মানব ইতিহাস লক্ষ করলে দেখা যায়, প্রাচীন সমাজে নারীদের মান-মর্যাদার প্রতি কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। সমাজে তখন নারীর অধিকার ও মর্যাদা ছিল না। ইসলাম ধর্মের বিধান অনুযায়ী বিবাহের মাধ্যমে নারীর মর্যাদা ও গুরুত্ব সংরক্ষিত হয়। ইসলাম নারীর অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করে নারী জাতিকে মানবিক উন্নতি ও প্রগতির বুনিয়াদ ঘোষণা করেছে। ইসলাম ঘোষণা করে_সমাজে পুরুষের মতোই নারীর অধিকার রয়েছে। তাই বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমেই নারী-পুরুষের অধিকার নিশ্চিত হয়।
মুসলিম পারিবারিক আইন : মুসলিম পারিবারিক আইন ইসলামী শরিয়তের দ্বারা বিধিবদ্ধ হয়েছে। তবে যুগের বিবর্তনে এবং ক্রমোন্নতির সঙ্গে সঙ্গে সরকারিভাবে আইন ও বিধির দ্বারা কিছু কিছু নীতি নির্ধারিত হয়ে থাকে, এসব আইন, বিধি ও নীতিমালার প্রণয়ন যুগের প্রত্যক্ষ চাহিদা। আর এ লক্ষ্যে ১৯৬১ সালে প্রণীত হয়েছে মুসলিম বিবাহ আইন। যাতে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের বিবাহ রেজিস্ট্র্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
বিবাহ রেজিস্ট্র্রেশন আইনে বৈধ বিবাহের অবশ্য পূরণীয় শর্তগুলো:
বিবাহের যোগ্যতা : বিবাহ করতে ইচ্ছুক পক্ষদ্বয়কে অবশ্যই প্রাপ্তবয়স্ক/বয়স্কা এবং সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী হতে হবে। এ ক্ষেত্রে পুরুষের বয়স নূন্যতম ২১ বছর এবং স্ত্রীলোকের বয়স নূন্যতম ১৮ বছর হতে হবে।
প্রস্তাব দান এবং কবুল : বিবাহ করতে ইচ্ছুক পক্ষদ্বয়ের মধ্যে এক পক্ষকে প্রস্তাব দিতে হবে এবং অপর পক্ষ থেকে তা গ্রহণ করতে হবে। প্রস্তাব দান ও গ্রহণ একই মজলিসে কমপক্ষে দুজন প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন পুরুষ সাক্ষী কিংবা একজন পুরুষ ও দুজন মহিলা সাক্ষীর সামনে হতে হবে। এটিই বিবাহ বন্ধন সংগঠিত হওয়ার মূল শর্ত।
সম্মতি : বিবাহের জন্য পাত্র এবং পাত্রীর স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতির প্রয়োজন। বল প্রয়োগে সম্মতি আদায়ে বিবাহ বাতিল বলে গণ্য হবে।
বিবাহ রেজিস্ট্র্রেশন : বিবাহ রেজিস্ট্র্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের বিধান অনুসারে সরকার কর্তৃক নিযুক্ত নিকাহ্ রেজিস্ট্র্রার দ্বারা অবশ্যই বিবাহ রেজিস্ট্র্রি করাতে হবে।
বিবাহ রেজিস্ট্র্রেশন ফি : সরকার গেজেট নোটিফিকেশন দিয়ে বিবাহের ফি নির্ধারণ করেছে। বিবাহ রেজিস্ট্র্রেশন ফি দেনমোহরের ওপর নির্ধারণ হয়ে থাকে। দেনমোহরের প্রতি হাজারে ১০ টাকা হারে ফি নিকাহ্ রেজিস্ট্র্রাররা সরকার নির্ধারিত রশিদ প্রদানের মাধ্যমে গ্রহণ করে থাকেন। দেনমোহর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ফি চার হাজার টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিবাহ রেজিস্ট্র্রি না করার ফলাফল : যেহেতু ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের বিধান অনুযায়ী প্রতিটি মুসলিম বিবাহ রেজিস্ট্র্রি করা বাধ্যতামূলক। বিবাহ রেজিস্ট্র্রি না করলে নিম্নলিখিত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় :
