মৃতের কাছ থেকে বিয়ের প্রস্তাব!

বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে বিশ্বের শিল্প-সাহিত্যে গল্পগাথার শেষ নেই। প্রিয় মানুষকে বিয়ের বন্ধনে বাঁধতে বিভিন্ন অদ্ভুত ও আশ্চর্য উপায়ে প্রস্তাব পেশ করার নজির আছে সব সমাজেই। কিন্তু, সম্প্রতি এক রাশিয়ান যুবক যা করেছেন, তাতে সবার আক্কেল গুড়ুম। প্রেমিকাকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার আগে নিজে মরে যাওয়ার অভিনয় করে ঝালাই করে নিয়েছেন তাঁর প্রতি প্রেমিকার আস্থা ও ভালোবাসা ঠিক কী পরিমাণ।

জি নিউজের এক খবরে বলা হয়, অ্যালেক্সি বাইকভের মূল উদ্দেশ্য ছিল বিয়ের পর তাঁর প্রেমিকা ইরিনা কলোকভের সঙ্গে পুরো জীবন কাটানোর আগে এটা পরীক্ষা করে নেওয়া, ইরিনা তাঁকে সত্যি কতটা ভালোবাসেন। এ জন্য ৩০ বছর বয়সী অ্যালেক্সি একজন চলচ্চিত্র পরিচালক, একজন স্টান্টম্যান ও একজন মেকাপ শিল্পীকে ভাড়া করেন। তাঁরা সবাই মিলে পথের পাশে একটি ভ্রাম্যমাণ মঞ্চ সাজান। ওই জায়গায়ই অ্যালেক্সি ও ইরিনার দেখা করার কথা ছিল। সেখানে শিল্পী-পরিচালকেরা গাড়ি দুর্ঘটনায় অ্যালেক্সির মৃত্যুর দৃশ্য মঞ্চায়ন করেন।

ইরিনা তাঁদের আগে থেকে ঠিক করা ওই স্থানে গেলে দেখতে পান, দুর্ঘটনাকবলিত একটি গাড়ি আর কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্সের ছোটাছুটি। তিনি বলেন, ‘ওখানে পৌঁছেই আমি দেখি রক্তভেজা অ্যালেক্সির দেহ রাস্তায় পড়ে আছে। একজন প্যারামেডিক আমাকে জানান, ও মারা গেছে। আমি সেখানেই কান্নায় ভেঙে পড়ি।’ যখন ইরিনা এভাবে কাঁদছিলেন, তখন অ্যালেক্সি উঠে এসে তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। ইরিনা সে প্রস্তাব মেনেও নেন। গত সপ্তাহে তাঁরা বিয়ে করেছেন।

সুত্রঃ প্রথম আলো

ঐতিহাসিক রায়
বিবাহবহির্ভূত সন্তান সম্পত্তির উত্তরাধিকারী

গত বছরের ৩১ মার্চ একটি যুগান্তকারী রায় প্রদান করেছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। রিভানাসিদ্ধাপা ও অন্যান্য বনাম মালিক অর্জুন ও অন্যান্য ২০১১ মামলার রায়ে বলা হয়, ‘আইনগত বিবাহবহির্ভূত সন্তান বৈধ সন্তান হিসেবে গণ্য হবে এবং পিতামাতার অর্জিত ও পৈতৃক সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবে।’ আপিল বিভাগের এ রায় পুনর্বিবেচনার জন্য সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ (বৃহত্তর বেঞ্চ) বরাবর মামলার নথিপত্র প্রেরণ করা হয়। যে ঘটনার প্রেক্ষাপটে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এ রায় প্রদান করেন, তার সূত্রপাত ঘটে ভারতের কর্ণাটকে। মামলার বাদীপক্ষে ছিলেন মালিক অর্জুনের প্রথম স্ত্রী ও তাঁর দুই সন্তান আর বিবাদীপক্ষে ছিলেন মালিক অর্জুন, তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী ও দুই সন্তান। বাদীপক্ষ পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত যৌথ অংশীদারি সম্পত্তিতে তাদের অংশ দখলের দাবিতে কর্ণাটকের বিচারিক আদালতে বাটোয়ারা মামলা করে। মামলায় বাদীপক্ষ দাবি করে, তিনি বিবাদীর বৈধ স্ত্রী এবং তাঁর দুই সন্তানসহ বিবাদীর সঙ্গে অংশীদারি সম্পত্তির অংশীদার। সেই সঙ্গে তিনি আরো দাবি করেন যে বিবাদীর দ্বিতীয় বিবাহ অবৈধ। কারণ তাঁর প্রথম বিবাহ বর্তমান থাকা অবস্থায় দ্বিতীয় বিবাহ ও তাঁদের সন্তানের জন্ম হয়েছে, যার ফলে তারা অংশীদারি সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবে না।

কর্ণাটকের বিচারিক আদালত বাদীর দাবির পক্ষে রায় প্রদান করে বলেন, বিবাদীর দ্বিতীয় স্ত্রী ও তাঁর সন্তানরা অবৈধ। কারণ প্রথম স্ত্রী বর্তমান থাকা অবস্থায় বিবাদী দ্বিতীয় বিবাহে আবদ্ধ হয়েছেন। ফলে বাদীপক্ষ দাবীকৃত সম্পত্তির অংশীদার এবং দ্বিতীয় স্ত্রী ও তাঁর সন্তানরা ওই সম্পত্তির অংশীদার নন। বিবাদীপক্ষ অর্থাৎ মালিক অর্জুন ও তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী ও দুই সন্তান ওই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেন। উচ্চ আদালত বিচারিক আদালতের রায়ের বিপরীতে হিন্দু বিবাহ আইন ১৯৫৫-এর ১৬(৩) ধারা উল্লেখ করে বলেন, বিবাহবহির্ভূত সন্তান বৈধ সন্তান হিসেবে বাদীপক্ষের সঙ্গে যৌথ পারিবারিক সম্পত্তির অংশ দাবি করতে পারবেন। এ রায়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে বাদীপক্ষ অর্থাৎ মালিক অর্জুনের প্রথম স্ত্রী ও তাঁর সন্তানরা হাইকোর্ট বিভাগে প্রথম আপিল করেন। আপিলের রায়ে বলা হয়, যেহেতু দ্বিতীয় বিবাহ ও তাঁর সন্তানরা অবৈধ, সেহেতু অবৈধ সন্তানরা ‘জন্মসূত্রে’ যৌথ অংশীদারি সম্পত্তির অধিকারী নন। সন্তানরা শুধু পিতা-মাতার অর্জিত সম্পত্তির অধিকারী হবেন। আদালত সেই সঙ্গে আরো বলেন, বিবাদীর দ্বিতীয় পক্ষের সন্তানরা পিতার মৃত্যুর পর সম্পত্তির অংশীদার হবেন। ওই প্র্রেক্ষাপটে বিবাদীপক্ষ অর্থাৎ মালিক অর্জুনের দ্বিতীয় স্ত্রী ও তাঁর সন্তানরা আপিল বিভাগে বর্তমান দ্বিতীয় আপিলটি করেন। রায়ে বিচারক জি এস সিংভি ও এ কে গাঙ্গুলি ঘোষণা করেন, ‘আইনগত বিবাহবহির্ভূত সন্তান বৈধ সন্তান হিসেবে গণ্য হবেন এবং পিতা-মাতার অর্জিত ও পৈতৃক সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবেন।’ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ (২ নম্বর আদালত) যেসব পর্যবেক্ষণ ও আইনের বিধানের পরিপ্রেক্ষিতে রায় প্রদান করেন তা হলো : পূর্ববর্তী আদালতগুলো হিন্দু বিবাহ আইনের ১৬(৩) ধারাকে অনেক সংকীর্ণ অর্থে দেখেছেন। ১৯৭৬ সালে হিন্দু বিবাহ আইনে ১৯৫৫-এর ১৬ ধারা সংশোধিত হয়। সংশোধিত ১৬(১) ও (২) ধারায় বিবাহবহির্ভূত সন্তানকে বৈধ সন্তানের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ১৬(৩) ধারায় উলি্লখিত ‘সম্পত্তি’ অর্জিত, না শরিক, না পৈতৃক সম্পত্তি তা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হয়নি। তাই ১৬(৩) ধারা অনুযায়ী সম্পত্তির অধিকারের ক্ষেত্রে বিবাহবহির্ভূত কোনো সন্তানের প্রতি বৈষম্য করা যাবে না। এর পরও এ ধারার একটি সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সংশোধিত ১৬ অনুযায়ী বিবাহবহির্ভূত সন্তান বৈধ সন্তানের মতো পিতা-মাতার জীবদ্দশায় পৈতৃক বা অংশীদারি সম্পত্তির অংশ দাবি করতে পারেন না। কেবল পিতার মৃত্যুর পর তা দাবি করতে পারেন।

রায়ে আদালত হিন্দু বিবাহ আইন সংশোধনের দর্শনগত দিকটিও ব্যাখ্যা করেন। তাতে বলা হয়, সমাজে অতীতে যা অবৈধ ছিল বর্তমানে তা বৈধ হতেও পারে। কারণ সামাজিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে বৈধতার ধারণা এগিয়ে যায়। আর আইনের কাজ হচ্ছে সমাজের এই পরিবর্তনগুলো সংশোধনের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত করা। এ ক্ষেত্রেও বলা যায়, পিতা-মাতার সম্পর্ক আইন দ্বারা অনুমোদিত নাও হতে পারে, কিন্তু সন্তানের জন্মকে পিতা-মাতার স্বাধীন সম্পর্কের ভিত্তিতে দেখতে হবে এবং এ ধরনের সম্পর্কের ভিত্তিতে জন্মগ্রহণকারী সন্তান বৈধ সন্তানের মতো অধিকার ভোগ করবে। পাশাপাশি ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনায় বলা আছে, প্রত্যেক ব্যক্তি মর্যাদা, অবস্থান ও সুযোগের ক্ষেত্রে সমান অধিকার পাবে। সংবিধানের ৩৭ নম্বর অনুচ্ছেদে আরো বলা আছে, রাষ্ট্র কর্তৃক আইন তৈরির সময় সংবিধানে উলি্লখিত রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিকে স্বীকৃতি দিতে হবে। ৩৯(ঙ) ও ৩০০(ক) অনুচ্ছেদে বলা আছে, আইন দ্বারা কোনো ব্যক্তিকে সম্পত্তির অধিকারবঞ্চিত করা যাবে না। সুত্রঃ কালের কন্ঠ

প্লাস্টিক সার্জারি কি ?

