অতীত সম্পর্ক এবং …

পুরনো প্রেমিকা বা স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কে ইতি টেনেছেন। অথচ মাঝেমধ্যেই আপনার জীবনে ঘুরে ফিরে আসছে সেই অনুষঙ্গ। হঠাত্‌ আপনার সঙ্গে যদি তাঁর দেখা হয়ে যায় আবার? তাও আবার বর্তমান সঙ্গীর উপস্থিতিতে! রইল পরিস্থিতি সামলানোর কিছু টিপস।

আমাদের অনেকের জীবনেই ‘এক্স’ সত্যিই একটা বড় ফ্যাক্টর! প্রেমের বা দাম্পত্য সম্পর্ক ভেঙে গেলে এতদিনের খুব কাছের মানুষটা যখন প্রাক্তন বা ‘এক্স’ হয়ে যায়, তখন সম্পর্কের সমীকরণগুলোও খুব দ্রুত বদলাতে থাকে। নতুন সম্পর্ক তৈরি হলেও কোথাও একটা ফাঁকা জায়গা বোধহয় থেকেই যায়। সময়ের নিয়মে আপনি ও আপনার পুরনো সঙ্গী দু’জনেই যদি অন্য কাউকে বিয়ে করে নেন, তাহলেও একে অপরকে পুরোপুরি ভুলে যাওয়া অনেক সময় সম্ভব হয় না। আসলে, সম্পর্কে ইতি টানলেই যে মাথা থেকে পুরনো সঙ্গীকে ঝেড়ে ফেলতে পারেন না অনেকেই। আর পুরনো কারওর জায়গায় যদি নতুন কেউ আসে, তখন নতুন সেই সম্পর্কের উষ্ণতায় পুরনো দিনগুলো ধীরে ধীরে ফিকে হতে শুরু করে। 

কিন্তু হঠাত্‌ করে যদি কোনওদিন দেখা হয়ে যায় পুরনো প্রেমিকা বা স্ত্রীর সঙ্গে? অনেকেই এধরনের সিচুয়েশনের জন্য তৈরি থাকেন না বলে রীতিমতো এমব্যারাসড হয়ে পড়েন। অনেক সম্পর্ক শেষ হয় তিক্তভাবে। প্রেমে প্রতারিত হয়ে বা তৃতীয় ব্যক্তির উপস্থিতির কারণে যদি আপনার ব্রেক আপ হয়ে থাকে, তখন পুরনো সঙ্গীটির প্রতি চাপা রাগ থেকেই যায়। হয়তো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সে রাগের বহিঃপ্রকাশ আপনি আর নাও করতে পারেন। তবে পুরনো প্রেমিকের সঙ্গে দেখা হলে মাথা ঠান্ডা রাখাই শ্রেয়। আপনার বর্তমান সঙ্গীকে পুরনো সম্পর্কের ব্যাপারে খোলাখুলি জানাবেন। উনি যদি সত্যিই আপনাকে বিশ্বাস করেন তবে এ ব্যাপারে জানলেও তিনি আপনাকে ভুল বুঝবেন না। প্রাক্তন স্বামী বা স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্স বা সেপারেশনের কারণটাও তাঁকে খোলাখুলি জানান। 

এমনটাও তো হতে পারে, আপনার অনুপস্থিতিতে আপনার বর্তমান স্ত্রীর সঙ্গে আপনার পুরনো প্রেমিকা বা স্ত্রীর দেখা হয়ে গেল! ‘প্রাক্তন’ সিনেমার সেই দৃশ্যটার মতো! যেখানে ট্রেনের কামরায় উজানের বর্তমান স্ত্রীর সঙ্গে হঠাত্‌ই দেখা হয়ে যায় তাঁর প্রাক্তনের। বাস্তবে, এরকম অবস্থায় পুরনো সম্পর্কের কথা লুকোলে বর্তমান সম্পর্কের উপর তার অনর্থক প্রভাব পড়তে বাধ্য। কোনওদিন রাস্তায় বা শপিং মলে দেখা হলে হাসিমুখে তাঁর সঙ্গে বর্তমান সঙ্গীর আলাপ করিয়ে দিন।

Relationship ও কিছু জরুরী পরামর্শ!

কম-বেশি সবাই বলে থাকে, ‘সম্পর্কগুলো আগলে রাখা খুব কঠিন!’ তবে প্রকৃতপক্ষে এ কথাটি সত্য নয়। এটি কখনোই জটিল বা বেদনাদায়ক নয়। বরং একটি সুন্দর ও সাবলিল সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য আপনার ভালোবাসার প্রতি একটু সচেতনতা ও পজিটিভ মানসিকতাই যথেষ্ট। সাধারণত আমরা সবাই অলস প্রকৃতির। আমরা মনে করি, আমাদের সম্পর্কগুলো জাদুকরী তৈলাক্ত মেশিনের মতো করে আপনাআপনি ভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে। আসলেই কি তাই? না, যেকোনো সম্পর্কই সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে হলে আপনার সম্পর্কের প্রতি ভালোবাসা ও যথেষ্ট দায়িত্বশীল হতে হবে। নিচে নারীদের জন্য ‘রিলেশনশীপ’ সম্পর্কিত কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যা আপনার সম্পর্ককে করবে সুখময়।

নিজেকে ভালোবাসুনঃ নিজেকে ভালো রাখতে হলে সবচেয়ে বেশি যেটা জরুরি সেটা হলো, ‘নিজেকে ভালোবাসা’। আপনি নিজেকে যদি ভালো না বাসেন তাহলে নিজেতো ভালো থাকতে পারবেন‘ই না! এমনকি অন্য কাউকেও ভালো রাখতে পারবেন না। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন,

“ভালো থাকার জন্য নিজের প্রতি করুণা ও মায়া দেখানোটা খুব বেশি জরুরি। এই জন্য অপরকে ভালোবাসার আগে নিজেকে নিয়ে ভাবুন। নিজেকে অপরের মতো ভালোবাসতে শিখুন। তবেই আপনি ভালো থাকবেন।”

আর যখন আপনি নিজেকে ভালোবাসতে ও ভালো রাখতে চাইবেন তখন স্বাভাবিকভাবেই আপনি নিজের প্রতি অনেক যত্নবান হবেন। এমনকি নিজের সম্পর্কের প্রতিও। যা আপনার ভালোবাসার মানুষটিকে আরও ভালোবাসতে সহায়তা করবে, গড়ে উঠবে একটি সুন্দর সম্পর্ক।

আবেগ, মানসিকতা ও শারীরিক সম্পর্কের সমন্বয় নিশ্চিত করুনঃ ‘আবেগ, মানসিকতা ও শারীরিক সম্পর্ক’ একটি সম্পর্কের মাঝে এ তিনটি জিনিস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ তিনটি জিনিসের সমন্বয়েই আপনি আপনার সম্পর্কটিকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারবেন। আপনি যদি কেবল শারীরিকভাবে আপনার সঙ্গীর সাথে সংযুক্ত থাকেন, কিন্তু মানসিকভাবে দূরত্ব বজায় রাখেন এবং সম্পর্কের প্রতি কোনো আবেগ বা মোহ না থাকে তাহলে সে সম্পর্কটি দীর্ঘস্থায়ী হয় না। অথবা আপনি যদি শুধু মানসিকভাবে তার সাথে সংযুক্ত হতে পারেন কিন্তু সম্পর্কের প্রতি কোনো আবেগ বা শারীরিকভাবে কোনো চাহিদা না থাকে তাহলে সে সম্পর্কটিও ধীরে ধীরে ধ্বংসের পথে ধাবিত হবে। তাই সম্পর্কটির সমস্তক্ষেত্রে আপনাদের মাঝে দৃঢ় বন্ধন থাকতে হবে।


আপনার সঙ্গীকে যথেষ্ট সময় দিনঃ আমরা সবাই জানি, আমাদের প্রত্যেকেরই একটি নিজস্ব জীবনধারা রয়েছে, ব্যক্তি স্বাধীনতা রয়েছে। এমনকি এটাও জানি যে, আমরা কখনো একা একা খুব বেশি সময় কাটাতে পারবো না। তাই বিভিন্ন প্রয়োজনে বিভিন্ন সময়ে আমাদের বিভিন্ন ব্যক্তিদের সাথে সময় ব্যয় করতে হয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে, আপনি আপনার সঙ্গীকে যথেষ্ট সময় দিচ্ছেন তো? কারণ, শত ব্যস্ততার মাঝেও দিন শেষে প্রিয় মানুষটির সান্নিধ্য না পেলে নিজেকে বড্ড বেশি নিঃসঙ্গ মনে হয়।

তাই সম্পর্কের গভীরতা প্রকাশে প্রিয় মানুষটির প্রতি মনোযোগ রাখাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার প্রতি মনোযোগ হারালে ধীরে ধীরে একটা সময় হয়তো আপনার সম্পর্কটিই হারিয়ে যাবে। তাই সবকিছুর মাঝেও আপনি আপনার জীবনসঙ্গীকে প্রতিনিয়ত সময় দিন। তাকে কখনো সঙ্গীহীনতা অনুভব করতে দিবেন না। বাসার বাহিরে থাকাকালীন ফোন কল অথবা টেক্স ম্যাসেজের মাধ্যমে কন্টাক্ট রাখুন। বাসায় এলে বিভিন্ন গল্প-গুজব, খুনশুটিতে মাতিয়ে রাখুন। এতে করে আপনাদের সম্পর্কটিও থাকতে সজিব ও প্রাণবন্ত।

পছন্দের প্রফেশনের যোগ্য জীবনসঙ্গী খুঁজতে

ভিজিট করুন বিবাহবিডি ডট কম আমাদের সার্ভিস সম্পর্কে জানতে ও ফ্রী রেজিষ্ট্রেশন করতে এই লিংকে আসুন

বিস্তারিত জানতেঃ ০১৯২২ ১১ ৫৫৫৫  এ কল করুন

তার কথাগুলো মন দিয়ে শুনুনঃ সাধারণত আমরা সবাই মনে করি যে, পুরুষদের তুলনায় নারীরা শ্রোতা হিসেবে অনেক এগিয়ে। প্রকৃতপক্ষে এটি সত্য নয়। যেকোনো সমস্যা সমাধানে নারীদের তুলনায় পুরুষরা বেশি ধৈর্যশীল শ্রোতা হয়ে থাকে। একটু ভেবে দেখুন, আপনি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কারো সাথে কথা বলছেন কিন্তু আপনি যার উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলছেন সে আপনার কথাগুলো মনোযোগ সহকারে শুনছে না বা সেরকম গুরুত্ব দিচ্ছে না। তখন আপনি নিশ্চয়ই খুব বিরক্তিবোধ করবেন? এটাই স্বাভাবিক। ঠিক একইভাবে অন্যের ক্ষেত্রেও তাই ঘটে থাকে।

আর পুরুষেরা যেমন ভালো শ্রোতা ঠিক তেমনি তাদের সমস্যাগুলোও নিজ নিজ সঙ্গীদের সাথে গুরুত্ব সহকারে শেয়ার করে থাকে। তারাও চায় তাদের কথাগুলো কেউ একজন গুরুত্ব সহকারে শুনুক, উপলব্ধি করুক। শুধু যে সমস্যা সমূহই তা নয়, হতে পারে ভালোবাসা, ভালো লাগা সম্পর্কিত বিষয়াবলীও আপনার সাথে শেয়ার করতে চাইবে। এক্ষেত্রে আপনার উচিত তার কথাগুলো ধৈর্যশীল শ্রোতা হয়ে শোনা এবং নিজের মতামত প্রকাশ করা।

তাকে বদলানোর চেষ্টা করবেন নাঃ চোখের জল দিয়েই হোক বা জোড় করেই হোক! নারীরা তাদের জীবন সঙ্গীদের নিজের মতো করে নিতে চায়। তারা মনে করে, ‘আমি যদি তাকে কোনোভাবে বিয়ে করে ফেলতে পারি, তাহলে পরে সব ঠিক করে ফেলবো।’ অথবা, ‘আমি যদি তাকে মোবাইল ব্যবহার করা থেকে বিরত রাখতে পারি, তাহলে সে আমাকে যথেষ্ট সময় দিবে।’ নারীদের এ ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। মূলত একজন নারী যত সহজে নিজেকে পরিবর্তন করতে পারে, পুরুষরা তত সহজে নিজেদেরকে পরিবর্তন করতে পারে না। অথবা নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে অন্য কারো চাপে নিজের মাঝে পরিবর্তন আনতেও পছন্দ করে না।

