Popular Matchmaking Portals for Digital Bangladesh

Bangladeshi Matrimonial websites make for a perfect substitute for millions of Bangladeshis who are now connected to the web and still belong to traditional beliefs. Considering the enhanced reach, extreme convenience and more privacy, online matrimonial websites are most definitely a preferred substitute to conventional sources to find brides and grooms.

It is simple for anyone to simply log onto a website of their choice and register by uploading a bio-data with information of their choice. It offers user-friendly interfaces for youth as well as parents to conduct searches based on their preferences and initiative conversation with a click of a mouse.

This ideal blend between Bangladeshi traditional systems and modern technology has made it possible for Bangladeshi bachelors and spinsters around the world and explore and find themselves the perfect match for life.

Various sections of profiles of an individual:

· Contact profile
· Work/career profile
· Location profile
· Physical profile
· Religious profile
· Community profile
· Personality profile
· Family profile
· Photographs / documents support


There are many advantages of using Bangladeshi matrimonial sites, such as some Bangladeshi matrimonial sites permit chatting with other interested individual by live chat options. Everyone can perform a matrimonial registration to help your acquaintances finding a perfect life partner. This is the most helpful way to understand each other liking and disliking. That is actually factual that marriage will occur once in a life. Always give unquestionable and dependable queries, unless data will mislead your all future. So present yourself as you are. Today in Bangladesh people search their life colleague as par their alternative.

This is a nice way to search for marriage partners but sometimes there are fake profiles to mislead people. It’s genuinely tough to find the genuine persons with genuine profile in these Bangladeshi matrimonial sites. But still your good efforts to ascertain each and every profile methodically and make online matrimony an astonishing experience for you.

Advantages of online matrimonial:

· Economic — Save Time and Money
· Easily Accessible
· Filtered Results
· Easy to Communicate
· Informative
· Unlimited Choice
· Advanced Search
· Availability of Picture and Video
· Authenticity
· Privacy
· Past History

Bibahabd.com is the most trusted Bangladeshi matrimonial websites with many verified matrimony websites. Here you can search any profile with respective religion, caste or community. All profiles are verified by professionals in various cities of Bangladesh. Registration option is both free and paid and you can find your suitable bride or groom. Their 24/7 customer service is always at customer service helping you to get best match.

Marriage itself is a sacred bond that occurs not only between a bride and a groom but also between their respective families. The bond is not dependent on the type of marriage or even how extravagant the matrimony may be. Neither a love marriage nor an arranged marriage can guarantee success and both have their own advantages and disadvantages.

Online matrimonial is still a part of arranged marriage as even with online services, parents continue to perform the role of initiating, searching and filtering potential partners. The use of online matrimonial services in fact seems to make it easier to find someone within the sub-caste, religion or community of your choice. . It is evident that online matrimonial services have introduced new elements into the process of arranging marriage that are made possible by technology. Online matrimonial, electronics dating and matrimonial web sites are changing the rules of how relationships are formed and maintained in communities all over the world. For more information, you can visit our website www.bibahabd.com.

ভাঙার আগে-পরে

আমি ওকে কেবল আবার একটা ফোন দিতে চাই। যদিও আমি জানি এটা ঠিক হবে না। ও কেবলই আমার সঙ্গে চিৎকার ও দুর্ব্যবহার করবে আমি জানি। এটা ভেবেই আমি ভয় পেয়ে যাই। আমি বাইরে কাজ-কর্ম করতে পারছি না। একেবারেই মনোযোগ দিতে পারছি না। আমি চিৎকার করে সবাইকে বলে দিতে চাই যে, আমি ভালো নেই। কিন্তু আমি জানি, তারা আমাকে কাপুরুষ ভাববে। আমি স্বপ্নাকে ছাড়আর কিছুই ভাবতে পারছি না। আমি দিনে দিনে নিঃশেষ হতে যাচ্ছি।

এটি সম্প্রতি বিয়ে ভেঙে যাওয়া এক পুরুষের নীরব আর্তচিৎকার। তিনি ভেবেছিলেন সম্পর্কটি পুনরুদ্ধার করা যায় কিনা। স্ত্রী ও সন্তান থেকে দূরে থাকার ভয়ে তিনি ভীত। হতাশা আর অপরাধবোধ তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তাকে। কাজকর্মে নিজেকে আগেরমতো সক্রিয় রাখতে পারছেন না।কোনো অন্তরঙ্গ সম্পর্ক শেষ হয়ে যাওয়ার পর এমন প্রতিক্রিয়া অস্বাভাবিক নয়। পুরুষ বা নারী যেকারো জন্যই সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া এক তীব্র মানসিক ও সামাজিক বিপর্যয় হিসেবে কাজ করে। বৈবাহিক সম্পর্ক আমাদের জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

বৈবাহিক সম্পর্কে ‍সুখী হওয়া না হওয়া নানা বিষয়ের উপর নির্ভরশীল। আবার বিবাহিত জীবনের নানা পর্বের পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানোও বেশ কঠিন বিষয়। অবাস্তব প্রত্যাশা, দায়িত্বহীনতা, স্বামী বা স্ত্রীর কাজের মাত্রা-ধরণ, শ্বশুড়-শাশুড়ি ও পরিবারের অন্য সব সদস্যের সাথে মানিয়ে চলা, আর্থিক সমস্যা, যোগাযোগ দক্ষতার অভাব, অবিশ্বস্ততা বৈবাহিক সম্পর্কে চিড় ধরাতে ভূমিকা রাখে।

