কোনো ভুল ছিল কি! এমন প্রশ্ন মনে উঁকি দিচ্ছে?

দ্বিধান্বিত মনের কারণে পড়াশোনা ও নিজের জীবনে যেন সময় দিতে পারছেন না দুজনে। হতাশা ভর করে সময় গুনে যাচ্ছেন ।  যেকোনো সম্পর্কের শেষের সময়টুকুতে আমরা ভেঙে পড়ি। দোষ-ত্রুটি আর ব্যর্থতাকে ধারণ করে জীবনকে অবসাদময় করে তুলি, যা আসলে ঠিক নয়। সম্পর্কচ্ছেদে মন খারাপ হতেই পারে, কিন্তু সেই মন খারাপ কখনোই দীর্ঘ সময় ধরে রাখা যাবে না। নিজের  জীবন বিকাশের জন্য সামনে পা বাড়াতে হবে। আপনি যদি নিজের মনকে বুঝতে পারেন, তাহলে যেকোনো দ্বিধা কাটিয়ে সামনে যেতে পারবেন। সম্পর্কচ্ছেদ নিয়ে বেশ কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখা উচিৎ।

দোষ-ত্রুটি নিয়ে ভাববেন নাঃ

সম্পর্কচ্ছেদের পরে আমরা সবচেয়ে বেশি ভাবি কার দোষ কিংবা কে দায়ী। মনের সঙ্গে লড়াই করে আমরা ব্যর্থতার জন্য কারণ খুঁজে বের করি। নানা কারণেই সম্পর্ক ভেঙে যেতে পারে, কিন্তু তাই বলে দোষ-ত্রুটি খুঁজে নেতিবাচক আচরণ করবেন না। দোষ-ত্রুটি মনে আসতে পারে, তা কাটিয়ে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই কিন্তু জীবন।

এগিয়ে যেতে হবেঃ

যত দিনের সম্পর্ক থাকুক না কেন, কিংবা যত গভীর সম্পর্ক থাকুক না কেন, আপনাকে এগোতেই হবে। আপনি যদি অতীতের কথা ভাবতে থাকেন, তাহলে আরও বেশি হতাশাগ্রস্ত হবেন, কষ্ট পাবেন। রাতের পর রাত জেগে অতীতের সুন্দর সময়ের কথা ভাবলে আপনি আপনার বর্তমানকে নষ্ট করবেন। বর্তমান নষ্ট হলে কি আর দারুণ ভবিষ্য তৈরির সুযোগ থাকে, বলুন।

নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া থাকতে হয়ঃ

সম্পর্কচ্ছেদ মানেই কিন্তু ব্যর্থতা নয়। নিজের মনের সঙ্গে কথা বলুন। নিজেকে বোঝার চেষ্টা করুন। এমন অবস্থায় আপনিই কিন্তু আপনার সবচেয়ে বড় সহায়। সম্পর্ক ভেঙে নিজেকে অপরাধী কিংবা দোষী ভেবে নিজেকে ছোট ভাবা ঠিক নয়। জীবনে অন্য সব সাফল্য-ব্যর্থতার মতোই সম্পর্কচ্ছেদকে ভাবুন।

ক্ষমা করতে শিখুনঃ

বিচ্ছেদের পর আমরা নিজেকে ক্ষমা করি না, নিজেই যেন নিজের শত্রু হয়ে যাই। আবার যে মানুষটিকে ভালোবাসতাম, তাকেও অপরাধী হিসেবে কল্পনা করতে থাকি, যা মোটেও ঠিক নয়। ওপাশের মানুষটিকে ক্ষমা করে, নিজের দুর্বলতা কাটিয়ে নতুন করে সামনে পা বাড়াতে শিখুন।

নিজের পায়ের ওপর দাঁড়াতে শিখুনঃ

বিচ্ছেদের পরে নিজেকে একাকী ভাবা শুরু করি আমরা। বন্ধুবান্ধব ও পরিবার থেকেও বেশ দূরে সরে যাই। এ সময়টায় নিজেকে নতুন করে চেনার চেষ্টা করুন। অতীতের গোলকধাঁধায় নিজেকে আটকে রাখবেন না। নিজের পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করুন।

নিজেকে শ্রদ্ধা করুনঃ

সম্পর্ক বিচ্ছেদের পরে নিজেকে ছোট আর দুর্বল মনে হয়। এটা কখনো ভাববেন না। জীবনে ব্যর্থতা আসবেই, নিজেকে কখনো অসম্মান করবেন না।

