বিচ্ছেদের কষ্ট দূর হবে যেভাবে

স্বাভাবিকভাবেই অতীত ভোলা সহজ নয় আবার ইচ্ছা শক্তি থাকলে স্বাভাবিকভাবেই অতীত ভোলা সম্ভব। অতীত ভুলবার অথবা কষ্ট দূর করার জন্য আমাদের উচিত নিজেদের একটি চক্রে আবদ্ধ করা, আর সে চক্রে আমাদের কিছু বিষয় সাজাতে হবে যা আমরা করবো নিজেকে ভালো রাখার জন্য –

নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করুন- জোর করে কোন সম্পর্ক টিকে রাখা যায় না। ভালোবাসা হারিয়ে গেলে অনেক সময় তা ছেড়ে দিতে হয় আটকে রাখতে হয় না, এ সত্য আপনাকে মেনে নিতে হবে। শুরুতে অনেক কষ্ট হলেও এটা ভাবুন যা হয়েছে তা ভালো কিছুর জন্যই হয়েছে। নিজের জীবনকে নতুনভাবে কল্পনা করুন। ভালো আছেন এরকম ভান বা অভিনয় করবেন না, আবেগ চাপা রাখলে আপনার মানুসিক চাপ বাড়বে তাই শোক করুন, কাদুন।

পুরনো স্মৃতি ভুলে নতুন স্মৃতি তৈরি করুন- পুরনো স্মৃতি ভুলে নতুন করে নিজেকে তৈরি করুন। কেননা, নিজেকে অতীতে আটকে রাখলে বর্তমান পরিস্থতি থেকে আপনি সহজে নিজেকে পরিত্রাণ করতে সক্ষম হবেন না। সাবেক প্রেমিক বা প্রেমিকার সাথে কোথাও ঘুরেছেন, ভাল সময়গুলো দীর্ঘকাল কাটিয়েছেন এমন পরিবেশগুলো ত্যাগ করুন ও নতুন জায়গাগুলোতে ঘুরে আসুন, নতুন পরিবেশে সময় কাটান। পরিবার ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সহায়তা নিন, কান্না করুন, ক্রোধ প্রকাশ করুন, নিজকে হালকা করুন।

অতীত নিয়ে পড়ে থাকবেন না- কেন আমার সঙ্গে এমন হলো বা সম্পর্ক কেন টিকলো না? সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর এরকম প্রশ্ন অনেকেরই মাথায় ঘোরে। এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা বন্ধ করুন। প্রাক্তনের দেয়া পুরোনো চিঠি-গিফট ফেলে দিন, ই-মেইল, মেসেজ, ছবি ইত্যাদি ডিলিট করুন। পরিচিত কারো কাছ থেকে প্রাক্তন সম্পর্কে খোঁজখবর নেবেন না। সে কেমন আছে, আপনাকে কি মনে করে বা সোশ্যাল মিডিয়াতে কি আবডেট দিচ্ছে তা স্টক করা থেকে বিরত থাকুন।

প্রতিশোধ নেবেন না- ক্ষমা করতে শিখুন। যদি মন থেকে ক্ষমা করতে নাও পারেন তবুও প্রতিশোধ নেবেন না বা নেওয়ার চেষ্টা করবেন না। বিশেষ করে রাগের মাথায় এমন কিছু করবেন না যাতে আপনার ব্যক্তিত্ব নষ্ট হয় অথবা আপনি কোনভাবে আইনের জটিলতার পরিস্থিতিতে পরেন।

প্রাক্তন সম্পর্কে কোন প্রকার মন্ত্যব্যে করবেন না- অনেকেই বিচ্ছেদের পর প্রাক্তনকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বাজে বা আবেগপ্রবণ কথা লিখতে থাকেন। তারা ভাবেন, এতে ওই ব্যক্তিটি হয়ত ফিরে আসবে অথবা অপদস্ত হচ্ছে। এই কাজটি ভুল। এতে আপনার দুর্বল ব্যক্তিত্বের প্রমান পায়। এটি একেবারেই করবেন না। খুব কষ্ট লাগলে ডায়েরিতে নিজের মনে যা আছে তা লিখুন এতে আপনি কিছুটা হলেও হালকা হবেন।

হয়তো ফিরে আসবে- প্রাক্তন ফিরে আসবে। কোন এক সময় হয়ত ফিরে পাবেন এরকম চিন্তা বা অযথা অপেক্ষা করে নিজের সময় নষ্ট করবেন না। পুনরায় সম্পর্ক ঠিক করার চেষ্টা করবেন না। নিজের আত্মসম্মান বজায় রাখুন। ভিক্ষার মত ভালোবাসা ফেরত চাইবেন না। এতে আপনিই ছোট হচ্ছেন তাই কষ্ট হলেও নিজেকে অন্তত ছোট করবেন না। নিজেকে ভালোবাসুন। আপনার ভালো লাগা কাজগুলো করুন যেমন- শপিং করা, কারও বাসায় ঘুরতে যাওয়া, মুভি দেখা, পরিবারের সাথে সময় কাটান, বাচ্চাদের সাথে সময় কাটান ইত্যাদি।

