কেমন জীবনসঙ্গী খুঁজবেন?

বিয়ে মানুষের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। নতুন জীবন শুরু করতে জীবনসঙ্গীর কিছু দিক অবশ্যই যাচাই করে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত এবং তাড়াহুড়া একেবারেই না। আসুন দেখি কোন দিক গুলো অবশ্যই বিবেচনায় আনতে হবে।

শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ

জীবনসঙ্গী খুঁজার ক্ষেত্রে অবশ্যই ব্যক্তির শিক্ষাগত যোগ্যতা আপনার কাছাকাছি বা সমপরিমাণ কিনা বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে নিবেন। অতিরিক্ত শিক্ষাগত যোগ্যতা বা কম শিক্ষা এরকম কাউকে নিয়ে ভাবেন না।

বয়সের পার্থক্যঃ

যাকে জীবনসঙ্গী বানাবেন ভাবছেন তার বয়সের সাথে আপনার বয়সের দূরত্ব কম বা বেশী না হয় এ বিষয়টি খেয়াল রাখবেন। পারিবারিক মতামতঃ যারা পারিবারিকভাবে বিয়ের জন্য জীবনসঙ্গী খুঁজছেন তারা পরিবারের মতামত বুঝে সিদ্ধান্ত নিন এতে করে পরিবারের সাথে আপনার জীবনসঙ্গীর সম্পর্ক ভালো থাকবে।

পেশাঃ

জীবনসঙ্গী বাছাইয়ে ব্যক্তির আর আপনার পেশা কি তা দেখে নিন। ভবিষ্যতে দুজন পেশাগত বিষয়ের দিকগুলো মানিয়ে নিতে পারবেন কি না এ বিষয়টি অবশ্যই খেয়ালে রাখবেন।

পারিবারিক কালচার ও আর্থিক অবস্থাঃ

পারিবারিক কালচার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দুই পরিবারেরে মধ্যে সম্পর্কের আন্তরিকতা বাড়ে বা থাকে, যদি পারিবারিক কালচারগত বিষয়ে সামঞ্জ্যসতা থাকে। দুই পরিবারের পারিবারিক আর্থিক অবস্থার সামঞ্জস্য কতটুকু এ বিষয়টি দেখুন।

ব্যক্তির আচরণঃ

যাকে জীবনসঙ্গী বানাবেন ভাবছেন শুধু তার গুনের প্রশংসা বা সৌন্দর্য না দেখে তার আচরনের প্রতিও খেয়াল রাখুন। আপনি একজন ব্যক্তির সাথে কিছুক্ষণ কথা বললেই বুজতে পারবেন তার আচরণগত কোন সমস্যা আছে কিনা বা তার কোন অভ্যাস যা আপনার পরে পছন্দ নাও হতে পারে।

দায়িত্ববান ও কর্মক্ষমঃ

একটি নতুন সংসার শুরু করতে নারী-পুরুষ দুজনের ভূমিকা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে একজন দায়িত্ববান ও কর্মিক হবেন আরেকজন উদাসীন তা হলে সংসার শুরু হবে অশান্তি দিয়ে। তাই জীবনসঙ্গী বাছাইয়ে এ গুনাবলি আছে কিনা যাচাই করে নিন।

শারীরিক বিষয়ঃ

যাকে বিয়ে করবেন তার শারীরিক গঠন আপনার সাথে মানায় কি না খেয়াল রাখুন। ব্যক্তি স্বাস্থ্যগত দিক থেকে ঠিক আছে কিনা যাচাই করে নিন।

মানসিক প্রস্তুতিঃ

যাকে বিয়ে করতে চাচ্ছেন সে কি বিয়ের জন্য মানসিকভাবে তৈরি কিনা তা বোঝার চেষ্টা করুন। যদি সে বিয়ের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকে তাহলে ভাবতে পারেন।

জীবনসঙ্গী খুঁজার ক্ষেত্রে গুণবতী,সুন্দরী বা ছেলের অবস্থান বিষয়গুলো যাচাই করা ছাড়াও অনেক বিষয় রয়েছে যা আমরা দেখা প্রয়োজন মনে করি না। ফলে বিয়ের পর সংসারের অধ্যায় শুরু হয় ঝামেলা দিয়ে। তাই জীবনসঙ্গী খোঁজার ক্ষেত্রে অবশ্যই এ বিষয়গুলো প্রত্যেকের খেয়াল রাখা উচিত।

পরিস্থিতি বুঝে সম্পর্ক

ভালোবাসা বা প্রেমের সম্পর্ক চাই খুব গোছালো আর মানুষটা তো হবে একদম নিখুঁত। একটি সম্পর্কে যাওয়ার সময় সবারই মনে থাকে রঙিন প্রত্যাশা। সাধারণত ভঙ্গুর বা এলোমেলো কারো সাথে সঙ্গী হতে চায় না কেউ। অথচ ভালোবাসার মূল্য কিন্তু এ মানুষগুলোই দিতে পারে।

যে কারনে কারো খারাপ সময়ের সঙ্গী হবেনঃ

আপনি যখন দুঃসময়ে কারো সাথে সম্পর্কে জড়াবেন তখন সে আপনাকে মিথ্যা স্বপ্ন দেখাবে না এতে করে আপনি প্রত্যাশার জালে ডুবে থাকবেন না বিধায় কষ্টও পাবেন না।

আবেগের চেয়ে বাস্তবতার উপলব্ধি উভয়ের মাঝে বিরাজ করবে যা আপনাদের সম্পর্কে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