দৃঢ় চিন্তা করতে শিখুনঃ

সম্পর্ক থাকাকালীন ভবিষ্যৎ নিয়ে ইতিবাচক ভাবনা ভাবি আমরা, আর বিচ্ছেদ হলেই বিরহ। সম্পর্কের সমীকরণ ভেঙে গেলেও চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন আনবেন না। সব সময় ইতিবাচক ও সৃজনশীল ভাবনায় মনকে ব্যস্ত রাখুন।

বিয়েতে ভয়, আপনার গ্যামোফোবিয়া তো নয়!

কৈশোরে কিংবা তারুণ্যে বন্ধুদের সাথে আড্ডায় হয়তো অনেকেই বিয়ের ইচ্ছা পোষণ করে থাকেন। আবার অনেকে আক্ষেপ করেও বলেন যে, ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বাবা মা বিয়ে দিচ্ছে না কিংবা তার মনের ইচ্ছা বুঝতে চাইছে না।  কিন্তু যখন সত্যিকার জীবনে বিয়ের বয়স হয়, তখন অনেক ক্ষেত্রেই বিয়ের প্রতি দেখা দেয় অনীহা। শুধু তাই নয়, দেখা যায় যে অনেক দিনের প্রেম থাকা সত্ত্বেও সম্পর্ককে বিয়ের নাম দিতে ভয় পাচ্ছেন তারা। বিয়ের জন্য যেন নিজেকে কোনো ভাবেই মানসিক ভাবে প্রস্তুত করে উঠতে পারেন না তারা।

বিয়ে করতে ভয় পাওয়ার বিষয়টিকে ‘গ্যামোফোবিয়া’ বলে।  বিয়ের কথা শুনে কিছুটা আতঙ্কিত বোধ করাটাও স্বাভাবিক।  তবে বিয়ের নাম শুনলেই যারা দৌড়ের ওপর থাকেন, তারা গ্যামোফোবিয়ায় ভুগতে পারেন।  যাদের মনে বিয়ের ভয় জেঁকে বসে এবং নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, অবশ্যই তাদেরকে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। তবে যারা বিয়ের কথা শুনে কেবল আতঙ্ক বোধ করছেন, তারা কিছুটা মানসিক জোর পেলেই বিয়েতে রাজি হবেন।

গ্যামোফোবিয়া কী? : বিয়ের বন্ধন ও স্থায়ী সম্পর্কে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার ভয়ই মূলত গ্যামোফোবিয়া।  গ্রিক শব্দ গ্যামো অর্থ বিয়ে ও ফোবিয়া মানে ভয়।   গ্যামোফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের কাছে বৈবাহিক সম্পর্ককে কখনো সরল জীবনযাপনের হুমকিস্বরূপ মনে হয়।  এছাড়াও সম্পূর্ণ নতুন একটি মানুষের সঙ্গে বসবাস ও তার পরিবার মানিয়ে চলাকেও তারা সহজভাবে নিতে পারেন না।

কারণ:  সাধারণত যেকোন ফোবিয়ার কারণ হচ্ছে বাইরের উদ্দীপক ও তার মানসিক প্রভাব।  যেমন, অতীতের আঘাতমূলক ঘটনা। আবার এ ভয় জেনেটিক কারণেও হতে পারে। অল্প বয়সে বিভিন্ন সম্পর্কজনিত জটিলতাও এই ফোবিয়ার কারণ হতে পারে।   ধারণা করা হয় বংশগতি, জিন ও মস্তিষ্কের রসায়ন এবং বাস্তব অভিজ্ঞতার সম্মিলনে ফোবিয়া তৈরি হয়।

লক্ষণ:  ভয়ের মাত্রা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়। তাই গ্যামোফোবিয়ার লক্ষণগুলোও আলাদা। যেমন—প্রচণ্ড দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ, ভয় ও আতঙ্কগ্রস্ত থাকা। অস্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস, ঘেমে যাওয়া, হৃদপিণ্ডের উর্ধ্বগতি, গলা শুকিয়ে আসা, কাঁপুনি ইত্যাদি।

