তরুণীরা যেমন পাত্র পছন্দ করেন!

মেয়েদের বিয়ের বিষয়ে যেন নিজে থেকে কিছু বলতে নেই। ছেলে দেখতে-শুনতে যেমনই হোক তাতে কি; ছেলে তো প্রতিষ্ঠিত! পরিবারের পছন্দ হয়েছে তো – ব্যাস; এখন বিয়েটা হয়ে যাক।

না! এভাবে মেয়ের উপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিবেন না। আপনি অবশ্যই মেয়ের জন্য যোগ্য পাত্র খুঁজবেন তবে মেয়ের কেমন জীবনসঙ্গী পছন্দ তা আগে জেনে নিন ।

একটি মেয়ে জীবনসঙ্গী নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখে, কল্পনায় গুছানো সংসারের ছবি আঁকে কিন্তু মেয়েদের পছন্দ কে আমাদের সমাজে অনেকাংশেই গুরুত্ব দেয়া হয় না যা অনুচিত।

তরুণীরা যেমন পাত্র পছন্দ করেঃ

শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ পাত্র পছন্দে নারীরা সব থেকে বেশী প্রাধান্য দেয় যে বিষয়ে তা হল শিক্ষাগত যোগ্যতা। কেবলমাত্র আর্থিক সচ্ছলতার জন্য নয় এক্ষেত্রে একজন শিক্ষিত পুরুষের মানবিক মানসিকতা নারীর কাছে মুখ্য।

মতের বা মানসিকতার মিলঃ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান নেহাল করিম বলেন – ‘এখন পাত্র-পাত্রী উভয়েই খুব সচেতন। তাঁরা নিজেরাই পছন্দ করে বিয়ে করছেন। এ ক্ষেত্রে শারীরিক সৌন্দর্যের চেয়ে তাঁদের সাংস্কৃতিক ও পারিবারিক মিলের বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। মনে রাখতে হবে, বিয়ের ক্ষেত্রে আইনি বন্ধনই বড় নয়, মানসিক বন্ধনটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’

বর্তমানে মেয়েরা চায় তাদের জীবনসঙ্গী এমন হবে যার সাথে মতের মিল থাকবে। বছরের পর বছর একটি মানুষের পছন্দের বা মতের সাথে নিজের জীবন বলি দেয়ার বিষয়ে মেয়েরা আজকাল বেশ সতর্ক।

কর্মঠ সঙ্গীঃ

পুরুষের শিক্ষাগত যোগ্যতা আছে, চাকরি বা ব্যবসা করছে কিন্তু কর্মঠ নয় এরকম পাত্র নারীরা পছন্দ করেনা। বর্তমান শিক্ষিত নারীরা এ বিষয়ে বেশী সচেতন। নারীরা যেমন পুরুষদের উপর এখন আর নির্ভরশীল হতে চায় না তেমনি কর্মঠ নয় এমন পুরুষও তাদের পছন্দ নয়।

পোশাকে রুচিশীলঃ

বিশেষজ্ঞদের মতে, রুচিহীন পোশাকের পুরুষদের কোনো কিছুই নারীদের আকর্ষণ করে না। সাধারণত চলতি ফ্যাশন নারীদের কাছে প্রিয়। ভালো পোশাকই ব্যক্তির রুচির পরিচায়ক।

সঠিক বয়সের পার্থক্যঃ

আজকাল নারীরা যেমন স্বাবলম্বী হচ্ছে তেমনি জীবনসঙ্গিনীর বয়সের ব্যবধানের বিষয়ে বিশেষ পছন্দ রাখছে। পুরুষের বয়সসীমা নারীর বয়সসীমার চেয়ে বেশী ব্যবধান হলে এখনকার নারীরা বিয়ের সম্মতি দিতে নারাজ। একজন জীবনসঙ্গী বাছায়ের জন্য স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী পাত্রের পাত্রীর চাইতে ৩-৫ বছরের বয়সের পার্থক্য থাকা উচিত।

