প্রথম সাক্ষাতেই মেয়েদের যে বিষয় গুলো লক্ষ্য করে ছেলেরা!

হঠাৎ পরিচয় হলো একজন পুরুষের সাথে।  বেশ কিছুক্ষন কথাবার্তাও হলো। বেশ আন্তরিক মানুষ বলেই মনে হলো তাকে প্রথম পরিচয়ে। মনে মনে মানুষটি সম্পর্কে অনেক কিছু ভেবে নিলেন আপনি। আচ্ছা, আপনারও কি জানতে ইচ্ছে করছে সেই মানুষটি আপনার মাঝে কী দেখলো? এমন কৌতুহল হতেই পারে আর সবসময় হয়, তাই না?

পুরুষরা নারীর মাঝে প্রথম দেখায় কী কী বিষয় লক্ষ্য করে তা নিয়ে অনেক তর্ক বিতর্ক আছে। তবে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া বেশিরভাগ পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি সাধারণত একই রকম হয়। আসুন জেনে নেয়া যাক পুরুষরা প্রথম দেখায় নারীর মাঝে লক্ষ্য করেন এমন ৭টি বিষয় সম্পর্কে।

দৈহিক সৌন্দর্য:

নারীর সাথে প্রথম দর্শনে পুরুষরা চেহারার বদলে নারীর দৈহিক সৌন্দর্য ও গঠন লক্ষ্য করে সবার আগে। সুন্দর ফিগারের অধিকারিণীদের প্রতি পুরুষদের আকর্ষণ থাকে বরাবরই বেশি। এক্ষেত্রে তাদের দৃষ্টি প্রথমেই যায় নারীর স্তন জোড়ার দিকে। এছাড়াও তারা কোমর, নিতম্ব ও পা দেখে থাকে তারা। বিভিন্ন গবেষনার জরিপে এই তথ্য পাওয়া গিয়েছে যে নারীর সাথে প্রথম দেখায় পুরুষরা তাদের স্তন, কোমর ও পা খেয়াল করে সবার আগে। সুন্দর ও অপেক্ষাকৃত লম্বা পায়ের অধিকারিণীদের প্রতি পুরুষদের আকর্ষন বেশি থাকে সবসময়। যদিও এই বিষয়টি অনেক পুরুষই স্বীকার করতে চায় না কারণ মনের অজান্তেই তারা কাজটি করে।

চোখ,হাসি ও চুল:

সুন্দর টানা টানা চোখ সব পুরুষই পছন্দ করে। আর তাই নারীর সাথে প্রথম দর্শনে কথা বলার সময় পুরুষরা শরীরের পরেই চোখের দিকে লক্ষ্য করে। চোখ সুন্দর হলে অপলক সেই চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে কথা বলে তারা। এছাড়া চোখের চাহনিও খেয়াল করে সর্বক্ষণ। হাসির সৌন্দর্যটাও বেশ মনোযোগ দিয়েই দেখে পুরুষেরা। নারীর চুলের প্রতিও পুরুষদের আগ্রহ অপরিসীম। আর তাই একজন নারীর সাথে প্রথম পরিচয়ে তারা সেই নারীর চুল ও চুলের স্টাইল লক্ষ্য করে। সুন্দর চুল ও হেয়ার কাটের নারীদের প্রতি তারা বেশি আকর্ষনবোধ করে।

উচ্ছলতা:

হাসিখুশি নারীদের প্রতি পুরুষদের আকর্ষন চিরন্তন। আর এই চিরন্তন আকর্ষনের কারণে প্রথম দর্শনেই পুরুষরা নারীদের হাসি খেয়াল করে। একজন নারীর সাথে প্রথম পরিচয়ে তারা সেই নারীর হাসি কেমন, সে কী মন খুলে হাসে কিনা কিংবা মেয়েটি হাসিখুশি নাকি গম্ভীর ইত্যাদি বিষয়গুলো লক্ষ্য করে।

বুদ্ধিমত্তা:

প্রথম দর্শনেই কথা বলার সময় নারীর বুদ্ধিমতার বিষয়টি বেশ মনোযোগ সহকারেই খেয়াল করে পুরুষরা। কথা বার্তা বলার সময় উপস্থিত বুদ্ধিও নজর কাড়ে তাদের। উপস্থিত বুদ্ধি সম্পন্ন নারীদেরকে পুরুষরা বেশ পছন্দ করে এবং তাদের প্রতি তীব্র আকর্ষন বোধ করে।

কন্ঠস্বর ও কথা বলার ভঙ্গি:

একজন নারীর সাথে প্রথম পরিচয়ের সময় পুরুষরা নারীর কন্ঠস্বর ও কথা বলার ভঙ্গি খেয়াল করে। সুন্দর মিষ্টি কন্ঠ ও স্পষ্ট সুন্দর উচ্চারনের নারীরা পুরুষদের মনোযোগ আকর্ষন করে ও ভালো লাগার অনুভূতি তৈরী করে।

রসবোধ:

বলা হয়ে থাকে যে নারীরা পুরুষের মাঝে রসবোধের উপস্থিতি পছন্দ করে। এক্ষেত্রে পুরুষরাও কিন্তু পিছিয়ে নেই। পুরুষরাও নারীদের মাঝে রসবোধের উপস্থিতি খুবই পছন্দ করে। প্রথম বার কথা বলার সময়েই তারা এই বিষয়টি নারীদের মাঝে খোঁজে এবং বেশ আগ্রহ সহকারে লক্ষ্য করে। তাদের রসিকতাকে নারীরা কিভাবে গ্রহণ করছে সেই বিষয়টিও তারা লক্ষ্য করে।

পোশাক:

প্রথম সাক্ষাতে নারীর পোশাকের দিকে খেয়াল করে কম বেশি সব পুরুষ। কেমন পোশাক পড়েছে, কি রঙ, রুচিশীল নাকি বেমানান ইত্যাদি বিষয়গুলো খেলা করে পুরুষরা নারীর সাথে প্রথম দেখায়। এমনকি পোষাকের সাথে ব্যাগ ও জুতা ম্যাচিং করে পড়েছে কিনা সেটাও তাদের চোখ এড়ায় না।

সুত্রঃ দেশে বিদেশে

আবার বিয়ে করার আগে

সঙ্গী হারালে জীবন স্থবির হয়ে পড়ে। বিচ্ছেদ বা মৃত্যুর ঘটনায় কেউ জীবনসঙ্গীকে হারাতে পারেন। কিন্তু জীবন তো থেমে থাকে না। আর জীবনের প্রয়োজনেই অনেকে বিয়ে করার কথা ভাবেন। কিন্তু চাইলেই কি সব সহজভাবে মেলে?  মা-বাবা-সন্তানের কথা ভেবে তখন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে হয়। সন্তান, নাকি নিজের জীবন, কোনটাকে প্রাধান্য দেবেন? সমাজও অনেক সময় মনে করে, সঙ্গীবিহীন অবস্থায় জীবনযাপন কষ্টকর। তবে মনে রাখতে হবে, স্ত্রী থাকা অবস্থায় বা তাঁকে না জানিয়ে বিয়ে করলে সেটি দণ্ডনীয় অপরাধ।

অনেক সময় স্ত্রীর মৃত্যু বা বিবাহবিচ্ছেদের পর সন্তানকে না জানিয়ে হুট করে সংসারে নতুন সঙ্গীকে নিয়ে আসেন অনেকে। এটি সন্তানের মনোজগতে প্রভাব ফেলে। আকস্মিক এই আঘাত সে মেনে নিতে পারে না। পারিবারিক সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়। এসব পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব যদি ভাবনার শুরু থেকেই সন্তানের কাছে বিষয়টি গ্রহণযোগ্য করে তোলা যায়। সন্তানের সিদ্ধান্তকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। মানবিক সম্পর্কের এই জায়গাগুলো বেশ জটিল। মনোজগতে নানা ধরনের আলোড়ন চলতে থাকে। তাই বড়দের বেশি ধৈর্য ধরতে হবে।