প্রতিকার : বিশেষজ্ঞদের মতে, ফোবিয়ার সবচেয়ে উপযোগী চিকিৎসা হচ্ছে সম্মোহন বা হাইপোথেরাপি, মনোবিজ্ঞানির সাথে পরামর্শ (সাইকোথেরাপি) ও নিউরো-লিঙ্গুইস্টিক প্রোগ্রামিং (অবচেতন মন যদি নেতিবাচক হয়ে থাকে তবে তাকে রিপ্রোগ্রাম করবার জন্য দরকার সচেতনতার সাথে নিজস্ব উপলব্ধি, দৃষ্টিভংগী এবং আবেগ সম্পর্কে সচেতন হওয়া)।   সাইকোলজির কিছু বিশেষ টেকনিক ব্যবহার করে নিজের মনের অবচেতন প্রক্রিয়াকে গাইড করা সম্ভব।

বিয়ের ভয় কাটানোর কয়েকটি পরামর্শ জেনে নিন:

বিয়ে ফিল্ম নয়: অনেকে হলিউড বা বলিউডের চলচ্চিত্রে বড় বড় বিয়ের আয়োজন দেখে আতঙ্কিত থাকেন। মনে রাখতে হবে, বিয়ে মানে চলচ্চিত্রের দৃশ্য নয়। বাস্তব দৃষ্টিকোণ থেকে বিয়েকে দেখুন। এটি জীবনের স্বাভাবিক অংশ। অতি কাল্পনিক বা অতি জাঁকজমকের কিছু নয়। বাস্তবতা মেনে যাঁরা বিয়ের কথা ভেবেছেন, তাঁদের ভয় কেটে গেছে।

অযৌক্তিক ভীতি নয়: বিয়ে নিয়ে অনেকেই অতিরিক্ত ভয়ে থাকেন। মনে সন্দেহ তৈরি হয়। আস্থাহীনতায় ভুগতে থাকেন। বিয়ের বিরুদ্ধে যত পয়েন্ট আছে, সব এক জায়গায় করুন। এরপর সেগুলো বিশ্লেষণ করে দেখুন। একসময় মনে হবে, বিয়ের বিরুদ্ধে কারণগুলোর কোনো অর্থই নেই।

নিজের পছন্দকে গুরুত্ব দিন: অনেক সময় দেখা যায়, যার বিয়ে তাঁর খবর নেই, পাড়া–পড়শির ঘুম নেই। অনবরত বিয়ের কথা বলে মনে আতঙ্ক তৈরি করে। আপনার একাকী জীবন নিয়ে যারা বেশি উদ্বেগ দেখায়, তাদের এড়িয়ে যান। বিয়ে নিয়ে ইতিবাচক চিন্তা করুন।  মনে রাখুন, বিয়ে সম্পূর্ণ নিজের পছন্দ অনুযায়ী করা ভালো।

সঙ্গীর ওপর আস্থা রাখুন: আপনার যদি পছন্দের কেউ থাকে, তবে বিয়ে নিয়ে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন। বিয়ে সম্পর্কে কোনো ভয় থাকলে আলোচনা করে দেখতে পারেন। সহানুভূতিশীল সঙ্গী আপনার পাশে দাঁড়াবে এবং বিয়ের ভয় কাটাতে সাহায্য করবে।

নিজেকে গুছিয়ে নিন: যাঁরা বিয়ে করতে ভয় পান, তাঁরা নিজেকে আগে গোছগাছ করে বিয়ের জন্য প্রস্তুত করতে পারেন। একা কোথাও ছুটি কাটাতে যেতে পারেন। একা অনেকটা সময় কাটিয়ে সঙ্গীর অনুভব করেন কি না, বুঝতে চেষ্টা করুন। যদি একা সময় কাটানো কষ্টকর বোধ হতে থাকে, তবে বিয়ে করে ফেলুন।

স্বাভাবিক হোন: অতীতে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার বেদনা থাকতে পারে। অনেকে প্রতারণার ঘটনায় বিয়েতে বিতৃষ্ণায় ভুগতে পারেন। যদি এ ধরনের ঘটনা জীবনে থাকে, তবে বাস্তববাদী ও স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করুন। সম্পর্কসহ জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আঘাত আসতে পারে। অতীতের কষ্ট ভুলে যান, নতুন সম্ভাবনাকে ইতিবাচকভাবে মেনে নিন।

