সঙ্গী হারালে জীবন স্থবির হয়ে পড়ে। বিচ্ছেদ বা মৃত্যুর ঘটনায় কেউ জীবনসঙ্গীকে হারাতে পারেন। কিন্তু জীবন তো থেমে থাকে না। আর জীবনের প্রয়োজনেই অনেকে বিয়ে করার কথা ভাবেন। কিন্তু চাইলেই কি সব সহজভাবে মেলে? মা-বাবা-সন্তানের কথা ভেবে তখন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে হয়। সন্তান, নাকি নিজের জীবন, কোনটাকে প্রাধান্য দেবেন? সমাজও অনেক সময় মনে করে, সঙ্গীবিহীন অবস্থায় জীবনযাপন কষ্টকর। তবে মনে রাখতে হবে, স্ত্রী থাকা অবস্থায় বা তাঁকে না জানিয়ে বিয়ে করলে সেটি দণ্ডনীয় অপরাধ।
অনেক সময় স্ত্রীর মৃত্যু বা বিবাহবিচ্ছেদের পর সন্তানকে না জানিয়ে হুট করে সংসারে নতুন সঙ্গীকে নিয়ে আসেন অনেকে। এটি সন্তানের মনোজগতে প্রভাব ফেলে। আকস্মিক এই আঘাত সে মেনে নিতে পারে না। পারিবারিক সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়। এসব পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব যদি ভাবনার শুরু থেকেই সন্তানের কাছে বিষয়টি গ্রহণযোগ্য করে তোলা যায়। সন্তানের সিদ্ধান্তকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। মানবিক সম্পর্কের এই জায়গাগুলো বেশ জটিল। মনোজগতে নানা ধরনের আলোড়ন চলতে থাকে। তাই বড়দের বেশি ধৈর্য ধরতে হবে।
অনেক সময় শিশুটি নিজের মা-বাবার জায়গায় নতুন ব্যক্তিটিকে পছন্দ করতে পারে না। নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। এ ক্ষেত্রে মা-বাবাকে এগিয়ে আসতে হবে। কোনোভাবেই সন্তান যেন মানসিক চাপ বোধ না করে। সন্তানকে বোঝাতে হবে, এই বিষয়ে সে-ই মূল সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী। তার ইচ্ছা-অনিচ্ছাই সব। নতুন সঙ্গীর সঙ্গে বন্ধুত্বের শুরুতে তাকে সব বুঝিয়ে বলুন।
সন্তানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিন। আপনার সন্তানের সঙ্গে তাঁর বোঝাপড়া ভালো হলে বা বন্ধুত্ব গড়ে উঠলে সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হবে। বিয়ের পর মা-বাবার উচিত সন্তানকে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া। আগের মতো পারিবারিক আবহ বজায় রাখতে হবে। নতুন বাড়িতে উঠলে সেটিতে সে যেন পুরোনো পরিবেশ খুঁজে পায়, সে ব্যবস্থা করতে হবে। হুট করেই তার আগের সব অভ্যাস পরিবর্তনের কথা বলা যাবে না। কেননা, শিশুটির হয়তো মা-বাবার সঙ্গে ঘুমানো অভ্যাস। তাকে যদি আলাদা ঘরে থাকতে বলা হয়, তখন সে ভাববে নতুন মানুষটির কারণে তার সব হারাতে হচ্ছে। সন্তানের সীমাবদ্ধতা, পছন্দ-অপছন্দ সব আগেই নতুন সঙ্গীকে জানিয়ে দিতে হবে। যদি দুপক্ষেরই সন্তান থাকে, তাহলে তাদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ করা যাবে না। কোনো ঝামেলা হলে এর মধ্যে মা-বাবার প্রবেশ না করাই ভালো। খুব ভালো হয় বিয়ের আগের একে-অপরের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলে। এমনকি বিয়ের দিনও কৌশলী হতে হবে। যাতে সন্তান মনে করে সে-ই সবচেয়ে প্রাধান্য পাচ্ছে এবং সে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।
নতুন সঙ্গীকে সন্তানের কাছে আস্থাভাজন হতে হবে। মা-বাবার বিয়ের পর সন্তান যেন নিজেকে বাইরের কেউ মনে না করে। শিশুর মনস্তত্ত্ব মা-বাবাই সবচেয়ে ভালো বোঝেন। তবু এ সময় বাড়তি যত্ন নিতে হবে। আগের চেয়ে অনেক বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে তাঁদের। প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়েরও শুরুতে মা-বাবাকে ভুল বোঝা উচিত নয়। মনে কোনো প্রশ্ন না রেখে সরাসরি কথা বললে সম্পর্কে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হবে না।
সুত্রঃ প্রথম আলো
লিখেছেনঃ তৌহিদা শিরোপা | জুন ০৬, ২০১৬