যৌনতা, বিয়ে ও সামাজিকতা

যৌনতা মানব জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। স্বীকার করুন অথবা নাই করুন জীবনে যৌনতার রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এটি মানুষসহ সকল জীবের অন্যতম চাহিদাগুলোরও একটি। একজন নারী ও পুরুষ বারো থেকে চৌদ্দ বছর বয়সপ্রাপ্ত হলেই তার যৌন চাহিদা দেখা দিতে থাকে। ফলে সে মনে মনে এই চাহিদা মেটানোর উপায় নিয়ে ভাবতে থাকে। এই চাহিদা কোন প্রক্রিয়ায় মেটানো সম্ভব? সকল সমাজ, সকল ধর্ম একটিই বৈধ ও প্রচলিত পন্থা এ ক্ষেত্রে আবিষ্কার করেছে। সেটি হচ্ছে ‘বিয়ে’। বিয়ের মাধ্যমে মানুষ তার যৌন চাহিদা পূরণ করে। সঠিক সময়ে বিয়ে করা যৌন সংক্রান্ত  কেলেঙ্কারী কিংবা দুর্ঘটনাসমূহ রোধের একটি অন্যতম উপায়। কাজেই আমাদের সমাজে বিয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বিভিন্ন দিক দিয়ে।

সভ্যতার আদি থেকেই যৌন চাহিদা মেটানোর জন্য সমাজ পতিতালয় তৈরি করেছে। সেখানে নিয়মিত যাতায়াত করেন কিছু কুরুচিপূর্ণ মানুষ। তারা  সেভাবেই শারীরিক চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু যৌনতা কি শুধু শারীরিক বিষয়? যৌনতা কি শুধু যে কোন নারী বা পুরুষের সাথে একটি নির্দিষ্ট সময় কাটিয়ে শরীর হাল্কা করা? সেটি পশুত্বের সামিল। যৌনতা মানব সৃষ্টির জন্য একটি বিশেষ কর্ম। এখানে শরীর, মন, আন্তরিকতা, পরস্পরের চাহিদা এবং এক ধরনের আত্মিক বিষয় জড়িত। এজন্যই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে গড়ে ওঠে এক গভীরতম সম্পর্ক। অথচ বিয়ের পূর্বে তাদের সাথে কোনো ধরনের পরিচয়ই হয়তো ছিল না।

যুগ ও অর্থনীতির চাহিদার কারণে আমাদের দেশ থেকে প্রচুর মানুষ বিদেশ যায়। কেউ যাচ্ছেন অর্থ উপার্জন করতে, কেউ উচ্চতর শিক্ষার জন্য। যে কারণেই  যাওয়া হোক না কেন এখানে যৌন বিষয়ে কি কোন সমাধানের কথা বলা আছে? নেই। এক বছর দুই বছর কিংবা তারচেয়েও বেশি সময় একজন পুরুষ বা একজন স্ত্রী কীভাবে নিজেদের যৌন চাহিদা মেটাবে একে অপরের অনুপস্থিতিতে? বিষয়টি বেমালুম সবাই ভুলে যান। ফলে নেমে আসে এক অশান্তি ও অবিশ্বাস। আমরা এমন ভান করি এসব ক্ষেত্রে যেন সব কিছু ঠিকঠাক আছে, স্বামী-স্ত্রী একে অপরের কাছ থেকে দূরে থাকা কোনো বিষয় নয়। বিশেষ করে যারা বিবাহিত। আর যারা বিয়ে করেনি আমরা ধরেই নিয়েছি যে, তারা একটু উল্টা-পাল্টা করবেই। এই উল্টাপাল্টা মানে এক ধরনের বিশৃংখলা। কিন্তু সবাই কেন জানি এ বিষয়টিও মেনে নিচ্ছি।

যৌনতা যাতে পশুত্বে পরিণত না হয় সেদিকে আমাদের বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে। কোনো পশু একমাত্র কুকুর ছাড়া যৌনক্রিয়া করার সময় একটু আড়াল খোঁজে, আড়ালে কাজটি সম্পাদন করে। অথচ পশ্চিমা দেশগুলোতে এবং পশ্চিমা দেশগুলোর আদলে প্রাচ্যের যেসব দেশ এগিয়ে যাচ্ছে সেসব দেশেও যৌনতা খোলামেলাভাবে প্রদর্শিত হচ্ছে, এটি কি খুব আনন্দের বিষয়? চীনেও দেখা যায় হাজার হজার লোকভর্তি ট্রেনে প্রেমিক-প্রেমিকা সবার সামনে দিবালোকে গভীর চুম্বনরত। পার্কে একটি মেয়েকে সবার সামনে কোলের ওপর বসিয়ে রেখেছে। আমি বেইজিংয়ের হোটেল রুমে বসে বসে দেখলাম রাস্তার পাশে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে ঘন্টাখানেকের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন ধরনের যৌনকাজ সম্পন্ন করল। তারপর সন্ধ্যা হয়ে এলো, পরে আর স্পস্ট দেখা গেল না। চীন এশিয়ার একটি দেশ। এটি পশ্চিমা কোনো ধনী দেশ নয়, সেখানেই এই অবস্থা আধুনিকতার নামে!  প্রকাশ্য দিবালোকে এবং সূর্য ডোবার আগে এগুলো কী হচ্ছে? আমাদের দেশের বিভিন্ন পার্কে যাবেন কম-বেশি অশ্লীল দৃশ্য চোখে পড়ে। পশ্চিমা দেশ থেকে আগত এসব কালচার কতটা আমাদের সাথে মানানসই? আমেরিকার বিভিন্ন সিটিতে ছেলেমেয়ে চলতে দেখা যায়, হাতে হাত ধরে কিংবা আরও কাছাকাছি কিন্তু সরাসরি প্রকাশ্যে যৌনতা প্রদর্শন খুব একটা চোখে পড়েনি। তবে বিষয়টি তারা সঠিক পথে পরিচালিত করছে না। আর তাই সেখানে পারিবারিক বন্ধন সাময়িক ব্যাপার, অত্যন্ত ঠুনকো। সেখানে লিভ টুগেদার প্রচলিত আর লিভ টুগেদার মানেই তো এক ধরনের বিকৃত অভ্যাস। কিছু কিছু স্টেটে প্রকাশ্যেই দেখা যায়, কোথাও হয়ত একটু রিজার্ভ। তবে কানাডাতে শপিং মলগুলোতে কিংবা রোস্তোরাঁয় প্রকাশ্যে চুম্বনের বিষয়টি প্রত্যক্ষ করেছি। কিন্তু তাদের অনুসারী দেশগুলো যেন দুই ধাপ এগিয়ে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের আগে হিলারী বলেছিলেন, তিনি নারীদের ‘গর্ভপাত’ করার আইন বহাল রাখবেন। এখানে যৌনতা ব্যাপারটি এত অবাধে চলে যে, যে কোনো সময় যে কোনো নারী গর্ভবতী হতে পারে। যেহেতু বাবার কোনো ঠিক থাকবে না কিংবা ফ্রি থাকার জন্য অসংখ্য নারী এখানে গর্ভপাত করেন। আমি দেখেছি কিছু ধর্মীয় সংগঠন এই গর্ভপাতের বিরুদ্ধে ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে  কিংবা ব্যানার টানিয়ে রেখেছে। এদের যৌন আচরণ পুরোপুরি আলাদা।

বিবাহ বিডি কল
বিবাহ বিডি কল সেন্টারঃ +৮৮ ০১৯২২১১৫৫৫৫

একটি সুখের সংসারে অবহেলিত যৌনতা মারাত্মক করুণ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। এর মূল কারণ হচ্ছে যৌনতা সম্পর্কে স্বামী কিংবা স্ত্রীর উদাসীনতা। যে সংসারে স্ত্রী তার স্বামীকে কিংবা স্বামী তার স্ত্রীর যৌনসুখ মূল্যায়ন করে না, উদাসীন থাকে সেখানেই দেখা দেয় সমস্যা। স্ত্রী সুযোগ পেলে অন্য পুরুষের এবং স্বামী সুযোগ পেলে অন্য মেয়ের সান্নিধ্য পেতে চাইবে, এটাই স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়ায় তখন। প্রথম দিকে চুপি চুপি কিছু করা হলেও পরে তা বিদ্রোহী রূপ নেয় এবং এক সময় সংসারভাঙ্গা, হত্যা ইত্যাদি পর্যন্ত গড়ায় আর সংসার যদি টিকিয়ে রাখার চেষ্টাও করা হয় তাহলে সেটি  চলে অবিশ্বাসের মধ্যে, এক ধরনের ধোঁয়াশার মধ্যে । কাজেই স্বামী স্ত্রী উভয়কেই এই বিষয়ে সজাগ ও সচেষ্ট থাকা দরকার।

যৌনতা প্রাকৃতিক বিষয়, মানুষের অত্যাবশ্যকীয় চাহিদা। এখানে শরীর ও মনের সাথে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। একটি ছাড়া অপরটি প্রকৃত সুখকর, উপভোগ্য এবং সার্থক হয় না। তাই প্রাকৃতিক নিয়মেই এটি সম্পন্ন করতে হয়। মানুষ যখন এটি অবাধে, স্বেচ্ছারিতার মনোভাব নিয়ে ভোগ করার চেষ্টা করে, বিকৃত যৌনাচারে লিপ্তা হয় প্রকৃতি তখন বিরূপ হয়। যেমন অবাধ যৌনাচার ও বহুগামিতা মানুষের জন্য মরণব্যাধি ‘এইডস’ নিয়ে এসেছে। বিশ্বের মানুষকে এক ভীতিকর অবস্থায় নিক্ষিপ্ত করেছে। এ থেকে উত্তরণের জন্য সঠিক পারিবারিক এবং বৈধ যৌনচার করার জন্য পশ্চিমা চিকিৎসকগণ তাদের দেশের মানুষদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। সুস্থ যৌনতাই এর একমাত্র সমাধান। পশ্চিমা গবেষকরা  আবিষ্কার করেছেন যে, সুস্থ যৌনচারই এইডস-এর মতো মরণব্যাধি এড়ানোর সঠিক পথ যা আমাদের সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ইদানিং সমকামিতা নামে আর এক যথেচ্ছারিতা, অবাধ ও বিকৃত যৌনাচার শুরু হয়েছে। এর ব্যাপ্তি গোটা বিশ্বে। এটি প্রকৃতিবিরোধী কাজ। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ, বিপরীত লিঙ্গের সাথে মিলন তো প্রকৃতির অবদান, প্রাকৃতিক সুখ ও তৃপ্তি সেখানে নিজেদের তৈরি নিয়ম পুরুষে-পুরুষে, নারীতে-নারীতে যৌনক্রিয়া সেটি কতবড় কুরুচির পরিচয় তা মানুষ হিসেবে আমাদের ভেবে দেখা উচিত!

