প্রিয় পুরুষটির কানে কানে বলুন …

প্রশংসা শুনতে নারীরা অনেক বেশী ভালোবাসেন, কিন্তু তাঁরা প্রশংসা করেন কি? যদি মনে করে থাকেন যে পুরুষেরা প্রশংসা শুনতে চান না, তাহলে খুবই ভুল করছেন আপনি। বরং পুরুষেরা তার সঙ্গিনীর মুখ থেকে কিছু বিশেষ কথা শোনার জন্য মুখিয়ে থাকেন। আর যখন এই বাক্যগুলোই সঙ্গিনী তাঁকে নিয়মিত বলেন, প্রেমিকা বা স্ত্রীর জন্য পুরুষের ভালোবাসা অনেকটা বেড়ে যায় তখন। ভালোবাসার সম্পর্কটিকে করে তুলতে চান অনেক বেশী মধুর? প্রিয় পুরুষের কানে কানে বলুন এই কথা গুলো।

১) তিনি একটা চমৎকার কিছু করলে মন খুলে উচ্ছসিত হতে তার প্রশংসা করুন আর দেখুন মুখটা কেমন আলোকিত হয়ে উঠেছে তাঁর।
২) প্রিয় পুরুষকে প্রায়ই জানান যে তাঁর প্রেমিকা বা স্ত্রী হতে পেরে আপনি গর্বিত।
৩) তিনি দিনশেষে বাড়ি ফিরে এলে জানান যে আপনার খুব ভালো লাগছে তাঁকে কাছে পেয়ে।
৪) তাঁকে কখনো জানাতে ভুলবেন না যে আপনি তাঁকে চোখ বুঝে বিশ্বাস করেন ও ভরসা করেন।
৫) “আমি জানি তুমি সবসময় ঠিক কাজটি করবে”- এই একটি কথা আপনার পুরুষকে অসাধ্যও সাধন করতে উদ্বুদ্ধ করবে।
৬) যত যাই হোক, আপনি যে সর্বদা তাঁর পাশে আছেন সে কথা জানাতে ভুলবেন না।
৭) তাঁর আশ্রয়ে যে আপনি নিরাপদ অনুভব করেন, স্বস্তি অনুভব করেন- সেটাও তাঁকে জানাবেন প্রায়ই।
৮) নিজে ভুল করলে সেটা স্বীকার করুন আর খুব মিষ্টি করে বলুন যে “আমি তোমাকে বুঝতে ভুল করেছিলাম”।
৯) “স্যরি” বলতে শিখুন। মেয়েরা সাধারণত স্যরি বলতে চান না। আর তাই নারীর দুঃখপ্রকাশ পুরুষের কাছে কোন ভালোবাসার বাক্যের চাইতে কম নয়।
১০) স্বামীকে প্রায়ই জানাবেন যে তাঁকে বিয়ে করে আপনি কতটা সুখী।
১১) যে কোন ব্যাপারেই স্বামীর মতামতকে গুরুত্ব দিন। তাঁকে জানান যে তাঁর মতামত কতটা গুরুত্বপূর্ণ আপনার কাছে।
১২) স্বামীকে মূল্যায়ন করুন, তাঁর ভালোবাসার ও কাজের সঠিক মূল্যায়ন প্রকাশ করতে যা যা বলতে হয় বলুন।
১৩)তিনি একজন ভালো বাবা বা কোন একদিন ভালো বাবা হবেন, সেটা জানাতেও ভুল্বেন না।
১৪) ক্ষমা করতে শিখুন আর সেটা সুন্দর করে প্রকাশ করতেও।
১৫) সর্বোপরি, সুন্দর করে ভালোবাসি বলতে শিখুন। কেবল “আই লাভ ইউ” নয়, এমন ভাবে ভালোবাসি বলুন যেন তা প্রিয় মানুষটির মন পর্যন্ত পৌঁছে

সূত্রঃ ডেইলীলাইফস্টাইল 

সুসম্পর্কের জন্য চাই ‘কাডলিং’ বা ‘আলিঙ্গন’

ভালোবাসা ও ভালোলাগার কোন দিন নেই৷ তবু্ও ভ্যালেন্টাইন উইকে একটি বিশেষ দিন রাখা হয়েছে শুধু মাত্র আলিঙ্গনের জন্য, ‘আলিঙ্গন দিবস’। আর সে আলিঙ্গনটি হতে পারে প্রিয় মানুষ, প্রিয় প্রাণীটির সঙ্গেও।  যখন মন খারাপ থাকে, কারো সঙ্গ পেতে ইচ্ছে করে তখন নিশ্চয়ই আমরা চাই প্রিয় মানুষটিকে জড়িয়ে ধরে একাকিত্ব কাটিয়ে উঠতে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, মানুষকে আলিঙ্গন করলে, এমনকি পোষা প্রাণী এমনকি টেডি বিয়ারকেও জড়িয়ে ধরলে স্বাস্থ্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।

অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষে মানুষে আলিঙ্গন এমনকি সামান্য স্পর্শ প্রয়োজন সার্বিক মানসিক ও ইমোশনাল ভালো থাকার জন্য।  বিশেষ করে আলিঙ্গন মনোগত বিকাশ উন্নত করে, রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা উজ্জীবিত করে, স্ট্রেস হরমোন কর্টিসোল মান কমায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

কাউকে জড়িয়ে ধরার ফলে সম্পর্ক আরও গাঢ় ও সুন্দর হয় বলে মনে করা হয়।  বিশেষজ্ঞরাও বলছেন,

সুসম্পর্কের জন্য চাই ‘কাডলিং’ বা ‘আলিঙ্গন’।  সম্পর্কে নৈকট্য ভীষণভাবেই জরুরি। একে অপরকে অনুভব করার মধ্যে দিয়েই প্রাণ পায় সম্পর্ক। সম্পর্কে স্পর্শের গুরুত্ব তাই অপরিসীম। ব্যস্ততার কারণে আমরা অনেক সময় সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্কে এতোই দূরত্ব তৈরি করে নেই, যে পাশাপাশি দুজন মানুষ হয়তো বাস করছি, কিন্তু কেউ হয়তো কারও স্পর্শও পাচ্ছে না। এতে দুজনের সম্পর্কে দূরত্ব আরও বাড়ছে আর হালকা হচ্ছে মনের বাঁধনও। বাড়তি সময় পাচ্ছেন না, ঘর থেকে বের হওয়ার সময় প্রিয় মানুষটিকে একটু কাছে নিয়ে বিদায় বলুন, সারাদিন এই ভালোলাগা ঘিরে রাখবে দুজনকেই। এবার সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে একটু ভালোবাসার ছোঁয়ায়ই তাকে ওয়েলকাম করুন। সারাদিনের কাজ শেষে মুভি দেখতে বসেছেন, মাথাটা তার কাঁধে রাখতেই পারেন। গুড মর্নিং আর গুড নাইট বলার অভ্যাস না থাকলে আজ থেকেই শুরু করুন, প্রিয়জন দূরে থাক বা কাছে, ভালোবাসার একটু ছোঁয়া যেন সে অনুভব করে ২৪ ঘণ্টা, সপ্তাহে সাত দিন…পুরো বছর, সারা জীবন।

সুসম্পর্কের জন্য ‘কাডলিং’ বা ‘আলিঙ্গন’ প্রয়োজনয়ীতার পেছনে বেশকিছু যুক্তি দিয়েছেন গবেষকরা। আমাদের আজকের এই প্রতিবেদনে সেই যুক্তি সকল তুলে ধরা হল-
১। ‘কাডলিং’ আপনার মনকে খুশি রাখে।  সম্পর্কে ইতিবাচক এনার্জি দেয়।
২। ‘কাডলিং’ ব্যথা, যন্ত্রণারও উপশম ঘটায় এবং মানসিক চাপ কমায়।
৩।  পার্টনারের সঙ্গে বন্ডিংকে আরও পাকা করে।
৪।  ‘কাডলিং’য়ের ফলে সবাই নিজেকে নিরাপদ অনুভব করে।
৫।  সম্পর্কে মনোমালিন্য কমে।
৬।  উষ্ণতা সম্পর্কের একঘেয়েমি কাটিয়ে বৈচিত্র্য আনে।
৭। ‘কাডলিং’-এর মাধ্যমে আপনি যে তাকে বিশ্বাস করেন, তা কথায় না বলেও বুঝিয়ে দেওয়া সম্ভব।

এই সবদিক বিবেচনা করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘কাডলিং’ আপনাকে আরও হাসিখুশি ও স্বাস্থ্যবান করে তোলে। যা আপনাকে একটি সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
সুত্রঃ সংগ্রহিত 

দাম্পত্য জীবনের খুঁটিনাটি

বিবাহ হলো একটা জটিল বাস্তবতা। তাই দাম্পত্য জীবন একেবারে সমস্যা ও সঙ্কটমুক্ত নয়। দাম্পত্য জীবনের বাস্তবতায় চোরের মতো ইচ্ছা-অনিচ্ছা সত্ত্বেও যে কোন সমস্যা প্রবেশ করতে পারে। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, দাম্পত্য সমস্যা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার।  বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন রূপে এর আবির্ভাব ঘটে। দাম্পত্য সমস্যা মূলত সৃষ্টি হয় দু’জনের প্রয়োজনের চাহিদা থেকে।  অর্থাৎ একজনের প্রয়োজনের চাহিদার সঙ্গে অন্যজনের প্রয়োজনের চাহিদার মধ্যে সংঘর্ষ।
দাম্পত্য সমস্যার কারণ:

দাম্পত্য সমস্যার পেছনে ৩ রকমের কারণ রয়েছে।  তা হলো-
১) ব্যক্তি নিজে
২) বিবাহের মূল উপাদানে এবং
৩)বাইরের বা পারিপার্শ্বিক কারণ।

ব্যক্তি নিজে কারণ : বিবাহ একজন পুরুষ এবং একজন নারীর দাম্পত্য বন্ধন। স্বামী-স্ত্রী উভয়ে এক হলেও তারা নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও স্বতন্ত্র জীবনবোধ নিয়ে সমৃদ্ধ। এখানে ব্যক্তি হিসেবে স্বামী-স্ত্রী নিজেরাই দাম্পত্য সমস্যার কারণ হতে পারে।যেমন, স্বামী-স্ত্রীর শারীরিক কারণ। শারীরিক দীর্ঘকালীন রোগব্যাধি, অসুস্থতা, শারীরিক দুর্বলতা, শারীরিক অক্ষমতা, ছোঁয়াচে রোগ, মানসিক বিকারগ্রস্ততা, ট্রম্যাটিক, সাইকিক, নিয়োরটিক, সিজোফ্রেনিক, এলকোহলিক, মানসিক ভারসাম্যহীনতা ইত্যাদি।

আবার ব্যক্তিত্বও একটা কারণ হতে পারে। অন্তর্মুখী ব্যক্তিত্ব যেমন- ঘরকুনো, চাপা স্বভাব, হীনম্মন্য, সন্দেহবাতিক, সঙ্কীর্ণচেতা, নিঃসঙ্গ ও নিয়ন্ত্রণহীন আবেগ। আবার অন্যদিকে বহির্মুখী ব্যক্তিত্ব যেমন- অতিরিক্ত হৈহুল্লোড় স্বভাব, সময়জ্ঞানের অভাব, বাইরে বাইরে সময় কাটানো, বন্ধুসার্কেল নিয়ে আড্ডা মারা, দায়িত্বজ্ঞানহীনতা। দুর্বল ব্যক্তিত্ব যেমন- পরনির্ভরশীলতা, সিদ্ধান্তহীনতা, দায়িত্ব নেয়ার অক্ষমতা, অন্যের কথায় কান দেয়া, গোপনীয়তা রক্ষা না করার দুর্বলতা, মেরুদ-হীন হীনম্মন্য, আস্থার অভাব, খুঁতখুঁতে স্বভাব, নিজস্বতা রক্ষা করার দুর্বল মানসিকতা, সন্দেহপ্রবণ। ব্যক্তিত্বের দম্ভ। যেমন- আত্ম অহমিকা, ব্যক্তিমর্যাদা ক্ষুন্ন, দমনীয় ভাব, নমনীয়তার অভাব, কর্তৃত্বপরায়ণতা, অতিরিক্ত মেজাজ ও আবেগ প্রবণতার অভাব, গ্রহণশীলতার অভাব, প্রবল আত্মমর্যাদা বোধ, স্বার্থপরতা, পেশিশক্তি প্রয়োগের প্রবণতা, অস্বচ্ছলতা, গোয়ার্তুমিভাব, অনাস্থা, আপোসহীন মানসিকতা, জেদ, জবাবদিহিতা আদায়ের ভাব, দোষ খোঁজার মানসিকতা।

