ইউকিপিডিয়ার মতে পরকীয়ার (ইংরেজি: Adultery বা Extramarital affair বা Extramarital sex) হল বিবাহিত কোন ব্যক্তির (নারী বা পুরুষ) স্বামী বা স্ত্রী ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তির সাথে বিবাহোত্তর বা বিবাহবহির্ভূত প্রেম, যৌন সম্পর্ক ও যৌন কর্মকান্ড।
মানবসমাজে এটি লঘু বা গুরুভাবে নেতিবাচক হিসেবে গণ্য পাশ্চাত্য আধুনিক সমাজে এর প্রতি নেতিবাচক মনোভাব বজায় থাকলেও এটি আইনত অপরাধ বলে বিবেচিত হয় না, তবে অভিযোগ প্রমাণিত হলে পরকীয়াকারী ব্যক্তির বিবাহিত সঙ্গী তার সাথে বিবাহবিচ্ছেদের জন্য কোর্টে আবেদন করতে পারেন।
তবে কিছু ইসলামি রাষ্ট্রসমূহে এর জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে, যা হল পাথর নিক্ষেপ করে মৃত্যুদন্ড প্রদান। মনোচিকিৎসায় একথা স্বীকৃত যে, পিতামাতার পরকীয়া সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর এবং সামাজিক সম্পর্ক ও যোগাযোগে বিরূপ প্রভাব ফেলে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা সন্তানের মানসিক বিষন্নতার ও আগ্রাসী মনোভাবের জন্ম দেয় । এছাড়া পারিবারিক ও দাম্পত্য সম্পর্কের অবনতিতে পরকীয়া প্রভাব রাখে ।
মানুষ কেন পরকীয়ায় জড়ায়:
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের চাইল্ড অ্যাডোলসেন্ট ও ফ্যামিলি সাইকিয়াট্রি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, মনোদৈহিক ও সামাজিক কারণে মানুষ পরকীয়ায় জড়ায়। প্রথমে আসে দৈহিক বিষয়। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যৌন সম্পর্কে অতৃপ্তি থেকে অনেকে এ সম্পর্কে জড়ায়। সেক্স মানুষের একটি শরীরবৃত্তীয় চাহিদা।
যদি স্বামী-স্ত্রীর যৌনজীবন দুর্বল হয়, তাহলে অপর ব্যক্তির প্রতি আসক্তি তৈরি হতে পারে। কারো মধ্যে যদি ডিআরডিফোর জিনের উপস্থিতি বেশি হয়, তাঁদেরও পরকীয়া বা বাড়তি সম্পর্কে জড়ানোর প্রবণতা থাকতে পারে।
অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, অনেক সময় মানসিক সমস্যার কারণেও মানুষ পরকীয়ায় জড়াতে পারে। যাঁদের মধ্যে বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডার আছে, তাঁদের পরকীয়ার সম্পর্কে জড়ানোর প্রবণতা দেখা যায়। তাঁরা কোনো কিছুর মধ্যে স্থিরতা খুঁজে পায় না।
