বিয়ে করুন যথা সময়ে, এর স্বাস্থ্যগত সুফল অনেক!

বিয়ের কথাটা শুনলেই কেমন যেন লাগে। চিন্তার বিষয়, বয়স হয়েছে তো! সে যাই হোক। বিয়ে করুন উপযুক্ত সময়ে। কারণ বিয়ে করার স্বাস্থ্যগত সুফল অনেক! কি ধরণের সুফল থাকতে পারে বিয়ে করার পর?

কেউ যদি মনে করে থাকেন বিয়ে করার কারণে আপনার মৃত্যুর দিন তাড়াতাড়ি ঘনিয়ে আসবে তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন। কারণ ২০১৩ এর এক রিসার্চে দেখা গেছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জন্ম গ্রহণকারীদের মধ্যে যারা অবিবাহিত তারা বিবাহিত অথবা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের মধ্যে যারা আছে তাদের তুলনায় তাড়াতাড়ি মারা যায়। এর কারণ হিসেবে দেখা গেছে জীবনসঙ্গী মানুষকে আবেগ অনুভূতি বাড়িয়ে দেয়, সামাজিকভাবে একত্রে রাখে, মানসিকভাবে সমর্থন দেয়, যার সব কিছুই সুস্থ স্বাভাবিক স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন।

মানসিক চাপ কম থাকে :

যদিও মাঝে মাঝে ঝগড়া লাগে তারপরও তার উপস্থিতি আপনার মনে এক ভালো লাগার অনুভূতি ছড়িয়ে দিবে। মানুষ যখন কোন মানসিক চাপের মধ্যে থাকে তখন শরীরে স্ট্রেস হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়। এই স্ট্রেস হরমোন বিবাহিতের চেয়ে অবিবাহিতদের শরীরে দ্রুত বৃদ্ধি পায়। অতিরিক্ত পরিমাণে মানসিক চাপ শরীরে সমস্যার জন্ম দেয়, বিশেষ করে হজমের সমস্যার সৃষ্টি করে। রিসার্চে জানা গেছে স্ট্রেস হরমোন বিবাহিতদের শরীরে সেরকম ভাবে ক্ষতি করতে পারে না কিন্তু অবিবাহিতদের শরীরে নানা সমস্যার বাসা তৈরি করে।

হার্ট এ্যাটাকের সম্ভাবনা হ্রাস পায়:

ভালোবাসা হৃদযন্ত্রকে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে যারা বিবাহিত অথবা কোন সম্পর্কের মাঝে আছে তাদের হার্ট-অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা নিঃসঙ্গ মানুষের চেয়ে কম। গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে যে সঙ্গীর নিবিড় সঙ্গ এবং নতুন পরিবারের নতুন সব আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু- বান্ধবের সাথে ভালো বন্ধনের কারণে হার্ট-অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস পায়। কারণ পরিবারের সাথে থাকলে মানুষ উৎফুল্ল থাকে। মনে কোন মানসিক চাপ থাকলে তা শেয়ার করতে পারে। এতে মনের উপর চাপ কম পড়ে।

বিয়ে শরীরের হাড় মজবুত করে। অবাক হচ্ছেন? আসলেও তাই। বিয়ে শরীরের হাড় শক্ত করে এবং বিভিন্ন হাড়ের রোগের ঝুঁকি কমায়। বিয়ে হাড়ের খনিজ ঘনত্ব ঠিক রেখে হাড়ের এক ধরণের রোগ “অস্টিওপরোসিস” হওয়ার ঝুঁকি কমায়। একজন ভালো জীবনসঙ্গী পত্নীর মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে হাড়কে ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে। তাই সুখী দাম্পত্য জীবন মহিলাদের হাড়ের খনিজ ঘনত্ব ঠিক রাখার জন্য জরুরী।

অস্ত্রোপচারের পর দ্রুত সুস্থ হওয়া:

কেউ যখন আপনার পাশে সারাক্ষণ থেকে আপনার পরিচর্যা করবে তখন আপনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন। কিন্তু আপনি যখন একা থাকবেন সে ক্ষেত্রে আপনার সুস্থ হতে অনেক সময় লেগে যাবে। কারণ তখন আপনার সব কাজগুলো আপনার নিজেরই করতে হবে। এছাড়াও আপনি যখন কার সান্নিধ্যে থাকবেন তখন বেঁচে থাকার একটা কারণ খুঁজে পাবেন। এক্ষেত্রে জীবন সঙ্গী আপনার বেঁচে থাকার অবলম্বন হয়ে দাঁড়ায়।

অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঝুঁকি কমে:

জীবনে কতবার আপনি আপনার জীবনসঙ্গীকে আকস্মিক দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করেছে? গবেষণায় দেখা গেছে তালাক প্রাপ্ত মহিলা এবং পুরুষেরা বিবাহিতদের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ বেশি অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়। গবেষকদের মতে বিয়ে দুটি মানুষকে পাশাপাশি রাখে এবং এসব অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণামের হাত থেকে রক্ষা করে।

বিষণ্ণতা কমায়:

একাকীত্বের কারণে অথবা অন্য সমস্যার কারণেও মানুষ বিষণ্ণতায় ভুগতে পারে। আর মানুষ যখন হতাশায় ভুগে তখন কি পরিমাণ মানসিক বিপর্যয় ঘটছে তার নিজের, তা সে বুঝতে পারে না। কারণ বিষণ্ণতার প্রথম উপসর্গ হচ্ছে আত্ম-উপলব্ধির হ্রাস পাওয়া। তাই বিষণ্ণতাকে সনাক্ত করতে এবং দূর করতে প্রয়োজন একজন সঙ্গীর। যে সব সময় আপনার সাথে থাকবে, যার সাথে আপনি সবকিছু শেয়ার করতে পারবেন।

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়:

২০১৩ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যে সকল মানুষ মরণ ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিল তাদের মধ্যে শতকরা ২০ ভাগ এর বেশি মানুষ আরোগ্য লাভ করতে সক্ষম হত যদি তারা বিবাহিত হত। এই সাফল্যের হার কেমোথেরাপির থেকেও বেশি। একটি স্বাভাবিক স্থিতিশীল সম্পর্কই প্রথম ধাপের ক্যান্সার সনাক্ত করতে পারে। আর এই বন্ধনই ক্যান্সারের সাথে লড়ে সুস্থ হওয়ার অনুপ্রেরণা যোগায়। একজন উপর্যুক্ত সঙ্গিনী তার সঙ্গীকে খারাপ এবং জীবনের জন্য ঝুঁকিকর কাজ করা থেকে বিরত রাখতে পারে। যেমনঃ মদ্যপান, মাদক সেবন ইত্যাদি।

স্মৃতিভ্রংশ প্রবণতা কমায়:

যদি জীবনে এমন সঙ্গী থাকে যার কাছে গেলে মনে শান্তি আসে তাহলে বার্ধক্য কখনো তাকে স্পর্শ করতে পারে না। গবেষণায় দেখা গেছে যারা তালাকপ্রাপ্ত হয়ে পুনরায় বিয়ে করে নি তাদের স্মৃতি শক্তি নষ্ট হওয়ার প্রবণতা প্রায় তিন গুন বেশি হয় এবং যারা মাঝ বয়সে বিধবা হওয়ার পর আর বিয়ে করেনি তাদের স্মৃতিভ্রংশ প্রবণতা ছয়গুণ বেড়ে যায়। গবেষকরা বলেন বিবাহিত এবং সারাজীবন মানসিকভাবে এবং সামাজিকভাবে পাশাপাশি থাকলে মন প্রফুল্ল থাকে এবং স্মৃতি শক্তি কম হ্রাস পায়।

বিভিন্ন অসুখ থেকে মুক্তি:

সুখী দম্পতিদের কখনো টাইপ -২ ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা, ফাইব্রোমাইলজিয়া মত অসুখ হতে দেখা যায় না। যেকোনো জিনিস নিয়ে অতিরিক্ত মানসিক চাপ শরীরে উপর খারাপ ভাবে প্রভাব ফেলে। তাই সুস্থ থাকতে হলে সুখী দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করা অতীব জরুরী।

জীবনসঙ্গী খুঁজতে বিবাহবিডি

উচ্চ শিক্ষা শেষে প্রতিষ্ঠিত হবার পরেও যদি আপনার  অথবা  পরিবারের প্রিয় সদস্যটির জন্য উপযুক্ত সঙ্গীর সন্ধান না পাওয়ায় কারনে বিয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে থাকেন তবে আপনার জন্যই অনলাইন বেইজ ম্যাট্রিমনিয়াল সার্ভিস বিবাহ বিডি ডট কম। ঘরে বসেই ফ্রী রেজিষ্ট্রেশন করে  চাহিদা অনুযায়ী পাত্র/পাত্রীদের প্রোফাইল (ছবি সহ বায়োডাটা) দেখে পাত্র/পাত্রী কিংবা অভিভাবকের সাথে সরাসরি নিজেরাই যোগাযোগ করতে সক্ষম হবেন এবং তা অতি দ্রুততম সময়ের মধ্যে ।

