বিয়ের পর অ্যডজাস্টমেন্ট

বিয়ের পর জীবনের একটা সম্পূর্ণ নতুন পর্ব শুরু হয়। জীবনে নতুন মানুষটি ও তার পরিবারের সঙ্গে মানিয়ে থাকার সূত্রপাতও এখন থেকেই। নতুন কিছুর সঙ্গে মানিয়ে নিতে সময় লাগে বই কী! অনেকে হিমশিম খেয়ে দিশেহারাও হয়ে পড়েন। তাঁদের জন্য রইল অ্যাডজাস্টমেন্ট সম্পর্কে কয়েকটি জরুরি টিপস।

অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ হোক বা লাভ ম্যারেজ বিয়ের পর সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগে বই কী! নতুন শ্বশুরবাড়ি আর নিজের ছোটছোট অভ্যাস, ইচ্ছে, পছন্দ, এই দুয়ের মধ্যে সেতু তৈরি করতে গিয়ে অনেকেই একটু সমস্যায় পড়ে যান। তবে একটু অ্যাডজাস্টমেন্ট আর বুদ্ধি করে চললে দেখবেন সহজেই অ্যাডপ্ট করে নিতে পারছেন।

বিয়ের পর টাইম ম্যানেজমেন্ট একটা বড় চ্যালেঞ্জ। শ্বশুরবাড়ি এবং বাপের বাড়ির মধ্যে ব্যালেন্স করে চলুন। বিয়ের পরপর কিছুদিন একে ওপরকে সময় দেওয়া খুব জরুরি। তা লাভ ম্যারেজ বা অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ যাই হোক না কেন। নতুন সম্পর্কের ভিত দৃঢ় করতে  এবং এতে ওপরকে আরও ভাল ভাবে চিনে নেওয়ার জন্য এই সময়টা খুব জরুরি। তাই বলে বিয়ের পর হ্যজব্যান্ড যদি কোনও একটা উইকঅনেড ওঁর বন্ধুদের সঙ্গে কাটাতে চায় তাতে বাধা দেবেন না। দেখুন, সোশাল লাইফ তো আপনাদের দু’জনেরই আছে। বিয়ে হয়ে গিয়েছে মানেই সব কিছু বদলে গেল এমন তো নয়। কখনও কখনও টাইম বের করে আপনিও আপনার বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে ঘুরে আসুন।

একসঙ্গে থাকতে গেলে দাম্পত্যে নানারকম সমস্যা আসতে পারে। মনে রাখবেন, আপনার স্বামী বা স্ত্রী আপনার থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন একজন মানুষ। তাই তাঁর বেড়ে ওঠা, পরিবার, রুচিবোধ, ধ্যানধারণা, অভ্যাসগুলো আপনার থেকে আলাদা হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাই তাঁকে তাঁর মতো করেই গ্রহণ করুন। নিজেদের মধ্যে সমস্যা হলে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে আসুন। নিজের মত চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। সঙ্গীর দিকটাও বোঝার চেষ্টা করুন।

বিয়ের পর নতুন সংসারে কিছু দায়িত্ব নিন। সংসারের কাজে সবাই হাত লাগলে, ফ্যামিলি বন্ডিংও  দৃঢ় হয়। যদি আপনি স্বামীর সঙ্গে একা থাকেন তাহলে কে কী কাজ করবেন নিজেদের মধ্যে ঠিক করে নিন। দু’জনের সংসারে দায়িত্ব তো দু’জনের উপরই বর্তায়। যেমন ধরুন, উইকএন্ডে ঘর সাফ করার প্ল্যান হলে ঠিক করে নিন কে কোনটা করবেন। কিংবা একসঙ্গেও কোনও একটা কাজ করতে পারেন। একে অপরকে সাহায্য করুন। হালকা মিউজ়িক চালিয়ে গল্প করতে করতে কাজ করে করুন। দেখবেন এতে আপনারা কাজটাকে এনজয় করবেন।

নিজেরদের মধ্যে রোম্যান্স বজায় রাখুন। রোজ দেখা হওয়ায় কাছের মানুষ অনেকটা চেনা হয়ে যায়। এটাকে বোরডম ভাববে না। বরং দেখুন প্রতিদিনই একটু একটু করে আপনারা একে অপরের সঙ্গে আরও বেশি কমফর্টেবল হয়ে উঠবেন।  মাঝে মধ্যে ডেটে যান। একে অপরকে সারপ্রাইজ় করুন। অফিস ফেরত ছোট কোনও উপহার নিয়ে যান। একসঙ্গে কোয়ালিটি টাইম কাটান। অফিসের কাজ বাড়িতে নিয়ে যাবেন না। ওই সময়টুকু একে অপরেকে দিন। ফোন বা সোশাল সাইটে সময় না কাটিয়ে নিজেরা গল্প করুন।

শ্বশুরবাড়িতে চেষ্টা করুন স্বাভাবিক থাকতে। আপনি তো এখন এই পরিবারেরই একজন, তাই আপনি যেরকম সেরকম ভাবেই থাকুন। শাশুড়িকে সব কাজে সাধ্যমত সাহায্য করুন। শাশুড়ির কাছ থেকে জেনে নিন স্বামী এবং পরিবারের সবাই কী কী খেতে ভালবাসেন। সেই ডিশগুলো হঠাৎ একদিন রান্না করে খাইয়ে সবাইকে সারপ্রাইজ় দিতে পারেন। অফিস থেকে ফিরে কিংবা ডিনার টেবলে সবাই একসঙ্গে কিছুক্ষণ সময় কাটান। সারাদিন কী হল গল্প করুন। আপনারা যদি আলাদা থাকেন তাহলে চেষ্ট করুন দিনে একবার ফোন করে খোঁজ নিতে। কখনও কখনও উইকএন্ডে একসঙ্গে বেড়াতে যান কিংবা লাঞ্চ বা ডিনার করুন। এতেই সুন্দর সম্পর্ক বজায় থাকবে।

বিয়ে করুন যথা সময়ে, এর স্বাস্থ্যগত সুফল অনেক!

বিয়ের কথাটা শুনলেই কেমন যেন লাগে। চিন্তার বিষয়, বয়স হয়েছে তো! সে যাই হোক। বিয়ে করুন উপযুক্ত সময়ে। কারণ বিয়ে করার স্বাস্থ্যগত সুফল অনেক! কি ধরণের সুফল থাকতে পারে বিয়ে করার পর?

