মৃতের কাছ থেকে বিয়ের প্রস্তাব!

বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে বিশ্বের শিল্প-সাহিত্যে গল্পগাথার শেষ নেই। প্রিয় মানুষকে বিয়ের বন্ধনে বাঁধতে বিভিন্ন অদ্ভুত ও আশ্চর্য উপায়ে প্রস্তাব পেশ করার নজির আছে সব সমাজেই। কিন্তু, সম্প্রতি এক রাশিয়ান যুবক যা করেছেন, তাতে সবার আক্কেল গুড়ুম। প্রেমিকাকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার আগে নিজে মরে যাওয়ার অভিনয় করে ঝালাই করে নিয়েছেন তাঁর প্রতি প্রেমিকার আস্থা ও ভালোবাসা ঠিক কী পরিমাণ।

জি নিউজের এক খবরে বলা হয়, অ্যালেক্সি বাইকভের মূল উদ্দেশ্য ছিল বিয়ের পর তাঁর প্রেমিকা ইরিনা কলোকভের সঙ্গে পুরো জীবন কাটানোর আগে এটা পরীক্ষা করে নেওয়া, ইরিনা তাঁকে সত্যি কতটা ভালোবাসেন। এ জন্য ৩০ বছর বয়সী অ্যালেক্সি একজন চলচ্চিত্র পরিচালক, একজন স্টান্টম্যান ও একজন মেকাপ শিল্পীকে ভাড়া করেন। তাঁরা সবাই মিলে পথের পাশে একটি ভ্রাম্যমাণ মঞ্চ সাজান। ওই জায়গায়ই অ্যালেক্সি ও ইরিনার দেখা করার কথা ছিল। সেখানে শিল্পী-পরিচালকেরা গাড়ি দুর্ঘটনায় অ্যালেক্সির মৃত্যুর দৃশ্য মঞ্চায়ন করেন।

ইরিনা তাঁদের আগে থেকে ঠিক করা ওই স্থানে গেলে দেখতে পান, দুর্ঘটনাকবলিত একটি গাড়ি আর কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্সের ছোটাছুটি। তিনি বলেন, ‘ওখানে পৌঁছেই আমি দেখি রক্তভেজা অ্যালেক্সির দেহ রাস্তায় পড়ে আছে। একজন প্যারামেডিক আমাকে জানান, ও মারা গেছে। আমি সেখানেই কান্নায় ভেঙে পড়ি।’ যখন ইরিনা এভাবে কাঁদছিলেন, তখন অ্যালেক্সি উঠে এসে তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। ইরিনা সে প্রস্তাব মেনেও নেন। গত সপ্তাহে তাঁরা বিয়ে করেছেন।

সুত্রঃ প্রথম আলো

গাড়িতেই সংসার!

একটু আরাম-আয়েশে বসবাস করার জন্য বাড়ি-গাড়ির কথা ভাবেন না এমন মানুষের খোঁজ মেলা ভার। তবে, যারাই এই ভাবনা ভাবেন না কেন-আগে মাথা গোঁজার ঠাঁই বাড়ি তারপর ভাবেন গাড়ির কথা। কিন্তু এবারে একটু ভিন্ন ভাবনার মানুষের গল্প শুনি। যারা কিনা বাড়ির আগে গাড়ি কিনে ফেলেছেন। তাহলে তাঁরা থাকেন কোথায়? এ প্রশ্ন আসতেই পারে। একটাই উত্তর, ওই গাড়িই তাঁদের বাড়ি।