বিবাহের মূল উপাদান : দু’জন নর-নারীর পারস্পরিক সম্মতির বিনিময়ই বিবাহ। সম্মতির মধ্যে যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে সেটাই বিবাহের মূল উপাদান। আর দাম্পত্য জীবনে বিবাহ প্রতিশ্রুতি এই উপাদানের অনুপস্থিতি এবং এর অভাবই দাম্পত্য সমস্যার কারণ।  যেমন- ভালবাসার অভাব, বিশ্বাস ও বিশ্বস্ততার অভাব, যৌনাচার, বহুগামিতা, দৈহিক অক্ষমতা, পুরুষত্বহীনতা, পাশবিকতা, দৈহিক মিলনে অনীহা এবং এড়িয়ে চলা, সন্তানদানে অক্ষমতা, দায়িত্বজ্ঞানহীন ভবঘুরে, ভুল সঙ্গী নির্বাচন।

পারিপার্শ্বিক কারণ : এখানে বাইরের কোন শক্তি বা তৃতীয় কোন শক্তি বা পক্ষ পারিপার্শ্বিক কোন এজেন্ট দাম্পত্য সমস্যার কারণ হয়ে আসে। এর মধ্যে পিতা, মাতা, ভাই বোন, শশুর-শাশুড়ি, দেবর-ননদ, কোন মিথ্যা গুজব, অন্যের পক্ষপাতিত্ব মনোভাব, অন্যের অতিরিক্ত আবেগ, সোহাগ, ঈর্ষা, প্রতিহিংসা, মদ-নেশা, অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা, বেকারত্ব চাকরি পেশা, অসৎ ব্যবসা, মোবাইল, ফেসবুক, বন্ধুত্বের সম্পর্ক, অসততা, অতীত টেনে আনা, বশ করা, চাকরির তাগিদে দূরে অবস্থান।

দাম্পত্য কলহ ও তার সমাধান:
ঝগড়া যে দাম্পত্যের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ এই শ্বাশত সত্যটি প্রত্যেক স্বামী-স্ত্রীই মনে মনে জানেন এবং মানেন। হরেক রকম তুচ্ছাতিতুচ্ছ কারণে ঝগড়া যেমন লেগেই থাকে, ঠিক তেমনই ঝগড়া মেটানোর নানা উপায়ের খবরও রাখতে হয় দম্পতিদের। কারণ, দু’জন দু’দিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে থাকলে আর যাই হোক সংসার চলে না। মনেও একটা তেঁতোভাব রয়েই যায়।

* কথা কাটাকাটির সময় হঠাৎ উঠে চলে যাবেন না বা এক্কেবারে চুপ করে যাবেন না। যতটা সম্ভব যুক্তিসহকারে নিজের অভিযোগ বা বিরক্তি বোঝান। উঠে চলে গেলে বা কথা বন্ধ করলে মনে হবে যে আপনি পুরো ব্যাপারটা থেকে পালাতে চাইছেন। কোন সুষ্ঠু সমাধানে আসার জন্য কথার আদান-প্রদান হওয়া খুব জরুরী।

* ঝগড়ার সময় স্বামী বা স্ত্রী সব দোষ চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে গেলে কিন্তু সমস্যা আরও জটিল হয়ে উঠবে। কেউই সহজে নিজের দোষ দেখতে পান না। রাগের মাথায় তো প্রশ্নই আসে না। আর সব ‘সমস্যা’ বা ‘ঘটনা’ নিয়ে আলোচনা করুন। সমস্যা বোঝার সময় বেশি আদর্শবাদী না হয়ে বাস্তববাদী হোন। ‘কী করা উচিত’ না ভেবে ‘কী করলে ভাল হয়’ সেটা বুঝতে পারলে সমাধান হবে।
* ঝগড়ার সময় আপনি হারলেন কি জিতলেন, সেটা পুরোপুরি অপ্রাসঙ্গিক। যা নিয়ে অভিযোগ উঠেছিল সেটার কোন সঠিক রাস্তা পেলেন কি না সেটা ঠিক করাই মূল লক্ষ্য। এই জরুরী ব্যাপারটা ভুলে গিয়ে শুধু ঝগড়ার জন্য ঝগড়া করাটা নিহায়তই ছেলেমানুষি। যদি কথা কাটাকাটির সময় মনে হয় যে দোষটা আপনরাই তাহলে ‘স্যরি’ বলতে বিন্দুমাত্র দেরি করবেন না। বিশ্বাস করুন, এটা হেরে যাওয়া নয়। আপনার সত্যবাদিতার জন্য আপনার স্বামী বা স্ত্রী আপনাকে অনেক বেশি শ্রদ্ধা করবেন।

কীভাবে মেটাবেন ঝগড়া:
আপনি নিজেদের মধ্যে ছোট্ট অশান্তিটাকে জিইয়ে রাখতে চাইছেন না তা বুঝিয়ে দেয়ার জন্য সবচেয়ে সুন্দর উপায় হচ্ছে স্বামী বা স্ত্রীর প্রতি নিজের ভালবাসা দেখানো। ছোট্ট একটা শব্দ ‘স্যরি’ বলুন দেখবেন আর কোন কৈফিয়তের প্রয়োজনই হবে না। প্রবলেম কিভাবে যে মিইয়ে যাবে আপনি তা বুঝতেই পারবেন না। দ্বিতীয় কোন উপায়ে ঝগড়া মিটমাট করার চিন্তা থাকলে এক্ষেত্রে ‘উপহার’ দেয়ার কথাটা মাথায় রাখতে পারেন। ধরুন, আপনার স্বামীর একটা ট্যাব কেনার শখ হয়েছে কিন্তু প্রতিমাসে কোন না কোন খরচ এসে পড়ছে বলে আর কেনা হয়ে উঠছে না। ফলে উনি একটু মনোকষ্টে আছেন। ঝগড়ার পর শান্তি ফেরানোর জন্য না হয় একটু বেশিই খরচ হলো। তবে সব সময় যে দামী জিনিস দিতে হবে এমন কোন কথা নেই। তার পছন্দের খাবারটিও ভাল করে রেঁধে একসঙ্গে খেতে বসে যান। মনের মতো জিনিস পেলে ঝগড়া মিটতে সময়ই লাগবে না। তৃতীয় উপায়টি আরও একটু শক্ত। নিজের ব্যবহারের মধ্যে পরিবর্তন আনুন। আপনি যে অনুতপ্ত তা যদি প্রিয় মানুষটিকে বোঝাতে পারেন, তাহলে আলাদা করে ঝগড়া মেটানোর দরকার হয় না। আর যদি বেশি সঙ্কোচ বোধ করেন তাহলে মোবাইল বা ফেসবুকে মেসেজে ছোট্ট একটা মেসেজ সঙ্গে একটা স্মাইলি।  ব্যস, ঝগড়া খতম!

যা কখনই করবেন না
* ভায়োলেন্সের সাহায্য নেবেন না। বাড়ির জিনিসপত্র ভাঙা বা ছেঁড়া কিংবা স্বামী বা স্ত্রীকে শারীরিক আঘাত দেয়া।
* পরিবারের অন্য সদস্যের জড়িয়ে কাদা ছোড়াছুড়ি।
* পুরনো রেফারেন্স টেনে এনে অশান্তি বাাড়িয়ে তোলা।
* গলা তুলে, আঙুল উঁচিয়ে কথা বলা।
* বাচ্চাদের দাম্পত্য কলহে শরিক করে নেয়া।
* ঝগড়ার জের টেনে কথা বলা বন্ধ বা বিছানা আলাদা করে নেয়া।

নববধূর সাজসজ্জায় নয়, বাড়ির অন্দরমহলও রঙিন, উষ্ণ হয়ে উঠতে পারে সামান্য ফুলের ছোঁয়ায়। ফুল আসলে কোথায় সাজাবেন, কিভাবে সাজাবেন তার কোনো ব্যাকরণ হয় না, আপনার মনের খুশিমতো সাজান। অন্দরমহলে কয়েকটা জায়গা ফুল সাজানোর জন্য আদর্শ। মূল দরজা,সিলিং রুম, সেন্টার টেবিল, বেডরুমের সাইড টেবিল কিংবা ড্রেসিং টেবিল। তাই আপনার নতুন জীবন শুরু করুন সাজ, রঙ এবং ফুলের সৌরভে ভরপুর করে।  সূত্র : দৈনিক জনকণ্ঠ

দাম্পত্য জীবনে সুখী থাকার রহস্য

সুখী দম্পতিরা তাদের প্রতিদিনের ছোট ছোট প্রতিটি মুহূর্ত দুজন মিলে উপভোগ করেন।  ঝগড়াকে তারা প্রাধান্য দেয়না বরং তাদের ঝগড়ার পরের ভালোবাসা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যখন একজন ভালো মনের মানুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবেন, তখন নিজেকে সুখী হিসেবে ভাবতে শুরু করবেন।  তবুও মানুষ কারণে অকারণে ক্ষুদ্র কারণে একে অপরের সঙ্গে ঝামেলা করে বসে।

পছন্দ-অপছন্দ নিয়ে কথা বলুন:
এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে আপনি আপনার পছন্দ অপছন্দ অন্যের মধ্যে দেখতে চাচ্ছেন কি না? নব-বিবাহিত দম্পতির মধ্যে এই ব্যাপারগুলো নিয়ে প্রায়শই খুঁটিনাটি লেগে থাকে। মনে রাখুন আপনি সম্পূর্ণ একজন আলাদা মানুষ। আপনার যেমন পছন্দ আছে তেমনই আপনার সঙ্গী বা সঙ্গিনীরও হয়তো সমান ভাবে পছন্দ অপছন্দের ব্যাপার আছে। আর যদি আপনার সঙ্গীর করা কাজ আপনার একান্তই অপছন্দের হয় তবে তার সঙ্গে কোনো কফিশপ বা তার কোনো প্রিয় জায়গায় বসে যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে বলুন।

একে অপরের হাতে হাত রেখে হাঁটুন :
একে অন্যের হাতে হাত রেখে হাঁটা উষ্ণতা প্রকাশ করে। আপনি তাকে কতটা আগলে রাখছেন তা প্রকাশ পায় এর মাধ্যমে। আপনার সঙ্গী যখন রিক্সায় উঠছে বা রাস্তা পার হচ্ছে তার হাত ধরে রাখুন। এছাড়া বাড়িতে কাজ করার সময় তার হাতে হাত রেখে জানতে পারেন- তার কোনো সহযোগিতা লাগবে কিনা? এতে সে প্রচণ্ড সাহস খুঁজে পাবে। আপনাকে তার আশ্রয় মনে করা মানুষটি আরো নতুন করে শক্তি পাবে নিজের জন্য, আপনাকে ভালোবাসার জন্য।

বিশ্বাস রাখুন :
একটা সম্পর্কের ভিত্তি হচ্ছে বিশ্বাস, আপনি যদি আপনার সঙ্গীকে বিশ্বাস না করেন তবে সুখি দম্পতি তো দূরের কথা আপনি আপনার জীবনটা অনুভব পর্যন্ত করতে পারবেন না।

এক সাথে ঘুমোতে যাওয়া :
যদিও এটি আপনার কাছে শুনতে নিতান্তই সাধারণ মনে হবে তবে এর কার্যকারিতা রয়েছে। যখন আপনার সঙ্গীর সঙ্গে একই সময় ঘুমোতে যাবেন সেই সময়ে আপনাদের মধ্যে কথাবার্তা হবে। সারাদিন কে কী করলো তা জানা যাবে। আগামীকাল কী করা যায় বা কী করতে চাচ্ছেন তা নিয়েও কথা বলা যায়। এতে একজন আরেকজন সম্পর্কে জানতে পারে। আর এটি চাকরিজীবীদের জন্য খুব উপকারী। হয়তো দুজনেই কাজের জন্য বাইরে থাকার কারণে কথা তেমন বলা হয়না। তাই আপনার মনে জমে থাকা কথাগুলো সেই সময় তার সাথে ভাগাভাগি করে নিন।