কেউ যদি মনে করে থাকেন বিয়ে করার কারণে আপনার মৃত্যুর দিন তাড়াতাড়ি ঘনিয়ে আসবে তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন। কারণ ২০১৩ এর এক রিসার্চে দেখা গেছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জন্ম গ্রহণকারীদের মধ্যে যারা অবিবাহিত তারা বিবাহিত অথবা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের মধ্যে যারা আছে তাদের তুলনায় তাড়াতাড়ি মারা যায়। এর কারণ হিসেবে দেখা গেছে জীবনসঙ্গী মানুষকে আবেগ অনুভূতি বাড়িয়ে দেয়, সামাজিকভাবে একত্রে রাখে, মানসিকভাবে সমর্থন দেয়, যার সব কিছুই সুস্থ স্বাভাবিক স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন।

মানসিক চাপ কম থাকে :

যদিও মাঝে মাঝে ঝগড়া লাগে তারপরও তার উপস্থিতি আপনার মনে এক ভালো লাগার অনুভূতি ছড়িয়ে দিবে। মানুষ যখন কোন মানসিক চাপের মধ্যে থাকে তখন শরীরে স্ট্রেস হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়। এই স্ট্রেস হরমোন বিবাহিতের চেয়ে অবিবাহিতদের শরীরে দ্রুত বৃদ্ধি পায়। অতিরিক্ত পরিমাণে মানসিক চাপ শরীরে সমস্যার জন্ম দেয়, বিশেষ করে হজমের সমস্যার সৃষ্টি করে। রিসার্চে জানা গেছে স্ট্রেস হরমোন বিবাহিতদের শরীরে সেরকম ভাবে ক্ষতি করতে পারে না কিন্তু অবিবাহিতদের শরীরে নানা সমস্যার বাসা তৈরি করে।

হার্ট এ্যাটাকের সম্ভাবনা হ্রাস পায়:

ভালোবাসা হৃদযন্ত্রকে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে যারা বিবাহিত অথবা কোন সম্পর্কের মাঝে আছে তাদের হার্ট-অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা নিঃসঙ্গ মানুষের চেয়ে কম। গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে যে সঙ্গীর নিবিড় সঙ্গ এবং নতুন পরিবারের নতুন সব আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু- বান্ধবের সাথে ভালো বন্ধনের কারণে হার্ট-অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস পায়। কারণ পরিবারের সাথে থাকলে মানুষ উৎফুল্ল থাকে। মনে কোন মানসিক চাপ থাকলে তা শেয়ার করতে পারে। এতে মনের উপর চাপ কম পড়ে।

বিয়ে শরীরের হাড় মজবুত করে। অবাক হচ্ছেন? আসলেও তাই। বিয়ে শরীরের হাড় শক্ত করে এবং বিভিন্ন হাড়ের রোগের ঝুঁকি কমায়। বিয়ে হাড়ের খনিজ ঘনত্ব ঠিক রেখে হাড়ের এক ধরণের রোগ “অস্টিওপরোসিস” হওয়ার ঝুঁকি কমায়। একজন ভালো জীবনসঙ্গী পত্নীর মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে হাড়কে ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে। তাই সুখী দাম্পত্য জীবন মহিলাদের হাড়ের খনিজ ঘনত্ব ঠিক রাখার জন্য জরুরী।

অস্ত্রোপচারের পর দ্রুত সুস্থ হওয়া:

কেউ যখন আপনার পাশে সারাক্ষণ থেকে আপনার পরিচর্যা করবে তখন আপনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন। কিন্তু আপনি যখন একা থাকবেন সে ক্ষেত্রে আপনার সুস্থ হতে অনেক সময় লেগে যাবে। কারণ তখন আপনার সব কাজগুলো আপনার নিজেরই করতে হবে। এছাড়াও আপনি যখন কার সান্নিধ্যে থাকবেন তখন বেঁচে থাকার একটা কারণ খুঁজে পাবেন। এক্ষেত্রে জীবন সঙ্গী আপনার বেঁচে থাকার অবলম্বন হয়ে দাঁড়ায়।

অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঝুঁকি কমে:

জীবনে কতবার আপনি আপনার জীবনসঙ্গীকে আকস্মিক দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করেছে? গবেষণায় দেখা গেছে তালাক প্রাপ্ত মহিলা এবং পুরুষেরা বিবাহিতদের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ বেশি অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়। গবেষকদের মতে বিয়ে দুটি মানুষকে পাশাপাশি রাখে এবং এসব অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণামের হাত থেকে রক্ষা করে।

বিষণ্ণতা কমায়:

একাকীত্বের কারণে অথবা অন্য সমস্যার কারণেও মানুষ বিষণ্ণতায় ভুগতে পারে। আর মানুষ যখন হতাশায় ভুগে তখন কি পরিমাণ মানসিক বিপর্যয় ঘটছে তার নিজের, তা সে বুঝতে পারে না। কারণ বিষণ্ণতার প্রথম উপসর্গ হচ্ছে আত্ম-উপলব্ধির হ্রাস পাওয়া। তাই বিষণ্ণতাকে সনাক্ত করতে এবং দূর করতে প্রয়োজন একজন সঙ্গীর। যে সব সময় আপনার সাথে থাকবে, যার সাথে আপনি সবকিছু শেয়ার করতে পারবেন।

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়:

২০১৩ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যে সকল মানুষ মরণ ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিল তাদের মধ্যে শতকরা ২০ ভাগ এর বেশি মানুষ আরোগ্য লাভ করতে সক্ষম হত যদি তারা বিবাহিত হত। এই সাফল্যের হার কেমোথেরাপির থেকেও বেশি। একটি স্বাভাবিক স্থিতিশীল সম্পর্কই প্রথম ধাপের ক্যান্সার সনাক্ত করতে পারে। আর এই বন্ধনই ক্যান্সারের সাথে লড়ে সুস্থ হওয়ার অনুপ্রেরণা যোগায়। একজন উপর্যুক্ত সঙ্গিনী তার সঙ্গীকে খারাপ এবং জীবনের জন্য ঝুঁকিকর কাজ করা থেকে বিরত রাখতে পারে। যেমনঃ মদ্যপান, মাদক সেবন ইত্যাদি।

স্মৃতিভ্রংশ প্রবণতা কমায়:

যদি জীবনে এমন সঙ্গী থাকে যার কাছে গেলে মনে শান্তি আসে তাহলে বার্ধক্য কখনো তাকে স্পর্শ করতে পারে না। গবেষণায় দেখা গেছে যারা তালাকপ্রাপ্ত হয়ে পুনরায় বিয়ে করে নি তাদের স্মৃতি শক্তি নষ্ট হওয়ার প্রবণতা প্রায় তিন গুন বেশি হয় এবং যারা মাঝ বয়সে বিধবা হওয়ার পর আর বিয়ে করেনি তাদের স্মৃতিভ্রংশ প্রবণতা ছয়গুণ বেড়ে যায়। গবেষকরা বলেন বিবাহিত এবং সারাজীবন মানসিকভাবে এবং সামাজিকভাবে পাশাপাশি থাকলে মন প্রফুল্ল থাকে এবং স্মৃতি শক্তি কম হ্রাস পায়।