১. সরকার নিযুক্ত নিকাহ্ রেজিস্ট্র্রার কর্তৃক বিবাহ রেজিস্ট্রেশন না হলে সম্পত্তির উত্তরাধিকারের বিবাদ-বিসংবাদের সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
২. বিবাহ রেজিস্ট্রি না হাওয়ায় বিবাহের বৈধতার ক্ষেত্রে দলিলগত সাক্ষীর অভাব ঘটে, ফলে বিবাদ নিষ্পত্তি করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
৩. বিবাহ রেজিস্ট্রেশন না হওয়ার ফলে মৃতের সন্তানদের উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে বৈধতার প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়।
৪. বিবাহ রেজিস্ট্র্রেশন না হলে স্ত্রী কর্তৃক স্বামীর বিরুদ্ধে খোরপোষ ও মোহরানার দাবির মামলা অগ্রাহ্য বলে গণ্য হতে পারে।
বিবাহের দেনমোহর : দাম্পত্যজীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো দেনমোহর। দেনমোহর বিবাহের একটি অত্যাবশ্যকীয় শর্ত। বিবাহের রেজিস্ট্র্রেশনের সময় দেনমোহর ধার্য করতে হবে। স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে ন্যায়সঙ্গতভাবে দেনমোহর পাওয়ার অধিকারী হবে।
বিবাহের সময় প্রতিদানস্বরূপ বর কর্তৃক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দিতে সম্মত অথবা গৃহীত কোনো সম্পত্তি বা মূল্যবান জামানতকে মোহর বলে। মোহরপ্রাপ্তির অধিকার সম্পূর্ণরূপে স্ত্রীর। মোহরানা বলতে এমন অর্থ সম্পদ বুঝায়, যা বিয়ের বন্ধনে স্ত্রীর ওপর স্বামীত্বের অধিকার লাভের বিনিময়ে স্বামীকে আদায় করতে হয়।
মোহরানা স্বামীর কোনো করুণা নয়, না কোনো সামাজিক ট্রাডিশন। স্ত্রীর মোহরানা দেওয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালার যে নির্দেশ তা নামাজ রোজার মতোই একটি নির্দেশ। স্ত্রীর মোহরানার অর্থ আদায় করা স্বামীর ওপর যেমন অবশ্য কর্তব্য, তেমনি তা ইবাদতও।
ইসলামী শরিয়তের বিধান মোতাবেক মোহর আদায় প্রতিটি স্বামীর জন্য ফরজ। দেনমোহর স্বামীর জন্য একটি ঋণ, সর্বাবস্থায় দেনমোহর পরিশোধ করা বাধ্যতামূলক। রাসুল (সা.) বলেছেন – ’যে ব্যক্তি কোনো মেয়েকে মোহরানা দেওয়ার ওয়াদায় বিয়ে করেছে, কিন্তু সে মোহরানা আদায় করতে তার ইচ্ছে নেই, কেয়ামতের দিন সে আল্লাহর সামনে অপরাধী হিসেবে দাঁড়াতে বাধ্য হবে’ (মুসনাদে আহমদ)।
আমার স্ত্রী দীর্ঘ ১৫ বছর ঘর করার পর আমাদের বনিবনা হয়নি বলে সে স্ব ইচ্ছায় ডিবোর্স দিয়ে দিয়েছে আমাকে । আমিও তা গ্রহন করি । আমাদের দু’টি সন্তান ও রয়েছে ছেলে ৯বছর মেয়ে ৩বছর ৮মাস । দেনমোহর আমি পরিশোধ করব । যেহেতু ঘটনা খুব শীঘ্রই । সে জব করে । আমার প্রশ্ন হল আমি আমার বেবীদের নিয়ে আসতে চাই । কারন সে কাজের মেয়ে আত্নীয় স্বজন দের কাছে রেখে যায় । এতে আমার সন্তানদের অমঙ্গল হচ্ছে । ওদের ভবিষ্যত ও লেখা পড়া কারনে আমার কাছে রাখতে চাই । কি ভাবে আনতে পারি ? বেবীদের সাথে যোগাযোগ করতে দিচ্ছে না ।