কাউকে গড়ে নেয়ার মাঝে আলাদা একটা সুখ আছে। নিজে কিছু তৈরি করলে যেমন মনে এক ধরনের আনন্দ পাওয়া যায়।

কারো খারাপ সময়ে যদি তার সঙ্গী হতে পারেন তাহলে বন্ধুত্বের জায়গাটা সহজেই তৈরি হয়ে যায়। সম্পর্কে বন্ধুত্ব সম্পর্ক খুব জরুরী।

আপনি যখন তার দুঃসময়ে পাশে থাকবেন পরবর্তীতে আপনাকে নিয়েই তার ভালো সময় কাটাবে তাই চলার পথে হতাশ হবেন না।

স্বাভাবিক ভাবে সে আপনাকে অবিশ্বাস করতে পারে যে আপনিও হয়তো তার জীবন থেকে চলে যাবেন এমন অবস্থায় তাকে মানসিক শক্তির যোগান দিন। তাকে বলুন আপনি তার পাশে আছেন ও সারাজীবন থাকবেন।

আপনার প্রতি সঙ্গীর আস্থা বাড়াতে তাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে পারেন বা তার সাথে বেশী সময় কাটান। এতে করে ব্যাক্তি যে খারাপ সময় কাটাচ্ছে সে বিষয় থেকে তার মনোযোগের পরিবর্তন ঘটবে।

সম্পর্কে শ্রদ্ধাবোধ রাখুন। তার ভালো লাগা আর আপনার ভালো লাগার মধ্যে অমিল হতে পারে তাই ধৈর্য্য রাখুন।

কারো খারাপ সময়ে পাশে থাকার ফলে সম্পর্কের ভালো সময়গুলো আসতে সময় লাগে, ধীরে ধীরে সম্পর্কের গুরুত্ব বাড়ে। আর এ সম্পর্ক গুলো সহজে ভাঙ্গে না বরং সুখী হয়।

কারো ভালো সময়ে তার সাথে সম্পর্কে জড়ানোর চেয়ে তার খারাপ সময়ে তাকে ভালোবাসুন এতে আপনি যেমন কাউকে নতুন জীবন গড়ার সুযোগ দিচ্ছেন তেমনি এর থেকে ভালো প্রতিদান সে আপনাকে দিবে।

জর্জ চ্যাপম্যানের মতে-

‘ভালোবাসা পাওয়ার চাইতে ভালোবাসা দেওয়াতেই বেশি আনন্দ।’

একটা ঠিকানা চাই

স্বাধীনতা পাওয়ার পর মানুষ আবার পরাধীন হতে চায়। মানুষ যখন কারো সঙ্গী হয়ে জীবনযাপন করেন একটা সময় সে সব ছেড়ে খোলা আকাশের মুক্ত পাখি হতে চায়। আবার মানুষ যখন খোলা আকাশে মুক্ত পাখি থাকে দিন শেষে সন্ধ্যা ঘনালে সে একটা ঠিকানা চায়।

এ ঠিকানা খোঁজাটা যেন ঠিক কবি নির্মলেন্দু গুনের কবিতার মতন-

আমি বলছিনা ভালো বাসতেই হবে:

আমি চাই,

কেউ একজন আমার জন্যে অপেক্ষা করুকশুধু ঘরের ভিতর থেকে দরজা খুলে দেবার জন্য…

জীবনকে একাকিত্বের জটিলতার কাঠগড়ায় দাড় করিয়ে রাখলেও মানুষ বেশ পরাধীন হতে চায়। খুব বেশী চাওয়া-পাওয়া নয় শুধু পাশে কেউ একজন থাকুক আর তার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করুক এরকম একটা ঠিকানা চায় অনেকেই।

তেমনি কবি আব্দুল্লাহ আল মামুন তার কবিতায় সব কিছুর উর্ধে একজন মানুষকেই চেয়েছেন-

আমার একটা মানুষ চাই, মনের মত মানুষ চাইযে মানুষের মাঝে আমি, রাত-বিরাতে প্রতীক্ষণনিজেকে খুঁজে পাই ।

ভালোবাসার মানুষের সাথে বিচ্ছেদ অথবা বিয়ের পর বিচ্ছেদ মানুষকে যখন একা করে দেয়, তখন এ একাকী জীবন অতিক্রমের মধ্যে দিয়ে মানুষ পাশে কাউকে পাওয়ার প্রয়োজন অনুভব করেন। দেখা যায় অধিকাংশ বিচ্ছেদ ঘটে স্বাধীনতা না পাওয়ার অভিযোগে আবার তারাই পরাধীনতার গতিতে জীবন গড়ার ইচ্ছা অপ্রকাশিত রাখেন। স্বাধীনচেতা মানুষ সব দিক থেকে স্বাধীন হলেও একাকীত্ব তাদের জীবনে নানাভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।যেমন-

হতাশায় ভোগা, গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব, আত্মহত্যার প্রবনতা, মাদক গ্রহণ, মানসিক চাপ, জীবনের কোন অর্থ খুঁজে না পাওয়া, সমাজরোধী আচরণ, স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি যেমন স্ট্রোক / হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা।

গবেষকদের ভাষ্যমতে- একাকীত্ব এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা দুটি একেবারেই ভিন্ন বিষয়। অনেকের মাঝে থেকেও একাকীত্ব বোধ করা অথবা একা থাকতে পছন্দ করা দুই ক্ষেত্রেই বেঁচে থাকার বিষয়টি প্রভাব ফেলে। বৃদ্ধ বয়সে বেশিরভাগ মানুষ একাকীত্বে ভোগেন। তাদের মৃত্যুর আশঙ্কাও থাকে বেশি। তবে তরুণদের মধ্যে এই ধরণের মৃত্যুর আশঙ্কা বয়স্কদের তুলনায় বেশি থাকে।আরও জানা যায়, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা কিংবা নিঃসঙ্গ জীবনযাপনের ফলে ৬৫ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে অকাল মৃত্যুর প্রবণতা বেশি দেখা যায়।

