অতিরিক্ত প্রত্যাশা দাম্পত্যে সম্পর্কে ইতি টানতে পারে!

প্রত্যাশা হল মানুষের কাল্পনিক ইচ্ছা। মানুষ যা অপরের কাছ থেকে অর্জন করতে চায় তাই প্রত্যাশা। দাম্পত্য সম্পর্ক নতুন হোক বা পুরনো, প্রত্যাশা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবে প্রত্যাশা স্থাপনের ক্ষেত্রে স্বামী বা স্ত্রীর বুঝতে হবে তার সঙ্গীর পক্ষে তা পূরণ করা সম্ভব বা কঠিন হবে কিনা। কেবল প্রত্যাশা থাকলেই হয়না, প্রত্যাশার বিষয়টি সম্পর্কে নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে। অধিক প্রত্যাশায় দাম্পত্যে সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে।

দাম্পত্যে সম্পর্কে প্রত্যাশার নিয়ন্ত্রণঃ

কল্পনা-

বিয়ের পূর্বে সঙ্গীকে নিয়ে যা কিছু কল্পনা করেছেন বা মনে প্রত্যাশা ছিল সংসার নিয়ে আর বিয়ের পর তার উল্টোটা দেখছেন বা কিছু অমিল রয়েছে তাই বলে সঙ্গী কে বদলানোর চেষ্টা করবেন না। সঙ্গী যেমন তাকে সেভাবেই ভালবাসুন।

আশা-

সঙ্গীর প্রতি আশা করে বসে থাকা বিষয়টি নিয়ে দাম্পত্যে সবচেয়ে বেশী কলহ বা অভিমান দেখা যায়। চোখের ভাষা বা মনের অবস্থা বোঝার ক্ষমতা সবার থাকেনা। তাই মনে মনে আশা বেধে কষ্ট না চেপে রেখে আপনি সরাসরি আপনার জীবনসঙ্গীর কাছে যা চান তা বলে ফেলুন।

সম্পর্কে স্বচ্ছ থাকা-

দাম্পত্য সম্পর্কে স্বচ্ছ থাকার বিষয়টি অতি প্রয়োজনীয়। আপনারা পরস্পরের ব্যক্তিগত বিষয়গুলোতে যত ভালো স্বচ্ছ ধারণা গড়তে পারবেন, প্রত্যাশার প্রভাব আপনাদের সম্পর্কে তত কম প্রভাব ফেলবে।

বিলাসিতা-

বিলাসিতা অধিক প্রত্যাশা তৈরি করে যা দাম্পত্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যেমন- স্ত্রী তার চাহিদার চেয়ে বেশী কিছু স্বামীর কাছে চাইছে তখন যদি স্বামীর সামর্থ্য না থাকে বা তার জন্য বিষয়টি কঠিন হয়ে যায় তখন দাম্পত্যে ঝগড়া সৃষ্টি হয়। তাই প্রয়োজনের চেয়ে চাহিদা না বাড়িয়ে সঙ্গীর অবস্থা কে গুরুত্ব দিন। আবার দেখা যায় পারিবারিক অবস্থা ভালো নয় কিন্তু স্বামী বিলাসিতায় সংসার কাটাচ্ছে এ ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের সচেতন থাকা উচিত।

বয়সের ব্যবধান-

স্বামী-স্ত্রীর বয়সের ব্যবধানে প্রত্যাশার পার্থক্য দেখা যায়, যার ফলে উভয় পক্ষের থাকে নানান অভিযোগ। দেখা গেছে বয়সের পার্থক্যের জন্য স্ত্রীর কিছু আবদার স্বামীর কাছে অহেতুক মনে হয়ে থাকে। আবার দেখা যায় স্বামীর প্রত্যাশা থেকে স্ত্রীর প্রতি এমন কিছু দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়া হয় যা তার পক্ষে পূরণ সম্ভব হয়ে উঠেনা। যেহেতু বয়সের ব্যবধান রয়েছে তাই দুজনার আন্তরিকতা দ্বারা প্রত্যাশা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

প্রত্যাশা থেকে হতাশা-

প্রত্যশা থেকে হতাশা তৈরি হয় ধীরে ধীরে। স্বামী বা স্ত্রী যখন তার জীবনসঙ্গীর কাছে বার বার প্রত্যশা পুরনে ব্যর্থ হয় তখনই হতাশা তৈরি হয়। তাই স্বামী-স্ত্রী উভয়ের উচিত জীবনসঙ্গীর প্রত্যাশা বিষয়ে মনোযোগ দেয়া।

পারিবারিক বিষয়ে প্রত্যাশা-

একটি সংসার কেবল স্বামী-স্ত্রী পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকেনা। স্বামী-স্ত্রী উভয়ের পরস্পরের পরিবারের প্রতি দায়িত্ব ও আন্তরিকতা বিষয়গুলো পূরণ করা হল পারিবারিক বিষয়ে প্রত্যাশা। দাম্পত্যে প্রায় ৫০% ঝগড়া হয়ে থাকে এ বিষয়ে অবহেলার জন্য। পরস্পরের পরিবারের বিষয়ে প্রত্যাশা পূরণ করলে দাম্পত্যে সম্পর্ক ভালো থাকবে।

জৈবিক চাহিদায় প্রত্যাশা-

দাম্পত্যে জৈবিক চাহিদার বিষয়ে স্বাভাবিকভাবে স্ত্রী লাজুক বা ইচ্ছে প্রকাশ করেনা। কিন্তু এক্ষেত্রে প্রত্যাশা পূরণ না হলে এক সময় সম্পর্কের প্রতি হতাশা বা অনীহা কাজ করে। তাই দাম্পত্যে জৈবিক চাহিদায় স্বামী-স্ত্রীর খোলামেলা আলোচনা করা উচিত।

সন্তুষ্টির অভাবে প্রত্যাশা বাড়ে-

অধিক প্রত্যাশা একটি রোগ। মানুষ যখন প্রয়োজনের চেয়ে বেশী পায় তখন সন্তুষ্টি বিষয়টি ভুলে যায়। দাম্পত্যে স্বামী-স্ত্রীর প্রত্যাশার একটি নকশা রাখা উচিত যেন অধিক প্রত্যাশায় সব কিছুতে অসন্তুষ্টি বিষয়টি না কাজ করে।

উইলিয়াম শেক্সপিয়র বলেন-

“আমি সবসময় নিজেকে সুখী ভাবি, কারণ আমি কখনো কারো কাছে কিছু প্রত্যাশা করি না, কারো কাছে কিছু প্রত্যাশা করাটা সবসময়ই দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।”

দাম্পত্য কলহ ও প্রত্যাশা পূর্বেও ছিল, এখনও আছে, এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। কিন্তু দাম্পত্যে অধিক প্রত্যাশা রাখার ফলে কলহ বাড়তে থাকে যা একসময় সম্পর্ক বিচ্ছেদের দিকে অগ্রসর হয়। তাই দাম্পত্য সম্পর্কে প্রত্যাশার নিয়ন্ত্রণ রাখা প্রয়োজন।