যৌনতা এক তরফা বিষয় নয়। এখানে উভয়ের মতামত, ইচ্ছে, আগ্রহ এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন। একজনের ইচ্ছে, আগ্রহ বা অংশগ্রহণ এই ক্রিয়াকে সাফল্যমণ্ডিত করতে পারে না। বিষয়টি উপভোগ্যও হয় না। সঠিক যৌন তৃপ্তি ও প্রাকৃতিক চাহিদা মেটানোর জন্য দুজনকেই পালন করতে হয় সক্রিয় এবং আগ্রহী ভূমিকা। যে সংসারে  স্বামী-স্ত্রী দুজনই ব্যাপারটিতে সমভাবে আগ্রহী, সেখানে অবিশ্বাস ও হতাশা জন্ম নেওয়ার স্থান নেই। জীবন হয়ে ওঠে উপভোগ্য, আনন্দের ও সার্থক। তারা পারিবারিক, সামাজিক, ধর্মীয় যে কাজই করুক না কেন অত্যন্ত আনন্দের সাথে, তৃপ্তির সাথে এবং সার্থকভাবে তা করতে পারে। ফলে ধীরে ধীরে সাফল্যের শীর্ষে যেতে পারে। আর যে সংসারে একজন এ বিষয়ে অনাগ্রহী থাকে, উদাসীন থাকে তারা জীবন উপভোগ করতে পারে না সঠিকভাবে। মনোযোগ সহকারে কোনো কাজ করতে পারে না। জীবনকে সাফল্যের দিকে নিতে হলে স্বামী-স্ত্রীকে যৌনতা বিষয়ে সমভাবে আগ্রহী এবং সক্রিয় হতে হবে।  সুত্র ।| লেখকঃ মাছুম বিল্লাহ

বিয়ের পরে ভালোবাসা কি আগের মত সতেজ থাকে!

রোমান্সের ব্যাপারে আমরা খোলামেলা আলোচনা না করলেও, আমরা সবাই স্বীকার করি যে দাম্পত্য সুখের জন্য রোমান্সের গুরুত্ব অনেক। যারা নতুন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, বিয়ের প্রথম দিনের যে অনুভূতিটা পাচ্ছেন ঠিক প্রথম বিবাহ বার্ষিকী পর্যন্ত সেই একই রকম অনুভূতি পাওয়ার জন্য সম্পর্ককের যত্ন করতে হবে, বিষয়টা বলতে যতটা সহজ, মেনে চলা বেশ কঠিন।

বিয়ে করা মানে ভালোবাসা ফিকে হয়ে যাওয়া নয়।  বিয়ের পরেও ভালোবাসাকে সতেজ রাখাটা দম্পতি দুজনের উপরই নির্ভর করে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, বিয়ের পর কিছু সময় পার হওয়ার পর দাম্পত্য জীবনের রোমান্স কমতে থাকে।  বিশেষ করে বিয়ের পর বাবা, মা হওয়ার পর এই প্রবণতা বেশী বৃদ্ধি পেতে দেখা যায়। এরকম অবস্থা সৃষ্টিতে সঙ্গী একে অন্যকে দোষারোপ করে থাকে।

বিয়ের পরেও ভালোবাসাকে জীবিত রাখতে রোমান্স কে কি ভাবে কাজে লাগাবেন সে বিষয়ে ছোট একটা আলোচনা করা হলোঃ

বিয়ের পরের ডেটিং :  বিয়ের আগে যেভাবে একে অন্যের সাথে সময় কাটাতেন ঠিক বিয়ের পরেও চেষ্টা করবেন অন্তত মাসে একবার হলেও দুজনে বাহিরে কোথাও একান্ত সময় কাটাতে এতে করে দাম্পত্য জীবনে ভালোবাসা উচ্ছল থাকবে।

উপহার দিনঃ  সঙ্গীকে কোন কারন ছাড়াই প্রায়ই উপহার দিয়ে চমকে দিন এতে সঙ্গী অনেক খুশী থাকবে।  ফলে দুজনের মধ্যের ভালোবাসা অটুট থাকে।

সঙ্গীকে প্রশংসা করুনঃ আপনার জীবনে সঙ্গীর গুরুত্ব বোঝানোর জন্য তার প্রশংসা করুন যেমন- দিন শেষে স্ত্রীকে তার সারা দিনের কাজের জন্য প্রশংসা করতে পারেন, সাথে বলতে পারেন যে তাকে জীবন সঙ্গী হিসাবে পেয়ে আপনি অনেক গর্বিত। এরকম প্রশংসা সম্পর্কের গভীরতা বৃদ্ধি পায়।

প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময় এক সাথে কাটানঃ সারা দিনের কর্মব্যস্ততার পরে দুজন একটা নির্দিষ্ট সময় ঠিক করে রাখবেন একসাথে সময়টা কাটানোর, এই সময়টা গল্প করে বা নিজেদের পছন্দের কোন গেম খেলে কাটাতে পারেন।

ঘর সাঁজানোর জন্য দুজনে মিলে নতুন পরিকল্পনা তৈরি করুনঃ নিজেদের শোবার ঘর নতুন করে সাজানোর পরিকল্পনা করুন, পরিকল্পনা অনুসারে দুজনে মিলে কাজ করুন এতে একসাথে সময় কাটানো হবে মনও প্রফুল্য থাকবে, ভালোবাসার বৃদ্ধি হবে।

ছোট খাটো মনোমালিন্যতা কে মজার ছলে উড়িয়ে দেওয়াঃ দম্পতিদের মধ্যে যদি কোন মনোমালিন্যতা সৃষ্টি হয় তবে বিভিন্ন মজা ছলে বিষয়টাকে স্বাভাবিক করতে হবে।আরো অনেক উপায় আছে যার মাধ্যমে সহজে বিবাহিত জীবনের রোমান্স কে সারা জীবন একই রকম রাখা যায়, তবে চেষ্টাটা দুজনকে সমান ভাবে করতে হবে। একতরফা চেষ্টায় ভালোবাসা কখনো দীর্ঘস্থায়ী হয়ে টিকে থাকেনা।

দাম্পত্য সম্পর্কে ঈর্ষার প্রভাব!

সভ্যতার শুরু থেকে ঈর্ষার সূচনা।  আদিম নারী লিলিয়াৎ ও ইভের মধ্যে ছিল ঈর্ষার চোরা স্রোত।  ত্রিকোণ সম্পর্কের সেই ঈর্ষার ধারা আজো অব্যাহত আছে।  সভ্যতার বর্তমান উৎকর্ষেও মানুষের যেসব আদিম বৈশিষ্ট্য রয়ে গেছে, ঈর্ষা তারই একটি। ঈর্ষার কারণে মানুষের হিতাহিতজ্ঞান লোপ পায়। যে কারণে মানুষ ঈর্ষার যুক্তিহীন দহনে পুড়ে মরে। আবার ঈর্ষাকে অনেকে বলেন সুমহতী। ঈর্ষাই নাকি উন্নতির ইন্ধন-আরোহণ রসায়ন। তবে যে ঈর্ষা হয়ে উঠতে পারত সৃষ্টির নিয়ামক, কখনো তাই হয়ে ওঠে সর্বনাশী।

ঈর্ষা খুবই স্বাভাবিক কিন্তু জটিল এক অনুভূতি। দুজনের মধ্যে তৃতীয় ব্যক্তির আগমনে ঈর্ষার উৎপত্তি। পরের উন্নতি দেখে কাতর হওয়াই ঈর্ষা। এটা ব্যক্তিত্বের এক বিশেষ প্রকাশ। আবার পরের শ্রী দেখে ভালোলাগা বা মুগ্ধ হওয়া অনেক ক্ষেত্রে স্বাভাবিক ঘটনা। একইভাবে অন্যের সুখে সুখী হওয়া ও দুঃখে দুঃখী হওয়া হচ্ছে কারো সঙ্গে একাত্মবোধ করা। গাছের ফুল দেখলে ভালো লাগতেই পারে। কিন্তু যার গাছের ফুল এত সুন্দর তার কথা ভেবে ফুলটা খারাপ লাগাই ঈর্ষা।
নিজের যা আছে তাকে রক্ষা করার চেষ্টা থেকেই ঈর্ষার জন্ম। নিজের যা নেই, অন্যের আছে তা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকেই হিংসা, নিরাপত্তাবোধের অভাব থেকেই ঈর্ষার উৎপত্তি। সম্পর্ক ভাঙনের আশঙ্কায় অস্বাভাবিক এবং অপ্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়াও ঈর্ষা।

ঈর্ষা গঠনমূলক ও ধ্বংসাত্মক হতে পারে। ধ্বংসাত্মক ঈর্ষার উৎস অনেক ক্ষেত্রে বাবা, মা ও সন্তানের ত্রিকোণ সম্পর্কে লক্ষ করা যায়। সন্তান যখন বাবা-মাকে পুরোপুরি নিজের করে পায় না তখনই প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা দেয়। বাবা, মা ও গুরুজনদের থেকে ভালোবাসা পাওয়ার জন্য অনেকে গঠনমূলক কাজ করে অর্থাৎ ভাবে ওই কাজটা করলে ভালোবাসা পাওয়া যাবে। এটা স্বাভাবিক। কিন্তু তা ব্যাহত হলে, অন্যের ক্ষতি করাটা মনে এলে তখন তাকে ধ্বংসাত্মক ঈর্ষা বলা যায়।