এক ধরনের শল্য চিকিৎসার নাম প্লাস্টিক সার্জারি। এই চিকিৎসার ফলে জন্মগত বা কোনো দুর্ঘটনায় বিকৃত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বাইরের চেহারা পরিবর্তন করা যায়। মুখে বসন্তের দাগ বা অন্য কোথাও কাটা, পোড়া এসবের খুঁত স্বচ্ছন্দে প্লাস্টিক সার্জারি করে দূর করা যায়। আপনারা গন্নাকাটা রোগী বোধহয় দেখেছেন। সাধারণত এদের ওপরের ঠোঁটের এক জায়গায় কাটা থাকে। প্লাস্টিক সার্জারিতে এমন চমৎকার মেরামত হয়ে যায়, আর ধরার উপায় থাকে না।

দেহের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির জন্য যে প্লাস্টিক সার্জারি করা হয় তাকে প্রসাধনিক শল্যচিকিৎসা (পড়ংসরপ ংঁৎমবৎু অথবা নবধঁঃু ংঁৎমবৎু) বলে। মুখে বসন্তের দাগ বা কুঁচকানো চামড়া এসবই দূর করা যেতে পারে।

চোখের পাতা, ঠোঁট, নাক সব কিছুই প্লাস্টিক সার্জারির সাহায্যে পরিবর্তন করা যায়। কয়েক হাজার বছর আগে ভারতবর্ষেও প্লাস্টিক সার্জারির প্রচলন ছিল। সেকালে কিছু অপরাধীর নাক কেটে সাজা দেওয়া হত। প্লাস্টিক সার্জনরা ঝটপট গাল বা অন্য কোথাও থেকে চামড়া কেটে সেখানে বসিয়ে দিয়ে নতুন আস্ত নাক গড়ে তুলতে পারতেন। বর্তমান যুগে প্লাস্টিক সার্জারি অবশ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আরম্ভ হয়েছে। কিন্তু প্লাস্টিক সার্জারি কিভাবে করা হয় তা কি কেউ জানেন? যে জায়গাটা মেরামত করা দরকার ঠিক সেই আকারের চামড়া শরীরের অন্য এক জায়গা থেকে কেটে এনে বসিয়ে দেওয়া হয়। এর জন্য দুই পরত মাত্র চামড়া নেওয়া হয়, যাতে তাদের কোষ চটপট বেড়ে ওঠে আক্রান্ত জায়গাটা বেমালুম সারিয়ে তুলতে পারে। আজকাল যে কোনো বড় শহরের সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে প্লাস্টিক সার্জারির সুযোগ রয়েছে। নিছক সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির জন্যও দলে দলে লোক প্লাস্টিক সার্জারির সাহায্য নেন।

তালাক, একে-অপরের বিরুদ্ধে মামলা ও তার ফলাফল

আইনের ভাষায় তালাক হচ্ছে ‘বিবাহ বন্ধন ছিন্ন করা অর্থাৎ স্বামী স্ত্রীর পারস্পরিক সম্পর্ক যদি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, একত্রে বসবাস করা উভয়ের পক্ষেই বা যে কোন এক পক্ষের সম্ভব হয় না, সেক্ষেত্রে তারা নির্দিষ্ট উপায়ে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে পারে।’

সুমির (ছদ্ম নাম) দাম্পত্য জীবনে এমনটিই ঘটেছিল। অবশেষে তিনি তার স্বামীকে তালাক প্রদান করেন। কাবিননামার ১৮ নম্বর ঘরে স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা দেওয়া ছিল। সেই অধিকারের ভিত্তিতে সুমী স্থানীয় কাজি অফিস থেকে তালাকের যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ করে তালাকনামা স্বামীর বরাবর পাঠিয়ে দেন। কিন্তু স্বামীর বসবাসরত স্থানীয় চেয়ারম্যান অফিসে পাঠানো হয়নি কোনো তালাকের কপি। সুমীর এ বিষয়টি জানা ছিল না। স্থানীয় কাজি অফিস থেকেও পাঠানো হয়নি কোনো কপি।

কিন্তু আইন অনুযায়ী স্বামী বা স্ত্রী যে কেউ একে অপরকে তালাক দিতে চাইলে তাকে যে কোন পদ্ধতির তালাক ঘোষণার পর যথাশীঘ্রই সম্ভব স্থানীয় ইউপি/পৌর/সিটি মেয়রকে লিখিতভাবে তালাকের নোটিশ দিতে হবে এবং তালাক গ্রহীতাকে উক্ত নোটিশের নকল প্রদান করতে হবে। চেয়ারম্যান/মেয়র নোটিশ প্রাপ্তির তারিখ হতে নব্বই দিন অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত কোনো তালাক বলবৎ হবে না। কারন নোটিশ প্রাপ্তির ত্রিশ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান/মেয়র সংশ্লিষ্ট পক্ষদ্বয়ের মধ্যে আপোষ বা সমঝোতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সালিশী পরিষদ গঠন করবে এবং উক্ত সালিশী পরিষদ এ জাতীয় সমঝোতার (পুনর্মিলনের) জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থাই  অবলম্বন করবে।

সুমী তালাকনামায় যেদিন স্বাক্ষর করেন, সেদিন থেকে পার হয়ে যায় দুই মাস। এর মানে ৯০ দিন ইদ্দতকাল পালন হতে হলে আর মাত্র এক মাস অপেক্ষা করতে হবে। সুমীর স্বামী আইনি দুর্বলতার সুযোগে এরই মধ্যে সুমীকে তার কাছে ফিরে পেতে পারিবারিক আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলাটির নাম দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার মামলা। এই মূল মামলাটি করার এক সপ্তাহ পর সুমীর স্বামী একই আদালতে একটি অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেন এই মর্মে যে, সুমী যাতে অন্য কোথাও বিয়ে না করতে পারেন। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত সুমী ও তার বাবাকে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আপত্তি দাখিলের জন্য ১০ দিনের সময় দিয়ে তাদের ঠিকানায়  সমন পাঠিয়ে দেয়।

সমন হাতে পেয়ে সুমীর চেহারায় দুশ্চিন্তা আর অস্থিরতার ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠে। তার বাবাও হয়ে পড়ে বিধ্বস্ত। কারন এক মাসে দুটি সমন তারা পান। একটি দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার মামলার লিখিত জবাব দাখিলের জন্য, আরেকটি অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আপত্তি দাখিলের জন্য।

দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার মামলায় বিবাদী করা হয়েছে তিনজনকে। প্রথম বিবাদী সুমীর বাবা, দ্বিতীয় বিবাদী তার মা এবং তৃতীয় বিবাদী সুমী নিজে। আরজিতে সুমীর স্বামীর অভিযোগ, তাঁর স্ত্রীকে জোর করে তালাক দিতে বাধ্য করেছেন তার বাবা। এখন তিনি তাকে নিয়ে ঘর করতে চান। কিন্তু সুমীর ভাষায়, তার স্বামী দুশ্চরিত্রের লোক। নানাভাবে অত্যাচার করত। বাইরে মদ আর নারী নিয়ে ব্যস্ত থাকত। জুয়া খেলত। স্ত্রী আর তার মেয়ের প্রতি কোনো খেয়াল রাখত না। এমন পাষণ্ড আর নির্দয় লোকের সঙ্গে ঘর করার চেয়ে একা থাকা ভালো-এই সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে বাধ্য হয়ে তাকে তাকে তালাক দিই।

সুমী যাতে অন্য কোথাও বিয়ে না করতে পারেন এই অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদনে সুমীর স্বামীর অভিযোগ ‘বিবাদীগণ পরস্পর যোগসাজশে অন্যায় ও বেআইনিভাবে ৩ নম্বর বিবাদীকে অর্থাৎ তার স্ত্রীকে ইদ্দতকালীন সময়ের মধ্যেই অন্যত্র পুনঃবিবাহ দেওয়ার জোর অপতৎপরতায় লিপ্ত হইয়া জনৈক চাকুরীজীবী পাত্র নির্বাচন করিয়া ফেলিয়াছেন এবং যেকোন সময় তার স্ত্রীকে উক্ত পাত্রের সহিত বেআইনীভাবে পুনঃবিবাহ সংঘটন করিতে পারেন।’

কিন্তু আইনের প্রশ্ন হচ্ছে, পারিবারিক আদালতে দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার মামলায় অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন চলে কি না। মকবুল মাজেদ বনাম সুফিয়া খাতুন মামলায় (৪০ ডিএলআর ৩০৫, এইচসিডি) মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের সিদ্ধান্ত এরকম যে, ১৯৮৫ সালে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা হয়। পারিবারিক আদালতের অধ্যাদেশে করা সর্বপ্রথম মামলাটিতে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি উত্থাপিত হয়। এতে স্বামী তাঁর স্ত্রীর দ্বিতীয় বিয়ের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রার্থনা করে। আদালত নিষেধাজ্ঞার আবেদন অগ্রাহ্য করেন। পরে জেলা জজ আদালতে আপিল করা হলে আপিল নামঞ্জুর হয়। পরে হাইকোর্ট বিভাগে রিভিশন করা হয়। হাইকোর্ট বিভাগ তার রায়ে বলেন, ‘পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশে ২০ ধারা অনুযায়ী দেওয়ানি কার্যবিধির ধারা প্রয়োগ যোগ্য নয়।

