বিয়ে একটি পারিবারিক বন্ধন। বিয়ের মাধ্যমে দুই হাত এক করে নেয়া হয় সারাজীবন একসঙ্গে চলার শপথ।
এছাড়া বিয়ে রেজিস্ট্রেশন ও আইনগত যে বিধান রয়েছে তাতে স্বামী -স্ত্রী উভয়েরই স্বার্থ রক্ষার কথা বলা হয়েছে। ধর্মগত কারণে মুসলমান, হিন্দু ও খ্রিস্টান ধর্মের বিয়েতে রীতিনীতি আলাদা।
তবে আমাদের দেশে খ্রিস্টীয় বিয়েতে দেশীয় রীতি, কৃষ্টি ও সামাজিক মূল্যবোধ উপলব্ধি করে লোকাচার ও স্ত্রী আচার মিলে একটি নান্দনিক, আনন্দময় ও সুন্দর রূপ দেয়া হয়েছে। আসুন জেনে নিই খ্রিস্টীয় বিয়ের রীতিনীতি।
কনে নির্বাচন: খ্রিস্টান বিয়েতে সবার প্রথমে যে কাজটি করা হয় সেটি হলো কনে নির্বাচন। বরপক্ষ সাধারণত কনের চরিত্র, দোষ-গুণ, বংশ পরিচয় জেনে কনে নির্বাচন করে থাকেন।
প্রস্তাব : কনে পছন্দ হওয়ার পর শুভদিন দেখে বরপক্ষ কনের বাড়ি যায়। তাদের উদ্দেশ্যের কথা জানায় ও বিয়ের প্রস্তাব দেয়।
বাগদান: বর ও কনেপক্ষ রাজি থাকলে বাগদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বাগদান উপলক্ষে পান, সুপারি, বিজোড়সংখ্যক মাছ আয়োজন থাকে।
আশীর্বাদ গ্রহণ: এই অনুষ্ঠানে বরপক্ষের লোকজন কনের বাড়িতে যায়, যা আগেই কথা বলে ঠিক করে রাখা হয়। এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত বর-কনে সবার আশীর্বাদ গ্রহণ করে।
নাম লেখা: বিয়ের ৩ সপ্তাহ আগে কনের বাড়িতে পুরোহিতের কাছে বর-কনে নাম লেখান। অনেকে এ অনুষ্ঠানে আতশবাজি ও বাজনার আয়োজন করে।
বান প্রকাশ: এই অনুষ্ঠানে বর-কনে বিয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়। মণ্ডলীর বিধি অনুযায়ী এ সময় বিয়ের ক্লাস করতে হয়। এটি বিয়ে-পূর্ব ব্যাধতামূলক ক্লাস ব্যবস্থা।
অপদেবতার নজর: নাম লেখা থেকে শুরু করে বিয়ের আগ পর্যন্ত বর-কনেকে অতি সংযমী জীবন করতে হয়।
অনেকে এ সময় ভূত-প্রেত ও অপশক্তির নজর থেকে রক্ষার জন্য ‘রোজারি মালা’ বা ‘জপমালা’ গলায় পরেন।
কামানি বা গা-ধোয়ানি:
বিয়ের আগের রাতের অনুষ্ঠানকে গা-ধোয়ানি বলে। অনেক খ্রিস্টান সমাজে এই দিন গায়েহলুদ মাখিয়ে জাঁকজমকের সঙ্গে অনুষ্ঠান করা হয়।
কনে তোলা:
বিয়ের দিন ভোরে বাদকদলসহ বরের আত্মীয়স্বজন কনের বাড়ি গিয়ে কনেকে নিয়ে আসে। কনেকে ঘর থেকে আনার সময় তার হাতে পয়সা দেয়া হয়।
কনে বাড়ি থেকে আসার সময় সেই পয়সা ঘরের মধ্যে ছুড়ে ফেলে। এর অর্থ হলো যদিও সে বাড়ি থেকে চলে যাচ্ছে, তারপরও বাড়ির লক্ষ্মী ঘর থেকে চলে যাচ্ছে না।
গির্জার অনুষ্ঠান:
শুরুতে গির্জার প্রবেশপথে যাজক বর-কনেকে বরণ করে নেয়। তারপর বর-কনে দুজনের মধ্যে মালাবদল করা হয়। এরপর কনের সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দেয়া হয়।
ঘরে তোলা:
এই অনুষ্ঠানে উঠানের দিকে মুখ করে বড় পিঁড়ির উপরে বর-কনেকে দাঁড় করানো হয়। এরপর বর-কনে সাদা-লাল পেড়ে শাড়ির উপর দিয়ে হেঁটে ঘরে ওঠে। এ সময় বর ও কনে একে অপরের কনিষ্ঠ আঙুল ধরে থাকে।
ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বিয়ের ক্ষেত্রে ১৮৭২ সালের বিশেষ বিয়ে আইন রয়েছে। এই আইন অনুযায়ী বিশেষ বিয়ের জন্য একজন রেজিস্টার থাকে।
প্রথমত বৈধ বিয়ে করা হচ্ছে এই হিসেবে এফিডেভিট করতে হয়, পরে রেজিস্টারের কাছে হলফনামা জমা দেয়।
এর ১৪ দিন পর একটি নোটিশ দেয়া হয়। পরে নোটিশ নিয়ে রেজিস্টারের কাছে গেলে বিয়ে নিবন্ধিত করা হয়