ঈর্ষার উৎস ও প্রকারভেদ: কেউ বলেন ঈর্ষা জিনঘটিত, কিছু অর্জন করার জন্য মানুষের মনে ঈর্ষা আসে। কিন্তু এ নিয়ে বিজ্ঞান এখনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি। ঠিক কেমন করে কাজ করে মানুষের প্রবণতার পরম্পরা, তাও অনাবিষকৃত। ঈর্ষা ও জিনের সম্পর্ক যদি কখনো থাকেও, কোন প্রজন্মে তার প্রকাশ ঘটবে, তা আগে থেকে নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। এর প্রকাশ নির্ভর করে পরিবেশের ওপর। সত্যিকার অর্থে জিনের প্রকাশ এক প্রজন্মে হয় না। শারীরিক উপাদান ও পরিবেশের নানা উপাদানের রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে মানুষের একেকটা গুণ বা দোষের প্রকাশ ঘটে। অনেক সময় ঈর্ষা থেকে তুলনা ও অনুকরণ আসে। কিন্তু এগুলো ঠিকমতো করতে না পারলে ঈর্ষার জন্ম হয়। মূলত অভাববোধ থেকেই মানুষের মনে ঈর্ষার জন্ম হয়। এ অভাববোধ যে কোনো প্রকারের হতে পারে। এটা ঠিক পার্থিব বস্তুর অভাব নয়, সুখের অভাব। মনে মনে সুখী হওয়াটা বড় কথা। আমাদের প্রত্যেকের আমিত্বের একটা গণ্ডি বা সীমানা আছে। বাবা-মা, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান, বাড়ি-গাড়ি, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে আমাদের জগৎ। এ আমিত্বের গণ্ডি যে ব্যক্তির যত সীমিত ততই তার মধ্যে নিরাপত্তার অভাব। এ অভাববোধ আমাদের মধ্যে অসম্পূর্ণতা নিয়ে আসে, যা ঈর্ষার জন্ম দেয়।

বর্তমান সামাজিক ও অর্থনৈতিক চালচিত্রে দুটি জিনিস চোখে পড়ার মতো। প্রথমত, সাফল্যের প্রতি মানুষের একমুখী ধাববান গতি এবং দ্বিতীয়ত, মানুষে মানুষে প্রতিযোগিতামূলক বিরোধের সম্পর্ক। ধরেই নেয়া হয়, কোনো কাজে সাফল্যই একমাত্র লক্ষ্য আর সফলতা লাভে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যেতে দরকার প্রতিযোগিতার মানসিকতা। এ অবস্থায় মানুষ তার ব্যবহারে হয়ে পড়ে যান্ত্রিক, দেখা দেয় পরশ্রীকাতরতা, ঈর্ষা। ফলে নিরন্তর মানসিক অশান্তির সৃষ্টি হয় এবং মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় তাড়াতাড়ি ছন্দ হারায়। আজকের হাইটেক যত উন্নতির পথে এগোবে, মানুষ ততই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠবে। নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে ওঠার এ প্রবণতাকে সত্যিকার অর্থে ত্বরান্বিত করে ঈর্ষা।

ঈর্ষার উৎস ও প্রকারভেদ:  অর্থ, বিত্ত ও যৌনসংক্রান্ত বিষয় থেকেই যাবতীয় ঈর্ষার উৎপত্তি। এছাড়া ক্ষুধা থেকেও ঈর্ষা আসে। Hunger, Sex, Aggression are all basic instincts যেগুলো থেকেও ঈর্ষা জন্ম নেয়। ইতিহাসে দেখা যায়, নেফারতিতির বিবাহিত জীবন কিংবা গ্রিক দেবদেবীদের নিজেদের মধ্যেও এসবের অস্তিত্ব ছিল। আজকের সমাজে যে এত হানাহানি ও সংঘাত বেড়ে উঠছে তার মূলে রয়েছে সত্যিকার অর্থে ঈর্ষা।

ওথেলো সিনড্রম:  সাধারণত এ ধরনের ঈর্ষার কোনো বাস্তব ভিত্তি থাকে না। ঈর্ষান্বিত ব্যক্তি মিথ্যা বিশ্বাসে ভুগতে থাকেন যে তার ভালোবাসার মানুষ তাকে ঠকাচ্ছে, সে অন্য কোনো সম্পর্কে জড়িত। মাদকাসক্তি অথবা যৌন অক্ষমতার ফলে এ মানসিকতা প্রকাশ পায়। সাইকিয়াট্রিস্টদের মতে, এ ধরনের জেলাসি এক ধরনের অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার বা ওসিডি।  সেক্সুয়াল অবসেশনযুক্ত ওসিডি পুরুষদের বেশি হয় বলে অনেকে মনে করেন।

এ ধরনের জেলাসি বা ঈর্ষায় মনে রাখতে হবেঃ  জীবনে সবকিছু নিজের চাহিদামতো পাওয়া যায় না।পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে যথাসম্ভব সৎ থাকার চেষ্টা করতে হবে। কমিউনিকেশন ক্ষমতা বাড়াতে চেষ্টা করতে হবে।   মানসিক ও আবেগগত দিক থেকে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে চেষ্টা করতে হবে। নিজের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার অভাব বুঝতে হবে, নিজেকে ভালোবাসতে হবে। অন্যের সদিচ্ছাকে গুরুত্ব দিতে হবে। ঈর্ষান্বিত হওয়ায় লজ্জার কিছু নেই। ঈর্ষা না থাকা মহান কোনো ব্যাপার নয়। একা না থেকে পাঁচজনের সঙ্গে মেলামেশা করতে হবে। অন্যের সঙ্গে আপনার ভাবনা ভাগ করে নেয়ার চেষ্টা করতে হবে।

সিবলিং জেলাসি: এ শক্তিশালী ঈর্ষার উৎস মায়ের সঙ্গে থাকা দৃঢ় বন্ধন ও ভালোবাসা। দুটি সন্তানের মধ্যে বয়সের তফাৎ কম হলে প্রথম সন্তানের ঈর্ষা বেশি হয়। সাধারণত পাঁচ বছরের শিশু সবকিছুর জন্যই মা-বাবার ওপর নির্ভরশীল থাকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে বাচ্চাদের স্কুল, খেলা ইত্যাদি নিয়ে বৃহত্তর জগৎ তৈরি হয়। তখন আর সন্তান বাড়ির ঘেরাটোপে আবদ্ধ থাকে না এবং তার ঈর্ষা কমে আসে। এ ক্ষেত্রে মা-বাবার উচিত ঈর্ষান্বিত সন্তানের প্রতি তাদের ভালোবাসা বেশি করে প্রকাশ করা।
সিবলিং জেলাসির ভালো দিক হচ্ছে এর মাধ্যমে সন্তান পরবর্তী জীবনে তার কর্মজগতে যে ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হয় তা মোকাবিলা করতে শেখে। মা-বাবা বিদ্বেষপূর্ণ ব্যবহারকে সহযোগিতামূলক আচরণে রূপান্তর ঘটাতে পারেন।

সামাজিক-মনস্তাত্ত্বিক ঈর্ষা: সুখ-সমৃদ্ধির উপাদান সবাই অর্জন করতে চায়। যেমন মধ্যবিত্তের তিন ভাগ-উচ্চ, মধ্য ও নিম্ন। এদের মধ্যে সব সময় লড়াই চলতে থাকে। এই ‘ক্লাস শিফটিং’ কীভাবে হয় তা যদি লক্ষ করা যায় তবে দেখা যাবে হিংসা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উত্তরণের সপৃহাকে বাড়িয়ে দেয়। চাহিদা অবাস্তব হলেই ঈর্ষা বেশি মানসিক ক্ষতি করে। ব্যর্থতা ও অসমতা মেনে নিতে না পেরেও কেউ কেউ ঈর্ষান্বিত হন। যেসব মানুষ সমাজের সঙ্গে তাল মেলাতে পারেন না তারাও ঈর্ষার শিকার। ঈর্ষা থেকে আসে মানুষের অসামাজিক আচার-আচরণ। বাগানের ফুল ছিঁড়ে ফেলার আপাতত তুচ্ছ ঘটনাও যার মধ্যে পড়ে। সমাজের মূল স্রোত থেকে যারাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে তাদের মধ্যেই এ প্রবণতা প্রবল। কারণ এ ক্ষেত্রে মমত্ববোধ কাজ করে না। বাণ মারা, তুক-তাক করাও ঈর্ষার সংস্কারাচ্ছন্ন সামাজিক প্রকাশ। সমাজে ইচ্ছা ও ক্ষমতা একসঙ্গে এসেছে। ঈর্ষা ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুই উপাদানেই তৈরি। আমরা কতটা স্বাভাবিক ও সুস্থ আছি, অর্থাৎ সুস্থতার মানসিক বোধ State of well bering নির্ভর করে ব্যক্তিত্বের ওপর। ঈর্ষানুভূতি অনেক ক্ষেত্রে এ পারসপরিক সম্পর্কে ভারসাম্যহীনতা নিয়ে আসে। আর তখনই হয় ক্ষতির সূচনা।  মাত্রাহীন পরশ্রীকাতরতায় মানুষের বাস্তববোধ কাজ করে না।