সঙ্গীর উদাসীনতা ও দূরত্বের কারণেও অনেক সময় মানুষ পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে জানিয়ে তিনি বলেন, অনেক সময় স্বামী-স্ত্রী বাস্তবতার কারণে, কাজের কারণে হয়তো দূরে চলে যায়। তখন তাঁদের মধ্যে পরকীয়ার আগ্রহ বাড়ে। অনেক সময় পশ্চিমা সংস্কৃতির ধাঁচ নিজেদের মধ্যে আনতে চায়, তখন পরকীয়া বাড়ে। এ ছাড়া স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্ব, দূরত্ব ইত্যাদির জন্যও অন্যের প্রতি আগ্রহ, আসক্তির ঘটনা ঘটে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তানজির আহম্মদ তুষার মনে করেন –
প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে পরকীয়ার বিষয়টি চলে আসছে। উন্নয়ন ও মঙ্গলের কথা চিন্তা করে মানুষ একগামী। তবে মানুষ মূলত বহুগামী। পরকীয়াতে যেকোনো একজনকে বিবাহিত হতে হবে অথবা দুজনই বিবাহিত থাকতে পারেন।
মানুষ কেন পরকীয়ায় জড়ায়, এ বিষয়ে তানজির আহম্মদ বলেন –
এক ধরনের প্রয়োজন বা চাহিদার কারণে মানুষ পরকীয়ায় জড়ায়। অনেক সময় শারীরিক প্রয়োজন থাকে। আর্থিক প্রয়োজন থাকে। স্ট্যাটাস বাড়ানোর জন্যও কেউ কেউ পরকীয়ায় জড়ায়। অনেক সময় মানসিক প্রয়োজন থাকে।
আবার কিছু বিষয় শেয়ার করতে করতে অনেকে একসময় পরকীয়ায় জড়িয়ে যায়। নির্ভরতা থেকেও পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়তে পারে জানিয়ে সাইকোলজিস্ট তানজির আহম্মদ বলেন, আবার অনেক সময় অবস্থার কারণেও হয়তো পরকীয়ায় জড়ায়। হতে পারে একসঙ্গে কোথাও বেড়াতে গেল। একপর্যায়ে হয়তো ভালো লেগে গেল। তখনও পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। আবার দীর্ঘসময় একসঙ্গে কাটাতে কাটাতে, বন্ধুত্ব থেকেও অনেক সময় পরকীয়া হয়ে যায়।
অনেকে শখ থেকেও পরকীয়ায় জড়ায় –
অন্য আরেকটি শরীর কেমন, একে জানার একটি আগ্রহ থাকে। অনেকে আবার ভাবে, ‘ওরা কি সুখী! এই মানুষটির সঙ্গে থাকতে পারলে হয়তো আমার অনেক সুখ লাগত।’ এ থেকেও অনেকে ওই ব্যক্তির প্রতি আগ্রহ অনুভব করে। অনেক সময় মিডিয়াও পরকীয়ার প্রবণতা তৈরি করে। বিভিন্ন ধরনের পর্নোসাইট দেখে পরকীয়ার প্রতি আগ্রহ তৈরি হতে পারে।
আসলে অধিকাংশ মানুষেরই একটি বাড়তি চাহিদা থাকে। তবে সামাজিক ও ধর্মীয় নিয়মনীতির কারণে এ সম্পর্কে জড়ায় না। অনেকে কিছু সুবিধা আদায়ের জন্য পরকীয়া করে জানিয়ে তিনি বলেন, হয়তো আর্থিক সাহায্য পাবে এ সম্পর্কে জড়ালে, এমন ভাবনা থেকেও কেউ কেউ পরকীয়ায় জড়ায়।
সাইকোলজিস্ট ইশরাত জাহান বীথির মতে –