শারীরিক সুস্থতাঃ

এখন আর পূর্বের মত পাত্র বাছায়ে নারীরা শুধুমাত্র বাহ্যিক সৌন্দর্য ও ক্যারিয়ারের কারণে পাত্র পছন্দ করে ফেলেন না। পাত্রের শারীরিক গঠন ও সুস্থতা নিয়ে সচেতন নারীরা। ভবিষ্যৎ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভেবে পাত্র/পাত্রীর সুস্থতার পরীক্ষা গুরুত্বপূর্ন একটি বিষয়।

সৎ এবং বিশ্বস্তঃ

সঙ্গী সৎ এবং বিশ্বস্ত হবে এমনটা প্রতিটি নারী আশা করেন। তারা চান সঙ্গী যেন অবশ্যই সৎ হয়। নারীরা সততার মাপকাঠিতে পুরুষকে সবার আগে যাচাই করেন তার বিশ্বস্ততা।

ব্যক্তিত্ববানঃ

ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন পুরুষদের নারীরা বেশি পছন্দ করে থাকেন। কারণ ব্যক্তিত্ববান পুরুষ সঙ্গীর পাশাপাশি অন্যের দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম। কোন পুরুষ দেখতে আকর্ষণীয় না হলেও ব্যক্তিত্ববান হলে নারীরা তাদের পছন্দ করেন।

মানবিক গুণাবলীঃ

ব্যক্তির আচরণে তার মানবিক ও মানসিকতার প্রকাশ পায়। নারীকে কে নারী হিসেবে না দেখে নারীকে মানুষ হিসেবে দেখবে, সম্মান করবে, ইচ্ছে কে প্রাধান্য দিবে, সফলতা কে শ্রদ্ধা করবে, স্বাধীনতা দিবে। এসকল মানবিক গুনাবলিগুলো একজন জীবনসঙ্গীর মাঝে থাকবে এরকমটাই নারীরা চান।

কথা বলার ধরনঃ

একজন মানুষের কথা বলার ধরণের উপর ঐ ব্যাক্তির অনেকগুলো দিক ফুটে উঠে। একজন পুরুষের কথা বলা যত মার্জিত-ভদ্র ও আকর্ষণীয় হবে নারীরা সহজেই সে পুরুষের উপর আকৃষ্ট হয়ে উঠে।

কাজে গোছালোঃ

বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেশিরভাগ নারীরা স্বাবলম্বী। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরা বাহিরে কাজ করছে তবে অনেক নারীকে চাকরির পাশাপাশি একা ঘর সামলাতে হচ্ছে। তাই নারীরা চায় এমন জীবনসঙ্গী পেতে যারা ঘরের কাজে সহায়ক ও গোছালো হবে।

পৃথিবীতে সমস্ত গুণাবলীর ভাণ্ডার নিয়ে কোনো পুরুষই জন্মায়নি। সবদিক থেকে গুণাবলীসম্পন্ন পুরুষ সঙ্গী মেলা ভার। কিছু মৌলিক জিনিস আছে যেগুলো নারী-পুরুষের চাওয়ার মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। তবে পাওয়ার মধ্যে অনেক অনেক পার্থক্য আছে। সবার দৃষ্টিভঙ্গি কিন্তু এক নয়। আপনার চোখে যা সুন্দর অন্যের চোখে তা তেমন সুন্দর নাও হতে পারে। নারীর পছন্দ, অপছন্দ চাওয়া-পাওয়া ইত্যাদির বিস্তর সন্ধান করেছেন গবেষকরা। অনাবৃত রয়েছে অনেক রহস্য।

অস্ট্রেলিয়ান মনোবিজ্ঞানী সিগমন্ড ফ্রয়েড মনে করেন -মেয়েদের মন পুরুষদের চেয়ে অনেক পরিষ্কার থাকে। আর সে কারণে মেয়েরা তাদের মনটাকে ঘন ঘন বদলান। আবার তাদের অনেক প্রিয় বিষয় আছে যা তারা একেবারেই বদলান না।

স্বামী এবং বন্ধুত্ব

পাঁচবছর প্রেম করার পর দিয়া বিয়ে করে সৌরভকে। এমবিএ-র টিউশন ক্লাসে প্রথম আলাপ। তারপর দু’জনে চাকরি পেয়ে যাওয়ার পর, বিয়ে। কিন্তু সম্পর্কটা বড্ড তাড়াতাড়ি বদলে গেল। সৌরভ কর্পোরেট জগতের সিঁড়ি বেয়ে তরতর করে অনেক উঁচুতে পৌঁছে গেল। কিন্তু দিয়ার এই ইঁদুর দৌড়ের জীবন বেশিদিন ভাল লাগল না। চাকরি ছেড়ে নিজের বুটিক খুলল দিয়া। এই ব্যবসার সূত্রেই আলাপ নির্মাল্যর সঙ্গে। ও পেশায় ফোটোগ্রাফার।  কাজের সূত্রেই বন্ধুত্ব গাঢ় হয়েছে। কিন্তু কখনও কখনও দিয়ার খুব অনুশোচনা হয়। দিয়া ভাবে ও কি ঠিক করছে? স্বামীকে কি ও ঠকাচ্ছে? এই বন্ধুত্বের পরিণতিই বা কী?

জীবনের অনেক ক্ষেত্রে আমরা এই ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হই। কমিটেড রিলেশনে থেকে বিপরীত লিঙ্গের মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব নিয়ে আমাদের মধ্যে নানা টানাপড়েন কাজ করে। অনেক সময় এই বন্ধুত্বই কোনও রিলেশনে ঝগড়া, মনোমালিন্য, সন্দেহের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এইসব ক্ষেত্রে মাথা গরম না করে ঠান্ডা মাথায় ডিশিসন নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

আসলে সংসারের বাইরে ফ্রেন্ড সার্কল থাকা খুব প্রয়োজন। স্কুল কলেজের পুরনো বন্ধু, প্রতিবেশি, অফিস কোলিগ বা অন্য কেউযাঁর সঙ্গে সময় কাটাতে আপনার ভাললাগে তিনিই আপনার বন্ধু। বন্ধুত্ব সাংসারিক একঘেয়েমি থেকেও মুক্তি দেয়। বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ ঘটায়। হতেই পারে আপনার বন্ধুদের মধ্যে কেউ কেউ পুরুষ। হয়তো অন্যদের থেকে আপনারা একে অপরকে বেশি বোঝেন। একে অন্যের সমস্যাগুলো গভীরভাবে অনুভব করেন। এই সম্পর্কে অপরাধবোধের কোনও জায়গা নেই। কিন্তু এই সম্পর্ককে বন্ধুত্বের পর্যায়েই রাখুন। এমন কিছু করবেন না যা নিয়ে পরে অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়তে হয়। আপনার দাম্পত্যের প্রাইভেসির মধ্যে বন্ধুকে না ঢোকানোই ভাল। ভবিষ্যতে অশান্তি হতে পারে। বন্ধুর ব্যাপারে স্বামীকে কখনও অন্ধকারে রাখবেন না। সম্পর্কের খঁুটিনাটিতে না গিয়ে বন্ধুর ব্যাপারে ওঁকে জানিয়ে রাখুন।

• আপনার স্বামী এবং বন্ধু দুজন সম্পূর্ণ আলাদা মানুষ। দুজনেরই নির্দিষ্ট কিছু দোষগুণ রয়েছে। হয়তো আপনার স্বামীর কোনও ঘাটতি রয়েছে যা বন্ধুর মধ্যে নেই। এই গুণের জন্যে তাঁকে অ্যাডমায়ার অবশ্যই করবেন কিন্তু সেই সঙ্গে এটাও মনে রাখুন যে এর জন্যে কোনও মানুষ পুরোপুরি খারাপ হয়ে যান না। তাছাড়া স্বামীর সঙ্গে জড়িয়ে আছেন পরিবারের অন্যান্য সদস্য এবং সন্তান। নতুন বন্ধুত্বে এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারগুলো মনে রাখবেন।

• স্বামীর সঙ্গে আপনার বন্ধুর আলাপ করিয়ে দিন। হয়ত ওরাও একে অপরের বন্ধু হয়ে উঠবেন। বন্ধুর পরিবারের সঙ্গেও ভাল সম্পর্ক গড়ে তুলুন। ছুটির দিনে নিমন্ত্রণ, একসঙ্গে বেড়াতে যাওয়ার মতো অ্যাক্টিভিটি দুই পরিবারকে কাছাকাছি আনবে।