বিভিন্ন অসুখ থেকে মুক্তি:

সুখী দম্পতিদের কখনো টাইপ -২ ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা, ফাইব্রোমাইলজিয়া মত অসুখ হতে দেখা যায় না। যেকোনো জিনিস নিয়ে অতিরিক্ত মানসিক চাপ শরীরে উপর খারাপ ভাবে প্রভাব ফেলে। তাই সুস্থ থাকতে হলে সুখী দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করা অতীব জরুরী।

জীবনসঙ্গী খুঁজতে বিবাহবিডি

উচ্চ শিক্ষা শেষে প্রতিষ্ঠিত হবার পরেও যদি আপনার  অথবা  পরিবারের প্রিয় সদস্যটির জন্য উপযুক্ত সঙ্গীর সন্ধান না পাওয়ায় কারনে বিয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে থাকেন তবে আপনার জন্যই অনলাইন বেইজ ম্যাট্রিমনিয়াল সার্ভিস বিবাহ বিডি ডট কম। ঘরে বসেই ফ্রী রেজিষ্ট্রেশন করে  চাহিদা অনুযায়ী পাত্র/পাত্রীদের প্রোফাইল (ছবি সহ বায়োডাটা) দেখে পাত্র/পাত্রী কিংবা অভিভাবকের সাথে সরাসরি নিজেরাই যোগাযোগ করতে সক্ষম হবেন এবং তা অতি দ্রুততম সময়ের মধ্যে ।

দ্বিতীয় বিয়ে ও সুখী হওয়ার সম্ভাবনা!

বিয়ের পর সুখী সংসার জীবন গড়তে কে না চায়! তবে যে কোন কারনেই হোক প্রথম সংসারের ইতি ঘটে অনেকের জীবনে। সময় ও জীবন থেমে থাকেনা তবে খারাপ সময় অব্যাহত থাকে অনেকদিন, এর মধ্যে দিয়েই মানুষকে আবার বাঁচতে হয় নতুন করে। কেউ হয়তো নতুন ভাবনায় সঙ্গীহীন জীবনযাপন করেন আবার কেউ কেউ নতুন জীবনসঙ্গীর নিয়ে দাম্পত্যে জীবন শুরু করেন।

সম্প্রতি ‘হাফিংটন পোস্টে’র এক প্রতিবেদনে জানানো হয় –

দ্বিতীয় বিয়েতে নাকি সুখী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

যে সকল কারনে দ্বিতীয় বিয়েতে সুখী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছেঃ

স্বাভাবিকভাবে মানুষ পুরনো ভুল পুনরায় করেনা। তাই দ্বিতীয় বিয়েতে ব্যক্তিদের মধ্যে সংশোধন বিষয়টি তৈরি থাকে। যার ফলে দাম্পত্যে সম্পর্ক ভালো থাকে।

মানুষ সঙ্গ প্রিয় তবুও একই ছাদের নিচে নিত্য কলহ দাম্পত্যে সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটায়। দীর্ঘ সময় মানুষ যখন নিঃসঙ্গ জীবন কাটায় তখন দ্বিতীয় সম্পর্কে কলহ বিষয়টি আসলেও তারা এড়িয়ে চলেন ফলে দাম্পত্যে সম্পর্কে শান্তি বিরাজ করে।

দীর্ঘকালীন সময়ের পুরনো অভিজ্ঞতার ফলে দ্বিতীয় বিয়েতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সমঝোতার বিষয়টি বেশ স্পষ্ট থাকে যার ফলে দ্বিতীয় দাম্পত্য জীবন সুখী হয়।

প্রথম দুর্ঘটনার স্বীকার হওয়ার পর দ্বিতীয় বার জীবনসঙ্গী বাছাইয়ে ব্যক্তিদের মধ্যে আবেগ বিষয়টি নিয়ন্ত্রনে থাকে। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগণ যথেষ্ট সচেতন ও যাচাই করে জীবনসঙ্গী বেঁছে নেন। আর তাই তাদের মধ্যে আত্মীক সম্পর্ক শুরু থেকেই লক্ষ্য করা যায়।

অতীতে আস্থাহীনতায় সম্পর্ক কাটানো অভিজ্ঞতার ফলে দ্বিতীয় সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের প্রতি আনুগত্য থাকে তাই দাম্পত্য সম্পর্ক স্বাস্থ্যকর হয়।

বিয়ে প্রত্যেকটি মানুষের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় যা কেউ অস্বীকার করতে পারবেনা। সমাজ, বিয়ে ও সংসার এ সকল বিষয় নিয়েই সভ্যতা টিকে আছে। বিয়ের পর অনেকের জীবনে ঝড়ঝাপটা আসে অতঃপর ডিভোর্স হয়। তাই বলে ব্যক্তির উচিত নিজের জীবনকে অবহেলা না করে সময় নিয়ে যাচাই করে জীবনসঙ্গী খুঁজে নতুন করে বেঁচে থাকা।

প্রবাদে আছে –

বিয়ে হচ্ছে বুদ্ধিমত্তার বিরুদ্ধে কল্পনার জয়। আর দ্বিতীয় বিয়ে হচ্ছে অভিজ্ঞতার বিপক্ষে আশাবাদের জয়।

ভালো সঙ্গী হতে হলে

‘অমরসঙ্গী’ হওয়ার তাগিদ দিলে হয়তো রোমান্টিকতার বাড়াবাড়িই হবে। তবে আরও একটু বেশি হলে ক্ষতি কী?… সফল ও ভালো জীবনসঙ্গী সবারই চাওয়া থাকে। ‘সঙ্গী রোমান্টিক হবে। আমার সব কথা বুঝবে। দারুণ সুন্দর সময় কাটাব।’ প্রত্যেকেই ভাবেন, তাঁর সঙ্গী তাঁকে ঘিরেই নতুন জীবন রচনা করবেন—জীবন কাটাবেন। তাঁর রাজ্যে তিনি একাই রাজত্ব করবেন। এখানে অন্য কেউ অপরের ভাবনায়, প্রকাশ্যে, ফেসবুক অথবা মোবাইলে কাজে-অকাজে ভাগ বসাবে না। দুজনের পারস্পরিক মুগ্ধতা যেন সারা জীবন থাকে।