পরকীয়ার পেছনে জড়ানোর একটি বড় কারণ হলো শূন্যতা। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যখন শূন্যতা তৈরি হয়, তখন আরেকজন সেখানে প্রবেশ করে। হয়তো স্বামী বা স্ত্রীর আর আগের মতো করে কথা বলে না বা আদর করে না। যত্ন কম নেয়। এই বিষয়গুলোর কারণে অন্যের প্রতি আসক্তি তৈরি হয়। স্বামী-স্ত্রী দূরে থাকলেও এ সমস্যা হতে পারে। মেয়েদের বিয়ের আগে হয়তো যৌন চাহিদা তেমন থাকে না। বিয়ের পর তাঁরা বুঝতে পারে বিষয়টি।
শুধু যৌনতায় অংশগ্রহণ নয়, কথাবার্তায়ও বিষয়টি থাকতে হয়। তখন যদি অন্য কেউ সেই কথাগুলো শোনায়, তাহলে তাঁর প্রতি আগ্রহ কাজ করে। শারীরিক গঠন এ ব্যাপারে কাজ করতে পারে। কিছু কিছু ছেলে চিকন স্বাস্থ্যের মেয়ে পছন্দ করে। আবার কিছু কিছু ছেলে হয়তো একটু স্থূল স্বাস্থ্যের মেয়ে পছন্দ করে। সন্তান হওয়ার পর অনেক মেয়ে স্থূল হয়ে যায়। এতে স্ত্রীর প্রতি আগ্রহ কমে যেতে পারে। আবার নারীর বেলায়ও অনেকে হয়তো খুব হ্যান্ডসাম ছেলে পছন্দ করে, যা হয়তো তাঁর স্বামীর সঙ্গে মেলে না।
সাইকোলজিস্ট ইশরাত শারমীন রহমান বলেন-
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ছোট ছোট চাওয়াগুলো হয়তো পূরণ হচ্ছে না। হয়তো স্ত্রী চাঁদ দেখতে পছন্দ করে, স্বামী সেটিকে বিলাসিতা মনে করে। এ রকম সময় অন্য কেউ যখন সেই জায়গায় আসে, তখন নির্ভরতা বেড়ে যায়। আবার অনেকে ভাবে, আমি তো একসঙ্গে দুটোকেই ব্যালান্স করছি। তাই আমি এমন একটি সম্পর্ক করতেই পারি।
আবার অনেকে মনে করেন, স্বামী বা স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও খুব ভালো একজন বন্ধু অথবা বান্ধবী থাকতে পারে। যার সঙ্গে মানসিক শেয়ারিং ও শারীরিক সম্পর্ক — দুটো বিষয়ই থাকতে পারে। এটা দোষের কিছু নয়। কারণ, বন্ধুত্বের সম্পর্কে কোনো প্রতিজ্ঞা নেই। যে কেউ যেকোনো সময় হয়তো এখান থেকে সরে আসতে পারে। একে অনেকে পরকীয়া বলে মনে করে না।
আবার অনেকে বিবাহবিচ্ছেদের পর বৈবাহিক সম্পর্কে জড়াতে চায় না। বিবাহিত কারো সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে নিজের চাওয়াগুলো পূর্ণ করতে চায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানসিক ও শারীরিক প্রয়োজন মেটানোর বিষয়টিই এখানে মুখ্য হয়। এসব ভাবনা ব্যক্তিকে পরকীয়ার প্রতি আকৃষ্ট করে তোলে বলেই মনে করেন ইশরাত শারমীন রহমান।
আপনার সঙ্গী পরকীয়া আসক্ত হচ্ছে কিনা তা বুঝবেন কিভাবে ?
কিভাবে বুঝবেন আপনার স্বামী/ স্ত্রী কোন পরকীয়ার সম্পর্কে জড়িয়েছেন কিনা? আসুন জেনে নেয়া যাক কি কি লক্ষনে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার স্বামী/ স্ত্রী পরকীয়া করছেন কিনা।
সঙ্গী যদি ফোন বা ইন্টারনেটে আসক্ত হয়ে পড়েন:
