কেমন জীবনসঙ্গী খুঁজবেন?

বিয়ে মানুষের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। নতুন জীবন শুরু করতে জীবনসঙ্গীর কিছু দিক অবশ্যই যাচাই করে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত এবং তাড়াহুড়া একেবারেই না। আসুন দেখি কোন দিক গুলো অবশ্যই বিবেচনায় আনতে হবে।

শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ

জীবনসঙ্গী খুঁজার ক্ষেত্রে অবশ্যই ব্যক্তির শিক্ষাগত যোগ্যতা আপনার কাছাকাছি বা সমপরিমাণ কিনা বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে নিবেন। অতিরিক্ত শিক্ষাগত যোগ্যতা বা কম শিক্ষা এরকম কাউকে নিয়ে ভাবেন না।

বয়সের পার্থক্যঃ

যাকে জীবনসঙ্গী বানাবেন ভাবছেন তার বয়সের সাথে আপনার বয়সের দূরত্ব কম বা বেশী না হয় এ বিষয়টি খেয়াল রাখবেন। পারিবারিক মতামতঃ যারা পারিবারিকভাবে বিয়ের জন্য জীবনসঙ্গী খুঁজছেন তারা পরিবারের মতামত বুঝে সিদ্ধান্ত নিন এতে করে পরিবারের সাথে আপনার জীবনসঙ্গীর সম্পর্ক ভালো থাকবে।

পেশাঃ

জীবনসঙ্গী বাছাইয়ে ব্যক্তির আর আপনার পেশা কি তা দেখে নিন। ভবিষ্যতে দুজন পেশাগত বিষয়ের দিকগুলো মানিয়ে নিতে পারবেন কি না এ বিষয়টি অবশ্যই খেয়ালে রাখবেন।

পারিবারিক কালচার ও আর্থিক অবস্থাঃ

পারিবারিক কালচার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দুই পরিবারেরে মধ্যে সম্পর্কের আন্তরিকতা বাড়ে বা থাকে, যদি পারিবারিক কালচারগত বিষয়ে সামঞ্জ্যসতা থাকে। দুই পরিবারের পারিবারিক আর্থিক অবস্থার সামঞ্জস্য কতটুকু এ বিষয়টি দেখুন।

ব্যক্তির আচরণঃ

যাকে জীবনসঙ্গী বানাবেন ভাবছেন শুধু তার গুনের প্রশংসা বা সৌন্দর্য না দেখে তার আচরনের প্রতিও খেয়াল রাখুন। আপনি একজন ব্যক্তির সাথে কিছুক্ষণ কথা বললেই বুজতে পারবেন তার আচরণগত কোন সমস্যা আছে কিনা বা তার কোন অভ্যাস যা আপনার পরে পছন্দ নাও হতে পারে।

দায়িত্ববান ও কর্মক্ষমঃ

একটি নতুন সংসার শুরু করতে নারী-পুরুষ দুজনের ভূমিকা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে একজন দায়িত্ববান ও কর্মিক হবেন আরেকজন উদাসীন তা হলে সংসার শুরু হবে অশান্তি দিয়ে। তাই জীবনসঙ্গী বাছাইয়ে এ গুনাবলি আছে কিনা যাচাই করে নিন।

শারীরিক বিষয়ঃ

যাকে বিয়ে করবেন তার শারীরিক গঠন আপনার সাথে মানায় কি না খেয়াল রাখুন। ব্যক্তি স্বাস্থ্যগত দিক থেকে ঠিক আছে কিনা যাচাই করে নিন।

মানসিক প্রস্তুতিঃ

যাকে বিয়ে করতে চাচ্ছেন সে কি বিয়ের জন্য মানসিকভাবে তৈরি কিনা তা বোঝার চেষ্টা করুন। যদি সে বিয়ের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকে তাহলে ভাবতে পারেন।

জীবনসঙ্গী খুঁজার ক্ষেত্রে গুণবতী,সুন্দরী বা ছেলের অবস্থান বিষয়গুলো যাচাই করা ছাড়াও অনেক বিষয় রয়েছে যা আমরা দেখা প্রয়োজন মনে করি না। ফলে বিয়ের পর সংসারের অধ্যায় শুরু হয় ঝামেলা দিয়ে। তাই জীবনসঙ্গী খোঁজার ক্ষেত্রে অবশ্যই এ বিষয়গুলো প্রত্যেকের খেয়াল রাখা উচিত।

একটা ঠিকানা চাই

স্বাধীনতা পাওয়ার পর মানুষ আবার পরাধীন হতে চায়। মানুষ যখন কারো সঙ্গী হয়ে জীবনযাপন করেন একটা সময় সে সব ছেড়ে খোলা আকাশের মুক্ত পাখি হতে চায়। আবার মানুষ যখন খোলা আকাশে মুক্ত পাখি থাকে দিন শেষে সন্ধ্যা ঘনালে সে একটা ঠিকানা চায়।

এ ঠিকানা খোঁজাটা যেন ঠিক কবি নির্মলেন্দু গুনের কবিতার মতন-

আমি বলছিনা ভালো বাসতেই হবে:

আমি চাই,

কেউ একজন আমার জন্যে অপেক্ষা করুকশুধু ঘরের ভিতর থেকে দরজা খুলে দেবার জন্য…

জীবনকে একাকিত্বের জটিলতার কাঠগড়ায় দাড় করিয়ে রাখলেও মানুষ বেশ পরাধীন হতে চায়। খুব বেশী চাওয়া-পাওয়া নয় শুধু পাশে কেউ একজন থাকুক আর তার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করুক এরকম একটা ঠিকানা চায় অনেকেই।

তেমনি কবি আব্দুল্লাহ আল মামুন তার কবিতায় সব কিছুর উর্ধে একজন মানুষকেই চেয়েছেন-

আমার একটা মানুষ চাই, মনের মত মানুষ চাইযে মানুষের মাঝে আমি, রাত-বিরাতে প্রতীক্ষণনিজেকে খুঁজে পাই ।

ভালোবাসার মানুষের সাথে বিচ্ছেদ অথবা বিয়ের পর বিচ্ছেদ মানুষকে যখন একা করে দেয়, তখন এ একাকী জীবন অতিক্রমের মধ্যে দিয়ে মানুষ পাশে কাউকে পাওয়ার প্রয়োজন অনুভব করেন। দেখা যায় অধিকাংশ বিচ্ছেদ ঘটে স্বাধীনতা না পাওয়ার অভিযোগে আবার তারাই পরাধীনতার গতিতে জীবন গড়ার ইচ্ছা অপ্রকাশিত রাখেন। স্বাধীনচেতা মানুষ সব দিক থেকে স্বাধীন হলেও একাকীত্ব তাদের জীবনে নানাভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।যেমন-

হতাশায় ভোগা, গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব, আত্মহত্যার প্রবনতা, মাদক গ্রহণ, মানসিক চাপ, জীবনের কোন অর্থ খুঁজে না পাওয়া, সমাজরোধী আচরণ, স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি যেমন স্ট্রোক / হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা।

গবেষকদের ভাষ্যমতে- একাকীত্ব এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা দুটি একেবারেই ভিন্ন বিষয়। অনেকের মাঝে থেকেও একাকীত্ব বোধ করা অথবা একা থাকতে পছন্দ করা দুই ক্ষেত্রেই বেঁচে থাকার বিষয়টি প্রভাব ফেলে। বৃদ্ধ বয়সে বেশিরভাগ মানুষ একাকীত্বে ভোগেন। তাদের মৃত্যুর আশঙ্কাও থাকে বেশি। তবে তরুণদের মধ্যে এই ধরণের মৃত্যুর আশঙ্কা বয়স্কদের তুলনায় বেশি থাকে।আরও জানা যায়, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা কিংবা নিঃসঙ্গ জীবনযাপনের ফলে ৬৫ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে অকাল মৃত্যুর প্রবণতা বেশি দেখা যায়।

বিয়ের প্রস্তাব কাকে দিবেন;কিভাবে দিবেন

বিয়ে মানুষের জীবনে নতুন এক অধ্যায়। অনেক নারী ও পুরুষ আছেন বিয়ের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিলেও যাকে ভালো লাগে তাকে প্রস্তাব দিতে সংকোচবোধ করেন। এর প্রধান কারন অযাচিত ভয়; যদি বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখান হয়!