অমিল গুলো মেনে নিন – সুখে থাকুন

তাকে বোঝার চেষ্টা না করাটাই হল প্রধান বাধা। ভালবাসা চান কিন্তু তার মন, মেজাজ, রুচি কেমন সেদিকে খেয়াল রাখছেন না, এমন হলে মিল হবে না। মিলন ত দূরে! খেয়াল রাখার কাজটা মানুষ সাধারণত অভ্যাসবশে করে। অভ্যাসবশে সবটা খেয়াল করতে পারলে সেটা খুব চমৎকার, কিন্তু অভ্যাসবশে সবটা খেয়াল করা নতুন নতুন মোটেও সম্ভব না।

বিশেষ মনোযোগ আবশ্যক। কারণ নতুন নতুন সে তার মনের কথা, সব কথা গড়গড় করে আপনাকে বলে দেবে না। হয়ত একটা শব্দ বলল, তাও এমনভাবে বলল যে তা আপনার মনে কোনো দাগ কাটল না। একটু পরেই ভুলে গেলেন। এমন হলে বিপদ আছে।

যা বলছে তা গভীরভাবে মন দিয়ে উপলব্ধি করুন। সমস্যা বোঝার চেষ্টা ও ভাল লাগার বিষয়-আশয় জানার চেষ্টা থাকবে। তারপর সমস্যা সমাধানের পদক্ষেপ ও ভাল লাগায় পানি ঢালা, সার দেওয়া, ভালবাসার চারা লাগানোর কাজটা! প্রক্রিয়া লম্বাই বটে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সবাই লম্বা সময় দেয়ও বটে, কিন্তু প্রায়ই একপক্ষ মোটেও ধৈর্য ধরতে চায় না! এখানে যথেষ্ট গোল বাধে।

তার মনের কথা, সমস্যার কথা বোঝার উপায় কী?

প্রয়োজনে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বের করতে হবে! নয়ত বলবে কেন? আপনি তার কে যে আপনাকে গড়গড় করে সব বলে দেবে?

বোঝার জন্য যথেষ্ট সময় দরকার। আগ্রহ থাকবে পুরোপুরি। তবে এগোতে হবে একটু করে। তাড়াহুড়ো করলে ফল ধরার সম্ভাবনা কম।

জানতে হবে বোঝাপড়ার সীমানা।

সে যতটুকু চায় ততটুকু বোঝার চেষ্টা করা ভাল। এমনকি সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়ে গেলেও মনে রাখা ভাল সে কতটুকু আপনাকে বলতে চায়। যা বলতে চায় না তার জন্য চাপাচাপি ভাল না।

ভালবাসা মানে সবকিছু শেয়ার করা?

এ ব্যাপারে সবাই এক মত না। সুতরাং তার একান্ত কিছু বিষয় তার মধ্যেই থাকতে দেওয়া ভাল। আপনি বরং আরো ঘনিষ্ঠ, আরো বিশ্বস্ত হওয়ার চেষ্টা করুন। তাহলে একদিন হয়ত সব বলে দেবে। প্রতিটা মানুষই দেহে ও মনে আলাদা। তাহলে আপনি তার সঙ্গে শতভাগ মিল চান কোন আক্কেলে? সে আমাকে এটা বলল না, সে কেন এটা করল—এসব নিয়ে দুঃখ-মনস্তাপ না করাই ভাল। বরং কিছু অমিল মেনে নিতে পারলেই সুখের সম্ভাবনা বেশি।

দাম্পত্য সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে দক্ষতা ও শিক্ষা প্রয়োজন

সম্প্রতি প্রথম আলোতে একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে যে দেশে দিন দিন তালাকের হার বাড়ছে। এতে আরও উল্লেখ করা হয় যে নারীরা অধিক হারে তালাকের আবেদন করছেন এবং ঢাকায় গড়ে প্রতি ঘণ্টায় একটি করে তালাকের আবেদন করা হচ্ছে। প্রতিটি মানুষ জীবনে দুটি বিষয়কে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন—এক হচ্ছে তাঁর সন্তান ও দ্বিতীয় হচ্ছে তাঁর দাম্পত্যজীবন। আমরা সবাই চাই একটি নিরাপদ, সুখী, মর্যাদাপূর্ণ দাম্পত্যজীবন। প্রতিটি

বিয়ের প্রাক্কালে সবার মনে এই প্রার্থনা থাকে, ‘আজীবন আমরা একত্রে থাকব’। কিন্তু সবার মনের এই আশা পূরণ হয় না।