অনেক সময় শিশুটি নিজের মা-বাবার জায়গায় নতুন ব্যক্তিটিকে পছন্দ করতে পারে না। নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। এ ক্ষেত্রে মা-বাবাকে এগিয়ে আসতে হবে। কোনোভাবেই সন্তান যেন মানসিক চাপ বোধ না করে। সন্তানকে বোঝাতে হবে, এই বিষয়ে সে-ই মূল সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী। তার ইচ্ছা-অনিচ্ছাই সব। নতুন সঙ্গীর সঙ্গে বন্ধুত্বের শুরুতে তাকে সব বুঝিয়ে বলুন।

সন্তানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিন। আপনার সন্তানের সঙ্গে তাঁর বোঝাপড়া ভালো হলে বা বন্ধুত্ব গড়ে উঠলে সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হবে। বিয়ের পর মা-বাবার উচিত সন্তানকে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া। আগের মতো পারিবারিক আবহ বজায় রাখতে হবে। নতুন বাড়িতে উঠলে সেটিতে সে যেন পুরোনো পরিবেশ খুঁজে পায়, সে ব্যবস্থা করতে হবে। হুট করেই তার আগের সব অভ্যাস পরিবর্তনের কথা বলা যাবে না। কেননা, শিশুটির হয়তো মা-বাবার সঙ্গে ঘুমানো অভ্যাস। তাকে যদি আলাদা ঘরে থাকতে বলা হয়, তখন সে ভাববে নতুন মানুষটির কারণে তার সব হারাতে হচ্ছে। সন্তানের সীমাবদ্ধতা, পছন্দ-অপছন্দ সব আগেই নতুন সঙ্গীকে জানিয়ে দিতে হবে। যদি দুপক্ষেরই সন্তান থাকে, তাহলে তাদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ করা যাবে না। কোনো ঝামেলা হলে এর মধ্যে মা-বাবার প্রবেশ না করাই ভালো। খুব ভালো হয় বিয়ের আগের একে-অপরের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলে। এমনকি বিয়ের দিনও কৌশলী হতে হবে। যাতে সন্তান মনে করে সে-ই সবচেয়ে প্রাধান্য পাচ্ছে এবং সে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।

নতুন সঙ্গীকে সন্তানের কাছে আস্থাভাজন হতে হবে। মা-বাবার বিয়ের পর সন্তান যেন নিজেকে বাইরের কেউ মনে না করে। শিশুর মনস্তত্ত্ব মা-বাবাই সবচেয়ে ভালো বোঝেন। তবু এ সময় বাড়তি যত্ন নিতে হবে। আগের চেয়ে অনেক বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে তাঁদের। প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়েরও শুরুতে মা-বাবাকে ভুল বোঝা উচিত নয়। মনে কোনো প্রশ্ন না রেখে সরাসরি কথা বললে সম্পর্কে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হবে না।

সুত্রঃ প্রথম আলো
লিখেছেনঃ তৌহিদা শিরোপা | জুন ০৬, ২০১৬

জীবনসঙ্গীকে যে কথা বলতেই হবে

দুটি মানুষের কথোপকথনের মাধ্যমেই একটি সম্পর্কের সূচনা হয়। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই কেউ একজনকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেন। জীবনভরই দুজনের মধ্যে চলে কথার বিনিময়। তবে কিছু কিছু কথা আছে যেগুলো নিয়ে নারীরা লুকোচুরি করেন। ওই কথাগুলো তিক্ত হলেও আপনার জীবনসঙ্গীকে বলতেই হবে।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এমন সাতটি বিষয় সম্পর্কে বলা হয়েছে, যেগুলো আনন্দময় সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে বড় ভূমিকা রাখে।

এ মুহূর্তে শারীরিক সংসর্গ নয়
আপনি চাইছেন না, অথচ আপনার সঙ্গী আপনাকে খুব কাছে পেতে চাইছেন। তাঁর ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পণ করবেন না। আপনি শারীরিক সংসর্গে লিপ্ত হতে না চাইলে সঙ্গীকে সরাসরি না বলে দিন। আপনার অনিচ্ছার কথাটি জানাতে রাখঢাক করবেন না।

আপনার প্রত্যাশা
আপনার সম্পর্ক কোন দিকে মোড় নিচ্ছে, আপনি কি মনের মানুষের কাছ থেকে আরও বেশি কিছু চান? তাঁর সঙ্গটাকে কেমন অনুভব করছেন? এসব বিষয় অবশ্যই তাঁকে জানাতে হবে।

অন্য কাউকে ভালোবাসা
আপনি একজনের সঙ্গে চার বছর ধরে সংসার করছেন। এরই মধ্যে অন্য একজনকে আপনার মনে ধরেছে। কিন্তু এটি লুকিয়ে রাখবেন না। প্রথম মানুষটিকে জানিয়ে দিন। অন্যথায় আপনি একই সঙ্গে দুজন মানুষের সঙ্গে অন্যায় করবেন।

বেশি খরচ করে ফেলেছি
এখানে-সেখানে সামান্য অর্থ খরচের বিষয়টি না জানালেও চলে। তবে কখনো কখনো গয়না, সম্পত্তি বা অন্য কোনো খাতে বেশি অর্থ খরচ হয়ে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে খরচের বিষয়টি প্রিয় মানুষটিকে জানিয়ে দেন।

মানসিকভাবে বিপর্যস্ত
আপনার জীবনসঙ্গীর চাচি বা খালা আপনার পোশাক-আশাক নিয়ে বিদ্রূপাত্মক মন্তব্য করেছেন কিংবা আপনার দেবরের প্রেমিকা বিষয়টি ফাঁস করে দিলেন। এমন বিষয় নিয়ে আপনি প্রিয়জনের সঙ্গে অবশ্যই কথা বলবেন। আপনি তাঁর কাছে জানতে চাইবেন কীভাবে উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে নিজেকে বাঁচানো যায়।

পছন্দ, অপছন্দ এবং আরও কিছু
আপনার পছন্দ-অপছন্দ, পছন্দের খাবার, অতীতের গভীর সম্পর্ক কোনো কিছু বর্তমান সঙ্গীর কাছে আড়াল করবেন না।

আমার জন্য কিছুটা সময়
কিছু সময় আছে, যখন আপনি একাকীই কাটাতে চান। এ বিষয়ে সঙ্গীকে স্পষ্ট করে বলে দিন। এতে করে ওই মুহূর্তে আপনি সংঘাত এড়াতে পারবেন। কিন্তু আপনার একান্ত মুহূর্ত সম্বন্ধে কাছের মানুষটি যদি না জানে, তবে হিতে বিপরীত হতে পারে। সুত্রঃ প্রথম আলো

তরুণী পাত্রী চাই!

বিয়ের মাধ্যমে জীবনসঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়ই সাধারণ কিছু বিষয় বিবেচনায় আনে। সামাজিক অবস্থানের ভিন্নতার কারণে বিবেচনার বিষয়গুলোও আলাদা হয়। মেয়েদের কাছ থেকে একটি অভিযোগের সুর প্রায়ই শোনা যায়, একটি ছেলের চেহারা বা বয়স যেমনই হোক না কেন, সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে অনেকেরই প্রধান মাপকাঠি থাকে চেহারার সৌন্দর্য এবং অপেক্ষাকৃত অল্প বয়স। তবে এ ক্ষেত্রে শুধু ছেলেদেরই দোষ দিলে চলবে না।  অনেক ক্ষেত্রে মেয়েদেরও অর্থনৈতিক স্বাবলম্বন বা শিক্ষাগত যোগ্যতা যা-ই থাকুক না কেন, সঙ্গীর পেশাগত প্রতিষ্ঠা এবং আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়টিই তারা প্রাধান্য দেয়।  কিন্তু প্রশ্ন আসে এসব বিবেচ্য বিষয়গুলো দাম্পত্যজীবনের একট দীর্ঘ পথ সুন্দরভাবে চলার জন্য কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ। যে মেয়েটি তার চমৎকার মানসিক গঠন, বুদ্ধিমত্তা ও বিবেচনাবোধের কারণে দারুণ একজন পথ চলার সঙ্গী হতে পারত, শুধু বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যের কারণেই কি সে উপেক্ষিত হবে? অথবা যে ছেলেটির দৃঢ় আত্মপ্রত্যয়, অনুভূতিশীল মন এবং দায়িত্ববোধ একজন নারীকে একটি সুন্দর দাম্পত্যজীবন দিতে পারে। কিন্তু আর্থিক সচ্ছলতার বিবেচনায় সে কি এ ক্ষেত্রে কম বিবেচিত হবে?