বিয়ের প্রস্তাব দেয়া মূলত তখনই সহজ হবে যখন আপনি বিয়ের প্রস্তাব কাকে দিবেন এ বিষয়টি যাচাই করে নেন। আপনার যেমন জীবনসঙ্গিনীর বিষয়ে কিছু প্রত্যাশা রয়েছে তেমনি বিপরীত ব্যক্তির মনেও রয়েছে নিজস্ব কিছু চাহিদা ও পছন্দ।

যে বিষয়গুলো দেখে ব্যাক্তি কে বিয়ের প্রস্তাব দিবেনঃ

ব্যাক্তির শিক্ষাগত যোগ্যতা আপনার থেকে অনেক কম বা বেশী হবে এমন কারও কথা না ভাবাই ভালো।

যাকে বিয়ে করতে চাচ্ছেন, তার আর আপনার পেশা, সামাজিক অবস্থান, পারিবারিক কালচার, ভবিষ্যতে দুজন পেশাগত বিষয়ের দিকগুলো মানিয়ে নিতে পারবেন কি না। এ বিষয়টি অবশ্যই খেয়ালে রাখবেন।

দুই পরিবারের অবস্থা কতটুকু সামঞ্জস্যক তা দেখা উচিত।

আগে জানার চেষ্টা করুন তার ব্যক্তিত্ব আর আপনার ব্যক্তিত্বে মিল রয়েছে কিনা বা মিলিয়ে নেয়ার মত কিনা।

ব্যাক্তির সাথে আপনার বয়সের ব্যবধান কত।

যাকে বিয়ে করতে চাচ্ছেন সে মানসিক দিক থেকে বিয়ের জন্য প্রস্তুত আছে কি না জেনে নিন।

যাকে পছন্দ করছেন তাকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠানোর আগে তার সাথে আলোচনা করে জেনে নিন, অথবা বিশ্বস্ত কাউকে দিয়ে তার মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা বুঝার চেষ্টা করুন।

যেভাবে বিয়ের প্রস্তাব দিবেনঃ

সাক্ষাতের জন্য এমন একটি পরিবেশ বাছাই করুন অথবা তৈরি করুন যে পরিবেশে পছন্দের ব্যক্তি মানসিক ভাবে উৎফুল্ল থাকে।

সময় ও দিন নির্ধারণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেদিন আপনি ব্যক্তির সাথে দেখা করতে যাবেন সেদিনটি দুজনের ছুটির দিনটি বেঁছে নিন ও সময় বিবেচনা করে দেখা করুন, যেনো কোন তাড়াহুড়ো না থাকে।

আকর্ষণীয় উপহার দিতে পারেন অথবা সম্ভব হলে তার পছন্দ জেনে প্রিয় কিছু উপহার দিন।

তার সাথে এমন ভাবে আচরণ করুন যেন সে যতটুকু সময় আপনার সাথে থাকবে অবশ্যই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে।

আপনি তাকে পছন্দ করেন, বিয়ের কথা ভাবছেন; এ কথাটি এক লাইনে না বলে তার সাথে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি উপস্থাপন করুন, আপনি তাকে কেন বিয়ে করতে চাচ্ছেন।

বিবাহবিডিতে যাদের প্রোফাইল আছে তারা তাদের পছন্দের বিষয়গুলোকে প্রধান্য দিয়ে মুহুর্তের মধ্যেই জীবনসঙ্গী খুঁজতে পারেন। এবং সরাসরি অথবা বিবাহবিডির এক্সিকিউটিভদের মাধ্যমে প্রোপোজাল পাঠাতে পারেন।

বিবাহবিডিতে আপনি আপনার পছন্দের প্রফেশন, পাত্র-পাত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, জেলা, আর্থিক অবস্থা, বৈবাহিক অবস্থা, বর্তমান অবস্থান, বর্ন, গোত্র, ধর্ম সহ ১৮ টি সার্চ ক্যাটাগরীর মাধ্যমে চাহিদা অনুযায়ী কাংখিত সঙ্গীকে সহজেই খুঁজতে সক্ষম হবেন।

তাছাড়া আপনার প্রদত্ত সঙ্গী বাছাইয়ের বিবরন (পার্টনার প্রেফারেন্স) এর সাথে মিলিয়ে বিবাহবিডি সার্চ ইঞ্জিন স্বয়ংক্রিয় ভাবে ডাটাবেইজের সেই সব প্রোফাইল খুঁজে আপনার সামনে এক নিমিষেই হাজির করে।

সত্যি কি ভালোবাসতে শুরু করেছেন?

সম্পর্ক শুরুর প্রথম পর্যায়ে সাধারনত আমরা একটা গোলক ধাঁধার ভেতর থাকি। আমাদের মনটা কি চাইছে তা ঠিক বুঝে উঠতে পারিনা। নিজের অনুভূতিগুলো নিজের কাছেই অপরিচিত মনে হতে থাকে। আসলেই কি ভালোবাসা অনুভব করছেন নাকি শুধুই আকর্ষণ কাজ করছে, বিষয়টা অবশ্যই বুঝতে হবে তা না হলে ভুল সিদ্ধান্তের কারনে পরে কষ্ট পেতে হতে পারে। মনোবিজ্ঞানীরা ‘Focused on Heterosexual Relationships’ গবেষণার মাধ্যমে কিছু প্রশ্ন দাঁড় করিয়েছেন, যে প্রশ্নের উত্তর আপনাকে সাহায্য করবে আপনার মনের অনুভূতির সঠিক ব্যাখ্যা দিতে।

ইদানিং বিশেষ ধরনের মানুষিক চাপ অনুভব করছেন?

কারো সাথে নতুন সম্পর্কের শুরু করেছেন এতে যদি আপনার মানসিক চাপ বৃদ্ধি পেতে থাকে তবে ধরে নিতে হবে এই সম্পর্কটা ভালোবাসার সম্পর্কে রুপ নিতে পারে। কেননা চিকিৎসা বিজ্ঞানে উল্লেখ আছে মানুষ ভালোবাসলে তার স্ট্রেস হরমোন লেভেল বৃদ্ধি পায়। আপনি যদি বেশী চিন্তা করেন, বেশী অস্থির থাকেন বা একটু ঘোরে থাকেন তবে ধরে নিতে হবে আপনার স্ট্রেস হরমোন লেভেল বৃদ্ধি পেয়েছে, মানে আপনি ভালোবাসা অনুভব করছেন।

হঠাৎ নতুন কিছু করার চেষ্টা করছেন?