সম্পর্কে বিচ্ছেদ ধরার ক্ষেত্রে একক কোনো কারণ নেই। এটি শুরু হয় নানা প্রকিয়ার ভেতর দিয়ে। কখনও কখনও একজন সঙ্গী আলাদা থাকার হুমকি দিয়ে অন্য সঙ্গীর আবেগীয় প্রতিক্রিয়া যাচাই করে নেয়। এই সংসারে আমি আর পারছি না। আমি চলে যাবো। এ জাতীয় কথাবার্তা মূলত যিনি সম্পর্ক ছেড়ে দিতে চান তার থেকেই বেশি শোনা যায়। বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত আরও একধাপ এগিয়ে যায় যখন কোনো একজন সঙ্গী বলতে শুরু করেন, আমি কালই উকিল নোটিশ পাঠিয়ে দেবো। আমি তোমার কাবিনের টাকা জোগাড় করে ফেলেছি। তুমি চলে যেতে পারো, ইত্যাদি। যদিও মনোবিজ্ঞানীরা ভালোবাসা এবং ঘৃণাকে একই অনুষঙ্গ হিসেবে দেখে থাকেন। আত্মহত্যার ক্ষেত্রে আমি মরতে চাই যেমন বেঁচে থাকার আকুতি বহন করে, একইভাবে আমি ডিভোর্স চাই এটিও কখনও কখনও সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার আবেদন।

সম্পর্ক বিচ্ছেদ সবসময় বেদনাদায়ক না-ও হতে পারে। ক্ষেত্রবিশেষে বিচ্ছেদের মাধ্যমে ব্যক্তি যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে পারে। দুটি সত্য ঘটনা তুলে ধরা যাক।

ঘটনা -১

ষাট বছরের রীতা (ছদ্মনাম )সারা জীবন স্বামীর অত্যাচার, যন্ত্রণা সহ্য করে একটু ধাতস্থ হতে চেষ্টা করছিলেন। ভাইদের সহযোগিতায় ছেলেমেয়ে দুজনকে বিদেশে পাঠিয়ে লেখাপড়া করিয়েছেন। তারা বর্তমানে বিদেশেই প্রতিষ্ঠিত। ছেলেমেয়ের সাথে রীতাও দীর্ঘদিন বিদেশে ছিলেন। স্বামী রীতার অনুমতি ছাড়াই দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। অর্থনৈতিক বিচারে স্বামী নিজেও সমাজের উচুপর্যায়ের লোক। গা সওয়া রীতা ছেলেমেয়েকে সময় দিতে গিয়ে স্বামীর বিষয়ে ভুলতেই বসেছিলেন বলা যায়। দেশে আসার কিছুদিনর মাথায় রীতা জানতে পারেন, তার নামে প্রায় কোটি টাকার ব্যাংকঋণ নেওয়া হয়েছে। শুধু এখানেই শেষ হয় নি।স্বামীর অধিকার নিয়ে তিনি রীতার পৈতৃক সূত্রে পাওয়া বাড়িতে থাকার জন্য জোর দাবি তুলছেন। রীতা না করতে পারেন নি। ছেলেমেয়ের সামাজিক মর্যাদার দিকে তাকিয়ে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন নি।

ঘটনা -২

বত্রিশ বছরের আরশির (ছদ্মনাম ) বিয়ের বয়স পাঁচ ছুঁই ছুঁই। দীর্ঘ পরিচয় থেকে পরিণয়। শেষমেশ দুই পরিবারের সম্মতিতে জাঁকজমকপূর্ণ বিয়ে ছিল মনে রাখার মতো। আস্থা ও ভালোবাসায় পূর্ণ আরশির স্বামী আর্য্য তার কাছে অনেকটা দেবতার মতো। আরশি চাকরি করতেন বিমানের ফ্লাই অফিসার হিসেবে। ফ্লাইটের সাথে জীবনের সূচী মেলাতে গিয়ে অনেকটা হাঁপিয়ে ওঠেন আরশি। আর্য্যর সহযোগীতায় আবারো কাজে মন দেন। কিছুদিন যেতে না যেতেই আরশির মনে হতে থাকে, সংসারে সময় না দিতে পেরে জীবনে অনেক কিছু হারিয়ে ফেলেছেন। সংসারটা বড়ো ভালোবাসার জায়গা তার কাছে। এক জীবনে স্বামী-সংসার নিয়ে সুখের থাকার বিকল্প আর কী-ই-বা হতে পারে! এবার চাকরিই ছেড়ে দিলেন আরশি। ইতিমধ্যে মা হয়েছেন তিনি। স্বর্গসুখ যেনো হাতের মুঠোয়। ছোট্ট শিশুর দেখভাল করার জন্য নিয়ে আসেন নিজের খালাতো বোনকে। আর্য্যও খুব খুশি হয়েছেন আরশির কষ্ট কমবে বলে। স্বামীর ঘুমের সমস্যা এড়াতে আরশি প্রায়ই মেয়েকে নিয়ে অন্যঘরে ঘুমোতেন। সময়ের পরিক্রমায় হঠাৎ আর্য্যকে আবিষ্কার করেন তারই বোনের সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায়। এই অবর্ণনীয় মানসিক আঘাত তিনি বেশিদিন সহ্য করতে পারেন নি। জীবনের দ্বিতীয় কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজে নিজেই সই করেন ডিভোর্সের দলিলপত্রে।