সঙ্গী ফোনের পেছনে কতটা সময় ব্যয় করছেন সেদিকে নজর রাখুন। একসাথে বসে থেকে বা ঘুরতে গেলে যদি তিনি ফোন নিয়েই ব্যস্ত থাকেন, মেসেজ বা ইন্টারনেট ব্রাউজিং করেন- তাহলে তা নিশ্চিতভাবে অন্য একটি সম্পর্কেরই ইঙ্গিত। এছাড়া দিনের বেশিরভাগ সময়ে তাকে যদি ফোনালাপে ব্যস্ত পাওয়া যায় তাহলেও বিষয়টি লক্ষণীয়।
অনেকে বলতে পারেন কাজের প্রয়োজনে মানুষ ফোন বেশি ব্যবহার করতেই পারে। কিন্তু একটি বিষয় মনে রাখবেন, কাজের প্রয়োজনে ফোনালাপ এবং কারো সাথে প্রেমময় ফোনালাপের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে এবং এই পার্থক্য বোঝার মত ক্ষমতাও বিবাহিত প্রত্যেক মানুষের হওয়া উচিত। শুধুমাত্র ফোন নয়, ফেসবুক কিংবা অন্যান্য যোগাযোগের মাধ্যমের প্রতি আসক্তির মাত্রার ওপরও নজর দেবেন।
তিনি যদি আপনার ও পরিবারের পেছনে কম সময় ব্যয় করেন:
সঙ্গী যদি আপনাকে আগের চাইতে কম সময় দেয়া শুরু করেন, তাহলে এটিও একটি লক্ষণ হিসেবে ধরে নেয়া যায়। খুব ভালো করে আপনার সঙ্গীর প্রতিদিনকার কাজকর্ম লক্ষ্য করুন। যদি বুঝতে পারেন যে আগের চাইতে কম সময় পাচ্ছেন, তাহলে বোঝার চেষ্টা করুন সেই বাড়তি সময়টা তিনি কীভাবে ব্যয় করছেন।
আপনি তাকে সময় দেয়ার কথা বলে দেখুন, একসাথে বসে টিভি দেখার কথা বলুন, তাকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার আমন্ত্রন জানান, আত্মীয় স্বজনদের ও পারিবারিক বন্ধুদের সময় দেয়ার কথা বলুন। তিনি যদি আপনাকে অজুহাত দেখিয়ে না বলেন তাহলে জানার চেষ্টা করুন অজুহাতটি সত্যি কিনা। সঙ্গী যদি পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করে বিনা কারণে, তাহলে ধরে নিতে পারেন তিনি পরকীয়ায় লিপ্ত।
নতুন কোন নাম: আপনার সঙ্গীটির মুখে যদি নতুন কোন একটি নাম ঘন ঘন শুনতে পান, তবে একেও পরকীয়ার লক্ষণ হিসেবে নিতে পারেন। সঙ্গীর যে বন্ধুটির কথা আগে কখনো শোনেননি, এমন কারো কথা ঘনঘন শুনলে তাকে জিজ্ঞেস করুন এবং তার মুখের ভাব লক্ষ্য করুন। যদি তিনি প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান, কিংবা তার মুখের অভিব্যক্তি বদলে যায় তবে বিষয়টি অবশসই চিন্তার।
অকারণে রেগে যাওয়া: আরও একটি বিষয় আছে যা বিশেষ ভাবে লক্ষণীয়। তা হল আপনার সঙ্গীর কথায় রাগের সুর। খেয়াল করে দেখুন তো, আগে যে বিষয়গুলো আপনার সঙ্গীর রাগের উদ্রেক করতো না সেসব বিষয়ে কি তিনি রেগে যাচ্ছেন? কিংবা কথায় কথায় আপনাদের দাম্পত্য জীবনকে অভিশাপ হিসেবে অভিহিত করছেণ? তার এসব কথার কোন যুক্তি আছে কিনা এইসব ব্যাপারগুলো লক্ষ্য করুন। বিনা কারণে অযৌক্তিক রাগ করা, কিংবা সবসময় খিটখিট করা পরকীয়ার অন্যতম লক্ষণ।