মানুষ যখন প্রেমে পড়ে তখন তার পছন্দের মানুষটির ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে সাধারণ চরিত্রের বাইরে নতুন ধরনের কিছু করার চেষ্টা করে। যেমন নতুন নতুন রেস্তরাঁতে নতুন ধরনের খাবার টেস্ট করা, ঘুরতে যাওয়া, তাকে মুগ্ধ করার বিভিন্ন প্রয়াসের পাশাপাশি বৈচিত্রতা আসে জীবন যাপনে ও চিন্তায় ।

সঙ্গী সম্পর্কে বেশী বেশী তথ্য সংগ্রহ করছেন?

আপনি যদি আপনার সঙ্গী সম্পর্কে অনেক বেশী কিছু জানার চেষ্টা করছেন তার মানে আপনি তার সাথে অনেক দূর যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। এটাই ভালোবাসা।

“I Love You” বলতে মনে ইচ্ছা জাগলে?

মুখে ভালোবাসি কথাটা বলতে সবার জড়তা আসে। আর যখন বোধ করবেন আপনি এই “I Love You” কথাটা বলতে কোন জড়তা বোধ করছেন না, তাহলে আপনি ভালোবাসতে শুরু করেছেন। ‘Heterosexual’ গবেষণায় বলা হয়েছে ভালোবাসি কথাটা প্রথম বলতে পুরুষরা বেশী আগ্রহী হয়।

আপনার আবেগ কি খুব বেশী তীব্র হচ্ছে?

অস্থির মনের মানুষ গুলো কোন সম্পর্কে জড়ালে এইটা নিয়ে নিজেকে বার বার প্রশ্ন করে থাকে, নিশ্চিত হবার জন্য। যারা বেশী আবেগ প্রবণ তাদের জন্য ভালোবাসার আবেগ গুলো আলাদা করাটা বেশ কঠিন হয়ে যায়। এই ধরনের আবেগপ্রবণ মানুষরা ভালোবাসতে শুরু করলে তার আবেগ তাদের আবেগ তীব্র থেকে তীব্র হয়।

আপনি যার প্রতি দুর্বল তার কাছ থেকে আপনার অনুভূতি গুলো কি ফিরে পাচ্ছেন ?

আপনি যদি একজন মেয়ে হয়ে থাকেন এবং ভালোবাসা অনুভব করে থাকেন, তবে আপনার অপর পক্ষের প্রতিক্রিয়া জানতে চেষ্টা করবেন। গবেষণায় দেখা গেছে মেয়েরা তাদের আবেগকে ছেলেদের তুলনাই বেশী নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।

আপনি কি তার সাথে সময় কাটাতে খুব বেশী আগ্রহী?

ভালোবাসা অনুভবের শুরুর দিকে আমাদের মস্তিষ্কের dopamine অংশ প্রতিক্রিয়া করে। এই অংশকে ‘প্রতিদানের অংশ’ বলে । এই প্রতিক্রিয়ার ফলে বার বার ভালোলাগার মানুষটাকে দেখতে মন চায়, তার সাথে সময় কাটাতে আগ্রহ বোধ করে। ভালোবাসার সম্পর্কের সুচনা এভাবে হয়।

স্বামী এবং বন্ধুত্ব

পাঁচবছর প্রেম করার পর দিয়া বিয়ে করে সৌরভকে। এমবিএ-র টিউশন ক্লাসে প্রথম আলাপ। তারপর দু’জনে চাকরি পেয়ে যাওয়ার পর, বিয়ে। কিন্তু সম্পর্কটা বড্ড তাড়াতাড়ি বদলে গেল। সৌরভ কর্পোরেট জগতের সিঁড়ি বেয়ে তরতর করে অনেক উঁচুতে পৌঁছে গেল। কিন্তু দিয়ার এই ইঁদুর দৌড়ের জীবন বেশিদিন ভাল লাগল না। চাকরি ছেড়ে নিজের বুটিক খুলল দিয়া। এই ব্যবসার সূত্রেই আলাপ নির্মাল্যর সঙ্গে। ও পেশায় ফোটোগ্রাফার।  কাজের সূত্রেই বন্ধুত্ব গাঢ় হয়েছে। কিন্তু কখনও কখনও দিয়ার খুব অনুশোচনা হয়। দিয়া ভাবে ও কি ঠিক করছে? স্বামীকে কি ও ঠকাচ্ছে? এই বন্ধুত্বের পরিণতিই বা কী?

জীবনের অনেক ক্ষেত্রে আমরা এই ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হই। কমিটেড রিলেশনে থেকে বিপরীত লিঙ্গের মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব নিয়ে আমাদের মধ্যে নানা টানাপড়েন কাজ করে। অনেক সময় এই বন্ধুত্বই কোনও রিলেশনে ঝগড়া, মনোমালিন্য, সন্দেহের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এইসব ক্ষেত্রে মাথা গরম না করে ঠান্ডা মাথায় ডিশিসন নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

আসলে সংসারের বাইরে ফ্রেন্ড সার্কল থাকা খুব প্রয়োজন। স্কুল কলেজের পুরনো বন্ধু, প্রতিবেশি, অফিস কোলিগ বা অন্য কেউযাঁর সঙ্গে সময় কাটাতে আপনার ভাললাগে তিনিই আপনার বন্ধু। বন্ধুত্ব সাংসারিক একঘেয়েমি থেকেও মুক্তি দেয়। বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ ঘটায়। হতেই পারে আপনার বন্ধুদের মধ্যে কেউ কেউ পুরুষ। হয়তো অন্যদের থেকে আপনারা একে অপরকে বেশি বোঝেন। একে অন্যের সমস্যাগুলো গভীরভাবে অনুভব করেন। এই সম্পর্কে অপরাধবোধের কোনও জায়গা নেই। কিন্তু এই সম্পর্ককে বন্ধুত্বের পর্যায়েই রাখুন। এমন কিছু করবেন না যা নিয়ে পরে অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়তে হয়। আপনার দাম্পত্যের প্রাইভেসির মধ্যে বন্ধুকে না ঢোকানোই ভাল। ভবিষ্যতে অশান্তি হতে পারে। বন্ধুর ব্যাপারে স্বামীকে কখনও অন্ধকারে রাখবেন না। সম্পর্কের খঁুটিনাটিতে না গিয়ে বন্ধুর ব্যাপারে ওঁকে জানিয়ে রাখুন।

• আপনার স্বামী এবং বন্ধু দুজন সম্পূর্ণ আলাদা মানুষ। দুজনেরই নির্দিষ্ট কিছু দোষগুণ রয়েছে। হয়তো আপনার স্বামীর কোনও ঘাটতি রয়েছে যা বন্ধুর মধ্যে নেই। এই গুণের জন্যে তাঁকে অ্যাডমায়ার অবশ্যই করবেন কিন্তু সেই সঙ্গে এটাও মনে রাখুন যে এর জন্যে কোনও মানুষ পুরোপুরি খারাপ হয়ে যান না। তাছাড়া স্বামীর সঙ্গে জড়িয়ে আছেন পরিবারের অন্যান্য সদস্য এবং সন্তান। নতুন বন্ধুত্বে এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারগুলো মনে রাখবেন।