আবার পারিবারিক সম্বন্ধ করে হওয়া বিয়ের ক্ষেত্রে বিয়ের পর এই ভালোবাসাবাসীর পর্বটা শুরু হয়। বিয়ের মূল লক্ষ্য যেটা থাকে সেটা হলো, মনের মধ্যে যে মিলনের আকাঙ্ক্ষা তার নান্দনিক বাস্তবায়নে নিজেকে প্রকাশ করা, রোমান্টিকতা। আর এসব ঘিরে রয়েছে সামাজিকতা। এসব নিয়েই তো বিয়ে।

মার্কিন লেখক মিগনন-ম্যাকফলিন যেমনটা বলেছেন, দায়িত্ব দু-তরফেরই। সম্পর্ক হবে এ রকম; একজীবনেই বারবার প্রেমে পড়া চাই একে অপরের। শুধু তো দায়িত্ববোধ না, পরস্পরের প্রতি মুগ্ধতা না থাকলে ভালো সঙ্গী হয়ে ওঠা দুষ্কর। আগে থেকে পরিচয় না থাকলে পারিবারিক সম্বন্ধ করা বিয়েতে আরেকটু কাঠখড় তো পোড়াতেই হয়। মার্কিন দুঁদে মঞ্চকর্মী রবার্ট ব্রল্টের কথাটাই বা বলি না কেন! সংসার রঙ্গমঞ্চে দুজনকে হতে হবে দুজনার। আর ভালোবাসার প্রশ্নে সারা পৃথিবীর বিরুদ্ধে দরকারে এককাট্টা হয়ে লড়াই।

রম্যলেখক রবার্ট কুইলেন বলেছেন, সুখী ও ভালো সম্পর্ক হলো—যুগলের দুজনই একে অপরের প্রতিÿআস্থাশীল, সহৃদয়, সদয় এবং সংবেদনশীল।

তাহলে কী করতে হবে?

বিয়েটা যদি হয় সম্বন্ধ করে:

দুজনের পছন্দ-অপছন্দ বিয়ের আগে আলোচনা করে নিলেই ভালো হয়।

কারও বিয়ের আগে প্রেম থাকতেই পারে। সে ব্যাপারটা দুজনেই দুজনের স্মৃতি থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারবেন কি না, নিজেকে জিজ্ঞেস করুন। এই বোঝাপড়া যত আগে হবে ততই ভালো।

নিজের মতের বিরুদ্ধে বিয়ে করা উচিত নয়। এতে উভয়ের পরিবার ও নিজেদের মধ্যে ঝামেলা বাড়বে।

নারীদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ যদি না থাকে; তা শোধরানোর মানসিকতা থাকতে হবে।

পারস্পরিক দুর্বলতাগুলো জানতে ও জানাতে পারলে ভালো। এ কারণে, যাতে সে ব্যাপারে আপনি ‘কেয়ারিং’ হতে পারেন। আপনার ওপর আপনার সঙ্গীর আস্থা যেন বাড়ে। অযথা সেসব বিষয় নিয়ে জীবনকে তিতকুটে বানানোর কোনো মানে নেই।

বিবাহিত জীবন টিভির সিরিয়াল— ডেইলি সোপ বা অপেরা নয়। গোপন গল্পগুলো জীবননাট্যের ক্লাইমেক্স বা জটিলতা বাড়ানোর জন্য মজুত রাখবেন না।

আপনার সঙ্গীর আগ্রহের দিকটায় নজর দিন। তাকে উৎসাহ দিন। দেখবেন সেও আপনার প্রতি তার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।

যেমন: পড়াশোনা করা, বছরে অন্তত একবার বেড়িয়ে আসা, কোনো সামাজিক সচেতনতামূলক কাজ করা, সিনেমা দেখা ইত্যাদি। আবার কেনাকাটাও হতে পারে। একদিন না হয় গেলেনই সঙ্গীর সঙ্গে।

শারীরিক ব্যাপারটি উপভোগ্য করে তুলুন। ব্যাপারটি নিয়ে লজ্জা না করে নিজেদের মধ্যে খোলাখুলি আলোচনা করা ভালো। প্রয়োজন হলে নিজেদের পরিতৃপ্তির জন্য চিকিৎসক-পরামর্শ, ইন্টারনেটের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।

অন্যের দোষ-খুঁতগুলো হিসাব না করে সঙ্গীর ইতিবাচক দিক বের করুন। আর সেগুলোর প্রশংসা অব্যাহত রাখতে হবে।

ঝগড়া নয়, আলোচনায় যেকোনো সমস্যার সমাধান করতে হবে।

প্রেমের বিয়েতে:

প্রেমের সময় অনেক ক্ষেত্রে দুজনের পারিবারিক স্ট্যাটাস, পারিবারিক আবহ, তাদের নিজেদের মতামতের মূল্য কতখানি সেসব দিক অনেকটা অজানাই থেকে যায়, ভাবেন যে পরে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। আসলে বাস্তবতা ভিন্ন। বিয়ে মানেই হচ্ছে সামাজিকতা। সংসার মানেই একটি সামাজিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা। যে যার মাতব্বরি ফলানোর একটা জম্পেশ জায়গা ভেবে নড়েচড়ে বসেন। সংসার রাজনীতির ভালোমন্দ দেখভাল এড়িয়ে গেলে কেমন করে চলবে!

তাহলে উপায়—যখনই ভাবলেন বিয়ে করবেন! একটু ভেবে নিন।

দুজনই দুজনের পরিবারকে ভালোভাবে জানার চেষ্টা করুন।

দুজনই তাঁদের নিজেদের পরিবারে কতখানি প্রভাব রাখতে পারবেন তা পর্যালোচনা করুন।

পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ অবশ্যই থাকতে হবে। বিয়ের পর ‘পারবো না, পারলাম না’ বলতে যাতে না হয় সে রকম মানসিক প্রস্তুতি আগেই নেওয়া প্রয়োজন।

ভুল-বোঝাবুঝির শুরুতেই তা নিরসন করা উচিত ।

নিজেদের দোষত্রুটিগুলো ডায়েরিতে লিখে রাখতে পারেন। পরে ডায়েরি দেখে সেসব শোধরাতে হবে।

লেখেছেন: সুলতানা আলগিন, সহযোগী অধ্যাপক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ।

সুত্রঃ প্রথম আলো

সম্পর্কে প্রনয় আছে কিন্তু বন্ধুত্ব নেই; কি করবেন?