সিদ্ধান্ত নিন ভেবে চিন্তে

দাম্পত্য জীবনে সবসময় সুন্দর পরিস্থিতি বিরাজ করে না। তবে দাম্পত্য জীবন ভালো রাখতে আপনাকে যেকয়টি গুনাবলী অর্জন করতে হবে তার মধ্যে অন্যতম হলো “সিদ্ধান্ত গ্রহন”। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, সঠিক সময়ে সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে না পারার কারনে পারস্পারিক সম্পর্ক খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়।

যে সিদ্ধান্তগুলো সম্পর্কে হিতের বিপরীতে কাজ করেঃ

মানুষ সব থেকে ভুল সিদ্ধান্ত তখনই নেয় যখন সে রাগের মাথায় সিদ্ধান্ত গ্রহন করে, তাই সিদ্ধান্ত গ্রহন করুন ঠাণ্ডা মাথায়।

মানুষ কি বলছে বা বলবে এ বিষয়টি কে পাত্তা যতই দিবেন দাম্পত্যে সম্পর্ক ততই বিগড়ে যাবে। যেমন- স্বামীর খারাপ পরিস্থিতি অথবা স্ত্রীর ভালো সাফল্য নিয়ে আশেপাশের মানুষদের বেশ গবেষণা থাকে যা পারিবারিক পরিবেশ নষ্ট করে।

বাচ্চা নেয়ার বিষয়ে সঠিক সময়ে সিদ্ধান্ত গ্রহনের সুযোগ খুঁজে পান না অনেক দম্পতি কারন একটাই পারিবারিক মুরব্বীদের চাপ ও মানুষ কি বলবে।

দাম্পত্যে বিশ্বাস বিষয়টি পরস্পর পরিষ্কার রাখুন কারন স্ত্রী বা স্বামী যখন সন্দেহ করতে থাকেন এর থেকে একটা সময় সম্পর্কের প্রতিও বিশ্বাস নষ্ট হয়ে যায় যার ফলে বিচ্ছেদ ঘনিয়ে আসতে পারে।

অতিরিক্ত ভবিষ্যৎ নিয়ে পরিকল্পনা আপনার বর্তমান পরিস্থিতিকে মানসিক ও শারীরিক চাপে রাখে ফলে আশা ক্ষুণ্ণ হয়।

দাম্পত্যে সম্পর্কে কি পেয়েছেন আর কি পাননি এসব হিসাবনিকাশ কিন্ত আপনাকে অধিক প্রত্যাশায় নিয়ে যায় ফলে সম্পর্কের খারাপ পরিস্থিতিতে আপনি সিদ্ধান্ত গ্রহনে ভুল করতে পারেন।

দাম্পত্যে জীবনের অন্যতম ভুল সিদ্ধান্ত হল স্বামী-স্ত্রী যখন অন্য দম্পতির জীবন অনুকরণ করতে চায়। ভালো থাকতে চাওয়ার ইচ্ছা ও অধিকার সবারই আছে তবে নিজেদের পরিস্থিতি বিবেচনা করে জীবন সাজানো উচিত।

দাম্পত্যে সম্পর্কে পরস্পরের প্রতি যদি আন্তরিকতা না থাকে তখন স্বার্থপর হয়ে অনেকেই পরিবারে সকল বিষয়ে এককভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে থাকেন যার ফলাফল সম্পর্ক খারাপের দিকে যায়।

দাম্পত্যে সম্পর্কে অবশ্যই স্বামী-স্ত্রী মিলে সকল পরিস্থিতির সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে চেষ্টা করুন। যদি তৃতীয় ব্যক্তির প্রয়োজন মনে করেন তাহলে আপনাদের শুভাকাঙ্ক্ষীর কাছে যান অথবা দাম্পত্যে বিষয়ক কাউন্সিলরের শরাপন্ন হন।

দাম্পত্যে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনার ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহনের কারনে স্বাভাবিক সম্পর্ক বিরুপ হতে পারে তাই যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহন করুন ভেবে চিন্তে।

দ্বিতীয় বিয়ে ও সুখী হওয়ার সম্ভাবনা!

বিয়ের পর সুখী সংসার জীবন গড়তে কে না চায়! তবে যে কোন কারনেই হোক প্রথম সংসারের ইতি ঘটে অনেকের জীবনে। সময় ও জীবন থেমে থাকেনা তবে খারাপ সময় অব্যাহত থাকে অনেকদিন, এর মধ্যে দিয়েই মানুষকে আবার বাঁচতে হয় নতুন করে। কেউ হয়তো নতুন ভাবনায় সঙ্গীহীন জীবনযাপন করেন আবার কেউ কেউ নতুন জীবনসঙ্গীর নিয়ে দাম্পত্যে জীবন শুরু করেন।

সম্প্রতি ‘হাফিংটন পোস্টে’র এক প্রতিবেদনে জানানো হয় –

দ্বিতীয় বিয়েতে নাকি সুখী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

যে সকল কারনে দ্বিতীয় বিয়েতে সুখী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছেঃ

স্বাভাবিকভাবে মানুষ পুরনো ভুল পুনরায় করেনা। তাই দ্বিতীয় বিয়েতে ব্যক্তিদের মধ্যে সংশোধন বিষয়টি তৈরি থাকে। যার ফলে দাম্পত্যে সম্পর্ক ভালো থাকে।

মানুষ সঙ্গ প্রিয় তবুও একই ছাদের নিচে নিত্য কলহ দাম্পত্যে সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটায়। দীর্ঘ সময় মানুষ যখন নিঃসঙ্গ জীবন কাটায় তখন দ্বিতীয় সম্পর্কে কলহ বিষয়টি আসলেও তারা এড়িয়ে চলেন ফলে দাম্পত্যে সম্পর্কে শান্তি বিরাজ করে।

দীর্ঘকালীন সময়ের পুরনো অভিজ্ঞতার ফলে দ্বিতীয় বিয়েতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সমঝোতার বিষয়টি বেশ স্পষ্ট থাকে যার ফলে দ্বিতীয় দাম্পত্য জীবন সুখী হয়।

প্রথম দুর্ঘটনার স্বীকার হওয়ার পর দ্বিতীয় বার জীবনসঙ্গী বাছাইয়ে ব্যক্তিদের মধ্যে আবেগ বিষয়টি নিয়ন্ত্রনে থাকে। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগণ যথেষ্ট সচেতন ও যাচাই করে জীবনসঙ্গী বেঁছে নেন। আর তাই তাদের মধ্যে আত্মীক সম্পর্ক শুরু থেকেই লক্ষ্য করা যায়।

অতীতে আস্থাহীনতায় সম্পর্ক কাটানো অভিজ্ঞতার ফলে দ্বিতীয় সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের প্রতি আনুগত্য থাকে তাই দাম্পত্য সম্পর্ক স্বাস্থ্যকর হয়।

বিয়ে প্রত্যেকটি মানুষের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় যা কেউ অস্বীকার করতে পারবেনা। সমাজ, বিয়ে ও সংসার এ সকল বিষয় নিয়েই সভ্যতা টিকে আছে। বিয়ের পর অনেকের জীবনে ঝড়ঝাপটা আসে অতঃপর ডিভোর্স হয়। তাই বলে ব্যক্তির উচিত নিজের জীবনকে অবহেলা না করে সময় নিয়ে যাচাই করে জীবনসঙ্গী খুঁজে নতুন করে বেঁচে থাকা।

প্রবাদে আছে –

বিয়ে হচ্ছে বুদ্ধিমত্তার বিরুদ্ধে কল্পনার জয়। আর দ্বিতীয় বিয়ে হচ্ছে অভিজ্ঞতার বিপক্ষে আশাবাদের জয়।

প্রপোজাল কে আগে দেবে

পছন্দের মানুষটিকে সরাসরি ভালোলাগার বিষয়টি বলতে না পারলেও কখনও কখনও মনের অভিব্যক্তি তাকে বুঝিয়ে দেয় ‘ভালোবাসি’। অভিব্যক্তির ভাষা যতই স্পষ্ট হোক সরাসরি ভালো লাগার বিষয়টি না বলতে পারার কারনে – প্রিয় মানুষটি এক সময় হারিয়ে যায়। আবার ভালো লাগার কথাটি কে আগে বলবে তা নিয়ে দুই ব্যক্তির মধ্যে কাজ করে সংকোচ।

প্রস্তাব নিয়ে সংকোচবোধ না করে যা করবেনঃ

কারো প্রতি যথেষ্ট দুর্বলতা কাজ করলেও মেয়েরা পছন্দের অনুভূতি প্রকাশে বরাবরই সংকোচের বৃত্তে আটকে থাকে। ভালো লাগা ও প্রকাশ করার অধিকার ছেলে-মেয়ে উভয়েরই আছে। তাই কে কি ভাববে না ভেবে মানুষটিকে জানিয়ে দিন তার প্রতি আপনার ভালোলাগার অনুভূতি।

প্রত্যাখান হওয়ার ভয় ব্যক্তির মানসিক চাপ বাড়ায়। ছেলে বা মেয়ে প্রত্যাখান হওয়ার ভয়ে অনেক সময় অনুভূতি প্রকাশ করতে পারেনা, যার ফলে সম্ভাব্য সম্পর্ক হয়েও আর হয়ে উঠেনা। প্রত্যাখান হওয়ার সম্ভাবনাকে ভয় না করে প্রত্যাখান স্বাভাবিক বিষয় হতেই পারেন এরকম প্রস্তুতি নিয়ে প্রস্তাব দিয়ে নিজের মানসিক অবস্থা হালকা করুন।

প্রস্তাব দেয়ার আগে ব্যক্তিকে জানুন। আপনি যেমনটা তার সম্পর্কে ভাবছেন অথবা তার মনও আপনার কথা ভাবছে এমনটা নাও হতে পারে। তাই আগে সময় নিয়ে ব্যক্তিকে জেনে ভবিষ্যত সম্পর্কের জন্য প্রস্তাব দিন।

হতে পারে ভালো লাগার মানুষটি আপনার চলার পথের বন্ধু অথবা চেনা কেউ, হয়তো বা কারো মাধ্যমে পরিচিত এ ক্ষেত্রে আপনি তার সার্বিক অবস্থা বুঝে সঠিক সময়ে প্রস্তাব দিতে পারেন। অনেক সময় দেখা যায় পরিচিত কাউকে ভালো লাগলে অনেকেই তাড়াহুড়ো করে ভালো লাগার বিষয়টি জানিয়ে ফেলেন যা একেবারেই উচিত নয়।

