কেউ বলে না, “You Are Doing a Great Job Mommy!” 

মা হবার পর নিজের শারীরিক পরিবর্তন, মানসিক পরিবর্তন, হরমোনাল ইমব্যালান্স, ঘুমের অভাব, স্ট্রেস, বাচ্চার কলিক, ব্রেস্টফীডিং সবকিছু মিলিয়ে মেয়েটা এমনিতেই সবসময় কিছুটা বিক্ষিপ্ত, কিছুটা নির্লিপ্ত, কিছুটা বিরক্ত, কিছুটা হতাশ অবস্থায় থাকে। বাচ্চার ঠাণ্ডা লাগছে কিনা, ক্ষিধে পেয়েছে কিনা, স্কিনে র‍্যাশ বের হলো কিনা, পেটব্যথা করছে কিনা – ইত্যাদি নানান চিন্তায় সে সবসময় আচ্ছন্ন থাকে।
 
যে মেয়েটা চোখে সবসময় কাজল দিতো, এখন সে দিনের পর দিন আয়নার দিকে তাকানোর ও সময় পায় না, কাজলের জায়গায় তার চোখের কোণায় এখন নির্ঘুম রাতের রাতজাগা পাখি হবার কারণে কালি পড়েছে। সবসময় প্রতিটা ড্রেসের সাথে ম্যাচিং অথবা পারফেক্ট কনট্রাস্টে কানের দুল আর আংটি-ব্রেসলেট পরা মেয়েটি এখন দিনের পর দিন মলিন ম্যাক্সি, অথবা লুজ টিশার্ট আর পালাজ্জো পরে দিন কাটে।
 
কখনো স্ট্রেইট আয়রন করা, কখনো বা কার্ল করা, কখনো ব্রেইড করে হেয়ারস্টাইল করা মেয়েটি এখন দিনের পর দিন একই খোঁপায় চুল বেঁধে রাখে, কখনো কখনো দিনশেষে মাথায় চিরুনি বুলানোর ও সময় পায় না।  কিন্তু এমনটা কি হবার কথা ছিল? সন্তান যখন গর্ভে থাকে, তখন থেকেই আশেপাশের মানুষের(!) পরামর্শ আর শুভাকাংক্ষিতায় মেয়েটি নিজেকে ভুলে যেতে শুরু করে। বারবারই মনে হয়, আমি মনে হয় আমার ১০০% দিতে পারছি না, আমি মনে হয় ভালো মা হতে পারব না, আমি তো কিছুই জানি না, আমি ছাড়া সবাই বাচ্চার ভালো বোঝে।
 
হরমোনের পরিবর্তন আর শারীরিক কারণে ধীরে ধীরে এই মন খারাপ ভাবটা ডিপ্রেশনে রূপান্তরিত হতে শুরু করে। আর সেটা আরও প্রখর হয় সন্তান জন্মদানের পর। এই সময়টাকে বলা হয় পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন বা বেবি ব্লুজ। এবং নিজের দিকে না তাকানো আর নিজেকে সময় না দেয়ার কারণে ডিপ্রেশনের প্রখরতা আরো বাড়তে থাকে।  এ সময় বাচ্চা কেমন আছে সবাই জিজ্ঞেস করে। মা কেমন আছে খুব সীমিত সংখ্যক মানুষই জানতে চায়। রাত জাগতে হয়, ব্রেস্টফীডিং এর কারণে শরীরে ক্লান্তি থাকে, অনেকের ব্লাড প্রেশার হাই হয়ে যায় ঘুমের অভাব আর স্ট্রেস এর কারণে।
 
তার মধ্যে মাথায় হাত বুলানোর মতো মানুষ খুব কমই থাকে।  মিষ্টি করে হেসে কেউ বলে না, “You Are Doing a Great Job Mommy!” সচরাচর কেউ বলে না, “তুমি একটু ঘুমাও, বাইরে থেকে একটু ঘুরে আসো, আমি ততক্ষণ তোমার বাচ্চাটাকে রাখছি।” এইটুকু সহমর্মিতা আর সহযোগিতা কিন্তু সব নতুন মায়েরই প্রাপ্য।
আমার এক ফ্রেন্ডের সাথে কিছুদিন আগে কথা হচ্ছিল। ও কথায় কথায় বললো, “দোস্ত মেয়ের গায়ে তেল-লোশন মাখি। নিজের গায়ে মাখার সময় পাই না। আমার অবস্থা পুরা বস্তির মতো, স্কিন বুড়ো মানুষের মতো হয়ে গিয়েছে।”
 
মনটা খারাপ হয়ে গেলো ওর কথাটা শুনে। আমি সাথে সাথেই ওকে বললাম, “প্লিজ দোস্ত, এমন করিস না। যখন মেয়ের গায়ে মাখবি, নিজেও ইউজ করবি। নিজের যত্ন নিবি, না হলে একসময় কঠিন ডিপ্রেশনে চলে যাবি। নিজের মন ভালো রাখাটা জরুরী। নিজেকে ভালোবাসাটা খুব জরুরী। না হলে একসময় নিজের চারপাশের মানুষদেরও তুই ভালো রাখতে পারবি না।”
 
সে বলল তার এক আত্মীয় নাকি তাকে লোশন মাখতে দেখে বলেছে শুধু নিজে না মেখে বাচ্চাকেও যেন মাখায়!!! পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন কারো কারো ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী হয়। পরিবার, বন্ধুবান্ধব, আশেপাশের মানুষের সহযোগিতা তো অবশ্যই কাম্য।  কিন্তু আপনি নিজে কি নিজেকে সহযোগিতা করছেন? নিজের ভালো থাকাটা যে কতটা ইম্পরট্যান্ট সেইটা কি বুঝতে পারছেন? সন্তান অবশ্যই আপনার ফার্স্ট প্রায়োরিটি। আপনি নিজেও কিন্তু আপনার প্রায়োরিটি। সন্তানের যত্নের পাশাপাশি নিজের ও যত্ন নিন।
 
যা করতে ভালো লাগে, তাই করুন। সব ব্যস্ততার মাঝেও নিজেকে আলাদা করে সময় দিন। বই পড়ুন, মুভি দেখুন, সময় করে বেড়িয়ে আসুন, কেনাকাটা করুন, ক্র্যাফটিং বা ছবি আঁকতে ভালোবাসলে সেটাই করুন, লেখালেখির হাত থাকলে লিখুন। স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ রাখুন, আড্ডা দিন। নিজের ত্বকের যত্ন নিন, চুলের যত্ন নিন, সাজগোজ করুন।  আপনার মন ভালো থাকবে। এতে আপনার বাচ্চা আর আপনার সংসার টাও ভালো থাকবে। # সংগ্রহিত পোষ্ট

পরকীয়া ও অন্যান্য প্রসঙ্গ

ইউকিপিডিয়ার মতে পরকীয়ার (ইংরেজি: Adultery বা Extramarital affair বা Extramarital sex) হল বিবাহিত কোন ব্যক্তির (নারী বা পুরুষ) স্বামী বা স্ত্রী ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তির সাথে বিবাহোত্তর বা বিবাহবহির্ভূত প্রেম, যৌন সম্পর্ক ও যৌন কর্মকান্ড।

মানবসমাজে এটি লঘু বা গুরুভাবে নেতিবাচক হিসেবে গণ্য  পাশ্চাত্য আধুনিক সমাজে এর প্রতি নেতিবাচক মনোভাব বজায় থাকলেও এটি আইনত অপরাধ বলে বিবেচিত হয় না, তবে অভিযোগ প্রমাণিত হলে পরকীয়াকারী ব্যক্তির বিবাহিত সঙ্গী তার সাথে বিবাহবিচ্ছেদের জন্য কোর্টে আবেদন করতে পারেন। 

তবে কিছু ইসলামি রাষ্ট্রসমূহে এর জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে, যা হল পাথর নিক্ষেপ করে মৃত্যুদন্ড প্রদান। মনোচিকিৎসায় একথা স্বীকৃত যে, পিতামাতার পরকীয়া সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর এবং সামাজিক সম্পর্ক ও যোগাযোগে বিরূপ প্রভাব ফেলে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা সন্তানের মানসিক বিষন্নতার ও আগ্রাসী মনোভাবের জন্ম দেয় । এছাড়া পারিবারিক ও দাম্পত্য সম্পর্কের অবনতিতে পরকীয়া প্রভাব রাখে ।

মানুষ কেন পরকীয়ায় জড়ায়:

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের চাইল্ড অ্যাডোলসেন্ট ও ফ্যামিলি সাইকিয়াট্রি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, মনোদৈহিক ও সামাজিক কারণে মানুষ পরকীয়ায় জড়ায়। প্রথমে আসে দৈহিক বিষয়। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যৌন সম্পর্কে অতৃপ্তি থেকে অনেকে এ সম্পর্কে জড়ায়। সেক্স মানুষের একটি শরীরবৃত্তীয় চাহিদা।

যদি স্বামী-স্ত্রীর যৌনজীবন দুর্বল হয়, তাহলে অপর ব্যক্তির প্রতি আসক্তি তৈরি হতে পারে।  কারো মধ্যে যদি ডিআরডিফোর জিনের উপস্থিতি বেশি হয়, তাঁদেরও পরকীয়া বা বাড়তি সম্পর্কে জড়ানোর প্রবণতা থাকতে পারে।

অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, অনেক সময় মানসিক সমস্যার কারণেও মানুষ পরকীয়ায় জড়াতে পারে।  যাঁদের মধ্যে বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডার আছে, তাঁদের পরকীয়ার সম্পর্কে জড়ানোর প্রবণতা দেখা যায়। তাঁরা কোনো কিছুর মধ্যে স্থিরতা খুঁজে পায় না।

সঙ্গীর উদাসীনতা ও দূরত্বের কারণেও অনেক সময় মানুষ পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে জানিয়ে তিনি বলেন, অনেক সময় স্বামী-স্ত্রী বাস্তবতার কারণে, কাজের কারণে হয়তো দূরে চলে যায়।  তখন তাঁদের মধ্যে পরকীয়ার আগ্রহ বাড়ে।  অনেক সময় পশ্চিমা সংস্কৃতির ধাঁচ নিজেদের মধ্যে আনতে চায়, তখন পরকীয়া বাড়ে। এ ছাড়া স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্ব, দূরত্ব ইত্যাদির জন্যও অন্যের প্রতি আগ্রহ, আসক্তির ঘটনা ঘটে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তানজির আহম্মদ তুষার মনে করেন –

প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে পরকীয়ার বিষয়টি চলে আসছে। উন্নয়ন ও মঙ্গলের কথা চিন্তা করে মানুষ একগামী। তবে মানুষ মূলত বহুগামী। পরকীয়াতে যেকোনো একজনকে বিবাহিত হতে হবে অথবা দুজনই বিবাহিত থাকতে পারেন।

মানুষ কেন পরকীয়ায় জড়ায়, এ বিষয়ে তানজির আহম্মদ বলেন –
এক ধরনের প্রয়োজন বা চাহিদার কারণে মানুষ পরকীয়ায় জড়ায়। অনেক সময় শারীরিক প্রয়োজন থাকে। আর্থিক প্রয়োজন থাকে। স্ট্যাটাস বাড়ানোর জন্যও কেউ কেউ পরকীয়ায় জড়ায়। অনেক সময় মানসিক প্রয়োজন থাকে।

আবার কিছু বিষয় শেয়ার করতে করতে অনেকে একসময় পরকীয়ায় জড়িয়ে যায়।   নির্ভরতা থেকেও পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়তে পারে জানিয়ে সাইকোলজিস্ট তানজির আহম্মদ বলেন, আবার অনেক সময় অবস্থার কারণেও হয়তো পরকীয়ায় জড়ায়। হতে পারে একসঙ্গে কোথাও বেড়াতে গেল। একপর্যায়ে হয়তো ভালো লেগে গেল। তখনও পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। আবার দীর্ঘসময় একসঙ্গে কাটাতে কাটাতে, বন্ধুত্ব থেকেও অনেক সময় পরকীয়া হয়ে যায়।   

অনেকে শখ থেকেও পরকীয়ায় জড়ায় –
অন্য আরেকটি শরীর কেমন, একে জানার একটি আগ্রহ থাকে। অনেকে আবার ভাবে, ‘ওরা কি সুখী! এই মানুষটির সঙ্গে থাকতে পারলে হয়তো আমার অনেক সুখ লাগত।’ এ থেকেও অনেকে ওই ব্যক্তির প্রতি আগ্রহ অনুভব করে। অনেক সময় মিডিয়াও পরকীয়ার প্রবণতা তৈরি করে। বিভিন্ন ধরনের পর্নোসাইট দেখে পরকীয়ার প্রতি আগ্রহ তৈরি হতে পারে।  

আসলে অধিকাংশ মানুষেরই একটি বাড়তি চাহিদা থাকে।  তবে সামাজিক ও ধর্মীয় নিয়মনীতির কারণে এ সম্পর্কে জড়ায় না।  অনেকে কিছু সুবিধা আদায়ের জন্য পরকীয়া করে জানিয়ে তিনি বলেন, হয়তো আর্থিক সাহায্য পাবে এ সম্পর্কে জড়ালে, এমন ভাবনা থেকেও কেউ কেউ পরকীয়ায় জড়ায়।

সাইকোলজিস্ট ইশরাত জাহান বীথির মতে –
পরকীয়ার পেছনে জড়ানোর একটি বড় কারণ হলো শূন্যতা। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যখন শূন্যতা তৈরি হয়, তখন আরেকজন সেখানে প্রবেশ করে। হয়তো স্বামী বা স্ত্রীর আর আগের মতো করে কথা বলে না বা আদর করে না। যত্ন কম নেয়। এই বিষয়গুলোর কারণে অন্যের প্রতি আসক্তি তৈরি হয়।  স্বামী-স্ত্রী দূরে থাকলেও এ সমস্যা হতে পারে। মেয়েদের বিয়ের আগে হয়তো যৌন চাহিদা তেমন থাকে না। বিয়ের পর তাঁরা বুঝতে পারে বিষয়টি।

শুধু যৌনতায় অংশগ্রহণ নয়, কথাবার্তায়ও বিষয়টি থাকতে হয়। তখন যদি অন্য কেউ সেই কথাগুলো শোনায়, তাহলে তাঁর প্রতি আগ্রহ কাজ করে।  শারীরিক গঠন এ ব্যাপারে কাজ করতে পারে। কিছু কিছু ছেলে চিকন স্বাস্থ্যের মেয়ে পছন্দ করে।  আবার কিছু কিছু ছেলে হয়তো একটু স্থূল স্বাস্থ্যের মেয়ে পছন্দ করে।  সন্তান হওয়ার পর অনেক মেয়ে স্থূল হয়ে যায়। এতে স্ত্রীর প্রতি আগ্রহ কমে যেতে পারে। আবার নারীর বেলায়ও অনেকে হয়তো খুব হ্যান্ডসাম ছেলে পছন্দ করে, যা হয়তো তাঁর স্বামীর সঙ্গে মেলে না।

সাইকোলজিস্ট ইশরাত শারমীন রহমান বলেন-
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ছোট ছোট চাওয়াগুলো হয়তো পূরণ হচ্ছে না। হয়তো স্ত্রী চাঁদ দেখতে পছন্দ করে, স্বামী সেটিকে বিলাসিতা মনে করে। এ রকম সময় অন্য কেউ যখন সেই জায়গায় আসে, তখন নির্ভরতা বেড়ে যায়।  আবার অনেকে ভাবে, আমি তো একসঙ্গে দুটোকেই ব্যালান্স করছি। তাই আমি এমন একটি সম্পর্ক করতেই পারি।

আবার অনেকে মনে করেন, স্বামী বা স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও খুব ভালো একজন বন্ধু অথবা বান্ধবী থাকতে পারে। যার সঙ্গে মানসিক শেয়ারিং ও শারীরিক সম্পর্ক — দুটো বিষয়ই থাকতে পারে। এটা দোষের কিছু নয়। কারণ, বন্ধুত্বের সম্পর্কে কোনো প্রতিজ্ঞা নেই। যে কেউ যেকোনো সময় হয়তো এখান থেকে সরে আসতে পারে। একে অনেকে পরকীয়া বলে মনে করে না।

আবার অনেকে বিবাহবিচ্ছেদের পর বৈবাহিক সম্পর্কে জড়াতে চায় না। বিবাহিত কারো সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে নিজের চাওয়াগুলো পূর্ণ করতে চায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানসিক ও শারীরিক প্রয়োজন মেটানোর বিষয়টিই এখানে মুখ্য হয়। এসব ভাবনা ব্যক্তিকে পরকীয়ার প্রতি আকৃষ্ট করে তোলে বলেই মনে করেন ইশরাত শারমীন রহমান।

আপনার সঙ্গী পরকীয়া আসক্ত হচ্ছে কিনা তা বুঝবেন কিভাবে ?