আপনার জীবন সঙ্গীর প্রতিটা জিনিস আপনার পছন্দ নাও হতে পারে। এটাই স্বাভাবিক। তাই বলে আপনি যদি আপনার পছন্দগুলো তার উপর চাপিয়ে দিতে চান বা তার মাঝে থাকা আপনার অপছন্দগুলো বদলে দিতে চান তাহলে হিতে বিপরীতও হতে পারে। তাই তাকে সরাসরি বদলে ফেলার চেষ্টা না করে তাকে ভালোবাসুন। ভালোবাসা দিয়ে তার মন জয় করে নিন। দেখবেন, আপনার ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়ে সে নিজেই বদলাতে শুরু করবে।

সমস্যা সমূহকে কখনো অবহেলা করবেন না : অতএব, এ জগতে কোনো মানুষই সবদিক থেকে পরিপূর্ণ নয়। প্রত্যেকটি মানুষই কোনো না কোনো সমস্যায় ভুগে থাকে। ঠিক তেমনি প্রত্যেকটি সম্পর্কের মাঝেই ছোটখাটো সমস্যা দেখা দেয়। আর হ্যাঁ, সমস্যা সমূহ ছোট অথবা বড় সব সমস্যারই তাৎক্ষণিক সমাধানের চেষ্টা করা উচিত।

আপনাদের সম্পর্কের মাঝেও হয়তো কোনো না কোনো সমস্যা থাকতে পারে। তা যত বড় বা ছোট সমস্যাই হোক না কেন! কখনো অবহেলা করবেন না। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সমস্যা হলেও আপনার সঙ্গীর সাথে শেয়ার করুন এবং দুজনে পরামর্শ করেই সমাধান করার চেষ্টা করুন। নতুন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সমস্যাগুলোই একটা সময় সম্পর্কের মাঝে বিশাল বাধা সৃষ্টি করবে।

তার সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন: সম্পর্ক এমন হওয়া উচিত নয় যেটা- ‘আমি বনাম তুমি’ বরং এমন হওয়া উচিত- ‘তুমি আর আমি মিলে আমরা’। মানে একটি সংবদ্ধ দল। যেখানে নিজেদের মধ্যে থাকবে না কোনো প্রতিযোগিতা, থাকবে না কোনো রেষারেষি। যা থাকবে, শুধুই সম্পর্কের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোলাগা, ভালোবাসা ও একত্রে সারাটা জীবন কাটিয়ে দেবার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা।

সম্পর্কের মাঝে ঘটে যাওয়া প্রতিটি ঘটনা হয়তো আপনার মনের মতো নাও হতে পারে। আপনার চিন্তা-চেতনা সঠিক নাও হতে পারে। তাই সবকিছুই আপনার নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা না করে আপনার সঙ্গীর অবস্থানে নিজেকে বসিয়ে বিবেচনা করুন এবং তার সিদ্ধান্তকে মেনে নিন পাশাপাশি তার সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহানুভূতি দেখান। দেখবেন, সে নিজেও আপনার সিদ্ধান্ত ও পরামর্শের প্রতি যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করবে। আর হ্যাঁ, নিজের মধ্যে শ্রদ্ধাবোধ না থাকলে সম্পর্কের বোঝাপড়াটাও বেশ অসহনীয় হয়ে পড়ে।

ভিন্নতা সমূহকে গ্রহণ করুন : এ জগতে প্রত্যেকটি মানুষই ভিন্ন, প্রত্যেকটি মানুষেরই নিজস্ব কিছু সত্ত্বা আছে। প্রত্যেকটি মানুষের চিন্তাধারা, চাওয়া-পাওয়া ভিন্ন। কিছু কিছু বিষয়ে আচরণগত সাদৃশ্যতা থাকলেও দুটি মানুষের মধ্যে শতভাগ সাদৃশ্যতা কখনোই থাকবে না। ঠিক তেমনি, আপনার সঙ্গীর চিন্তাচেতনার সাথে আপনার চিন্তাচেতনার মিল নাও থাকতে পারে। এটা খুব সাধারণ একটি বিষয়।

তার অনেক আচরণই হয়তো আপনার ভালো লাগে না। হয়তোবা আপনার কোনো আচরণ তারও ভালো নাও লাগতে পারে। তাই বলে সাধারণ বিভিন্নতা নিয়ে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করবেন না। দুজনার মধ্যবর্তী বৈসাদৃশ্যগুলো সহজেই গ্রহণ করে নেবার চেষ্টা করুন। তবে তার সাথে আপনার বৈসাদৃশ্যগুলো যদি খুব বেশি গুরুতর হয়, আপনার সহ্য-সীমা অতিক্রম করে ফেলে; তাহলে ভেবে নিবেন সে আপনার সমপোযোগী নয়।

কথায় আছে, “সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে।” ঠিক তাই, একটি সম্পর্কের মূল চাবিকাঠি থাকে নারীদের হাতেই। আবারো বলছি, নারীরা চাইলে তাদের ভালোবাসা দিয়ে পৃথিবীটাও জয় করে নিতে পারবে। সবশেষে, একটি সম্পর্ক সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতে আপনার ভালোবাসা ও সম্পর্কের প্রতি শ্রদ্ধাবোধই যথেষ্ট।

যৌনতা, বিয়ে ও সামাজিকতা

যৌনতা মানব জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। স্বীকার করুন অথবা নাই করুন জীবনে যৌনতার রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এটি মানুষসহ সকল জীবের অন্যতম চাহিদাগুলোরও একটি। একজন নারী ও পুরুষ বারো থেকে চৌদ্দ বছর বয়সপ্রাপ্ত হলেই তার যৌন চাহিদা দেখা দিতে থাকে। ফলে সে মনে মনে এই চাহিদা মেটানোর উপায় নিয়ে ভাবতে থাকে। এই চাহিদা কোন প্রক্রিয়ায় মেটানো সম্ভব? সকল সমাজ, সকল ধর্ম একটিই বৈধ ও প্রচলিত পন্থা এ ক্ষেত্রে আবিষ্কার করেছে। সেটি হচ্ছে ‘বিয়ে’। বিয়ের মাধ্যমে মানুষ তার যৌন চাহিদা পূরণ করে। সঠিক সময়ে বিয়ে করা যৌন সংক্রান্ত  কেলেঙ্কারী কিংবা দুর্ঘটনাসমূহ রোধের একটি অন্যতম উপায়। কাজেই আমাদের সমাজে বিয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বিভিন্ন দিক দিয়ে।

সভ্যতার আদি থেকেই যৌন চাহিদা মেটানোর জন্য সমাজ পতিতালয় তৈরি করেছে। সেখানে নিয়মিত যাতায়াত করেন কিছু কুরুচিপূর্ণ মানুষ। তারা  সেভাবেই শারীরিক চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু যৌনতা কি শুধু শারীরিক বিষয়? যৌনতা কি শুধু যে কোন নারী বা পুরুষের সাথে একটি নির্দিষ্ট সময় কাটিয়ে শরীর হাল্কা করা? সেটি পশুত্বের সামিল। যৌনতা মানব সৃষ্টির জন্য একটি বিশেষ কর্ম। এখানে শরীর, মন, আন্তরিকতা, পরস্পরের চাহিদা এবং এক ধরনের আত্মিক বিষয় জড়িত। এজন্যই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে গড়ে ওঠে এক গভীরতম সম্পর্ক। অথচ বিয়ের পূর্বে তাদের সাথে কোনো ধরনের পরিচয়ই হয়তো ছিল না।

যুগ ও অর্থনীতির চাহিদার কারণে আমাদের দেশ থেকে প্রচুর মানুষ বিদেশ যায়। কেউ যাচ্ছেন অর্থ উপার্জন করতে, কেউ উচ্চতর শিক্ষার জন্য। যে কারণেই  যাওয়া হোক না কেন এখানে যৌন বিষয়ে কি কোন সমাধানের কথা বলা আছে? নেই। এক বছর দুই বছর কিংবা তারচেয়েও বেশি সময় একজন পুরুষ বা একজন স্ত্রী কীভাবে নিজেদের যৌন চাহিদা মেটাবে একে অপরের অনুপস্থিতিতে? বিষয়টি বেমালুম সবাই ভুলে যান। ফলে নেমে আসে এক অশান্তি ও অবিশ্বাস। আমরা এমন ভান করি এসব ক্ষেত্রে যেন সব কিছু ঠিকঠাক আছে, স্বামী-স্ত্রী একে অপরের কাছ থেকে দূরে থাকা কোনো বিষয় নয়। বিশেষ করে যারা বিবাহিত। আর যারা বিয়ে করেনি আমরা ধরেই নিয়েছি যে, তারা একটু উল্টা-পাল্টা করবেই। এই উল্টাপাল্টা মানে এক ধরনের বিশৃংখলা। কিন্তু সবাই কেন জানি এ বিষয়টিও মেনে নিচ্ছি।

যৌনতা যাতে পশুত্বে পরিণত না হয় সেদিকে আমাদের বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে। কোনো পশু একমাত্র কুকুর ছাড়া যৌনক্রিয়া করার সময় একটু আড়াল খোঁজে, আড়ালে কাজটি সম্পাদন করে। অথচ পশ্চিমা দেশগুলোতে এবং পশ্চিমা দেশগুলোর আদলে প্রাচ্যের যেসব দেশ এগিয়ে যাচ্ছে সেসব দেশেও যৌনতা খোলামেলাভাবে প্রদর্শিত হচ্ছে, এটি কি খুব আনন্দের বিষয়? চীনেও দেখা যায় হাজার হজার লোকভর্তি ট্রেনে প্রেমিক-প্রেমিকা সবার সামনে দিবালোকে গভীর চুম্বনরত। পার্কে একটি মেয়েকে সবার সামনে কোলের ওপর বসিয়ে রেখেছে। আমি বেইজিংয়ের হোটেল রুমে বসে বসে দেখলাম রাস্তার পাশে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে ঘন্টাখানেকের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন ধরনের যৌনকাজ সম্পন্ন করল। তারপর সন্ধ্যা হয়ে এলো, পরে আর স্পস্ট দেখা গেল না। চীন এশিয়ার একটি দেশ। এটি পশ্চিমা কোনো ধনী দেশ নয়, সেখানেই এই অবস্থা আধুনিকতার নামে!  প্রকাশ্য দিবালোকে এবং সূর্য ডোবার আগে এগুলো কী হচ্ছে? আমাদের দেশের বিভিন্ন পার্কে যাবেন কম-বেশি অশ্লীল দৃশ্য চোখে পড়ে। পশ্চিমা দেশ থেকে আগত এসব কালচার কতটা আমাদের সাথে মানানসই? আমেরিকার বিভিন্ন সিটিতে ছেলেমেয়ে চলতে দেখা যায়, হাতে হাত ধরে কিংবা আরও কাছাকাছি কিন্তু সরাসরি প্রকাশ্যে যৌনতা প্রদর্শন খুব একটা চোখে পড়েনি। তবে বিষয়টি তারা সঠিক পথে পরিচালিত করছে না। আর তাই সেখানে পারিবারিক বন্ধন সাময়িক ব্যাপার, অত্যন্ত ঠুনকো। সেখানে লিভ টুগেদার প্রচলিত আর লিভ টুগেদার মানেই তো এক ধরনের বিকৃত অভ্যাস। কিছু কিছু স্টেটে প্রকাশ্যেই দেখা যায়, কোথাও হয়ত একটু রিজার্ভ। তবে কানাডাতে শপিং মলগুলোতে কিংবা রোস্তোরাঁয় প্রকাশ্যে চুম্বনের বিষয়টি প্রত্যক্ষ করেছি। কিন্তু তাদের অনুসারী দেশগুলো যেন দুই ধাপ এগিয়ে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের আগে হিলারী বলেছিলেন, তিনি নারীদের ‘গর্ভপাত’ করার আইন বহাল রাখবেন। এখানে যৌনতা ব্যাপারটি এত অবাধে চলে যে, যে কোনো সময় যে কোনো নারী গর্ভবতী হতে পারে। যেহেতু বাবার কোনো ঠিক থাকবে না কিংবা ফ্রি থাকার জন্য অসংখ্য নারী এখানে গর্ভপাত করেন। আমি দেখেছি কিছু ধর্মীয় সংগঠন এই গর্ভপাতের বিরুদ্ধে ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে  কিংবা ব্যানার টানিয়ে রেখেছে। এদের যৌন আচরণ পুরোপুরি আলাদা।