অবশেষে সুমীর স্বামীর দায়ের করা মামলাটির শুনানি হলো। আদালত আদেশ দিলেন, ‘ইদ্দতকাল পর্যন্ত অর্থাৎ ৯০ দিন অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত স্ত্রী অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হইতে পারিবে না এ মর্মে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর।’  সাধারণত আইন অনুযায়ী তালাকের নোটিশ প্রেরণের পর ইদ্দতকাল পর্যন্ত, অর্থাৎ ৯০ দিন অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকর হয় না। এ সময় অন্যত্র বিয়ে করার ক্ষেত্রে আইনে নিষেধ আছে। আদালত ইদ্দতকাল পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা দিয়ে এ আইনের কার্যকারিতা আরও পাকাপোক্ত করলেন।

এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে তাহলে মূল মামলাটির অর্থাৎ দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার মামলাটির কী হবে?’  সহজেই বলা যায়, মূল মামলার জবাব দিতে হবে। মামলায় লড়তে হবে। শুনানিতে সুমী আদালতে উপস্থিত হয়ে বললেন, কাবিননামার ১৮ নম্বর ঘরে তার তালাক প্রদানের ক্ষমতা দেওয়া আছে। তিনি স্বেচ্ছায় এবং স্বজ্ঞানে তার স্বামীকে তালাক দিয়েছেন। আর তিনি তার স্বামীর ঘর করতে চান না। বিজ্ঞ আদালত ওই দিনই মামলাটি খারিজ করে দিলেন। আইনত সুমীর মেয়েটি সাবালিকা হওয়া পর্যন্ত মায়ের হেফাজতেই থাকবে।

১৯৩৯ সালের মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইনে অত্যন্ত— সুষ্পষ্টভাবে বলা হয়েছে কি কি কারণে একজন স্ত্রী আদালতে বিয়ে বিচ্ছেদের আবেদন করতে পারবে।

কারণগুলো হলোঃ

১. চার বছর পর্যন্ত স্বামী নিরুদ্দেশ থাকলে।
২. দুই বৎসর স্বামী স্ত্রীর খোরপোষ দিতে ব্যর্থ হলে।
৩. স্বামীর সাত বৎসর কিংবা তার চেয়েও বেশী কারাদ- হলে।
৪. স্বামী কোন যুক্তিসংগত কারণ ব্যতিত তিন বছর যাবৎ দাম্পত্য দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে।
৫. বিয়ের সময় পুরষত্বহীন থাকলে এবং তা মামলা দায়ের করা পর্যন্ত বজায় থাকলে।
৬. স্বামী দুই বৎসর ধরে পাগল থাকলে অথবা কুষ্ঠ ব্যাধিতে বা মারাত্মক যৌন ব্যধিতে আক্রান্ত থাকলে।
৭. বিবাহ অস্বীকার করলে। কোন মেয়ের বাবা বা অভিভাবক যদি ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগে মেয়ের বিয়ে দেন, তাহলে মেয়েটি ১৯ বছর হওয়ার আগে বিয়ে অস্বীকার করে বিয়ে ভেঙ্গে দিতে পারে, তবে যদি মেয়েটির স্বামীর সঙ্গে দাম্পত্য সর্ম্পক (সহবাস) স্থাপিত না হয়ে থাকে তখনি কোন বিয়ে অস্বীকার করে আদালতে বিচ্ছেদের ডিক্রি চাইতে পারে।
৮. স্বামী ১৯৬১ সনের মুসলিম পারিবারিক আইনের বিধান লংঘন করে একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করলে।
৯. স্বামীর নিষ্ঠুরতার কারণে।

উপরে যে কোন এক বা একাধিক কারণে স্ত্রী আদালতে বিয়ে বিচ্ছেদের আবেদন করতে পারে। অভিযোগ প্রমাণের দায়িত্ব স্ত্রীর। প্রমাণিত হলে স্ত্রী বিচ্ছেদের পক্ষে ডিক্রি পেতে পারে, আদালত বিচ্ছেদের ডিক্রি দেবার পর সাত দিনের মধ্যে একটি সত্যায়িত কপি আদালতের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানের কাছে পাঠাবে।

১৯৬১ সনের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ অনুযায়ী চেয়ারম্যান নোটিশকে তালাক সংক্রান্ত নোটিশ হিসেবে গণ্য করে আইনানুযায়ী পদক্ষেপ নিবে এবং চেয়ারম্যান যেদিন নোটিশ পাবে সে দিন থেকে ঠিক নব্বই দিন পর তালাক চূড়ান্তভাবে কার্যকর হবে।

স্বামীর আদালত স্বীকৃত নিষ্ঠুর ব্যবহার সমূহ

ক) অভ্যাসগতভাবে স্ত্রীকে আঘাত করলে বা নিষ্ঠুর আচরণ করলে, উক্ত আচরণ দৈহিক পীড়নের পর্যায়ে না পড়লেও, তার জীবন শোচনীয় করে তুলেছে এমন হলে।
খ) স্বামী খারাপ মেয়ের সাথে জীবনযাপন করলে।
গ) স্ত্রীকে অনৈতিক জীবনযাপনে বাধ্য করলে।
ঘ) স্ত্রীর সম্পত্তি নষ্ট করলে।
ঙ) স্ত্রীকে ধর্মপালনে বাধা দিলে।
চ) একাধিক স্ত্রী থাকলে সকলের সাথে সমান ব্যবহার না করলে।
ছ) এছাড়া অন্য যে কোন কারণে (যে সকল কারণে মুসলিম আইনে বিয়ের চুক্তি ভঙ্গ করা হয়)।

লেখকঃ সাপ্তাহিক ‘সময়ের দিগন্ত’ পত্রিকার প্রকাশক-সম্পাদক ও আইনজীবী জজ কোর্ট, কুষ্টিয়া।

লিখেছেনঃ অ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক

ব্যাঙের বিয়ে

ব্যাঙ্গা ব্যাঙ্গির বিয়া কুলা মাথায় দিয়া ও ব্যাঙ্গ পানি আন গিয়া /খালও নাই পানি, বিলও নাই পানি/ আসমান ভাইঙ্গা পড়ে ফোটা ফোটা পানি/ আম পাতা দিয়া দিলাম ছানি জাম পাতা দিয়া দিলাম ছানি/ তেও (তবু) পড়ে মেঘের (বৃষ্টির) পানি……. গানটি সুর করে গাইছেন কিশোরী ও মহিলারা। বাড়িটিতে উৎসবের আমেজ। গ্রামের নানা বয়সী লোকজনের ভিড়, বাড়ির এক পাশে চলছে রান্না-বান্না। ছেলেমেয়েরা ছোটাছুটি করছে। পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া লোকজনও বাড়িটিতে কী হচ্ছে এক নজর দেখতে ভিড় জমাচ্ছে।

হাওর পারের জামলাবাজ গ্রামে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা যায়। কী হচ্ছে_এমন প্রশ্নের উত্তরে জানা গেল গ্রামের নির্মল সরকারের বাড়িতে ব্যাঙের বিয়ে হচ্ছে। বাড়িতে রান্না হচ্ছে, গ্রামবাসী ও অতিথিদের জন্য। ব্যাঙের বিয়ে দিলে বৃষ্টি হয় এ বিশ্বাস থেকেই এমন আয়োজন। সাজানো হয়েছে বিয়ের আসর। মাঝখানে দুটি গর্তে আলাদাভাবে রাখা হয়েছে একটি নারী ও একটি পুরুষ ব্যাঙ। সেখানে আম পাতা ও জাম পাতার পানি দিয়ে গোসল করিয়ে বিয়ে দেওয়া হলো ব্যাঙ দুটিকে। পুরুষ ব্যাঙের অভিভাবক ছিলেন রোকেয়া বেগম (৪২) এবং নারী ব্যাঙের অভিভাবক মালা রানী দাশ (৩৫)।

কবে থেকে এ ধরনের বিয়ের সংস্কৃতি চলে আসছে এ বিষয়ে কেউই সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারেনি। তবে জানা যায় , বহুকাল ধরেই মাঘ ও ফাল্গুন মাসে বৃষ্টি না হলে হাওরপারের গ্রামগুলোতে ব্যাঙের বিয়ে দেওয়া হয়। কারণ এ সময় হাওরের বুকজুড়ে থাকে ধান আর ধান। হাওরপারের গ্রামবাসীর ধারণা ব্যাঙের বিয়ে হলে বৃষ্টি হবে এবং তাদের ধান উৎপাদন ভালো হবে। বিয়ে দেখতে আসা মধ্য তাহিরপুর গ্রামের আব্দুর রহিম (৯৮) জানান, তিনি ছোটবেলা থেকেই ব্যাঙের বিয়ে দেখে আসছেন এবং মেয়েদের সঙ্গে তাঁরাও তখন এতে অংশ নিতেন। এখন বৃষ্টি হলে হাওরে লাগানো ধানের উৎপাদন ভালো হবে। হাওরাঞ্চলে প্রচলিত অনেক সংস্কৃতি হারিয়ে গেলেও বৃষ্টির জন্য ব্যাঙের বিয়ে অনুষ্ঠানটি এখনো টিকে আছে।