ক্ষমা করতে শিখুন :
আর ভুল ভ্রান্তি সবার মাঝেই আছে।  আপনি নিজেও জানেন আপনার নিজের অনেক সমস্যা আছে। তাই আপনার সঙ্গীর করা কাজকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখুন। দেখবেন আপনার সঙ্গীও আপনাকে একইভাবে দেখছে।  ক্ষমা করার শক্তি অর্জন করা উচিত। একদিনেই কোনো সম্পর্ক গড়ে ওঠে না। কোনো ভুল হলে প্রথমেই সে ভুল ভেঙ্গে দেয়া উচিত। কারণ ভুল বোঝাবুঝি দুজনের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করে।

আলিঙ্গন করুন :
আপনার সারা দিনের কাজ হয়তো আপনাকে আপনার নিজের থেকেও একটু ছুটি দেয়না। আর আপনার স্বামী বা স্ত্রীর জন্য সময় বের করা হয়তো খুব কঠিন। তাই আপনি যখন বাড়ি ফিরবেন ঘরে ঢুকে তাকে আলিঙ্গন করুন, সারাদিন তার কেমন কাটলো জিজ্ঞেস করে নিন। দেখবেন আপনার নিজেকে খুব সুখী মানুষ বলে মনে হতে শুরু করবে।

ধৈর্য :
দাম্পত্য জীবনের পুরো সময়টাই হানিমুন মুডে থাকতে পারবো…এটা ভাবাটা বোকামি এবং এটা ভাবলে বড় ধরনের ধাক্কা খেতেই হবে। জীবনে দুঃসময় আসবে, জীবনের বিভিন্ন পর্যায়গুলো পার হতে হবে। তাই এমন অবস্থায় ভেঙ্গে পরবেন না। ধৈর্য ধরে এগিয়ে যেতে পারলেই সংসার সুখের হবে।  সুখী বিবাহিত জীবন ধরে রাখা বা ভালোবাসা অটুট রাখার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো মেনে চলার প্রতি উৎসাহ দেন বিশেষজ্ঞরা।

সেগুলো হলো:

# একে অপরের জন্য ছোট ছোট কাজে সাহায্য করা। এতে পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা বোধ অটুট থাকবে। যেমন, চা তৈরি করে দেয়া, বাচ্চাকে সাহায্য করা, সংসারের কাজে একে অপরকে সাহায্য করা।

# প্রতি সপ্তাহে অন্তত দু’ঘণ্টা করে আপনার চিন্তা-ভাবনাগুলো আদান-প্রদান করতে পারেন।  টানা দু’ঘণ্টা সময় বের করতে না পারলে প্রতিদিন অন্তত অবসর সময়টুকো একত্রে বসে কথা বলুন। সব সময় যে প্রয়োজনীয় কথা বলতে হবে, তা নয়।

# দু’জনেই দুজনের জন্য সময় বের করুন। দু’জনেরই ভালোলাগা বা শখের বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিন। দু’জন এক সঙ্গে পছন্দের রেস্তোরায় খেতে বা সিনেমা দেখতে যেতে পারেন। এক সঙ্গে সময় কাটানোও খুব গুরুত্বপূর্ণ।

# মাঝে মধ্যেই একে অপরকে সারপ্রাইজ দিতে পারেন। একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করুন। তাকে নিয়ে বিশেষ একটি রেস্তোরায় খেতে যান। সাপ্তাহিক ছুটির দিন সুন্দর কোথাও বেড়াতে যেতে পারেন।।

# সঙ্গীকে প্রেমপত্র লিখতে পারেন। নতুন প্রেমপত্র লিখে পরস্পরের প্রতি ভালোবাসার না বলা কথাগুলো প্রকাশ করুন। এসব পত্রে থাকতে পারে পরবর্তী রোম্যান্টিক নানা পরিকল্পনার কথা। চিঠি লিখে পোস্টের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেন, যদিও এক সঙ্গেই থাকছেন আপনারা। তাতে কি? করেই দেখুন, খারাপ লাগবে না আর সম্পর্কটাও মজবুত হবে।

সূত্র : বিডিলাইভ ডেস্ক 

শরীর কেন্দ্রিক দাম্পত্য কতটুকু সুখের!

শিরোনামের কথাগুলো উল্টো করে বলি, ‘কেবল শরীর দিয়ে কি দাম্পত্য হয়?’  উত্তর হচ্ছে, ‘না, হয় না।’ কেবল শরীর দিয়ে দাম্পত্য হয় না।  দাম্পত্যে শরীরটা একটা অংশ বটে, কিন্তু সম্পর্কের সবটুকু শরীর কেন্দ্রীক নয়।   এই শরীরকে সবটুকু ভাবতে গেলেই তৈরি হয় যত গোলযোগ।  আমাদের সমাজে প্রায়ই দাম্পত্য সম্পর্ক শরীর থেকে শুরু হয়।  অল্প বয়সের আকর্ষণকে আমরা প্রায়ই প্রেম ভেবে ভুল করি, সেই ভুলে আবার ভুল একজন মানুষকে বিবাহের বন্ধনে বেঁধেও ফেলি। অন্যদিকে অ্যারেঞ্জ ম্যারেজের ক্ষেত্রে পরিবারই আমাদের জন্য নির্ধারণ করে দেয় সঙ্গী। বিয়ের আয়োজন হয়, বিয়ে হয়, সংসার হয়, শরীরের সম্পর্কও হয়। তারপর আসে মনের জানাশোনার পালা, তারপর তৈরি হয় দাম্পত্য।

এই মনকে জানতে-শুনতে গিয়ে যদি মনের মিলটাই না হয়, তখন? তখনই শুরু হয় টানাপোড়েন, জীবনের দেহজুড়ে পাওয়া, না পাওয়ার দীর্ঘ হিসাব-নিকেশ। সম্পর্কের ব্যবচ্ছেদ, যন্ত্রণাময় কাটাকুটি।  অনেকেই ভাবতে পারেন, ‘এক ছাদের নিচে থাকছি, ছেলেপুলে হয়েছে, সংসার আছে, নিয়মিত যৌন সম্পর্ক হচ্ছে – দাম্পত্যে আর কী চাই?’
সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসটাই কিন্তু ভুলে গেলেন।  সেটা হলো মনের মিল।  দাম্পত্য সম্পর্কে মনের মিলটাই কিন্তু সবার আগে চাই।

একটা বয়সের পর শরীরের পাশাপাশি মনেরও একটা চাহিদা তৈরি হয়, তীব্র একটা দাবি তৈরি হয়। বয়স যত বাড়ে, সেই দাবিটিও তত বাড়ে।  আর সেই দাবি যদি পাশের মানুষটি পূরণ করতে না পারে, দাম্পত্যে তখন সংঘাত অবধারিত।  তখন শুরু হয় জীবনজুড়ে কাটাকুটির অঙ্ক আর সম্পর্কের যন্ত্রণাময় ব্যবচ্ছেদ।   কারো কারো সম্পর্ক মোড় নেয় পরকীয়ার দিকে।  নিজের দাম্পত্যে যা নেই, সেটাই পাওয়ার আশার কেউ কেউ হাত বাড়ান অন্যদিকে।

অনৈতিক কিছু সম্পর্কে জড়িয়ে গিয়ে আরও এলোমেলো হয়ে যায় সম্পর্কের সুতো।   সত্যি বলতে কী, শরীর আর মন কিন্তু প্রায়ই আলাদা হয়ে যায়।  বিশেষ করে তখন, যখন আমরা ধরে নিই দাম্পত্যের অর্থ কেবল যৌন সম্পর্কের বৈধতা কিংবা সন্তান জন্ম দেওয়ার আয়োজন।  এসবের বাইরে দাম্পত্য অনেক বড় কিছু।  দাম্পত্য মানে বন্ধুত্ব, দাম্পত্য মানে এই বিশাল বড় পৃথিবীতে নিজের একটি ছোট দুনিয়া। সেই দুনিয়ায় আমি, আমরা নিরাপদ, যেখানে সবাই আপন।

মা-বাবার পর নিজের স্বামী বা স্ত্রীই জগতে সবচেয়ে আপন।  সবচাইতে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক এই মানুষটির সাথেই তৈরি হয় আমাদের, জীবনসঙ্গীর সাথেই আমরা পার করি জীবনের একটি বিশাল অংশ। তাহলে ভাবুন তো, সেই মানুষটির সাথে মনের মিল না হলে কি চলে? যার সাথে জীবন কাটাচ্ছেন, তিনি ব্যতীত অন্য কারো সাথে মনের মিল করার চেষ্টা করলে কি কখনো সুখী হতে পারবেন?

উত্তর হচ্ছে, ‘না, পারা যাবে না।’  সম্পর্কের পৃথিবীর কিছু নিজস্ব সমীকরণ আছে, সেই সমীকরণ মানতে হয়।  দাম্পত্যে যদি সুখী হতে হয়, তাহলে সুযোগ করে দিতে হবে শরীর-মনের যুগপৎ সহাবস্থানের। সঙ্গীকে করে নিতে হবে আত্মার আত্মীয়, এমন কেউ যার সাথে বিনিময় করা যায় নিজের সব আবেগ ও অনুভূতি।

কেবল সাথে থাকাই দাম্পত্য নয়, বরং প্রতিটি ক্ষেত্রে পাশে থাকাটাই সত্যিকারের সম্পর্কের নীতি।  সব বন্ধনের সীমা ছাড়িয়ে কেবল মনের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়াটাই আসল দাম্পত্য। মনের বন্ধন সঠিক হলে তারপর শরীর আসবে, সংসার আসবে। সুখের সাথে সন্ধি করে কেটে যাবে জীবন।

তবে, শেষে গিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠতে পারে, ‘শরীর আর মন কি সত্যিই আলাদা? শরীর আর মনকে কি আলাদা করা যায়?’ যায় হয়তো! মাঝে মাঝে আমরা এমন কারো সাথে থাকি, যার সাথে আমাদের মন থাকে না। মাঝে মাঝে মন এমন কারো কাছে থাকে, যার পাশে শরীর যেতে পারে না।
কারণ, এই এক মানবজীবনে শরীর আর মন একসুরে, একই ছন্দে বারবার বেজে ওঠে না। কেবল একজনের জন্যই হয়তো সমগ্র অস্তিত্ব একসাথে সাড়া দেয়। আর সেই একজনকেই হয়তো আমরা আমরা ‘মনের মানুষ’ বলি।  সুত্রঃ  প্রিয় ডট কম

যে কারণে বহু সফল মানুষই ব্যক্তিগত জীবনে অসুখী

বহু মানুষই নানা কারণে নিজেকে অসুখী বলে মনে করতে পারে। এক্ষেত্রে আপনি যদি কর্মক্ষেত্রে সফলতা না পান, কোনো কারণে আশাভঙ্গ হয়, কোনো কাজের সঠিক সমাধানে পৌঁছাতে না পারেন কিংবা শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতায় থাকেন তাহলে এমনটা হতে পারে।  তবে বাস্তবতা হলো, সবকিছু থাকার পরেও বহু মানুষ নিজেকে অসুখী বলে মনে করেন। এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছে আইএনসি।  আপনার যদি কোনো বিষয়ে ঘাটতি থাকে তাহলে নিজেকে অসুখী মনে হতে পারে। কিন্তু বহু মার্কিনির মাঝে দেখা যাচ্ছে সবকিছু থাকার পরও তারা অসুখী। অন্যদিকে বহু মানুষ রয়েছে যাদের কোনো কিছুই নেই। তার পরেও তাদের মনে সুখের ছড়াছড়ি। কিন্তু এর কারণ কি?

