ঐতিহাসিক রায়
বিবাহবহির্ভূত সন্তান সম্পত্তির উত্তরাধিকারী

গত বছরের ৩১ মার্চ একটি যুগান্তকারী রায় প্রদান করেছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। রিভানাসিদ্ধাপা ও অন্যান্য বনাম মালিক অর্জুন ও অন্যান্য ২০১১ মামলার রায়ে বলা হয়, ‘আইনগত বিবাহবহির্ভূত সন্তান বৈধ সন্তান হিসেবে গণ্য হবে এবং পিতামাতার অর্জিত ও পৈতৃক সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবে।’ আপিল বিভাগের এ রায় পুনর্বিবেচনার জন্য সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ (বৃহত্তর বেঞ্চ) বরাবর মামলার নথিপত্র প্রেরণ করা হয়। যে ঘটনার প্রেক্ষাপটে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এ রায় প্রদান করেন, তার সূত্রপাত ঘটে ভারতের কর্ণাটকে। মামলার বাদীপক্ষে ছিলেন মালিক অর্জুনের প্রথম স্ত্রী ও তাঁর দুই সন্তান আর বিবাদীপক্ষে ছিলেন মালিক অর্জুন, তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী ও দুই সন্তান। বাদীপক্ষ পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত যৌথ অংশীদারি সম্পত্তিতে তাদের অংশ দখলের দাবিতে কর্ণাটকের বিচারিক আদালতে বাটোয়ারা মামলা করে। মামলায় বাদীপক্ষ দাবি করে, তিনি বিবাদীর বৈধ স্ত্রী এবং তাঁর দুই সন্তানসহ বিবাদীর সঙ্গে অংশীদারি সম্পত্তির অংশীদার। সেই সঙ্গে তিনি আরো দাবি করেন যে বিবাদীর দ্বিতীয় বিবাহ অবৈধ। কারণ তাঁর প্রথম বিবাহ বর্তমান থাকা অবস্থায় দ্বিতীয় বিবাহ ও তাঁদের সন্তানের জন্ম হয়েছে, যার ফলে তারা অংশীদারি সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবে না।