একটি সফল দাম্পত্য সম্পর্ক মূলত পারস্পরিক আকর্ষণ, ভালোবাসা ও বন্ধুত্বের দৃঢ় ভিত্তিতে গড়ে ওঠে। তবে সম্পর্কের প্রথম দিকে পরস্পরের প্রতি আগ্রহ তৈরিতে এবং কাছে আসতে এই আকর্ষণের গুরুত্ব একেবারে উপেক্ষা করা যায়না। অপরিচিত দুজন নর-নারীর মধ্যে তাদের বাহ্যিক ও আনুষঙ্গিক বৈশিষ্ট্য (যেমন—সৌন্দর্য, বয়স, বাচনভঙ্গি, এমনকি আর্থিক অবস্থান, ক্ষমতা ইত্যাদি) আকর্ষণ তৈরির ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে প্রয়োজনীয় হতে পারে। কিন্তু দাম্পত্য সম্পর্কের প্রতিদিনের জীবনে এবং দীর্ঘ পথ চলায় এই আকর্ষণ ক্রমেই ফিরে হয়ে আসে। শেষ পর্যন্ত ভালোবাসার মায়া এবং নিবিড় বন্ধুত্ব একটি আনন্দময় সম্পর্কের অন্যতম নির্ধারক হয়ে ওঠে। ফলে প্রথম দিকে যেসব গুরুত্বপূর্ণ ছিল, সেগুলো ম্লান হয়ে পরস্পরের মানসিক গঠনে মিল, দুজনের চিন্তা ও অনুভূতি বুঝতে পারা, মানসিক চাহিদা পূরণ করা ইত্যাদিই মুখ্য হয়ে ওঠে এবং তাদের ভালোবাসা ও বন্ধুত্বের ভিত মজবুত হয়।

অনেক ক্ষেত্রে একটি প্রশ্ন আসে, বয়সের কতটুকু ব্যবধান একটি সফল সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রয়োজন? মনোবিজ্ঞানে এর কোনো সুনির্দিষ্ট সীমারেখা নেই। মানসিক গঠনে মিল ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ থাকলে শুধু বয়স বা অন্য কিছুর ব্যবধান বাধা হয়ে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা কম।তবে সম্পূর্ণ অপরিচিত নারী-পুরুষ যখন একটি বিয়ের মাধ্যমে যুক্ত হয়, তখন অনেক ক্ষেত্রে বয়সের অতিরিক্ত ব্যবধান বড় হয়ে দেখা দিতে পারে।এটাও দেখা যায়, অনেক সময় ছেলেদের বয়স যথেষ্ট বেশি হলে পাত্রী হিসেবে কম বয়সের মেয়েদেরই প্রাধান্য দেওয়া হয়। যদিও ইদানীং অনেক ছেলের মধ্যেই এ ধরনের মনোভাবের পরিবর্তন দেখা যায়।দাম্পত্যজীবন নারী-পুরুষের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এ নতুন জীবনে তার সঙ্গীটি কেমন হবে এবং কীভাবে মানিয়ে নেবে তার ওপর অনেকাংশেই নির্ভর করছে তাদের ভালো থাকা, মন্দ থাকা। সুতরাং, প্রথাগত ভাবনা থেকে কিছুটা বেরিয়ে এসে সজীব মানসিক গঠন, জীবন সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গির মিল, ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্যের প্রতি আরও জোর দেওয়া প্রয়োজন। এ জন্য জীবনসঙ্গী নির্বাচনের সময় শুধু বাহ্যিক ও আনুষঙ্গিক বৈশিষ্ট্যের প্রতি মনোযোগী না হয়ে তার ভাবনাচিন্তা, রুচি ইত্যাদি জানার চেষ্টা জরুরি।

  • কম বয়স প্রাধান্য দেওয়ার নানা মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা থাকতে পারে।  যেমন: জৈবিক আকর্ষণ বিবেচনায় রেখে। সেখানে মানসিক আকর্ষণের বিষয়টি সম্পূর্ণ উপেক্ষিত হয়।
  • সন্তান ধারণের বিষয় মাথায় রেখে।
  • অল্প বয়সের মেয়েদের সঙ্গে পরিবার ও নিজের ব্যক্তিত্বের সংঘাত কম হওয়ার প্রত্যাশায়।
  • সম্পর্কের মধ্যে নিজের আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রণ রাখার ইচ্ছা।
  • পারিবারিক চাপ।
  • সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাব।


এসব বিবেচনা এলেও তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য ও সফল দাম্পত্য সম্পর্কের সহায়ক সেটি প্রশ্নবিদ্ধ। অনেক সময়ই বয়সের ব্যবধান বেশি হলে হিতে বিপরীত হয়ে যায়।  যেমন –

  • পুরুষেরা তাদের বেশি বয়স নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভুগতে পারে।
  • বয়সের সঙ্গে আমাদের মানসিক গঠন ও মানসিক চাহিদা-সম্পর্কিত বলে অনেক ক্ষেত্রে ভিন্নতা থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যার ফলে মানসিক দূরত্ব তৈরি হতে পারে। পরস্পরের প্রতি আকর্ষণের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়তে পারে।
  •  বেশি বয়স অনেকের মধ্যে সম্পর্কজনিত নিরাপত্তাহীনতা বোধ তৈরি করতে পারে। যা থেকে স্ত্রীর প্রতি অহেতুক সন্দেহ, অধিক নিয়ন্ত্রণ করার প্রবণতা এবং দাম্পত্য অশান্তি দানা বাঁধতে পারে।
  • ক্ষেত্রবিশেষে কম বয়সের মেয়েদের মানসিক গঠন অপরিপক্ব থাকে। ফলে দাম্পত্যজীবনের নতুনত্ব ও শ্বশুরবাড়ির ভিন্ন পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে সমস্যা হতে পারে।

লেখক: মেখলা সরকার
সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, মানসিক রোগবিশেষজ্ঞ
সুত্রঃ নকশা

দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ভাঙতে পারে এ সাত কারণে

কারো সঙ্গে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য কী করা যাবে ও করা যাবে না, তার একটা সাধারণ তালিকা আছে। আপনার আচরণে যদি নিচের বিষয়গুলো বেশি থাকে, তাহলে ধরে নিন আপনার সম্পর্ক শীঘ্রই ভাংছে।

১. খুতঁখুঁতে স্বভাব
খুঁতখুঁতে স্বভাব কোনো সম্পর্কের ক্ষেত্রে লাল পতাকার মতো কাজ করে। আপনি যদি সবকিছুতেই খুঁত বের করেন তাহলে তা হতে পারে সম্পর্ক ভাঙার কারণ। আপনার সঙ্গীর পরিধেয় কাপড়, কথাবার্তা কিংবা দৈনন্দিন বিষয়ে সমালোচনা ও খুঁত খোঁজার ফলে ধারণা হতে পারে তার উপস্থিতি আপনার সহ্য হচ্ছে না। হতে পারে তার অনেক কিছুই আপনার মনের মতো নয়। তার মানে এই নয় যে, তার সব বিষয়ে পরিবর্তন আনার অধিকার সে আপনাকে দেবে। তার অদ্ভুত বন্ধুদের দূরে সরানো কিংবা রাত-দিন ভিডিও গেম খেলা বন্ধ করা– এসব অসংখ্য বিষয়ে চাপ না দেয়াই ভালো। মনে রাখবেন, সব বিষয়ে তাকে বিরক্ত করবেন না।