• স্বামীর সঙ্গে আপনার বন্ধুর আলাপ করিয়ে দিন। হয়ত ওরাও একে অপরের বন্ধু হয়ে উঠবেন। বন্ধুর পরিবারের সঙ্গেও ভাল সম্পর্ক গড়ে তুলুন। ছুটির দিনে নিমন্ত্রণ, একসঙ্গে বেড়াতে যাওয়ার মতো অ্যাক্টিভিটি দুই পরিবারকে কাছাকাছি আনবে।

সঙ্গীর সন্তানই প্রায়োরিটি

যাঁকে মনে ধরেছে, তিনি হয়তো কারওর মা কিংবা বাবা। তা বলে প্রেমে বাধা কোথায়! প্রেমিক বা প্রেমিকার সন্তান থাকলেও দিব্যি সম্পর্ক তৈরি করতে পারেন। শুধু সন্তানকে প্রায়োরিটি দেওয়া জরুরি।

কে ভবিষ্যতের সঙ্গী হিসেবে ভেবে নিয়েছেন, হতেই পারে তিনি একটা সময়ে বিবাহিত ছিলেন! আর তিনি হয়তো এক বা দুই সন্তানের মা কিংবা বাবা।কিন্তু এসবে কি আর প্রেম আটকায়! যাঁকে মনে ধরেছে, তাঁর সঙ্গে দেখা করতে ইচ্ছে করবে, সেটা স্বাভাবিক। আর সেই ইচ্ছের সৌজন্যেই নিয়মিত ডেটিং। কফিশপে, রেস্তরাঁয়, লং ড্রাইভে…সঙ্গী সেই বিশেষ বন্ধুটি। কিন্তুটি তাঁর সন্তানকে তো অগ্রাহ্য করলে চলবে না! তিনিও তা চাইবেন না। হ্যাঁ, নিজেরা কিছুটা সময়ে একান্তে কাটাতেই পারেন। 

কিন্তু একই সঙ্গে জরুরি হল হবু সঙ্গীর সন্তানকে আপন করে নেওয়া। সন্তান-সহ কাউকে ডেট করার আগে কয়েকটা বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন। আপনি হয়তো আগ্রহী তাঁর ছেলে বা মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে! তবে উত্তেজনায় খুব তাড়াহুড়ো করে ফেলবেন না। আগে নিজেকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত করুন। সাধারণত, এই পর্যায়ে এসে ক্যাজ়ুয়াল ডেটিংয়ের ইচ্ছে আপনার সঙ্গী প্রকাশ করবেন না।তিনি যদি আপনাকে জীবনসঙ্গী নির্বাচন করবেন বলে ভাবেন, তা হলে আপনারও প্রয়োজন নিজেকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত করে তোলা। শুধুমাত্র প্রেমিক বা স্বামী নয়, সম্পর্কের অব্যবহিত পর থেকেই আপনাকে বাবা-মা বা কেয়ারগিভারের দায়িত্ব সামলাতে হবে। 

আগে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, সেই দায়িত্ব নিতে আপনি তৈরি তো! বাচ্চাটির সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলা জরুরি। একজন নতুন মানুষকে সে তার জীবনে জায়গা করে দিতে চলেছে—এর প্রতিক্রিয়া এক একটি বাচ্চার এক একরকম। তাই, ওর মনোজগৎটা বোঝা একান্ত দরকার। ডেটিংয়ের জায়গা নির্বাচনের ক্ষেত্রেও সন্তানকে প্রায়োরিটি দিতে হবে। কোনও কিড-ফ্রেন্ডলি কাফে বা পার্কে যেতে পারেন। ডেটিংয়ের যাবতীয় পরিকল্পনা শেষ মুহূর্তে বাতিলও হতে পারে! সৌজন্যে সন্তানের শরীর খারাপ বা পরীক্ষার চাপ। সেরকম পরিস্থিতির জন্যও তৈরি থাকতে হবে। সঙ্গীকে ভালবাসার অর্থ এখানে তাঁর ছেলেমেয়েকেও সমান ভাবে ভালবাসা। আর এটি সচেতন সিদ্ধান্তের মাধ্যমেই সম্ভব। উনি যদি তাঁর প্রাক্তন স্বামী বা স্ত্রীর সঙ্গে সন্তানের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কারণে যোগাযোগ রাখেন, তা হলে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবেন না। 

যদি কোনও কারণে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়, সেক্ষেত্রে সঙ্গীর সঙ্গে আলাদা করে কথা বলুন, সন্তানের সামনে নয়।সন্তানের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো আপনার সঙ্গী ও তাঁর প্রাক্তন নিতেই পারেন। কিন্তু প্রাক্তনের সঙ্গে তিনি ঠিক কতটা সম্পর্ক রাখবেন, সে ব্যাপারে পারস্পরিক সিদ্ধান্তে আসা চাই। সুত্রঃ সানন্দা

যৌনতা, বিয়ে ও সামাজিকতা

যৌনতা মানব জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। স্বীকার করুন অথবা নাই করুন জীবনে যৌনতার রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এটি মানুষসহ সকল জীবের অন্যতম চাহিদাগুলোরও একটি। একজন নারী ও পুরুষ বারো থেকে চৌদ্দ বছর বয়সপ্রাপ্ত হলেই তার যৌন চাহিদা দেখা দিতে থাকে। ফলে সে মনে মনে এই চাহিদা মেটানোর উপায় নিয়ে ভাবতে থাকে। এই চাহিদা কোন প্রক্রিয়ায় মেটানো সম্ভব? সকল সমাজ, সকল ধর্ম একটিই বৈধ ও প্রচলিত পন্থা এ ক্ষেত্রে আবিষ্কার করেছে। সেটি হচ্ছে ‘বিয়ে’। বিয়ের মাধ্যমে মানুষ তার যৌন চাহিদা পূরণ করে। সঠিক সময়ে বিয়ে করা যৌন সংক্রান্ত  কেলেঙ্কারী কিংবা দুর্ঘটনাসমূহ রোধের একটি অন্যতম উপায়। কাজেই আমাদের সমাজে বিয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বিভিন্ন দিক দিয়ে।

সভ্যতার আদি থেকেই যৌন চাহিদা মেটানোর জন্য সমাজ পতিতালয় তৈরি করেছে। সেখানে নিয়মিত যাতায়াত করেন কিছু কুরুচিপূর্ণ মানুষ। তারা  সেভাবেই শারীরিক চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু যৌনতা কি শুধু শারীরিক বিষয়? যৌনতা কি শুধু যে কোন নারী বা পুরুষের সাথে একটি নির্দিষ্ট সময় কাটিয়ে শরীর হাল্কা করা? সেটি পশুত্বের সামিল। যৌনতা মানব সৃষ্টির জন্য একটি বিশেষ কর্ম। এখানে শরীর, মন, আন্তরিকতা, পরস্পরের চাহিদা এবং এক ধরনের আত্মিক বিষয় জড়িত। এজন্যই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে গড়ে ওঠে এক গভীরতম সম্পর্ক। অথচ বিয়ের পূর্বে তাদের সাথে কোনো ধরনের পরিচয়ই হয়তো ছিল না।

