দাম্পত্য জীবনে সুখী থাকার রহস্য

সুখী দম্পতিরা তাদের প্রতিদিনের ছোট ছোট প্রতিটি মুহূর্ত দুজন মিলে উপভোগ করেন।  ঝগড়াকে তারা প্রাধান্য দেয়না বরং তাদের ঝগড়ার পরের ভালোবাসা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যখন একজন ভালো মনের মানুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবেন, তখন নিজেকে সুখী হিসেবে ভাবতে শুরু করবেন।  তবুও মানুষ কারণে অকারণে ক্ষুদ্র কারণে একে অপরের সঙ্গে ঝামেলা করে বসে।

পছন্দ-অপছন্দ নিয়ে কথা বলুন:
এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে আপনি আপনার পছন্দ অপছন্দ অন্যের মধ্যে দেখতে চাচ্ছেন কি না? নব-বিবাহিত দম্পতির মধ্যে এই ব্যাপারগুলো নিয়ে প্রায়শই খুঁটিনাটি লেগে থাকে। মনে রাখুন আপনি সম্পূর্ণ একজন আলাদা মানুষ। আপনার যেমন পছন্দ আছে তেমনই আপনার সঙ্গী বা সঙ্গিনীরও হয়তো সমান ভাবে পছন্দ অপছন্দের ব্যাপার আছে। আর যদি আপনার সঙ্গীর করা কাজ আপনার একান্তই অপছন্দের হয় তবে তার সঙ্গে কোনো কফিশপ বা তার কোনো প্রিয় জায়গায় বসে যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে বলুন।

একে অপরের হাতে হাত রেখে হাঁটুন :
একে অন্যের হাতে হাত রেখে হাঁটা উষ্ণতা প্রকাশ করে। আপনি তাকে কতটা আগলে রাখছেন তা প্রকাশ পায় এর মাধ্যমে। আপনার সঙ্গী যখন রিক্সায় উঠছে বা রাস্তা পার হচ্ছে তার হাত ধরে রাখুন। এছাড়া বাড়িতে কাজ করার সময় তার হাতে হাত রেখে জানতে পারেন- তার কোনো সহযোগিতা লাগবে কিনা? এতে সে প্রচণ্ড সাহস খুঁজে পাবে। আপনাকে তার আশ্রয় মনে করা মানুষটি আরো নতুন করে শক্তি পাবে নিজের জন্য, আপনাকে ভালোবাসার জন্য।

বিশ্বাস রাখুন :
একটা সম্পর্কের ভিত্তি হচ্ছে বিশ্বাস, আপনি যদি আপনার সঙ্গীকে বিশ্বাস না করেন তবে সুখি দম্পতি তো দূরের কথা আপনি আপনার জীবনটা অনুভব পর্যন্ত করতে পারবেন না।

এক সাথে ঘুমোতে যাওয়া :
যদিও এটি আপনার কাছে শুনতে নিতান্তই সাধারণ মনে হবে তবে এর কার্যকারিতা রয়েছে। যখন আপনার সঙ্গীর সঙ্গে একই সময় ঘুমোতে যাবেন সেই সময়ে আপনাদের মধ্যে কথাবার্তা হবে। সারাদিন কে কী করলো তা জানা যাবে। আগামীকাল কী করা যায় বা কী করতে চাচ্ছেন তা নিয়েও কথা বলা যায়। এতে একজন আরেকজন সম্পর্কে জানতে পারে। আর এটি চাকরিজীবীদের জন্য খুব উপকারী। হয়তো দুজনেই কাজের জন্য বাইরে থাকার কারণে কথা তেমন বলা হয়না। তাই আপনার মনে জমে থাকা কথাগুলো সেই সময় তার সাথে ভাগাভাগি করে নিন।