বাস্তবতা মানুন: অনেকে ভুল মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক হবে ভেবে বিয়ের দিকে যেতে ভয় পান। অপেক্ষায় সময় কাটান। অনেকে অপেক্ষা করেন বিশেষ কারও জন্য। কিন্তু মনে রাখতে হবে, কোনো মানুষ সম্পূর্ণ নিখুঁত নয়। কল্পনার ‘হিরো’ বাস্তবের সঙ্গে নাও মিলতে পারে।

উন্মুক্ত মন: যারা ইতিবাচক কথা বলে এবং যারা সংসারজীবনে সফল, তাদের কাছে কথা শুনুন। নেতিবাচক ও বাজে কথায় কান দেবেন না। নিজে ইতিবাচক থাকুন ও মন উন্মুক্ত রাখুন। আপনার মনের খোলা জানালায় শান্তির সুবাতাস বয়ে যাবে।

সূত্র : সংগৃহিত

বিয়েটা হলো মা-বাবার অমতে…

Couple-in-Loveবাড়ির সবচেয়ে ছোট, শান্ত আর চুপচাপ কলেজপড়ুয়া মেয়েটি একদিন হঠাৎ উধাও হয়ে গেলেন। খোঁজ করতে করতে তাঁর ঘরে পাওয়া গেল সাবেক গৃহশিক্ষকের লেখা একতাড়া চিঠি, যার কোনো কোনোটিতে এ রকম একটি ঘটনার পরিকল্পনার আভাস। কী ঘটেছে, তা নিয়ে আর সন্দেহ রইল না কারও। মা শয্যাশায়ী হলেন। বাবা লাইসেন্স করা বন্দুক নিয়ে চেঁচাতে লাগলেন। এমন লক্ষ্মী একটা মেয়ে এমন কাজ করতে পারে, বিশ্বাসই করলেন না বড় ভাইয়েরা। কাজেই সব দোষ গিয়ে পড়ল বেচারা গৃহশিক্ষকের ওপর। তাঁর নামে অপহরণের মামলা হলো, প্রভাব খাটিয়ে থানায় ধরে আনা হলো। কিন্তু মেয়ে সাবালক এবং স্বেচ্ছায় তাঁর সঙ্গে গেছে প্রমাণিত হওয়ায় পুলিশ তাঁকে ছেড়েও দিল। কিন্তু ভাইয়েরা ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নন। তাই একদিন রাস্তায় মেয়ের ভাইয়েরা মারধর করলেন প্রেমিকপ্রবরকে। পালিয়ে বিয়ের সাধ মিটিয়ে দেওয়ার জন্য হাত-পা প্রায় ভেঙেই দিলেন। বর্ণনা করছিলেন ঘটনার নায়ক নিজেই। ২০ বছর আগে মফস্বল শহরের বেচারা গৃহশিক্ষক আর বর্তমানের এক উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা। সে যে কী সময় গেছে! হ্যাঁ, এখন দুই পরিবারের সবাই বিষয়টা মেনে নিয়েছেন বটে, বড় ভাইয়েরা বোনজামাইকে যথেষ্ট ভালোবাসেন এখন; কিন্তু সেই মারের দাগ এখনো হাঁটুতে রয়ে গেছে।

হুট করে কাউকে না জানিয়ে পরিবারের অমতে বিয়ে করে ফেলা সেই রোমিও-জুলিয়েটের আমল থেকে শুরু করে এখনকার দিনেও ঘটছে। কখনো কখনো দুই পরিবারে এমন ঘটনার প্রতিক্রিয়া হয় ভয়াবহ। কেবল সদ্যবিবাহিত ছেলেমেয়ের ওপর তাঁরা ঝাঁপিয়ে পড়েন তা নয়, কখনো কখনো তাঁরা নিজেরাও জড়িয়ে পড়েন নানা কোন্দল, মারামারিতে—এমনকি রক্তপাতও দেখা যায় এমন ঘটনাকে কেন্দ্র করে।

বিয়ে মানে কেবল দুটি ছেলেমেয়ের নয় বরং দুটি পরিবারের বন্ধন। বিয়ের আগে-পরে দুই পরিবারের নানা অনুষ্ঠান-আচার পালনের মাধ্যমে এই সম্পর্ক রচিত হয়। তাই হুট করে না জানিয়ে বিয়েতে এই প্রথা ও স্বাভাবিকতা ব্যাহত হয়। ফলে ভালোভাবে কেউই বিষয়টি মেনে নিতে পারেন না। আর এসব ক্ষোভ আর ক্রোধ গিয়ে পড়ে সেই ছেলেমেয়ে দুটির ওপর। এক ভয়ংকর বৈরী সময় পার করতে হয় নববিবাহিত দম্পতিকে। কিন্তু এই ক্ষোভ যদি রীতিমতো জিঘাংসা আর নিষ্ঠুরতায় পরিণত হয়, তখন? সম্প্রতি পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদটি একটু মনে করিয়ে দিচ্ছি।