২. কাজই আপনার জীবন
আপনার চাকরি কিংবা কাজ নিঃসন্দেহে আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তবে আপনার সব বিষয়ের মধ্যমণি হিসেবে এ কাজকে রাখবেন না। কাজে তার কোনো জরুরি সাহায্য দরকার না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে বেশি আলোচনা না করাই ভালো। কাজের জন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ তারিখ মিস করা কিংবা সঙ্গীর সঙ্গে থাকার সময়েও অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকা নিঃসন্দেহে তার জন্য বিরক্তিকর। এতে সঙ্গীর মনে হতে পারে তার সঙ্গে সম্পর্কের চেয়ে আপনার কাছে কাজই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য পরামর্শ হচ্ছে, কাজের সময় কাজ। সঙ্গীর সঙ্গে সময় কাটানোর সময় দূরে সরিয়ে রাখুন কাজ।

৩. আপনার ঘোড়া সামলান
কারো সঙ্গে ডেটিং শুরুর সঙ্গে সঙ্গে তাকে বিয়ের জন্য প্রস্তাব দিতে যাবেন না। অপেক্ষা করুন। স্রোতের সঙ্গে ভাসার চেষ্টা করুন। পরিচয়ের পরের দিনই আপনার পিতা-মাতার সঙ্গে তার পরিচয় করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবেন না। আগে আপনার মতামত তাকে জানান, তার মতামত জানুন। সে যদি আগ্রহী হয়, সবকিছু যদি ঠিক থাকে তাহলেই কেবল অগ্রসর হোন, নাহলে তাকে যেতে দিন।

৪. অতিরিক্ত ছেলেমানুষি
প্রতিদিন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আপনি একজন দারুণ আকর্ষণীয় মানুষ বলা যেতে পারে। কিন্তু এসব বিষয় প্রতিনিয়ত আপনার নতুন সঙ্গীকে বলতে যাবেন না। এতে সে বিগড়ে যেতে পারে। সবকিছু একসঙ্গে না জানিয়ে ভবিষ্যতের জন্য কিছু সংরক্ষণ করে রাখুন।

৫. বিশ্বাসহীনতা
কোনো সুস্থ সম্পর্কের চাবিকাঠি হচ্ছে বিশ্বাস। বিশ্বাসকে ‍বুঝতে দিন। আপনি যদি ক্রমাগত সে কার সঙ্গে আছে, কার সঙ্গে কথা বলছে এসব নিয়ে ভাবতে হয়, তাহলে সম্পর্কের বিষয়ে নতুন করে চিন্তা করতে হবে। এভাবে ক্রমাগত ডুবতে থাকলে আপনি কাজি অফিস পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবেন না।

৬. নিজের ছিদ্রগুলো দেখিয়ে দেয়া
আপনার বস আপনাকে ঘৃণা করে, আপনার বন্ধুরা হিংসা করে, আপনার বাবা-মা কোনো দাম দেন না, আপনি মোটা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বেশি আলোচনা করবেন না। নিজের সব দুর্বলতা আপনার সঙ্গীর কাছে প্রকাশ না করাই ভালো। কোনো সঙ্গীই এসব বিষয় শুনতে পছন্দ করে না। তার বদলে সুখী ও ইতিবাচক বিষয় শুনতেই সবাই পছন্দ করে।

৭. খোলা রাখুন দরজা
আপনি যদি অন্য কারো সঙ্গে নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে যান, তাহলে পুরনো সম্পর্ক থেকে পিছিয়ে যাওয়াই ভালো। এ বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করাই বুদ্ধিমানের কাজ। মাথায় রাখতে হবে, নিজের ক্ষেত্র ছাড়া আপনার সঙ্গীর ক্ষেত্রেও এমনটা হতে পারে।

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ 

সংসারের রসায়ন

প্রাচীন যুগের প্রারম্ভে জনৈক উদ্দালকের শিশুপুত্র উজ্জীবন একদিন সন্ধ্যায় খেলা শেষে বাড়ি ফিরে এসে তার মাকে খুঁজে পাচ্ছিল না। বাবা উদ্দালক বিষণ্ন মনে বারান্দার খুঁটি ধরে দাঁড়িয়েছিলেন। উজ্জীবন বারবার তার বাবাকে প্রশ্ন করল—মা কোথায়? আমাকে বলো, আমার মা কোথায়? উদ্দালক হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন এবং মেঝেতে ধপাস করে বসে পড়লেন। পুত্র পিতার প্রতি মারমুখী হয়ে উঠল—সত্যি করে বলো, আমার মা কোথায়…?

উদ্দালক দুই হাঁটুর মধ্যে থুতনি রেখে ক্ষীণ কণ্ঠে বললেন—তোর মাকে কতগুলো অচেনা লোক এসে ধরে নিয়ে গেছে। সাত বছর বয়সী উজ্জীবন বলল—কেন?

—ওদের মধ্যে একজন তোর মাকে খুব পছন্দ করত।

—তা কেন হবে বাবা? তুমি ওদের বাধা দিলে না কেন? মাকে ধরে রাখলে না কেন?

—ওকে ধরে রাখার কোনো অধিকার আমার নেই। এত বছর আমার সঙ্গে থেকেছে। তোর জন্ম হয়েছে, কিন্তু আইনত ও আমার কেউ নয়। ও যে আমার স্ত্রী

—এ রকম প্রমাণ আমি দিতে পারিনি। কারণ আমাদের তো বৈধ কোনো সম্পর্ক ছিল না।

জনশ্রুতি রয়েছে উদ্দালকের সেই ছেলেই বড় হয়ে একদিন সমাজে নর-নারীর সম্পর্কের বৈধতা—অর্থাৎ বিবাহের প্রথাটি চালু করে। পরবর্তী সময়ে সভ্যতার ঊষালগ্নে এসে এক ধরনের যুক্তি দ্বারা তাড়িত হয়ে নৃবিজ্ঞানীরা বিয়ে সম্পর্কিত একটি বিশ্বজনীন তত্ত্ব দাঁড় করানোর চেষ্টা করেন। কোনো কোনো নৃবিজ্ঞানী এই তত্ত্ব নির্মাণে মনোবিজ্ঞান, দৈহিক নৃবিজ্ঞান ও প্রাণীবিজ্ঞানের সাহায্য নেন। আবার কেউ কেউ এর একটি নিরেট সামাজিক ব্যাখ্যাও দাঁড় করানোর চেষ্টা করেন।

বৈবাহিক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার প্রথম এবং প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে স্বামী-স্ত্রীর নিজস্ব কিছু চিন্তা-ভাবনা। তারপর আসে পারিবারিক সদস্যদের সহযোগিতা এবং পরামর্শ।

বিয়ের আগেই দেখা দরকার দুই পক্ষের পারিবারিক সমতা, ক্ষমতা এবং পাত্রপাত্রী দুজনের ব্যক্তিত্ব আর যোগ্যতার মাপকাঠি সঠিক বিন্দুতে রয়েছে কি না। সেটি বয়স হতে পারে, শিক্ষাগত যোগ্যতা হতে পারে, আবার বাহ্যিক সৌন্দর্যও হতে পারে। ভবিষ্যতে এ দুটি পরিবারের মধ্যে কোনো রকম সম্মান-শ্রদ্ধার ঘাটতি দেখা দেবে না তো? বংশ মর্যাদা নিয়ে কেউ কারও ওপর খড়্গ তুলবে না তো? তবে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে বনিবনা না হলেও দুজনে দুজনের প্রতি বিশ্বাস, বোঝাপড়া এবং ভালোবাসা থাকলে কোনো অশুভ শক্তি তাদের মধ্যে ভাঙন ধরাতে পারবে না। বিয়ে টিকিয়ে রাখার জন্য শুধু দায়সারা সংসার করাটাই শেষ কথা নয়।