ডিভোর্স পরবর্তী মানসিক অবস্থা বুঝাবার জন্য দুটি উদাহরণ যথেষ্ট মনে করা যায়। যিনি ডিভোর্স দিতে উদ্যোগ নেন, তার জন্য সাময়িক চাপ লাঘবের অনুভূতি কাজ করতে পারে। তবে বেশিরভাগ দম্পতির ক্ষেত্রে ডিভোর্স তীব্র মানসিক ক্ষত তৈরী করে। সম্পর্কে বিচ্ছেদের আঘাত এমনকি কয়েক বছর পর্যন্ত চলতে পারে।

আমরা আরশির দিকে তাকাই। সম্মানজনক পেশা ছেড়ে দেওয়া, চুরমার হয়ে যাওয়া স্বপ্নময় সংসার, এ যেন এক অসহনীয় রূপকথা। ক্ষিপ্রতার সাথে আরশি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিছুতেই আরশি মেলাতে পারেন না তার জীবনের ঘটনাগুলো। মাঝে মাঝে নিজের অজান্তেই ভাবেন, এমন কিছু যদি ঘটতো, যাতে সব কিছু পাল্টে যেতো! সময় ঘড়িটাকে পিছিয়ে দেওয়া যেতো!

মাঝে মাঝে এ-ও ভাবেন, আচ্ছা, কম্পিউটারের মতো আয্যর ওই অংশটুকু ডিলিট করে দেয়া গেলেইতো চলতো! এ জাতীয় হাজারো প্রশ্ন এসে ভীড় জমায় মনে!

বিচ্ছেদের ফলে নারীর আত্মপরিচিতির ভিত্তি নড়বড়ে হয়ে যায়। বেশিরভাগ মানুষ কারও স্বামী বা স্ত্রী হিসেবে সমাজে নিজের আত্মপরিচয় ধারণ করে অভ্যস্ত। বিচ্ছেদ হওয়াতে এই আকস্মিক পরিবর্তণের সাথে খাপ খাওয়ানো কঠিন হয়ে পড়ে। এ সময় ব্যক্তির আত্মবিশ্বাসই মানুষ হিসেবে সমাজে তার স্বীকৃতি ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হয়।কেউ কেউ নিজেকে গুটিয়ে নেন অন্য সকল যোগাযোগ থেকে। পরিচিত বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনদের সাথে দূরত্ব বাড়তেই থাকে। সত্যিকারের বন্ধুর সহযোগিতা নিঃসন্দেহে উপকারী হবে।

অনেকের মধ্যে বিচ্ছেদের দীর্ঘ সময় পরও পূর্ববর্তী সঙ্গীর উপর তীব্র রাগ ও ক্ষোভ থেকে যায়। এটি ব্যক্তির নিজের এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে ভুল বুঝাবুঝি তৈরী করতে পারে। অনেকে এই ‍তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে মুক্তি পেতে দ্রুত আরেকটি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। যা ক্ষতিকর হতে পারে পরবর্তী সম্পর্কের জন্য। তাই একটি বিচ্ছেদের পর যথেষ্ট সময় নিয়ে নিজেকে গুছিয়ে নেওয়া যেতে পারে। যাতে নতুন সম্পর্ক আরো বেশি পরিপূর্ণ হয়।

লিখেছেনঃ

মোসাম্মাৎ নাজমা খাতুন
অ্যাসিসট্যান্ট প্রফেসর
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বিবাহ ও মুসলিম পারিবারিক আইন

মানব ইতিহাস লক্ষ করলে দেখা যায়, প্রাচীন সমাজে নারীদের মান-মর্যাদার প্রতি কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। সমাজে তখন নারীর অধিকার ও মর্যাদা ছিল না। ইসলাম ধর্মের বিধান অনুযায়ী বিবাহের মাধ্যমে নারীর মর্যাদা ও গুরুত্ব সংরক্ষিত হয়। ইসলাম নারীর অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করে নারী জাতিকে মানবিক উন্নতি ও প্রগতির বুনিয়াদ ঘোষণা করেছে। ইসলাম ঘোষণা করে_সমাজে পুরুষের মতোই নারীর অধিকার রয়েছে। তাই বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমেই নারী-পুরুষের অধিকার নিশ্চিত হয়।

মুসলিম পারিবারিক আইন : মুসলিম পারিবারিক আইন ইসলামী শরিয়তের দ্বারা বিধিবদ্ধ হয়েছে। তবে যুগের বিবর্তনে এবং ক্রমোন্নতির সঙ্গে সঙ্গে সরকারিভাবে আইন ও বিধির দ্বারা কিছু কিছু নীতি নির্ধারিত হয়ে থাকে, এসব আইন, বিধি ও নীতিমালার প্রণয়ন যুগের প্রত্যক্ষ চাহিদা। আর এ লক্ষ্যে ১৯৬১ সালে প্রণীত হয়েছে মুসলিম বিবাহ আইন। যাতে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের বিবাহ রেজিস্ট্র্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