বিবাহ বিডি কল
বিবাহ বিডি কল সেন্টারঃ +৮৮ ০১৯২২১১৫৫৫৫

একটি সুখের সংসারে অবহেলিত যৌনতা মারাত্মক করুণ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। এর মূল কারণ হচ্ছে যৌনতা সম্পর্কে স্বামী কিংবা স্ত্রীর উদাসীনতা। যে সংসারে স্ত্রী তার স্বামীকে কিংবা স্বামী তার স্ত্রীর যৌনসুখ মূল্যায়ন করে না, উদাসীন থাকে সেখানেই দেখা দেয় সমস্যা। স্ত্রী সুযোগ পেলে অন্য পুরুষের এবং স্বামী সুযোগ পেলে অন্য মেয়ের সান্নিধ্য পেতে চাইবে, এটাই স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়ায় তখন। প্রথম দিকে চুপি চুপি কিছু করা হলেও পরে তা বিদ্রোহী রূপ নেয় এবং এক সময় সংসারভাঙ্গা, হত্যা ইত্যাদি পর্যন্ত গড়ায় আর সংসার যদি টিকিয়ে রাখার চেষ্টাও করা হয় তাহলে সেটি  চলে অবিশ্বাসের মধ্যে, এক ধরনের ধোঁয়াশার মধ্যে । কাজেই স্বামী স্ত্রী উভয়কেই এই বিষয়ে সজাগ ও সচেষ্ট থাকা দরকার।

যৌনতা প্রাকৃতিক বিষয়, মানুষের অত্যাবশ্যকীয় চাহিদা। এখানে শরীর ও মনের সাথে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। একটি ছাড়া অপরটি প্রকৃত সুখকর, উপভোগ্য এবং সার্থক হয় না। তাই প্রাকৃতিক নিয়মেই এটি সম্পন্ন করতে হয়। মানুষ যখন এটি অবাধে, স্বেচ্ছারিতার মনোভাব নিয়ে ভোগ করার চেষ্টা করে, বিকৃত যৌনাচারে লিপ্তা হয় প্রকৃতি তখন বিরূপ হয়। যেমন অবাধ যৌনাচার ও বহুগামিতা মানুষের জন্য মরণব্যাধি ‘এইডস’ নিয়ে এসেছে। বিশ্বের মানুষকে এক ভীতিকর অবস্থায় নিক্ষিপ্ত করেছে। এ থেকে উত্তরণের জন্য সঠিক পারিবারিক এবং বৈধ যৌনচার করার জন্য পশ্চিমা চিকিৎসকগণ তাদের দেশের মানুষদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। সুস্থ যৌনতাই এর একমাত্র সমাধান। পশ্চিমা গবেষকরা  আবিষ্কার করেছেন যে, সুস্থ যৌনচারই এইডস-এর মতো মরণব্যাধি এড়ানোর সঠিক পথ যা আমাদের সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ইদানিং সমকামিতা নামে আর এক যথেচ্ছারিতা, অবাধ ও বিকৃত যৌনাচার শুরু হয়েছে। এর ব্যাপ্তি গোটা বিশ্বে। এটি প্রকৃতিবিরোধী কাজ। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ, বিপরীত লিঙ্গের সাথে মিলন তো প্রকৃতির অবদান, প্রাকৃতিক সুখ ও তৃপ্তি সেখানে নিজেদের তৈরি নিয়ম পুরুষে-পুরুষে, নারীতে-নারীতে যৌনক্রিয়া সেটি কতবড় কুরুচির পরিচয় তা মানুষ হিসেবে আমাদের ভেবে দেখা উচিত!

যৌনতা এক তরফা বিষয় নয়। এখানে উভয়ের মতামত, ইচ্ছে, আগ্রহ এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন। একজনের ইচ্ছে, আগ্রহ বা অংশগ্রহণ এই ক্রিয়াকে সাফল্যমণ্ডিত করতে পারে না। বিষয়টি উপভোগ্যও হয় না। সঠিক যৌন তৃপ্তি ও প্রাকৃতিক চাহিদা মেটানোর জন্য দুজনকেই পালন করতে হয় সক্রিয় এবং আগ্রহী ভূমিকা। যে সংসারে  স্বামী-স্ত্রী দুজনই ব্যাপারটিতে সমভাবে আগ্রহী, সেখানে অবিশ্বাস ও হতাশা জন্ম নেওয়ার স্থান নেই। জীবন হয়ে ওঠে উপভোগ্য, আনন্দের ও সার্থক। তারা পারিবারিক, সামাজিক, ধর্মীয় যে কাজই করুক না কেন অত্যন্ত আনন্দের সাথে, তৃপ্তির সাথে এবং সার্থকভাবে তা করতে পারে। ফলে ধীরে ধীরে সাফল্যের শীর্ষে যেতে পারে। আর যে সংসারে একজন এ বিষয়ে অনাগ্রহী থাকে, উদাসীন থাকে তারা জীবন উপভোগ করতে পারে না সঠিকভাবে। মনোযোগ সহকারে কোনো কাজ করতে পারে না। জীবনকে সাফল্যের দিকে নিতে হলে স্বামী-স্ত্রীকে যৌনতা বিষয়ে সমভাবে আগ্রহী এবং সক্রিয় হতে হবে।  সুত্র ।| লেখকঃ মাছুম বিল্লাহ

শর্ত : বিয়ের পর বউ চাকরি করতে পারবে না

বিয়ের জন্য পাত্রী খোঁজা হচ্ছে। আধুনিক প্রতিষ্ঠিত ছেলেটি চান ভালো মেয়ে, সুন্দর, বনেদি পরিবার ও শিক্ষিত। আর মেয়েটি যদি মেধাবী হন, তা হলে তো ষোলোকলা পূর্ণ। তবে শর্ত একটি, বিয়ের পর বাড়ির বউ চাকরি করতে পারবে না। আধুনিকতার মুখোশের আড়ালে এমন সংকীর্ণতা অনেক পাত্র ও তাঁর পরিবারের মধ্যে দেখা যায়। কর্মক্ষেত্রে নিজের যোগ্যতায় সফল মেয়েটি অনেক সময় চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন। পরিবারের কথা ভেবে অনাকাঙ্ক্ষিত অশান্তি এড়াতে এমন সিদ্ধান্ত মেয়েরা নেন। বিয়ের পর স্বামী চান না বলে চাকরি ছেড়ে দিয়ে ঘরে বসে থাকেন অনেকেই। স্বামী বা শ্বশুরবাড়িকে খুশি করলেও নিজের ভেতরে গুমরে কেঁদে মরেন তাঁরা। নারীর ক্ষমতায়ন, আধুনিকতা ও ব্যক্তিস্বাধীনতার কথা কপচানো অনেক পুরুষই বাস্তবে কর্মজীবী স্ত্রী পছন্দ করেন না।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অরিনের বিয়ের কথা চলছে। একজনের সঙ্গে বিয়ের পাকা কথা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিয়েটা হয়নি। রুচিশীল শিক্ষিত ছেলেটিকে অরিনের ভালো লেগেছিল। কিন্তু বিয়ের তারিখ চূড়ান্ত করার আগে ছেলেটি শর্ত দিয়ে বসলেন—বিয়ের আগেই অরিনকে চাকরি ছেড়ে দিতে হবে। কেননা, তাঁর বউ চাকরি করলে লোকে নাকি ভাববে, ভরণ-পোষণ দিতে পারছেন না। এমন হাস্যকর যুক্তি মেনে না নিতে পারায় বিয়েটা শেষ পর্যন্ত ভেঙে গেল। এ বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় নাকি এখন অনেক বিয়ের কথাই বেশি দূর এগোচ্ছে না। হতাশ হয়ে অরিনের মা-বাবা মনে করেন, এই সামান্য শর্ত মানলে কী এমন ক্ষতি হতো!বিয়ের পর চাকরি ও সংসার কি একসঙ্গে সামলাতে পারবে? সন্তান হলে তাকে কাজের লোকের কাছে বড় হতে হবে। সারা দিন কাজ শেষে বউ বাড়ি ফিরবে। তখন পরিবারকে সময় দিতে চাইবে না। আর চাকরি করলে বউ বশে থাকে না। নিজের স্ত্রী চাকরি করার বিপক্ষে এসব যুক্তি দিয়েছেন বেশ কয়েকজন ছেলে। তাঁদের কেউ কেউ মনে করেন, ভালো মেয়েরা চাকরি করেন না।

ছেলেদের এসব যুক্তির সঙ্গে মেয়েরা কি একমত? ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন হুমায়রা (ছদ্মনাম)। তিনি বলেন, ‘বিয়ের পর আমি চাকরি ছেড়ে দেব। আমার সন্তান একা বড় হবে, এটি চাই না। এতে আমার ব্যক্তিস্বাধীনতা থাকবে না কিংবা ব্যক্তিত্বে প্রভাব পড়বে, এমনটি মনে করি না। সুন্দরভাবে সংসার করাও একটি শিল্প।’

তা হলে এত দূর পড়াশোনা করার কোনো মূল্যই থাকবে না! বিয়ে নামের সামাজিক বন্ধন স্বপ্ন পূরণে বাধা দেবে, এটি মানতে পারেন না নৌশিন। তিনি মনে করেন, ভালো বোঝাপড়া থাকলে সংসার ও চাকরি—দুটোই সামলানো সম্ভব। এখানে স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই ছাড় দিতে হবে। পরস্পরকে সহনশীল হলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আর যে ছেলে কোনো মেয়ের স্বপ্ন ও কাজকে শ্রদ্ধা না করবে, তিনি স্বামী হিসেবে কতটা ভালো হবেন, এ নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। হুমায়রা আর নৌশিনের বাইরেও আছেন অনেকে। তাঁদের মতে, পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর সেটা নিতে হবে মেয়েটিকেই। মেয়েটি যদি সবকিছু ঠিকঠাক সামলাতে পারে তা হলে সমস্যা কিসের!

অনেক সময় মেয়ের অভিভাবকেরাও চান, এই সামান্য ছাড় দিলে কী হয়? চাকরির জন্য সংসার টিকবে না, এটি তাঁরা মেনে নিতে পারেন না। ফলে মেয়ের মতামত গুরুত্ব পায় না তাঁদের কাছে। ব্যতিক্রমও আছেন কেউ কেউ। সরকারি কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের তিন মেয়েই কর্মজীবী। বড় দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। ছোট মেয়ের বিয়ের কথা চলছে। তিনি ভাবতেও পারেন না, তাঁর মেয়েরা কখনো চাকরি ছেড়ে দেবেন। নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মা-বাবা পাশে থাকলে মেয়েরা সব পারে। আমার তিন মেয়ে চাকরি করে। এটি কত বড় গর্বের, তা বোঝানো যাবে না। পাত্রপক্ষ কিছু বলার আগেই বড় দুই মেয়ের বিয়ের সময় আমি উল্টো শর্ত দিয়েছিলাম, বিয়ের পর মেয়েকে চাকরি করতে দিতে হবে।’

অভিভাবকদের বুঝতে হবে, মেয়ে স্বাবলম্বী হলে ভবিষ্যতে যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সামলাতে পারবেন। হতেই পারে বিয়ের পর স্বামীকে কোনো কারণে সাহায্য করতে হলো। তার চেয়ে বড় কথা, দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী ঘরে বসে না থেকে কাজ করলে পরিবার থেকে দেশ—সবার জন্যই ভালো। এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে ছেলেদেরই। চাকরিজীবী স্ত্রীকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে হবে। শুধু মুখে মুখে আধুনিক না হয়ে কাজেও দেখাতে হবে।

রাতারাতি সবার মানসিকতার পরিবর্তন হবে, এমনটা আশা করা ঠিক নয়। সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের পাশাপাশি সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তনও জরুরি। নারীর ক্ষমতায়ন জোরদার করতে হলে রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে। মনে করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। তাঁর সঙ্গে একমত বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। তিনি জানান, ছেলেদের এই মনোভাব নারীর জন্য ইতিবাচক নয়; বরং বিবাহিত জীবনেও অনেকখানি ঝুঁকি রয়ে যায়।বন্ধুত্ব থেকে বিয়ে হলেও অনেক সময় মেয়েদের এসব সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতাবোধ অন্যতম একটি কারণ। বিয়ের পর সন্তানের মা হওয়ার পর বাড়িতে কোনো লোক না থাকলে, অফিসে শিশু দিবাযত্নকেন্দ্র না থাকলে তখন সাধারণভাবে মাকেই চাকরি ছাড়ার কথা বলে সবাই।ফলে এ ধরনের পরিস্থিতি যেন তৈরি না হয়, সেই পরিবেশ বাড়ির সদস্যদের বা প্রতিষ্ঠানকে দিতে হবে।

-তৌহিদা শিরোপা

বরকে পর করে দিচ্ছেন নাতো?

বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনটির মূল ভিত্তি হল স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা, সম্মান, মনোযোগ, একে অন্যের প্রতি যত্নশীলটা, সামাজিক ও পারিবারিক সম্পর্কগুলোকে মানিয়ে চলা, দায়িত্বশীলতা এবং আর্থিক, মানসিক ও জৈবিক চাহিদা পূরণ।

বিয়ের কিছুদিন স্বভাবতই অনেক আবেগ, মুগ্ধতা ও রোমান্স বিরাজ করে। সবকিছুতেই এক রকমের অদ্ভুত ভালোলাগার অনুভূতির ছোঁয়া পাওয়া যায়। কিন্তু এই মোহটা কিছুদিন পর থেকেই বিলুপ্ত হওয়া শুরু হয় যদি সম্পর্কে কোন নতুনত্ব না থাকে। তাই সম্পর্ক ভালো ও সুস্থ রাখতে সর্বদা সচেতন থাকা অতি আবশ্যক।

বর্তমান আধুনিক সময়ে অনেক স্ত্রী চাকুরি করেন। আমাদের সমাজ এখনো পুরুপুরি আধুনিক হতে পারেনি, এখনো কিছু কিছু ব্যাপারে অনেক রক্ষনশীল মানসিকতা বহন করছে। যেমন- মেয়েরা যত বড় চাকুরিই করুক না কেন রান্না-বান্না ও সংসার সামলানো মেয়েকেই করতে হবে, ছেলেরা করলে যেন তা অনেক বড় পাপ কাজ বলে গণ্য হবে।  তাই চাকুরিজীবি মেয়েদের উপর থাকে চাকুরি ছাড়াও রান্না-বান্না ও সংসার সামলানোর সকল দায়িত্ব ও কর্তব্য।  সবকিছু সামলিয়েও মেয়েদের আরেকটা বড় দায়িত্ব হল স্বামীকে সন্তুষ্ট রাখা। তার ছোট ছোট ব্যাপারে যত্নশীল থাকা, সকল চাওয়া পূরণ করা যাতে তার জীবনে কোন অপ্রাপ্তি বা অপূর্ণতা না থাকে। কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে ভালোবাসা, আদর, মনোযোগ না পেলেই স্বামীর ভালোবাসা, ভালোলাগা, আকর্ষণ সব ধীরে ধীরে কমতে থাকে যা ভবিষ্যতে সংসারে অশান্তি বা পরকীয়ার মত ঘটনার সূত্রপাত হয়। তাই বরের প্রতি সবসময় যত্নশীল থাকা অতি জরুরি।

আবার, বর্তমান সময়ে মানুষ তার সন্তানের প্রতি আগের থেকে অনেক বেশি উদ্বেগী ও যত্নশীল হয়ে গেছে। সন্তানের ছোট ছোট চাহিদা পূরণের জন্য বিশেষ করে মায়েরা অনেক বেশি সচেষ্ট। এর মাঝে অনেকেই ভুলে যায় তার আরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে। সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হল তার বরের প্রতি। বর যখন এত সময় ধরে তার বউ এর কাছ থেকে সবটা মনোযোগ ও যত্ন পেয়ে অভ্যস্ত হয়ে যায় তখন হুট করে না পাওয়াটা অনেক বেশি অপ্রত্যাশিত হয়ে যায় যা তার অনুভূতিতে অন্যরকম খারাপ একটা প্রভাব ফেলার একটা সম্ভাবনা থাকে। যেমন- সন্তানের কারণে তার আর আগের মত মনে বাসনা হলেই স্ত্রীর কাছে যাওয়ার সুযোগ না পাওয়া, আগের মত রোমান্স না করতে পারা ধীরে ধীরে শারীরিক দুরত্বের তৈরি করে।

বর বাসায় ফেরার পরে আগের মত বরের দিকে খেয়াল না রাখা, তার দৈনন্দিন বাইরের নানাবিধ কার্যকলাপ নিয়ে আলোচনা না করা, কোন দুশ্চিন্তা থাকলে তা ভাগ না করা, তাদের গল্পের বিষয় শুধু বাচ্চাটির দুধ, ডায়াপার, বাচ্চাটি নতুন কি কাজ করেছে, বাচ্চাটির আর কি কি লাগবে এইসব বিষয়েই সীমাবদ্ধ থাকলে মোট কথা বাচ্চার ব্যাপারে ওভার পসেসিভ থেকে বরকে গুরুত্ব না দিলে মানসিকভাবেও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দুরত্ব তৈরি হয়।

যতকিছু হোক না কেন সর্বদা স্বামীর প্রতি এক প্রকার নজরদারি বহাল রাখতেই হয়। বাচ্চা হলেই সাধারণত মেয়েরা একটু মোটা হয়ে যায় বা চেহারার যত্ন নেয়ার সময় না পাওয়ায় চেহারাও নষ্ট হয়ে যায় এইসবের প্রতি যত্নশীল থাকতে হবে। কারণ সৌন্দর্যটাও স্বামীর মন যোগাতে অনেকাংশে প্রভাব ফেলে। সবকিছুর পরেও বরকে তার মত করে সময় দিতে হবে, তার কাজের প্রশংসা করতে হবে, তাকে মুগ্ধ করে এমন কিছু করা, তার সাথে টিভি দেখা, ঘুরতে যাওয়া, বিশেষ দিনগুলো তার সাথে উদযাপন করার মাধ্যমে তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে স্বস্তি দিতে হবে। অন্যথায়, বর একাকীবোধ করা থেকে অনেক খারাপ কিছুতে নিজেকে জড়িয়ে ফেলতে পারে। আর একবার শারীরিক ও মানসিকভাবে দুরত্ব তৈরি হয়ে গেলে তা দূর করতে অনেক সময় ও শ্রম লেগে যায় তাই শুরু থেকেই সচেতন থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ।

ট্রেডিশনাল ঘটক বনাম বিবাহবিডি ডট কম

একজন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ ও নারীর জীবনে অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত হচ্ছে ‘বিবাহ’ এবং দাম্পত্য জীবন নিয়ে প্রতিটি মানুষের থাকে বিভিন্ন রকম আশা ও স্বপ্ন। একটি বিয়ে শুধু দুজন ব্যক্তির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তৈরী করে দুটি পরিবারের মধ্যে সামাজিক বন্ধন। তাই একটি পরিবার সামাজিক ভাবে আরেকটি পরিবারের সাথে বন্ধন তৈরীর পূর্বে অনেক হিসেব নিকেশ করে থাকে।  এজন্য সঠিক ও যোগ্য পাত্র/পাত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রতিটি পরিবার নিজেদের চাহিদাকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে বারংবার, এক্ষেত্রে অতিরিক্ত আবেগ বা আপোসকামীতা বয়ে আনতে পারে দুটি জীবনে অসহনীয় যন্ত্রনা ।

পরিবারের কোন সদস্যের বিয়ের জন্য উপযুক্ত সঙ্গী নির্বাচনে আমরা সাধারনত সাহায্য নিয়ে থাকি নির্ভরযোগ্য কোন মাধ্যমের। কখনো তা নিকট আত্মীয়, কখনো প্রফেশনাল ঘটক, আবার কখনো প্রযুক্তি নির্ভর অনলাইন ম্যাট্রিমনিয়াল ওয়েব পোর্টালের।

প্রশ্ন হচ্ছে সম-সাময়িক বিবেচনায় ঘটক কিংবা ম্যাট্রিমনিয়াল ওয়েব পোর্টাল বিবাহবিডি ডট কমের মধ্যে কোনটি বেশী গ্রহন যোগ্য, আস্থাশীল এবং দ্রুততর? বিবাহবিডি উপস্থাপন করছে এমনই তুলনামূলক কিছু তথ্য যা আপনাদের প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সহায়ক হবে।

আসুন দেখি একটি তুলনা মূলক পার্থক্য –

১।  নিবন্ধনঃ


ঘটক: একজন শহরের প্রফেশনাল ঘটকের কাছে পাত্র-পাত্রীর বায়োডাটা জমা দেয়ার সময় নিবন্ধন ফী হিসাবে প্রথমেই এককালীন ফী দিতে হয় যা ক্ষেত্র বিশেষে ৩ থেকে ১৫ হাজার পর্যন্ত হয়ে থাকে।

বিবাহবিডি ডট কম: বিবাহবিডি ডট কম মূলত পাত্র-পাত্রী খোঁজার ও সরাসরি নিজেরাই যোগাযোগ করার জন্য বিশেষ ভাবে তৈরি করা একটি অনলাইন বেইজ সার্চ ইঞ্জিন। এখানে রেজিষ্ট্রেশন সম্পূর্ন ফ্রী। যে কেউ বিশ্বের যেকোন প্রান্ত থেকে সহজেই ফ্রী রেজিষ্ট্রেশন করতে পারে। এক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা, প্রফেশন, প্রোফাইল ভ্যারিফিকেশন এর উপর ভিত্তি করে বিবাহবিডি একটি ইউজার গ্রেড নিশ্চিত করে তারপরই প্রোফাইল এক্টিভেট করে এবং ৩ দিনের ফ্রী ট্রায়াল মেম্বারশীপ প্রদান করে, যেনো ব্যবহারকারী লগিন করে পছন্দের প্রোফাইল গুলো দেখে সহজেই বাছাই করতে পারে।

২।  পছন্দ ও যোগাযোগঃ


ঘটক: এক জন ঘটকের কাছে নিবন্ধন পরবর্তীতে প্রতিবার পাত্র-পাত্রীর সন্ধান ও মুখোমুখি সাক্ষাতের জন্য আপনাকে গুনতে হবে ২ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।  ফলে আপনি চাইলেও সময় ও অর্থের কথা ভেবে খুব বেশী যাচায় বাছাই করার সুযোগ পাবেন না।  এক্ষেত্রে আপনার পছন্দের ব্যাপারে ঘটকের উপরই নির্ভর করতে হবে।  নিত্যনতুন বায়োডাটা দেখতে ও নিজেরাই পাত্র-পাত্রী কিংবা অভিভাবকের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করার কোন সুযোগ ঘটকের কাছ থেকে পাওয়া যায় না।

বিবাহবিডি ডট কম: বিবাহবিডি পাত্র পাত্রীর মধ্যে কোন রকমের মধ্যস্থতা করে না। এখানে আপনি নিজেই ঘরে বসেই কম্পিউটারে/মোবাইলে বিবাহবিডির ডাটাবেইজের সর্বশেষ সংগ্রহিত/ এক্টিভেট করা প্রোফাইল গুলো দেখে পাত্র-পাত্রী কিংবা তাদের অভিভাবকের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবেন। এজন্য বিবাহবিডিতে রয়েছে ৪ টি সহজলভ্য বিভিন্ন মেয়াদী মেম্বারশীপ প্যাকেজ। যার মাধ্যমে পাত্র-পাত্রীর পরিবার একে অন্যের সাথে তাৎক্ষনিক যোগাযোগ করতে পারে।

৩।  বায়োডাটা সংগ্রহ ও ব্যাপ্তিঃ


ঘটক: একজন ট্রেডিশনাল ঘটক নির্দিষ্ট একটি এলাকা/মহল্লার মধ্য সীমিত তথ্য নিয়ে তার পেশাগত দায়িত্ব পালন করে থাকে এবং অতি সনাতন পদ্ধতিতে।