কর্ণাটকের বিচারিক আদালত বাদীর দাবির পক্ষে রায় প্রদান করে বলেন, বিবাদীর দ্বিতীয় স্ত্রী ও তাঁর সন্তানরা অবৈধ। কারণ প্রথম স্ত্রী বর্তমান থাকা অবস্থায় বিবাদী দ্বিতীয় বিবাহে আবদ্ধ হয়েছেন। ফলে বাদীপক্ষ দাবীকৃত সম্পত্তির অংশীদার এবং দ্বিতীয় স্ত্রী ও তাঁর সন্তানরা ওই সম্পত্তির অংশীদার নন। বিবাদীপক্ষ অর্থাৎ মালিক অর্জুন ও তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী ও দুই সন্তান ওই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেন। উচ্চ আদালত বিচারিক আদালতের রায়ের বিপরীতে হিন্দু বিবাহ আইন ১৯৫৫-এর ১৬(৩) ধারা উল্লেখ করে বলেন, বিবাহবহির্ভূত সন্তান বৈধ সন্তান হিসেবে বাদীপক্ষের সঙ্গে যৌথ পারিবারিক সম্পত্তির অংশ দাবি করতে পারবেন। এ রায়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে বাদীপক্ষ অর্থাৎ মালিক অর্জুনের প্রথম স্ত্রী ও তাঁর সন্তানরা হাইকোর্ট বিভাগে প্রথম আপিল করেন। আপিলের রায়ে বলা হয়, যেহেতু দ্বিতীয় বিবাহ ও তাঁর সন্তানরা অবৈধ, সেহেতু অবৈধ সন্তানরা ‘জন্মসূত্রে’ যৌথ অংশীদারি সম্পত্তির অধিকারী নন। সন্তানরা শুধু পিতা-মাতার অর্জিত সম্পত্তির অধিকারী হবেন। আদালত সেই সঙ্গে আরো বলেন, বিবাদীর দ্বিতীয় পক্ষের সন্তানরা পিতার মৃত্যুর পর সম্পত্তির অংশীদার হবেন। ওই প্র্রেক্ষাপটে বিবাদীপক্ষ অর্থাৎ মালিক অর্জুনের দ্বিতীয় স্ত্রী ও তাঁর সন্তানরা আপিল বিভাগে বর্তমান দ্বিতীয় আপিলটি করেন। রায়ে বিচারক জি এস সিংভি ও এ কে গাঙ্গুলি ঘোষণা করেন, ‘আইনগত বিবাহবহির্ভূত সন্তান বৈধ সন্তান হিসেবে গণ্য হবেন এবং পিতা-মাতার অর্জিত ও পৈতৃক সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবেন।’ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ (২ নম্বর আদালত) যেসব পর্যবেক্ষণ ও আইনের বিধানের পরিপ্রেক্ষিতে রায় প্রদান করেন তা হলো : পূর্ববর্তী আদালতগুলো হিন্দু বিবাহ আইনের ১৬(৩) ধারাকে অনেক সংকীর্ণ অর্থে দেখেছেন। ১৯৭৬ সালে হিন্দু বিবাহ আইনে ১৯৫৫-এর ১৬ ধারা সংশোধিত হয়। সংশোধিত ১৬(১) ও (২) ধারায় বিবাহবহির্ভূত সন্তানকে বৈধ সন্তানের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ১৬(৩) ধারায় উলি্লখিত ‘সম্পত্তি’ অর্জিত, না শরিক, না পৈতৃক সম্পত্তি তা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হয়নি। তাই ১৬(৩) ধারা অনুযায়ী সম্পত্তির অধিকারের ক্ষেত্রে বিবাহবহির্ভূত কোনো সন্তানের প্রতি বৈষম্য করা যাবে না। এর পরও এ ধারার একটি সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সংশোধিত ১৬ অনুযায়ী বিবাহবহির্ভূত সন্তান বৈধ সন্তানের মতো পিতা-মাতার জীবদ্দশায় পৈতৃক বা অংশীদারি সম্পত্তির অংশ দাবি করতে পারেন না। কেবল পিতার মৃত্যুর পর তা দাবি করতে পারেন।

রায়ে আদালত হিন্দু বিবাহ আইন সংশোধনের দর্শনগত দিকটিও ব্যাখ্যা করেন। তাতে বলা হয়, সমাজে অতীতে যা অবৈধ ছিল বর্তমানে তা বৈধ হতেও পারে। কারণ সামাজিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে বৈধতার ধারণা এগিয়ে যায়। আর আইনের কাজ হচ্ছে সমাজের এই পরিবর্তনগুলো সংশোধনের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত করা। এ ক্ষেত্রেও বলা যায়, পিতা-মাতার সম্পর্ক আইন দ্বারা অনুমোদিত নাও হতে পারে, কিন্তু সন্তানের জন্মকে পিতা-মাতার স্বাধীন সম্পর্কের ভিত্তিতে দেখতে হবে এবং এ ধরনের সম্পর্কের ভিত্তিতে জন্মগ্রহণকারী সন্তান বৈধ সন্তানের মতো অধিকার ভোগ করবে। পাশাপাশি ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনায় বলা আছে, প্রত্যেক ব্যক্তি মর্যাদা, অবস্থান ও সুযোগের ক্ষেত্রে সমান অধিকার পাবে। সংবিধানের ৩৭ নম্বর অনুচ্ছেদে আরো বলা আছে, রাষ্ট্র কর্তৃক আইন তৈরির সময় সংবিধানে উলি্লখিত রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিকে স্বীকৃতি দিতে হবে। ৩৯(ঙ) ও ৩০০(ক) অনুচ্ছেদে বলা আছে, আইন দ্বারা কোনো ব্যক্তিকে সম্পত্তির অধিকারবঞ্চিত করা যাবে না। সুত্রঃ কালের কন্ঠ

Published by

Best Marriage Media Bangladesh

Best Marriage Media in Bangladesh | Bibahabd is the Leading Bangladeshi Matrimony website, Provides online and offline matchmaking service for marital relationship.

Leave a Reply