কিভাবে বুঝবেন আপনার স্বামী/ স্ত্রী কোন পরকীয়ার সম্পর্কে জড়িয়েছেন কিনা? আসুন জেনে নেয়া যাক কি কি লক্ষনে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার স্বামী/ স্ত্রী পরকীয়া করছেন কিনা।

সঙ্গী যদি ফোন বা ইন্টারনেটে আসক্ত হয়ে পড়েন:
সঙ্গী ফোনের পেছনে কতটা সময় ব্যয় করছেন সেদিকে নজর রাখুন। একসাথে বসে থেকে বা ঘুরতে গেলে যদি তিনি ফোন নিয়েই ব্যস্ত থাকেন, মেসেজ বা ইন্টারনেট ব্রাউজিং করেন- তাহলে তা নিশ্চিতভাবে অন্য একটি সম্পর্কেরই ইঙ্গিত। এছাড়া দিনের বেশিরভাগ সময়ে তাকে যদি ফোনালাপে ব্যস্ত পাওয়া যায় তাহলেও বিষয়টি লক্ষণীয়।

অনেকে বলতে পারেন কাজের প্রয়োজনে মানুষ ফোন বেশি ব্যবহার করতেই পারে। কিন্তু একটি বিষয় মনে রাখবেন, কাজের প্রয়োজনে ফোনালাপ এবং কারো সাথে প্রেমময় ফোনালাপের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে এবং এই পার্থক্য বোঝার মত ক্ষমতাও বিবাহিত প্রত্যেক মানুষের হওয়া উচিত। শুধুমাত্র ফোন নয়, ফেসবুক কিংবা অন্যান্য যোগাযোগের মাধ্যমের প্রতি আসক্তির মাত্রার ওপরও নজর দেবেন।

তিনি যদি আপনার ও পরিবারের পেছনে কম সময় ব্যয় করেন:
সঙ্গী যদি আপনাকে আগের চাইতে কম সময় দেয়া শুরু করেন, তাহলে এটিও একটি লক্ষণ হিসেবে ধরে নেয়া যায়। খুব ভালো করে আপনার সঙ্গীর প্রতিদিনকার কাজকর্ম লক্ষ্য করুন। যদি বুঝতে পারেন যে আগের চাইতে কম সময় পাচ্ছেন, তাহলে বোঝার চেষ্টা করুন সেই বাড়তি সময়টা তিনি কীভাবে ব্যয় করছেন।

আপনি তাকে সময় দেয়ার কথা বলে দেখুন, একসাথে বসে টিভি দেখার কথা বলুন, তাকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার আমন্ত্রন জানান, আত্মীয় স্বজনদের ও পারিবারিক বন্ধুদের সময় দেয়ার কথা বলুন। তিনি যদি আপনাকে অজুহাত দেখিয়ে না বলেন তাহলে জানার চেষ্টা করুন অজুহাতটি সত্যি কিনা। সঙ্গী যদি পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করে বিনা কারণে, তাহলে ধরে নিতে পারেন তিনি পরকীয়ায় লিপ্ত।

নতুন কোন নাম: আপনার সঙ্গীটির মুখে যদি নতুন কোন একটি নাম ঘন ঘন শুনতে পান, তবে একেও পরকীয়ার লক্ষণ হিসেবে নিতে পারেন। সঙ্গীর যে বন্ধুটির কথা আগে কখনো শোনেননি, এমন কারো কথা ঘনঘন শুনলে তাকে জিজ্ঞেস করুন এবং তার মুখের ভাব লক্ষ্য করুন। যদি তিনি প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান, কিংবা তার মুখের অভিব্যক্তি বদলে যায় তবে বিষয়টি অবশসই চিন্তার।

অকারণে রেগে যাওয়া: আরও একটি বিষয় আছে যা বিশেষ ভাবে লক্ষণীয়। তা হল আপনার সঙ্গীর কথায় রাগের সুর। খেয়াল করে দেখুন তো, আগে যে বিষয়গুলো আপনার সঙ্গীর রাগের উদ্রেক করতো না সেসব বিষয়ে কি তিনি রেগে যাচ্ছেন? কিংবা কথায় কথায় আপনাদের দাম্পত্য জীবনকে অভিশাপ হিসেবে অভিহিত করছেণ? তার এসব কথার কোন যুক্তি আছে কিনা এইসব ব্যাপারগুলো লক্ষ্য করুন। বিনা কারণে অযৌক্তিক রাগ করা, কিংবা সবসময় খিটখিট করা পরকীয়ার অন্যতম লক্ষণ।

আপনার সাথে যৌনসম্পর্কে উদাসীনতা: সঙ্গী যদি আপনার সাথে যৌনসম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেন তাহলে আপনি এটি পরকীয়ার নিশ্চিত লক্ষন হিসেবে ধরতে পারেন। যিনি অন্যের সাথে সময় কাটিয়ে আপনার প্রতি উদাসীন, তার মুখের অভিব্যক্তিই আপনাকে সব কথা বলে দেবে। আপনার সাথে সম্পর্ক স্থাপনে সঙ্গী আগ্রহী নন, অর্থাৎ তার চাহিদাটি পূরণ হচ্ছে অন্য কারো মাধ্যমে। এছাড়াও অভ্যাস বশত যৌন সম্পর্ক করছেন কিনা স্রেফ আপনাকে খুশি করতে, সেটিও লক্ষ্য করুন।

আপনার প্রতিদিনের রুটিন খুঁটিয়ে জিজ্ঞেস করা: এছাড়া খেয়াল করে দেখুন আপনার স্বামী/ স্ত্রী আপনার প্রতিদিনকার রুটিন সম্পর্কে হঠাৎ অতিরিক্ত নজর দিচ্ছেন কিনা অর্থাৎ আপনি কটায় বাড়ি ফিরবেন বা কোন কোন জায়গায় কখন যাবেন এই ধরনের প্রশ্ন করছেন কিনা। তাহলে নিশ্চিত থাকতে পারেন যে আপনার চোখ এড়িয়ে নিরাপদে সম্পর্ক চালিয়ে যেতেই তার এত জিজ্ঞাসা।

তিনি যদি হঠাৎ নিজের সৌন্দর্য সম্পর্কে অতিরিক্ত সচেতন হয়ে উঠেন: আপনার স্বামী/স্ত্রী যদি হঠাৎ নিজের ত্বক, সাজগোজ, শারীরিক গঠন কিংবা পরিহিত পোশাক আশাকের দিকে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করতে শুরু করেন, তাহলে আপনি একে পরকীয়ার একটি লক্ষণ হিসেবে ধরে নিতে পারেন। এখানে একটি বিষয়ে পরিষ্কার হওয়া দরকার যে সঙ্গী আপনার জন্যই নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করছেন কিনা।

কারন অনেক স্বামী/স্ত্রীই আছেন যারা দাম্পত্য জীবনে পুনরায় রোমান্স ফিরিয়ে আনতে এই পন্থা বেছে নেন। কিন্তু আপনি এই দ্বিধাবোধের অবসান করতে পারেন নিজেকে ২/৩ টি প্রশ্ন করে। আর তা হল, আপানার স্বামী/স্ত্রী কি আপনার পছন্দ অনুযায়ী নিজেকে উপস্থাপন করছেন? তিনি কি শুধুমাত্র আপনাকে দেখানর জন্যই বিশেষ পোশাক ও সাজগোজ করেন? আমাকে কেমন দেখাচ্ছে এই ধরনের প্রশ্ন আপনাকে করা হচ্ছে কিনা সেটাও লক্ষ্য করুন। এই প্রশ্নগুলোর উত্তর যদি “না” হয়, তাহলে আপনি ধরে নিতে পারেন আপনার সঙ্গী পরকীয়ার সম্পর্কে জড়িত আছেন।




অনেক ক্ষেত্রে পরকীয়ায় গভীর হয় দাম্পত্য প্রেম: 
অনেক ক্ষেত্রে পরকীয়া দাম্পত্য সম্পর্কের পক্ষে ভালো এবং এতে আরো গভীর হয় কপোত কপোতীর প্রেম। এই দাবি বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানী অ্যাস্থার পেরেলের।  তিনি ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ‘‌কাপল কাউন্সেলিং’‌করছেন।  সেই অভিজ্ঞতা থেকেই তার এই উপলব্ধি।

পেরেল জানান, ‘‌প্রতিটি মানুষই কোনও না কোনও অবসাদ থেকে পরকীয়ার দিকে ঝোঁকেন। তাদের মধ্যে একটা অপরাধবোধ মনের অবচেতনে হলেও কাজ করে।  কেননা  ৯৯ শতাংশ পরকীয়াই ক্ষণস্থায়ী হয়।  পরকীয়া শেষ হওয়ার পরে এই অবৈধ সম্পর্ক প্রেমিক যুগলের মধ্যে একটা অপরাধবোধ এনে দেয়। সেই অপরাধবোধ থেকেই নতুন মোড় নেয় তাদের পুরনো সম্পর্ক। ফলে সেটি হয় আরো মজবুত ও গাঢ়। বলছিলেন পেরেল।‌

পরকীয়া নিয়ে গোটা একটা বই লিখেছেন পেরেল। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ‘‌দ্য স্টেটস অফ অ্যাফেয়ার’ নামের সেই বইটি।

সেখানে পেরেল বলছেন, ‘দীর্ঘ সম্পর্কে একঘেয়েমি আসাটা খুব স্বাভাবিক। এক পর্যায়ে যৌনজীবনে অবসাদ চলে আসে। তখন অনেকেই নতুন সঙ্গী বা সঙ্গিনী খোঁজেন। এক্ষেত্রে একসঙ্গে সময় কাটানো, কথা বলা একটা বড় ওষুধ হতে পারে। আমি মনে করি যৌনতা যতটা না শারীরিক, তার চেয়ে অনেক বেশি মানসিক। মানসিক আকর্ষণ ফিরিয়ে আনলেও পরকীয়া ঠেকানো সম্ভব।’

তবে, দাম্পত্য সম্পর্কে আকর্ষণ ফেরানোর জন্য পরকীয়া করতে মোটেও উৎসাহ দিচ্ছেন না পেরেল। তিনি বলছেন, ‘‌উপশমের চেয়ে প্রতিকার করাটাই ভাল। পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ার আগে সঙ্গী বা সঙ্গিনীর প্রতি আকর্ষণ তৈরি করাটাই শ্রেয়।’

পরকীয়ার জড়িয়ে সঙ্গীকে ঠকিয়েছেন এখন মানাবেন কী করে?

সঙ্গীর কাছে ধরা পড়ে গেছেন।  তিনি টের পেয়েছেন, বিগত কয়েকদিন ধরে আপনি অন্যকোনও পুরুষ/মহিলার সঙ্গে জড়িত। তাঁর অনুমান, আরও অনেক দূর হয়তো গড়িয়েছে বিষয়টি। সবকিছু জানাজানি হওয়ার পর সঙ্গী বাক্যালাপ বন্ধ করেছেন। ঘোষণা করেছেন বিচ্ছেদ।

এমন অবস্থায় নিজেকে অপরাধী মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক।  কিন্তু তার চেয়েও বেশি যে বিষয়টি আপনাকে অহোরাত্র দুঃখ দিয়ে চলেছে, তা হল সঙ্গীর অভিমান, আপনার প্রতি তাঁর ঘৃণা ও বিদ্বেষ। সঙ্গীকে ফের জীবনে ফিরে পাওয়ার জন্য আপনি এখন মরিয়া।

একটু ফ্ল্যাশব্যাকে ফিরে গিয়ে ভাবুন। ভালো করে খতিয়ে দেখুন, আপনাদের সুখের জীবনে তৃতীয় ব্যক্তি এল কেন? ফাঁক তৈরি হল কেন? দোষত্রূটি কার কতখানি, তার চেয়েও বেশি জানা দরকার আপনি এখন ঠিক কী চাইছেন? এতকাল যে সঙ্গীর অপূর্ণতা পূরণ করতে আপনি অন্য সঙ্গীর সান্নিধ্য খুঁজছিলেন, সেই সাধ আপনার মিটেছে কিনা। যদি মিটে গিয়ে থাকে, কি নিশ্চয়তা আছে, ফের এমন ভুল আপনি করবেন না?

