শরীর কেন্দ্রিক দাম্পত্য কতটুকু সুখের!

শিরোনামের কথাগুলো উল্টো করে বলি, ‘কেবল শরীর দিয়ে কি দাম্পত্য হয়?’  উত্তর হচ্ছে, ‘না, হয় না।’ কেবল শরীর দিয়ে দাম্পত্য হয় না।  দাম্পত্যে শরীরটা একটা অংশ বটে, কিন্তু সম্পর্কের সবটুকু শরীর কেন্দ্রীক নয়।   এই শরীরকে সবটুকু ভাবতে গেলেই তৈরি হয় যত গোলযোগ।  আমাদের সমাজে প্রায়ই দাম্পত্য সম্পর্ক শরীর থেকে শুরু হয়।  অল্প বয়সের আকর্ষণকে আমরা প্রায়ই প্রেম ভেবে ভুল করি, সেই ভুলে আবার ভুল একজন মানুষকে বিবাহের বন্ধনে বেঁধেও ফেলি। অন্যদিকে অ্যারেঞ্জ ম্যারেজের ক্ষেত্রে পরিবারই আমাদের জন্য নির্ধারণ করে দেয় সঙ্গী। বিয়ের আয়োজন হয়, বিয়ে হয়, সংসার হয়, শরীরের সম্পর্কও হয়। তারপর আসে মনের জানাশোনার পালা, তারপর তৈরি হয় দাম্পত্য।

এই মনকে জানতে-শুনতে গিয়ে যদি মনের মিলটাই না হয়, তখন? তখনই শুরু হয় টানাপোড়েন, জীবনের দেহজুড়ে পাওয়া, না পাওয়ার দীর্ঘ হিসাব-নিকেশ। সম্পর্কের ব্যবচ্ছেদ, যন্ত্রণাময় কাটাকুটি।  অনেকেই ভাবতে পারেন, ‘এক ছাদের নিচে থাকছি, ছেলেপুলে হয়েছে, সংসার আছে, নিয়মিত যৌন সম্পর্ক হচ্ছে – দাম্পত্যে আর কী চাই?’
সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসটাই কিন্তু ভুলে গেলেন।  সেটা হলো মনের মিল।  দাম্পত্য সম্পর্কে মনের মিলটাই কিন্তু সবার আগে চাই।

একটা বয়সের পর শরীরের পাশাপাশি মনেরও একটা চাহিদা তৈরি হয়, তীব্র একটা দাবি তৈরি হয়। বয়স যত বাড়ে, সেই দাবিটিও তত বাড়ে।  আর সেই দাবি যদি পাশের মানুষটি পূরণ করতে না পারে, দাম্পত্যে তখন সংঘাত অবধারিত।  তখন শুরু হয় জীবনজুড়ে কাটাকুটির অঙ্ক আর সম্পর্কের যন্ত্রণাময় ব্যবচ্ছেদ।   কারো কারো সম্পর্ক মোড় নেয় পরকীয়ার দিকে।  নিজের দাম্পত্যে যা নেই, সেটাই পাওয়ার আশার কেউ কেউ হাত বাড়ান অন্যদিকে।

অনৈতিক কিছু সম্পর্কে জড়িয়ে গিয়ে আরও এলোমেলো হয়ে যায় সম্পর্কের সুতো।   সত্যি বলতে কী, শরীর আর মন কিন্তু প্রায়ই আলাদা হয়ে যায়।  বিশেষ করে তখন, যখন আমরা ধরে নিই দাম্পত্যের অর্থ কেবল যৌন সম্পর্কের বৈধতা কিংবা সন্তান জন্ম দেওয়ার আয়োজন।  এসবের বাইরে দাম্পত্য অনেক বড় কিছু।  দাম্পত্য মানে বন্ধুত্ব, দাম্পত্য মানে এই বিশাল বড় পৃথিবীতে নিজের একটি ছোট দুনিয়া। সেই দুনিয়ায় আমি, আমরা নিরাপদ, যেখানে সবাই আপন।

মা-বাবার পর নিজের স্বামী বা স্ত্রীই জগতে সবচেয়ে আপন।  সবচাইতে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক এই মানুষটির সাথেই তৈরি হয় আমাদের, জীবনসঙ্গীর সাথেই আমরা পার করি জীবনের একটি বিশাল অংশ। তাহলে ভাবুন তো, সেই মানুষটির সাথে মনের মিল না হলে কি চলে? যার সাথে জীবন কাটাচ্ছেন, তিনি ব্যতীত অন্য কারো সাথে মনের মিল করার চেষ্টা করলে কি কখনো সুখী হতে পারবেন?

উত্তর হচ্ছে, ‘না, পারা যাবে না।’  সম্পর্কের পৃথিবীর কিছু নিজস্ব সমীকরণ আছে, সেই সমীকরণ মানতে হয়।  দাম্পত্যে যদি সুখী হতে হয়, তাহলে সুযোগ করে দিতে হবে শরীর-মনের যুগপৎ সহাবস্থানের। সঙ্গীকে করে নিতে হবে আত্মার আত্মীয়, এমন কেউ যার সাথে বিনিময় করা যায় নিজের সব আবেগ ও অনুভূতি।

কেবল সাথে থাকাই দাম্পত্য নয়, বরং প্রতিটি ক্ষেত্রে পাশে থাকাটাই সত্যিকারের সম্পর্কের নীতি।  সব বন্ধনের সীমা ছাড়িয়ে কেবল মনের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়াটাই আসল দাম্পত্য। মনের বন্ধন সঠিক হলে তারপর শরীর আসবে, সংসার আসবে। সুখের সাথে সন্ধি করে কেটে যাবে জীবন।

তবে, শেষে গিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠতে পারে, ‘শরীর আর মন কি সত্যিই আলাদা? শরীর আর মনকে কি আলাদা করা যায়?’ যায় হয়তো! মাঝে মাঝে আমরা এমন কারো সাথে থাকি, যার সাথে আমাদের মন থাকে না। মাঝে মাঝে মন এমন কারো কাছে থাকে, যার পাশে শরীর যেতে পারে না।
কারণ, এই এক মানবজীবনে শরীর আর মন একসুরে, একই ছন্দে বারবার বেজে ওঠে না। কেবল একজনের জন্যই হয়তো সমগ্র অস্তিত্ব একসাথে সাড়া দেয়। আর সেই একজনকেই হয়তো আমরা আমরা ‘মনের মানুষ’ বলি।  সুত্রঃ  প্রিয় ডট কম