যুগ ও অর্থনীতির চাহিদার কারণে আমাদের দেশ থেকে প্রচুর মানুষ বিদেশ যায়। কেউ যাচ্ছেন অর্থ উপার্জন করতে, কেউ উচ্চতর শিক্ষার জন্য। যে কারণেই  যাওয়া হোক না কেন এখানে যৌন বিষয়ে কি কোন সমাধানের কথা বলা আছে? নেই। এক বছর দুই বছর কিংবা তারচেয়েও বেশি সময় একজন পুরুষ বা একজন স্ত্রী কীভাবে নিজেদের যৌন চাহিদা মেটাবে একে অপরের অনুপস্থিতিতে? বিষয়টি বেমালুম সবাই ভুলে যান। ফলে নেমে আসে এক অশান্তি ও অবিশ্বাস। আমরা এমন ভান করি এসব ক্ষেত্রে যেন সব কিছু ঠিকঠাক আছে, স্বামী-স্ত্রী একে অপরের কাছ থেকে দূরে থাকা কোনো বিষয় নয়। বিশেষ করে যারা বিবাহিত। আর যারা বিয়ে করেনি আমরা ধরেই নিয়েছি যে, তারা একটু উল্টা-পাল্টা করবেই। এই উল্টাপাল্টা মানে এক ধরনের বিশৃংখলা। কিন্তু সবাই কেন জানি এ বিষয়টিও মেনে নিচ্ছি।

যৌনতা যাতে পশুত্বে পরিণত না হয় সেদিকে আমাদের বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে। কোনো পশু একমাত্র কুকুর ছাড়া যৌনক্রিয়া করার সময় একটু আড়াল খোঁজে, আড়ালে কাজটি সম্পাদন করে। অথচ পশ্চিমা দেশগুলোতে এবং পশ্চিমা দেশগুলোর আদলে প্রাচ্যের যেসব দেশ এগিয়ে যাচ্ছে সেসব দেশেও যৌনতা খোলামেলাভাবে প্রদর্শিত হচ্ছে, এটি কি খুব আনন্দের বিষয়? চীনেও দেখা যায় হাজার হজার লোকভর্তি ট্রেনে প্রেমিক-প্রেমিকা সবার সামনে দিবালোকে গভীর চুম্বনরত। পার্কে একটি মেয়েকে সবার সামনে কোলের ওপর বসিয়ে রেখেছে। আমি বেইজিংয়ের হোটেল রুমে বসে বসে দেখলাম রাস্তার পাশে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে ঘন্টাখানেকের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন ধরনের যৌনকাজ সম্পন্ন করল। তারপর সন্ধ্যা হয়ে এলো, পরে আর স্পস্ট দেখা গেল না। চীন এশিয়ার একটি দেশ। এটি পশ্চিমা কোনো ধনী দেশ নয়, সেখানেই এই অবস্থা আধুনিকতার নামে!  প্রকাশ্য দিবালোকে এবং সূর্য ডোবার আগে এগুলো কী হচ্ছে? আমাদের দেশের বিভিন্ন পার্কে যাবেন কম-বেশি অশ্লীল দৃশ্য চোখে পড়ে। পশ্চিমা দেশ থেকে আগত এসব কালচার কতটা আমাদের সাথে মানানসই? আমেরিকার বিভিন্ন সিটিতে ছেলেমেয়ে চলতে দেখা যায়, হাতে হাত ধরে কিংবা আরও কাছাকাছি কিন্তু সরাসরি প্রকাশ্যে যৌনতা প্রদর্শন খুব একটা চোখে পড়েনি। তবে বিষয়টি তারা সঠিক পথে পরিচালিত করছে না। আর তাই সেখানে পারিবারিক বন্ধন সাময়িক ব্যাপার, অত্যন্ত ঠুনকো। সেখানে লিভ টুগেদার প্রচলিত আর লিভ টুগেদার মানেই তো এক ধরনের বিকৃত অভ্যাস। কিছু কিছু স্টেটে প্রকাশ্যেই দেখা যায়, কোথাও হয়ত একটু রিজার্ভ। তবে কানাডাতে শপিং মলগুলোতে কিংবা রোস্তোরাঁয় প্রকাশ্যে চুম্বনের বিষয়টি প্রত্যক্ষ করেছি। কিন্তু তাদের অনুসারী দেশগুলো যেন দুই ধাপ এগিয়ে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের আগে হিলারী বলেছিলেন, তিনি নারীদের ‘গর্ভপাত’ করার আইন বহাল রাখবেন। এখানে যৌনতা ব্যাপারটি এত অবাধে চলে যে, যে কোনো সময় যে কোনো নারী গর্ভবতী হতে পারে। যেহেতু বাবার কোনো ঠিক থাকবে না কিংবা ফ্রি থাকার জন্য অসংখ্য নারী এখানে গর্ভপাত করেন। আমি দেখেছি কিছু ধর্মীয় সংগঠন এই গর্ভপাতের বিরুদ্ধে ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে  কিংবা ব্যানার টানিয়ে রেখেছে। এদের যৌন আচরণ পুরোপুরি আলাদা।

বিবাহ বিডি কল
বিবাহ বিডি কল সেন্টারঃ +৮৮ ০১৯২২১১৫৫৫৫

একটি সুখের সংসারে অবহেলিত যৌনতা মারাত্মক করুণ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। এর মূল কারণ হচ্ছে যৌনতা সম্পর্কে স্বামী কিংবা স্ত্রীর উদাসীনতা। যে সংসারে স্ত্রী তার স্বামীকে কিংবা স্বামী তার স্ত্রীর যৌনসুখ মূল্যায়ন করে না, উদাসীন থাকে সেখানেই দেখা দেয় সমস্যা। স্ত্রী সুযোগ পেলে অন্য পুরুষের এবং স্বামী সুযোগ পেলে অন্য মেয়ের সান্নিধ্য পেতে চাইবে, এটাই স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়ায় তখন। প্রথম দিকে চুপি চুপি কিছু করা হলেও পরে তা বিদ্রোহী রূপ নেয় এবং এক সময় সংসারভাঙ্গা, হত্যা ইত্যাদি পর্যন্ত গড়ায় আর সংসার যদি টিকিয়ে রাখার চেষ্টাও করা হয় তাহলে সেটি  চলে অবিশ্বাসের মধ্যে, এক ধরনের ধোঁয়াশার মধ্যে । কাজেই স্বামী স্ত্রী উভয়কেই এই বিষয়ে সজাগ ও সচেষ্ট থাকা দরকার।

যৌনতা প্রাকৃতিক বিষয়, মানুষের অত্যাবশ্যকীয় চাহিদা। এখানে শরীর ও মনের সাথে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। একটি ছাড়া অপরটি প্রকৃত সুখকর, উপভোগ্য এবং সার্থক হয় না। তাই প্রাকৃতিক নিয়মেই এটি সম্পন্ন করতে হয়। মানুষ যখন এটি অবাধে, স্বেচ্ছারিতার মনোভাব নিয়ে ভোগ করার চেষ্টা করে, বিকৃত যৌনাচারে লিপ্তা হয় প্রকৃতি তখন বিরূপ হয়। যেমন অবাধ যৌনাচার ও বহুগামিতা মানুষের জন্য মরণব্যাধি ‘এইডস’ নিয়ে এসেছে। বিশ্বের মানুষকে এক ভীতিকর অবস্থায় নিক্ষিপ্ত করেছে। এ থেকে উত্তরণের জন্য সঠিক পারিবারিক এবং বৈধ যৌনচার করার জন্য পশ্চিমা চিকিৎসকগণ তাদের দেশের মানুষদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। সুস্থ যৌনতাই এর একমাত্র সমাধান। পশ্চিমা গবেষকরা  আবিষ্কার করেছেন যে, সুস্থ যৌনচারই এইডস-এর মতো মরণব্যাধি এড়ানোর সঠিক পথ যা আমাদের সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ইদানিং সমকামিতা নামে আর এক যথেচ্ছারিতা, অবাধ ও বিকৃত যৌনাচার শুরু হয়েছে। এর ব্যাপ্তি গোটা বিশ্বে। এটি প্রকৃতিবিরোধী কাজ। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ, বিপরীত লিঙ্গের সাথে মিলন তো প্রকৃতির অবদান, প্রাকৃতিক সুখ ও তৃপ্তি সেখানে নিজেদের তৈরি নিয়ম পুরুষে-পুরুষে, নারীতে-নারীতে যৌনক্রিয়া সেটি কতবড় কুরুচির পরিচয় তা মানুষ হিসেবে আমাদের ভেবে দেখা উচিত!

