বিয়ে করুন যথা সময়ে, এর স্বাস্থ্যগত সুফল অনেক!

বিয়ের কথাটা শুনলেই কেমন যেন লাগে। চিন্তার বিষয়, বয়স হয়েছে তো! সে যাই হোক। বিয়ে করুন উপযুক্ত সময়ে। কারণ বিয়ে করার স্বাস্থ্যগত সুফল অনেক! কি ধরণের সুফল থাকতে পারে বিয়ে করার পর?

কেউ যদি মনে করে থাকেন বিয়ে করার কারণে আপনার মৃত্যুর দিন তাড়াতাড়ি ঘনিয়ে আসবে তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন। কারণ ২০১৩ এর এক রিসার্চে দেখা গেছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জন্ম গ্রহণকারীদের মধ্যে যারা অবিবাহিত তারা বিবাহিত অথবা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের মধ্যে যারা আছে তাদের তুলনায় তাড়াতাড়ি মারা যায়। এর কারণ হিসেবে দেখা গেছে জীবনসঙ্গী মানুষকে আবেগ অনুভূতি বাড়িয়ে দেয়, সামাজিকভাবে একত্রে রাখে, মানসিকভাবে সমর্থন দেয়, যার সব কিছুই সুস্থ স্বাভাবিক স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন।

মানসিক চাপ কম থাকে :

যদিও মাঝে মাঝে ঝগড়া লাগে তারপরও তার উপস্থিতি আপনার মনে এক ভালো লাগার অনুভূতি ছড়িয়ে দিবে। মানুষ যখন কোন মানসিক চাপের মধ্যে থাকে তখন শরীরে স্ট্রেস হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়। এই স্ট্রেস হরমোন বিবাহিতের চেয়ে অবিবাহিতদের শরীরে দ্রুত বৃদ্ধি পায়। অতিরিক্ত পরিমাণে মানসিক চাপ শরীরে সমস্যার জন্ম দেয়, বিশেষ করে হজমের সমস্যার সৃষ্টি করে। রিসার্চে জানা গেছে স্ট্রেস হরমোন বিবাহিতদের শরীরে সেরকম ভাবে ক্ষতি করতে পারে না কিন্তু অবিবাহিতদের শরীরে নানা সমস্যার বাসা তৈরি করে।

হার্ট এ্যাটাকের সম্ভাবনা হ্রাস পায়:

ভালোবাসা হৃদযন্ত্রকে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে যারা বিবাহিত অথবা কোন সম্পর্কের মাঝে আছে তাদের হার্ট-অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা নিঃসঙ্গ মানুষের চেয়ে কম। গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে যে সঙ্গীর নিবিড় সঙ্গ এবং নতুন পরিবারের নতুন সব আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু- বান্ধবের সাথে ভালো বন্ধনের কারণে হার্ট-অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস পায়। কারণ পরিবারের সাথে থাকলে মানুষ উৎফুল্ল থাকে। মনে কোন মানসিক চাপ থাকলে তা শেয়ার করতে পারে। এতে মনের উপর চাপ কম পড়ে।

বিয়ে শরীরের হাড় মজবুত করে। অবাক হচ্ছেন? আসলেও তাই। বিয়ে শরীরের হাড় শক্ত করে এবং বিভিন্ন হাড়ের রোগের ঝুঁকি কমায়। বিয়ে হাড়ের খনিজ ঘনত্ব ঠিক রেখে হাড়ের এক ধরণের রোগ “অস্টিওপরোসিস” হওয়ার ঝুঁকি কমায়। একজন ভালো জীবনসঙ্গী পত্নীর মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে হাড়কে ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে। তাই সুখী দাম্পত্য জীবন মহিলাদের হাড়ের খনিজ ঘনত্ব ঠিক রাখার জন্য জরুরী।

অস্ত্রোপচারের পর দ্রুত সুস্থ হওয়া:

কেউ যখন আপনার পাশে সারাক্ষণ থেকে আপনার পরিচর্যা করবে তখন আপনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন। কিন্তু আপনি যখন একা থাকবেন সে ক্ষেত্রে আপনার সুস্থ হতে অনেক সময় লেগে যাবে। কারণ তখন আপনার সব কাজগুলো আপনার নিজেরই করতে হবে। এছাড়াও আপনি যখন কার সান্নিধ্যে থাকবেন তখন বেঁচে থাকার একটা কারণ খুঁজে পাবেন। এক্ষেত্রে জীবন সঙ্গী আপনার বেঁচে থাকার অবলম্বন হয়ে দাঁড়ায়।

অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঝুঁকি কমে:

জীবনে কতবার আপনি আপনার জীবনসঙ্গীকে আকস্মিক দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করেছে? গবেষণায় দেখা গেছে তালাক প্রাপ্ত মহিলা এবং পুরুষেরা বিবাহিতদের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ বেশি অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়। গবেষকদের মতে বিয়ে দুটি মানুষকে পাশাপাশি রাখে এবং এসব অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণামের হাত থেকে রক্ষা করে।

বিষণ্ণতা কমায়:

একাকীত্বের কারণে অথবা অন্য সমস্যার কারণেও মানুষ বিষণ্ণতায় ভুগতে পারে। আর মানুষ যখন হতাশায় ভুগে তখন কি পরিমাণ মানসিক বিপর্যয় ঘটছে তার নিজের, তা সে বুঝতে পারে না। কারণ বিষণ্ণতার প্রথম উপসর্গ হচ্ছে আত্ম-উপলব্ধির হ্রাস পাওয়া। তাই বিষণ্ণতাকে সনাক্ত করতে এবং দূর করতে প্রয়োজন একজন সঙ্গীর। যে সব সময় আপনার সাথে থাকবে, যার সাথে আপনি সবকিছু শেয়ার করতে পারবেন।

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়:

২০১৩ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যে সকল মানুষ মরণ ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিল তাদের মধ্যে শতকরা ২০ ভাগ এর বেশি মানুষ আরোগ্য লাভ করতে সক্ষম হত যদি তারা বিবাহিত হত। এই সাফল্যের হার কেমোথেরাপির থেকেও বেশি। একটি স্বাভাবিক স্থিতিশীল সম্পর্কই প্রথম ধাপের ক্যান্সার সনাক্ত করতে পারে। আর এই বন্ধনই ক্যান্সারের সাথে লড়ে সুস্থ হওয়ার অনুপ্রেরণা যোগায়। একজন উপর্যুক্ত সঙ্গিনী তার সঙ্গীকে খারাপ এবং জীবনের জন্য ঝুঁকিকর কাজ করা থেকে বিরত রাখতে পারে। যেমনঃ মদ্যপান, মাদক সেবন ইত্যাদি।

স্মৃতিভ্রংশ প্রবণতা কমায়:

যদি জীবনে এমন সঙ্গী থাকে যার কাছে গেলে মনে শান্তি আসে তাহলে বার্ধক্য কখনো তাকে স্পর্শ করতে পারে না। গবেষণায় দেখা গেছে যারা তালাকপ্রাপ্ত হয়ে পুনরায় বিয়ে করে নি তাদের স্মৃতি শক্তি নষ্ট হওয়ার প্রবণতা প্রায় তিন গুন বেশি হয় এবং যারা মাঝ বয়সে বিধবা হওয়ার পর আর বিয়ে করেনি তাদের স্মৃতিভ্রংশ প্রবণতা ছয়গুণ বেড়ে যায়। গবেষকরা বলেন বিবাহিত এবং সারাজীবন মানসিকভাবে এবং সামাজিকভাবে পাশাপাশি থাকলে মন প্রফুল্ল থাকে এবং স্মৃতি শক্তি কম হ্রাস পায়।

বিভিন্ন অসুখ থেকে মুক্তি:

সুখী দম্পতিদের কখনো টাইপ -২ ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা, ফাইব্রোমাইলজিয়া মত অসুখ হতে দেখা যায় না। যেকোনো জিনিস নিয়ে অতিরিক্ত মানসিক চাপ শরীরে উপর খারাপ ভাবে প্রভাব ফেলে। তাই সুস্থ থাকতে হলে সুখী দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করা অতীব জরুরী।