ঈর্ষা থেকে মুক্তির উপায়: শেক্সপিয়ারের উপমায় ঈর্ষা হলো গ্রিন আইভ মনস্টার।  এ সবুজ চোখের দানব খুবই শক্তিশালী। এর দানবীয় শক্তি মোকাবেলায় চাই অন্তরের সুপ্ত মানবিক বোধের বিকাশ।  ঈর্ষা থেকে চিন্তাকে মুক্ত করাটা নিজের দায়িত্ব। বল্গাহীন সমাজে যে ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে যাচ্ছে, তারা পিছিয়ে পড়ছে।  এরাই ঈর্ষার শিকার।  ঈর্ষা থেকে মুক্তির জন্য সুস্থ সমাজ, সমবণ্টন ও সুস্থ পরিবেশ প্রয়োজন।  চাহিদা ও যোগানের মধ্যে সমতা রাখাটাও জরুরি। নিজের বোধ, বিবেচনা, বুদ্ধি দিয়ে বাস্তবের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করতে পারলে ঈর্ষাকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। এর জন্য নিজেকে পরিশীলিত ও বাস্তবের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। মূল কথা হচ্ছে বোধ ও বিবেচনা দিয়ে যে কোনো ঘটনার কার্যকারণ সম্পর্ক খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করলে মনে ঈর্ষার কোনো জায়গা হতে পারে না।

ঈর্ষাজনিত যে দহন ও উৎকণ্ঠা তাতে আমাদের অন্তর্নিহিত শক্তি ক্রমাগত ক্ষয় হয়।  ঈর্ষাপ্রণোদিত হয়ে আমরা কর্মক্ষেত্রে যে শক্তি নিয়োগ করি তার অনেকটারই অপচয় হয় এ দহনজ্বালায়। এ শক্তিকে বেশি ক্ষয় না করে যদি কাজে নিয়োগ করা যায়, উৎপাদন শক্তিও স্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। কারণ তখন প্রেরণা আসে অন্তরের সম্ভাবনাময় শক্তিপুঞ্জের জাগরণ থেকে, সতীর্থ কিংবা সহকর্মীর সাফল্যজনিত ঈর্ষার অন্তর্দহন থেকে নয়। কর্মের প্রকৃত লক্ষ্য সাফল্য বা উৎকর্ষতাকে যদি লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা যায়, তখনই সাফল্য ও ব্যর্থতার প্রতি সমভাব বজায় রাখা যায়। তখন প্রতিযোগী আর বাইরের কোনো সফল সতীর্থ বা সহকর্মী নয়, অতীতের আমিই তখন বর্তমান আমির প্রতিদ্বন্দ্বী। অন্যের প্রতি যদি সাময়িকভাবে ঈর্ষার ভাব আমাদের মনে জেগে ওঠে, আমরা অল্প সময়ের মধ্যেই নিজের গভীরে ডুব দিয়ে তা কাটিয়ে উঠতে পারি।

ঈর্ষা কখন আসে: মূলত হেরে যাওয়ার ভয় থেকে ঈর্ষার জন্ম।  আর পাঁচটা অনুভূতি বা আবেগের মতো ঈর্ষাও একটি মানসিক অবস্থা। তার বাহ্যিক প্রকাশ একেক ব্যক্তির ক্ষেত্রে একেক রকম। যে ব্যক্তি ঈর্ষা করে তার মধ্যে একটা হীনমমন্যতা কাজ করে। যাকে সে ঈর্ষা করছে তার মতো হতে না পারা, আত্মবিশ্বাসের অভাব, গুরুত্ব না পাওয়ার যন্ত্রণা, অন্যের চোখে ঈর্ষণীয় ব্যক্তিকে কীভাবে ছোট করা যায় তার নিরন্তর প্রচেষ্টাই এ হীনমমন্যতার জন্ম দেয়। ঈর্ষার নিজস্ব ডাইমেনশন রয়েছে। কেউ ভালো নাম্বার পেলে কম নাম্বার পাওয়া মানুষটি ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়েন। এটা ঈর্ষার নেতিবাচক দিক। কিন্তু যখন মানুষটি ভাবেন ওই নাম্বার তাকেও পেতে হবে তখন ঈর্ষা ইতিবাচক। ক্ষমতার পায়ে পায়ে ঈর্ষার চলাফেরা। ক্ষমতা মানে Passessione, যে ক্ষমতার জন্য মানুষ প্যারানয়েড (অবিরাম সন্দেহ আর অবিশ্বাস, ভ্রমবাতুলতার মনোরোগ) হয়ে পড়ে। আর এ কারণেই রাজা-বাদশাদের যুগে প্রচুর গুপ্তহত্যার ঘটনা দেখতে পাওয়া যায়।

প্রতিদ্বন্দ্বিতা ঈর্ষার আরেকটি কারণ। তবে মুখ্য হলো ব্যক্তিগত হিংসা। নিজেকে মহান ভাবার বোধ, যাকে বলা হয় অস্বাভাবিক অহংমন্যতা, এর থেকেও আবার তৈরি হয় কূপমণ্ডুতা। এর উৎস নিজেকে সর্বেসর্বা ভাবা। তবে দুটি সমমেধা যদি একে অন্যের পরিপূরক হয় তবে তা গঠনমূলক, সেখানে একে অন্যের প্রতি ঈর্ষা নেই। কিন্তু এর মধ্যে আমিত্ব বড় হয়ে উঠলেই ঈর্ষার উদয় হয়। তবে সব ক্ষেত্রে তা হয় না, কারণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় সমানে সমানে। তাছাড়া সুস্থ প্রতিদ্বন্দ্বিতার স্বাস্থ্যকর দিকও রয়েছে।   সব মানুষ কি ঈর্ষাপরায়ণ না, যে মানুষ যথাযথ আত্মসমীক্ষা, আত্মবিশ্লেষণ করতে পারেন তাদের ঈর্ষা কম হয়। আকাঙ্ক্ষা না থাকলে ঈর্ষা আসে না। মনের প্রসারতা বাড়ালে ঈর্ষা কমে। সন্ন্যাসীর ঈর্ষা থাকে না। বিশেষণে কোনো একটা জায়গায় নিজেকে কম মনে হলে ঈর্ষা জন্মায়। ঈর্ষার পেছনে বুদ্ধি কাজ করে।  মানসিক প্রতিবন্ধীদের তাই কোনো ঈর্ষা থাকে না।

ঈর্ষা কিসের ওপর নির্ভর করে: সাইকোলজিতে ‘ওথেলো সিনড্রম’ বলে একটা কথা আছে। ওথেলো বেশি মাদকাসক্ত হয়ে পড়ায় নিজের স্ত্রীকে সন্দেহ করতেন। যার জন্ম হয়েছিল ঈর্ষা থেকে। এক পর্যায়ে ওথেলো স্ত্রীকে খুনও করেন। একে ‘প্যাথলজিক্যাল জেলাসি’ বলা হয়। ষড়রিপুর অন্যতম ‘মদ’ ঈর্ষাকে বহুগুণে বাড়িয়ে তোলে। তবে ঈর্ষান্বিত হয়ে যদি কেউ সঠিক কাজ করে, যেমন পড়াশোনা আরো বাড়িয়ে দেয়া, তখন তো ‘অসুখী মনন’ নয়। সহকর্মীর পদোন্নতি কেউ কেউ ঈর্ষার চোখে দেখেন আবার কেউ কেউ মনে করেন ওটা অর্জন করার চেষ্টা করতে হবে, যেখানে ঈর্ষার কোনো স্থান নেই।

ঈর্ষার পরিমাপ:  নিচের বাক্যগুলো পড়ুন! দেখুন তো কতটির সঙ্গে আপনি একমত হতে পারেন বা ‘হ্যাঁ’ বলতে পারছেন। তারকাযুক্ত বাক্যের ক্ষেত্রে ‘হ্যাঁ’ হলে ঈর্ষাকাতরতা ‘কম’ বা ‘নেই’।  তারকা ছাড়া প্রশ্নের উত্তর ‘হ্যাঁ’ হলে ঈর্ষাকাতরতা বেশি।   এবার সব বাক্যের ক্ষেত্রে আপনার মতামত মিলিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছান, আপনি ঈর্ষাকাতর কি না।

  • ছোটবেলায় মনে হতো আমার থেকে বশিরকেই সবাই ভালোবাসত।
  • ছোটবেলায় ভাইয়া যা চাইত তাই পেত; কিন্তু আমি পেতাম না।
  • বন্ধুর স্কুলব্যাগটা অনেক সুন্দর। তা দেখে আমার মন খারাপ হতো।
  • আমি বিশ্বাস করি, খুব বেশি পয়সা থাকলে মানসিক শান্তি থাকে না, তার চেয়ে পয়সা কম থাকাই ভালো।  আমার থেকে সহকর্মীর ওপর অফিশিয়াল ব্যাপারে বেশি নির্ভর করা হয়।  বেশির ভাগ সময় ভাইয়া আর আমি একই রকম রেজাল্ট করা সত্ত্বেও বাবা-মা ভাইয়ার প্রশংসাই করত সবার কাছে। আমার বোনের স্বামী দেখতে খুব সুন্দর, যদিও বোনকে তার পাশে মানায় না।
  • বন্ধুর দামি মোবাইল দেখে আমার খুব রাগ হয়।
  • আমার সঙ্গে বন্ধুর সম্পর্ক নষ্ট হয়ে গেছে কারণ যে মেয়েটিকে আমার ভালো লাগত তার সঙ্গে আমার বন্ধুর বিয়ে হয়েছে।
  • আপনার বাবা-মা যদি আপনার কোনো ভাই বা বোনকে আপনার চেয়ে বেশি ভালোবাসে তাহলে কি কষ্ট পান?