যোগাযোগ বন্ধ করুন- ‘বন্ধু’ হয়ে থাকব, এই চিন্তা করবেন না। বন্ধুত্ব থেকে প্রেম হতে পারে, কিন্তু প্রেম থেকে নেমে বন্ধুত্বে আসা সম্ভব নয়। তাই যথাসাধ্য অনুযায়ী দূরত্ব বজায় রাখুন। মুঠোফোন, ফেসবুক, ই-মেইল, হোয়াটস অ্যাপসহ সব ধরনের যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দিন। হয়তো তীব্র ইচ্ছে হবে যোগাযোগ করার, সে বিষয়ে নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করুন। একাকীত্ব পূরণের জন্য পরিবারের সাথে সময় কাটান, ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের শরণাপন্ন হোন।

নিজেকে ব্যাস্ত রাখুন- বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিন যেমন – খেলাধুলা, বিতর্ক, পাবলিক স্পিকিং, লেখালেখি, স্টোরি টেইলিং, ইত্যাদি। এ ছাড়া বিভিন্ন সেমিনারে অংশ নিন, জাম্পিং, ছবি বা ক্যনভাস আঁকতে পারেন, সাইক্লিং, সুইমিং, সামাজিক কাজগুলতে অংশ নিতে পারেন, বই পরতে পারেন, রান্না শিখতে পারেন, ব্যবসায় অথবা চাকরিতে নিজে কে ব্যস্ত রাখতে পারেন। বাগান করতে পারেন, পছন্দের পোষা প্রাণী পালতে পারেন। গান শুনুন- তবে প্রাক্তন কে মনে করিয়ে দিতে পারে এমন গান নয় মন প্রফুল্ল করে এমন গান শুনতে হবে। মটিভেশনাল বা কমেডি মুভি, নাটক, কন্টেন্ট ভিডিও দেখতে পারেন।

নিজের প্রতি যত্ন নিন- বিচ্ছেদের পর অনেকেই অতীতের ভাবনায় নিজের প্রতি যত্ন নিতে ভুলে যায়। এ কঠিন সময়ে অনেকেই শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়। ফলে কেউ কেউ আত্মহত্যার কথা ভেবে থাকেন অথবা শরাপন্ন হন। আবার অনেকের শরীর খারাপ বা অসুস্থ থাকে তাই অবশ্যই আপনার দেহ ও মনের আত্মার পরিচর্যা করুন । নিজের শরীর ও মনকে ভালো রাখতে জিমে অথবা বাসায় এক্সারসাইজ করুন, ইওগা করুন, কাউন্সিলিং করুন। রুপ চর্চা করুন। সকালে বা বিকালে হাঁটতে বের হন, যতদিন অতীত ভুলতে পারছেন না ততদিন কাউন্সিলিং বন্ধ করবেন না। অনেকে মাদকাসক্ত বা বাজে নেশায় চলে যায় এটা করা একেবারেই উচিত নয়। প্রয়োজন হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ঘুমের ওষুধ খেতে পারেন।

নিজেকে একা করে ফেলবেন না- নিজেকে সবার থেকে গুটিয়ে রাখবেন না কেননা একা থাকলে আপনাকে একাকীত্ব গ্রাস করবেই। এই সময় এমন কারও সঙ্গে কথা বলুন, যাকে নির্দ্বিধায় আপনি সমস্ত কথা খুলে বলতে পারবেন এবং সেও আপনার সমস্ত কথা গোপন রাখবে। এ সময়ে আপনাকে অনেকেই ইতিবাচক – নেতিবাচক কথা বলে থাকবে। অন্যের কথায় নিজেকে হীনমন্য না ভেবে নিজের ওপর আস্থা রাখুন। নিজের ভালো দিকগুলো ও সফলতাগুলো গড়ার চেষ্টা করুন। আদর্শ মানুষের সঙ্গ অবলম্বন করুন এবং আপনার শুভাকাঙ্ক্ষীর কাছে সময় কাটান।

জোর করে ভোলার চেষ্টা করবেন না- আপনি মাথায় এটা আনবেন না যে আমার তাকে ভুলে যেতেই হবে। প্রাক্তন কে ভুলে যেতে তার সাথে বাজে অভিজ্ঞতাটি মনে করুন। কাউকে ভোলার চেষ্টা করলে তাকে আরও বেশি মনে পড়ে। তাই কাউকে জোর করে ভুলতে চেষ্টা করবেন না।