বিবাহিত জীবনকে সার্থক-সুন্দর এবং মধুময় করে তোলার উপায় হচ্ছে তিনটি:

এক. শ্রদ্ধা, পরস্পরের প্রতি।

দুই. বিশ্বাস, দুজন দুজনকেই।

তিন. ভালোবাসা, একে অপরের প্রতি। এর সঙ্গে কর্তব্যবোধটিকেও সংযুক্ত করতে চাই। সন্দেহ একটি সাংঘাতিক অসুখ। ক্যানসারের মতো। এটিকে গোড়া থেকে উপড়ে ফেলে দিতে হবে। কান কথা শোনা আরেকটি অসুখ—যক্ষ্মার মতো। আমরা দেখেছি, একটি মেয়ে কখনোই সংসার এবং সন্তান ছেড়ে পালাতে চায় না। যতই অত্যাচারী স্বামী থাক তার ঘরে। কিন্তু পরকীয়া করে এমন স্বামীকে কোনো মেয়েই মেনে নিতে পারে না।

সদ্য বিবাহিত একজন স্বামী তাঁর স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে মার্কেটে গেলেন এবং তার মা, বোন এবং ভাগনি জামাইয়ের জন্য ঈদের জামা-কাপড় কিনে ১০ টাকার চীনাবাদাম চিবাতে চিবাতে রিকশায় চেপে বাড়িতে এলেন এবং স্ত্রীকে বললেন—ওগুলো সব সুন্দর করে প্যাকেট করে রেখে দাও, কাল গিয়ে দিয়ে আসব। অল্পবয়সী স্ত্রীর তখন মনের অবস্থা কী রকম হতে পারে? রাগ, দুঃখ, নাকি অভিমান? মাত্র তিন দিন বাকি ঈদের। বিয়ের পর এই প্রথম ঈদ বলে কথা!

প্রিয় পাঠক ভাবতে পারেন—দূর! এ-ও কি হতে পারে? নাকি হয়? চল্লিশ বছর আগে হয়েছিল। এ আমার চোখের দেখা। সবার প্রতি কর্তব্য পালন করবে আর স্ত্রীর প্রতি করবে না—এটা তো নির্বোধের কাজ। স্বামীর পক্ষের আত্মীয়স্বজন এলে পোলাও-মাংস রান্না করার হুকুম আসবে আর স্ত্রীর পক্ষের কেউ এলে যদি কোনো স্বামী বলেন—কী চায় এই অসময়? কেন এসেছে জিজ্ঞেস করে বিদায় করো। তাহলে কোনো স্ত্রী তাঁর স্বামীকে শ্রদ্ধা করবে? এবং এভাবেই কিন্তু মন ভাঙতে ভাঙতে ঘর ভাঙার চিন্তা আসে। তিক্ততার সৃষ্টি হয় তুচ্ছ কারণেই। তাই মন থেকে ক্ষুদ্রতা এবং তুচ্ছতাকে সরিয়ে রাখতে হবে ভালো থাকার জন্য।

স্ত্রী যদি কখনো কখনো স্বামীর চেয়ে একটু বেশি যোগ্যতাসম্পন্ন হয়ে ওঠেন—তখন স্বামীর উচিত তাকে সম্মান করা। প্রশংসা করা কিংবা আনন্দিত হওয়া। এর উল্টোটা হলেই সংসারে অশান্তি আসে। অযোগ্য স্বামীরাই আস্ফাালন করেন বেশি। তাঁরা ভাবেন বউকে দাবিয়ে রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের একটি উক্তি মনে পড়ে যায়—‘প্রতাপ যখন চেঁচিয়ে করে বড়াই। জেন মনে তাহার তখন বিধির সঙ্গে লড়াই।’ সংসারের বয়স যত বাড়ে; সন্তান যত বড় হবে। বাবা-মার সম্পর্কটা ততই পোক্ত এবং বিশ্বস্ত হওয়ার কথা। তবেই তো ছেলেমেয়েরা বাবা-মার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে।

একজন স্ত্রীকেও বুঝতে হবে তাঁর স্বামীর সার্বিক ক্ষমতা কতটুকু—সে অনুযায়ী তাঁর চাহিদা থাকতে হবে। অমুকের স্বামীর অত বড় বাড়ি, দামি গাড়ি এসব উদাহরণ দিয়ে স্বামীকে বিব্রত করা ঠিক নয়। স্বামীর বিশ্বাস এবং ভালোবাসার কাছে অন্য কিছুর প্রয়োজন কিন্তু মূল্যহীন।

ছেলেমেয়েরা যখন বড় হয়ে যায়, ওঁরা নিজেরা নিজেদের সংসার সন্তান-স্ত্রী নিয়ে একটি স্বতন্ত্র জগৎ গড়ে নেন এবং এটিই স্বাভাবিক। বয়সী বাবা-মার খোঁজখবর তাঁদের পক্ষে সব সময় নেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। সব ক্ষেত্রে ওঁদের দোষারোপও করা যায় না। বৃদ্ধ বয়সে নিজেরা নিজেদের কাছে আন্তরিক হতে হবে। একজন রোগাক্রান্ত হলে অন্যজনের দেখাশোনা করার মানসিকতা থাকতে হবে। কিন্তু মধ্য বয়স থেকে যদি দুজনে দুজনের প্রতি বিরূপ মনোভাব নিয়ে মুখ ঘুরিয়ে থাকে, তাহলে কিন্তু সমূহ বিপদ। কে কাকে দেখবে।

তাই দুজন দুই ঘরে দুই প্রান্তে না থেকে একবার এসে হাতটা ধরুন। মাথায় হাত রাখুন। কিংবা সেই চল্লিশ বছর আগের একটি সুন্দর স্মৃতির কথা ভাবুন। একজন আর একজনকে বুঝতে চেষ্টা করুন। অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য একজন অন্যজনের কাছে ক্ষমা চাওয়া কোনো অপমান নয়—নিজেকে ছোট করাও নয়। বরং একে অন্যের কাছে বিশুদ্ধ হওয়া, ভবিষ্যতে এ রকম ভুল আর হবে না। এ মনোভাব ব্যক্ত করা উচিত। মনে রাখা উচিত, একরোখা গোঁয়ার্তুমির জন্য যেন ঘর ভেঙে না যায়। মনের ঝড় থেকে ঘরের ভাঙন ঠেকাতে হবে যে!

লেখক:নাসরীন নঈম
Prothom Alo 

ভালো স্বামী হতে হলে…

কথায় আছে পুরুষ দুই প্রকার। জীবিত ও বিবাহিত। এই কথাটির সঙ্গে আমার দ্বিমত আছে। কেননা বিয়ের পরে স্বামীরা কি মরে যায়? নাকি নতুন জীবন পায়? আমার তো মনে হয়, পুরুষের আসল জীবন শুরু হয় বিয়ের পরে। একটি সুন্দর-সুখী এবং গোছানো জীবন হতে পারে যদি তিনি উপযুক্ত কাউকে জীবনসঙ্গী করতে পারেন। তাই বিয়ে করা মানে একজন পুরুষের ‘মৃত্যু’, এটা কোনোভাবেই সত্য নয়।

এখন আসি বিয়ের পরে কী করে ভালো স্বামী হওয়া যা —সে বিষয়ে । আমরা যেমন আশা করি একটা ভালো বউ পাওয়ার, তেমনি বউরাও তো আশা করেন ভালো স্বামী পাওয়ার। বিয়ের পরে বউয়ের কথা সব সময় শুনলে এবং বউয়ের কথায় ওঠাবসা করলেই কেবল ভালো স্বামী হওয়া যাবে, এ ধারণাও সঠিক নয়।ভালো স্বামী হওয়ার জন্য এমনটা হওয়ার দরকার নেই। কারণ, ভালো স্বামী হয়ে থাকার দীর্ঘ ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা আমার আছে। অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, বউয়ের কথায় উঠবস করা মোটেই ভালো স্বামীর লক্ষণ নয়। এটা ‘গৃহপালিত’ স্বামী হওয়ার লক্ষণ। মজার ব্যাপার হলো, ভালো স্বামী হওয়া কিন্তু সহজ ব্যাপার না। এটার জন্য কঠিন পরিশ্রম করতে হয়। হা হা হা।