প্রশ্নের উত্তরগুলো ভালো করে খুঁজে বের করতে চেষ্টা করুন। ক্ষণিকের জন্য সঙ্গীকে ফিরে পেতে চাইলে, সেটা তাঁর প্রতি অন্যায় করা হবে। নিজের মন শক্ত করুন। সঠিক সিদ্ধান্তে আসুন। সঙ্গীর সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে ছাড়াছাড়ি করতে চাইলে, তাঁকে বরাবরের মতো মুক্ত করে দিন। তাঁকে তাঁর মতো বাঁচতে দিন। আপনার সঙ্গে বিচ্ছেদে যদি তিনি সুখ খুঁজে পান, তবে তাই মেনে নিন। নিজের ইচ্ছে তাঁর উপর চাপিয়ে দেবেন না।

আর যদি আপনি সঙ্গীকে আগের মতো ফেরত চান, লোকলজ্জার ভয় নয়, কোনও আর্থিক কারণে নয়, শুধু ভালোবাসার কারণে, তবে কয়েকটি বিষয়ে আপনাকে সচেতন থাকতে হবে।  যেমন-

১) কখনও কান্নাকাটি করবেন না। মনে রাখবেন, সঙ্গী আপনার উপর বিরক্ত। এই সময় চোখের জল ফেললে, সেই অশ্রুকে তিনি মনে করতে পারেন কুমিরের কান্না।  তাই একদম কান্নাকাটি নয়।

২) মতো আপনার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে দিতে পারেন।  তাই তাঁকে নিজেকে সামলানোর সময় দিন।

৩) সোশাল মিডিয়ায় কোনও কিছু পোস্ট করবেন না।  নিজের মন খারাপের কথা একেবারেই শেয়ার করবেন না। এইসব দেখলে সঙ্গী হয়তো আরও রেগে যেতে পারেন।

৪) যে ব্যক্তির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার কারণে আপনার বিচ্ছেদ, সেই ব্যক্তির সঙ্গে আর কোনও যোগাযোগ রাখবেন না। তাঁকেও খোলাখুলি বলে দিন আপনি কী চাইছেন। এমন পরিস্থিতিতে কাউকেই অন্ধকারে রাখা ঠিক নয়।

৫) মনের দুঃখ সামলাতে অন্য কোনও পুরুষ/নারীর সঙ্গে সাময়িক সম্পর্কে জড়াবেন না। কেননা, তাতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। হতেই পারে দূর থেকে সঙ্গী আপনার উপর নজর রাখছেন। বোঝার চেষ্টা করছেন আপনার গতিবিধি। কার সঙ্গে মিশছেন, কার সঙ্গে কথা বলছেন, সবেরই হয়তো খবর রাখছেন তিনি। ফলত, সাময়িক সম্পর্কে জড়ানোর ঘটনাও তাঁর অজানা নয়। আপনার প্রতি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হতে পারে তাঁর। শেষ ভালোলাগা টুকুও নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

৬) নিজের মনটাকে শান্ত করুন। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান। দরকার হলে পরিবারের ঘনিষ্ঠ কারোর সঙ্গে সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। বা কোনও প্রিয় বন্ধু/বান্ধবীর সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন। কোনও কমন ফ্রেন্ড থাকলে বিষয়টা তাঁকেও বলতে পারেন। কমন ফ্রেন্ড এই সব ব্যাপারে দেবদূতের ভূমিকা পালন করেন মাঝেমধ্যে। যেহেতু তিনি আপনাকে ও আপনার সঙ্গীকে ভালো করে চেনেন, আপনার সঙ্গীর মনোভাব কী, জানতে সুবিধে হতে পারে।

৭) সঙ্গীও যদি সিদ্ধান্ত নেন, তিনি আপনাকে আরও একটা সুযোগ দিয়ে দেখবেন, তবে সেইদিনটার জন্য অপেক্ষা করুন। দেখা হলে ঘাবড়ে যাবেন না। সাহসী মনোভাব প্রকাশ করুন।  যে ভুল আপনি করেছেন, সেটা নিজে মুখে স্বীকার করুন। সরি বলুন। বলুন, আপনার ভুল হয়েছে, ভবিষ্যতে এরকম ভুল আর কোনওদিনও হবে না। দেখবেন, সঙ্গীরও আপনার উপর সব অভিমান মুছে গেছে।

তথ্য সুত্রঃ উইকিপিডিয়া, এনটিভিবিডি, রোপকেয়ার,  প্রিয়-লাইফ

নারীরা কেন পরকীয়ায় আসক্ত হয়, জৈবিক ব্যাখ্যা কি ?

প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ।  কিন্তু উত্তর এত সোজাসাপ্টা নয়। ভাবছি এ নিয়ে কিছু আলোচনা করার চেষ্টা করলে মন্দ হয় না, কী বলেন! আসলে নারী পুরুষ উভয়ের মধ্যেই যেমন একগামিতা দৃশ্যমান, তেমনি দৃশ্যমান বহুগামিতাও। নারী পুরুষ উভয়ের মধ্যেই লংটার্ম বা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক করার মনোবাসনা যেমন আছে, তেমনি সুযোগ এবং পরিস্থিতি বিবেচনায় উঠে আসে শর্টটার্ম বা স্বল্পমেয়াদী সম্পর্কের মনোবাঞ্ছাও।  পুরুষের মধ্যে বহুগামিতা বেশি, কারণ অতীতের শিকারী-সংগ্রাহক সমাজে শক্তিশালী এবং প্রতিপত্তিশালী পুরুষেরা যেভাবে নারীর দখল নিত, সেটার পর্যাক্রমিক ছাপ এখনো ক্ষমতাশালী পুরুষদের মধ্যে লক্ষ্য করলে পাওয়া যায়। কিন্তু তার মানে এই নয় যে নারীরা পরকীয়া করে না, কিংবা তাদের মধ্যে বহুগামিতা নেই।

প্রভাবশালী কিংবা ক্ষমতাশালী পুরুষেরা যেমন পরকীয়া করতে উন্মুখ থাকে, তেমনি, ক্ষমতাশালী কিংবা প্রভাবশালী পুরুষের স্ট্যাটাস আবার নারীর কাছে পছন্দনীয়। কোন নারীর বর্তমান সঙ্গির চেয়ে যদি তার প্রেমিকের পদমর্যাদা বা স্ট্যাটাস ভাল হয়, কিংবা প্রেমিক দেখতে শুনতে অধিকতর সুদর্শন হয়, কিংবা যে সমস্যাগুলো নিয়ে একটি নারী তার পার্টনার কিংবা স্বামীর সাথে অসুন্তুষ্ট, সেগুলোর সমাধান যদি তার প্রেমিকের মধ্যে খুঁজে পায়, নারী পরকীয়া করে। তাই আমেরিকায় আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার, নিউট গিংরিচ, বিল ক্লিন্টন কিংবা বাংলাদেশে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কিংবা হুমায়ূন আহমেদ যখন পরকীয়া করতে চেয়েছে, তারা সেটা করতে পেরেছে, কারণ নারীরাও তাদের মত  যশস্বী কিংবা ‘হাই স্ট্যাটাসের’ কেউকেটাদের সাথে সম্পর্ক করতে প্রলুব্ধ হয়েছে। নারীর আগ্রহ, অনুগ্রহ কিংবা চাহিদা ছাড়া পুরুষের পক্ষে পরকীয়া করা সম্ভব নয়, এটা বলাই বাহুল্য। তাই বিবর্তন মনোবিজ্ঞানের চোখে নারীর একগামিতার ব্যাপারটি এক ধরণের ‘মিথ’ বই কিছু নয়, আগেই বলেছি লং টার্ম এবং শর্ট টার্ম স্ট্র্যাটিজি নারী পুরুষ সবার মধ্যেই আছে। বহু কারণেই এটি নারী পরকীয়া করতে পারে, আগ্রহী হতে পারে বহুগামিতায়।  নারীর পরকীয়ার এবং বহুগামিতার ব্যাপারে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অনুকল্প বা হাইপোথিসিস প্রস্তাব করেছেন বিজ্ঞানীরা, এর মধ্যে রয়েছে –রিসোর্স হাইপোথিসিস, জেনেটিক হাইপোথিসিস, মেট সুইচিং হাইপোথিসিস, মেট স্কিল একুজেশন হাইপোথিসিস, মেট ম্যানুপুলেশন হাইপথিসিস ইত্যাদি[1]।  দু একটি বিষয় এখানে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।

জৈবিক কারণেই অসতর্ক কিংবা অপরিকল্পিত যৌনসম্পর্কের ক্ষেত্রে (casual sex) নারীরা পুরুষদের মত প্রজননগত উপযোগিতা পায় না । তারপরেও নারীরা পরকীয়া করে, কিংবা হতে পারে বহুগামী,  কারণ  নারীদের ক্ষেত্রে বহুগামিতার একটি অন্যতম উপযোগিতা হতে পারে, সম্পদের  তাৎক্ষনিক যোগান।  শিম্পাঞ্জিদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, খাদ্যের বিনিময়ে তারা পুরুষ শিম্পাঞ্জিকে যৌনতা প্রদান করে থাকে। গবেষকেরা লক্ষ্য করেছেন, নারী শিম্পাঞ্জিরা সেই সব পুরুষ শিম্পাঞ্জিদের প্রতিই যৌনতার ব্যাপারে থাকে সর্বাধিক উদার যারা খাদ্য যোগানের ব্যাপারে কোন কৃপণতা করে না। শিম্পাঞ্জিদের ক্ষেত্রে কোন কিছু সত্য হলে মানব সমাজেও সেটা সত্য হবে, এমন কোন কথা নেই অবশ্য। কিন্তু তারপরেও বিজ্ঞানীরা আমাজনের মেহিনাকু (Mehinaku) কিংবা ট্রোব্রিয়াণ্ড দ্বীপপুঞ্জের (Trobriand Island) ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠিদের মধ্যে গবেষণা চালিয়ে দেখেছেন, সেখানেও পুরুষেরা নারীদের জন্য  (অনেকটা শিম্পাঞ্জিদের সমাজের মতোই) রকমারী খাদ্য, তামাক, বাদাম, শঙ্খের মালা, বাহুবন্ধনী প্রভৃতি উপঢৌকন সংগ্রহ করে নিয়ে আসে, আর বিনিময়ে নারীরা যৌনতার অধিকার বিনিময় করে। যদি কারো কাছ থেকে উপঢৌকনের যোগান বন্ধ হয়ে যায়, তবে নারীরাও সে সমস্ত পুরুষের সাথে যৌনসম্পর্ক বন্ধ করে দেয়[2]।  সম্পদের যোগানের সাথে যে নারীর যৌনতা প্রদানের একটা অলিখিত সম্পর্ক আছে, তা জানার জন্য অবশ্য আদিম সমাজে যাওয়ার দরকার নেই। আধুনিক সমাজেও সেটা লক্ষ্য করলে পাওয়া যাবে।

সবচেয়ে চরম উদাহরণটির কথা আমরা সবাই জানি -পতিতাবৃত্তি। নারী যৌনকর্মীরা অর্থসম্পদের বিনিময়ে যৌনতার সুযোগ করে দেয় পুরুষদের – এটা সব সমাজেই বাস্তবতা।  এই বাস্তবতা থেকে পুরুষদের বহুগামী চরিত্রটি যেমন স্পষ্ট হয়, তেমনি হয় আর্থিক লাভের জন্য নারীর যৌনতা বিক্রির সম্পর্কটিও[3]।  যৌনকর্মী শুধু নয়, আমেরিকায় সাধারণ মেয়েদের মধ্যে গবেষণা করেও দেখা গেছে, যে সমস্ত নারীরা  শর্ট টার্ম বা স্বল্পমেয়াদী সম্পর্কে জড়াতে ইচ্ছুক, তারা আশা করে যে, তার প্রেমিক অর্থ কড়ির দিক থেকে কোন কৃপণতা দেখাবে না, অনেক ধরণের দামী উপহার সামগ্রী  উপঢৌকন হিসেবে নিয়ে আসবে,   বিলাসবহুল  জীবন যাত্রায় অভ্যস্থ হবে, নিয়মিতভাবে ভাল ভাল রেস্টুরেন্টে তাকে আপ্যায়ন করবে, এবং সর্বোপরি যে কোন ধরণের সম্পদের বিনিয়োগে থাকবে উদার[4]। কৃপণ স্বামীকে যাও বা মেয়েরা কিছুটা হলেও সহ্য করে, অ্যাফেয়ার বা পরকীয়ায় আগ্রহী কৃপণ  যৌনসঙ্গিকে কখনোই নয়। অ্যাফেয়ার বা পরকীয়ার ক্ষেত্রে ছেলেদের কৃপণতা মেয়েদের কাছে গ্রহণীয় কিংবা পছন্দনীয় নয়, কারণ তারা সঙ্কেত পেতে শুরু করে যে, তার সঙ্গিটি হয়তো ভবিষ্যতেও তার জন্য সম্পদ বিনিয়োগে সে রকমভাবে আগ্রহী নয়। এই মানসিক অভিরুচিগুলো বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, সম্পদের তাৎক্ষণিক আহরণ  নারীদের ক্ষেত্রে এক ধরণের অভিযোজন জনিত উপযোগিতা  দিয়েছে, যা নারীরা অনেক সময় পরকীয়ার মাধ্যমে নিশ্চিত করতে চায়।

নারীদের পরকীয়ার ব্যাপারে আরো একটি লক্ষ্যনীয় প্যাটার্ন পাওয়া গিয়েছে, যেটা পুরুষদের থেকে কিছুটা আলাদা। বহুক্ষেত্রেই দেখা গেছে, নতুন সঙ্গির সাথে অপরিকল্পিত যৌনসম্পর্কের (casual sex) মাধ্যমে নারীরা  সঙ্গিটিকে ভবিষ্যৎ স্বামী হিসেবে মূল্যায়ন করে নিতে চায়।  সে জন্যই এমনকি স্বল্পমেয়াদি সম্পর্কের ক্ষেত্রেও বহুগামী, বোহেমিয়ান  ধরণের ছেলের সাথে সম্পর্ক করতে নারীরা প্রাথমিকভাবে অনিচ্ছুক থাকে;  অতীতে যদি পুরুষটির বহু নারীর সাথে সম্পর্ক কিংবা আসক্তি থেকে থাকে, তা নারীটির কাছে  তা এক ধরণের অনাকাংক্ষিত সংকেত নিয়ে উপস্থিত হয়।  এর কারণ, স্বল্পমেয়াদী সম্পর্কে জড়ালেও তার অবচেতন মনে থাকে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের আকাংক্ষা, যার নিরিখেই সে  সাধারণতঃ উপরোক্ত বৈশিষ্টগুলো বিচার করে থাকে।  তার সঙ্গির বহুগামিতা কিংবা অতীতে বহু নারীর প্রতি আসক্তির  অর্থ  তার চোখে হয়ে উঠে তার সাথে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক রচনার ক্ষেত্রে অবিশ্বস্ততার নিয়ামক।  অর্থাৎ, সে ধরে নেয় এ ধরণের পুরুষেরা ‘ভবিষ্যৎ স্বামী’ হিসেবে উপযুক্ত নয়।  মোটা দাগে, ভবিষ্যৎ স্বামীর মধ্যে যে গুণাবলীগুলো  প্রত্যাশা করে, ঠিক সেগুলোই একটি নারী তার যৌনসঙ্গির মধ্যে খুঁজতে চায়[5]।  দুটি ক্ষেত্রেই মেয়েরা চায় তার পুরুষ সঙ্গি হবে দয়ালু, রোমান্টিক, সমঝদার, দুর্দান্ত, স্বাস্থ্যবান, রসিক, বিশ্বস্ত এবং সম্পদের বিনয়গের ব্যাপারে থাকবে উদার। সেজন্যই বিবর্তন মনোবিজ্ঞানী ডেভিড বাস তার ‘বাসনার বিবর্তন’ (The Evolution Of Desire) বইয়ে বলেন[6],