আবেগ নিয়ন্ত্রনে রেখে সার্বিক বিবেচনা করুন তারপর প্রস্তাব দিন। কাউকে প্রচণ্ড ভালো লাগার ফলে নিজের চাওয়া-পাওয়া অথবা নিজের ভালো থাকা বিষয়টি ভুলে যাবেন না।

প্রস্তাব দেয়ার আগেই সম্পর্কের ভবিষ্যত কি হবে বা বিয়ে হবে নাকি হবে না, এসব নিয়ে অধিক চিন্তা করবেনা। সৎ থাকুন ও ইতিবাচক দিকগুলো ভাবুন।

সম্পর্ক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ রেশমি সিনহা বলেন- ‘প্রথম প্রস্তাব দেওয়ার ক্ষেত্রে মেয়েদের বেশি চিন্তিত হতে দেখা যায়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, সাহসী ও আত্মবিশ্বাসী মেয়েকেই পুরুষ সঙ্গী বেশি পছন্দ করেন।’

অতিরিক্ত প্রত্যাশা দাম্পত্যে সম্পর্কে ইতি টানতে পারে!

প্রত্যাশা হল মানুষের কাল্পনিক ইচ্ছা। মানুষ যা অপরের কাছ থেকে অর্জন করতে চায় তাই প্রত্যাশা। দাম্পত্য সম্পর্ক নতুন হোক বা পুরনো, প্রত্যাশা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবে প্রত্যাশা স্থাপনের ক্ষেত্রে স্বামী বা স্ত্রীর বুঝতে হবে তার সঙ্গীর পক্ষে তা পূরণ করা সম্ভব বা কঠিন হবে কিনা। কেবল প্রত্যাশা থাকলেই হয়না, প্রত্যাশার বিষয়টি সম্পর্কে নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে। অধিক প্রত্যাশায় দাম্পত্যে সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে।

দাম্পত্যে সম্পর্কে প্রত্যাশার নিয়ন্ত্রণঃ

কল্পনা-

বিয়ের পূর্বে সঙ্গীকে নিয়ে যা কিছু কল্পনা করেছেন বা মনে প্রত্যাশা ছিল সংসার নিয়ে আর বিয়ের পর তার উল্টোটা দেখছেন বা কিছু অমিল রয়েছে তাই বলে সঙ্গী কে বদলানোর চেষ্টা করবেন না। সঙ্গী যেমন তাকে সেভাবেই ভালবাসুন।

আশা-

সঙ্গীর প্রতি আশা করে বসে থাকা বিষয়টি নিয়ে দাম্পত্যে সবচেয়ে বেশী কলহ বা অভিমান দেখা যায়। চোখের ভাষা বা মনের অবস্থা বোঝার ক্ষমতা সবার থাকেনা। তাই মনে মনে আশা বেধে কষ্ট না চেপে রেখে আপনি সরাসরি আপনার জীবনসঙ্গীর কাছে যা চান তা বলে ফেলুন।

সম্পর্কে স্বচ্ছ থাকা-

দাম্পত্য সম্পর্কে স্বচ্ছ থাকার বিষয়টি অতি প্রয়োজনীয়। আপনারা পরস্পরের ব্যক্তিগত বিষয়গুলোতে যত ভালো স্বচ্ছ ধারণা গড়তে পারবেন, প্রত্যাশার প্রভাব আপনাদের সম্পর্কে তত কম প্রভাব ফেলবে।

বিলাসিতা-

বিলাসিতা অধিক প্রত্যাশা তৈরি করে যা দাম্পত্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যেমন- স্ত্রী তার চাহিদার চেয়ে বেশী কিছু স্বামীর কাছে চাইছে তখন যদি স্বামীর সামর্থ্য না থাকে বা তার জন্য বিষয়টি কঠিন হয়ে যায় তখন দাম্পত্যে ঝগড়া সৃষ্টি হয়। তাই প্রয়োজনের চেয়ে চাহিদা না বাড়িয়ে সঙ্গীর অবস্থা কে গুরুত্ব দিন। আবার দেখা যায় পারিবারিক অবস্থা ভালো নয় কিন্তু স্বামী বিলাসিতায় সংসার কাটাচ্ছে এ ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের সচেতন থাকা উচিত।

বয়সের ব্যবধান-

স্বামী-স্ত্রীর বয়সের ব্যবধানে প্রত্যাশার পার্থক্য দেখা যায়, যার ফলে উভয় পক্ষের থাকে নানান অভিযোগ। দেখা গেছে বয়সের পার্থক্যের জন্য স্ত্রীর কিছু আবদার স্বামীর কাছে অহেতুক মনে হয়ে থাকে। আবার দেখা যায় স্বামীর প্রত্যাশা থেকে স্ত্রীর প্রতি এমন কিছু দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়া হয় যা তার পক্ষে পূরণ সম্ভব হয়ে উঠেনা। যেহেতু বয়সের ব্যবধান রয়েছে তাই দুজনার আন্তরিকতা দ্বারা প্রত্যাশা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

প্রত্যাশা থেকে হতাশা-

প্রত্যশা থেকে হতাশা তৈরি হয় ধীরে ধীরে। স্বামী বা স্ত্রী যখন তার জীবনসঙ্গীর কাছে বার বার প্রত্যশা পুরনে ব্যর্থ হয় তখনই হতাশা তৈরি হয়। তাই স্বামী-স্ত্রী উভয়ের উচিত জীবনসঙ্গীর প্রত্যাশা বিষয়ে মনোযোগ দেয়া।

