটা সেই তীরন্দাজের কপাল। কিন্তু ভালবাসা তো আর পোষা কুকুর নয় যে, তু তু করে ডাকলেই আবার ফিরে আসবে।

লাভ বম্বিং

সঙ্গীর কাছ থেকে মনোযোগ পেতে কে না ভালবাসেন! ভাবুন তো, প্রেমের শুরুর দিকেই যদি কেউ রোজ আপনাকে দামি দামি উপহার দিয়ে মন ভোলান তাহলে আপনার কাছেও সম্পর্কটা বড্ড রঙিন ঠেকবে এটাই স্বাভাবিক। হিরের নেকলেস, দামি রেস্তরাঁয় খাওয়ানো, লং ড্রাইভে নিয়ে যাওয়া ইত্যাদি যতরকমের উপায় আছে আপনাকে ইমপ্রেস করার তার মোটামুটি সবক’টাই করে ফেলেছেন আপনার সঙ্গী। আপনিও প্রথম দিন থেকেই তাঁর ব্যবহারে মুগ্ধ। তবে ধীরে ধীরে সম্পর্কের আসল খোলসটা উপলব্ধি করতে শুরু করেন আপনি। প্রাথমিক বিমুগ্ধতা কাটিয়ে তখন উন্মোচিত হয় সম্পর্কের তিক্ত রূপ। ডেটিংয়ের দুনিয়ায় এই নতুন ট্রেন্ডের নাম হল লাভ বম্বিং!

প্রথমদিকে আপনার মন জুগিয়ে চলে আপনার বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করাই হয়তো আপনার সঙ্গীর উদ্দেশ্য। একেবারে আপনার মনের মতো হয়ে উঠতে ঠিক যেমন যেমন আচরণ করা দরকার, তিনি সেগুলোই করছেন। সবসময়ই আপনার কাছাকাছি, পাশাপাশি থাকছেন। আপনার ছোটবড় সব বিষয়ে বড্ড বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন। আবার খরচ করে দামি উপহার দিতেও দ্বিধা করছেন না। আর সবকিছুই এত দ্রুত ঘটছে যে আপনি উলটোদিকের মানুষটাকে পরখ করে দেখার অবকাশটুকুও পাচ্ছেন না। আর ক্রমেই তাঁর উপর বাড়ছে আপনার নির্ভরশীলতা।

‘পারফেক্ট পার্টনার’ পেয়ে গেছেন ভেবে আপনিও নিজের শরীর-মন উজাড় করে দিচ্ছেন। এই পর্যন্ত ঠিকঠাক চললেও, কিছুদিনের মধ্যেই হয়তো আপনার সঙ্গী আপনার এই অত্যধিক নির্ভরশীলতা ও আবেগের সুযোগ নেবেন। অনেকক্ষেত্রেই অনেকে উলটোদিকের মানুষটিকে সচেতনভাবেই ‘লাভ বম্বড’ করেন।

প্রাথমিক ভালবাসার পর্ব পেরিয়ে গেলে তখন তাঁরা আর আগের সঙ্গীর প্রতি অনুরক্ত থাকেন না। অনেকে তো আবার সম্পর্কের কোনও অস্তিত্বই স্বীকার করেন না! আগে থেকে তা বোঝা খুবই মুশকিল। কিন্তু যখন বুঝতে পারলেন তখন হয়তো আপনি এতটাই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন যে তখন আপনার জায়গা কোনও মনোবিদের চেম্বারে! ডেটিংয়ের মূল উদ্দেশ্য একে অপরকে আরও ভালভাবে চেনা। কিন্তু সেই ডেটিং পিরিয়ডেই যদি পার্টনারের কিছু কিছু আচরণে সন্দেহ হয়, তাহলে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।

প্রথমদিকে ভালবাসার ভান করলেও যদি দেখেন দিনে দিনে তিনি আপনার জীবনের উপর নিয়ন্ত্রণ আনতে চাইছেন, তাঁর ইচ্ছেটাকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন বেশি তাহলে সতর্ক হোন।যদি আপনার পার্টনার সারাদিনই আপনাকে প্রেম নিবেদন করতে থাকেন, আপনার সম্পর্কে সবসময়ই খুব ভাল ভাল কথা বলেন বা দামি উপহার দেন, তাহলেও একটু ভেবে দেখুন।প্রথম প্রথম আপনার মন জুগিয়ে চললেও কিছুদিন পরেই আপনার কাছ থেকে নানারকম সাহায্য বা অনুরূপ ব্যবহার তিনি প্রত্যাশা করতে পারেন। না দিলে অনেকসময় অশান্তিও হয়। লাভ বম্বাররা আপনাকে আর্থিকভাবে ক্ষতিও করতে পারে।

আবার একইসঙ্গে সায়কলজিকাল অ্যবিউজ়ও এর একটা বড় দিক। আপনি পরিবারের লোক বা বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটালে তা অনেক লাভ বম্বারেরই পছন্দ হয় না। এই পজ়েসিভনেস যদিও প্রায়শই নকল হয়!আজকের যুগে অনেকেই ডেটিংয়ের নামে নিছকই টাইমপাস করতে চায়। দীর্ঘকালীনসম্পর্ক বা বিয়ের কথা ভাবেই না। তাই, প্রথম থেকেই পার্টনারকে চেনার চেষ্টা করুন। তাঁর আবেগ, তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা ইত্যাদি সময় নিয়ে যাচাই করুন।