জীবনসঙ্গী খুঁজতে বিবাহবিডি

উচ্চ শিক্ষা শেষে প্রতিষ্ঠিত হবার পরেও যদি আপনার  অথবা  পরিবারের প্রিয় সদস্যটির জন্য উপযুক্ত সঙ্গীর সন্ধান না পাওয়ায় কারনে বিয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে থাকেন তবে আপনার জন্যই অনলাইন বেইজ ম্যাট্রিমনিয়াল সার্ভিস বিবাহ বিডি ডট কম। ঘরে বসেই ফ্রী রেজিষ্ট্রেশন করে  চাহিদা অনুযায়ী পাত্র/পাত্রীদের প্রোফাইল (ছবি সহ বায়োডাটা) দেখে পাত্র/পাত্রী কিংবা অভিভাবকের সাথে সরাসরি নিজেরাই যোগাযোগ করতে সক্ষম হবেন এবং তা অতি দ্রুততম সময়ের মধ্যে ।

শর্ত : বিয়ের পর বউ চাকরি করতে পারবে না

বিয়ের জন্য পাত্রী খোঁজা হচ্ছে। আধুনিক প্রতিষ্ঠিত ছেলেটি চান ভালো মেয়ে, সুন্দর, বনেদি পরিবার ও শিক্ষিত। আর মেয়েটি যদি মেধাবী হন, তা হলে তো ষোলোকলা পূর্ণ। তবে শর্ত একটি, বিয়ের পর বাড়ির বউ চাকরি করতে পারবে না। আধুনিকতার মুখোশের আড়ালে এমন সংকীর্ণতা অনেক পাত্র ও তাঁর পরিবারের মধ্যে দেখা যায়। কর্মক্ষেত্রে নিজের যোগ্যতায় সফল মেয়েটি অনেক সময় চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন। পরিবারের কথা ভেবে অনাকাঙ্ক্ষিত অশান্তি এড়াতে এমন সিদ্ধান্ত মেয়েরা নেন। বিয়ের পর স্বামী চান না বলে চাকরি ছেড়ে দিয়ে ঘরে বসে থাকেন অনেকেই। স্বামী বা শ্বশুরবাড়িকে খুশি করলেও নিজের ভেতরে গুমরে কেঁদে মরেন তাঁরা। নারীর ক্ষমতায়ন, আধুনিকতা ও ব্যক্তিস্বাধীনতার কথা কপচানো অনেক পুরুষই বাস্তবে কর্মজীবী স্ত্রী পছন্দ করেন না।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অরিনের বিয়ের কথা চলছে। একজনের সঙ্গে বিয়ের পাকা কথা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিয়েটা হয়নি। রুচিশীল শিক্ষিত ছেলেটিকে অরিনের ভালো লেগেছিল। কিন্তু বিয়ের তারিখ চূড়ান্ত করার আগে ছেলেটি শর্ত দিয়ে বসলেন—বিয়ের আগেই অরিনকে চাকরি ছেড়ে দিতে হবে। কেননা, তাঁর বউ চাকরি করলে লোকে নাকি ভাববে, ভরণ-পোষণ দিতে পারছেন না। এমন হাস্যকর যুক্তি মেনে না নিতে পারায় বিয়েটা শেষ পর্যন্ত ভেঙে গেল। এ বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় নাকি এখন অনেক বিয়ের কথাই বেশি দূর এগোচ্ছে না। হতাশ হয়ে অরিনের মা-বাবা মনে করেন, এই সামান্য শর্ত মানলে কী এমন ক্ষতি হতো!বিয়ের পর চাকরি ও সংসার কি একসঙ্গে সামলাতে পারবে? সন্তান হলে তাকে কাজের লোকের কাছে বড় হতে হবে। সারা দিন কাজ শেষে বউ বাড়ি ফিরবে। তখন পরিবারকে সময় দিতে চাইবে না। আর চাকরি করলে বউ বশে থাকে না। নিজের স্ত্রী চাকরি করার বিপক্ষে এসব যুক্তি দিয়েছেন বেশ কয়েকজন ছেলে। তাঁদের কেউ কেউ মনে করেন, ভালো মেয়েরা চাকরি করেন না।

ছেলেদের এসব যুক্তির সঙ্গে মেয়েরা কি একমত? ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন হুমায়রা (ছদ্মনাম)। তিনি বলেন, ‘বিয়ের পর আমি চাকরি ছেড়ে দেব। আমার সন্তান একা বড় হবে, এটি চাই না। এতে আমার ব্যক্তিস্বাধীনতা থাকবে না কিংবা ব্যক্তিত্বে প্রভাব পড়বে, এমনটি মনে করি না। সুন্দরভাবে সংসার করাও একটি শিল্প।’