যৌনতা এক তরফা বিষয় নয়। এখানে উভয়ের মতামত, ইচ্ছে, আগ্রহ এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন। একজনের ইচ্ছে, আগ্রহ বা অংশগ্রহণ এই ক্রিয়াকে সাফল্যমণ্ডিত করতে পারে না। বিষয়টি উপভোগ্যও হয় না। সঠিক যৌন তৃপ্তি ও প্রাকৃতিক চাহিদা মেটানোর জন্য দুজনকেই পালন করতে হয় সক্রিয় এবং আগ্রহী ভূমিকা। যে সংসারে  স্বামী-স্ত্রী দুজনই ব্যাপারটিতে সমভাবে আগ্রহী, সেখানে অবিশ্বাস ও হতাশা জন্ম নেওয়ার স্থান নেই। জীবন হয়ে ওঠে উপভোগ্য, আনন্দের ও সার্থক। তারা পারিবারিক, সামাজিক, ধর্মীয় যে কাজই করুক না কেন অত্যন্ত আনন্দের সাথে, তৃপ্তির সাথে এবং সার্থকভাবে তা করতে পারে। ফলে ধীরে ধীরে সাফল্যের শীর্ষে যেতে পারে। আর যে সংসারে একজন এ বিষয়ে অনাগ্রহী থাকে, উদাসীন থাকে তারা জীবন উপভোগ করতে পারে না সঠিকভাবে। মনোযোগ সহকারে কোনো কাজ করতে পারে না। জীবনকে সাফল্যের দিকে নিতে হলে স্বামী-স্ত্রীকে যৌনতা বিষয়ে সমভাবে আগ্রহী এবং সক্রিয় হতে হবে।  সুত্র ।| লেখকঃ মাছুম বিল্লাহ

শর্ত : বিয়ের পর বউ চাকরি করতে পারবে না

বিয়ের জন্য পাত্রী খোঁজা হচ্ছে। আধুনিক প্রতিষ্ঠিত ছেলেটি চান ভালো মেয়ে, সুন্দর, বনেদি পরিবার ও শিক্ষিত। আর মেয়েটি যদি মেধাবী হন, তা হলে তো ষোলোকলা পূর্ণ। তবে শর্ত একটি, বিয়ের পর বাড়ির বউ চাকরি করতে পারবে না। আধুনিকতার মুখোশের আড়ালে এমন সংকীর্ণতা অনেক পাত্র ও তাঁর পরিবারের মধ্যে দেখা যায়। কর্মক্ষেত্রে নিজের যোগ্যতায় সফল মেয়েটি অনেক সময় চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন। পরিবারের কথা ভেবে অনাকাঙ্ক্ষিত অশান্তি এড়াতে এমন সিদ্ধান্ত মেয়েরা নেন। বিয়ের পর স্বামী চান না বলে চাকরি ছেড়ে দিয়ে ঘরে বসে থাকেন অনেকেই। স্বামী বা শ্বশুরবাড়িকে খুশি করলেও নিজের ভেতরে গুমরে কেঁদে মরেন তাঁরা। নারীর ক্ষমতায়ন, আধুনিকতা ও ব্যক্তিস্বাধীনতার কথা কপচানো অনেক পুরুষই বাস্তবে কর্মজীবী স্ত্রী পছন্দ করেন না।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অরিনের বিয়ের কথা চলছে। একজনের সঙ্গে বিয়ের পাকা কথা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিয়েটা হয়নি। রুচিশীল শিক্ষিত ছেলেটিকে অরিনের ভালো লেগেছিল। কিন্তু বিয়ের তারিখ চূড়ান্ত করার আগে ছেলেটি শর্ত দিয়ে বসলেন—বিয়ের আগেই অরিনকে চাকরি ছেড়ে দিতে হবে। কেননা, তাঁর বউ চাকরি করলে লোকে নাকি ভাববে, ভরণ-পোষণ দিতে পারছেন না। এমন হাস্যকর যুক্তি মেনে না নিতে পারায় বিয়েটা শেষ পর্যন্ত ভেঙে গেল। এ বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় নাকি এখন অনেক বিয়ের কথাই বেশি দূর এগোচ্ছে না। হতাশ হয়ে অরিনের মা-বাবা মনে করেন, এই সামান্য শর্ত মানলে কী এমন ক্ষতি হতো!বিয়ের পর চাকরি ও সংসার কি একসঙ্গে সামলাতে পারবে? সন্তান হলে তাকে কাজের লোকের কাছে বড় হতে হবে। সারা দিন কাজ শেষে বউ বাড়ি ফিরবে। তখন পরিবারকে সময় দিতে চাইবে না। আর চাকরি করলে বউ বশে থাকে না। নিজের স্ত্রী চাকরি করার বিপক্ষে এসব যুক্তি দিয়েছেন বেশ কয়েকজন ছেলে। তাঁদের কেউ কেউ মনে করেন, ভালো মেয়েরা চাকরি করেন না।

ছেলেদের এসব যুক্তির সঙ্গে মেয়েরা কি একমত? ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন হুমায়রা (ছদ্মনাম)। তিনি বলেন, ‘বিয়ের পর আমি চাকরি ছেড়ে দেব। আমার সন্তান একা বড় হবে, এটি চাই না। এতে আমার ব্যক্তিস্বাধীনতা থাকবে না কিংবা ব্যক্তিত্বে প্রভাব পড়বে, এমনটি মনে করি না। সুন্দরভাবে সংসার করাও একটি শিল্প।’

তা হলে এত দূর পড়াশোনা করার কোনো মূল্যই থাকবে না! বিয়ে নামের সামাজিক বন্ধন স্বপ্ন পূরণে বাধা দেবে, এটি মানতে পারেন না নৌশিন। তিনি মনে করেন, ভালো বোঝাপড়া থাকলে সংসার ও চাকরি—দুটোই সামলানো সম্ভব। এখানে স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই ছাড় দিতে হবে। পরস্পরকে সহনশীল হলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আর যে ছেলে কোনো মেয়ের স্বপ্ন ও কাজকে শ্রদ্ধা না করবে, তিনি স্বামী হিসেবে কতটা ভালো হবেন, এ নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। হুমায়রা আর নৌশিনের বাইরেও আছেন অনেকে। তাঁদের মতে, পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর সেটা নিতে হবে মেয়েটিকেই। মেয়েটি যদি সবকিছু ঠিকঠাক সামলাতে পারে তা হলে সমস্যা কিসের!

