সম্পর্ক বাঁচাতে প্রয়োজন বোঝাপড়া

সম্পর্ক গুলোকে বুঝতে হলে মানুষটার অভিমানের ভাষা গুলো বুঝতে হবে। কেউ যদি রাতে না খেয়ে বলে খিদে নেই তাহলে নিজে একা খেয়ে বাতি বন্ধ করে ঘুমিয়ে যাবার অর্থ হল আপনি তার অভিমানের ভাষা বোঝেননি। সে হয়ত ভেবেছিল , তার খিদে নেই শুনে আপনি তার প্রতি একটু মনোযোগী হবে। সে হয়ত চেয়েছিল আজ আপনি তাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিবেন। সে এমন ভাবে বলেছে ‘আমি তোমাকে বুঝতে চাই’ যার সারমর্ম হল, সে আসলে আপনাকে বুঝতে চায় না।

প্রতিউত্তরে আপনি অসংখ্যবার বলে গেছেন, ‘তুমি তাকে বুঝতে চাও না’ এই যে তুমি তাকে বুঝতে চাও না,ব্যাকটির শেষ শব্দের এই ‘ না’ টা সে আসলেই বুঝে উঠতে পারেনি। সে জানলোই না, এই ‘ না’ এর ভেতরে কত লাইন অভিমান আর আক্ষেপ ছিল। আপনাকে একটু খেয়াল রাখতে হবে আপনার কতটুকু সে মেনে নিয়েছে আর কতটুকু মন থেকে নিয়েছে। মেনে নিতে নিতে এক সময় দেখবেন মানুষটা শুধুই মেনে নিচ্ছে, এর হৃদয়ে আর কোন ‘মন’ অবশিষ্ট নেই।

সম্পর্কে যাবার আগে আপনি হয়ত একটা মোহে ছিলেন, তার সব কিছুই ভাললাগা টাইপ একটা ঐশ্বরিক ব্যাপার। সম্পর্কে আসার আগে আপনাকে এইটুকু পার্থক্য বুঝতেই হবে, প্রেম এবং ভালোবাসা এক জিনিস না। প্রেম অনেকটা চঞ্চল প্রকৃতির। একটা সাদামাটা গানের লাইনে হেলুসিনেশন চলে আসে। প্রেমের রসয়ানে পাগলামি আছে। একটা পাগল মানুষের ভেতরে ঢুকে মানুষটাকে দিয়ে সারারাত প্রিয়তমার বাসার সামনে দাঁড় করিয়ে রাখে। সব থেকে সাংঘাতিক ব্যাপার হল, প্রেম অনেক সময় ভালো না বাসলেও ভালোবাসার চেষ্টা করে!

ভালোবাসা স্থির। সে মানুষটার সমস্ত দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয়। সে টিনএইজের প্রথম প্রেমের মত পাগলামি করে না; তবে সে পাগলের মতই ভালোবাসে।’ আমি তোমাকে ভালোবাসি’ এটা আসলে বলবার বিষয় না। ভন্ড এবং প্রতারকরাও বলে, বরংচ বেশিই বলে। এটা করে দেখাতে হয়। সম্পর্ক গুলো কেমন হবার কথা ছিল সেটা আমাদের চোখের দিকে তাকালেই আঁচ করা যায়।

অমিল গুলো মেনে নিন – সুখে থাকুন

তাকে বোঝার চেষ্টা না করাটাই হল প্রধান বাধা। ভালবাসা চান কিন্তু তার মন, মেজাজ, রুচি কেমন সেদিকে খেয়াল রাখছেন না, এমন হলে মিল হবে না। মিলন ত দূরে! খেয়াল রাখার কাজটা মানুষ সাধারণত অভ্যাসবশে করে। অভ্যাসবশে সবটা খেয়াল করতে পারলে সেটা খুব চমৎকার, কিন্তু অভ্যাসবশে সবটা খেয়াল করা নতুন নতুন মোটেও সম্ভব না।

বিশেষ মনোযোগ আবশ্যক। কারণ নতুন নতুন সে তার মনের কথা, সব কথা গড়গড় করে আপনাকে বলে দেবে না। হয়ত একটা শব্দ বলল, তাও এমনভাবে বলল যে তা আপনার মনে কোনো দাগ কাটল না। একটু পরেই ভুলে গেলেন। এমন হলে বিপদ আছে।

যা বলছে তা গভীরভাবে মন দিয়ে উপলব্ধি করুন। সমস্যা বোঝার চেষ্টা ও ভাল লাগার বিষয়-আশয় জানার চেষ্টা থাকবে। তারপর সমস্যা সমাধানের পদক্ষেপ ও ভাল লাগায় পানি ঢালা, সার দেওয়া, ভালবাসার চারা লাগানোর কাজটা! প্রক্রিয়া লম্বাই বটে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সবাই লম্বা সময় দেয়ও বটে, কিন্তু প্রায়ই একপক্ষ মোটেও ধৈর্য ধরতে চায় না! এখানে যথেষ্ট গোল বাধে।

তার মনের কথা, সমস্যার কথা বোঝার উপায় কী?

প্রয়োজনে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বের করতে হবে! নয়ত বলবে কেন? আপনি তার কে যে আপনাকে গড়গড় করে সব বলে দেবে?

বোঝার জন্য যথেষ্ট সময় দরকার। আগ্রহ থাকবে পুরোপুরি। তবে এগোতে হবে একটু করে। তাড়াহুড়ো করলে ফল ধরার সম্ভাবনা কম।

জানতে হবে বোঝাপড়ার সীমানা।

সে যতটুকু চায় ততটুকু বোঝার চেষ্টা করা ভাল। এমনকি সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়ে গেলেও মনে রাখা ভাল সে কতটুকু আপনাকে বলতে চায়। যা বলতে চায় না তার জন্য চাপাচাপি ভাল না।

ভালবাসা মানে সবকিছু শেয়ার করা?

এ ব্যাপারে সবাই এক মত না। সুতরাং তার একান্ত কিছু বিষয় তার মধ্যেই থাকতে দেওয়া ভাল। আপনি বরং আরো ঘনিষ্ঠ, আরো বিশ্বস্ত হওয়ার চেষ্টা করুন। তাহলে একদিন হয়ত সব বলে দেবে। প্রতিটা মানুষই দেহে ও মনে আলাদা। তাহলে আপনি তার সঙ্গে শতভাগ মিল চান কোন আক্কেলে? সে আমাকে এটা বলল না, সে কেন এটা করল—এসব নিয়ে দুঃখ-মনস্তাপ না করাই ভাল। বরং কিছু অমিল মেনে নিতে পারলেই সুখের সম্ভাবনা বেশি।