অতীত থেকে শিক্ষা গ্রহন করুন- অতীত নিয়ে আফসোস না করে এটা আপনার জীবনের একটা শিক্ষণীয় অধ্যায় ভাবুন। নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রনে রেখে বাস্তবতা মেনে নিতে আপনি এখন শিখে গেছেন তাই আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করুন। সামনে কোন বাধা আসলে আপনি নিজেকে শক্ত রেখে সামনে এগিয়ে যেতে পারবেন এরকম আস্থা নিজের প্রতি তৈরি করুন দেখবেন আপনার সামনে এগিয়ে চলার পথ অনেকটা সহজ হয়ে যাবে।

অতীত সম্পর্ক এবং …

পুরনো প্রেমিকা বা স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কে ইতি টেনেছেন। অথচ মাঝেমধ্যেই আপনার জীবনে ঘুরে ফিরে আসছে সেই অনুষঙ্গ। হঠাত্‌ আপনার সঙ্গে যদি তাঁর দেখা হয়ে যায় আবার? তাও আবার বর্তমান সঙ্গীর উপস্থিতিতে! রইল পরিস্থিতি সামলানোর কিছু টিপস।

আমাদের অনেকের জীবনেই ‘এক্স’ সত্যিই একটা বড় ফ্যাক্টর! প্রেমের বা দাম্পত্য সম্পর্ক ভেঙে গেলে এতদিনের খুব কাছের মানুষটা যখন প্রাক্তন বা ‘এক্স’ হয়ে যায়, তখন সম্পর্কের সমীকরণগুলোও খুব দ্রুত বদলাতে থাকে। নতুন সম্পর্ক তৈরি হলেও কোথাও একটা ফাঁকা জায়গা বোধহয় থেকেই যায়। সময়ের নিয়মে আপনি ও আপনার পুরনো সঙ্গী দু’জনেই যদি অন্য কাউকে বিয়ে করে নেন, তাহলেও একে অপরকে পুরোপুরি ভুলে যাওয়া অনেক সময় সম্ভব হয় না। আসলে, সম্পর্কে ইতি টানলেই যে মাথা থেকে পুরনো সঙ্গীকে ঝেড়ে ফেলতে পারেন না অনেকেই। আর পুরনো কারওর জায়গায় যদি নতুন কেউ আসে, তখন নতুন সেই সম্পর্কের উষ্ণতায় পুরনো দিনগুলো ধীরে ধীরে ফিকে হতে শুরু করে। 

কিন্তু হঠাত্‌ করে যদি কোনওদিন দেখা হয়ে যায় পুরনো প্রেমিকা বা স্ত্রীর সঙ্গে? অনেকেই এধরনের সিচুয়েশনের জন্য তৈরি থাকেন না বলে রীতিমতো এমব্যারাসড হয়ে পড়েন। অনেক সম্পর্ক শেষ হয় তিক্তভাবে। প্রেমে প্রতারিত হয়ে বা তৃতীয় ব্যক্তির উপস্থিতির কারণে যদি আপনার ব্রেক আপ হয়ে থাকে, তখন পুরনো সঙ্গীটির প্রতি চাপা রাগ থেকেই যায়। হয়তো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সে রাগের বহিঃপ্রকাশ আপনি আর নাও করতে পারেন। তবে পুরনো প্রেমিকের সঙ্গে দেখা হলে মাথা ঠান্ডা রাখাই শ্রেয়। আপনার বর্তমান সঙ্গীকে পুরনো সম্পর্কের ব্যাপারে খোলাখুলি জানাবেন। উনি যদি সত্যিই আপনাকে বিশ্বাস করেন তবে এ ব্যাপারে জানলেও তিনি আপনাকে ভুল বুঝবেন না। প্রাক্তন স্বামী বা স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্স বা সেপারেশনের কারণটাও তাঁকে খোলাখুলি জানান। 

এমনটাও তো হতে পারে, আপনার অনুপস্থিতিতে আপনার বর্তমান স্ত্রীর সঙ্গে আপনার পুরনো প্রেমিকা বা স্ত্রীর দেখা হয়ে গেল! ‘প্রাক্তন’ সিনেমার সেই দৃশ্যটার মতো! যেখানে ট্রেনের কামরায় উজানের বর্তমান স্ত্রীর সঙ্গে হঠাত্‌ই দেখা হয়ে যায় তাঁর প্রাক্তনের। বাস্তবে, এরকম অবস্থায় পুরনো সম্পর্কের কথা লুকোলে বর্তমান সম্পর্কের উপর তার অনর্থক প্রভাব পড়তে বাধ্য। কোনওদিন রাস্তায় বা শপিং মলে দেখা হলে হাসিমুখে তাঁর সঙ্গে বর্তমান সঙ্গীর আলাপ করিয়ে দিন।