প্রচণ্ড তাপদাহে পুড়ছে গাইবান্ধার মাঠ-ঘাট। ভরা বর্ষাকালেও বৃষ্টির দেখা নেই। ফেটে চৌচির শস্য ক্ষেত। কৃষক বাবার বিষন্ন মুখ দেখে কিশোর-কিশোরীরা আয়োজন করে ব্যাঙের বিয়ের। তাদের বিশ্বাস ব্যাঙের বিয়ে দিলেই বৃষ্টি নামবে অঝোর ধারায়। ক্ষেত জুড়ে ফলবে শস্য। গাইবান্ধার মেঘডুমুর গ্রামে এই বিয়েকে ঘিরে শুরু হয় উৎসর আমেজ। লাল নীল কাগজে সাজানো চারদিক। গায়ে হলুদের আয়োজনে যেতে ব্যস্ত কিশোরীরা। হলুদ শাড়ি, সাজগোজ সবই চলছে। কলাগাছ পুঁতে তৈরি বিয়ের আসর। প্রদীপ থেকে শুরু করে পান, সুপারী, দূর্বা ঘাস, মিষ্টিসহ বিয়ের সব উপকরণই প্রস্তুত।

বৃষ্টির আশায় ব্যাঙের বিয়ে ভারতীয় উপমহাদেশে গ্রামীণ সমাজের এক প্রাচীন রীতি। সেই রীতিতেই আগের দিন ধরে রাখা দু’টি ব্যাঙকে রং লাগিয়ে সাজানো হয়। ব্যাঙ ও বৃষ্টির ছড়া কেটে দেয়া হয় বিয়ে । সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে বিকেলে পকুরে ছেড়ে দেয়া হয় নব দম্পতিকে। ব্যাঙ দম্পতি জলাশয়ে সাঁতার কাটে, আর তীরে বসে কিশোর কিশোরীরা ভাবে এবার বৃষ্টি হবে।  বিয়ের দিন, তার পরও ওদের মধ্যে দেখা যায়নি কোনো উত্তেজনা! কিন্তু গ্রামের সবাই উৎসুক হয়েই হাজির হয়েছিল বিয়েতে। রীতিমাফিক পূজা-অর্চনাও হয়েছে। ভারতের টাকহাটপুর গ্রামের বাসিন্দারা বিয়েতে বর-কনের সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য নয়, প্রার্থনা করেছেন বৃষ্টির জন্য! বিয়ের পাত্র-পাত্রী দুটি কোলা ব্যাঙ!

সম্প্রতি বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গে একটি এলাকায় ২৫০ মানুষ মিলে দিয়েছে ব্যাঙের বিয়ে৷ কারণ তারা ধরণীতে চায় বৃষ্টির ছোঁয়া৷ বিয়ের ‘‘বর-কনে”কে আনা হয়েছে ঢাকা থেকে ১১০ কিলোমিটার দূরের একটি গ্রাম থেকে৷ গ্রামবাসীরা এই বিয়ের ব্যবস্থা করেছিলো৷কারণ অনেকদিন ধরে সে অঞ্চলে বৃষ্টি না হওয়ায় পানির স্বল্পতা দেখা দিয়েছিলো৷সে গ্রামের স্কুল শিক্ষক নূর মোহাম্মদ জানান ‘‘তিনি ঐ বিয়ের অনুষ্ঠানে একজন অতিথি ছিলেন৷ ছেলে-বুড়ো, নারী সব মিলে সেখানে ২৫০ মানুষ অংশগ্রহণ করে৷ তারা সেখানে নাচে-গানে মুখর হয়ে উৎসবে মেতে উঠেছিলো৷ অতিথিদের ভাত-ডাল, মাছ, গরুর মাংস এবং মিঠাই দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়৷ ‘‘বর-কনে” এক ধরনের বিশেষ বিয়ের পোশাক পরেছিল৷ গ্রামবাসী সবাই মিলে তাদের আশীর্বাদ জানিয়েছে৷ তারপর ‘‘বর-কনে”কে ছেড়ে দিয়েছে পাশের একটি পুকুরে”৷ তিনি আরো জানান, ‘‘সেদিন রাতে সে অঞ্চলে বৃষ্টি হয়েছে৷ তাঁর বিশ্বাস এই বৃষ্টি সেই বিয়ের কারণেই হয়েছে”৷ ছড়া কবিতায় ব্যাঙের বিয়ের কথা শোনা থাকলেও বাস্তবে এমন বিয়ের কথা অবশ্য প্রথমবারের মতোই জানা গেল৷

বিচ্ছেদের পর কী হয় বিয়ের আংটি?

বিয়ের বন্ধনে আংটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সোনা বা রুপা যা দিয়েই তৈরি হোক না কেন, শোভা হিসেবে এতে হীরা বা স্ফটিক পাথর যা-ই থাক না কেন, দুটি হূদয়ের বিনি সুতোর বন্ধনের তাত্পর্য তুলে ধরে এই আংটি। বিবাহিত জীবনে স্বামী-স্ত্রীর কাছে এই আংটির মাহাত্ম্য ও আদর থাকে জীবন ভর। এই আংটিকে জড়িয়ে থাকে অনেক মধুর স্মৃতি। তবে কখনো যদি কোনো কারণে দাম্পত্য জীবনের পাট চুকে যায়, তখন বাগদান বা বাসর রাতের অনেক আকাঙ্ক্ষার এই আংটি হয়ে যায় বেদনার স্মৃতি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা হয়ে যায় নিতান্ত এক অকিঞ্চিত্কর জিনিস।

হলিউড তারকা টম ক্রুজ ও কেটি হোমসের কথাই ধরা যাক। ধুমধাম করে বিয়ের বন্ধনে জড়ান তাঁরা। মেয়ে সুরিকে নিয়ে বেশ সুখে কাটছিল তাঁদের দিন। এখন সবই অতীত। সম্প্রতি হঠাত্ বিচ্ছেদের ঘোষণা দেন কেটি হোমস। দূরে থাকা টম ক্রুজ ওই সিদ্ধান্তে বেশ অবাক হন। কিন্তু কিছুতে আর জোড়া লাগেনি সেই সংসার। কেটি হোমস যে বেশ ক্ষুব্ধ হয়ে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, এর প্রমাণ মিলল বিচ্ছেদের পর। বিয়ের সেই আংটি ছাড়া ঘুরতে শুরু করেন তিনি। তাঁর এই আচরণের মধ্যে এমন একটা ব্যাপার ছিল—দেখো, তোমাকে ছাড়াই আমি ভালো থাকতে পারি।

এবার শোনা যাক বিখ্যাত গায়ক সিল ও হেইডি কুম দম্পতির কথা। বিচ্ছেদ ঘোষণার পর টেলিভিশন সাক্ষাত্কারে সিল বলেছিলেন, তাঁর জীবনে সাবেক স্ত্রী হেইডি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। হেইডিকে যে তিনি মনে রেখেছেন, এর স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে আংটিটি অনামিকায় রেখে দেন। এক মাস পরই দেখা গেল, সিল ও হেইডি বিয়ের আংটি খুলে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আবেগের বশে তাঁরা কী পণ করেছিলেন, তা আর কারও মাথায় নেই। বিচ্ছেদের সঙ্গে বিয়ের আংটি অনামিকায় পরা বা না পরায় কী এমন আসে যায়?—এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে নানা জনের নানা মত নিয়ে বিবিসি অনলাইনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

প্রতিবেদনে মাত্র ৩০ বছর বয়সে বিয়ে বিচ্ছেদ হওয়া ভার্জিনিয়া আয়রনসাইডের জীবনের গল্প তুলে ধরা হয়। বিয়ে বিচ্ছেদের পরও তিনি দীর্ঘদিন অনামিকায় ধারণ করেন বিয়ের আংটি। তাঁর ভাষায়, ‘আমি দ্রুত আমার নিজের সত্তায় ফিরে এসেছিলাম। তবে আংটিটি অনামিকায় ছিল। কারণ তা বেশ সুন্দর আর আমার হাতে বেশ মানিয়েছিল।’ তবে আংটিটি হারিয়ে গেলে বেশ কষ্ট পেয়েছিলেন ভার্জিনিয়া। এই কষ্ট সাবেক স্বামীর স্মৃতি হারিয়ে গেছে বলে নয়; বরং অনেক দিন ধরে আঙুলে পরে থাকা প্রিয় জিনিসটি আর নেই বলেই হয়েছিল। বিয়ে বিচ্ছেদের পর অনামিকায় আংটি পরে থাকার সঙ্গে মনস্তাত্ত্বিক একটি ব্যাপার আছে বলে মনে করেন ভার্জিনিয়া। তাঁর মতে, এই আংটি পরে থাকা বা না থাকার মাধ্যমে আপনি ভবিষ্যত্ জীবন নিয়ে একটি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। আপনি অন্য কারও সঙ্গে নতুন করে জীবন সাজাবেন, নাকি একা একাই জীবনের বাকি পথ পাড়ি দেবেন—সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়।

