বিয়ের পর অ্যডজাস্টমেন্ট

বিয়ের পর জীবনের একটা সম্পূর্ণ নতুন পর্ব শুরু হয়। জীবনে নতুন মানুষটি ও তার পরিবারের সঙ্গে মানিয়ে থাকার সূত্রপাতও এখন থেকেই। নতুন কিছুর সঙ্গে মানিয়ে নিতে সময় লাগে বই কী! অনেকে হিমশিম খেয়ে দিশেহারাও হয়ে পড়েন। তাঁদের জন্য রইল অ্যাডজাস্টমেন্ট সম্পর্কে কয়েকটি জরুরি টিপস।

অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ হোক বা লাভ ম্যারেজ বিয়ের পর সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগে বই কী! নতুন শ্বশুরবাড়ি আর নিজের ছোটছোট অভ্যাস, ইচ্ছে, পছন্দ, এই দুয়ের মধ্যে সেতু তৈরি করতে গিয়ে অনেকেই একটু সমস্যায় পড়ে যান। তবে একটু অ্যাডজাস্টমেন্ট আর বুদ্ধি করে চললে দেখবেন সহজেই অ্যাডপ্ট করে নিতে পারছেন।

বিয়ের পর টাইম ম্যানেজমেন্ট একটা বড় চ্যালেঞ্জ। শ্বশুরবাড়ি এবং বাপের বাড়ির মধ্যে ব্যালেন্স করে চলুন। বিয়ের পরপর কিছুদিন একে ওপরকে সময় দেওয়া খুব জরুরি। তা লাভ ম্যারেজ বা অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ যাই হোক না কেন। নতুন সম্পর্কের ভিত দৃঢ় করতে  এবং এতে ওপরকে আরও ভাল ভাবে চিনে নেওয়ার জন্য এই সময়টা খুব জরুরি। তাই বলে বিয়ের পর হ্যজব্যান্ড যদি কোনও একটা উইকঅনেড ওঁর বন্ধুদের সঙ্গে কাটাতে চায় তাতে বাধা দেবেন না। দেখুন, সোশাল লাইফ তো আপনাদের দু’জনেরই আছে। বিয়ে হয়ে গিয়েছে মানেই সব কিছু বদলে গেল এমন তো নয়। কখনও কখনও টাইম বের করে আপনিও আপনার বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে ঘুরে আসুন।

একসঙ্গে থাকতে গেলে দাম্পত্যে নানারকম সমস্যা আসতে পারে। মনে রাখবেন, আপনার স্বামী বা স্ত্রী আপনার থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন একজন মানুষ। তাই তাঁর বেড়ে ওঠা, পরিবার, রুচিবোধ, ধ্যানধারণা, অভ্যাসগুলো আপনার থেকে আলাদা হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাই তাঁকে তাঁর মতো করেই গ্রহণ করুন। নিজেদের মধ্যে সমস্যা হলে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে আসুন। নিজের মত চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। সঙ্গীর দিকটাও বোঝার চেষ্টা করুন।

বিয়ের পর নতুন সংসারে কিছু দায়িত্ব নিন। সংসারের কাজে সবাই হাত লাগলে, ফ্যামিলি বন্ডিংও  দৃঢ় হয়। যদি আপনি স্বামীর সঙ্গে একা থাকেন তাহলে কে কী কাজ করবেন নিজেদের মধ্যে ঠিক করে নিন। দু’জনের সংসারে দায়িত্ব তো দু’জনের উপরই বর্তায়। যেমন ধরুন, উইকএন্ডে ঘর সাফ করার প্ল্যান হলে ঠিক করে নিন কে কোনটা করবেন। কিংবা একসঙ্গেও কোনও একটা কাজ করতে পারেন। একে অপরকে সাহায্য করুন। হালকা মিউজ়িক চালিয়ে গল্প করতে করতে কাজ করে করুন। দেখবেন এতে আপনারা কাজটাকে এনজয় করবেন।

নিজেরদের মধ্যে রোম্যান্স বজায় রাখুন। রোজ দেখা হওয়ায় কাছের মানুষ অনেকটা চেনা হয়ে যায়। এটাকে বোরডম ভাববে না। বরং দেখুন প্রতিদিনই একটু একটু করে আপনারা একে অপরের সঙ্গে আরও বেশি কমফর্টেবল হয়ে উঠবেন।  মাঝে মধ্যে ডেটে যান। একে অপরকে সারপ্রাইজ় করুন। অফিস ফেরত ছোট কোনও উপহার নিয়ে যান। একসঙ্গে কোয়ালিটি টাইম কাটান। অফিসের কাজ বাড়িতে নিয়ে যাবেন না। ওই সময়টুকু একে অপরেকে দিন। ফোন বা সোশাল সাইটে সময় না কাটিয়ে নিজেরা গল্প করুন।

