প্রকৃতপক্ষে ভালোবাসা কি ও কত প্রকার

আপনি একজন কে ভালোবাসেন কিন্তু প্রকৃত ভালোবাসা কি তা আপনি নিজেই জানেন না। অথচ সে মানুষটি হতে পারে আপনার বান্ধবী, সহকর্মী, দুরের কেউ অথবা আপনার স্বামী বা স্ত্রী।  আপনি এই ফিচারটি পড়ে  আপনি আপনাদের মধ্যে সম্পর্কটির কোন পর্যায়ে রয়েছে সেটা খুব সহজেই বুঝতে সক্ষম হবেন এবং সম্পর্কটির মাঝে কিসের খাটতি রয়েছে তাও নিরুপম করতে পারবেন খুব সহজেই।   একটি সুস্থ সম্পর্কের জন্য প্রয়োজন প্রকৃত ভালোবাসা ও পরিপূর্ণ প্রেম আসুন সেটাই একটু আলোচনা করি যা আমাদের সারাজীবন কাজে লাগবে –

সাইকোলোজিষ্ট ষ্টার্নবার্গ  এর “ট্রায়াংগুলার থিওরী অফ লাভ”  এর মতে –

মানুষের ভালোবাসাকে একটি ট্রায়াংগেল বা  ত্রিভুজ আকারে ভাগ করেছেন যেখানে ৩ টি উপাদান থাকে যা হলো –

১) আবেগ আসক্তি বা আকর্ষন Passion
২) অন্তরঙ্গতা Intimacy
৩) প্রতিশ্রুতি Commitment

আর “ট্রায়াংগুলার থিওরী অফ লাভ”  অনুযায়ী ভালোবাসা ৮ প্রকারের হয়ে থাকে আসুন দেখি সেগুলো কি কি –

১) None Love – ভুমিকাহীন ভালোবাসা
– যে সম্পর্কে কোন আবেগ নেই, অন্তরঙ্গতা ও প্রতিশ্রুতি নেই সেই সম্পর্কে ভালোবাসার কোন ভূমিকাই নেই তাই হলো Non Love । যেমন – একজন অপর জনকে দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকে ভালবাসার প্রস্তাব দিলো অপরজন তা প্রত্যাখান করে ফিরিয়ে দিলো । যার ফলশ্রুতিতে যে যার মত নিজেদের গন্তব্যে ফিরে গেলো এটাই হলো ভুমিকাহীন ভালোবাসা বা None Love

২) Liking Love –  পছন্দের ভালবাসাঃ

এ ধরনের ভালোবাসার সম্পর্কে মধ্যে অন্তরঙ্গতা বা Intimacy আছে। এখানে অন্তরঙ্গতা বা Intimacy বলতে বুঝানো হচ্ছে দুজনেই পাশাপাশি সহবস্থান করে কিন্তু আবেগ বা কোন প্রতিশ্রুতি নেই এমন সম্পর্ক গুলো Liking Love হিসাবে বিবেচনা করা হয়। যেমন – সহপাঠি বা সহকর্মীদের মাঝে অনেক সময় একে অন্যকে পছন্দ করে এক সাথে পড়ছে বা কাজ করছে প্রায়সই ভালো মন্দ অনেক কিছুই শেয়ার করছে কিন্তু তাদের মাঝে কোন প্রকার প্রতিশ্রুতি নেই।  আবার একটি সম্পর্ক গঠনের জন্য যে আবেগটুকু দরকার তাও নেই। শুধু অন্তরঙ্গতা Intimacy টুকুই রয়েছে এটাই Liking Love ।

৩) Infatuated love প্রফুল্লতম ভালোবাসা :
এই ধরনের ভালোবাসায় প্রচন্ড আবেগ Passion আসক্তি বা আকর্ষন কাজ করে অথচ অন্তরঙ্গতা এবং কোন প্রতিশ্রুতি নেই। এই ভালোবাসার ধরনটিকে বুঝাতে একটি কেইস ষ্টাডি উল্লেখ করা যাক –

একজন বিবাহিত নারী যার কিনা ৩ বছরের একটি সন্তান আছে, স্বামী চাকুরীতে ব্যস্ত থাকায় যথাযথ ভাবে স্ত্রীকে সময় দিতে পারেন না, হঠাৎ করেই ঐ মহিলার সাথে একজন ভদ্রলোকের ফোনে পরিচয় ঘটে। পুরুষটি অন্য শহরে থাকায় ফোনেই প্রতিদিন কথাবার্তা হয়। এভাবে কথা বলতে বলতে ব্যাপারটা এমন পর্যায়ে পৌছে গেলো এখন প্রতিদিন ঐ পুরুষটির সাথে ফোনে কথা না বললে তার ভালো লাগে না বরং অস্থিরতা কাজ করে। একসময় বাড়ির সবাই তা জেনে গেলে তার মোবাইলটি নিয়ে নেয়া হয়। তারপরও সে লুকিয়ে আরেকটি ফোন কিনে তার সাথে কথা চালিয়ে যেতে থাকে। এমন সম্পর্ক গুলোকেই বলা হয় Infatuated love বা প্রফুল্ল প্রেম যেখানে অন্তরঙ্গতা ও প্রতিশ্রুতি কোনটায় নেই অথচ আবেগ, আসক্তি বা আকর্ষণের পরিমানটা অনেক তীব্র।