অনেকে মনে করেন, বিয়ে বিচ্ছেদের পর বিয়ের আংটি হাতে পরে থাকলে পুরোনো দিনের স্মৃতি মনে ভর করে। তখন আর নতুন করে জীবন নিয়ে ভাবার ইচ্ছা মানুষের হয় না। বরং স্মৃতিগুলো নিয়ে বেঁচে থাকার মধ্যেই মানুষ এক ধরনের তৃপ্তি পায়। আবার অনেকে অনামিকায় আংটি রাখার পক্ষে নন। তাঁরা নতুন করে জীবনটাকে সাজাতে চান। সে ক্ষেত্রে পুরোনো স্মৃতি তাঁরা রাখতে চান না, পাছে পুরোনো কথা মনে পড়ে যায়! অনেক নারী বিচ্ছেদের পরও তিনি যে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন, তা সন্তানদের বোঝানোর জন্য অনামিকায় সাবেক স্বামীর দেওয়া আংটিটি পরে থাকেন। মানব-মানবীর সম্পর্ক নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন জুডি জেমস। তাঁর মতে, তারকারা বিচ্ছেদের পর বিয়ের আংটি নিয়ে এক ধরনের লুকোচুরি খেলায় মাতেন। আংটিটি না পরে কেউ কেউ বোঝাতে চান, তিনি আর তাঁর অতীতের সঙ্গে নেই, এখন এগিয়ে যেতে চান শুধু সামনে। অনেক তারকা এই প্রত্যাশা নিয়ে আংটিটি দ্রুত খুলে ফেলেন, সামনের দিনগুলোতে হয়তো আরও ভালো কোনো জীবনসঙ্গী জুটবে।

জুডির মতে, অনেকে বিচ্ছেদের পরও আংটি অনামিকায় পরে থাকেন। কারণ তাঁরা অন্যকে জানাতে চান না আসলে তাঁর জীবনে কী হয়ে গেছে। আবার অনেকে বিষয়টিকে ফেসবুকে স্ট্যাটাস আপডেট করার মতো হালকা মনে করে। এই শ্রেণীর মানুষের কাছে ব্যাপারটা খুব হালকা। বিচ্ছেদের পর আংটি খুলে তাঁরা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ফেলেন যে তিনি ‘সিঙ্গেল’। মানুষ এখন তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপারকে আর ব্যক্তিগত রাখতে চায় না বলেই এমন আচরণ করেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।

গাড়িতেই সংসার!

একটু আরাম-আয়েশে বসবাস করার জন্য বাড়ি-গাড়ির কথা ভাবেন না এমন মানুষের খোঁজ মেলা ভার। তবে, যারাই এই ভাবনা ভাবেন না কেন-আগে মাথা গোঁজার ঠাঁই বাড়ি তারপর ভাবেন গাড়ির কথা। কিন্তু এবারে একটু ভিন্ন ভাবনার মানুষের গল্প শুনি। যারা কিনা বাড়ির আগে গাড়ি কিনে ফেলেছেন। তাহলে তাঁরা থাকেন কোথায়? এ প্রশ্ন আসতেই পারে। একটাই উত্তর, ওই গাড়িই তাঁদের বাড়ি।

একটু আলাদাভাবে ভেবেই বাড়ির আগে গাড়ি কিনে ফেলেছেন যুক্তরাজ্যের ক্যান্টারবেরি শহরের ড্যানিয়েল বন্ড ও স্ট্যাসি দম্পতি। ২৮ বছর বয়সী ড্যানিয়েল বন্ড পেশায় গাড়ি মেরামতকারী। এই কাজ করে তিনি যে পরিমাণ অর্থ জমিয়েছেন তা একটি বাড়ি কেনার জন্য মোটেও যথেষ্ট ছিল না। কিন্তু স্ত্রী স্ট্যাসিকে (২০) নিয়ে একটু নিরাপদে থাকতেও হবে তাঁকে। এ নিয়ে বেশ ভাবনায় পড়ে যান তিনি। বাড়ি কেনার জন্য ব্যাংকও রাজি হয়নি ঋণ দিতে। আর অন্যের বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে নারাজ দুজনেই। তাই বাধ্য হয়ে দুজনে মিলে শলা-পরামর্শ করে একটি বড়সড় গাড়ি কেনার কথা ভাবেন। তাঁদের ভাবনার কথা শুনে ড্যানিয়েলের মা তাঁকে ‘মাথা খারাপ হয়ে গেছে’ বলে ড্যানিয়েলকে রাগারাগিও করেছিলেন। সেই চোখ রাঙানিকে থোড়াই কেয়ার করে নিজেদের সিদ্ধান্তেই অটল থেকেছিলেন তাঁরা। তাঁদের চাওয়া এমন একটি গাড়ি, যাতে সারা শহর মনের আনন্দে ঘুরে বেড়ানো যাবে, সেই সঙ্গে খাওয়া-দাওয়াসহ গাড়ির ভেতরে একটু নিরাপদে ঘুমানোও যাবে। যেই ভাবনা সেই কাজ। অর্থকড়ি গোছগাছ করে তিন হাজার পাউন্ড দিয়ে গত বছরের অক্টোবরে লেল্যান্ড অলিম্পিয়া-১৯৯১ মডেলের একটি দ্বিতল বাস কিনে ফেলেন তাঁরা। এরপর আট হাজার পাউন্ড বাড়তি খরচ করে সেই বাসের ভেতরে দুইটি থাকার কক্ষসহ বাড়ির মতো করে বানিয়ে নিয়েছেন ড্যানিয়েল ও স্ট্যাসি দম্পতি। এখন তাঁরা সেই বাড়ি মানে গাড়িতেই থাকেন, ঘর-সংসার করেন।

বাসটির ভেতরে এখন তাঁদের থাকার জন্য দুইটি কক্ষ, একটি রান্নাঘর, টেলিভিশন কক্ষ, প্রসাধন কক্ষ, পানির ট্যাঙ্ক এমনকি একটি বারও আছে। ‘শুরুতে আমরা বাড়ি নিয়ে বেশ হতাশায় পড়েছিলাম। ক্যান্টারবেরিতে ছোট্ট একটি ফ্ল্যাট কিনতে প্রায় এক লাখ পাউন্ড দরকার। অতো অর্থ আমাদের ছিল না। কিন্তু টাকা খরচ করে অন্যের বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকারও ইচ্ছে ছিল না আমাদের। তাই অল্প অর্থ খরচ করে গাড়ি কিনে তার ভেতরে বাড়ি বানিয়ে থাকার কথা চিন্তা করি। প্রথমে বেশ জটিল মনে হলেও পড়ে বুঝতে পারি এটাই আমাদের জন্য সবচেয়ে সহজ সমাধান।’—বলছিলেন ড্যানিয়েল বন্ড।

ড্যানিয়েল-স্ট্যাসির গাড়ির ভেতর বানানো এই বাড়িতে প্রায় ২২০ লিটার পানি ধারণ করার মতো ট্যাঙ্ক রয়েছে। তাছাড়া সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের ব্যবস্থাও আছে গাড়িতে। রান্না ঘরের ভেতরে আছে চুলা, রেফ্রিজারেটর ও কিচেন ক্যাবিনেট। স্ট্যাসি বলেন, ‘এটা আমার খুব ভালো লেগেছে। খুবই ভালো একটি উদ্যোগ। আমাদের একটি বাড়ির খুব প্রয়োজন ছিল। ড্যানিয়েল অনেক কষ্ট করেছে এজন্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অর্থ জোগাড় করতে পারেননি। তাতে কী! এখন তো এটাই আমাদের দু’জনের নিজেদের বাড়ি।’

ড্যানিয়েল আরও বলেন, বাসটির ভেতরে ঢুকলে কেউ বলতে পারবে না যে, এটা একটা বাস। এটা আসলে পুরোদমে একটি নতুন বাড়ি।’ বাসটি বর্তমানে একটি খোলা জায়গায় রাখা আছে। তবে ড্যানিয়েল আশা করছেন, সামনের আগস্টেই তিনি গাড়িটির চালক হিসেবে লাইসেন্স পেয়ে যাবেন। আর তা হাতে পেলেই ওই বাড়িতুল্য গাড়িতে স্ট্যাসিকে নিয়ে ঘুরে আসবেন কর্নওয়েল থেকে। যেখানে কেটেছে তাঁর শৈশব, তাঁর কৈশোর। ওয়েবসাইট।

বিয়ে বলে কথাঃ শাকিল ফারুক

লাঠালাঠিতে হারাতে পারলেই সিলেটে বিয়েবাড়িতে ঢুকতে পারত বরপক্ষ। খুলনায় বিয়ের গেটে আজও হয় ইংরেজি তর্কযুদ্ধ। বাঙালি বিয়েতে এরকম কত কিছু যে হয় তা বলে শেষ করার নয়। তবু যতটা বলা যায় ততটা নিয়ে এবারের স্পটলাইটঃ

এও তাহলে সম্ভব! কত না অদ্ভুত কাজ করে থাকে মানুষ! তাই বলে তিন দিন কনের বাড়ির সামনে তাঁবু খাটিয়ে বসে থাকা! তবে যার মুখ থেকে ঘটনাটি জানা গেল, তার দাবি, ঘটনার পুরোটাই সত্য। কথকের মামার বিয়ের ঘটনা। বরযাত্রী নিয়ে তাঁরা বিয়ের দিন কনের বাড়িতে হাজির হয়েছেন। বাড়ির গেটেই তাঁদের পথ আটকে দাঁড়াল একদল লোক। তাদের হাতে লাঠি। বরপক্ষ এ ঘটনায় বিচলিত হলো না। কারণ তারাও তৈরি হয়ে এসেছে। লাঠি হাতে প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হলো তারা। শুরু হয়ে গেল লাঠালাঠি। তবে তা কোনো পূর্বশত্রুতার জের ধরে নয়, রীতি অনুযায়ী!  সিলেটে তখন নাকি বিয়ের রীতিই ছিল এমন। কনেপক্ষের লাঠিয়ালদের হারাতে পারলে তবেই কনেবাড়িতে ঢুকতে পারবে বরপক্ষ, নইলে না।