এখানে একটা ব্যাপার মনে রাখতে হবে, বিয়ের পর স্ত্রী তাঁর সবকিছু ছেড়ে নতুন একটি পরিবারে যোগ দেন। তাঁর নিজের ঘর, বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন এমনকি প্রতিদিনের অভ্যাসও ত্যাগ করতে হয়। উল্টোদিকে নতুন বরকে কিছুই ছাড়তে হয় না। না পরিবার, না আত্মীয়স্বজন। তাই স্ত্রীর মানিয়ে নেওয়ার একটা ব্যাপার আছে। সে জন্য স্ত্রীর দিকে সবার আগে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে স্বামীকেই।

শুধু তা-ই নয়, প্রথম দিকে সব ছেড়ে আসার কষ্টটা যেন সে টের না পায় এ জন্য তাকে মানসিক সহযোগিতাটুকু স্বামীকেই দিতে হবে। এখানেই শেষ নয়, স্বামীকে নিজের পরিবার দেখার পাশাপাশি স্ত্রীর বাবা-মার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এতে স্ত্রী খুশি হবে। আর শ্বশুর-শাশুড়ির দিকে খেয়াল রাখাটা স্বামীর জন্য এমন কঠিন বা দুঃসাধ্য কাজ না।

সংসার শুরু করার পর একজনকে আরেকজনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে। শুধু স্বামী-স্ত্রী কেন, যেকোনো সস্পর্কের মধ্যে শ্রদ্ধা না থাকলে সমস্যা দেখা দেবেই। স্বামী-স্ত্রী মানেই একটা শ্রদ্ধাহীন সম্পর্ক, এটা ভাবার কোনো কারণ নেই।

একই সঙ্গে সংসার পরিচালনার ক্ষেত্রে বউয়ের মতামত নেওয়াটা জরুরি। কারণ, সংসার চালানো সহজ ব্যাপার নয়। এটা যথেষ্ট শ্রমসাধ্য এবং কঠিন কাজ। আমরা যতই মেয়েদের বাড়ির কাজগুলো সহজ ভাবি তা আদতে সহজ নয়। আর কোনো কারণে যদি স্ত্রীর মতামত পছন্দ না হয় তাহলে তাঁকে বুঝিয়ে বলাই ভালো। আশা করছি বুঝিয়ে বললে যেকোনো স্ত্রীই বুঝবে। আমার স্ত্রীর মতো।

আর দিনের শেষে বা সপ্তাহে অথবা মাসে স্বামীর উচিত হবে একান্তে স্ত্রীকে কিছুটা সময় দেওয়া। এটি একেকজন একেকভাবে নিজের মতো করে দেবেন। এটা স্ত্রীর পাওনা কিন্তু! কারণ দিনের কাজ শেষে তিনিও আশা করেন প্রিয় মানুষটির সঙ্গে একান্তে কিছুটা সময় কাটাতে। শুধু তা-ই নয়, আমি মনে করি মাসে বা বছরে অন্তত একবার হলেও স্ত্রী বা পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাইরে কোথায় ঘুরতে যাওয়া উচিত।আর হ্যাঁ, ঝগড়ার ব্যাপারে আমার দু-একটি কথা আছে। সুখী-সুন্দর দাম্পত্য জীবনের জন্য ঝগড়া খুব জরুরি।কারণ, ঝগড়া হলে সম্পর্কে ভালোবাসার মাত্রাটা বেড়ে যায়। ঝগড়ার পরে একে অপরের প্রতি টান তৈরি হয়। মোটকথা ভালোবাসা বেড়ে যায় অনেকখানি।

ভালো স্বামী হওয়ার জন্য এখন আমি দুটি টিপস দিই। একটি হলো, স্বামীদের ছাড় দেওয়ার মনমানসিকতা। এটা হতেই হবে, এটা করতেই হবে এ ধরনের চিন্তা থেকে দূরে থাকতে হবে। না হলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সমস্যা দেখা দেবে। আরেকটা হলো ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে হবে। মানে সব ধরনের সম্পর্কের দিকে খেয়াল রেখে সমন্বয় করে চলতে হবে। বাবা-মা, শ্বশুর-শাশুড়ি ও আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে চললে কোনো ধরনের সমস্যা দেখা দেবে না।

পরিশেষে একটা প্রবাদ মনে করিয়ে দিই, ‘সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে।’ প্রবাদটা ঠিক তবে এটাও সত্যি, যদি গুণবান পতি থাকে তাঁর সনে। অর্থাৎ শুধু একজনের গুণে একটা সংসার সুখের হয় না। স্বামীরও অবদান থাকতে হয়। একজন ভালো স্বামীর সেই অবদান রাখার গুণটি থাকেই।

লিখেছেনঃ হাবিবুল বাশার সুমন ক্রিকেটার
সূত্র  ঃ প্রথম আলো

পারিবারিকভাবে আয়োজিত বিয়ে এবং এরপর…

সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে মনে হচ্ছে বাসায় আমার জন্য যে পরীক্ষা অপেক্ষা করছে সেই পরীক্ষার কোন প্রশ্নের উত্তরই আমি জানি না। কারণ এইমাত্র পারিবারিকভাবে ঠিক করা এক পাত্রের সাথে আলাপ করে এলাম আর অবজেকটিভ পরীক্ষার মত এখনই ওই পাত্রের প্রাপ্ত নম্বর আমাকে আমার পরিবারের কাছে বলতে হবে। যার উত্তর আমার জানা নেই। আপন মনে এসব ভাবতে ভাবতেই শীলা পৌঁছে গেল দরজার কাছে, কিন্তু বেল আর বাজাতে পারছিল না আসন্ন পরীক্ষার ভয়ে। এ ধরনের অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয় বহু মেয়েকেই তার জীবনে এবং সে সময় তার পাশে দাঁড়াবার কেউ থাকে না। জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্তের সামনে এসে অসহায়ের মত একাকী দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।

এখনও প্রেমের বিয়ের পাশাপাশি পারিবারিকভাবেও প্রচুর নারীর বিয়ে ঠিক করা হয়। কিন্তু এ ধরনের ক্ষেত্রে একজন পাত্র ও পাত্রীর মধ্যকার দূরত্ব রয়ে যায়, একে অপরকে না বুঝে জীবনসঙ্গী হিসেবে মেনে নেন যা ভবিষ্যত্ জীবনের ক্ষেত্রে কখনও কখনও বেশ বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। পারিবারিকভাবে বিয়ে ঠিক করার জন্য শহরে শহরে বহু ঘটক রয়েছে বা পত্রিকা খুললেই পাত্র চাই বা পাত্রী চাই এমন অনেক বিজ্ঞাপন আমাদের চোখে পড়ে। অনেক সময় দেখা যায়, বিয়ে সংঘটনের জন্য ঘটকরা দুই পক্ষেরই বহু তথ্য একে অপরের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখে যা পরে প্রকাশিত হলে পারিবারিক দ্বন্দ্বের বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যেমন বিয়ের আগে পাত্র বা পাত্রীর কারও সাথে কোন ধরনের প্রেমের সম্পর্ক, নানা ধরনের সমস্যা বা অসুস্থতা এসব। ঘটকালিকে ব্যবসা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ায় এ ধরনের সমস্যা বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আগে আত্মীয়স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবই ঘটকালির কাজটি করতেন। কিন্তু এখন কখনও কখনও সম্পূর্ণ অজানা দুই ভিন্ন পরিবারের মধ্যেও বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় বাণিজ্যিকভাবে ঘটকালির মধ্য দিয়ে; যেমনটি শুনছিলাম মোনার কাছে।