তা হলে এত দূর পড়াশোনা করার কোনো মূল্যই থাকবে না! বিয়ে নামের সামাজিক বন্ধন স্বপ্ন পূরণে বাধা দেবে, এটি মানতে পারেন না নৌশিন। তিনি মনে করেন, ভালো বোঝাপড়া থাকলে সংসার ও চাকরি—দুটোই সামলানো সম্ভব। এখানে স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই ছাড় দিতে হবে। পরস্পরকে সহনশীল হলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আর যে ছেলে কোনো মেয়ের স্বপ্ন ও কাজকে শ্রদ্ধা না করবে, তিনি স্বামী হিসেবে কতটা ভালো হবেন, এ নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। হুমায়রা আর নৌশিনের বাইরেও আছেন অনেকে। তাঁদের মতে, পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর সেটা নিতে হবে মেয়েটিকেই। মেয়েটি যদি সবকিছু ঠিকঠাক সামলাতে পারে তা হলে সমস্যা কিসের!

অনেক সময় মেয়ের অভিভাবকেরাও চান, এই সামান্য ছাড় দিলে কী হয়? চাকরির জন্য সংসার টিকবে না, এটি তাঁরা মেনে নিতে পারেন না। ফলে মেয়ের মতামত গুরুত্ব পায় না তাঁদের কাছে। ব্যতিক্রমও আছেন কেউ কেউ। সরকারি কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের তিন মেয়েই কর্মজীবী। বড় দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। ছোট মেয়ের বিয়ের কথা চলছে। তিনি ভাবতেও পারেন না, তাঁর মেয়েরা কখনো চাকরি ছেড়ে দেবেন। নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মা-বাবা পাশে থাকলে মেয়েরা সব পারে। আমার তিন মেয়ে চাকরি করে। এটি কত বড় গর্বের, তা বোঝানো যাবে না। পাত্রপক্ষ কিছু বলার আগেই বড় দুই মেয়ের বিয়ের সময় আমি উল্টো শর্ত দিয়েছিলাম, বিয়ের পর মেয়েকে চাকরি করতে দিতে হবে।’

অভিভাবকদের বুঝতে হবে, মেয়ে স্বাবলম্বী হলে ভবিষ্যতে যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সামলাতে পারবেন। হতেই পারে বিয়ের পর স্বামীকে কোনো কারণে সাহায্য করতে হলো। তার চেয়ে বড় কথা, দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী ঘরে বসে না থেকে কাজ করলে পরিবার থেকে দেশ—সবার জন্যই ভালো। এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে ছেলেদেরই। চাকরিজীবী স্ত্রীকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে হবে। শুধু মুখে মুখে আধুনিক না হয়ে কাজেও দেখাতে হবে।

রাতারাতি সবার মানসিকতার পরিবর্তন হবে, এমনটা আশা করা ঠিক নয়। সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের পাশাপাশি সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তনও জরুরি। নারীর ক্ষমতায়ন জোরদার করতে হলে রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে। মনে করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। তাঁর সঙ্গে একমত বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। তিনি জানান, ছেলেদের এই মনোভাব নারীর জন্য ইতিবাচক নয়; বরং বিবাহিত জীবনেও অনেকখানি ঝুঁকি রয়ে যায়।বন্ধুত্ব থেকে বিয়ে হলেও অনেক সময় মেয়েদের এসব সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতাবোধ অন্যতম একটি কারণ। বিয়ের পর সন্তানের মা হওয়ার পর বাড়িতে কোনো লোক না থাকলে, অফিসে শিশু দিবাযত্নকেন্দ্র না থাকলে তখন সাধারণভাবে মাকেই চাকরি ছাড়ার কথা বলে সবাই।ফলে এ ধরনের পরিস্থিতি যেন তৈরি না হয়, সেই পরিবেশ বাড়ির সদস্যদের বা প্রতিষ্ঠানকে দিতে হবে।