তো কথকের মামাপক্ষ প্রথম দিন কনেপক্ষকে হারাতে পারল না বলে তাদেরকে বাড়ির ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হলো না। কিন্তু বরপক্ষ নাছোড়বান্দা। বিয়ে না হলে যে মান থাকে না। তাই ফিরে না গিয়ে তারা তাঁবু খাটিয়ে অবস্থান নিল কনেবাড়ির বাইরে। সেখানে টানা তিন দিন অবস্থান করে, একাধিকবার চেষ্টার পরে কনেপক্ষের লাঠিয়ালদের হারিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করল। তার পরই সম্পন্ন হয়েছিল বিয়ে। অবাক হওয়ার মতো হলেও, ঘটনাটিকে অবিশ্বাস করার উপায় নেই। আনন্দ-উল্লাসের প্রকাশ তো কখনো-সখনো একটু অদ্ভুত ধরনের হয়ে থাকে। আর বিয়ের মতো অনুষ্ঠানে সেটা আরো বর্ণিল আর বিচিত্র হয়ে উঠতে পারে।

সব সমাজেই বিয়ের প্রচলন আছে। তবে রীতিনীতির কারণে সমাজভেদে বিয়ের ধরন হয় বিভিন্ন রকমের। মুসলমানদের বিয়ে হয় কনের বাড়িতে কাজির মাধ্যমে। পুরোহিতের মন্ত্রপাঠের মাধ্যমে হয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিয়ে। কনের বাড়িতে মাঙ্গলিক আচারানুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উদ্যাপিত হয় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। বৌদ্ধদের রীতিও অনেকটা সে রকমেরই। ধর্মীয় শ্লোকের মাধ্যমে বিয়ে করানো হয় তাদের। আর খ্রিস্টানদের বিয়ে হয় চার্চে ফাদারের মাধ্যমে।

 তবে শুধু ধর্মীয় কারণে নয়, বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা আর উদ্যাপনে ভিন্নতা দেখা যায় অঞ্চলভেদেও। এক্ষেত্রে প্রথমেই চলে আসে ঢাকাই বিয়ের কথা। কোনো অনুষ্ঠান উদ্যাপনে ঢাকাবাসীর তুলনা মেলা ভার। সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা বদলে গেলেও, ঢাকাই বিয়ে এখনো ব্যাপক বৈচিত্র্যপূর্ণ। বিয়ে অনুষ্ঠানকে ঘিরে ঢাকাইয়ারা করে থাকে নানা আয়োজন। প্রস্তাব দেওয়া, কনে পছন্দ করাসহ আর সব বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য বিয়ের আগে ‘পানচিনি’র আয়োজন করা হয়। এতে সঞ্চালকের ভূমিকায় থাকেন পেশাজীবী ঘটকরা। তাদের বলা হয় ‘মোতাসা’। পানচিনি অনুষ্ঠানের ফল সন্তোষজনক হলে দিনক্ষণ আর লেনদেন বিষয় নিশ্চিত করার জন্য আয়োজন করা হয় মোতাসা-রাই বা ‘পাকাকথা’ অনুষ্ঠানের। এসব অনুষ্ঠানে মুখরোচক সব খাবারের আয়োজন থাকে।

এই ভূরিভোজনপর্বকে ঢাকাইয়া ভাষায় বলা হয় ‘খাস আপ্যায়ন’। বিয়ের কয়েক দিন আগে অনুষ্ঠিত হয় ‘হলদি’ বা ‘তেলাই’। গোসলের আগে বর ও কনের গায়ে হলুদবাটা দিয়ে শরীর মার্জন করা হয় এ অনুষ্ঠানে। আত্দীয়স্বজনের অংশগ্রহণ ও গান-বাজনার মধ্য দিয়ে এক আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি হয়। বর ও কনের বাড়িতে আলাদাভাবে তেলাইয়ের আয়োজন হয়ে থাকে। বরপক্ষের লোক মিষ্টি ও নানা উপাচার নিয়ে কনের বাড়িতে উপস্থিত হন। আর কনেপক্ষের লোক উপস্থিত হন বরপক্ষের বাড়িতে। উপাচারের মধ্যে অবশ্যই থাকে দুটি বড় মাছ। একটি বরের প্রতীক, অন্যটি কনের। বরের প্রতীক মাছটির মুখে গুঁজে দেওয়া হয় একটি সিগারেট। আর কনে-মাছটির মুখ ঢেকে দেওয়া হতো একটুকরো কাপড় দিয়ে। যে মাছ কাটে, তার জন্য উপহারস্বরূপ মাছের ভেতর দেওয়া হয় টাকা। হলুদপর্ব শেষ হলেই শুরু হয় রং ছিটানোর খেলা।

এরপর বর ও কনের বাড়িতে আলাদাভাবে আয়োজন করা হয় ‘আইবুড় ভাত’ নামের অনুষ্ঠান। একে ‘কুমারী ভাত’ও বলা হয়। আইবুড় মানে অবিবাহিত অবস্থায় নিজের বাড়িতে বর বা কনের শেষ খাওয়া। এ পর্বেও থাকে প্রচুর খাবারদাবারের আয়োজন। তারপর আসে বিয়ের মূল আনুষ্ঠানিকতা। আগে কার্ড ছেপে দাওয়াত পাঠানোর রেওয়াজ ছিল না। বিয়ের দাওয়াত দেওয়া হতো লবঙ্গ উপহার দিয়ে। প্রচলন ছিল না কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করারও। তাই গলির মোড়ে বা এলাকার মসজিদে বিয়ের কাবিননামা লেখার কাজ সারা হতো। এরপরই খাওয়াদাওয়া, উপহার প্রদান আর আতসবাজি ফোটানোর উৎসব। বিয়ের পরও আরো মাসখানেক রয়ে যায় এ উৎসবের আমেজ। বিয়ের পর কনের পিতৃগৃহে বর আর কনের বেড়াতে যাওয়াকে বলা হয় ফিরোল্টা’ (ফির+উল্টা)। এর মানে, বিয়ের পর আবার আগের মতো কনের বাবার বাড়িতে ফিরে যাওয়া। সাম্প্রতিককালে কোনো কোনো আচার-প্রথা হারিয়ে যেতে থাকলেও অধিকাংশই এখনো টিকে আছে।

সিলেট অঞ্চলের বিয়েতেও বর্ণাঢ্য আয়োজন দেখা যায়। বিয়ের দিন গীত-গান এবং ‘ধামাইল’ নামের একটি মেয়েলি অনুষ্ঠানের আয়োজন বিশেষভাবে সিলেটী বৈশিষ্ট্য। বর ও কনের বাড়ি সাজানো হয় আড়ম্বরপূর্ণভাবে। বিয়ের দিন বর ও কনের বাড়িতে যে গীত হয় তাতে বাড়ির মেয়েরা দলবদ্ধ হয়ে অংশ নেয়। সিলেটের বেশ কিছু জনপ্রিয় আঞ্চলিক বিয়ের গান রয়েছে। সেসব গানের সঙ্গে সব বাড়ির নারীরাই পরিচিত। তাই গীতের সঙ্গে প্রায় সবাই গলা মেলাতে পারে। এসব গীতের মাধ্যমে কখনো বর-কনেকে আকাশে উঠিয়ে দেন গায়করা, পরক্ষণেই হয়তো মাটিতে নামিয়ে আনেন। গীতের তালে তালে নারীরা তুলে ধরেন বরের মেজাজ, কনের চালচলন।

ধামাইলও একটি মজার আয়োজন। এর আয়োজক ও দর্শক উভয়ই হচ্ছে নারী। এখানে পুরুষের উপস্থিতি নিষিদ্ধ। মেয়েরা শাড়ি কোমরে পেঁচিয়ে পা দিয়ে মাটিতে তাল ঠুকে হাতে তালি দিয়ে বৃত্তাকারে ঘুরে ঘুরে নানা ধরনের গান গায়। এগুলো ধামাইল গান। এছাড়া বর-কনেকে নিয়ে লেখা কবিতা বা ছড়া ছাপিয়ে একটি সংকলন প্রকাশের রেওয়াজ রয়েছে। একে বলা হয় উপহার। এসব সংকলনের নাম দেয়া হয় সুখের বাসর, ঘি চমচম, মিলন বার্তা ইত্যাদি। আর লেখাগুলো হয় কৌতুকপূর্ণ ও রসে ভরপুর। রসালো আয়োজন রয়েছে রাজশাহী অঞ্চলের বিয়েতেও। তবে সেটা অবশ্য পিঠার রসে রসালো। বিয়ে ঠিক হওয়ার পর গীতের তালে তালে বর-কনেকে নিজেদের বাড়িতে মিষ্টিমুখ করানো হয়। এতে ব্যবহৃত হয় ক্ষীর ও আন্ধাষা। আন্ধাষা হচ্ছে রাজশাহীর জনপ্রিয় মিষ্টি পিঠা, যা তেলে ভেজে বানানো হয়। এ ক্ষীর আর আন্ধাষা পাড়া-প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে তৈরি করে পাঠানো হয় বর-কনের বাড়িতে। মিষ্টি খাওয়ানোর এ অনুষ্ঠানকে বলা হয় থুবড়া। থুবড়া অনুষ্ঠানে গাওয়া হয় আঞ্চলিক গীত। গীতের সঙ্গে মিষ্টিমুখে মেতে ওঠে সবাই।

 বিয়েতে লাঠিযুদ্ধের প্রচলন সিলেটে আর না থাকলেও, খুলনা অঞ্চলে দেখা যায় বর আর কনেপক্ষের মধ্যকার অন্য রকম এক যুদ্ধ। এটি হচ্ছে বাকযুদ্ধ। তাও আবার বাংলা ভাষায় নয়, পুরোপুরি ইংরেজিতে। খুলনায় বিয়ের নিজস্বতা হচ্ছে এই ইংরেজি তর্কযুদ্ধ। বাড়ির গেটে বরপক্ষকে আটকে কনেপক্ষের লোকজন ইংরেজিতে কথোপকথন শুরু করে। তার জবাবে বরপক্ষকেও কথা বলতে হয় ইংরেজিতে। এ কথপোকথনে শেষ পর্যন্ত যে পক্ষ আর তর্ক চালিয়ে যেতে পারে না, তারা পরাজিত হয়। একপক্ষ অন্য পক্ষকে লজ্জা দেওয়ার জন্যই এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়।