একজন ঘটকের সাথে মোনার (ছদ্মনাম) বিয়ের জন্য যোগাযোগ করা হয়েছিল। তাদের মাধ্যমেই আতিকের সাথে ওর পরিচয়। ওদের প্রথম দেখা হয় টি.এস.সিতে। আতিকের বাবা, মা বা পরিবারের কাউকেই চিনত না মোনার পরিবার। যখন দেখা করতে যায় মোনার মনে হচ্ছিল সারা জীবন অবিবাহিত থাকাও এর চেয়ে ভাল। মোনা বলে, প্রথম দিনে ভাইবা পরীক্ষা দিলাম। আমার পছন্দ- অপছন্দ, রান্না-বান্না পারা না পারা, আগের জীবন, ভবিষ্যত্ পরিকল্পনা ইত্যাদি নানাকিছু। আমি একটু চাপা স্বভাব আর পরিবেশ খুব অস্বস্তিজনক হওয়ায় তার কাছ থেকে কিছুই উদ্ধার করতে পারলাম না। তাই প্রথম দিন শেষে দেখা হওয়া সত্ত্বেও আতিকের ব্যাপারে আমার জ্ঞান ঘটকের দেয়া বায়োডাটা পর্যন্তই রয়ে গেল, যদিও ওর আমার সম্পর্কে জ্ঞান অনেক বাড়ল। বাসায় এসে চাপ যে, মাস্টার্সের রেজাল্ট দিয়ে দিয়েছে এখনই বিয়ে করতে হবে, তাই দেরি না করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বাসার সবাই এ বিয়েতে একমত যেন এক বোঝা থেকে মুক্তি। বাবার তাই এক কথা, এত বোঝাবুঝির কিছু নেই বিয়ে কর। মনে হল জুয়া খেলছি জীবন নিয়ে। পরিবেশের চাপে পড়ে রাজি হলাম। পরে জানলাম সিগারেট, নেশা, আগে ক্লাসমেটের সাথে প্রেমের সম্পর্ক এসব নানা তথ্য। যার কিছুই বিয়ের আগে আমার জানা ছিল না। ঘটক বলেছিল এসব কোন সমস্যাই নেই, যার সবই মিথ্যা। মানুষকে সরল মনে বিশ্বাস করে ভুল করেছিলাম। তাই সেই ভুলকে সাজা হিসেবে মেনে নিয়েই জীবন চালিয়ে যাচ্ছি।

তাই পারিবারিকভাবে আয়োজিত বিয়ের ক্ষেত্রে এক পরিবারের অন্য পরিবার সম্পর্কে কিছু হলেও জানা থাকলে ভাল। নইলে নিজেদের খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করতে হবে, শুধু বাণিজ্যিক কোন সংগঠনকে বিশ্বাস করা উচিত না। যেহেতু একজন মেয়েকে তার সারাজীবন কাটাতে হবে তাই তাকে বিয়ের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নেবার এবং নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নিজে নেবার স্বাধীনতা দিতে হবে। এক্ষেত্রে পারিবারিকভাবে কোনরূপ প্রভাবিত করার চেষ্টা করা উচিত নয়। কেননা প্রত্যেকের জীবন প্রত্যেকের। অনেক সময় নিজের পছন্দসই ছেলে বা মেয়েকে পাবার জন্য নিজেকে অপরের কাছে পরিবর্তিত করে পরিবেশন করে থাকে বা পছন্দ-অপছন্দের ব্যাপারে একে অপরকে ভুল তথ্য দিয়ে থাকে। যা পরস্পরের সম্পর্কে ভুল ধারণা তৈরি করে। নিজে যেরকম সে রূপকে অপরের সামনে তুলে ধরতে হবে, কেননা এক সময় না এক সময় সত্য প্রকাশ পাবেই। যা সম্পর্ক ভাঙ্গা গড়ার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

পারিবারিকভাবে আয়োজিত বিয়ের ক্ষেত্রে নতুন বাসা, নতুন পরিবারের সাথে খাপ খাওয়ানোর পাশাপাশি সম্পূর্ণ অচেনা নতুন একজনকে জীবনসঙ্গী হিসেবে মেনে নিতে হয়। বছরের পর বছর বাবা- মায়ের সাথে থেকে যে স্বভাব গড়ে উঠেছে শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে রাতারাতি তা বদলানো সম্ভব নয়। আবার দুটি পরিবার কখনই এক হতে পারে না। তাই বাবার বাড়ির মত শ্বশুরবাড়িও একইরকম হবে, সব মিলে যাবে এমন কল্পনাও করা অর্থহীন। বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তাই বুঝে চিন্তা করে নতুন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নেয়ার মন-মানসিকতা তৈরি করে নিতে হবে। জীবনসঙ্গী নির্ধারণে শুধু সে নয় তার পরিবারকেও বুঝতে হবে। কেননা বিয়ের পর শুধু তাকে নয় তার পরিবারকেও আপন করে নিতে হবে। মেয়েটির অবস্থা বিবেচনা করে শ্বশুরবাড়ির পক্ষ থেকেও এক্ষেত্রে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।

লিখেছেনঃ সামিহা সুলতানা অনন্যা
সুত্রঃ ইত্তেফাক 

নৈতিক স্খলনে বাড়ছে বিবাহ বিচ্ছেদ

মনোরোগ চিকিৎসক মোহিত কামালের মতে, নৈতিক স্খলনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা। তাঁর মতে, প্রবাসীদের সঙ্গে স্ত্রীর বিয়ে বাড়ছে মূলত সন্দেহ-অবিশ্বাস থেকে। বিদেশে হাড়ভাঙা খাটুনির পর স্ত্রীর সঙ্গ পান না তাঁরা। এমনকি তাঁদের জীবনে অন্য কোনো বিনোদনও নেই। দেশে স্ত্রী কী করছে এই চিন্তায় অস্থির থাকেন তাঁরা। তার ওপর দেশ থেকে অনেক সময় বাবা-মা বা ভাইয়েরা তাঁর স্ত্রীর আচরণ সম্পর্কে নানা অভিযোগ করেন। এগুলো তাঁর মনকে বিষিয়ে দেয়।

স্ত্রীকে ফোন করে তাঁরা তখন কটুকাটব্য করতে থাকেন। এতে সম্পর্ক তিক্ত হয়ে পড়ে। তবে এ কথাও ঠিক, দীর্ঘকাল স্বামীর অনুপস্থিতিতে অনেকে বিবাহ- বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এটা একটা জৈবিক কারণ। স্বামীর অনুপস্থিতিতে এই জৈবতাড়নাই তাঁকে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তে প্ররোচিত করে। পোশাক-কর্মীদের মতো যাঁরা নিম্নআয়ের মহিলা, অনেক দরিদ্র পুরুষই তাঁদের বিয়ে করেন অর্থনৈতিক সুবিধা লাভের জন্য। অনেক সময় স্ত্রীর টাকায় নেশা করেন অনেকে, কেউ বা গোপনে অন্য নারীতে আসক্ত হয়ে পড়েন। এই মেয়েরা এখন অর্থনৈতিকভাবে কিছুটা হলেও স্বাবলম্বী। তাঁরা এ অন্যায় মুখ বুজে সহ্য করেন না। তাই বিবাহবিচ্ছেদ ঘটানোর মতো সিদ্ধান্ত নেন।

উচ্চবিত্ত পরিবারের ক্ষেত্রে দেখা যায় স্বামী ব্যবসা বা বড় চাকরি করেন। নিয়মিত মদ্য পান করাকে সোশ্যাল স্ট্যাটাসের অন্তর্ভুক্ত মনে করেন। মদ্যপ অবস্থায় স্ত্রীর ওপর শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করেন। এ ছাড়া এ শ্রেণীর মেয়েদের মধ্যেও নানা হতাশা থেকে বিয়ে-বহির্ভূত সম্পর্ক স্থাপনের অনেক নজির আছে। সব মিলিয়ে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে চিড় ধরে, যার অনিবার্য ফল বিবাহবিচ্ছেদ।
মাদকাসক্তি ও যৌতুকের মতো সামাজিক ক্ষত সারানো গেলে বিবাহবিচ্ছেদ অনেকাংশে কমবে বলে মনে করেন মোহিত কামাল। তাঁর মতে সমাজে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এ ছাড়া আর কোনো নিদান নেই।

মোহিত কামাল, মনোরোগ চিকিৎসক
সুত্রঃ প্রথম আলো 

আবার বিয়ে, বাচ্চা নিয়ে চিন্তা!

