“লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট”-সত্যিই কি হয় ?

প্রথম দেখায় ভালোবাসা (লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট) হচ্ছে একটি চমৎকার-রোমান্টিক-উত্তেজনাকর শব্দগুচ্ছ।অনেকেরই কল্পনাবিলাস থাকে প্রথম দেখায় প্রেমে পড়া নিয়ে।আর যাঁদের এ অভিজ্ঞতা হয়েছে তাঁরা এর মহত্ত্ব প্রচারে উচ্চকণ্ঠ। কেউ বলেন, ‘ওকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল ও আমার!’ আবার কেউ বলেন, ‘প্রথম দেখাতেই জেনেছিলাম আমরা—দুজনে দুজনার!’

বিজ্ঞানীরা বর্তমানে একমত যে, প্রথম দেখায় প্রেমে পড়ার বিষয়টা সত্যি সত্যি ঘটে। যেসব বিজ্ঞানী এ ক্ষেত্রে কাজ করছেন তারা বিশ্বাস করেন, যেসব সমাজে অস্থিরতা নেই, যুদ্ধ ও মৃত্যুর ঝুঁকি নেই সেসব সমাজে প্রেমে পড়ার সম্ভাবনা তুলনামূলক বেশি। আর এরকম একটা সম্ভাবনার প্রাথমিক শর্ত হলো এমন একটা অনুকূল বিশ্বাস সেই সমাজ ধারণ করবে।

যাহোক, ভালোবাসার কোনো সীমানা নেই। এটি একেকজনের কাছে অনেক রকম। কেউ সত্যিকার অর্থেই কাউকে ভালোবেসে ফেলেন। কেউবা আবেগের বশেই কারও প্রতি আকৃষ্ট হন। এই দুটো বিষয়ের মধ্যে কিন্তু পার্থক্য আছে। কোনটি ভালোলাগা বা আবেগ আর কোনটি ভালোবাসা এটা বুঝতে আমরা অনেকেই ভুল করে ফেলি। সত্যের জন্য প্রস্তুত হন। ভালোবাসার ভ্রমরটাকে একটু সময় নিতে দিন। কে জানে প্রথম দেখাতেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললে বাকি জীবনভর হয়তো এই সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্বিতীয়বার না ভাবাটাই আপনাকে ভাবাবে!

এক তরফা প্রেম তো নয়?
আপনি তো প্রথম দেখাতেই ‘প্রেমে পড়ে গেলেন’ কিংবা অন্য ভাষায় বললে, ‘প্রেমে পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন।’ কিন্তু একে ‘প্রেম’ নামে ডাকার আগে একবার ভেবে নিন প্রিয়মুখের মানুষটা আপনার এই অনুভূতি কীভাবে গ্রহণ করবেন। ‘বন্ধু’ হয়ে থাকতে চাইলে বন্ধু হয়েই থাকুন না!

আসলেই কি প্রেম?
প্রেম-পাখি নিশ্চয়ই চির দিন অধরাই থেকে যায় না! কিন্তু প্রেম প্রেম ভাব হওয়া আর প্রেম হওয়া তো এক কথা না। যাঁর প্রেমে পড়েছেন বলে মনে করছেন তাঁকে নিয়ে ভাবার আগে নিজেকে নিয়ে আরেকটু ভাবুন। অনেক কিছুই তো হতে পারে প্রেমের কাছাকাছি কিন্তু প্রেম নয়! আজকাল অনেকেই যেমন বলেন থাকেন—হার্ট থ্রব! ক্রাশ! আর কাউকে দেখে একটা মোহের ঘোরে তো পড়তেই পারেন, হোক তা মানসিক বা শারীরিক আকর্ষণ থেকে।

জল দেখে ঝাঁপ দিন
জলে ঝাঁপ দেওয়ার আগে জলের চরিত্রটা জেনে নিন। জল গভীর হলে তো বেঁচেই গেলেন! সাঁতার না জানলে গভীর জলে তো ডুবতেই পারেন। কিন্তু সে জলে ডোবা হাঁটুপানিতে ঝাঁপ দিয়ে মাথা ফাটানোর চেয়ে ভালো! যে মানুষটিকে পেতে চাইছেন তাঁকে চেনার জানার চেষ্টা করুন। জীবনটা তো আর হলিউড-বলিউডের রোমান্টিক কমেডির মতো স্ক্রিপ্ট মেনে চলে না তাই জীবনের হিসেব নিয়ে বসুন।