বিবাহবিডি ডট কম:  বিবাহবিডি সম্পূর্ন অনলাইন ভিত্তিক সেবা নিশ্চিত করে। তাই বিশ্বের যেকোন দেশ ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে  পাত্র-পাত্রী বা অভিভাবকেরা প্রোফাইল দেখে নিজেরাই সরাসরি যোগাযোগ করতে পারে।  তাই এর ব্যাপ্তি বিশ্বব্যাপী এবং তা সমকালীন একটি আধুনিক সেবা।

৪।  বায়োডাটার তথ্য যাচাই ও সত্যতাঃ


ঘটক: প্রফেশনাল ঘটকের কাছে যে বায়োডাটা থাকে তা কতটুকু গ্রহনযোগ্য, তার সত্যতা নিয়ে আপনার সংশয় থাকতে পারে।  এবং একজন ঘটক কখনোই তার গ্রাহক প্রদত্ত বায়োডাটা গুলোর ভেরিফিকেশনের দায়িত্ব নেয় না।

বিবাহবিডি ডট কম: বিবাহবিডি প্রোফাইল এক্টিভেট/সক্রিয় করার পূর্বে নিজস্ব কাষ্টমার সাপোর্ট টিম দ্বারা তা ভেরিফাই করে এবং পাত্র/পাত্রী ও অভিভাবকের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত হওয়ার তারপরই একটি প্রোফাইল একটিভ করে।  এক্ষেত্রে প্রোফাইল ভেরিফিকেশনের  জন্য জাতীয় পরিচয় পত্র / জন্ম নিবন্ধন / একাডেমিক সার্টিফিকেট/ প্রবাসীদের জন্য ভিসা, পাসপোর্ট / ডিভোর্সদের জন্য ডিভোর্স সার্টিফিকেট যাচাই করন বিবাহবিডিতে বাধ্যতামূলক।

৫।  প্রোফাইল সার্চ ও ম্যাচমেকিং :


ঘটক: সাধারনত একজন ঘটক তার কাছে থাকা সীমিত বায়োডাটার মধ্যেই আপনার সঙ্গী খুঁজার জন্য আপনাকে বিভিন্ন ভাবে প্রভাবিত করে থাকে এবং এতে ক্ষেত্র বিশেষে ভুল সঙ্গী বাছায়ের সম্ভাবনা থাকে।

বিবাহবিডি ডট কমবিবাহবিডিতে আপনি আপনার পছন্দের প্রফেশন, পাত্র-পাত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, জেলা, আর্থিক অবস্থা, বৈবাহিক অবস্থা, বর্তমান অবস্থান, বর্ন, গোত্র, ধর্ম সহ ১৮ টি সার্চ ক্যাটাগরীর মাধ্যমে চাহিদা অনুযায়ী কাংখিত সংঙ্গীকে সহজেই খুঁজতে সক্ষম হবেন।  তাছাড়া আপনার প্রদত্ত সঙ্গী বাছাইয়ের বিবরন ( পার্টনার প্রেফারেন্স) এর সাথে মিলিয়ে বিবাহবিডি সার্চ ইঞ্জিন স্বয়ংক্রিয় ভাবে ডাটাবেইজের সেই সব প্রোফাইল খুঁজে আপনার সামনে এক নিমিষেই হাজির করে।

৬।   বিবাহ ঠিক হলে সার্ভিস চার্জঃ


ঘটক: একজন ঘটকের মাধ্যমে বিবাহ সম্পাদনের পর আপনাকে মোটা অংকের চুক্তি ভিত্তিক অর্থ প্রদান করতে হয়, যা ২০ হাজার থেকে কখনো লাখ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

বিবাহবিডি ডট কম: বিবাহবিডি থেকে আপনি জীবন সঙ্গীখোঁজে পাবার পর বিবাহবিডি আপনার কাছে কখনোই কোন সার্ভিস চার্জ দাবি করবেনা। বরংচ বিবাহবিডিতে আপনার সাকসেস ষ্টোরী শেয়ার করলে বিবাহবিডিই অাপনাকে অভিনন্দন জানিয়ে আপনার ঠিকানায় গিফট পাঠাবে।

সম্মানিত পাঠক, আশাকরি আপনারা উপরোক্ত অালোচনা ও পার্থক্য গুলো থেকে সহজেই সঠিক বিষয়টি অনুধাবন করে নিজেরাই যথাযথ সিদ্ধান্তে উপনিত হতে সক্ষম হবেন।

যোগ্য জীবন সঙ্গী খুঁজতে বিবাহবিডি

বিবাহবিডি ডট কম:  ঘরে বসেই অনলাইনে পাত্র পাত্রী খুঁজে পছন্দের পাত্রপাত্রী কিংবা অভিভাবকের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করার সবচেয়ে সহজতর প্রন্থা।  আর এই সেবাটি বিবাহবিডি দিয়ে আসছে ২০০৯ সাল থেকে।  আপনার শতভাগ সেবা নিশ্চিত করতে  ২৪ ঘন্টা ৭ দিনই  প্রস্তুত আছে।  এ সেবাটি সম্পূর্ন অনলাইন বেইজ  এবং  শত ভাগ সেলফ সার্ভিস।  অনলাইনে ফ্রী রেজিষ্ট্রেশন করে নিজের মত করে প্রফেশন, এডুকেশন ব্যাকগ্রাউন্ড অনুযায়ী উচ্চ শিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত পাত্র-পাত্রীর প্রোফাইল গুলো দেখে সহজেই শর্ট লিষ্ট করে সরাসরি পাত্র-পাত্রী বা তাঁদের অভিভাবকের সাথে  নিজেরাই যোগাযোগ করতে পারবেন এবং তা অতি দ্রুত সময়ের মধ্যেই।

তাছাড়াও বিবাহবিডিতে আপনার অথবা আপনার পরিবারের নিবন্ধিত সদস্যের প্রোফাইলটি দেখে আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী (পার্টনার প্রেফারেন্স দেখে) পাত্র/পাত্রী বা তাদের অভিভাবকেরাও আপনাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবেন।

ভিডিও টি দেখুনঃ

কেন  বিবাহবিডিতে পাত্র/পাত্রী খুঁজবেন ?

  • বিবাহবিডি সম্পূর্ন একটি সেলফ সার্ভিস। যেখানে পাত্র-পাত্রী কিংবা অভিভাবকেরা অনলাইনে ফ্রী রেজিষ্ট্রেশন করে ৩ দিনের ট্রায়াল মেম্বারশীপ নিয়ে, নিজেরাই পাত্রপাত্রীর প্রোফাইল দেখে বাছাই করেন এবং পরবর্তীতে পছন্দের পাত্র-পাত্রী কিংবা তাদের অভিভাবকের সাথে সরাসরি নিজেরাই যোগাযোগ করে থাকেন।
  • বিবাহবিডি ইউজার সাপোর্ট টিম (24/7) প্রতিটি প্রোফাইলের পাত্র/পাত্রী ও অভিভাবককে তথ্য সম্পূর্ন রুপে যাচাই করে এক্টিভ করে।
  • এনআইডি, পাসপোর্ট, জব আইডি ও ডিভোর্সদের ক্ষেত্রে ডিভোর্স সার্টিফিকেট ভেরিফাইড প্রোফাইল
  • প্রফেশন অনুযায়ী, অবিবাহিত, ডিভোর্স, বিধবা/বিপত্নীক পাত্র/পাত্রী খুঁজতে
  • প্রবাসী প্রতিষ্ঠিত পাত্র/পাত্রী খুঁজতে
  • বাংলাদেশের যে কোন জেলার প্রতিষ্ঠিত পাত্র/পাত্রী খুঁজতে
  • প্রবাসী / নিদৃষ্ট কোন দেশের বসবাসরত পাত্র/পাত্রী খুঁজতে
  • নিদৃষ্ট ধর্ম, গোত্র, কাষ্ট অনুযায়ী পাত্র/পাত্রী খুঁজতে
  • ষ্পেশাল কেইস ( সিঙ্গেল ফাদার, সিঙ্গেল মাদার)  পাত্র/পাত্রী খুঁজতে
  • ডিজেবেলিটি (পরিবারের কারো শারীরিক (অধিক/ আংশিক) প্রতিবন্ধকতা আছে ) পাত্র/পাত্রী খুঁজতে

বিবাহবিডিতে আসা প্রোফাইল গুলো যাচাই হয় কিভাবে?

  • বিবাহবিডি ডট কম  আছে (২৪/৭ দিন) এক্সপার্ট কাষ্টমার সাপোর্ট টিম। একটি প্রোফাইল আসার সাথে সাথেই আমাদের কাষ্টমার সাপোর্ট প্রোফাইলটিকে  বেশ কিছু পন্থায় যাচাই করে থাকে এবং পাত্র-পাত্রী ও অভিভাবকের সাথে সরাসরি ফোনে কথা বলে তার প্রদত্ত প্রত্যেকটি তথ্য সম্পূর্ন নিশ্চিত হয়ে তারপরই একটি প্রোফাইল এক্টিভ করে।

বিবাহবিডিতে প্রোফাইল প্রোফাইল করতে কি কি যোগ্যতা প্রয়োজন?

  • বিবাহবিডি ডট কম ছেলেদের ক্ষেত্রে  শিক্ষাগত যোগ্যতা নূন্যতম ব্যাচেলর ডিগ্রী সহ চাকুরীজীবি বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠিত।
  • ডিভোর্স/ বিধবা কিংবা অবিবাহিত মেয়েদের ক্ষেত্রে নূন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা ইন্টারমিডিয়েট।

৩ দিন ফ্রী মেম্বারশীপের মেয়াদ কালীন সময়ে আপনি বিবাহবিডির সবগুলো প্রোফাইল দেখে পছন্দের প্রোফাইল গুলোকে (শর্টলিষ্ট/ ফেভারিট) করে নিতে পারবেন।

কিভাবে পছন্দের কারো সাথে যোগাযোগ করবেন ?
বিবাহবিডি ডট কমের  রয়েছে  ৪ টি প্যাকেজ।  অনিক্স, রুবী, পার্ল, ডায়ামন্ড।  এই চারটি প্যাকেজের যে কোন একটি কিনে আপনি পছন্দের যে কারো সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবেন ।

কোন প্যাকেজের কি কি সুবিধা ?
প্যাকেজ অনুযায়ী আপনি সয়ংক্রিয় ভাবে যোগাযোগের তথ্য পাবেনঃ
অনিক্স মেম্বারশীপ – মেয়াদ ৪৫ দিন,  রুবী মেম্বারশীপ – মেয়াদ ৯০ দিন, পার্ল মেম্বারশীপ – মেয়াদ ১৮০ দিন, ডায়ামন্ড মেম্বারশীপ – মেয়াদ ৩৬০ দিন

যোগাযোগের তথ্যঃ  
পাত্র/পাত্রী ও অভিভাবকের ফোন নাম্বার, ইমেইল আইডি,  বর্তমান ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা।

প্রাইভেসী ফিচারঃ
আপনি প্রাইভেসী ফিচার অন করে আপনার যোগাযোগের তথ্য লুকিয়ে রাখতে পারবেন।  আপনি না চাইলে কোন ইউজার আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারবে না।

 বিবাহবিডির মুড অফ পেমেন্ট কি? কিভাবে সার্ভিস কেনা যায় ।

  • আপনার যদি ইন্টারনেশনাল পেমেন্ট গেটওয়ে পেপল এর কার্ড কিংবা একাউন্ট থেকে থাকে অথবা
  • বিশ্বের যেকোন দেশ থেকে আপনার ভিসা, মাষ্টার কার্ড দিয়ে আপনি  অনলাইনেই সার্ভিস কিনতে সক্ষম ।
  • বাংলাদেশের ডাচবাংলা ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংকের ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ড দিয়ে অনলাইনেই সার্ভিস কেনা যায়।
  • আমাদের ৩ টি অনলাইন ব্যাংক একাউন্ট আছে সে গুলোতে সরাসরি ডিপোজিট করে আপনি সার্ভিস কিনতে পারবেন –  ব্যাংক গুলো
    ১)  ডাচ বাংলা ব্যাংক  ২) ব্র্যাক ব্যাংক  ৩) ব্যাংক এশিয়া
  • মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ এর মাধ্যমে এখন খুব সহজেই পেমেন্ট করা যায়