ক্ষমা করতে শিখুন :
আর ভুল ভ্রান্তি সবার মাঝেই আছে।  আপনি নিজেও জানেন আপনার নিজের অনেক সমস্যা আছে। তাই আপনার সঙ্গীর করা কাজকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখুন। দেখবেন আপনার সঙ্গীও আপনাকে একইভাবে দেখছে।  ক্ষমা করার শক্তি অর্জন করা উচিত। একদিনেই কোনো সম্পর্ক গড়ে ওঠে না। কোনো ভুল হলে প্রথমেই সে ভুল ভেঙ্গে দেয়া উচিত। কারণ ভুল বোঝাবুঝি দুজনের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করে।

আলিঙ্গন করুন :
আপনার সারা দিনের কাজ হয়তো আপনাকে আপনার নিজের থেকেও একটু ছুটি দেয়না। আর আপনার স্বামী বা স্ত্রীর জন্য সময় বের করা হয়তো খুব কঠিন। তাই আপনি যখন বাড়ি ফিরবেন ঘরে ঢুকে তাকে আলিঙ্গন করুন, সারাদিন তার কেমন কাটলো জিজ্ঞেস করে নিন। দেখবেন আপনার নিজেকে খুব সুখী মানুষ বলে মনে হতে শুরু করবে।

ধৈর্য :
দাম্পত্য জীবনের পুরো সময়টাই হানিমুন মুডে থাকতে পারবো…এটা ভাবাটা বোকামি এবং এটা ভাবলে বড় ধরনের ধাক্কা খেতেই হবে। জীবনে দুঃসময় আসবে, জীবনের বিভিন্ন পর্যায়গুলো পার হতে হবে। তাই এমন অবস্থায় ভেঙ্গে পরবেন না। ধৈর্য ধরে এগিয়ে যেতে পারলেই সংসার সুখের হবে।  সুখী বিবাহিত জীবন ধরে রাখা বা ভালোবাসা অটুট রাখার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো মেনে চলার প্রতি উৎসাহ দেন বিশেষজ্ঞরা।

সেগুলো হলো:

# একে অপরের জন্য ছোট ছোট কাজে সাহায্য করা। এতে পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা বোধ অটুট থাকবে। যেমন, চা তৈরি করে দেয়া, বাচ্চাকে সাহায্য করা, সংসারের কাজে একে অপরকে সাহায্য করা।

# প্রতি সপ্তাহে অন্তত দু’ঘণ্টা করে আপনার চিন্তা-ভাবনাগুলো আদান-প্রদান করতে পারেন।  টানা দু’ঘণ্টা সময় বের করতে না পারলে প্রতিদিন অন্তত অবসর সময়টুকো একত্রে বসে কথা বলুন। সব সময় যে প্রয়োজনীয় কথা বলতে হবে, তা নয়।

# দু’জনেই দুজনের জন্য সময় বের করুন। দু’জনেরই ভালোলাগা বা শখের বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিন। দু’জন এক সঙ্গে পছন্দের রেস্তোরায় খেতে বা সিনেমা দেখতে যেতে পারেন। এক সঙ্গে সময় কাটানোও খুব গুরুত্বপূর্ণ।

# মাঝে মধ্যেই একে অপরকে সারপ্রাইজ দিতে পারেন। একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করুন। তাকে নিয়ে বিশেষ একটি রেস্তোরায় খেতে যান। সাপ্তাহিক ছুটির দিন সুন্দর কোথাও বেড়াতে যেতে পারেন।।

# সঙ্গীকে প্রেমপত্র লিখতে পারেন। নতুন প্রেমপত্র লিখে পরস্পরের প্রতি ভালোবাসার না বলা কথাগুলো প্রকাশ করুন। এসব পত্রে থাকতে পারে পরবর্তী রোম্যান্টিক নানা পরিকল্পনার কথা। চিঠি লিখে পোস্টের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেন, যদিও এক সঙ্গেই থাকছেন আপনারা। তাতে কি? করেই দেখুন, খারাপ লাগবে না আর সম্পর্কটাও মজবুত হবে।

সূত্র : বিডিলাইভ ডেস্ক