প্রণয় ও বন্ধুত্ব আলাদা দুটি শব্দ হলেও একটি সম্পর্কে এর দুটির উপস্থিতি এক সাথে থাকা খুব জরুরী। আপনার সঙ্গীকে আপনি ভালোবাসেন, তার সব দিক খেয়াল রাখছেন, একই ছাদের নিচে দুজন বাস করছেন, কিন্তু একে অপরের কাছে মন খুলে সব কথা বলছেন না বা বলতে পারেন না। এটি আপনাদের সম্পর্কের মাঝে জটিলতা আনতে পারে। স্বামী-স্ত্রী বন্ধুত্বের রূপ হয় অন্য রকম। তাই আপনাকে আগে বুঝতে হবে বন্ধুত্ব কার সাথে কি রকম হবে। পরিবারের সাথে বন্ধুত্ব, বন্ধুর সাথে বন্ধুত্ব আর স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের সাথে বন্ধুত্ব এক নয় কেননা সম্পর্ক গুলো আলাদা।

সম্পর্কে প্রনয় ও বন্ধুত্ব বজায় রাখতে যা করা উচিৎঃ

একে অপরের পছন্দ সম্পর্কে জানুন, অনেকটা আইস ব্রেকিং গেম এর মত একে অপরকে ব্যাক্তিগত ভালো লাগা খারাপ লাগা নিয়ে প্রশ্ন করুন।

দুজন ব্যাক্তির ভিন্ন ভিন্ন পছন্দ থাকতেই পারে এটাই স্বাভাবিক; এতে হতাশ হবার কিছু নেই। একে অন্যের পছন্দকে শ্রদ্ধা করুন, নিজের পছন্দকে অন্যের উপর চাপিয়ে দিবেন না।

স্বামী স্ত্রী’র নিজেদের ব্যাক্তিগত বিষয় গুলো অন্য কারও সাথে শেয়ার করবেন না।

নিজেদের ভালো মুহূর্ত গুলোর গল্প আপনার সঙ্গীকে মনে করিয়ে দিন।

আপনার অনেক স্মৃতি হয়ত আপনার সঙ্গী ভুলে যেতে পারেন তাই মনে করিয়ে দিতে আপনি ডায়েরি লিখতে পারেন, হতে পারে সেটি কবিতা কিংবা ছোট গল্প চাইলে আদি নিয়মের মত চিঠি লিখে বা চিরকুট লিখে তাকে উপহার দিতে পারেন।

ভালোমন্দ বোঝাপড়া নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে নিবেন পরিবারকে বা বন্ধুবান্ধব দিয়ে নিজের স্ত্রী বা স্বামী কে বোঝাতে যাবেন না।

দুজন ব্যাক্তির উচিৎ একে অপরকে জানা এবং প্রতিদিন জানতে চাওয়া। নিজেদের বারংবার জানতে চাওয়ার মাঝে গড়ে উঠবে বন্ধুত্ব আর যেটা থাকা চাই সেটা হল – বন্ধুত্বের শ্রদ্ধাবোধ।

দাম্পত্ব্য সম্পর্কে ক্ষমতার ভারসাম্য

সম্পর্কের গুরুত্ব যার কাছে কম তার হাতেই বেশি ক্ষমতা চলে আসে। এই সমস্যার সমাধান লুকিয়ে আছে একে অপরের প্রতি বিশ্বাসেই।

সম্পর্কের মধ্যে ‘ক্ষমতা’ শব্দটাকে টেনে আনতে আমরা কেউই পছন্দ করি না। একটা সুস্থ সম্পর্কে থাকবে একে অপরের সঙ্গে সহযোগিতা এবং সব কিছু ভাগ করে নেওয়ার আশ্বাস। কিন্তু সহযোগিতা এবং শেয়ার, এই দুটো করতেই তো দু’জন মানুষকে লাগে। দু’জনের মধ্যে একজন যদি সেটা না করতে চায়?

আসলে সম্পর্কের গুরুত্ব যার কাছে কম তার হাতেই বেশি ক্ষমতা চলে আসে। অন্যজন যতই ভালবাসাকে বেশি প্রাধান্য দিক। ডিনারের প্ল্যান থেকে আরও গুরুত্বপূর্ণ কোনও বিষয়, সবই যদি একজনের সিদ্ধান্ত মতো চলে তাহলে মুশকিল! অন্যজনের অসম্মতির যেন কোনও অর্থই নেই! এর ফল?

সিদ্ধান্ত নেওয়ার জায়গাটা শুধুমাত্র একজনের দখলে থেকে যায়। হয়তো না চাইতেই সে অন্য জনের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে, যে তার মতামতের কোনও গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা নেই।

সম্পর্ককে ধরে রাখতে এই সমস্যার সমাধান কিন্তু করতে হবে ধৈর্য্য ধরে। কীভাবে?

  • প্রথমত যেটা করতে পারেন তা হল পার্টনারের এই স্বভাব মেনে নেওয়া। তার সিদ্ধান্তগুলোই মেনে চলা। এতে সাময়িকভাবে সমস্যার সমাধান হয়তো হবে, পাওয়া যাবে কিছুটা সহযোগিতার আশ্বাস। তবে দীর্ঘদিন এইভাবে চলা নিশ্চয়ই সম্ভব নয়। ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙবেই। নিজেকে গুরুত্বহীন করে রাখতে কেউ কত দিন পারে?
  • দ্বিতীয়, সহযোগিতা পাওয়ার জন্য লড়াই করা। এতে কিন্তু দুটো ফল হতে পারে। আপনার পার্টনার যদি নিজের ভুল বুঝতে পারেন, তাহলে তো সমাধানও আপনারা পেয়ে গেলেন। কিন্তু তিনি যদি ভাবেন যে আপনি অকারণে ঝগড়া করছেন? তাহলেও কিন্তু বেশি আঘাত পাবেন আপনিই।
  • এতেও সমাধান না হলে স্পষ্ট করে অন্যজনকে বলে দিন যে তিনি আপনার পাশে না থাকলেও আপনি নিজের কাজ নিজে করতে সক্ষম। আসা করা যায় এতে আপনার পার্টনার নিজের ভুল বুঝবেন। তবে আপনি নিজে যদি এই সম্পর্কের উপর খুব বেশি মানসিকভাবে নির্ভরশীল হয়ে থাকেন তাহলে হয়তো এই কাজটা আপনি নিজেই করে উঠতে পারবেন না।

তবে কি কোনও সমাধান সত্যিই নেই এই সমস্যার? আছে। আর সেটা লুকিয়ে আছে আপনাদের দু’জনের ভিতরেই। একে অপরের প্রতি বিশ্বাসে।

একটি সম্পর্কে যখন দু’জন দু’জনকে বিশ্বাস করেন তখন কোথাও না কোথাও এই বিশ্বাসটাও থাকে যে তাঁরা একে অপরকে ছেড়ে যাবেন না। দু’জনের উপরেই প্রভাব ফেলবে এমন কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে একজন অন্যজনের ছোট-ছোট প্রয়োজন এবং ইচ্ছেগুলোকেও গুরুত্ব দেবে, থাকে এই বিশ্বাসও।

মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক তো শুধু ‘ক্ষমতা’য় সীমাবদ্ধ নয়। বন্ধুত্ব, ভালবাসা, সম্মান এই সবের কাছেই হেরে যাবে ক্ষমতার লড়াই।


স্বামী এবং বন্ধুত্ব

পাঁচবছর প্রেম করার পর দিয়া বিয়ে করে সৌরভকে। এমবিএ-র টিউশন ক্লাসে প্রথম আলাপ। তারপর দু’জনে চাকরি পেয়ে যাওয়ার পর, বিয়ে। কিন্তু সম্পর্কটা বড্ড তাড়াতাড়ি বদলে গেল। সৌরভ কর্পোরেট জগতের সিঁড়ি বেয়ে তরতর করে অনেক উঁচুতে পৌঁছে গেল। কিন্তু দিয়ার এই ইঁদুর দৌড়ের জীবন বেশিদিন ভাল লাগল না। চাকরি ছেড়ে নিজের বুটিক খুলল দিয়া। এই ব্যবসার সূত্রেই আলাপ নির্মাল্যর সঙ্গে। ও পেশায় ফোটোগ্রাফার।  কাজের সূত্রেই বন্ধুত্ব গাঢ় হয়েছে। কিন্তু কখনও কখনও দিয়ার খুব অনুশোচনা হয়। দিয়া ভাবে ও কি ঠিক করছে? স্বামীকে কি ও ঠকাচ্ছে? এই বন্ধুত্বের পরিণতিই বা কী?

জীবনের অনেক ক্ষেত্রে আমরা এই ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হই। কমিটেড রিলেশনে থেকে বিপরীত লিঙ্গের মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব নিয়ে আমাদের মধ্যে নানা টানাপড়েন কাজ করে। অনেক সময় এই বন্ধুত্বই কোনও রিলেশনে ঝগড়া, মনোমালিন্য, সন্দেহের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এইসব ক্ষেত্রে মাথা গরম না করে ঠান্ডা মাথায় ডিশিসন নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

আসলে সংসারের বাইরে ফ্রেন্ড সার্কল থাকা খুব প্রয়োজন। স্কুল কলেজের পুরনো বন্ধু, প্রতিবেশি, অফিস কোলিগ বা অন্য কেউযাঁর সঙ্গে সময় কাটাতে আপনার ভাললাগে তিনিই আপনার বন্ধু। বন্ধুত্ব সাংসারিক একঘেয়েমি থেকেও মুক্তি দেয়। বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ ঘটায়। হতেই পারে আপনার বন্ধুদের মধ্যে কেউ কেউ পুরুষ। হয়তো অন্যদের থেকে আপনারা একে অপরকে বেশি বোঝেন। একে অন্যের সমস্যাগুলো গভীরভাবে অনুভব করেন। এই সম্পর্কে অপরাধবোধের কোনও জায়গা নেই। কিন্তু এই সম্পর্ককে বন্ধুত্বের পর্যায়েই রাখুন। এমন কিছু করবেন না যা নিয়ে পরে অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়তে হয়। আপনার দাম্পত্যের প্রাইভেসির মধ্যে বন্ধুকে না ঢোকানোই ভাল। ভবিষ্যতে অশান্তি হতে পারে। বন্ধুর ব্যাপারে স্বামীকে কখনও অন্ধকারে রাখবেন না। সম্পর্কের খঁুটিনাটিতে না গিয়ে বন্ধুর ব্যাপারে ওঁকে জানিয়ে রাখুন।

• আপনার স্বামী এবং বন্ধু দুজন সম্পূর্ণ আলাদা মানুষ। দুজনেরই নির্দিষ্ট কিছু দোষগুণ রয়েছে। হয়তো আপনার স্বামীর কোনও ঘাটতি রয়েছে যা বন্ধুর মধ্যে নেই। এই গুণের জন্যে তাঁকে অ্যাডমায়ার অবশ্যই করবেন কিন্তু সেই সঙ্গে এটাও মনে রাখুন যে এর জন্যে কোনও মানুষ পুরোপুরি খারাপ হয়ে যান না। তাছাড়া স্বামীর সঙ্গে জড়িয়ে আছেন পরিবারের অন্যান্য সদস্য এবং সন্তান। নতুন বন্ধুত্বে এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারগুলো মনে রাখবেন।

• স্বামীর সঙ্গে আপনার বন্ধুর আলাপ করিয়ে দিন। হয়ত ওরাও একে অপরের বন্ধু হয়ে উঠবেন। বন্ধুর পরিবারের সঙ্গেও ভাল সম্পর্ক গড়ে তুলুন। ছুটির দিনে নিমন্ত্রণ, একসঙ্গে বেড়াতে যাওয়ার মতো অ্যাক্টিভিটি দুই পরিবারকে কাছাকাছি আনবে।

অমিল গুলো মেনে নিন – সুখে থাকুন

তাকে বোঝার চেষ্টা না করাটাই হল প্রধান বাধা। ভালবাসা চান কিন্তু তার মন, মেজাজ, রুচি কেমন সেদিকে খেয়াল রাখছেন না, এমন হলে মিল হবে না। মিলন ত দূরে! খেয়াল রাখার কাজটা মানুষ সাধারণত অভ্যাসবশে করে। অভ্যাসবশে সবটা খেয়াল করতে পারলে সেটা খুব চমৎকার, কিন্তু অভ্যাসবশে সবটা খেয়াল করা নতুন নতুন মোটেও সম্ভব না।

বিশেষ মনোযোগ আবশ্যক। কারণ নতুন নতুন সে তার মনের কথা, সব কথা গড়গড় করে আপনাকে বলে দেবে না। হয়ত একটা শব্দ বলল, তাও এমনভাবে বলল যে তা আপনার মনে কোনো দাগ কাটল না। একটু পরেই ভুলে গেলেন। এমন হলে বিপদ আছে।

যা বলছে তা গভীরভাবে মন দিয়ে উপলব্ধি করুন। সমস্যা বোঝার চেষ্টা ও ভাল লাগার বিষয়-আশয় জানার চেষ্টা থাকবে। তারপর সমস্যা সমাধানের পদক্ষেপ ও ভাল লাগায় পানি ঢালা, সার দেওয়া, ভালবাসার চারা লাগানোর কাজটা! প্রক্রিয়া লম্বাই বটে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সবাই লম্বা সময় দেয়ও বটে, কিন্তু প্রায়ই একপক্ষ মোটেও ধৈর্য ধরতে চায় না! এখানে যথেষ্ট গোল বাধে।

তার মনের কথা, সমস্যার কথা বোঝার উপায় কী?

প্রয়োজনে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বের করতে হবে! নয়ত বলবে কেন? আপনি তার কে যে আপনাকে গড়গড় করে সব বলে দেবে?