একজন মানুষ আর্থিকভাবে নিরাপত্তা পাওয়া, পেশাগত জীবনে সফলতা পাওয়া কিংবা পারিবারিক জীবনে নির্ঝঞ্ঝাট হওয়ার পরও যে সুখী হবেন, এমনটা ভাবার কারণ নেই। কারণ সুখের বিষয়টি অনেকটা আপেক্ষিক। আর এতে বহু মানুষকেই দেখা যায় নিজেকে অসুখী হিসেবে ভেবে নিতে।    সম্প্রতি মানুষের মনের এ সুখের তারতম্যের বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করেছেন ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের বিজনেস প্রফেসর রাজ রঘুনাথায়ন। তিনি তার অনুসন্ধান একটি বইতে তুলে ধরেছেন, যার নাম ‘ইফ ইউ আর সো স্মার্ট, হোয়াই আরনট ইউ হ্যাপি?’ তিনি তার জীবন থেকে নেওয়া শিক্ষা তুলে ধরেছেন এ বইতে।

আপনার সাফল্যের মাপকাঠি কী?
অনেকেই নিজের মনের প্রকৃত অবস্থা জানতে পারেন না। এক্ষেত্রে আপনি উদ্যোক্তা কিংবা পেশাজীবী যাই হন না কেন, জানা থাকা উচিত আমরা কোনো কোনো বিষয়ে খুবই ভালো। সত্যিকার সুখী হওয়ার জন্য আমাদের এ ভালো বিষয়টির প্রতি সন্তুষ্ট হওয়া উচিত। আর উচ্চাকাঙ্ক্ষীদের সব সময়েই নানা দক্ষতা ও অর্জন করতে দেখা যায়। তারা এসব বিষয়ে সাধারণত ভালো হন। তার পরেও তারা সন্তুষ্ট হন না এবং আরও ভালো করার জন্য অসন্তুষ্টিতে ভোগেন।

কিন্তু কেন এ অসন্তুষ্টি? কারণ তারা নিজেদের যে পাল্লায় মাপেন তা ভুল। বহু মানুষই সামাজিক তুলনা করেন তাদের অর্জন বিষয়ে, যা সত্যিই একটি ভয়ঙ্কর বিষয়। এ বিষয়ে রঘুনাথায়ন বলেন, আপনি সব সময়েই সাফল্যকে সবচেয়ে বড় কোনো ব্যক্তির সাফল্যের সঙ্গে তুলনা করেন। এতে অসন্তুষ্টি বেড়ে যায়। কিন্তু আপনার বেতন যদি অনেকখানি বেড়ে যায় তাহলেও আপনি তা এক মাস, দুই মাস বা ছয় মাস পর্যন্ত সন্তুষ্ট থাকেন। তারপর আপনার আরও বেশি বেতনের চাহিদা তৈরি হয়। আর এভাবেই সুখের মাত্রা কমে যায়। এ কারণে সাফল্য মাপার মাপকাঠিটি নতুন করে তৈরি করা প্রয়োজন।

সাফল্য নয় কর্তৃত্ব মাপুন
সাফল্যের বাহ্যিক লক্ষণগুলোর পেছনে আপনি যতই দৌড়াবেন তা ততই আপনাকে বোকা বানাবে। তাই সাফল্যের গতানুগতিক ধ্যান-ধারণা বাদ দিয়ে তাকে কিছুটা ভিন্নভাবে মাপতে হবে। এক্ষেত্রে সাফল্য নয় কর্তৃত্ব মাপাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যখন নিজেকে অন্য মানুষদের সঙ্গে মাপা বাদ দিবেন তখনই আপনার এ অবস্থা পরিবর্তিত হবে। এতে আপনার মনের সুখের মাত্রা বাড়বে। এ বিষয়ে রঘুনাথায়ন বলেন, আপনি যদি অন্যের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করেন তাহলে কোনো বিষয়ের দিকে নিজের দৃষ্টি নিবদ্ধ করার ক্ষমতা কমে যায়। এতে আপনার সাফল্য কমে যায়। নিজের সত্যিকার অর্জনের বদলে অর্থ কিংবা সম্পত্তি অর্জনের দিকে মনোযোগ তৈরি হয়। এছাড়া অন্যকে অনুকরণের প্রবণতা তৈরি হতে পারে। কিন্তু আপনি যখন আরও দায়িত্ব গ্রহণ করতে চাইবেন তখন বিষয়টি পাল্টে যাবে। তাই এ গবেষকের মতে নিজের কর্তৃত্ব বাড়িয়ে নেওয়াই হতে পারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর অর্থ কিংবা প্রতিপত্তি স্বাভাবিকভাবেই আসবে।  সুত্রঃ ডেইলি সান

দাম্পত্য জীবনের টানপোড়ন

একজন মেয়ের স্বামীর ভালবাসা পাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে তার পরিবারকে আপন করে নেয়া।  হাতেগুনা দু’একজন ছাড়া মোটামুটি সব মেয়েই এটা বুঝে। তাই বিয়ের পর সাধারণত খুব কম মেয়েই স্বামীর মা-বাবা কে পর ভাবে।  বিয়ে কেন্দ্রিক পারিবারিক সমস্যাগুলো যা চোখে পরে তার মধ্যে একটা মূল সমস্যা হল, স্বামীর পরিবারকে স্ত্রীর আপন করে না নেওয়া।  কিন্তু অনেক সময় ব্যাপারটির উল্টোটাও ঘটে। আমরা ছেলের পরিবারের সদস্যরাই অনেক সময় তাদেরকে পর ভাবতে বাধ্য করি।  উঠতে বসতে, পদে পদে ভুল ধরে, দোষ বের করে তাদের এমনভাবে অপদস্থ করি যে আমাদের প্রতি তাদের শ্রদ্ধার বোধটুকুও আর অবশিষ্ট থাকে না।

দেরি করে বাসায় ফেরা স্বামীকে কে রাতে সময় দেওয়ার পর সকালে উঠেই সবার জন্য রাস্তা রেডি করতে বা ঘুম থেকে উঠতে আধা ঘণ্টা বিলম্ব হলেই মহারাণী খেতাব দিয়ে খোঁটা দেওয়া, মেয়ের বাড়ির লোকদের নিয়ে কটু কথা বল- এগুলো হরহামেশাই আমরা করি।  আবার স্বামীর কাছে বেয়াদব বউ, অকর্মা বউ ইত্যাদি বলে এমনভাবে তার কান ভারী করে দেই যে বউয়ের প্রতি তার আগ্রহই নষ্ট হয়ে যায়।   এটার ধারাবাহিকতাও খুব খারাপ।  এর ফলে দাম্পত্য জীবনে টানপোড়ন সৃষ্টি হয়। এমনকি বাহিরের নারীদের প্রতি পর্যন্ত তখন আসক্ত হয়।

একজনকে অপদস্থ করতে গিয়ে, ছোট করতে গিয়ে নিজের পরিবারের সদস্য হয়ে আমরা নিজেরাই আরেকজন সদস্যের জীবন এভাবে নষ্ট করি।  একজন মানুষ যে জায়গাতেই থাক না কেন, সে সব সময় একজন ভরসার মানুষ খুঁজে পেতে চায়। একজন মেয়ের ক্ষেত্রে বিয়ের আগে সেই ভরসার জায়গা হয় তার বাবা, আর বিয়ের পর হয় স্বামী।  কিন্তু কোন কারণে যদি সেই ভরসার জায়গাটাও নষ্ট হয়ে যায়, তার মত হতভাগ্য আর কারো হয় না।

আমাদের পুরুষদের জীবন অনেক কঠিন। সব কিছু ম্যানেজ করে চলতে হয়। সন্তান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতে হয়, স্বামী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতে হয়।  দুটো দায়িত্ব ভিন্ন হলেও গুরুত্ব একই। মাকে কখনো বউয়ের সাথে আর বউকে কখনো মা’র সাথে তুলনা করতে হয় না। এই জিনিসটা অনেকেই করে। যখনই তুলনা করা শুরু হয়, তখন থেকেই অশান্তি শুরু হয়।

মা-বাবার প্রতি আমাদের দায়িত্বটা জন্মগত। এটা অবশ্যই পালন করতে হবে, নতুবা এর জন্য পরকালে কঠিন জবাবদিহি করতে হবে। মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের জান্নাত।  স্ত্রীর প্রতি দায়িত্ব হল অর্পিত, যা আমরা নিজেরাই নিজের উপর চাপিয়ে নেই। যে মেয়েকে নিজের ইচ্ছেয় ঘরে আনা হয়, তার দায়িত্বও যদি সঠিকভাবে না পালন করা হয়, তাহলে এর জন্যও আমাদের জবাবদিহি করতে হবে।

বিয়ের পর একজন মেয়ের পরম সাহসই হল তার স্বামী।  স্বামীই হল একজন মেয়ের গর্ব, পৃথিবীর সবচেয়ে আপনজন, তার পরম ভরসার জায়গা।  সেই ভরসাটুকু বজায় রাখাও আমাদের দায়িত্ব।   Source- Dr. Taraki Hasan Mehed

বিয়ে বাড়ির একাল সেকাল

‘হলুদ বাটো মেন্দি বাটো, বাটো ফুলের মৌ। বিয়ার সাজে সাজবে কন্যা নরম সরম বৌ’। আবার ‘এমন মজা হয় না গায়ে সোনার গয়না, বুবুমনির বিয়ে হবে বাজবে কত বাজনা……’

রাতভর এমন সব গান মাইকের শব্দে কানে এলে কাউকে বলে দিতো হত না এটা বিয়ে বাড়িতে বাজছে। সময়টা খুব বেশি আগের নয়, স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেও বেশ কিছু দিন এমন রীতিই ছিল আমাদের দেশে। তখনকার দিনে বেশির ভাগ ছেলেমেয়েকে বিয়ে দেয়া হত খুব অল্প বয়সে। দশ থেকে বার বছরের মেয়ে ঘরে থাকলেই বাবা মা তাদের বিয়ের কথা ভাবা শুরু করে দিতেন। বাড়িতে ঘটকের আসা যাওয়া ছিল খুব অনিবার্য। মেয়েরাও এর মধ্যে মা-চাচির হাত ধরে শিখে নিত ঘরকন্নার বেশ কিছু কাজ। মাথার চুলে খাটি নারিকেল তেল মেখে কুচকুচে কালো করার প্রতিযোগীতা চলতো চাচাতো পাড়াতো বোনদের মাঝে।

বিয়ের ব্যাপারে ছেলেমেয়েদের আবার মত কিসের, বাবা-চাচারা ছিলেন যথেষ্ট। ছেলের হালের গরু আছে বেশ শক্ত পোক্ত, বিঘা কয়েক জমিও আছে। বাড়িতে গোলাভরা ধান, পুকুর, শীতে খেজুর গুড় হয়, শষ্যঘর ভর্তি সবসময়, বেশ কর্মঠ, লেখাপড়া শিখেছে যা তাতে দেশগায়ে চলতে তেমন সমস্যা নেই। এমন ছেলেই তো মুরুব্বিদের কাছে উপযুক্ত হতে যথেষ্ট। মেয়ের বেলায় যোগ্যতা দেখা হত না তা নয়। তার গায়ের রঙ, কাজের যোগ্যতা, মাথার চুল সবই দেখা হত। লেখাপড়া খুব বেশি হওয়ার কি দরকার তবে মুসলিম ঘরের হলে অবশ্যই আরবি পড়তে জানতে হবে, নামাজ কালামের অভ্যাস থাকাটাও জরুরি ছিল। ব্যাস, বাবামায়ের চোখে ছেলেমেয়ে তৈরি বিয়ের জন্য।

যুগে যুগে চলতি নিয়মের ব্যত্তয় ঘটেনি তা নয়। তখনও প্রেম করে পালিয়ে বিয়ে করা বা দুয়েকটি শিক্ষিত পরিবারে মেয়েদের শিক্ষিত করে বিয়ে দেয়ার রীতি ছিল। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চাষী পরিবারে বাবা-মায়ের সিদ্ধান্তে ছেলে মেয়ের বিয়ে হতো।

তখনকার দিনে বিয়ের বিশেষ আনন্দের বিষয় ছিল মাইকে গান বাজানো। পাড়াপ্রতিবেশিরা বিয়ে উপলক্ষে আনন্দ ফুর্তিতে মেতে থাকতো স্বউদ্যোগে। খাবার দাবারের তেমন ঘটা তখন প্রচলিত ছিল না। তবে যে ঘরের ছেলে বা মেয়ে বিয়ে হত, তাদেরকে ঘর থেকে ধান, নারিকেল আর গুড় বের করে দিতে হত। পাড়ার ভাবি, চাচি আর বোনরা পালা করে গান গাইতো আর ঢেকিতে ধান ভানতো। ‘আজ ময়নার গায়ে হলুদ কাল ময়নার বিয়ে…..