৪) Empty Love শূন্য ভালোবাসাঃ
এই ভালোবাসার ধরনটি Infatuated love বা প্রফুল্ল ভালোবাসার ঠিক উল্টো এখানে অন্তরঙ্গতা আছে, প্রতিশ্রুতিও আছে কিন্তু একে অন্যের প্রতি ভালোবাসা নেই, আসক্তি বা আকর্ষন নেই।। শূন্য ভালোবাসার একটা উদাহারন দেয়া যাক –

আগেকার দিনের মত এযুগেও এখনো কিছু বিয়ে হয় যারা আগে থেকে কেউ কাউকে চিনতো না, জানতো না – কিন্তু বিয়ে হয়েছে। তারমানে একসঙ্গে থাকতে হবে আমৃত্যু পর্যন্ত। এখানে একজন আরেকজন কে ভালো লাগছেনা, বনিবনা হচ্ছে না, মানসিক ও শারিরিক সম্পর্কেও কেউ কারো উপযুক্ত না অথচ এসম্পর্কে এসব ভাবারও কোন সুযোগ নেই। ব্যাপারটা এমন যে, বিয়ে হয়েছে মানেই সঙ্গী যেমনই হোক তার সাথেই বাকী জীবন কাটাতে হবে। এধরনের সম্পর্ক গুলো Empty Love শূন্য ভালোবাসার আওতাধীন।

৫) Romantic love রোমাঞ্চকর (ভাব বিলাসী) ভালোবাসাঃ   

রোমান্টিক ভালোবাসায় দুজনের মাঝে প্রবল আবেগ আসক্তি বা আকর্ষন থাকে আবার অন্তরঙ্গতা বা Intimacy ও থাকে । একে অন্যের সাথে অনেক কিছুই শেয়ার করে । দুজনের মধ্যে একে অপরের প্রতি যৌন আকর্ষণ ও উদ্দীপনাও থাকে কিন্তু যা থাকেনা যেটা হলো প্রতিশ্রুতি বা Commitment । যেহেতু এধরনের সম্পর্ক কিংবা ভালোবাসায় কেউ কারো সাথে প্রতিশ্রুতিবন্ধ নয় তাই এমন সম্পর্কে নতুন করে কারোজীবনে কেউ এলে – যদি তাকে ভীষন ভালোলাগে, তাহলে তারা যে যার মত সিদ্ধান্ত নিয়ে চলে যায় কেননা এই ধরনের সম্পর্কে কোন প্রতিশ্রুতি বা Commitment একেবারেই থাকেনা।

৬) Companionate love সহচর ভালোবাসাঃ

এ ধরনের ভালোবাসা হলো অনেকটা বন্ধুর মত এখানে একে অন্যের সাথে সবকিছুই শেয়ার করে, একজনের প্রয়োজনে আরেকজনকে সবসময় পাশে পায়। যে কথাটাগুলো স্বামী বা স্ত্রীকে বলা যায়না সেটাও তার সাথেও শেয়ার করে। এ ধরনের সম্পর্কে একেবারেই আবেগ বা আকর্ষন থাকে না আবার অন্তরঙ্গতা বা Sexual Intimacy ও থাকে না । এইধরনের সম্পর্কগুলোই সহচর ভালোবাসা বা Companionate love ।

৭) Fatuous Love নিষ্ঠুর প্রেমঃ
এই ধরনের ভালোবাসায় একজন আরেকজনের সাথে কোন কিছুই শেয়ার করে না, এমন কি কথাও হয় না কিন্তু বড্ড আবেগ ও আকর্ষন বা আসক্তি কাজ করে।  আসক্তির পরিমান এতই বেশী থাকে যা থেকে মনে হতে পারে সারাজীবনের জন্য কেউ একজন বড্ড প্রতিশ্রুতিবন্ধ। প্রচলিত ভাষায় একতরফা ভালোবাসার মত একটা ব্যাপার। এখানে কোনধরনের অন্তরঙ্গতা Intimacy একেবারেই নেই। তাই প্রতিশ্রুতি Commitment এর তো কোন উদাহারনই আসেনা ।

৮) Consummate Love ভালোবাসা বা পরিপূর্ন প্রেমঃ

আমরা সবাই সাধারনত সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভালোবাসা বা পরিপূর্ন প্রেমটাই চাই।  বিশ্বখ্যাত সাইকোলোজিষ্ট ষ্টার্নবার্গ এর  ট্রায়াংগুলার থিওরী অফ লাভ এর মতে -একটি পরিপূর্ণ প্রেম ও ভালোবাসায় –