মনে রাখা ভালো, প্রেম বা বিয়ের প্রথম দিকের ‘ভালোবাসার উন্মাদনার’ উচ্ছ্বাস বড়জোর দুই বছর থাকে। তার মানে এই নয় যে ভালোবাসা ফুরিয়ে গেছে বা ভুল মানুষকে পছন্দ করেছি। ভালোবাসা কোনো নির্দিষ্ট অবস্থা নয়, এটি একটি কর্ম, জীবন দক্ষতা—যা প্রতিনিয়ত প্রদর্শন করতে হয় এবং চর্চা করতে হয়।

তালাকের অনেক কারণ রয়েছে। তবে তালাকের আবেদনে কাজিরা স্বামী বা স্ত্রী বা অভিভাবকদের কতগুলো গৎবাঁধা বুলি বা অভিযোগনামা বলে দেন সেখানে উল্লেখ করতে। গভীর মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে তালাকের জন্য বহুবিধ কারণকে দায়ী করা হয়। তবে দুটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে দাম্পত্যজীবনে দুজনের মধ্যে ‘কার্যকর পারস্পরিক যোগাযোগ ভেঙে পড়া’ এবং দাম্পত্যজীবনে ইতিবাচক ‘বিনিয়োগের’ অভাব ।

এ ছাড়া রয়েছে পরকীয়া প্রেম বা দাম্পত্যে অবিশ্বস্ততা, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, মাদকাসক্তি, যৌন সমস্যা, মূল্যবোধের বড় ধরনের অমিল, শ্বশুরপক্ষের লোকদের অযাচিত হস্তক্ষেপ, আর্থিক বা সামাজিক দায়িত্ব গ্রহণে অবহেলা, যৌতুক-বিষয়ক জটিলতা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অতিরিক্ত ও অনৈতিক ব্যবহার, প্রতিশোধপ্রবণতা, বন্ধু বা আত্মীয়দের কাছে নিরন্তর অপর পক্ষের বিরুদ্ধে বদনাম করে যাওয়া, সন্তানদের কায়দা করে নিজ পক্ষে নিয়ে অপর পক্ষকে জব্দ করার চেষ্টা, অযত্ন, অবহেলা, পরিত্যক্ত করে রাখা ইত্যাদি।

তবে যে ‘যোগাযোগ ঘাটতি বা বৈকল্যের’ কথা বলেছি, সেটি গুরুত্বপূর্ণ। দাম্পত্যে চার ধরনের যোগাযোগ-সমস্যা দেখা দিতে পারে—

১. আত্মসমর্পণ বা বিরোধিতা থেকে বিরত থাকা— তিক্ততার একপর্যায়ে এক পক্ষ বা উভয় পক্ষ এমন জায়গায় পৌঁছে যায় যে তারা আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে, সমঝোতায় আসতে চেষ্টাই করে না। তারা পারস্পরিক ঘৃণা, অবজ্ঞায় সব ধরনের যোগাযোগ এড়িয়ে চলে—ভাবখানা এমন, এসব নিয়ে আলোচনা বৃথা। ফলে তীব্র ক্ষোভ, বিরক্তি, অসন্তুষ্টি জমতে থাকে ও ধীরে ধীরে বিষণ্নতায় ভুগতে থাকে।

২. নিশ্চল বা নির্বাক হওয়া— এ ক্ষেত্রে তারা কোনো বিষয়ে আলোচনা করতে ‘বিলম্বিত’ করার পন্থা নেয় বা স্পর্শকাতর বিষয়ে আলোচনা এড়িয়ে চলে। ফলে নিজেদের মধ্যে বরফাচ্ছাদিত একটি দেয়াল তৈরি হয়। তাদের মধ্যে দিন দিন উদ্বেগ বাড়তে থাকে।

৩. পালিয়ে বেড়ানো— নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করতে ব্যর্থ হয়ে তারা অন্য দিকে বেশি মনোযোগ দিয়ে নিজকে ব্যস্ত রাখতে চায়। এভাবে তারা একে অপর থেকে আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কেউ পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে, কেউ মাদকাসক্ত হয়, কেউ পর্নো দেখে, কেউ সারাক্ষণ কেনাকাটা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে আবার কেউবা ‘কাজপাগল’ হয়ে সারাক্ষণ অফিস বা ব্যবসাস্থলে দিন গুজরান করে।