শ্বশুরবাড়িতে চেষ্টা করুন স্বাভাবিক থাকতে। আপনি তো এখন এই পরিবারেরই একজন, তাই আপনি যেরকম সেরকম ভাবেই থাকুন। শাশুড়িকে সব কাজে সাধ্যমত সাহায্য করুন। শাশুড়ির কাছ থেকে জেনে নিন স্বামী এবং পরিবারের সবাই কী কী খেতে ভালবাসেন। সেই ডিশগুলো হঠাৎ একদিন রান্না করে খাইয়ে সবাইকে সারপ্রাইজ় দিতে পারেন। অফিস থেকে ফিরে কিংবা ডিনার টেবলে সবাই একসঙ্গে কিছুক্ষণ সময় কাটান। সারাদিন কী হল গল্প করুন। আপনারা যদি আলাদা থাকেন তাহলে চেষ্ট করুন দিনে একবার ফোন করে খোঁজ নিতে। কখনও কখনও উইকএন্ডে একসঙ্গে বেড়াতে যান কিংবা লাঞ্চ বা ডিনার করুন। এতেই সুন্দর সম্পর্ক বজায় থাকবে।

বিয়ের আগে মানসিক প্রস্তুতি

বিয়ের বাস্তবতা উপলব্ধিঃ

বয়স ভেদে নুন্যতম ২০ বছরের জার্নি হয়তবা সারা জীবনের। তাই ভেবে চিন্তে পরিপক্ক সিদ্ধান্তে আসতে হবে আবেগে নয়। উল্লেখিত এ সময়টুকুতে আপনাকে সংসার, সন্তান পালনের দায়িত্বগুলো ধৈয্যের সাথে পালন করতে হবে । তাই ভেবে চিন্তে পরিপক্ক সিদ্ধান্তে আসতে হবে আবেগে নয়।

দায়িত্ববান হতে হবেঃ

স্বভাবের কোন নেতিবাচক দিক থাকলে সেগুলো সংশোধনের চেষ্টা করতে হবে। বিয়ের আগে পরস্পর নিজেদের সম্পর্কে খোলামেলা আলোচনা করে নিলে বিয়ের পর বোঝাপড়াটা সহজেই হয়ে যাবে।

বিয়ের আগে মানসিক প্রস্তুতি

মানিয়ে চলাঃ

দুজনকেই দুই পরিবারের সঙ্গে মানিয়ে চলার মানসিকতা থাকতে হবে এতে অনেক সমস্যা এড়িয়ে চলা সম্ভব। প্রত্যেক পরিবারের নিয়ম-কানুন, আচার-ব্যবহার ভিন্ন; তাই পরিবারিক বিষয়ে আলোচনা করে নিলে পরবর্তীতে নতুন সদস্যদের সঙ্গে মিলে মিশে চলতে সুবিধা হবে।

ধৈয্যশীল ও শ্রদ্ধাবোধঃ

ছোটখাটো বিষয় এড়িয়ে যাওয়ার ইতিবাচক মানুসিকতা রাখতে হবে। হয়ত নিজের আশানুরূপ অথবা স্বপ্নের মত সংসারে সব কিছু ঘটবে না; এ ক্ষেত্রে ধৈয্যশীল হতেই হবে। একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে।

আলোচনা ও বোঝাপড়া ভালোঃ

দাম্পত্য সম্পর্কে অমিল হবেই তাই যে কোন সমস্যায় খোলাখুলি আলোচনা করতে হবে। সম্পর্কের শুরুতে একে অপরকে বন্ধুর মত গ্রহন করতে হবে, কেবল নিজেদের চাহিদা বা প্রয়োজনে সংসার জীবন চিন্তা করলে হবে না।

আন্তরিকতা জরুরিঃ

একজন মানুষকে নতুন পরিবেশ মানিয়ে নিতে সহযোগিতা প্রয়োজন এক্ষেত্রে ছেলের ভূমিকা প্রধান। নতুন সদস্য, নিয়ম-কানুন, আচার-ব্যবহার বিষয়গুলো মানিয়ে চলা খুব সহজ কথা নয়। তাই নিজের পরিবার ছেড়ে মেয়েরা যখন নতুন পরিবারে আসে তখন নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় এ পরিস্থিতিতে ছেলের উচিত মেয়ের সাথে আন্তরিক আচরণ করা ও মানিয়ে নেয়ার বিষয়ে সহযোগিতা করা।

উচ্চাকাঙ্ক্ষী হওয়া উচিত নয়ঃ

সবার মন-মানসিকতায় পরিবর্তন জরুরি। দুই পক্ষই একে অপরকে নিয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী হবেন না। একটু সচেতন সহযোগিতা পরায়ন ও বোঝাপড়া ভালো হলে দাম্পত্য জীবন সুন্দর হতে বাধ্য।