উভয় ক্ষেত্রেই মেয়েদের অভিরুচির এই অপরিবর্তনীয়তা ইঙ্গিত করে যে, নারীরা অনিয়মিত যৌনসঙ্গিকে হবু স্বামী হিসবেই দেখে এবং সেজন্য দুইক্ষেত্রেই বেশি পদপর্যাদা আরোপ করে।

বহু সমাজে আবার দেখা গেছে, যে সমস্ত সমাজে সহিংসতা খুব বেশি, নারীরা বিবাহ-বহির্ভূত যৌনসম্পর্ক করে নিজের নিরাপত্তার ব্যাপারটা চিন্তা করে। স্বামীর বাইরে গোত্রের অন্য  কোন পুরুষের সাথে যদি নারীর কোন ‘বিশেষ বন্ধুত্ব’ গড়ে উঠে তবে সে স্বামী বাইরে থাকলে বা অন্য কোন সময়ে বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করতে পারবে।  এ ব্যাপারটা সাধারণভাবে প্রানীজগতের মধ্যে প্রচলিত আছে। যেমন, সাভানা বেবুনদের নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে  বারবারা স্মুটস সহ অন্যান্য বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেছেন যে,  এই ধরনের বেবুনদের সমাজে একটি নারী বেবুনের সাথে প্রাথমিক বা মূল সঙ্গির বাইরেও একজন বা দু’জন  সঙ্গির সাথে ‘বিশেষ ধরনের’ সম্পর্ক গড়ে উঠে, এবং সেই সঙ্গি বা সঙ্গিরা অন্য বেবুনদের উত্যক্ত করার হাত থেকে নারী বেবুনটিকে রক্ষা করে[7]।  ‘পর-পুরুষের’ সাথে যৌনতার বিনিময়ে মূলতঃ জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নারী বেবুনটি। এ প্রসঙ্গে বিজ্ঞানী রবার্ট স্মিথ তার একটি গবেষণাপত্রে বলেন[8] –

‘প্রাথমিক সঙ্গিটি সবসময় নারী বেবুন কিংবা তার সন্তানের পাশে থেকে থেকে তাকে রক্ষা করতে পারে না। তার অনুপস্থিতিতে অন্য কোন পুরুষের সাথে নারীটির ‘বিশেষ কোন সম্পর্ক’ থাকলে তা তার বেঁচে থাকায় বাড়তি উপযোগিতা নিয়ে আসে। এভাবে নারীটি অন্য কোন পুরুষের সাথে সম্পর্ক তৈরি করে নিজের এবং নিজের সঙ্গির জিন রক্ষা করার ক্ষেত্রে এক ধরণের স্ট্র্যাটিজি তৈরি করে’।

এ ধরণের স্ট্র্যাটিজি মানব সমাজে বর্তমানে খুব বেশি দৃশ্যমান না হলেও বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, আদিম শিকারী সংগ্রাহক কিছু সমাজে যেখানে নারীদের উপর পুরুষালী সহিংসতা, আগ্রাসন, ধর্ষণ খুবই বেশি, সেখানে নারীরা এ ধরণের ‘অতিরিক্ত যুগল বন্ধনের’ মাধ্যমে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে[9]।

সঙ্গি রদবদল বা ‘মেট সুইচিং’ও হতে পারে আরেকটি বড় কারণ যার কারণে একটি নারী পরকীয়া করতে পারে।  স্পটেড স্যাণ্ড পাইপার (বৈজ্ঞানিক নাম Actitis macularia) নামে আমেরিকার মিনেসোটার হ্রদে দৃশ্যমান এক ধরণের পাখিদের মধ্যে সঙ্গি রদবদলের প্রবণতা উল্লেখযোগ্যমাত্রায় পাওয়া গিয়েছে। জীববিজ্ঞানী মার্ক কলওয়েল এবং লিউস ওরিং প্রায় চার হাজার ঘন্টা ধরে এই পাখিদের জীবনাচরণ পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্তে এসেছেন যে, এ ধরণের পাখিদের মধ্যে সঙ্গি রদবদল খুবই স্বাভাবিক ঘটনা[10]। সঙ্গি রদবদলের মাধ্যমে বর্তমান সঙ্গির চেয়ে আরো আকর্ষণীয় সঙ্গিকে খুঁজে নেয় একটি নারী স্পটেড স্যাণ্ড পাইপার।  মানব সমাজেও কিন্তু এ ব্যাপারটি লক্ষ্য করলে খুঁজে পাওয়া যাবে।  বর্তমান সঙ্গির চেয়ে অন্য কাউকে অধিকতর আকর্ষণীয়, সুদর্শন কিংবা কাংক্ষিত মনে হলে, কিংবা বর্তমান সঙ্গির স্ট্যাটাসের চেয়ে উঁচু সামাজিক পদমর্যাদাসম্পন্ন  কেউ তার সাথে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠলে নারী তার সাথেও পরকীয়ায় জড়াতে করতে পারে। পরকীয়া  করতে পারে যদি নারীর বর্তমান সঙ্গি যদি অসুস্থ হয়, পঙ্গু হয়, শারীরিক ভাবে অক্ষম হয়, যুদ্ধাহত হয় কিংবা মুমুর্ষু হয়।

বাংলাদেশে বিগত শতকের নব্বইয়ের দশকের চাঞ্চল্যকর মুনীর-খুকুর পরকীয়া আর তাকে কেন্দ্র করে শহীদ সাংবাদিক কন্যা রীমা হত্যাকাণ্ডের কথা নিশ্চয় অনেকেরই মনে আছে। মধ্যবয়সী খুকু পরকীয়া প্রেম শুরু করেছিলেন ডঃ মেহেরুন্নেসার পুত্র মুনীরের সাথে।  খুকুর স্বামী ছিলেন পক্ষাঘাতগ্রস্থ এবং অসুস্থ।  স্বামীর এ শারীরিক পরিস্থিতি খুকুকে চালিত করেছিলো মুনীরের সাথে পরকীয়ায় জড়াতে, আর প্ররোচিত করেছিলো মুনীরকে রীমা হত্যায়। কাজেই নারী শুধু পরকীয়া করে না, প্রয়োজনে পরকীয়ার কারণে হত্যায়  প্ররোচনা দেওয়া শুধু নয়, নিজ হাতে হত্যা পর্যন্ত করতে পারে।  কিছুদিন আগে  পরকীয়ার কারণে আয়শা হুমায়রা কীভাবে তার নিজের সন্তান সামিউলকে নির্দয়ভাবে হত্যা  করে লাশ ফ্রিজবন্দি করে পর বাইরে ফেলে দিয়েছিলো, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিনের পর দিন ধরে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।  পরকীয়ার কারণে মায়ের নিজ সন্তান হত্যা হয়ত খুব চরম এবং ব্যতিক্রমী উদাহরণ, কিন্তু আকর্ষনীয় সঙ্গির জন্য বর্তমান সঙ্গিকে ত্যাগ, কিংবা স্বামীর তুলনায় আরো ‘উৎকৃষ্ট’ কারো সাথে লুকিয়ে ছাপিয়ে পরকীয়া তা নয়। এ ব্যাপারটা সব সময়ই এবং সব সমাজেই ছিল। পয়সাওয়ালা কিংবা সুদর্শন, স্বাস্থ্যবান, আকর্ষনীয়, মনোহর কিংবা উঁচু পদমর্যাদাসম্পন্ন  সঙ্গির জন্য পুরাতন সঙ্গিকে ত্যাগ মেয়েদের মধ্যে এক সময় একধরনের অভিযোজনগত উপযোগিতা দিয়েছিলো, অন্ততঃ হেলেন ফিশারের মত নৃতত্ত্ববিদেরা তাই মনে করেন[11]।  সেই আদিম শিকারী সংগ্রাহক সমাজের কথা চিন্তা করুন, যেখানে একটি নারীকে ‘বিয়ে করতে’ হয়েছিলো এক দুর্বল শিকারীকে যার চোখের দৃষ্টি ছিল ক্ষীণ, শিকারে অযোগ্য এবং  স্বভাবে কাপুরুষ। এ ধরনের সম্পর্কে থাকা নারীরা মানসিক অতৃপ্তি মেটাতে হয়তো পরকীয়া শুরু করেছিলো সুস্থ সবল, স্বাস্থ্যবান তরুণ কোন সাহসী শিকারীর সাথে –  ‘মিস্টার গুড জিন’ পাবার এবং ভবিষ্যত সন্তানের মধ্যে তা রেখে যাবার প্রত্যাশায়।  ভাল জিনের জন্য সঙ্গিবদলের ব্যপারটি যদি আদিম শিকারী সংগ্রাহক পরিস্থিতিতে নারীদের একধরণের স্ট্র্যাটিজি হয়ে থাকে, তবে সেটি এখনকার সময়েরও বাস্তবতা হতে পারে তা নির্দ্বিধায় বলা যায়।  র‍্যান্ডি থর্নহিলের একটি সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে এই ‘গুড জিন’ অনুকল্পের সত্যতা পাওয়া গিয়েছে[12]। গবেষণায় দেখা গেছে নারীরা যখন পরকীয়া করে তখন  প্রতিসম চেহারার প্রতি আকর্ষিত হয় বেশি[13]।  প্রতিসম চেহারা সবসময়ই একটি ভাল ‘ফিটনেস মার্কার’ হিসেবে বিবেচিত।  প্রেমিকের চেহারা প্রতিসম হওয়া মানে – তার প্রেমিকের চেহারা আকর্ষনীয়, তার শারীরের গঠন উন্নত, সে পুরুষালী, বুদ্ধিদীপ্ত, চৌকষ, স্বাস্থ্যবান এবং রোগজীবাণু থেকে মুক্ত[14]।  তাই যে নারী স্বামীকে রেখে প্রতিসম বৈশিষ্ট্যের প্রেমিকের পেছনে ছুটছে, তার ‘প্রস্তর যুগের মস্তিস্ক’  আসলে প্রকারান্তরে ‘ভাল জিন’ নিজ সন্তানের জন্য নিশ্চিত করে রাখতে চাইছে।

ভাল জিনের জন্য প্রলুব্ধ হয়ে পরকীয়া করার এই জেনেটিক হাইপোথিসেরই আরেকটি প্রচলিত রূপ হচ্ছে ‘জোশিলা পোলা’ বা ‘সেক্সি সন’ অনুকল্প। এই অনুকল্পটি ১৯৭৯ সালে প্রস্তাব করেছিলেন কুইন বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী প্যাট্রিক ওয়েদারহেড এবং রালি রবার্টসন। এই অনুকল্প অনুযায়ী মনে করা হয় যে, সুদর্শন পুরুষের সাথে নারী পরকীয়া করে কিংবা স্বল্পমেয়াদী যৌনসম্পর্ক স্থাপন করে কারণ, অবচেতন মনেই তার মাথায় থাকে যে,  তার সন্তানও হয়ে উঠবে ঠিক একই রকম মনোহারী  গুণাবলীর অধিকারী।  পরবর্তী প্রজন্মের নারীরা তার সন্তানের এই প্রীতিকর বৈশিষ্টগুলো দিয়ে অনেক বেশি পরিমাণে আকৃষ্ট হবে, ফলে যাদের মধ্যে এই গুণাবলীগুলোর অভাব রয়েছে তাদের তুলনায় তার সন্তান অনেক বেশি প্রজননগত সফলতা অর্জন করতে পারবে।  বেশ কিছু সাম্প্রতিক জরিপে এই তত্ত্বের স্বপক্ষে কিছুটা হলেও সত্যতা মিলেছে। দেখা গেছে, নারীরা যখন পরকীয়ায় আসক্ত হয় তখন তাদের একটা বড় চাহিদা থাকে স্বামীর চেহারার চেয়ে প্রেমিকের চেহারা অনেক বেশি আকর্ষনীয় হতে হবে[15]।

শুধু ভাল জিন, ভাল চেহারা বা ভাল সন্তানের জন্যই নয়, নারীরা আরো বহু কারণেই পরকীয়া করতে পারে। সামাজিক স্ট্যাটাস তার মধ্যে একটি। গবেষণায় দেখা গেছে, একজন বিবাহিত নারী যখন অন্য কোন পুরুষের সাথে পরকীয়া করে, সেই পুরুষের স্ট্যাটাস, প্রতিপত্তি, সামাজিক অবস্থান প্রভৃতি তার বর্তমান স্বামীর চেয়ে অনেক বেশি থাকে [16]। প্রখ্যাত ব্যবসায়ী এবং ২০১২ সালের রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী (পরে নির্বাচনী ক্যাম্পেইন থেকে সরে দাঁড়ানো ) ডোনাল্ড ট্রাম্প  বছর খানেক আগে এক অপরিচিত মডেল মার্থা মেপেলের সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়লে  রাতারাতি মার্থা মেপল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন। মিডিয়ার পাবলিসিটি তো ছিলোই, সাথে সাথে নানা ধরণের আর্থিক বিনিয়োগ, গনমান্য সামাজিক অনুষ্ঠানে প্রবেশের অধিকার সহ বিভিন্ন পদমর্যাদা ভোগ করতে থাকেন।  বাংলাদেশেও এরশাদ সাহেব যখন রাস্ট্রপতি থাকাকালীন সময়ে জিনাত মোশারফ সহ বহু নারীর সাথে পকীয়ায় মত্ত ছিলেন, তখন সে সমস্ত নারীরাও রাতারাতি বহু রাজনৈতিক এবং সামাজিক সুযোগ সুবিধা পেয়ে গিয়েছিলেন। এ সমস্ত নারীরা এমন সব মহলে, রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে কিংবা সভায় প্রবেশ করে যেতেন অবলীয়ায়, যেগুলোতে সাধারণ মানুষদের জন্য প্রবেশ ছিলো অকল্পনীয়।  প্রেমের অর্থনীতির বাজারে কোন কেউকেটা বা বিখ্যাত লোক যখন কোন পরিচিত নারীর সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়ায়, তখন সে যত অখ্যাতই আগে থাকুক না কেন, মানুষ ভেবে নেয় নারীটি নিশ্চয় ‘স্পেশাল’। সে রাতারাতি চলে আসে আলোচনা আর ক্ষমতার কেন্দ্রে। নারীটি পায় নতুন পরিচিতি, আর সামাজিক এবং বন্ধুমহলে ঘটে তার ‘স্ট্যাটাসের উত্তোরণ’।