ঈর্ষা এবং কল্পনা: বলা যায় ঈর্ষার সঙ্গে মানুষের কল্পনা কোনো না কোনোভাবে জড়িয়ে যায়। প্রসঙ্গত, একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করা যায়, স্বামীর জন্য বেল্ট কিনে এনেছেন স্ত্রী। স্বামীর সে সময় চাকরি নেই। দামি বেল্ট দেখে স্বামীর প্রশ্ন, কত দিয়ে কিনলে? চাকরি না থাকায় হীনমমন্যতায় ভুগতে থাকা ঈর্ষান্বিত স্বামী ভাবতে থাকেন স্ত্রী নিজের আর্থিক ক্ষমতা দেখাতে চাইছে। কল্পনার জাল বুনতে বুনতে সে সঙ্গে এটাও ভাবেন নিশ্চয়ই অন্য কোনো সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছে, তাই তাকে বেশি খুশি রাখার জন্য এটা এক রকমের চেষ্টা। অথচ আসল ঘটনা কিন্তু খুবই সহজ। স্বামীর বেল্ট ছিঁড়ে গেছে দেখে স্ত্রী একটা বেল্ট কিনে এনেছেন।

ঈর্ষা এবং হিংসা :  ঈর্ষা সুযোগসাপেক্ষ। ঈর্ষার সঙ্গে এক ধরনের লজ্জাবোধ থাকে, যার ফলে ঈর্ষান্বিত ব্যক্তি নিজেকেও ছোট মনে করেন। অন্যদিকে হিংসার মধ্যে একটা আক্রমণাত্মক ভাব থাকে এবং হিংসা বোধবুদ্ধি আচ্ছন্ন করে ফেলে। ঈর্ষা মানুষকে প্রতিহিংসাপরায়ণ করে না, হিংসার ক্ষেত্রে তা সম্ভব। সম্পর্কের নৈকট্য ঈর্ষা নিয়ন্ত্রণ করে না। এটা নির্ভর করে ব্যক্তির নিজস্ব মানসিক গঠনের ওপর। প্রতিটি ব্যক্তিসত্তা আলাদা, বিচ্ছিন্ন এক একটা দ্বীপের মতো, আলাদা চাহিদা যা সম্পর্ক-নিরপেক্ষ, সেখানে যখন আঘাত লাগে তখনই ঈর্ষার উদয় হয়। যে ব্যক্তি সব সময় নিজেকে অন্যের তুলনায় বড় দেখতে চান তার ঈর্ষা বেশি। ঈর্ষা সম্পর্কের ক্ষতি করে। যেমন-স্ত্রীর সাফল্যে স্বামীর প্রাথমিক ভালোলাগা থাকলেও যে কোনো জমায়েত, অফিস পার্টি, পারিবারিক অনুষ্ঠানে ক্রমাগত স্ত্রীর প্রশংসা শুনতে শুনতে স্বামীর মধ্যে হীনমমন্যতা তৈরি হয়, স্বামী ঈর্ষান্বিত বোধ করেন, সম্পর্কের দূরত্ব বাড়তে থাকে। ঠিক বিপরীত দিকে সফল স্বামীর প্রতিও স্ত্রীর ঈর্ষা জন্ম নিতে পারে। ইচ্ছা আর হিংসা এ দুইকে এক চোখে দেখতে চান না মনস্তাত্ত্বিকদের একাংশ। আর সেখানেই ঈর্ষা হয়ে ওঠে আরোহণের ময়ূরকণ্ঠী লিপ্সা।

ঈর্ষার তত্ত্ব: ঈর্ষার দুটি মৌলিক তত্ত্ব ইভুলিউশনারি থিয়রি অব সোশ্যাল কন্সট্রাক্ট থিওরি। বিবর্তনবাদ মতে, জেলাসি পারফর্মস অ্যান অ্যাকশন ইদ দি প্রিজার্ভেশন অব দি সিপশিস। ছেলেরা সাধারণত মেয়েদের সেক্সুয়াল ইনফিডেলটিতে বা অবিশ্বস্ত যৌন সম্পর্কের কারণে বেশি ঈর্ষান্বিত হয়। মেয়েদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা উল্টো। মেয়েরা ছেলেদের ইমোশনাল ইনফিডেলটি বা আবেগজনিত অসততায় ভয় পান এবং ঈর্ষাবোধ করেন। তাদের যুক্তি হলো, যখন ছেলেরা মানসিকভাবে বিশ্বস্ত থাকে তখন তারা অন্য কারো সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে আবদ্ধ হলেও তা হয় সাময়িক। প্রেমিক-প্রেমিকা, স্বামী-স্ত্রী ইত্যাদি সম্পর্কের বিশেষণে দেখা যায় ভালোবাসা হারানোর ভয়; মনোযোগ হারানোর ভয় উভয়কেই তাড়া করে ফেরে। স্বামী অন্য কোনো মহিলার প্রতি আকৃষ্ট হলে স্ত্রীর প্রথম যে প্রতিক্রিয়া সেটাই ঈর্ষা। সম্পর্কের মূল্য হারানোর দুঃখবোধ তাদের জন্য পীড়াদায়ক হয়ে ওঠে। স্বজন হারানোর দুঃখের থেকেও এ ক্ষেত্রে বোঝা হয়ে ওঠে এক নিরন্তর মানসিক যন্ত্রণা। আমার যা ছিল তা অন্যের হয়ে যাচ্ছে-এ অনুভূতি বা অসহায়তা থেকেই ইমোশনাল বা আবেগজনিত জটিলতা তৈরি হয়। ঈর্ষা দুই রকম-স্বাভাবিক ঈর্ষা, অস্বাভাবিক ঈর্ষা। অস্বাভাবিক ঈর্ষা মানসিক রোগের পর্যায়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে ঈর্ষার প্রকৃত কোনো কারণ নেই। এক ব্যক্তি তার স্ত্রীর সৌন্দর্য সম্পর্কে সবার প্রশংসায় হীনমমন্যতায় ভুগতে শুরু করেন। সন্দেহ শুরু হয় স্ত্রী যদি অন্যের হয়ে যান, এ হারানোর ভয় থেকে। যার ফলে অসময়ে অফিস থেকে এসে টেবিলে দুটি চায়ের কাপ দেখে ঈর্ষায় জ্বলতে থাকেন। ঈর্ষান্বিত হয়ে স্ত্রীর সঙ্গে অতিরিক্ত যৌনক্রিয়ায় লিপ্ত হতে শুরু করেন। স্ত্রী রাজি না হলে স্বামী মনে করেন, স্ত্রী অবশ্যই পরপুরুষের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছে। তবে ঈর্ষা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছলেই মানুষ এমন অপ্রকৃতিস্থ আচরণ করতে শুরু করে। সাধারণত আমাদের অন্তর্জগতে দুই রকম বৃত্তি কাজ করে-বুদ্ধিবৃত্তি (ইন্টেলিজেন্স) ও হৃদয়বৃত্তি (ইমোশন)। ঈর্ষার উৎস দ্বিতীয় বৃত্তি থেকে।

ঈর্ষা এবং ভালোবাসা:  সম্পর্ক গড়ার প্রথমদিকে নতুন দম্পতিদের মধ্যে ভালোবাসা থেকে ঈর্ষার মনোভাব দেখা যায়। নিজের আচরণের বিপরীতে সঙ্গীর মধ্যে কোনো রকম ঈর্ষার প্রকাশ না দেখে ধরে নেন তার সঙ্গী তাকে ভালোবাসে না। দখলদারিত্বের বিভিন্ন ধারণা থেকেই এ সমস্যার উৎপত্তি হয়। অনেক সময় এমনো দেখা যায়, পুরুষ সঙ্গীর ভালোবাসা পরীক্ষা করার জন্য মেয়ে পার্টনার নানাভাবে ফ্ল্যাট (ফলমড়য়) করতে শুরু করেন। আসলে সম্পর্কের নিবিড়তায় যারা তৃপ্ত তাদের মধ্যে এ ধরনের ঈর্ষার জন্ম হয় না।

শিশুর ঈর্ষা :  ভালো পেনসিল বক্স, খেলনা, কানের দুল ইত্যাদি থেকেই সাধারণত শিশুদের ঈর্ষার শুরু হয়। শিশুরা চায় তার ভালোবাসার মানুষের ভাগ আর কেউ পাবে না। দেখা যায় ছোট শিশু মায়ের প্রিয় ফুলগাছগুলো ভেঙে ফেলেছে কারণ মা তাকে সময় না দিয়ে ওই গাছগুলোর যত্ন নেয়। একই মানসিকতা কিন্তু বড়দের ক্ষেত্রেও দেখা যায়। স্বামী রোজ অফিসে বেরোনোর সময় তার পোষা টিয়াকে ছোলা খেতে দেন। যে কারণে দেখা যায় স্ত্রী বলছেন, পাখিটার গলা টিপে মেরে ফেলতে ইচ্ছা করে। সন্তান জন্মানোর পর অনেক সময় মানুষের ডিপ্রেশন হয়। স্বামীর কাছে ইম্পরটান্স হারানোর ভয় থেকেই এ অবসাদের জন্ম। মূলকথা যেসব মানুষ নিজেকে প্রাধান্য দেয় তারা সামান্য আঘাতেই ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়ে।

নবজাতকের প্রতি প্রথম সন্তানের ঈর্ষা, মা-বাবার করণীয়: 
প্রথম সন্তানের দৈনন্দিন রুটিনে হঠাৎ কোনো পরিবর্তন ঘটাবেন না। তাকে যদি স্কুলে দিয়ে দিতে চান, নতুন শিশু আসার মাস দুয়েক আগেই তা করুন।   সব ব্যাপারে আগের অভ্যাস বজায় রাখুন, যেমন ঘুমানোর সময় গল্প বলা বা বই পড়ে শোনানো।   বড় হওয়ার ভালো দিকগুলো বোঝান।   দিনে অন্তত আধঘণ্টা সময় প্রথম সন্তানের জন্য আলাদা করে রাখুন।  নবজাতকের জন্য সে যদি আপনাকে সাহায্য করতে চায় তা করতে দিন।

    • প্রশংসা করুন।  কারণ ছাড়াই উপহার দিন।
    • কখনো ঈর্ষার ব্যাপারটি তার সামনে মুখ ফুটে বলবেন না।

ঈর্ষা সেসব মানুষের ক্ষেত্রেই ইতিবাচক ভূমিকা নিতে পারে, যাদের মানসিক গঠন শক্তিশালী এবং ভারসাম্য আছে। এমন মানুষকে ঈর্ষা মোটিভেট বা উদ্বুদ্ধ করে। ঈর্ষা যখন চরম আকার নেয়, হিংসার রূপ ধরে, তখনই মানসিক সমস্যা শুরু হয়। এ সময়ে মানুষ নিজেকে সবকিছু থেকে গুটিয়ে নেয়, ডিপ্রেশনে ভোগে, কখনো আবার উত্তেজিত হয়ে ওঠে এবং সব ব্যক্তিকে ক্ষতিকারক মনে করে। ক্ষতির জন্য ক্ষতি করা আর ঈর্ষান্বিত হয়ে ক্ষতি করা কিন্তু এক নয়।  দুটি ভিন্ন মানসিকতার পরিচয় দেয়। তাই ঈর্ষাকে চেনা জরুরি। জানা দরকার, ঈর্ষা নামের এ বহুরূপীর নানা মুখ ও মুখোশ। সে সঙ্গে জানা দরকার নিজের মনের আঁধার গহীনের সাদা-কালো ছবি। পড়ুন-চিনুন নিজেকে, অচেনা ‘আমি’ কে?