বিবাহ রেজিস্ট্র্রেশন আইনে বৈধ বিবাহের অবশ্য পূরণীয় শর্তগুলো:

বিবাহের যোগ্যতা : বিবাহ করতে ইচ্ছুক পক্ষদ্বয়কে অবশ্যই প্রাপ্তবয়স্ক/বয়স্কা এবং সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী হতে হবে। এ ক্ষেত্রে পুরুষের বয়স নূন্যতম ২১ বছর এবং স্ত্রীলোকের বয়স নূন্যতম ১৮ বছর হতে হবে।

প্রস্তাব দান এবং কবুল : বিবাহ করতে ইচ্ছুক পক্ষদ্বয়ের মধ্যে এক পক্ষকে প্রস্তাব দিতে হবে এবং অপর পক্ষ থেকে তা গ্রহণ করতে হবে। প্রস্তাব দান ও গ্রহণ একই মজলিসে কমপক্ষে দুজন প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন পুরুষ সাক্ষী কিংবা একজন পুরুষ ও দুজন মহিলা সাক্ষীর সামনে হতে হবে। এটিই বিবাহ বন্ধন সংগঠিত হওয়ার মূল শর্ত।

সম্মতি : বিবাহের জন্য পাত্র এবং পাত্রীর স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতির প্রয়োজন। বল প্রয়োগে সম্মতি আদায়ে বিবাহ বাতিল বলে গণ্য হবে।

বিবাহ রেজিস্ট্র্রেশন : বিবাহ রেজিস্ট্র্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের বিধান অনুসারে সরকার কর্তৃক নিযুক্ত নিকাহ্ রেজিস্ট্র্রার দ্বারা অবশ্যই বিবাহ রেজিস্ট্র্রি করাতে হবে।

বিবাহ রেজিস্ট্র্রেশন ফি : সরকার গেজেট নোটিফিকেশন দিয়ে বিবাহের ফি নির্ধারণ করেছে। বিবাহ রেজিস্ট্র্রেশন ফি দেনমোহরের ওপর নির্ধারণ হয়ে থাকে। দেনমোহরের প্রতি হাজারে ১০ টাকা হারে ফি নিকাহ্ রেজিস্ট্র্রাররা সরকার নির্ধারিত রশিদ প্রদানের মাধ্যমে গ্রহণ করে থাকেন। দেনমোহর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ফি চার হাজার টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিবাহ রেজিস্ট্র্রি না করার ফলাফল : যেহেতু ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের বিধান অনুযায়ী প্রতিটি মুসলিম বিবাহ রেজিস্ট্র্রি করা বাধ্যতামূলক। বিবাহ রেজিস্ট্র্রি না করলে নিম্নলিখিত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় :

১. সরকার নিযুক্ত নিকাহ্ রেজিস্ট্র্রার কর্তৃক বিবাহ রেজিস্ট্রেশন না হলে সম্পত্তির উত্তরাধিকারের বিবাদ-বিসংবাদের সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
২. বিবাহ রেজিস্ট্রি না হাওয়ায় বিবাহের বৈধতার ক্ষেত্রে দলিলগত সাক্ষীর অভাব ঘটে, ফলে বিবাদ নিষ্পত্তি করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
৩. বিবাহ রেজিস্ট্রেশন না হওয়ার ফলে মৃতের সন্তানদের উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে বৈধতার প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়।
৪. বিবাহ রেজিস্ট্র্রেশন না হলে স্ত্রী কর্তৃক স্বামীর বিরুদ্ধে খোরপোষ ও মোহরানার দাবির মামলা অগ্রাহ্য বলে গণ্য হতে পারে।

বিবাহের দেনমোহর : দাম্পত্যজীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো দেনমোহর। দেনমোহর বিবাহের একটি অত্যাবশ্যকীয় শর্ত। বিবাহের রেজিস্ট্র্রেশনের সময় দেনমোহর ধার্য করতে হবে। স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে ন্যায়সঙ্গতভাবে দেনমোহর পাওয়ার অধিকারী হবে।

বিবাহের সময় প্রতিদানস্বরূপ বর কর্তৃক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দিতে সম্মত অথবা গৃহীত কোনো সম্পত্তি বা মূল্যবান জামানতকে মোহর বলে। মোহরপ্রাপ্তির অধিকার সম্পূর্ণরূপে স্ত্রীর। মোহরানা বলতে এমন অর্থ সম্পদ বুঝায়, যা বিয়ের বন্ধনে স্ত্রীর ওপর স্বামীত্বের অধিকার লাভের বিনিময়ে স্বামীকে আদায় করতে হয়।

মোহরানা স্বামীর কোনো করুণা নয়, না কোনো সামাজিক ট্রাডিশন। স্ত্রীর মোহরানা দেওয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালার যে নির্দেশ তা নামাজ রোজার মতোই একটি নির্দেশ। স্ত্রীর মোহরানার অর্থ আদায় করা স্বামীর ওপর যেমন অবশ্য কর্তব্য, তেমনি তা ইবাদতও।