যে কারণেই নারী পরকীয়া করুক না কেন, প্রখ্যাত নৃতত্ত্ববিদ সারা ব্ল্যাফার হার্ডি  মনে করেন যে, নারী-পরকীয়ার ব্যাপারটা মানবেতিহাসের সূচনা থেকেই এমনভাবে জড়িত ছিলো যে, সেটাকে অস্বীকার করা বোকামিই[17]।  অন্য প্রানীর ক্ষেত্রে যেমন, শিম্পাঞ্জিদের ক্ষেত্রে আমরা জানি সেখানে নারীরা বহুগামী। হার্ডি তার গবেষণাপত্রে শিম্পাঞ্জিদের উদাহরণ হাজির করে দেখিয়েছেন যে, বহুগামিতার মাধ্যমে নারী শিম্পাজিরা ডারউইনীয় দৃষ্টিকোন থেকে দুটি উদ্দেশ্য পূরণ করে -এক, অন্য পুরুষের সাথে সম্পর্কের মাধ্যমে তারা নিশ্চিত করে সদ্যজাত সন্তানকে কেউ ঈর্ষার বশবর্তী হয়ে হত্যা করবে না, আর দুই – সন্তানের পিতৃত্ব নিয়ে গোত্রে এক ধরণের ‘ধোঁয়াশা’  তৈরি করা; যার ফলে সকল পুরুষ শিম্পাঞ্জিই নিজেকে তার অনাগত সন্তানের পিতা ভেবে নারী এবং শিশুটিকে রক্ষা করে চলতে চেষ্টা করবে।

হার্ডি মনে করেন শিম্পাঞ্জির জন্য যে ব্যাপারটি সত্য, মানুষের বিবর্তনীয় পথ পরিক্রমাতেও সে ব্যাপারটা কিছুটা হলেও প্রায় একই রকমভাবে সত্য হতে পারে।  পুরুষের অপেক্ষাকৃত বড় শুক্রাশয় এটাই ইঙ্গিত করে যে, বিবর্তনের দীর্ঘ পথপরিক্রমায় নারীরা একগামী নয়,  বরং বহুগামীই ছিল।  একই প্রবন্ধে নারী বহুগামিতার আরো একটিও বড় সাক্ষ্য আমরা পেয়েছি পুরুষের পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ কীলকাকৃতি হওয়ার এবং সঙ্গমকালীন সময়ে উপর্যুপরী লিঙ্গাঘাতের মধ্যেও। সঙ্গির যদি একই সময়ে আর কারো সাথে সঙ্গমের সম্ভাবনা না থাকতো তবে এগুলো একটি পুরুষের পুরুষাঙ্গের বৈশিষ্ট্য হিসেবে শরীরে জায়গা করে নিতো না। বহু মানুষের শুক্রানুর প্রতিযোগিতায় সঙ্গির গর্ভে নিজের সন্তানের পিতৃত্ব নিশ্চিত করতেই এই শারীরিক বৈশিষ্ট্য আর প্রক্রিয়াগুলো পুরুষের দেহে তৈরি হয়েছে।  সেখানে আমরা আরো দেখেছিলাম যে, দম্পতিদের দীর্ঘদিন আলাদা করে রেখে তারপর সঙ্গমের সুযোগ করে দিলে পুরুষের বীর্য প্রক্ষেপণের হার নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পায়। দীর্ঘদিন পৃথক থাকাকালীন সময়ে স্ত্রীর পরকীয়ার সম্ভাবনার থেকে যাবার কারণেই এ ব্যাপারটা ঘটে বলে মনে করা হয়। শুধু পুরুষের দেহে নয়, পরকীয়ার এবং বহুগামিতার বহু আলামত লুকিয়ে আছে নারীর নিজের দেহেও। অর্গাজম বা চরম পুলক এমনি একটি বৈশিষ্ট্য। রবিন বেকার এবং মার্ক বেলিসের যুগান্তকারী একটি গবেষণা থেকে জানা গেছে যে সমস্ত নারীরা পরকীয়ায় জড়িত থাকে তারা চরম পুলক লাভ করে বেশি এবং তারা  পরকীয়ার সময় তাদের স্বামী বা নিয়মিত সঙ্গির চেয়ে অনেক বেশি শুক্রাণু যোনিতে ধারণ করে রাখে[18]।

এ তো গেল জীববিজ্ঞানের কথা। এর বাইরে ইতিহাস, ধর্ম, দর্শন, সাহিত্য অনুসন্ধান করলেও আমরা দেখতে পাই মানব সমাজে নারীর কামস্পৃহা কখনোই কম ছিলো না। বরং নারীর কামস্পৃহা বেশি বলেই নারীকে ‘ছিনাল’, ‘মাগি’, ‘খানকি’, ‘বেশ্যা’,  ‘কামুকী’, ‘কামার্ত’, ‘নটিনী’, ‘রাক্ষুসী’  প্রভৃতি নানা শব্দ তৈরি করতে হয়েছে পুরুষতন্ত্রকে, এবং কামুক নারীকে বশীভূত রাখতে তৈরি করেছে নানা ধর্মীয় এবং সামাজিক বিধি নিষেধের দেওয়াল।  হিন্দু পুরাণ এবং সাহিত্যে আমরা দেখেছি কীভাবে সুপুরুষ রামচন্দ্রকে দেখে রাবণের বোন শূপর্ণখা কামার্ত হয়ে পড়েছিল, কিংবা মহাভারতে সুঠামদেহী অর্জুনকে দেখে কামার্ত হয়ে পড়েছিলো নাগ রাজকন্যা উলুপী, তাকে সরাসরি দিয়েছিলো দেহমিলনের প্রস্তাব[19]  –

‘হে পুরুষশ্রেষ্ঠ! আমি তোমাকে অভিষেকার্থ গঙ্গায় অবতীর্ণ দেখিয়া কন্দর্পশরে জর্জরিত হইয়াছি। এক্ষণে তুমি আত্মপ্রদান দ্বারা এই অশরন্য অবলার মনোবাঞ্ছা পরিপূর্ণ কর।’

মহাভারতের বহু নারী চরিত্রই বহুচারিনী এবং বহুগামিনী। পাঁচ স্বামী নিয়ে ঘর করা দ্রৌপদী তো আছেনই, তার পাশাপাশি সত্যকামের মাতা জবালা, পাণ্ডব জননী কুন্তী থেকে শুরু করে স্বর্গের অপ্সরা উর্বসী, রম্ভা সকলেই ছিলেন বহুপুরুষাসক্ত।  কামাসক্ত নারীর উদাহরণ এবং তাদেরকে অবদমনের নানা পদ্ধতি অন্য ধর্মগুলোতেও আছে। ইসলামে হিজাব এবং বোরখার ব্যবহার মুলতঃ কামাসক্ত নারীকে ‘পর্দানশীন’ রাখার জন্যই মনে করা হয়। মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার বহু মুসলিম দেশে আধুনিক যুগেও নারী খৎনা নামের একটি কুৎসিৎ রীতি প্রচলিত আছে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নারীর ভগাঙ্গুর কেটে ফেলা হয়, যাতে নারীর কাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে পুরুষেরা।  খ্রীষ্ট ধর্মের প্রাথমিক উৎসগুলো অনুসন্ধান করলেও দেখা যায়, তালমুদিক লেখকেরা স্ত্রীকে কামাসক্ত হিসেবে বর্ণনা করেছেন, আর  সদুপদেশ দিয়ে বলেছেন – আদর্শ স্বামীর কর্তব্য হচ্ছে নিয়মিত সঙ্গমের মাধ্যমে স্ত্রীর কামকে নিয়ন্ত্রণে রাখা।

ইতিহাস এবং সভ্যতার এই বিশ্লেষণমূলক উদাহরণগুলো থেকে মনে হয়, নারীর কামাসক্তির ব্যাপারটা পুরুষদের জানা ছিলো কিংবা তাদের উদ্বিগ্ন করেছে সবসময়ই।  নৃতাত্তিক সারা ব্ল্যাফার হার্ডি সেজন্যই মনে করেন, শিম্পাঞ্জিদের মত মানুষও যখন বনে জঙ্গলে থাকতো,  মুলতঃ গাছ গাছালিই ছিলো বসতি, তখন আমাদের নারীরাও ছিলো বহুগামী। তারাও সন্তানের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার কথা ভেবে বহু পুরুষের সাথে ‘বিশেষ সম্পর্ক’ তৈরি করতো, তারাও সন্তানের পিতৃত্ব নিয়ে  ধোঁয়াশা তৈরি করতে চাইতো বেঁচে থাকার এবং নিজ সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখার প্রয়োজনেই।  কিন্তু অরণ্য পর্বের পরে যখন মানুষ যখন প্রায় চার মিলিয়ন বছর আগে তৃণভূমিতে নেমে আসে, এবং যুগল বন্ধনের মাধ্যমে দাম্পত্য জীবনে অভ্যস্থ হয়ে যায়, তখন থেকেই নারীর যৌনতাকে অবদমিত করা হয়।  আর ব্যাপারটা আরো ত্বরান্বিত হয় মানুষ যখন পৌঁছোয় কৃষিপর্বে, তখন সম্পদশালী হয়ে ওঠে বিভিন্ন গোত্র। একসময় ওই সম্পদ অধিকারে চলে আসে গোত্রপতিদের; তারা হয়ে ওঠে সম্পদশালী, উদ্ভাবন ঘটে ব্যক্তিগত মালিকানার। সম্পদ যত বাড়তে থাকে পরিবারে নারীদের থেকে গুরুত্ব বাড়তে থাকে পুরুষদের, পুরুষ সৃষ্টি করে পিতৃতন্ত্রের প্রথা, নারী পরিনত হয় পুরুষের সম্পত্তিতে। আগেই আমরা জেনেছি – যেহেতু পিতৃতন্ত্রের মূল লক্ষ্য থাকে ‘সুনিশ্চিত পিতৃত্বে সন্তান উৎপাদন’  সেজন্য, পিতৃতান্ত্রিক সমাজে জৈবিক এবং সামাজিক কারণেই বহুগামী স্ত্রীকে ‘হুমকি’ হিসেবে দেখা হয়। স্ত্রী বহুগামী হলে তার প্রভাব পড়ে ভূ-স্বামীর জমি জমা,  অর্জিত সম্পত্তিতে, তার সামাজিক পদপর্যাদায়।

সনাতন কৃষিভিত্তিক সমাজে আসলে নারীকে যাচাই করা হয় দুটি  বৈশিষ্টের নিরিখে – এক, নারী তার বাপের বাসা থেকে যৌতুক, দাউরি প্রভৃতি নিয়ে এসে স্বামীর সম্পত্তিতে কতটা মূল্যমান যোগ করতে পারবে, আর দুই, – তার শারীরিক সৌন্দর্য আর শরীর-স্বাস্থ্য (গর্ভ) স্বামী এবং তার পরিবারের বীজ বপন এবং তা বয়ে নিয়ে যাবার  জন্য কতটা উপযুক্ত।  তাই দেখা যায় বহু কৃষিভিত্তিক সমাজে পুরুষের বহুগামিতার ব্যাপারে আইন কানুন শিথিল হলেও নারী বহুগামিতাকে সব সময়ই অধিকতর নিন্দনীয়ভাবে দেখা হয়; এমনকি বহুগামী স্ত্রীকে শারিরীক নিগ্রহ এমনকি হত্যা করা হলেও খারাপ চোখে দেয়া হয় না। উদাহরণ হিসেবে প্রাচীন টাইগ্রিস ইউফ্রেটিস অববাহিকায় গড়ে উঠা কৃষিভিত্তিক সভ্যতা থেকে জানা যায়, সেখানে সাধারণভাবে মনে করা হত নারীরা স্বামীর ‘অনুগামী’ থাকবে, তারা চিরকাল থাকবে স্বামীর সাথে একগামী সম্পর্কে আস্থাশীল।   পুরুষেরা কিন্তু তা নয়। তার ছিলো বহুগামী। আর পুরুষের বহুগামিতাকে ততটা খারাপ চোখে দেখা হত না। দেখা হত মেয়েদেরটাই। যে সসমস্ত স্ত্রীরা স্বামীর অনুগত না থেকে পরকীয়ায় মত্ত হতো, তাদের নাক কেটে ফেলা হত।  চীন জাপান এবং ভারতের অনেক জায়গাতেই পুরুষের পতিতাবৃত্তি, রক্ষিতা রাখা কিংবা গণিকা সম্ভোগ প্রভৃতিকে ‘এডাল্ট্রি’ হিসেবে গন্য করা হয় না, কিন্তু বহু জায়গায় এখনো বহুগামী নারীকে বেত্রাঘাত আর পাথর ছুঁড়ে হত্যার বিধান প্রচলিত আছে।  এমনকি পশ্চিমেও বিংশ শতাব্দীর আগে নারীদের বহুগামিতার  কারণে স্বামীর বা পরিবারের আগ্রাসন থেকে তাকে রক্ষা করার কোন শক্ত রাষ্ট্রীয়  আইন কানুন ছিলো না।  বরং অবাধ্য, বহুগামী আর কামার্ত স্ত্রীকে নিগ্রহ, নির্যাতন আর হত্যাকে পরোক্ষভাবে উদযাপনই করা হতো সামাজিকভাবে।  পরবর্তীকালের নারীবাদী আন্দোলন, নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা  এবং মানবিক আইন কানুনের প্রবর্তন নারীদের এই নিগ্রহ থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি দিয়েছে।

বিবর্তনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে,  মানব প্রজাতি শতকরা একশ ভাগ একগামিতার জন্য কিংবা শতভাগ বহুগামিতা – কোনটির জন্যই বিবর্তনগত ভাবে অভিযোজ্য হয়নি।  ইতিহাসের পরিক্রমায় আমরা যেমন গরিলাদের মতো হারেম করে চলা আকবর বাদশাহর সন্ধান পাই তেমনি আবার সন্ধান পাই একদ্বারপত্নিক বহু মানুষেরই। এরশাদের মত লুল পুরুষও আবার সমাজে কম নেই। নারীদের ক্ষেত্রেও মহাভারতের দৌপদি থেকে শুরু করে ক্লিওপেট্রা, কিংবা অধুনা ব্রিটনী স্পিয়ার্স, প্যারিস হিল্টন কিংবা লিজ টেলর পর্যন্ত বহুগামী নারীর সন্ধানও খুঁজলেই পাওয়া যাবে, যেমনি পাওয়া যাবে সীতার মত কেবল একস্বামী নিয়ে মত্ত কঠোর অনুরাগী স্ত্রীও। পাওয়া যাবে ছল চাতুরী প্রতারণাপ্রবণ কিংবা কামকাতুরা নারীর দৃষ্টান্তও। সেজন্যই হেলেন ফিশার তাঁর “প্রেমের বিশ্লেষণ” (Anatomy of Love) বই এ লিখেছেন [20] –