পারিবারিক বিষয়ে প্রত্যাশা-

একটি সংসার কেবল স্বামী-স্ত্রী পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকেনা। স্বামী-স্ত্রী উভয়ের পরস্পরের পরিবারের প্রতি দায়িত্ব ও আন্তরিকতা বিষয়গুলো পূরণ করা হল পারিবারিক বিষয়ে প্রত্যাশা। দাম্পত্যে প্রায় ৫০% ঝগড়া হয়ে থাকে এ বিষয়ে অবহেলার জন্য। পরস্পরের পরিবারের বিষয়ে প্রত্যাশা পূরণ করলে দাম্পত্যে সম্পর্ক ভালো থাকবে।

জৈবিক চাহিদায় প্রত্যাশা-

দাম্পত্যে জৈবিক চাহিদার বিষয়ে স্বাভাবিকভাবে স্ত্রী লাজুক বা ইচ্ছে প্রকাশ করেনা। কিন্তু এক্ষেত্রে প্রত্যাশা পূরণ না হলে এক সময় সম্পর্কের প্রতি হতাশা বা অনীহা কাজ করে। তাই দাম্পত্যে জৈবিক চাহিদায় স্বামী-স্ত্রীর খোলামেলা আলোচনা করা উচিত।

সন্তুষ্টির অভাবে প্রত্যাশা বাড়ে-

অধিক প্রত্যাশা একটি রোগ। মানুষ যখন প্রয়োজনের চেয়ে বেশী পায় তখন সন্তুষ্টি বিষয়টি ভুলে যায়। দাম্পত্যে স্বামী-স্ত্রীর প্রত্যাশার একটি নকশা রাখা উচিত যেন অধিক প্রত্যাশায় সব কিছুতে অসন্তুষ্টি বিষয়টি না কাজ করে।

উইলিয়াম শেক্সপিয়র বলেন-

“আমি সবসময় নিজেকে সুখী ভাবি, কারণ আমি কখনো কারো কাছে কিছু প্রত্যাশা করি না, কারো কাছে কিছু প্রত্যাশা করাটা সবসময়ই দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।”

দাম্পত্য কলহ ও প্রত্যাশা পূর্বেও ছিল, এখনও আছে, এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। কিন্তু দাম্পত্যে অধিক প্রত্যাশা রাখার ফলে কলহ বাড়তে থাকে যা একসময় সম্পর্ক বিচ্ছেদের দিকে অগ্রসর হয়। তাই দাম্পত্য সম্পর্কে প্রত্যাশার নিয়ন্ত্রণ রাখা প্রয়োজন।

দাম্পত্যে আবেগ ও বাস্তবতা

আবেগ মানুষের মনে একটি সহজাত অনুভূতি আর বাস্তবতা প্রকৃতির নিয়ম। আবেগ ছাড়া মানুষ সম্পর্ক গড়তে পারেনা আবার বাস্তবতা ছাড়া জীবন চলেনা। দাম্পত্যে সম্পর্কে আবেগ ও বাস্তবতার ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় প্রভাব রয়েছে।

সম্পর্কে আবেগের প্রভাবঃ

আবেগ ছাড়া সম্পর্ক এক ঘেয়েমি হয়ে যায় তাই আবেগ সম্পর্কে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। আবেগ স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ভালো রাখে।

একজনের আবেগীয় আচরণের ফলে দাম্পত্যে সম্পর্কে বিপরীত মানুষের আচরণে উন্নতি ঘটে। যেমন- স্বামী বা স্ত্রী কারো কঠোর মন এক সময়ে কিছুটা হলেও মনুষ্যত্বে পরিণত হয়।

অতিরিক্ত আবেগের বশে মানুষ ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে যার ফলে ব্যাক্তিকে ভুলের স্বীকার হতে হয়। হতে পারে এ আবেগ রাগ বা কষ্ট অনুভূতি থেকে সঙ্গীর প্রতি ভুল আচরণ বা সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া।

কখনও কখনও আবেগের ফলে সম্পর্ক হিতের বিপরীতে যায়। দেখা গেছে স্বামী বা স্ত্রী কোন অন্যায়মূলক কাজ করছে বিপরীত ব্যক্তি অতিরিক্ত ভালোবাসার ফলে দোষটিএড়িয়ে চলছে।

অতিরিক্ত আবেগের ফলে দাম্পত্যে সম্পর্কে একমুখী দায়িত্ব পালন করেন একপক্ষ। ফলে এক পর্যায়ে সম্পর্কে হতাশা তৈরি করে ও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

আবেগের ফলে দাম্পত্যে ছোটখাটো বিষয়ে স্বামী বা স্ত্রী বেশ যত্নশীল ভূমিকা রাখে ফলে সম্পর্ক আরও গভীর হয়।

অতিমাত্রায় আবেগ থেকে সম্পর্কে ঈর্ষাবোধ মনোভাব তৈরি হয় ফলে দাম্পত্যে কলহ বিরাজ করে।

বেশী আবগ মানুষকে বাস্তবতা মেনে নিতে দেয় না ফলে দাম্পত্যে সম্পর্কে উভয়কে খারাপ পরিস্থিতি পোহাতে হয়।

সম্পর্কে বাস্তবতার প্রভাবঃ

জীবন সবসময়য় বাস্তব কেন্দ্রিক হতে পারেনা। অতিমাত্রায় বাস্তবতা দাম্পত্য সম্পর্কে কঠিন করে ফেলে তখন স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের প্রতি অনীহাবোধ করে।