ইসলামী শরিয়তের বিধান মোতাবেক মোহর আদায় প্রতিটি স্বামীর জন্য ফরজ। দেনমোহর স্বামীর জন্য একটি ঋণ, সর্বাবস্থায় দেনমোহর পরিশোধ করা বাধ্যতামূলক। রাসুল (সা.) বলেছেন – ’যে ব্যক্তি কোনো মেয়েকে মোহরানা দেওয়ার ওয়াদায় বিয়ে করেছে, কিন্তু সে মোহরানা আদায় করতে তার ইচ্ছে নেই, কেয়ামতের দিন সে আল্লাহর সামনে অপরাধী হিসেবে দাঁড়াতে বাধ্য হবে’ (মুসনাদে আহমদ)।

ঐতিহাসিক রায়
বিবাহবহির্ভূত সন্তান সম্পত্তির উত্তরাধিকারী

গত বছরের ৩১ মার্চ একটি যুগান্তকারী রায় প্রদান করেছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। রিভানাসিদ্ধাপা ও অন্যান্য বনাম মালিক অর্জুন ও অন্যান্য ২০১১ মামলার রায়ে বলা হয়, ‘আইনগত বিবাহবহির্ভূত সন্তান বৈধ সন্তান হিসেবে গণ্য হবে এবং পিতামাতার অর্জিত ও পৈতৃক সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবে।’ আপিল বিভাগের এ রায় পুনর্বিবেচনার জন্য সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ (বৃহত্তর বেঞ্চ) বরাবর মামলার নথিপত্র প্রেরণ করা হয়। যে ঘটনার প্রেক্ষাপটে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এ রায় প্রদান করেন, তার সূত্রপাত ঘটে ভারতের কর্ণাটকে। মামলার বাদীপক্ষে ছিলেন মালিক অর্জুনের প্রথম স্ত্রী ও তাঁর দুই সন্তান আর বিবাদীপক্ষে ছিলেন মালিক অর্জুন, তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী ও দুই সন্তান। বাদীপক্ষ পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত যৌথ অংশীদারি সম্পত্তিতে তাদের অংশ দখলের দাবিতে কর্ণাটকের বিচারিক আদালতে বাটোয়ারা মামলা করে। মামলায় বাদীপক্ষ দাবি করে, তিনি বিবাদীর বৈধ স্ত্রী এবং তাঁর দুই সন্তানসহ বিবাদীর সঙ্গে অংশীদারি সম্পত্তির অংশীদার। সেই সঙ্গে তিনি আরো দাবি করেন যে বিবাদীর দ্বিতীয় বিবাহ অবৈধ। কারণ তাঁর প্রথম বিবাহ বর্তমান থাকা অবস্থায় দ্বিতীয় বিবাহ ও তাঁদের সন্তানের জন্ম হয়েছে, যার ফলে তারা অংশীদারি সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবে না।

কর্ণাটকের বিচারিক আদালত বাদীর দাবির পক্ষে রায় প্রদান করে বলেন, বিবাদীর দ্বিতীয় স্ত্রী ও তাঁর সন্তানরা অবৈধ। কারণ প্রথম স্ত্রী বর্তমান থাকা অবস্থায় বিবাদী দ্বিতীয় বিবাহে আবদ্ধ হয়েছেন। ফলে বাদীপক্ষ দাবীকৃত সম্পত্তির অংশীদার এবং দ্বিতীয় স্ত্রী ও তাঁর সন্তানরা ওই সম্পত্তির অংশীদার নন। বিবাদীপক্ষ অর্থাৎ মালিক অর্জুন ও তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী ও দুই সন্তান ওই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেন। উচ্চ আদালত বিচারিক আদালতের রায়ের বিপরীতে হিন্দু বিবাহ আইন ১৯৫৫-এর ১৬(৩) ধারা উল্লেখ করে বলেন, বিবাহবহির্ভূত সন্তান বৈধ সন্তান হিসেবে বাদীপক্ষের সঙ্গে যৌথ পারিবারিক সম্পত্তির অংশ দাবি করতে পারবেন। এ রায়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে বাদীপক্ষ অর্থাৎ মালিক অর্জুনের প্রথম স্ত্রী ও তাঁর সন্তানরা হাইকোর্ট বিভাগে প্রথম আপিল করেন। আপিলের রায়ে বলা হয়, যেহেতু দ্বিতীয় বিবাহ ও তাঁর সন্তানরা অবৈধ, সেহেতু অবৈধ সন্তানরা ‘জন্মসূত্রে’ যৌথ অংশীদারি সম্পত্তির অধিকারী নন। সন্তানরা শুধু পিতা-মাতার অর্জিত সম্পত্তির অধিকারী হবেন। আদালত সেই সঙ্গে আরো বলেন, বিবাদীর দ্বিতীয় পক্ষের সন্তানরা পিতার মৃত্যুর পর সম্পত্তির অংশীদার হবেন। ওই প্র্রেক্ষাপটে বিবাদীপক্ষ অর্থাৎ মালিক অর্জুনের দ্বিতীয় স্ত্রী ও তাঁর সন্তানরা আপিল বিভাগে বর্তমান দ্বিতীয় আপিলটি করেন। রায়ে বিচারক জি এস সিংভি ও এ কে গাঙ্গুলি ঘোষণা করেন, ‘আইনগত বিবাহবহির্ভূত সন্তান বৈধ সন্তান হিসেবে গণ্য হবেন এবং পিতা-মাতার অর্জিত ও পৈতৃক সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবেন।’ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ (২ নম্বর আদালত) যেসব পর্যবেক্ষণ ও আইনের বিধানের পরিপ্রেক্ষিতে রায় প্রদান করেন তা হলো : পূর্ববর্তী আদালতগুলো হিন্দু বিবাহ আইনের ১৬(৩) ধারাকে অনেক সংকীর্ণ অর্থে দেখেছেন। ১৯৭৬ সালে হিন্দু বিবাহ আইনে ১৯৫৫-এর ১৬ ধারা সংশোধিত হয়। সংশোধিত ১৬(১) ও (২) ধারায় বিবাহবহির্ভূত সন্তানকে বৈধ সন্তানের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ১৬(৩) ধারায় উলি্লখিত ‘সম্পত্তি’ অর্জিত, না শরিক, না পৈতৃক সম্পত্তি তা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হয়নি। তাই ১৬(৩) ধারা অনুযায়ী সম্পত্তির অধিকারের ক্ষেত্রে বিবাহবহির্ভূত কোনো সন্তানের প্রতি বৈষম্য করা যাবে না। এর পরও এ ধারার একটি সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সংশোধিত ১৬ অনুযায়ী বিবাহবহির্ভূত সন্তান বৈধ সন্তানের মতো পিতা-মাতার জীবদ্দশায় পৈতৃক বা অংশীদারি সম্পত্তির অংশ দাবি করতে পারেন না। কেবল পিতার মৃত্যুর পর তা দাবি করতে পারেন।