একটু আলাদাভাবে ভেবেই বাড়ির আগে গাড়ি কিনে ফেলেছেন যুক্তরাজ্যের ক্যান্টারবেরি শহরের ড্যানিয়েল বন্ড ও স্ট্যাসি দম্পতি। ২৮ বছর বয়সী ড্যানিয়েল বন্ড পেশায় গাড়ি মেরামতকারী। এই কাজ করে তিনি যে পরিমাণ অর্থ জমিয়েছেন তা একটি বাড়ি কেনার জন্য মোটেও যথেষ্ট ছিল না। কিন্তু স্ত্রী স্ট্যাসিকে (২০) নিয়ে একটু নিরাপদে থাকতেও হবে তাঁকে। এ নিয়ে বেশ ভাবনায় পড়ে যান তিনি। বাড়ি কেনার জন্য ব্যাংকও রাজি হয়নি ঋণ দিতে। আর অন্যের বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে নারাজ দুজনেই। তাই বাধ্য হয়ে দুজনে মিলে শলা-পরামর্শ করে একটি বড়সড় গাড়ি কেনার কথা ভাবেন। তাঁদের ভাবনার কথা শুনে ড্যানিয়েলের মা তাঁকে ‘মাথা খারাপ হয়ে গেছে’ বলে ড্যানিয়েলকে রাগারাগিও করেছিলেন। সেই চোখ রাঙানিকে থোড়াই কেয়ার করে নিজেদের সিদ্ধান্তেই অটল থেকেছিলেন তাঁরা। তাঁদের চাওয়া এমন একটি গাড়ি, যাতে সারা শহর মনের আনন্দে ঘুরে বেড়ানো যাবে, সেই সঙ্গে খাওয়া-দাওয়াসহ গাড়ির ভেতরে একটু নিরাপদে ঘুমানোও যাবে। যেই ভাবনা সেই কাজ। অর্থকড়ি গোছগাছ করে তিন হাজার পাউন্ড দিয়ে গত বছরের অক্টোবরে লেল্যান্ড অলিম্পিয়া-১৯৯১ মডেলের একটি দ্বিতল বাস কিনে ফেলেন তাঁরা। এরপর আট হাজার পাউন্ড বাড়তি খরচ করে সেই বাসের ভেতরে দুইটি থাকার কক্ষসহ বাড়ির মতো করে বানিয়ে নিয়েছেন ড্যানিয়েল ও স্ট্যাসি দম্পতি। এখন তাঁরা সেই বাড়ি মানে গাড়িতেই থাকেন, ঘর-সংসার করেন।

বাসটির ভেতরে এখন তাঁদের থাকার জন্য দুইটি কক্ষ, একটি রান্নাঘর, টেলিভিশন কক্ষ, প্রসাধন কক্ষ, পানির ট্যাঙ্ক এমনকি একটি বারও আছে। ‘শুরুতে আমরা বাড়ি নিয়ে বেশ হতাশায় পড়েছিলাম। ক্যান্টারবেরিতে ছোট্ট একটি ফ্ল্যাট কিনতে প্রায় এক লাখ পাউন্ড দরকার। অতো অর্থ আমাদের ছিল না। কিন্তু টাকা খরচ করে অন্যের বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকারও ইচ্ছে ছিল না আমাদের। তাই অল্প অর্থ খরচ করে গাড়ি কিনে তার ভেতরে বাড়ি বানিয়ে থাকার কথা চিন্তা করি। প্রথমে বেশ জটিল মনে হলেও পড়ে বুঝতে পারি এটাই আমাদের জন্য সবচেয়ে সহজ সমাধান।’—বলছিলেন ড্যানিয়েল বন্ড।

ড্যানিয়েল-স্ট্যাসির গাড়ির ভেতর বানানো এই বাড়িতে প্রায় ২২০ লিটার পানি ধারণ করার মতো ট্যাঙ্ক রয়েছে। তাছাড়া সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের ব্যবস্থাও আছে গাড়িতে। রান্না ঘরের ভেতরে আছে চুলা, রেফ্রিজারেটর ও কিচেন ক্যাবিনেট। স্ট্যাসি বলেন, ‘এটা আমার খুব ভালো লেগেছে। খুবই ভালো একটি উদ্যোগ। আমাদের একটি বাড়ির খুব প্রয়োজন ছিল। ড্যানিয়েল অনেক কষ্ট করেছে এজন্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অর্থ জোগাড় করতে পারেননি। তাতে কী! এখন তো এটাই আমাদের দু’জনের নিজেদের বাড়ি।’

ড্যানিয়েল আরও বলেন, বাসটির ভেতরে ঢুকলে কেউ বলতে পারবে না যে, এটা একটা বাস। এটা আসলে পুরোদমে একটি নতুন বাড়ি।’ বাসটি বর্তমানে একটি খোলা জায়গায় রাখা আছে। তবে ড্যানিয়েল আশা করছেন, সামনের আগস্টেই তিনি গাড়িটির চালক হিসেবে লাইসেন্স পেয়ে যাবেন। আর তা হাতে পেলেই ওই বাড়িতুল্য গাড়িতে স্ট্যাসিকে নিয়ে ঘুরে আসবেন কর্নওয়েল থেকে। যেখানে কেটেছে তাঁর শৈশব, তাঁর কৈশোর। ওয়েবসাইট।

বিয়ে বলে কথাঃ শাকিল ফারুক

লাঠালাঠিতে হারাতে পারলেই সিলেটে বিয়েবাড়িতে ঢুকতে পারত বরপক্ষ। খুলনায় বিয়ের গেটে আজও হয় ইংরেজি তর্কযুদ্ধ। বাঙালি বিয়েতে এরকম কত কিছু যে হয় তা বলে শেষ করার নয়। তবু যতটা বলা যায় ততটা নিয়ে এবারের স্পটলাইটঃ

এও তাহলে সম্ভব! কত না অদ্ভুত কাজ করে থাকে মানুষ! তাই বলে তিন দিন কনের বাড়ির সামনে তাঁবু খাটিয়ে বসে থাকা! তবে যার মুখ থেকে ঘটনাটি জানা গেল, তার দাবি, ঘটনার পুরোটাই সত্য। কথকের মামার বিয়ের ঘটনা। বরযাত্রী নিয়ে তাঁরা বিয়ের দিন কনের বাড়িতে হাজির হয়েছেন। বাড়ির গেটেই তাঁদের পথ আটকে দাঁড়াল একদল লোক। তাদের হাতে লাঠি। বরপক্ষ এ ঘটনায় বিচলিত হলো না। কারণ তারাও তৈরি হয়ে এসেছে। লাঠি হাতে প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হলো তারা। শুরু হয়ে গেল লাঠালাঠি। তবে তা কোনো পূর্বশত্রুতার জের ধরে নয়, রীতি অনুযায়ী!  সিলেটে তখন নাকি বিয়ের রীতিই ছিল এমন। কনেপক্ষের লাঠিয়ালদের হারাতে পারলে তবেই কনেবাড়িতে ঢুকতে পারবে বরপক্ষ, নইলে না।

তো কথকের মামাপক্ষ প্রথম দিন কনেপক্ষকে হারাতে পারল না বলে তাদেরকে বাড়ির ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হলো না। কিন্তু বরপক্ষ নাছোড়বান্দা। বিয়ে না হলে যে মান থাকে না। তাই ফিরে না গিয়ে তারা তাঁবু খাটিয়ে অবস্থান নিল কনেবাড়ির বাইরে। সেখানে টানা তিন দিন অবস্থান করে, একাধিকবার চেষ্টার পরে কনেপক্ষের লাঠিয়ালদের হারিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করল। তার পরই সম্পন্ন হয়েছিল বিয়ে। অবাক হওয়ার মতো হলেও, ঘটনাটিকে অবিশ্বাস করার উপায় নেই। আনন্দ-উল্লাসের প্রকাশ তো কখনো-সখনো একটু অদ্ভুত ধরনের হয়ে থাকে। আর বিয়ের মতো অনুষ্ঠানে সেটা আরো বর্ণিল আর বিচিত্র হয়ে উঠতে পারে।

সব সমাজেই বিয়ের প্রচলন আছে। তবে রীতিনীতির কারণে সমাজভেদে বিয়ের ধরন হয় বিভিন্ন রকমের। মুসলমানদের বিয়ে হয় কনের বাড়িতে কাজির মাধ্যমে। পুরোহিতের মন্ত্রপাঠের মাধ্যমে হয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিয়ে। কনের বাড়িতে মাঙ্গলিক আচারানুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উদ্যাপিত হয় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। বৌদ্ধদের রীতিও অনেকটা সে রকমেরই। ধর্মীয় শ্লোকের মাধ্যমে বিয়ে করানো হয় তাদের। আর খ্রিস্টানদের বিয়ে হয় চার্চে ফাদারের মাধ্যমে।

 তবে শুধু ধর্মীয় কারণে নয়, বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা আর উদ্যাপনে ভিন্নতা দেখা যায় অঞ্চলভেদেও। এক্ষেত্রে প্রথমেই চলে আসে ঢাকাই বিয়ের কথা। কোনো অনুষ্ঠান উদ্যাপনে ঢাকাবাসীর তুলনা মেলা ভার। সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা বদলে গেলেও, ঢাকাই বিয়ে এখনো ব্যাপক বৈচিত্র্যপূর্ণ। বিয়ে অনুষ্ঠানকে ঘিরে ঢাকাইয়ারা করে থাকে নানা আয়োজন। প্রস্তাব দেওয়া, কনে পছন্দ করাসহ আর সব বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য বিয়ের আগে ‘পানচিনি’র আয়োজন করা হয়। এতে সঞ্চালকের ভূমিকায় থাকেন পেশাজীবী ঘটকরা। তাদের বলা হয় ‘মোতাসা’। পানচিনি অনুষ্ঠানের ফল সন্তোষজনক হলে দিনক্ষণ আর লেনদেন বিষয় নিশ্চিত করার জন্য আয়োজন করা হয় মোতাসা-রাই বা ‘পাকাকথা’ অনুষ্ঠানের। এসব অনুষ্ঠানে মুখরোচক সব খাবারের আয়োজন থাকে।

এই ভূরিভোজনপর্বকে ঢাকাইয়া ভাষায় বলা হয় ‘খাস আপ্যায়ন’। বিয়ের কয়েক দিন আগে অনুষ্ঠিত হয় ‘হলদি’ বা ‘তেলাই’। গোসলের আগে বর ও কনের গায়ে হলুদবাটা দিয়ে শরীর মার্জন করা হয় এ অনুষ্ঠানে। আত্দীয়স্বজনের অংশগ্রহণ ও গান-বাজনার মধ্য দিয়ে এক আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি হয়। বর ও কনের বাড়িতে আলাদাভাবে তেলাইয়ের আয়োজন হয়ে থাকে। বরপক্ষের লোক মিষ্টি ও নানা উপাচার নিয়ে কনের বাড়িতে উপস্থিত হন। আর কনেপক্ষের লোক উপস্থিত হন বরপক্ষের বাড়িতে। উপাচারের মধ্যে অবশ্যই থাকে দুটি বড় মাছ। একটি বরের প্রতীক, অন্যটি কনের। বরের প্রতীক মাছটির মুখে গুঁজে দেওয়া হয় একটি সিগারেট। আর কনে-মাছটির মুখ ঢেকে দেওয়া হতো একটুকরো কাপড় দিয়ে। যে মাছ কাটে, তার জন্য উপহারস্বরূপ মাছের ভেতর দেওয়া হয় টাকা। হলুদপর্ব শেষ হলেই শুরু হয় রং ছিটানোর খেলা।

এরপর বর ও কনের বাড়িতে আলাদাভাবে আয়োজন করা হয় ‘আইবুড় ভাত’ নামের অনুষ্ঠান। একে ‘কুমারী ভাত’ও বলা হয়। আইবুড় মানে অবিবাহিত অবস্থায় নিজের বাড়িতে বর বা কনের শেষ খাওয়া। এ পর্বেও থাকে প্রচুর খাবারদাবারের আয়োজন। তারপর আসে বিয়ের মূল আনুষ্ঠানিকতা। আগে কার্ড ছেপে দাওয়াত পাঠানোর রেওয়াজ ছিল না। বিয়ের দাওয়াত দেওয়া হতো লবঙ্গ উপহার দিয়ে। প্রচলন ছিল না কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করারও। তাই গলির মোড়ে বা এলাকার মসজিদে বিয়ের কাবিননামা লেখার কাজ সারা হতো। এরপরই খাওয়াদাওয়া, উপহার প্রদান আর আতসবাজি ফোটানোর উৎসব। বিয়ের পরও আরো মাসখানেক রয়ে যায় এ উৎসবের আমেজ। বিয়ের পর কনের পিতৃগৃহে বর আর কনের বেড়াতে যাওয়াকে বলা হয় ফিরোল্টা’ (ফির+উল্টা)। এর মানে, বিয়ের পর আবার আগের মতো কনের বাবার বাড়িতে ফিরে যাওয়া। সাম্প্রতিককালে কোনো কোনো আচার-প্রথা হারিয়ে যেতে থাকলেও অধিকাংশই এখনো টিকে আছে।