এরপর চলতো সবাই মিলে বিয়ের পায়েস রান্না। কেউ লবণ চেখে দিতো, কেউ মিষ্টি, কেউবা জ্বাল দিতো। সবার হাতের স্পর্শে হয়ে উঠতো বড় হাড়ি ভর্তি পায়েস। কখনো তাতে লবণ বেশি বা কমও হতো, মিষ্টির বেলাতেও তাই। তবু এমন পায়েস যেন সবার আরাধ্য ছিল। খুশিতে একে অপরের ওপর লুটোপুটি চলতো অনায়াসে। এবার বিয়ের কনে বা বরের গোসলের পালা। সবার হাতে হলুদ ছোঁয়া আর আর বরণ নিয়ে গোসলের আয়োজন চলতো সকাল গড়িয়ে দুপুর পর্যন্ত। পাড়াপ্রতিবেশির কারো যেন বাড়িতে কাজের তাড়া নেই। বিয়েকে সামনে রেখে আনন্দ ফুর্তিতে মেতে থাকায় ছিল তাদের একমাত্র কাজ। বাড়ির কর্তাদেরও তেমন না থাকতো না।

এবার গোসলের পালা। পুকুর থেকে কলসিতে করে আনা জল উঠানটার ঠিক মাঝখানে সাজানো থাকতো। মাঝখানে বড় পিঁড়িতে বিয়ের বর বা কনে বসবে। ছেলেবুড়ো জড়ো হতো উঠোনের চারপাশ জুড়ে। সবাই উৎসুক নয়নে চেয়ে থাকতো গোসল করানো দেখতে। নতুন রঙিন কুলাতে সাজানো থাকতো দুর্বা ঘাস, ধান আর পান-সুপারি। এবার একে একে ভাবি, বড় বোন, মা-চাচিদের বরণ করার সুনিপুণ দক্ষতা প্রদর্শণের পালা। হাত নাচিয়ে নাচিয়ে, বিশেষ ভঙ্গিতে বিয়ের বর বা কনেকে বরণ করার অকৃত্রিম সে দৃশ্য সবার চোখে লেগে থাকার মতো।

বরণের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বিয়ের বর বা কনেকে আপাদমস্তক সাবানের ফেনায় ঘষে মেজে পরিষ্কার করার আপ্রাণ চেষ্টা চলতো সবার মাঝে। আগের দিনে বেশির ভাগ বিয়ে হতো শীতের সময়। শীতে তুরতুরে বর বা কনের দাঁতে দাঁত ঠকঠকানির সে শব্দ কারো কান পর্যন্ত ঠিক মতো না পৌঁছলেও সবার মাঝে হাস্য রসিকতা চলতো খুব উৎসাহের সঙ্গে। এমনও কিছু কসরত কিছুক্ষণ চলার পর বিয়ের মধ্যমনিকে নিস্তার দেয়া হত নতুন কাপড়ে মুড়ে। শ্বশুর বাড়িতে থেকে আসতো গায়ে হলুদের সরঞ্জামাদি। সরঞ্জামাদি পাঠাতে হতো হবু বর বা কনেকেও। তবে পুরো বিষয়টা বেশ উপভোগের থাকতো মধ্যমনির কাছেও। কারণ এর আগে পাড়াপ্রতিবেশিদের আনন্দের বা আদিক্ষেতার বিষয়বস্তু হওয়ার এমন সুযোগ হয়তো কখনো জোটেনি।

এবার মধ্যমনিকে গোসল করিয়ে পায়েস খাইয়ে রেহাই। তারপর শুরু হত উপস্থিত দর্শকদের মাঝে কাদা আর রঙ মাখামাখি খেলা। গোসল চলাকালেই হয়তো অনেকের গালে, মুখে, মাথায় রঙের বৃষ্টি নেমেছে, কিন্তু টের পায়নি। গায়ে হলুদের পায়েস, গুড়ের জিলাপি, বাতাসা, খই মুড়কি খেয়ে শুরু হত মধুর প্রতিশোধের পালা। কে কাকে কতটুকু উঠানের কাদাজলে চুবাতে পারে, কতটুকু রঙ মাখাতে পারে। এরই মাঝে কেউ তো তৈরি সঙ সেজে। উদ্ভট সাজে উপস্থিত হতেন সবার মাঝে। মুলত সবাইকে নির্মল বিনোদন দেয়া ছিল তাদের উদ্দেশ্য। এর বিনিময়ে সবার কাছ থেকে দু-চার টাকা আদায় করে নেয়াও লক্ষ্য থাকতো। পরে অবশ্য সেটা দিয়ে বনভোজন হতো। হাসাহাসি লুটোপুটি কোনো তাল ছাড়াই পাড়ার নারীদের নাচ ছিল গায়ে হলুদের প্রধান আকর্ষণ। সবার আনন্দ উন্মাদনা দেখে বোঝার উপায় থাকতো না একই পরিবার ভুক্ত নাকি আলাদা পরিবারের সদস্য এরা। এভাবে চলতো বিয়ের দিন পর্যন্ত। কারো বিয়েতে সপ্তাহ জুড়ে গায়ে হলুদ চলতো, তবে তিনদিনের কম হত না।

এবার বিয়ের দিনের পালা। এর আগেই বিয়ের বর বা কনের হাতে মেহেদি পরাতে গিয়ে নিজেদের হাত রাঙিয়ে নিতে ভুলতো না তরুণ-তরুণীরা। তখনকার দিনে বেশির ভাগ বিয়েই পাশের গ্রাম বা পাশের পাড়াতেই হতো। গরুর গাড়ি হতো বাহন। একটু দুরে হলে বড় একটা বাসই যথেষ্ট। এগুলো জরি, ফুল, রঙিন কাগজ, দেবদারু পাতা দিয়ে দিয়ে সাজানো থাকতো আগে থেকেই। সারাদিনের কাজ শেষে বরযাত্রীরা পায়ে হেঁটে, কেউ গরুর গাড়িতে, কেউ সাজানো রিকশায় করে যাত্রা দিতেন বিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে। মেয়ের বাড়িতেও চলতো সাজ সাজ রব। কলাগাছ আর দেবদারু গাছের পাতা দিয়ে সুসজ্জিত বর বরণের তোরণ। ফিতে দিয়ে তোরণ আটকে দেয়া হত। তবে বিয়ের গেটে বাহাজ(বর পক্ষের সঙ্গে কনে পক্ষের কথা কাটাকাটি) হবে না তা কি করে হয়? এটা থাকতো বিয়ে বাড়ির অন্যতম আকর্ষণ। বর পক্ষকে গেট দিয়ে ঢুকতে হলে কনে পক্ষের কাছে টাকা পরিশোধ করতে হবে। সেখানে বাহাজের জন্য উপস্থিত থাকতো শ্যালক শ্যালিকা গোছের লোকজন। আবার কথার মাঝে কিছু ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করার জন্য তথাকথিত জেন্টলম্যান ভাড়া করা হতো। উভয় পক্ষেরই এমন মধুর প্রতিযোগীতার জন্য প্রস্তুতি থাকতো। মেয়ে পক্ষের দাবি থাকতো ছেলে পক্ষের পরিশোধের লক্ষ্যের থেকেও অনেক বেশি। এমন সময় উভয় পক্ষের লেনাদেনার একটা হিসেব এবং তর্ক গিয়ে গড়াতো সেই জেন্টলম্যানদের ওপর। সবাই শুধু এ ওর মুখ চাইতো আর নিজের পক্ষকে উৎসাহ দিয়ে যেত। এটা ছিল হাস্য রসিকতার অন্যতম একটি পর্ব। কারণ গ্রামের অধিকাংশ লোকই তাদের ঝগড়ার মানে বুঝতো না। শুধু বুঝতো ঝগড়াতে জিততে হবে।

অনেকক্ষণ এভাবে চলার পর একটা মিমাংসা পৌঁছনো যেত। তারপর বরকে সরবত খাইয়ে, তাকে দিয়ে ফিতা কাটিয়ে সোজা তার জন্য করা আসনে বসানো হতো। বিয়ের কার্যক্রম মোটামুটি প্রায় শেষের দিক। বিয়ে পড়ানোর পর উপস্থিত সবাইকে শুকুর মিঠাই খাওয়ানো হতো। কোনো কোনো বিয়ের কাজ অবশ্য মসজিদে করা হতো, কোনো বিয়ে হতো বাড়ির সামনে থাকা খানকাহ বা বৈঠক ঘরে। অথবা প্যান্ডেল করে বরের জন্য করা বিশেষ আসনেও বিয়ের কাজ করা হত।

কনেপক্ষ যথা সম্ভব চেষ্টা করতেন বর পক্ষকে মন ভরে খাওয়াতে। বরের খাওয়া শেষে আবার হতো শ্যালিকাদের বায়না। বরের খাবার খাওয়া শেষে হাত ধুয়ে দিতে হবে তাদের। কারণ এর পেছনে দুলাভাইয়ের কাছ থেকে আবার কিছু পাওনা আদায় করার অজুহাত। বরের সঙ্গে থাকা বড় ভাই বা দুলাভাইয়ের হাতও ধুয়ে দেয়া হতো। এবার তাদের সঙ্গে আরেক চোট কথা কাটাকাটি। কিছুটা লেনদেন, পরে মুক্তি। লেনদেনে সন্তুষ্ট না হলে বরের সঙ্গে থাকা দুলাভাই বা বন্ধুদের জুতা সেরে রাখার রীতিটাও বেশ মজার হয়ে উঠতো সবার কাছে।

এরপর চাঁদবদন দেখার পালা। কনেকে সাধ্য মতো নৈপূণ্য দিয়ে সাজিয়েছেন ছোট বোন বা বান্ধবী গোছের অন্য মেয়েরা। কিন্তু বিপত্তি বাধতো নতুন বউয়ের ঘরে প্রবেশের পথে। সেখানে উপস্থিত হতেন কনের দাদি বা ভাবি শ্রেণির অলসের। সে দরজার মুখে অদ্ভুত এক সাজে পড়েই থাকতো। তাকে নাকি কোনো কথা বললেই কানে যায় না। শুধু টাকার কথা বললেই শুনতে পেত। বরপক্ষও দারুণ তামাশা করতো কিছুক্ষণ। টাকা দিতে চাইতো না। কতো রকম টালবাহানা। তবু কোনো কথায় অলসের কানে ঢুকতো না। এদিকে আবার কনের ঘরে তালা দিয়ে চাবিও থাকতো সেই অলসের হাতে। ফলে শেষমেষ তাকে টাকা দিলে কনের ঘরের দ্বার উন্মোচন হতো। এতোটা পথ ঝক্কি ঝামেলা পাড়ি দেয়া যা দেখার অপেক্ষায়, তা অবশ্যই চাঁদবদন।

নতুন বিয়ে হওয়া বর কনেকে একটি ওড়না দিয়ে ঢেকে দিতেন ভাবি বা বোন শ্রেণি। তাদের হাতে দেয়া হত আয়না। সেই আয়নাতেই বর-কনে দুজনের প্রথম দেখা। লজ্জায় হয়তো ঠিকমতো মুখ দুটো স্পষ্ট হতো না। তবে যা দেখতেন তা অবশ্যই হৃদয়ের গভীরে দাগ কেটে যেত। একটা বিমূর্ত ছাপ পড়ে যেত স্থায়ীভাবে। আশেপাশের হাজার কথার ঝলকানি, হাসাহাসি, রসিকতা কোনো কিছুই সেই মুহূর্তকে টলানো দায়।