গত ১৮ জুন ঢাকার খিলক্ষেত থানার নিকুঞ্জ মডেল কলেজের ছাত্রী মনিরা পারভীনকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করেন নাসির হোসেন। প্রথম দিন এক বন্ধুর বাড়িতে থাকলেও পরদিন পরিবারের আশ্বাসে বাড়ি ফেরেন তাঁরা। কিন্তু বাড়ি ফেরার পরই নাসিরের বাবা, চাচা ও অন্য আত্মীয়রা চড়াও হন মনিরার ওপর। নাসিরকে অন্য একটি ঘরে আটকে রেখে প্রচণ্ড মারধর করা হয় মনিরাকে। ইট ও কাঠ দিয়েও পেটানো হয়। গুরুতর জখম মনিরা ২২ জুন মারা যান। (সূত্র: প্রথম আলো, ২৬ জুন)

আমাদের সমাজের দৃষ্টিতে ‘পালিয়ে বিয়ে করা’ অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, কিন্তু সেই অপরাধের শাস্তি কি ছেলে বা মেয়েটিকে একেবারে মেরে ফেলা? পরিবারের সম্মান কি একটা তরতাজা তরুণ প্রাণের চেয়েও বেশি হয়ে দাঁড়ায়? প্রতিবেশী দু-একটি দেশে মেয়েদের প্রায়ই শিকার হতে হয় ‘অনার কিলিং’-এর। এই অনার কিলিং মানে আর কিছু নয়, পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে দোষী মেয়েটিকে হত্যা করা। মেয়েদের প্রাণ কি এই দুনিয়ায় এতই ঠুনকো আর সস্তা?

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবা নাসরীন বলেন, সন্তানেরা যদি নাবালক হয়, তবে এই বিয়ে যে বৈধ হবে না এবং নিজের পায়ে দাঁড়ানো পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরামর্শ দিয়ে আপাতত বিষয়টা মেটানো যায়। দুই পরিবার একসঙ্গে বসে বিষয়টা মীমাংসা করতে পারে। আলোচনায় পরিবার ও পাড়ার মুরব্বিদেরও নেওয়া যায়। যদি তাঁরা সাবালক হন, তবে ধীরে-সুস্থে বিষয়টা মেনে নিয়ে কীভাবে একে সামাজিক রূপ দেওয়া যায়, তা নিয়ে আলোচনা চলতে পারে। কিন্তু সহিংস হওয়া, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা, এমনকি প্রাণে মেরে ফেলার মতো ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক ও অন্যায়। তাঁর সঙ্গে একমত জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক সালমা আলী। তিনি বলেন, মেয়ের বয়স ১৮ বছর ও ছেলের বয়স ২১ বছর হলে আইন অনুযায়ী তাঁরা বিয়ে করতে পারবেন। এটি নিয়ে অভিভাবকেরা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত না হয়ে ছেলের সম্পর্কে খোঁজখবর নিন। ছেলেটি মাদকাসক্ত, বিবাহিত ইত্যাদি সমস্যা থাকলে মেয়েকে বুঝিয়ে বলতে হবে।

 সবচেয়ে বড় কথা, বড় কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ছেলেমেয়েরা পরিবারের কারও সঙ্গে পরামর্শ বা আলোচনা না করার অর্থ হলো পরিবারে তাঁদের বন্ধুস্থানীয় কেউ না থাকা। তাই অভিভাবকদের উচিত, সন্তানের আরও কাছাকাছি যেতে চেষ্টা করা, বন্ধুর মতো সবকিছু জানতে চেষ্টা করা, যাতে সন্তান অনাকাঙ্ক্ষিত ও হঠকারী কোনো সিদ্ধান্ত হুট করে না নেয়।

লিখেছেনঃ  তানজিনা হোসেন
প্রথম প্রকাশ – দৈনিক প্রথম আলো | জুলাই ০৩, ২০১৩