চট্টগ্রামের বিয়েও বেশ বিচিত্র ও বর্ণাঢ্য। বিয়ের প্রাথমিক কার্যকলাপ অন্যান্য অঞ্চলের মতোই সম্পন্ন হয়। তবে বিয়ের আগে আয়োজন করা হয় ‘বউ জোড়নি’ নামের একটি অনুষ্ঠান। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে বর ও কনের মধ্যে আলাপ-সালাপ করিয়ে দেয়া। এ জন্য বউ জোড়নি অনুষ্ঠানে কনেকে সাজিয়ে বরের সামনে উপস্থিত করা হয়। চট্টগ্রামের আরেকটি বিচিত্র আয়োজন হচ্ছে ‘ঘরজামাই বিয়া’। চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিয়ের পর বরের কনের বাড়িতে থেকে যাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। এ বিয়েকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় ঘরজামাই বিয়া।

তথ্য সংগ্রহ
গৌরাঙ্গ নন্দী, খুলনা; আনু মোস্তফা, রাজশাহী; আবদুর রহমান, সিলেট;
রফিকুল ইসলাম, বরিশাল; রাজীব নন্দী, চট্টগ্রাম।

বিয়েঃ হার্টের কার্যকর ওষুধ !

বিয়েতে কি লাভ? এমন প্রশ্নের জবাবে বিবাহিতরা বলেন, করেই দেখ না। তারপরও যারা চিন্তিত বিয়ে করা নিয়ে তাদের জন্যই সুখবর। গবেষকরা বলছেন, হার্টের শক্তিশালী ওষুধ বিয়ে। সমপ্রতি দ্য জার্র্নাল অব হেলথ অ্যান্ড সোশ্যাল বিহেভিয়ার-এ প্রকাশিত হয়েছে এক গবেষণা প্রতিবেদন। এতে বলা হয়েছে, হার্টের বাইপাস সার্জারির পর তিন মাস পর্যন্ত বিবাহিতদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা অবিবাহিতদের চেয়ে তিনগুণ বেশি। তাছাড়া এই তিন মাস আক্রান্ত না হওয়ার পাশাপাশি সার্জারির পর পাঁচ বছর পর্যন্ত বিবাহিতদের হার্টের সুরক্ষামূলক প্রভাব কার্যকর থাকে। গবেষণাটির মূল গবেষক ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানী এলেন ইডলার বলেন, সার্জারি পরবর্তী সঙ্কটজনক সময়ে বিবাহিতদের সারভাইভ করার অনুপাত একটা নাটকীয় ব্যাপার। এলেন আরও বলেন, বিয়েটা এক্ষেত্রে একটি সফল অনুঘটক। রোগী পুরুষ হোক বা মহিলা এতে কোন ভেদাভেদ নেই। নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই কার্যকারিতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। সর্বোপরি অবিবাহিতদের মৃত্যুর অনুপাত বিবাহিতদের চেয়ে দ্বিগুণ। গবেষণায় স্বাস্থ্য সঙ্কটের সময় স্বামী-স্ত্রী’র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকার কথা তুলে ধরা হয়।

এলেন বলেন, এক্ষেত্রে স্ত্রী’র মতো স্বামীও ভাল গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকে। এতে উল্লেখ করা হয়, বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া দীর্ঘজীবন পাওয়ার উপায় হিসেবে স্বীকৃত ১৮৫৮ সাল থেকে। ওই সময় উইলিয়াম ফার প্রমাণ করেছিলেন, ফ্রান্সে কম বয়সে মারা যাওয়ার প্রবণতা রোধ করছিল বিয়ে। গবেষণাটিতে বলা হয়- বিধবা, চিরকুমার ও ডিভোর্সিদের মৃত্যু ঝুঁকি বেশি। এলেন বলেন, আমরা ৫শ’ সার্জারি ও ইমারজেন্সি রোগীর উপর গবেষণা করে এটি তৈরি করেছি। কেন বিয়ে সঙ্কটময় মুহূর্তের ঝুঁকি কমিয়ে আনে তাও বলা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে। এক্ষেত্রে উল্লেখ করা হয়, বিবাহিতরা সার্জারিতে অনেক বেশি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে যায়। যা অবিবাহিতরা পারে না। ব্যথা সহ্য করা, আরাম ছেড়ে কষ্ট তুলে নেয়া ও সার্জারি সম্পর্কে দুশ্চিন্তার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে- বিবাহিতরাই ইতিবাচক জবাব দেয়। এতে বলা হয়, অবিবাহিতরা সার্জারির পর ৫ বছরের মধ্যে ৭০ ভাগ পর্যন্ত মারা যায়।

যেটা বিবাহিতদের ক্ষেত্রে অনেক কম। এতে বিবাহিত জুটিদের মধ্যে ধূমপান কম হওয়ার কথাও বলা হয়। যেটা একটা উপকারী দিক। সব শেষে পরামর্শ দেয়া হয় বিষয়টি যখন হার্ট সংক্রান্ত, বিয়েই হবে শক্তিশালী ওষুধ। এখন সিদ্ধান্ত আপনার হাতে বিয়ে করবেন নাকি তাড়াতাড়ি মরবেন?

বিবাহ ও পারিবারিক জীবনে দাম্পত্য সমস্যার কারণ ও ধরণ

বিবাহ হলো একটা জটিল বাস্তবতা।তাই দাম্পত্য জীবন একেবারে সম্পূর্ন সমস্যা ও সংকটমুক্ত নয়।দাম্পত্য জীবনের চলমান বাস্তবতা চোরের মত যে কোন সময় ইচ্ছা অনিচ্ছা সত্ত্বেও যে কোন সমস্যা প্রবেশ করতে পারে।সমাজবিজ্ঞানীদের মতে দাম্পত্য সমস্যা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার।বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন রুপে এর আবির্ভাব ঘটে।দাম্পত্য সমস্যা মূলত সৃষ্টি হয় দুজনের প্রয়োজনের চাহিদা থেকে।অর্থাৎ একজনের ও প্রয়োজনের চাহিদার সাথে অন্যজনের প্রয়োজনের চাহিদার মধ্যে সংঘর্ষ।

এই লেখায় মূলত দাম্পত্য সমস্যার কারণ ও ধরণ গুলো উল্লেখ করা হলোঃ

কারণ গুলো হলো বাহক অর্থাৎ যার জন্য সমস্যাগুলো দাম্পত্য জীবনে আসে,আর ধরণ গুলো এর হাবভাব অর্থাৎ এর রকম ও গুরুত্ব হিসেবে এর প্রভাব।

ক) সমস্যার কারণঃ এটাকে আমরা সমস্যার agent বলতে পারি।অর্থাৎ যার বা যাদের দ্বারা এই সমস্যার সৃষ্টি বা কারণ। দাম্পত্য সমস্যার পিছনে ৩ রকমের agent রয়েছে। তাহলো- ১) ব্যক্তি নিজে  ২।বিবাহের মূল উপাদানে এবং ৩। বাইরের বা পারিপার্শ্বিক কারণ।

১) ব্যক্তি নিজে কারণঃ বিবাহ একজন পুরুষ এবং একজন নারীর দাম্পত্য বন্ধন। স্বামী স্ত্রী উভয়ে এক হলেও তারা নিজস্ব বৈশিষ্ঠে ও স্বতন্ত্র জীবনবোধ নিয়ে সমৃদ্ধ।এখানে ব্যক্তি হিসেবে স্বামী স্ত্রী নিজেরাই দাম্পত্য সমস্যার কারণ হতে পারে।

যেমন-স্বামী স্ত্রীর শারীরিক কারণঃ
শারীরিক দীর্ঘকালীন রোগ ব্যাধি,অসুস্থ্যতা, শারীরিক দূর্বলতা, শারীরিক অক্ষমতা, ছোঁয়াছে রোগ, মানসিক বিকারগ্রস্থতা, ট্রমাটীক, সাইকিক, নিয়োরটিক, সিজোফ্রেনিক ,এলকোহলিক, মানসিক ভারসাম্যহীনতা ইত্যাদি।

ব্যক্তিত্বঃ অন্তর্মূখী
যেমনঃ ঘরকোনা, চাপা স্বভাব, হীনমন্য, সন্দেহবাটিক, সংকীর্ণচেতা, নিঃসঙ্গ ও নিয়ন্ত্রণহীন আবেগ। আবার অন্যদিকে বহির্মূখী যেমন- অতিরিক্ত হৈহুল্লুর স্বভাব, সময় জ্ঞানের অভাব, বাইরে বাইরে সময় কাটানো, বন্ধু সার্কেল নিয়ে আড্ডা মারা, দায়িত্বজ্ঞান হীনতা ইত্যাদি।

দুর্বল ব্যক্তিত্বঃ পরনির্ভরশীলতা সিদ্ধান্তহীনতা, দায়িত্ব নেওয়ার অক্ষমতা, অন্যের কথায় কান দেওয়া, গোপনীয়তা রক্ষা না করার দুর্বলতা, মেরুদন্ডহীন হীনমণ্য, আস্থার অভাব, খুঁতখঁতে স্বভাব, নিজস্বতা রক্ষা করার দুর্বল মানসিকতা, সন্দেহপ্রবণ ইত্যাদি।