বোঝার জন্য যথেষ্ট সময় দরকার। আগ্রহ থাকবে পুরোপুরি। তবে এগোতে হবে একটু করে। তাড়াহুড়ো করলে ফল ধরার সম্ভাবনা কম।

জানতে হবে বোঝাপড়ার সীমানা।

সে যতটুকু চায় ততটুকু বোঝার চেষ্টা করা ভাল। এমনকি সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়ে গেলেও মনে রাখা ভাল সে কতটুকু আপনাকে বলতে চায়। যা বলতে চায় না তার জন্য চাপাচাপি ভাল না।

ভালবাসা মানে সবকিছু শেয়ার করা?

এ ব্যাপারে সবাই এক মত না। সুতরাং তার একান্ত কিছু বিষয় তার মধ্যেই থাকতে দেওয়া ভাল। আপনি বরং আরো ঘনিষ্ঠ, আরো বিশ্বস্ত হওয়ার চেষ্টা করুন। তাহলে একদিন হয়ত সব বলে দেবে। প্রতিটা মানুষই দেহে ও মনে আলাদা। তাহলে আপনি তার সঙ্গে শতভাগ মিল চান কোন আক্কেলে? সে আমাকে এটা বলল না, সে কেন এটা করল—এসব নিয়ে দুঃখ-মনস্তাপ না করাই ভাল। বরং কিছু অমিল মেনে নিতে পারলেই সুখের সম্ভাবনা বেশি।

সঙ্গীকে একটু ছাড় দিন এতে বাড়বে ভালোবাসা

স্বামী ও স্ত্রী অথবা প্রেমিক ও প্রেমিকা ভিন্ন দুইজন মানুষ, ভিন্ন পরিবার ও পরিবেশে তাদের বেড়ে ওঠা তাই দুইজন একে অন্যের থেকে ভিন্ন হবে এটাই খুব স্বাভাবিক। সুতরাং দুইজনের সব পছন্দ অপছন্দ মিলানো টা নেহায়েত বোকামি ছাড়া আর কিছু না। সহনশীলতার সাথে নিজের অবস্থান থেকে একে অন্যকে বোঝার চেষ্টা করাটাই শ্রেয়।

একটা মানুষ যখন জীবনের অনেকগুলো বছর তার মত করে অতিবাহিত করে একটা সময় পর প্রেম বা বিয়ে নামক একটা বন্ধনে আবদ্ধ হয়, তখন সম্পর্ক বা বিয়ের অন্তরালে অনেক সময়ই তার সঙ্গীটি তার প্রতি অতি আবেগে বা অধিকারবোধ ফলাতে গিয়ে সঙ্গীটির পরিবার ও বন্ধু-বান্ধব থেকে তাকে দূরে সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করে। কিছু ক্ষেত্রে তা সফল হয় কিছু ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয় সমস্যার। অতিরিক্ত সবকিছুই খারাপ বলে একটা প্রবাদ খুবই প্রচলিত। কথাটির সত্যতা যাচাই করার কোন অবকাশ নেই। ভালোবাসার মানুষটাকে যত্ম করা বা হারানোর একটা ভয় মানুষের মধ্যে কাজ করাটাও অস্বাভাবিক কিছু নয় তাই সঙ্গীটি কোন কোন বন্ধুর সাথে মিশছে, কোথায় কোথায় যাচ্ছে, কি কি করছে খোঁজ রাখাটা অপর সঙ্গীর কাজ হলেও তা করতে হবে অতি সুক্ষভাবে যাতে সঙ্গী কিছুতেই বুঝতে না পারে। সম্পর্ক  অনেক আবেগময় আর কিছুটা বাস্তবিক এটা মনে রাখা অত্যন্ত জরুরি।

কোন মানুষই নিখুঁত হয় না তাই সঙ্গীর দোষগুলোকে নেতিবাচকভাবে না নিয়ে ইতিবাচকভাবে নিয়ে সেগুলোর প্রশংসা করলে সঙ্গী্র ভালোলাগা থেকে সম্পর্কটাও আরো জোরালো হয়। কোন কিছুতে মতের অমিল হলে ঝগড়া না করে তার সাথে কথা বলা উচিৎ। সমাধান না হলে তার চিন্তানুযায়ী ভেবে সমাধান খুজে বের করা অথবা নিজেকে তার মত করে কিছুটা মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলে অনেক ক্ষেত্রেই সেটার ফলাফল ভালো হয়।

সঙ্গীদের পরস্পরকে এবং পরস্পরের পরিবারকে জানার ও বোঝার চেষ্টা করতে হবে। সঙ্গীকে নিজের কাছে আগলে না রেখে তার পরিবারের সাথে সময় কাটানোর মত সুযোগ দিতে হবে। এতে পরস্পরের প্রতি পরস্পরের শ্রদ্ধার সাথে সাথে বাড়বে ভালোবাসাটাও। বর্তমান প্রতিযোগিতার সময়ে মানুষ তার ক্যারিয়ার নিয়ে অনেক বেশি সচেতন। সুন্দর একটা ভবিষ্যত স্বপ্নকে ঘিরে অনেকেই অতি ব্যস্ততায় দিন যাপন করছে। তাই সঙ্গীকে কাঙ্খিত পর্যাপ্ত সময় দিতে ব্যর্থ হওয়ায় সঙ্গীর অনেক অভিমান ও অভিযোগের জন্ম নেয়। এমতাবস্থায় একটু বোঝা উচিৎ যে সঙ্গী যা করছে তা তাদের ভালোর জন্যই করছে। অভিযোগের পরিবর্তে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে ব্যাপারটা হয় আরও সুখময়। অপরদিকে সঙ্গীরও উচিৎ তার ব্যস্ততার মাঝে একটু সময় বের করে তার সঙ্গীটিকে সময় দেয়া।

ছোটখাট এইসব ছাড়ের মাধ্যমেই ভালোবাসার গভীরতা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। ভালোবাসার মানুষটার প্রতি অতি আবেগ ও যত্ম থেকে তৈরি হয় এক প্রকারের দ্বায়বদ্ধতা যা অনেক সময় ধংসাত্মকও হতে পারে। সব মানুষের নিজেস্ব যে একটা পরিসর থাকে তাতে তাকে একটু ছেড়ে দিলে স্বস্তির সাথে সাথে বাড়বে আপনার প্রতি তার মুল্যবোধও। যেমন সঙ্গীর কোন সময় ইচ্ছে হতেই পারে কিছুটা সময় একা থাকার। ফোন বা যোগাযোগ মাধ্যম থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখার। এতে রাগ না করে জোরপূর্বক আদায় না করে তাকে একটু সময় দিন। দেখবেন সম্পর্কের দ্বায়বদ্ধতা মধুরতায় পরিণত হবে। আবার কোন কারণে আপনার সঙ্গীর মেজাজ খারাপ থাকলে সেক্ষেত্রে তাকে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করুন নয়তো চুপ থেকে তাকে নিজেকে সামলানোর সময় দিন। মেজাজ ঠান্ডা হলে সে নিজেই আপনার সাথে স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