-তৌহিদা শিরোপা

ছোট নীড়েই আনন্দ

বাড়িটা ছোট।  ঘরগুলোও তেমন খোলামেলা নয়। দুটো শোবার ঘর, খাওয়ার ঘর, বসার ঘর, রান্নাঘর আর এক চিলতে বারান্দা।নতুন দম্পতিদের সংসার শুরু হয় সাধারণত এ রকম বাড়ি বা ফ্ল্যাট দিয়েই। ঘর সাজানোর বাজেটও সাধারণত সীমিত হয়। পছন্দ হলেই কিছু কিনে ফেলা যায় না। সঞ্চয় করে প্রয়োজনীয় আসবাবগুলো কেনা হয় একটু একটু করে। তবে ভালোবাসা আর রুচির স্পর্শে এই ছোট্ট নীড়েই গুছিয়ে তুলতে পারেন আপনার সংসার। বিয়ের মৌসুম শেষ হলো মাত্র। এবার সংসার শুরু করার পালা। অনেকেই বিয়ের পর স্বতন্ত্রভাবে সংসার করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। উল্টোটাও হয়। যেটাই হোক নতুন বাসস্থানটি সাজানো নিয়ে ভালো লাগা থাকে দুজনের মধ্যেই। মাত্র সংসার শুরু করেছেন রাহানুমা হারুন। পুরোপুরি এখনো বাড়ি গুছিয়ে তুলতে পারেননি। সকালে স্বামী-স্ত্রী দুজনই ব্যস্ত থাকেন। এ কারণে সন্ধ্যার পরই কেনাকাটা শুরু হয়। ‘কেনাকাটার তালিকায় প্রথমেই আছে খাট, আয়না, খাওয়ার টেবিল, সোফা। এরপর কিনব ফ্রিজ। উপহার হিসেবে অনেক বাসনকোসন পেয়েছি। এ কারণে প্রয়োজন ছাড়া এখন এগুলো আর কিনব না। তবে সবকিছুর শুরুতে প্রথমেই দুজনের পরিকল্পনা করে নেওয়াটা জরুরি’, বলেন রাহানুমা হারুন।

খোলামেলা পরিবেশ:
ছোট ঘর, শুনলেই মন খারাপ হয়ে যায়। ইচ্ছে করে চারপাশের দেয়ালটাকে আরেকটু সরিয়ে দিতে। দেয়াল না পিছিয়েও ঘরকে বড় দেখানো যাবে ইচ্ছে করলেই। স্থপতি মো. শওকত রাব্বি চৌধুরী জানালেন সে রকমই কিছু পদ্ধতির কথা। ছোট ঘরকে বড় দেখানোর জন্য খাটো ও হালকা আসবাব ব্যবহার করতে পারেন।

প্রয়োজনের অতিরিক্ত আসবাব না কেনাই ভালো। বাড়ির মধ্যে কোনো কোনা অথবা কলাম থাকলে সে ক্ষেত্রে কিছুটা জায়গা নষ্ট হয়। ইতিবাচকভাবে দেখলে এতে কিছুটা জায়গাও বের হয়। এই জায়গাটুকুতে শেলফ বানিয়ে তাতে বিভিন্ন জিনিস রাখার পরামর্শ দিলেন মো. শওকত রাব্বি চৌধুরী। নিচু উচ্চতার চেয়ারের জন্য সর্বনিম্ন তিন ফুটের চেয়ার বানাতে বা কিনতে পারেন। উচ্চতা এর কম হলে বসার সময় স্বস্তি নাও পেতে পারেন।

নিচু উচ্চতার খাটে আপনার শোবার ঘরকে বড় দেখাবে। এ ছাড়া মেঝেতে ম্যাট্রেস পেতে শোবার ব্যবস্থাও করতে পারেন। বিছানার দুপাশে টেবিল ল্যাম্পও ভালো লাগবে।ছোট ঘরে হলুদ, কমলা, উজ্জ্বল নীল রংগুলো ব্যবহার করতে পারেন। এই রঙগুলো আলো প্রতিফলিত

করে, ফলে ঘর বড় দেখায়। চাইলে রঙের বদলে ওয়াল ম্যাটও ব্যবহার করতে পারেন। তবে অবশ্যই এ বিষয়ে যাঁরা পারদর্শী তাঁদের সাহায্য নিতে হবে। কারণ ওয়াল ম্যাট দেয়ালে লাগানোর সময় বাতাস ঢুকে গেলে পরবর্তী সময়ে সমস্যা তৈরি হবে। এ ছাড়া ভালো মানের প্লাস্টিক পেইন্ট ব্যবহারে ঘরে চকচকে ভাব আসে। এটাতেও আপনার ঘর দেখতে বড় লাগবে বলে জানান মো. শওকত রাব্বি চৌধুরী ।

