দাম্পত্য জীবনের টানপোড়ন

একজন মেয়ের স্বামীর ভালবাসা পাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে তার পরিবারকে আপন করে নেয়া।  হাতেগুনা দু’একজন ছাড়া মোটামুটি সব মেয়েই এটা বুঝে। তাই বিয়ের পর সাধারণত খুব কম মেয়েই স্বামীর মা-বাবা কে পর ভাবে।  বিয়ে কেন্দ্রিক পারিবারিক সমস্যাগুলো যা চোখে পরে তার মধ্যে একটা মূল সমস্যা হল, স্বামীর পরিবারকে স্ত্রীর আপন করে না নেওয়া।  কিন্তু অনেক সময় ব্যাপারটির উল্টোটাও ঘটে। আমরা ছেলের পরিবারের সদস্যরাই অনেক সময় তাদেরকে পর ভাবতে বাধ্য করি।  উঠতে বসতে, পদে পদে ভুল ধরে, দোষ বের করে তাদের এমনভাবে অপদস্থ করি যে আমাদের প্রতি তাদের শ্রদ্ধার বোধটুকুও আর অবশিষ্ট থাকে না।

দেরি করে বাসায় ফেরা স্বামীকে কে রাতে সময় দেওয়ার পর সকালে উঠেই সবার জন্য রাস্তা রেডি করতে বা ঘুম থেকে উঠতে আধা ঘণ্টা বিলম্ব হলেই মহারাণী খেতাব দিয়ে খোঁটা দেওয়া, মেয়ের বাড়ির লোকদের নিয়ে কটু কথা বল- এগুলো হরহামেশাই আমরা করি।  আবার স্বামীর কাছে বেয়াদব বউ, অকর্মা বউ ইত্যাদি বলে এমনভাবে তার কান ভারী করে দেই যে বউয়ের প্রতি তার আগ্রহই নষ্ট হয়ে যায়।   এটার ধারাবাহিকতাও খুব খারাপ।  এর ফলে দাম্পত্য জীবনে টানপোড়ন সৃষ্টি হয়। এমনকি বাহিরের নারীদের প্রতি পর্যন্ত তখন আসক্ত হয়।

একজনকে অপদস্থ করতে গিয়ে, ছোট করতে গিয়ে নিজের পরিবারের সদস্য হয়ে আমরা নিজেরাই আরেকজন সদস্যের জীবন এভাবে নষ্ট করি।  একজন মানুষ যে জায়গাতেই থাক না কেন, সে সব সময় একজন ভরসার মানুষ খুঁজে পেতে চায়। একজন মেয়ের ক্ষেত্রে বিয়ের আগে সেই ভরসার জায়গা হয় তার বাবা, আর বিয়ের পর হয় স্বামী।  কিন্তু কোন কারণে যদি সেই ভরসার জায়গাটাও নষ্ট হয়ে যায়, তার মত হতভাগ্য আর কারো হয় না।

আমাদের পুরুষদের জীবন অনেক কঠিন। সব কিছু ম্যানেজ করে চলতে হয়। সন্তান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতে হয়, স্বামী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতে হয়।  দুটো দায়িত্ব ভিন্ন হলেও গুরুত্ব একই। মাকে কখনো বউয়ের সাথে আর বউকে কখনো মা’র সাথে তুলনা করতে হয় না। এই জিনিসটা অনেকেই করে। যখনই তুলনা করা শুরু হয়, তখন থেকেই অশান্তি শুরু হয়।

মা-বাবার প্রতি আমাদের দায়িত্বটা জন্মগত। এটা অবশ্যই পালন করতে হবে, নতুবা এর জন্য পরকালে কঠিন জবাবদিহি করতে হবে। মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের জান্নাত।  স্ত্রীর প্রতি দায়িত্ব হল অর্পিত, যা আমরা নিজেরাই নিজের উপর চাপিয়ে নেই। যে মেয়েকে নিজের ইচ্ছেয় ঘরে আনা হয়, তার দায়িত্বও যদি সঠিকভাবে না পালন করা হয়, তাহলে এর জন্যও আমাদের জবাবদিহি করতে হবে।

বিয়ের পর একজন মেয়ের পরম সাহসই হল তার স্বামী।  স্বামীই হল একজন মেয়ের গর্ব, পৃথিবীর সবচেয়ে আপনজন, তার পরম ভরসার জায়গা।  সেই ভরসাটুকু বজায় রাখাও আমাদের দায়িত্ব।   Source- Dr. Taraki Hasan Mehed