বিবাহবিডি ডট কম সার্ভিস সম্পর্কে যেকোন তথ্যের জন্য ভিজিট করুনঃ www.bibahabd.com অথবা ০১৯২২১১৫৫৫৫

বিয়ে নিয়ে প্রতারণা! – আইন অধিকার

বিয়ে নিয়েও প্রতারণার ঘটনা ঘটতে দেখা যায়।  অনেক সময় দুজন ছেলেমেয়ে নিজেদের ইচ্ছায় বিয়ে করেন।  বিয়ের কথা পরিবারের কাউকে জানান না।  কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই ছেলে বা মেয়ে বিয়ের কথা গোপন রেখে অন্য কোথাও পরিবারের ইচ্ছা অনুযায়ী বিয়ে করে ফেলেন। আবার দেখা যায় দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক কোনো কারণে ভেঙে গেলে কোনো পক্ষ ভুয়া কাবিননামা তৈরি করে স্বামী বা স্ত্রী হিসেবে দাবি করতে থাকে। আবার এমনও দেখা যায় আদৌ বিয়ে হয়নি অথচ বিয়ে হয়েছে, এ বলে মিথ্যা প্রমাণ দেখিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মতো সংসার করতে থাকেন। মেয়েটিকে আর ভালো না লাগলে কিংবা মেয়েটি গর্ভবতী হয়ে পড়লে ছেলেটি বিয়ে অস্বীকার করতে থাকে। এ ধরনের ঘটনাগুলোই বিয়ে-সংক্রান্ত অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।  বিয়ে নিয়ে যদি প্রতারণা বা অন্য কোনো অপরাধ ঘটে তাহলে এর কি কোনো প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ আছে? অবশ্যই আছে। দণ্ডবিধি আইনে বিয়ে-সংক্রান্ত অপরাধের কঠিন শাস্তির বিধান করা হয়েছে।

যে শাস্তি রয়েছেঃ 
দণ্ডবিধির ৪৯৩ ধারা থেকে ৪৯৬ ধারা পর্যন্ত বিয়ে-সংক্রান্ত বিভিন্ন অপরাধের শাস্তির বিধান আছে, যার অধিকাংশ অপরাধই জামিন অযোগ্য।   ধারা ৪৯৩ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি কোনো নারীকে প্রতারণামূলকভাবে আইনসম্মত বিবাহিত বলে বিশ্বাস করান, কিন্তু আদৌ ওই বিয়ে আইনসম্মতভাবে না হয় এবং ওই নারীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেন, তবে অপরাধী ১০ বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। ৪৯৪ ধারায় উল্লেখ আছে, যদি কোনো ব্যক্তি এক স্বামী বা এক স্ত্রী জীবিত থাকা সত্ত্বেও পুনরায় বিয়ে করেন, তাহলে দায়ী ব্যক্তি সাত বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন।

৪৯৫ ধারা অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি দ্বিতীয় বা পরবর্তী বিয়ে করার সময় প্রথম বা আগের বিয়ের তথ্য গোপন রাখেন, তা যদি দ্বিতীয় বিবাহিত ব্যক্তি জানতে পারেন, তাহলে অপরাধী ১০ বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন। ৪৯৬ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি আইনসম্মত বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা ব্যতীত প্রতারণামূলকভাবে বিয়ে সম্পন্ন করেন, তাহলে অপরাধী সাত বছর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এ ছাড়া কোনো মুসলমান ব্যক্তি ১ম স্ত্রী থাকলে সালিসি পরিষদের অনুমতি ছাড়া এবং প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া আরেকটি বিয়ে করেন, তিনি ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ৬ (৫) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করবেন। অভিযোগে দোষী প্রমাণিত হলে ব্যক্তিকে এক বছর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।

কোথায় কীভাবে আইনের আশ্রয় নিতে হবেঃ 
বিয়ে-সংক্রান্ত অপরাধের জন্য অভিযোগ থানা বা আদালতে গিয়ে চাওয়া যাবে। থানায় এজাহার হিসেবে মামলা দায়ের করতে হবে। যদি মামলা না নিতে চায় তাহলে সরাসরি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গিয়ে সরাসরি মামলা দায়ের করা যাবে। কেউ কেউ থানায় না গিয়ে সরাসরি আদালতে মামলা করে থাকেন। এতে কোনো সমস্যা নেই। আদালতে মামলা করার সময় যথাযথ প্রমাণসহ অভিযোগের স্পষ্ট বর্ণনা দিতে হবে এবং সাক্ষীদের নাম-ঠিকানাও দিতে হবে। আদালত অভিযোগকারীর জবানবন্দি গ্রহণ করে যেকোনো আদেশ দিতে পারেন। অনেক সময় অভিযোগ আমলে না নিয়ে প্রাথমিক তদন্তের জন্য নির্দেশ দিতে পারেন। কেউ যদি স্বামী বা স্ত্রীর পরিচয়ে নিজেদের অন্তরঙ্গ ছবি ফেসবুক বা অন্য কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করে অথচ আদৌ কোনো বিয়ে সম্পন্ন হয়নি তাহলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে মামলা করার সুযোগ আছে এবং এ মামলা থানায় করতে হবে। এ ছাড়া ভুয়া কাবিননামা তৈরি করলে জালিয়াতির অভিযোগও আনা যাবে।

যে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবেঃ 
বিয়ে যেভাবেই সম্পন্ন হোক না কেন কাবিননামা কিংবা বিয়ের সব দলিল নিজের কাছে রাখা উচিত। কাবিননামার ওপর কাজির সিল স্বাক্ষর আছে কি না যাচাই করে নিতে হবে এবং কোন কাজির মাধ্যমে বিয়েটি সম্পন্ন হলো তার সঙ্গে যোগাযোগ করে সত্যতা যাচাই করে নেওয়া ভালো। মুসলিম বিয়ে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। এটা স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই মনে রাখতে হবে। বর্তমানে হিন্দু বিয়ের নিবন্ধনও ঐচ্ছিক করা হয়েছে। বিয়ের হলফনামা করা থাকলে তাও সংগ্রহে রাখতে হবে।

লেখক: তানজিম আল ইসলাম | আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
সুত্রঃ প্রথম আলো, জুন ০৮, ২০১৬

বিচ্ছেদের ব্যবচ্ছেদ

বিচ্ছেদ কাম্য নয়। আমরা চাইও না। কিন্তু প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে ভাঙনের সুর বেজে উঠতেই পারে জীবনে। যে অবস্থায় সুস্থ এবং মানসিক শান্তিপূর্ণ জীবনযাপনের স্বার্থে দুজনের চলার পথ দুটি দিকে বেঁকে যাওয়া ছাড়া কোন উপায় খোলা থাকে না- তেমনি কিছু পরিস্থিতিতে অনিবার্য করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত এবং প্রাসঙ্গিক বিশ্লেষণ আমাদের এই বিচ্ছেদ-ব্যবচ্ছেদ টেবিলে।

ঘটনা ১

শাহেদের সাথে হৃদির বিয়ের দেড় বছরের মাথায় শাহেদ জানতে পারে, হৃদি এখনও তার আগের এক বন্ধুর সাথে প্রেম করে। বিষয়টি জানার পর দুজনের মধ্যে ঝগড়া ও মনোমালিন্য। তৈরী হয় দূরত্ব। এখন দুজনের কেউ চাইছে না এমন অসুস্থ দাম্পত্য জীবন কাটাতে। কী করা যায়?

ঘটনা ২

বিয়ের কদিন পর থেকেই রোজির স্বামী তাকে যৌতুকের জন্য চাপ দিতে থাকে। বাবা-মাকে বলে একলাখ টাকা এনে দিলেও স্বামীর চাহিদা ফুরোয় না। আবারও যৌতুকের জন্য চাপ! না পেয়ে চলে দুর্ব্যবহার, শারীরিক নির্যাতন। একপর্যায়ে পাঠিয়ে দেয় বাবার বাড়িতে। জানিয়ে দেয়, চাহিদামতো যৌতুক না দিলে তাকে আর ঘরে ফেরানো হবে না। যৌতুকলোভী এমন একটা মানুষের সাথে সংসার চালিয়ে নেওয়া রোজীর জন্য দুঃসাধ্য। সে কীভাবে তার স্বামীকে তালাক দেবে?

মুসলিম আইনে বিবাহবিচ্ছেদ

বিবাহবিচ্ছেদের বহুল প্রচলিত মাধ্যম হচ্ছে তালাক।ইসলামি  আইন অনুযায়ী, তালাক স্বামীর একটি ক্ষমতা যা সে কল্যাণের উদ্দেশ্যেই ব্যবহার করবে। খামখেয়ালে বা অন্যায়ভাবে সে এটি তার স্ত্রীর উপর প্রয়োগ করবে না। ১৯৬১ সালের আইন অনুযায়ী তালাক কার্যকর করার আগে সালিসের মাধ্যমে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে মীমাংসা করার চেষ্টা করতে হবে। সেই উদ্দেশ্যে এই আইনে চেয়ারম্যান নোটিশ এবং সালিশ গঠনের বিধান রাখা হয়। অপরদিকে বিবাহনিবন্ধন ফরম তথা কাবিননামার ১৮ অনুচ্ছেদে স্ত্রীকে তালাকের অধিকার দেওয়ার কথা উল্লেখ আছে। সেই অনুযায়ী, স্ত্রী চাইলে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটাতে পারে।

স্বামী যেভাবে তালাক দেবে

সাধারণভাবে ধরা হয় যে, তালাক স্বামীর একচ্ছত্র ক্ষমতা। স্বামী যখন ইচ্ছা তখন একতরফাভাবে তালাক দিতে পারে। স্ত্রীকে কারণ জানানোরও প্রয়োজন নেই। তবে, ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনে এই ক্ষমতার খামখেয়ালি ব্যবহাররোধে তালাক কার্যকর করার পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়েছে।

এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, তালাক উচ্চারণ এবং কার্যকর হওয়ার মধ্যে পার্থক্য আছে। মুখে তালাক উচ্চারণ করলেই হবে না। চেয়ারম্যান নোটিশ দিতে হবে এবং নোটিশের পর ৯০ দিন পার না হলে তালাক কার্যকর হবে না।

তালাকের নোটিশ

১৯৬১ সালের পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ৭ (১) ধারা অনুযায়ী, যে ব্যক্তি তালাক দেবে, সে লিখিতভাবে নোটিশ পাঠাবে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান/পৌরসভার চেয়ারম্যান/সিটি কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান ও স্ত্রী বরাবর।নোটিশ না পাঠালে ১ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। নোটিশ পাবার ৩০ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান অথবা মেয়র সালিস পরিষদ গঠন করবেন এবং স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সমঝোতা করানোর চেষ্টা করবেন।

সালিস পরিষদ উভয়কে ৯০ দিনের মধ্যে প্রতি ৩০ দিনে ১টি নোটিশ করে মোট ৩ টি নোটিশ পাঠাবেন। এর মধ্যে স্বামী নোটিশ প্রত্যাহার না করলে তালাক কার্যকর হবে। নোটিশ প্রত্যাহার করলে তালাক কার্যকর হবে না।

তালাক প্রদানের সময় স্ত্রী গর্ভবতী থাকলে তালাক কার্যকর হবে না। তবে সন্তান হওয়ার পর পর্যন্ত নোটিশ বহাল রাখলে ৯০ দিন পর তালাক কার্যকর হবে। কিন্তু এর মধ্যেও তা প্রত্যাহার করলে তালাক কার্যকর হবে না।

নোটিশ ছাড়া তালাক কার্যকর হবে কি?