নান্দনিক বাসন:
সারা দিন ব্যস্ততার মধ্যে একসঙ্গে বসে সময় কাটানো হয় না অনেকেরই। সকালের চা কিংবা রাতের খাওয়ার সময়টায়ই যা একটু গল্প করা হয়। এ কারণে খাবার পরিবেশনের পাত্রগুলো যদি একটু নান্দনিক নকশার হয় তাহলে তা মন ভালো রাখার মন্ত্র হিসেবে কাজ করতে পারে।ক্লে ইমেজের স্বত্বাধিকারী রেহানা আক্তার জানান, ‘সাধারণত নতুন দম্পতিরা একসঙ্গে সবকিছু কেনেন না। একটু একটু করে প্রয়োজনমতো বাসন কিনে নিয়ে যান। ক্লে ইমেজে দম্পতিদের জন্য ডিনার সেট, নাশতা খাওয়ার সেট, চা খাওয়ার সেট পাওয়া যায়। বিশেষ কিছু রং ব্যবহার করি আমরা নতুন সংসারকে রঙিন করে তোলার জন্য। তাঁরা চাইলে বাসনের একদিকে আমরা তাঁদের নামও লিখে দিই।’

খাবারের বাসনগুলো দৃষ্টিনন্দন হলে পরবর্তী সময়ে এগুলো অন্য কাজেও ব্যবহার করা যায়। যেমন প্লেট পুরোনো হয়ে গেলে টবের নিচে রাখতে পারেন। ঠিক একইভাবে কাপের হাতল ভেঙে গেলে সেটিকে টব কিংবা রান্নাঘরে চামচ রাখার পাত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।

কম বাজেটেই ষোলো আনা:
নান্দনিকতা ফুটিয়ে তুলতে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা লাগবে, এমনটি নয়। একটু পরিকল্পনা করে নিলেই অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। নতুন দম্পতিদের দেশীয় জিনিসের প্রতি কিছুটা আকর্ষণ থাকে। কাঠের আসবাবের থেকে এগুলোর দামও কিছুটা কম হয়ে থাকে।কাঠের আসবাবের বদলে বিভিন্ন বোর্ডের তৈরি আসবাব ব্যবহার করা যায়।এ ক্ষেত্রে বেতের আসবাব, রট আয়রনের আসবাব, হোগলা পাতার তৈরি আসবাবও রুচিশীল পরিবেশ তৈরি করবে।

ডেকর ইডের আসবাব ডিজাইনার তৌহিদা হক জানান, ‘মানুষের জীবনযাত্রা ও রুচির পরিবর্তনে বদলে গেছে বাড়ি সাজানোর ধরনও। বাড়ি সাজানোর সময় শুধু প্রয়োজন ছাড়াও একটু সৌন্দর্যের ছোঁয়া সবাই চায়। অনুষঙ্গগুলো রুচিকর হলে তা বাড়ির পরিবেশে নান্দনিকতা ফুটিয়ে তুলবে।’হোগলা পাতার তৈরি আসবাবগুলো একসঙ্গে দুটি কাজের জন্য ব্যবহার করতে পারবেন। দম্পতিদের জন্য ডেকোর ইডেতে আছে মিনি প্রিক্স সোফাসেট। এতে আছে একটি দুই সিট, একটি এক সিটের সোফা এবং একটি সেন্টার টেবিল। এর নিচের অংশে ড্রয়ার

 

বানিয়ে নিতে পারেন। এ ছাড়া মোড়া, বেবি চেয়ার, অটোমান চেয়ারগুলো নতুন সংসারের জন্য সাশ্রয়ী ও উপযুক্ত বলে জানান তৌহিদা হক।

দেশীয় উপকরণে তৈরি টেবিল ল্যাম্প, ওয়াল হ্যাঙ্গিং, ঝুড়ি, শো-পিস দামেও কম হবে, দেখতেও ভালো লাগবে। এগুলোর ফাঁকফোকর দিয়ে ছোট গাছ বা মানিপ্ল্যান্ট রাখার পরামর্শ দিলেন বিশেষজ্ঞরা। দেয়ালে পেইন্টিং ঝোলাতে পারেন। তবে সেটি আপনার ঘরের অন্যান্য সামগ্রীর সঙ্গে যাচ্ছে কি না, সেটি খেয়াল করবেন। ঘরের বিভিন্ন কোনায় রাখা টেবিল ল্যাম্পের আলো মায়াবী ও রোমান্টিক পরিবেশ তৈরি করে। দেয়ালে আয়নাও লাগাতে পারেন। আয়নার প্রতিফলনে ঘরকে কিছুটা বড় লাগে। প্রয়োজনীয় চাবি রাখার জন্য দেয়ালেই ব্যবস্থা রাখুন।

স্নানঘরের নান্দনিকতা:
স্নানঘর ছোট হোক কিংবা বড়, তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। যদি জায়গা থাকে তাহলে ছোট গাছ রাখুন। প্রাণবন্ত ভাব আসবে। ছোট মোমদানি কিংবা দু-একটি শো-পিসও রাখতে পারেন। বেসিনের বা তাকের ওপর জায়গা না হলে দেয়ালেও কোনো কিছু ঝোলাতে পারেন। এতে করে বৈচিত্র্য তৈরি হবে। শাওয়ার কার্টন ব্যবহার করলে সব জায়গায় পানি ছড়িয়ে যাবে না। মেঝেতে ম্যাট্রেস রাখতে পারলে ভালো, ভেজা জায়গায় পা পিছলে পড়ার ভয় থাকবে না। মেঝে সব সময় শুকনা রাখার চেষ্টা করুন।বাথরুমের সাবান, হ্যান্ডওয়াশ ও অন্যান্য প্রসাধনী রাখার পাত্রের সেট পাওয়া যায়। চাইলে দেয়ালের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে কিনে নিতে পারেন। ছোট-বড় কয়েক আকৃতির তোয়ালে রাখুন। কোনোটি হাত মোছার জন্য, কোনোটি গোসলের পর ব্যবহারের জন্য।

বাড়তি একটু জায়গা:
বাড়িতে প্রয়োজনের তুলনায় একটি ঘর বেশি পেলে মনের মতো করে সাজান। সেটাকে টিভি দেখার ঘর কিংবা পড়ার ঘর হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। নিচু বিছানা, উজ্জ্বল নকশার শতরঞ্জি, নিচু চেয়ার, অনেক কুশন দিয়ে বৈচিত্র্য তৈরি করতে পারেন। তবে একটি ঘরের সব আসবাব নিচু হলে দেখতে ভালো লাগবে না। উঁচু আসবাবগুলো পেছনে বা দেয়ালের সঙ্গে লাগিয়ে রাখুন। নিচু আসবাবগুলো সামনের দিকে রাখুন। সারা দিন পরে যেখানে নিজেদের মতো করে কাটানো যাবে একান্ত কিছু মুহূর্ত। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডার জন্যও কিন্তু এমন একটি ঘরের কথাই প্রথমে মনে আসবে।

উজ্জ্বলতা বাড়াতে:
নতুন দম্পতির বাড়িতে রঙের ছটা না থাকলে দেখতে কিছুটা বেমানান লাগে। বাড়িতে উজ্জ্বলতা আনার কিছু জন্য কিছু পদ্ধতির কথা জানালেন এথনিকার স্বত্বাধিকারী নাসিরা মানসুর। উজ্জ্বল রঙের শতরঞ্জি, পর্দা, কুশন ব্যবহারে ঘরে বৈচিত্র্য আসবে। প্রিন্ট করা সুতির পর্দা ব্যবহার করলে ঘরে আলো-বাতাস চলাচল করতে পারবে। একরঙা পর্দা ব্যবহার করলে প্রিন্ট করা কুশন কভার পছন্দ করুন। উল্টোটাও করতে পারেন। শোবার ঘরের কোনায় সম্ভব হলে ছোট একটা বসার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। না হলে শতরঞ্জির ওপরেও অনেক রঙের কুশন রাখা যায়। এতে করে বাড়তি বসার জায়গাও হবে, কিছুটা ভিন্নতাও আসবে।

– রয়া মুনতাসীর