‘এমন কোন সাক্ষ্য প্রমাণ নেই যে মেয়েরা যৌনতার ব্যাপারে লাজুক ছিলো কিংবা তারা গোপন যৌন অভিযান এড়িয়ে চলে। বরং পুরুষ ও নারী উভয়েই এক মিশ্র প্রজনন কৌশল প্রদর্শন করে; একগামিতা এবং বহুগামিতা দুটোই আমাদের স্বভাবজাত অভ্যাস’।

গবেষক / লেখকঃ  অভিজিৎ রয় 

তথ্যসূত্র:
[1] D.M. Buss, Human Mating Strategies, Samfundsokonomen, 4, 47-58, 2002.
[2]Bronisław Malinowski, The Sexual Life of Savages in North-Western Melanesia, London, 1929
[3] N. Burley, & R. Symanski. Women without: an evolutionary and cross- cultural perspective on prostitution. In R. Symanski, The immoral landscape. Toronto: Butterworths, 1981.
[4] D. M. Buss, & D. P. Schmitt, Sexual strategies theory: An evolutionary perspective on human mating. Psychological Review, 100, p 204–232,1993.
[5] David Buss, The Evolution Of Desire – Revised 4th Edition, Basic Books , 2003
[6] “The constancy of women’s preferences in both scenarios is consistent with the theory that women see casual mates as potential husbands and thus impose high status for both”, quoted from David Buss, The Evolution Of Desire – Revised 4th Edition, Basic Books , 2003, p 88.
[7] Barbara B. Smuts, Sex and Friendship in Baboons, Harvard University Press, 1999
[8] R. L. Smith, (Ed.) Sperm Competition and the Evolution of Animal Mating Systems. Academic Press, New York. 688 pp, 1984.
[9] B. Smuts, Male aggression against women: An evolutionary perspective. Human Nature 3:1-44,1992.
[10] M.A. Colwell, & L.W. Oring. Extra-pair mating in the spotted sandpiper: A female mate acquisition tactic. Animal Behavior 38:675-684, 1989.
[11] Helen Fisher, Anatomy of Love: A Natural History of Mating, Marriage, and Why We Stray, Ballantine Books 1994
[12] S.W. Gangestad, R. Thornhill, The evolutionary psychology of extra-pair sex: The role of fluctuating asymmetry. Evolution and Human Behavior 18: 69—88, 1997.
[13] “Women choose symetrical men as affair partmers more than asymetrical men” – quoted on Randi Thornhil’s most important finding, (Ref. David Buss, The Evolution Of Desire – Revised 4th Edition, Basic Books , 2003)
[14] R. Thornhill and S.W. Gangestad,  Do women have evolved adaptation for extra-pair copulation? Pp. 341-368 in Evolutionary Aesthetics, K. Grammer and E. Voland, eds. Springer-Verlag, Berlin, Germany, 2003.
[15] Douglas T  Kenrick, Gary E Groth, Melanie R Trost and  Edward K Sadalla, Integrating evolutionary and social exchange perspectives on relationships: Effects of gender, self-appraisal, and involvement level on mate selection criteria, Journal of Personality and Social Psychology, Vol 64(6), Jun 1993, 951-969.
[16] R. R. Baker, , & , M. A. Bellis, Human sperm competition: copulation, masturbation, and infidelity. London: Chapman & Hall,1995.
[17] Sarah Blaffer Hrdy, Empathy, Polyandry, and the Myth of the Coy Female, in Ruth Bleier, ed., Feminist Approaches to Science,  New York: Pergamon, pp. 119-146, 1986
[18] R. R. Baker,  & , M. A. Bellis, Human sperm competition: Ejaculate manipulation by females and a function for the female orgasm, Animal Behavior, 46, 887–909.
[19] মহাভারত, আদিপর্ব, ২১৪ অধ্যায়
[20] Helen Fisher, Anatomy of Love: A Natural History of Mating, Marriage, and Why We Stray, Ballantine Books, 1994

জীবন সঙ্গী নির্বাচনের কিছু উপায়

সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য সঠিক জীবন সঙ্গী নির্বাচনের গুরত্ব অনেক। বিয়ের পর কখনও যেন এমনটা মনে না হয় যে, জীবন সঙ্গী আপনার জন্যে সঠিক নয়। তাই সময় থাকতেই জেনে নিন, সঠিক জীবন সঙ্গী নির্বাচনের কিছু উপায়।

এমন কেউ যার সঙ্গে যোগাযোগ করা সহজ:

যে খুব সহজেই সবার সঙ্গে গল্প বা কথা বলতে পারেন, যাকে খুব সহজে আপনার মনের কথা বলতে পারেন, যার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে পারেন এমন মানুষ নির্বাচন করা উচিত। এতে করে অনেক কথা বলতে এবং অনেক কাজ সহজে করতে পারবেন আপনি; অবশ্যই এটা আনন্দের।

আগ্রহ এবং গুণসম্পন্ন:

যিনি নিজের আগ্রহ এবং শখের বিষয় আপনাকে জানাবে এবং তার ভালোলাগার অনেক কিছু্ই আপনারও ভালো লাগবে। তবে এটা অবশ্যই মনে রাখতে হবে, তার সব ভালো লাগার সঙ্গে আপনার সব ভালো লাগা নাও মিলতে পারে। কিন্তু কিছু ভালো লাগা অবশ্যই মিলতে হবে।  যখন আপনি কারো সঙ্গে জীবন কাটানোর সীদ্ধান্ত নেবেন তখন অবশ্যই আপনাকে লক্ষ রাখতে হবে, আপনারা দুজন একই ধরনের কাজে আনন্দ পান কি না।

সঙ্গীর মেধা যাচাই করুন:

যদি আপনি স্থীর স্বভাবের হন এবং আপনার সঙ্গী কথা এবং কাজে আপনার থেকে অনেক বেশি এগিয়ে থাকেন তবে সেটা আপনার বৈবাহিক জীবনে ক্ষতির কারণ হতে পারে। আপনাকে অবশ্যই দেখতে হবে, দুজনের মতের মিল কতটুকু রয়েছে? মতের মিল দাম্পত্য জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

মান বজায় রাখা:

জীবন সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে আপনার এবং আপনার পরিবারের মান-মর্যাদার বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। স্ট্যাটাসের অমিল হলে যদিও খুব একটা সমস্যা হয় না। তবে অবশ্যই লক্ষ রাখতে হবে, আপনার সঙ্গী যেন আপনার সমাজের বাইরের না হয়।

একে অন্যকে সম্মান দিতে হবে:

এমন কোনো ব্যক্তির সঙ্গে জীবন কাটানো সম্ভব নয় যে আপনাকে, আপনার স্বপ্ন এবং আপনার ব্যক্তিত্বকে সম্মান দেয় না। তাই এমন জীবন সঙ্গী নির্বাচন করুন, যিনি আপনাকে এবং আপনার ব্যক্তিত্বকে সম্মান করেন।

বিশ্বাসযোগ্য:

এমন কাউকে নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যাকে আপনি পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারেন। একে অন্যের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থার জায়গা না থাকলে সুখী বৈবাহিক জীবন-যাপন একেবারেই অসম্ভব।

একসঙ্গে সময় কাটাতে হবে:

একই ধরনের শখ বা আগ্রহ থাকা যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি একে অন্যকে সময় দেয়াটাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই লক্ষ রাখবেন, আপনার সঙ্গী আপনাকে সময় দিতে কতটা আগ্রহী এবং আপনাকে সময় দিতে ভালোবাসে কি না।  এর পাশাপাশি দুই জনে বোঝাপড়া বা সমঝোতার মধ্যে থাকলে এবং একে অন্যকে বুঝে চললে সর্বোপরি সুখী দাম্পত্য জীবন কাটানো সম্ভব।

দাম্পত্য জীবনে সুখ-শান্তি

দাম্পত্য জীবনে আনন্দের জন্য নিজেদের কিছু কিছু ভাললাগার বিষয় তৈরি করে নিতে হয়।  ব্যবসায়-কাজের ফাঁকে আমার স্ত্রীর পছন্দের কোন একটি জায়গায় বেড়াতে যাওয়া বা আমার পছন্দের কোন রেস্টুরেন্টে খেতে যাওয়া পারস্পরিক বোঝাপড়ায় অনেক বেশি সহায়ক হয়।

একসঙ্গে চমৎকার কোন রোমান্টিক সিনেমা দেখতে যাওয়ার মাধ্যমে উৎযাপন করতে পারেন ছোট ছোট আনন্দের মুহূর্ত। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে পারস্পরিক ভালবাসার মধ্য দিয়ে।   আর স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসাটার ভিত্তিটা কয়েক দিন বা কয়েক মাসে গড়ে উঠেনা।  দাম্পত্য সম্পর্কটা হলো চারা গাছের মত যাকে বড় করতে হয় পরম যত্নে, এবং পরিপূর্ন হয় ধীরে ধীরে।  একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান, সহনশীলতার মাধ্যমেই ভালবাসার এই চর্চা করা সম্ভব।  সংসারে স্বামী ছাড়াও থাকতে পারে শ্বশুর-শাশুড়ি, দেবর-ননদ। এক সঙ্গে থাকলে পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমেই সুন্দর পারিবারিক সম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভব।   সংসারে সুখের জন্য কোন কাজই কেবল ছেলেদের জন্য নয়, আবার কোনটাই কেবল মেয়েদের জন্য নয়; পরিবারের নারী-পুরুষের সমন্বিত কাজেই সংসারে সুখ-শান্তি বজায় থাকে। স্বামী-স্ত্রী দুজন যেহেতু ভিন্ন দুটি পরিবার থেকে এসে একসঙ্গে বসবাস করছে; তাই দু’জনের মধ্যে কিছু অমিল থাকতেই পারে।  কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে হয়ত দুজন কিছুতেই একমত হতে পারছে না।  সে ক্ষেত্রে যার যার মত প্রকাশের ক্ষেত্রে যেমন স্বাধীনতা থাকবে তেমনি স্বামী বা স্ত্রীর মতামতের প্রতি আপনাকে হতে হবে শ্রদ্ধাশীল।

দাম্পত্যে যা যা করবেন:

১।  একজন আরেকজনকে প্রতিদিন অন্তত একবার করে বলুন আমি তোমাকে ভালবাসি! বিয়ের পর কখনই এই কথা বলেননি ভাবছেন তো কি হয়েছে! সাহস করে মন খুলে স্ত্রীকে বা স্বামীকে বলুন না প্লিজ। দেখবেন আপনার দাম্পত্য জীবনে আনন্দ কি পরিমাণ বেড়ে গেছে।
২।  ছোটখাটো ভুলেও ক্ষমা চেয়ে নিন।আবার ছোটখাটো ভুলকে ক্ষমা করতেও দিধা করবেন না। তাতে কেউ কারও কাছে ছোট হয়ে যাবেন না। বরং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের জন্ম নেবে এবং একে অন্যকে ছাড় দেয়ার মানসিকতা তৈরি হবে।
৩।  একে অন্যকে ধন্যবাদ দিন। প্রতিদিনই ছোট-বড় অনেক কাজে দম্পতিরা একে অন্যের সাহায্য নিয়ে থাকেন। এ ধরনের ক্ষেত্রে প্রতিবারই স্ত্রীকে ধন্যবাদ বা কৃতজ্ঞতা জানান।
৪।  প্রশংসা করুন। আপনার স্বামী বা স্ত্রী নিশ্চয়ই কিছু না কিছু গুণে গুণান্বিত। তার গুণগুলো খুঁজে বের করুন। সময় পেলেই তার গুণের প্রশংসা করুন।
৫।  চমকে দিন প্রিয় মানুষটিকে পছন্দের একটি জিনিস উপহার দিয়ে। চেষ্টা করুন সঙ্গীকে বিভিন্ন কারণে বিভিন্নভাবে চমকে দিয়ে আনন্দের উৎস বাড়াতে। কিছুই করার না থাকলে বেড়িয়ে আসুন নদীর ধারে কিংবা লেকের পারে।
৬।  সন্তানের ভাল-মন্দ যে কোন বিষয়ে দুজনের দায়িত্ব স্বীকার করে নিন। একে অন্যের ওপর দায়িত্ব চাপিয়ে দেবেন না।

দাম্পত্যে বিরত থাকুন:

১।  সঙ্গীকে অন্য কারও সঙ্গে তুলনা করা থেকে সচেতনভাবে বিরত থাকুন। সবার সামনে আপনার স্বামী বা স্ত্রীর সমালোচনা করবেন না। প্রয়োজনে একান্তে বলুন।
২।  একে অপরের কাছে বেশি কিছু আশা না করাই ভাল।  সঙ্গীর সীমাবদ্ধতাকে সহজে মেনে নিন।
৩।  বন্ধুদের সঙ্গে বেশি সময় কাটাতে গিয়ে স্ত্রী বা স্বামীকে বঞ্চিত করবেন না।
৪।  আপনার সঙ্গী পছন্দ করেন না এমন কাজ তাকে দিয়ে করাতে যাবেন না।  এতে দাম্পত্য জীবনে তিক্ততার সৃষ্টি হয়।
৫।  দাম্পত্য জীবনে ঝামেলা হতে পারে এমন বিষয় এড়িয়ে চলুন।

লজ্জা সরিয়ে সঙ্গীর সঙ্গে যেসব বিষয়ে কথা বলা দরকার

নারীরা পুরুষের তুলনায় একটু বেশিই আবেগী থাকেন এটি নতুন কিছু নয়। অনেক সময়েই নারীরা নিজেদের উপরে দোষ চাপিয়ে নিয়ে নিজেকে দোষী ভেবে অপরাধী ভাবেন, লজ্জিত হন, যেখানে সত্যিকার অর্থেই তার কোনো ভুল ছিল না এবং ভুল হয় নি। তারপরও নারীসুলভ আচরণে কিছু কাজ করে অনেক বেশি লজ্জিত থাকেন নারীরা যা একেবারেই উচিত নয়। সুতরাং, নারীদেরকে বলছি, এইধরনের কাজ করে লজ্জিত হয়ে নিজেকে ছোটো করা বা গুটিয়ে রাখার কোনোই অর্থ নেই।

১. সঙ্গীর উপহার পছন্দ না হলে তা সরাসরি বলে দেয়া
আপনার পছন্দ অপছন্দ থাকতেই পারে, তাই যদি সঙ্গীর দেয়া উপহার পছন্দ না হয়ে থাকে তাহলে সরাসরি বলে দিলে আসলেই কোনো ক্ষতি নেই। বরং এতে সঙ্গী পরবর্তী সময়ে আপনার পছন্দের ব্যাপারটি মাথায় রাখতে পারবেন।

২. নিজের জন্য কিছুটা সময় বের করে নেয়া
নিজের সংসার, শত কাজ কর্ম, পরিবার সব কিছু নিয়ে যদি একেবারে হাঁপিয়ে ওঠেন তাহলে নিজের জন্য সময় বের করে নিন। নিজে একাকী একটু সময় কাটালে পরিবারের প্রতি আগের মতোই কর্তব্য পালনে উৎসাহী হবেন। যদি একটানা একইভাবে শুধু পরিবারকে সময় দিয়ে যান তাহলে কিন্তু একসময় বিরক্তি এসে যেতে পারে। তাই নিজের জন্য একটু সময় বের করে নেয়ার ব্যাপারে লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই।

৩. নিজের বাবা-মাকে শ্বশুর-শাশুড়ির চাইতেও বেশি ভালবাসলে
এটি প্রাকৃতিকভাবেই নির্ধারিত। যদি আপনার মনে হয়ে আপনি নিজের বাবা-মাকেই বেশি ভালোবাসেন এবং তা নিয়ে লজ্জিত হন যে শ্বশুর-শাশুড়িকে বেশি অনেক বেশি প্রাধান্য দিতে পারছেন না, তার সত্যিই কোনো প্রয়োজন নেই। আপনি আপনার যা কর্তব্য তাই পালন করে যান, আপনার মন আপনার নিজের বাবা-মাকেই বেশি ভালোবেসে যাবে, ঠিক যেমনটি আপনার সঙ্গী তার বাবা-মাকে বাসেন। লজ্জিত হওয়ার কিছু নেই।

৪. নিজের বন্ধুবান্ধবের মধ্যে কিছু গোপন ব্যাপার থাকলে
একজন মানুষের সাথে পুরো জীবন কাটিয়ে দেবেন তার মানে এই নয় যে আপনার একান্ত আপন বন্ধুবান্ধবের মধ্যে কোনো গোপন কিছুই থাকতে পারবে না। হ্যাঁ, এটি সত্যি যে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনো গোপনীয়তা না থাকাই ভালো, কিন্তু নিজের বন্ধুবান্ধবের সব গোপন তথ্য তো নিশ্চয়ই জানিয়ে দেয়া উচিত নয়। সুতরাং এইসকল ব্যাপার গোপন থাকলে নিজেকে দোষী ভাবার বা লজ্জিত হওয়ার কিছু নেই।

৫. সঙ্গীর কিছু ব্যাপার শুধরে নিতে বলা
বিয়ে বা সম্পর্ক তখনই মজবুত হয় যখন দুপক্ষ থেকে কম্প্রোমাইজের ব্যাপারটি আসে। সুতরাং আপনি যদি নিজে ঠিক থেকে সঙ্গীর কিছু ব্যাপার শুধরে নিতে বলেন এতে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার কিছু নেই এবং আপ্নারফ লজ্জা পাওয়ারও কিছু নেই।

৬. সঙ্গীর চাইতেও উঁচু পজিশনে নিজের ক্যারিয়ার থাকা
এই ব্যাপারটি নারীদের চাইতেই বেশি ভাবিয়ে তোলে পুরুষকে। যদি নিজের সঙ্গিনী তার থেকে উপরের পজিশনে থাকে তাহলে অনেক পুরুষই তা নিয়ে লজ্জিত থাকেন। এতে করে নিজেকে দোষী ভেবে লজ্জা পেতে থাকেন নারীরাও। কিন্তু আপনার যোগ্যতা, আপনার পরিশ্রমের সফলতার জন্য লজ্জা পাওয়ার আসলেই কি কিছু আছে? না। তাই লজ্জিত হওয়ার কিছু নেই।

সেই হবে সত্যিকারের সঙ্গী

সত্যিকারের ভালোবাসা কে না চায়? চায় মনের মতো সঙ্গী। প্রতিকূলতায় যে সঙ্গী তার জন্য লড়বে, বিপদে থাকবে পাশে। যার হাত ধরে নির্ভয়ে পথ হাঁটা যায়, কল্পনায় সেই আদর্শ সঙ্গীর একটা রূপ মনে ঠিক করে নেয়। কঠিন সময়েও যে হাত কখনো ছুটে যাবে না। যে সঙ্গী কথা শুনবে, দুয়ার খুলে অপেক্ষায় থাকবে। কল্পনার সেই ভবিষ্যতে সঙ্গীর সম্পর্ক কেমন হবে, অনুভূতিসহ সবকিছু মিলিয়ে একটা চিত্র মনে তৈরি হয়। চাওয়া-পাওয়ার, দিকনির্দেশনা ও প্রত্যাশা বাড়ে। কিন্তু কোথায় সেই আদর্শ সঙ্গী?

সঠিক সঙ্গী খুঁজে পাওয়ার অপেক্ষায় অনেকেই সময় পার করেন। যাওবা সঙ্গী মেলে, অনেক ক্ষেত্রেই মনের মতো করে পাওয়া যায় না। কল্পনার সঙ্গে অনেক ফারাক থাকে। ফলে মেনে নিতে পারেন না। সম্পর্ক ভেঙে যায়। যাঁর অস্তিত্ব নেই, সেই আদর্শ সঙ্গীকে খুঁজতে থাকেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, সঠিক সঙ্গীর মধ্যে নিঃস্বার্থ, যত্নশীল, স্নেহপূর্ণ ও সহজাত গুণাবলি থাকবে—এমন বিষয়টি নিজেকে মনে করিয়ে দেওয়া ভালো। কল্পনার সঙ্গে বাস্তবের মিল থাকতে নাও পারে। ভালোবাসার মানুষটি নিখুঁত হবে—এমন প্রত্যাশা রাখা ঠিক নয়। একেবারে নিখুঁত সঙ্গী পাওয়ার জন্য নিজের ওপর জোর খাটানো ঠিক নয়। কল্পনার চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গীর সবকিছুতেই মিল থাকবে তা নয়।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অনেকে অপেক্ষা করেন জীবনে এমন মানুষ আসবে, যে তার মূল্যবোধকে প্রতি মুহূর্তে ধরে রাখবে, প্রতিদিন মায়ের কাছে ফোন করে খোঁজখবর নেবে, অনেক সময় দেবে, স্বপ্নের কথা বলবে। কিন্তু সব গুণ কি সবার থাকে?

তাই সত্যিকারের সঙ্গী, মানে নিখুঁত ও তালিকায় থাকা সব মানদণ্ড পূরণ করার ব্যক্তি নয়। সত্যিকারের সঙ্গী সব সময় পরিপাটি নাও হতে পারে। অগোছালো কিন্তু সুন্দর ভালোবাসার মানুষ হতে পারে। পুরোনো সম্পর্ক নিয়ে যে মানুষ আঘাত দেবে না, বরং অতীতকে ভুলে যেতে সাহায্য করবে, সে–ই প্রকৃত সঙ্গী। চলচ্চিত্রে চরিত্রের সঙ্গে মিলিয়ে শতভাগ নিখুঁত সঙ্গী চাওয়া ঠিক নয়। সত্যিকারের সঙ্গী চলচ্চিত্রের কাল্পনিক চরিত্রের সঙ্গে মিলবে না। বরং মানানসই বা পূর্ণাঙ্গ হয়ে ওঠার চেষ্টা যে করে সে প্রকৃত সঙ্গী হয়ে ওঠে।

প্রকৃত ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে মেলাতে গিয়ে হতাশা, ঝগড়াঝাঁটি, বিতর্ক, আপস, বিরক্তি এবং ভুল বোঝাবুঝি ঘটতে পারে। মনে রাখতে হবে, প্রতিমুহূর্তে স্বার্থহীনভাবে চিন্তা করা দুজনের মধ্যে সম্ভব হয় না। প্রকৃত আদর্শ মানুষ কেউই নয়, এ কথা মেনে নিতে হবে। প্রত্যাশা আর চাওয়া-পাওয়ার কল্পনাতে বাঁধ দিতে পারলেই সুসম্পর্ক থাকবে। পূর্ণাঙ্গ নিখুঁত মানুষ খোঁজার আশা বাদ দিয়ে যে আপনার অসম্পূর্ণতাকে সম্পূর্ণ করতে পারবে, সেই হবে সত্যিকারের সঙ্গী।

সূত্র: হাফিংটন পোস্ট,প্রথম আলো

ভালোবাসার জৈবিক ভিত্তি

সেক্সের জৈবিক মডেলকে স্তন্যপায়ী প্রাণীর একটি ড্রাইভ হিসাবে মনে করা হয় যা অত্যধিক ক্ষুধা বা তৃষ্ণার মতো। হেলেন ফিশার প্রেম বিষয়ে একজন নেতৃস্থানীয় বিশেষজ্ঞ। প্রেমের অভিজ্ঞতাকে তিনি তিনটি আংশিক ওভারল্যাপিং পর্যায়ে বিভক্ত করেছেন: উদাহরণস্বরূপ, লালসা, আকর্ষণ, এবং সংযুক্তি। কামনা হল যৌন বাসনা পূরণ করার জন্য এক ধরনের অনুভূতি।  রোমান্টিক আকর্ষণ মূলত নির্ধারণ করে কোন ব্যক্তির সঙ্গী কতটা আকর্ষণীয় তার উপর । তাছাড়া আরও কিছু বিষয় আছে, যেমন, একি সাথে একটি বাড়িতে অবস্থান করা, পিতামাতার প্রতি কর্তব্য, পারস্পরিক প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত অনুভূতিগুলিও জড়িত থাকে। এই তিনটি রোমান্টিক শৈলীগুলির সাথে নিউরাল সার্কিটগুলি, নিউরোট্রান্সমিটার এবং তিনটি আচরণগত নিদর্শন সংযুক্ত সব সময় কার্যকর ভূমিকা পালন করে ।

কামনা হল যৌন বাসনার প্রাথমিক ধাপ যা টেসটোসটাইন এবং এস্ট্রোজেনের মতো রাসায়নিক পদার্থ বর্ধিত ত্যাগ করে। এর প্রভাব কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়।  আকর্ষণ আরও individualized এবং রোমান্টিক হয় একটি নির্দিষ্ট সঙ্গীর জন্য, যার মাধ্যমে একটি স্বতন্ত্র লালসা বিকশিত হয়।  স্নায়ুবিজ্ঞানের সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, মানুষ মূলত প্রেমে পড়ে যখন তার মস্তিষ্ক নিয়মিত একটি নির্দিষ্ট সেটের রাসায়নিক পদার্থ ত্যাগ করে। উদাহরণস্বরূপ, নিউরোট্রান্সমিটার হরমোন, ডোপামিন, নোরপাইনফ্রাইন, এবং সেরোটোনিন এর কথা উল্লেখ করা যেতে পারে ।  amphetamine একি ধরনের পদার্থ ত্যাগ করে যার ফলে মস্তিষ্কের কেন্দ্রীয় অংশ সক্রিয় হয়ে ওঠে, হার্টের কম্পনের হার বৃদ্ধি পায় , ক্ষুধা এবং ঘুম হ্রাস পায়, এবং উত্তেজনা বেড়ে যায় । গবেষণায় দেখা গেছে যে, এই পর্যায় সাধারণত দেড় থেকে তিন বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়।

যেহেতু কামনা এবং আকর্ষণ এর পর্যায়গুলিকে অস্থায়ী বলে মনে করা হয়, তাই দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্কের জন্য একটি তৃতীয় পর্যায় প্রয়োজন। সংযুক্তি হল এক ধরনের বন্ধন যার কারণে সম্পর্ক অনেক বছর এমনকি কয়েক দশক পর্যন্ত দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। সংযুক্তি সাধারণভাবে বিবাহ বা শিশু জন্মদান করার মত অঙ্গীকারগুলির উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। তাছাড়া পারস্পরিক বন্ধুত্ব বা পছন্দের বিষয়গুলি ভাগ করে নেয়ার কারণেও সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে স্বল্পমেয়াদী সম্পর্কের চেয়ে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের ক্ষেত্র বেশি পরিমাণে রাসায়নিক অক্সিটোসিন এবং ভাসপ্রেসিন নির্গত হয়। এনজো ইমানুয়েল এবং তার সহকর্মীরা রিপোর্ট করেন যে প্রোস্টেট অণুটি স্নায়ু বৃদ্ধিকারক ফ্যাক্টর (এনজিএফ) নামে পরিচিত, যখন লোকেরা প্রথম প্রেমে পড়ে তখন তার মাত্রা অনেক বেশি থাকে, কিন্তু এক বছর পর তারা আবার পূর্ববর্তী স্তরে ফিরে আসে।  – সুত্রঃ উইকিপিডিয়া

সঙ্গী বিষণ্ণতায় ভুগলে কি করবেন?

সঙ্গী বিষণ্ণতায় ভুগলে সম্পর্কে টানাপোড়ন হতে পারে – তবে এর থেকে পরিত্রানও সম্ভব।  এই প্রবন্ধে আমরা বিষণ্ণ সঙ্গীর সঙ্গে জীবন স্বাভাবিক করার ৫টি উপায় নিয়ে আলোচনা করব।   যখন একজন ব্যাক্তি গুরুতর বিষণ্ণতায় ভোগেন, তার কাছের মানুষগুলো সবচাইতে বেশি আক্রান্ত হয় এবং তাদের প্রতিদিন এগুলো নিয়ে কষ্ট সহ্য করতে হয়। তবে বিষণ্ণতায় ভোগা মানুষটির সঙ্গীটি সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হন। আসলেই বিষণ্ণতা সম্পর্কের টানাপোড়ন সৃষ্টি করতে পারে, এজন্যে সঙ্গীটির কিছু কৌশল আয়ত্ত করা প্রয়োজন যেন তিনি এই দুরাবস্থার মোকাবেলা করতে পারেন এবং সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখতে পারেন।   মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের থেকে বিষণ্ণ সঙ্গীর সঙ্গে জীবন স্বাভাবিক করার ৫টি উপায় দেয়া হলঃ

নিজেকে বোঝান যে আপনার সঙ্গীটি আপনার দলেই আছেন

যখন একজন ব্যাক্তি গুরুতর বিষণ্ণতায় ভোগেন, তার কাছের মানুষগুলো সবচাইতে বেশি আক্রান্ত হয় এবং তাদের প্রতিদিন এগুলো নিয়ে কষ্ট সহ্য করতে হয়। এটি স্বাভাবিক, কেননা আমরা আমাদের কাছের মানুষগুলোর কাছে সবচাইতে সত্য এবং অকপট থাকতে পারি। বন্ধু বান্ধব এবং সমাজের অন্যান্যদের সামনে আমরা এক ধরনের মুখোশ পড়ে থাকি এবং মন ভাল থাকার অভিনয় করি।

যদিওবা এই আচরন স্বাভাবিক, তবুও একজন বিষণ্ণ মানুষের সঙ্গে জীবনাতিপাত করলে মনে হতে পারে সে তার সবচেয়ে খারাপ আচরনগুলো আপনার জন্যে রেখে দেন। এটি অবশ্য অনেকাংশে সত্যি। তারা আসলে সত্যিকারে যেমনটি অনুভব করছেন, তা আপনার সামনে তারা প্রকাশ করেন। তবে আপনার জন্যে ব্যাপারটা অতটা সুখকর নাও হতে পারে।