আপনার সাথে যৌনসম্পর্কে উদাসীনতা: সঙ্গী যদি আপনার সাথে যৌনসম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেন তাহলে আপনি এটি পরকীয়ার নিশ্চিত লক্ষন হিসেবে ধরতে পারেন। যিনি অন্যের সাথে সময় কাটিয়ে আপনার প্রতি উদাসীন, তার মুখের অভিব্যক্তিই আপনাকে সব কথা বলে দেবে। আপনার সাথে সম্পর্ক স্থাপনে সঙ্গী আগ্রহী নন, অর্থাৎ তার চাহিদাটি পূরণ হচ্ছে অন্য কারো মাধ্যমে। এছাড়াও অভ্যাস বশত যৌন সম্পর্ক করছেন কিনা স্রেফ আপনাকে খুশি করতে, সেটিও লক্ষ্য করুন।
আপনার প্রতিদিনের রুটিন খুঁটিয়ে জিজ্ঞেস করা: এছাড়া খেয়াল করে দেখুন আপনার স্বামী/ স্ত্রী আপনার প্রতিদিনকার রুটিন সম্পর্কে হঠাৎ অতিরিক্ত নজর দিচ্ছেন কিনা অর্থাৎ আপনি কটায় বাড়ি ফিরবেন বা কোন কোন জায়গায় কখন যাবেন এই ধরনের প্রশ্ন করছেন কিনা। তাহলে নিশ্চিত থাকতে পারেন যে আপনার চোখ এড়িয়ে নিরাপদে সম্পর্ক চালিয়ে যেতেই তার এত জিজ্ঞাসা।
তিনি যদি হঠাৎ নিজের সৌন্দর্য সম্পর্কে অতিরিক্ত সচেতন হয়ে উঠেন: আপনার স্বামী/স্ত্রী যদি হঠাৎ নিজের ত্বক, সাজগোজ, শারীরিক গঠন কিংবা পরিহিত পোশাক আশাকের দিকে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করতে শুরু করেন, তাহলে আপনি একে পরকীয়ার একটি লক্ষণ হিসেবে ধরে নিতে পারেন। এখানে একটি বিষয়ে পরিষ্কার হওয়া দরকার যে সঙ্গী আপনার জন্যই নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করছেন কিনা।
কারন অনেক স্বামী/স্ত্রীই আছেন যারা দাম্পত্য জীবনে পুনরায় রোমান্স ফিরিয়ে আনতে এই পন্থা বেছে নেন। কিন্তু আপনি এই দ্বিধাবোধের অবসান করতে পারেন নিজেকে ২/৩ টি প্রশ্ন করে। আর তা হল, আপানার স্বামী/স্ত্রী কি আপনার পছন্দ অনুযায়ী নিজেকে উপস্থাপন করছেন? তিনি কি শুধুমাত্র আপনাকে দেখানর জন্যই বিশেষ পোশাক ও সাজগোজ করেন? আমাকে কেমন দেখাচ্ছে এই ধরনের প্রশ্ন আপনাকে করা হচ্ছে কিনা সেটাও লক্ষ্য করুন। এই প্রশ্নগুলোর উত্তর যদি “না” হয়, তাহলে আপনি ধরে নিতে পারেন আপনার সঙ্গী পরকীয়ার সম্পর্কে জড়িত আছেন।
অনেক ক্ষেত্রে পরকীয়ায় গভীর হয় দাম্পত্য প্রেম:
অনেক ক্ষেত্রে পরকীয়া দাম্পত্য সম্পর্কের পক্ষে ভালো এবং এতে আরো গভীর হয় কপোত কপোতীর প্রেম। এই দাবি বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানী অ্যাস্থার পেরেলের। তিনি ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ‘কাপল কাউন্সেলিং’করছেন। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই তার এই উপলব্ধি।