৪. সংঘাত, প্রতিযোগিতা বা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হওয়া— এটি হচ্ছে সবচেয়ে মারাত্মক ধরনের যোগাযোগ বিপর্যয়। এ ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী সব সময় একে অপরের বিরুদ্ধে কুৎসা, বদনাম করতে থাকে; অনবরত অভিযোগ, নালিশ করতে থাকে; খুঁটিনাটি বিষয়েও সারাক্ষণ ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত থাকে; তর্ক-বিবাদ তাদের দৈনন্দিন কাজ; এমনকি মৌখিকভাবে গালাগালি করে অপর পক্ষকে পরাস্ত করতে না পেরে হাতাহাতি ও মারামারিতে লিপ্ত হয়। এ মারামারিতে কেউ কাউকে বিন্দুমাত্র ‘ছাড়’ দিতে রাজি নয়—তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা যে করেই হোক ‘জিততে’ হবে।  প্রায় প্রতিদিন তাদের এ রকম খণ্ডযুদ্ধ চলতে থাকে ও তাদের উভয়ের মধ্যে ‘ভয়ংকর’ সব প্রতিশোধস্পৃহা জাগতে থাকে (সেটি তালাক দেওয়া থেকে, মামলা, হামলা এমনকি খুনখারাবি কিংবা আত্মহত্যা)।

তবে এ রকম বেদনাদায়ক চিত্রের পাশাপাশি সুখী দাম্পত্যজীবনের উদাহরণও অসংখ্য রয়েছে। এঁরা তেমন কোনো সমস্যা ছাড়াই সুখী ও আনন্দিত সংসার জীবন যাপন করছেন। তাঁদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাপূর্ণ, দুজনই জিতবে (উইন-উইন) তেমন একটি কার্যকর, গঠনমূলক যোগাযোগ ও সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়।

যোগাযোগ একটি দক্ষতার ব্যাপার। তাই সবাই এটি অর্জন করতে পারে। মার্কিন মনোবিজ্ঞানী ড. সুসান হেইটলার তাঁর পাওয়ার অব টু বইয়ে লিখেছেন কীভাবে দাম্পত্য-সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা যায় । তিনি দম্পতিদের তিনটি ‘এল’ দক্ষতা অর্জন করতে বলেন। সেগুলো হলো লিসেন, লাভ ও লার্ন।

লিসেন অর্থাৎ মনোযোগ দিয়ে শোনা। খুঁত, ত্রুটির দিকে দৃষ্টি না দিয়ে অপর পক্ষ কী বলতে চাচ্ছে, তা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে।  প্রথমে অন্য পক্ষের ক্ষোভ, অভিযোগ, নালিশ সহমর্মিতার সঙ্গে শুনতে হবে। পরে ঠান্ডা মাথায় ও সুকৌশলে ভিন্নমত থাকলে তা বুঝিয়ে বলতে হবে।

লাভ অর্থাৎ ভালোবাসতে হবে। ভালোবাসাকে মাঝে মাঝে রিচার্জ করতে হয়, নবায়ন করে নিতে হয়। ভালোবাসা মানে সঙ্গীর প্রতি উজ্জ্বল আলোর ঝলকানি ছুড়ে দেওয়া। প্রতিদিন কিছু ইতিবাচক উষ্ণতা ছড়িয়ে দিন—সমর্থন, উৎসাহ প্রদান, ক্ষমা চেয়ে নেওয়া, সেবাযত্ন, কোমল কণ্ঠে ভালোবাসার কথা বলা, জড়িয়ে ধরা। আমার চেম্বারে এক নারী রোগী স্বামীর বিরুদ্ধে অনুযোগ করে বলেন, ‘প্রতিদিন ভালোবাসলে কী হয়? প্রতিদিন আবেগ থাকলে ক্ষতি কী? এর জন্য তো কোনো টাকাপয়সা লাগে না স্যার।’

লার্ন অর্থাৎ শিখতে হবে। দাম্পত্যজীবনে সুখী হতে হলে কিছু দক্ষতা অর্জন করতে হয়। আমরা কেউ মায়ের পেট থেকে এগুলো শিখে আসি না। জীবন থেকে এগুলো শিখে নিতে হবে ও চর্চা করতে হবে। এগুলো নিজে ব্যবহার করে দেখুন অন্য পক্ষের আচরণে ও নাটকীয় ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।

পরিশেষে বলব, ‘হয় আমার পথে চলো, না হয় রাস্তা মাপো’—এ রকম মনোভাব পরিহার করে পারস্পরিক আনুগত্য মেনে নিলে দাম্পত্যজীবন হবে অনেক সহজ।

মো. তাজুল ইসলাম |
অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা
সুত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো