যৌন সম্পর্ক মানুষের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। একজন সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষের মনে এমন আকাঙ্খা অপ্রত্যাশিত কিছু নয়। বৈবাহিক জীবনে অনেকেই মনে করেন সেক্সে কোনো উপকার নেই। একটি ভালো যৌন সম্পর্কের পর মানুষ শারীরিক ও মানসিকভাবে তৃপ্তি লাভ করে। যৌন সম্পর্ক ও অর্গাজম যে শুধু তৃপ্তির ব্যাপার, তা-ই নয়, বরং এটি আপনার স্বাস্থ্য ভালো থাকার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
সেক্স থেরাপিস্টরা বারবার নিয়মিত যৌন সম্পর্কের সুফলের কথা বলে আসছেন। এখানে তার কয়েকটি আলোচনা করা হলো-
আয়ুষ্কাল বাড়াতে পারে: ক্লিনিক্যাল সেক্সিওলজিস্ট এবং সনদপ্রাপ্ত সেক্স কোচ সানি রডজার্সের মতে, নিয়মিত যৌনতার ফলে আপনার জীবনের পরিধি বাড়তে পারে। ‘আপনি যখন প্রতিবার অর্গাজম করেন তখন আপনার শরীর ডিএইচইএ নামের একটি হরমোন নিঃসরণ করে। এ হরমোনটি দেহের ইমিউন সিস্টেমের জন্য খুবই উপকারী এবং এটি আপনার চামড়াকে আরও স্বাস্থ্যবান করে, যা আপনাকে আরও তরুণ দেখাতে সাহায্য করে।
মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী: যৌন সম্পর্ক আপনাকে দুশ্চিন্তা থেকে দূরে রাখবে। রডজার বলেন ‘যৌনতা কষ্ট এবং উদ্বেগ কমায়, পক্ষান্তরে রিলাক্সেশন বাড়ায়।’ অ্যান্ড্রোফিনস নামের এক প্রকার হরমোন মূলত এর জন্য দায়ী। যৌনতার ফলে এ হরমোনটি নিসৃত হয় এবং এটি মানুষের ডিপ্রেশন কমিয়ে মন চাঙ্গা করতে সাহায্য করে।
সঙ্গীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ায়: সেক্স থেরাপিস্ট লরি ওয়াটসন বলেন, ‘সঙ্গীকে স্পর্শ করার মাধ্যমে তার আরও ঘনিষ্ঠ হওয়া যায়। যৌনতার কারণে অক্সিটোসিন নামের এক ধরনের হরমোন নিসৃত হয়, ফলে সঙ্গীর সঙ্গে আপনাকে আরও বেশি ঘনিষ্ঠ হতে উৎসাহিত করে।
যৌনতা হতে পারে ভালো ওষুধ: নিয়মিত যৌন সম্পর্ক বেশ কয়েকভাবে আপনার শরীরের উপকারে আসতে পারে। রডজার বলেন, ‘বোস্টন ইউনিভার্সিটির স্কুল অব পাবলিক হেলথের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বীর্যপাত প্রোস্টেট ক্যান্সারের সম্ভাবনা কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। পুরুষের জন্য তাই যৌনতা স্বাস্থ্যকর হতে পারে। অর্গাজমের ফলে নিসৃত অক্সিটোসিন হরমোন প্রাকৃতিকভাবেই মনযন্ত্রনা, মাথা ব্যাথা ও মাংসপেশির পীড়া দূর করতে সাহায্য করে।’
ক্যালরি ক্ষয় করে: রডজার বলেন, ‘প্রতিবার যৌনতায় একটি যুগল অন্তত ১০০ ক্যালরি ক্ষয় করে। যদি কোনো যুগল সপ্তাহে তিনবার মিলিত হয়, তাহলে কোনো ধরনের ব্যয়ামাগারে যাওয়া ছাড়াই তারা বছর শেষে ১৫ হাজার ক্যালরি ক্ষয় করতে পারবে।’
মানসিক চাপ কমায়: ওয়াটসন বলেন, ‘অর্গাজমের ফলে অনেক দুশ্চিন্তা দূর হয়ে যায়। আমার একজন নারী রোগী ছিলেন যিনি ১২ বছর ধরে সপ্তাহে তিনবার সঙ্গীর সঙ্গে মিলিত হয়ে আসছিলেন। কিন্তু তার কোনো অর্গাজম হচ্ছিল না। পরে আমি তার এ সমস্যাটির সমাধান করি। অর্গাজম মানসিক চাপ কমায় বলে সে আমার কাছে স্বীকার করেছে।’
পিএলওএস ওয়ান জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টানা দুই সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন সেক্স করলে মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস অংশের কোষ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। মস্তিষ্কের এ অংশটি মানুষের মন ভালো বা খারাপের জন্য দায়ী। এ ছাড়া বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, সঙ্গীর সঙ্গে মানসিক ও শারীরিকভাবে ঘনিষ্ঠ হলে সেটি মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। উৎস-প্রিয় ডেস্ক