রায়ে আদালত হিন্দু বিবাহ আইন সংশোধনের দর্শনগত দিকটিও ব্যাখ্যা করেন। তাতে বলা হয়, সমাজে অতীতে যা অবৈধ ছিল বর্তমানে তা বৈধ হতেও পারে। কারণ সামাজিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে বৈধতার ধারণা এগিয়ে যায়। আর আইনের কাজ হচ্ছে সমাজের এই পরিবর্তনগুলো সংশোধনের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত করা। এ ক্ষেত্রেও বলা যায়, পিতা-মাতার সম্পর্ক আইন দ্বারা অনুমোদিত নাও হতে পারে, কিন্তু সন্তানের জন্মকে পিতা-মাতার স্বাধীন সম্পর্কের ভিত্তিতে দেখতে হবে এবং এ ধরনের সম্পর্কের ভিত্তিতে জন্মগ্রহণকারী সন্তান বৈধ সন্তানের মতো অধিকার ভোগ করবে। পাশাপাশি ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনায় বলা আছে, প্রত্যেক ব্যক্তি মর্যাদা, অবস্থান ও সুযোগের ক্ষেত্রে সমান অধিকার পাবে। সংবিধানের ৩৭ নম্বর অনুচ্ছেদে আরো বলা আছে, রাষ্ট্র কর্তৃক আইন তৈরির সময় সংবিধানে উলি্লখিত রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিকে স্বীকৃতি দিতে হবে। ৩৯(ঙ) ও ৩০০(ক) অনুচ্ছেদে বলা আছে, আইন দ্বারা কোনো ব্যক্তিকে সম্পত্তির অধিকারবঞ্চিত করা যাবে না। সুত্রঃ কালের কন্ঠ

তালাক, একে-অপরের বিরুদ্ধে মামলা ও তার ফলাফল

আইনের ভাষায় তালাক হচ্ছে ‘বিবাহ বন্ধন ছিন্ন করা অর্থাৎ স্বামী স্ত্রীর পারস্পরিক সম্পর্ক যদি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, একত্রে বসবাস করা উভয়ের পক্ষেই বা যে কোন এক পক্ষের সম্ভব হয় না, সেক্ষেত্রে তারা নির্দিষ্ট উপায়ে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে পারে।’

সুমির (ছদ্ম নাম) দাম্পত্য জীবনে এমনটিই ঘটেছিল। অবশেষে তিনি তার স্বামীকে তালাক প্রদান করেন। কাবিননামার ১৮ নম্বর ঘরে স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা দেওয়া ছিল। সেই অধিকারের ভিত্তিতে সুমী স্থানীয় কাজি অফিস থেকে তালাকের যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ করে তালাকনামা স্বামীর বরাবর পাঠিয়ে দেন। কিন্তু স্বামীর বসবাসরত স্থানীয় চেয়ারম্যান অফিসে পাঠানো হয়নি কোনো তালাকের কপি। সুমীর এ বিষয়টি জানা ছিল না। স্থানীয় কাজি অফিস থেকেও পাঠানো হয়নি কোনো কপি।

কিন্তু আইন অনুযায়ী স্বামী বা স্ত্রী যে কেউ একে অপরকে তালাক দিতে চাইলে তাকে যে কোন পদ্ধতির তালাক ঘোষণার পর যথাশীঘ্রই সম্ভব স্থানীয় ইউপি/পৌর/সিটি মেয়রকে লিখিতভাবে তালাকের নোটিশ দিতে হবে এবং তালাক গ্রহীতাকে উক্ত নোটিশের নকল প্রদান করতে হবে। চেয়ারম্যান/মেয়র নোটিশ প্রাপ্তির তারিখ হতে নব্বই দিন অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত কোনো তালাক বলবৎ হবে না। কারন নোটিশ প্রাপ্তির ত্রিশ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান/মেয়র সংশ্লিষ্ট পক্ষদ্বয়ের মধ্যে আপোষ বা সমঝোতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সালিশী পরিষদ গঠন করবে এবং উক্ত সালিশী পরিষদ এ জাতীয় সমঝোতার (পুনর্মিলনের) জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থাই  অবলম্বন করবে।