  • ঈর্ষা সম্পর্কিত কয়েকটি ধারণা
  • আমার সঙ্গী যদি প্রকৃত আমাকে ভালোবাসে তাহলে অন্য কাউকে সে চাইবে না।
  • আমার সঙ্গী যদি আমাকে নিয়ে খুশি থাকে, সঙ্গী হিসেবে আমি যদি যথার্থ হই, আমার সঙ্গী শুধু আমাকে নিয়েই তৃপ্ত থাকবে।
  • প্রেম দুর্লভ।
  • একজনের বেশি কাউকে ভালোবাসা অসম্ভব।
  • সম্পর্কে অমীমাংসিত নিরাপত্তার অভাব।
  • বিশ্বাসের সমস্যা।
  • সঙ্গীর স্বীকার করার সৎ সাহসের প্রতি অনাস্থা।
  • সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার অনীহা।
  • ঈর্ষা ভালোবাসার উল্টো
  • ছেলেরা সঙ্গী হারানোর আশঙ্কায় ভোগে, মেয়েরা সম্পর্কের গুণগতমান নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে থাকে।
  • ছেলেরা ঈর্ষাবোধকে প্রকাশ করতে চায় না, তারা তাদের হীনমমন্যতাবোধ স্বীকার করতে চায় না। মেয়েরা অনুভূতি প্রকাশ করে নিজেদের আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে চায়।
  • তীব্র আত্মসমমানবোধ আছে এমন মেয়েরা ঈর্ষান্বিত হন না।
  • আত্মসমমানবোধ যাদের কম, আত্মবিশ্বাসের অভাবে যারা ভোগেন তারা ঈর্ষান্বিত বেশি হন।
  • আপনার সঙ্গীর ঈর্ষা স্বাভাবিক না অস্বাভাবিক কীভাবে বুঝবেন?
  • আপনার সঙ্গী দিনের অধিকাংশ সময় বিষণ্ন থাকবে এবং যাকে ঈর্ষা করেন তার ভাবনা থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেন না।
  • সম্পর্ক খারাপ করার মতো কাজ করতে থাকেন।
  • সঙ্গীর স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেন।
  • সঙ্গীকে অনুসরণ করা, ফোনে আড়ি পাতা, মোবাইলের এসএমএসের ওপর নজরদারি করা। বাইরে থেকে ফিরলে ব্যাগ, জামাকাপড় তন্ন তন্ন করে খুঁটিয়ে দেখা।

বিয়েতে ভয়, আপনার গ্যামোফোবিয়া তো নয়!

কৈশোরে কিংবা তারুণ্যে বন্ধুদের সাথে আড্ডায় হয়তো অনেকেই বিয়ের ইচ্ছা পোষণ করে থাকেন। আবার অনেকে আক্ষেপ করেও বলেন যে, ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বাবা মা বিয়ে দিচ্ছে না কিংবা তার মনের ইচ্ছা বুঝতে চাইছে না।  কিন্তু যখন সত্যিকার জীবনে বিয়ের বয়স হয়, তখন অনেক ক্ষেত্রেই বিয়ের প্রতি দেখা দেয় অনীহা। শুধু তাই নয়, দেখা যায় যে অনেক দিনের প্রেম থাকা সত্ত্বেও সম্পর্ককে বিয়ের নাম দিতে ভয় পাচ্ছেন তারা। বিয়ের জন্য যেন নিজেকে কোনো ভাবেই মানসিক ভাবে প্রস্তুত করে উঠতে পারেন না তারা।

বিয়ে করতে ভয় পাওয়ার বিষয়টিকে ‘গ্যামোফোবিয়া’ বলে।  বিয়ের কথা শুনে কিছুটা আতঙ্কিত বোধ করাটাও স্বাভাবিক।  তবে বিয়ের নাম শুনলেই যারা দৌড়ের ওপর থাকেন, তারা গ্যামোফোবিয়ায় ভুগতে পারেন।  যাদের মনে বিয়ের ভয় জেঁকে বসে এবং নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, অবশ্যই তাদেরকে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। তবে যারা বিয়ের কথা শুনে কেবল আতঙ্ক বোধ করছেন, তারা কিছুটা মানসিক জোর পেলেই বিয়েতে রাজি হবেন।

গ্যামোফোবিয়া কী? : বিয়ের বন্ধন ও স্থায়ী সম্পর্কে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার ভয়ই মূলত গ্যামোফোবিয়া।  গ্রিক শব্দ গ্যামো অর্থ বিয়ে ও ফোবিয়া মানে ভয়।   গ্যামোফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের কাছে বৈবাহিক সম্পর্ককে কখনো সরল জীবনযাপনের হুমকিস্বরূপ মনে হয়।  এছাড়াও সম্পূর্ণ নতুন একটি মানুষের সঙ্গে বসবাস ও তার পরিবার মানিয়ে চলাকেও তারা সহজভাবে নিতে পারেন না।

কারণ:  সাধারণত যেকোন ফোবিয়ার কারণ হচ্ছে বাইরের উদ্দীপক ও তার মানসিক প্রভাব।  যেমন, অতীতের আঘাতমূলক ঘটনা। আবার এ ভয় জেনেটিক কারণেও হতে পারে। অল্প বয়সে বিভিন্ন সম্পর্কজনিত জটিলতাও এই ফোবিয়ার কারণ হতে পারে।   ধারণা করা হয় বংশগতি, জিন ও মস্তিষ্কের রসায়ন এবং বাস্তব অভিজ্ঞতার সম্মিলনে ফোবিয়া তৈরি হয়।

লক্ষণ:  ভয়ের মাত্রা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়। তাই গ্যামোফোবিয়ার লক্ষণগুলোও আলাদা। যেমন—প্রচণ্ড দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ, ভয় ও আতঙ্কগ্রস্ত থাকা। অস্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস, ঘেমে যাওয়া, হৃদপিণ্ডের উর্ধ্বগতি, গলা শুকিয়ে আসা, কাঁপুনি ইত্যাদি।

প্রতিকার : বিশেষজ্ঞদের মতে, ফোবিয়ার সবচেয়ে উপযোগী চিকিৎসা হচ্ছে সম্মোহন বা হাইপোথেরাপি, মনোবিজ্ঞানির সাথে পরামর্শ (সাইকোথেরাপি) ও নিউরো-লিঙ্গুইস্টিক প্রোগ্রামিং (অবচেতন মন যদি নেতিবাচক হয়ে থাকে তবে তাকে রিপ্রোগ্রাম করবার জন্য দরকার সচেতনতার সাথে নিজস্ব উপলব্ধি, দৃষ্টিভংগী এবং আবেগ সম্পর্কে সচেতন হওয়া)।   সাইকোলজির কিছু বিশেষ টেকনিক ব্যবহার করে নিজের মনের অবচেতন প্রক্রিয়াকে গাইড করা সম্ভব।

বিয়ের ভয় কাটানোর কয়েকটি পরামর্শ জেনে নিন:

বিয়ে ফিল্ম নয়: অনেকে হলিউড বা বলিউডের চলচ্চিত্রে বড় বড় বিয়ের আয়োজন দেখে আতঙ্কিত থাকেন। মনে রাখতে হবে, বিয়ে মানে চলচ্চিত্রের দৃশ্য নয়। বাস্তব দৃষ্টিকোণ থেকে বিয়েকে দেখুন। এটি জীবনের স্বাভাবিক অংশ। অতি কাল্পনিক বা অতি জাঁকজমকের কিছু নয়। বাস্তবতা মেনে যাঁরা বিয়ের কথা ভেবেছেন, তাঁদের ভয় কেটে গেছে।

অযৌক্তিক ভীতি নয়: বিয়ে নিয়ে অনেকেই অতিরিক্ত ভয়ে থাকেন। মনে সন্দেহ তৈরি হয়। আস্থাহীনতায় ভুগতে থাকেন। বিয়ের বিরুদ্ধে যত পয়েন্ট আছে, সব এক জায়গায় করুন। এরপর সেগুলো বিশ্লেষণ করে দেখুন। একসময় মনে হবে, বিয়ের বিরুদ্ধে কারণগুলোর কোনো অর্থই নেই।

নিজের পছন্দকে গুরুত্ব দিন: অনেক সময় দেখা যায়, যার বিয়ে তাঁর খবর নেই, পাড়া–পড়শির ঘুম নেই। অনবরত বিয়ের কথা বলে মনে আতঙ্ক তৈরি করে। আপনার একাকী জীবন নিয়ে যারা বেশি উদ্বেগ দেখায়, তাদের এড়িয়ে যান। বিয়ে নিয়ে ইতিবাচক চিন্তা করুন।  মনে রাখুন, বিয়ে সম্পূর্ণ নিজের পছন্দ অনুযায়ী করা ভালো।