ঠোকাঠুকিটা পার করুন
প্রেমে পড়লে নাকি লোকে অবলীলায় মধু মনে করে বিষও পান করতে পারে! আর প্রথম প্রথম তো সবকিছুই ভালো লাগে। স্বভাবের দোষ-ত্রুটিগুলোও তখন চোখে পড়ে না। কিন্তু টুকিটাকি একটা কিছু নিয়ে ঠোকাঠুকি তো লেগেই যেতে পারে। দেখুন এই ঠোকাঠুকিটা কীভাবে পার হয়। যদি সত্যিই একে অন্যের দোষ-ত্রুটি মেনে নিয়েই পরস্পরকে গ্রহণ করতে পারেন, তাহলে আপনারা সত্যিই ভাগ্যবান। বুঝতে হবে আপনারা আসলেই প্রেমের জোয়ারে ভাসতে যাচ্ছেন।

অতীত এড়াবেন না
আপনার মতোই আপনার প্রেমিক কিংবা প্রেমিকারও একটা অতীত আছে। অতীতটাকে এড়ানোর কিছু নেই। খোলা চোখে দেখে বিষয়টা বুঝে নিন। অন্ধের মতো নয়, জেনেশুনে সেটা মেনে নিন। একে অন্যের সঙ্গে নিজেদের অতীতের কথা, সুখ-দুঃখের কথা ভাগাভাগি করে নিন। সঙ্গীকে বিচার করতে নয়, নিজেদের বোঝাপড়াটা আরও বাড়াতেই তা করুন।

ভালোবাসার কারণ আবিষ্কার করুন
নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, আপনি কেন তাঁকে ভালোবাসেন? এবার তাঁকেও জিজ্ঞেস করুন, তিনি কেন আপনাকে ভালোবাসেন? এমনও তো হতে পারে আপনারা পরস্পরকে এর মধ্য আরও ভালোভাবে আবিষ্কার করবেন। আর তিনি না বললে আপনি হয়তো জানতেনই না আপনার সেই গুণের কথা, যে জন্য তিনি আপনাকে ভালোবাসেন! এই বোঝাপড়াটা দরকার।

বাস্তবতা বোঝা জরুরি
কোনো কিছুই যখন ঠিকঠাক কাজ করে না তখন একদল লোক নিরাশায় ডুবে যান আরেক দল লোক কেবলই আশাবাদী হয়ে খালি স্বপ্ন দেখতে থাকেন। কিন্তু এই আশা বা নিরাশার চেয়ে বাস্তবটাকে ভালোভাবে জানা বোঝা জরুরি। কোনো কিছুকেই ধ্রুব বা চিরায়ত বলে ধরে নেবেন না। আপনি যদি নিজে সুখী না হন তাহলে বুঝতে হবে আপনার সঙ্গীও আপনাকে নিয়ে সুখে থাকবেন না। কেননা, নিজে সুখী না হলে অন্যকে সুখী করা যায় না। সম্পর্কের বাস্তব চেহারাটা ভালো করে দেখুন।

নিজের জীবন নিজেরই থাকে
ভালোবেসে তাঁকে ‘জান-প্রাণ’ ডাকতেই পারেন! মনের মানুষ, প্রেমের মানুষ তো তাই-ই। কিন্তু সাধু সাবধান, ভুলবেন না যে নিজের জীবনটা সব সময় নিজেরই থাকে। ফলে প্রেমের বাতাসে গা ভাসিয়ে দিলেই চলবে না। নিজের জীবনের প্রতি খেয়াল রাখা চাই। প্রেমের জোয়ারে ভেসে গিয়ে নিজের লেখাপড়া, ক্যারিয়ার, ভবিষ্যতের পথ থেকে যেন পা পিছলে না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখুন। নইলে মধুচন্দ্রিমার সঙ্গে সঙ্গে প্রেম-পাখিটাও আপনাকে ফেলে উড়ে যেতে পারে।

তবে যাই হোক না কেন ভালোবাসা যেহেতু সকল কিছুর ঊর্ধ্বে তাই কোনো সঠিক ব্যখা কিংবা সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত হবে না এ বিষয়ে। স্যাম লিভেনসনের ভাষায়, “লাভ অ্যাট ফার্স্ট‌ সাইট ইজ ইজি টু আনডারস্টান্ড। ইটস হোয়েন টু পিপল হ্যাভ বিন লুকিং টু ইচ আদার ফর এ লাইফ টাইম, দ্যাট ইট বিকামস এ মিরাকল’ । তাই লভেনসনের মতোই বলতে হয় থাক না কিছু জিনিস মিরাকল পৃথিবীতে।  সব কিছুর ব্যাখা থাকলে জীবন তো হয়ে যাবে একঘেয়ে আর চির নির্দিষ্ট।
সংকলিতঃ সূত্র  : প্রথম আলো, প্রিয়.কম , দৈনিক আমাদের সময়, বিডি লাইভ ২৪