অনেক সময় মেয়ের অভিভাবকেরাও চান, এই সামান্য ছাড় দিলে কী হয়? চাকরির জন্য সংসার টিকবে না, এটি তাঁরা মেনে নিতে পারেন না। ফলে মেয়ের মতামত গুরুত্ব পায় না তাঁদের কাছে। ব্যতিক্রমও আছেন কেউ কেউ। সরকারি কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের তিন মেয়েই কর্মজীবী। বড় দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। ছোট মেয়ের বিয়ের কথা চলছে। তিনি ভাবতেও পারেন না, তাঁর মেয়েরা কখনো চাকরি ছেড়ে দেবেন। নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মা-বাবা পাশে থাকলে মেয়েরা সব পারে। আমার তিন মেয়ে চাকরি করে। এটি কত বড় গর্বের, তা বোঝানো যাবে না। পাত্রপক্ষ কিছু বলার আগেই বড় দুই মেয়ের বিয়ের সময় আমি উল্টো শর্ত দিয়েছিলাম, বিয়ের পর মেয়েকে চাকরি করতে দিতে হবে।’

অভিভাবকদের বুঝতে হবে, মেয়ে স্বাবলম্বী হলে ভবিষ্যতে যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সামলাতে পারবেন। হতেই পারে বিয়ের পর স্বামীকে কোনো কারণে সাহায্য করতে হলো। তার চেয়ে বড় কথা, দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী ঘরে বসে না থেকে কাজ করলে পরিবার থেকে দেশ—সবার জন্যই ভালো। এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে ছেলেদেরই। চাকরিজীবী স্ত্রীকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে হবে। শুধু মুখে মুখে আধুনিক না হয়ে কাজেও দেখাতে হবে।

রাতারাতি সবার মানসিকতার পরিবর্তন হবে, এমনটা আশা করা ঠিক নয়। সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের পাশাপাশি সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তনও জরুরি। নারীর ক্ষমতায়ন জোরদার করতে হলে রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে। মনে করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। তাঁর সঙ্গে একমত বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। তিনি জানান, ছেলেদের এই মনোভাব নারীর জন্য ইতিবাচক নয়; বরং বিবাহিত জীবনেও অনেকখানি ঝুঁকি রয়ে যায়।বন্ধুত্ব থেকে বিয়ে হলেও অনেক সময় মেয়েদের এসব সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতাবোধ অন্যতম একটি কারণ। বিয়ের পর সন্তানের মা হওয়ার পর বাড়িতে কোনো লোক না থাকলে, অফিসে শিশু দিবাযত্নকেন্দ্র না থাকলে তখন সাধারণভাবে মাকেই চাকরি ছাড়ার কথা বলে সবাই।ফলে এ ধরনের পরিস্থিতি যেন তৈরি না হয়, সেই পরিবেশ বাড়ির সদস্যদের বা প্রতিষ্ঠানকে দিতে হবে।

-তৌহিদা শিরোপা

ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা বেশি নিঃসঙ্গতায় ভোগেন

চার দেয়ালের মধ্যে কেউ একা আবার কেউ চারিদিকে শত কোলাহলের মধ্যেও একা। কেউ সবার থেকে দূরে থেকে একা আবার কেউ হাজার পাওয়ার ভিড়েও একা। মানুষের এই একাকীত্ব বা নিঃসঙ্গতা একটি জটিল প্রক্রিয়া। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, নিঃসঙ্গতা মানেই একা সম্পর্ক বা একা একা হয়ে যাওয়া নয়, বরং এটি মনের এমন একটি একা উপলদ্বি যা আমাদের মনকে বাইরের সব কিছু থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এই একাকীত্ব বা নিঃসঙ্গতা যে কোন বয়সের মানুষকে গ্রাস করতে পারে। তবে সম্প্রতি এক গবেষণায় বলা হয়েছে, কিশোর বা তরুণদের চেয়ে কিশোরী বা তরুণীদের মধ্যে একাকীত্বে ভোগার আশঙ্কা বেশি থাকে।

যুক্তরাজ্যের জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা ‘অফিস অব ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকস’ এর জরিপে উঠে এসেছে, ব্রিটেনের প্রতি দশজন তরুণ বয়সীর একজন একাকীত্বে ভোগেন। গবেষণা অনুযায়ী, একাকীত্বকে ‘ব্যর্থতা’ হিসেবে ধরে নেয়া হয় বলে তরুণ বয়সীরা এটিকে ‘লজ্জাজনক’ বলে মনে করে। অনেক তরুণই নিজের একাকীত্বকে লুকানোর জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে বেছে নেয় এবং ভালো থাকার অভিনয় করে।

পরিসংখ্যান সংস্থাটির মতে, ১০ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের শতকরা ১১ ভাগ প্রায়শ:ই নিঃসঙ্গ বোধ করে এবং শতকরা ৩৪ ভাগ মাঝেমধ্যে নিঃসঙ্গ বোধ করে। আর একাকীত্বে ভুগতে থাকা এই তরুণ বয়সীদের মধ্যে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের সংখ্যাই বেশি। কী কারণে মানুষের মধ্যে একাকীত্ব বোধ তৈরি হয় – সেটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হয়েছে এই গবেষণায়।

গবেষণা অনুযায়ী, একাকীত্বে ভোগার অন্যতম প্রধান কারণ কিশোর ও তরুণ বয়সের বয়:সন্ধির সময়কালীন বিভিন্ন পরিবর্তন। প্রাথমিক স্কুল থেকে মাধ্যমিক স্কুলে ওঠার সময়, মাধ্যমিক স্তর থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ওঠার সময় এবং পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের সময় নিঃসঙ্গতা বোধ করার আশঙ্কা বাড়তে থাকে।

গবেষণায় দেখা গেছে, ছোট শহর বা গ্রামে বাস করা তরুণদের চেয়ে শহরে বেড়ে ওঠা তরুণদের নিঃসঙ্গতায় ভোগার প্রবণতা বেশি। এছাড়া আর্থিকভাবে অপেক্ষাকৃত অসচ্ছল পরিবারের তরুণদের একাকী বোধ করার আশঙ্কা বেশি থাকে। অসুস্থতা, পারিবারিক সমস্যা, প্রিয়জনের মৃত্যু বা অপমানের শিকার হলেও একাকীত্ব বোধ তৈরি হয়। আর সমাজের মানুষের কাছে একাকী হিসেবে পরিচিত হতে চাওয়ার ভয়ও মানুষকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার জালে আটকে ফেলে।

সমাজের মানুষের কাছ নিঃসঙ্গ হিসেবে পরিচিত হওয়া বিব্রতকর একটি বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়, কারণ এর ফলে মানুষ ঐ ব্যক্তিকে সামাজিকভাবে অনাকর্ষণীয় বা মানুষের অপছন্দের চরিত্র হিসেবে মনে করতে পারে। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনের সাথে যোগাযোগের অন্যতম একটি উপায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। কিন্তু অনেকেই এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে বেছে নেয় নিজের একাকীত্ব লুকানোর মাধ্যম হিসেবে। গবেষণার অংশ নেয়া অনেকের মতে, সামাজিক মাধ্যমে প্রকৃত বন্ধুত্ব নয় বরং সৌজন্যমূলক বাক্যালাপ হয়ে থাকে।