সঙ্গীর ওপর আস্থা রাখুন: আপনার যদি পছন্দের কেউ থাকে, তবে বিয়ে নিয়ে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন। বিয়ে সম্পর্কে কোনো ভয় থাকলে আলোচনা করে দেখতে পারেন। সহানুভূতিশীল সঙ্গী আপনার পাশে দাঁড়াবে এবং বিয়ের ভয় কাটাতে সাহায্য করবে।

নিজেকে গুছিয়ে নিন: যাঁরা বিয়ে করতে ভয় পান, তাঁরা নিজেকে আগে গোছগাছ করে বিয়ের জন্য প্রস্তুত করতে পারেন। একা কোথাও ছুটি কাটাতে যেতে পারেন। একা অনেকটা সময় কাটিয়ে সঙ্গীর অনুভব করেন কি না, বুঝতে চেষ্টা করুন। যদি একা সময় কাটানো কষ্টকর বোধ হতে থাকে, তবে বিয়ে করে ফেলুন।

স্বাভাবিক হোন: অতীতে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার বেদনা থাকতে পারে। অনেকে প্রতারণার ঘটনায় বিয়েতে বিতৃষ্ণায় ভুগতে পারেন। যদি এ ধরনের ঘটনা জীবনে থাকে, তবে বাস্তববাদী ও স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করুন। সম্পর্কসহ জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আঘাত আসতে পারে। অতীতের কষ্ট ভুলে যান, নতুন সম্ভাবনাকে ইতিবাচকভাবে মেনে নিন।

বাস্তবতা মানুন: অনেকে ভুল মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক হবে ভেবে বিয়ের দিকে যেতে ভয় পান। অপেক্ষায় সময় কাটান। অনেকে অপেক্ষা করেন বিশেষ কারও জন্য। কিন্তু মনে রাখতে হবে, কোনো মানুষ সম্পূর্ণ নিখুঁত নয়। কল্পনার ‘হিরো’ বাস্তবের সঙ্গে নাও মিলতে পারে।

উন্মুক্ত মন: যারা ইতিবাচক কথা বলে এবং যারা সংসারজীবনে সফল, তাদের কাছে কথা শুনুন। নেতিবাচক ও বাজে কথায় কান দেবেন না। নিজে ইতিবাচক থাকুন ও মন উন্মুক্ত রাখুন। আপনার মনের খোলা জানালায় শান্তির সুবাতাস বয়ে যাবে।

সূত্র : সংগৃহিত

কেন বিয়ে করবেন !

বিয়ের কথাটা শুনলেই কেমন যেন লাগে। চিন্তার বিষয়, বয়স হয়েছে তো! সে যাই হোক।  বিয়ে করুন উপযুক্ত সময়ে। কারণ বিয়ে করার স্বাস্থ্যগত সুফল অনেক! কি ধরণের সুফল থাকতে পারে বিয়ে করার পর?
 
দীর্ঘ জীবন লাভ
কেউ যদি মনে করে থাকেন বিয়ে করার কারণে আপনার মৃত্যুর দিন তাড়াতাড়ি ঘনিয়ে আসবে তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন। কারণ ২০১৩ এর এক রিসার্চে দেখা গেছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জন্ম গ্রহণকারীদের মধ্যে যারা অবিবাহিত তারা বিবাহিত অথবা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের মধ্যে যারা আছে তাদের তুলনায় তাড়াতাড়ি মারা যায়। এর কারণ হিসেবে দেখা গেছে জীবনসঙ্গী মানুষকে আবেগ অনুভূতি বাড়িয়ে দেয়, সামাজিকভাবে একত্রে রাখে, মানসিকভাবে সমর্থন দেয়, যার সব কিছুই সুস্থ স্বাভাবিক স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন।
 
মানসিক চাপ কম থাকে
যদিও মাঝে মাঝে ঝগড়া লাগে তারপরও তার উপস্থিতি আপনার মনে এক ভালো লাগার অনুভূতি ছড়িয়ে দিবে। মানুষ যখন কোন মানসিক চাপের মধ্যে থাকে তখন শরীরে স্ট্রেস হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়। এই স্ট্রেস হরমোন বিবাহিতের চেয়ে অবিবাহিতদের শরীরে দ্রুত বৃদ্ধি পায়। অতিরিক্ত পরিমাণে মানসিক চাপ শরীরে সমস্যার জন্ম দেয়, বিশেষ করে হজমের সমস্যার সৃষ্টি করে। রিসার্চে জানা গেছে স্ট্রেস হরমোন বিবাহিতদের শরীরে সেরকম ভাবে ক্ষতি করতে পারে না কিন্তু অবিবাহিতদের শরীরে নানা সমস্যার বাসা তৈরি করে।
 
হার্ট এ্যাটাকের সম্ভাবনা হ্রাস পায়
ভালোবাসা হৃদযন্ত্রকে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে যারা বিবাহিত অথবা কোন সম্পর্কের মাঝে আছে তাদের হার্ট-অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা নিঃসঙ্গ মানুষের চেয়ে কম। গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে যে সঙ্গীর নিবিড় সঙ্গ এবং নতুন পরিবারের নতুন সব আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু- বান্ধবের সাথে ভালো বন্ধনের কারণে হার্ট-অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস পায়। কারণ পরিবারের সাথে থাকলে মানুষ উৎফুল্ল থাকে। মনে কোন মানসিক চাপ থাকলে তা শেয়ার করতে পারে। এতে মনের উপর চাপ কম পড়ে।
 
হাড় শক্ত হয়
বিয়ে শরীরের হাড় মজবুত করে। অবাক হচ্ছেন? আসলেও তাই। বিয়ে শরীরের হাড় শক্ত করে এবং বিভিন্ন হাড়ের রোগের ঝুঁকি কমায়। বিয়ে হাড়ের খনিজ ঘনত্ব ঠিক রেখে হাড়ের এক ধরণের রোগ “অস্টিওপরোসিস” হওয়ার ঝুঁকি কমায়। একজন ভালো জীবনসঙ্গী পত্নীর মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে হাড়কে ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে। তাই সুখী দাম্পত্য জীবন মহিলাদের হাড়ের খনিজ ঘনত্ব ঠিক রাখার জন্য জরুরী।

অস্ত্রোপচারের পর দ্রুত সুস্থ হওয়া

কেউ যখন আপনার পাশে সারাক্ষণ থেকে আপনার পরিচর্যা করবে তখন আপনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন। কিন্তু আপনি যখন একা থাকবেন সে ক্ষেত্রে আপনার সুস্থ হতে অনেক সময় লেগে যাবে। কারণ তখন আপনার সব কাজগুলো আপনার নিজেরই করতে হবে। এছাড়াও আপনি যখন কার সান্নিধ্যে থাকবেন তখন বেঁচে থাকার একটা কারণ খুঁজে পাবেন। এক্ষেত্রে জীবন সঙ্গী আপনার বেঁচে থাকার অবলম্বন হয়ে দাঁড়ায়।
 
অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঝুঁকি কমে
জীবনে কতবার আপনি আপনার জীবনসঙ্গীকে আকস্মিক দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করেছে? গবেষণায় দেখা গেছে তালাক প্রাপ্ত মহিলা এবং পুরুষেরা বিবাহিতদের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ বেশি অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়। গবেষকদের মতে বিয়ে দুটি মানুষকে পাশাপাশি রাখে এবং এসব অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণামের হাত থেকে রক্ষা করে।
 
বিষণ্ণতা কমায়
একাকীত্বের কারণে অথবা অন্য সমস্যার কারণেও মানুষ বিষণ্ণতায় ভুগতে পারে। আর মানুষ যখন হতাশায় ভুগে তখন কি পরিমাণ মানসিক বিপর্যয় ঘটছে তার নিজের, তা সে বুঝতে পারে না। কারণ বিষণ্ণতার প্রথম উপসর্গ হচ্ছে আত্ম-উপলব্ধির হ্রাস পাওয়া। তাই বিষণ্ণতাকে সনাক্ত করতে এবং দূর করতে প্রয়োজন একজন সঙ্গীর। যে সব সময় আপনার সাথে থাকবে, যার সাথে আপনি সবকিছু শেয়ার করতে পারবেন।
 
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
২০১৩ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যে সকল মানুষ মরণ ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিল তাদের মধ্যে শতকরা ২০ ভাগ এর বেশি মানুষ আরোগ্য লাভ করতে সক্ষম হত যদি তারা বিবাহিত হত। এই সাফল্যের হার কেমোথেরাপির থেকেও বেশি। একটি স্বাভাবিক স্থিতিশীল সম্পর্কই প্রথম ধাপের ক্যান্সার সনাক্ত করতে পারে। আর এই বন্ধনই ক্যান্সারের সাথে লড়ে সুস্থ হওয়ার অনুপ্রেরণা যোগায়। একজন উপর্যুক্ত সঙ্গিনী তার সঙ্গীকে খারাপ এবং জীবনের জন্য ঝুঁকিকর কাজ করা থেকে বিরত রাখতে পারে। যেমনঃ মদ্যপান, মাদক সেবন ইত্যাদি।
 
স্মৃতিভ্রংশ প্রবণতা কমায়
যদি জীবনে এমন সঙ্গী থাকে যার কাছে গেলে মনে শান্তি আসে তাহলে বার্ধক্য কখনো তাকে স্পর্শ করতে পারে না। গবেষণায় দেখা গেছে যারা তালাকপ্রাপ্ত হয়ে পুনরায় বিয়ে করে নি তাদের স্মৃতি শক্তি নষ্ট হওয়ার প্রবণতা প্রায় তিন গুন বেশি হয় এবং যারা মাঝ বয়সে বিধবা হওয়ার পর আর বিয়ে করেনি তাদের স্মৃতিভ্রংশ প্রবণতা ছয়গুণ বেড়ে যায়। গবেষকরা বলেন বিবাহিত এবং সারাজীবন মানসিকভাবে এবং সামাজিকভাবে পাশাপাশি থাকলে মন প্রফুল্ল থাকে এবং স্মৃতি শক্তি কম হ্রাস পায়।
 
বিভিন্ন অসুখ থেকে মুক্তি
সুখী দম্পতিদের কখনো টাইপক-২ ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা, ফাইব্রোমাইলজিয়া মত অসুখ হতে দেখা যায় না।  যেকোনো জিনিস নিয়ে অতিরিক্ত মানসিক চাপ শরীরে উপর খারাপ ভাবে প্রভাব ফেলে। তাই সুস্থ থাকতে হলে সুখী দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করা অতীব জরুরী।  সূত্র: উর্বশী, জাগো নিউজ

বিয়ের আগে বিয়ের পরে

‘বিয়ের আগে অসম্পূর্ণ ছিলাম, বিয়ের পর একদম বরবাদ হয়ে গেছি।’ কমেডিয়ান হেনরি ইয়াংম্যানের স্রেফ রসিকতা এটি। শুনে তো হাসবেনই, তবে একবার হয়তো নিজের বিয়ের পর প্রথম দিনকার কথাগুলোও মনে পড়ে যাবে।

সারা রাত পড়াশোনা বা অন্যান্য কাজ করে ভোরের আলো ফোটার পর ঘুমাতে যাওয়ার অভ্যাস যে মেয়েটির, তাঁকে হয়তো বিয়ের পর ১১টা বাজতেই ঘুমানোর আয়োজন করতে হয়। মশারি খাটালেই দম বন্ধ হয়ে যেত যাঁর, তাঁর স্বামীর হয়তো একটি মশার গুনগুন কানে গেলেই ঘুম হারাম হয়ে যায়। পরিপাটি খাবার টেবিলে সবাই একসঙ্গে বসে খাওয়ায় অভ্যস্ত মেয়েটির, শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা হয়তো টেলিভিশনের সামনে বসেই কোনোমতে খেয়ে নেন।

ঝাল খাওয়ার একদমই অভ্যাস ছিল না মেয়েটির। কিন্তু শ্বশুরবাড়িতে সবাই খুব ঝাল খান। এক বছর চেষ্টা করেও মানিয়ে নিতে পারেননি মেয়েটি এই খাদ্যাভ্যাসে। এখন বাধ্য হয়েই নিজের জন্য আলাদা রাঁধার ব্যবস্থা করে নিতে হয়েছে। তাতে শাশুড়ি একটু ক্ষুণ্ন হয়েছেন, কিন্তু খাওয়াদাওয়ার কষ্ট থেকে তো মুক্তি পেয়েছেন তিনি। এ নিয়ে রোজকার খিটিমিটিও আর হয় না এখন। নাম না প্রকাশ করার শর্তে এমনই জানিয়েছে তিনি।

বিয়ের আগের জীবন আর বিয়ের পর—দুটোয় আকাশ-পাতাল তফাৎ, এমন বলেন অনেকেই। তবে সেই নতুন জীবনেও তো মানিয়ে নিতে হবে। আর সেজন্য চাই ধৈর্য আর ইচ্ছাশক্তি।

মনিকা’স বাঁধন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মনিকা পারভীন দীর্ঘদিন ধরে দম্পতিদের পরামর্শদাতা

হিসেবেও কাজ করছেন। তিনি মনে করেন, প্রেম করে বিয়ে করা জুটিদের মধ্যে একটা বোঝাপড়া আগেই তৈরি হয়ে যায়। একটু সতর্ক থাকতে হবে সম্বন্ধ করে বিয়ে হলে বা বিয়ের পর যৌথ পরিবারে থাকতে হলে। নতুন জীবনে সমস্যা হলে সেটা লুকিয়ে রেখে লাভ নেই। বরং বলে ফেলাতেই দুজনের বোঝাপড়া তৈরি হওয়া সম্ভব। তবে এখানেও খুব সাবধান। ‘বলার ধরন আর বলার সময় দুটোই খুব গুরুত্বপূর্ণ। একটা কিছু হলেই অনুযোগ না করে বরং পরে অন্তরঙ্গ সময়েও ভালোভাবে সেটি বুঝিয়ে বলা যায়। হাসিঠাট্টার মধ্যে বলা গেলে তো আরও ভালো।’ বলেন মনিকা পারভীন।

বাথরুম ভেজা থাকাটা হয়তো দারুণ বিরক্তিকর আপনার কাছে। অথচ স্বামী বাথরুমে যাওয়া মানেই পুরো বাথরুম ভিজে একাকার হওয়া। এমনকি কোনো দিন হয় যে সেই ভেজা বাথরুমে পা পিছলে গেল তাঁরই। তখন ঠাট্টা করে বলতে পারেন, ‘দেখলে তো তুমিই ভুগলে’। এভাবে বললে তিনি নিশ্চয়ই আরও সতর্ক হবেন। তিনি বাথরুম থেকে বের হওয়া মাত্রই চেঁচামেচি করাটা কোনো সমাধান নয়। আর এটাও মেনে নিতে হবে দশটা সমস্যার মধ্যে হয়তো সাতটির সমাধান হবে। বাকি তিনটি মানিয়ে নিতে হবে।

যৌথ পরিবার হলে শুরু থেকেই পরিবারের সবার সঙ্গে মিশতে হবে। অনেকেই ভাবেন, বিয়ের পর একটু চুপচাপ থাকি। কিছুদিন পর থেকে সংসারের কাজ করব, সবার সঙ্গে অন্তরঙ্গতা বাড়াব। এই মনোভাবও ঠিক নয় বলে মনে করেন মনিকা।

বাপের বাড়ির সুবিধাগুলো একটি মেয়ে শ্বশুরবাড়িতে এসে পাবেন না, তা কিন্তু নয়। তবে শুরুতেই নিজের সমস্যা বা অভ্যস্ততার ব্যাপারগুলো বলা ঠিক না। আর বলতে হলেও স্বামীকেই প্রথম বলা উচিত। তিনিই অন্যদের বুঝিয়ে বলবেন।

সকালে ঘুম থেকে উঠে নাশতা বানাতে হবে, ঠিক তা হয়তো এখনকার শাশুড়িরা আশা করেন না। কিন্তু উঠে একটু রান্নাঘরে যাওয়া, পরিবেশন করা, এটুকু করলে তিনি খুশি হন। এভাবে সম্পর্কটা সহজ হয়ে এলে একসময় তিনিই খেয়াল করবেন আপনার অসুবিধাগুলো। আর সঙ্গে সঙ্গেই সমস্যার কথা না বলে একটু সময় নিন। ভেবেচিন্তে পরে এ নিয়ে আলোচনা করুন।

রুহিনা তাসকিন (প্রথম আলো)

চার্চ

১৮৭২ সালের খ্রিস্টান ম্যারেজ এ্যাক্ট অনুযায়ী খ্রিস্টানদের বিয়ে সম্পাদিত হয়। খ্রিস্টান বিয়ে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং একটি পবিত্র চুক্তি।
খ্রিস্টান বিয়ে লিখিত মাধ্যমে সম্পাদিত হয় এবং রেজিষ্ট্রি বাধ্যতামূলকভাবে করতে হয়।খ্রিস্টান বিয়ের ক্ষেত্রে যিনি বিয়ে সম্পাদন করবেন তিনিই বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করবেন। খ্রিস্টান বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের প্রয়োজনীয় ধাপগুলো হলো:

১)  বিয়ের পাত্র-পাত্রীর পুরো নাম ও ডাক নাম এবং পেশা বা অবস্থা
২)  পাত্র-পাত্রীর আবাসস্থল ও বাসস্থানের ঠিকানা
৩)  পাত্র-পাত্রী কতদিন ধরে ঐ এলাকায় বসবাস করছে তার প্রমাণ পত্র
৪) বিয়ে সম্পাদনের চার্চ বা অন্যকোন স্থান
নোটিশ প্রাপ্তির পর চার্চের ধর্মযাজক নোটিশটি খোলা জায়গায় লাগিয়ে দেবেন। যাতে নোটিশটি সকলের নজরে আসে। এভাবে নোটিশ কয়েক সপ্তাহ ঝোলানো থাকবে যাতে কারো কোনো আপত্তি থাকলে তিনি যেন আপত্তি করতে পারেন। যদি কোন আপত্তি না পান তাহলে চার্চ প্রধান বিয়ের পক্ষগণের নিকট থেকে একটি ঘোষণা গ্রহণ করবেন।
এই ঘোষণাটি বিয়ের পক্ষগণ ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির হয়ে দিবেন যাতে থাকবে-

১) বিয়ের পাত্র-পাত্রীর মধ্যে জানামতে এমন কোন ঘনিষ্ট আত্মীয়তা বা রক্তের সম্পর্ক নেই যাতে তাদের বিয়েতে আইনসম্মত বাধা আছে।
২)বিবাহের পাত্র-পাত্রী দুজনেই আইন অনুযায়ী সাবালক।

এই ঘোষণা সম্পন্ন হওয়ার কমপক্ষে ৪ দিন পর চার্চের ধর্মযাজক বিয়ের আবেদনকারীকে একটি সার্টিফিকেট প্রদান করবেন।সার্টিফিকেট জারির ২ মাসের মধ্যে বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
ঢাকার কিছু চার্চ এ্রর  তথ্য নিচে তুলে ধরা হলঃ

১) ঢাকা  ইন্টারন্যশনল  খ্রিস্টান চার্চ ( গুলশান-২)
২) মিরপুর ব্যপ্তিস্ট চার্চ। (সেনপারা, ঢাকা-১২১৬)
৩) ঢাকা চার্চ অব খ্রীস্ট সোসাইটি (ইন্দিরা রোড,ফার্ম গেট,তেজগাঁও ঢাকা।)