১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের কোথাও নোটিশ না দিলে তালাক হবে না বলে উল্লেখ নেই। তবে স্বামী শাস্তি পাবেন।কিন্তু উচ্চ আদালত বিষয়টির একটি ভিন্ন সমাধান দিয়েছেন। কাজী রাশেদ আখতার শহিদ বনাম মোসাম্মৎ রোখসানা বেগম চৌধুরী ছন্দা মামলায় হাইকোর্ট বিভাগ বলেছেন, স্বামী কর্তৃক চেয়ারম্যান বরাবর নোটিশ না দিলে তালাক কার্যকর হবে না। তালাক উচ্চারণের সময় স্ত্রী যে এলাকায় বসবাস করছেন সে এলাকার চেয়ারম্যানের কাছে নোটিশ পাঠাতে হবে।

স্ত্রীও তালাক চাইতে বা দিতে পারেন

নিকাহনামার ১৮ অনুচ্ছেদে স্ত্রীকে দেওয়া বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষমতাবলে স্ত্রী আদালতের আশ্রয় ছাড়াই স্বামীকে তালাক দিতে পারেন। এক্ষেত্রে স্বামীর মতোই স্ত্রী তালাকের নোটিশ চেয়ারম্যান ও স্বামীর কাছে পাঠাবেন। নোটিশ পাবার ৯০ দিন পর তালাক কার্যকর হবে।সাধারণত বর্তমানে নিকাহ রেজিষ্ট্রেশনের সময় স্ত্রীকে এ ধরণের অধিকার দেওয়া হয়। তারপরও মেয়েদের উচিত বিবাহের সময় নিকাহনামায় এই বিধান রাখা হয়েছে কিনা তা দেখে নেওয়া।

এছাড়া ১৯৩৯ সালের মুসলিম বিবাহবিচ্ছেদ আইনে, কী কী কারণে স্ত্রী আদালতে বিচ্ছেদের আবেদন করতে পারবেন, তা সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে।

  • চার বছর পর্যন্ত স্বামী নিরুদ্দেশ থাকলে
  • দুই বছর পর্যন্ত স্বামী স্ত্রীর খরপোশ দিতে ব্যর্থ হলে
  • স্বামীর সাত বছর কিংবা তারচেয়ে বেশি কারাদণ্ড হলে
  • স্বামী কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া তিন বছর দাম্পত্য দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে
  • বিয়ের সময় পুরুষত্বহীন থাকলে এবং তা মামলা দায়ের করা পর্যন্ত বজায় থাকলে
  • স্বামী দুই বছর ধরে মানসিক অথবা কুষ্ঠ কিংবা মারাত্মক যৌন ব্যাধিতে আক্রান্ত থাকলে
  • স্বামী বিবাহ অস্বীকার করলে। কোন মেয়ের বাবা ব অভিভাবক যদি ১৮ বছর বয়সের আগে মেয়ের বিয়ে দেন, তাহলে মেয়েটি ১৯ বছর হওয়ার আগে বিয়ে অস্বীকার করে বিয়ে ভেঙে দিতে পারে। স্বামীর সাথে দাম্পত্য সম্পর্ক (সহবাস )না হয়ে থাকলে বিয়ে অস্বীকার করে আদালতে বিচ্ছেদের ডিক্রি চাইতে পারে।
  • স্বামী ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের বিধান লঙ্ঘন করে একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করলে
  • স্বামীর নিষ্ঠুরতার কারণে

নীচের কাজগুলো নিষ্ঠুরতা হিসেবে স্বীকৃত-

ক) অভ্যাসগতভাবে স্ত্রীকে আঘাত করা। এটা দৈহিক পীড়নের পর্যায়ে না পড়লেও তার জীবন শোচনীয় করে তুললে এটি নিষ্ঠুর আচরণ বলে বিবেচিত হবে

খ) স্বামী খারাপ মেয়ের সাথে জীবন যাপন করলে

গ) স্ত্রীকে অনৈতিক জীবন যাপনে বাধ্য করলে

ঘ) স্ত্রীর সম্পত্তি নষ্ট করলে

ঙ) স্ত্রীকে ধর্মপালনে বাঁধা দিলে

চ) একাধিক স্ত্রী থাকলে সকলের সাথে সমান ব্যবহার না করলে

  • মুসলিম আইনে স্বীকৃত অন্য যেকোন যুক্তিসঙ্গত কারণে স্ত্রী আদালতে তালাকের অনুমতির জন্য মামলা করতে পারেন।

ওপরের যেকোন এক বা একাধিক কারণে স্ত্রী পারিবারিক আদালতে বিবাহবিচ্ছেদেরর আবেদন করতে পারেন। অভিযোগ প্রমাণের দায়িত্ব স্ত্রীর। প্রমাণিত হলে স্ত্রী বিচ্ছেদের পক্ষে ডিক্রি পেতে পারেন। আদালত বিচ্ছেদের ডিক্রি দেওয়ার ৭ দিনের মধ্যে একটি সত্যায়িত কপি আদালতের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানের কাছে পাঠাবেন।

১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ অনুযায়ী, চেয়ারম্যান নোটিশকে তালাক সংক্রান্ত নোটিশ হিসেবে গণ্য করে আইনানুযায়ী পদক্ষেপ নেবেন এবং চেয়ারম্যানের নোটিশ পাবার দিন থেকে ৯০ দিন পর তালার চূড়ান্তভাবে কার্যকর হবে।

খুলা

স্ত্রীর পক্ষ থেকে দাম্পত্য অধিকারমুক্তির প্রস্তাবকে বলে ‍খুলা। এক্ষেত্রে স্ত্রী কোনকিছুর বিনিময়ে স্বামীকে বিচ্ছেদে রাজি করানোর চেষ্টা করবেন।স্বামী রাজি থাকলে বিচ্ছেদ ঘটতে পারে। বিচ্ছেদের উদ্যোগ অবশ্যই স্ত্রীর পক্ষ থেকে আসতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, মোহরানা এবং ভরণপোষণের দায় স্বামী স্ত্রীকে বাধ্য করেন খুলা তালাকেরর জন্য। প্রচলিত ভুল ধারণা হচ্ছে, খুলা হলে মোহরানা এবং ভরণপোষণ দেওয়ার দরকার নেই। খুলার বিনিময় সাধারণত মোহরানার চেয়ে কম। বেশি বা সমানও হতে পারে। স্ত্রীই এর পরিমাণ নির্ধারণ করবেন। ‍এর জন্য তার অন্যান্য অধিকার খর্ব হবে না। মোহরানা হচ্ছে বিয়ের সাথে সাথে স্ত্রীর পাওনা। যা স্ত্রী চাইলেই স্বামী দিতে বাধ্য। অপরদিকে, খুলার যে বিনিময় তা বিবাহবিচ্ছেদের সাথে সম্পর্কিত। বিয়ের সাথে নয়।

মুবারত

স্বামী-স্ত্রী উভয়ের সম্মতিতে বিবাহবিচ্ছেদ সম্পন্ন হলে তাকে মুবারত বলে। এক্ষেত্রে পারস্পরিক ইচ্ছার ভিত্তিতে চুক্তির মাধ্যমে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে।

তালাকের পর স্ত্রীর দ্বিতীয় বিয়ে স্ত্রী তালাক দেওয়ার পর তা কার্যকর হওয়ার আগে স্ত্রী দ্বিতীয় বিবাহ করতে পারেন কি? ইদ্দতকাল পর্যন্ত অর্থাৎ ৯০ দিন অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত স্ত্রী অন্যত্র বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে পারেন না।

হিল্লা বিয়ে

১৯৬১ সালের মুসলিম আইন অধ্যাদেশে হিল্লা বিয়েকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তালাকের পর স্বামী-স্ত্রী পুনরায় বিয়ে করতে চাইলে হিল্লা বিয়ের দরকার হয় না।

গর্ভাবস্থায় তালাক

গর্ভাবস্থায় তালাক দিলে তা কার্যকর হয় না। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর অথবা নোটিশ প্রদান থকে ৯০ দিন- যেটি দেরিতে শেষ হবে সেটি পার হলে তালাক কার্যকর হয়। এক্ষেত্রে চেয়ারম্যানেচ নোটিশের মাধ্যমে সালিস বসবে।

তালাকের ফলাফল ও ভরণপোষণ

খুলা ব্যাতীত সকল প্রকার তালাকের ক্ষেত্রে স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে সম্পূর্ণ মোহরানা এবং ইদ্দতকালীন সময় পর‌্যন্ত ভরণপোষণ পাবেন। সন্তান থাকলে সন্তানের আইনগত অভিভাবক হবেন বাবা। সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্ব তারই। ছেলেসন্তান সাত বছর বয়স পর‌্যন্ত এবং মেয়েসন্তান বিয়ে পর্যন্ত অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মায়ের তত্ত্বাবধানে থাকবে। তবে সন্তানের সর্বোচ্চ কল্যাণ বিবেচনায় আদালত চাইলে মামলাভেদে অন্য সিদ্ধান্ত দিতে পারেন।

ক) সাবালক না হওয়া পরযন্ত পিতা তার সন্তানের ভরণপোষণ দিতে বাধ্য।

খ) তালাক বা বিচ্ছেদের পর সন্তান যদি মায়ের কাছে থাকে, তবুও বাবাই ভরণপোষণ দিতে বাধ্য। সেক্ষেত্রে ছেলে ৭ বছর, মেয়ে বিবাহ পর্যন্ত। উল্লেখ্য, মেয়ের বিবাহের খরচও বাবাকেই দিতে হবে।

গ) যদি কোন সাবালক সন্তান অসুস্থতার জন্য কিংবা পঙ্গুত্বের জন্য রোজগার করতে না পারে, তবে বাবা তাকে আজীবন ভরণপোষণ দিতে বাধ্য।

ঘ) পিতা-মাতা গরীব বা দৈহিকভাবে অসমর্থ হলে দাদার অবস্থা সচ্ছল হলে ওই সকল ছেলেমেয়ের ভরণপোষণের দায়িত্ব দাদার ওপর ন্যস্ত হবে।

ঙ) সন্তানদের অভিভাবক বাবা, মা সন্তানের জিম্মাদার, লালনপালনকারী এবং হেফাজতকারীর ভূমিকা পালন করবেন। সন্তানেরা মায়ের কাছে থাকবে এবং বাবা সব খরচ বহন করবেন।

চ) মুসলিম আইনে বাবা তার দায়িত্ব পালন না করলে অভিভাবকত্বের দাবি করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের পরও সন্তানেরা মায়ের কাছে থাকতে পারবে।

মা কখন সন্তানের জিম্মাদার থাকতে পারবেন না

  • মা অসৎ জীবন যাপন করলে
  • মা এমন কাউকে বিয়ে করলে যার সঙ্গে তার নিজের কন্যার বিয়ে হওয়ার ব্যাপারে ধর্মীয় নিষেধ নেই
  • সন্তানের প্রতি উদাসীন, দায়িত্ব পালনে অপারগ হলে

দেনমোহর

দেনমোহরের মোট পরিমাণকে দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে: আশু এবং বিলম্ব। চাইলেই পরিশোধযোগ্য অংশটিকে আশু দেনমোহর বলে। বিলম্বিত দেনমোহর মৃত্যু অথবা তালাকের ফলে পরিশোধযোগ্য। সুতরাং তালাকের সাথে সাথে স্ত্রী তার মোহরানা না পেয়ে থাকলে তার জন্য পারিবারিক আদালতে মামলা করতে পারেন। স্বেচ্ছায় দেনমোহর আদায় না করলে স্ত্রী এবং তার ওয়ারিসরা তা আদায়ের জন্য নিম্নলিখিত সময়ের মধ্যে আবেদন করতে পারবেন।

  • আশু দেনমোহর: এর দাবি অস্বীকার করার তারিখ থেকে স্বামীর মৃত্যুর পর তিন বছরের মধ্যে পারিবারিক আদালতে মামলা করা যাবে।
  • বিলম্বিত দেনমোহর: লিখিত তালাকনামার মাধ্যমে তালাক দিলে ১৯০৪ সালের তামাদি আইনের ১০৩ ও ১০৪ ধারা অনুযায়ী তালাকের বিষয়টি অবগত হওয়ার তারিখ থেকে মামলা করার মেয়াদ তিন বছর।