যদি আপনি মনে করেন যে তাদের অসুস্থতাটা অন্যায়ভাবে আপনার ওপর চাপানো হচ্ছে, তবে মনে রাখবেন, আপনি এবং আপনার সঙ্গীটি একই দলে আছেন। তিনি কখনই আপনাকে দুঃখ দিতে বা দূরে ঠেলে দিতে চান না। বরং তিনি আশা করেন যে আপনি তাকে গ্রহন করে নিবেন – তিনি যেমনই থাকুক না কেন। এমনও হতে পারে যে আরোগ্য লাভের জন্যে তারা আপনার সাহায্যও চাইছেন – যা হল আমাদের পরবর্তী বিষয়।

আপনার সঙ্গীকে ভাল হয়ে উঠতে সাহায্য করুন

এই প্রসঙ্গের ভেতরে ঢোকার আগে আমাদের বুঝতে হবে যে একজন বিষন্ন সঙ্গীকে সাহায্য করে এবং তাদের সামর্থ করার মধ্যে সূক্ষ্ম বিভেদ আছে। আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে যে আপনার কারনে, তিনি যেন একই পথে চলতে থাকার বাহানা না পান বা চিকিৎসা না নিয়ে তার বিষন্নতা জিইয়ে রাখার কোনও ছুতা না মিলে। এভাবেই কো-ডিপেন্ডেন্সি তৈরি হয় এবং অনেকদিন ধরে বিষণ্ণতা জিইয়ে থাকার একটি কারনও এই কো-ডিপেন্ডেন্সি।

তবে আপনার সঙ্গীকে মানসিক সুস্বাস্থ্যের জন্যে সাহায্য করা এবং তাকে সামর্থ করা একই ব্যাপার নয়। আদতে, তা অনেকটাই উল্টো। তাদের বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহন করতে উৎসাহিত করা এবং তাদের দুর্বল মুহূর্তে পাশে থাকার মাধ্যমে আপনি তাদের আরোগ্য লাভের যাত্রায় সহায়ক ভুমিকা রাখতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রে তাকে সময়মত ওষুধ খেতে মনে করিয়ে দেয়া বা পরামর্শকের কাছে সময়মত যাওয়ার কথা বলাতেই তার সাহায্য করা হতে পারে।

সব কথা গায়ে মাখবেন না

যখন আপনার সঙ্গীটি উত্তেজিত হয়ে কিছু বলছেন, আপনার মনে রাখতে হবে তার কোনও কথাই গায়ে মাখা যাবে না। যদিওবা মনে হতে পারে সে আপনাকে চরম ঘৃনা করে, এটি আসলে সত্য নয়।

বিষণ্ণতার একটি বড় উপসর্গ হল, বাস্তব সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারনা। জীবনকে এক দুর্বিসহ দাসত্ব মনে হতে পারে আর সবকিছুই বাস্তবের চেয়েও বেশী খারাপ মনে হতে পারে। আপনার সঙ্গীকে এই মনোভাব অসাড় করে ফেলতে পারে। আপনার সঙ্গে বাইরে বেড়াতে যাবার, সুন্দর সময় কাটাবার এমনকি কথা বলার শক্তি বা ইচ্ছা তার চলে যেতে পারে।

এটি আপনার বা আপনাদের সম্পর্কের কারনে হচ্ছে না বরং তারা যেই অসুস্থতায় ভুগছেন তার কারনে হচ্ছে। মনে রাখবেন, বিষণ্ণতায় ভোগা এবং সম্পর্কে অসুখী হওয়া দুটি ভিন্ন ব্যাপার – যদিওবা সর্বদা এটি মনে নাও হতে পারে।

তাদের সময় দিন, খারাপ মুহুর্তগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে

কোনও কোনও দিন অন্য দিনের তুলনায় খারাপ হতে পারে, সবচেয়ে খারাপ দিনগুলি একেবারেই অসহ্য মনে হতে পারে। এরকম সময়ে আপনার প্রয়োজন তাকে কিছু সময় দেয়া, যেন খারাপ মুহুর্তগুলো তিনি কাটিয়ে উঠতে পারেন। এটা বোঝার চেষ্টা করুন যে তারা ঘুম থেকে উঠেই হতাশ অনুভব করতে থাকেন এবং এই মনোভাবের জন্যে আবার নিজেকে দুষতে থাকেন। এসব দিনগুলোতে বিছানা থেকে ওঠাই চরম কষ্টের হতে পারে।

খারাপ দিনগুলোতে আপনার সঙ্গী হয়ত সারাদিন বিছানায় শুয়ে বা সোফায় বসে টিভি দেখেই কাটাতে পারেন। যদিও আপনি যানেন এটি তাদের জন্যে ভাল না – তবুও বুঝতে চেষ্টা করুন, হয়ত এর চেয়ে বেশি তার পক্ষে আর করা সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় আপনার তাকে সময় দেয়া প্রয়োজন, যেন তিনি এই অবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারেন।

তার কাজের তিরস্কার না করে সে যেমন, তেমনিভাবে তাকে ভালবাসা আর গ্রহন করে নেয়াই এসময়ে তাকে সাহায্য করার সবচেয়ে ভাল উপায়। আপনার এই কাজগুলো করা এবং না করার কারনে আপনার সঙ্গী সুস্থ হতে পারেন অথবা আরও খারাপ অবস্থায় চলে যাওয়ার কারন হতে পারে।

নিজের কাজের সীমা নির্ধারন করুন

এটা ঠিক যে, আপনি আপনার সঙ্গীর আরোগ্যের জন্যে যে কোনও কিছু করতে প্রস্তুত। তবে সমস্যা হচ্ছে, আপনি যদি বেশি সময় এবং পরিশ্রম তার আরোগ্যের পেছনে ব্যয় করেন, তবে এক সময়ে আপনার এটি দুর্বিসহ লাগতে পারে। আরও বেশি সময় চালিয়ে গেলে আপনার এটি তীব্র বিরক্তিকরও লাগতে পারে।

আপনার অবস্থান এবং ব্যাক্তিগত বাধ্যবাধতার উপর আপনার সীমা নির্ভর করবে। যেমন – আপনি তাকে প্রতিদিনের ওষুধ খেতে মনে করিয়ে দিতে পারেন কিন্তু তারা আসলে খাচ্ছে কিনা তা আপনি তদারক করবেন না, সেটা হবে আপনার সীমা। কেননা, সময়মত ওষুধ খাওয়া তাদের কর্তব্য – আপনার নয়।

তেমনিভাবে, দুই সপ্তাহে কমপক্ষে একবার আপনি অন্য বন্ধুদের সঙ্গে বাইরে ঘুরতে যাবেন, যদিওবা আপনার সঙ্গী হয়ত বাড়িতে থাকতেই গো ধরে বসে আছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, আপনার সঙ্গীকে কিছু সীমা নির্ধারন করে দেয়া এবং পরবর্তীতে সেগুলো কঠোরভাবে মেনে চলা।

আপনার সঙ্গীকে চিকিৎসা নিতে উদ্বুদ্ধ করুন

আপনার সঙ্গীটিকে যেভাবে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করতে পারেন তা হল তাদের চিকিৎসা নিতে উদ্বুদ্ধ করা। মুলত, বিষণ্ণতা মস্তিষ্কের রসায়নের সমস্যা। আপনার সঙ্গীটি আহত হলে যেমন আপনি তাকে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যেতেন, তেমনিভাবে বিষন্নতার জন্যেও তাকে চিকিৎসকের কাছে নেয়া জরুরী। তার আরোগ্য হবার সময়টাতে ধৈর্য্য ধারন করে এবং তার পাশে থেকে তাকে সম্পূর্ণ সেরে উঠতে আপনি সাহায্য করতে পারেন।


দি কেবিন ঢাকা মানসিক সুস্থতার চিকিৎসা কেন্দ্র হিসেবে বিশেষায়িত যেখানে বিশেষ বস্তুর প্রতি এবং প্রক্রিয়া আসক্তি উভয়ের উপর এবং পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার নানা দিক যেমন উদ্বেগ, বিষন্নতা, অনুভুতির বৈকল্য, ব্যক্তিত্বের বৈকল্য/রোগ এবং ব্যক্তি ও পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে না চলতে পারার রোগ ইত্যাদির উপর গুরুত্ব দেয়। বাংলাদেশে এইরকম প্রতিষ্ঠান এই প্রথম। দি কেবিন ঢাকা দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পেশাদার চিকিৎসা প্রদানকারীদের  দ্বারা ক্লায়েন্টদের মানসিক সুস্থতার জন্য আধুনিক এবং কার্যকর চিকিৎসা প্রদান করেন। দি কেবিন ঢাকা বিনামূল্যে প্রাথমিকভাবে ফোনে মানসিক অবস্থার মূল্যায়ন করে থাকে।  আপনি বা আপনার সঙ্গী বিষন্নতায় ভুগলে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে পারেন।  এই প্রক্রিয়াটি শুরু করতে ক্লিক করে  যোগাযোগ করুন

জাদুকর ভালোবাসা

কিছুদিন ধরেই কেমন যেন একঘেয়ে হয়ে গিয়েছে সম্পর্কটা। কোনো কিছুই আর ভালো লাগছে না ইদানিং। আর তাই কয়েক দিন ধরেই ভাবছেন কিভাবে ভালোবাসার সম্পর্কটাকে আরো ‘আনন্দময়’ করে তোলা যায়। দুজনের প্রেমের সম্পর্কটাকে আরো একটু সুন্দর করে তোলার জন্য এবং ভালোবাসা আরো বাড়িয়ে তোলার জন্য কি করা যায় তাই ভাবছেন এখন।

ভালোবাসার সম্পর্কটাকে ‘জাদুময়’ করে তোলা খুব কঠিন কোনো কাজ নয়। বেশ সহজ কিছু কাজের মাধ্যমেই দুজনের সম্পর্কটাকে করে তুলতে পারেন জাদুকরী।  যে কাজগুলো করতে আমরা ভুলে যাই, কখনো কখনো সেই ছোট্ট কাজগুলোই ভালোবাসাকে করে তোলে দারুণ আকর্ষণীয়। আসুন জেনে নেয়া যাক “জাদুকর ভালোবাসা” তৈরী করার কিছু কৌশল সম্পর্কে।

প্রতিদিন আলিঙ্গন
আলিঙ্গন ভালোবাসাকে করে তোলে ‘প্রাণবন্ত’।  প্রতিদিন আপনার সঙ্গীকে অন্তত একবার আলিঙ্গন করে রাখুন। অন্তত ১০ সেকেন্ড ভালোবাসার বন্ধনে জড়িয়ে রাখুন তাকে। এতে দুজনের মধ্যে বিশ্বাস বৃদ্ধি পাবে এবং ভালোবাসা হয়ে উঠবে ‘ম্যাজিক্যাল’।

সঙ্গীর জন্য সপ্তাহে  বিশেষ একটি দিন
সবারই কাজের ব্যস্ততা থাকে। কিন্তু তাই বলে ব্যস্ততার অজুহাত কি সঙ্গীকে দেয়া যায় সবসময়? প্রতিদিনই তো ব্যস্ততার অজুহাতে সঙ্গীর ফোন ধরা হয় না কিংবা দেখা করা হয় না। সপ্তাহের ছুটির দিনটি তো দেয়াই যায় সঙ্গীকে তাই না? যারা পুরো সপ্তাহ ব্যস্ত থাকেন তাঁরা সম্পর্ককে সুন্দর রাখতে চাইতে সপ্তাহে অন্তত একটি দিন সঙ্গীকে সময় দিন। সেই দিন দুজনে মিলে রোমান্টিক ডিনার করুন অথবা দূরে কোথাও ঘুরতে যান। তাহলে দুজনের সম্পর্ক হয়ে উঠবে ‘ম্যাজিক্যাল’।

ভালোবাসার কথা জানিয়ে দিন
আপনাদের সম্পর্ক যতই পুরান হোক সঙ্গীকে ভালোবাসার কথা জানাতে কখনই কার্পণ্য করা উচিত না। অনেকেই মনে করেন প্রেমের সম্পর্ক পুরনো হয়ে গেলে ‘ভালোবাসি’ কথাটা না বললেও চলে। কিন্তু নেই ধারণা ভুল। ভালোবাসার সম্পর্কে ‘ম্যাজিক’ ধরে রাখতে চাইতে চিরকালই সঙ্গীকে ভালোবাসার কথা জানানো উচিত।

সারপ্রাইজ দিন
সঙ্গীকে মাঝে মাঝেই সারপ্রাইজ দেয়া উচিত। সারপ্রাইজ শুধু বিশেষ দিনেই দিতে হবে এমন কোনো নিয়ম নেই। যে কোনো সময়েই হঠাৎ করে চমকে দিতে পারেন আপনার সঙ্গীকে। সেটা হতে পারে ছোট্ট কোনো উপহার, পছন্দের খাবার রান্না করা অথবা রোমান্টিক যে কোনো কিছু।

নিজেকে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখুন
ভালোবাসার সম্পর্কের ‘ম্যাজিক’ অনেকটাই নির্ভর করে নিজেকে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখার উপর। প্রেমের সম্পর্কের শুরুতে মানুষ নিজের প্রতি যতটা যত্নশীল থাকে ততটা অনেকদিনের পুরনো সম্পর্কে থাকে না। কাঙ্খিত মানুষটির সাথে সম্পর্ক হয়ে গিয়েছে বলে কি নিজেকে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখার আর কোনো প্রয়োজন নেই? অবশ্যই আছে। সঙ্গীর জন্য নিজেকে সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখুন। সঙ্গির পছন্দের আকর্ষণীয় সুগন্ধি ব্যবহার করুন সবসময়। তাহলে ভালোবাসার সম্পর্কটা থাকবে ‘ম্যাজিক্যাল’।

রাগ নিয়ন্ত্রণ করুন
আপনি যদি আপনার সম্পর্কটাকে ‘ম্যাজিক্যাল’ করতে চান তাহলে অবশ্যই নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কারণ আপনার সব চেষ্টাই বৃথা হয়ে যাবে যদি হুট হাট আপনি রেগে যান এবং সঙ্গীর সাথে খারাপ ব্যবহার করে ফেলেন কখনো। তাই সব সময় চেষ্টা করুন নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার।

নিজেকে প্রানবন্ত রাখুন
সম্পর্কের ক্ষেত্রে সব সময় চেষ্টা করুন প্রাণবন্ত থাকার। স্বতস্ফুর্ত ভালোবাসায় দুজনের সম্পর্কটা খুব সহজেই ‘ম্যাজিক্যাল’ হয়ে উঠবে। তাই সঙ্গীর সাথে কাটানো সময় গুলো যেন দুজনের হাসি, আড্ডায় প্রানবন্ত থাকে সেই চেষ্টা করুন। মাঝে মাঝে কিছু নির্দোষ পাগলামীও সম্পর্কে নিয়ে আসে ‘জাদু’।