বাস্তবতার জন্য সম্পর্ক নিয়ন্ত্রনে থাকে। যেমন- দাম্পত্যে যদি স্ত্রী বা স্বামী বেশী আবেগ প্রবণ হয় আর বিপরীত ব্যক্তি বাস্তবমুখী হয় ফলে সম্পর্ক নিয়ন্ত্রনে থাকে।

বাস্তবতা যখন অনেক কঠিন হয়ে যায় মানুষ জীবন থেকে পালাতে চায়। ঠিক তেমনি সম্পর্কে আবেগহীন বাস্তবতা সম্পর্ক থেকে বিচ্ছেদের দিকে ধাবিত হয়।

দাম্পত্যে সম্পর্কে আবেগের চেয়ে বাস্তবতা বেশী থাকলে সে সম্পর্ক বেশীদিন স্থায়ী হয়।

অ্যালবার্ট আইনস্টাইন এর মতে- “বাস্তবতা নিছক একটি বিভ্রম, যদিও এটি খুব স্থায়ী”

তাই প্রতিটি দাম্পত্য সম্পর্কে আবেগ যেমন প্রয়োজনীয় তেমনি বাস্তবতার সমন্বয়ও খুব গুরুত্বপূর্ন। একটি স্বাস্থ্যকর দাম্পত্য সম্পর্কের জন্য আবেগ ও বাস্তবতার সমন্বয় অবশ্যই প্রয়োজন।

ঝগড়া ছাড়া সম্পর্ক

সম্পর্কে ঝগড়া হলে দুপক্ষের মধ্যে ভয় কাজ করে এই বুঝি সম্পর্ক শেষ হয়ে গেল। ঝগড়া কেউ ইচ্ছে করে করতে চায়না কিন্তু পরিস্থিতিতে ঝগড়া হয়ে যায়। তবে দাম্পত্যে সম্পর্কে ঝগড়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। মনের মাঝে সমস্যা বা যে কোন কিছু পুষে রাখা উচিত নয় বরং ঝগড়া করে হলেও মনের অবস্থার বহিঃপ্রকাশ ঘটানো উচিত।

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা গেছে, ৪৪ শতাংশ মার্কিন দম্পতি মনে করেন সপ্তাহে অন্তত একবার গুছিয়ে ঝগড়া হওয়ার মানে সম্পর্কে পারস্পরিক যোগাযোগ বেশ ভাল।

দাম্পত্যে সম্পর্কে ঝগড়ার ও প্রয়োজন আছে –

সমস্যার প্রতি মনোযোগঃ

দাম্পত্যে সম্পর্কে অনেক সমস্যা বিরাজ করে যা পরস্পর আলোচনা আসেনা বা বলা হয়ে উঠে না। কিন্তু ঝগড়ার সময় ব্যক্তিরা না বলা সমস্যাগুলো নিয়েই কথা বলে তাই পরবর্তীতে সমস্যার প্রতি সম্পর্কের মনোযোগ দেখা যায়।

যত্নশীলঃ

ঝগড়ার সময় মনে হয় এই বুঝি সম্পর্কের ইতি টানল কিন্তু ঝগড়া শেষ হলে পরিস্থিতি এই যেন পানি। ফলাফল যত্ন বেড়ে যায় পরস্পরের প্রতি। ভুল বোঝাবোঝি দূর হয়ঃ দাম্পত্যে সম্পর্কে অনেক খুঁটিনাটি বিষয় পরস্পরের মধ্যে খোলামেলা আলোচনা করা হয়না তাই দুজন ব্যক্তিই মনে ভুল বোঝাবোঝি বয়ে চলে। আর এরকম পরিস্থিতিতে যখন ঝগড়া হয় তখন ভুল বোঝাবোঝির অবসান ঘটে।

ভুল বোঝাবোঝি দূর হয়ঃ

দাম্পত্যে সম্পর্কে অনেক খুঁটিনাটি বিষয় পরস্পরের মধ্যে খোলামেলা আলোচনা করা হয়না তাই দুজন ব্যক্তিই মনে ভুল বোঝাবোঝি বয়ে চলে। আর এরকম পরিস্থিতিতে যখন ঝগড়া হয় তখন ভুল বোঝাবোঝির অবসান ঘটে।

সম্পর্কের প্রতি অনীহা কাটায়ঃ

যখন দুজন ব্যক্তির মধ্যে যে কোন বিষয়ে আলোচনা, সমঝোতা বিষয়টি থাকে না, যে যার মত ছাড় দিতে থাকে তখন সম্পর্কে একঘেয়েমি কাজ করে। সম্পর্কের এ পরিস্থিতিতে ঝগড়া বিষয়টি কাজে লাগে। ঝগড়া হলে পরবর্তী সময়ে সম্পর্কের প্রতি অনীহা কাটে।

সম্পর্কের প্রতি মায়া বাড়েঃ

সব সময় ঝগড়ার ফলে সম্পর্কের প্রতি অনেক সময় বিরক্ত কাজ করে। মনে হয় সব শেষ করে দেয়াই ভালো কিন্তু ঝগড়া শেষে বেশ কিছুদিন মান-অভিমানের পর সম্পর্ক শেষ করতে গিয়ে আর শেষ করা হয়না মায়ার টানে।

যোগাযোগ বাড়েঃ

ঝগড়ার করার জন্যও ব্যক্তির সাথে দেখা করা বা কথোপকথন বাড়ে যার ফলে ঝগড়া হলেও সম্পর্ক শেষ হয়না বরং যোগাযোগের মাত্রা বেড়ে যায়।