যার ফলে নিজেদের অন্যদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন মনে করে তরুণ বয়সীরা। এবছরে একাকীত্ব নিয়ে বিবিসি বিবিসি পরিচালিত এক জরিপে সারা পৃথিবী থেকে ৫৫ হাজারের বেশি মানুষ অংশ নেয় এবং জরিপে অংশ নেয়া ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের শতকরা ৪০ ভাগ প্রায়:শ বা প্রতিনিয়তই নিঃসঙ্গ বোধ করে। সুত্রঃ বিবিসি, ইত্তেফাক

সঙ্গীকে একটু ছাড় দিন এতে বাড়বে ভালোবাসা

স্বামী ও স্ত্রী অথবা প্রেমিক ও প্রেমিকা ভিন্ন দুইজন মানুষ, ভিন্ন পরিবার ও পরিবেশে তাদের বেড়ে ওঠা তাই দুইজন একে অন্যের থেকে ভিন্ন হবে এটাই খুব স্বাভাবিক। সুতরাং দুইজনের সব পছন্দ অপছন্দ মিলানো টা নেহায়েত বোকামি ছাড়া আর কিছু না। সহনশীলতার সাথে নিজের অবস্থান থেকে একে অন্যকে বোঝার চেষ্টা করাটাই শ্রেয়।

একটা মানুষ যখন জীবনের অনেকগুলো বছর তার মত করে অতিবাহিত করে একটা সময় পর প্রেম বা বিয়ে নামক একটা বন্ধনে আবদ্ধ হয়, তখন সম্পর্ক বা বিয়ের অন্তরালে অনেক সময়ই তার সঙ্গীটি তার প্রতি অতি আবেগে বা অধিকারবোধ ফলাতে গিয়ে সঙ্গীটির পরিবার ও বন্ধু-বান্ধব থেকে তাকে দূরে সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করে। কিছু ক্ষেত্রে তা সফল হয় কিছু ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয় সমস্যার। অতিরিক্ত সবকিছুই খারাপ বলে একটা প্রবাদ খুবই প্রচলিত। কথাটির সত্যতা যাচাই করার কোন অবকাশ নেই। ভালোবাসার মানুষটাকে যত্ম করা বা হারানোর একটা ভয় মানুষের মধ্যে কাজ করাটাও অস্বাভাবিক কিছু নয় তাই সঙ্গীটি কোন কোন বন্ধুর সাথে মিশছে, কোথায় কোথায় যাচ্ছে, কি কি করছে খোঁজ রাখাটা অপর সঙ্গীর কাজ হলেও তা করতে হবে অতি সুক্ষভাবে যাতে সঙ্গী কিছুতেই বুঝতে না পারে। সম্পর্ক  অনেক আবেগময় আর কিছুটা বাস্তবিক এটা মনে রাখা অত্যন্ত জরুরি।

কোন মানুষই নিখুঁত হয় না তাই সঙ্গীর দোষগুলোকে নেতিবাচকভাবে না নিয়ে ইতিবাচকভাবে নিয়ে সেগুলোর প্রশংসা করলে সঙ্গী্র ভালোলাগা থেকে সম্পর্কটাও আরো জোরালো হয়। কোন কিছুতে মতের অমিল হলে ঝগড়া না করে তার সাথে কথা বলা উচিৎ। সমাধান না হলে তার চিন্তানুযায়ী ভেবে সমাধান খুজে বের করা অথবা নিজেকে তার মত করে কিছুটা মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলে অনেক ক্ষেত্রেই সেটার ফলাফল ভালো হয়।

সঙ্গীদের পরস্পরকে এবং পরস্পরের পরিবারকে জানার ও বোঝার চেষ্টা করতে হবে। সঙ্গীকে নিজের কাছে আগলে না রেখে তার পরিবারের সাথে সময় কাটানোর মত সুযোগ দিতে হবে। এতে পরস্পরের প্রতি পরস্পরের শ্রদ্ধার সাথে সাথে বাড়বে ভালোবাসাটাও। বর্তমান প্রতিযোগিতার সময়ে মানুষ তার ক্যারিয়ার নিয়ে অনেক বেশি সচেতন। সুন্দর একটা ভবিষ্যত স্বপ্নকে ঘিরে অনেকেই অতি ব্যস্ততায় দিন যাপন করছে। তাই সঙ্গীকে কাঙ্খিত পর্যাপ্ত সময় দিতে ব্যর্থ হওয়ায় সঙ্গীর অনেক অভিমান ও অভিযোগের জন্ম নেয়। এমতাবস্থায় একটু বোঝা উচিৎ যে সঙ্গী যা করছে তা তাদের ভালোর জন্যই করছে। অভিযোগের পরিবর্তে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে ব্যাপারটা হয় আরও সুখময়। অপরদিকে সঙ্গীরও উচিৎ তার ব্যস্ততার মাঝে একটু সময় বের করে তার সঙ্গীটিকে সময় দেয়া।

ছোটখাট এইসব ছাড়ের মাধ্যমেই ভালোবাসার গভীরতা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। ভালোবাসার মানুষটার প্রতি অতি আবেগ ও যত্ম থেকে তৈরি হয় এক প্রকারের দ্বায়বদ্ধতা যা অনেক সময় ধংসাত্মকও হতে পারে। সব মানুষের নিজেস্ব যে একটা পরিসর থাকে তাতে তাকে একটু ছেড়ে দিলে স্বস্তির সাথে সাথে বাড়বে আপনার প্রতি তার মুল্যবোধও। যেমন সঙ্গীর কোন সময় ইচ্ছে হতেই পারে কিছুটা সময় একা থাকার। ফোন বা যোগাযোগ মাধ্যম থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখার। এতে রাগ না করে জোরপূর্বক আদায় না করে তাকে একটু সময় দিন। দেখবেন সম্পর্কের দ্বায়বদ্ধতা মধুরতায় পরিণত হবে। আবার কোন কারণে আপনার সঙ্গীর মেজাজ খারাপ থাকলে সেক্ষেত্রে তাকে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করুন নয়তো চুপ থেকে তাকে নিজেকে সামলানোর সময় দিন। মেজাজ ঠান্ডা হলে সে নিজেই আপনার সাথে স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

মানুষ মাত্রই ভুল করবে আর সেটা শোধরানোর দায়িত্বও সঙ্গীর কিন্তু সেটা কখনোই কারো সামনে করে তাকে অপমান করা যাবে না। এতে নিজেদের বোঝাপড়ায় ফাটল তৈরি হবে। আরও কিছু ব্যাপার যেমন মাঝে মাঝে সঙ্গীকে খুশি করার জন্য তাকে দেখতে ভালো না লাগলেও সেটা প্রকাশ না করে প্রয়োজনে তাকে সুন্দর লাগার মিথ্যা প্রশংসা করে তাকে ভালো অনুভূতি দিতে পারেন। কোন বিশেষ দিন ভুলে যাওয়া কখনোই কারো ভালবাসার মাপকাঠি হতে পারে না তাই সেগুলো ধরে না রেখে তাকে সেটা মনে করে দিয়ে নিজেই সেটা উদযাপন করা শুরু করুন দেখবেন সঙ্গীটিরও ধীরে ধীরে তা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে।