তরুণদের বিয়ে ভীতি

পুরুষের বিয়ে ভীতি। শুনতে নিশ্চয়ই অবাক করার মত কথা। হ্যাঁ, আজকাল তরুণদের একটা বড় অংশের বিয়ে ভীতি রয়েছে। আর এই বিয়ে ভীতির কারণ অর্থ-বিত্তের অভাব, বেকারত্ব, শারীরিক অসুস্থতা, পাত্রী অপছন্দ, নতুন জীবনে পদার্পণ বা দাম্পত্য আতংক এসব কিছুই নয়। বিয়ে ভীতিতে আক্রান্ত তরুণ-যুবকদের বৃহত্তর অংশ মনে করে তাদের জীবন শেষ হয়ে গেছে। তারুণ্য-যৌবনে শরীরের ওপর অত্যাচার-অবিচার, ক্ষেত্রবিশেষে মাদক সেবন এবং নারীর সংস্পর্শে এলে নিজের নিষ্ক্রীয়তার অভিজ্ঞতা, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যৌনজীবন নিয়ে ভুল ধারণা এবং মানসিক সমস্যা এবং কিছু কিছু মেয়েদের অতিরিক্ত জ্ঞান তরুণদের বিয়ে ভীতির প্রধান কারণ। অবশ্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে শারীরিক সমস্যা নেই তা বলা যাবে না। তবে ডাক্তারদের চেম্বারে আসা বিয়ে ভীতিতে আক্রান্ত তরুণদের শতকরা ৮০ থেকে ৯০ ভাগেরই কোন শারীরিক সমস্যা নেই। গত ছয়মাসে আমার চেম্বারে আসা বিয়ে ভীতিতে আক্রান্ত শতাধিক তরুণ ও যুবকের ওপর পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায় শতকরা ৮০ ভাগের কোন ধরনের শারীরিক সমস্যা নেই।

শতকরা ৫ ভাগের প্রয়োজনীয় কিছু হরমোনের ঘাটতি রয়েছে যা চিকিৎসাযোগ্য, শতকরা ১০ ভাগের শরীরে প্রয়োজনীয় শুক্রাণুর অভাব রয়েছে (আলগেস পাকিস), শতকরা ২/৩ ভাগের শরীরে কোন শুক্রাণু নেই (অ্যাজোসপারসিযঅ)। এছাড়া শতকরা যে ২০ ভাগের কিছু কিছু শারীরিক সমস্যা রয়েছে তাদের মধ্যে শতকরা অন্ততঃ ৫ ভাগের যৌন সমস্যা (ইম্পোর্টেন্স) রয়েছে। এ তথ্য আন্তর্জাতিক গবেষণা তথ্যের সঙ্গে সঙ্গাতিপূর্ণ। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে আমাদের দেশের তরুণরা অধিক সুঠাম ও সক্ষম। তবুও তরুণদের বিয়ে ভীতি কেন। এসব তরুণদের কাছে চেম্বারে আমি পাঁচটি প্রশ্ন করে থাকি। কেমন করে তারা বুঝতে পেয়েছে তারা ফুরিয়ে গেছে বা শারীরিক যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে। তাদের এই ধারণার পিছনে কোন বাস্তব অভিজ্ঞতা রয়েছে কি? শারীরিক শক্তি ফিরিয়ে কোন ওষুধ সেবন করেছে কি, ইত্যাদি ইত্যাদি। তরুণ-যুবকদের বিচিত্র সব জবাব, অভিজ্ঞতা, এসব তুলে ধরার কোন ইচ্ছা আমার নেই। এছাড়া রোগীর গোপন তথ্য প্রকাশ মেডিক্যাল এথিকস অবমাননার পর্যায়ে পড়ে। তাই এসব নিয়ে দীর্ঘ বর্ণনার কোন ইচ্ছে নেই। তবে এ কথাটি সত্য, তরুণদের বিয়ে ভীতির কারণের পিছনে যেমন অজ্ঞতা, মানসিক সমস্যা এবং তরুণদের একটি বড় অংশের বাস্তব অভিজ্ঞতা নেতিবাচক হওয়ায় (যার শতকরা ৯৯ ভাগ বিয়ের পর ঠিক হয়ে যায়) বিভ্রান্তি বাড়ছে। পাশাপাশি একশ্রেণীর তথাকথিত যৌন সমস্যা চিকিৎসক নামধারীদের অজ্ঞতা এবং ভুল চিকিৎসার কারণে তরুণদের যৌন ভীতি বেড়ে যাচ্ছে। বিয়ে করেনি এমনসব তরুণদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেক্স স্টিমুল্যান্ট ট্যাবলেট দেয়া হয়। ফলে এসব তরুণরা মনে করে তাদের নিশ্চয়ই যৌন সমস্যা রয়েছে। এতে তরুণদের সাময়িক শারীরিক ফিটনেস বাড়লেও দীর্ঘমেয়াদি মানসিক সমস্যার সৃষ্টি করে। এমনকি একাধিক তরুণ অকপটে শিকার করেছেন ডাক্তারের দেয়া যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট সেবন করে অপকর্মে লিপ্ত হয়েছেন। এসব বিয়ে ভীতি বা যৌন ভীতিতে আক্রান্তদের বেশির ভাগের প্রায় একই মন্তব্য যতদিন ট্যাবলেট সেবন করেন ততদিন ভালো থাকেন। ওষুধ সেবন শেষ তো সবশেষ। অথচ এসব তরুণের শতকরা ৮০ থেকে ৯০ ভাগই শারীরিকভাবে সুস্থ এবং কেবলমাত্র যথাযথ কাউন্সিলিং করতে পারলে কোন প্রকার যৌন উত্তেজক ওষুধ ছাড়াই তরুণদের বিভ্রান্তি দূর করা সম্ভব।

এ প্রসঙ্গে আমি আগেও বলেছি শুধু বাংলাদেশের তরুণদেরই বিয়ে ভীতি এবং যৌন ভীতি বেশি। এ ক্ষেত্রে একটি উদাহরণ দেবো। আমি সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে চর্ম ও যৌন রোগের ওপর পোস্ট গ্রাজুয়েশন করার সময় সিঙ্গাপুর ডিএসসি ক্লিনিকে কিছুদিন অবজারভার হিসেবে প্রশিক্ষণ নেই। প্রচুর বাংলাদেশী তরুণ আসতো এ ক্লিনিকে। সিঙ্গাপুর ডিএসসি ক্লিনিক বাংলাদেশের যেকোন প্রাইভেট হাসপাতালের চেয়ে বড় কেবলমাত্র যৌন রোগীদের চিকিৎসা করা হয় এই ক্লিনিকে। আমি দেখেছি সিঙ্গাপুরে চাকরিরত বাংলাদেশী তরুণরাও নানা ভুল ধারণার কারণে নানা ধরনের যৌন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এসব তরুণের অনেকেরই যৌন জীবন নিয়েও রয়েছে নানা বিভ্রান্তি। কয়েকমাস আগে থাইল্যান্ডের ব্যাংকক জেনারেল হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। হাসপাতালের অন্যতম চিকিৎসক ডাঃ শক্তির সঙ্গে আমার পূর্ব নির্ধারিত মিটিং ছিল। তিনি একাধিকবার আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। যা হোক, ডাঃ শক্তি যৌন সমস্যার রোগীদের চিকিৎসা করেন। বাংলাদেশ থেকে বেশকিছু রোগী যায় ব্যাংকক হাসপাতালে। ডাঃ শক্তি আমাকে প্রায় একই রকম তথ্য দিলেন। বাংলাদেশী রোগীদের শারীরিক বা যৌন সমস্যার চেয়ে মানসিক সমস্যাই বেশি।

থাক এসব কথা। তরুণদের বিয়ে ভীতি আসলে মোটেও শারীরিক সমস্যার কারণে হয় না। যৌবনে অধিকাংশ পুরুষই কিছু অনাকাঙ্খিত অভ্যাসের শিকার হয়। এর জন্য শরীরের যৌন শক্তি শেষ হয়ে যাবে এটা নিতান্তই ভুল ধারণা। শরীরে যৌন শক্তি নামে আলাদা কোন শক্তি নেই। শারীরিক সুস্থতা, সুঠাম দেহ, মানসিক প্রশান্তি থাকলে এবং পরস্পরের সুন্দর সম্পর্কও সমঝোতা থাকলে প্রাত্যহিক জীবনের অন্যসব কাজের মত দাম্পত্য জীবনও সুখের হতে পারে। তাই বিয়ে ভীতির কারণে তরুণদের যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট সেবন করা উচিত নয়। এছাড়া এজন্য অযথা ডাক্তারের চেম্বারে যাবারও কোন দরকার নেই। তবে বিয়ের পর যদি কোন শারীরিক সমস্যা থাকে এবং এ কারণে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের অবনতি হওয়ার আশংকা তৈরি হয় তখন যেকোন সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন। যদি ছোটখাটো শারীরিক সমস্যা থেকে থাকে তা আবশ্যই চিকিৎসায় ভালো হয়। অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসা-ওষুধ ছাড়াই কাউন্সিলিং তরুণদের বিয়ে ভীতি দূর এবং বিবাহ পরবর্তী জীবন সুন্দর হতে পারে।

লেখকঃ ডাঃ মোড়ল নজরুল ইসলাম,
চুলপড়া, যৌন সমস্যা ও চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ এবং লেজার এন্ড কসমেটিক্স সার্জন

প্রকাশ করেছেন

Best Marriage Media Bangladesh

Best Marriage Media in Bangladesh | Bibahabd is the Leading Bangladeshi Matrimony website, Provides online and offline matchmaking service for marital relationship.

One thought on “তরুণদের বিয়ে ভীতি”

মন্তব্য করুন