এরপর আসতো সমর্পণের পালা। উপস্থিত আত্মীয় স্বজন মুরুব্বি সবার সামনে মেয়ের বাবা বা অভিভাবক ছেলের হাতে মেয়েকে তুলে দিতে। কথাগুলো সাধারণত এমন হতো- ‘আমার মেয়ে তোমার হাতে তুলে দিলাম, আজ থেকে ওর সব দায়িত্ব তোমার, তুমি তাকে দেখে শুনে রেখ’। বরও কথায় সায় দিতো।

কথাটা বলতে গিয়ে হৃদয় বিগলিত কান্নায় ভিজে যেত বাবার চোখ। সঙ্গে মায়ের কান্নাও যোগ হতো। এবার পাড়াপ্রতিবেশি আর মেয়ের কান্নার রোল। এটাও যেন একটা রীতির মধ্যে পড়তো। মজার ব্যাপার হলো- কোনো মেয়ের যদি কান্না না পেত, তাকে অনেক কথা শুনতে হতো পরবর্তীতে। আবার অনেক ভাবি বা চাচিরা বিয়ের কনেকে কান্নার ধরণ আগে থেকেই শিখিয়ে রাখতেন। কেমন কান্না সর্বজন উপযোগী সেটাও বলে রাখা হত। তারপর বাবার বাড়ি থেকে বিদায় নিত কনেসহ বরযাত্রী। অনেক সময় বিয়ে বাড়িতে রাত্রি যাপন করে পরের দিন সকালেও বিদায় নিতেন। তবে বিয়ের যত রীতি ছিল তা সম্পন্ন হতেই রাত পোহাতো। এদিকে বরের বাড়িতে বাঁশের মাথায় তুলে দেয়া মাইকে গান বেজে চলেছে অবিরাম। মালকা বানুর দেশেরে, বিয়ের বাদ্য আইজ্যা বাজেরে. মালকার বিয়ে হইবো, মনু মিঞার সাথেরে….।

আধুনিকতার ছোঁয়া লাগা কোনো ছোট ভাই যদি মাইকের অপারেটর হয়ে থাকে তবে তার হাতে বাজতো লতা, আশা, হেমন্ত, মান্নার কালজয়ী গানগুলোও। নিশিরাত বাঁকা চাঁদ আকাশে, চুপি চুপি বাঁশি বাজে বাতাসে…। গানের কথাগুলো আস্তে আস্তে স্পষ্ট হতো বাড়িতে ফিরে আসা বরযাত্রীর কাছে। গরুর গাড়িতে গুটিসুটি হয়ে বসে থাকা বউটার মনেও কিছু একটা দোল খেয়ে যেত এমন সুরমুর্ছনা।

এটা খুব বেশিদিন আগের চিত্র নয়। দিন বদলেছে কিছুটা। আমাদের সেই গ্রাম বাংলা আজো আছে। বিয়ের রীতি এখনো আছে অনেক। কিন্তু পরিবর্তন এসেছে অনেকটা। ব্যস্ততার এইদিনে আমরা হারিয়েছি নির্মল আনন্দ পাওয়ার অভ্যাস। হাতে গোনা সামান্য ছুটি থাকায় বিয়ের বাড়িতে মন ঠিকমতো বসে না। আপন কারো ছাড়া বিয়েতে যোগদানও হয়না অনেকের। তাছাড়া অনুষ্ঠানে থেকেও হয়তো অফিসের জরুরি ফোনে থাকতে হয় ব্যস্ত। আমরা সবকিছু ইন্সট্যান্ট পাওয়ার অভ্যাস বজায় রাখতে গিয়ে বিয়ে বাড়ির গেট ধরা হয় না। মুরুব্বিরা আগেই সব লেনাদেনা ফয়সালা করে রাখেন। পার্লার গুলো সাজিয়ে রাখে কনেকে। তাই আর শ্যালিকাদের দুলাভাইয়ের কাছ থেকে পাওনা আদায়ের অজুহাতটা মজবুত থাকে না। এখনকার বিয়েতে রাতভর মাইকে গান বেজে সবার মনকে দোলায়িত করে না। বাইরে থেকে এটা কিসের অনুষ্ঠান তা বিয়ের দিনও টের পাওয়া যায় না। তরুণ তরুণীরা খুব শখ করে যদি বিয়ের আগের সন্ধ্যায় দুয়েক ঘণ্টা গান বাজায় তবু তা ডিজে সং বা হিট হট হিন্দি বা ইংলিশ। কিছুটা শারীরিক কসরত করার পর সবাই ঝিমিয়ে যায়। আগের সেই সুরমুর্ছনা সপ্তাহ জুড়ে কারো মনে দোলা দিয়ে যায় না। মাত্র কটা দিনের ব্যবধানে আমাদের এই পরিবর্তন, আর কিছুদিন পর আমাদের এসব ঐতিহ্যবাহী আনন্দগুলো কোথায় গিয়ে ঠেকবে কে জানে? সুত্রঃ প্রবাসের খবর

পরকীয়া ও অন্যান্য প্রসঙ্গ

ইউকিপিডিয়ার মতে পরকীয়ার (ইংরেজি: Adultery বা Extramarital affair বা Extramarital sex) হল বিবাহিত কোন ব্যক্তির (নারী বা পুরুষ) স্বামী বা স্ত্রী ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তির সাথে বিবাহোত্তর বা বিবাহবহির্ভূত প্রেম, যৌন সম্পর্ক ও যৌন কর্মকান্ড।

মানবসমাজে এটি লঘু বা গুরুভাবে নেতিবাচক হিসেবে গণ্য  পাশ্চাত্য আধুনিক সমাজে এর প্রতি নেতিবাচক মনোভাব বজায় থাকলেও এটি আইনত অপরাধ বলে বিবেচিত হয় না, তবে অভিযোগ প্রমাণিত হলে পরকীয়াকারী ব্যক্তির বিবাহিত সঙ্গী তার সাথে বিবাহবিচ্ছেদের জন্য কোর্টে আবেদন করতে পারেন। 

তবে কিছু ইসলামি রাষ্ট্রসমূহে এর জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে, যা হল পাথর নিক্ষেপ করে মৃত্যুদন্ড প্রদান। মনোচিকিৎসায় একথা স্বীকৃত যে, পিতামাতার পরকীয়া সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর এবং সামাজিক সম্পর্ক ও যোগাযোগে বিরূপ প্রভাব ফেলে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা সন্তানের মানসিক বিষন্নতার ও আগ্রাসী মনোভাবের জন্ম দেয় । এছাড়া পারিবারিক ও দাম্পত্য সম্পর্কের অবনতিতে পরকীয়া প্রভাব রাখে ।

মানুষ কেন পরকীয়ায় জড়ায়:

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের চাইল্ড অ্যাডোলসেন্ট ও ফ্যামিলি সাইকিয়াট্রি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, মনোদৈহিক ও সামাজিক কারণে মানুষ পরকীয়ায় জড়ায়। প্রথমে আসে দৈহিক বিষয়। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যৌন সম্পর্কে অতৃপ্তি থেকে অনেকে এ সম্পর্কে জড়ায়। সেক্স মানুষের একটি শরীরবৃত্তীয় চাহিদা।

যদি স্বামী-স্ত্রীর যৌনজীবন দুর্বল হয়, তাহলে অপর ব্যক্তির প্রতি আসক্তি তৈরি হতে পারে।  কারো মধ্যে যদি ডিআরডিফোর জিনের উপস্থিতি বেশি হয়, তাঁদেরও পরকীয়া বা বাড়তি সম্পর্কে জড়ানোর প্রবণতা থাকতে পারে।

অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, অনেক সময় মানসিক সমস্যার কারণেও মানুষ পরকীয়ায় জড়াতে পারে।  যাঁদের মধ্যে বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডার আছে, তাঁদের পরকীয়ার সম্পর্কে জড়ানোর প্রবণতা দেখা যায়। তাঁরা কোনো কিছুর মধ্যে স্থিরতা খুঁজে পায় না।

সঙ্গীর উদাসীনতা ও দূরত্বের কারণেও অনেক সময় মানুষ পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে জানিয়ে তিনি বলেন, অনেক সময় স্বামী-স্ত্রী বাস্তবতার কারণে, কাজের কারণে হয়তো দূরে চলে যায়।  তখন তাঁদের মধ্যে পরকীয়ার আগ্রহ বাড়ে।  অনেক সময় পশ্চিমা সংস্কৃতির ধাঁচ নিজেদের মধ্যে আনতে চায়, তখন পরকীয়া বাড়ে। এ ছাড়া স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্ব, দূরত্ব ইত্যাদির জন্যও অন্যের প্রতি আগ্রহ, আসক্তির ঘটনা ঘটে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তানজির আহম্মদ তুষার মনে করেন –

প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে পরকীয়ার বিষয়টি চলে আসছে। উন্নয়ন ও মঙ্গলের কথা চিন্তা করে মানুষ একগামী। তবে মানুষ মূলত বহুগামী। পরকীয়াতে যেকোনো একজনকে বিবাহিত হতে হবে অথবা দুজনই বিবাহিত থাকতে পারেন।

মানুষ কেন পরকীয়ায় জড়ায়, এ বিষয়ে তানজির আহম্মদ বলেন –
এক ধরনের প্রয়োজন বা চাহিদার কারণে মানুষ পরকীয়ায় জড়ায়। অনেক সময় শারীরিক প্রয়োজন থাকে। আর্থিক প্রয়োজন থাকে। স্ট্যাটাস বাড়ানোর জন্যও কেউ কেউ পরকীয়ায় জড়ায়। অনেক সময় মানসিক প্রয়োজন থাকে।

আবার কিছু বিষয় শেয়ার করতে করতে অনেকে একসময় পরকীয়ায় জড়িয়ে যায়।   নির্ভরতা থেকেও পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়তে পারে জানিয়ে সাইকোলজিস্ট তানজির আহম্মদ বলেন, আবার অনেক সময় অবস্থার কারণেও হয়তো পরকীয়ায় জড়ায়। হতে পারে একসঙ্গে কোথাও বেড়াতে গেল। একপর্যায়ে হয়তো ভালো লেগে গেল। তখনও পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। আবার দীর্ঘসময় একসঙ্গে কাটাতে কাটাতে, বন্ধুত্ব থেকেও অনেক সময় পরকীয়া হয়ে যায়।   

অনেকে শখ থেকেও পরকীয়ায় জড়ায় –
অন্য আরেকটি শরীর কেমন, একে জানার একটি আগ্রহ থাকে। অনেকে আবার ভাবে, ‘ওরা কি সুখী! এই মানুষটির সঙ্গে থাকতে পারলে হয়তো আমার অনেক সুখ লাগত।’ এ থেকেও অনেকে ওই ব্যক্তির প্রতি আগ্রহ অনুভব করে। অনেক সময় মিডিয়াও পরকীয়ার প্রবণতা তৈরি করে। বিভিন্ন ধরনের পর্নোসাইট দেখে পরকীয়ার প্রতি আগ্রহ তৈরি হতে পারে।  

আসলে অধিকাংশ মানুষেরই একটি বাড়তি চাহিদা থাকে।  তবে সামাজিক ও ধর্মীয় নিয়মনীতির কারণে এ সম্পর্কে জড়ায় না।  অনেকে কিছু সুবিধা আদায়ের জন্য পরকীয়া করে জানিয়ে তিনি বলেন, হয়তো আর্থিক সাহায্য পাবে এ সম্পর্কে জড়ালে, এমন ভাবনা থেকেও কেউ কেউ পরকীয়ায় জড়ায়।

সাইকোলজিস্ট ইশরাত জাহান বীথির মতে –
পরকীয়ার পেছনে জড়ানোর একটি বড় কারণ হলো শূন্যতা। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যখন শূন্যতা তৈরি হয়, তখন আরেকজন সেখানে প্রবেশ করে। হয়তো স্বামী বা স্ত্রীর আর আগের মতো করে কথা বলে না বা আদর করে না। যত্ন কম নেয়। এই বিষয়গুলোর কারণে অন্যের প্রতি আসক্তি তৈরি হয়।  স্বামী-স্ত্রী দূরে থাকলেও এ সমস্যা হতে পারে। মেয়েদের বিয়ের আগে হয়তো যৌন চাহিদা তেমন থাকে না। বিয়ের পর তাঁরা বুঝতে পারে বিষয়টি।