সুমী তালাকনামায় যেদিন স্বাক্ষর করেন, সেদিন থেকে পার হয়ে যায় দুই মাস। এর মানে ৯০ দিন ইদ্দতকাল পালন হতে হলে আর মাত্র এক মাস অপেক্ষা করতে হবে। সুমীর স্বামী আইনি দুর্বলতার সুযোগে এরই মধ্যে সুমীকে তার কাছে ফিরে পেতে পারিবারিক আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলাটির নাম দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার মামলা। এই মূল মামলাটি করার এক সপ্তাহ পর সুমীর স্বামী একই আদালতে একটি অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেন এই মর্মে যে, সুমী যাতে অন্য কোথাও বিয়ে না করতে পারেন। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত সুমী ও তার বাবাকে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আপত্তি দাখিলের জন্য ১০ দিনের সময় দিয়ে তাদের ঠিকানায়  সমন পাঠিয়ে দেয়।

সমন হাতে পেয়ে সুমীর চেহারায় দুশ্চিন্তা আর অস্থিরতার ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠে। তার বাবাও হয়ে পড়ে বিধ্বস্ত। কারন এক মাসে দুটি সমন তারা পান। একটি দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার মামলার লিখিত জবাব দাখিলের জন্য, আরেকটি অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আপত্তি দাখিলের জন্য।

দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার মামলায় বিবাদী করা হয়েছে তিনজনকে। প্রথম বিবাদী সুমীর বাবা, দ্বিতীয় বিবাদী তার মা এবং তৃতীয় বিবাদী সুমী নিজে। আরজিতে সুমীর স্বামীর অভিযোগ, তাঁর স্ত্রীকে জোর করে তালাক দিতে বাধ্য করেছেন তার বাবা। এখন তিনি তাকে নিয়ে ঘর করতে চান। কিন্তু সুমীর ভাষায়, তার স্বামী দুশ্চরিত্রের লোক। নানাভাবে অত্যাচার করত। বাইরে মদ আর নারী নিয়ে ব্যস্ত থাকত। জুয়া খেলত। স্ত্রী আর তার মেয়ের প্রতি কোনো খেয়াল রাখত না। এমন পাষণ্ড আর নির্দয় লোকের সঙ্গে ঘর করার চেয়ে একা থাকা ভালো-এই সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে বাধ্য হয়ে তাকে তাকে তালাক দিই।

সুমী যাতে অন্য কোথাও বিয়ে না করতে পারেন এই অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদনে সুমীর স্বামীর অভিযোগ ‘বিবাদীগণ পরস্পর যোগসাজশে অন্যায় ও বেআইনিভাবে ৩ নম্বর বিবাদীকে অর্থাৎ তার স্ত্রীকে ইদ্দতকালীন সময়ের মধ্যেই অন্যত্র পুনঃবিবাহ দেওয়ার জোর অপতৎপরতায় লিপ্ত হইয়া জনৈক চাকুরীজীবী পাত্র নির্বাচন করিয়া ফেলিয়াছেন এবং যেকোন সময় তার স্ত্রীকে উক্ত পাত্রের সহিত বেআইনীভাবে পুনঃবিবাহ সংঘটন করিতে পারেন।’

কিন্তু আইনের প্রশ্ন হচ্ছে, পারিবারিক আদালতে দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার মামলায় অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন চলে কি না। মকবুল মাজেদ বনাম সুফিয়া খাতুন মামলায় (৪০ ডিএলআর ৩০৫, এইচসিডি) মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের সিদ্ধান্ত এরকম যে, ১৯৮৫ সালে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা হয়। পারিবারিক আদালতের অধ্যাদেশে করা সর্বপ্রথম মামলাটিতে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি উত্থাপিত হয়। এতে স্বামী তাঁর স্ত্রীর দ্বিতীয় বিয়ের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রার্থনা করে। আদালত নিষেধাজ্ঞার আবেদন অগ্রাহ্য করেন। পরে জেলা জজ আদালতে আপিল করা হলে আপিল নামঞ্জুর হয়। পরে হাইকোর্ট বিভাগে রিভিশন করা হয়। হাইকোর্ট বিভাগ তার রায়ে বলেন, ‘পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশে ২০ ধারা অনুযায়ী দেওয়ানি কার্যবিধির ধারা প্রয়োগ যোগ্য নয়।

অবশেষে সুমীর স্বামীর দায়ের করা মামলাটির শুনানি হলো। আদালত আদেশ দিলেন, ‘ইদ্দতকাল পর্যন্ত অর্থাৎ ৯০ দিন অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত স্ত্রী অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হইতে পারিবে না এ মর্মে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর।’  সাধারণত আইন অনুযায়ী তালাকের নোটিশ প্রেরণের পর ইদ্দতকাল পর্যন্ত, অর্থাৎ ৯০ দিন অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকর হয় না। এ সময় অন্যত্র বিয়ে করার ক্ষেত্রে আইনে নিষেধ আছে। আদালত ইদ্দতকাল পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা দিয়ে এ আইনের কার্যকারিতা আরও পাকাপোক্ত করলেন।

এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে তাহলে মূল মামলাটির অর্থাৎ দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার মামলাটির কী হবে?’  সহজেই বলা যায়, মূল মামলার জবাব দিতে হবে। মামলায় লড়তে হবে। শুনানিতে সুমী আদালতে উপস্থিত হয়ে বললেন, কাবিননামার ১৮ নম্বর ঘরে তার তালাক প্রদানের ক্ষমতা দেওয়া আছে। তিনি স্বেচ্ছায় এবং স্বজ্ঞানে তার স্বামীকে তালাক দিয়েছেন। আর তিনি তার স্বামীর ঘর করতে চান না। বিজ্ঞ আদালত ওই দিনই মামলাটি খারিজ করে দিলেন। আইনত সুমীর মেয়েটি সাবালিকা হওয়া পর্যন্ত মায়ের হেফাজতেই থাকবে।

১৯৩৯ সালের মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইনে অত্যন্ত— সুষ্পষ্টভাবে বলা হয়েছে কি কি কারণে একজন স্ত্রী আদালতে বিয়ে বিচ্ছেদের আবেদন করতে পারবে।

কারণগুলো হলোঃ

১. চার বছর পর্যন্ত স্বামী নিরুদ্দেশ থাকলে।
২. দুই বৎসর স্বামী স্ত্রীর খোরপোষ দিতে ব্যর্থ হলে।
৩. স্বামীর সাত বৎসর কিংবা তার চেয়েও বেশী কারাদ- হলে।
৪. স্বামী কোন যুক্তিসংগত কারণ ব্যতিত তিন বছর যাবৎ দাম্পত্য দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে।
৫. বিয়ের সময় পুরষত্বহীন থাকলে এবং তা মামলা দায়ের করা পর্যন্ত বজায় থাকলে।
৬. স্বামী দুই বৎসর ধরে পাগল থাকলে অথবা কুষ্ঠ ব্যাধিতে বা মারাত্মক যৌন ব্যধিতে আক্রান্ত থাকলে।
৭. বিবাহ অস্বীকার করলে। কোন মেয়ের বাবা বা অভিভাবক যদি ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগে মেয়ের বিয়ে দেন, তাহলে মেয়েটি ১৯ বছর হওয়ার আগে বিয়ে অস্বীকার করে বিয়ে ভেঙ্গে দিতে পারে, তবে যদি মেয়েটির স্বামীর সঙ্গে দাম্পত্য সর্ম্পক (সহবাস) স্থাপিত না হয়ে থাকে তখনি কোন বিয়ে অস্বীকার করে আদালতে বিচ্ছেদের ডিক্রি চাইতে পারে।
৮. স্বামী ১৯৬১ সনের মুসলিম পারিবারিক আইনের বিধান লংঘন করে একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করলে।
৯. স্বামীর নিষ্ঠুরতার কারণে।

উপরে যে কোন এক বা একাধিক কারণে স্ত্রী আদালতে বিয়ে বিচ্ছেদের আবেদন করতে পারে। অভিযোগ প্রমাণের দায়িত্ব স্ত্রীর। প্রমাণিত হলে স্ত্রী বিচ্ছেদের পক্ষে ডিক্রি পেতে পারে, আদালত বিচ্ছেদের ডিক্রি দেবার পর সাত দিনের মধ্যে একটি সত্যায়িত কপি আদালতের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানের কাছে পাঠাবে।

১৯৬১ সনের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ অনুযায়ী চেয়ারম্যান নোটিশকে তালাক সংক্রান্ত নোটিশ হিসেবে গণ্য করে আইনানুযায়ী পদক্ষেপ নিবে এবং চেয়ারম্যান যেদিন নোটিশ পাবে সে দিন থেকে ঠিক নব্বই দিন পর তালাক চূড়ান্তভাবে কার্যকর হবে।

স্বামীর আদালত স্বীকৃত নিষ্ঠুর ব্যবহার সমূহ

ক) অভ্যাসগতভাবে স্ত্রীকে আঘাত করলে বা নিষ্ঠুর আচরণ করলে, উক্ত আচরণ দৈহিক পীড়নের পর্যায়ে না পড়লেও, তার জীবন শোচনীয় করে তুলেছে এমন হলে।
খ) স্বামী খারাপ মেয়ের সাথে জীবনযাপন করলে।
গ) স্ত্রীকে অনৈতিক জীবনযাপনে বাধ্য করলে।
ঘ) স্ত্রীর সম্পত্তি নষ্ট করলে।
ঙ) স্ত্রীকে ধর্মপালনে বাধা দিলে।
চ) একাধিক স্ত্রী থাকলে সকলের সাথে সমান ব্যবহার না করলে।
ছ) এছাড়া অন্য যে কোন কারণে (যে সকল কারণে মুসলিম আইনে বিয়ের চুক্তি ভঙ্গ করা হয়)।

লেখকঃ সাপ্তাহিক ‘সময়ের দিগন্ত’ পত্রিকার প্রকাশক-সম্পাদক ও আইনজীবী জজ কোর্ট, কুষ্টিয়া।

লিখেছেনঃ অ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক