বিয়ের আগে মানসিক প্রস্তুতি

বিয়ের বাস্তবতা উপলব্ধিঃ

বয়স ভেদে নুন্যতম ২০ বছরের জার্নি হয়তবা সারা জীবনের। তাই ভেবে চিন্তে পরিপক্ক সিদ্ধান্তে আসতে হবে আবেগে নয়। উল্লেখিত এ সময়টুকুতে আপনাকে সংসার, সন্তান পালনের দায়িত্বগুলো ধৈয্যের সাথে পালন করতে হবে । তাই ভেবে চিন্তে পরিপক্ক সিদ্ধান্তে আসতে হবে আবেগে নয়।

দায়িত্ববান হতে হবেঃ

স্বভাবের কোন নেতিবাচক দিক থাকলে সেগুলো সংশোধনের চেষ্টা করতে হবে। বিয়ের আগে পরস্পর নিজেদের সম্পর্কে খোলামেলা আলোচনা করে নিলে বিয়ের পর বোঝাপড়াটা সহজেই হয়ে যাবে।

বিয়ের আগে মানসিক প্রস্তুতি

মানিয়ে চলাঃ

দুজনকেই দুই পরিবারের সঙ্গে মানিয়ে চলার মানসিকতা থাকতে হবে এতে অনেক সমস্যা এড়িয়ে চলা সম্ভব। প্রত্যেক পরিবারের নিয়ম-কানুন, আচার-ব্যবহার ভিন্ন; তাই পরিবারিক বিষয়ে আলোচনা করে নিলে পরবর্তীতে নতুন সদস্যদের সঙ্গে মিলে মিশে চলতে সুবিধা হবে।

ধৈয্যশীল ও শ্রদ্ধাবোধঃ

ছোটখাটো বিষয় এড়িয়ে যাওয়ার ইতিবাচক মানুসিকতা রাখতে হবে। হয়ত নিজের আশানুরূপ অথবা স্বপ্নের মত সংসারে সব কিছু ঘটবে না; এ ক্ষেত্রে ধৈয্যশীল হতেই হবে। একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে।

আলোচনা ও বোঝাপড়া ভালোঃ

দাম্পত্য সম্পর্কে অমিল হবেই তাই যে কোন সমস্যায় খোলাখুলি আলোচনা করতে হবে। সম্পর্কের শুরুতে একে অপরকে বন্ধুর মত গ্রহন করতে হবে, কেবল নিজেদের চাহিদা বা প্রয়োজনে সংসার জীবন চিন্তা করলে হবে না।

আন্তরিকতা জরুরিঃ

একজন মানুষকে নতুন পরিবেশ মানিয়ে নিতে সহযোগিতা প্রয়োজন এক্ষেত্রে ছেলের ভূমিকা প্রধান। নতুন সদস্য, নিয়ম-কানুন, আচার-ব্যবহার বিষয়গুলো মানিয়ে চলা খুব সহজ কথা নয়। তাই নিজের পরিবার ছেড়ে মেয়েরা যখন নতুন পরিবারে আসে তখন নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় এ পরিস্থিতিতে ছেলের উচিত মেয়ের সাথে আন্তরিক আচরণ করা ও মানিয়ে নেয়ার বিষয়ে সহযোগিতা করা।

উচ্চাকাঙ্ক্ষী হওয়া উচিত নয়ঃ

সবার মন-মানসিকতায় পরিবর্তন জরুরি। দুই পক্ষই একে অপরকে নিয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী হবেন না। একটু সচেতন সহযোগিতা পরায়ন ও বোঝাপড়া ভালো হলে দাম্পত্য জীবন সুন্দর হতে বাধ্য।

দেরিতে বিয়ে হলে যেসব মানসিক সমস্যায় ভোগেন নারীরা

একটি নির্দিষ্ট বয়সের মাঝে বিয়ে না হলে বেশিরভাগ নারীই কিছু না কিছু মানসিক সমস্যায় ভুগতে শুরু করেন। এমনকি যারা ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন নারী, তাদের মাঝেও লক্ষ্য করা যায় কিছু কিছু ব্যাপার। কারো কারো মাঝে প্রায়সই কাজ করে অতিরিক্ত ঈর্ষা, সামাজিক চাপ, কখনও ভীষন একাকীত্ব। সব মিলিয়ে অনেকেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। জেনে নিন এমন কিছু সমস্যা সম্পর্কে, যেগুলো তৈরি হয় বিয়ে দেরিতে হলে। সমস্যাগুলি চিহ্নিত করা গেলে সেটা থেকে বের হয়ে আসাও সহজ।

একাকীত্ব থেকে বিষণ্ণ হয়ে যাওয়া : সমবয়সী সকল বোন বা বান্ধবীদের বিয়ে হয়ে গেছে, আর স্বভাবতই বিয়ের পর সকলেই নিজের পৃথিবী নিয়ে একটু বেশিই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এক্ষেত্রে যার বিয়ে হয়নি, তিনি হয়ে পড়েন একলা। প্রিয় বোন বা বান্ধবীদের খুব একটা কাছে পান না, কাটানো হয় না ভালো সময়। সবমিলিয়ে বিষণ্ণ হয়ে পড়েন, আর সেই বিষণ্ণতা থেকেই মনের মাঝে জন্ম নেয় হতাশা ও শূন্যতা। আর এই বোধ থেকে বের হয়ে আসার সেরা উপায় হচ্ছে নতুন বন্ধু-বান্ধব তৈরি করা, যার কাছে আপনার জন্য পর্যাপ্ত সময় আছে।
নিজেকে অযোগ্য মনে করা : সমবয়সী সকলে নিজের জীবন সঙ্গী পেয়ে গেছেন, আপনি হয়তো বারবার চেষ্টা করেও পারছেন না। হয়তো প্রেম সফল হয়নি কিংবা পরিবার থেকে চেষ্টা করেও ফল হচ্ছে না। বিশেষ করে আমাদের দেশে পাত্রী দেখাবার প্রক্রিয়াটা খুব অপমানজনক। এক্ষেত্রে প্রত্যাখ্যাত হবার পর নিজেকে অনেকেই অযোগ্য মনে করতে শুরু করেন। এত অযোগ্য যে, কোনো ছেলেরই তাকে পছন্দ হচ্ছে না। এমনটা ভাবা মানে অকারণেই নিজেকে ছোট করা। মনে রাখবেন, কোনো পুরুষের আপনাকে পছন্দ হয়নি মানেই আপনি অযোগ্য নন। এটা নিয়ে কষ্ট পাবার কিছু নেই। সম্ভব হলে ঘটা করে পাত্রী দেখার আয়োজনটা এড়িয়ে যান, অনেকটাই স্বস্তি পাবেন।
খুব কাছের বোন বা বান্ধবীর প্রতিও ঈর্ষা হওয়া: এটাও খুব সাধারণ একটা আবেগ। আমরা মানুষ, এমনটা হতেই পারে আমাদের সাথে। খুব কাছের বোন বা বান্ধবীটি হয়তো এখন আর আপনাকে সেভাবে সময় দিতে পারেন না, নিজের সংসার নিয়েই ব্যস্ত ও সুখী। এমন অবস্থায় ঈর্ষার একটা বোধ খোঁচা দিতেই পারে আপনাকে। এক্ষেত্রে নিজেকে বিষয়টা বোঝান। প্রথমত এটা ভাবুন যে তার জীবনে মোটেও আপনার গুরুত্ব কমেনি। আর দ্বিতীয়ত, একদিন আপনারও এমন চমৎকার একজন জীবনসঙ্গী হবে, তাই মন খারাপের কিছুই নেই।
বিয়ে করার জন্য তাড়াহুড়া করতে গিয়ে নিজেকে হাস্যকর করে ফেলা : অনেক নারীই এই কাজটি করে ফেলেন নিজের অজান্তেই। আর তা হল, একটি বিয়ে করার জন্য “ডেস্পারেট” হয়ে যান। ক্রমাগত সামাজিক ও পারিবারিক চাপ থেকে এটা হয়। মনের মাঝে ক্রমাগত ঘুরতে থাকে যে “বয়স পার হয়ে যাচ্ছে”! আর এই পার হয়ে যাওয়া বয়সকে টেক্কা দিতে একজন জীবনসঙ্গীর জন্য আকুল হয়ে ওঠেন অনেকেই। বারবার ঘটকের কাছে যাওয়া, অফিসে বা পরিচিত মহলে নিজেকে পাত্রী হিসাবে উপস্থাপন ইত্যাদি করতে গিয়ে নিজেকে হাসি ও করুণার পাত্রে পরিণত করে ফেলেন তারা। আপনিও কি এমন করছেন? তাহলে জেনে রাখুন, এসব করে কেবল সামাজিক মর্যাদাতেই খাটো হচ্ছেন আপনি। এসবে তেমন কোনো ফল নেই।
চাপের মুখে ভুল মানুষকে বেছে নেওয়া : ক্রমাগত পারিবারিক ও সামাজিক চাপের কারণে অনেক নারীই ভুল মানুষটিকে বেছে নেন বিয়ের জন্য। ব্যাপারটা এমন হয়ে দাঁড়ায় যে, যাকে সামনে পেলাম, তাকেই বিয়ে করে ফেললাম। কিংবা যে রাজি হল, তাকে পছন্দ না হলেও বিবাহের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যাওয়া। অনেকেই এই ব্যাপারটিকে ভালোবাসা ভেবে নিজেকে শান্তনাও দিতে চান। আবার অনেকে পরিবারকে খুশি করার জন্য নিজেকে রীতিমত চাপ দিয়ে বিয়েতে রাজি করায়। এই ভুলটি কখনও করবেন না। একটাই জীবন এবং এই জীবনে একটি ভুল বিয়ে আপনার অশান্তি কমাবে না বরং বাড়বে।
আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলা : যে সমাজে একজন মেয়ের সফলতা বা বিফলতা নির্ভর করে তার স্বামী ও সংসারের স্ট্যাটাসের ওপরে এবং সঠিক সময়ে বিয়ে না হলে মেয়েটি হয়ে ওঠে সকলের চক্ষুশূল, সেই সমাজে বিয়েতে দেরি হলে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। যখন ক্রমাগত নিজের কাছের মানুষেরাই বলতে থাকে যে “তুমি এত অযোগ্য যে পাত্র জোটে না”, তখন অনেক নারীই নিজের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেন আর ক্রমশ গুটিয়ে নিতে থাকেন জীবন থেকে। ভুলেও এই কাজটি করবেন না। জীবন আপনার। আর আপনার জীবনে মাথা উঁচু করে আপনাকেই বাঁচতে হবে।