১) আবেগ ও আকর্ষন  ২) অন্তরঙ্গতা  ৩) প্রতিশ্রুতি  এই তিনটি উপাদানই সমান ভাবে থাকবে। এবং একজন আরেকজনের সুখে দুখে, সময়ে অসময়ে, সারা জীবন একে অন্যের পাশে থাকার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকে এবং দুজনের মধ্যে বুঝাপড়ার ব্যাপারটাও চমৎকার ভাবে সন্নিবেশিত থাকবে।

সম্মানিত পাঠক আপনি এখন উপরে ৮ প্রকার ভালোবাসা ও সম্পর্কের বিভাজন থেকে আপনার সম্পর্কটি কোন ধাপে আছে সেটা সহজেই নিরুপম করতে পারবেন এবং সম্পর্কটির ভবিষ্যত নিয়ে নিজেই নিজের সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবে।  লেখাটি ভালো লাগলে অন্যকে জানাতে শেয়ার করুন ।  বিবাহবিডি ডট কম।

প্রথম দেখা, প্রথম কথা

যাঁর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন, তাঁকে কোনওদিন দেখেননি! কিছুই জানেন না তাঁর ব্যাপারে। মনের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বশে রেখে বরং উপভোগ করুন মুহূর্তগুলোকে।  গল্পগুজবের ফাঁকে চিনে নিন পরস্পরকে। এটাই ব্লাইন্ড ডেট-এর সার্থকতা সেখানেই।

সম্পূর্ণ অচেনা-অজানা একজন মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ।  অবশ্য এ আবার যে-সে সাক্ষাৎ নয়, একেবারে ব্লাইন্ড ডেট! তবে ব্লাইন্ড ডেট-এর সঙ্গে আর পাঁচটা ডেট-এর তফাৎ হল, এক্ষেত্রে আপনি উলটোদিকের মানুষটির ব্যাপারে কিছুই জানেন না।  মনের মধ্যে এক ধরনের চাপা উৎকণ্ঠা আর উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণ করাই দায়! সাধারণত, বন্ধুবান্ধব বা পরিচিতরাই আয়োজন করেন এ ধরনের ডেট।  তবে, ডেটিংয়ে পৌঁছে আপনার অনুভূতি কীরকম হবে, সে নিশ্চয়তা কেউই দিতে পারবেন না! তা বলে কি ব্লাইন্ড ডেটে যাবেন না? অন্তত একবার তো এরকম অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতেই পারেন। শুধু মাথায় রাখুন কয়েকটি বিষয়:

  • কোনও প্রত্যাশা নিয়ে যাবেন না। যদি ভাবেন আপনার স্বপ্নের মানুষটিকে আপনি খুঁজে পাবেন, তাহলে আশাহত হতে পারেন।  আপনার প্রিন্স চার্মিংয়ের কথা ভেবেছেন আর বাস্তবের মানুষটি একেবারে আলাদা হতে পারে।
  • কথাবার্তার শুরুতেই উলটোদিকের মানুষটার সম্পর্কে কোনও ধারণা তৈরি করে ফেলবেন না। কারও ব্যাপারে সম্যক ধারণা তৈরি করতে একটা ব্লাইন্ড ডেট মোটেও যথেষ্ট নয়। তবে গল্পগুজবের মাধ্যমে একটা প্রাথমিক ধারণা তৈরি হয়েই যাবে।  তার ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নিন ভবিষ্যতে আবার এই লোকটির
  • সঙ্গে দেখা করবেন কি না। মনে রাখবেন, প্রত্যেকটা মানুষের মধ্যেই কিছু না কিছু ইন্টারেস্টিং এলিমেন্ট থাকে। সেই ছোট ছোট দিকগুলো উপভোগ করার চেষ্টা করুন।
  •  যদি মনে হয় একেবারে ভুল লোকের সঙ্গে ডেটিং করে দিনটাই মাটি হয়ে গেল, তাহলেও আফশোস করবেন না। খাওয়াদাওয়া, ড্রিংক উপভোগ করুন।  আগে থেকেই ঠিক করে নিন কোনও নতুন রেস্তরাঁয় যাবেন, কোনও নতুন ডিশ ট্রাই করবেন।  যদি খুব বোরিং লাগে, তাহলে সংক্ষিপ্ত কথায় সেরে ফেলুন।
  • একেকজন মানুষের ব্যক্তিত্ব একেক রকমের।  হতেই পারে যে উলটোদিকের মানুষটির সঙ্গে
  • প্রেম সম্ভব নয়। কিন্তু তিনি অন্য নানা বিষয়ে বেশ খোঁজখবর রাখেন। তাহলে সেই বিষয়ে নিজেকে সমৃদ্ধ করে তোলার সুযোগটা হারাবেন না যেন।  বন্ধুত্ব রাখা যেতেই পারে।
  •  অতিরিক্ত খাবার গ্রহন করে ফেলবেন না। আর সেন্স অফ হিউমার বজায় রাখা দু’পক্ষের জন্যই জরুরি।