সিলেট অঞ্চলের বিয়েতেও বর্ণাঢ্য আয়োজন দেখা যায়। বিয়ের দিন গীত-গান এবং ‘ধামাইল’ নামের একটি মেয়েলি অনুষ্ঠানের আয়োজন বিশেষভাবে সিলেটী বৈশিষ্ট্য। বর ও কনের বাড়ি সাজানো হয় আড়ম্বরপূর্ণভাবে। বিয়ের দিন বর ও কনের বাড়িতে যে গীত হয় তাতে বাড়ির মেয়েরা দলবদ্ধ হয়ে অংশ নেয়। সিলেটের বেশ কিছু জনপ্রিয় আঞ্চলিক বিয়ের গান রয়েছে। সেসব গানের সঙ্গে সব বাড়ির নারীরাই পরিচিত। তাই গীতের সঙ্গে প্রায় সবাই গলা মেলাতে পারে। এসব গীতের মাধ্যমে কখনো বর-কনেকে আকাশে উঠিয়ে দেন গায়করা, পরক্ষণেই হয়তো মাটিতে নামিয়ে আনেন। গীতের তালে তালে নারীরা তুলে ধরেন বরের মেজাজ, কনের চালচলন।

ধামাইলও একটি মজার আয়োজন। এর আয়োজক ও দর্শক উভয়ই হচ্ছে নারী। এখানে পুরুষের উপস্থিতি নিষিদ্ধ। মেয়েরা শাড়ি কোমরে পেঁচিয়ে পা দিয়ে মাটিতে তাল ঠুকে হাতে তালি দিয়ে বৃত্তাকারে ঘুরে ঘুরে নানা ধরনের গান গায়। এগুলো ধামাইল গান। এছাড়া বর-কনেকে নিয়ে লেখা কবিতা বা ছড়া ছাপিয়ে একটি সংকলন প্রকাশের রেওয়াজ রয়েছে। একে বলা হয় উপহার। এসব সংকলনের নাম দেয়া হয় সুখের বাসর, ঘি চমচম, মিলন বার্তা ইত্যাদি। আর লেখাগুলো হয় কৌতুকপূর্ণ ও রসে ভরপুর। রসালো আয়োজন রয়েছে রাজশাহী অঞ্চলের বিয়েতেও। তবে সেটা অবশ্য পিঠার রসে রসালো। বিয়ে ঠিক হওয়ার পর গীতের তালে তালে বর-কনেকে নিজেদের বাড়িতে মিষ্টিমুখ করানো হয়। এতে ব্যবহৃত হয় ক্ষীর ও আন্ধাষা। আন্ধাষা হচ্ছে রাজশাহীর জনপ্রিয় মিষ্টি পিঠা, যা তেলে ভেজে বানানো হয়। এ ক্ষীর আর আন্ধাষা পাড়া-প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে তৈরি করে পাঠানো হয় বর-কনের বাড়িতে। মিষ্টি খাওয়ানোর এ অনুষ্ঠানকে বলা হয় থুবড়া। থুবড়া অনুষ্ঠানে গাওয়া হয় আঞ্চলিক গীত। গীতের সঙ্গে মিষ্টিমুখে মেতে ওঠে সবাই।

 বিয়েতে লাঠিযুদ্ধের প্রচলন সিলেটে আর না থাকলেও, খুলনা অঞ্চলে দেখা যায় বর আর কনেপক্ষের মধ্যকার অন্য রকম এক যুদ্ধ। এটি হচ্ছে বাকযুদ্ধ। তাও আবার বাংলা ভাষায় নয়, পুরোপুরি ইংরেজিতে। খুলনায় বিয়ের নিজস্বতা হচ্ছে এই ইংরেজি তর্কযুদ্ধ। বাড়ির গেটে বরপক্ষকে আটকে কনেপক্ষের লোকজন ইংরেজিতে কথোপকথন শুরু করে। তার জবাবে বরপক্ষকেও কথা বলতে হয় ইংরেজিতে। এ কথপোকথনে শেষ পর্যন্ত যে পক্ষ আর তর্ক চালিয়ে যেতে পারে না, তারা পরাজিত হয়। একপক্ষ অন্য পক্ষকে লজ্জা দেওয়ার জন্যই এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়।

চট্টগ্রামের বিয়েও বেশ বিচিত্র ও বর্ণাঢ্য। বিয়ের প্রাথমিক কার্যকলাপ অন্যান্য অঞ্চলের মতোই সম্পন্ন হয়। তবে বিয়ের আগে আয়োজন করা হয় ‘বউ জোড়নি’ নামের একটি অনুষ্ঠান। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে বর ও কনের মধ্যে আলাপ-সালাপ করিয়ে দেয়া। এ জন্য বউ জোড়নি অনুষ্ঠানে কনেকে সাজিয়ে বরের সামনে উপস্থিত করা হয়। চট্টগ্রামের আরেকটি বিচিত্র আয়োজন হচ্ছে ‘ঘরজামাই বিয়া’। চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিয়ের পর বরের কনের বাড়িতে থেকে যাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। এ বিয়েকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় ঘরজামাই বিয়া।

তথ্য সংগ্রহ
গৌরাঙ্গ নন্দী, খুলনা; আনু মোস্তফা, রাজশাহী; আবদুর রহমান, সিলেট;
রফিকুল ইসলাম, বরিশাল; রাজীব নন্দী, চট্টগ্রাম।

বিয়েঃ হার্টের কার্যকর ওষুধ !

বিয়েতে কি লাভ? এমন প্রশ্নের জবাবে বিবাহিতরা বলেন, করেই দেখ না। তারপরও যারা চিন্তিত বিয়ে করা নিয়ে তাদের জন্যই সুখবর। গবেষকরা বলছেন, হার্টের শক্তিশালী ওষুধ বিয়ে। সমপ্রতি দ্য জার্র্নাল অব হেলথ অ্যান্ড সোশ্যাল বিহেভিয়ার-এ প্রকাশিত হয়েছে এক গবেষণা প্রতিবেদন। এতে বলা হয়েছে, হার্টের বাইপাস সার্জারির পর তিন মাস পর্যন্ত বিবাহিতদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা অবিবাহিতদের চেয়ে তিনগুণ বেশি। তাছাড়া এই তিন মাস আক্রান্ত না হওয়ার পাশাপাশি সার্জারির পর পাঁচ বছর পর্যন্ত বিবাহিতদের হার্টের সুরক্ষামূলক প্রভাব কার্যকর থাকে। গবেষণাটির মূল গবেষক ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানী এলেন ইডলার বলেন, সার্জারি পরবর্তী সঙ্কটজনক সময়ে বিবাহিতদের সারভাইভ করার অনুপাত একটা নাটকীয় ব্যাপার। এলেন আরও বলেন, বিয়েটা এক্ষেত্রে একটি সফল অনুঘটক। রোগী পুরুষ হোক বা মহিলা এতে কোন ভেদাভেদ নেই। নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই কার্যকারিতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। সর্বোপরি অবিবাহিতদের মৃত্যুর অনুপাত বিবাহিতদের চেয়ে দ্বিগুণ। গবেষণায় স্বাস্থ্য সঙ্কটের সময় স্বামী-স্ত্রী’র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকার কথা তুলে ধরা হয়।

এলেন বলেন, এক্ষেত্রে স্ত্রী’র মতো স্বামীও ভাল গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকে। এতে উল্লেখ করা হয়, বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া দীর্ঘজীবন পাওয়ার উপায় হিসেবে স্বীকৃত ১৮৫৮ সাল থেকে। ওই সময় উইলিয়াম ফার প্রমাণ করেছিলেন, ফ্রান্সে কম বয়সে মারা যাওয়ার প্রবণতা রোধ করছিল বিয়ে। গবেষণাটিতে বলা হয়- বিধবা, চিরকুমার ও ডিভোর্সিদের মৃত্যু ঝুঁকি বেশি। এলেন বলেন, আমরা ৫শ’ সার্জারি ও ইমারজেন্সি রোগীর উপর গবেষণা করে এটি তৈরি করেছি। কেন বিয়ে সঙ্কটময় মুহূর্তের ঝুঁকি কমিয়ে আনে তাও বলা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে। এক্ষেত্রে উল্লেখ করা হয়, বিবাহিতরা সার্জারিতে অনেক বেশি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে যায়। যা অবিবাহিতরা পারে না। ব্যথা সহ্য করা, আরাম ছেড়ে কষ্ট তুলে নেয়া ও সার্জারি সম্পর্কে দুশ্চিন্তার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে- বিবাহিতরাই ইতিবাচক জবাব দেয়। এতে বলা হয়, অবিবাহিতরা সার্জারির পর ৫ বছরের মধ্যে ৭০ ভাগ পর্যন্ত মারা যায়।

যেটা বিবাহিতদের ক্ষেত্রে অনেক কম। এতে বিবাহিত জুটিদের মধ্যে ধূমপান কম হওয়ার কথাও বলা হয়। যেটা একটা উপকারী দিক। সব শেষে পরামর্শ দেয়া হয় বিষয়টি যখন হার্ট সংক্রান্ত, বিয়েই হবে শক্তিশালী ওষুধ। এখন সিদ্ধান্ত আপনার হাতে বিয়ে করবেন নাকি তাড়াতাড়ি মরবেন?

সরকারী ঘটক!

একটি ভবনে অপেক্ষমাণ নারীদের জটলা। সবাই অধীর আগ্রহে ক্ষণ গুনছেন, কখন পড়বে ডাক। তাঁদের জড়ো হওয়ার কারণ একটাই—নতুন জীবনে প্রবেশ অর্থাত্ বিয়ে করা। এখানে অপেক্ষমাণ নারীরা বিধবা ও স্বামীপরিত্যক্ত। তাঁদের জন্য নতুন জীবনের এ কর্মসূচি চালু করেছে নাইজেরিয়ার কানু অঞ্চলের শরিয়া পুলিশ। স্থানীয় ভাষায় ‘হিসবা’ হিসেবে পরিচিত এ পুলিশ বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছে অনেকটা ঘটকের। এসব নারীর যোগ্য পুরুষের সঙ্গে মেলবন্ধন ঘটানোই তাদের প্রধান কাজ। পুলিশের উদ্যোগে বিয়ে পড়ানোর খবরটি জানিয়েছে ডন নিউজ। পুলিশের কর্মকর্তারা আশা করছেন, তাঁদের এমন উদ্যোগের ফলে বিয়ের মাধ্যমে শান্তি এবং বিয়ের পরে তাঁদের মধ্যে ভালোবাসা আসবে। কর্মকর্তাদের আশা, অস্থিরতাপূর্ণ এই এলাকায় শিশুদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল বানাতে এ কর্মসূচি কার্যকর ভূমিকা রাখবে। তাঁদের দাবি, পুলিশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো উদ্যোগ না নেওয়া হলেও বিভিন্ন নারী স্বেচ্ছায় অংশ নিচ্ছেন তাঁদের কর্মসূচিতে।

 ‘হিসবা’ তথা ঘটক পুলিশের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নবহানি ওসমান বলেন, কানুর বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে মা-বাবার যথাযথ পরিচর্যা ছাড়া শিশুরা সহিংসতা ও চরমপন্থার দিকে ঝুঁকতে পারে। তিনি আরও বলেন, সত্ বাবার মাধ্যমে হলেও ওই শিশুরা একধরনের আশ্রয় খুঁজে পাবে। পুলিশ জানিয়েছে, বিয়ে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে কি না, তা বোঝা না গেলেও বিপুলসংখ্যক নারী-পুরুষ এ কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে। জানা যায়, সাহারা মরুভূমির নিকটবর্তী অঞ্চলগুলোতে আয়োজিত বিবাহ একটি সাধারণ বিষয়। তবে পুলিশের পরিচালনায় এ ধরনের উদ্যোগ একেবারেই নতুন।

 জানা গেছে, পুলিশের উদ্যোগকে সহায়তা করতে এগিয়ে আসছে স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো। সঙ্গী খুঁজতে চাওয়া নারীদের জন্য বিনামূল্যে এইচআইভি ভাইরাস পরীক্ষার প্রস্তাব দিয়েছে ভয়েস অব উইডোস, ডিভোর্সেস অ্যান্ড অরফ্যানস অব নাইজেরিয়া (ভাওয়ান) নামের এমনই সংস্থাগুলো। বিয়ে করতে ইচ্ছুকদের এ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পুরুষকে নারীদের সহায়তায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়। প্রস্তাব দেওয়া হয়, বিয়ে করতে ইচ্ছুকদের আর্থিক সহায়তাও দেওয়া হবে। কারণ এলাকায় দেনমোহরের খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেক পুরুষই বিয়ে করতে সাহস পান না।