একা একা জীবন পার করা যায়। তবে একজন সঙ্গী থাকলে ক্লান্তি ভর করে না। তাই পুনরায় কোনো সম্পর্ক শুরু করার আগে চাই সন্তানের পূর্ণ সমর্থন।

বেশ কয়েক বছর আগে দ্বিতীয় বিয়ে করেন মাহফুজ। তার স্ত্রী মারা যাওয়ার সময় তাদের ছেলেটির বয়স ছিল ৪ বছর। পারিবারিক চাপে আবার বিয়েতে সম্মতি দেন। যিনি দ্বিতীয় স্ত্রী হয়ে আসেন তারও ছিল দ্বিতীয় বিয়ে। আগের ঘরে একটি মেয়ে আছে তার।

বাবার বিয়ের কথা অন্যদের মুখে শুনে মাহফুজের ছেলেটি তার কাছ থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। তিনিও নিজের বিয়ের কথা সন্তানকে সরাসরি বলতে পারেননি।

মাহফুজ বলেন, “ভেবেছিলাম, ও তো ছোট, তেমন কোনো সমস্যা হবে না। সে সময় সবাই এমনটাই বলেছিল। তবে ছেলেটি কেমন চুপচাপ হয়ে গেল। আমার দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে বোঝাপড়া ভালো হল না তার। স্ত্রীও তার মেয়েটিকেই বেশি যত্ন করত। বড় হওয়ার পর ছেলেটি আমাকে ছেড়ে চলে যায়। ওকে আসলে বুঝতে পারিনি আমি। ওর অভিমান বুঝতে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল।”

বিচ্ছেদ কিংবা মৃত্যু- প্রিয়জনকে হারিয়ে জীবন অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়ে। তবু থেমে থাকে না জীবন। চলে যায় অমোঘ নিয়মে। এ চলার পথেই হয়তো নতুন সঙ্গীর প্রয়োজন পড়ে। অনেকেই এ সময় সন্তানের কথা ভেবে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন— সন্তান নাকি নিজের জীবন কোনটা প্রাধান্য দেবেন? বাবা অথবা মায়ের নতুন সঙ্গীকে সব সময় মেনে নিতে পারে না সন্তান।

এসব পরিস্থিতি অনেকটা এড়ানো সম্ভব, যদি শুরুতেই বিষয়টি সন্তানের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করা যায়। এক্ষেত্রে সন্তানের সিদ্ধান্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। নাট্যব্যক্তিত্ব সারা যাকের বলেন, “মানুষের এসব সম্পর্কের জায়গা বেশ জটিল। মনোজগতে নানান ধরনের আলোড়ন চলতে থাকে। এ সমাজে বাবার আবার বিয়ে যদিও সন্তানদের কাছে নতুন কিছু নয়। তবে মায়ের দ্বিতীয় বিয়ে এখনও অপ্রত্যাশিতই। একজন মানুষ একা হয়তো তার জীবন পাড়ি দিতে পারে। তবে তার চলার পথে বন্ধু বা একজন সঙ্গী থাকলে ক্লান্তি ভর করে না।”

সমাজকেও এই বিষয়ে উদার হতে হবে। এটি মনে করা অন্যায় যে সঙ্গীবিহীন অবস্থায় মানুষকে থাকতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে, স্ত্রী থাকা অবস্থায় বা তাকে না জানিয়ে বিয়ে করা দণ্ডনীয় অপরাধ।

স্ত্রীর মৃত্যু বা বিবাহ বিচ্ছেদের পর সন্তানকে না জানিয়ে হুট করে সংসারে নতুন সঙ্গী নিয়ে আসেন অনেকে। যা সন্তানের মনোজগতে প্রভাব ফেলে। আকস্মিক এ আঘাত সে মেনে নিতে পারে না। পারিবারিক সম্পর্কে টানাপড়েন শুরু হয়। এ ক্ষেত্রে মা-বাবা যদি আগেই সন্তানের সঙ্গে পুরো বিষয়টি নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করে নেন, তাহলে পরে সমস্যায় পড়তে হবে না।

অভিনয়শিল্পী রোকেয়া প্রাচী বলেন, “একটা ছোট শিশুরও মনস্তাত্বিক ব্যাখ্যা থাকে। তাই সন্তানকে বোঝাতে হবে, এ বিষয়ে সে-ই মূল সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী। তার ইচ্ছা-অনিচ্ছাই সব। নতুন সঙ্গী নিয়ে সংসার শুরুর সময়ই সন্তানকে সব বুঝিয়ে বলুন। তাকে পরিচয় করিয়ে দিন। সন্তানের সঙ্গে নতুন মানুষের বোঝাপড়া ভালো হলে বা বন্ধুত্ব গড়ে উঠলে সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হবে।”

প্রাচী আরও বলেন, “মা-বাবার পুনরায় বিয়ের পর সন্তানকে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া উচিত। আগের মতো পারিবারিক আবহ বজায় রাখতে হবে। নতুন বাড়িতে উঠলে সেখানে সন্তান যেন পুরানো পরিবেশ খুঁজে পায়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। হুট করেই তার আগের সব অভ্যাস পরিবর্তনের কথা বলা যাবে না। শিশুর হয়তো মা-বাবার সঙ্গে ঘুমানোর অভ্যাস। তাকে যদি আলাদা ঘরে থাকতে বলা হয়, তখন সে ভাববে, নতুন মানুষের কারণে তার সব হারাতে হচ্ছে।”

সন্তানের সীমাবদ্ধতা, পছন্দ-অপছন্দ— সব আগেই নতুন সঙ্গীকে জানিয়ে দিতে হবে। যদি দুই পক্ষেরই আগের ঘরের সন্তান থাকে, তাহলে যথেষ্ট সহনশীল হওয়া উচিত। কোনো ভেদাভেদ করা যাবে না। বাচ্চাদের মধ্যে কোনো ঝামেলা হলে তাদেরই সমাধান করতে দিন। এক্ষেত্রে বিয়ের আগেই দুই পক্ষের সন্তানের মধ্যে পরিচয় করিয়ে দেওয়া সবচেয়ে ভালো।

এই অভিনয়শিল্পী মতে, “বিয়ের দিনও কৌশলী হতে হবে। সন্তান যাতে মনে করে সেই-ই সবচেয়ে প্রাধান্য পাচ্ছে এবং সে একজন গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। আসল কথা হল, সন্তান যারই হোক সে যেন বুঝতে পারে তার জীবনে নানান প্রাপ্তি যোগ হচ্ছে। বিনিময়ে কিছুই হারাতে হচ্ছে না। তাহলে পরিবারে সুখ-শান্তি থাকবে।”

সবচেয়ে বড় কথা হল, সবাইকে নিয়েই পরিবার। দ্বিতীয় বিয়ের পর স্বামী এবং স্ত্রী দুজনকেই সহনশীল হয়ে সংসার করতে হবে। আগের ঘরের সন্তান থাকলে তাকে সমান গুরুত্ব দিতে হবে। যত কারণই হোক, সুখি হওয়ার জন্যই মানুষ পুনরায় জীবন শুরু করে। আর পরিবারের সবাইকে নিয়েই সেটা সম্ভব।

ফিচারঃ বিডি নিউজ ২৪
ছবি : অপূর্ব খন্দকার