মানুষ মাত্রই ভুল করবে আর সেটা শোধরানোর দায়িত্বও সঙ্গীর কিন্তু সেটা কখনোই কারো সামনে করে তাকে অপমান করা যাবে না। এতে নিজেদের বোঝাপড়ায় ফাটল তৈরি হবে। আরও কিছু ব্যাপার যেমন মাঝে মাঝে সঙ্গীকে খুশি করার জন্য তাকে দেখতে ভালো না লাগলেও সেটা প্রকাশ না করে প্রয়োজনে তাকে সুন্দর লাগার মিথ্যা প্রশংসা করে তাকে ভালো অনুভূতি দিতে পারেন। কোন বিশেষ দিন ভুলে যাওয়া কখনোই কারো ভালবাসার মাপকাঠি হতে পারে না তাই সেগুলো ধরে না রেখে তাকে সেটা মনে করে দিয়ে নিজেই সেটা উদযাপন করা শুরু করুন দেখবেন সঙ্গীটিরও ধীরে ধীরে তা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে।

একজন চমৎকার স্বামী হতে কি লাগে !

সম্পর্ক তো সবারই হয়, কিন্তু সেই সম্পর্কে মধুরতা আছে কতজনের? এই মধুরতা নিজ থেকে আসে না, এই মধুরতা কেবল স্ত্রীর চেষ্টা থেকেও আসে না। বরং সুখের দাম্পত্য গড়ে তুলতে অনেক ক্ষেত্রেই স্বামীর ভূমিকা স্ত্রীর চাইতে বেশি।  স্বামী কেবল নিজেকে অর্থ উপার্জনের মেশিন ভাবলেই চলবে না, বরং স্ত্রী ও সংসারে দিতে হবে সমান মনোযোগ। আজকাল অসংখ্য নারী চাকরি বা ব্যবসা করেন, কর্মজীবনে ব্যস্ততা তাদেরও আছে।  তাই কর্মজীবনের বাহানায় স্ত্রীকে অবহেলা করার দিন ফুরিয়েছে।

আপনাকে নিয়ে স্ত্রীর অভিযোগের শেষ নেই? কিংবা সংসারে শান্তি রক্ষা করতে চান সবসময়ে? এই ফিচারটি তবে আপনারই জন্য! জেনে নিন কিছু দারুণ টিপস।

পরিকল্পনা করুনঃ বিয়ে হয়ে গেছে, ছেলে পুলে হয়ে গেছে, তাই বলে ফুরিয়ে গেছে দাম্পত্য? একদমই নয়। বরং এখনই সম্পর্কের পেছনে অধিক সময় দিতে হবে। স্ত্রী এমন কেউ নয় যে চিরকাল আপনার সাথে থাকতে বাধ্য। ভালোবাসা ও যত্ন না পেলে তার মনও অন্যদিকে চলে যেতেই পারে, তাই না? তাই কেবল জীবন নিয়ে পরিকল্পনা না করে সম্পর্ক নিয়েই করুন। কীভাবে দুজনে ভালো সময় কাটাবেন, কোথায় বেড়াতে যাবেন, কী উপহার দেবেন, কী বলবেন ইত্যাদি নিয়ে ভাবাও জরুরী। কারণ আমরা তাঁকে নিয়েই ভাবি, যে আমাদের জন্যে বিশেষ।

প্রতিদিন জানুনসম্পর্কের একটা ভিত্তি থাকে। আর সেই ভিত্তি হচ্ছে ভালোবাসা। তাই প্রতিদিন সেই ভালোবাসার ভিত্তি স্পর্শ করুন। তাঁকে জানান যে ভালোবাসেন। তার সাথে কথা বলুন। তিনি কেমন আছেন জানতে চান। নিজের কোথাও তাঁকে জানান।

সংসারের দায়িত্বে আপনার ভূমিকা কী? সংসার স্ত্রীর একার নয়, আপনারও। সমস্ত বড় সিদ্ধান্তগুলো দুজনে একসাথে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিন। যেসব ব্যাপারে আপনি একাই সিদ্ধান্ত নিতেন, সেগুলোতে স্ত্রীকে ডাকুন। যেসব কাজ স্ত্রী একাই করেন, সেগুলোতে আপনি সাহায্য করুন।

বুঝতে শিখুন একটি বিশেষ ব্যাপার : মানুষ কোন মেশিন নয় যে আজীবন একই রকম চলবে। মাঝে মাঝে সকল মানুষেরই একটু বিশ্রাম দরকার হয়, রোজকার জীবন থেকে একটু ব্রেকের প্রয়োজন হয়। এই ব্রেক আমাদেরকে সম্পর্ক পরিচালনা করতে উজ্জীবিত করে থাকে। তাই, নিজের যখন অবসর চাই বুঝতে শিখুন। সঙ্গী কখন অবসর চাইছে সেটাও বুঝে নিন আর সেই সময়ে তাঁকে একটু নিজের মত থাকতে দিন।

কৃতজ্ঞতা প্রকাশে কেউ ছোট হয় না :  তিনি আপনার জীবনে আছে বলেই জীবন সুন্দর, সংসার সুন্দর, আপনার জীবন চমৎকার ভাবে চলছে। বিষয়টি যদি এমন হয়ে থাকে তবে কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুলবেন না। ভালোবাসার মানুষকে যত ধন্যবাদ জানাবেন, সম্পর্ক তত সুন্দর হতে উঠবে।

কিছু নিয়ম জরুরী: রোজকার কাজে কিছু নিয়ম মেনে চলাই উচিৎ। যেমন ধরুন, শাওয়ার শেষে টাওয়েল আপনি বিছানাতেই ফেলে রাখেন। কী দরকার বলুন তো? একটু কষ্ট করে বারান্দায় মেলে দিন কিংবা নিজের জুতগুলো গুছিয়ে রাখুন।

কীভাবে আপনাদের সংসার চলবে সেই বিষয়ে কিছু নিয়ম দুজনে একসাথে বসে তৈরি করে নিন আর সেগুলো মেনে চলুন। অনেক সমস্যাই সহজ হয়ে যাবে।

একজন চমৎকার স্বামী হয়ে ওঠার চর্চাটি প্রতিদিনের, একদিন দুদিনে তা ফুরিয়ে যায় না। তাই প্রতিদিন করুন সম্পর্কের চর্চা।