শুধু যৌনতায় অংশগ্রহণ নয়, কথাবার্তায়ও বিষয়টি থাকতে হয়। তখন যদি অন্য কেউ সেই কথাগুলো শোনায়, তাহলে তাঁর প্রতি আগ্রহ কাজ করে।  শারীরিক গঠন এ ব্যাপারে কাজ করতে পারে। কিছু কিছু ছেলে চিকন স্বাস্থ্যের মেয়ে পছন্দ করে।  আবার কিছু কিছু ছেলে হয়তো একটু স্থূল স্বাস্থ্যের মেয়ে পছন্দ করে।  সন্তান হওয়ার পর অনেক মেয়ে স্থূল হয়ে যায়। এতে স্ত্রীর প্রতি আগ্রহ কমে যেতে পারে। আবার নারীর বেলায়ও অনেকে হয়তো খুব হ্যান্ডসাম ছেলে পছন্দ করে, যা হয়তো তাঁর স্বামীর সঙ্গে মেলে না।

সাইকোলজিস্ট ইশরাত শারমীন রহমান বলেন-
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ছোট ছোট চাওয়াগুলো হয়তো পূরণ হচ্ছে না। হয়তো স্ত্রী চাঁদ দেখতে পছন্দ করে, স্বামী সেটিকে বিলাসিতা মনে করে। এ রকম সময় অন্য কেউ যখন সেই জায়গায় আসে, তখন নির্ভরতা বেড়ে যায়।  আবার অনেকে ভাবে, আমি তো একসঙ্গে দুটোকেই ব্যালান্স করছি। তাই আমি এমন একটি সম্পর্ক করতেই পারি।

আবার অনেকে মনে করেন, স্বামী বা স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও খুব ভালো একজন বন্ধু অথবা বান্ধবী থাকতে পারে। যার সঙ্গে মানসিক শেয়ারিং ও শারীরিক সম্পর্ক — দুটো বিষয়ই থাকতে পারে। এটা দোষের কিছু নয়। কারণ, বন্ধুত্বের সম্পর্কে কোনো প্রতিজ্ঞা নেই। যে কেউ যেকোনো সময় হয়তো এখান থেকে সরে আসতে পারে। একে অনেকে পরকীয়া বলে মনে করে না।

আবার অনেকে বিবাহবিচ্ছেদের পর বৈবাহিক সম্পর্কে জড়াতে চায় না। বিবাহিত কারো সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে নিজের চাওয়াগুলো পূর্ণ করতে চায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানসিক ও শারীরিক প্রয়োজন মেটানোর বিষয়টিই এখানে মুখ্য হয়। এসব ভাবনা ব্যক্তিকে পরকীয়ার প্রতি আকৃষ্ট করে তোলে বলেই মনে করেন ইশরাত শারমীন রহমান।

আপনার সঙ্গী পরকীয়া আসক্ত হচ্ছে কিনা তা বুঝবেন কিভাবে ?

কিভাবে বুঝবেন আপনার স্বামী/ স্ত্রী কোন পরকীয়ার সম্পর্কে জড়িয়েছেন কিনা? আসুন জেনে নেয়া যাক কি কি লক্ষনে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার স্বামী/ স্ত্রী পরকীয়া করছেন কিনা।

সঙ্গী যদি ফোন বা ইন্টারনেটে আসক্ত হয়ে পড়েন:
সঙ্গী ফোনের পেছনে কতটা সময় ব্যয় করছেন সেদিকে নজর রাখুন। একসাথে বসে থেকে বা ঘুরতে গেলে যদি তিনি ফোন নিয়েই ব্যস্ত থাকেন, মেসেজ বা ইন্টারনেট ব্রাউজিং করেন- তাহলে তা নিশ্চিতভাবে অন্য একটি সম্পর্কেরই ইঙ্গিত। এছাড়া দিনের বেশিরভাগ সময়ে তাকে যদি ফোনালাপে ব্যস্ত পাওয়া যায় তাহলেও বিষয়টি লক্ষণীয়।

অনেকে বলতে পারেন কাজের প্রয়োজনে মানুষ ফোন বেশি ব্যবহার করতেই পারে। কিন্তু একটি বিষয় মনে রাখবেন, কাজের প্রয়োজনে ফোনালাপ এবং কারো সাথে প্রেমময় ফোনালাপের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে এবং এই পার্থক্য বোঝার মত ক্ষমতাও বিবাহিত প্রত্যেক মানুষের হওয়া উচিত। শুধুমাত্র ফোন নয়, ফেসবুক কিংবা অন্যান্য যোগাযোগের মাধ্যমের প্রতি আসক্তির মাত্রার ওপরও নজর দেবেন।

তিনি যদি আপনার ও পরিবারের পেছনে কম সময় ব্যয় করেন:
সঙ্গী যদি আপনাকে আগের চাইতে কম সময় দেয়া শুরু করেন, তাহলে এটিও একটি লক্ষণ হিসেবে ধরে নেয়া যায়। খুব ভালো করে আপনার সঙ্গীর প্রতিদিনকার কাজকর্ম লক্ষ্য করুন। যদি বুঝতে পারেন যে আগের চাইতে কম সময় পাচ্ছেন, তাহলে বোঝার চেষ্টা করুন সেই বাড়তি সময়টা তিনি কীভাবে ব্যয় করছেন।

আপনি তাকে সময় দেয়ার কথা বলে দেখুন, একসাথে বসে টিভি দেখার কথা বলুন, তাকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার আমন্ত্রন জানান, আত্মীয় স্বজনদের ও পারিবারিক বন্ধুদের সময় দেয়ার কথা বলুন। তিনি যদি আপনাকে অজুহাত দেখিয়ে না বলেন তাহলে জানার চেষ্টা করুন অজুহাতটি সত্যি কিনা। সঙ্গী যদি পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করে বিনা কারণে, তাহলে ধরে নিতে পারেন তিনি পরকীয়ায় লিপ্ত।

নতুন কোন নাম: আপনার সঙ্গীটির মুখে যদি নতুন কোন একটি নাম ঘন ঘন শুনতে পান, তবে একেও পরকীয়ার লক্ষণ হিসেবে নিতে পারেন। সঙ্গীর যে বন্ধুটির কথা আগে কখনো শোনেননি, এমন কারো কথা ঘনঘন শুনলে তাকে জিজ্ঞেস করুন এবং তার মুখের ভাব লক্ষ্য করুন। যদি তিনি প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান, কিংবা তার মুখের অভিব্যক্তি বদলে যায় তবে বিষয়টি অবশসই চিন্তার।

অকারণে রেগে যাওয়া: আরও একটি বিষয় আছে যা বিশেষ ভাবে লক্ষণীয়। তা হল আপনার সঙ্গীর কথায় রাগের সুর। খেয়াল করে দেখুন তো, আগে যে বিষয়গুলো আপনার সঙ্গীর রাগের উদ্রেক করতো না সেসব বিষয়ে কি তিনি রেগে যাচ্ছেন? কিংবা কথায় কথায় আপনাদের দাম্পত্য জীবনকে অভিশাপ হিসেবে অভিহিত করছেণ? তার এসব কথার কোন যুক্তি আছে কিনা এইসব ব্যাপারগুলো লক্ষ্য করুন। বিনা কারণে অযৌক্তিক রাগ করা, কিংবা সবসময় খিটখিট করা পরকীয়ার অন্যতম লক্ষণ।

আপনার সাথে যৌনসম্পর্কে উদাসীনতা: সঙ্গী যদি আপনার সাথে যৌনসম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেন তাহলে আপনি এটি পরকীয়ার নিশ্চিত লক্ষন হিসেবে ধরতে পারেন। যিনি অন্যের সাথে সময় কাটিয়ে আপনার প্রতি উদাসীন, তার মুখের অভিব্যক্তিই আপনাকে সব কথা বলে দেবে। আপনার সাথে সম্পর্ক স্থাপনে সঙ্গী আগ্রহী নন, অর্থাৎ তার চাহিদাটি পূরণ হচ্ছে অন্য কারো মাধ্যমে। এছাড়াও অভ্যাস বশত যৌন সম্পর্ক করছেন কিনা স্রেফ আপনাকে খুশি করতে, সেটিও লক্ষ্য করুন।

আপনার প্রতিদিনের রুটিন খুঁটিয়ে জিজ্ঞেস করা: এছাড়া খেয়াল করে দেখুন আপনার স্বামী/ স্ত্রী আপনার প্রতিদিনকার রুটিন সম্পর্কে হঠাৎ অতিরিক্ত নজর দিচ্ছেন কিনা অর্থাৎ আপনি কটায় বাড়ি ফিরবেন বা কোন কোন জায়গায় কখন যাবেন এই ধরনের প্রশ্ন করছেন কিনা। তাহলে নিশ্চিত থাকতে পারেন যে আপনার চোখ এড়িয়ে নিরাপদে সম্পর্ক চালিয়ে যেতেই তার এত জিজ্ঞাসা।

তিনি যদি হঠাৎ নিজের সৌন্দর্য সম্পর্কে অতিরিক্ত সচেতন হয়ে উঠেন: আপনার স্বামী/স্ত্রী যদি হঠাৎ নিজের ত্বক, সাজগোজ, শারীরিক গঠন কিংবা পরিহিত পোশাক আশাকের দিকে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করতে শুরু করেন, তাহলে আপনি একে পরকীয়ার একটি লক্ষণ হিসেবে ধরে নিতে পারেন। এখানে একটি বিষয়ে পরিষ্কার হওয়া দরকার যে সঙ্গী আপনার জন্যই নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করছেন কিনা।

কারন অনেক স্বামী/স্ত্রীই আছেন যারা দাম্পত্য জীবনে পুনরায় রোমান্স ফিরিয়ে আনতে এই পন্থা বেছে নেন। কিন্তু আপনি এই দ্বিধাবোধের অবসান করতে পারেন নিজেকে ২/৩ টি প্রশ্ন করে। আর তা হল, আপানার স্বামী/স্ত্রী কি আপনার পছন্দ অনুযায়ী নিজেকে উপস্থাপন করছেন? তিনি কি শুধুমাত্র আপনাকে দেখানর জন্যই বিশেষ পোশাক ও সাজগোজ করেন? আমাকে কেমন দেখাচ্ছে এই ধরনের প্রশ্ন আপনাকে করা হচ্ছে কিনা সেটাও লক্ষ্য করুন। এই প্রশ্নগুলোর উত্তর যদি “না” হয়, তাহলে আপনি ধরে নিতে পারেন আপনার সঙ্গী পরকীয়ার সম্পর্কে জড়িত আছেন।




অনেক ক্ষেত্রে পরকীয়ায় গভীর হয় দাম্পত্য প্রেম: 
অনেক ক্ষেত্রে পরকীয়া দাম্পত্য সম্পর্কের পক্ষে ভালো এবং এতে আরো গভীর হয় কপোত কপোতীর প্রেম। এই দাবি বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানী অ্যাস্থার পেরেলের।  তিনি ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ‘‌কাপল কাউন্সেলিং’‌করছেন।  সেই অভিজ্ঞতা থেকেই তার এই উপলব্ধি।

পেরেল জানান, ‘‌প্রতিটি মানুষই কোনও না কোনও অবসাদ থেকে পরকীয়ার দিকে ঝোঁকেন। তাদের মধ্যে একটা অপরাধবোধ মনের অবচেতনে হলেও কাজ করে।  কেননা  ৯৯ শতাংশ পরকীয়াই ক্ষণস্থায়ী হয়।  পরকীয়া শেষ হওয়ার পরে এই অবৈধ সম্পর্ক প্রেমিক যুগলের মধ্যে একটা অপরাধবোধ এনে দেয়। সেই অপরাধবোধ থেকেই নতুন মোড় নেয় তাদের পুরনো সম্পর্ক। ফলে সেটি হয় আরো মজবুত ও গাঢ়। বলছিলেন পেরেল।‌

পরকীয়া নিয়ে গোটা একটা বই লিখেছেন পেরেল। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ‘‌দ্য স্টেটস অফ অ্যাফেয়ার’ নামের সেই বইটি।

সেখানে পেরেল বলছেন, ‘দীর্ঘ সম্পর্কে একঘেয়েমি আসাটা খুব স্বাভাবিক। এক পর্যায়ে যৌনজীবনে অবসাদ চলে আসে। তখন অনেকেই নতুন সঙ্গী বা সঙ্গিনী খোঁজেন। এক্ষেত্রে একসঙ্গে সময় কাটানো, কথা বলা একটা বড় ওষুধ হতে পারে। আমি মনে করি যৌনতা যতটা না শারীরিক, তার চেয়ে অনেক বেশি মানসিক। মানসিক আকর্ষণ ফিরিয়ে আনলেও পরকীয়া ঠেকানো সম্ভব।’

তবে, দাম্পত্য সম্পর্কে আকর্ষণ ফেরানোর জন্য পরকীয়া করতে মোটেও উৎসাহ দিচ্ছেন না পেরেল। তিনি বলছেন, ‘‌উপশমের চেয়ে প্রতিকার করাটাই ভাল। পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ার আগে সঙ্গী বা সঙ্গিনীর প্রতি আকর্ষণ তৈরি করাটাই শ্রেয়।’

পরকীয়ার জড়িয়ে সঙ্গীকে ঠকিয়েছেন এখন মানাবেন কী করে?