ব্যক্তিত্বের দ্বন্দ্বঃ আত্ন-অহমিকা, ব্যক্তিমর্যাদা ক্ষুন্ন করা, দমনীয় ভাব, নমনীয়তার অভাব, কতৃত্বপরায়ণতা, অতিরিক্ত মেজাজ ও আবেগ প্রবণতা, গ্রহণশীলতার অভাব, প্রবল আত্ন-মর্যাদা বোধ, স্বার্থপরতা, পেশী শক্তি প্রয়োগ প্রবণতা, অস্বচ্ছলতা, গোয়াতুর্মি ভাব, অনাস্থা আপোষহীন মানসিকতা, জেদ, জবাবদিহিতার ভাব, দোষ খোঁজার মানসিকতা ইত্যাদি।

২।বিবাহের মূল উপাদানঃ দুজন নর-নারীর পারস্পারিক সন্মতির বিনিময়ই বিবাহ।সন্মতির মধ্যে যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে সেটাই বিবাহের মূল উপাদান।আর দাম্পত্য জীবনে বিবাহ প্রতিশ্রুতি এই উপাদানের অনুপস্থিতি এবং এর অভাবই দাম্পত্য সমস্যার কারণ।

যেমন- ভালবাসার অভাব, বিশ্বাস ও বিশ্বস্ততার অভাব, যৌনাচার,বহুগামিতা, দৈহিক যৌন সম্পর্কে অক্ষমতা, পুরুষত্বহীনতা, সমকামিতা, যৌনবিকৃতি, পাশবিকতা, যৌন মিলনের অনিহা এবং এড়িয়ে চলা, সন্তান দানে অক্ষমতা, দায়িত্বজ্ঞানহীন ভবঘুরে, ভুল সঙ্গী নির্বাচন।

৩।পারিপার্শ্বিক কারণঃ এখানে বাইরের কোন শক্তি বা তৃতীয় কোন শক্তি বা পক্ষ পারিপার্শ্বিক কোন এজেন্ট দাম্পত্য সমস্যার কারণ হয়ে আসে।এর মধ্যে পিতা, মাতা, ভাই বোন, শশুর শাশুড়ি, দেবর ননদ, ননাশ, কোন মিথ্যা গুজব, অন্যের পক্ষপাতিত্য মনোভাব, অন্যের অতিরিক্ত আবেগ সোহাগ, ঈর্ষা প্রতিহিংসা, মদ-নেশা। অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতা, বেকারত্ব চাকুরী পেশা, অসৎ ব্যবসা, মোবাইল, ফেসবুক, বন্ধুত্বের সম্পর্ক, অসততা, অতীত টেনে আনা রকমারি, বশ করা চাকুরীর তাগিদে দূরে অবস্থান।

খ) সমস্যার ধরণঃ

এই দাম্পত্য সমস্যার যে কারণগুলো রয়েছে এইগুলোর আবার গুরুত্বের মাপকাঠিতে তিন রকম এর পর্যায় বা ধরণ রয়েছে।

এই গুলো হলো –
ক।মৌলিক সমস্যা, ২।অ-মৌলিক সমস্যা ও ৩।অযৌক্তিক বা বিরক্তিকর সমস্যা।

১।মৌলিক সমস্যাঃ বিবাহের যে মূল ভিত্তি এবং দাম্পত্য সম্পর্কে (Basic Problem) যে মূলশক্তি এবং নীতি তার মধ্যে যে দুর্বলতা এবং অভাবই হলো এই মৌলিক সমস্যা।আর যখন এই মূলভিত্তি এবং শক্তি দুর্বলতা প্রকটভাবে দাম্পত্য সম্পর্কে সক্রিয় হয়ে ওঠে তখন দাম্পত্য জীবনটাকে ভয়ানক অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিতে পারে।তখন সেটা দাম্পত্য জীবন টিকিয়ে রাখার জন্য বড় হুমকিস্বরুপ হয়ে দাঁড়ায়।বিবাহের মূল হলো পারস্পারিক ভালোবাসা, বিশ্বস্ততা, একতা ও সম্পূর্ণ আত্ন-দান।পরস্পরের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং মর্যাদাদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকা পারস্পারিক দাম্পতিক দায়িত্বশীলতায় স্বচ্ছলতা এবং সর্বোচ্চ নিশ্চয়তা দান।

এক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রীর পারস্পারিক ভালোবাসার অভাব,অবিশ্বস্ততা, পর-পুরুষ পর নারীতে আসক্তি,সম্পর্কে বহুগামিতা,ব্যভিচার,শারিরিক দুর্বলতা অক্ষমতা,শারীরিক যৌন সম্পর্ক গড়তে ব্যর্থতা এবং অনীহা, যৌন বিকৃতি এবং সমকামিতা, একেবারেই ভুল সঙ্গী নির্বাচন, মানসিক বিকার গ্রস্থতা, ব্যক্তিত্বে দুর্বলতা, পরনির্ভরশীলতা, সন্দেহবাতিকতা এবং দায়িত্ব কর্তব্যে উদাসীনতা এবং অবহেলা, প্রতারণা, অসততা, নেশাসক্তি।

২।অ-মৌলিক সমস্যাঃ এটা মূলে কোন সমস্যা নয় যা দাম্পত্য সম্পর্ক নষ্ট করে দেওয়া বা শেষ করে দিতে পারে তবে এটা প্রতিদিনের সম্পর্কের মধ্যে অশান্তি অস্থিরতা এবং উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে যায়।

যেমন-মদ-নেশা, শারীরিক মানসিক নির্যাতন, সবকিছুতে সামান্য কিছুতে উত্তেজনা-রাগারাগি, অধৈর্য ও তর্কাতর্কি, দুর্বল ব্যক্তিত্ব, গুজবে বিশ্বাস করা, সময় সমর্থন না দেওয়া, টাকা পয়সা বেতনভাতার অস্বচ্ছতা, পেশাগত গোপনীয়তা, মিথহ্যাচার, তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ ও বাড়াবাড়ি, অভাব-অর্থ সংকট ও বেকারত্ব, যৌন সম্পর্কে স্বার্থপরতা এবং অবিবেক হওয়া,স্বামী বিদেশে থেকে স্ত্রী সন্তান্দের জন্য টাকা না পাঠানো, স্বামী স্ত্রীর কাজ ও মর্যাদার লড়াই, ব্যক্তিত্বের সংঘাত দ্বন্দ্ব, অসামাজিক কার্যকলাপ, অর্থনৈতিক জীবন ও ব্যবসা।

৩।বিরক্তিকর সমস্যাঃ

এই সমস্যা সচরাচর দাম্পত্য জীবনে সম্পর্কে এবং পরিবারে একটু না একটু লেগেই থাকে বা স্বামী স্ত্রীর উভয়ের অসচেতনতার জন্য বা ইচ্ছাকৃত হয়ে থাকে।এইগুলি হলো বিরক্তিকর সমস্যা যা সয়ে যায়, আবার সময় সময় মাথা গরম করে আবার অবান্তর জ্বালান্তর সৃষ্টি করে।

যেমন- ছোট ছোট বিষয়ে খুঁত ধরা, পরস্পরকে appreciate না করা, সময়মত কিছু না করা, সময় না দেওয়া, পক্ষাবলম্বন করা, যার যার বাবা মার পক্ষে কথা বলা, ঠিক সময়ে ঘরে না ফেরা, একে অন্যের সমন্ধে এবং তাদের পরিবার নিয়ে খোঁচা মেরে কথা বলা, সময়মত বাজার না করা, মোবাইলে লুকিয়ে বা এড়িয়ে কথা বলা, দাম্পত্য যৌন সম্পর্কে পরস্পরকে না বোঝা, মিথ্যা কথা বলা, কাজের সঠিক মূল্যায়ন না করা, পরস্পরের কাজের খোঁজ খবর না রাখা, অসুস্থতায় খেয়াল না করা, পরস্পরের যত্নে খেয়ালে ঘাটতি, সংসারের প্রয়োজনে বেখেয়ালীপনা, নেশায় বদ অভ্যাস, জেদ,কথা ও আচরনে রুক্ষতা,পরস্পর কথা বন্ধ করে দেওয়া, রান্না-বান্নার ব্যাপারে বিরুপ মন্তব্য করা, পরস্পর চাহিদা পূরনে খেয়ালীপনা এবং অনীহা,গুজবে কান দিয়ে ভুল বুঝা,অতীত টেনে আনা, স্বামী স্ত্রির কথা অন্যকে বলে দেয়া, কোন ঘটানা লুকানোর চেষ্টা,সন্তান না হওয়ার ব্যাপারে পরস্পরকে দোষারোপ করা, প্রয়োজনে ডাক্তারের কাছে না যাওয়া, বৌ শাশুড়ি ও শুশুরের মধ্যে আন্তরিকভাবে গ্রহন না করার জের, অহেতুক সন্দেহ, কোন কিছু চাওয়া পাওয়ার অধৈর্য হওয়া,অতিরিক্ত পীড়াপীড়ি, অন্যেরটা দেখে তুলনা করা, সংসার স্রোতে নতুনত্বের অভাব, বিনোদনের অভাব, সংসারে অভাব, গায়ে হাত তোলা, পারিবারিক কড়াকড়ি নিয়ম, অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রন করা, অবহেলার কারণে এই সব বিরক্তিকর সমস্যাগুলি বড় আকার ধারণ করতে পারে।

আবার অন্যদিকে উভয়ের সচেতনতা, প্রয়োজনীয় আন্তরিক পদক্ষেপ এবং পারস্পরিক ক্ষমা,সহনশীলতার মধ্য দিয়ে অনেক মৌলিক গুরুতর সমস্যারও শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ উন্মুক্ত করতে পারে।

ডঃ ফাদার মিন্টু এল, পালমা