একটি সমীক্ষার ফলাফল বলছে, যে সমস্ত দম্পতি বা যুগলরা ঝগড়া করেন বা বেশি বেশি অভিমান করেন, তাঁরাই তুলনা মূলক ভাবে সম্পর্কের দিক থেকে অনেক বেশি সুখী, তাদের থেকে – যারা মনের ভাব লুকিয়ে রাখেন।

জীবনসঙ্গী খুঁজছেন? জেনে নিন কিছু তথ্য

নিজের পছন্দ হোক কিংবা পরিবারের পছন্দ –

বিয়ের ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া করবেন না মোটেই। বিয়ে কোনো ছেলে খেলা নয়, আজীবনের বন্ধন। তাই জীবনসঙ্গী এমন একজন মানুষ হতে হবে, যার সাথে আপনার ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়া গুলো মেলে।

সকলেই তো আর প্রেম করে বিয়ে করেন না। অনেকেরই বিয়ে হয় পারিবারিকভাবে, যাকে আমরা “অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ” বলি। শুনতে খুব সহজ মনে হলেও বিষয়টা আসলে খুব একটা সহজ নয়। অনেকেই হয়তো বিয়ে করার কথা ভাবছেন, কিন্তু পছন্দের সঙ্গী কিভাবে খুঁজবেন বুঝতে পারেন না। আবার খুঁজে পেলেও আপনার সাথে মনের মিল হবে কিনা তা নিয়েও আছে দ্বিধা-দ্বন্দ।

জীবনসঙ্গী খোঁজাটা যেন এক বিশাল পরীক্ষা। “অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ” এর জন্য সঠিক জীবন সঙ্গী খুঁজে পেতে কিছু বিশেষ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে চেষ্টা করাই ভালো। পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে গেলে খুব বেশি কাঠ-খড় পোড়ানো ছাড়াই মিলবে মনের মানুষের দেখা। আসুন তাহলে জেনে নেয়া যাক জীবনসঙ্গী খোঁজার ধাপ গুলো।

নিজের পছন্দ চুড়ান্ত করুনঃ

আপনি কেমন সঙ্গী চাইছেন কেমন হবে সঙ্গীর পারিবারিক অবস্থা, দেশের বাড়ি, শিক্ষাগত যোগ্যতা, চাকরী সব মিলিয়ে যেমন সঙ্গী আপনার পছন্দ সেটা মনে মনে ঠিক করে ফেলুন। নিজের পছন্দের সাথে সবসময়েই পরিবারের পছন্দের সামঞ্জস্য রাখুন। তাহলে বিয়ের পরে মানিয়ে নিতে সুবিধা হবে।

বয়সের পার্থক্য ও পেশাঃ

যাকে জীবনসঙ্গী বানাবেন ভাবছেন তার সাথে বয়সের পার্থক্য যেন খুব বেশী না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। সেই সাথে সঙ্গীর আয় বা পেশার দিকটি অবশ্যই মূল্যায়ন করতে হবে কেননা জীবন চালাতে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা জরুরী।

পারিবারিক ও আঞ্চলিক সংস্কৃতিঃ

পারিবারিক ও আঞ্চলিক সংস্কৃতির বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা বিয়ে মানে দুজন ব্যাক্তি নয় বরং দুটি পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক। যদি দুটি পারিবারের মধ্যে কালচারগত বিষয়ে সামঞ্জস্যতা থাকে তবে নতুন পরিবারে গিয়ে সহজেই মানিয়ে নেয়া যায়।

ব্যক্তির আচরণঃ

যাকে জীবনসঙ্গী বানাবেন ভাবছেন শুধু তার গুনের প্রশংসা বা সৌন্দর্য না দেখে তার আচরনের প্রতিও খেয়াল রাখুন। আপনি একজন ব্যক্তির সাথে কিছুক্ষণ কথা বললেই বুজতে পারবেন তার আচরণগত কোন সমস্যা আছে কিনা বা তার কোন অভ্যাস যা আপনার পছন্দ নাও হতে পারে।

দায়িত্ববান ও কর্মক্ষমঃ

একটি নতুন সংসার শুরু করতে নারী-পুরুষ দুজনের ভূমিকা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে একজন দায়িত্ববান ও কর্মঠ হবেন আরেকজন উদাসীন তা হলে সংসার শুরু হবে অশান্তি দিয়ে। তাই জীবনসঙ্গী বাছাইয়ে এ গুনাবলি গুলো আছে কিনা যাচাই করে নিন।

শারীরিক বিষয়ঃ

যাকে বিয়ে করবেন তার শারীরিক গঠন আপনার সাথে মানায় কি না খেয়াল রাখুন। ব্যক্তি স্বাস্থ্যগত দিক থেকে ঠিক আছে কিনা যাচাই করে নিন।

মানসিক প্রস্তুতিঃ

যাকে বিয়ে করতে চাচ্ছেন সে কি বিয়ের জন্য মানসিকভাবে তৈরি কিনা তা বোঝার চেষ্টা করুন। যদি সে বিয়ের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকে তাহলে ভাবতে পারেন।

জীবনসঙ্গী খুঁজার ক্ষেত্রে গুণবতী, সুন্দরী বা ছেলের অবস্থান যাচাই করা ছাড়াও অনেক বিষয় রয়েছে যা আমরা দেখা প্রয়োজন মনে করি না। ফলে বিয়ের পর সংসারের অধ্যায় শুরু হয় ঝামেলা দিয়ে। তাই জীবনসঙ্গী খোঁজার ক্ষেত্রে অবশ্যই এ বিষয়গুলো প্রত্যেকের খেয়াল রাখা উচিত।