সঙ্গীর কাছে ধরা পড়ে গেছেন।  তিনি টের পেয়েছেন, বিগত কয়েকদিন ধরে আপনি অন্যকোনও পুরুষ/মহিলার সঙ্গে জড়িত। তাঁর অনুমান, আরও অনেক দূর হয়তো গড়িয়েছে বিষয়টি। সবকিছু জানাজানি হওয়ার পর সঙ্গী বাক্যালাপ বন্ধ করেছেন। ঘোষণা করেছেন বিচ্ছেদ।

এমন অবস্থায় নিজেকে অপরাধী মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক।  কিন্তু তার চেয়েও বেশি যে বিষয়টি আপনাকে অহোরাত্র দুঃখ দিয়ে চলেছে, তা হল সঙ্গীর অভিমান, আপনার প্রতি তাঁর ঘৃণা ও বিদ্বেষ। সঙ্গীকে ফের জীবনে ফিরে পাওয়ার জন্য আপনি এখন মরিয়া।

একটু ফ্ল্যাশব্যাকে ফিরে গিয়ে ভাবুন। ভালো করে খতিয়ে দেখুন, আপনাদের সুখের জীবনে তৃতীয় ব্যক্তি এল কেন? ফাঁক তৈরি হল কেন? দোষত্রূটি কার কতখানি, তার চেয়েও বেশি জানা দরকার আপনি এখন ঠিক কী চাইছেন? এতকাল যে সঙ্গীর অপূর্ণতা পূরণ করতে আপনি অন্য সঙ্গীর সান্নিধ্য খুঁজছিলেন, সেই সাধ আপনার মিটেছে কিনা। যদি মিটে গিয়ে থাকে, কি নিশ্চয়তা আছে, ফের এমন ভুল আপনি করবেন না?

প্রশ্নের উত্তরগুলো ভালো করে খুঁজে বের করতে চেষ্টা করুন। ক্ষণিকের জন্য সঙ্গীকে ফিরে পেতে চাইলে, সেটা তাঁর প্রতি অন্যায় করা হবে। নিজের মন শক্ত করুন। সঠিক সিদ্ধান্তে আসুন। সঙ্গীর সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে ছাড়াছাড়ি করতে চাইলে, তাঁকে বরাবরের মতো মুক্ত করে দিন। তাঁকে তাঁর মতো বাঁচতে দিন। আপনার সঙ্গে বিচ্ছেদে যদি তিনি সুখ খুঁজে পান, তবে তাই মেনে নিন। নিজের ইচ্ছে তাঁর উপর চাপিয়ে দেবেন না।

আর যদি আপনি সঙ্গীকে আগের মতো ফেরত চান, লোকলজ্জার ভয় নয়, কোনও আর্থিক কারণে নয়, শুধু ভালোবাসার কারণে, তবে কয়েকটি বিষয়ে আপনাকে সচেতন থাকতে হবে।  যেমন-

১) কখনও কান্নাকাটি করবেন না। মনে রাখবেন, সঙ্গী আপনার উপর বিরক্ত। এই সময় চোখের জল ফেললে, সেই অশ্রুকে তিনি মনে করতে পারেন কুমিরের কান্না।  তাই একদম কান্নাকাটি নয়।

২) মতো আপনার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে দিতে পারেন।  তাই তাঁকে নিজেকে সামলানোর সময় দিন।

৩) সোশাল মিডিয়ায় কোনও কিছু পোস্ট করবেন না।  নিজের মন খারাপের কথা একেবারেই শেয়ার করবেন না। এইসব দেখলে সঙ্গী হয়তো আরও রেগে যেতে পারেন।

৪) যে ব্যক্তির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার কারণে আপনার বিচ্ছেদ, সেই ব্যক্তির সঙ্গে আর কোনও যোগাযোগ রাখবেন না। তাঁকেও খোলাখুলি বলে দিন আপনি কী চাইছেন। এমন পরিস্থিতিতে কাউকেই অন্ধকারে রাখা ঠিক নয়।

৫) মনের দুঃখ সামলাতে অন্য কোনও পুরুষ/নারীর সঙ্গে সাময়িক সম্পর্কে জড়াবেন না। কেননা, তাতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। হতেই পারে দূর থেকে সঙ্গী আপনার উপর নজর রাখছেন। বোঝার চেষ্টা করছেন আপনার গতিবিধি। কার সঙ্গে মিশছেন, কার সঙ্গে কথা বলছেন, সবেরই হয়তো খবর রাখছেন তিনি। ফলত, সাময়িক সম্পর্কে জড়ানোর ঘটনাও তাঁর অজানা নয়। আপনার প্রতি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হতে পারে তাঁর। শেষ ভালোলাগা টুকুও নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

৬) নিজের মনটাকে শান্ত করুন। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান। দরকার হলে পরিবারের ঘনিষ্ঠ কারোর সঙ্গে সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। বা কোনও প্রিয় বন্ধু/বান্ধবীর সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন। কোনও কমন ফ্রেন্ড থাকলে বিষয়টা তাঁকেও বলতে পারেন। কমন ফ্রেন্ড এই সব ব্যাপারে দেবদূতের ভূমিকা পালন করেন মাঝেমধ্যে। যেহেতু তিনি আপনাকে ও আপনার সঙ্গীকে ভালো করে চেনেন, আপনার সঙ্গীর মনোভাব কী, জানতে সুবিধে হতে পারে।

৭) সঙ্গীও যদি সিদ্ধান্ত নেন, তিনি আপনাকে আরও একটা সুযোগ দিয়ে দেখবেন, তবে সেইদিনটার জন্য অপেক্ষা করুন। দেখা হলে ঘাবড়ে যাবেন না। সাহসী মনোভাব প্রকাশ করুন।  যে ভুল আপনি করেছেন, সেটা নিজে মুখে স্বীকার করুন। সরি বলুন। বলুন, আপনার ভুল হয়েছে, ভবিষ্যতে এরকম ভুল আর কোনওদিনও হবে না। দেখবেন, সঙ্গীরও আপনার উপর সব অভিমান মুছে গেছে।

তথ্য সুত্রঃ উইকিপিডিয়া, এনটিভিবিডি, রোপকেয়ার,  প্রিয়-লাইফ

যা দেখে বুঝবেন সে বিয়ে করবে না

প্রতিটি সম্পর্কই শেষ পর্যন্ত মিলন চায়।  ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু দুজনের মধ্যে আপাতদৃষ্টিতে সম্পর্ক ঠিকঠাক থাকলেও অনেক সময় ভবিষ্যতের ভাবনায় কেউ কেউ পিছুটান দিতে শুরু করে। এতে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার শঙ্কা থাকে। সম্পর্ক টিকবে কি না, দুজনের একসঙ্গে ঘর বাঁধা হবে কি না, সঙ্গীর হাবভাবে বুঝে নিতে পারেন। কিছু আচরণ দেখেই বুঝে নিতে পারেন সম্পর্কের ভবিষ্যৎ। জেনে নিন কয়েকটি আচরণ সম্পর্কে:

প্রয়োজনে পাবেন না: যখন আপনার সবচেয়ে জরুরি দরকার, তখন পাশে পাবেন না। আপনার ভালো বন্ধু হতে পারে, আপনাদের মধ্যে রসায়নটা ভালো হতে পারে, কিন্তু যখন মানসিক সমর্থন দরকার হয়, তখন সবচেয়ে দূরে চলে যায়—এমন ব্যক্তিকে জীবনসঙ্গী করা বিপদ।

ভবিষ্যতের আলাপে অনীহা: আপনার সঙ্গী কি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে অনাগ্রহী? যখনই বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন, সে এড়িয়ে যায় বা অন্য প্রসঙ্গ তোলে? এ রকম হলে সতর্ক হতে পারেন। কারণ, আপনার সঙ্গীর মনে হয়তো অন্য কিছু। বুঝে নিতে পারেন সে হয়তো ঘর বাঁধতে আগ্রহী না!

পরিবারের কথা লুকাবে: পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের কথা বললে বা বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করার কথা বললে যদি দেখেন আপনাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে বা ঝামেলা করছে, তখন বিষয়টি স্বাভাবিক কি না ভেবে দেখতে পারেন।

দায়িত্ব গ্রহণে অজুহাত: অনেক দিন দেখা-সাক্ষাতের পরও বিয়ের কথা তুললে অনেকেই বলে, বিষয়টি অনেক তাড়াতাড়ি হয়ে যাচ্ছে বা আমার এখনো দায়িত্ব নেওয়ার সময় আসেনি। এমন অজুহাত দেখালে তার দায়িত্ব গ্রহণের ইচ্ছা সম্পর্কে সন্দেহ জাগতে পারে।

বিয়েবিরোধী: বিয়ের কথা বললেই যদি সঙ্গীর অস্বস্তি শুরু হয় আর তার তালিকায় যদি বিয়ে সবার শেষ থাকে বা বিয়ে নিয়ে তার ধারণা নেতিবাচক হয়, তবে অবশ্যই বিষয়টি চিন্তার। এ রকম ধারণার মানুষের সঙ্গে ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল নাও হতে পারে।

আপনার ভাবনায় অনাগ্রহী: সে কী চায় বা তার আগ্রহ নিয়ে আপনার অনেক কিছু ভাবনা হয়তো আছে, একই রকম ভাবনা তার আছে কি না খেয়াল করেছেন? আপনাকে নিয়ে তার যদি খুব বেশি আগ্রহ না থাকে, তবে সম্পর্ক নিয়ে দুবার চিন্তা করুন।

দিন শেষে একাকী: দুজন কোথায় খেতে বা বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করলেও সঙ্গী যদি কৌশলে এড়িয়ে যায় বা আপনাকে সময় দেওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহী না থাকে, তবে সম্পর্ক কত দূর যাবে, সেটি ভাবার বিষয়।

কখনো প্রশংসা না করা: সঙ্গীর জন্য যতই করুন, যদি তার কাছ থেকে প্রশংসা না শোনেন বা আপনাকে নিয়ে তার আগ্রহের কথা না বলে, তবে নিশ্চয়ই তার মনে অন্য কিছু আছে।

মহড়া দেওয়া: সম্পর্কের চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে যদি আপনার সঙ্গী মহড়া দেওয়ার কথা বলে বা আগে পরীক্ষা করে পরে সম্পর্ক স্থায়ী করার কথা বলে, তবে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। কারণ, বিয়ে কোনো মহড়া বা পরীক্ষার বিষয় নয়।

সুসময়ের বন্ধু: যদি আপনার সুখের সময় শুধু তাকে পান আর দুঃখের সময় না পান, তবে সে আপনার জন্য বিশেষ হতে পারে না। যার সঙ্গে দুঃখ-সুখ ভাগাভাগি করে নিতে পারবেন, তার সঙ্গেই কেবল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে পারেন।  তথ্যসূত্র: টিএনএন, প্রথম আলো