পেরেল জানান, ‘প্রতিটি মানুষই কোনও না কোনও অবসাদ থেকে পরকীয়ার দিকে ঝোঁকেন। তাদের মধ্যে একটা অপরাধবোধ মনের অবচেতনে হলেও কাজ করে। কেননা ৯৯ শতাংশ পরকীয়াই ক্ষণস্থায়ী হয়। পরকীয়া শেষ হওয়ার পরে এই অবৈধ সম্পর্ক প্রেমিক যুগলের মধ্যে একটা অপরাধবোধ এনে দেয়। সেই অপরাধবোধ থেকেই নতুন মোড় নেয় তাদের পুরনো সম্পর্ক। ফলে সেটি হয় আরো মজবুত ও গাঢ়। বলছিলেন পেরেল।
পরকীয়া নিয়ে গোটা একটা বই লিখেছেন পেরেল। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ‘দ্য স্টেটস অফ অ্যাফেয়ার’ নামের সেই বইটি।
সেখানে পেরেল বলছেন, ‘দীর্ঘ সম্পর্কে একঘেয়েমি আসাটা খুব স্বাভাবিক। এক পর্যায়ে যৌনজীবনে অবসাদ চলে আসে। তখন অনেকেই নতুন সঙ্গী বা সঙ্গিনী খোঁজেন। এক্ষেত্রে একসঙ্গে সময় কাটানো, কথা বলা একটা বড় ওষুধ হতে পারে। আমি মনে করি যৌনতা যতটা না শারীরিক, তার চেয়ে অনেক বেশি মানসিক। মানসিক আকর্ষণ ফিরিয়ে আনলেও পরকীয়া ঠেকানো সম্ভব।’
তবে, দাম্পত্য সম্পর্কে আকর্ষণ ফেরানোর জন্য পরকীয়া করতে মোটেও উৎসাহ দিচ্ছেন না পেরেল। তিনি বলছেন, ‘উপশমের চেয়ে প্রতিকার করাটাই ভাল। পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ার আগে সঙ্গী বা সঙ্গিনীর প্রতি আকর্ষণ তৈরি করাটাই শ্রেয়।’
পরকীয়ার জড়িয়ে সঙ্গীকে ঠকিয়েছেন এখন মানাবেন কী করে?
সঙ্গীর কাছে ধরা পড়ে গেছেন। তিনি টের পেয়েছেন, বিগত কয়েকদিন ধরে আপনি অন্যকোনও পুরুষ/মহিলার সঙ্গে জড়িত। তাঁর অনুমান, আরও অনেক দূর হয়তো গড়িয়েছে বিষয়টি। সবকিছু জানাজানি হওয়ার পর সঙ্গী বাক্যালাপ বন্ধ করেছেন। ঘোষণা করেছেন বিচ্ছেদ।
এমন অবস্থায় নিজেকে অপরাধী মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তার চেয়েও বেশি যে বিষয়টি আপনাকে অহোরাত্র দুঃখ দিয়ে চলেছে, তা হল সঙ্গীর অভিমান, আপনার প্রতি তাঁর ঘৃণা ও বিদ্বেষ। সঙ্গীকে ফের জীবনে ফিরে পাওয়ার জন্য আপনি এখন মরিয়া।
একটু ফ্ল্যাশব্যাকে ফিরে গিয়ে ভাবুন। ভালো করে খতিয়ে দেখুন, আপনাদের সুখের জীবনে তৃতীয় ব্যক্তি এল কেন? ফাঁক তৈরি হল কেন? দোষত্রূটি কার কতখানি, তার চেয়েও বেশি জানা দরকার আপনি এখন ঠিক কী চাইছেন? এতকাল যে সঙ্গীর অপূর্ণতা পূরণ করতে আপনি অন্য সঙ্গীর সান্নিধ্য খুঁজছিলেন, সেই সাধ আপনার মিটেছে কিনা। যদি মিটে গিয়ে থাকে, কি নিশ্চয়তা আছে, ফের এমন ভুল আপনি করবেন না?
প্রশ্নের উত্তরগুলো ভালো করে খুঁজে বের করতে চেষ্টা করুন। ক্ষণিকের জন্য সঙ্গীকে ফিরে পেতে চাইলে, সেটা তাঁর প্রতি অন্যায় করা হবে। নিজের মন শক্ত করুন। সঠিক সিদ্ধান্তে আসুন। সঙ্গীর সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে ছাড়াছাড়ি করতে চাইলে, তাঁকে বরাবরের মতো মুক্ত করে দিন। তাঁকে তাঁর মতো বাঁচতে দিন। আপনার সঙ্গে বিচ্ছেদে যদি তিনি সুখ খুঁজে পান, তবে তাই মেনে নিন। নিজের ইচ্ছে তাঁর উপর চাপিয়ে দেবেন না।
আর যদি আপনি সঙ্গীকে আগের মতো ফেরত চান, লোকলজ্জার ভয় নয়, কোনও আর্থিক কারণে নয়, শুধু ভালোবাসার কারণে, তবে কয়েকটি বিষয়ে আপনাকে সচেতন থাকতে হবে। যেমন-
১) কখনও কান্নাকাটি করবেন না। মনে রাখবেন, সঙ্গী আপনার উপর বিরক্ত। এই সময় চোখের জল ফেললে, সেই অশ্রুকে তিনি মনে করতে পারেন কুমিরের কান্না। তাই একদম কান্নাকাটি নয়।
২) মতো আপনার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে দিতে পারেন। তাই তাঁকে নিজেকে সামলানোর সময় দিন।
৩) সোশাল মিডিয়ায় কোনও কিছু পোস্ট করবেন না। নিজের মন খারাপের কথা একেবারেই শেয়ার করবেন না। এইসব দেখলে সঙ্গী হয়তো আরও রেগে যেতে পারেন।
৪) যে ব্যক্তির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার কারণে আপনার বিচ্ছেদ, সেই ব্যক্তির সঙ্গে আর কোনও যোগাযোগ রাখবেন না। তাঁকেও খোলাখুলি বলে দিন আপনি কী চাইছেন। এমন পরিস্থিতিতে কাউকেই অন্ধকারে রাখা ঠিক নয়।
৫) মনের দুঃখ সামলাতে অন্য কোনও পুরুষ/নারীর সঙ্গে সাময়িক সম্পর্কে জড়াবেন না। কেননা, তাতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। হতেই পারে দূর থেকে সঙ্গী আপনার উপর নজর রাখছেন। বোঝার চেষ্টা করছেন আপনার গতিবিধি। কার সঙ্গে মিশছেন, কার সঙ্গে কথা বলছেন, সবেরই হয়তো খবর রাখছেন তিনি। ফলত, সাময়িক সম্পর্কে জড়ানোর ঘটনাও তাঁর অজানা নয়। আপনার প্রতি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হতে পারে তাঁর। শেষ ভালোলাগা টুকুও নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
৬) নিজের মনটাকে শান্ত করুন। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান। দরকার হলে পরিবারের ঘনিষ্ঠ কারোর সঙ্গে সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। বা কোনও প্রিয় বন্ধু/বান্ধবীর সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন। কোনও কমন ফ্রেন্ড থাকলে বিষয়টা তাঁকেও বলতে পারেন। কমন ফ্রেন্ড এই সব ব্যাপারে দেবদূতের ভূমিকা পালন করেন মাঝেমধ্যে। যেহেতু তিনি আপনাকে ও আপনার সঙ্গীকে ভালো করে চেনেন, আপনার সঙ্গীর মনোভাব কী, জানতে সুবিধে হতে পারে।
৭) সঙ্গীও যদি সিদ্ধান্ত নেন, তিনি আপনাকে আরও একটা সুযোগ দিয়ে দেখবেন, তবে সেইদিনটার জন্য অপেক্ষা করুন। দেখা হলে ঘাবড়ে যাবেন না। সাহসী মনোভাব প্রকাশ করুন। যে ভুল আপনি করেছেন, সেটা নিজে মুখে স্বীকার করুন। সরি বলুন। বলুন, আপনার ভুল হয়েছে, ভবিষ্যতে এরকম ভুল আর কোনওদিনও হবে না। দেখবেন, সঙ্গীরও আপনার উপর সব অভিমান মুছে গেছে।
তথ্য সুত্রঃ উইকিপিডিয়া, এনটিভিবিডি, রোপকেয়ার, প্রিয়-লাইফ