১৯৮৫ সালের পারিবাহিক আদালত অধ্যাদেশের ৫ ধারায় পারিবারিক আদালতকে মোহরানার জন্য মোকদ্দমা বিচারের নিরঙ্কুশ এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে। মোহরানা বা দেনমোহর স্ত্রীর কাছে স্বামীর একটি দায়। সেই দায় পরিশোধের নীতিমালা এখানে প্রযোজ্য হবে। সেই অনুযায়ী, গ্রহীতা দাদাতে খুঁজে বের করে দায় পরিশোধ করেন। স্ত্রী যে এলাকায় বাস করেন সে এলাকায় অবস্থিত পারিবারিক আদালতে মোহরানা আদায়ের জন্য মামলা করতে পারেন।স্বামীর বসবাসের এলাকায় গিয়ে মামলা করার প্রয়োজন নেই।

তালাক বিনন্ধন

মুসলিম বিবাহ ও তালাক আইন অনুসারে, বিয়ের মতো তালাকও রেজিস্ট্রি করতে হয়। এ সংক্রান্ত বিধিমালা ১৯৭৫ (১৮/২ ) অনুসারে, নিকাহ নিবন্ধক এ জন্য ২০০ টাকা ফি নিতে পারেন। যিনি তালাক কার্যকর করেছেন তিনি রেজিস্ট্রির জন্য আবেদন করবেন এবং ফি দেবেন। নিকাহ বিবন্ধক পরীক্ষা করে দেখবেন দুই পক্ষের মধ্যে সত্যি তালাক কার্যকর হয়েছে কিনা। স্বামী-স্ত্রী উভয়পক্ষেরেই দায়িত্ব নিকাহ নিবন্ধন ও তালাক রেজিস্ট্রির প্রত্যয়নপত্র তুলে সংরক্ষণ করা। যদি নিকাহ রেজিস্ট্রার কোনো তালাক রেজিস্ট্রেশনে অস্বীকৃতি জানান, সেক্ষেত্রে যিনি রেজিস্ট্রেশনের জন্য দরখাস্ত করেছিলেন তিনি ৩০ দিনের মধ্যে জেলা প্রশাসকের কাছে আপিল করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকের আদেশই চূড়ান্ত।

বিয়ে একটি চূক্তিমাত্র নয়, একটি পবিত্র বন্ধনও। কাজেই সমস্যা হলে সমাধানের চেষ্টা করাই কাম্য। তারপরও সমস্যা সমাধান করা অসম্ভব হয়ে পড়লে বা দাম্পত্য জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়লে বিবাহবিচ্ছেদের মাধ্যমে সেই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। আর তালাক বা বিবাহবিচ্ছেদের অবিবেচনাপ্রসূত ব্যবহার ওই যন্ত্রণা আরও বাড়িয়ে দেয়। ইসলামে এটি বৈধ কাজগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট বলে চিহ্নিত।

হিন্দু বিবাহ-বিচ্ছেদ

হিন্দু ধর্মমতে বিয়ে একটি অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক এবং ধর্মীয় দায়িত্ব। তাই বাংলাদেশের আইনে হিন্দুদের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদের ব্যবস্থা নেই। ভারতে পঞ্চাশের দশকের আইন সংস্করণের মাধ্যমে  হিন্দু বিয়েকে একটি চুক্তি হিসেবে উল্লেখ করে আইনগতভাবে বিবাহবিচ্ছেদের সুযোগ তৈরী করা স্ত্রী যদি একান্তই মনে করেন যে স্বামীর সঙ্গে বসবাস করা সম্ভব নয়, তাহলে তিনি পিত্রালয়ে বা অন্য নিরাপদ স্থানে পৃথকভাবে থাকতে পারেন। এক্ষেত্রে স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারী। ১৯৪৬ সালে বিবাহিত নারীর পৃথক বাসস্থান এবং ভরণপোষণ আইন পাস হওয়ার পর, এক স্ত্রীর বর্তমানে স্বামী অন্য স্ত্রী গ্রহণ করলে স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে পৃথক থাকলেও স্ত্রীকে ভরণপোষণ দিতে স্বামী বাধ্য থাকবেন। এছাড়া নিচের কারণগুলোর উদ্ভব হলেও একজন বিবাহিত নারী স্বামীর কাছ থেকে পৃথক থেকে ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারী:

  • স্বামী কোন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত, যা সে স্ত্রীর কাছ থেকে পায় নি
  • স্বামী যদি স্ত্রীর প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করে এবং নিষ্ঠুরতা যদি এমন হয় যে স্বামীগৃহে তার জীবননাশের আশঙ্কা রয়েছে
  • স্বামী যদি স্ত্রীর অনুমতি ছাড়াই তাকে পরিত্যাগ করে
  • স্বামী যদি স্ত্রীর বর্তমানে পুনরায় বিয়ে করে
  • স্বামী ধর্মান্তরিত হলে
  • স্বামী যদি ঘরেই কোন উপপত্নী রাখে অথবা অভ্যাসগতভাবে উপপত্নীর সাথে বসবাস করে
  • অন্যান্য যৌক্তিক কারণে

খ্রিস্টান ধর্মমতে বিবাহ-বিচ্ছেদ

খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের জন্য বিবাহবিচ্ছেদের ব্যাপারে বাংলাদেশে নির্দিষ্ট আইন রয়েছে। এটি ১৮৬৯ সালের, ক্রিশ্চিয়ান ডিভোর্স অ্যাক্ট নামে পরিচিত। কিন্তু এ আইনের মাধ্যমে কোনো ক্যাথলিক খ্রিষ্টান বিবাহবিচ্ছেদ ঘটালে তা ক্যাথলিক মণ্ডলি কর্তৃক গৃহীত হবে না। কেননা ক্যাথলিক মণ্ডলি বৈধ বিয়েতে বিচ্ছেদ মানেন না। প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টান সম্প্রদায় বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে বৈধ বিয়ের বিচ্ছেদ মেনে নেয়। তবে মহামান্য পোপের (ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মযাজক ) বিশেষ বিবেচনায় অথবা চার্চের হস্তক্ষেপে কিছু ক্ষেত্রে ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ হতে দেখা যায়।

১৮৬৯ সালের ক্রিশ্চিয়ান ডিভোর্স অ্যাক্টে বিবাহবিচ্ছেদের ব্যাপারে নারীকে অধিকার দিয়েছে। এক্ষেত্রে স্ত্রীর ক্ষমতা ও অধিকারকে স্বামীর পাশাপাশি সমতা দেওয়া হয় নি। ভারতে কয়েক বছর আগে আইনটি সংশোধন করে স্বামী ও স্ত্রীর ক্ষেত্রে সমান অধিকার দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশে বিদ্যমান আইনটির ১০ ধারায় কোন কোন কারণে বিবাহবিচ্ছেদ করা যাবে তা উল্লেখ করা আছে। আইনটির ১৮ ধারা অনুযায়ী, পুরুষত্বহীনতা, বিবাহনিষিদ্ধ আত্মীয়তার সম্পর্ক, মানসিক ভারসাম্যহীনতা ও একাধিক বিয়ের কারণে বিয়ে বাতিলের বিধান আছে। ২২ এবং ২৩ ধারার অধীনে তারা আইনগত বিচ্ছেদ (জুডিশিয়াল সেপারেশন ) তথা উভয়ে আলাদা থাকার জন্য আবেদন করতে পারেন। স্বামীর নিষ্ঠুরতার কারণে স্ত্রী এটা চাইতে পারেন। তবে নিষ্ঠুরতার জন্য ডিভোর্স চাইতে পারেন না।খ্রিস্টান বিবাহবিচ্ছেদ বা ওপরের যেকোনো ক্ষেত্রে পারিবারিক আদালতের পরিবর্তে হাইকোর্ট বিভাগ অথবা জেলা আদালতে মামলা করতে হয়।

লিখেছেনঃ

নোমান হোসাইন তালুকদার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর

আবার বিয়ে করার আগে

সঙ্গী হারালে জীবন স্থবির হয়ে পড়ে। বিচ্ছেদ বা মৃত্যুর ঘটনায় কেউ জীবনসঙ্গীকে হারাতে পারেন। কিন্তু জীবন তো থেমে থাকে না। আর জীবনের প্রয়োজনেই অনেকে বিয়ে করার কথা ভাবেন। কিন্তু চাইলেই কি সব সহজভাবে মেলে?  মা-বাবা-সন্তানের কথা ভেবে তখন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে হয়। সন্তান, নাকি নিজের জীবন, কোনটাকে প্রাধান্য দেবেন? সমাজও অনেক সময় মনে করে, সঙ্গীবিহীন অবস্থায় জীবনযাপন কষ্টকর। তবে মনে রাখতে হবে, স্ত্রী থাকা অবস্থায় বা তাঁকে না জানিয়ে বিয়ে করলে সেটি দণ্ডনীয় অপরাধ।

অনেক সময় স্ত্রীর মৃত্যু বা বিবাহবিচ্ছেদের পর সন্তানকে না জানিয়ে হুট করে সংসারে নতুন সঙ্গীকে নিয়ে আসেন অনেকে। এটি সন্তানের মনোজগতে প্রভাব ফেলে। আকস্মিক এই আঘাত সে মেনে নিতে পারে না। পারিবারিক সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়। এসব পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব যদি ভাবনার শুরু থেকেই সন্তানের কাছে বিষয়টি গ্রহণযোগ্য করে তোলা যায়। সন্তানের সিদ্ধান্তকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। মানবিক সম্পর্কের এই জায়গাগুলো বেশ জটিল। মনোজগতে নানা ধরনের আলোড়ন চলতে থাকে। তাই বড়দের বেশি ধৈর্য ধরতে হবে।

অনেক সময় শিশুটি নিজের মা-বাবার জায়গায় নতুন ব্যক্তিটিকে পছন্দ করতে পারে না। নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। এ ক্ষেত্রে মা-বাবাকে এগিয়ে আসতে হবে। কোনোভাবেই সন্তান যেন মানসিক চাপ বোধ না করে। সন্তানকে বোঝাতে হবে, এই বিষয়ে সে-ই মূল সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী। তার ইচ্ছা-অনিচ্ছাই সব। নতুন সঙ্গীর সঙ্গে বন্ধুত্বের শুরুতে তাকে সব বুঝিয়ে বলুন।

সন্তানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিন। আপনার সন্তানের সঙ্গে তাঁর বোঝাপড়া ভালো হলে বা বন্ধুত্ব গড়ে উঠলে সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হবে। বিয়ের পর মা-বাবার উচিত সন্তানকে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া। আগের মতো পারিবারিক আবহ বজায় রাখতে হবে। নতুন বাড়িতে উঠলে সেটিতে সে যেন পুরোনো পরিবেশ খুঁজে পায়, সে ব্যবস্থা করতে হবে। হুট করেই তার আগের সব অভ্যাস পরিবর্তনের কথা বলা যাবে না। কেননা, শিশুটির হয়তো মা-বাবার সঙ্গে ঘুমানো অভ্যাস। তাকে যদি আলাদা ঘরে থাকতে বলা হয়, তখন সে ভাববে নতুন মানুষটির কারণে তার সব হারাতে হচ্ছে। সন্তানের সীমাবদ্ধতা, পছন্দ-অপছন্দ সব আগেই নতুন সঙ্গীকে জানিয়ে দিতে হবে। যদি দুপক্ষেরই সন্তান থাকে, তাহলে তাদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ করা যাবে না। কোনো ঝামেলা হলে এর মধ্যে মা-বাবার প্রবেশ না করাই ভালো। খুব ভালো হয় বিয়ের আগের একে-অপরের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলে। এমনকি বিয়ের দিনও কৌশলী হতে হবে। যাতে সন্তান মনে করে সে-ই সবচেয়ে প্রাধান্য পাচ্ছে এবং সে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।

নতুন সঙ্গীকে সন্তানের কাছে আস্থাভাজন হতে হবে। মা-বাবার বিয়ের পর সন্তান যেন নিজেকে বাইরের কেউ মনে না করে। শিশুর মনস্তত্ত্ব মা-বাবাই সবচেয়ে ভালো বোঝেন। তবু এ সময় বাড়তি যত্ন নিতে হবে। আগের চেয়ে অনেক বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে তাঁদের। প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়েরও শুরুতে মা-বাবাকে ভুল বোঝা উচিত নয়। মনে কোনো প্রশ্ন না রেখে সরাসরি কথা বললে সম্পর্কে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হবে না।

সুত্রঃ প্রথম আলো
লিখেছেনঃ তৌহিদা শিরোপা | জুন ০৬, ২০১৬